থুথু দিন, বিশ্ববেহায়ার ফুলে

নীড় সন্ধানী এর ছবি
লিখেছেন নীড় সন্ধানী (তারিখ: মঙ্গল, ১৪/০২/২০১২ - ১২:৫১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আগুন ঝরানো ফাগুন দিন পেরিয়ে আজ নাকি ভালোবাসা দিবস!! প্রিয়জনের সাথে ফুল প্রেম মিষ্টি উপহার বিনিময়ের মধুর সময়!! শুধু কি মধু? তেতো কিছু নেই? আছে। সেই তেতো কথা বলি। ১৯৮৩ সালের এই দিনে লেজেহোমো এরশাদের টিয়ার গ্যাস-রাইফেল-বন্দুকের ভালোবাসায় রক্তাক্ত হয়েছিল ঢাকার রাজপথ। বলি হয়েছিল কমসে এক ডজন প্রাণ।

"১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী মিছিল করে স্মারকলিপি পেশ করতে সচিবালয়ের দিকে যায়। মিছিলটি যখন হাইকোর্ট এলাকায় পৌঁছেছে তখন মিছিলের ওপর অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে পুলিশ বাহিনী। নিরস্ত্র ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর পুলিশ লাঠি, টিয়ারগ্যাস, জল কামান ব্যবহার করেই ক্ষান্ত হয়নি, গুলিও চালায়। গোটা এলাকা রণক্ষেত্রে রূপান্তরিত হয়। একসময় ছাত্ররা আশ্রয় নেয় শিশু একাডেমীতে। সেখানে তখন শিশুদের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছিলো। পুলিশ সেখানেও ঢুকে যায় অস্ত্রহাতে। কোমলমতি শিশুরাও সেদিন রক্ষা পায়নি এরশাদের পেটোয়া বাহিনীর হাত থেকে। প্রায় সারাদিনব্যাপী এই অসম সংঘর্ষে জাফর, জয়নাল, দীপালী সাহা, আইয়ুব, ফারুক, কাঞ্চন প্রমুখ নিহত হন। সব মিলিয়ে ডজনের মতো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।"

সেই কবিলুল বিশ্ববেহায়া হোমো এরশাদ এখনো জীবিত। প্রেম ভালোবাসায় কতোটা সক্রিয় না জানলেও রাজনীতির এক্কা দোক্কার কোলে চড়ে সক্রিয় আছে, ভালো আছে, সুখে আছে বলে জানি। সেই জানাটা বড় লজ্জার।

তবে এরশাদকে নিয়ে যারা নীতিহীন রাজনৈতিক ঐক্য গড়েছে তাদের লজ্জা নেই। যারা একসময় এরশাদকে থুথু দিয়েছিল তারাই গত বিশ বছরে এরশাদের সাথে একই মঞ্চে গলাগলি করেছে, করছে, করবে।

কেবল আমাদেরই লজ্জা। জাফর জয়নাল আমাদের দিকে তাকয়ে বিদ্রুপের হাসি হাসছে। আমাদের প্রতিশোধ নেয়া হয়নি। তাই আমরা সকল প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রসমাজ যুগে যুগে এরশাদকে থুথু দিয়ে আপ্যায়ন করে যাই।

ভালোবাসার দিনে গর্বিত প্রেমিক এরশাদের ফুল নেবার মতো কোন নারী অবশিষ্ট আছে কি? যদি থেকে থাকেন- হে অজানা অদেখা নারী, একটি আবেদন শুনুন। আপনি এরশাদের ফুল নিয়ে তাতে অন্ততঃ এক দলা থুথুতে ভরিয়ে দিন টবে সাজাবার আগে। ওই সামান্য ঘেন্নাটুকুতেও জাফর, জয়নাল, দীপালী সাহা সহ এরশাদের পেটোয়া বাহিনীর হাতে নিহত আমাদের সকল পূর্বসূরী ছাত্রদের আত্মা খানিকটা শান্তি পাবে।


মন্তব্য

প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

সেইসব অকালপ্রয়াত শহীদ ছাত্র=ছাত্রীদের প্রতি শ্রদ্ধা

চলুক

লাবণ্যপ্রভা এর ছবি

চলুক

শাব্দিক এর ছবি

শ্রদ্ধা

achena এর ছবি

চলুক

তারেক অণু এর ছবি
অন্ত আফ্রাদ এর ছবি

চলুক

তাসনীম এর ছবি

১৪ ই ফেব্রুয়ারির পরের দিনের ইত্তেফাক রিপোর্ট। স্মৃতির শহর লেখার সময়ে গুগল করে বের করেছিলাম। তখন সেন্সরশিপ ছিল প্রবল।

গতকাল (সোমবার) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ সরকার এক প্রেসনোটে ঢাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গের লক্ষ্যে পরিচালিত ক্রমবর্ধমান ও পরিকল্পিত ছাত্র গোলযোগ বন্ধের উদ্দেশ্যে কতিপয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ঘোষণা করিয়াছেন। প্রেসনোটে বলা হয়, এই ছাত্র গোলযোগ শান্তিপ্রিয় জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করিতেছিল। ঢাকায় ছাত্রদের একদিনের উস্কানিমূলক গোলযোগের প্রেক্ষিতে সরকার নিম্নোক্ত ব্যবস্থাবলী ঘোষণা করিয়াছেন:

(১) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হইয়াছে। এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হইবে। আজ (মঙ্গলবার) সকাল নয়টার মধ্যে ছাত্রদের সকল আবাসিক হল ত্যাগ করিতে হইবে।

(২) সভা, শোভাযাত্রা, সমাবেশ ও ধর্মঘট নিষিদ্ধ ঘোষণা সংক্রান্ত বিধিসমূহ কঠোরভাবে প্রয়োগ হইবে।

(৩) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সন্ধ্যা ৬টা হইতে ভোর ৫টা পর্যন্ত এবং মেট্রোপলিটন ঢাকার অবশিষ্ট এলাকায় রাত্রি ১০টা হইতে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত সান্ধ্য আইন বলবৎ থাকিবে।

ঘোষণায় বাংলাদেশ সচিবালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকায় গোলযোগে পর্যবসিত ঘটনাবলীর উল্লেখ করা হয়। ১৪টি রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনসমূহের মোর্চা তথাকথিত ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ঘোষণা কয়িয়াছিল যে, তাহারা সরকারী নীতির প্রতিবাদে সচিবালয় অবরোধ করিবে।

সকাল ১১টায় তাহার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সমবেত হয় এবং বক্তারা সামরিক আইন ভঙ্গ করিয়া ছাত্রদেরকে আইন নিজের হাতে তুলিয়া লওয়ার আহ্বান জানাইয়া উত্তেজনাপূর্ণ বক্তৃতা দেয়। ছাত্রনেতা নামধারী এই সকল পেশাদার উস্কানিদাতাদের উস্কানিতে ছাত্ররা একটি শোভাযাত্রা বাহির করে, যা কিনা সামরিক আইনে নিষিদ্ধ। সরকারের বিরুদ্ধে ধ্বনি দিতে দিতে তাহারা একযোগে সচিবালয়ের দিকে অগ্রসর হইতে থাকে এবং পুলিশ পুরাতন হাইকোর্টের কার্জন হল সংযোগস্থলে তাহাদিগকে থামাইয়া দেয়। অতঃপর উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তিরা কর্তব্যরত পুলিশের প্রতি ব্যাপকভাবে ইট নিক্ষেপ করিতে শুরু করে এবং পুলিশ কর্ডন ভাঙ্গার চেষ্টা করে।

সংখ্যাগত কারণে কোণঠাসা হইয়া শুধুমাত্র লাঠি ও বেতের ঢাল সজ্জিত পুলিশ বিপদগ্রস্ত হয় এবং জনতাকে ছত্রভঙ্গ করিবার জন্য হোসপাইপের সাহায্যে পানি নিক্ষেপ করে। উহা ব্যর্থ হইলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করিয়া ছত্রভঙ্গ করিয়া দেয়।

সরকারী প্রেসনোট হতো চূড়ান্ত মিথ্যাচার। আমার মেজভাই বের করেছিলেন - প্রেসনোটে যত ইনিয়ে বিনিয়ে বলা কথা থাকবে, পুলিশের ধৈর্য্যের কথা বলা থাকবে - আন্দোলনের পরিমাণ নাকি ততই বড় থাকে। সন্ধ্যায় বিবিসির খবর শোনা ছাড়া আমাদের উপায় ছিল না। তবে ওই দিন আম্মা শিক্ষাভবনে কর্মরত ছিলেন, ঘটনা নিজের চোখেই দেখেছেন।

এই সব বর্বরতা দেখেই আমি এবং আমার প্রজন্মের সবাই বড় হয়েছে।

ভালোবাসা দিবসে এরশাদের ফুল নিতে বা শয্যাসঙ্গীনি হওয়ার মতো নারীর অভাব নেই। তার পয়সার অভাব নেই। আর আমাদেরও আত্মসম্মান নেই। আমরা কারো শাস্তিতে বিশ্বাস করি না। আমরা ৭১ এর ঘাতকদেরও শাস্তি দিতে পারি নি। ক্ষমতার সমীকরণে এই শুয়োরের বাচ্চা এরশাদ এখন গদির কাছাকাছি। বেজন্মারা সবসময়েই ক্ষমতার কাছেই থাকে। আর আমরা এমনই এক জাতি, কোনো নিপীড়কদের শাস্তি দিতে পারি নি। না পেরেছি ৭১ এর ঘাতকদের, না পেরেছি কোনো স্বৈরশাসককে। আমরা সুবিচার কিভাবে প্রত্যাশা করি?

এরশাদের জন্য রইল একদলা থুথু।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

অরিত্র অরিত্র এর ছবি

চলুক

দ্যা রিডার এর ছবি

মন খারাপ

পরিবর্তনশীল এর ছবি

চলুক

ধূসর জলছবি এর ছবি

শ্রদ্ধা

ফাহিম হাসান এর ছবি

বিশ্ববেহায়াকে থুতু আর ঘৃণা

নিটোল এর ছবি

চলুক

_________________
[খোমাখাতা]

কাজি মামুন (অতিথি লেখক) এর ছবি

চলুক

চরম উদাস এর ছবি

ইয়াক থু

তাপস শর্মা এর ছবি
ধ্রুবনীল এর ছবি

চলুক

ফয়সাল এর ছবি

দেখে ভালো লাগলো যে আমরা সবাই ইতিহাসকে ভুলে যাইনি।
তথাকথিত ভ্যালেন্টাইন দিবসে ( যা বিদেশী সংস্কৃতি থেকে আমদানীকৃত ) কি
ঘটেছিল তা মনে করিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।