যে শহরে ফিরিনি আমি-৫

হাসান মোরশেদ এর ছবি
লিখেছেন হাসান মোরশেদ (তারিখ: শনি, ০৮/০৩/২০০৮ - ১১:০৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

।।
শহর সিলেট হলো মামাভাগ্নের জমিদারী ।
মামা ঘুমিয়ে আছেন পশ্চিমে আর ভাগ্নে পুর্বে । তথ্য ঘাঁটার যথেষ্ট ধৈর্য্য নেই আর তাছাড়া আমার ভাবনার জগতের জন্য এ খুব প্রয়োজনীয় আবিস্কার হবেনা, তবু প্রায়ই মনে হয় শাহপরান,শাহজালালের ভাগ্নে ছিলেন-এই তথ্য নিখুঁত অনুসন্ধানে সত্য বলে প্রমানিত হবেনা ।
জালাল সাহেব ইয়েমেন থেকে এসেছিলেন । ইয়েমেন থেকে আসা ভদ্রলোকের নাম জালাল হতেই পারে কিন্তু তার ভাগ্নের নাম পরান হয় কি করে? 'পরান' যে বড় দেশীয় ঘ্রান মাখা নাম !

সে যাই হোক মামাভাগ্নেদের নিয়ে আমার তেমন শ্রদ্ধা কিংবা বিরক্তি ছিলোনা কোন কালে । দুই মাজারেই আড্ডা ছিলো দীর্ঘদিন । শাহজালালের মাজারের পুকুর পাড়ে বিকেল থেকে আড্ডা দিতে দিতে সন্ধ্যে হলে পর হোন্ডা চড়ে রওয়ানা দিতাম আমরা শাহপরান এর দিকে ।
মামার থেকে ভাগ্নের বাড়ীর গাঞ্জা ছিলো কড়া ।
আংগুলে গুনে দেখি এইসব প্রায় ১৬ বছর আগের গল্প ।
হায় জীবন ফুরোলো বুঝি!

মামা-ভাগ্নের জমিদারীর মাঝখানে শুয়ে আছেন তাদের সঙ্গীসাথীগন । শহর সিলেট যেন আদতে তাদেরই গোরস্তান ।
দাদাপীরের মাজার,কামাল জামালের মাজার,মুক্তার খাঁকিরমানীর মাজার,কাজী জালালের মাজার, শাহ সুন্দর, সৈয়দশাহ চাষনী পীর,সিপাহশালার নাসিরুদ্দীন- আরো কতোজন!
শাখা সিঁদুর পড়া মহিলা কিংবা পৈতে পড়া বামুন ও এইসব মৃতজনের কবর ছুঁয়ে মাথায় ঠেকান,মানত করেন,মোমবাতি জ্বালান ।

আহা কি সৌভাগ্য মামা ভাগ্নে ও তাঁদের সংগীসাথীদের । ছয়শো বছর ধরে জয়মাল্য পেয়ে যাচ্ছেন বিজিতদের বংশধরদের কাছ থেকে ।

এবার এসে দেখলাম সব মাজারগুলো চকচক করছে । বহু বছরের পুরনো দেয়ালে রং লেগেছে । প্রায় প্রতিটি মাজারে টাইলস লেগেছে । রোদে আলো লেগে চমৎকার দ্যুতি ছড়ায় ।

এয়ারপোর্টের দিক থেকে শহরে ঢোকার মুখে মালনীছড়া চা বাগানের প্রায় ধ্বসে যাওয়া টিলার উপর ছোট্ট এক কবরে শওকত নেওয়াজ ঘুমিয়ে আছেন । বাগানের তৎকালীন ম্যানেজার ভদ্রলোক পাকবাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদ করেছিলেন । আরো কয়েকবছর পর তাঁর কবর ধ্বসে পড়বে । কেউ খবর রাখবেনা ।

শহীদ মিনারের ঠিক পাশেই পাশাপাশি কবরে শুয়ে আছেন কর্নেল ডাঃ জিয়া, ডাঃ শামসুদ্দিন, ডাঃ শ্যাম লালা । মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা করার অপরাধে তাদেরকে প্রান দিতে হয়েছিল । কবরের গেইটে ব্যানার টাংগানো থাকে মঘাইউনানীর ঔষধ থেকে শুরু করে ইসলামিক কনসার্টের । সাপের খেলা থেকে বাঁদর নাচ ।

স্বদেশী মুক্তিদাতার চেয়ে ভিনদেশী দখলদারদের শৌর্য-বীর্য গাঁথা বড়বেশী পুজনীয় এই শহরে,এইদেশে । এই দাসত্ব আমি আমার রক্তে বয়ে নিয়ে চলি ।


মন্তব্য

অনিকেত এর ছবি

চমৎকার একটি লেখা।
তার চেয়েও বড় কথা----- সাহসী লেখা।
অভিনন্দন রইল।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

যথারীতি...

অতিথি লেখক এর ছবি

সেদিন একজন বয়স্ক লোক যিনি দীর্ঘদিন সিলেটে বাস করেছেন .....বলছিলেন ,
শাহজালাল (র) এর ভাগ্নে শাহপরাণ ( র) নাকি একবার তার মামার একটা কবুতর রান্না করে খেয়ে ফেলন ..পরে মামা জানার পর ভীষণ বকাবিক করতে থাকেন...সেই রাগে শাহপরাণ বা ভাগ্নে কবুতরের চেড়া পাখনা গুলো শূণ্যে ছুড়ে মারেন আর প্রতিটা পাখনা থেক একটা করে কবুতর তৈরী হয়,.....

আমি তার এই হাস্যকর বক্তব্যের বিরোধিতা করেত গেলাম...সে উলল্টা আমাকে পারলে মারে ....
শুধু তাই বলতে পারলাম .....আমি বিশ্বাস করিনা....
তার বিশ্বাসে ঘুন ধরানো গেলনা একবিন্দুও।

---------------এমন অনেক অেনক উদ্ভট কৃসংস্কার আছে নিশ্চয় সিলেটে .....কি বলেন হাসান ভাই।

ভালো আছেন ?

মামুন ম. আজিজ (পথিক!!!!!!!)

( সচল হব কবে?
আশার মৃত্যু যবে)

হাসান মোরশেদ এর ছবি

---------------এমন অনেক অেনক উদ্ভট কৃসংস্কার আছে নিশ্চয় সিলেটে .....কি বলেন হাসান ভাই।

হ্যাঁ,এমন অনেক অনেক কুসংস্কার অবশ্যই আছে সিলেটে
কিন্তু নিশ্চিত করে কি বলতে পারেন-সিলেট ভিন্ন সারা বাংলা মুক্ত আছে এইসব থেকে?

ভালো আছেন ?

হ্যাঁ,আমি ভালো আছি আপনি ভালো তো?

----------------------------------------
শমন,শেকল,ডানা

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

বিপ্লব রহমান এর ছবি

লেখাটি এক কথায় দারুন!

আমি তার এই হাস্যকর বক্তব্যের বিরোধিতা করেত গেলাম...সে উলল্টা আমাকে পারলে মারে ....
শুধু তাই বলতে পারলাম .....আমি বিশ্বাস করিনা....
তার বিশ্বাসে ঘুন ধরানো গেলনা একবিন্দুও।

ভাববাদের লীলাভূমি এই পোড়া দেশে থাক না এ রকম কিছু 'হাস্যকর বক্তব্য', লোকগাঁথা। সবই আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে কেনো? @ মামুন ম. আজিজ।

সেই যে গানে বলেছে:

জায়ন'মাজ বিছাইয়া রে বাবায় (শাহজালাল)
নদী দিলেন পাড়ি,
সেই কথা শুনিয়া রাজার (গৌর গোবিন্দ)
পরান গেলো উড়ি রে,
পরান গেলো উড়ি।...


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

দুর্দান্ত একটি লেখা।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

আরিফ জেবতিক এর ছবি

বাঙাল শুধু পেতে চায় । ঐশী পুরুষদেরকে পুজো করলে বেহেশতে যাবার সম্ভাবনা থাকে , শহীদ বীর পুরুষদেরকে পূজো করলে কিছুই মিলবে না , এই তথ্যটি সবাই জানে আজকাল । বোকা মানুষ কমে যাচ্ছে ।

নন্দিনী এর ছবি

সিলেট থেকে এইসব গাঁজাখুরি যাবে কবে !!!
নন্দিনী

হাসান মোরশেদ এর ছবি

প্রিয় নন্দিনী,
আপনি কি নিশ্চিত সিলেট থেকে এই গাঁজাখুরী যবে যাবে, তখন চট্রগ্রামে ও বায়েজীদ বোস্তামীর মাজারের চেয়ে সুর্যসেনের স্মৃতিসৌধ অধিক শ্রদ্ধা পাবে কিংবা খুলনার খানজাহান আলীর মাজারের চেয়ে অধিক সম্মান পাবে একজন শহীদের কবর?

এই অন্ধকারের গল্প যদি শুধু সিলেটের হতো,একজন সিলেটী হয়ে ও আমার ভালো লাগতো-আহা বাকী দেশ তো ফকফকা আছে ।

আছে নাকি?
----------------------------------------
শমন,শেকল,ডানা

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

নজমুল আলবাব এর ছবি

সিলেট নামটা দেখলেই নন্দিনীরা শুধু গাজা দেখেন/অনুভব করেন কেন?

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- চট্টগ্রামের অবস্থাও প্রায় একই রকম। ফরস্ট্রিতে পরীক্ষা দিয়ে বন্ধুর সঙ্গে ফেরার পথে রাস্তায় বাসে দেখি গান বন্ধ করে দিয়ে ইসলামিক গান ছেড়ে দিলো। জিজ্ঞেস করতেই উত্তর মিললো, এক কামের পীর শুয়ে আছেন এখানে। চট্টগ্রামের সীমানা পার হবার আগে আর কোনো গান নয়। কড়া গলায় প্রতিবাদ করতে গিয়ে বুঝলাম, আমি এখানে ভয়ানক ভাবে সংখ্যা লঘু, উত্তম মধ্যমের সুবন্দোবস্ত হয়ে যাবে যেকোনো মুহূর্তে। বন্ধুর কথায় নিরস্ত হলাম। কিন্তু উপলব্ধিটা ঠিক আপনার মতোই হয়েছিলো। "স্বদেশী মুক্তিদাতার চেয়ে ভিনদেশী দখলদারদের শৌর্য-বীর্য গাঁথা বড়বেশী পুজনীয় এই শহরে,এইদেশে..."
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

শেখ জলিল এর ছবি

মাজারের নামে এ ভন্ডামি অসহ্যের!
..প্রতি বছর ওরস, ধর্মপূজার নামে যে অর্থ ব্যয় তা দিয়েও অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করা যেতো।

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

নিজের ভেতরে চেপে বসে থাকা কিছু কথা যখন অন্যের মুখ দিয়ে বের হয়ে যায়, তখন প্রানভরে নিৎস্বাস নিতে পারার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হইনা আমিও।

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

মাহবুব লীলেন এর ছবি

শাহ পরানের নাম টা পরান হয়েছে বাংলায়
কোথাও এক জায়গায় দেখেছিলাম তার নাম মূলত ফারান

০২

সিলেট মাজারকেন্দ্রিক শহর। কিন্তু মাজার নিয়ে বাড়াবাড়ি কিন্তু সিলেটে নেই
এবং মাজারকেন্দ্রিক কোনো নেগেটিভ সংস্কৃতিও গড়ে উঠেনি সিলেটে
বরং মাজার কেন্দ্রিক সংস্কৃতি থেকে সিলেটে জন্ম নিয়েছে অসংখ্য মজুফি আর মারফতি গান
যা সত্যিই সব দিক থেকে অনেক সমৃদ্ধ
এমনকি এই মাজারকেন্দ্রিক গায়ক এবং মজুফদের কাছে সপ্তাহে শুক্রবার নয়
বিষুদবারটাই সপ্তার সবচে বড়ো কিংবা পবিত্র দিন

০৩

মাজারের উরসে কিন্তু সিলেটিদের উপস্থিতি শতকরা হারে একেবারেই কম থাকে

০৪

মাজারগুলোর গায়ে রং লেগেছে। ভক্তি থেকে নয়। রাজনীতি থেকে

০৫

আর মুক্তি যোদ্ধা কিংবা স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ?
জাতিগত অবহেলার কারণে যে দেশে তিন যুগেও মুক্তিযোদ্ধা কিংবা শহীদদের কোনো তালিকাই তৈরি হয়নি। সেই দেশে একজন শহীদের কবরে এখনও যে কোনো শপিং সেন্টার উঠে যায়নি সেটাই আপাতত ভাগ্যের ব্যাপার

০৬

সিলেটে এক ধরনের সন্যাসবাদ আছে। আমার একটা গল্প বোকাসূত্র থেকে কয়েকটি লাইন

সিলেট শহর একটা আত্মঘাতী শহর। এ শহরের ইতিহাস মানুষকে বেশিদূর যেতে দেয় না। যে মানুষ বেশিদূর যাবার ক্ষমতা রাখে তাকে হয় পির না হয় সন্যাসী বানিয়ে ফেলে এই শহর। এজন্য সিলেট থেকে আমলা বের হয় কিন্তু রাজনীতিবিদ বের হয় না। কবিতা চর্চা হয় কিন্তু কবি হয়ে উঠতে পারে না কেউ। এর কারণ হয়তো সিলেট শহর এখনও নিজেকে যে দুই মানুষের নামে পরিচয় করায় তারা দুজনই সন্যাসী। শ্রী চৈতন্য আর শাহ জালাল। একজন বাড়ি ছেড়ে গিয়ে আর আসেননি নিজের বাড়িতে। আর আরেকজন বাড়ি ছেড়ে এসে আর ফিরে যাননি নিজের বাড়িতে। একজন সিলেট থেকে সন্যাসী হয়ে বের হয়ে গেছেন। আরেকজন সন্যাসী হয়ে এসে ঢুকেছেন সিলেটে। সন্যাসবাদের মূল চরিত্র দাবি ছেড়ে দেয়া- জীবনের সব রং ছেড়ে দেয়া। অনর্থক আত্মমগ্নতায় ডুবে জীবনের সব স্ট্রাগলকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া। জীবনকে আত্মসমর্পন করানো অনর্থক কোনো কিছুর কাছে। সন্যাসবাদ একজনকে সন্যাসী বানিয়ে যতটুকু ক্ষতি করে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি করে সন্যাসীর ভক্তসংখ্যা বাড়িয়ে। সন্যাসীরা নিজের জীবন ছেড়ে দেয় শূন্যে। আর ভক্তরা ধরে বসে থাকে সন্যানসীর শূন্যতাকে। এ এক আজব আনুগত্য। এরকম সারেন্ডার অন্য কোথাও নেই। সিলেটের তরুণরা এখনো বড়োদেরকে দীর্ঘ দীর্ঘ সালাম দিয়ে যত সময় নষ্ট করে; অত সময় বাংলাদেশের অন্য কোনো অঞ্চলের কোনো তরুণ সারা জীবনেও নষ্ট করে না। এই আত্মঘাতী শহরে যে একটু কিছু প্রমাণ করে সেই হয়ে উঠে পির। আর পির হয়ে গেলে তার কাজ হয় কাজকর্ম ছেড়ে দিয়ে দুনিয়াশুদ্ধ লোককে মুখে মুখে উদ্ধার করা

০৭

শাহপরানের মাজারের সামনে দিয়ে আমাকে নিজের বাড়ি যেতে হতো প্রতিদিন। এজন্য মাঝেমাঝে অনেকেই টাকা দিতো মাজারে দেবার জন্য। সেই টাকায় আমি জিন্দাপিরের প্রচুর বিড়ি খাওয়া হয়েছে
আর শাহজালালের কুয়ার পাড়ে বসে গাঁজা টানা
এই দুইটা জিনিস না বললে বেশ অকৃতজ্ঞতা হয়ে যায় মানুষদুটোর প্রতি

নজমুল আলবাব এর ছবি

বাহ কি খবর শুনাইলা মামু? কনসার্ট। কবে? চল মামু ভাগ্না একলগে দেখতে যাই।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

পরিবর্তনশীল এর ছবি

মামার থেকে ভাগ্নের বাড়ীর গাঞ্জা ছিলো কড়া ।
আংগুলে গুনে দেখি এইসব প্রায় ১৬ বছর আগের গল্প ।
হায় জীবন ফুরোলো বুঝি!

হায়...আমারও কী একদিন এইরকম হবে
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

এই ছেলেকে ধরে মাইর দিতে হবে। এইরকম কচি বয়সে এইরকম হতাশার কথা বলে কেন?
লেখাটা ভালো লাগলো।

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

নন্দিনী এর ছবি

ও ভাই রাগ করেন কেনে? আমি ও যে সিলেটি। নিজে নাস্তিক। থাকি লন্ডনে। সিলেটি স্বজনরা যে আমার গলা চেপে মেরে ফেলতে চাইছে, সেই দুঃখ কারও কাছে বলার নেই !১০০%একমত সারা বাংলাদেশ ফকফকা নেই এই বিষয়ে। কিন্তু ভাই লন্ডনি সিলেটিদের কান্ড দেখলে আমার মনে হয় সারা বাংলাদেশ বেহেস্ত !মাঝে মাঝে মনে হয় আহ ! ওদের কত সুখ, আমি যদি বাংলাদেশের অন্য কোথাও জন্মাতাম !তসলিমা যদি সিলিটে জন্মাতেন তাহলে বুঝতেন কত ধানে কত চাল !প্রথম দিনেই তার জানটা কবজ করা হত আজ্রাইলের নামে !
নন্দিনী

নজমুল আলবাব এর ছবি

হ, সিলেটেতো রোজ একটা একটা মুক্তমনারে ধরা হয় আর জবাই করা হয়। আপনে লন্ডনে গিয়া ভালাই করছেন। সুখে থাকেন মোহতরমা।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

নন্দিনী এর ছবি

আমার মনে হয় এখনকার লন্ডনের থেকে খোদ সিলেটই ভাল ! লন্ডনে আমি সুখে নাইরে ভাই ....!
নন্দিনী

হাসান মোরশেদ এর ছবি

ঠিকাছে আপনি ও সিলেটি এবং নাস্তিক । নাস্তিক পরিচয় বোধ হয় এই কন্টেন্টের জন্য খুব প্রয়োজনীয় নয় । লন্ডনে আপনার কি সমস্যা হচ্ছে সেটা বিস্তারিত না জেনেও দুঃখ প্রকাশ করছি ।
আমি ঠিক লন্ডনে থাকিনা । লন্ডন অভিবাসীদের নিয়ে আমার নিজের ও ক্ষোভ আছে অনেক কিন্তু এভারেজ কোন লেবেল লাগাতে আমি রাজী নই কারন ঐ দুর প্রবাসে ও বাচ্চাদের বাংলা শেখানোর জন্য অনেক অভিভাবকের আপ্রান চেষ্টা দেখেছি । মৌলবাদের উত্থান একা সিলেট কিংবা লন্ডনের সমস্যা না ।বিপরীত স্রোতে ওখানে ও নাট্যচর্চা হয়,সত্যেন সেন পাঠ হয় ।
অভিবাসীদের রুচি ও আচরনগত যে সমস্যা সেটা কোন অঞ্চলভিত্তিক নয় , ৭০/৮০ বছর আগে সিলেটের যে শ্রেনী ওখানে গিয়ে অভিবাসী হওয়া শুরু করেছিল তার বদলে বাংলাদেশের অন্য কোন অঞ্চলের একই মানের জনগোষ্ঠী বসতি গড়লে যে সেটা স্বর্গপ্রায় হয়ে যেতো -এমন ফেনোমেনা স্রেফ উন্নাসিকতা ।

আর তসলিমা নাসরীন! বাকী বাংলা বেচারীকে বড় বাঁচিয়ে রেখেছিল ।
মৌলবাদীর শারীরিক আক্রমনের শিকার হয়ে ও সিলেটের প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক কর্মীরা যখন শামসুর রাহমানকে সিলেটে সংবর্ধনা দিতে বদ্ধপরিকর ছিলো,কবিবর তখন পিঠটান দিয়ে রাজধানীতে নিরাপদ ছিলেন । নিরাপদ ছিলেন তো শেষ পর্যন্ত? কুড়ালের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হলেন কোথায়? সিলেটে নাকি?
হুমায়ুন আজাদ খন্ড-বিখন্ড হলেন কোথায়? সিলেট,চট্রগ্রাম,লন্ডনের মতো মৌলবাদের জংগলে নাকি সংস্কৃতি বান্ধব রাজধানী ঢাকায়?

গোটা শরীর যখন কর্ক্টাক্রান্ত হয় তখন কোন এক অংশকে দায়ী করে আহাম্মকের সাময়িক সুখ পাওয়া যেতে পারে মাত্র, মুক্তি নয়

----------------------------------------
শমন,শেকল,ডানা

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

দুর্বাশা তাপস এর ছবি

যে আমরা সাধারন মানুষরা ইহকাল বা পরকালে প্রপ্তির আশা না থাকলে কিছু করি না, বিশেষকরে পরকালে প্রাপ্তির আশাটা মোহময়।
যারা দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য জীবন দিয়ে গেছেন, আমার মনে হয় না তারা এসব দেখলে খুব অবাক বা হতাশ হতেন, কারন তারা নিঃস্বার্থভাবেই জীবন দিয়ে গেছেন, আমাদের মত পাওয়ার আশা করেননি। কিন্তু আমাদের জন্য এ বড় লজ্জ্বার।

==============================
আমিও যদি মরে যেতে পারতাম
তাহলে আমাকে প্রতি মুহূর্তে মরে যেতে হত না।

ঝরাপাতা এর ছবি

চট্টগ্রামে মাজার ব্যবসা আরো বেশি রমরমা। মাজারের সামনে দিয়ে গেলে গান বন্ধ হয়ে যায় এমনকি কিছু কিছু স্থানে মাজারের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় গাড়ি থেকে সব যাত্রী নেমে গিয়ে হেঁটে মাজার পার হয়।

অফ টপিক : একবার এক ভদ্র(!)লোক খুব ভোরে মর্নিং ওয়াক করার সময় প্রাকৃতিক ডাকের বেগে আবেগ ধরে রাখতে না পেরে রাস্তার পাশেই কাজ সেরে ফেলেন। বেশ কিছুক্ষণ পরে আরেক ভদ্রলোক সেই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি আবার পরিবেশবাদী। এই ধরনের অপকর্ম দেখে তিনি এক বস্তা বালু এনে সেটা ঢেকে দিলেন। আরো পরে সেই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল এক ছাত্র। সে বালুর এরকম স্তুপ দেখে মনে করলো হয়তো এটা কোন পীর সাহেবের কবর টবর হবে। সেই ছাত্রটি দোকান থেকে কয়েকটা মোমবাতি আর আগরবাতি কিনে এনে জ্বালিয়ে দিয়ে চলে গেলো। অতপর: বিকেলে ফেরার সময় সেই অপকর্মের হোতা ভদ্রলোকটি সে পথ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখে সেই জায়গাটা সালু কাপড় দিয়ে ঢাকা, আর তার পাশে ক্রমাগত জিকির করে যাচ্ছে একদল লোক।


রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

চোখ টিপি
----------------------------------------
শমন,শেকল,ডানা

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আমার ঘোরতর আপত্তি আছে কিছু বিষয়ে
বাংলাদেশে সিলেট চট্টগ্রাম এবং রাজশাহীকে মৌলবাদী এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা একটি আন্তর্জাতিক চক্রান্তের অংশ
এতে যেমন ভারত আছে তেমনি আছে আমেরিকা এবং ইউরোপ
মাত্র কিছু দিন আগে বৃটিশ কাউন্সিলের এক সাদা চামড়ার বানানো একটা ডকুমেন্টারির কথা শুনলাম
ওখানে রাজশাহীর এক বোরখা পরা মেয়ের ইন্টারভিউ নেয়া হয়েছে। সে তার রাজশাহীর একসেন্টে তার ছিঁছকে চোর ভাইয়ের কাহিনী বলে যাচ্ছে। কীভাবে সে জেলে গেলো সে কী করে না করে এইসব

তারপর সেই মেয়েটাকে উপস্থাপন করা হলো রাজশাহীর এক জঙ্গি মৌলবাদীর বোন হিসেবে। তার কথাগুলোর ফুটেজ কেটে কেটে বসিয়ে প্রমাণ করে দেয়া হলো তার ভাই রাজশাহীর একটা জঙ্গি মৌলবাদী...

এটা একেবারে একটা সুস্পষ্ট এসাইনমেন্ট। যে করেই হোক রাজশাহীকে মৌলবাদী এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে

একই অবস্থা সিলেট আর চ্ট্টগ্রামের ক্ষেত্রেও
এই এলাকাগুলোকে মৌলবাদী ঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত করতেই হবে

০২

দেশের যারা এবং বিশেষত সিলেটের যারা সিলেটকে অত খারপভাবে দেখেন তাদের কাছে আমার সরাসরি প্রশ্ন-
কতটা স্বাধীনতা আপনি চেয়েছিলেন আর কতটা বাধা পেয়েছেন?
কতটা উদার হতে আপনি চেয়েছিলেন আর কতটা বাধা পেয়েছেন আপনি?

আমি আমার অনেকগুলো ফ্রেন্ড (বিশেষত মেয়ে) এবং আমার নিজের দু বোনকে দিয়ে জানি
ওখানে বরং অনেক অঞ্চল থেকে এখনও বেশি উদার হবার সুযোগ বেশি। এর একটা কারণ অবশ্যই সুফি মতবাদী মাজার কেন্দ্রিক সংস্কৃতি বিশেষত গানবাজনা চর্চা। এটা মূলত উদার
এবং এর ফলেই সিলেটে কোনোদিনই গোঁড়া মুসলিমবাদীরা সুবিধা করতে পারেনি। এখনও না
দ্বিতীয়ত এইসব মাজারকেন্দ্রিক লোকজনের উপর শ্রীচৈতন্যের বৈষ্ণব ধর্মের প্রভাব

কিন্তু সিলেটের মানুষের সমস্যা অন্য জায়গায়। সিলেটের মানুষ অন্তর্মুখি। নিজেরাই বের হতে চায় না ঘর থেকে। আর যখন এই বিষয়ে প্রশ্ন আসে তখন বলে পরিবেশ নেই

আমি অন্তত দেখেছি যারা বের হতে চেয়েছে তাদের জন্য বাংলাদেশের অনেক জায়গা থেকে সিলেটেই এখনও পরিবেশ অনেক অনেক ভালো

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

বরাবরের মতো হাসান মোরশেদীয় লেখা ।
সাথে লীলেন ভাইয়ের মন্তব্যগুলো ভালো লাগলো খুব।

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

মাহবুব লীলেন লিখেছেন:
"আমার ঘোরতর আপত্তি আছে কিছু বিষয়ে
বাংলাদেশে সিলেট চট্টগ্রাম এবং রাজশাহীকে মৌলবাদী এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা একটি আন্তর্জাতিক চক্রান্তের অংশ
এতে যেমন ভারত আছে তেমনি আছে আমেরিকা এবং ইউরোপ"

গুরতর অভিযোগ !!

"ওখানে বরং অনেক অঞ্চল থেকে এখনও বেশি উদার হবার সুযোগ বেশি। এর একটা কারণ অবশ্যই সুফি মতবাদী মাজার কেন্দ্রিক সংস্কৃতি বিশেষত গানবাজনা চর্চা। "

সুফি মতবাদ এর ব্যাপারে আপনার সাথে একমত ।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখাটা সাহসী।
এই লেখা দিয়ে হাসান মোরশেদ আবারও নিজেকে ছাড়িয়ে গেলেন।

আর মাজারগুলো ঝকঝকে হয়ে যাচ্ছে কেন জানেন?
... বিএসটিআই কিন্তু এদেশে জোর অভিযান চালাচ্ছে। তাই পরিচ্ছন্ন জায়গায় এ প্রজন্মের ছেলেরা হয়তো টানছে গাঁজা।
শওকত নেওয়াজের কবরের পাশে বসে বসে কি আর গাজা টানা যায়। কি বলেন, বন্ধুগণ ?

শওকত নেওয়াজ ও ডা. শামসুদ্দিনকে আমরা পণ্য হিসেবে বিক্রি করিনা। কিন্তু মামা ভাগ্নে তো সিলেটে বিপণন সংস্কৃতির যুগে অনেক বড় প্রোডাক্ট। অনেক আগে থেকেই ! তাই প্রতিবার সিলেটে গেলেই দেখি, নতুন নতুন ফটকে দেখিয়ে দেয়া হয়- কোনদিকে যেতে হয় মামা-ভাগ্নের দরবারে। মামা-ভাগ্নের বিপণনের দায়িত্বে যারা, কিছুদিন পরে এই দৃশ্য দেখলেও অবাক হওয়ার কিচ্ছু থাকবেনা- ঢাকার কাচঁপুর থেকে যে সড়কটি সিলেটে চলে গেছে সেখানে বিশাল ফটক, মামা-ভাগ্নের দরবারে যাওয়ার রাস্তা দেখিয়ে দিচ্ছে !

জাকির জাহামজেদ

অমিত আহমেদ এর ছবি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।