ছায়াগোলাপ

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: মঙ্গল, ২১/১২/২০১০ - ১০:০১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ফেসবুকে যারা ঢোকে, তাদের কি কাজকাম নাই?

প্রশ্নটা মাঝে মাঝে সশব্দে করে ফেলি, বউ অন্য ঘর থেকে তখন ইস্রাফিলের শিঙার মতো সুরে কী যেন বলে। পুরোটা বুঝতে পারি না, মনে হয় সায় দেয়।

ফেসবুকে লোকজনকে ফালতু কাজে ব্যস্ত রাখার জন্য চতুর লোকজন কত কারিকুরি বার করেছে, দেখে মাঝে মাঝে তাজ্জব হয়ে যাই। একটা কম্পিউটারের সামনে বসে কোনো নিরস চেহারার ছেলে, হয়তো সাতদিন ধরে গোসল করে না, দাঁত মাজে না এক মাস ধরে, বগলে অশ্বত্থের চারা হয়তো গজিয়ে গেছে, মড়াপচা গন্ধ গায়ে, সে-ই হয়তো বানিয়ে বসেছে ফুল উপহার দেয়ার অ্যাপ্লিকেশন। কী বুদ্ধি ব্যাটাদের। বসে বসে ক্লিক করো আর লোকজনকে ফুল উপহার দাও। আসল ফুল হলে একটা কথা ছিলো, এগুলো হচ্ছে ফুলের ভূত, হাতে আঁকা টাকার মতো। ফুল যদি কোনো ঈশ্বর বানিয়ে থাকে, সেই ব্যাটার চেয়ে হয়তো কম খাটেনি প্রোগ্রামার ছোকরা, কিন্তু ফুলের আত্মার দিকে চোখ না দিয়ে বলদাটা শুধু রূপটাই দেখেছে।

আর যাদের কোনো কাজ নেই খাওয়াদাওয়ার পর, তারা বসে বসে ফেসবুকে ঢুকে এই অ্যাপ্লিকেশনে মাউস দিয়ে গুঁতাগুঁতি করে একে ওকে ফুল পাঠায়। প্রোগ্রামার বিদেশী, তাই ফুলগুলিও ফিরিঙ্গি। বাঙালিরা সেই ম্লেচ্ছ নামের লিস্ট থেকে চেনা ফুলের ইংরেজি নাম খোঁজে, তাই হয়তো আমার নোটিফিকেশনে শুধু গোলাপের আগমনী সংবাদ।

বউ অন্য ঘরে বসে মনোযোগ দিয়ে কী একটা হিন্দি অনুষ্ঠান দেখছে। একটা ঘড়ঘড়ে পুরুষ কণ্ঠ বলছে, ইস বাচ্চে কি পিতা ম্যায় হুঁ! যন্ত্রপাতির অসীম করুণায় তার দাবী ছড়িয়ে পড়ছে সাত আসমানে, ম্যায় হুঁ ম্যায় হুঁ ম্যায় হুঁ! পরিস্থিতি খুবই জমজমাট, বাচ্চার বাপের পরিচয় নিয়ে টানাহ্যাঁচড়া চলছে, বউ এখন টিভি ফেলে ঘরে ঢুকবে না, এমন মনকলার খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে নোটিফিকেশনে ক্লিক করে গোলাপবিলাসিনীর প্রোফাইলটা খুললাম।

মেয়েটা গত এক মাস ধরে গোলাপ পাঠিয়ে যাচ্ছে। অবিরত। ওর কি আর কোনো কাজ নাই? কিংবা আর কেউ নাই গোলাপ পাঠানোর? আমাকে কেন? আর দিবিই যদি তো এই ভূতগোলাপ কেন? একদিন ভালোমতো সেজেগুজে একটা তোড়া নিয়ে আয় বাসায়, ডালভাত খেয়ে যা, বউয়ের সাথে বসে বেওয়ারিশ হিন্দি সিরিয়ালের বাপের আহাজারি শুনে যা।

নোটিফিকেশনের পাতাটা পুরোটা খোলার পর হঠাৎ করেই আরেকটা ব্যাপার চোখে পড়ে আমার। আগে খেয়াল করিনি।

কে এক পুরুষও আমাকে গোলাপ পাঠাচ্ছে এক মাস ধরে।

মেজাজটা খারাপই হয় এবার। প্রথম গোলাপের তারিখটা দেখি। গত মাসের বারো তারিখ। আজ সাত তারিখ। বারো তারিখ থেকে ঐ মেয়েটাও গোলাপ পাঠানো শুরু করেছে। ব্যাটাছেলেটা মেয়েটার মতো অনর্গল না পাঠালেও মাঝে মধ্যে একটা দু'টো পাঠিয়েছে দেখা যাচ্ছে। কে রে তুই শালা, বিবাহিত লোককে গোলাপ পাঠাস? ঘরে বাপভাই নাই?

ক্লিক করে প্রোফাইলটা খুলে এবার নামটা চোখে পড়ে আমার। ওহ। মারুফ কাজী। হাল্লার পো, তুই আবার আমাকে গোলাপ পাঠাস ক্যান রে?

মারুফ কাজী আমার বড় ভাইয়ের বন্ধু। প্রাণোচ্ছ্বল লোক। একটু মেয়েলি ভাব আছে, ওড়না টোড়না পরে কুর্তার সাথে, কিন্তু সেটা সম্ভবত সঙ্গদোষে। দিনরাত মেয়েদের সাথেই তার ওঠবোস। মেয়েরাও তাকে ঘিরে থাকে, দেখেছি। সম্ভবত, কবিতার গুণে।

কবিতা জিনিসটা আমি হজম করতে পারিনি কখনো, যেটাই গিলতে চেয়েছি. মার্গপথে বেরিয়ে গেছে। মারুফ কাজী কবিতা শুধু গেলেইনি, চিবিয়ে রসমজ্জা হজম করে বাদুড়ের মতো যত্রতত্র কবিতা ওগড়াতে ওগড়াতে একেবারে দক্ষযজ্ঞ কাণ্ড বাঁধিয়ে রেখেছে। শাহবাগে গিয়ে আবৃত্তির সিডি কিনতে গেলে তার খোমাটা কাভারে দেখতে হবেই। ছেলেদের কবিতা, মেয়েদের কবিতা, সব কিছুতেই সে আছে ঈশ্বর আর ব্যাকটিরিয়ার মতো। কবিতা আমি বুঝি না, কিন্তু এ কথা বুঝি, বেশ টেনে টেনে কবিতা আবৃত্তি করতে পারলে, সিডি বার করে ফেলা যায়, মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় ওড়না পরে মাইক কাঁপিয়ে তোলা যায়।

আর মেয়েদের পটানো তো অবশ্যই যায়।

গোলাপের ভূত মারুফ কাজীর পাশাপাশি এই হাস্যোজ্জ্বল রূপবতী তরুণীটির কাঁধে কিরামান কাতেবিনের পেছনের বেঞ্চে বসে আছে দেখে একটা আঁশটে সন্দেহ হলো প্রথমেই।

মেয়েটি দেখতে বেশ। প্রোফাইলের ছবিটি দেখে বোঝা যায়, সে দীর্ঘাঙ্গিনী, নির্মেদ। তার হাসিটিও তার আত্মাকেই ধারণ করেছে। কান পেতে শুনলাম, হিন্দি সিরিয়ালে বাচ্চার মালিকানা নিয়ে নারীপুরুষের কলহ চলমান। বউ যখন দূরে, তখন এই গোলাপের রহস্যে একটু টোকা দিয়ে দেখা যায়।

অনলাইন বন্ধুদের তালিকায় মেয়েটির নাম জ্বলজ্বল করছিলো তখন, সামিরা মেহের, ক্লিক করে লিখলাম, "গোলাপের নিচে চাপা পড়ে তো মারা যাচ্ছি!"

প্রত্যুত্তর এলো, "হিহি।"

চোঙামুখো মানুষকে আমি ভালোবাসি না, আর দেখেছি, যারা মন খুলে হাসতে জানে না, তারা এই অক্ষরের আলাপেও হাসির অক্ষর লিখতে পারে না। হাসতে জানা মানুষ নিরাপদ মনে হয়, হাসতে জানা নারী নিরাপদতর, এবার নির্ভার মনে লিখি, "ঘটনা কী? কে গো তুমি?"

উত্তর আসে, "আমি সামিরা।"

সেই থেকে শুরু হয়। ফুলের স্রোত থামে না। আমার বউটাও কোনো হিন্দি সিরিয়াল মিস করে না, লোডশেডিং হলে ভোরে উঠে পুনর্প্রচারে আবার দ্যাখে, কোন শাশুড়ি কোন পুত্রবধুর একশো কোটি রূপির কাগজের গুদামে গুণ্ডা লাগিয়ে আগুন ধরিয়েছে, কার কোলের শিশুর পিতা কাকে কোলে নিয়ে বসে আছে। সামিরার সাথেও তাই আলাপ আস্তে আস্তে সরু খাল ধরে কীর্তনখোলায় এসে পড়ে।

সামিরা হাসতে জানে বলেই বোধহয় বেশিক্ষণ গোপন রাখে না কথাটা, দ্বিতীয়বার চেপে ধরতেই একটা হাসিমুখ পাঠায়। সম্মতিরই লক্ষণ বলে চিনে নিই স্মাইলিটাকে। হ্যাঁ, মারুফ কাজীর প্রেমে সে আচ্ছন্ন।

মারুফ কাজীর ফেসবৌকেয় দেয়ালে আধ ঘন্টা পর পর নতুন নতুন প্রেম গদোগদো কবিতার চরণ, আর সামিরার দেয়ালে এক ঘন্টা পর পর নতমুখ কোনো তরুণীর তৈলচিত্র দেখে ধারণাটা এতই পোক্ত হয়েছিলো যে ইতিবাচক উত্তর না এলেও সেটা পাল্টাতো না, কিন্তু সামিরা ত্রস্তা হরিণীর মতো আড়াল খোঁজে না, সে শাবকের সরলতা নিয়ে প্রশ্নের দাঁতে নিজের গলা পেতে দেয়। হ্যাঁ, মারুফ কাজীকে ভালোবাসে সে।

ভালো লাগে মেয়েটির সাহসী স্বীকারোক্তিটুকু, আবার খারাপও লাগে, কারণ মারুফ কাজী বিবাহিত, বহুদিন ধরেই। ব্যাটার বিয়ের হলুদে বন্ধুর ছোটো ভাই হিসেবে কিছু শ্রমও দিয়েছিলাম। হতভাগার কোনো শালি নেই, মামাতো চাচাতো শালিও না। এরকম কালাহারি মরুভূমিতে পদ্ম হয়ে প্রস্ফুটিতা তার স্ত্রী, আর গোটা বংশ ভর্তি ছেলেছোকরা। গায়ে হলুদটাই লস হয়েছিলো পুরো।

রাগটা ঝাড়তে ইচ্ছা হয় সামিরার ওপরই, কিন্তু খারাপ লাগাটা কাটে না, কারণ সামিরা নিজেও বিবাহিতা।

কান পেতে শুনি, বউ মজে আছে হিন্দি সিরিয়ালে, কীবোর্ডে আমার আঙুল ফিসফিসিয়ে টাইপ করে, "কেমন হয়ে গেলো না ব্যাপারটা?"

সামিরা একটু চুপ করে থেকে লেখে, "কী করবো? ভালো লাগে তো!"

বিবাহিত বুকটায় একটু ব্যথা লাগে। সামিরার দুঃখে নয়, নিজের দুঃখেও নয়, মারুফ কাজীর গায়ে হলুদে তার নেই-শালিদের অনুপস্থিতির জন্যেও নয়, ঐ ভালোলাগার কথা শুনেই। ভালোবাসতে ভালো লাগে যাদের, তাদের কেবলই দেখি আহত হতে। ঘূর্ণিঝড়ে তাদেরই চাল উড়ে যায়, বাজ পড়ে তাদেরই গরু মরে, ভূমিকম্পে তাদের ঘাড়েই হুড়মুড় করে এসে পড়ে ছয়তালা দালান। সামিরার ছবির হাসিটার জন্যে দুঃখ পাই, দুঃখ পাই তার আলাপের টুকরো টুকরো মূক হাসিমুখগুলোর জন্যে।

টিভিতে হিন্দি সিরিয়াল কখনও শেষ হবার নয়, আর আমার বউও যতদিন দেহে রবে প্রাণ, ততদিন লড়ে যাবে, তাই সামিরার গোলাপগুলো জমতে থাকে আমার নোটিফিকেশনের পৃষ্ঠায়। তার খোঁজ নিই, খোঁজ নিই তার হাসিমুখের।

সামিরার গোলাপগুলো মলিন হয় না, কিন্তু একদিন দেখি তার দেয়ালে আর সেই নতমুখ তরুণীদের ছবিগুলো নেই। তার বদলে টুকরো টুকরো কথা লেখা, সেগুলোও টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে পড়ার। একটু আশঙ্কা হয়, মারুফ কাজীর দেয়ালে গিয়ে দেখি, কিন্তু সেখানে কবিতার আমাশয় সগর্জনে বহমান।

সামিরার গোলাপ ঠিকই পাই, জানতে চাই, "কী হলো?"

উত্তর আসে মলিন মুখের স্মাইলিতে।

বিস্তারিত জানতে চাই, সামিরা চুপ করে থাকে। তারপর বলে, "ও একটা প্রবঞ্চক।"

প্রবঞ্চক কথাটা বড় কঠিন, মানেও মনে পড়তো না, কিন্তু সামিরার খালি দেয়াল, মারুফ কাজীর অক্ষুণ্ণ কবিতার স্রোত, আর ঐ বিষণ্ণ মুখের এক টুকরো স্মাইলির ফ্রেমে শব্দার্থ পরিষ্কার হয়ে ওঠে। বলি, "কেন?"

সামিরা উত্তর দেয়, "আমাকে আর ভালোবাসে না। এখন অন্য আরেকজনকে গোলাপ দেয়, অন্য আরেকজনের জন্যে কবিতা লেখে।"

শিশুর মতো অভিমান মনে হয়, কিন্তু অভিমানী সকলেই তো শিশু, ঐটুকু উত্তরাধিকার তো সে শৈশব থেকে বহন করে চলতেই পারে। জানতে চাই, "কে?"

জানতে পারি, সুমনা মোস্তফা নাম সেই প্রবাসিনীর, মারুফ কাজীর নতুন কবিতার স্টক অর্গলমুক্ত বর্ষার জলের মতো সেইদিকে ধাবিত। মারুফ কাজীর দেয়ালে সেই মেয়েটির হাসিমুখ দেখতে পাই, দেখতে পাই আরেকটি সামিরাকে, দেখতে পাই আরেকটি পরিতৃপ্ত হরিণশাবককে।

সামিরা কাঁদে, একটি কোলন, একটি একাকী কোট মার্ক, একটি প্রথম বন্ধনী এঁকে, কিন্তু আমি তার কান্নার শব্দ যেন শুনি বউয়ের হিন্দি সিরিয়ালে হোটেল ব্যবসায় দুইশো কোটি রূপি লস খাওয়া শাশুড়ির কান্নাকে ছাপিয়ে।

সামিরা কাঁদে, কারণ তার নিজের সংসারটুকু চুরমার হয়ে গেছে সেই ভালোবাসতে ভালো লাগার রোগে। সামিরার পুরুষটি জানে, সামিরা সশরীরের ভালোবাসে মারুফ কাজী নামের একটি লোককে। তারা আর একজন আরেকজনের সাথে কথা বলে না, পারতপক্ষে মুখোমুখি হয় না, সামিরা সেই লোকটির জন্যে রান্না করে না, কারণ সেই লোকটি সামিরার রান্না মুখে দেয় না, তারা দু'জন দুই ঘরে রাতে অন্ধকার ঘরে শুয়ে ভিন্ন মানুষের কথা ভাবে। সামিরা ভাবে মারুফ কাজীর কথা, সামিরার পুরুষ কার কথা ভাবে, সামিরা জানে না।

জানতে চাই, মারুফ কাজীও তো বিবাহিত। যদিও তার শালি নেই, নচ্ছাড়টা জাতির কোনো কাজেই এলো না। সামিরা এ কথা জেনে কেন ... ?

সামিরার উত্তরটা আসার আগেই বুঝে যাই। এর কোনো উত্তর তো হয় না। ভালো লাগার পেছনে তো এত হিসাব থাকে না।

সামিরার গোলাপগুলি মলিন হয় না, শুধু একটু একটু করে সামিরাকে মলিন হতে দেখি। হিন্দি সিরিয়াল চলতে থাকে, বউ রাজত্ব করে টিভির আওয়াজ যতদূর যায় ততদূরের সমস্ত বর্গফুট নিয়ে, কিন্তু সামিরাকে অনলাইনে দেখি না।

পহেলা ফাল্গুনে বসন্ত উৎসবে বউকে নিয়ে বেড়াতে গিয়ে একা হয়ে যাই, বউ তার গোটা দুয়েক বান্ধবী খুঁজে পেয়ে আমাকে দাঁড়িয়ে থাকার হুকুম দিয়ে কোথায় যেন হারিয়ে যায়। তার স্মরণশক্তির দৌর্বল্যের ওপর ভরসা করে একটু ডানে বামে যাই। আর চারুকলায় একটি নিভৃত কোণে দেখা হয়ে যায় মারুফ কাজীর সঙ্গে। যথারীতি তার সঙ্গে তার নিজ স্ত্রী নয় এমন একটি রমণী। দীর্ঘাঙ্গিনী, সুকেশা, মুখটি মলিন। এ-ই হয়তো নতুন শিকার, সেই সুমনা মোস্তফা।

সম্ভাষণ জানাতেই মারুফ কাজী একটু চমকে ওঠে, বলে, কীরে বাবু, কেমন আছিস? তোর বউ কই?

মহা বিরক্ত লাগে। আমার বউ দিয়ে তুই কী করবি ব্যাটা লম্পটেশ? তোর নিজের বউ কই? সঙ্গে এটা কাকে নিয়ে ঘুরঘুর করছিস?

কিন্তু মুখে বলি, "এই তো।"

দীর্ঘাঙ্গিনী এবার হাসে একটু কষ্টে, বলে, "চিনতে পারেন?"

হাসিটাকে চিনি ভালো করেই, হাসির মালকিনকে চিনতে পেরে এবার চমকে উঠি। এ কী হাল সামিরার?

কৃশ হাসিটি আবার পায়ে পায়ে পিছিয়ে হারিয়ে যায় কোনো অন্ধকারে, প্রশ্নের জবাবে সামিরা শুধু বলে, "এই তো, ঝামেলা যাচ্ছে আর কি।"

দেখতে পাই, মারুফ কাজীর হাত সে শক্ত করে চেপে ধরে আছে, তার নখগুলো সাদা হয়ে আছে।

যুগলটি বেশিক্ষণ থাকে না সেখানে, মারুফ কাজী ত্রস্তপায়ে চলে যায় কোথায় যেন। আর আমার বউও কোত্থেকে আবার চলে আসে, "য়্যাই, তোমাকে না বললাম দাঁড়িয়ে থাকতে?"

বউগুলো শুধু দাঁড়া করিয়ে রাখতে চায়।

পরের দিনটা ব্যস্ত গিয়েছিলো, অফিস থেকে ফিরেছিলাম একটু দেরিতে, চায়ের কাপ হাতে ফেসবুক খুলে পেলাম দুঃসংবাদটা। মেসেজে মেসেজে ভরে গেছে ইনবক্স।

আত্মহত্যা করেছে সামিরা। পুরনো গল্প। ফ্যানের সাথে ওড়না, সেই ওড়নার সাথে একটি অভিমানী শিশু। খবরের কাগজেও এসেছে সে দুঃসংবাদ।

বড় দুঃখ পাই। বউ আমার বাষ্পমাখা চোখ দেখে ছুটে আসে। তাকে কী করে বোঝাই, সামিরার সাথে পরিচয় কেমন, কীভাবে? আরেকটি নারীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক ব্যাখ্যা করতে কোনো বেগ পেতে হয় না, কিন্তু আমার সাথে একটি হাসিমুখ আর গোলাপস্রোতের সম্পর্ক ব্যাখ্যা করা বড় জটিল। সামিরা আমার বন্ধু
নয়, প্রেমাস্পদাও নয়। প্রতিদিন যে চড়ুই সকালে ডেকে ঘুম ভাঙায়, একদিন সে হঠাৎ আর না এলে যে বেদনা অনুভব করি আমরা, সেই চড়ুইয়ের মতোই সামিরা বেদনা জাগিয়ে তুলেছে কেবল।

মারুফ কাজীর দেয়াল খোঁজ করতে গিয়ে দেখি, সে আর নেই ফেসবুকে। নাম ধরে খুঁজেও তাকে পাই না, যেন সে কখনো ছিলোই না। যথার্থ লম্পটের মতো সে নিরুদ্দেশ।

তারপর কয়েকদিন অনেক বেকার কথা ঘুরপাক খায় নিষ্কর্মা বাঙালির ফেসবুকের দেয়ালে। সামিরার দেয়ালের নানা অর্ঘ্য দিয়ে আসে তার বন্ধুরা, তাকে খবরের কাগজ পড়ে চিনেছে এমন আবেগখোর অপদার্থের দল। তারপর আবার আস্তে আস্তে উত্তাপ পড়ে আসে, সামিরার দেয়ালে আর নতুন লতাগুল্ম গজায় না।

আজ ফেসবুকে নিজের দেয়াল সাফ করতে গিয়ে এক এক করে নিষ্ঠুরের মতো সাফ করলাম সামিরার পাঠানো সব ক'টি গোলাপ। কেবল একটি রেখে দিলাম। থাকুক।


সকল চরিত্র ও ঘটনা কাল্পনিক। বাস্তবের সাথে মিল কাকতালমাত্র।


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ভালো লেগেছে।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লাগল হিমু ভাই;

ফেসবুকও হিন্দী সিরিয়ালের ঘার ঘার কি কাহানিতে আক্রান্ত হইছে দেখে কিঞ্চিৎ চিন্তিত

উদ্ধৃতিঃ-
"ইস বাচ্চে কি পিতা ম্যায় হুঁ! যন্ত্রপাতির অসীম করুণায় তার দাবী ছড়িয়ে পড়ছে সাত আসমানে, ম্যায় হুঁ ম্যায় হুঁ ম্যায় হুঁ!"--- হিন্দীতে পিতা কয় নাকি???

"বউগুলো শুধু দাঁড়া করিয়ে রাখতে চায়।"----হাহাহাহাহা; অর্থের ব্যাপ্তি ব্যাপক বিস্তৃত

-অতীত

অতিথি লেখক এর ছবি

ব্যাপার কী? আপনার মন ভালো আছে তো?
-রু

অতিথি লেখক এর ছবি

একটু অন্যরকম। ভালই লাগল।

অনন্ত

নৈষাদ এর ছবি

খুব ভাল লাগল।

শান্ত [অতিথি] এর ছবি

ভালো লেগেছে। আপনার অন্যান্য লেখার থেকে এটা একটু আলাদা।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

গল্পটার নাম আর বর্ণনার মাঝে কোথাও হালকা বিষণ্ণতা খুঁজে পাওয়া যায়, সচরাচর আপনার অন্যান্য গল্পগুলোতে এটা থাকে না।

সামিরা কাঁদে, একটি কোলন, একটি একাকী কোট মার্ক, একটি প্রথম বন্ধনী এঁকে,

এই বর্ণনাগুলো ভালো লাগে।

_________________________________________

সেরিওজা

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

চমৎকার! হৃদয় ছুঁয়ে গেল!!
-----------------------------------
যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ — কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

শেষের ডিসক্লেইমারটা বাদ দিন। গল্পের জন্য ওটা জরুরী নয়। যারা গল্পকে অন্য কিছুর সাথে মিলাবে সেটা তারা নিজেদের দায়িত্বে করবে।

বউয়ের হিন্দী সিরিয়াল দেখার প্রসঙ্গটা পদে পদে আসায় একটু ক্লিশে লাগছে। সেখানে উপস্থাপনার যে ভ্যারিয়েশনগুলো এনেছেন সেগুলোকে খুব ভালোভাবে আলাদা করা যাচ্ছেনা। কখনো গল্পটা সম্পাদনা করলে এটা নিয়ে একটু ভাববেন।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেকদিন পর হিমুর নতুন ধরনের লেখা !!

বিষন্ন বিষন্ন লেখা !!

মোহনা

খেকশিয়াল এর ছবি

ভালো লাগলো

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

বাউলিয়ানা এর ছবি

পুরো লেখা জুড়ে একটা বিষাদ টের পাওয়া যায়।
গল্প ভাল লেগেছে।

শাহনাজ এর ছবি

আপনার অন্যান্য লেখা থেকে আলাদা স্বাদের। ভাল লাগল। তবে আত্মহত্যাটা হিন্দি সিরিয়ালের মত একটু নাটুকে লেগেছে।

এক রাতের বৃদ্ধ [অতিথি] এর ছবি

"ভালোবাসতে ভালো লাগে যাদের, তাদের কেবলই দেখি আহত হতে। ঘূর্ণিঝড়ে তাদেরই চাল উড়ে যায়, বাজ পড়ে তাদেরই গরু মরে, ভূমিকম্পে তাদের ঘাড়েই হুড়মুড় করে এসে পড়ে ছয়তালা দালান।"

সবজান্তা এর ছবি

ধুর... এতো কষ্ট কইরা এতো বড় একটা কমেন্ট লেখলাম, সার্ভার খায়া ফেল্লো।

সংক্ষেপে, লেখা ভালো লাগসে।


অলমিতি বিস্তারেণ

ওসিরিস এর ছবি

মন খারাপিয়া লেখাটা ভালো লেগেছে।।
_______________________________________________
সিগনেচার কই??? আমি ভাই শিক্ষিৎ নই। চলবে টিপসই???

দ্রোহী এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

উদ্ধৃতিঃ
"তারপর আবার আস্তে আস্তে উত্তাপ পড়ে আসে, সামিরার দেয়ালে আর নতুন লতাগুল্ম গজায় না।"

এই কথাগুলো আমার অনেকটা নিজের মনে হয়েছে।আমার নিজের ফেসবুকে আমার খুব ঘনিষ্ঠ দুজনের (একজন সদ্য যুবক আর একজন কিশোর)এমন দুটো প্রোফাইল আছে যেখানে যেখানে উত্তাপ পড়ে এসেছে আস্তে আস্তে, তারপর কোন লতাগুল্ম গজায়নি, আর...

অলস গাধা এর ছবি

ডিসক্লেইমারটা বাদ দেন!
পুরা গল্পটাই অসাধারণ।মন খারাপ করা লেখা,কিন্তু ভাল লেখা পড়লে মন এমনিতেই ভালো থাকে।

মুরাদ খান [অতিথি] এর ছবি

ভালো লেগেছে। "সব কিছুতেই সে আছে ঈশ্বর আর ব্যাকটিরিয়ার মতো" আর "সেখানে কবিতার আমাশয় সগর্জনে বহমান।"- চমৎকার মনের ভাব প্রকাশ।
মুরাদ খান

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

গতকালকেই বাংলাদেশের খ্যাতিমান কিছু মানুষদের নারীপ্রীতি ও ‌"নারীচর্চা"র কথা শুনছিলাম। অশিক্ষিত লোকের পয়সা হলে আর শিক্ষিত শিল্পমনা লোকের খ্যাতি হলে তারা একই প্ল্যাটফর্মে গিয়ে দাঁড়ায়। সমীকরণ ভিন্ন, ফলাফল অভিন্ন।
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

জি.এম.তানিম এর ছবি

সুন্দর...

কাজী সাহেবকে দোষ দেওয়া যায় নাকি ভাবছি...

দ্বিমুখী ভালোবাসার একটা দিক হঠাৎ মরে গেলে... কী বা বলার থাকে আর...
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

সাইকো এর ছবি

সত্যি বলতে কি আমি আপনার লেখা পড়ে ফেইসবুকে সামিরা মেহের নাম সার্চ না করে পারি নি। আমি বুঝি না, ফেইসবুক ব্যবহারকারীরা কি বুদ্ধি জলাঞ্জলি দিয়ে ফেইসবুকে ঢোকে? ধন্যবাদ আপনার লেখাটির জন্যে।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

মলিন গোলাপের উজ্জ্বল গল্প।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

টুটুল [অতিথি] এর ছবি

হিমু,
কিভাবে যেন পড়তে পড়তে আর বাস্তবের সঙ্গে মেলাতে মেলাতে গল্পটা পুরো পড়ে ফেললাম। বিষাদ, শোক, স্মৃতির মাঝ দিয়ে পথ চলতে চলতে দেখতে পেলাম হিমু কেমন কায়দা করে সত্যি কথাগুলো লিখে ফেলল। নামগুলিও কাছাকাছি রেখেছ। সাবাশ হিমু। সামিরা মেহেরের কবিতাগুলো কোথায়, জান তুমি? ভাল থেক, আন্নদে থেক...

হিমু এর ছবি

না, পরের মুখে ঝাল খেয়ে লিখলাম। সামিরা মেহেরের কবিতাগুলো মারুফ কাজীকে কোঁৎকা লাগালে পাওয়া যাবে হয়তো।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

ফকির লালন এর ছবি

বাহ, খাসা, ভালো লাগলো।

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

মন খারাপ

-----------------------------------------------------------------------------------
...সময়ের ধাওয়া করা ফেরারীর হাত থিকা যেহেতু রক্ষা পামুনা, তাইলে চলো ধাওয়া কইরা উল্টা তারেই দৌড়ের উপরে রাখি...

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

সাইফুল ইসলাম [অতিথি] এর ছবি

োনেক ভালো লাগলো।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।ধন্যবাদ

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখাটা ভাল লাগলো, তবে আসল কথা হল, সাবার রুচি সমান নয়!!

সাইফ তাহসিন এর ছবি

আমারে কেনু কেউ গুলাপ দ্যায়না, কেনু কেনু কেনু!

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

অনুপম ত্রিবেদি এর ছবি

ভালো লাগলো। যদিও বিষন্ন, তবুও।

===============================================
ভাষা হোক উন্মুক্ত

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

মন খারাপ

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

হুমম...
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

হিমু এর ছবি
রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

খুবই ভালো লেগেছে। মন তো একটু খারাপ হয়েছিলোই। জীবনে একবারই খাতার মধ্যে একটা গোলাপ পেয়েছিলাম, অনেক বছর আগে। সে আজ বিরাট নারীবাদী, শুনেছি ফিল্মও বানায়।

======================================
অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো, সেইতো তোমার আলো।
সকল দ্বন্ধ বিরোধ মাঝে জাগ্রত যে ভালো, সেইতো তোমার ভালো।।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

এনকিদু এর ছবি

বিরাট বাঁচা বাঁইচা গেছেন !


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

যথার্থ বলেছেন ভ্রাতা!

======================================
অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো, সেইতো তোমার আলো।
সকল দ্বন্ধ বিরোধ মাঝে জাগ্রত যে ভালো, সেইতো তোমার ভালো।।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

মূলত পাঠক এর ছবি

লেখক সবাইকে ধন্যবাদ জানানোর পর পড়লাম এবং ভালো লাগা জানালাম, এখন সে মেসেজটা যথাস্থানে পৌঁছলে হয়!

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

হিমু ভাই,
গ্রেট। অদূরদর্শী দের বোধ হয় এরমই হয়। কে জানে ! যে যাবার তাকে কি আটকানো যায়?? যায়না বোধহয়। ভালো থাকবেন ভাই।
মানিক

ধুসর গোধূলি এর ছবি

গল্পটা পড়লাম। কিন্তু বুঝলাম না, লেখক এখানে ঠিক কী বুঝাতে চেয়েছেন? এতো 'বউ বউ' করার কারণ হয়তো খানিকটা অনুমিত, কিন্তু বউকে হিন্দি সিরিয়ালের দর্শক বানিয়ে ফেসবুকে গোলাপ আদান-প্রদান— উঁহু, ভালো কথা নয় মোটেও।

সামিরার গলায় ফাঁস পরাটা কী রূপকার্থে কি-না, সেটা নিয়েও কঠিন দ্বন্দ্বে আছি! মারুফ কাজীকে প্রবঞ্চক হিসেবে জানার পরেও তার সাথে চারুকলায় 'হাতে ধরে নিয়ে চলো সখা' গানের শ্যুটিং একটু কেমন যেনো! এমন কি হতে পারে যে সামিরা শেষমেশ লেখকের সাথেই 'মুন্নি বদনাম হুয়ি, ডাল্লিং ত্যারে লিয়ে' গানে ঠোঁট মিলিয়েছে! আর সামিরার এহেন পতনকেই লেখক গলায় ফাঁস দেয়ার সমতুল্য গণ্য করেছেন! হতে পারে কি! চিন্তিত

তবে একটা জায়গায় লেখকের কথা দারুণ মনে ধরেছে আমার। কোনো নারীর সাথে সম্পর্ক থাকলে সেটা ব্যাখ্যা করা যায় বউয়ের কাছে। কিন্তু তেমন কেউ না থাকলে বউয়ের কাছে কোনো নারী সম্পর্কে কোনো কিছু ব্যাখ্যা করতে যাওয়া মানে পায়ে কুড়ালের কোপ না বরং পা টেনে নিয়ে সজোরে কুড়ালে নিক্ষেপ করারই সামিল! আমার ধারনা, বউ জাতিটা হলো এমনই জাঁদরেল কৌঁসূলি, যাঁরা মুহুর্মুহু জেরার মুখে কালো ভল্লুককেও নিজেকে সাদা বেড়াল বলে পরিচয় দিতে বাধ্য করে ফেলেন! মন খারাপ

লেখকের প্রতি পাঠকের সাবধান বাণীঃ দিল্লিকা লাড্ডু খাইয়েন না ভাই।



বিএসএফ—
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ

নি [অতিথি] এর ছবি

আপনার লেখা সবসময় অন্যরকম হয়। কিন্তু এটা অনেক বেশি অন্যরকম ছিল।
সত্যি বলতে কি সামিরার জন্যে না, আপনার স্ত্রীর জন্যে কেমন যেন লাগল।

অল্প ফাঁক মানা যায় কিন্তু ফাঁকা বেশি হলে আর তেমন জমেনা।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

দুনিয়াতে হিমুর বউয়ের কষ্টে দুঃখ পাবার মানুষ আছে, কিন্তু হিমুর কষ্টে দুঃখ পাবার মানুষ নাই!



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

জীবনে কোথাও দেখসেন যে জামাই'র কষ্টে বউ কষ্টিত হয়?



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

নিজের চোখ দিয়ে দেখার আর সুযোগ পেলাম কই! মন খারাপ

শাস্ত্রমতে ময়নার তো এখন কঁচুগাছের গোড়ায় যে বৃষ্টির পানি জমে, তাতে ডুবে মরা উচিৎ। জনগণের কথা বাদই দিলাম, কিন্তু নিজের সাক্ষাৎ বউ-ও কষ্টিত না হলে কী হবে তার এই জীবন রেখে?



বিএসএফ—
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

দেঁতো হাসি নাহ্‌! আজকের অফ মুডটা বাই-বাই। দেঁতো হাসি
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

তাসনীম এর ছবি

এই ভিন্ন স্বাদের গল্পটা ভালো লেগেছে।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

guest_writer rajkonya এর ছবি

এই গল্পটা তো গল্প নয়! এটা সত্য ঘটনা। আমি মনে হয় জানি ব্যাপারটা। সেই নষ্ট মারুফ কাজীর সত্য পরিচয়টা সবার সামনে আসা উচিত।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

এক বছর হতে আর দুই মাস বাকী। ভুলেই গিয়েছিলাম গল্পটা।

সংজ্ঞাহীন সম্পর্কের পরিণতিগুলো কখনো কখনো মর্মান্তিক হয়ে যায়। অবহেলা আর অভিমানের জটিলতায় বন্ধু-প্রেমিক-স্বামী-স্ত্রী-প্রেমিকা কার কখন কোন ভূমিকা ধ্বংসের বাঁশী বাজায় বোঝা মুশকিল।

গল্পের চিত্রায়নটা চমকপ্রদ ছিল, কিন্তু বউকে হিন্দি সিরিয়ালে বেশী মগ্ন দেখানোটা আরোপিত মনে হইছে। এটা অবশ্য বিবাহ সংক্রান্ত অনভিজ্ঞতার ফল।
চোখ টিপি
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
এ ভ্রমণ, কেবলই একটা ভ্রমণ- এ ভ্রমণের কোন গন্তব্য নেই,
এ ভ্রমণ মানে কোথাও যাওয়া নয়।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

এনকিদু এর ছবি

এই জন্যই হিন্দী-খোর বউ ভাল না।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

কৌস্তুভ এর ছবি

দারুণ।

দময়ন্তী এর ছবি

খুব ভাল গল্প| যথারীতি|

একটা কথা মনে হল| গল্পকথকের স্ত্রীর অতিরিক্ত সিরিয়ালপ্রীতি দেখানো হয়েছে কি কথকের ফেসবুকে অনেক সময় কাটানোকে চেতনে বা অবচেতনে কিছুটা জাস্টিফাই করার জন্য? স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে একজন কোনকিছুতে মাত্রাতিরিক্ত আসক্ত না হলেও তো কারো অন্য কারোর হাসিমুখ বা সর্বদা হাসিখুশী থাকা, কিম্বা কথার ভঙ্গী এমনকি শুধু নাকটুকু বা চোখটুকুও তো ভাল লাগতে পারে| তার সাথে একটা 'ঠিক প্রেম নয়' কিন্তু সুন্দর বন্ধুত্ব বা স্রেফ কিছুক্ষণ কথা বলার মত/চ্যাট করার মত সম্পর্ক তৈরী হতেই পারে এবং এরকম ধরণের ঘটনায় বিষণ্ণ বোধ করতেই পারে|
মানে বলতে চাইছি যে আমার মতে কথকের স্ত্রীর চরিত্রটা অত মোটা ফেল্ট পেনে না আঁকলেও হত আর কি!

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

অতিথি লেখক এর ছবি

খুব ভাল লাগল .

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি ভাবি....মেয়েটা তার বরকে ছেড়ে আর একজনকে ভালোবেসেছিল, হয়তো ভালোবাসা ফুরিয়ে গিয়েছিল। আজ তার জীবনে এক ই ঘটনা ঘটেছে, আমরা ওর জন্য কষ্ট পাচ্ছি...২য় লোকটিকে ঘৃণা করছি্‌....ও মরে গেলো বলে? কেউ কেউ বেঁচে থেকেও মরে প্রতিদিন আর যার জন্য এটা হয় তার কথা কেউ জানতেও পারে না

- মেঘলা

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

মেঘলা, মেয়েটার বরটার কথা একটু ভাবুন। তার সম্পর্কে আমাদের অনুভূতি কী হওয়া উচিত? বরের প্রতি মেয়েটার ভালোবাসা ফুরিয়ে গিয়েছিল যদি একটা যুক্তি হয়, তাহলে মেয়েটার প্রতিও দ্বিতীয় লোকটার ভালোবাসা ফুরিয়ে যাওয়া একটা যুক্তি হতে পারে। তাই না?



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি কিন্ত এই কথাই বলছি ....মেয়েটা মরে গিয়ে সবার সহানুভূতি পাচ্ছে (ঘটনাটা দুঃখজনকতো বটেই), বেচেঁ থাকতে সে কিন্ত এরম ব্যবহার করেছে ওর বরের সাথে...বেচারা বর মরেনি বলে আমরা তার কথা জানতে পারলাম না
- মেঘলা

জি.এম.তানিম এর ছবি

আমার মনে হয়েছে মেঘলা সেই কথাই বলেছে। মানে আপনাদের দু'জনের কথাই আমার কাছে একই অর্থের মনে হয়েছে। নাকি বুঝতে ভুল করলাম?
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি ভাবি....মেয়েটা তার বরকে ছেড়ে আর একজনকে ভালোবেসেছিল, হয়তো ভালোবাসা ফুরিয়ে গিয়েছিল। আজ তার জীবনে এক ই ঘটনা ঘটেছে, আমরা ওর জন্য কষ্ট পাচ্ছি...২য় লোকটিকে ঘৃণা করছি্‌....ও মরে গেলো বলে? কেউ কেউ বেঁচে থেকেও মরে প্রতিদিন আর যার জন্য এটা হয় তার কথা কেউ জানতেও পারে না

- মেঘলা

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

ওহ! হুম... অন্যরকম। আর ক্যাচাল সব। আধুনিক ধাতে। :|
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

সায়ন এর ছবি

গল্পটা আজকে আবার 'রহস্য' পত্রিকায় পড়লাম।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

মানে কি রহস্য পত্রিকা কি হিমুর গল্প মেরে দিয়েছে নাকি হিমু গল্পটা রহস্য পত্রিকায় প্রকাশ করেছে?

হিমু এর ছবি

আমিই পাঠিয়েছি।

সায়ন এর ছবি

হাসি

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ওহ সরি। ঘর পোড়া গরু তো, সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ভয় লাগে। হাসি

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

স্ক্যান করে বা ছবি তুলে পাঠাতে পারবেন? udvranto এট জিমেইল।

স্যাম এর ছবি

চলুক চলুক

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হিমু ভাই,
ম্যাগনাম ওপাস ও অন্যান্য কি আউট অফ প্রিন্ট?

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

হিমু এর ছবি

হাঁ। শুধু বই-ই না, প্রকাশকও আউট অফ প্রিন্ট। প্রতি সপ্তায় সে এসে আমাকে কুফা ডেকে ইনিয়েবিনিয়ে কান্নাকাটি করে, বলে আমার জন্যেই নাকি তার আজ এই হাল।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

ইয়ে, মানে...

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।