গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের হার, মালিকানা এবং আরো কিছু বিতর্ক (পর্ব ১.২)

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ১৯/০৭/২০১৩ - ২:৩৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণের প্রকৃত সুদের হার কত সেটা বের করার চেষ্টা করেছিলাম গত পর্বে, যেটা মোটামুটি ২০% এর কাছাকাছি ১৯৯১ সাল থেকে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই হারকে কমানো যায় কিনা গরীব মানুষের কাছে ঋণ আরো সহজলভ্য করার জন্য? অন্যদিকে এটার পুরো উল্টো আরেকটা বিতর্ক আছে যেটা মিডিয়া-ব্লগে খুব একটা আসে না । সেটা হচ্ছে গ্রামীণ ব্যাংক এই হারে সুদ নিয়ে আসলেই কি পুরো কস্ট রিকভারী করতে পারছে, নাকি বিদেশ থেকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ অনুদান নিয়ে ঋণ কার্যক্রম চালাচ্ছে? সেক্ষেত্রে গ্রামীণ ব্যাংকের এই সুদের হার আসলে সাবসিডাইজড। তখন প্রশ্ন আসে, যদি ভর্তুকি (সাবসিডি) দিয়েই এই প্রোগ্রাম চালাতে হয়, তাহলে গরীব মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের অবদান প্রদত্ত ভর্তুকীর তুলনায় যথেষ্ট কিনা। এই ইস্যুতে অনেক কাজ করেছেন নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির পাবলিক পলিসি এবং ইকনোমিক্স এর প্রফেসর জোনাথন মর্ডুখ (Jonathan Morduch), যার লেখা অনেক সময়ই গ্রামীণ ব্যাংকের সমালোচনায় ব্যবহার করা হয়।

আমরা এই দ্বিতীয় বিতর্কে আপাতত যাচ্ছি না (শেষ পর্বে কভার করার চেষ্টা করব), আমরা বরং দেখার চেষ্টা করি ভর্তুকী ছাড়া ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে গেলে প্রচলিত ব্যাংকিং এর তুলনায় সুবিধা-অসুবিধাগুলো কি কি, এবং সুদের হারের বেশী-কমই বা কিসের উপর নির্ভর করে। পূর্ণতা এবং ধারাবাহিকতার স্বার্থে কয়েকটা মৌলিক বিষয় একটু রিভিউ করে আসি।

১.২.১. ঋণ কেনঃ ঋণের এক ধরনের সংজ্ঞা হতে পারে এরকম, “ভবিষ্যতের আয়কে বর্তমানে খরচ করতে পারার সুযোগই হচ্ছে ঋণ”। একজন দরিদ্র মানুষের জীবনে এই সুযোগের ভূমিকা কতটুকু হতে পারে বোঝার জন্য আমরা একটা উদাহরণের সাহায্য নিতে পারি।

আমাদের এলাকায় অনেকে লোভাছড়া নদী থেকে পাথর তুলে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। খুবই পরিশ্রমের কাজ, আয়ও অন্যান্য কাজের তুলনায় বেশী। নব্বই দশকের মাঝামাঝির দিকে একেকজন শ্রমিক দৈনিক ১০০-১২০ টাকার মত আয় করত। এদের অধিকাংশেরই নিজের নৌকা ছিল না। অন্যের নৌকা নিয়ে প্রতিদিন ২০ টাকার মত ভাড়া দিতে হত। তাদের যা রোজগার ছিল, তাতে বছরের পর বছর এভাবে চলে যেত, কিন্তু একটা নৌকা কেনার জন্য প্রয়োজনীয় ৫০০০ টাকা জমাতে পারত না। কিন্তু নিজের একটা নৌকা যদি থাকে, তাহলেই তার দৈনিক আয় ২০ টাকা বেড়ে যায়, এবং এই ২০ টাকা প্রতিদিন জমাতে পারলেই ২৫০ দিনে তার নৌকা কেনার টাকা হয়ে যায়। অর্থাৎ ২৫০ দিন পরে যে কাল্পনিক ৫০০০ টাকা সঞ্চয় হবে সেই টাকা যদি কেউ তাকে আজকে দিয়ে দিত, তাহলে নৌকা কিনে ঠিকই ২৫০ দিন পরে সে ৫০০০ টাকা শোধ করে দিতে পারত এবং এরপর থেকে প্রতিদিন তার আয় ২০ টাকা বেশী হত। এই ৫০০০ টাকার বার্ষিক রেট অফ রিটার্ন তাহলে কত পার্সেন্ট হবে? আমার হিসাবে প্রায় ১৪৬%।

আমরা অনেক সময়ই আমাদের নিজস্ব বিনিয়োগের ধারনার সাথে গ্রামের গরীব মানুষের বিনিয়োগকে মিলিয়ে ফেলি। ধরে নেই, বিরাট বিরাট শিল্পকারখানা না-হলে বড় কৃষি খামারের একেকটা ছোট মডেল গ্রামের বিনিয়োগ। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শিক্ষিত, ব্যবসা জানা বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে রেট অফ রিটার্ন যত, গ্রামের গরীব মানুষের ছোট বিনিয়োগ সাধারনত এর চেয়ে বেশী লাভজনক। কেউ কি গ্রামে দেখেছেন বাড়ি থেকে ৮০ টাকায় মুরগী কিনে সেই মুরগী আবার সেদিনই বাজারে নিয়ে ১০০ টাকায় বিক্রি করতে? ৮০ টাকায় একদিনে ২০ টাকা লাভ হলে বার্ষিক রেট অফ রিটার্ন কত? সেই মুরগী ব্যবসায়ী হয়তো শুধুমাত্র মূলধনের অভাবে একসাথে ২০ টা মুরগী কিনতে পারে না। ধানের জন্য সার কেনার টাকা যোগাড় করতে না পেরে কৃষক ধান কাটার মৌসুমের আগে অর্ধেক দামে ধান বিক্রি করে বসে থাকে। একটা গরু না থাকায় নিজের জমি চাষ করতে পারেনা। এর সবই হচ্ছে ফাইনান্সিয়াল মার্কেটে তাদের প্রবেশ করার সক্ষমতা না থাকার কারনে, যেজন্য তারা ভবিষ্যত উপার্জনকে বর্তমানে ব্যবহার করার সুযোগ পাচ্ছে না। তাহলে গরীবদের জন্য যদি ন্যায্য বাণিজ্য শর্তে (terms of trade) ঋণসুবিধা প্রদান করা যায়, সেটা তাদের কোন উপকারই করবে না, ভাবা দুরূহ।

১.২.২. সুদ কেনঃ এখন প্রশ্ন আসতে পারে, গরীব মানুষকে সাহায্য করার জন্যই যদি ঋণ দেয়া হয় তাহলে সেটা বিনা সুদে কেন দেয়া হচ্ছে না? ভ্যালিড পয়েন্ট। কিন্তু এই প্রশ্নটা ও তো করা যায়, সাহায্যই যদি করতে হবে, তাহলে ঋণ কেন? কেন গরীবদেরকে দরকারী টাকাটা ফেরৎ না পাওয়ার শর্তে দিয়ে দেয়া হচ্ছে না? একটু চিন্তা করলে দেখবেন, সরাসরি অর্থসাহায্য করা আর বিনাসুদে টাকা ঋণ দেয়া, দুটো আসলে একই, দুটোই চ্যারিটি, শুধু পরিমাণের পার্থক্য। যে টাকাটা ঋণ হিসেবে দেয়া হচ্ছে, সে টাকার একটা সুযোগ ব্যয় আছে। যার টাকা সে অন্য কোথাও বিনিয়োগ করলে কিছু রিটার্ন পেতে পারত, এমনকী টাকা নিজের হাতে থাকলে সেই লিকুইডিটির ও একটা ভ্যালু আছে, আর মুদ্রাস্ফীতির কারণে ১০০ টাকার ক্রয়ক্ষমতা এক বছর পরে ১০০ টাকা থাকে না। অর্থাৎ, কেউ ১০০ টাকা ঋণ দিয়ে এক বছর পরে ১০০ টাকা ফেরত পেলে ক্রয়ক্ষমতার হিসেবে তার টাকা কিন্তু কমে গেল। তারমানে আপনি কাউকে ১০০ টাকা দিয়ে দিলে ১০০ টাকার চ্যারিটি করলেন, আর ১০০ টাকা বিনা সুদে দিলে আপনার টাকার সুযোগ ব্যয় যদি ১০% হয় তাহলে ১০ টাকার চ্যারিটি করলেন।

চ্যারিটি ভাল নাকি খারাপ সেটা নিয়ে কথা বলা এই লেখার উদ্দেশ্য না। কিন্তু চ্যারিটির ক্ষেত্রে কাউকে না কাউকে এক প্রান্ত থেকে কোন বিনিময় প্রত্যাশা ছাড়া টাকা দান করে যেতে হবে। সেটা সবসময় সম্ভব কিনা সেটা যেমন একটা সমস্যা আবার চ্যারিটি থেকে প্রাপ্ত অর্থের সঠিক বন্টন নিশ্চিত করা আরো বেশী চ্যালেঞ্জিং।

অন্যদিকে এমন একটা সিস্টেম যদি তৈরী করা যায় যেখানে ঋণ ব্যবহারকারী এই ঋণ প্রদান করতে যে টাকা খরচ হয়েছে সেটা পরিশোধ করে, তাহলে ঋণের প্রাপ্যতা নিশ্চত করার জন্য কারো দানের উপর নির্ভর করতে হয়না। তখন আমরা এই মডেল বা সিস্টেমকে টেকসই (Sustainable) বলব। তাহলে টেকসই সিস্টেমে ঋণ প্রদান করার খরচ কি কি হতে পারে দেখে নেইঃ

i) আমানত সংগ্রহ করার খরচ: গ্রামের সেই পাথর শ্রমিককে যদি আমি নৌকা কেনার জন্য ৫০০০ টাকা দিতে চাই, তাহলে প্রথমে আমাকে সেই ৫০০০ টাকা সংগ্রহ করতে হবে। মনে করি, প্রচলিত ব্যাংকিং এ আমার প্রবেশের সুযোগ আছে, এবং আমি ১০% হারে ব্যাংক বা অন্য কোন উৎস থেকে আমানত সংগ্রহ করতে পারি। তাহলে আমার জন্য ৫০০০ টাকা সংগ্রহ করার খরচ ৫০০ টাকা।

ii) ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করার খরচ: আমার সেই শ্রমিকের সাথে অথবা সেই শ্রমিকের আমার সাথে যোগাযোগ করতে হবে, আমার কিছুটা দেখাশোনা করতে হবে যাতে সে আসলেই টাকাটা কাজে লাগায় এবং পরবর্তীতে ঋণ শোধ করে। সেটার খরচ ধরুন ১০০ টাকা।

iii) ঋণ আদায় না হওয়ার সম্ভাবনা: এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেই শ্রমিক যদি টাকাটা ফেরত দিতে না চায় বা না দিতে পারে, তাহলে পুরো টাকাটাই খরচের খাতায় চলে গেল। মনে করি, সেটি হওয়ার সম্ভাবনা ৫%। তাহলে এখানে আমার প্রত্যাশিত খরচ ২৫০ টাকা।

এই হিসাব অনুযায়ী ৫০০০ টাকা ঋণ দেয়ার মোট খরচ ৫০০+১০০+২৫০=৮৫০ টাকা। অর্থাৎ আমি যদি শ্রমিকের কাছ থেকে ৮৫০ টাকা বা ১৭% প্রকৃত হারে সুদ নেই তাহলে আমার নিজের পকেট থেকে কোন টাকা দিতে হবে না। উল্লেখ্য যে, সুদহারের এই হিসাব মোটেও ব্যাংকিং অপারেশনের আসল হিসাবের সাথে মিলিয়ে করা নয়, হিসাবের সূক্ষ খুঁটিনাটি ও এখানে আমলে নেয়া হয়নি। কিন্তু এই তিনটিই যেকোন ঋণ প্রোগ্রামের ব্যয় এর প্রধান খাত, সেটা ক্ষুদ্রঋণ এবং প্রচলিত ব্যাংকিং উভয় ক্ষেত্রেই।

১.২.৩. সুদের হার বেশী কেনঃ নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন প্রচলিত ব্যাংকিং এর তুলনায় ক্ষুদ্রঋণের সুদের হার বেশী। সাধারণ চিন্তায় ব্যাপারটা নিঃসন্দেহে অস্বাভাবিক মনে হবে, গরীবদের জন্য সুদের হার ধনীদের চেয়ে বেশী হবে কেন? কিন্তু ঋণ কার্যক্রমের খরচ আর সাস্টেইন্যাবিলিটির কথা চিন্তা করলে এটা আর পাজল থাকে না। খরচের তিনটি ভাগ আলাদাভাবে দেখি।

কোন সাবসিডি ছাড়া ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান আর প্রচলিত ব্যাংকিং এর আমানত সংগ্রহের খরচ সমান। যেমন গ্রামীণ ব্যাংক এখন মার্কেট রেটে অন্যান্য ব্যাংকের মত করে আমানত সংগ্রহ করে, সেটা ঋণগ্রহীতা সঞ্চয়কারী এবং বাইরের সঞ্চয়কারী উভয় ক্ষেত্রেই। তাহলে এক্ষেত্রে কোন পার্থক্য নেই।

যেটা পার্থক্য গড়ে দেয় সেটা হচ্ছে খরচের তৃতীয় ভাগ। প্রচলিত ব্যাংকিং এ ঋণের বিপরীতে জামানত (collateral) রাখতে হয়। তাই ঋণ পরিশোধ না করলে ব্যাংক সেই জামানত বিক্রি করে পাওনা টাকা আদায় করতে পারে। যাদের কোলেটারেল দেয়ার সামর্থ্য থাকে না, তাদেরকে প্রচলিত ব্যাংক ঋণ দিতে চায় না, কারণ জামানত না থাকায় ঋণগ্রহীতার কোন বাধ্যবাধকতা থাকবে না ঋণ পরিশোধ করার। এবং অপরিশোধিত ঋণ ব্যাংকের ফেরত পাওয়ার কোন উপায় নেই।

ক্ষুদ্রঋণের ধারণাটা এক্ষেত্রে একটা উদ্ভাবন। জামানত ছাড়া ঋণ দিয়ে ও ঋণ আদায়ের হার উচ্চ রাখার জন্য ক্ষুদ্রঋণের ক্ষেত্রে কয়েকটি ব্যতিক্রমী প্রক্রিয়ার সাহায্য নেয়া হয়ঃ

ক) গ্রুপ লেন্ডিং: গ্রামীণ ব্যাংকের মডেলে ৫ জনের গ্রুপে ঋণ দেয়া হয়। একটা প্রচলিত ভুল ধারণা হলো, গ্রুপ লেন্ডিং এর মানে হচ্ছে গ্রুপের কোন একজন কিস্তি পরিশোধ করতে না পারলে গ্রুপের অন্যান্যদেরকে সেই কিস্তি পরিশোধ করতে হবে, অর্থাৎ গ্রুপ লায়াবিলিটি। যেটা গ্রামীণ ব্যাংকের মডেলের ক্ষেত্রে সত্য নয়। বরং যেটা করা হয়, গ্রুপের কেউ যদি ঋণ পরিশোধ না করে, তাহলে গ্রুপের কাউকে পরবর্তীতে আর ঋণ না দেয়া হতে পারে। যেহেতু একবার ঋণ ঠিকমত পরিশোধ করলে পরবর্তীতে আরো বেশী পরিমানে ঋণ নেয়া যায়, তাই গ্রুপের সদস্যদের পরস্পরের উপর চাপ থাকে সময়মত কিস্তি পরিশোধ করার জন্য।

গ্রুপ লেন্ডিং এর আরেকটি বড় সুবিধা হল, এটা ভাল বিনিয়োগকারী এবং খারাপ (ঝুঁকিপূর্ণ) বিনিয়োগকারী কে আলাদা করতে সাহায্য করে। যেহেতু সদস্যরা পরস্পরের উদ্দেশ্য, সামর্থ্য এবং বিনিয়োগ পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত থাকার সম্ভাবনা বেশী থাকে তাই ভাল বিনিয়োগকারীরা সাধারনত অন্য ভাল বিনিয়োগকারীর সাথে গ্রুপ তৈরী করে এবং তারা ঋণপ্রাপ্তি, ব্যবহার এবং পরিশোধের ক্ষেত্রেও নিয়মিত থাকে। অন্যদিকে একজন ঝুঁকিপূর্ন ঋণগ্রহীতা যেহেতু পুরো গ্রুপের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, তাই তাদের পক্ষে কোন গ্রুপে ঢোকা কষ্টকর এবং তারা সাধারনত নিজেদের মধ্যে গ্রুপ তৈরী করে। সেক্ষেত্রে তাদের ঋণগ্রহনের প্রথম দিকেই (যখন ঋণের পরিমাণ কম থাকে) তারা খেলাপী হয়ে ঋণসুবিধা হারায়। এতে ব্যাংকের অনাদায়ী ঋণ বাবদ খরচ কম থাকে এবং অতিরিক্ত অনাদায়ী ঋণের বোঝা ভাল ঋণগ্রহীতাকে বহন করতে হয় না।

এক্ষেত্রে ক্ষুদ্রঋণের টার্গেট গ্রুপ হচ্ছে সেইসব সম্ভাব্য উদ্যোক্তা যারা সঞ্চয় বা ঋণের অভাবে লাভজনক বিনিয়োগ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারছে না এবং ঋণসুবিধা পেলে সেই বিনিয়োগ সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পারবে। লক্ষ্য করুন, ক্ষুদ্রঋণ কিন্তু এখানে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী (Social Safety Net) এর বিকল্প হিসেবে কাজ করছে না। সবচেয়ে অসহায়, কর্ম অক্ষম এবং দুঃস্থ যাদের বিনিয়োগ করে সফল হওয়ার সামর্থ্য বা দক্ষতা নেই তারা কিন্তু ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে খুব উপকৃত হতে পারবে না। তাদের জন্য দুঃস্থ ভাতা, বিধবা ভাতা এই ধরনের স্কীম দরকার, যেগুলো চ্যারিটি, সেটা সরকারী বা বেসরকারী যেকোন ভাবেই হতে পারে। কিন্তু ক্ষুদ্রঋণ কোনভাবেই সেটার বিকল্প হবে না। বরং ক্ষুদ্রঋণের সাফল্য নির্ভর করবে কতটা সঠিকভাবে ঋণদান কর্মসূচী শুধুমাত্র ক্রেডিট কন্সট্রেইন্ড দরিদ্র উদ্যোক্তা, যারা ক্ষুদ্রঋণের প্রকৃত টার্গেট গ্রুপ, তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যাচ্ছে।

খ) কিস্তিতে ঋণ আদায় এবং নিবিড় পর্যবেক্ষণঃ এধরনের দরিদ্র ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের পক্ষে একবারে বড় অংকের টাকা পরিশোধ করা ছোট ছোট কিস্তি দেয়ার চাইতে কঠিন। তাই ঋণ আদায়ের হার বাড়ানোর জন্য ছোট ছোট কিস্তিতে টাকা আদায় করা হয়। আবার সাপ্তাহিক মিটিং এবং গ্রামভিত্তিক কেন্দ্রের মাধ্যমে ঋণের ব্যবহার এবং পরিশোধপ্রক্রিয়ার উপর পর্যবেক্ষণ বাড়ানো হয়। এটাও করা হয় ঋণ পরিশোধের হার বাড়ানোর জন্য।

প্রশ্ন হচ্ছে গরীব মানুষকে সাহায্য করার জন্যই যদি এতকিছু তাহলে এত পুলিশিং করার দরকার কি? উপরের “ক” এবং “খ” নিশ্চিতভাবেই ঋণ কার্যক্রম পরিচালনার খরচ বাড়াচ্ছে। বেশী লোকবল দরকার হচ্ছে, বেশী অফিস দরকার হচ্ছে, বেশী কর্মঘন্টা নষ্ট হচ্ছে, বেশী একাউন্টিং করতে হচ্ছে। এর সবই করা হচ্ছে অনাদায়ী ঋণের হার যাতে কম থাকে। কারণ অনাদায়ী ঋণ যেহেতু ঋণ প্রদানের খরচ বাড়ায়, তাই অনাদায়ী ঋণ বেড়ে গেলে সফল বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে বেশী হারে সুদ নিতে হবে। এবং সেটা আবার প্রকৃত ভাল ঋণগ্রহীতাদের ঋণ নিয়ে উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনা কমাবে। তাই খরচের হিসাবের ii) এবং iii) এর মধ্যে বিপরীতমুখী সম্পর্ক রয়েছে। একটা কমাতে গেলে আরেকটা বাড়বে। বলতে পারেন, কেন গ্রামীণের লোন রিকভারী নাকি ৯৮%, তাহলে অনাদায়ী ঋণ আবার সমস্যা হল কবে? সমস্যা হয় নাই, কিন্তু এই উদ্ভাবনী কৌশল গুলো প্রয়োগ করেই এটাকে সমস্যা হতে দেয়া হয় নাই। নাহলে ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থা টিকে থাকতে পারত না অথবা সুদের হার আকাশ ছুঁয়ে ফেলত। তাই ঋণদান এবং আদায়ের বর্তমান প্রক্রিয়াতে পরিবর্তন করতে গেলে ক্ষুদ্রঋণের বেসিক প্রিন্সিপলের কাছায় টান লাগতে পারে।

মনে রাখতে হবে উপরের কোনটিই জামানতের বিকল্প নয়। প্রচলিত ব্যাংক জামানত বিক্রি করে টাকা আদায় করতে পারে, অন্যদিকে গ্রামীণ ব্যাংক গ্রুপের সদস্যদের ভবিষ্যতে ঋণ দেয়া বন্ধ করতে পারে, কিন্তু ইতিমধ্যে অনাদায়ী হয়ে যাওয়া ঋণ আদায়ে কিছু করতে পারে না। তাই, সেটা যাতে না হয়, সেজন্য এত পুলিশিং। আর সেটা আবশ্যিকভাবে খরচের খাতায় যোগ হয়, তাই ব্রেক ইভেন (আয়ব্যয় সমান) করতে হলে একটা প্রচলিত ব্যাংকের যে হারে সুদ নিতে হবে, ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনাকারী ব্যাংকের এর চেয়ে বেশী হারে সুদ নিতে হবে।

১.২.৪. সুদের হার কত বেশী হওয়া সংগতঃ এটাই সবচেয়ে কঠিন প্রশ্ন। আমি মনে করি, এমন একটা হার যাতে গ্রামীন ব্যাংক কোন দেশী বা বিদেশী সাহায্য ছাড়া এবং সদস্যদের কাছ থেকে, সরকার থেকে বা বিদেশী সাহায্য সংস্থা থেকে হ্রাসকৃত হারে আমানত সংগ্রহ করা ছাড়া ও ঋণ কার্যক্রমের খরচ নির্বাহ করতে পারে এবং

• ছোটখাট দুর্যোগ মোকাবেলা বা দু’একটি খারাপ বছর মোকাবেলা এবং
• শেয়ারহোল্ডারদের মূলধনের বিপরীতে রিজনেবল ডিভিডেন্ড প্রদান

করতে পারে। এটা নিয়ে অবশ্যই আরো আলোচনা হওয়া উচিত। তার আগে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এখন পর্যন্ত বছরওয়ারী লাভের হিসাব দেখে আসি।

এটা নীট লাভ, সব খরচ এবং প্রভিশন বাদ দেয়ার পর। এটাই রিজার্ভ ফান্ড, ডিভিডেন্ড ইকুয়ালাইজেশন ফান্ড, এমপ্লয়ী ওয়েলফেয়ার ফান্ড এবং শেয়ারের বিপরীতে ডিভিডেন্ড এর মধ্যে ভাগ হওয়ার পরে বাকিটা রিটেইন্ড প্রফিট হিসেবে পরের বছরের হিসেবের মধ্যে চলে যায়। খেয়াল করলে দেখবেন গ্রামীণ ব্যাংকের লাভের পরিমান প্রথম বছরগুলোতে অতি সামান্য, অনেক ক্ষেত্রে ঋণাত্মক। অধিকন্তু গ্রামীণ ব্যাংক প্রথম দিকে অনুদান নিত। জোনাথন মর্ডুখের হিসাব অনুযায়ী, ১৯৮৫ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত গ্রামীণের ঘোষিত লাভের পরিমান যেখানে ১.৫ মিলিয়ন ডলার, সেই সময়ে তারা বিদেশী অনুদান পেয়েছে ১৬.৪ মিলিয়ন ডলার। হ্রাসকৃত সুদে ঋণ এবং অন্যান্য পরোক্ষ সহায়তা হিসাব করলে মোট অনুদানের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৪৪ মিলিয়ন ডলার। স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে, ঐ সময়ে গ্রামীণের লাভের হিসাব আসলে বিদেশী অনুদানের উপর ভিত্তি করে, মোটেও ঋণ কার্যক্রম বাবদ আয় থেকে স্বনির্ভরতা নয়। প্রকৃতপক্ষে সেই সময়ে বিতরণকৃত ঋণের ১১% ই বিদেশী সাহায্য থেকে আসা। তার মানে প্রারম্ভিক বছরগুলোতে গ্রামীণ ব্যাংকের সুদ আদায় তাদের ঋণদানের খরচ মেটানোর জন্য যথেষ্ট ছিল না। এটা ভাল নাকি খারাপ সেটা আমরা শেষ পর্বে আলোচনা করব, আপাতত দেখে আসি পরের বছরগুলোতে গ্রামীণের লাভের কি অবস্থা। (নোটঃ জোনাথন মর্ডুখের সব সংখ্যা মিলিয়ন ডলারে, আর আমার সব সংখ্যা কোটি টাকায়)।

দেখা যাচ্ছে, ২০০৩ থেকে গ্রামীণ মোটামুটি ধারাবাহিকভাবে লাভের পরিমান বাড়াতে পেরেছে যেটা সর্বশেষ ২০১২ তে এসে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪৫ কোটি টাকা। আমি দু’একটা বাণিজ্যিক ব্যাংকের সাথে তুলনা করে দেখেছি, আমার কাছে মনে হয়েছে বেশ ভাল ফিগার। কিন্তু কি হয়েছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যে গ্রামীণের পারফর্মেন্সের এই উন্নতি? মর্ডুখ সাহেবের অভিযোগ এখন আর খাটে না, কারণ গ্রামীণ ব্যাংক ১৯৯৫ সালের পর থেকে আর বিদেশী অনুদান নিচ্ছে না, এবং যেসব অনুদান পাইপলাইনে ছিল তাও শেষ হয়েছে ১৯৯৮ সালে। তাহলে সুদের হার ১৬% থেকে ২০% করাতেই কি গ্রামীণের এমন রমরমা অবস্থা? এটা করা হয়েছিল ১৯৯১ সালে। তারপরে ১২ বছর লাগল কেন একটু লাভের মুখ দেখতে? বাধ্যতামূলক সঞ্চয়ের কথা বলবেন? যখন সঞ্চয় বাধ্যতামূলক ছিল তখনও গ্রামীণের সদস্যদের সঞ্চয়ের উপর সুদের হার (৮.৫-১২%) মার্কেট রেটের খুবই কাছাকাছি ছিল। ২০১০ থেকে সঞ্চয় এবং বীমা ঐচ্ছিক, সুতরাং এ খাত থেকে কোন বাড়তি সুবিধা পাওয়ার সুযোগই নেই। তাহলে গ্রামীণ বিদেশী সাহায্য নির্ভর থেকে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য ঋণগ্রহীতা সদস্যদের উপরে যে বাড়তি কোন কিছুর বোঝা চাপায়নি এটা আমরা ধরে নিতে পারি। এখন নীচের ফিগারটা দেখে আসি।

এটা প্রতি বছরে গ্রামীণ ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ দেখাচ্ছে। ২০০৩ এ বিতরণকৃত ঋণ যেখানে ছিল ২,১২৯ কোটি টাকা, সেখানে ২০১২ তে বিতরনকৃত ঋণ ১১,৮৬১ কোটি টাকা। বিতরণকৃত ঋণ ছাড়াও মোট সম্পদ এবং দায়, মোট আমানত ইত্যাদি নির্দেশক বিবেচনা করলেও দেখা যায়, গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ কার্যক্রমের আকার এবং পরিধি বাড়ছে। ঋণের সম্প্রসারণ অন্ততঃ দুটি উপায়ে ঋণদানের খরচ কমিয়ে ব্যাংকের লাভজনকতা বাড়াতে পারেঃ

• গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যরা পর্যায়ক্রমে বড় আকারের ঋণ নিতে পারে পূর্ববর্তী ঋণ সফলভাবে পরিশোধ করা সাপেক্ষে। কিন্তু একজন সদস্যকে ২০০০ টাকা ঋণ দেয়া বা ২০০০০ টাকা দেয়ার জন্য ব্যাংকের পরিচালনগত ব্যয় এর খুব একটা পার্থক্য হয় না। তাই ঋণের আকার বড় হলে প্রতি টাকা ঋণের পেছনে গড় খরচ কমে যায়।

• প্রায় একই রকম প্রভাব পড়ে ঋণগ্রহীতা সদস্যের সংখ্যা বাড়লে। ব্যাংকের ইতিমধ্যে তৈরী করা অবকাঠামো তখন আরো বেশী ঋণ ব্যবস্থাপনায় ব্যবহার করা হয়, যেটা ঋণদানের গড় খরচ কমাতে পারে।

এটা প্রমাণ করেনা যে, গ্রামীণের কার্যক্রম লাভজনক হওয়ার জন্য ঋণের সম্প্রসারণই মূল কারণ। অন্য কোন কারণ থাকতে পারে, কিন্তু উপরোক্ত যুক্তির কারণে আমার মনে হয়, ঋণের সম্প্রসারণের এক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা আছে। আর ঋণ কার্যক্রম সম্প্রসারণের সাথে প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক দক্ষতা এবং ঋণগ্রহীতাদের কাছে কার্যক্রমের গ্রহণযোগ্যতার একটা ধনাত্মক সম্পর্ক থাকা স্বাভাবিক।

এটা যদি সত্য হয়, অর্থাৎ ঋণগ্রহীতাদের উপর অন্যায্য সুদহার আরোপ না করেও শুধুমাত্র সাংগঠনিক দক্ষতা এবং ঋণ কার্যক্রম সম্প্রসারণের মাধ্যমে যদি গ্রামীণ ব্যাংক একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়, তাহলে গ্রামীণ ব্যাংক তার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে অন্তত কিছুটা হলেও সফল হয়েছে বলতে আমার আপত্তি নেই। এখন গ্রামীণ ব্যাংকের গত কয়েক বছরের ধারাবাহিক লাভ যদি ব্যাংকের স্থিতিশীল কার্যক্রম চালানোর পরেও বেশী মনে হয়, এবং দরিদ্র্ ঋণগ্রহীতাদের জন্য লাভের অংশ ডিভিডেন্ড হিসেবে পাওয়ার চাইতে সুদের হার কম হওয়া বেশী উপকারী হয়, তাহলে গ্রামীণের সুদহার কমানোর সম্ভাব্যতা যাচাই করা যেতে পারে। লাভের মার্জিন (২০১২ সালে ১৪৫ কোটি টাকা) এবং তার বিপরীতে বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ (১১৮৬১ কোটি টাকা) দেখে আমার মনে হয়, সুদের হারের ছোটখাট পরিবর্তন ও হয়তো গ্রামীণ ব্যাংকের অর্জিত আর্থিক স্থিতিশীলতাকে নড়বড়ে করে দিতে পারে। কিন্তু এটাই শেষ কথা নয়। এসব বিষয় যথার্থ গবেষনার দাবী রাখে।

মোদ্দাকথা হচ্ছে, মূল উদ্দেশ্যের সাথে আপোষ না করেও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রামীণ ব্যাংক আপাত সফল। আর গ্রামীণ ব্যাংক সফল হলে লাভের গুড়টা কার পাতে যায় সেটা নিয়ে আলোচনা থাকবে পরের পর্বে।

সুহাস শিমন

আগের পর্বঃ গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের হার, মালিকানা এবং আরো কিছু বিতর্ক (পর্ব ১.১)

facebook


মন্তব্য

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

জামানত ছাড়া ঋণ দিয়ে ও ঋণ আদায়ের হার উচ্চ রাখার জন্য ক্ষুদ্রঋণের ক্ষেত্রে কয়েকটি ব্যতিক্রমী প্রক্রিয়ার সাহায্য নেয়া হয়ঃ

প্রচলিত ব্যাংক জামানত বিক্রি করে টাকা আদায় করতে পারে, অন্যদিকে গ্রামীণ ব্যাংক গ্রুপের সদস্যদের ভবিষ্যতে ঋণ দেয়া বন্ধ করতে পারে, কিন্তু ইতিমধ্যে অনাদায়ী হয়ে যাওয়া ঋণ আদায়ে কিছু করতে পারে না

চাল খুলে নেয়া/গরু ছিনিয়ে নেবার অভিযোগ- এগুলো কি কেবলি মিথমাত্র?

পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

এগুলো মিথ না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থা এবং আইনশৃংখলা পরিস্থিতি বিবেচনা করলে এধরনের ঘটনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায়না। মূলত দু’ধরনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কারণে এরূপ ঘটতে পারেঃ

১। গ্রুপের একজনের ঋণ পরিশোধ না করায় অন্যদের ভবিষ্যত ক্ষতির সম্ভাবনায় তারা জোরপূর্বক টাকা আদায় করার চেষ্টা করতে পারে।

২। স্থানীয়ভাবে ঋণ আদায়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তার কর্মদক্ষতা প্রমাণের জন্য অন্যায়ভাবে কিস্তি আদায়ের চেষ্টা করতে পারে।

উভয়ক্ষেত্রেই এটা দেশের প্রচলিত আইনের লংঘন, এটা ঋণ আদায় নয়, সন্ত্রাস। যদিও এধরনের সন্ত্রাস প্রতিহত করার দায়িত্ব মূলত রাষ্ট্রের, আমরা প্রশ্ন রাখতে পারি ক্ষুদ্রঋণের কারণে এধরনের সন্ত্রাস বেড়ে যাচ্ছে কিনা? সেক্ষেত্রে দেখতে হবে এধরনের ঘটনার ব্যাপকতা কতটুকু। অবশ্যই ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এবং রাষ্ট্রের চেষ্টা করা উচিত এধরনের ঘটনা যাতে কম হয়। পত্রপত্রিকা এবং মিডিয়ায় যতটুকু আসে তাতে আমার মনে হয়নি এর ব্যাপকতা আশংকাজনক। আর জোরপূর্বক ঘরের চাল খুলে নেয়ার কারণেই গ্রামীণের ঋণ আদায়ের হার বেশী এবং গ্রামীণ দেশের আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমান্তরালে আরেকটি শক্তিশালী বাহিনী তৈরী করেছে যারা বাংলাদেশের গ্রামে যেকোনরকম শক্তিপ্রয়োগ করতে পারে এরকম কোন গবেষনা বা রিপোর্ট আজ পর্যন্ত দেখিনি।

আরেক দিক থেকে দেখা যায় বিষয়টিকে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা অনেক সময় চাঁদাবাজি করে, পত্রিকায় আসে। এজন্য কি আমরা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা বন্ধ করে দেব? হ্যা, দেব, যদি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা বিস্তারের চেয়ে বেশী চাঁদাবাজ তৈরী করে। অন্যথায়, চেষ্টা করব বিশ্ববিদ্যালয় চালু রেখেও কিভাবে ছাত্রদের চাঁদাবাজি কমানো যায়। আমার মনে হয় এধরনের যুক্তি ক্ষুদ্রঋণের ক্ষেত্রেও দেয়া যায়।

অনেক ধন্যবাদ পড়ার এবং মন্তব্য করার জন্য।

সুহাস শিমন

রাহী এর ছবি

চাল খুলে নেয়া/গরু ছিনিয়ে নেবার অভিযোগ- এগুলো কি কেবলি মিথমাত্র?

অনেক সময় অনেক ক্ষুদ্রঋণ দাতা প্রতিষ্ঠান, যারা দুর্বল অবকাঠামো নিয়ে আঞ্চলিকভাবে পরিচালিত - তাদের ক্ষেত্রে এধরনের অভিযোগ বেশি দেখা যায়। কিন্তু প্রচারনার বেলায় সব ক্ষুদ্রঋণ দাতা প্রতিষ্ঠানের ঘাড়েই দোষ চাপে।

এ ব্যাপারে আমি একটু বলি। গত বছর ঠিক এই সময় হাতিয়ায় প্রায় ১৫ দিন ছিলাম। একজন জেলের কথা বলি, তিনি কোন একটা এন জি ও থেকে আগের বছর ঋণ নিয়ে নৌকা কিনেছেন। তা পরিশোধ না করেই ঠিক ছয় মাস পরেই আবার আরেক এন জি ও থেকে ৮০০০০ টাকা ঋণ নিয়ে নতুন ঘর তুলেছেন ( ঘর নদী ভাঙনে ভেঙ্গে গিয়েছিল)।
আমি তাকে প্রশ্ন করেছিলামঃ পরের ঋণ দাতা কি প্রতিষ্ঠান কি আগের অপরিশোধিত ঋণের কথা জানে। তিনি না বললেন। এবং তিনি এটাও জানেন না কিভাবে এতো ঋণ শোধ করবেন।

গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষেত্রে এভাবে না জানিয়ে ঋণ নেয়া তা কঠিন হওয়ার কথা এর সিস্টেম এর কারনে।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হুমম ইয়ে, মানে...

পত্রপত্রিকা এবং মিডিয়ায় যতটুকু আসে তাতে আমার মনে হয়নি এর ব্যাপকতা আশংকাজনক

তাহলে বাজারমূল্য বিহীন কোনও ভাল খবরেরই ব্যাপকতা খুজে পেতে ফুটোস্কোপ লাগতে পারে হাসি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

হিমু এর ছবি

চলুক

কর অবকাশসহ সরকারপ্রদত্ত অন্যান্য সুবিধার কথা এ পর্বে আলোচিত হবে ভেবেছিলাম।

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। আসলে লেখাটাকে মূল বিষয়ে ফোকাসড রাখার জন্য কর অবকাশসহ অনেক কিছু আলোচনায় আনতে পারিনি। কর অবকাশ আমার দৃষ্টিতে সাবসিডি হিসেবে বিবেচিত হওয়ার কথা না। এমন নয় যে অন্য কোন বিকল্প প্রয়োগ থেকে নিয়ে এসে এই টাকাকে ক্ষুদ্রঋণের কাজে লাগানো হচ্ছে। বরং ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের উদ্বৃত্ত বা লাভের একটা অংশ অন্য কোন সেক্টরে কাজে লাগানোই কর সংগ্রহের (কর্পোরেট প্রফিট ট্যাক্স) উদ্দেশ্য। সেক্ষেত্রে আমাদের দেখা উচিত কার কাছ থেকে কর সংগ্রহ করা হচ্ছে। যদি গ্রামীণ ব্যাংকের মালিক বা লভ্যাংশের ভোক্তা ঋণগ্রহীতা এবং সরকার হয়ে থাকে (এ নিয়ে পরের পর্বে আলোচনা থাকছে), তাহলে দরিদ্র ঋণগ্রহীতার উপর অথবা সরকারের নিজের উপর কর আরোপ করার খুব একটা যৌক্তিকতা আছে কি?

সুহাস শিমন

হিমু এর ছবি

অর্থাৎ আপনি বলছেন, সরকারের কর-অবকাশ নীতি যৌক্তিকভাবেই গ্রামীণ ব্যাঙ্কের কার্যক্রমকে সহায়তা করছে?

অতিথি লেখক এর ছবি

গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানার স্ট্রাকচার বিবেচনায় কর অবকাশ নীতি অবশ্যই যৌক্তিক মনে করি।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

চমৎকার ঝরঝরে লেখা। আলোচনা চলুক, আমি গ্যালারীতে। আর পরের পর্বের অপেক্ষায়।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। উৎসাহিত বোধ করছি হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

কষ্টসাধ্য, পরিশ্রমী, বস্তুনিষ্ঠ, সুন্দর লেখা। ভাল লাগছে। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
- একলহমা

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

রাহী এর ছবি

লেখা অসাধারন হাততালি

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

আগ্রহ নিয়ে পড়ছি সিরিজটা। পরের পর্বের অপেক্ষায়---

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ছাইপাঁশ  এর ছবি

এত সুন্দর করে বুঝিয়ে লেখার জন্য লেখকে ধন্যবাদ। মন্তব্যের আলোচনা পড়ার অপেক্ষায়।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

anol Roy এর ছবি

খুব ভালো লেখা

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

পড়ছি---

স্বয়ম

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

Manik এর ছবি

Valo laglo, waiting for next episode হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ হাসি

wall  এর ছবি

গ্রামীণ ব্যাংককে নিয়ে যতটা অভিযোগ, তার বেশিরভাগই উঠে ব্যাক্তি ইউনুসের সমালোচনা করতে গিয়ে। একজন ব্যাংকার হিসেবে ইউনুসের unethical কাজের মাত্রা কতটুকু বা আসলেই কি আছে? ব্যাংকিং এর নিয়মকানুন অনুযায়ী ইউনুসকি কোনভাবে ক্ষমতার অপব্যাবহার করেছেন? এ দিকটি কখনো হাইলাইট করবেন আশা করি।

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। আসলে গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের হার কত কিংবা গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানা কার এগুলো নিয়ে বিতর্ক হওয়া উচিত নয়, এগুলো তথ্য এবং এই তথ্য দুষ্প্রাপ্য নয়। এই সিরিজটিতে তাই এই সহজপ্রাপ্য তথ্যগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করছি। গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানার ব্যাপারটা কারুর কাছে পরিষ্কার থাকলে ব্যক্তি ইউনূসকে পছন্দ-অপছন্দের কারণে গ্রামীণ ব্যাংককে অভিযুক্ত করার কথা না। ব্যক্তি ইউনূসের ব্যাপারে আমার তেমন কোন একাডেমিক সুবিধা ও নেই। তাই ব্যক্তি ইউনূসকে নিয়ে অন্য কারো লেখার জন্য অপেক্ষা করব। হাসি

সুহাস শিমন

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

এই হিসাব অনুযায়ী ৫০০০ টাকা ঋণ দেয়ার মোট খরচ ৫০০+১০০+২৫০=৮৫০ টাকা। অর্থাৎ আমি যদি শ্রমিকের কাছ থেকে ৮৫০ টাকা বা ১৭% প্রকৃত হারে সুদ নেই তাহলে আমার নিজের পকেট থেকে কোন টাকা দিতে হবে না।

গ্রামীণের ভূমিকা কি এখানে অন্য উৎস থেকে টাকা সংগ্রহের, নাকি নিজের টাকা বিনিয়োগের? নিজের টাকা বিনিয়োগ করলে ১০%কে খরচ হিসেবে দেখানোর কোনো যুক্তি নাই, ওটাও লাভ।

গ্রামীণের 'মালিক' হিসেবে গরীব লোকজন কেমন লাভবান হয়? গ্রামীণ লাভ করলে কি সুদের হার কমে? গ্রামীণ অন্য কোনো খাতে কি টাকা বিনিয়োগ করে, যাতে 'মালিক' গরীবেরা অন্য খাত থেকে লাভের ভাগ পেতে পারে?

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। গ্রামীণের নিজের টাকার উৎস কি হতে পারে বলে আপনার ধারণা?

সুহাস শিমন

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

প্রশ্নগুলোর উত্তর কি উত্তরে দেয়া সম্ভব?

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

অতিথি লেখক এর ছবি

চেষ্টা করি।

গ্রামীণের নিজের কোন টাকা নেই। গ্রামীণের মালিকদের থাকতে পারে, যেটাকে পরিশোধিত মূলধন বলা হয়। সেটা ১৯৮৩ সালে ছিল ৩ কোটি টাকা, আর এখন ৬০ কোটি টাকার মত। এই টাকা দিয়ে নিশ্চয় ১১৮৬১ কোটি টাকা ঋণ দেয়া সম্ভব নয়। তাই বাকি টাকাটা গ্রামীণ ব্যাংককে অন্যদের কাছ থেকে (ঋণগ্রহীতাদের সঞ্চয়, অন্যদের সঞ্চয়, অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ) সংগ্রহ করতে হয়। তাই সুদও দিতে হয়, এটা আমানত সংগ্রহের খরচ। আর মালিকদের যে টাকা (৬০ কোটি), সেটার জন্য সুদ দিতে হয় না, তারা লাভের অংশ (ডিভিডেন্ড) পান।

গ্রামীণের ক্ষুদ্রঋণ এবং অন্য খাতে বিনিয়োগ থেকে যে আয় হয়, সেখান থেকে সব খরচ বাদ দিলে যা থাকে সেটাকেই নীট লাভ হিসেবে দেখানো হয় প্রফিট এন্ড লস একাউন্ট এ। আমার লেখায় যে নীট লাভের ফিগার ব্যবহার করেছি সেটা প্রফিট এন্ড লস একাউন্টস থেকে নেয়া। এই লাভের পরিমাণ পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রিজার্ভ ফান্ড, ডিভিডেন্ড ইকুয়ালাইজেশন ফান্ড, এমপ্লয়ী ওয়েলফেয়ার ফান্ড এবং শেয়ারের বিপরীতে ডিভিডেন্ড এর মধ্যে ভাগ হওয়ার পরে বাকিটা রিটেইন্ড প্রফিট হিসেবে পরের বছরের হিসেবের মধ্যে চলে যায়। এই প্রত্যেকটি খাতই শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয়, কোনটি তাৎক্ষনিক আয় (ডিভিডেন্ড) আবার কোনটি ভবিষ্যৎ আয়ের জন্য নিরাপত্তা (রিজার্ভ ফান্ড, ডিভিডেন্ড ইকুলাইজেশন ফান্ড) । আর শেয়ারহোল্ডার কারা সেটা নিয়ে পরের পর্বে লিখছি। লাভ হওয়ার কারণে সুদের হার কমানো উচিত কিনা সেটা নিয়ে আরেকটু গবেষনা হওয়া উচিত বলে মনে করি, যেটা লেখায়ও বলেছি। এমনিতে সুদের হার ১৯৯১ থেকে ২০% এ স্থির আছে। সুদের হার কমালে গ্রামীণের আর্থিক স্থিতিশীলতা যদি ব্যহত না হয়, তাহলে হার অবশ্যই কমানো উচিত বলে মনে করি। কিন্তু লাভের পরিমানের সাথে সবসময় সুদহারের পরিবর্তন (ফ্লোটিং) কতটা সহজসাধ্য, ব্যয়সাশ্রয়ী বা গ্রাহক-বান্ধব সেটা নিয়ে আমি যথেষ্ট সন্দিহান। বরং সুদহারের পরিবর্তন ব্যাংকের দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক নিরাপত্তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে করা উচিত বলে মনে করি।
অনেক ধন্যবাদ ।

সুহাস শিমন

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

গ্রামীণের নিজের কোন টাকা নেই। গ্রামীণের মালিকদের থাকতে পারে, যেটাকে পরিশোধিত মূলধন বলা হয়। সেটা ১৯৮৩ সালে ছিল ৩ কোটি টাকা, আর এখন ৬০ কোটি টাকার মত। এই টাকা দিয়ে নিশ্চয় ১১৮৬১ কোটি টাকা ঋণ দেয়া সম্ভব নয়। তাই বাকি টাকাটা গ্রামীণ ব্যাংককে অন্যদের কাছ থেকে (ঋণগ্রহীতাদের সঞ্চয়, অন্যদের সঞ্চয়, অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ) সংগ্রহ করতে হয়। তাই সুদও দিতে হয়, এটা আমানত সংগ্রহের খরচ। আর মালিকদের যে টাকা (৬০ কোটি), সেটার জন্য সুদ দিতে হয় না, তারা লাভের অংশ (ডিভিডেন্ড) পান।

অর্থাৎ, গ্রামীণের ব্যবসায় প্রায় বিনা পুজির ব্যবসায়।
গ্রামীণের বিনিয়োগকৃত টাকার তাহলে ২টা উৎস:

১) অন্যান্য ব্যাঙ্কের মতোই সঞ্চয়। সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কগুলো কত % সুদ দেয়? গ্রামীণের সাথে অন্যান্য ব্যাঙ্কের কি বিশেষ কোনো পার্থক্য আছে এ ব্যাপারে? ধরেন, আমি ব্যাঙ্কে ১০০ টাকা রাখলাম। ব্যাঙ্ক কি আমাকে বছর শেষে ১১০ টাকা দিবে?

২) অন্যান্য উৎস থেকে ঋণ। গ্রামীণ অন্যান্য ব্যাঙ্ক থেকে এক্সাক্টলি কত রেটে টাকা ঋণ করে? এই ঋণ কি কিস্তি আকারে শোধ করে (নিজে যেভাবে গ্রাহকদের কাছ থেকে রিটার্ন পায়), নাকি বছর শেষে? কিস্তিতে শোধ করলে সম্ভবত বছর শেষে প্রকৃত সুদের হার প্রায় দ্বিগুণ হয়।

উত্তরের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

Norom Manush এর ছবি

যত পড়ছি তত প্যাচ লেগে যাচ্ছে।বড় কঠিন বিষয়।পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম। চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। কোথায় প্যাঁচ লাগছে বললে প্যাঁচ খোলার চেষ্টা করা যেত হাসি

মন মাঝি এর ছবি

১৭ টুকরা করার কদ্দুর কি হল জানেন?

****************************************

অতিথি লেখক এর ছবি

হা হা... পত্রিকায় তো ইদানিং কিছু দেখি না হাসি

সুহাস শিমন

Norom Manush এর ছবি

প্যাচ বলতে বুঝাতে চাইসি যে এখনো বুঝতে পারসিনা মাইক্রো ক্রেডিট এর ইমপ্যাক্ট কি আসলে কল্যানকর নাকি কল্যানকর না।ধন্যবাদ।

পথিক পরাণ এর ছবি

বিশ্লেষণ চমৎকার।

ঋণ এবং সুদ সংক্রান্ত বিশ্লেষণ এলাকায় একটু জানতে চাই।

১। গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ ১৯৮৩ তে পরিস্কার বলা আছে -
Section 19. The Bank shall provide credit with or without collateral security, in cash or in kind, for such term and subject to such conditions as may be prescribed, to landless persons…

Landless person এর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে-
Section 2(h) “landless person” means any person who or whose family owns less than fifty decimals of cultivable land or who or whose family owns property, both movable and immovable, the value of which does not exceed the value of one acre of cultivable land according to the prevailing market price in the union in which the person normally resides;

আইনটিতে আরও বলা হয়েছে ব্যাংকটি গ্রামীণ এলাকা- অর্থাৎ শহর এলাকার বাইরে কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

প্যাকেজেজ কর্পোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে গ্রামীণ ব্যাংক ১৯৯০ থেকে ২০০৫ সালের ভেতর প্রায় ৯৬৬ লক্ষ টাকা ঋন প্রদান করেছে। এই প্রতিষ্ঠানটি ডঃ ইউনুসের একটি পারিবারিক প্রতিষ্ঠান। এর মালিক কারা, তার বিস্তারিত তথ্য আছে।

প্যাকেজেজ কর্পোরেশন ডঃ ইউনুসের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের কেউ ভূমিহীন- এমন দাবী করতে পারবেন না মনে হয়। ২০০৫ সালে গ্রামীণের এক বোর্ড সভায় এই প্রতিষ্ঠানকে প্রদত্ত ঋণের উপর ৫% সুদ ধার্য করা হয়। ফলে প্রায় ১৫ বছর ধরে নেয়া ঋণের উপর প্রায় ১৩৭ লক্ষ টাকার সুদ মওকুফ করে দেয়া হয়।

এইরকম আরও অন্তত ৩৪ টি প্রতিষ্ঠান পাওয়া গেছে, যেসব প্রতিষ্ঠান গঠন, সেগুলোর পরিচালনায় যুক্ত হওয়া ও তাদের সাথে আর্থিক লেনদেন করা হয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়া হয়েছে। আবার কোন কোন প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে গ্যারান্টর হয়ে অন্য আর্থিক উৎস হতে ঋণ প্রাপ্তিতে সহায়তা করা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট প্রাপ্ত ঋণ সুবিধা গ্রামীণের মোট প্রদত্ত ঋণের একটা বড় অংশ নিঃসন্দেহে।

এদের ঋণ দেয়ার সময়ও কি আপনার বিশ্লেষণ খাটবে?

সম্পুরক কৌতূহলঃ

গ্রামীণের টাকায় প্যাকেজেস কর্পোরেশনের মত ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানে ভিন্ন হারে ঋণ প্রদান করে এবং মওকুফ করে গ্রামীণের সাধারণ মালিকদের কি ধরণের লাভ হয়েছে? এইরকম বৈষম্যমূলক সুদের হার নির্ধারণ থেকে প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক নয় কি যে দরিদ্র মহিলাদের সুদের হার কমাতে বাঁধা কোথায়?

২। আপনার গ্রামীণের লাভ লোকসানের হিসাবের ব্যাখ্যায় গ্রামীণের অন্যান্য সহযোগী নামীয় প্রতিষ্ঠানের কি ধরণের লাভ যোগ হয়েছে তার পরিসংখ্যানটি জানালে উপকৃত হতাম। যেমন ধরেন- গ্রামীণ ফোন নামের অতি বিখ্যাত কোম্পানিটির ৩৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক গ্রামীণ টেলিকম। গ্রামীণ ফোন হাজার হাজার কোটি টাকার মুনাফা করছে। এখন কথা হল, দুস্থ মহিলারাই যদি গ্রামীণ ব্যাংকের মালিক হন, তারা কি এই লাভের টাকার অংশীদার হচ্ছেন? না হলে এই লাভের গুঁড় কোন পিঁপড়া খেল?

গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের হার যতটা না সমস্যা, তার থেকে অনেক গুরুতর সমস্যা এর মালিকানা এবং এই মালিকানা স্বত্বের ব্যবহার/ অপব্যবহার। আপনার শিরোনাম বলছে, এবিষয়ে লিখবেন। তখন ফিরব...

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ চমৎকার মন্তব্যের জন্য। আপনার কৌতুহলের অনেক জায়গায় আমারো আগ্রহ ছিল, আমার লেখার বিষয়ের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত না হওয়ায় সবকিছু ভালভাবে দেখা হয়নি। কিন্তু আলোচনায় তো দোষ নেই, গ্রামীণ ব্যাংকের রিভিউ কমিটির প্রতিবেদন আর গ্রামীণ ব্যাংক এবং ইউনূস সেন্টারের প্রতিউত্তর দেখে আমি যতটুকু বুঝলাম তার আলোকেঃ

১। প্যাকেজেস কর্পোরেশন সম্পর্কেঃ “এই প্রতিষ্ঠানের কেউ ভূমিহীন- এমন দাবী করতে পারবেন না মনে হয়”। ভূমিহীন হিসেবে প্যাকেজেস কর্পোরেশনকে ক্ষুদ্রঋণ দেয়া হয়নি। ১৯৮৩ এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী ভূমিহীনদের ক্ষুদ্রঋণ দেয়া গ্রামীণ ব্যাংকের মূল উদ্দেশ্য কিন্তু ব্যাংকিং কার্যক্রম যথাযথ পরিচালনার স্বার্থে আরো ২১ ধরনের ব্যবসায়িক কার্যক্রমের অনুমোদন দেয়া হয়েছে সেকশন ১৯ এ, এবং প্যাকেজেস এর বিষয়টি ১৯ (u) এর আওতায় পড়ার কথা।

অন্যান্য প্রতিষ্ঠান সম্পর্কেঃ “এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট প্রাপ্ত ঋণ সুবিধা গ্রামীণের মোট প্রদত্ত ঋণের একটা বড় অংশ নিঃসন্দেহে”। নয়। গ্রামীণের ক্ষেত্রে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে ঋণ সংক্রান্ত যেসব “অভিযোগ” রয়েছে (যেমন প্যাকেজেস কর্পোরেশন, গ্রামীণ কৃষি ফাউন্ডেশন, এগুলোর প্রত্যেকটির যদিও ব্যাখ্যা আছে), তার কোনটা বা সবগুলো মিলিতভাবে গ্রামীণের মোট ঋণের খুবই ছোট অংশ। (গ্রামীণের মোট প্রদত্ত ঋণের পরিমাণ কয়েক হাজার কোটি টাকা বার্ষিক, আর প্যাকেজেস কর্পোরেশনকে ঋণ দেয়া হয়েছিল ৯.৬৬ কোটি টাকা)

এদের ঋণ দেয়ার সময়ও কি আপনার বিশ্লেষণ খাটবে”? না। ক্ষুদ্রঋণকেই গ্রামীণ ব্যাংকের মূল কার্যক্রম ধরে নিয়ে এর সাথে জড়িত বিষয়গুলোই বিশ্লেষন করার চেষ্টা করেছি। বাকিগুলো সম্পূরক কার্যক্রম, এবং অর্থমূল্যের বিচারে গ্রামীণ ব্যাংকের লাভজনকতার জন্য বাকি কার্যক্রমের ভূমিকা আমার কাছে খুব উল্লেখযোগ্য মনে হয়নি।

আপনার সম্পূরক কৌতুহলের উত্তরটা মন্তব্যের শেষে দেয়ার‍ চেষ্টা করছি।

২। “আপনার গ্রামীণের লাভ লোকসানের হিসাবের ব্যাখ্যায় গ্রামীণের অন্যান্য সহযোগী নামীয় প্রতিষ্ঠানের কি ধরণের লাভ যোগ হয়েছে তার পরিসংখ্যানটি জানালে উপকৃত হতাম”। যতদূর জানি, গ্রামীণ নামীয় প্রতিষ্ঠান যেমন গ্রামীণ ফোন, গ্রামীণ টেলিকম এসবের মালিক গ্রামীণ ব্যাংক নয়। অর্থাৎ গ্রামীণ ব্যাংক এসব প্রতিষ্ঠানে কোন বিনিয়োগ করেনি বা শেয়ার হোল্ড করে না। সেক্ষেত্রে এদের প্রফিট এর ভাগ গ্রামীণ ব্যাংকের পাওয়ার কথা না আইনত।

গ্রামীণ ফোনের শেয়ারের মালিক গ্রামীণ টেলিকম। সেই টাকা দিয়ে গ্রামীণ টেলিকম কি করছে সেটা আমারো জানার ইচ্ছা আছে, কিন্তু এখানে গ্রামীণ ব্যাংকের দোষ-গুণ বা লাভ-লোকসান দেখছি না। আমার জানামতে, দুঃস্থ মহিলারা গ্রামীণ ব্যাংকের মালিক কিন্তু গ্রামীণ ফোন বা গ্রামীণ টেলিকমের মালিক নন। তবে দুঃস্থ মহিলাদের টাকা দিয়ে যদি গ্রামীণ ফোন চালানো হয়, কিন্তু তাদেরকে মালিকানা না দেয়া হয়, তাহলে এতবড় বেইনসাফির জবাব চাই আমিও, কিন্তু আমার জানামতে “দিস ইজ নট দ্যা কেস”।

এবার ব্যক্তিগত মতামত। আমার মনে হয়, এসব কনফিউশনের মূল কারণ বিদেশ থেকে পাওয়া অনুদানের টাকা। প্রথম দিককার এসব অনুদানের অনেকগুলো ডঃ ইউনূসের ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে এসেছে। এবং ডঃ ইউনূস এসব অনুদানের টাকা গ্রামীণ ব্যাংকে ব্যবহার করার পাশাপাশি এগুলো ব্যবহার করে আরো প্রতিষ্ঠান তৈরী করেছেন । “গ্রামীণ ফান্ড” এবং “গ্রামীণ কল্যাণ” এভাবেই তৈরী। এই দুটো প্রতিষ্ঠান আবার আরো প্রতিষ্ঠান তৈরী করেছে। আমি এতে আপত্তির কিছু দেখি না যদি এসব প্রতিষ্ঠান গ্রামীণের শেয়ারহোল্ডারদের (সরকার এবং ঋণগ্রহীতা) টাকা ব্যবহার না করে এবং দাতাদের আপত্তি যদি না থাকে। যতদূর দেখলাম সব জায়গায়ই দাতাসংস্থার টাকা ব্যবহার করা হয়েছে এবং সেটা তাদের জ্ঞাতসারেই। তাই গ্রামীণ ব্যাংকের দরিদ্র শেয়ারহোল্ডারদের টাকা অন্য কোথাও চলে যাচ্ছে এধরনের অভিযোগের কোন শক্ত যৌক্তিক ভিত্তি খুঁজে পাইনা।

এবার প্যাকেজেস কর্পোরেশন।

প্যাকেজেস কর্পোরেশন নিয়ে রিভিউ কমিটির প্রতিবেদনঃ রিভিউ কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, গ্রামীণ ব্যাংক ডঃ ইউনূসের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান প্যাকেজেস কর্পোরেশনকে ১৯৯০ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত সময়ে ৯.৬৬ কোটি টাকা ঋণ দেয় এবং এই ঋণের উপর মোট ১৮৯.৭৯ লক্ষ টাকা সুদ পাওনা হয় (১০% থেকে ১৬% হারে বিভিন্ন সময় এবং বিভিন্ন প্রকারের ঋণের বিপরীতে)। অন্যদিকে প্যাকেজেস কর্পোরেশন মোট ১০.১১ কোটি টাকা পরিশোধ করে যা ব্যাংকের পাওনা সুদাসল থেকে ১৪৩.৬৩ লক্ষ টাকা কম। এই অবস্থায় গ্রামীণ ব্যাংক কর্তৃক সুদের হার কমিয়ে ৫% এ পুননির্ধারণ করা হয় এবং তাতে প্যাকেজেস কর্পোরেশনের আর মাত্র ৭.২২ লক্ষ টাকা দিয়েই পুরো ঋণ শোধ হয়ে যায়। অর্থাৎ প্যাকেজেসের কাছ থেকে ১৩৬.৪১ লক্ষ টাকার মত পাওনা মওকুফ করা হয়।

এখানে লক্ষণীয় যে প্যাকেজেস কর্পোরেশনকে এই ঋণদানের উদ্দেশ্য এবং কোন পরিস্থিতিতে সুদের হার কমিয়ে দেয়া হল এ নিয়ে রিভিউ কমিটি একটি অজ্ঞেয়বাদী অবস্থান গ্রহণ করেছেন।

গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যাখ্যাঃ গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম সম্প্রসারণের জন্য যখন অনেক ছাপার কাজ দরকার হচ্ছিল, তখন সেগুলোর সময়মত যোগানের প্রয়োজনে গ্রামীণ ব্যাংকের একটি নিজস্ব ছাপাখানা স্থাপন করার কথা চিন্তা করা হয়। কিন্তু সেটা যেহেতু ব্যয়বহুল, ডঃ ইউনূসের পরিবার তাদের নিজস্ব প্রিন্টিং প্রতিষ্ঠান প্যাকেজেস কর্পোরেশন গ্রামীণ ব্যাংককে ব্যবহার করতে দিতে রাজি হন। এবং সেই সময়ে প্যাকেজেস কর্পোরেশন থেকে তারা কোন লাভ বা বিল্ডিং বা মেশিনারী ব্যবহারের বিনিময়ে কোন ভাড়া নেননি।

কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংকের প্রিন্টিং কাজ পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় টেকনোলজির উন্নয়ন এবং দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্যাকেজেস কর্পোরেশনকে দাতাসংস্থার ফান্ড থেকে লোন দেয়া হয় এবং প্যাকেজেস কর্পোরেশন সেটা সুদসহ পরিশোধ করে।

এই ব্যাখ্যায় ঋণের টার্মস এর বিস্তারিত বলা হয়নি, কিন্তু এই দুটো তথ্য এক করলে পুরো অবস্থার প্রায় সম্পূর্ণ একটা চিত্র আমরা পেতে পারি।

গ্রামীণ ব্যাংকের নির্ভরযোগ্য প্রিন্টিং দরকার হওয়ায় নতুন প্রিন্টিং প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করার খরচ কমাতে প্যাকেজেস কর্পোরেশন নেয়া হয় (গ্রামীণের ম্যানেজমেন্ট এর অধীনে)। গ্রামীণের নিজস্ব কার্যক্রমের প্রয়োজনে ঐ সময়ে প্যাকেজেসকে ৯.৬৬ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়। এভাবে ৭ বছর কার্যক্রম চালানোর পর (১৯৯০-১৯৯৭) ডঃ ইউনূসের পরিবারকে আবার প্যাকেজেস কর্পোরেশন ফিরিয়ে দেয়া হয় (ঋণ সহ এবং লাভ ছাড়া)। প্যাকেজেস কর্পোরেশন গ্রামীণকে দেয়া হয়েছিল ভাড়া বা লাভ ছাড়া। পরবর্তীতে হ্রাসকৃত সুদে ঋণের টাকা ফেরত নেওয়া হয়। সুদের হার কমানোর কি যৌক্তিকতা থাকতে পারেঃ

ক) গ্রামীণের ম্যানেজমেন্টের অধীনে প্যাকেজেস এর রেভিনিউ ৯.৬৬ কোটি টাকা সুদসহ পরিশোধ করার মত যথেষ্ট না হতে পারে, সেক্ষেত্রে ডঃ ইউনূসের পরিবারকে প্যাকেজেস কর্পোরেশন ব্যবহার করতে দেয়ার অপরাধে অতিরিক্ত টাকাটা চার্জ করা খুব যুক্তিযুক্ত হতনা।

খ) প্যাকেজেস যেহেতু ৭ বছর তাদের প্রতিষ্ঠান গ্রামীণকে ব্যবহার করতে দেয়ার জন্য কোন ভাড়া বা লাভ নেয়নি, এটা প্যাকেজেস এর মালিকদের জন্য একটা ক্ষতি। গ্রামীণ ব্যাংক তাঁদেরকে এই ক্ষতির জন্য কম্পেনসেট করার চেষ্টা করতে পারে। এরকম একটা প্রতিষ্ঠানের ৭ বছরের আয় ১৩৬.৪১ লক্ষ টাকার তুলনায় খুব কম হওয়ার কথা না।

এগুলো শুধুই অনুমান। তবে এখানে ১৩৬.৪১ লক্ষ টাকার সুদ মওকুফ করে গ্রামীণের বিরাট ক্ষতি হয়েছে এবং প্যাকেজেস কর্পোরেশনের মালিকদের বিরাট লাভ হয়েছে সেরকম মনে করার কোন কারণ দেখি না। তবে এধরনের ইনফরমাল এরেঞ্জমেন্ট পরিহার করাই যুক্তিযুক্ত হত বলে মনে করি। কিন্তু এটা ঠিক দুর্নীতির সংজ্ঞার সাথে মিলে না, বরং সরকারী এবং বেসরকারী কাজে অহরহ ঘটতে থাকা পদ্ধতিগত ত্রুটির সাথে বেশী মিল খুঁজে পাই।

সুহাস শিমন

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।