'মুজিব।। স্থপতির মৃত্যু'

হাসান মোরশেদ এর ছবি
লিখেছেন হাসান মোরশেদ (তারিখ: শুক্র, ১৫/০৮/২০০৮ - ৬:০০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

..


এই পোষ্টটি গতবছর পনের আগষ্টের ।
সেই সময়ে যারা পাঠ করেছিলেন,তাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনাপুর্বক ...



আগষ্ট ২৫,১৯৭৫
শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডের ১০দিন পর 'The Times' এ প্রকাশিত হয় এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন ।
এতে মুজিব হত্যাকান্ডের সাথে সাথে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তন সহ আরো কিছু গুরুত্বপুর্ন বিষয় তুলে ধরা হয় ।
'সচলায়তন' এর সম্মানিত পাঠকদের জন্য সেই প্রতিবেদনের অনুবাদঃ-

------
------

গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার দীর্ঘসুত্রিতার উপর ক্রমশঃ বিরক্ত হয়ে নিজের হাতে আরো বেশী ক্ষমতা কেন্দ্রীকরনের সিদ্ধান্তগ্রহন করেন মিসেস ইন্দিরাগান্ধী-ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী, এ বছরের জুন মাসে ।

এ সিদ্ধান্তগ্রহনে হয়তো তাকে প্রভাবিত করেছিল ক্ষুদ্র প্রতিবেশী বাংলাদেশ।
অর্থনীতির অচল অবস্থা এবং অপ্রতিরোধ্য দুর্নীতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের ধৈর্যচ্যুতি ঘটায় এবং গত জানুয়ারী মাসে সরকার পদ্ধতির পরিবর্তন ঘটিয়ে তিনি আরো বেশী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অধিকারী হন ।
এ পরিবর্তন কাউকে বিস্মিত এবং প্রায় সবাইকে ব্যথিত করে । কারন শেখ মুজিবুর রহমান সবার কাছে পরিচিত ছিলেন যুক্তিবাদী,গনতান্ত্রিক এবং অবশ্যই একজন সৎ ও সাহসী মানুষ হিসাবে ।

তার নেতৃত্বকে অযোগ্য অভিযুক্ত করে গতসপ্তাহে বাংলাদেশে সেনাবাহিনী এক অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে । যাকে তার দেশের মানুষ ভালোবেসে 'বঙ্গবন্ধু'ডাকতো, যার নেতৃত্বে মাত্র চারবছর আগে দেশ স্বাধীন হয়েছে-তাকে হত্যা করা হয়েছে এবং তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন তারই দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের এক সহকর্মী ।
যদি ও অভ্যুত্থানের পর পর বহিবিশ্বের সাথে বাংলাদেশের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং সংবাদ সংগ্রহে বাধা দেয়া হয়,তবু প্রাপ্ত থেকে অনুমান করা যায় এ অভ্যুত্থান বেশ রক্তাক্ত । শেখ মুজিবের সাথে তার দুই ভাগনে এবং প্রধানমন্ত্রী মনসুর আলী নিহত হওয়ার কথা শুনা গেছে । এ ছাড়া সারা দেশে মুজিবের ২০০ অনুসারীকে হত্যা করার খবর ও পাওয়া গেছে ।
সপ্তাহশেষে অভ্যুত্থানকারী এক ঘোষনায় জানিয়েছে যে নিহত নেতাকে 'যথাযোগ্য মর্যাদা'য় তার গ্রামের বাড়িতে কবর দেয়া হয়েছে । তার মৃত্যু সম্পর্কে এ ছাড়া আর কোন সরকারীভাষ্য জানা যায়নি ।

পিপলস রিপাবলিক থেকে ইসলামিক রিপাবলিক বাংলাদেশঃ
ভোরবেলা শেখ মুজিবকে হত্যা করার পরপরই বাংলাদেশের রাষ্ট্রের নাম এবং চরিত্র বদলে দেয়া হয় । অভ্যুত্থানকারীদের নেতা,ডালিম নামের একজন মেজর রেডিওতে ঘোষনা করেন যে--এখন থেকে দেশের নাম ' ইসলামিক রিপাবলিক অব বাংলাদেশ', 'পিপলস রিপাবলিক' নয় । খনদকার মোশতাক আহমদকে বাংলদেশের রাষ্ট্রপতি ঘোষনা করা হয়,যিনি মুজিব মন্ত্রীসভার বৈদেশিক বানিজ্য মন্ত্রী ছিলেন । এছাড়া ডালিম সামরিক আইন জারী ও সারাদেশ অনির্দিষ্টকালের জন্য ২৪ ঘন্টা কারফিউ এর ঘোষনা দেন । সেই সাথে হুশিয়ারী উচচারন করেনঃ-'নতুন সরকারের বিরুদ্ধে যে কোনো ষড়যন্ত্র,আন্দোলন ও প্রচারনা অত্যন্ত কঠোর হাতে দমন করা হবে'তার এ ঘোষনার সময় ঢাকার রাস্তায় ট্যাংক ও সাঁজোয়াযান মোতায়েন ছিল

পরে আরেক রেডিও সম্প্রচারে নতুন রাষ্ট্রপতি জাতিকে আস্বস্ত করেন যে, দুর্নীতি স্বজনপ্রীতি ও একনায়কতন্ত্র থেকে দেশকে রক্ষা করতেই এ পরিবর্তন । রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবের সমালোচনা করে বলেন যে তার সরকার দেশের অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হয়েছিল । এরপরে খন্দকার মোশতাক তার ১৬ সদস্যের কেবিনেট ঘোষনা করেন । আশ্চর্য্যজনক ভাবে নতুন কেবিনেটের প্রায় সকলে,সেই কথিত 'ব্যর্থ সরকার' এরই প্রাক্তন সদস্য ।

কোন কোন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করিয়ে দেন যে, ৭১ এ প্রবাসী সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্বপালন কালে খন্দকার মোশতাকের,মুজিবের প্রতি অনুগত ছিলেননা এবং তার ভুমিকা ছিলো সন্দেহজনক । স্বাধীনতার পর অভিযোগ উঠে যে, যুদ্ধচলাকালীন সময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে আমেরিকার ষড়যন্ত্রের ক্রীড়ানক ছিলেন মোশতাক ।
অভিযোগ প্রমানিত হলে, মুজিব সদ্যস্বাধীন দেশের অতিগুরুত্বপুর্ন পররাষ্ট্ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব থেকে তাকে অব্যহতি দেন এবং তরুন ডঃ কামালকে স্থলাভিষিক্ত করেন । হত্যাকান্ডের সময় ডঃকামাল বেলগ্রেডে অবস্থান করছিলেন ।

সংকীর্ন রাজনৈতিক দৃষ্টিভংগীর অধিকারী খন্দকারকে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক,পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ চর বলে ও সন্দেহ করেন । পাকিস্তানের ভুট্টো সরকারই প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছে এই নতুন সরকারকে ।
কিন্তু মুজিব হত্যাকান্ডে ভারতের প্রতিক্রিয়া সবাইকে স্তম্ভিত ও মর্মাহত করেছে ।
একজন সরকারী মুখপাত্র কেবল একটা বিবৃতি দিয়েছেন : তাঁকে আমরা আমাদের সময়ের অত্যন্ত সম্মানিত ও গুরুত্বপুর্ন ব্যক্তিত্ব বলে গন্য করি ।'

নিহত মুজিবের ব্যক্তিত্ব ছিলো অত্যন্ত আকর্ষনীয় ও জাদুকরী ।তার প্রানচাঞ্চল্য উদ্যমী করে তোলতো সবাইকে । তার আবেগময় ভাষনে লক্ষ লক্ষ জনতা উদ্বেলিত হতো ।
একজন বিশ্লেষক বলেনঃ
'আমি গান্ধী,জিন্নাহ,ও নেহেরুর রাজনীতি এবং জনসম্পৃক্ততা দেখেছি । কিন্তু মুজিব লক্ষ লক্ষ মানুষের মাঝে যে প্রেরনা জাগিয়ে তুলতে পারতেন, তার কোন তুলনা হয়না । তার আকর্ষনীয় ব্যক্তিত্ব ও প্রভাবিত করার ক্ষমতা, তা অন্য কোনো নেতার কখনোই ছিলোনা '

বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের কর্মী হিসাবে মুজিব যখন প্রথম কারাবন্দী হন , তখন তিনি সপ্তম শ্রেনীর ছাত্র । এরপর বিভিন্ন মেয়াদে বৃটিশ ও পাকিস্তানের কারাগারে তার কেটেছে অন্ততঃ দশ বছর । মজা করে তাই বলতেন : কারাগার তো আমার দ্বিতীয় বাড়ি ।
১৯৪৯ এ তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং ১৯৭০ এ পাকিস্তানে প্রথম সাধারন নির্বাচনে দলের জন্য নিরংকুশ বিজয় ছিনিয়ে আনেন । সংবিধান অনুযায়ী তার সমগ্র পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা । কিন্তু ক্ষমতাসীন পশ্চিম পাকিস্তানীরা নির্বাচনের রায়কে অগ্রাহ্য করে । ফলে খুব দ্রুত পাকিস্তানের দু অংশের সম্পর্কের অবনতি ঘটে ।
এ সময় মুজিব পশ্চিম পাকিস্তানীদের উদ্দেশ্যে বলেনঃ 'তোমাদের হাতে অস্ত্র আছে, তোমরা আমাকে হত্যা করতে পারো । কিন্তু সাড়ে সাতকোটি বাংগালীর স্বাধীনতা তোমরা আটকে রাখতে পারবেনা' ।

এরপর সামরিক একনায়ক ইয়াহিয়া খান তাকে বন্দী করে নিয়ে যায় পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে । আর পুর্ব পাকিস্তানে শুরু হয় সামরিক আগ্রাসন । পাকিস্তান সেনাবাহিনী হত্যা করে ৩০ লক্ষ বাংগালী, এক কোটি শরনার্থী হয়ে আশ্রয় নেয় ভারতে । পরে ভারত বাংলাদেশের পক্ষে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে ৯ মাসের মাথায় বাংলাদেশ স্বাধীন হয় । পরাজিত পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিবর্তনে ইয়াহিয়া খান গৃহবন্দী হন আর শেখ মুজিব মুক্ত হয়ে ফিরে আসেন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ।

৭২এর জানুয়ারী'র প্রথম সপ্তাহে মুজিব ফিরে এলে দেশবাসী এক অনন্য সম্বর্ধনার মাধ্যমে তাকে বরন করে নেয় । ইতিহাসে এর আগে আর বোধ হয় কোন নেতা এতো বিশাল সম্বর্ধনায় সিক্ত হননি । সম্বর্ধনার সাথে সাথে মুজিব এমন এক রাষ্ট্রের দায়িত্ব পান, যে রাষ্ট্রের কেবল একটা কাঠামোই অবশিষ্ট ছিলো, এর বেশী আর কিছু নয় । পৃথিবীর সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলোর একটি,সবচেয়ে ঘনবসতিপুর্ন যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ ।
প্রশাসন বলে কিছু নেই, শিল্পকারখানা গুলো ধ্বংস হয়ে গেছে ,সমুদ্র ও বিমান বন্দর গুলো ব্যবহার অনুপযোগী, রেললাইন উপড়ে গেছে, দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবি ও দক্ষ পেশাজীবিদের প্রায় সকলে নিহত ।
অর্থনীতির তলানী বলতে যা কিছু ছিল তাও '৭৩ এর খরা ও '৭৪ বন্যায় শেষ হয়ে যায় ।

তাঁর প্রশংসনীয় উদ্যোগঃ

স্বাধীনতার পরের তিনবছরে ৬০০০ হাজারের ও বেশী রাজনৈতিক হত্যাকান্ড ঘটে । সহিংসতা সারাদেশব্যাপি ছড়িয়ে পরার আশংকা তৈরী হলে মুজিব রাষ্ট্রীয় জরুরী অবস্থা ঘোষনা করেন । চরমবাম ও চরম ডানপন্থী সংগঠনগুলো নিষিদ্ধ করা হয়, পত্রিকাগুলোকে নিয়ে আসা হয় সরকারী নিয়ন্ত্রনে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয় ।
এ উদ্যোগগুলো বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে গৃহীত হলেও অনেকেই সমালোচনামুখর হয়ে উঠেন । সমালোচকদের উদ্দেশ্যে মুজিব তার স্বভাবসুলভ ভংগীতে বলেনঃ-'ভুলে যেওনা আমি মাত্র তিনবছর সময় পেয়েছি । এই সময়ের মধ্যে তোমরা কোনো দৈব পরিবর্তন আশা করতে পারোনা'
যদি ও শেষ সময়ে তিনি নিজেই হতাশ ও বিরক্ত হয়ে কোন দৈব পরিবর্তন ঘটানোর জন্য অধৈর্য্য হয়ে পড়েছিলেন ।

সন্দেহাতীতভাবেই মুজিবের উদ্দেশ্য ছিলো তার দেশ ও দেশের মানুষের উন্নয়ন ঘটানো । শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত মুজিব একটা 'সোনার বাংলা' গড়তে চেয়েছিলেন, যে 'সোনার বাংলা'র উপমা তিনি পেয়েছিলেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছ থেকে, ভালোবেসে মুজিব সেই 'সোনার বাংলা'র স্বপ্নকে তার দেশের জাতীয় সংগীত নির্বাচন করেছিলেন ।


মন্তব্য

অতিথি এর ছবি

শৈশবে যখন প্রতি ১৫ আগষ্টের ভোরে "মোরা একটি ফুলকে বাচাঁবো বলে যুদ্ধ করি, মোরা একটি মুখের হাসিঁর জন্য অস্ত্র ধরি..." অথবা "একটি মুজিবরের..." গানের কলিগুলো ভেসে এসে ভাংতো ভোরের ঘুম, দুচোখ ভরে যেত জলে...শুধু হাহাকার করে উঠতো বুকটা, এই হাহাকারটার তীব্রতা বুজলাম সেদিন যেদিন আমার বাবাও চলে গেলেন আমাকে ছেড়ে! এই দুজন মানুষকে আমি সবস্ময় মানুষ হিসেবে দেখতেই ভালোবেসেছি...কখনোই বঙ্গবন্ধুকে আমি অতি মানব বা দোষগুনের উর্ধে মানব ভাবতে পারিনি...এদের সাধারনত্ত আমাকে এদের ভালোবাস্তে সুযোগ করে দেয়...তাই আজ আর কোন ব্যাখ্যায় না গিয়ে শুধু জানাতে চাই অশ্রুসজল শ্রদ্ধা..বলতে ইচ্চে করে- "তোমার প্রয়াণ করেছে বাকরুদ্ধ, শুধু বাবার কাঁধে সন্তানের শবদেহই ভারী নয়,সন্তানের কাঁধে বাবার শবদেহ যেন গোটা পৃথীবি কাঁধে আর সমুদ্র চোখে নিয়ে হেটেঁ যাওয়া অনন্তের দিকে..."।

ধ্রুব

হাসান মোরশেদ এর ছবি

এই প্রতিবেদন আমার কাছে গুরুত্বপুর্ন মনে হয়েছে কয়েকটি কারনেঃ

১।
মুজিব হত্যাকান্ড যে কেবল ব্যক্তিহত্যা ছিলোনা ছিলো রাষ্ট্রহত্যা,সেই ইংগিত স্পষ্ট করা হয়েছে । মুজিব হত্যার সাথে সাথে প্রথম ও প্রধান পরিবর্তন 'পিপলস রিপাবলিক' থেকে 'ইসলামিক রিপাবলিক' বাংলাদেশ বানানো [যদি ও এটা টিকানো যায়নি বেশীদিন , কেনো? সেটা নিয়ে ভিন্ন আলোচনা করা যেতে পারে ]

২।
মুজিব হত্যাকান্ডের পর ঘাতক সরকার কে প্রথম স্বীকৃতিদান কারী রাষ্ট্র হলো পাকিস্তান । যদি এখানে উল্লেখ নেই, তবু স্মরন করা যেতে পারে মধ্যপ্রাচ্য সহ মুসলিম দেশগুলো বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ৭২-৭৫ সময়ে স্বীকৃতি দেয়নি । পাকিস্তানের আহবানে,মুজিব হত্যাকান্ডের পর এ স্বীকৃতি মিলে । মুসলিম দেশগুলো যেনো অপেক্ষা করছিলো মুজিব হত্যার ।

৩।

পাকিস্তান সেনাবাহিনী হত্যা করে ৩০ লক্ষ বাংগালী, এক কোটি শরনার্থী হয়ে আশ্রয় নেয় ভারতে ।

এই সময় পর্যন্ত, Times এর মতো মিডিয়া মুঘল ও ৩০ লক্ষ সংখ্যা নিয়ে কোনো দ্বিধা প্রকাশ করেনি । মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে ইচ্ছাকৃত বিতর্ক,১৫ আগষ্টের পরের ঘটনা ।

-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

আরেকটি বিষয়ের দিকে নির্দেশ করি। ৭৫-এর পর থেকে খুব জোর গলায় প্রচার করা হয়েছে (অনেকে আজও করে), শেখ মুজিব একজন ঘৃণিত স্বৈরশাসকে পরিণত হয়েছিলেন, জনসাধারণের মধ্যে তার কিছুমাত্র গ্রহণযোগ্যতা ছিলো না। কই, এই প্রতিবেদনে তো তার কোনো ইঙ্গিতও দেখলাম না। থাকলে পশ্চিমা মিডিয়া তার উল্লেখ করতে ভুল করতো না।

শেখ মুজিবের ব্যর্থতা ছিলো, সীমাবদ্ধতা ছিলো, ভুলও ছিলো। কিন্তু তিনি নরখাদক দানবসদৃশ ছিলেন, এই প্রচারণার কোনো ভিত্তি বা যুক্তি নেই। সেই সময়টি অতিবাহিত করা একজন হিসেবে এই সাক্ষ্য আমি দিতে পারি।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ধন্যবাদ রিপোর্টটা এখানে অনুবাদ করে দিয়ে। আমাদের প্রজন্ম যারা তখন জন্মাইনি তাদের জন্য বেশ কাজের হবে। এটি অন্তত একটা বিষয়ে আমাকে নতুন করে ভাবাবে, আর তা হল সংবাদপত্রের কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ যে পরিস্থিতিতে হয়েছিল তা বুঝতে।

বর্তমান জরুরি অবস্থা জারীর সময় প্রথমেই সরকার যে কাজটি করেছিল তা হল সংবাদপত্রের উপর অপ্রকাশ্য নিয়ন্ত্রণ। এটা আমরা সবাই জানি কিন্তু সরকার তা স্বীকার করেনা। সামরিক সমর্থিত (তথা অনির্বাচিত) সরকারের এটাই হল একটা বৈশিষ্ট। এটি তারা নির্বিঘ্নেই করতে সাহস পায় কারণ তাদের কারো কাছে জবাবদিহিতার বাধ্যবাধকতা নেই।

শিরোনামটিও মনে হচ্ছে অনুবাদ করেছেন। আমার কাছে 'স্থপতি' শব্দটিই 'পিতা'র চেয়ে বেশী এপ্রোপ্রিয়েট মনে হচ্ছে।

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

সবগুলো তথ্য বেশ গোছানোভাবে উঠে এসেছে প্রতিবেদনে
খন্দকার মুশতাক কিভাবে টিকে ছিল ভাবতে অবাক লাগে!!

আপনার কমেন্টের ৩ টা পয়েন্টই খুব গুরুতৃপূর্ণ ,,অনেক ধন্যবাদ
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

হাসান মোরশেদ এর ছবি

লেঃকর্নেল এম এ হামিদের বর্ননায়,১৫ আগষ্ট সারাদিন ক্যান্টনমেন্টের ভিতরের চিত্র ফুটে উঠেছে ।
আগ্রহী পাঠক পড়ে দেখতে পারেন,নিচের লিংকে ক্লিক করেঃ

সেদিন সেনানিবাসের ভিতরে

-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

ছিয়ানব্বইয়ের ১৫ আগস্ট এবং পরবর্তী সময়ে কিছু দূর্লভ ডকুমেন্টারী দেখার সুযোগ দিয়েছিল বিটিভি। ৭মার্চের ভাষণও সেবার টিভিতে প্রথম দেখলাম।
মোরশেদ ভাইকে ধন্যবাদ রিপোর্টটি অনুবাদের জন্য এবং 'সেদিন ক্যান্টনমেন্টের ভিতরে' লেখার লিংকের জন্য। জানতে আগ্রহী: 'সেদিন ক্যান্টনমেন্টের ভিতরে' লেখাটির বইয়ের নাম কি?

ঝরাপাতা এর ছবি

বইটার নাম কি? পুরো বইটা কি কোথাও পাওয়া যাবে? ঘটনার বর্ণনায় লেখক একশত ভাগ পারফেক্ট। কোথাও অতি আবেগাক্রান্ত হতে দেখা যায়নি।


রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

নাম আমি ও জানিনা আসলে ।
ওয়েব সার্চ করতে গিয়ে পিডিএফ পেলাম ।

-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সৌরভ এর ছবি

কৃতজ্ঞতা তুলে আনার জন্যে, সেই শুনতেও কষ্ট হয় সময়ের কথা।



আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

নজমুল আলবাব এর ছবি

এরশাদের সময়েও ১৫ আগস্ট মানেই ছিল বঙ্গবন্ধুর ভাষণ। আশ্চর্য আজ কোথাও সেই কন্ঠটা শুনতে পেলামনা। কস্ট লাগে এইসব মুহুর্তে...

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

আজকে নিশ্চয়ই বাজবে বঙ্গবন্ধুর ভাষন @নজমুল ,,, টিভি না হোক, রাস্তার মোড়ে তো বাজবেই

মোরশেদ ভাই, সেদিন সেনানিবাসের ভিতরে পড়লাম ,,, ধন্যবাদ
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

নজমুল আলবাব এর ছবি

বাজেনিরে ভাই। কানটা পেতেই আছি বাজেনি, শুনিনি। আজ আমাদের এখানে মিলাদ পড়া হবে আত্মার মাগফেরাত কামনা করে। এরচেয়ে বেশি কিছু করার অনুমতি দেয়া হয়নি।

আজ নয় গুন গুন গুঞ্জন প্রেমের, চাঁদ ফুল জ্যোছনার গান আর নয়

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

বলেন কি? ,,, দীর্ঘশৃাস!
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

অচেনা এর ছবি

দেশোদ্রোহী শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে
মার মুখে শোনা ১৫আগস্ট১৯৭৫ এর সকালে রেডিওতে দেয়া ডালিমের ভাষণের মর্মবাণী ।

ইয়াহিয়া খানও কিন্তু দেশোদ্রোহী শেখ মুজিবকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছিল।

খিয়াল কইরা

-------------------------------------------------
আমি ভালবাসি বিজ্ঞান
আমি ঘৃণা করি জামাত॥

দৃশা এর ছবি

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে শোন শোন পিতা
কহো কানে কানে শোনাও প্রানে প্রানে মঙ্গল বার্তা ।

ধন্যবাদ বস।

দৃশা

ঝরাপাতা এর ছবি

পরিকল্পিত হত্যাকান্ড ছিলো এতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ মুজিব থাকলে বাংলাদেশ একদিন ঠিকই মাথা তুলে দাঁড়াতোই।


রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

বিপ্লব রহমান এর ছবি

ইতিহাসের ধূসর পাতা তুলে আনার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ; আপনার কাছে কৃতজ্ঞতা।


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

কন্থৌজম সুরঞ্জিত এর ছবি

আপনার কাজগুলো চমত্কার।
ধন্যবাদ।

কন্থৌজম সুরঞ্জিত

হিমু এর ছবি
আরশাদ রহমান এর ছবি

ধন্যবাদ হাসান মোরশেদ। টাইমস ৩০ লক্ষ শহীদের কথা বলতে পারে, বিশ্বে অন্য সবাই ৩০ লক্ষ শহীদের কথা মেনে নেয় কিন্তু আমরা নিজেরাই অযথা তর্ক করে শহিদদের অসম্মান করি।

ফারুক হাসান এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ,হাসান মোরশেদ আপনাকে, অনুবাদের জন্য এবং লে.ক. হামিদের লেখার লিংকের জন্য। প্রতিবেদনে অনেক কিছু উঠে এসেছে। অনেক কিছুই জানা হলো।

----------------------
জানেনিতো, ইহা নিতান্তই নিজস্ব মতামত

নজমুল আলবাব এর ছবি

লে. ক. হামিদের লেখাটা পড়তে পারিনি। এইটা নিয়া পোস্টাও মামু। পারলে আজকেই। আর না হলে ওয়েব লিংকটা দাও।

আজ নয় গুন গুন গুঞ্জন প্রেমের, চাঁদ ফুল জ্যোছনার গান আর নয়

আশিক আহমেদ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

ধন্যবাদ সকলে ।

শিরোনামটিও মনে হচ্ছে অনুবাদ করেছেন। আমার কাছে 'স্থপতি' শব্দটিই 'পিতা'র চেয়ে বেশী এপ্রোপ্রিয়েট মনে হচ্ছে।

হ্যাঁ । মুল প্রতিবেদনে শিরোনাম ছিলো 'Mujib:Death of the Founder'

-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

"ভাত দে হারামজাদা, নইলে মানচিত্র খাবো।"

- কবি রফিক আজাদ, ৭৩-এর মন্বন্তরের সময়ে

হাসান মোরশেদ এর ছবি

সেই রফিক আজাদেরই কিন্তু ১৫ আগষ্ট হত্যাকান্ড নিয়ে শোকাবহ এক এলিজি আছেঃ 'এই সিঁড়ি নেমে গেছে বঙ্গোপসাগরে'

শ্রদ্ধেয় সুবিনয় মুস্তফী,
এই পোষ্টে ৭৩ এর মন্বন্তর নিয়ে রচিত রফিক আজাদের ঐ লাইন কোট করার নিশ্চয় কোনো কার্যকারন আছে । যদি ও আমি বুঝতে পারিনি ।

'৭৩ এর মন্বন্তর নিয়ে কিছু লিখুন না কেনো?
আমরা যারা সেই মন্বন্তর দেখিনি কিংবা তখনো জন্মাইনি,মিলিয়ে দেখি আজকের আর সেদিনের বাংলাদেশ ।

ঝকঝকে রাস্তায় মার্সিডিজ বিএমডাব্লু চললে আর মাথাপিছু গড় আয় বেড়ে গেলেই ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা আসলে কমে কিনা?
সেদিন যাকে মন্বন্তর সংজ্ঞায়িত করে কবিতা লেখা গেছে,রাজনীতি করা গেছে-সেই পরিস্থিতি আজকের বাংলাদেশে আছে কিনা নেই-মিলিয়ে দেখা যেতে পারে ।

-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

হাসান ভাই,

২৫-৩০ বছর পরেও আমরা মৃত নেতাদের নিয়ে কালাতিপাত করে চলেছি। বাকি দুনিয়া তাকায় সামনে, আর আমরা বরাবরের মতো পেছন দিকে। রংগীন চশমা চোখে আজ অব্দি বন্দনা চলছে সবার। মুজিব জাতির জনক, সহজ কথা। কিন্তু সফল বিপ্লবী নেতা, বীর যোদ্ধা এক কথা, আর দিন-কে-দিন দেশ চালানোর 'বোরিং' ম্যানেজারিয়াল কাজ আরেক কথা। দরকারি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যই সেখানে ভিন্ন। ৬০ ও ৭০ দশকের decolonization এর যে জোয়ার বয়ে গিয়েছিল এশিয়া ও আফ্রিকায়, তাতে অনেক নেতা মহাবীরের ভুমিকা পালন করেছেন, জাতির জনক খেতাব জিতে নিয়েছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে খুব সামান্য কজনই দেশকে পরে সুখ সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন। মুজিবও তার ব্যতিক্রম নন। অনেক কারন আছে, কিন্তু সেই বিপ্লবী-বনাম-ম্যানেজার, ব্যক্তিগত গুনাবলীর বিষয়টাও একটা ফ্যাক্টর। মুজিবের বিজয়কে খাটো করে দেখার অবকাশ নেই, কিন্তু ৭১-এর পরে গ্রাউন্ড লেভেলে তার নানা ব্যর্থতা ধামাচাপা দেবার বা অজুহাত দেবারও প্রয়োজনও নেই।

সে কাসুন্দি বস্তুতই অনেক পুরাতন এখন। দেশের জনসংখ্যার সিংহভাগ জন্মেছে ১৯৭৫ এর পরে, বা ১৯৮১-রও পরে। তবুও সেই নবীন জনসংখ্যার দাবি দাওয়া চাহিদা কি সেটা আজ বিষয় না। এখনো বিষয়বস্তু হয় জাতির পিতা, নয় স্বাধীনতার ঘোষক, নয় অন্য কিছু। এসব বাসি ডিবেট, এসব emotional symbol দেখিয়েই কারো মেয়ে বা কারো বিধবা গত ১৬ বছর শাসন করেছে আর চুষে খেয়েছে। নৌকা, ধানের শীষ। ভবিষ্যতের কোন কথা নেই, কোন পলিসি নিয়ে আলাপ নেই, কোন সলিউশন নেই কিছুর। খালি অমুকের চেতনা, তমুকের প্রেরণা। আর বাসি দুইটা সিম্বল।

মাঝখান দিয়ে প্রতি বছর অভিবাসীদের সংখ্যা বাড়ছে। ২০০৫ ও ২০০৬ সালে বিদেশযাত্রী migrant worker-এর সংখ্যা নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। বিমানবন্দরের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা, সবকিছু বেচে দিয়ে আসা গ্রামের ছেলেটাকে মুজিব বা জিয়া নিয়ে কোন প্রশ্ন করলে নিশ্চয়ই হেসে খুন হবে নয় ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকবে। মুজিব জিয়া দুজনই ছিলেন নিখাদ দেশপ্রেমিক। যদি তাদের বলা হতো, যে তোমাদের নাম দেশের লোক সম্পূর্ণ ভুলে যাবে, কিন্তু বিনিময়ে তারা তিন বেলা খেতে পারবে, অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান আর কাজের সংস্থানের গ্যারান্টি থাকবে, বিদেশ যাবার জন্যে প্লেনের চাকায় লুকোবে না - তাইলে আমি নিশ্চিত উভয়ই হাসি মুখে রাজি হয়ে যেতেন।

তাই দৃষ্টিপাত বা সচলায়তনের মত উন্নত প্রগতিশীল সাইটে এসব পশ্চাতমুখী ইমোশনাল গান দেখলে কষ্ট লাগে। সম্ভাবনার অপচয়, আর দেশ ও দশের সত্যিকারের ভাত-কাপড়ের ইস্যু, ভবিষ্যতের আলাপ বাদ দিয়ে আবেগ আর ইতিহাসের গড্ডালিকায় অনবরত স্নান করা। আগস্ট আর মার্চ তাড়াতাড়ি পার হলে তাই ভালো লাগে।

সচলের পাঠকদের জন্যে একটি লিঙ্ক। অস্ট্রেলিয়ায় প্রবাসী ইকনমিস্ট জ্যোতি রহমান (জ্যোতি ভাই) দৃষ্টিপাতে চমতকার লেখা লিখেছেন সাম্প্রতিক খাদ্যদ্রব্যের মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে। একদম চুলচেরা ও সময়োপযোগী বিশ্লেষন। সচলেও কি এমনটা আশা করা যায় না?

http://www.drishtipat.org/blog/2007/08/18/on-food-inflation/

আদিত্য এর ছবি

কেনরে ভাই, ভবিষ্যতের আলাপ করতে কে নিষেধ করলো আপনারে? তাই বলে কি অতীতকে বাদ দিতে চান? ভগবান মুজিব না হয় বাদ দিলেন কিন্তু মানুষ মুজিব'কে কি করে বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে বাদ দেয়া যায় একটু ব্যাখ্যা করবেন কি? আওয়া আর বেনপি সমস্ত ফাউল কাম করে গেলেই কি মুজিবের স্মরণ বন্ধ করে দিতে হবে? আমার তো মনে ঠিক যেমন করে ভবিষ্যত নিয়ে, দেশের নানা সমস্যা নিয়ে আলাপ করা উচিত ঠিক তেমনি অতীত নিয়ে খোলামেলা আলাপ করা উচিত। শ্রদ্ধায় সমস্যা নেয়, সমস্যা হলো মহামানব বানাতে গেলে। তবে গান্ধী যে বিচারে, জিন্নাহ্‌ যে বিচারে ঐসব দেশের পিতা সে বিচারে বঙ্গবন্ধু নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশের পিতা (আর পিতা মানেই মহাপুরুষ বা মহানবী বা বালপুরুষ নয় নিশ্চয়)। গান্ধী বা জিন্নাহ-এর ব্যর্থততার কারণে আমি কোন ইন্ডিয়ান বা পাকি'কে তাদের জাতি বা রাষ্ট্রের পিতা'কে অস্বীকার বা ভুলে যেতে দেখিনি! আর ঠিক এই কারণেই আপনার মন্তব্যের বিরোধীতা করি। আজকে দেশের মুদ্রাস্ফীতি'র প্রকট সমস্যা দেখা গেলে যেমন দরকারি পোষ্ট নামতে পারে, ঠিক তেমনি এই পোষ্টও নামতে পারে। আর এই পোষ্ট নামলে রফিক আজাদের খন্ডিত দৃষ্টিভঙ্গী তুলে ধরে ভ্রু কুচঁকানোর কোন প্রয়োজন দেখিনা। বরং এখন বড় প্রয়োজন অতীত'কে উপলদ্ধি থেকে রেখে ভবিষ্যতে দিকে বুদ্ধিমানের মতো পা বাড়ানো।

(বড় বড় আওয়ামী/বেনপি/জামাতী বুড়া বুদ্ধীজিবী'রা যে তোষামোদী স্থুতি গায়, ঐ স্থুতি দেখে আর শুনে যেরকম বাল টাইপ অনূভুতি হয় আপনার মন্তব্য দেখেও ঐরকম অনূভুতি হলো। ক্ষমা করবেন ঐরকম অনুভূতির জন্য।)

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

মুজিব জিয়া দুজনই ছিলেন নিখাদ দেশপ্রেমিক।

তাই কি?

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

মন্বন্তরটি ৭৩-এর নয়, ৭৪ সালের।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

রফিক আজাদের এই চরণের বিষয়ে তার সাথে সরাসরি কথা হয়েছে আমার। অনেক সময় পত্রিকায় সাক্ষাত্কার দিয়েও তিনি বিষয়টা ব্যাখ্যা করেছেন। রফিক আজাদের সেই ভাষ্যটা আমি হাসান মোরশেদকে জানাতে চাই।

রফিক আজাদের সেই চরণটা মনে আছে? "আমিও গ্রামের পোলা, চূতমারানি গাইল দিবার পারি"। তো সমাজের সেই স্তরের মানুষরা ভাত না পেলে বাবাকেও নাকি হারামজাদা আর মাকেও হারামজাদী বলে। ক্ষোভ থেকে, ক্রোধ থেকে, ক্ষুধার যন্ত্রণা থেকে বলে। রফিক আজাদ বার বার বলেছেন, তিনি সেই অবস্থান থেকে বাবার কাছে ক্ষুধার কথা বলেছেন। এ অনেকটা খালি শানকি হাতে ক্ষুধায় কাতর শিশু চোখের জলে অভিমান আর ক্ষোধ নিয়ে বলা; হারামজাদা ভাত দিবি না, আমার ক্ষুধা লাগে না, আমি কিন্তু সব খায়া ফালামু।

আর সে কারণেই রফিক আজাদ তারপর ঐ বাক্য লিখতে পারেন যে, এই সিঁড়ি নেমে গেছে বঙ্গোপসাগরে।

-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

সবিনয় সংশোধনী:

"আমিও গ্রামের পোলা, চূতমারানি গাইল দিবার পারি"

চরণটি হেলাল হাফিজের রচিত। রফিক আজাদ নয়।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আমিও গ্রামের পোলা, চূতমারানি গাইল দিবার পারি"

এই লাইন মনে হয় হেলাল হাফিজের ।
'ভাত দে হারামজাদা'-যখন লিখেন তখন রফিক আজাদ যুদ্ধফেরত তরুন কবি । স্বাধীন দেশে,অনেক স্বপ্নের,অনেক প্রত্যাশার দেশে সেই প্রথম দুর্ভিক্ষের অভিজ্ঞতা । কবির এ উচচারন তাই অস্বাভাবিক নয় ।

মজা হলো,যারা আওয়ামী দুঃশাসনের ছবি তুলে ধরতে রফিক আওয়াজের এই লাইন উদ্ধৃত করেন তারা জানেননা আজাদ নিজে কতো বেশী মুজিবভক্ত ।
আবু হাসান শাহরিয়ারের লেখায় পড়েছিলাম-এই একই লাইনের জন্য ৯৬-২০০১ সালে অতি আওয়ামীলীগাররা রফিক আজাদের বিরুদ্ধে হাসিনার কানভারী করেছিলেন । জীবিকা সংক্রান্ত এক উমেদারীতে রফিক আজাদকে এর ব্যখ্যা ও দিতে হয়েছিল ।

হায় কবি,মুর্খ রাজনীতিকরা কি বুঝে তোমার শব্দচয়ন?
-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

পুতুল এর ছবি

আবার না দিলে তো পড়তেই পারতাম না!
অনেক ধন্যবাদ পুন পোষ্টের জন্য।
**********************
কাঁশ বনের বাঘ

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

ধন্যবাদ হাসান মোরশেদ । আপনার এই লেখাটি আমার তো পড়া ছিলো না। আমার মতো আরো অনেকের কাছেই লেখাটি এক বছর আগের হলেও প্রাসঙ্গিক। ক্ষমা প্রার্থনার কোনো দরকার কি আছে?

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

রাফি এর ছবি

ধন্যবাদ মোরশেদ ভাই; প্রকৃতিপ্রেমিকের কথা ধার করেই বলি আমাদের জন্য এ সংক্রান্ত যত লেখা অনলাইনে বা প্রকাশমাধ্যমে আসবে তথ্যের যাচাই বাছাই তত নিখুঁত হবে।
এই লেখাটিতে লেখকের অবস্থানকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ মনে হয়েছে; রাজনৈতিক বিশ্লেষনে যা বড় বেশি দরকার।
আবারো এরকম একটি কষ্টসাধ্য কাজ করার জন্য ধন্যবাদ।

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

অম্লান অভি এর ছবি

এযেন অনাদি অতীত কথা কয় প্রাণে প্রাণে
এযেন শ্বাশত সত্য গান গায় মনে মনে।
তবু পিতা তুমি শায়িত নিথর সত্যের মাঝখানে
যে ষড়যন্ত্র যান্ত্রিকতায় ঘিরে রাখে তোমাকে
তুমি সেই যান্ত্রিকতার অনেক উর্দ্ধে মানবিক-
তাই আজও অম্লান আমাদের মাঝে।

সচলায়তনের মডারেটরদের ধন্যবাদ হাসান মোরশেদ এর পুনঃ পোষ্ট সচল করার জন্য আর উদোগ্যকে ধন্যবাদ হাসান মোরশেদ।

মরণ রে তুহু মম শ্যাম সমান.....

তারেক এর ছবি

শুধু মূল পোস্টটা পড়লাম আবার...
অনেক ধন্যবাদ মোরশেদ ভাই। আপনি কিমুনাসেন? আমার এখনও হাওলাতী নেট দেঁতো হাসি
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

পলাশ দত্ত এর ছবি

যে-ইংরেজি লেখা থেকে এই অনুবাদ তার লিঙ্কটা কি দেওয়া যেতে পারে?

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

কীর্তিনাশা এর ছবি

ধন্যবাদ হাসান মোরশেদ ভাই।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।