কণাগল্পঃ দন্তক্রিয়া

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ০৩/০৮/২০০৯ - ২:০৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

(১)

কদিন যাবৎ আকাশে মেঘ। বর্ষা আমার অপছন্দ। স্যাঁতস্যাঁতে বাতাস আমার জন্য ভালো না।..না না...সর্দি কাশির কথা বলছি না। সোঁদা বাতাস আমার দাঁতের জন্য খারাপ। এই কদিনের ভেজা আবহাওয়া আমার দাঁতের ক্ষতি করেছে বিস্তর। অবস্থা বেশ শোচনীয়।

দেখতে আমি খুব সুশ্রী নই। দন্তক্রিয়া ব্যতীত অন্যবিধ ক্রিয়াকর্মেও অপারঙ্গম। সত্যি বলতে, দাঁতই এখন আমার সব। এই দাঁতের কল্যাণেই আমি মাঝে মাঝে তার সান্নিধ্য পাই যে। তার সাথে কাটানো প্রতিটি মূহুর্ত আমার জন্য অসাধারণ অভিজ্ঞতা। এ অভিজ্ঞতা সবার হয় না।

মিলনের সেই মহেন্দ্রক্ষণে সে আমাকে আকড়ে ধরে মৃদু চাপ দেয়। প্রত্যুত্তরে তাকে আলতো করে কামড়ে দেই আমি। আমার দন্তক্রিয়ায় সে মুগ্ধ হয়। আমিও তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করি প্রতিটি বাইট। সে এক মহাকব্যিক দৃশ্যপট।

যদিও এভাবে কামড়ে দেয়ায় আমার সামান্যতম আলস্য নেই, তথাপি এই সুযোগ আমার জন্য খুব সুলভ নয়। হয়তো মাসে একবারই আসে সেই ক্ষণ, সেটিও তার মর্জি হলে তবেই। তবে এটা সত্য, এই একবারের মিলনেই আমাকে বেশ সময় দেয় সে। সত্যি বলতে, সময় নিয়ে সব কিছু করতেই তার ভালোবাসা। বলা চলে, একজন টোটাল পারফেকশনিস্ট। আমিও তাই একটু সচেতন। কামড়ে দেবার কাজটা বেশ মেপে মেপেই করি বলা চলে। আর এতটাই কোমল সে, মাঝে মাঝে মনে হয়, কাদার মধ্যে দাঁত চালানোও এর চেয়ে ঢের কঠিন কাজ। নাকি তার হাতের স্পর্শে উত্তেজিত থাকি বলেই এমনটা মনে হয়?? কে জানে??? মাঝে মাঝে ভয় হয়, বেশি জোরে কামড়ে দিচ্ছি নাতো?? সে যেই আদুরে মেয়ে, ব্যাথায় চেঁচিয়ে উঠলে সব্বেনাশ। বাড়িসুদ্ধ লোক জড়ো হয়ে যাবে যে। কেলেংকারী বেঁধে যাবে শেষে।

নাহ, কি সব ছাইপাশ ভাবছি?? মনটা আজ উদাস। তবে চুপি চুপি বলি, ভেতরে ভেতরে আমি টগবগ করছি। মাসের সেই বহুকাঙ্খিত ক্ষণটি যে সমাগত।

(২)

তিথির বাসায় আজ কেউ নেই। পরীক্ষার জন্য তার যাওয়া হয়নি বিয়ে বাড়ি। পরীক্ষা দিয়ে আসার পর এখন নিঃসঙ্গ লাগছে। সবাই ফিরে আসতে রাত হবে, অসহ্য। ভাবছে, কি করা যায়?? চকিতে যেন বুদ্ধি খেলে গেল। ঠোটের কোনে মুচকি হাসি। ভাবলো, “অনেকদিন হলো করা হয় না, আজই সময়”।

(৩)

কাজটা তিথি বেশ ঘটা করে করে। তবে বিছানা তার প্রথম পছন্দ না। মাটিতেই তাই একটা পাটি বিছায় সে। বেশ তুলতুলে পাটি, সৌদি থেকে আনা। তারপর যায় বেসিনে, হাত ভিজিয়ে আসতে। ভেজা হাতে কাজটা সহজ হয়।

(৪)

তিথির নিঃশ্বাসের আওয়াজও এখন শুনতে পারছি আমি। বুকের খুব কাছাকাছি আমাকে নিয়ে এসেছে সে। একবার চায় আমার দিকে। ও চাহনিতে থাকে নির্ভরতা আর বিশ্বাস। তারপর মৃদু করে আমার পিঠে চাপ দেয় সে। এর মানে, ছাড়পত্র দেয়া হল আমাকে। সময়ক্ষেপণ না করে আমি আলতো করে কামড়ে দেই তাকে। দাঁতটা শিরশির করছে। ব্যাথাটাও চাগাড় দিয়ে উঠলো যেন। চাপ বাড়ালো তিথি। বাড়ালাম আমিও। কি আশ্চর্য!!! কি হল আমার??? পারছি না কেন আজ???? আবারো চাপ দেয় সে। কি লজ্জা!!! পারছি না একটা মেয়ের সাথে??? আর তো মানা যায় না, সব শক্তি শেষবারের মত জড়ো করে বসালাম এক বেহিসেবি কামড়। হঠাৎই শুনি তিথির আর্তনাদ, “আমার নখ......!!! হতচ্ছড়া নেইলকাটার। জং পড়ে একশেষ। আবার গায়ে লেখা স্টেইনলেস স্টিল, ধুর্বাল”

(৫)
এক ঝটকায় নেইলকাটার টা জানালা দিয়ে ছুড়ে ফেলে দেয় তিথি। নিচের কাদা পানিতে ক্ষুদ্র কিছু পড়ার শব্দ হয়। বাকিটা জীবন হয়তো কাদাই কেটে যেতে হবে ওটাকে।

#ওসিরিস


মন্তব্য

মধ্যসমুদ্রের কোলে এর ছবি

বাকিটা জীবন হয়তো কাদাই কেঁটে যেতে হবে ওটাকে
-----
শেষের দিকে নিজেকে থার্ড পার্সন করে দিলেন কেনো?

অতিথি লেখক এর ছবি

আসলে শেষ প্যারাটার আগে একটা (৫) বসিয়ে থার্ড পার্সনে নিতে চেয়েছিলাম। পরে কিভাবে যেন সেটা গায়েব হয়ে গেছে খেয়াল করিনি।
ক্ষমা করবেন। শেষ লাইনে ভুল গল্পের প্রভূত ক্ষতি করবে। এ ভুল কতটা ক্ষমাযোগ্য সে বিষয়ে আমি নিজেই সন্দিহান।

অতিথি লেখক এর ছবি

হাসলাম। প্যাঁচটা মজার ছিলো কিন্তু কিছু একটা জানি নেই। স্বগোক্তি আরো প্রাঞ্জল হলেও হতে পারতো।

ধুর্বাল

ধুত্-বাল বা ধুর-বাল? হে-হে!
বাকিটা জীবন হয়তো কাদাই কেঁটে যেতে হবে ওটাকে

“কেটে” হবে না?

===
চিন্তিত (sajjadfx@জিমেইল.কম)

অতিথি লেখক এর ছবি

কিন্তু কিছু একটা জানি নেই। স্বগোক্তি আরো প্রাঞ্জল হলেও হতে পারতো।

জ্বি, অবশ্যি পারতো।
ওটা 'কেটে' হবে। ধন্যবাদ।

#ওসিরিস

বেগুনী-মডু এর ছবি

শেষের অংশে "(৫)" যোগ করে দেওয়া হলো।
বানান শুধরে দেওয়া হল (কেঁটে -- কেটে)।

অতিথি লেখক এর ছবি

অশেষ ধন্যবাদ।

মামুন হক এর ছবি

ভালো লেগেছে হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

দেঁতো হাসি..... ধন্যবাদ মামুন ভাই।

সাইফ তাহসিন এর ছবি

বেশ মজার, কিন্তু ধরা খেতে খেতে বুড়া হয়ে গেছি, তাই শেষ লাইন আগে পড়ে নেই সন্দেহজনক কিছু দেখলেই হাসি, আখের "চাচা আপন প্রান বাচা" এর তাড়নায় ভুগি তো চোখ টিপি

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনি বলছেন দন্তের ক্রিয়াকলাপ তাহলে সংশয়জাগানিয়া চোখ টিপি

ছায়ামূর্তি [অতিথি] এর ছবি

ভাল্লাগছে ! হাসি

এই ক্ল্যাসিকটা পড়ে দেখতে পারেন।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

আরে! চেনা লিংক দেখি!! আমি তো আশায় আশায় লিংকে ক্লিক করলাম... খাইছে

কে ভাই আপনি? এমন মনোযোগী ছায়ামূর্তি অচেনা হলে হয়?

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

আজকে কপাল্টাই ভালু...
যেই লেকাতেই কমেন্ট করতে যাই, সেখানেই দেখি ইশতি ভাই...দেঁতো হাসি

@ ইশতি ভাইঃ আপনার লেখাটা আসলেই জোস ছিলো- ফেসবুক থেকে পড়ে নিসিলাম- তাই কমেন্টাই নাই...

@ ওসিরিসঃ তুমিও আজকাল কণা-টণা গপ্পো লিখছো দেখে ভালো লাগছে হে। চালিয়ে যা পঞ্চা, ভালো লাগিলো।
সচলে স্বাগতম ! ! !

---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

হাতে সময় নেই বলতে গেলে। কালকে ঘুমাতে যাওয়ার আগে দেখি নীড়পাতার উপরের দিকের প্রায় ৬/৭ টা লেখাই অতিথিদের। একে একে পড়ে গেলাম যেটুকু পারি। বাকিটা আজকে শেষ করবো। যেমনটা আগেও বলেছি, পূর্ণ সচলদের লেখাই বরং পড়া হয়ে উঠে না আর। রণদা, যূথচারী, বিপ্র, মামুন ভাই, মুস্তাফিজ ভাই... এঁদের লেখা আছে, জানি। সময়ের অভাবে পড়া হয়নি। অতিথিদের সম্মানটা আলাদা। আফসোস, অতিথিরাই বুঝে না এটা!

অতিথি লেখক এর ছবি

এ ক্ল্যাসিক না পড়ি কি করে?? তার উপর ইশতি ভাইয়ের লেখা। পড়েছিলুম বটে আগেই।

ভাল্লাগছে শুনে ভাল্লাগ্লো হাসি

ভুতুম এর ছবি

ভালু ভালু।

-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি

-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।