মেরু ভালুকের দেশে

তারেক অণু এর ছবি
লিখেছেন তারেক অণু (তারিখ: শুক্র, ০৫/০৮/২০১১ - ৯:১০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে,
সবচেয়ে ঊষর, রূক্ষ, জনমানবহীন, প্রাণশূন্য---
৭৮ ডিগ্রী ১৩ মিনিট উত্তরে অবস্থিত স্পিটসবের্গেন দ্বীপপুঞ্জ পৃথিবীর বুকে এক প্রাকৃতিক বিস্ময়। বর্তমানে নরওয়ের অন্তর্গত (যদিও রাজধানী অসলো থেকে দুই হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, ভূখণ্ডের সাথে কোন যোগাযোগ নেই)। আয়ারল্যান্ডের সম আয়তনের এই হিমবাহ আর ফিয়র্ডময় পাথূরে ভূমিই মানবজাতির সর্ব উত্তরের বসতি, বরফের সন্তান ইন্যুইট ( এস্কিমো)রাও এত উত্তরে বাস করে না! যদিও এখানে বসবাসরত মানব সন্তানের সংখ্যা হাজার দুইয়ের বেশী হবে না, কিন্তু বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তর স্থলচর শ্বাপদ মেরু ভালুকের সংখ্যা সাড়ে চার হাজারের বেশী! এ এক এমন অজানা রাজ্য যেখানে কোন রকম গাছ জন্মায় না, বছরে ছ মাস সুমেরু সূর্যের আলোক বন্যায় ভাসে, অন্য ছ মাস গাঢ় আঁধারে ঢাকা, তীব্র শীতকালে পান্না সবুজ ঝলমলে মেরুজ্যোতির আলোয় বই পড়া যায় সহজেই, ক্ষুদে শহরের বাহির হতে চাইলেই ভালুকের ভয়ে সাথে নিতে হয় ভারী বন্দুক, রাস্তায় গাড়ীর চেয়ে বেশী চলে স্নো মোবাইল আর কাছের হ্রদগুলোতে তিমি, সীল আর সিন্ধুঘোটকদের রাজত্ব! চলুন পাঠক ঘুরে আসি মেরু ভালুকের রাজ্য, বিশ্বের বিস্ময় স্পিটসবের্গেন থেকে।
H-1
P1080645
দিগন্ত আলো করে থমকে দাঁড়ানো্ গাঢ় কমলা রঙের এক অদ্ভুত সূর্যোদয়ের ভোরে আমরা পা রাখলাম স্পিটসবের্গেনের রাজধানী লঙইয়ারবিয়েনে, এই দ্বীপপুঞ্জের এক মাত্র এয়ারপোর্টটি এখানেই অবস্থিত। ক্ষুদে বিমানবন্দরের চারিদিকেই উঁচু উঁচু চোখা সব পর্বতশৃঙ্গে ভর্তি, সাথেই লাগোয়া এক জাদুময় ফিয়র্ড,ভোরের রেশম নরম সোনালী আলোয় গাঢ় কুয়াশার কুণ্ডলীর ফাঁকে ফাঁকে চকচকে পারদ পৃষ্ঠের মত তার আধা-বাস্তব অস্তিত্ব আমাদের এই পরিবেশের অনভ্যস্ত চোখে ধরা পড়ছে। বাসে চেপে রওনা দিলাম আপাতঃ গন্তব্য গেস্ট হাউস ১০২- এর উদ্দেশ্যে, বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম বারের মত উত্তর মেরু অভিযানে অংশ নেবার এক পর্যায়ে এই সর্বযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দ্বীপে আসা। দুই বার মিলিয়ে দিন দশেকের উপর থাকব এখানে, সঙ্গী বিখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ও অভিযাত্রী ইনাম আল হক।
P16
স্পিটসবের্গেন সুমেরু অভিযাত্রীদের কাছে বরাবরই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান বলে বিবেচিত- নানসেনের ঐতিহাসিক মেরু যাত্রা থেকে শুরু করে অ্যামুন্ডসেনের জীবনের শেষ ফ্লাইট, নানা বিখ্যাত অভিযানের সাথে এর নাম ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। পরবর্তীতে কয়লার খনির সন্ধান পাওয়ায় এখানে ক্ষুদে ক্ষুদে একাধিক শহর গড়ে ওঠে, যদিও খনি পরিত্যক্ত হবার পরে বর্তমানে কেবল অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয়দের অভিযানের উপরেই নির্ভর করে স্থানীয়দের জীবিকা।
গেস্ট হাউজ ১০২তে আমাদের বরাদ্দ ঘরে কাধের ভারী বোঝা রেখে থিতু হয়ে বসলাম অবশেষে, এককালে কয়লাখনির শ্রমিকদের বাসস্থান হিসেবে ব্যবহৃত রঙচটা কাঠের এই দোতলা বাড়ীটিই এখন হোটেল হিসেবে চালানো হয়।
P1080412
লঙইয়ারবিয়েনে এসেছি দশ মিনিটও হয় নি কিন্তু এর মধ্যেই আমাদের সারা শহর ভ্রমণ হয়ে গেছে ( কারণ শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত কিলোমিটার দুয়েক মাত্র)। ছবির মত সাজানো কিছু ঘরদোর, গুটিকয়েক হোটেল, একটা মার্কেট - এই তো!
P1080104
P17
P1080113
আসলে বিশ্বের প্রায় ৮০ ডিগ্রী উত্তরে এর চেয়ে বেশী কিছু আশা করাও অন্যায়। ইনাম ভাই বছর দশেক আগেই অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ ভ্রমণ করেছেন, তিনি জানালেন দক্ষিণেতো ৬৫ ডিগ্রীর পরে কোন জনবসতি বুনো কল্পনাতেও আসে না।
হোটেল রুমের জানালার পাশেই খানিকটা পাথূরে বরফময় জায়গার পরপরই খাঁড়া কয়েকশ মিটার উঠে গেছে রূক্ষ ন্যাড়া পর্বত। আসলে গোটা স্পিটসবের্গেনই খাঁড়া সব পর্বতে ভর্তি, যার চূড়াগুলি তুষারাচ্ছাদিত থাকে সারা বছর, আকাশ থেকে এই জন্যই দ্বীপটিকে মনে হয় সদ্য কুকুর শোঁকা সজারুর পিঠের মত কাটায় ভর্তি, এই কারণেই এর প্রথম আবিস্কারক আজব এই দ্বীপের নাম দেন স্পিটসবের্গেন!
IMG_0276
গোটা বিশ্বে স্পিটসবের্গেন এখন এক সুপরিচিত নাম, কারণে এখানেই স্থাপ্ন করা হয়েছে পৃথিবীর যাবতীয় উদ্ভিদের বীজ( শস্যবীজ পেয়েছে অগ্রাধিকার)। পাহাড়ের অভ্যন্তরে খনির গভীরে যেখানে কোনদিনই সূর্যের আলোর পৌছায় না সেখানে এমন প্রযুক্তিতে তৈরি করা হয়েছে এই ভোল্ট বা বীজ সংরক্ষনাগার যে পারমাণবিক যুদ্ধে পৃথিবী নামের গ্রহটা ধ্বংস হয়ে গেলেও এই সংগ্রহ থাকবে অটুট, ভবিষ্যৎ বিশ্বের মানুষ এখান থেকেই খুজে নেবে নতুন জীবনের আবাহন। এই ভোল্টের তাই আরেক নাম দেওয়া হয়েছে নূহের নৌকা !
এখানকার সবচেয়ে বড় বিজনেস আইটেমের নাম অবধারিত ভাবেই মেরু ভালুক। বিমানবন্দর থেকে শুরু করে হাসপাতাল মায় গির্জা পর্যন্ত সবখানেই তাদের স্টাফ করা মৃতদেহ! সুভেন্যিরের দোকানগুলোতেও তাদের ক্ষুদে পুতুল, ছবি, ক্যালেন্ডার, ভালুকের মুখের ছবিসহ নানা ধরনের কাপড় আর টুপির জমজমাট ব্যবসা। সেই সাথে তাদের বুনো পরিবেশে দেখার জন্য বিভিন্ন ট্যুর অপারেটররা দিচ্ছে লোভনীয় ও ব্যয়বহুল সব অফার।
গেস্ট হাউজের রিসেপশনিস্ট মার্তা জানালো, মেরু ভালুক খুবই কৌতূহলী প্রাণী বিধায় প্রায়ই গ্রীষ্মকালে খাবারের গন্ধ ও অন্যান্য কারণে শহরে ঢুঁ মারতে আসে, আর তখনই চিত্তির! গোটা শহরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়ে যায় নিমিষেই, হেলিকপ্টার চলে আসে প্রবল শব্দের মাধ্যমে ভয় দেখিয়ে ভালুক ভাগিয়ে দিতে, কখনও বা রাইফেলের ফাঁকা গুলি করা হয় ভড়কে দেবার জন্য বা ধোঁয়ার ফ্লেয়ার ছুড়ে দেওয়া হয়, আর মানব জীবন বিপন্ন হলে একেবারে শেষ পর্যায়ে গুলি করতে হয় এই বিস্ময়কর বিরল প্রাণীটিকে।
P1080139
রাতে ডাইনিং টেবিলে সদ্য পরিচিত পোলিশ বন্ধু পিওতর জলোমভ তার অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে মেরু ভালুক আর স্পিটসবের্গেনের অনেক গল্প শুনিয়ে আসর জমিয়ে তুলল, প্রায় ১০ বছর ধরে ফি বছরই সে আসে এই ঊষর দ্বীপে তার দেশের গবেষণাগারের কাজের জন্য। সেই গবেষণাগার এক অতি দুর্গম জায়গায় অবস্থিত, যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হেলিকপ্টার! তার নিজের তোলা ছবিতে দেখা গেল মেরুভালুকের তাদের জানালা ভেঙ্গে প্রায় তাদের গবেষণাগারের ভিতরে ঢুঁকে পড়ার প্রচেষ্টা, শেষ পর্যন্ত গুলি করে মেরে ফেলতে বাধ্য হয় তারা এই বিশাল সাদা বিস্ময়কে। পিওতরের মতে মেরুভালুক চাইলেই এক মৃদু ধাক্কাতেই তাদের পলকা কাঠের বাসস্থান ভেঙ্গে ফেলতে পারে, কিন্ত ভাঙ্গে না তার একমাত্র কারণ তারা তাদের শক্তি সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল নয়! তাই বরঞ্চ মূল বাসস্থানের বদলে প্রায়শই ময়লার ঘরের সামনে তারা বসে থাকে উচ্ছিষ্ট খাবারের আশায়।
Zwierzaki0001
Zwierzaki0000
Zwierzaki0002
Zwierzaki0009
স্পিটসবের্গেনে দুই দফায় আমরা প্রায় ১০ দিন অবস্থান করি, এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল মেরুভালুকের খোঁজে প্রায় হাজার কিলোমিটারের স্নো মোবাইল সাফারি। আমাদের গাইড নরওয়েজিয়ান এরিক( নামটা শুনলেই ঝা করে ত্রাস সৃষ্টিকারী ভাইকিং দস্যু এরিক দ্য রেড বা লাল এরিকের কথা মনে পড়ে যায়, হাজার বছর আগে সেই প্রথম গ্রিনল্যান্ডে মানুষের বসতি স্থাপন করে), যদিও আমাদের গাইড নেহাৎ সাধাসিধে মানুষ, শুধু বলে নিল, ভালুকের দেখা পেলে যেন তার নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করি। এক তীব্র কনকনে ঠাণ্ডার রৌদ্রকরোজ্জল সকালে আমাদের যাত্রা শুরু, প্রথমেই ট্রাভেল এজেন্সির অফিসে যেয়ে জবরজঙ দারুণ ভারী পোশাক পরতে হল, সেই সাথে পায়ের বুট, হাত মোজা, চোখে বিশালাকৃতির গগলস, নিজেদের যখন মোটামুটি নভোচারীর পর্যায়ে মনে হচ্ছে তখন এরিকে বাজখাই চিৎকারে সম্বিত ফিরে পেয়ে বাহনে চাপলাম।
DSC_2559
P1080694
৮ জনের দলে ৬টি স্নো মোবাইল, গাইডের বাহনে এক রূপালী ধাতব বাক্সে ঔষধ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, সেই সাথে এক শক্তিশালী টেলিস্কোপিক রাইফেল!
P31
যাত্রা শুরুর কয়েক মুহূর্তেই পিছনে পরে রইল পৃথিবীর উত্তরতম জনবসতি, আমাদের সামনে একেবারে রূক্ষ অবারিত শূন্য বিস্তৃত পাথূরে ঊষর সীমাহীন প্রান্তর, সেদিক পানে দৃষ্টি পড়তেই কেমন যেন এক শ্রদ্ধা আর ভয় মেশানো অনুভূতি চেপে ধরে আমাদের, পাহাড়ি বরফাচ্ছাদিত তেপান্তর যেন আপন কুহকময় ভাষায় ডাকতে থাকে তার রহস্য উদঘাটনের আহ্বান জানিয়ে।
i 18
P30
প্রথমেই দেখা মিলল একপাল বলগা হরিণের, মনের সুখে বরফ সরিয়ে ঘাস খেয়ে যাচ্ছে, কতক গুলোর মাথায় বেশ জাঁকালো ডালপালা মেলা শিঙের বাহার।
DSC_2738
সম্মুখের পানে অবিরাম ছুটে চলেছি আমরা, দূর দিগন্তের কাছে এক জমাট বাঁধা ফিয়র্ডের কাছে পৌঁছে তবেই যাত্রাবিরতি। দুপুরের খাবারের পালা তখনই সাঙ্গ করতে হল, খাবার বলতে এক প্যাকেট প্রক্রিয়াজাত গুড়ো করা শস্যদানা আর মাংসের টুকরোর সাথে পরিমাণ মত গরম জল মেশানো, তাতেই প্যাকেটের মধ্য থেকে একটা খিচুড়ি জাতীয় খুশবু ছড়িয়ে পড়ল। খেতে নেহাৎ মন্দ না , কিন্তু নিতান্ত বাধ্য না হলে কেউ যে এটা একাধিকবার সহজে খাবে না তা বোঝা গেল।
P25
P1080690
খাবারের জায়গার একেবারেই সাথে লাগানো তুষার মোড়া একটা কাঠের ভগ্নস্তূপ মত চোখে পড়ল, গাইডের কাছ থেকে জানা গেল প্রায় একশ বছরেরও বেশী সময় ধরে তা ব্যবহৃত হয়েছে শিকারিদের শীতকালীন আবাস হিসেবে, বছরের বেশ খানিকটা সময় তারা এখানে আস্তানা গাড়ত মেরুভালুক, মেরুশেয়ালসহ অন্যান্য প্রাণী শিকারের জন্য, ধন্য তাদের সাহস আর ধৈর্যশক্তি। কাঠের সেই ভগ্নস্তূপের কাছেই চোখে পড়ল বহু আকঙ্খিত আবছা কোন বিশাল চারপেয়ে জন্তুর ছাপ, যা ভেবেছি- গাইড দেখেই জানাল মেরুভালুকের পায়ের ছাপ! সম্ভবত আগের দিনের।
A - 8
পায়ের ছাপের মালিকের দুর্লভ দর্শন যেন মিলে সেই আশা করেই আবার যাত্রা শুরু,
P12
খানিক পরেই জমাট বাঁধা দুধের মত ধবধবে সাদা এই সুবিশাল প্রান্তরে হঠাৎই এক কালো বিন্দু নজরে আসল, তীরবেগে চলার জন্য সম্মুখে দেখা সেই কালো বিন্দু ক্রমশ বড় হতে থাকে। অবশেষে সংকেত পাওয়া মাত্র থামলাম সবাই। বোঝা গেলে মেরু অঞ্চলের অন্যতম প্রধান বাসিন্দা সীলের দেখা পেয়েছি আমরা! বেচারা তার গর্তের পাশে শুয়ে আরামে রোদের আমেজটুকু চর্বি থলথলে শরীরে ছড়িয়ে দিচ্ছিল, আমাদের অতি কাছে যাবার প্রবণতাকে উৎকট আপদ জ্ঞান করেই মনে হয় অনেক কষ্টে দুমড়ে মুচড়ে বিশাল শরীরটা নিয়ে সরু গর্তের মধ্যেই ভোজবাজির মত সেঁধিয়ে উধাও হয়ে গেল সে! উল্লেখ্য, সীল উভচর স্তন্যপায়ী প্রাণী হওয়ায় কিছুক্ষণ পরপরই তার মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে হয়, তখন সে তার নিজস্ব গর্ত দিয়ে উপরে উঠে আসে জীবনদায়ী অক্সিজেনের সন্ধানে, আর এই মাহেন্দ্রেক্ষণের অপেক্ষাতেই থাকে মেরুভালুক, অসতর্ক সীলের জীবন সাঙ্গ করে ভুড়িভোজের আশায়! যে কারণে প্রত্যেক সীলেরই থাকে কয়েকটা করে গর্ত আর শ্বাস নেবার প্রয়োজনে ভেসে ওঠার সময় সে থাকে অতিমাত্রায় সতর্ক।
P27
জানা গেলে যে কোন চলমান বস্তুকে সীল তার ২০০ মিটারের মধ্যে আসতে দেয়, তার পরপরই গর্তের নিরাপত্তায় সেধোয় প্রাণের মায়ায়, ঠিক যেমনটি করেছিল আমাদের ক্ষেত্রেও। সেটি ছিল এককালে সুমেরুতে এন্তার মিলতে থাকা রিঙ সীল, আজ মানুষের লোভের কারণে যারা টিকে থাকার লড়াইয়ে কোণঠাসা অস্তিত্বের প্রান্তসীমায়।
যাত্রা আবার শুরু লক্ষ কোটি বছরের পুরনো ঠাণ্ডায় নীল হয়ে থাকা হিমবাহগুলোর উপর দিয়ে। এ যেন আরেক সাহারা, দিক কাল পাত্র শূন্য, চারিদিকেই অথৈ নির্জনতা, হয়তবা এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে দূষণমুক্ত অঞ্চল। আর কত বর্ণের যে বরফ!
p37
P29
এক জায়গায় ১০ মিটার উঁচু এক চকচকে বরফ দেয়ালে অন্তত দশটা ভিন্ন ভিন্ন রঙের বরফের স্ফটিকের সন্ধান পেলাম- হালকা নিল, গাঢ় নীল থেকে সবুজ রঙের বরফ পর্যন্ত, যেমনটা থাকে রূপকথায় জাদুর রাজ্যে!
i 12
মায়াবী এই প্রান্তরের নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এক জমে থাকা ফিয়র্ডের মাঝে দেখা হল নোঙ্গর ফেলা স্কুনার জাতীয় ছোট্ট জাহাজ কাম হোটেল নর্দান লাইট বা মেরু জ্যোতির সাথে, এখানেই আমাদের কফি পানের বিরতি। নর্দান লাইট গ্রীষ্মকালে পর্যটকদের নিয়ে পাল তুলে ঘুরে বেড়ায় এই তিমি আর সীলময় ফিয়র্ডে, আর শীতের শুরুতেই নোঙ্গর ফেলে গ্যাঁট হয়ে বসে থাকে জমাট বরফের মাঝে পরবর্তী বসন্ত পর্যন্ত। তখন সে অভিযাত্রীদের জন্য মাথা গোঁজার হোটেল হিসেবে কাজ করে।
P36
ship1
DSC_2609
ওখানেই দেখা মিলল একদল হাস্কি কুকুরের, যাদের বলা হয় সুমেরুর সত্যিকারের হিরো, যারা ইন্যূইটদের( এস্কিমো) স্লেজ টানা থেকে শুরু করে শিকার, পাহারা নানা কাজে ওতপ্রতো ভাবে জড়িয়ে আছে হাজার বছর ধরে। আমাদের সাথে দেখা হওয়া দলটিতে ছিল পনেরটি হাস্কি, প্রত্যেকের জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা নাম আর কাঠের এক ক্ষুদে বাক্স বাড়ী, সেই বাক্সের উপরে আবার তাদের নাম লেখা!
P1080688
DSC_2448
কফিপানের মিনিট দশেকের বিরতির মাঝেই জমাট আপাত দৃষ্টিতে প্রাণশূন্য সেই প্রাণ শূন্য ফিয়র্ডের নানা প্রান্তে বেশকিছু কাল-ধুসর বিন্দুর সমাগম ঘটল, সবগুলো আবার গুটিগুটি ইতিউতি চলছে। বোঝা গেল সীলের দল রোদ পোয়াতে উঠে এসেছে। মাথার উপরে দিয়ে উড়ে যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের গাঙচিল, পেট্রেল, রেজরবিল, গিলেমটসহ নানা সামুদ্রিক পাখির ঝাক, বোঝা গেল আমাদের সেদিনের গন্তব্য স্পিটসবের্গেনের পূর্ব উপকূল সন্নিকটেই।
DSC_2603
DSC_2608
এবার যাত্রাপথের সবচেয়ে বিপদসংকুল অংশে আমরা, দু পাশে মুখব্যাদান করে থাকা গিরিখাদ যার তলাটুকু পর্যন্ত দেখা যায় না এতই গভীর, এর মধ্যে সামনে পড়ল কয়েকশ মিটার প্রায় খাড়া উঠে যাওয়া এক বরফের ঢাল, দেখা মাত্রই যা পেরোনো অসম্ভব মনে হয়! এর উপর দিয়েই আমাদের পেরোতে হবে স্নো মোবাইল দিয়ে, তবে জায়গাটি অতিমাত্রায় বিপদজনক বিধায় এরিক দিক নির্দেশনা দিয়ে দিল- সবাই একে একে এ যাত্রা চেষ্টা করবে এই বাঁধা টপকানোর আর অতিরিক্ত যাত্রীদের সে স্বয়ং সাথে নিয়ে যাবে। এত ঝুট ঝামেলার মাঝে না গিয়ে সোজা সেই ঢালু পাহাড় বাওয়া শুরু করলাম, সে আরেক মহা ঝক্কির কাজ, খানিকটা এগোই, তো আবার পিছলে পিছিয়ে যায়, এর মাঝেই মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখি সহযাত্রীরা একে একে সেই কঠিন আরোহণকে সম্ভব করল। উপরে উঠেই দেহ মন প্রাণ আনন্দে শিহরিত হয়ে উঠল- সামনে অল্প কয়েকশ মিটার বালির মত নরম চকচকে সফেদ তুষারের সমুদ্র, তার পরপরই অনেক দূর পর্যন্ত দৃষ্টি পেরিয়ে যায় দিগন্তের সীমা, কারণ সামনে উত্তর মহাসাগর, তার হিম শীতল নীল জল আমাদের আহ্বান জানাচ্ছে প্রকৃতির রূপ অবগাহনের, সামনের পাহাড় খাড়া ক্লিফ সৃষ্টি করে ঝাড়া নেমে গেছে মহাসাগরের স্পর্শে নিজের ধন্য করতে, ক্লিফের খাজে খাজে নানা জাতের সামুদ্রিক পাখির আবাসস্থল ও প্রজননক্ষেত্র।
সেই ভুবন ভুলানো রূপে স্তভিত আমরা, কেমন এক ঘোরলাগা অবস্থা সকলেরই। লক্ষ্য করলাম অনেক নিচে ফিয়র্ড আর সাগরের সঙ্গম স্থলে বরফস্তর কোথায় কেমন পুরু তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, আর সে অনুযায়ী তৈরি হয়েছে নানা রঙের বরফ, যাতে নীল রঙের প্রাধান্যই বেশী, যেন হেনরি মাতিসের আঁকা মহাবিশ্বের মত বিশাল এক ক্যানভাস আমাদের সামনে।
i 19
খানিক আগের ফেলে আসা জাহাজ মেরু জ্যোতিকে এত উপর থেকে ক্ষুদে খেলনা মনে হচ্ছে! এবার ফেরার পালা, প্রায় হাজার কিলোমিটার অতি বন্ধুর পথ পাড়ি দিলাম সেই দুর্গম দেশে মেরুভালুকের খোঁজে, সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্যবশত ভালুকের মুখোমুখি নাহলেও আফসোস নেই কোন, এরই মধ্যে যে মনের মুকুরে সঞ্চিত হয়ে গেছে হাজারো আমরণ অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা।--- তারেক অণু


মন্তব্য

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

শিরোনাম দেখেই বুঝেছিলাম এটা আপনি। তাড়াহুড়োয় অসাধারণ ছবিগুলো দেখলাম শুধু। আপনি তো ভাই সচলের ইবনে বতুতা হয়ে গেছেন।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

guest_writer এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ কবি ভাই, লেখা পড়ে কেমন লাগল জানিয়েন।-- অণু

অপছন্দনীয় এর ছবি

ঈর্ষার ধাক্কায় ঈর্ষা করার ক্ষমতাটাও হারিয়ে ফেলেছি মনে হয়...

চলুক

guest_writer এর ছবি

গুরু গুরু ধন্যবাদ , শুভেচ্ছা রয়ল। অণু

রু (অতিথি) এর ছবি

এইবারটা খুব বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে গেল। এরকম জায়গায় কেউ যায়? হিংসায় আমার চোখ ছোট হয়ে আসলো।

guest_writer এর ছবি

যেতে কিন্তু প্রথমে আসলেই চাই নি, কথা ছিল সাইবেরিয়ার খাতাঙ্গা হয়ে যাবার, পরে রাশান ব্যাটারা ঝামেলা করায়-ই না এখানে যাওয়া হল ! ভাগ্যিস গিয়েছিলাম, অন্তত আরেকবার ভরা গ্রীষ্মে যেতে চাই, চলে আসুন সাথে-- অণু

রিসালাত বারী এর ছবি

আপনার বাকেট লিস্ট জাতীয় কিছু থাকলে শেয়ার করেন। সেইটা দেখে অন্তত কিছুটা সান্তনা পাই যে, এই লোকেরও অনেক কিছু দেখা বাকি আছে।

লেখা আর ছবি অসাধারণ হয়েছে।

guest_writer এর ছবি

সত্য কথা বলি- এখনো প্রায় পুরোটাই বাকি। তবে এই বছরের শেষ নাগাদ অপূর্ণতা কিছুতা কমবে আশা করি। অনেক ধন্যবাদ--- অণু

মৃত্যুময়-ঈষৎ এর ছবি

আপনি তো ভাই সচলের ইবনে বতুতা হয়ে গেছেন।

কথা সত্য বলছে কবি ভাই।

পোস্ট সবসময়ই আকর্ষণীয় হয়................... চলুক চলুক

guest_writer এর ছবি

অনেক অনেক ধন্যবাদ। অণু

সাইফ জুয়েল এর ছবি

আহা তারেক ভাই, মানুষ কতনা ভাগ্য নিয়ে জন্মায়!!! সুমেরু ঘুরে আসাতো আর যা তা কথা না। যাক লেখা পড়ে আর ছবি দেখেই মানুষের কাছে গপ্পো করা যাবে।

guest_writer এর ছবি

ধন্যবাদ জুয়েল ভাই,। ভাগ্য বলে কিছু নেই কিন্ত, সবটাই আমাদের করা।। এবার কুমেরু যেতে চাই, দেখি কবে নাগাদ সম্ভব হয়। --অণু

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

কিছুই বলার নাই...
নূহের নৌকার ভোল্ট এর কথা জেনে দারুণ লাগলো, আগে জানতাম না এ সম্পর্কে কিছুই

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

guest_writer এর ছবি

কিছু একটা বলেন নজু ভাই, ভরসা পাই আপনি বললে। গত মাসের ন্যাশন্যাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনেও সেই জায়গা নিয়ে ছবি সহ ফিচার আছে, কত ধরনের যে বীজ!!! অণু

তানিম এহসান এর ছবি

এই জায়গার বর্ণনা পড়েছিলাম মাসুদ রানার এক বইতে অনেক আগে। জীবনানন্দের কবিতা দিব্যি চালিয়ে দিলেন অন্যভাবে, সব মিলিয়ে দারুন লাগলো, বহুবর্ণা বরফ কি অসাধারণ! তারেক অণু ভাই এর পরবর্তী অভিযানের জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।

guest_writer এর ছবি

আরে তানিম ভাই কবিতা তার জন্যই যার প্রয়োজন হয়! ( Il Postino সিনেমার সংলাপ), আর জীবনানন্দ তো আমাদের সবার সম্পদ!! আমিও পরবর্তী অভিযানের অপেক্ষায়, সত্যি কথা বলতে গায়ে জ্বর চলে এসেছে কিউবার উত্তেজনায়। --- অণু

মৌনকুহর এর ছবি

ত্রিমাত্রিক কবির একটা পোস্টের মন্তব্যে দিন কয়েক আগে বলছিলাম, সচলের সবাই আজকাল একেকজন ইবনে বতুতা হয়ে যাচ্ছে! অ্যাঁ

আপনি সেই 'বতুতা পার্টি'র অবিসংবাদিত 'চীফ ইন কমান্ড'! গুরু গুরু

জয়তু তারেক অণু......!! হাততালি

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ

guest_writer এর ছবি

গুরু গুরু গুরু গুরু -অণু

স্বপ্নাদিষ্ট (অতিথি) এর ছবি

আহ! লোভ লাগানো সব ছবি! সাথে চমৎকার বর্ণনা... আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
-স্বপ্নাদিষ্ট

================================
যে জাতি নিজের ভাগ্য নিজে পরিবর্তন করে না, আল্লাহ তার ভাগ্য পরিবর্তন করেন না।

guest_writer এর ছবি

লোভ না ছাই, মহা ঠাণ্ডা! হে হে্‌ ধন্যবাদ--- অণু

ধৈবত(অতিথি) এর ছবি

আসলেই, অণু ভাই ইবনে বতুতা। চলুক

guest_writer এর ছবি

আরে না রে ভাই, তার ওপর প্রায় প্রতিজ্ঞা করেছি মক্কাতে যত দিন অমুসলিমদের প্রবেশাধিকার থাকবে না ততদিন ঐ শহরের ধারে কাছে ঘেঁষব না, এত বর্ণবাদী জায়গায় মনের আনন্দে যাওয়া মুস্কিল। বতুতা তার ভ্রমণ শুরুই করেছিলেন মক্কা দিয়ে ! অণু

মন মাঝি এর ছবি

ইয়ে, বতুতা মরক্কোর লোক ছিলেন। যদ্দুর জানি তার ভ্রমন মরক্কো থেকেই শুরু হয়েছিল।

****************************************

guest_writer এর ছবি

তা তো বটেই, মরক্কো থেকে এসেছিলে আসলে হজ্বের উদ্দেশ্যে, তারপরই দেশ দেখার নেশা পেয়ে বসল। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক তার জীবন নিয়ে একবার কভার স্টোরি করেছিল, শিরোনাম ছিল - Prince of the travellers! ==অণু

মন মাঝি এর ছবি

দারুন! দারুন! দারুন! আর কি বলবো, বলার কিছু বাকি রাখেন নাইরে ভাই। দারুন!

****************************************

guest_writer এর ছবি

না না , আরো বাকি আছে, জানাবো ! অণু

মন মাঝি এর ছবি

হাসি আচ্ছা, ঠিক আছে, অপেক্ষায় রইলাম। আমার মাচু পিচু আর চীনের কিংজাং রেলওয়ে দিয়ে টাঙ্গুলা পাস হয়ে তিব্বতের লাসায় যাওয়ার খুব ইচ্ছা।

****************************************

তারেক অণু এর ছবি

অবশ্যই !!! আমারও!!! তবে মাচু পিচু যাচ্ছি জানুয়ারির প্রথম দিকে, তিব্বতে ছিলাম পর্বতে ওঠার সময়, কিন্তু লাসায় যাবার পারমিট ছিল না, সেখানে আবার খুব কড়াকড়ি।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

নাহ, নেহাত হিংসাগ্রস্ত হওয়া ছাড়া আর কিছুই হতে পারলাম না। আপনি তো ভাই ঘনাদা কিসিমের মানুষ দেখি, তাবত দুনিয়া ঢুঁ মেরে বেড়াচ্ছেন...

নাহ, সত্যি অনেক ঈর্ষা হচ্ছে।

guest_writer এর ছবি

নমস্য ঘনাদার ধারে কাছে কি আমরা যেতে পারি! এমনকি তার ভৌগোলিক জ্ঞান সমুদ্রের কিনারেও!! তবে গতবছর নামিবিয়ার সীমান্তের কাছের এক বাস ষ্টেশনের ম্যাপে কীটমানসুফ নামের জায়গার উল্লেখ দেখে বড়ই আহলাদিত হয়ে ছিলুম, ঘনাদার কোন গল্পে সেই জায়গার উল্লেখ ছিল। তবে লাটভিয়ার রিগায় তার মত পাতলা শার্ট পরা কাউকে চোখে পড়েনি ! জয়তু প্রেমেন মিত্তির---- অণু

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

কিটমানসুফ, কিটমানসুফ- গল্পটার নাম মনে পড়ছে না। তবে গল্পটায় ভেড়া নিয়ে একটা প্যাচ ছিলো বোধয়। নিগ্রো সেজে ঘনাদা দামী প্রজাতির একটা ভেড়া সাফাই করে নিয়াসেন...

আপনিই বরং একটু লম্বায় বড় হয়ে ঘনাদা হয়ে যান। বেড়ে মানাবে মশাই। হাসি

guest_writer এর ছবি

হ্যাঁ, কারাকুল ভেড়ার কাহিনী! না না ঘনাদার মত হাওয়া থেকে এত চমৎকার রঙ্গিন গল্প চিবিয়ে চিবিয়ে বের করার ক্ষমতা নাই ভাই, ক্ষমা চাই এ ক্ষেত্রে। কিন্তু লম্বায় তো ঠিকই আছি, হে হে -- অণু

ধৈবত(অতিথি) এর ছবি

মজিদ ভাইকে অণু ভাইয়ের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে পারিস নাকি দেখ। এমন সব প্লট পাবি যে প্রেম-মিত্তির মশায়ও পায়নি।

তারেক অণু এর ছবি
ওডিন এর ছবি

আমি খালি হিটলিস্ট আপডেট করতাছি। সতের নম্বরে আছেন শ্রীমান তারেক অণু দেঁতো হাসি

guest_writer এর ছবি

এটা একটা কথা হল! আমি তো থাকিই আপাতত ওদিনের এলাকায়, আমাকে হিট করার চেষ্টা করলে সেই দিকে ধেয়ে যাবে ওডিন পুত্র থরের হাতুড়ী! ১৭ অনেক পেছনে, আপাতত আসুন হাত মেলায়-- অণু

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

চলুক

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

লাফাং

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

Sohel এর ছবি

অসাধারণ। আবার কবে যাচ্চেন?

guest_writer এর ছবি

এখনই বলতে পারছিনা, এই বছরটা বেশী ঠাসাঠাসি হয়ে গেছে,তবে কোন গ্রীষ্মে। অণু

সজল এর ছবি

মেরুতে কেমনে যাইতে হয়? আবার কি যাচ্ছেন? যাওয়ার খুব ইচ্ছা হচ্ছে।

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

guest_writer এর ছবি

সুমেরু অভিযান নিয়ে একটি লেখার লিঙ্ক দিচ্ছি এইখানে- http://www.sachalayatan.com/guest_writer/39885
দিন দিন খরচ বাড়তেই আছে,অনু

guest_writer এর ছবি

হা হা, চলে আসেন, তবে সামনে বছর জার্মানি আসব তখন দেখা হতে পারে। ধন্যবাদ আবারো-- অণু

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

ওরে খাইছেরে বইলা কোনো ইমো নাই। তাই এইটা দিলাম কস্কি মমিন!
করছেন কী আপ্নে এইডা! আয়োজন কইরা আপ্নারে দেখতে আসমু ভাবতেছি!!!
স্রেফ অসাধারণ!

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

guest_writer এর ছবি

হা হা, চলে আসেন, তবে সামনে বছর জার্মানি আসব তখন দেখা হতে পারে। ধন্যবাদ আবারো-- অণু

মুস্তাফিজ এর ছবি

বেশ আগে ইনাম ভায়েরটা জানা হয়েছিলো। মুগ্ধতা তখনই ছিলো। এখনও জানিয়ে গেলাম।

...........................
Every Picture Tells a Story

guest_writer এর ছবি

ধন্যবাদ মুস্তাফিজ ভাই, আপনি কি ইনাম ভায়ের কুকুর টানা স্লেজের লেখাটার কথা বলছেন? অণু

তাসনীম এর ছবি

দুর্দান্তিস। প্রিয়তে রাখছি...

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

guest_writer এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ , অণু

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

আপনাকে মাইনাস টু দ্যা পাওয়ার ইনফিনিটি দিতে লগ ইন করলাম অণু ভাই। দেঁতো হাসি

তো করলামই যখন, তখন জানায়ে যাই, এই পোস্টটা লেখা-ছবি-অভিজ্ঞতা দিতে এখন্তক সবচেয়ে দুর্দান্তিস হয়েছে। গুল্লি
আর মডার্নডে নোয়া'স আর্কের কথা আমি জানতাম না! অ্যাঁ দারুণ ব্যাপার!

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

guest_writer এর ছবি

আসিতেছে, ফাগুন মাসের আগুন ঝরানো মন মাতানো, আসিতেছে---- হ্যাঁ ওখানে যে কত ধরনের আলুই আছে দেখে বিশাল টাসকি খেয়ে গেছিলাম! অণু

আশরাফ মাহমুদ এর ছবি

দারুণ লেখা। যেতে ইচ্ছে করছে।

বীজাগারের কথা জানতাম না। উইকিতে বেশ তথ্য পেলাম।

guest_writer এর ছবি

ধন্যবাদ, অবশ্যই যাবেন, এমন জায়গা আর দুই টা দেখলাম না। অণু

guest_writer এর ছবি

দারুন বর্ণনা, লেখা পড়তে পড়তেই মনে হচ্ছিল এটা আপনার লেখা হয়ত। খুব ভাল লাগল !

পড়াচোর।

তারেক অণু এর ছবি

গুরু গুরু দেঁতো হাসি তার মনে কি আমার সব লেখায় এক ধরনের হয়ে যাচ্ছে!

অমিত এর ছবি

একদিন আমিও ইয়ে, মানে...
আপাতত গুরু গুরু হাততালি
এইটা দেখেন

তারেক অণু এর ছবি

অবশ্যই ! অণু

বোকা মেঘ এর ছবি

এক কথায়, অসাধারন !!... মুগ্ধ !! চলুক
সর্বনাশ !!! ...আমি যে এত হিংসুটে মানুষ আগে টের পাই নাই... ইয়ে, মানে...

তারেক অণু এর ছবি

হাসি হাসি অনেক ধন্যবাদ, অণু

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

পড়লাম। দারুণ লাগল। অনেক লম্বা লেখা হলেও শেষে এসে মনে হল হঠাৎ শেষ করে দিলেন।

তারেক অণু এর ছবি

ঠিকই বলেছেন, আর কিছু ঘটনা ছিল লিখার, কিন্তু বেশী বড় হয়ে যাচ্ছিল, এর মধেই ২০০০ শব্দ ছাড়িয়ে গেছে, আবার লিখব, ভাল থাকুন// অণু

ফেরারী-ফানুস এর ছবি

খুব ভাল লাগল, নতুন কিছু জানলাম ইয়েস বাঘ মামা, ইয়েস!!!

তারেক অণু এর ছবি

গুরু গুরু অণু

ইস্কান্দর বরকন্দাজ এর ছবি

দারুন...

তারেক অণু এর ছবি

হাসি আবারো শুভেচ্ছা- অণু

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

জবরদস্ত লেখার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। ইমেইল চেক কইরেন। হাসি

তারেক অণু এর ছবি

জবরদস্ত ধন্যবাদ মাহবুব মুর্শেদ ভাই, আশা করি এখন থেকে আরো বেশী লিখা দিতে পারব!

তিথীডোর এর ছবি

ইমেইল চেক কইরেন।

খাইছে
হাচলত্বের অভিনন্দন তারেক 'বতুতা' ভাই। হাততালি

অমানুষিক লেখা।
গুল্লি

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

তারেক অণু এর ছবি

আরে ভাই, লেখাটাই তো ভালুকদের নিয়ে, অমানুষিক তো হবেই !

দিহান এর ছবি

ইশ...আহা...উফ...নাহ আর কিছু বলার নাই!

তারেক অণু এর ছবি
তারেক অণু এর ছবি

ধন্যবাদ, যত দিন অচলত্ব প্রাপ্তি না হয় অবশ্যই ঘুরাঘুরি পূর্ণজারি থাকতে হবেই হবে !

অজ্ঞাত(নাম দিমু না!!!) এর ছবি

সচলের ইবনে বতুতাকে হাচলত্বপ্রাপ্তির অভিনন্দন। হাততালি ঘুরাঘুরি পূর্ণজারি থাকুক..........

তারেক অণু এর ছবি

ধন্যবাদ, যত দিন অচলত্ব প্রাপ্তি না হয় অবশ্যই ঘুরাঘুরি পূর্ণজারি থাকতে হবেই হবে !

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

অভিনন্দন অনু ভাই

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

তারেক অণু এর ছবি

ধন্যবাদ কবি ভাই

নীড় সন্ধানী এর ছবি

মাসুদ রানার একটা দুর্দান্ত পর্ব ছিল এই দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে, পরে Air Raid নামে একটা থ্রিলার পড়তে গিয়ে আবিষ্কার করি মাসুদ রানার ওই সিরিজটা এই বইটারই অনুবাদ। সেই থেকে দ্বীপটা কল্পনার মধ্যে যে চেহারায় ছিল তা আপনার ছবি দেখে কেটে গেছে। এখন আমি সত্যিকার অর্থেই সেই শহরটাকে দেখতে পাচ্ছি। এবং গর্ব হচ্ছে সত্যি সত্যি একজন বাংলাদেশী সেই দুর্গম দ্বীপে পা রেখেছে। হিংসার কথা বললাম না কারণ অক্ষমদের হিংসিত হতে নেই। আপনার হাত সচল থাকুক। এরকম পোষ্ট আরো আসতে থাকুক।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

তারেক অণু এর ছবি

অনেক অনেক ধন্যবাদ! রানার কোন বইটা বলুন তো ? তার তো বরফ অঞ্চল নিয়ে বেশ কিছু বই আছে। হ্যাঁ ভাই, দ্বীপটাতে অন্তত আরেকবার ভরা গ্রীষ্মে যেতে চাই -ই চাই

কল্যাণF এর ছবি

পোস্টে কোটী কোটী হিংসা...

তারেক অণু এর ছবি

ফাজলামো করেন না দাদা, মোজাম্বিকে থেকে এই কথা বললে মানায় !!!

রিয়েল এর ছবি

অনু ভাই ! এ কি করলেন ?
পুরা তো TEN THOUSANDS THUNDERING TYFOONS.....!!!!!(আসলে ঈর্ষায় কাতর ইমো !!)

পুরা ফাটাফাটিstic .....
চালায় যান অনু ভাই...
চৌ ইও সম্পর্কে লেখার আশায় থাকলাম......

তারেক অণু এর ছবি

কুন সমস্যা নাই, আরে মামুর ব্যুটা ( আঙ্কেলের ছেলে আর কি) আমি পরের বার যাবার আগেই এখানে চলে আস, একসাথে যাওয়া যাবে তিমি আর ভালুক দেখতে দেঁতো হাসি

খেকশিয়াল এর ছবি

তোরে আর কি কমু! তোর পোস্টে কিছু লেখি না কারণ রাগে আমার গা চিড়বিড় করে, শালা সব ঘুইরা দেইখা ফালাইলি!! হাহাহা

আগে খালি ছবি গুলি দেখছিলাম , আজকে ছবির সাথে লেখা পড়লাম, দারুণ লাগলো, দারুণ গুরু গুরু
মেরুভালুকটারে মেরে ফেলসে শুনে খারাপ লাগলো মন খারাপ

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

ধৈবত(অতিথি) এর ছবি

খেকুদা। আপনার উচিত ছিল অণু ভাইয়ের ব্যাকপ্যাকের ভিতর গুঁজে বসে থাকা। মুফতে পৃথিবীটা ঘুরে আসতে পারতেন।

তারেক অণু এর ছবি

না ধৈবত দা, কৌশিক দেখতে প্যাঁকাটি হলে কি হবে ওজন একেবারে নাদা পেটা কুমিরের মত, ওর মাথার খুলিটার ওজন নিয়ান্ডারথালদের পুরো শরীরের চেয়েও বেশী দেঁতো হাসি । এমন ওজনদার কুঁড়ে ফাজিলকে পিঠে নিয়ে ঘোরা, উহু- ঐ তা পারুম না

তারেক অণু এর ছবি

আরে দোস্ত গা চিড়চিড় করলে শুদ্ধ জল দিয়ে স্নান করে ফেলিস, পুস্কনীতে ঝপাং দিতে পারিস, কিন্তু খবরদার বুড়িগঙ্গায় আবার লাফ দিস না! অনেক জায়গা এখনো বাকী, তুই চলে আয় এক সাথে ঘোরা যাবে, তোর ঠিকানাটা দিস, মাচু পিচু থেকে পোষ্ট কার্ড পাঠামুনে।
হুমম, ভালুক মারার ঘটনা খুব বিরল, একেবারে মানব জীবন বাঁচানোর শেষ উপায় হিসেবে অনেক সময় ঘটে যায়। তবে পত্রিকায় মেরু ভালুকদের যে ছবি গুলো দেয় অধিকাংশই এই দ্বীপে তোলা, ওরা ভালু আছে, দুইটা বড় বড় দ্বীপে তো তাদের প্রজনন কেন্দ্র বলে মানুষের পা রাখাই নিষেধ।

মিলু এর ছবি

অণু ভাই, আপ্নারে আর কি কমু! হিংসা হইতাসে খুব ইয়ে, মানে...

তয় গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু না দিলে খুবই অন্যায় হইব। মনে হয় আপ্নের সামনের পোস্টগুলিতেও খালি গুরু গুরু দিয়া যাইতে হইব। ঘাড়টাই না লুজ হইয়া যায়।

তারেক অণু এর ছবি

লইজ্জা লাগে ফাজলামো কইরেন না, সবেধন নীলমণি ঘাড় লুজ হলে মাথা যাবে কোথায় !!!

মেঘা এর ছবি

হিংসা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছি। লেখা যেমন চমৎকার সেই সাথে তথ্য বহুল (যেমন বীজাগারের কথাটা জানাই ছিল না আগে। মুগ্ধ পৃথিবীবাসীদের এই বুদ্ধি বের করার জন্য) সেই সাথে ছবিগুলো অসাধারণ হয়েছে। নানা রঙের বরফ দেখে আসলেই আমি যেন রূপকথা জগতে চলে গিয়েছিলাম। আমাদের এই গ্রহটা এতো সুন্দর!

হাচলত্বের অভিনন্দন খাইছে

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

তারেক অণু এর ছবি

আমাদের গ্রহ বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর গ্রহ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।