বই আলোচনাঃ শিম কিভাবে রান্না করতে হয়

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ০৩/০৮/২০১৫ - ১:১৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

‘শিম কিভাবে রান্না করতে হয়’ সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ’র ইংরেজী ভাষায় লিখিত স্যাটায়ার ‘How does one cook beans' এর বাংলা অনুবাদ। রচনাটির একটি subtitle বা উপশিরোনাম আছে, 'এক এশীয়র ফ্রান্স অভিযান'। দীর্ঘদিন অপ্রকাশিত থাকা লেখাটির প্রচার প্রচারণা নিতান্ত কম বলে লেখকের দেয়া মূল ইংরেজী উপশিরোনামটি পেলামনা; তাই অনুবাদকের শব্দচয়নের রুচির ওপরই এ বেলা ভরসা করতে হচ্ছে। আমাদের এশীয়দের চোখে ইয়োরোপীয়দের অনেক আচরণই অদ্ভুত, বেমানান এমনকি পাগলাটে মনে হয়। যে সুবিশাল ভৌগোলিক দূরত্ব এই দু অঞ্চলের মাঝে হাত পা মেলে শুয়ে আছে, তাতে করে সমাজ সংস্কৃতির এ পার্থ্যকটা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। ইয়োরোপীয়দের দৈনন্দিন নানা আচার ব্যবহার এক ফ্রান্স বেড়াতে যাওয়া এশীয় যুবকের চোখে কেমন ঠেকে তা-ই মূলত ‘শিম কিভাবে রান্না করতে হয়’ ব্যঙ্গাত্নক রচনাটির উপজীব্য। ওয়ালীউল্লাহ্ এই লেখাটি আবু শরিয়া ছদ্মনামে লেখেন। শিবব্রত বর্মনের অনুবাদে লেখাটি প্রকাশ করেছে প্রথমা প্রকাশন।

সাধারণত স্যাটায়ার বা কমেডী ঘরানার রচনা দু ধরনের ভঙ্গিতে লেখা হয়। এক, লেখক তাঁর রচনায় হাস্যকর সব ঘটনার অবতারণা ঘটান (এখানে ‘হাস্যকর’ শব্দটি স্রেফ হাসির উদ্রেককারী মজার ঘটনা অর্থে ব্যবহার করছি। ‘হাস্যকর’ শব্দটির যে ঋণাত্নক প্রয়োগটি আছে, সেটিকে সচেতনভাবেই বেমালুম অস্বীকার করে যাচ্ছি! দুরাশা করি, আমার শব্দঝুলির নিতান্ত গরীবী দশা এ লেখা যিনি অনুগ্রহ করে পড়ছেন তিনি ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখবেন)। এ জাতীয় স্যাটায়ারে ভাষার বাহুল্য বেশী একটা প্রাধান্য পায় না, পায় ঘটনার অতিঘটন। ভলতেয়ার, জর্জ অরওয়েল, ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়, আবুল মনসুর আহমেদ প্রমুখ এ ধারাতেই ব্যঙ্গাত্নক রচনা লিখে গেছেন। স্যাটায়ার লেখবার দ্বিতীয় যে আরেকটি ভঙ্গি আছে, তাতে কাহিনী কম, ভাষার মাধুর্য বেশী। প্রতিটি ভাষারই নির্দিষ্ট কিছু মারপ্যাঁচ আছে। যথার্থ সময়ে সে সব মারপ্যাঁচের মোক্ষম প্রয়োগে কত চমৎকার হাস্যরস যে তৈরী হতে পারে সে আমরা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে নিয়মিতই অনুভব করি। দ্বিতীয় ধারার স্যাটায়ারিস্টরা তাঁদের নিজ নিজ ভাষার এই মারপ্যাঁচকে অবলম্বন করেই স্যাটায়ার লেখেন। উইলিয়াম সমারসেট মম, পি. জি ওডহাউস, জেরোম কে জেরোম এঁদের লেখা হল এই ধারার। কেউ যদি হাতে আতশ কাঁচ নিয়ে জেরোম কে জেরোম বা ওডহাউসের লেখায় অনুসন্ধান করতে বসেন, দেখবেন, তাতে গল্পের পরিমাণ আসলে ন্যূনতম। পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা পাঠক যা পড়েন তা স্রেফ ভাষার কেরদানি। প্রথম ঘরানার স্যাটায়ার লিখতে একজন লেখককে ভয়ানক তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ শক্তি সম্পন্ন হতে হয়। চারপাশের সমাজের দৈনন্দিন চিত্র, অবস্থাভেদে মানুষের আচরণের ভিন্নতা ইত্যাদি বিষয় প্রথম ঘরানার স্যাটায়ারিস্টদের নখদর্পণে। আর দ্বিতীয় ঘরানাটির লেখা লিখতে চাই ভাষার ওপর দারুণ দখল। ইংরেজী ভাষাটির চমৎকার একটি কূটনৈতিক দিক আছে, যার প্রয়োগ সরলরেখার মত সোজা একটি কথাকে মূলভাব অক্ষুণ্ণ রেখে জিলাপীর মতো ভীষণ প্যাঁচালো এক রূপ দিতে পারে। ইংরেজী ভাষার অদ্ভুত সুন্দর এই গুণটির কারণে ভাষাটি দ্বিতীয় ঘরানার স্যাটায়ার লেখার জন্য দারুণ উপযোগী। বাংলা ভাষায় ওডহাউস, মম কিংবা জেরোমের মতো ভাষার কেরদানি দেখিয়ে ব্যঙ্গ রচনা বেশী একটা হয়নি। গোটা বাংলাভাষাতেই স্যাটায়ার একটি দুর্লভ বস্তু। বঙ্কিমচন্দ্র, ত্রৈলোক্যনাথ, বনফুল, আবুল মনসুর আহমদ, আহমদ ছফা এই ক’টি নাম ছাড়া আর বিশেষ কাউকে কী মনে পড়ে?

‘শিম কিভাবে রান্না করতে হয়’ শিরোনামের অনুবাদটি পড়ে মনে হলো সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ মূল ইংরেজী রচনাটিতে সেই চিরাচরিত ‘ব্রিটিশ হিউমার’ বা ভাষার মারপ্যাঁচের প্রয়োগ-ই ঘটিয়েছিলেন। বাংলা অনুবাদকের হাতে পড়ে রচনাটি বড্ড রসকষহীন হয়ে পড়লো। ‘ব্রিটিশ হিউমার’ ধরণের লেখার মূল ভিত্তিটাই যখন ভাষাটির অলিগলির প্যাঁচালো পথে সুকৌশলে স্কি করা, অনুবাদ কর্মে সচেতন না হলে অনুবাদটি সেই গলিতে পথ হারাবে এটাই স্বাভাবিক। ব্যাকরণগত দিক থেকে শুরু করে প্রায়োগিক অনেক ব্যাপারে বাংলা ভাষা ইংরেজীর প্রতিবিম্ব, তবু দু’টি ভাষা সম্পূর্ণ ভিন্ন দু’টি সত্ত্বা, ভাষা দু’টির সৌন্দর্যও সম্পূর্ণ ভিন্ন। এক ভাষার গালি আরেক ভাষার বুলি। ইংরেজী 'hug' আর বাংলা 'হাগ' কী আর এক?

ব্রিটিশ শাসনামলের ভারতে যখন বিধবা বিবাহ প্রচলনের আন্দোলন শুরু হলো, গোঁড়া হিন্দু অনেক পুরোহিত তখন গাঁইগুঁই করা শুরু করলেন। শেষ পর্যন্ত তাঁরা বিধবা বিবাহে রাজী হলেন কিন্তু শর্ত আরোপ করলেন বিধবাকে কুমারী হতে হবে। বিধবা নারীর কুমারিত্ব অটুট আছে কিনা জানার উপায় কি? পুরোহিতেরা বুদ্ধি বাতলে দিলেন, কুমারিত্ব ইন্সপেক্টর নিয়োগ দেয়া হোক। প্রতিটি প্রকাশনা সংস্থারও এমন একজন ইন্সপেক্টর থাকা সম্ভবত আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে যিনি নির্ধারণ করবেন কি ছাপা হবে আর কি ছাপা হবেনা। ‘প্রথমা’র এমন একজন ইন্সপেক্টর আছেন কিনা জানিনা, তবে এই বইটি ছাপাবার সিদ্ধান্ত তো সংস্থাটির ওপর মহলের কাউকেই নিতে হয়েছে। এই ব্যক্তিটি যথেষ্ট রুচিবান হলে সম্ভবত এই অনুবাদটি ছাপতে দিতেননা; সম্ভবত অনুবাদটিই করতে দিতেননা। সবকিছুর অনুবাদ হতে হবে এমন কোন কথা নেই। সব কাব্যের, সব গল্পের অনুবাদ হয়না। ‘শিম কিভাবে রান্না করতে হয়’ লেখাটির ভঙ্গিমা বলে এটি মূল ভাষা ইংরেজীতে থাকলেই ভালো হতো। জড়ভরত বাংলা অনুবাদটি পাঠককে ওয়ালীউল্লাহ’র ক্ষমতা সম্পর্কে ভীষণ ভুল ধারণাই দেবে।

ওয়ালীউল্লাহ’র এই রচনাটি ইংরেজীতে লিখবার পেছনে একটি উদ্দেশ্য ছিলো, যা সৈয়দ আবুল মকসুদ বইটির ভূমিকাতে ব্যখ্যা করেছেন। আবুল মকসুদ বলেছেন “ইউরোপীয় উপনিবেশবাদীরা অহংকারী। তারা গর্বিত তাদের সভ্যতা, সম্পদ ও সংস্কৃতি নিয়ে। তারা হেয় জ্ঞান করে এশীয়দের। যে এশীয়দের তারা শোষণ ও লুন্ঠন করেছে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে। তিনি (সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ) চেয়েছিলেন এশিয়াবাসীর আবেগ ও বঞ্চনার কথা পশ্চিমি পাঠকদের কাছে স্যাটায়ারের মাধ্যমে উপস্থাপন করতে”। ভাষার দূরত্বের কারণে উদ্দেশ্য থেকে ভীষণ বিক্ষিপ্ত অনুবাদটি হাস্যকর রকম চওড়া মূল্যে খরিদ করবার পর একজন এশীয় আমার সাথে আরেকজন এশীয় প্রকাশক বঞ্চনা করলেন, এমন বোধই হচ্ছে! প্রথমা চাইলেই মূল ইংরেজীতে বইটি ছাপতে পারতো, তাতে পাঠক দু চার দশজন হয়তো কম হতো, কিন্তু লেখার মান ও উদ্দেশ্য অটুট থাকতো। বর্তমান বাংলা অনুবাদটি পড়ে কেউ লেখকের ব্যঙ্গের লক্ষ্য ধরে ফেলতে পারবেন, এটি আমার কাছে নেহাৎ ই একটি কষ্টকল্পনা।

পুনশ্চঃ প্রকাশক সংস্থার ইন্সপেক্টর নিয়োগের প্রস্তাবে অনেকের ভুরু হয়তো কুঁচকাতে পারে। হয়তো প্রশ্ন তুলবেন অনেকেই, সাহিত্য একটি নৈর্ব্যক্তিক বিষয়, এটি যাঁর যাঁর রুচির ওপর নির্ভরশীল। ছাপাখানায় কি যাবে আর কি যাবেনা, এই প্রশ্নের মীমাংসাকারী ইন্সপেক্টর এর যোগ্যতা কি হওয়া উচিৎ? সবিনয়ে তাঁদের উদ্দেশ্যে নিবেদন করি, বিধবা নারীর কুমারিত্ব যাচাইকারী ইন্সপেক্টর হতে হলে যে যোগ্যতার প্রয়োজন ছিলো, প্রকাশনা ইন্সপেক্টর এর যোগ্যতাও তা-ই!

শাকের


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

গোটা বাংলাভাষাতেই স্যাটায়ার একটি দুর্লভ বস্তু। বঙ্কিমচন্দ্র, ত্রৈলোক্যনাথ, বনফুল, আবুল মনসুর আহমদ, আহমদ ছফা এই ক’টি নাম ছাড়া আর বিশেষ কাউকে কী মনে পড়ে?

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম উহ্য রেখেই বলা যায়, রাজশেখর বসু আর সৈয়দ মুজতবা আলী। বাংলা ভাষায় স্যাটায়ার দুর্লভও নয়, নামী লেখকদের প্রায় সবাই কমবেশি স্যাটায়ার রচনা করেছেন। আহমদ ছফা যতগুলো স্যাটায়ার রচনা করেছেন, সম্ভবত তারচেয়ে বেশি স্যাটায়ার সৈয়দ শামসুল হক লিখেছেন।

বর্তমানে স্যাটায়ারের আকাল মুদ্রিত মাধ্যমে আছে। ব্লগে যারা স্যাটায়ার লেখেন, তাদের অনেকেই গোণায় ধরতে চায় না। মানবিচারে তাদের কয়েকজন ছফা বা আবুল মনসুর আহমদের চেয়ে দক্ষ স্যাটায়ার লেখক হবেন বলেই মনে হয়।

মন মাঝি এর ছবি

ব্লগে যারা স্যাটায়ার লেখেন, তাদের অনেকেই গোণায় ধরতে চায় না। মানবিচারে তাদের কয়েকজন ছফা বা আবুল মনসুর আহমদের চেয়ে দক্ষ স্যাটায়ার লেখক হবেন বলেই মনে হয়।

মুখফোড়ের কথা মনে পড়ছে।

****************************************

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বাংলা ভাষায় স্যাটায়ার দুর্লভও নয়, নামী লেখকদের প্রায় সবাই কমবেশি স্যাটায়ার রচনা করেছেন।

- ঠিক। নামী, অনামী প্রায় সবাই স্যাটায়ার রচনা করেছেন। কোন এক অদ্ভুত কারণে বাংলা ভাষার পাঠকগণ স্যাটায়ারকে সাহিত্যমূল্য দিতে অনাগ্রহী। এটা অজ্ঞতাপ্রসূত। ফলে নামী লেখকদের স্যাটায়ারও যথাযথ গুরুত্ব পায়নি বা আলোচনায় আসেনি।

মানবিচারে তাদের কয়েকজন ছফা বা আবুল মনসুর আহমদের চেয়ে দক্ষ স্যাটায়ার লেখক হবেন বলেই মনে হয়।

- এই কথা প্রবলভাবে সমর্থন করি। কেউ দ্বিমত পোষন করলে তার সাথে উদাহরণসহ আলোচনাও করতে পারবো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সচলে স্বাগতম শাকের! নিয়মিত লিখুন। বাংলা ভাষায় বইয়ের রিভিউ লেখার মতো লেখকের ঘাটতি আছে। আপনার রিভিউ পড়ে দুই জন পাঠকও যদি কোন বই পড়তে আগ্রহী হন (বা ঐ বই থেকে দূরে থাকেন) তাহলেও উপকার হয়।

১। বাংলা ভাষার পাঠকগণ স্যাটায়ার কতটুকু পছন্দ করেন সেটা সন্দেহ হয়। বাংলা সাহিত্য আলোচনায় স্যাটায়ার নিয়ে আলোচনার অতিস্বল্পতা তার প্রমাণ। তাছাড়া আমরা অতিসংবেদনশীল। তাই রাজনীতি, ধর্ম, সামাজিক আচার নিয়ে স্যাটায়ার আমরা সহসা বরদাশত করি না। ঘাড়ে চাপাতির কোপের বা নানা রকম ধারায় মামলা খাবার আশঙ্কা নিয়ে খুব কম লেখকই স্যাটায়ার লিখতে সাহস করেন। বাংলা সাহিত্যের আগামী দিনগুলো স্যাটায়ারের জন্য নয়, ফুল-পাখি-প্রজাপতি-লতা-পাতা-চাঁদ-আকাশ-নদী ইত্যাদির জন্য।

২। প্রত্যেক ভাষার নিজস্ব spirit এবং speed আছে। তাই প্রত্যেক ভাষার প্রকাশভঙ্গী বা সৌন্দর্য ভিন্ন। জীবনানন্দ দাশের কবিতা অন্য ভাষায় অনুবাদ করলে সেটা হয় এসএসসি পরীক্ষার খাতায় পাওয়া অনুবাদের মতো নিষ্প্রাণ কিছু হবে, অথবা নতুন কোন কবিতা হবে। সেটা দিয়ে জীবনানন্দ দাশের এক আধলাও বোঝা যাবে না।

৩। ১৯০ বছর ধরে ব্রিটিশদের শাসনাধীন থেকে এবং তার পরে আরও ৬৮ বছর ধরে ইংলিশ পড়েও বাংলাদেশে ইংলিশ ভাষার এমন কোন সাহিত্যিক তৈরি হননি যিনি সারা দুনিয়ায় পাল্লা দিতে পারবেন। এটা যে জরুরী কিছু তা নয়, তবে এমনটা হওয়া খুব স্বাভাবিক ছিল। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ইংলিশে লিখে প্রমাণ করেছেন এটা সম্ভব। অন্তত তাঁর লেখা দ্যা আগলি এশিয়ান যারা পড়েছেন তারা সেটার প্রমাণ পেয়েছেন।

৪। প্রথম আলো গোষ্ঠী বাংলাদেশের আনন্দবাজার হতে আগ্রহী। তারা তাদের মাপে, তাদের ছাঁচে, তাদের আকাঙ্খায় ভবিষ্যত বাংলাদেশীদের নির্মাণ করতে আগ্রহী। তাদের রুচি, তাদের সংস্কৃতি, তাদের বিশ্বাস, তাদের দর্শন - সঅঅব। উভয়ে একই রকম ভাবে বাঙালীর ইতিহাস-আদর্শ-সংস্কৃতি-স্বার্থের ঘোরতর বিরোধী। এদের পোষা কিছু বলদের পাল আছে যারা তাদের আকাঙ্খা অনুযায়ী বই লেখে, অনুবাদ করে, সম্পাদনা করে, মুখবন্ধ লেখে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে ষষ্ঠ পান্ডব। আপনার প্রতিটি কথার সাথেই নিদারুণ ভাবে মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিচ্ছি!

[quoteঘাড়ে চাপাতির কোপের বা নানা রকম ধারায় মামলা খাবার আশঙ্কা নিয়ে খুব কম লেখকই স্যাটায়ার লিখতে সাহস করেন। বাংলা সাহিত্যের আগামী দিনগুলো স্যাটায়ারের জন্য নয়, ফুল-পাখি-প্রজাপতি-লতা-পাতা-চাঁদ-আকাশ-নদী ইত্যাদির জন্য।]

কৌরবদের বড় ভাগ্যি, আপনার আগমন পঞ্চপান্ডবের বেশ পরে! আপনার 'হুলাঘাত' তাঁদের সইতে হয়নি।

অতিথি লেখক এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ হিমু ভাই, পড়বার জন্য ও মন্তব্যের জন্য। আমার প্রথম সচল লেখার প্রথম পাঠক বোধহয় আপনিই! দেঁতো হাসি

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর নাম জুড়ে দেবো কি দেবো না এ নিয়ে দোনমোনো করছিলাম। ভদ্রলোক তো সবই লিখে রেখেছেন, তাই আর তাঁকে আলাদা করতে চাইনি এখানে। আরেকটি বিষয় হলো, এখানে সেইসব লেখকদেরই নাম উল্লেখ করেছি যাঁদের প্রতি আমার একধরণের উগ্র 'স্বজনপ্রীতি' আছে, যাঁরা ব্যক্তিগত ভাবে আমাকে সবচেয়ে বেশী প্রভাবিত করেছেন। স্বীকার করছি, আমার একান্ত নিজস্ব রুচিবোধ ও পছন্দ অন্য অনেককেই কিঞ্চিত আহত করতে পারে, যেমনটা আহত আমি নিজেও প্রায়শয়ই হই, অন্য অনেকের পছন্দ ও রচিবোধ দ্বারা। পরশুরাম বা সৈয়দ মুজতবা আলী'র নাম সযত্নে এড়িয়ে গেছি, কারণ তাঁরা আমার মনে সেভাবে দাগ কাটতে পারেননি যেভাবে ওপরে উল্লেখিত লেখকেরা পেরেছেন। বিশেষতঃ সৈয়দ মুজতবা আলীর প্রতি আমি কিছুটা বিরাগভাজন-ই বটে! খাইছে খাইছে একই কথা প্রযোজ্য শামসুল হক সাহেবের জন্যও

ব্লগে আমার আনাগোনা নেই বললেই চলে। এই প্রথম পাবলিক ব্লগে লেখা। তাই মানবিচারে ব্লগের লেখকেরা মুদ্রিত লেখকদের কার চেয়ে কত এগিয়ে আছেন সে জ্ঞান আমার একেবারে শূন্য। তবে ২০১৫ সালের ইন্টারনেট এনাবেল্ড গতিশীল পৃথিবীতে যখন অনেক বেশী অ্যাভেইলএবল রিসোর্স, অনেক বেশী তথ্য উপাত্ত, অনেক বেশী ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লেখার উপকরণ, আবুল মনসুর কি আহমদ ছফা'র চেয়ে দক্ষ স্যাটায়ার লেখক এখন উৎপন্ন হবেন সেটাই স্বাভাবিক।

আবারো ধন্যবাদ হাসি

হিমু এর ছবি

পরশুরাম বা সৈয়দ মুজতবা আলীর প্রতি আপনার বিরাগ থাকলে বাংলা ভাষায় স্যাটায়ার লেখক খুঁজে পেতে সমস্যা হওয়ারই কথা।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আহমদ ছফার স্যাটায়ার মানে কি "গাভি বিত্তান্ত"?? ইয়ে, মানে...

বিদ্রঃ
আপনার রুচিবোধ আহত হবে কিনা জানিনা, আহমদ ছফা আমার মনে সেভাবে দাগ কাটতে পারেননি!

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

পরশুরাম বা সৈয়দ মুজতবা আলী'র নাম সযত্নে এড়িয়ে গেছি, কারণ তাঁরা আমার মনে সেভাবে দাগ কাটতে পারেননি যেভাবে ওপরে উল্লেখিত লেখকেরা পেরেছেন। বিশেষতঃ সৈয়দ মুজতবা আলীর প্রতি আমি কিছুটা বিরাগভাজন-ই বটে!

-এই মন্তব্য পড়ে আমি নির্বাক হয়ে গেলাম!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মন মাঝি এর ছবি

- আর আমার ব্রেইনের ইস্টার্ট বন্ধ হয়ে গেছে। ক্যাম্নেকী! অ্যাঁ

****************************************

অতিথি লেখক এর ছবি

খুবই দুঃখিত।

শাকের

মন মাঝি এর ছবি

সাহিত্য একটি নৈর্ব্যক্তিক বিষয়, এটি যাঁর যাঁর রুচির ওপর নির্ভরশীল।

স্যাটায়ার করলেন কি? চিন্তিত

****************************************

অতিথি লেখক এর ছবি

এই প্রশ্ন আমাকে করে আপনিও স্যাটায়ার করলেন কি? চিন্তিত খাইছে

অতিথি লেখক এর ছবি

মূল ইংরেজি বইটা কোথায় পাওয়া যাবে জানাতে পারলে কৃতজ্ঞ থাকব।

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

অতিথি লেখক এর ছবি

রুপক ভাই, মূল ইংরেজীটা কোথায় পাওয়া যায় এটা অবশ্য আমি জানিনা। আমি খোঁজখবর নিয়ে দেখি, পেলে এখানে জানিয়ে যাবো।

শাকের

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

১। হুমম... আলুতে আলুর দোষ থাকবেই। আরো লিখুন হাততালি

২। বাহ, মুজতবা আলীর কথাটাই বলতে যাচ্ছিলাম, জলদস্যু আগেই কামান দেগে রেখেছেন।

৩। পাণ্ডবদার এক নাম্বার পয়েন্টটাই আসল কথা। চৌদা'র ভাষায়ঃ "বাঙালি পাঠক বড় বিপজ্জনক, ইনারা সারকাজম আর সারকামসিজনে গুলিয়ে ফেলেন। কেউ না জেনেশুনে, আর অনেকেই জেনেশুনে।"

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ পড়বার জন্য হাসি

শাকের

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

আমাদের হিমু ভাই নিজেই অবশ্য একজন অনবদ্য স্যাটায়ার লেখক, শুধুমাত্র সচলে না লিখে তিনি যদি পেশাগত স্যাটায়ার লেখক হতে চাইতেন, নিঃসন্দেহে সে হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত হতে পারতেন। তবে আমি একটি বিষয়ে আপনার সাথে একমত, বাংলা ভাষায় নামী দামী লেখকদের মধ্যে স্যাটায়ার লেখক খুব বেশী নেই। হিউমার সমৃদ্ধ লেখা অনেক আছে, কিন্তু স্যাটায়ার সে তুলনায় অনেক কম, এবং আমার মতে আবুল মনসুর আহমেদ বাংলা সাহিত্যে শ্রেষ্ঠতম স্যাটায়ার লেখক। পাণ্ডব দা'র কথাই হয়ত ঠিক, বাঙ্গালী পাঠকেরা হিউমার যতটা পছন্দ করে, স্যাটায়ার ততটা নয়।
বইয়ের রিভিউটা চমৎকার হয়েছে, অভিনন্দন!

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

আব্দুল্লাহ ভাই,
আত্মসমালোচনার সাথে স্যাটায়ারের কোনও সহগামীতা আছে কি? দুটোই বোধহয় অপছন্দের ক্ষেত্র।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

অন্যের কর্মকাণ্ড কিংবা লেখার রসময় কিন্তু তির্যক অথচ যৌক্তিক সমালোচনা হল স্যাটায়ার। নিজের সম্পর্কে তেমনটি লিখলে সেটা না হয় আত্মসমালচনা, না হয় স্যাটায়ার। আর আমরা যাকে ভালবাসি, তাঁকে অনায়াসে দেবতার আসনে অধিষ্ঠিত করি, তাঁর কোন সমালোচনা সহ্য করতে চাই না, তাঁকে নিয়ে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ আরও অপছন্দের। সে কারনেই হয়ত আমাদের দেশে স্যাটায়ার সাহিত্য লিখে কেউ সর্বসাধারণের কাছে বিরাগভাজন হতে চান না।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

গোষ্ঠীগত আত্মসমালোচনা সবসময় "অন্যকে" করা হয় কি?

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

গোষ্ঠীগত আত্মসমালোচনা দৃশ্যত যদিও সরাসরি অন্যের সমালোচনা নয়, কিন্তু আসলে এটা অন্যেরই সমালোচনা। ধরুন একজন এইভাবে সমালোচনা করলেন- "আমরা বাঙ্গালীরা একটা মিথ্যুক জাতি"। তো এই উক্তিটির একটু বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে বাঙ্গালীদের মধ্যে কিছু মানুষ মিথ্যাচারে অভ্যস্থ বটে, কিন্ত এই উক্তিকারী নিজে যে মিথ্যাচারে অভ্যস্ত নন, বরং মিথ্যাচার তিনি ঘৃণা করেন, প্রকারান্তরে যেন তাই বুঝাতে চেয়েছেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

আব্দুল্লাহ ভাই, পরের কমেন্টটাতে স্যাটায়ার এর অত্যন্ত চমৎকার একটা সংজ্ঞা দিয়েছেন। এত সুন্দর করে আমি বলতে পারতাম কি না সন্দেহ। আবুল মনসুর আহমদ এর ব্যাপারে আপনার সাথে আমিও একমত দেঁতো হাসি

লেখাটা পড়ে এবং এত্ত ভালো ভালো কথা বলে মন্তব্য করে কৃতজ্ঞতার নাগপাশে বেঁধে রাখলেন!

-শাকের

অতিথি লেখক এর ছবি

স্যাটায়ার পড়া হয়েছে খুব কম, বাংলার বাইরে তো আরও কম। আপনার রিভিউটা বেশ ভালো চলুক

দেবদ্যুতি

অতিথি লেখক এর ছবি

অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে দেবদ্যুতি দেঁতো হাসি

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

পড়তে পড়তেই মনে হয়েছিল মুজতবা আলির কথা। তারপর দেখি জলদস্যু কামান তো দেগেছেনই, সত্যানন্দও আবার তাতে সাক্ষী দিয়ে দিয়েছেন!

একটা কথা না বলেই পারছি না। সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ বাংলার পাশাপাশি ইংরেজিতেও সাহিত্য রচনায় যে কতখানি দক্ষ ছিলেন তা ট্রি উইদাউট রুটস থেকেই বোঝা যায়। তাঁর মাপের একজন লেখক এই বইটা কেন ইংরেজিতে লিখলেন, আর লিখলেনই যদি, কেন তার বাংলাও করলেন না, সেটা যে সব আ--রা বোঝে না , তারা যখন সাহিত্য উদ্ধার করার দায়িত্ব নেয় তখন মুখের লাগাম খুলে ফেলতে ইচ্ছে করে।

____________________________

অতিথি লেখক এর ছবি

সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ বাংলার পাশাপাশি ইংরেজিতেও সাহিত্য রচনায় যে কতখানি দক্ষ ছিলেন তা ট্রি উইদাউট রুটস থেকেই বোঝা যায়। তাঁর মাপের একজন লেখক এই বইটা কেন ইংরেজিতে লিখলেন, আর লিখলেনই যদি, কেন তার বাংলাও করলেন না, সেটা যে সব আ--রা বোঝে না , তারা যখন সাহিত্য উদ্ধার করার দায়িত্ব নেয় তখন মুখের লাগাম খুলে ফেলতে ইচ্ছে করে।

একদম ঠিক তাই চোখ টিপি

-শাকের

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।