যে শহরে ফিরিনি আমি-৭

হাসান মোরশেদ এর ছবি
লিখেছেন হাসান মোরশেদ (তারিখ: শুক্র, ০৫/১১/২০১০ - ১:৪৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

-কতোদিন থাকবে এবার?
-কবে ব্যাক করছো?
-সিটিজেনশিপ কি পেয়ে গেছো, অন্ততঃ ইনডিফিনিট লিভ?

ব্যতিক্রমহীনভাবে একটানা এইসব প্রশ্নের মুখোমুখি হই, জবাবে সুনির্দিষ্ট উত্তরের বদলে মুখে এক টুকরো হাসি ঝুলিয়ে রাখার চেষ্টার করি- যে হাসির মানে যে কোন কিছুই হতে পারে। ভেতরে ভেতরে ক্রোধ দলা পাকায়। জানি, এইসব প্রশ্ন যারা ছুঁড়ে দিচ্ছেন তারা আত্নীয় পরিজন, বন্ধুবান্ধব, শুভাকাংখী। তবু এমন শুভ আকাংখা আমাকে আক্রান্ত করে।
পাসপোর্টের রঙ বদলে গেছে কি যায়নি, প্রবাসে আবার ফিরে যাবো কি যাবোনা সেটা প্রসঙ্গ নয়, কিন্তু সকলের প্রশ্নের মধ্যে এমন এক কাঙ্গালপণা, এমন এক হাহাকার টের পাই যা অস্বস্তি জাগায়। হীনমন্যতা কি এতোই প্রবল হয়ে গেছে আমাদের, নিজের দেশে ফিরে আসা ও আর 'নো মোর ওয়েলকাম'?

তিন সপ্তাহ কাটছে। আমরা প্রস্তুত ছিলাম এর চেয়ে ও আরো খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়ার। প্রথম সপ্তাহে প্রচন্ড গরম ছিলো, এখন নভেম্বরের শুরুতে ও কড়া রোদ। স্পেনে এর চেয়ে ও কড়া রোদ পেয়েছি, চামড়া পুড়ে যাওয়ার মতো গরম, কিন্তু বাংলাদেশে আদ্রতার আধিক্যের কারনে ঘাম হয় খুব বেশী, সাইপ্রাসে প্রায় ৪৮ ডিগ্রী গরমে ও এতো কষ্ট হয়নি।
বিদ্যুৎ পরিস্থিতি অনেক ভালো, অন্ততঃ মাসকয়েক আগে পত্রিকায় যেমন পড়েছি তার চেয়ে অনেক ভালো। কোন কোন দিন সারাদিনে ও একবার বিদ্যুত যাচ্ছেনা, গেলে ও দ্রুত ফিরে আসছে। আগামী গ্রীষ্মে পরিস্থিতি কি দাড়ায়, দেখার বিষয়।

মৃন্ময়কে নিয়ে আমাদের বেশী দুঃশ্চিন্তা ছিলো। কিন্তু ও এসেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে বার্সেলোনা- ম্যান ইউ ফুটবল ম্যাচ নিয়ে। ও বার্সা, আর আম্মা ম্যান ইউ। আম্মা ফুটবল খেলতে খেলতে ঘামেন, ঘামতে ঘামতে হাসেন। যে যাই বলুক, এই হাসিই আমাদের ভরসা জোগায়- ফিরে এসে ভুল করিনি।
মৃন্ময় এখনো ঘরের বাইরে যেতে চায়না। রিক্সায় সিটবেল্ট নেই কেনো, সে প্রশ্নের উত্তর এখনো তৈরী করা যায়নি।

প্রায় সন্ধ্যায় আমি আর মুন্নী জিন্দাবাজার ফুটপাতে দাঁড়িয়ে চটপটি চেটেপুটে খাই। আগে প্রীতিরাজের সামনে দাঁড়ালে কোন পূর্বঘোষনা ছাড়াই আড্ডা দেয়ার মতো বন্ধুবান্ধব জুটে যেতো। মানুষ বেড়ে গেছে ভয়ংকর রকম। এখন কোন মুখ চোখে পড়েনা, কেবল সারি সারি মানুষের মাথা। ধারনা করি, আশেপাশের মফস্বল থেকে মানুষেরা ছুটে আসছে। শহর সিলেটের চরিত্র বদলাচ্ছে।
রাস্তার দুপাশে বেশ প্রশস্ত ফুটপাত হয়েছে। এডিনবারার মতো নগরে এতো প্রশস্ত ফুটপাত চোখে পড়েনি। তবু শহর সিলেট পায়ে হেঁটে বেড়ানো স্বস্তিকর নয় কেবল মানুষের থকথকে ভীড়ের কারনে।

মানুষের আরো বেশী ভোগপ্রবনতা, আরো বেশী চাকচিক্য চোখে লাগে। ভালো লাগে দেশে থেকেই কারো কারো অবস্থা পরিবর্তন দেখে। অর্থের অভাবে যে বন্ধু অনার্স থেকে ড্রপআউট হয়েছিলো, তাকে দেখি ব্রোকার হাউসের মালিক হয়ে যেতে, দামী গাড়ি চড়তে। খুব ব্যস্ত সময়ে সবকাজ ফেলে যখন সে আমাকে সময় দেয়, টের পাই দুঃসময়ের ছোটখাট সহযোগীতা ভুলেনি সে।

আড়াই বছর আগে গ্রামীন ফোনের মোবাইল ইন্টারনেট দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম, ব্যবহার করেছিলাম সেন্টমার্টিন গিয়েও। হতাশ হলাম এবার, দেশের ইন্টারনেট সেবা এখনো সেই পর্যায়েই রয়ে গেছে। এসময়ে তেমন কিছুই এগোয়নি। ছবছর ৫৭ এমবিপিএস এর নেটলাইন ব্যবহার করার পর এখন আর প্রস্তরযুগের ঠুকাঠুকি ভাল্লাগেনা।

দেশ ছেড়েছিলাম জামাতজোটের দুঃশাসনের সময়। অহরহ বোমা ফুটছে তখন আমাদের শহরে, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা। অডিটোরিয়াম দখল করে রেখেছে ফুলকুঁড়ি আর দিশারী। রাজপথে প্রতিদিন মোল্লাদের আস্ফালন।
কিছু কি পরিবর্তন এলো-ক্ষমতার পরিবর্তনে? বাইরে থেকে এসে দেখছি বলে অন্ততঃ আমার চোখে পরিবর্তন ধরা পড়ে। এই তিনসপ্তাহে কুদরত উল্লাহ মসজিদ কিংবা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে বের হওয়া কোন জঙ্গী মিছিল চোখে পড়েনি, শিল্পকলা একাদেমীর সামনে আবর্জনার স্তুপ তেমনি আছে, আছে নির্বিকার নাগরিক নাকচেপে পাশ কাটানো, তবে অডিটরিয়ামে নৃত্যানুষ্ঠান হচ্ছে আবার, হচ্ছে নাট্যোৎসব, হিজাবের সংক্রমন কি কিছুটা কমলো?

বন্দর, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানার জ্যাম আর ভীড় এড়িয়ে একটু বাইরে যেতে পারলেই এখনো এশহরের আকাশ অনেকটুকুই নীল, হাঁটতে হাঁটতে এখনো হঠাৎ করেই ভেসে আসে হাস্নুহেনার ঘ্রান, অনুরাগ হোটেলের সামনে দাঁড়ানো কেউ একজন হাত নাড়ে, আমি ও নাড়ি। পুরনো কোন বন্ধুদের মতো মনে হয়, ঠিক নিশ্চিত হতে পারিনা। হয়তো সে ও নিশ্চিত ছিলোনা।

নিশ্চিতভাবেই সেই সময়, সেই শহরে আর ফিরে যাওয়া যায়না। তবু সেই মোহক সময়, সেই মিস্টিক শহরের স্মৃতিময়তায় ভাঙ্গাচূড়া জীবনটাকে ও ভালোবেসি ফেলি অফুরান।


মন্তব্য

মূলত পাঠক এর ছবি

চমৎকার লিখেছেন! বেদনা বিরক্তি ক্রোধ আর সবশেষে ঘরে ফেরার পর ঘাম মুছে জিরিয়ে নেওয়ার তৃপ্তি, সব অনুভব টের পেলাম।

তাসনীম এর ছবি

দেশে ফিরলে আমারও একই রকম অনুভূতি হয়...একই রকম কষ্ট হয়। যেই শহরে ফিরতে চাই সেটা আমার স্মৃতির বাইরে আর কোথাও নেই।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

অদ্রোহ এর ছবি

এক দিন হয়তো আমাদেরও এমনি করে স্মৃতিমেদুর হতে হবে...

--------------------------------------------

আজি দুঃখের রাতে সুখের স্রোতে ভাসাও ধরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

কৌস্তুভ এর ছবি

চমৎকার।

মনমাঝি [অতিথি] এর ছবি

মূল সিলেট শহরটা তেমন জম্পেশ না হলেও এই জেলার বাকিটুকু কিন্তু দারুন সেটাতো অস্বীকার করতে পারবেন না। আমি সিলেট গেলে শহরটা এড়িয়ে অন্যান্য জায়গায় যাই - এবং সবসময়ই ভালো লাগে - শ্রীমঙ্গল, ফেঞ্চুগঞ্জ, মৌলভীবাজার বা অন্যান্য জায়গা। এবং এগুলি আমার তুলনামূলকভাবে ফাঁকা-ফাঁকাই তো লাগে - নাকি ভুল হল ?

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখাটা পড়ে চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারি নি...দেশে যেতে ইচ্ছে করছে খুব....

tofayel71@gmail.com

তারাপ কোয়াস এর ছবি

অসাধরণ।


love the life you live. live the life you love.

দ্রোহী এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

কদিন আগেই দেশ থেকে ফিরলাম। দেশে গিয়ে আমারো প্রায় একই অনুভূতি হয়েছিল। দেশ ছেড়েছি মাত্র দু'বছর হলো কিন্তু এখনই মনে হয় কতদিন দেশ থেকে দূরে, কবে ফিরবো।

নিশ্চিতভাবেই সেই সময়, সেই শহরে আর ফিরে যাওয়া যায়না। তবু সেই মোহক সময়, সেই মিস্টিক শহরের স্মৃতিময়তায় ভাঙ্গাচূড়া জীবনটাকে ও ভালোবেসি ফেলি অফুরান।

এই মোহই হচ্ছে সবচেয়ে বড় ব্যাপার।

পাগল মন

অবাঞ্ছিত এর ছবি

পাঁচ বছর দেশে যাইনা... কবে যাবো তাও জানিনা... গেলে মনে হয় কিছু চিনবওনা..
__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

জাহামজেদ এর ছবি

ভোলানন্দে গিয়ে সবার সঙ্গে আড্ডা মেরেছে শুনে আফসোস করেছি শুধু। দেবু ফোনে আপনাদের আড্ডার অনেক কিছুই জানিয়েছে। ঈদে যদি সিলেট আসি তাহলে অবশ্যই দেখা হবে।

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

নীলকান্ত এর ছবি

অনেকবছর পর গত মাসে সিলেট গেলাম। আর গিয়েই আপনাদের সাথে দেখা হয়ে গেল। ভাবিনি সিলেটে কি এভাবে এত মানুষের সাথে পরিচয় হবে। অপুভাই, তুলি ভাবী, বাবাই, মৃন্ময়, ভাবী সবার সাথে পরিচিত হতে পেরে খুবই খুশি আমি। খুব ভাল একটা সপ্তাহ কেটেছে সিলেটে, সারা জীবন মনে থাকবে।

অনেককিছুই বদলে গেছে এদেশের, অনেককিছুই।
লেখা ভাল লেগেছে, ভালো থাকবেন ভাইয়া।


অলস সময়

সবজান্তা এর ছবি

দুই দিনের ট্যুর শেষে গতকাল রাতে সিলেট থেকে ফিরলাম। অপু ভাইকে বলেছিলাম আপনার সাথে দেখা করার কথা- খোঁজ নিয়ে জানালেন, আপনি শহরের বাইরে কোথাও গিয়েছেন।

আশা করি পরে কোনবার দেখা হয়ে যাবে।


অলমিতি বিস্তারেণ

হাসান মোরশেদ এর ছবি

দুঃখিত, মিস হয়ে গেলো। এখনো শহরের একটু বাইরে আছি। আপনারা কি ঢাকা ফিরে গেছেন?
দেখা হলে ভাল্লাগতো।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সবজান্তা এর ছবি

হ্যাঁ, আজ সকালেই ফিরে আসলাম। অসুবিধা নেই। বেঁচে থাকলে দেখা হয়ে যাবে আশা রাখি।


অলমিতি বিস্তারেণ

অনিকেত এর ছবি

লেখাটা পড়ে চুপ মেরে বসেছিলাম অনেকখন।
বহু ভেবেও কোন কথা জোগালো না মনে। শুধু বলতে আসা---যতটা দিন আছেন, প্রাণপনে মিশে থাকুন দেশের সাথে--

মঙ্গল হোক

ফ্রুলিক্স [অতিথি] এর ছবি

বছরে ১/২বার যাওয়া হয় দেশে। কিন্তু বন্ধু-বান্ধব সবাই ব্যস্ত। ইচ্ছে করেই ওদের সময়ে হামলা দেই না। কয়েকদিন পর নিজে থেকেই হাপিয়ে উঠি। আবার পালাতে ইচ্ছে করে। তারপরও যাই। আগামী মাসে হয়তো আবারো যাবো।

সিলেট শহরে এতো এতো শপিং সেন্টার আর দালান ভালো লাগে না। জিন্দাবাজারের ট্রাফিক জ্যামটা মনেহয় আর কখনো ঠিক হবে না।
এম.সি কলেজে, হোস্টেলে যেতে ইচ্ছে করছে। সেইসব দুপুর খুব মিছ করছি। আগে যেগুলোকে খুবই কষ্টের মতো হতো এখন সবই মধুর।

দুর্দান্ত এর ছবি

দেশে ফিরলে দেখি সবাই ছুটছে আর ছুটছে। ছুটতে ছুটতে বদলে যাচ্ছে সবাই, বদলে যাচ্ছে অগ্রাধিকার। সবগুলো পরিচিত চেহারার পেছনে আর পরিচিত মনগুলো নেই। পরিচিত স্বরের পেছনের নেই পরিচিত বন্ধুত্বের উষ্ণতা। পরিচিতির স্মৃতিও ঝাপসা হয়ে আসছে। তাই আপনার মত আমিও

সামনে দাঁড়ানো কেউ একজন হাত নাড়ে, আমি ও নাড়ি। পুরনো কোন বন্ধুদের মতো মনে হয়, ঠিক নিশ্চিত হতে পারিনা। হয়তো সে ও নিশ্চিত ছিলোনা।

অনিন্দিতা চৌধুরী এর ছবি

জানি শহর বদলায়, মানুষ বদলায়, প্রিয়জন ও বদলায়।
স্মৃতির ভেতর দিয়েই শুধু পুরনো সব কিছু ফিরে আসে। তবুও এই বদলে যাওয়া বাস্তবতার মাঝে ও আমরা চিরচেনা আপন শহর, মানুষজন, প্রিয়জনদের কাছে বার বার ফিরতে চাই কোন এক ভালবাসার কারণে যা বদলায় না।

লেখাটা খুব ভাল লাগল।

সাইফ তাহসিন এর ছবি

একদম মনের কথাগুলো এত সুন্দর করে গুছিয়ে লিখলেন যে মনের ভেতরে সযত্নে লুকিয়ে রাখা কষ্টগুলো আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠল।

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

নৈষাদ এর ছবি

অসাধারণ।

গতকালই আমার চার-বছর প্রবাসী আমার এক পুরানো কলিগ আমার সাথে দেখা করল। সবাই আপনার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে না হাসান মোর্শেদ ভাই। ।।।।।

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

ইশ! অল্পের জন্য আপনার সাথে দেখা হলো না! মন খারাপ

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

হাসান মোরশেদ এর ছবি

ওপ্স! তবে-হবে হাসি
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

দেশের বাইরে থেকে দেশে ফেরার পর মানুষের ভিড়কে থকথকে মানুষের ভিড় মনে হয়। মন খারাপ

বাংলাদেশের আদমশুমারি জনসংখ্যা কত পর্যন্ত গুণেছে? আগে বিটিভিতে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির ভয়াবহতা নিয়ে ছোটো ছোটো বিজ্ঞাপন দেখাত। এখন মনে হয় দেখানো হয় না। এদিকে এনজিও দিয়ে সয়লাব হয়ে গেছে দেশ। প্রতিটি হতদরিদ্র নয়া মুখ মানে তাদের জন্য একজন খরিদ্দার। মানে ঋণগ্রহিতা। ফলে জনসংখ্যা কমানোর মাথাব্যথা তাদের নেই। বরং বাড়লে তাদের সুবিধা।

এই প্রেজেন্টেশনে বাংলাদেশকে মিরাকল বলা হচ্ছে। ১৯৬২ সালের প্রায় সাত বাচ্চা/মহিলা থেকে ২০০৩ সালে প্রায় তিন বাচ্চা/মহিলা মিরাকল হিসেবে দেখানোর পদ্ধতি অনবদ্য। পরিসংখ্যান নানা ভাবে ম্যানুপুলেশন করে ব্যবহার করা যায়। আসল কথা ঢেকে রেখে।

--

লেখা ভাল্লাগছে।

-----------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

হাসান মোরশেদ এর ছবি

যাদের কাছে দেশ মানে বাজার আর মানুষ মানে খদ্দের, তাদের কাছে এটা বড় সমস্যা মনে হওয়ার কথা নয় কিন্তু দেশকে যারা পরিবার আর মানুষকে পরিবারের সদস্য বিবেচনা করেন তাদের কাছে জনসংখ্যার ভার একটি বড় সমস্যা বটে।
মোটাদাগে আমার কাছে বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা এটিই। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, সম্পদের অভাব এসব বাংলাদেশের একক সমস্যা নয়- এরকম সমস্যা তৃতীয় বিশ্বের প্রতিটি দেশেরই। কিন্তু সামান্য জায়গায় এত বিপুল জনগোষ্ঠী- খুব একটা সহজলভ্য নয়।
যতো আন্তরিক, যতো দক্ষ সরকারই আসুক ১৭ কোটি মানুষের জন্য মোটামুটি মানবিক জীবন নিশ্চিত করা অনেক অনেক কঠিন একটা ব্যাপার।

একটা রিক্সা ধরার জন্য, বাজারে গিয়ে মাছটা কেনার জন্য মানুষকে প্রতিযোগীতা করতে হচ্ছে, দিনযাপনের প্রতিটি ছোটখাট কাজে প্রতিযোগীতা করতে করতে মানুষ স্বভাবতই মানবিক মুল্যবোধগুলো ক্ষয়ে ফেলছে।
১৭ কোটির জায়গায় যদি ৩ কোটি মানুষ থাকতো, ছাপান্ন হাজার বর্গমাইলে- জনব্যবস্থাপনা এর চেয়ে অনেক সহজতর হতো।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

স্বাধীন এর ছবি

মন্তব্যটিতে ভীষণ রকমের সহমত। লেখা পড়ে কেমন যেন মিশ্র অনুভূতি হল। দেশে ফিরতে চাই, কিন্তু আপনাদের লেখাগুলো পড়ে ভরসা পাই না।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

লড়াকুদের লড়াইয়ে ফিরতেই হয়।

লেখা ভাল্লাগলো ...


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

উপায় থাকলে পাঁচাইতাম! হাসি ভালো লাগলো ভাইয়া! হাসি

মুন্নী ভাবীর সাথে যোগাযোগ করা লাগবে! ভাবী কতো কিছু পারে! আর মৃন্ময়কে আদর! পিচ্চিটারে মারাত্মক পছন্দ হয়েছে! হাসি

-----------------------------------------------------------------------------------
...সময়ের ধাওয়া করা ফেরারীর হাত থিকা যেহেতু রক্ষা পামুনা, তাইলে চলো ধাওয়া কইরা উল্টা তারেই দৌড়ের উপরে রাখি...

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আরেকবার চলে আসেন সিলেটে। এবার তেমন আড্ডাই হলোনা।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অতিথি লেখক এর ছবি

"হঠাৎ করেই ভেসে আসে হাস্নুহেনার ঘ্রান, অনুরাগ হোটেলের সামনে দাঁড়ানো কেউ একজন হাত নাড়ে, আমি ও নাড়ি। পুরনো কোন বন্ধুদের মতো মনে হয়, ঠিক নিশ্চিত হতে পারিনা। হয়তো সে ও নিশ্চিত ছিলোনা।"

ভাইয়া, দেশে থাকলেও চিত্র ভিন্ন হত বলে মনে হয় না। যুগের হাওয়ায় সবাই বদলাচ্ছে, একে একে দূরে সরে যাচ্ছে। যতই বয়স বাড়ছে ততই যেন বুঝছি কেন আবদুল করিম গেয়েছেন- "আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম"। আমার বন্ধুরা আমার এ ধরনের কথা শুনে হাসে। বলে, তোর কথা শুনে তোকে বুড়ি দাদি মনে হয়। কিন্তু আমার মনে হয় এ যুগের হাওয়াটাই এমন- মানুষগুলো সব ছোট ছোট দ্বীপ, নিজেদের ছোট ছোট বলয়ে আবদ্ধ। মহাবিশ্বের দ্বিগুণ গতিতে বোধ করি মানুষ নামের এই জীব বদলাচ্ছে।

লেখায় মুগ্ধতা। ভাল থাকবেন।

ফারাবী

হাসান মোরশেদ এর ছবি

অন্তর্গত রক্তের বিপন্ন বিস্ময় থেকে মুক্তি নেই মানুষের, কোনকালেই।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

ব্রুনো [অতিথি] এর ছবি

মুক্তির দরকার কি? পরে যখন একগাছা দড়ি হাতে নিতে চাওয়ার কথা মনে পড়ে তখন ভালোই লাগে।

অতিথি লেখক এর ছবি

চেনা শহরের একজন অচেনা মানুষের আবেগ-অনুভুতির প্রকাশ বেশ ভাল লাগল । আমার মনে হয় সিলেট এর মানুষদের বিলাতগামী প্রবনতা আগের চাইতে অনেক কমে গেছে

dr_sujon_bds@yahoo.com

স্নিগ্ধা এর ছবি

এতো, এতো কথা বলার ছিলো যে কিছুই বলা গেলো না ...

আমিও বেশ কিছুদিনের জন্য এসেছি। আরিফ জেবতিকের পোস্টে মেয়ের স্কুল নিয়ে আমারও অনেক কিছু বলার ছিলো, রেজওয়ানের পোস্টেও ছিলো, আপনার লেখাতেও ছিলো ......

অবশ্য আমার ফেরাটা অনেকদিক থেকেই একটু অন্যরকম, আমার যুদ্ধগুলোও তাই অন্যরকম হাসি

হাসান মোরশেদ এর ছবি

হ্যাঁ,প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব যুদ্ধ
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আমি কখনো প্রবাসী ছিলামনা, তবু আপনার অনুভূতি বুঝতে কোনো কষ্ট হয়নি। শুধু নিজের বাড়ি থেকে মাইল বিশেক দূরে ঠাঁই গাড়ার পর বিশ মাইল দূরে যে অসহনীয় পরিবর্তন দেখতে হয় সেটা সহ্য হয়না। আপনাদের সহ্য ক্ষমতা অনেক।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

ফিরে আসলে চলে যেতে বলে, দেশে থাকলেও বলে চলে যেতে- শুভাকাঙ্খা মানে এখন হয়তো দূরে ঠেলে দেয়া...
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

অনিকেত এর ছবি

শুভাকাঙ্খা মানে এখন হয়তো দূরে ঠেলে দেয়া...

অসাধারণ লাগল কথাটা, জাঁহাপনা!

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

জাঁহাপনা!
হো হো হো
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

সৈয়দ আফসার এর ছবি

হাসান ভাই,
আবেগাচ্ছন্ন লেখা।
পড়তে পড়তে ঘোরাচ্ছন্ন হলাম।
চেনা জায়গাগুলো প্রীতিরাজ রেষ্টুরেন্ট, অনুরাগ হোটেল
আম্বরখানা, জিন্দাবাজার পরিচিত সব স্মৃতিতে ডুবে থাকলাম।
আর ভিনদেশ দুজনেরই একই!
ভালো থাকুন।
__________♣♣♣_________
না-দেখা দৃশ্যের ভেতর সবই সুন্দর!

__________♣♣♣_________
না-দেখা দৃশ্যের ভেতর সবই সুন্দর!

ফকির লালন এর ছবি

কষ্টটা মনে দাগ কেটে গ্যালো।

রাজর্ষি এর ছবি

দেশ ছেড়েছি মাত্র এক মাস হল । জার্মানীর এই ছোট শহরে বসে ভাবি আমার প্রিয় সিলেট আর প্রিয় মানুষ গুলি কে কি আগের মতোই পাব ? সেই দাড়িয়া পাড়ার পুজো, বন্দর জিন্দাবাজারের পথে পথে, এম সি কলেজের হোস্টেল,দুরন্ত শাবির পরিচিত মুখগুলি কি আগের মতোই থাকবে !

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।