বাংলাদেশের জ্বালানী সম্পদ, তেল, গ্যাস, কয়লা ও আমাদের করনীয়

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ০৭/১১/২০১০ - ৬:০২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি এতোবড় লেখার জন্য। আপনাদের ধৈর্য্যহারা হওয়ার সম্ভাবনা ব্যাপক তারপরও অনুরোধ করছি পুরোটা পড়ার। একজন ভূ-তত্ত্ববিদ হিসেবে যতটা সহজ করে সম্ভব হয়েছে কারিগরি বিষয়গুলো আলোচনা করেছি। সবসময় চেষ্টা করেছি বাংলা শব্দ ব্যবহার করার, তারপরও যেখানে একেবারেই সম্ভব হয়নি ইংরেজী শব্দ ব্যবহার করেছি। কোন কোন ইংরেজীর বাংলা শব্দ দেখে নিজেরই হাসি পেয়েছে তবুও চেষ্টা করেছি ওটাকে ঠিক রাখার। এই লেখায় আমি প্রথমে কিছু কারিগরি দিক আলোচনা করেছি তারপর আমাদের দেশের সার্বিক অবস্থা তুলে ধরেছি এবং বিতর্কিত বিষয়গুলোর সিদ্ধান্ত পাঠকের হাতে ছেড়ে দিয়েছি। বানান ভুল হতে পারে, কারন আমি অভ্রতে একেবারে নতুন।।

ভূ-অভ্যন্তরে তেল বা গ্যাস জমা হওয়ার জন্য কতগুলো শর্ত পুরন করতে হয়। এ বিষয়টি আমরা অনেকেই হয়তো জানি, তবু যারা জানেননা তাদের জন্য সংক্ষেপে বিষয়টি আমি আলোচনা করার চেষ্টা করবো।
ভূ-অভ্যন্তরে সাধারনত বেলে পাথরের স্তরে অথবা চুনা পাথরের (সাধারনত ফাটল যুক্ত) স্তরে সীমিত পরিসরে, যথেষ্ট পরিমান তেল বা গ্যাস জমা থাকলে আমরা তাকে রিজার্ভ/মজুদ বলি।একটি তেল বা গ্যাস রিজার্ভ/মজুদ তৈরী হওয়ার সম্ভাবনা নিম্নের বিষয়গুলির উপর নির্ভর করে-
১) উৎস শীলা থাকার সম্ভাবনা
২) আধার শীলা (রিজার্ভার) থাকার সম্ভাবনা
৩) উৎস শীলা থেকে আধার শীলায় সঠিক সময়ে স্থানান্তরের পথ থাকার সম্ভাবনা
৪) আধার শীলার এমন ভৌত অবস্থান (ট্র্যাপ) থাকার সম্ভাবনা যেন তেল বা গ্যাস আধার শীলার কোন এক নির্দিষ্ট স্থানে সীমিত পরিসরে জমা হতে পারে।
৫) আধার শীলার উপরে একটি নিশ্ছিদ্র শীলাস্তর (ক্যাপ বা সীল) থাকার সম্ভাবনা যা আধার শীলা থেকে তেল বা গ্যাসকে বেরিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করবে।

চিত্রে বিষয়টি দেখানো হলো-

চিত্রঃ ১
কোন অঞ্চলের ভূতাত্বিক অবস্থা যদি উপরের ৫টি শর্তই পুরন করে তবে সে অঞ্চলে তেল/গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা ব্যাপক। কিন্তু যদি যেকোন একটি শর্ত পূরন হওয়ার সম্ভাবনা শূন্য হয় তবে সে অঞ্চলে তেল/গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা একেবারে শুন্য। যেমন চিত্রে দুটি কূপই ৪টি শর্ত পুরন করে। একটি শর্ত (স্থানান্তরের পথ) যা শুধুমাত্র বামপাশের কুপটিতে আছে কিন্তু ডানপাশের কুপে নেই। কাজেই বাম পাশের কূপে তেল/গ্যাস আবিস্কৃত হয়েছে কিন্তু ডানপাশের কূপটি শুস্ক।
আবার কোন একটি উৎস শীলা থেকে তেল উৎপাদিত হবে না গ্যাস; তা নির্ভর করে ঐ উৎস শীলায় অবস্থিত জৈবিক পদার্থের উৎসের উপর। সামুদ্রিক প্রাণিজ জৈবিক পদার্থ থেকে সাধারনত তেল আর স্থলীয় উদ্ভিজ জৈবিক পদার্থ থেকে সাধারনত গ্যাস উৎপন্ন হয়। বাংলাদেশের উৎস শীলায় যে জৈবিক পদার্থ বিদ্যমান তা মূলত স্থলীয় উদ্ভিজ প্রকৃতির তাই বাংলাদেশে আমরা মূলত গ্যাস পেয়ে থাকি।
এবার বাংলাদেশে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা কোথায় কতটুকু সে বিষয়ে একটু আলোকপাত করা যাক।
ভূতাত্ত্বিক বিচারে বাংলাদেশকে তিনটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। ১) উত্তর পূর্ব এবং পূর্বে পার্বত্য অঞ্চল ২) উত্তর পশ্চিমে প্লাটফর্ম অঞ্চল এবং ৩) মধ্যভাগ ও দক্ষিনের বেসিন অঞ্চল। পার্বত্য অঞ্চল ও বেসিন অঞ্চল উভয় স্থানে পাললিক শীলার পুরুত্ব প্রায় ১৫-২০ কিমি, অন্যদিকে প্লাটফর্ম অঞ্চলে পাললিক শীলার পুরূত্ব মাত্র কয়েকশত মিটার থেকে ৩ কিমি পর্যন্ত।
প্লাটফর্ম অঞ্চল গ্যাস রিজার্ভ তৈরী হওয়ার সকল শর্ত পূরন করেনা। কাজেই এখানে গ্যাস পাওয়ার সম্ভবনা শূন্যের কাছাকাছি। এখানে এ যাবৎ বেশ কিছু জরিপ হয়েছে এবং কয়েকটি কূপও খনন করা হয়েছিল কিন্তু কোন গ্যাস রিজার্ভ এর সন্ধান পাওয়া যায়নি। বেসিন অঞ্চলে যদিও অদ্যাবধি ব্যাপক আকারে ভূতাত্ত্বিক জরিপ পরিচালিত হয়নি, তবুও এখানকার সাধারন ভূতাত্ত্বিক অবস্থা বিচারে এ কথা বলা যায় যে এই অঞ্চলে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীন, কিংবা এই অঞ্চলে যে রকম পরিবেশে গ্যাস থাকতে পারে তা খুজে বের করার জন্য দরকার অত্যাধুনিক প্রযুক্তি যা আমাদের নেই। এবার পার্বত্য অঞ্চলের কথায় আসাযাক। আমাদের দেশের প্রায় সকল গ্যাস ক্ষেত্র গুলি এই অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কেউ কি একবারও ভেবেছেন কেন? কারন এই অঞ্চলে খুব চমৎকার অবকাঠামোগত ট্র্যাপ পাওয়া যায় (চিত্র-১), এবং ইহাই বেসিন অঞ্চলের সাথে এই অঞ্চলের প্রধান পার্থক্য, গ্যাস সম্ভাব্যতার দিক থেকে।
এবার প্রশ্ন আসতে পারে যে, আমরা যে সমস্ত জায়গায় গ্যাস পাচ্ছি সেখানেতো পাহাড় নেই? খুবই স্বাভাবিক প্রশ্ন কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে যে এই অঞ্চল গুলোতে ভূ-উপরিভাগে পাহাড় না থাকলেও ভূ-অভ্যন্তরে শীলা গুলো ভাঁজ হয়ে আছে ঠিক ১নং চিত্রের মত। গ্যাস উৎস শীলায় তৈরী হওয়ার পর সেখানকার উচ্চ চাপীও অবস্থা থেকে সবসময় নিম্নচাপীয় স্থানে যেতে চায়। আর যেখানে শীলাস্তর গুলো ভাঁজ হয়ে আছে সেখানে উর্দ্ধমুখী ভাঁজগুলোর চূঁড়ায় নিম্ন চাপীয় অবস্থা বিরাজ করে। কাজেই যেখানে এমন ভূতাত্ত্বিক অবস্থা বিরাজমান সেখানে খুব সহজেই আধার শীলার মধ্যে সীমিত অঞ্চলে গ্যাস জমা হয়ে একটি গ্যাস রিজার্ভ তৈরী করতে পারে। যদি শীলা গুলো ভাজঁ না হয়ে সমতল হতো তবে উৎস শীলা থেকে গ্যাস আধার শীলায় প্রবেশ করার পর সমস্ত আধার শিলা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যেতো অর্থাৎ গ্যাস রিজার্ভ তৈরী করতে পারতো না। যদিও শীলাস্তরে ভাঁজ হওয়া ছাড়াও অন্যভাবে, যেমন শীলা বিচ্যুতি, অসংগতি ইত্যাদি কারনে গ্যাস রিজার্ভ তৈরী হতে পারে, কিন্তু আমাদের দেশে সাধারণত উপরের পদ্ধতিতেই গ্যাস রিজার্ভ তৈরী হয়। পরের ব্যাপারগুলো আমাদের বেসিন অঞ্চলে হতে পারে, যদি আদৌ এই অঞ্চলে কোন গ্যাস পাওয়া যায়। এবারে আসাযাক আমদের পাহড়ী অঞ্চলের (যেখানে ভূ-উপরিভাগে পাহার দৃশ্যমান) কথায়। যদিও এই এলাকা গ্যাস মজুদ থাকার সকল শর্ত পুরন করে এবং কোন কোন এলাকায় ভূ-ত্বকে গ্যাস নির্গমন দৃশ্যমান (যেমন সীতাকুন্ড) তবুও এই অঞ্চলে তেমন কোন গ্যাস ক্ষেত্র নেই। তার কারন এই অঞ্চলে ব্যাপক টেকটনিক একটিভিটি, যা কিনা এমন সব বিচ্যুতি তৈরী করছে যার মাধ্যমে বেশীর ভাগ গ্যাস ইতোমধ্যে বায়ূমন্ডলে নির্গত হয়ে গেছে।
এতো গেল স্থল ভাগের কথা এবার সমুদ্রাঞ্চলের কথায় আসাযাক। বাংলাদেশের সমুদ্রাঞ্চল্কে অনেকেই মেক্সিকো উপসাগরের সাথে তুলনা করে থাকেন যা কিনা তেল রিজার্ভ এর জন্য বিখ্যাত। কিন্তু মেক্সিকো উপসাগরের সাথে বঙ্গোপ্সাগরের রয়েছে বিরাট ভূ-তাত্ত্বিক ফারাক। সেখানে ভূ-অভ্যন্তরে রয়েছে অসংখ্য সল্ট ডায়াপির যা কিনা উপরস্ত শীলাস্তর সমুহে অসংখ্য বিচ্যুতির সৃষ্টি করেছে যা ট্র্যাপ হিসেবে কাজ করে এবং তেল রিজার্ভ তৈরীতে সহায়তা করে। আমাদের এখানে সেরকম কিছু নেই, কিছু শেইল ডায়াপির থাকতে পারে আবার নাও থাকতে পারে, সেটা অনুসন্ধানের বিষয়। তবে এখানে টেকটনিক বিচ্যুতি বা অসংগতি জনিত ট্র্যাপ থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশী। মোটের উপর আমাদের সমুদ্রাঞ্চলে গ্যাস/তেল পাওয়া যাবে কিনা তার উত্তর দেওয়ার জন্য প্রয়োজন এই অঞ্চলে ব্যাপক ভু-তাত্ত্বিক জরিপ।
এক্ষনে বাপেক্স কে নিয়ে দুটো কথা না বল্লেই নয়। বর্তমানে বাপেক্স এর যে কর্মদক্ষতা আছে তা দিয়ে স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধ্যান সম্ভব হলেও সমুদ্রাঞ্চলে একেবারেই অসম্ভব। সমুদ্রাঞ্চলে গ্যাস অনুসন্ধ্যানকল্পে যে কারিগরী দক্ষতা প্রয়োজন তা আমাদের একেবারেই নেই। এমতাবস্থায় পৃথিবীর বেশীরভাগ অনুন্নত দেশ (যেমন নাইজেরীয়া) যেটা করে থাকে তা হলো উন্নত দেশ বা কোম্পানী যাদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা আছে তাদের সাথে উৎপাদন বন্টন চুক্তি (প্রোডাক্ট শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট বা পি এস সি)। এই চুক্তির আওতায় কোন দেশ বা কোম্পানী সংশ্লিষ্ট দেশে সম্পুর্ন নিজ খরচে তেল/গ্যাস অনুসন্ধান চালাবে এবং কোন মজুদ আবিস্কার সাপেক্ষে ওই দেশের সাথে চুক্তি অনুযায়ী বন্টন করতে বাধ্য থাকবে। আর যদি কোন মজুদ না পাওয়া যায় তবে অনুসন্ধান জনিত সমস্ত ব্যয় সে নিজে বহন করতে বাধ্য থাকবে এবং সংশ্লিষ্ট দেশের কাছে কোনরূপ জরিমানা দাবি করতে পারবেনা। এক্ষনে আমাদের কোন বিদেশী কোম্পানীর সাথে উৎপাদন বন্টন চুক্তিতে যাওয়া উচিৎ কিনা সেই সিদ্ধান্ত পাঠকের।
এবারে চলুন দেখাযাক আমাদের মোট গ্যাস মজুদ, দৈনিক চাহিদা/উৎপাদন এর পরিমান। ২০০৭ সালের জুন মাসের এক হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের ১৯টি গ্যাস ক্ষেত্রে বর্তমান মোট উৎপাদনের আওতাধীন প্রমানিত গ্যাস রিজার্ভ এর পরিমান ১২.৮ টিসিএফ। এবং ৪টি অনুৎপাদিত গ্যাস ক্ষেত্রে প্রমানিত গ্যাস মজুদ আছে প্রায় ০.৭ টিসিএফ। অর্থাৎ মোট গ্যাস রিজার্ভ এর পরিমান ১৩.৫ টিসিএফ। এতো গেল প্রমানিত মজুদ এর কথা, যদি ভবিষ্যতে আবিস্কৃত সম্ভাব্য মজুদের কথা ধরা হয় তবে উপরের সংখ্যাটি দাড়ায় প্রায় ৩২টিসিএফ (পেট্রোবাংলা এবং ইউ এস জি এস এর ২০০১ সালের হিসাব মতে)। যদিও উপরের হিসাবটি করা হয়েছিলো ২০০ মি গভিরতা পর্যন্ত সমুদ্রাঞ্চল ধরে।
২০০৪ সালের হিসাব মতে বাংলাদেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৪৭০০ মেগাওয়াট যার আশিভাগই গ্যাস চালিত। ২০০৫ সালের হিসাব অনুযায়ী দৈনিক ২০৫০ মিলিওন ঘনমিটার গ্যাস এর বিপরীতে উৎপাদন এর পরিমান ছিল প্রায় ১৮০০ মিলিওন ঘনমিটার, অর্থাৎ ঘাটতির পরিমান ছিল প্রায় ২৫০ মিলিওন ঘনমিটার। ২০১০ সালের ৩১ অক্টোবরে মোট গ্যাস উৎপাদিত হয়েছে প্রায় ২০০০ মিলিওন ঘনমিটার, যার বিপরীতে চাহিদার বৃদ্ধি সহজেই অনুমেয়। বর্তমানে বাংলাদেশের বিদ্যুত পরিস্থিতি ভয়াবহ ঘন্টায় ঘন্টায় লোড শেডিং, যার মূল কারন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলিতে চাহিদার তুলনাই অপ্রতুল গ্যাস সরবরাহ, কোন কোন অঞ্চলে বাসা বাড়িতে রান্না ঘরে গ্যাস সরবরাহ ঠিক মত হচ্ছেনা, গ্যাস এর অভাবে কল কারখানা প্রায়ই বন্ধ থাকছে। দেশটা এখন খুড়িয়ে খুড়িয়ে না বলে গড়িয়ে গড়িয়ে চলছে বললেই বোধহয় ভাল মানায়। বর্তমান হারে গ্যাস উৎপাদন অব্যাহত থাকলে আর ভবিষ্যত সম্ভাব্য গ্যাস মজুদ আবিস্কার যদি সম্ভাব্যই থেকে যায় তবে বাংলাদেশ আরও প্রায় ১৮ থেকে ২০ বছর গড়াগড়ি খেতে পারবে। বিশ্বব্যাংক এর হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশের ৩২ ভাগ জনগন বিদ্যুতায়তনের আওতায় আছে। নির্বাচনী অংগিকার মেটাতে গিয়ে যদি বিদ্যুতায়তনের পরিমান বছর বছর বৃদ্ধি পায় আর যদি চাহিদার সাথে সাথে গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধি পেতে থাকে তবে আমাদের গ্যাস নিয়ে রাজনীতি করার সময় মনে হয় আরো কম। এহেন পরিস্থিতিতে আমাদের কি করা উচিৎ তা পাঠকগনই ভালো বলতে পারবেন।
এবারে একটু আমাদের কয়লার দিকে নজর দেওয়া যাক। সংগত ভূ-তাত্ত্বিক কারনে আমাদের দেশে খুবই অল্প পরিমান (প্রায় ২ বিলিয়ন টন) কয়লা মজুদ আছে, তাও সেটা কেবল দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলেই (প্লাটফর্ম অঞ্চল) সীমাবদ্ধ। কিন্তু এই অল্প পরিমান কয়লাও ৫৭ টিসিএফ প্রাকৃতিক গ্যাস মজুদের সমপরিমান, যা কিনা আমাদের বর্তমান গ্যাস (প্রমানিত)মজুদের চার গুনের চেয়েও বেশী। আমাদের দেশে উৎপাদনযোগ্য কয়লা খনিগুলো হলো বড়পুকুরিয়া, খালাশপির এবং ফুলবাড়ী। এর মধ্যে পার্বতীপুরের বড়পুকুরিয়াতে কয়লা উৎপাদন ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে আর ফুলবাড়িতে এশীয়া এনার্জি কোম্পানী কয়লা উৎপাদনের প্রস্তাব পেশ করেছে। ফুলবাড়ীতে মোট কয়লার মজুদ প্রায় ৫৭০ বিলিওন টন, যা কিনা আমাদের বর্তমান গ্যাস (প্রমানিত ১৩.৫ টিসিএফ) মজুদের সমতুল্য বা কিছু বেশী।
এক্ষনে কয়লা উত্তোলনের বিভিন্ন পদ্ধতি এবং তাদের সুবিধা অসুবিধা নিয়ে দুটো কথা না বললেই নয়। কয়লা সাধারনত দুটি পদ্ধতির মাধ্যমে উত্তোলিত হয় ১) গর্ত খনন (ওপেন পিট) ২) সুড়ংগ(আন্ডার গ্রাউন্ড) পদ্ধতি। উভই পদ্ধতির কিছু সুবিধা অসুবিধা আছে। গর্ত খনন পদ্ধতির সব চেয়ে বড় সুবিধা হলো, এই পদ্ধতিতে প্রায় ৮০% কয়লা উত্তোলন করা সম্ভব, যেখানে সুড়ংগ পদ্ধতিতে মাত্র ২০% কয়লা উত্তোলন করা যায়। সুড়ংগ পদ্ধতির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এতে পরিবেশের কোন ক্ষতি হয়না। যদিও কোথাও কোথাও খনির উপরের ভুমি দেবে যাওয়ার ইতিহাস আছে তবুও এটাকে তুলনামূলক ভাবে পরিবেশ বান্ধব বলা চলে। কিন্তু সুড়ংগ পদ্ধতিতে খনির অভ্যন্তরে দূর্ঘটনা এবং প্রানহানীর ঘটনা প্রাইয়শই ঘটে থাকে। আমাদের দেশে সুড়ংগ পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের সব চেয়ে বড় বাধা হচ্ছে কয়লা স্তরের উপরে ডুপিটিলা নামক পানিবাহী স্তরের উপস্থিতি, যা কিনা প্রায়শই খনির ভেতরে বন্যার সৃষ্টি করে উৎপাদন ব্যাহত করে। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি শুধুমাত্র এটির কারনে এখনো খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে। এই পদ্ধতিতে কয়লা উৎপাদন কয়লা স্তরের গভিরতার উপরও নির্ভর করে। অন্যদিকে গর্তখনন পদ্ধতির সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো এটি পরিবেশের ক্ষতি করে। এই পদ্ধতিতে খনি অঞ্ছলে কয়লার উপরিস্তরের সমস্ত শীলা খনন করে সম্পুর্নরুপে অপসারন করতে হয়, ঠিক মাটি খুড়ে গাছের শিকড় বের করে আনার মতো। এর ফলে খনি অঞ্চল থেকে সমস্ত জনবসতি সরিয়ে ফেলতে হয় এবং কৃষিজ জমির ক্ষতি সাধিত হয়।
সমস্ত কারিগরি দিক বিবেচনায় এশীয়া এনার্জি কোম্পানী ফুলবাড়ীতে গর্ত খনন পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের প্রস্তাবনা করেছে। এর ফলে ওই অঞ্চল থেকে প্রায় ৪০,০০০ মানুষকে স্থানান্তরিত করতে হবে যা সত্যিই কঠিন এবং অমানবিক (?)। আবার অন্যদিক বিবেচনা করলে দেখা যায় যে, খনিটি চালু হলে ঐ অঞ্চলে প্রায় ১৭,০০০ নতুন চাকুরির সুযোগ সৃষ্টি হবে যা সত্যি আশাব্যাঞ্জক। ঐ খনি থেকে উৎপাদিত কয়লা দিয়ে ৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার (১.৫ মিলিয়ন টন কয়লা প্রয়োজন) একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনা করা হবে যা কিনা আশেপাশের এলাকা বিদ্যুতায়নে সহায়ক ভুমিকা পালন করবে। বছরে ১৫ মিলিয়ন টন হারে উত্তোলিত (প্রস্তাবিত) কয়লা দিয়ে বছরে প্রায় ৫০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন সম্ভব যা কিনা আমাদের দেশের বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতার সমান। এবং, যেহেতু আমাদের দেশে শ্রম সস্তা, কাজেই বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিত হলে এটাও খুবই স্বাভাবিক যে এখানে বৈদেশীক বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে, যা কিনা নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। প্রস্তাবিত হারে কয়লা উত্তোলিত হতে থাকলে প্রায় ৪০ বছর পর্যন্ত ঐ খনি থেকে কয়লা উত্তোলন সম্ভব। আমাদের বৃহত্তর স্বার্থে ক্ষুদ্রতর স্বার্থ বিসর্জন দেওয়া উচিত কিনা এটা বিচার সাপেক্ষ।
পাঠক মহাশয়গন এবার আপনারাই মন্তব্য করুন আমাদের আসলে কি করা উচিৎ।

মাহ্ফুজ


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

কয়েকটা প্রশ্ন করি।

১. আপনি কি এশিয়া এনার্জির সাথে কোনো ধরনের আর্থিক স্বার্থের সম্পর্কে আবদ্ধ?

২. আপনার অ্যাকাডেমিক আর প্রফেশন্যাল কোয়ালিফিকেশন কি জানাতে পারেন [চাইলে না-ও পারেন] ?

এবার আপনার লেখার শেষের অংশটুকু নিয়ে একটা মন্তব্য করি। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে আপনি চল্লিশ হাজার মানুষকে তাদের ভূমি থেকে একবাক্যে উচ্ছেদকে অমানবিক মনে করেন না, প্যারেনথেসেসে একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন গুঁজে দিয়েছেন। ধরা যাক, দেশের স্বার্থে আপনার বাড়ি থেকে ঘাড়ে ধরে আপনাকে, আপনার স্ত্রীকে আর আপনার পুত্রকে বার করে দেয়া হচ্ছে, তবে ঐ দখল করা বাড়িতে আপনার পুত্রকে কাজের ছেলে হিসেবে নিয়োগের একটা সুযোগ আছে। আপনার বক্তব্য অনুযায়ী, সেক্ষেত্রে আপনার পুত্রটিকে কামলা হিসেবে নিয়োগ দিয়ে আপনার উচিত আপনার স্ত্রীর হাত ধরে নিজের বাড়ি ছেড়ে সরে যাওয়া, কারণ আপনার ছেলের এই কামলা হিসেবে কর্মসংস্থান আপনার ভাষায় সত্যিই আশাব্যঞ্জক। আপনার প্যারেনথেসেসের প্রশ্নচিহ্ন অনুযায়ী, গোটা ব্যাপারটার অমানবিকতাও প্রশ্নসাপেক্ষ।

এবার ঝেড়ে কেশে বলুন, ফুলবাড়িতে কয়লাস্তরের গভীরতা কত? সেখানকার মানুষদের ভূমি ঠিক কী পদ্ধতিতে অধিগ্রহণ করা হবে, এবং কোথায় তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে? খনি এলাকা থেকে কীভাবে পানি সরিয়ে নেয়া হবে? সরিয়ে নেয়া পানি কোথায় ফেলা হবে? অ্যাকুইফারের বাকি অংশ কীভাবে সিল করা হবে? সংলগ্ন এলাকায় ওয়াটার টেবল নেমে গেলে সেখানকার কৃষিকাজে সেচ কীভাবে দেয়া হবে? ফুলবাড়িতে খনি প্রস্তুত হতে কত সময় লাগবে?

পাঠক হিসেবে আপনার শেষ প্রশ্নটার উত্তরে বলছি, আমাদের কী করা উচিত জানি না, কিন্তু এশিয়া এনার্জির অ্যাপোলজিস্টদের উচিত পাবলিককে ভোদাই মনে করে কলম না ধরা।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

দ্রোহী এর ছবি

মাহফুজ,

ভূতত্ত্ববিদ বানানে '-' নাই।

"রিজার্ভয়ার রক" এর বাংলা যে আধার শিলা তা আমি নিজেই জানতাম না। "উৎস শিলা", "আধার শিলা" ইত্যাদি নামকে আমি পড়ছিলাম "উৎস শালি", "আধার শালি"। দেঁতো হাসি

মজুদের পরিমাণগুলো টেবিল আকারে বা লিস্ট আকারে দিলে পড়তে আরো সুবিধা হয়।

গ্যাস ও কয়লা নিয়ে আলাদা আলাদা লেখা দিলে ভাল হত।

সচলায়তনে স্বাগতম। হাত-পা খুলে লিখতে থাক।


কাকস্য পরিবেদনা

মাহফুজ খান [অতিথি] এর ছবি

হিমু ভাই,
আপনার প্রথম প্রশ্নের জবাব- না।
আপনার দ্বিতীয় প্রশ্নের জবাবঃ ভূতত্ত্ব বিষয়ে একটা এম এস আছে, আর Hydrogeology তে একটা পি এইচ ডি করার জন্য দেশের বাইরে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি।
আপনার বাকি প্রশ্নগুলোর জবাবতো এই ছোট পরিসরে দেওয়া সম্ভব না, আপনি দয়া করে এশিয়া এনার্জি প্রকাশিত feasibility study and scheme of development report টা পড়তে পারেন, ওইখানে আশা করছি আপনার প্রশ্নগুলোর উত্তর পাবেন। এদের ওয়েব সাইটটাও দেখতে পারেন।
http://www.phulbaricoal.com/index.php?content=2.6&toc=2_6
ইমোশন দিয়ে সবকিছুর বিচার কি অপরপক্কতার পরিচয় দেয়না?
আর একটা কথা বাংলাদেশের ভূ-ত্তত্ব, তেল/গ্যাস বা এক্যুইফার বিষয়ে আপনার থেকে একটু বেশী জানি বললে কি বাড়াবাড়ি হবে?

মাহফুজ খান

হিমু এর ছবি

প্রথম দু'টো প্রশ্নের উত্তর পেয়ে আশ্বস্ত হলাম। অনেক কিছু শিখতে পারবো আপনার কাছ থেকে।

ইমোশন দিয়ে বিচার? খুব খ্রাপ। দেশের স্বার্থে আপনাকে ঘাড়ে ধরে বাড়ি থেকে বের করে দিলে কি আপনি ইমোশনাল হবেন? মোটেও না। আপনি নিজেই স্যুটকেস প্যাক করে শিস দিতে দিতে বাপদাদার বাড়ি দেশের স্বার্থে ছেড়ে চলে যাবেন, আমার সেই আস্থা আছে।

আমাকে বাংলাদেশের ভূতত্ত্ব বিষয়ে আপনার তুলনায় প্রায় মূর্খ বলতে পারেন। কিন্তু ওপরে দেখুন, এই প্রায় মূর্খ আমার করা প্রশ্নগুলোর উত্তর না দিয়ে আপনি পিছলে গেলেন। আপনার আর্টিকেলে অনেক তথ্য আছে, শুধু শেষমেশ এশিয়া এনার্জির ঢোল পেটাতে গেলে প্রাসঙ্গিক যেসব প্রশ্নের উত্তর একজন জ্ঞানী ব্যক্তি হিসেবে আপনি দিতে পারতেন, সেটা দিচ্ছেন না। বাংলাদেশের তেল/গ্যাস/ভূগর্ভস্থ পানি নিয়ে এত বিপুল জ্ঞান নিজের ভেতর ফুলবাড়ির কয়লার মতো জমা না করে আমাদের জন্যে আরেকটা পোস্ট লিখে শেয়ার করুন, আমরাও কিছু শিখি। ছোটো পরিসরে দেয়ার কোনো দরকার নেই, প্রয়োজনে একটা সিরিজ লিখুন আমার মতো প্রায় মূর্খদের প্রশ্নগুলোর জবাবে। আগ্রহ নিয়ে পড়বো, আবারও মূর্খমার্কা প্রশ্ন করতে লাইন দেবো, কথা দিচ্ছি।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

হাসিব এর ছবি

মাঝ রাত্রিরে এই কমেন্ট পড়ে হাসতে হাসতে চেয়ার থেকে পড়ে যাওয়ার দশা।

১. এশিয়া এনার্জি এই উন্মুক্ত পদ্ধতির জন্য দেনদরবার করছে। এই পরিস্থিতি তাদের তৈরী রিপোর্ট কতটা গ্রহণযোগ্য?

২. এখানকার পরিসরটা ছোট মনে হচ্ছে কেন? এখানে তো কোন পেইজ লিমিট নেই। আপনি লিখে জানান আমাদের। আমার দেখি কেমনে কী।

৩. ইমোশন দিয়ে কেউ কিছু বিচার করছে না। এ্যাকাডেমিকালি আগান। দেখি কোথাকার পানি কোথায় গিয়ে দাড়ায়।

৪. বাংলাদেশের ভূ-ত্তত্ব, তেল/গ্যাস বা এক্যুইফার বিষয়ে জেনে একটা প্রকল্প কেন ফিসিবল হবে সেটা যাচাই করার যোগ্যতা অর্জনের জন্য যথেষ্ট নয়। এই প্রকল্পে সাথে ফিন্যান্স আছে, এনভায়রনমেন্ট আছে। সবগুলোই থাকার দরকার।
________________________________________________
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি

মাহফুজ খান [অতিথি] এর ছবি

দ্রোহী ভাই,
বানানের ব্যপারটা খেয়াল করিনি, (জানোতো বাংলায় কখোনো লেখা হয় না) আর পরের লেখাগুলো আরেকটু গুছিয়ে লেখার চেষ্টা করবো।

হাসিব এর ছবি

উন্মুক্ত খনন পদ্ধতির ডাউনসাইডগুলো নিয়ে বললে সুবিধা। গর্ত করলে পানি উঠবে, সেই পানি নদিতে নিষ্কাশন করা হবে। সেই পানিতে কী কী খনিজ মেশানো থাকবে? তারপর সেখানে কয়লা তোলার সময় বায়ুমন্ডলের অবস্থা কী হবে? কয়লা উঠিয়ে ফেললে তারপর কী করা? এশিয়া এনার্জি নামটা এই ক্ষেত্রে কতটা গ্রহণযোগ্য? এইসব প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আমাদের মতো শহুরে লোকদের কাছে বিদ্যুতের মুলো দেখানো কি ঠিক হলো?
________________________________________________
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

এর ফলে ওই অঞ্চল থেকে প্রায় ৪০,০০০ মানুষকে স্থানান্তরিত করতে হবে যা সত্যিই কঠিন এবং অমানবিক (?)। আবার অন্যদিক বিবেচনা করলে দেখা যায় যে, খনিটি চালু হলে ঐ অঞ্চলে প্রায় ১৭,০০০ নতুন চাকুরির সুযোগ সৃষ্টি হবে যা সত্যি আশাব্যাঞ্জক।

উদ্ধৃতির প্রথম বাক্যের শেষে প্রশ্নবোধক চিহ্ন কেন? দ্বিতীয় বাক্যে চাকুরির মুলো ঝুলানোর ব্যাপারটাও মজহারমক্সুদীয় তরিকা।

-----------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

মাহফুজ খান [অতিথি] এর ছবি

প্রশ্নবোধক চিহ্নটির জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি, ওটা দেওয়ার অধিকার আমার নেই। আমি চেষ্টা করেছি বর্তমান চিত্র তুলে ধরার, কোন সিদ্ধান্ত বা সাজেস্‌শান আমার উদ্দেশ্য নয়।

দ্রোহী এর ছবি

একজন ভূতত্ত্ববিদ হিসাবে আমার মতামত জানতে চাইলে ফুলবাড়িতে "ওপেন পিট মাইনিং" পদ্ধতি অবলম্বন করে কয়লা উত্তোলন ছাড়া প্রকল্পটাকে লাভজনক করার কোন পথ খোলা নাই।

কিন্তু ২৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তিন দশক ধরে মানুষ ও পরিবেশের ভারসাম্যে যে আমূল পরিবর্তন ঘটবে ৫৭২ মিলিয়ন টন কয়লার জন্য আমরা সে ঝুঁকিটুকু নিতে আগ্রহী হব কিনা সেটা হচ্ছে মূল প্রশ্ন।

এশিয়া এনার্জি ব্যবসা করতে এসেছে। তারা হিসাব করে হাওয়া থেকেও লাভ বের করে দেখাতে পারবে। তাদের সাইটে গিয়ে প্রকল্পের সুফলগুলোই দেখতে পেয়েছি কেবল। প্রকল্পের কুফলগুলোর কথা কোথাও লেখা নাই। এবং সেগুলো কীভাবে দূর করা হবে তার কোন সুস্পষ্ট সমাধান দেয়া নেই।


কাকস্য পরিবেদনা

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আমার সরল প্রশ্ন আপনার কাছে (যেহেতু আপনি এই বিষয়ের মানুষ) এবং পোস্টের লেখকের কাছে। ২৪ বর্গ কিলোমিটার জমির অপরচুনিটি কস্ট কত? তার স্থাপণাসমূহের মূল্য কত? তার বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের ব্যয় কত? এর ফলে পরিবেশের যে ক্ষতি হবে তার জন্য কতো টাকার গুনাগার দিতে হবে? কী পরিমাণ মানুষকে বিভিন্ন পর্যায়ে ভুগতে হবে? এগুলোর মোট মূল্যের চেয়ে ৫৭২ মিলিয়ন টন কয়লার মূল্য কি বেশি? যদি বেশি হয় তাহলে হিসাব করতে হবে তা কত বেশি এবং তার জন্য এই জনদুর্ভোগ আমরা মেনে নেবো কিনা। আর যদি তা বেশি না হয় তাহলে আল্লাহ্‌র ওয়াস্তে ঐ কয়লা মাটির নিচেই থাকতে দিন।

কয়লার মূল্যের বিপরীতে যে হিসাবগুলো দাঁড়ায় সেগুলোর হিসাব করার সময় যদি স্থাপণার মূল্য শূন্য, পুনর্বাসন ব্যয় শূন্য, পরিবেশের ক্ষতির গুনাগার শূন্য, জনদুর্ভোগ নেই - এমন হিসাব করা হয় তাহলে ভিন্ন কথা।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দ্রোহী এর ছবি

পাণ্ডবদা:

সহজ কথা যায় না বলা সহজে। আপনার সরল প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর একজন ভূতত্ত্ববিদের পক্ষে পুরোপুরি দেয়া সম্ভব না। আপনি যে প্রশ্নগুলো উত্থাপণ করেছেন সেগুলোর উত্তর দিতে গেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও গোটা কয়েক বিআইটি থেকে বিভিন্ন পেশার প্রায় জনাবিশেক কনসালটেন্টের সমন্নয়ে বিশ কোটি টাকা বাজেটের দুই বছর মেয়াদি গবেষণা প্রকল্প পরিচালনা করে রিপোর্ট পেশ করতে হবে। দেঁতো হাসি

যদিও আপনার মন্তব্যের শেষ প্যারায় উত্তরগুলো এসেছে। তবে আপনার উত্তরগুলো অতি সরলীকৃত। বর্তমান বাজারমূল্যের প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছে আপনার মন্তব্যের শেষ প্যারাটুকু। একজন সম্ভাব্য কনসালটেন্ট হিসাবে নিজের বিজ্ঞাপনের স্বার্থে আপনাকে বিনামূল্যে উত্তরগুলো দিচ্ছি। যদিও ব্যাটম্যানের চিরশত্রু জোকার বলেছে, “When you are good at something, never do it for free” শুধুমাত্র আপনার সাথে সুসম্পর্কের খাতিরে আমি এবারের মত বিনামূল্যে উত্তরগুলো দিচ্ছি। দেঁতো হাসি

২৪ বর্গ কিলোমিটার জমির অপরচুনিটি কস্ট কত? তার স্থাপনাসমূহের মূল্য কত?

রাজধানী ঢাকার বুকে প্রধানমন্ত্রীর বাসোপযোগী বাড়ির মূল্য যদি ১ টাকা হয় তাহলে ফুলবাড়ির জমির মূল্য স্থাপনাসহ হিসাব করলে প্রতি বর্গমিটার ১ পয়সা ধরলেও অনেক বেশি ধরা হয়। সে হিসাবে ২৪ বর্গ কিলোমিটার জমির মূল্য দাঁড়ায় ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির মূল্যের তুলনামূলক মূল্যে জমির প্রকৃত মূল্য আরো অনেক কম। তবুও গরীব জনগণের খাতিরে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকাই ধরা যাক।

তার বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের ব্যয় কত?

ফুলবাড়িতে ওপেন পিট মাইন ডেভেলপ করতে হলে প্রায় চল্লিশ হাজার বাসিন্দাকে তাদের বসতবাড়ি থেকে উৎখাত করে অপেক্ষাকৃত উন্নততর জায়গায় নিয়ে পুনর্বাসনের কথা বলা হয়েছে।

চল্লিশ হাজার বাসিন্দার পুনর্বাসনে প্রয়োজন:

  • ৫০০ টাকা পুনর্বাসন খরচ [জনপ্রতি]
  • গরম কম্বল [দুইজনের জন্য একটা]
  • কাগুর বাজারজাতকৃত কম্পিউটারে বাংলা লেখার সফটঅয়্যার [জনপ্রতি একটি সিডি]

অর্থাৎ

  • ৫০০×৪০,০০০= ২ কোটি টাকা
  • ২০,০০০ কম্বল× ১০০ টাকা [প্রতি কম্বল] = ২০ লাখ টাকা
  • সিডি প্রতি ৫০০ টাকা × ৪০,০০০ = ২ কোটি টাকা
সুতারাং, ২৪ বর্গকিলোমিটার জমি অধিগ্রহণ ও ৪০ হাজার বাসিন্দার পুনর্বাসনে সবমিলিয়ে ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৪ কোটি ২২ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

এর ফলে পরিবেশের যে ক্ষতি হবে তার জন্য কতো টাকার গুনাগার দিতে হবে?

পরিবেশ আল্লাহর দান। তিনি বড়ই মেহেরবান। আল্লাহ চাহে তো কার সাধ্য আছে পরিবেশের ক্ষতি করার? ওটার জন্য কিছু দিতে হবে না।

কী পরিমাণ মানুষকে বিভিন্ন পর্যায়ে ভুগতে হবে?

বাঙালি জন্মই নেয় বিভিন্ন পর্যায়ে ভোগার জন্য। কয়লা খনির দোহাই দিয়ে তাদের ভোগান্তি নিয়ে ব্যবসা করার প্রচেষ্টাকারীদের দিক্কার।

কয়লা খনি হলে যে ফুলবাড়িবাসীদের ভোগান্তি বাড়বে এমন নিশ্চয়তা যেমন কেউ দিতে পারে না তেমনি কয়লা খনি ডেভেলপ না করলে ফুলবাড়িবাসীদের ভোগান্তির অবসান ঘটবে এ কথাও সুনিশ্চিতভাবে বলা যায় না। সুতারাং, এ প্রশ্ন অবান্তর।

এবার দেখা যাক কয়লা খনি হলে আমরা কি পাচ্ছি:

ফুলবাড়িতে কয়লা খনি স্থাপনের ফলে দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চল ও দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হবে। এছাড়াও জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে আমরা যে ইতিবাচক অর্জনগুলো লাভ করবো সেগুলো নিম্নরুপ:

  • প্রকল্প মেয়াদকালে জিডিপি-তে ২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অবদান
  • ট্যাক্স ও রয়্যালটির মাধ্যমে সরকারের ৫.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সরাসরি আয়
  • ব্যালান্স অব পেমেন্টের উপর বছরে ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ইতিবাচক প্রভাব
  • বাংলাদেশ রেল-এর নীট আয় ১.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
  • ১২,০০০ স্থানীয় কর্মসংস্থান
  • ১,০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র।
১,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিয়ে আপনি ফুলবাড়িতে কলকারখানা স্থাপন করে গাড়ি বানিয়ে টয়োটা, মার্সিডিজের সাথে প্রতিযোগিতায় নামার স্বপ্ন দেখলে ভুল করবেন। আমাদের একটা জিনিসই বিদেশে ভাল বিকোয়। তা হচ্ছে তৈরি পোষাক। সালাম মুর্শেদীকে গিয়ে ফুলবাড়িতে তৈরি পোষাকের কারখানা স্থাপন করার প্রস্তাব দিলে জুতাপেটা খাবার সম্ভাবনা প্রবল। সুতারাং ১০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকে তারে ভরে ঢাকায় পাঠাতে হবে নতুন স্থাপিত তৈরি পোষাকের কারখানাগুলোকে বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে। তৈরি পোষাকের কারখানার কাজের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষজন ঢাকায় এসে উঠবে। ফলে ঢাকার জনসংখ্যা গিয়ে ১০ কোটিতে ঠেকবে। বাড়তি জনসংখ্যার চাপ সহ্য করার জন্য নতুন নতুন আকাশচুম্বী অট্টালিকা হবে। কপালে থাকলে পৃথিবীর সর্বোচ্চ দালান ঢাকাতেই দেখে যেতে পারবেন জীবদ্দশায়।

এছাড়াও প্রকল্প শেষ হলে পাচ্ছেন মিঠা পানির লেক। সেখানে বিনোদনের জন্য নৌকা চালাবেন। মাছের চাষ করবেন। তারপর সুজা খন্দকারের মত গান গাইতে গাইতে মাছ ধরবেন – মৎস মারিব খাইব সুখে, কী আনন্দ লাগছে বুকে, মৎস মারো রে... মৎস মারো রে।


কাকস্য পরিবেদনা

হাসিব এর ছবি

পুরো কমেন্টটা কি রসিকতা হিসেবে কাউন্ট করবো নাকি সিরিয়াস?
________________________________________________
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি

দ্রোহী এর ছবি

কাগুর সিডি আর কম্বলের হিসাব বাদ দিয়ে বাকি সবকিছু মিলিয়ে দেখেন। ওদের সাইটে গিয়ে কোন হিসাব পান কিনা দেখেন।

খালি দেখবেন লাভের আলাপ। আমিও তাই দেখলাম। আমি কয়লা বিশেষজ্ঞ নই। তারপরও ব্যাক বেঞ্চে বসে যেসব জিনিস শিখেছি। তার ভিত্তিতে কিছু জিনিস বলতে পারি।

পরিবেশ বিপর্যয় জিনিসটা এত সহজ না। উর্বর মাটি তৈরি হতে বহুদিন সময় লাগে। বালুর উপরে সার ফালায়ে মাটি উর্বরের প্ল্যান এতো সোজা না। ২৪ বর্গকিমি এলাকার মাটি প্রকল্প শেষে সুজলা-সুফলা-শষ্য-শ্যামলা হয়ে যাবে এ কথা দেখবেন ফুলবাড়ি কয়লা প্রকল্পের সাইটে বলা আছে। বাস্তবে খুঁজে দেখেন পৃথিবীতে কয়টা কয়লা খনি লোকালয় উচ্ছেদ করে তৈরি করা হয়েছে। পৃথিবীর কোন কয়লা খনি ডেভেলপ করতে গিয়ে ৪০,০০০ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই। আফ্রিকায় দেশগুলোতে করা হয়ে থাকতে পারে। আমার সঠিক জানা নেই। তবে আমার সীমিত পড়াশোনায় কোন উন্নত দেশে করা হয়েছে কিনা তা চোখে পড়েনি। আগেই বলেছি আমি কয়লা বিশেষজ্ঞ না। করা হয়ে থাকলেও থাকতে পারে। দেঁতো হাসি

তারপর ধরেন ভূগর্ভস্থ পানি প্রবাহ। ২৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে পুরো ডুপি টিলা স্তর কেটে উপড়ে ফেলা হবে। সুতারাং গর্তের একপাশে অ্যাকুইফার যে শুকিয়ে খা খা করবে সেটা বোঝার জন্য হাইড্রোজিওলজিতে পিএইচডি থাকা আবশ্যক না। তাছাড়া ওরা ছ্যাদা বুজায়ে দিতে গিয়ে যে ডুপি টিলার জায়গায় ঠিকঠাক ডুপি টিলা বসিয়ে ভূগর্ভস্থ পানি প্রবাহ আগের মত করে দেবে এমন কথাও বলা নাই। [DPHE থেকে ডিপ টিউবওয়েল ডেটা নিয়ে ডুপি টিলার ডেপথের কনট্যুর করলেই পানি প্রবাহের গতিপথ পাওয়া যাবে] সুতারাং ছ্যাদা বুজায়ে দেবার পর ছ্যাদার দুইপাশে অ্যাকুইফার পুনরুদ্ধার হবে এমন কথা কেউ নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারবে না।


কাকস্য পরিবেদনা

সুমন চৌধুরী এর ছবি

বেঁচে থাকো দ্রোহীন্দ্রনাথ ঠাকুর!!!



অজ্ঞাতবাস

স্নিগ্ধা এর ছবি

উফফফ, এই আলোচনায় ঢোকার কোন প্ল্যানই ছিলো না, কিন্তু -

পরিবেশ আল্লাহর দান। তিনি বড়ই মেহেরবান। আল্লাহ চাহে তো কার সাধ্য আছে পরিবেশের ক্ষতি করার? ওটার জন্য কিছু দিতে হবে না।
এই ডায়লগটা পড়ে মন্তব্য না করে আর পার্ল্লাম্না ...... দেঁতো হাসি

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

এইটায় চলুক দেবার জন্যেই লগাইলাম।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আমার উত্তর আমি পেয়ে গেছি। থ্যাঙ্কু মেম্বর!

আপনার উত্তরটা পড়তে পড়তে মনে হলো, আপনি নিজে উদ্যোগী হয়ে এই বিষয়গুলো নিয়ে লেখেন না কেন? গোটা ব্যাপারটা আপনি যে ভাষায় বোঝালেন তাতে যে কেউ বুঝতে পারবে। কঠিন অথচ জনগুরুত্বপূর্ণ সম্পন্ন বিষয়গুলো নিয়ে যারা পারেন, তারা না লিখলে চলবে কী করে?



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দ্রোহী এর ছবি

লিখতে হলে তো জানতে হবে। আমি নিজেই কিছু জানি না। লিখব কী রূপে?

দেঁতো হাসি


কাকস্য পরিবেদনা

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

স্ববিরোধী কথা হয়ে গেল মেম্বর। আমি জানি, আপনার বিষয় আপনি শুধু জানেন না - ভালোভাবে জানেন। একথা আরো দশ জনেও জানে।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

মানুষের জন্য দেশ....৪০০০০ সংখাটি কি অতি ক্ষুদ্র???

tofayel71@gmail.com

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

খুবই চমৎকার আর্টিকেলটা কেঁচেগন্ডুষ করলেন 'ক্ষুদ্র স্বার্থে বৃহত্তর স্বার্থের' দোহাই দিয়ে ৪০ হাজার মানুষের গৃহহারাটা জায়েয করতে গিয়ে। আপনার কাছ থেকে মানবতা বিবেচনা সহ আরো আর্টিকেল আশা করছি।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

মাহফুয খান এর ছবি

ধন্যবাদ মোর্শেদ ভাই,
আপনি ঠিকই বলেছেন। আসলে অইটা আমার উদ্দ্যেশ্য ছিলনা, যাইহোক হয়তো এ আমার অপরিনামদর্শিতা। তবে ভাই কেউ যদি গঠনমূলক সমালোচনা করে ভালো লাগে আর যখন কেউ ধরেই নেয় তাল্গাছ আমার তখন বিষয়টা বিরক্তির পর্যায়ে চলে যায়। ভবিশ্যতে চেষ্টা করবো বিতর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে আরো সাবধান হওয়ার।

নৈষাদ এর ছবি

ঢাকার বাইরে এই মুহূর্তে, দ্রুত একটা মন্তব্য করলাম। বিস্তারিত মন্তব্য করবার ইচ্ছা আছে।

ভূতাত্ত্বিক বিচারে বাংলাদেশকে তিনটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। - একটা ম্যাপ দিয়ে ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করলে বুঝতে সুবিধা হত, এবং পরবর্তী মন্তব্য করা যেত।

বেসিন অঞ্চলে যদিও অদ্যাবধি ব্যাপক আকারে ভূতাত্ত্বিক জরিপ পরিচালিত হয়নি, তবুও এখানকার সাধারন ভূতাত্ত্বিক অবস্থা বিচারে এ কথা বলা যায় যে এই অঞ্চলে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীন, কিংবা এই অঞ্চলে যে রকম পরিবেশে গ্যাস থাকতে পারে তা খুজে বের করার জন্য দরকার অত্যাধুনিক প্রযুক্তি যা আমাদের নেই – আবার জানতে ইচ্ছা হচ্ছে। ব্লক ১০ এবং ব্লক ৭ কি বেসিন অঞ্চলে? সেখানে গ্যাস খুজে বের করার জন্য দরকার অত্যাধুনিক প্রযুক্তি যা আমাদের নেই – তাই কি?

মাহফুজ খান [অতিথি] এর ছবি

ব্লক ৭ সম্পুর্ন ভাবে বেসিন অঞ্চলে আর ব্লক ১০ আধা আধি

অতিথি লেখক এর ছবি

অল্প কিছুদিন আগে আমি সশরীরে বড়পুকুরিয়া পরিদর্শণ করেছি, আমার মনে হয় উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করা হলে ওভারঅল লাভ বেশী হবে।

হাসিব এর ছবি

আপনার হিসাবটা কী ছিলো? আমাদের সাথে শেয়ার করেন। আমরাও লাভের গুড়ের স্বপ্ন দেখা শুরু করি।
________________________________________________
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি

শামীম এর ছবি

চমৎকার তথ্যবহুল পোস্ট।

মানুষজনকে পূণর্বাসন করতে গেলেই যে সেটা এক কথায় খারাপ এমন জেনারাইলেজশন করতে রাজি নই আমি। যমুনা ব্রীজ করতে অনেক রিহ্যাবিলিটেশন করতে হয়েছে, হাতিরঝিল প্রকল্পেও অধিগ্রহণ কম না। যে কোনো উন্নয়নমূলক প্রকল্পেই এইরকম অধিগ্রহণ, উচ্ছেদ জড়িত থাকে ... প্রশ্ন হল সেটা ঠিকমত মিটিগেট করা হল কি না ... কিংবা সামগ্রীক বিচারে কোনটা লাভজনক।

বিদ্যূৎ উৎপাদনে সরাসরি বিদ্যূতের মূল্যের চেয়ে লাভ বেশি হয় ... কারণ এই সচলায়তনেই কোনো একটা পোস্টে দেখেছিলাম যে সাড়ে তিন টাকার বিদ্যূতে প্রোডাক্টিভিটি বাড়ে ৩০ টাকার। কাজেই লাভের হিসাবের সময় ঐ হিসাবটা যেমন দেখতে হবে, তেমনি ক্ষতির হিসাবটাও করা বাঞ্চনীয়। একটা পূর্ণমাত্রার নিরপেক্ষ Environmental Impact Assessment করা গেলে প্রাইমারি, সেকেন্ডারি, টার্সিয়ারী ইত্যাদি সমস্ত বিষয় সিস্টেমেটিকভাবে বের করা যেত বলে মনে করি। এখানে তুলনীয় অপশন হবে ৩টি: ওপেন মাইনিং, টানেল পদ্ধতি এবং নো প্রোজেক্ট।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

মাহফুজ খান [অতিথি] এর ছবি

ধন্যবাদ শামীম ভাই

সুমন চৌধুরী এর ছবি
সচল জাহিদ এর ছবি

মাহ্ফুজ। আপনাকে সচলায়তনে স্বাগতম।

আপনার পোষ্টের বক্তব্যে পাঠকের উপর বেশ কিছু সরাসরি বা উহ্য ভাবে মতামত বা প্রশ্ন রেখে গেছেন। আমি যদি ক্রমানুসারে সাজাই তা নিম্নরূপ হবে, সেই সাথে নিজের কিছু মন্তব্যঃ

১) প্রথমে বাংলাদেশের কোথায় কোথায় খনিজ সম্পদ বিশেষত গ্যাস বা জ্বালানী তেল পাবার সম্ভাবনা আছে তা তাত্ত্বিক ভাবে ব্যাখ্যা করনঃ
-----চমৎকার তথ্যবহুল বিশ্লেষণ

২) বাংলাদেশে সম্ভাব্য গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের ক্ষেত্রে বাপেক্সের সীমাবদ্ধতা এবং বিদেশী সংস্থার সাথে বন্টন চুক্তিতে যাওয়ার প্রশ্নঃ
-----একমত, নিজেদের সীমাবদ্ধতা থাকলে অন্যের সাহায্য নিতে হয়েই পারে।

৩) অনাবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্র এবং তা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা এবং চাহিদার বিশ্লেষণ বনাম কয়লা কেন্দ্রিক বিদ্যুৎ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা এবং চাহিদার বিশ্লেষণঃ

------ভাল বিশ্লেষণ, একমত।
৪) কয়লা কেন্দ্রিক বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সেই সাথে ফুলবাড়ি কয়লাক্ষেত্রের মজুদ বিশ্লেষণ, ওপেন পিট মাইনিং আর আন্ডারগ্রাউন্ড মাইনিং এর বিশ্লেষণ ও তুলনা এবং তার বিচারে ভূত্বাত্তিক ভাবে ওপেন পিট মাইনিং এর স্বপক্ষে যুক্তি প্রদর্শনঃ
------ ভাল বিশ্লেষণ, একমত

৫) ফুলবাড়ি ওপেন পিট মাইনিং এর লাভ ক্ষতির হিসাবে মানবতা, পরিবেশ, পানিসম্পদ, নৃতত্ত্ব এগুলোকে বিশ্লেষণঃ
------পোষ্টের সবচেয়ে দূর্বল দিক অথচ এটিই সবচেয়ে গুরুত্ত্বপূর্ণ।

আপনি পুরো আলোচনাটি করেছেন এমন ভাবে যেন শেষের কিছু আগে এসে আমরা সবাই একমত হই যে বর্তমান পরিস্থিতিতে ফুলবাড়ি কয়লাখনি থেকে ওপেন পিট মাইনিং এ বাংলাদেশের যাওয়া উচিৎ। কিন্তু আপনি লাভের ভাগটা দেখালেন কিন্তু ক্ষতির ভাগটা উহ্য বা ঝাপসা রাখলেন। আপনার আলোচনা দুই পর্বে হতে পারতঃ প্রথম পর্বে ওপেন পিট মাইনিং এর প্রয়োজনীয়তা আর দ্বিতীয় পর্বে তার সমস্যা বিশ্লেষণ এবং তার পরে আপনি পাঠককের কাছ থেকে মতামত আশা করতে পারেন তার আগে নয়। আপনি মানবতা, পরিবেশ, পানিসম্পদ, নৃতত্ত্ব এগুলো আগে বিশ্লেষণ করুন তার পরে তর্ক বিতর্ক শুরু করা যেতে পারে। ওয়েবসাইট ঘেটে তথ্য বের করা পাঠকের দায় নয় বরং লেখকের দ্বায়িত্বের মধ্যে পড়ে, পাঠক ইচ্ছে করলে তা শুধু খতিয়ে দেখতে পারে। আশা করি বুঝতে পেরেছেন ঠিক কোন বিষয়ের উপর গুরুত্ত্ব আরোপ করতে চেয়েছি।

তবে সবকিছু করার আগে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের লাভ ক্ষতির হিসেবটা একটু দেখে আসবেন, হয়ত সেক্ষেত্রে ফুলবাড়ির বিশ্লেষণটা আরো সহজ হবে।

----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
সচল জাহিদ ব্লগস্পট


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

হাসিব এর ছবি

-----একমত, নিজেদের সীমাবদ্ধতা থাকলে অন্যের সাহায্য নিতে হয়েই পারে।

সেই সাহায্য নেবার সীমারেখাটা কোথায়? ৬%-৯৪% হিসেবটা কী আপনার ন্যায্য মনে হয়? বাংলাদেশ সরকার নিজেই এই কাজটা করবে এই দাবিটা আমরা তুলি না কেন? ওটা করলে তো ৯৪%টা দিতে হয়না।
তবে সবকিছু করার আগে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের লাভ ক্ষতির হিসেবটা একটু দেখে আসবেন,

যেখান থেকে দেখে আসতে বলছেন সেখানে কি বিপুল জনগোষ্ঠিকে উতখাতের রাজনৈতিক পরিণতি সম্পর্কে আলোকপাত হয়েছে? পারলে বিশ্লেষণের সোর্সগুলো একটু শেয়ার করুন। আমরাও জানি, শিখি।

________________________________________________
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি

সচল জাহিদ এর ছবি

কিছুটা ভুল বুঝেছেন হাসিব ভাই। কি অনুপাতে বিদেশি কন্সাল্টিং ফার্ম তেল গ্যাস বন্টন চুক্তি করতে চায় সে সম্পর্কে ওয়াকেবহাল নই। আমি সাধারণ প্রেক্ষাপটে বলেছি নিজেদের কাছে যদি প্রযুক্তি না থাকে তাহলে বাইরে থেকে সাহায্য নেবার কথা। বাংলাদেশ সরকার নিজেই যদি করতে পারে তার থেকে ভাল আর কিছু নেই। সে সম্পর্কিত অবকাঠামো বা প্রযুক্তিগত বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ আছে কিনা সে সম্পর্কে ভূতত্ত্ববিদরা ভাল বলতে পারবেন।

যেখান থেকে দেখে আসতে বলছেন সেখানে কি বিপুল জনগোষ্ঠিকে উতখাতের রাজনৈতিক পরিণতি সম্পর্কে আলোকপাত হয়েছে? পারলে বিশ্লেষণের সোর্সগুলো একটু শেয়ার করুন। আমরাও জানি, শিখি।

কথাটি বলা হয়েছে অন্যভাবে। কাপ্তাই বাঁধ থেকে আমাদের লাভের চেয়ে ক্ষতি হয়েছে অনেক বেশি। ২৫০ বা তার চেয়েও কম মেগা ওয়াট বিদ্যুতের জন্য সেখানে নৃতাত্বিক যে ক্ষতি হয়েছে তার ক্ষতির আর্থিক হিসেব করা সম্ভব নয়। এই নিয়ে বিচ্ছিন্ন কিছু গবেষণা হয়েছে। আমার সাথেই বাংলাদেশের একজন পিএইচডি করছেন সেখানকার নৃতাত্ত্বিক পরিবর্তন নিয়ে। ভাল তথ্যসুত্র পেলে আপনাকে জানাবো নিশ্চয়ই।

----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
সচল জাহিদ ব্লগস্পট


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

সাইফ তাহসিন এর ছবি

বস, বিশাল লেখা, মনে হয় ২-৩ পর্বে ভেঙ্গে দিলে ভালো হইত। আসলে লেখার বিষয়বস্তু সম্পর্কে মতামত দেবার ক্ষমতা আমার নাই। তবে মানবিক কারণে পোস্টের সাথে সহমত হওয়া সম্ভব না বস!

তবে কিছু অফটপিক চাপা মাইরা যাই, লেখার প্যারাগুলো আরেকটু ছোট করে দিও বস, সেই সাথে ছবির পরিমাণ বাড়ায় দিলে বুঝতে সুবিধা হয়। আর প্রতি প্যারার মাঝে ১-২ লাইন ফাঁক দিলে আরো ভালো হয়। তবে এগুলা কোনটাই খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়, সবই আমাদের আরামের জন্যে। তবে যে গতিতে লেখা আসতেছে, আশাকরি এসব সমস্যা তুমি আগামী সপ্তাহের মাথাতেই কাটিয়ে উঠবে।

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

অতিথি লেখক এর ছবি

বস সামনে একটা কর্ম মুখর সপ্তাহ আসতেছে, লেখার গতি স্লো হইতে বাধ্য

সাইফ তাহসিন এর ছবি

নারে ভাই, কাজের চাপ যত বাড়ে লেখার চাপও তত বাড়ে, দেখবা মঙ্গল বার যাইতে না যাইতে না লিখে থাকতে পারতেছ না।

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

তানভীর এর ছবি

বিদেশী কোম্পানি দিয়ে তেল-কয়লা উত্তোলনের লাভ-ক্ষতির হিসাব জানার চেয়েও বেশি জরুরী এসব বেনিয়া কোম্পানি অন্য দেশে কী করেছে তার ইতিহাস জানা। জ্বালানী ও খনিজ সম্পদের এত প্রাচুর্য থাকা সত্ত্বেও নাইজেরিয়া বা আফ্রিকার দেশগুলো কেন এত দরিদ্র তা বুঝতে পেটে বেশি বিদ্যা থাকা লাগে না। এসব বেনিয়া কোম্পানি আম্রিকার মতো দেশকেও কোনো তোয়াক্কা করে না। শুধুমাত্র আম্রিকা বলেই গালফ অফ মেক্সিকোতে ডিপওয়াটার হরাইজনের ঘটনায় বিপি শুয়োরের বাচ্চারা কিছু ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। অন্য কোনো দেশ হলে সেটা অসম্ভব ছিলো। সে ক্ষতিপূরণও যারা এ ঘটনায় সত্যিকার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তারা পাচ্ছে না। নীতিনির্ধারকদের খুশি করার পেছনে বেশিরভাগ টাকা ব্যয় হচ্ছে যেন বিপি নির্বিঘ্নে তার ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারে। ভারতের ভোপালে ইউনিয়ন কার্বাইড, বাংলাদেশে নাইকো কী করেছে আমরা সবাই দেখেছি। আমার মতে কোনো দেশের যদি খনিজ সম্পদ বা জ্বালানি উত্তোলনের নিজস্ব সামর্থ্য না থাকে তবে তার উচিত তা অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তেল-কয়লা জ্বালানী সব মাটির নিচেই পুঁতে রাখা। তাতে আখেরে অনেক ফায়দা, অন্তত খাল কেটে আনা কুমিরের কামড় থেকে বেঁচে থাকা যাবে।

দ্রোহী এর ছবি

কী বলেন? বিপির আব্বা টনি হেওয়ার্ড অতি ভদ্রলোক।

গালফ অফ মেক্সিকোর ডিপ ওয়াটার হরাইজনের ঘটনায় দায়ভার নিতে তিনি যেভাবে মহামূল্যবান শ্যাগ কার্পেটে নেংটো হয়ে শুয়ে "উই আর স্যরি" বলেছেন তাতে করে তাকে ক্ষমা না করে পারা যায়?

সাউথ পার্কে সিজন ১৪ পর্ব ১১ ও ১২ তে অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তার অ্যাপলজি ক্যাম্পেইন।

দেঁতো হাসি


কাকস্য পরিবেদনা

দুর্দান্ত এর ছবি

ডিপওয়াটার হরাইজনের ঘটনার দায়দায়িত্ব বিপি এড়াতে পারেনা, ঠিক যেমন পারেনা মার্কিন কেন্দ্রীয় সরকার ও লুইজিয়ানা রাজ্য সরকার, যেমন এড়াতে পারেনা ট্রান্সওশান, হ্যালিবার্টন ও স্মিথ কোম্পানীগুলো - যারা প্রতিযোগীতার ভিত্তিতে নয় এসব টেন্ডার জিতেছিল সরকারি পার্মিটের জোরে।

মার্কিন সরকার যখন বিপিকে উঁচু জরিমানা করে, তখন মার্কিন গণমাধ্যমে সেটা নিয়ে সরব আলোচনা হয়। কিন্তু বিপি যখন এই জরিমানার সিংহভাগকে আবার তার মার্কিন কোম্পানীগুলো থেকে আইনলঙ্ঘন, বা নিম্নমানের কাজের জন্য আদায় করতে সক্ষম হয়, তখন আর গণমাধ্যম নিরব।

বেসরকারি তেল কোম্পানীরা পরিবেশ ও মানুষের অনেক ক্ষতিসাধন করেছে, করছে। এগুলোর দায়দায়িত্ব তাদের নিতেই হবে। কিন্তু পৃথিবীর সবচাইতে বড় তেলকোম্পানীগুলো এবং পরিবেশ ও মানুষের জন্য ক্ষতিকর প্রকল্পগুলোর সবগুলো কিন্তু বেসরকারি নয়। সৌদি আরামকো, নাইজেরিয়ার এনএনপিসি, রাশিয়ার রসনেফ্ট, এর মত কোম্পানীগুলোর কার্যকলাপের জবাবদিহীতা কোথায় হয় বলতে পারেন?

তানভীর এর ছবি

যারা প্রতিযোগীতার ভিত্তিতে নয় এসব টেন্ডার জিতেছিল সরকারি পার্মিটের জোরে।

কিন্তু বিপি যখন এই জরিমানার সিংহভাগকে আবার তার মার্কিন কোম্পানীগুলো থেকে আইনলঙ্ঘন, বা নিম্নমানের কাজের জন্য আদায় করতে সক্ষম হয়, তখন আর গণমাধ্যম নিরব।

সেটাই তো কথা। বিপির যে পরিমাণ ভায়োলেশন রেকর্ড আছে তাতে তাদের কোনো কাজই পাওয়ার কথা না। কিন্তু তারপরও তারা টেন্ডার ছাড়াই কাজ পায়, এসব দুর্ঘটনা, ভায়োলেশনও নিয়মিত করে। আম্রিকাতেই এই হয়, আর গরীব দেশগুলোতে এরা কী পরিমাণ বাটপারি করে তা উপরওয়ালাই মালুম। আমি গতকাল পেনসাকোলা থেকে ঘুরে আসলাম। এখানকার বিচগুলো টুরিস্টশূন্য হয়ে গেছে, হাজার হাজার জেলে, দোকানদার, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী চাকরি/ব্যবসা হারিয়েছে। কারো কোনো বিকার নাই। আজ এখানে বিপি স্থানীয় নীতিনির্ধারকদের সাথে গোপন বৈঠক ডেকেছে। গোপন কারণ এখানকার পাবলিক ক্ষেপে আছে, তাদের সামলাতে এসব নীতিনির্ধারকদের হয়তো কিছু টাকা দিয়ে হাত করা হবে। দেদারসে টাকা ঢালা হচ্ছে মিডিয়ায়। গণমাধ্যম এ হাতের লক্ষী পায়ে ঠেলবে কেন? তাই তারা নিরব। গবেষণায় টাকা ঢালা হচ্ছে প্রচুর (আমি নিজেও দুইখান প্রপোজাল দিয়েছি/দিবো চোখ টিপি ) বিপির টাকায় এসব গবেষণা হয়তো সার্টিফাই করবে এ দুর্ঘটনায় তেমন কোনো ক্ষতি হয় নি। বিদেশি কোম্পানি দিয়ে কাজ করায়ে লাভ-ক্ষতি হাবিজাবির হিসাব তাই বিশ্বাস করি না। আম্রিকার অঢেল সম্পদ আছে এবং প্রয়োজনে এসব বাটপারদের সাথে দর-কষাকষির সামর্থ্যও আছে; তাই এসব আঁচড় তাদের তেমন গায়ে লাগে না। কিন্তু যাদের আছে অল্প এবং দর-কষাকষির সামর্থ্যও নাই, এদের কাছে কাজ দেয়া মানে সারাজীবন জিম্মি হয়ে থাকা। লাভের গুড়ও সব পিঁপড়াই খেয়ে নেবে- কোম্পানি আর তাদের ধামাধরা পলিটিশিয়ানরা।

সরকারি কোম্পানি যখন নিজ দেশে কাজ করে তখন নিশ্চয়ই তারা দেশের স্বার্থ দেখে। বিদেশে কাজ করার সময় তো আর এটা সরকারি থাকে না। তখন তারা বাণিজ্য করতেই যায়। কাজেই জবাবদিহিতারও প্রশ্ন আসে না।

দুর্দান্ত এর ছবি

দেদারসে টাকা ঢালা হচ্ছে মিডিয়ায়।
টাকা শুধু মিডিয়ায় না সরাসরি পাবলিকের পকেটেও দেয়া হচ্ছে। গত সপ্তাহে বিবিসি' স্টিভেন ফ্রাই দেখিয়েছিল। বেকার চিংড়ী মেছুরে থেকে শুরু করে স্থানীয় স্ট্রিপ-ক্লাব, সবাই পয়সা দাবী করছে বিপি'র কাছে থেকে। দৈনিক ১০০০ এর মত ক্লেইম আসছে, এবং বিপি তাদের বাসায় বাসায় চেক পৌছে দিচ্ছে। কাটরিনার পর থেকে হরাইজনের ঘটনার আগ পর্যন্ত যারা এসব উপকূল বা বায়ু' অঞ্চল থেকে সরে গিয়েছিল জীবিকার অভাবে, তারা আবার ফেরত এসেছে স্রেফ বিপি'র চেক এর লোভে।
যেখানে সুশীল মিডিয়া বলছে পাবলিক বিপিকে চলে যেতে বলছে, সেখানে বিপি চলে গেলেই বরং স্থানীয় পাবলিকের চাপ বাড়বে।
তবে এসব গল্প প্রচার করাটা বিপি'র খালাতো ভাই বিবিসি'র স্বজনপ্রীতির বহিঃপ্রকাশও হতে পারে।

তানভীর এর ছবি

এককালীন টাকা বা অনুদান হিসেবে সামান্য কিছু দেয়া হচ্ছে ঠিকই। অনেককে বিপি অস্থায়ী ভিত্তিতে ক্লিন আপ করার জন্য নিয়োগও দিচ্ছে। কিন্তু যারা বিপির কারণে এ অঞ্চলে স্থায়ী চাকরি/ব্যবসা হারিয়েছে, তাদের কাছে এটা জুতা মেরে 'ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল' দান করার মতোই খাইছে বিপি আর মিডিয়ার ভাবসাবও এটা নিয়ে 'ওই তোরে দিসি, লেইখা রাখিস' এইরকম আর কী।

দুর্দান্ত এর ছবি

পোস্ট ও আলোচনা থেকে অনেক নতুন বিষয় জানলাম। ধন্যবাদ।

আসলে শুরুতেই দরকার একটি জাতীয় কয়লা নীতি। কতটুকু আছে, কিভাবে আছে, কিভাবে ও কখন সেগুলো উত্তোলন করা যাবে/হবে, এবং তার মূল্যায়নের নিয়ামক ও ভিত্তিগুলো কি কি হবে, সেগুলোর জাতীয় রূপরেখার অভাব আমরা প্রতিটি পদক্ষেপে হাঁড়ে হাঁড়ে টের পাই।

কয়লা নিয়ে আরো বেশী বেশী গণ আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের যতগুলো সমস্যা বিদ্যুত ও গ্যাসের সাথে সংযুক্ত, তার সবগুলোর সম্পূর্ণ বা আংশিক সমাধান যে দেশের কয়লাতে নিহিত, এই সংযোগটি দেশে সাধারন মানুষ এখনো করেনা। এর একটি কারন যথোচিত গণসংযোগ এখনো ঘটেনি, তারওপর সাধারন মানুষের পক্ষে এই খাতে কোন ভুমিকা রাখা সহজ নয়।

বাংলাদেশ কয়লা অথবা উত্তোলন করতে বিদেশী কোম্পানীকে ডেকে আনার দুটো ছুতা। সেটা হল টাকা নেই, প্রযুক্তি নেই। ২০১০ সালে বসে এসব ছুতার দাম এক কানাকড়িও না। আগামী কালকেই দেশের সরকার যদি শেয়ার বাজারে টাকা চায়, তাহলে যে টাকা প্রথম সপ্তাহে উঠবে তা দিয়ে দু'দশটা এশিয়া এনার্জি নগদ পয়সায় কিনে আরো কিছু বাকী থাকবে। এখানে পেট্রোবাংলার বিপণন কোম্পানীগুলোর উদাহরন দ্রষ্টব্য।

আগেও বলেছি, আবারো বলছি, বিদেশী কোম্পানীর প্রযুক্তি আছে, বাংলাদেশী কোম্পানীর নেই, এসব কথা এখনার ধোপে টেকেনা। অন্তত কয়লাউত্তোলনের মত একটি বয়োঃবৃদ্ধ শিল্পের প্রযুক্তির ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত সুবিধা নিয়ে কোন কোম্পানী আজকের বাজারে খনির ছাড়পত্র পায়না। যদি আমাদের অভাব কিছু আদতেই থেকে থাকে, সেটা হল অভিজ্ঞতার। কিন্তু সরকার যদি আন্তরিক ভাবে ডাক দেয়, তাহলে কয়লাশিল্পে নিবেদিত নিঃস্বার্থ অভিজ্ঞ বাংলাদেশীর অভাব হবেনা।

আমি আশাবাদী। সুনির্দিষ্ট নীতিমালার অধিনে দেশী টাকায়, দেশীয় প্রকৌশলি ও খনি-পেশাদারদের দিয়ে দেশের মানুষের তদারকিতে আমাদের কয়লা উত্তোলন করলে যে সমস্যাগুলোর কথা হচ্ছে, সেগুলো থাকবেনা।

হাসিব এর ছবি

দুর্দান্ত,

কয়লা নীতি আছে বাংলাদেশ। তবে আমি আপনার মতো এতো আশাবাদি না এইসব নীতির বিষয়ে। এই নীতি প্রথম খসড়া করানো হয়েছিলো একটা কনসালেটেন্সি কোম্পানী দিয়ে! পুরো কাহিনী জানতে এখানে ক্লিক করতে পারেন। নিচে প্রশ্ন যে কারণে কিছু ডিগ্রিধারিদের ওপর বিষোদগার করেছেন সেটার কিছু কারণ জানতে পারবেন ওখানে।

তবে শেষ পর্যন্ত নীতিমালা জাতীয় কাগজগুলোতে খুব বেশিরকমের জেনারালাইজড নরম্যাটিভ কথাবার্তা থাকে। যেমন ওখানে বলা থাকবে, জনগণের কল্যানে অমুক তমুক করা হবে। সেইটা করবে কে? সরকারি সাংসদ আর আমলারা। সেইটা যদি সেখানকার জনগণ তাদের স্বার্থের পরিপন্থী মনে করে তাহলে তারা যাবে কোথায়? আদালতে? নাহ, তাদের জন্য সেই রাস্তা বন্ধ করা হয়েছে সংসদে বিল পাস করিয়ে। জ্বালানী ইস্যুতে আইনের কাছে এখন কোন প্রশ্ন তোলা যাবে না। [খবর] বঞ্চিত জনগণের সামনে রাস্তা ছাড়া আর কোথাও গিয়ে দাড়াবার জায়গা আসলেই নেই।

________________________________________________
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি

প্রশ্ন এর ছবি

পোস্টের মূলকথা কি দাঁড়ালো? ফুলবাড়ি কয়লা খনি এশিয়া এনার্জিকে (নতুন নাম জিসিএম) দেওয়া হোক। ওপেন-পিট পদ্ধতিতেই কয়লা তোলা হোক, কারণ তাতে প্রায় সবটাই কয়লা তোলা যাবে। এক ফুলবাড়িতে যত কয়লা আছে তা সব গ্যাস-ফীল্ডের রিসার্ভের সমপরিমাণ। ফুলবাড়ির খনি এশিয়া এনার্জিকে দিলে ঢিসুম-ঢাসুম উন্নতিতে ভেসে যাবে দেশ, হাজার চল্লিশেক মানুষকে এর জন্য একটু কষ্ট তো করতেই হবে!

এই প্রোপাগান্ডা করার জন্য ভূতত্ত্বে এম এস লাগে না, হাইড্রোজিওলজিতে পিএইচডিও পড়া লাগে না। ফুলবাড়িতে ৮,০০০ টাকা বেতনের কর্মচারীরা, যারা বাংলায় কথা বলে, তারাও এই একই কথা বলেছে বছর বছর ধরে। আপনি নতুন কী শোনালেন? কিছুই না!

মানুষ যে এই ভুজুং ভাজুং শুনতে চাইবে না সেটা নিশ্চয়ই আপনার অজানা নয়, তাই শুরু করেছেন সেমি-এ্যাকাডেমিক কথা বার্তা দিয়ে, নিয়ে গেছেন গ্যাসের অপ্রতুলতার দিকে (এক ফাঁকে বলে রেখেছেন বাপেক্সেকে দিয়ে সমুদ্রের গ্যাস এক্সপ্লোর করা সম্ভব না, মাথায় নিশ্চয়ই ছিল পিএসসি২০০৮!)। তারপর পেড়েছেন আসল কথা - সমস্ত কারিগরী দিক বিবেচনায় নিয়েই এশিয়া এনার্জি ওপেন-পিট প্রস্তাব করেছে! বাহ্ বাহ্!

বলতে কি লজ্জা করছে যে, কারিগরী নয়, এশিয়া এনার্জি সমস্ত অর্থকরী দিক বিবেচনা করেছে? ওপেন-পিট পদ্ধতিতে যত প্রফিট হবে, আর কোন পদ্ধতিতে তার আদ্ধেকটাও হবে না তাদের। যদি কোন-রকমে ওপেন-পিটে বাংলাদেশকে রাজী করনো যায় তাহলে আর পায় কে! পরের দিনই এক ধাক্কায় দশ-পাউন্ডে উঠে যাবে জিসিএম এর প্রতি ইউনিট শেয়ারের দাম!

কিন্তু ফুলবাড়ি করায়ত্ত করতে পারলেই বা কেন তাদের শেয়ারের দাম এতো বেশি বাড়বে? গোপন রহস্যটা কী? রহস্য আর কিছুই না! ৯৪% বনাম ৬%! জ্বী পাঠক! এটাই রহস্য। ৬% রয়্যালটি বাংলাদেশকে দিয়ে ৯৪% কয়লা জিসিএম এর হিংস্র মুখ বেয়ে ঢুকে যাবে বিশাল লোভী পেটে। শুধু তাই নয়, পর পর ৯ বছর ধরে তারা পাবে ট্যাক্স হলিডে! আর কী চাই! জিসিএম এর মোট কত লাভ হবে ভাবতে পারেন ২০০ বিলিয়ন ডলার! আর বাংলাদেশ পাবে কত? ৩০ বছরে মোট ৭ বিলিয়ন ডলার! বাহে, এইরকম লুটতরাজ!

উত্তোলিত কয়লার ৮০% রফতানি করবে জিসিএম। এটা না করতে দিলে নাকি এই প্রকল্প কোন মতেই তাদের জন্য লাভজনক হবে না! সুতরাং বাংলাদেশের পবিত্র দায়ীত্ব হচ্ছে তাদের লাভের ব্যবস্থা করা! ফলে বিদ্যুতের মূলা কেবল চোখের সামনেই নাচবে, বাস্তবে ঐ বিষাক্ত মূলা আর খেতে হবে না। রফতানি করা কয়লা আবার কিনে অবশ্য বিদ্যুৎ উৎপাদণ করা যেতে পারে (তবে সে ক্ষেত্রে কয়লা তোলার দরকারটা কী?)।

১৭,০০ চাকুরি? এটি একটি নাম্বার-গেইম ছাড়া আর কিছু না। কেমন করে? ১৭,০০০ নয় জিসিএম এর দাবি প্রায় ২১,০০০ চাকুরি তৈরি করবে এই খনি। ১,১০০ - ২,১০০ জনকে সরাসরি নিয়োগ দেয়া হবে (ডিরেক্ট এমপ্লয়মেন্ট) আর প্রতি একজন কাজ পেলে নাকি অন্তত আরো দশ জনের 'ইনডিরেক্ট' কর্মসংস্থান হবে। অর্থাৎ ২,১০০ গুণ ১০ = ২১,০০০। এই হচ্ছে হিসাব! ৫০,০০০ লোক যে সরাসরি বাস্তুহারা হবে (কর্মসংস্থানও চলে যাবে বটে) এবং তার ফলে নাই হয়ে যাবে লোকাল ইকনমি, অর্থাৎ আরো প্রায় আড়াই লাখ মানুষের কর্মসংস্থান 'ইনডিরেক্টলি' ধ্বংস হবে - সে হিসাব নেবে কে?

আচ্ছা আমরা কি ভেবে দেখেছি স্বাধীন হওয়ার ৪০ বছর পরেও বাংলাদেশ কেন এত দরিদ্র আর অনুন্নত? (এত মানে ৪৯.৮% মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে বাস করে)

একটা দেশের উন্নতি/অবনতির মাপকাঠি কি?
অর্থনীত।
অর্থনীতির ভিত্তি কি?
উৎপাদন।
উৎপাদন করতে কি লাগে?
কাঁচামাল।
কেমন কাঁচামাল?
কৃষিজ ও খনিজ পদার্থ। এই দুই থেকে হয় শিল্প, শিল্পের চালন-বন্টন-ভোগ ইত্যাদি কারণে উৎপত্তি হয় সার্ভিস সেক্টরের।

এখন এই অর্থনীতির মূল উপকরণ/চালিকা কৃষিকে নষ্ট করবে ওপেন-পিট মাইনিং। খনিজ চলে যাবে রফতানি হয়ে বিদেশে। ভালো! ভালো! বাংলাদেশ একটা স্বাধীন দেশ বটে! সেদেশের নেতারা দেশের নেংটি বেচে চানাচুর খান! সে দেশের রক্ত-মাংশ চুষে খেয়ে এক শ্রেণীর 'পন্ডিত' এমএস/পিএইচডি করে আমাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দয়া করে আমাদের পাছা মেরে দেন! আর আমরা ৪৯.৮% মানুষ তিনদিনে একবেলা করে খাই, কখনো না খেয়ে মরি।

অতিথি লেখক এর ছবি

এই পোস্ট নিয়ে আর বেশী পেচানোর ইচ্ছা আমার নেই। কয়লা এশীয়া এনার্জি তুলবে, নাকি পেট্রোবাংলা নিজে তুলবে সেটা একান্তই নীতি নির্ধারকদের ব্যাপার। আমি আমার পোস্টে যেটা চেষ্টা করেছি সেটা হচ্ছে বাংলাদেশের বর্তমান জ্বালানী চিত্র তুলা ধরতে। লেখার শেষ অংশে একটা প্রশ্ন বোধক চিহ্ন জুড়ে দিয়ে আমি ভুল করেছিলাম এবং সে জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছি। এবার আপনার মন্তব্যটা আমাকে লিখতে বাধ্য করলো।

মানুষ যে এই ভুজুং ভাজুং শুনতে চাইবে না সেটা নিশ্চয়ই আপনার অজানা নয়, তাই শুরু করেছেন সেমি-এ্যাকাডেমিক কথা বার্তা দিয়ে, নিয়ে গেছেন গ্যাসের অপ্রতুলতার দিকে (এক ফাঁকে বলে রেখেছেন বাপেক্সেকে দিয়ে সমুদ্রের গ্যাস এক্সপ্লোর করা সম্ভব না, মাথায় নিশ্চয়ই ছিল পিএসসি২০০৮!)

আপনি সেমি-একাডেমিক কথাবার্তা বলতে কি বোঝাতে চাইছেন, আপনি কি একটু দয়া করে একাডেমিক কিছু কথাবার্তা লিখে সেটা পরিস্কার করবেন?

দেশের বাইরে আছেন কত বছর? দেশে গেছেন ইদানিং? নাকি ঢাকা শহরের অভিজাত এলাকায় বসবাস আপনার? আপনি কি জানেন সারা দেশে এখন লোডশেডিং এর কি অবস্থা? কলকারখানা ঘন্টার পর ঘন্টা বন্ধ থাকছে বিদ্যুতের অভাবে। দিনের পর দিন বন্ধ থাকছে গ্যাসএর অভাবে। এতো দেশপ্রেম, বাপেক্স প্রেম, বলেন না বাপেক্সকে সমুদ্রাঞ্চলে অনুসন্ধানে নেমে যেতে। নাকি আপনি ধরে নিছেন যে আপনি ভালো আছেন বলে গোটা দেশটা ভালো আছে সুতরাং এখন গ্যাস তোলার আর দরকার নাই, ওটা থাক বাচ্চা-কাচ্চা দিক বড় হোক পরে একসময় তুলবেন, বাপেক্স যখন ফেনা তুলা মুতবে (মানে সাবালক হবে)।

বলতে কি লজ্জা করছে যে, কারিগরী নয়, এশিয়া এনার্জি সমস্ত অর্থকরী দিক বিবেচনা করেছে? ওপেন-পিট পদ্ধতিতে যত প্রফিট হবে, আর কোন পদ্ধতিতে তার আদ্ধেকটাও হবে না তাদের। যদি কোন-রকমে ওপেন-পিটে বাংলাদেশকে রাজী করনো যায় তাহলে আর পায় কে! পরের দিনই এক ধাক্কায় দশ-পাউন্ডে উঠে যাবে জিসিএম এর প্রতি ইউনিট শেয়ারের দাম!

কোন পলিটিসিয়ানের কাছে শুনেছেন এই কথা? আমার জানামতে এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন কথাবার্তা একমাত্র পলিটিসিয়ানরাই বলতে পারে। দয়া করে দুইটা পদ্ধতির বিষয়ে একটু পরাশুনা করেন, ঐ এলাকার ভূতত্ত্ব সম্পর্কে ভালোমত জানেন তারপর মন্তব্যটা করেন, আপনার মত দায়িত্বজ্ঞানহীন কথা বলতে হয়তো পি এইচ ডি লাগেনা, তবে কোন বিষয় নিয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত দিতে পি এইচ ডি লাগে বৈকি।

আচ্ছা আমরা কি ভেবে দেখেছি স্বাধীন হওয়ার ৪০ বছর পরেও বাংলাদেশ কেন এত দরিদ্র আর অনুন্নত? (এত মানে ৪৯.৮% মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে বাস করে)

এর কারণতো একটাই, আমরা সবাই সব বিষয়ে জেনে বসে আছি, আর আমি যেটা জানি সেইটাই শেষ জানা, এর পরে আর কিছু নেই, আমাদের এই মনোভাব।

একটা দেশের উন্নতি/অবনতির মাপকাঠি কি?
অর্থনীত।
অর্থনীতির ভিত্তি কি?
উৎপাদন।
উৎপাদন করতে কি লাগে?
কাঁচামাল।
কেমন কাঁচামাল?
কৃষিজ ও খনিজ পদার্থ। এই দুই থেকে হয় শিল্প, শিল্পের চালন-বন্টন-ভোগ ইত্যাদি কারণে উৎপত্তি হয় সার্ভিস সেক্টরের।

আমি অর্থনীতি খুব একটা বুঝি না, তবে আপনার ব্যাখাটা আমার পছন্দ হয়েছে। আপনি কি জানেন বাংলাদেশের জিডিপি তে কৃষির শেয়ার কত---২৩%, আর শিল্পের ৪৩%। যে হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে করে কিছুদিন পরে আপনাকে ঘরের চালে চাষ করতে হবে।

আমি আবারো একটা কথা পরিস্কার করে বলতে চাই, কারো দালালী করার জন্য লেখাটা লেখি নাই, পোস্ট টার মূল উদ্দেশ্য ছিল আমাদের বর্তমান জ্বালানী সম্পদের মজুদ, চাহিদা এবং ভবিশ্যত তুলে ধরা (জীবনের প্রথম লেখা তাই লেখক হিসেবে যত দিক বিবেচনা করে লেখা দরকার ছিল সেটা করতে পারিনি বিধায় হয়তো কোন কোন অংশ বিতর্কিত)।

হাসিব এর ছবি

কোন পলিটিসিয়ানের কাছে শুনেছেন এই কথা? আমার জানামতে এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন কথাবার্তা একমাত্র পলিটিসিয়ানরাই বলতে পারে।

পলিটিসিয়ানদের উপরে এতো ক্ষ্যাপা কেনু আপনি? আর যেই প্যারাটা উদ্ধৃতি করলেন সেইখানে কোন কথাটা দায়িত্বজ্ঞানহীন বলেন দয়া করে। দরকার হলে শেয়ার মার্কেট, ফিন্যান্স-অর্থনীতির ওপর ৫-১০টা পিএইচডির সাহায্য নিতে পারেন, কোন অসুবিধা নেই।

আর ভালো কথা, উপরে কিছু প্রশ্ন আপনাকে করা হয়েছে, সেগুলো বিষয়ে কিছু বলুন দয়া করে।
________________________________________________
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি

প্রশ্ন এর ছবি

পোস্টের শিরোনামে জানান দিয়েছেন আমাদের করণীয় কী সে সম্পর্কে আর এখন বলছেন, কয়লা কে তুলবে সেটা নীতি-নির্ধারকদের ব্যাপার! সাধু! খাইছে

বিদ্যুৎ না থাকার কথা বলছেন যে বড়! বিদেশি কোম্পানী-বান্ধব ব্লগারের মুখে কি বিদ্যুৎ না থাকার প্রশ্ন শোভা পায়? আপনার তো বরং সে প্রশ্নের 'উত্তর' দেবার কথা! আপনার ভরসার পাত্র মাননীয় নীতিনির্ধারকরা তো বিদেশি কোম্পানীর হাতে গ্যাসের খনিও তুলে দিয়েছেন, কয়লার খনিও তুলে দিয়েছেন। তাহলে বিদ্যুৎ নেই কেন? এখন আবার সেই বিদ্যুতের দোহাই দিয়েই নতুন করে আরেক বিদেশি কোম্পানীকে ৯৪ ভাগ কয়লা দিয়ে দিলে, যার ৮০% রফতানী হয়ে বিদেশে চলে যাবে, তাহলে বিদ্যুৎ আসবে কোত্থেকে?

যাক, তাও ভালো, একটু ঘুরিয়ে হলেও স্বীকার করলেন যে পোস্ট নিয়ে ইতিমধ্যেই যথেষ্ঠ (তেনা?) পেচিয়েছেন। তবে আমিও বিশ্বাস করি আপনি কারো দালালি করার জন্য এই লেখাটা লিখেননি। নিশ্চয়ই আপনি জানতেন না যে, এশিয়া এনার্জি গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বাঙালিদের বলদ বানানোর জন্য অনলাইলে/অফলাইনে বিশেষ পিআর ক্যাম্পেইন চালাচ্ছে। তাদের বক্তব্য-মতে, বাংলাদেশ সরকারের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে এখন তাদের এখন স্ট্রং-ফুটিং রয়েছে। আপনার জীবনের প্রথম লেখাটির জন্য মোক্ষম সময় হিসেবে এই সময়টিকেই বেছে নিয়েছেন - এটা অবশ্যই একটি কাক-তাল মাত্র।

সাইফ তাহসিন এর ছবি

সে দেশের রক্ত-মাংশ চুষে খেয়ে এক শ্রেণীর 'পন্ডিত' এমএস/পিএইচডি করে আমাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দয়া করে আমাদের পাছা মেরে দেন!

ভাই প্রশ্ন আহমেদ, পোস্ট লেখককে ব্যক্তিআক্রমন করে আপনে কি হাসিল করবেন একটু বুঝিয়ে বলবেন? আসলে কি উদ্দেশ্য আপনার? পোস্ট লেখককে প্রশ্ন করা নাকি ভুল অ্যাপ্রোচে লেখা পোস্টের সুযোগ নিয়ে তেনা পেচানো। পোস্ট লেখক দেশের মানুষের রক্ত চুষে PhD করতে আসেনি এটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি।

৪০ হাজার মানুষকে বাস্তুহারা করা গ্রহনযোগ্য নয়, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই, কিন্তু তারচেয়েও বড় সমস্যা কিন্তু ৯৪-৬% এর খেলা, পোস্ট লেখকের সম্মতি বা অসম্মতিতে এটা চালু হবে না বা বন্ধও হবে না।
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

প্রশ্ন এর ছবি

ব্যাক্তি-আক্রমণ করলাম কই দাদা! এমএস/পিএইচডি করা বান্দা কি এই দেশে আর নেই বলে আপনার ধারণা? ভুল! তৌফিক/তামিম/মাহমুদ - সবাই-ই 'মাশাল্লাহ' কম বেশি এমএস/পিএইচডি/এবিসিডি/এক্সওয়াইযেড বগলে নিয়ে হাঁটাচলা করেন এবং যার যখন সুযোগ আসে তিনি তখন আমাদের মাথায় হাত বুলাতে চেষ্টা করেন। এই এবিসিডি-অলাদের সমস্যা হচ্ছে, তারা মনে করেন এই দেশটার পচুর পিউবিক হেয়ার হয়েছে, এবং ড্রেসিং করাটা তাদেরই দায়ীত্ব।

সাইফ তাহসিন এর ছবি

আপনার উত্তরটা পছন্দ হয়েছে, দেন না এমন কয়েকজন এবিসিডির বিস্তারিত বর্ননা, কিছু মুখোস উম্মোচন হোক, কাজের কাজ না হলেও মানুষতো চিনব।

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

শামীম এর ছবি

হঠাৎ করেই গত ১৯শে মে'তে লেখা অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ স্যারের এই পোস্টটা চোখে পড়লো। সেখানে উনি বলেছেন কেন ওপেন পিট উপযুক্ত নয়। সরাসরি জার্মানিতে ওপেন পিটের খনির সাথেও তুলনা করেছেন। এছাড়া লেখার কয়েকটি মন্তব্যেও কিছু চমৎকার বিশ্লেষণের লিংক আছে।

যেমন: লিংক-১, লিংক-২
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।