১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি
লিখেছেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর (তারিখ: রবি, ১৩/০২/২০১১ - ৩:৩৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

"আমি লেফটেন্যান্ট জেনারেল হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদ সর্বশক্তিমান আল্লাহর সাহায্য ও করুণায় এবং আমাদের মহান দেশপ্রেমিক জনগণের দোয়ায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসাবে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ বুধবার থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সকল ও পূর্ণ ক্ষমতা গ্রহণ করছি এবং ঘোষণা করছি যে গোটা বাংলাদেশ অবিলম্বে সামরিক আইনের আওতায় আসবে। প্রধাণ সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে আমি বাংলাদেশের সকল সশস্ত্র বাহিনীর পূর্ণ ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করছি।"

সেনাপ্রধানরা প্রায়শই ভাবেন তিনি ছাড়া আর কেউ বাংলাদেশটাকে ঠিকঠাক চালাতে পারবেন না, এরশাদও এরকম হাজারটা ফিরিস্তি দিয়ে ২৪ মার্চ '৮২ তারিখে গোটা দেশটা দখল করে নিলো। শুরু হলো স্বৈরশাসন।

শিক্ষাই যে জাতির মেরুদন্ড, এটা এরশাদ জানতেন। জাতির মেরুদন্ড ভাঙার জন্য ক্ষমতা গ্রহণ করে এরশাদ প্রথমেই দায়িত্ব নেন শিক্ষাঙ্গনকে কলুষিত করার। ১৬ জুলাই '৮২, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সদস্যদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার সময় তিনি জানান তার সরকার একটি জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করবে। যা দেশের শিক্ষার উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ বংশধরদের চরিত্র গড়ে তোলার জন্য অপরিহার্য। সেই সভাতেই তিনি শিক্ষার মানোন্নয়নে নিজে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রস্তাব করেন, এবং এর কিছুদিন পরেই তিনি এই সংগঠনের চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত হন! শিক্ষক না হয়ে পৃথিবীর আর কেউ কোনোদিন শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের চেয়ারম্যান হতে পেরেছেন কী না আমার জানা নাই।

যখন সারাদেশে প্রকাশ্য রাজনীতি নিষিদ্ধ, সামরিক আইনের সমালোচনা মানেই সাত বছরের কারাদন্ড, তখন এরশাদের বিরুদ্ধে প্রথম রাস্তায় নামে ছাত্ররাই। প্রথম মিছিল বের করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী।

এদিকে এরশাদের সুযোগ্য শিক্ষামন্ত্রী ড. মজিদ খান ২৩ সেপ্টেম্বর '৮২ তারিখে একটি নতুন শিক্ষানীতির প্রস্তাব পেশ করেন। প্রথম শ্রেণী থেকেই আরবি ও দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে ইংরেজি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করা হয়। আরেকটি বিতর্কিত বিষয় ছিলো উচ্চশিক্ষা। উচ্চশিক্ষা অর্জনের মাপকাঠি নির্ধারণ করা হয় মেধা অথবা পঞ্চাশ শতাংশ ব্যয়ভার বহনের ক্ষমতা!
শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা এই শিক্ষানীতিকে আইউব খানের শরীফ শিক্ষা কমিশন রিপোর্টের নবায়ন ভিন্ন সংস্করণ হিসেবে আখ্যা দেন।
সারাদেশের ছাত্র ও শিক্ষক সমাজ এই নীতির প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসেন। শুরু হয় মিছিল প্রতিবাদ।

৮২'র ৮ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের লাঠিপেটায় গুরুতর আহত হন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক নুরুল আমিন বেপারীসহ ছাত্র, কর্মচারী ও সাংবাদিক। গ্রেফতার করা হয় ৩০ জনকে। এর প্রতিবাদে পরদিন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালিত হয়, প্রতিবাদ মিছিল হয়। বন্ধ ঘোষণা করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

১৪ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় খুললে ১৪টি ছাত্র সংগঠন একযোগে আন্দোলন কর্মসূচী চালায়। ছাত্রদল আর ছাত্রশিবির পৃথক কর্মসূচী পালন করে। একদিকে প্রতিবাদ আন্দোলন আরেকদিনে দমন নিপীড়ন চলতে থাকে। ছাত্ররা ২৯ ডিসেম্বর দাবি দিবস ও ১১ জানুয়ারি সচিবালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি ঘোষণা করে।

কিন্তু এরশাদ তাতে একটুও না থেমে '৮৩র জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে দেশের ১৪২টি থানার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় বাধ্যতামূলক আরবি শিক্ষা শুরুর আদেশ দেয়। একই সঙ্গে ১১ জানুয়ারির কর্মসূচির বিরুদ্ধে কড়া প্রেসনোট হুমকি দেয়। কিন্তু তাতেও ছাত্ররা পিছপা না হলে এরশাদ ছাত্রদের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তাব দেয়। ছাত্ররা ৭ জানুয়ারি '৮৩র সেই প্রস্তাবিত বৈঠক প্রত্যাখ্যান করে।

ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ঘোষণা করে- "শিক্ষানীতিতে প্রাথমিক শিক্ষায় অতিরিক্ত দুইটি বিদেশী ভাষা বাধ্যতামূলক করিয়া মূলত বাংলা ভাষাকেই আঘাত করা হইয়াছে। শিক্ষা সংস্কারের নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাজীবনে এক অরাজক ও নৈরাজ্যজনক অবস্থার সৃষ্টি করা হইতেছে এবং শিক্ষাকে উচ্চশ্রেণীর ব্যয়বহুল বিনিয়োগ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চলিতেছে। ছাত্রসমাজের উপর চলিতেছে চাপ ও নিপীড়ন। ... ... ... ... ... ...। এই পরিস্থিতিতে সংগ্রাম পরিষদ শিক্ষা, গণতন্ত্র ও মৌল অধিকারসহ শোষণমুক্তির দাবি লইয়া একুশ পালনের আহ্বান জানায়।"

বিপরীতে সরকারী প্রেসনোটে বলা হয়- "গত নভেম্বর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যেসব গণবিরোধী ও সমাজবিরোধী ঘটনা ঘটছে সরকার তা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করে আসছেন। ... ... ... ... ...। সরকার এসব বিপথগামী ব্যক্তিদের ধ্বংসাত্মক পথ পরিত্যাগ করার জন্য হুঁশিয়ার করে দিচ্ছেন। অন্যথায় তাদের গুরুতর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে।"

১১ জানুয়ারি প্রস্তাবিত তারিখে হাজার হাজার ছাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবেশে সমবেত হয়। অপরদিকে অস্ত্রসজ্জিত প্রচুর দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় ও সচিবালয়ের চারপাশে। ব্যাপক সংঘর্ষ এড়াতে ছাত্ররা সচিবালয়ে না গিয়ে শহীদ মিনারে গিয়ে আন্দোলন তীব্রতর করার শপথ গ্রহণ করেন। একুশে ফেব্রুয়ারিকে ঘিরে আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করে। এরশাদ এবার একুশের চেতনায় আঘাত হানতে শুরু করে।

জানুয়ারির মাঝামাঝিতে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদাররেসিন আয়োজিত আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে এরশাদ বলেন: “বাংলাদেশ মুসলমানদের দেশ, বাংলাদেশকে ইসলামী রাষ্ট্র করার জন্যই আমাদের সংগ্রাম। ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে তৈরি হয়েছিলো শহীদ মিনার। কিন্তু আমরা দেখি সেখানে আল্পনা আঁকা হয়। এ কাজ ইসলাম বিরোধী। শহীদ আবুল বরকত আল্লাহর বান্দা, তার জন্য আল্পনা কেন, কোরানখানি হবে। গত ২৪ মার্চ আমি দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছি। কিন্তু সেদিন আমি আল্লাহর কাছে হাত তুলে কেঁদেছি, আমার জীবনে একটা অসম্পূর্ণতা রয়ে গেছে। ২৬ বছরের বিবাহিত জীবনের পরও আমার কোন সন্তান নেই। গাউসুল আজমের সেই চাদর হাতে নিয়ে আল্লাহর কাছে আমি কেঁদেছি, একটি সন্তান চেয়েছি, আল্লাহ আমার কান্না শুনেছেন। আমাদের সন্তান হবে ইনশাল্লাহ।“

এরই মধ্যে এরশাদ ফরিদপুরের আটরশির পীর হজরত মওলানা শাহ্ সুফী হাশমতউল্লাহ সাহেবের কাছে মুরিদ হন। চারজন জেনারেলকে নিয়ে হেলিকপ্টারে করে পীরের ছবক নিয়ে আসেন। বাংলাদেশকে ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত করার ব্যাপারে পীর সাহেব পরামর্শ দিয়েছেন।

এদিকে এরশাদ ও তার দোসর মজিদ খান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্টেডিয়াম উদ্বোধন করতে গেলে ছাত্ররা তা বর্জন করে। বর্জন প্রতিবাদের মুখে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন উৎসব বাতিল হয়। এদিকে চলতে থাকে ছাত্রনেতাদের গ্রেফতার অভিযান। ছাত্রলীগ [মু-হা] সাহিত্য সম্পাদক মোহন রায়হান, ছাত্র ইউনিয়ন নেতা ও ইকসুর সহ সভাপতি খন্দকার মোহাম্মদ ফারুক এবং ছাত্রলীগ [মু-হা]র কেন্দ্রীয় নেতা আতাউল করিম ফারুক ও খোন্দকার আবদুর রহীমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এই সময়ে ইসলামী ছাত্র শিবিরের সভাপতি সাইফুল আলম খান মিলন ও সাধারণ সম্পাদক তাসনীম আলম এক যুক্ত বিবৃতিতে ঘোষিত শিক্ষানীতিকে "আদর্শহীন" উল্লেখ করে শিক্ষানীতির আদর্শ হিসেবে দেশের শতকরা ৮৫ জন মানুষের আদর্শ ইসলামকে গ্রহণ করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানায়!

১১ জানুয়ারির সচিবালয়ে অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি রদবদল কেন করা হলো এই নিয়ে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদে অসন্তোষ তৈরি হয়। প্রতিবাদে ছাত্ররা ডাকসু অফিস ভাংচুর করে। তবু ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ নেতৃবৃন্দ শান্তিপূর্ণ পথেই দাবি আদায়ের সংগ্রাম এগিয়ে নেওয়ার পথে অবিচল থাকেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দেন।

৬ ফেব্রুয়ারি ইসলামী ছাত্র শিবিরের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবেশে মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতার মূল্যবোধ বিরোধী আপত্তিকর বক্তব্য দেওয়া হয়। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এর বিরোধিতা করলে সংঘর্ষ হয়, আহত হয় অর্ধশত ছাত্র। এই ঘটনার খবর সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশেই ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও শিবিরের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

এদিকে ছাত্রদের কঠোর মনোভাবে এরশাদ কিছুটা বিচলিত হয়, ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রস্তাবিত শিক্ষানীতির ব্যাপারে একটি জনমত যাচাই কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়।

কিন্তু ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আন্দোলন অব্যাহত রাখে। ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী মিছিলসহ স্মারকলিপি পেশ করতে সচিবালয়ের দিকে ধেয়ে যায়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও এই আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করে এবং আন্দোলনে অংশ নেয়।

মিছিলটি যখন হাইকোর্ট এলাকায় পৌঁছেছে তখন মিছিলের ওপর পুলিশ ঝাঁপিয়ে পড়ে। আগে থেকেই বিপুল সংখ্যক পুলিশ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় অঞ্চল ঘিরে রাখা হয়েছিলো। নিরস্ত্র ছাত্র ছাত্রীদের ওপর পুলিশ লাঠি, টিয়ারগ্যাস, জল কামান ব্যবহার করেই ক্ষান্ত হয়নি, গুলিও চালায়। গোটা এলাকা রণক্ষেত্রে রূপান্তরিত হয়। একসময় ছাত্ররা আশ্রয় নেয় শিশু একাডেমীতে। সেখানে তখন শিশুদের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছিলো। পুলিশ সেখানেও ঢুকে যায় অস্ত্রহাতে। কোমলমতি শিশুরাও সেদিন রক্ষা পায়নি এরশাদের পেটোয়া বাহিনীর হাত থেকে।

প্রায় সারাদিনব্যাপী এই অসম সংঘর্ষে জাফর, জয়নাল, দীপালী সাহা, আইয়ুব, ফারুক, কাঞ্চন প্রমুখ নিহত হন। দশ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়, কিন্তু সরকারি প্রেসনোটে দাবী করা হয় ১ জনের মৃত্যুর কথা। আর আহতের সংখ্যা অগুনতি। গ্রেফতারের সংখ্যাও অগুনতি।

সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে ও ঢাকা শহরে কারফিউ জারি করে।

এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে পরদিন, অর্থাৎ ১৫ ফেব্রুয়ারি ছাত্রজনতা রাস্তায় নেমে আসে। সংঘর্ষ হয় মিরপুর, আমতলী, তেজগাঁ, বাহাদুরশাহ পার্ক, ইংলিশ রোড, মতিঝিল এবং অবশ্যই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। শুধু ঢাকাতেই না, আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। পুলিশ গুলি চালায়। চট্টগ্রামে নিহত হন মোজাম্মেলসহ আরো কয়েকজন। যদিও এদিনও সরকারী প্রেসনোটে নিহতের সংখ্যা ১জন দাবী করা হয়। ভীত সন্ত্রস্ত এরশাদ ঢাকা ও চট্টগ্রামের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করে। জাহাঙ্গীরনগর ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বানে সারাদেশে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

এসব খবর যাতে সারাদেশে ছড়াতে না পারে, সেজন্য সংবাদপত্রগুলোতে আরো কড়াকড়িভাবে সেন্সরশীপ আরোপ করা হয়।
১৪ থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারির আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সারাদেশে প্রচুর গ্রেফতার অভিযান চলে। শেখ হাসিনা, মতিয়া চৌধুরী, সাহারা খাতুন, মেনন, জলিল, অলি, তোফায়েল, মান্নান, সামাদ আজাদ থেকে শুরু করে শীর্ষস্থানীয় প্রচুর ছাত্রনেতাকে গ্রেফতার করে এরশাদ বাহিনী। তবু আন্দোলনকে দমাতে পারেনি।
ব্যাপক ছাত্রগণআন্দোলনের মুখে ১৭ ফেব্রুয়ারি তারিখে এরশাদ বলতে বাধ্য হয় যে- "জনগণের রায় ছাড়া শিক্ষা সম্পর্কে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না।" এক সরকারি প্রেসনোটে বলা হয় গ্রেফতারকৃত ১২২১ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

সেবছর সারাদেশে আক্ষরিক অর্থেই শোকাবহ একুশে ফেব্রুয়ারি পালিত হয়। বাংলা ভাষা ও শিক্ষার দাবীতে সারাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়। কিন্তু রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে একুশের কর্মসূচি পালন করা যায়নি।

মজিদ খান প্রস্তাবিত স্বৈরশাসক এরশাদের বিতর্কিত শিক্ষানীতির প্রতিবাদে সামরিক নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে, লাঠি গুলি টিয়ার গ্যাসকে পরোয়া না করে, গ্রেফতার নির্যাতন হুমকি হত্যার তোয়াক্কা না করে সেই যে মানুষ রাস্তায় নেমেছিলো '৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে, সেখান থেকেই মূলত এরশাদ বিরোধী গণআন্দোলনের সূত্রপাত। '৮৩র ১৪ ফেব্রুয়ারি তারিখেই এদেশে সামরিক শাসনের ভীত কাঁপিয়ে দেয় সাধারণ নিরস্ত্র ছাত্ররা। ধীরে ধীরে যা সার্বিক গণআন্দোলনে রূপ লাভ করে। এবং সবশেষে ১৯৯০ সালে স্বৈরশাসক এরশাদের পতন ঘটে।

বস্তুতপক্ষে মুক্তিযুদ্ধের পর মধ্য ফেব্রুয়ারির এই আন্দোলনই বাংলাদেশের প্রথম গণ আন্দোলন। এবং যা বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত থামেনি।

১৪ ফেব্রুয়ারি তাই যেন তেন কোনো দিবস না...

এই অবিস্মরণীয় বিপ্লব এবং বিজয়কে বহুবছর পরে ভালোবাসা দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে এগিয়ে আসেন শফিক রেহমান নামক একজন সাংবাদিক। লাল গোলাপ হাতে তিনি বিপ্লব ভুলে ভালোবাসার জয়গানে দেশবাসীকে মাতোয়ারা হতে আহ্বান জানায়। দেশে ঢুকে যায় আর্চিস হলমার্ক। আমরা জাফর জয়নাল দিপালী সাহাদের ভুলে ভালোবাসা দিবস পালনে মেতে উঠি!

কিন্তু রক্তের ইতিহাস গোলাপ দিয়ে মোছা যায় না, যাবে না।

তথ্যসূত্র:
গনআন্দোলন ১৯৮২-৯০, সৈয়দ আবুল মকসুদ
লেখকের রোজনামচায় চার দশকের রাজনীতি পরিক্রমা প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ ১৯৫৩-৯৩, আব্দুল হক
দৈনিক ইত্তেফাক

ছবিসূত্র:
প্রগতির পরিব্রাজক দল


মন্তব্য

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা শ্রদ্ধা

ঘৃণা স্বৈরশাসক এরশাদের জন্য। এরশাদ তোর হাতে রক্ত!

এই অসাধারণ লেখাটির জন্য নজুভাই আপনাকে সালাম গুরু গুরু

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এরশাদ তোর হাতে রক্ত!

তার তো চোখ নাই, দেখবো কেমনে?

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

হাসিব এর ছবি

বেহায়া শফিক রেহমানের তৈরী করা হুজুগ কর্পোরেট সাপোর্টে এখন ভ্যালেন্টাইন ডে হিসেবে গোল্ডফিশ মেমরির জনগণের উদযাপনের দিন হিসেবে তৈরী করে ফেলেছে। ইতিহাস ঢেকে দেয়া এইসব তৎপরতার প্রতিরোধ জরুরী।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

তৎপরতাগুলা দেখেন, সব কাতার বান্ধা, একই স্টাইল...

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

হিমু এর ছবি

এরশাদকে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের জন্য বিচারের সম্মুখীন করা হোক।

হাসিব এর ছবি

আওয়ামী লীগের ক্ষমতা ভাগাভাগির হিসেবনিকেশে এই দাবি কোনদিন আলোর মুখ দেখবে না।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

সাথে গোলাপ রেহমান ছাগলটাকেও বেঁধে কাঁঠালপাতা চিবাতে দেয়া গোক। ঘোড়ামুখোর সাথে একই খোঁয়াড়ে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আজকে আবিষ্কার করলাম রেহমানের সাথে ছন্দে গেলমান খুব যায় চোখ টিপি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এরশাদের যে পরিমাণ অপরাধ... শুধু তার বিচার করার জন্যই আলাদা একটা আদালত গড়তে হবে। অথচ সে এখন দাবী করে সেই নাকি বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করছে!

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নাশতারান এর ছবি

আমাদের অনেকের জন্ম সেই সময়ের কাছাকাছি। স্কুলে পাঠ্যপুস্তকে এ ইতিহাস থাকা উচিত ছিলো, কিন্তু আমরা পাই নি। প্রেম করার বয়স হতেই আমরা জেনেছি এটা ভালোবাসা দিবস। এখন মনে হচ্ছে মেহেরজান ভ্যালেন্টাইনস ডে উপলক্ষ্যে মুক্তি দিলেই জুৎসই হতো। ভালোবাসা দিবস তো এক ডিকনস্ট্রাকশনই বটে!

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

বাঙালি বড্ড ক্যাচালপ্রিয়, তারা খালি আন্দোলন সংগ্রাম করে, যুদ্ধ টুদ্ধ করে... এদের হৃদয়ে প্রেম ভালুবাসা নাই... তাই নানা সময়ে ভালোবাসার পয়গাম হাতে নাজেল হন তিনারা...

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

দুঃখজনক (এবং লজ্জাজনক) হলেও সত্য ‌‌যে, এই গণ-আন্দোলন বিষয়ে প্রথম জানতে পারি ২০০৭ এর ফেব্রুয়ারিতে। সেদিন কলাভবনের চত্ত্বরে সেঁটে থাকা পোস্টার গুলি (সম্ভবতঃ ছাত্র-মৈত্রী/ছাত্র ফ্রন্টের) দেখে এই বিপ্লব নিয়ে জানতে আগ্রহী হই। ছবি আর সরল ভাষায় সত‌্য কথা গুলো তুলে ধরার জন‌্য নজু ভাই কে ধন্যবাদ। ৮৩'র এই আন্দোলন বা ৯০'র গণ-আন্দোলনের কথা আমাদের টেক্সট-গুলিতে আছে কি? কিংবা জাতীয় যাদুঘরে? জাতির পিতা আর স্বাধীনতার ঘোষক নির্ধারণ নিয়ে বছর-বছর ইতিহাস নতুন করে লিখা হচ্ছে, গণতন্ত্র পুণঃরুদ্ধারের ইতিহাস কে লিখবে? এরশাদের মতো উকুনদের যে পিষে মেরে ফেলা হয় নাই, সেটা বাঙ্গালীর মহানুভবতা। এ মহানুভবতার জন্য শেখ মুজিব প্রাণ দিয়েছেন। আর আমরা রুবাইয়াতদের কাছে আজো রক্ত বিকিয়ে চলেছি।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

সব ইতিহাসই লেখা হবে। লিখবে নতুন প্রজন্ম, যাদের আছে নির্মোহ পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অনিকেত এর ছবি

বহুদিন এখানে আসা হয়নি। আজ ফেসবুকে লেখাটার লিঙ্ক দেখে পড়তে আসলাম।
৮২-৮৩'র অনেক ঘটনাই আমার জানা ছিল না। নজরুল ভাইয়ের এই মূল্যবান লেখাটা পড়ে অনেক পেছনের খবর জানতে পারলাম।

জানতে পারলাম আরো একটা পুরোনো সত্য---এদেশের শ্রেষ্ঠতম অর্জনগুলো গোলাপ ফুল বিনিময়ে আসে নি। প্রতিটিবার রক্তের দামে কিনে নিতে হয়েছে আমাদের মৌলিক অধিকারগুলো। আর একবার জানা গেল, এদেশের মানুষের মনের খুব গভীরে প্রোথিত হয়ে আছে ৫২ আর ৭১। কোন ভুঁইফোঁড় পরিচালক নির্দেশিত রুপালী পর্দায় গোলাপী আঁকিবুঁকি এই গভীর সত্যকে ভুলিয়ে দিতে পারবে না।

মেহেরজান, আমি বলব না, আপনি হেরে যান---বরং বলব, আপনি হেরে গেছেন!!

নজরুল ভাইকে এই লেখাটার জন্যে সাত কোটি তারার ফুল!
গুরু গুরু

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এদেশের শ্রেষ্ঠতম অর্জনগুলো গোলাপ ফুল বিনিময়ে আসে নি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

স্বাধীন এর ছবি

শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা শ্রদ্ধা

নজু ভাইকে লেখার জন্য গুরু গুরু

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ধন্যবাদ স্বাধীন ভাই

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

দ্রোহী এর ছবি

গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু

অসাধারণ এই লেখাটির জন্য নজু ভাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ধন্যবাদ দ্রোহীদা

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে টিভিগুলো রোমান্টিক নাটক/অনুষ্ঠান দিয়ে ভরায় রাখে। গত কয়েক বছরে খবরেও (এন টিভি, চ্যানেল আই) কোন উল্লেখ হয়েছে বলে মনে পড়ছেনা। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এই লেখাটার জন্য।
-রু

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আপনাকেও ধন্যবাদ পড়ার জন্য

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি শ্রদ্ধা

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ধন্যবাদ মানিক ভাই

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু

-অতীত

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ইয়ে, মানে...

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

খুব সম্ভব ১৮ ফেব্রুয়ারীর কালো ইতিহাস নিয়ে এর চেয়ে তথ্যবহুল লেখা আর লেখা হয়নি।

প্রিয়তে। /

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

১৮ না ১৪ ফেব্রুয়ারি হাসি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

বাংলা চারে ভুল করে ফেলসি। এখন তো আর সংশোধনেরও উপায় নাই।

আর 'গণআন্দোলন ৮২-৯০' বইটা কোন প্রকাশনীর একটু বলবেন ??

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

মুক্তধারা

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নৈষাদ এর ছবি

সেই সময়ের একটা অসাধারণ বর্ণনা। বিস্তারিত লেখা হয়না এসব নিয়ে। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এখন থেকে লেখা হবে বিস্তারিত
আপনাকে ধন্যবাদ নৈষাদ দা

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

কুঙ্গ থাঙ এর ছবি

এই লেখাটির অপেক্ষায় ছিলাম, সবাই ভুলে যেতে বসেছিল। টিভি চ্যানেলগুলোতে চব্বিশ ঘন্টা ভালবাসাবাসিতে ভরে ফেলা হয় কিন্তু, ভুলেও উল্লেখ করা হয় না জাতির গুরুত্বপূর্ন এই অর্জনের কথা।... অসাধারন লেখাটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

ভ্যালেন্টাইনস ডে নামক গণবিরোধী, সাম্রাজ্যবাদী সংস্কৃতি প্রত্যাখান করি!
বিপরীতে ১৪ ফেব্রুয়ারি “স্বৈরাচার প্রতিরোধ” দিবস হিসাবে পালন করি!
স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই ও মুক্তির চেতনাকে উঁচুতে তুলে ধরি।
স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য নির্মাণ করি নতুন সংস্কৃতি!
ক র্ম সূ চী:
আলোচনা সভা
গণসঙ্গীত
কবিতা পাঠ
নাটক

স্থান: বটতলা , ঢাবি । সময়: সকাল ১১.০০ টা ।
প্রগতির পরিব্রাজক দল

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

দোহাই তোদের একটুকু চুপ কর, ভালোবাসিবারে মোরে দে অবসর চোখ টিপি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

পরের বছর, ১৯৮৪ সালের ১৪ এপ্রিল এরশাদ "জাতীয় ছাত্র পরিষদ" গঠন করে ছাত্রনেতা কিনতে শুরু করে। ত্যাগী ছাত্রনেতাদের সুবিধাবাদের ঝাণ্ডাতলে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু হয়।

আর তার পরের বছর অর্থাৎ ১৯৮৫ সালের বসন্ত দিন ১৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় এরশাদ নিয়োজিত সন্ত্রাসীদের দ্বারা নিহত হন স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা, জাতীয় ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক রাউফুন বসুনিয়া। বসুনিয়া ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র।

ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের মিছিলে সেদিন নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন বসুনিয়া। মিছিলটি যখন মহসিন হল পার হয়ে মূল রাস্তায় উঠছে তখন এফ রহমান হল থেকে শুরু হয় গুলিবর্ষণ। মুহূর্তেই রাউফুন বসুনিয়ার রক্তে ভেসে যায় রাজপথ। ফাগুনের রাজপথ রাঙা হলো বসুনিয়ার রক্তে। এরশাদ গঠিত "নতুন বাংলা ছাত্র সমাজ" এর গুন্ডাবাহিনী সেদিন কেড়ে নিয়েছিলো রাউফুন বসুনিয়ার প্রাণ।

বসুনিয়া যে মিছিল নিয়ে যাচ্ছিলেন, সেই মিছিলেই ছিলেন তৎকালীন আরেক ছাত্রনেতা মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান, আমাদের সবার প্রিয় মুস্তাফিজ ভাই। খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন বসুনিয়ার মৃত্যু। তাঁর কাছ থেকেই এই ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা শুনেছি একাধিকবার। আজকেও অনুরোধ করলাম প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানে ঘটনাটি নিয়ে একটি পোস্ট দিতে, কিন্তু বসুনিয়ার কথা উঠলেই তিনি খুব আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়েন, তাই গুছিয়ে লিখতে পারেন না। মুস্তাফিজ ভাইকে তবু অনুরোধ করবো সেই সময়ের ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র নেতা, তাদের ডিগবাজীগুলো সম্পর্কে নিজস্ব অভিজ্ঞতাগুলো লিখে রাখতে কোনো এক সময়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বসুনিয়া তোড়ন আছে, আছে তাঁর আবক্ষ মূর্তি। এখনকার তরুণরা সেই তোড়নে ও মূর্তির গায়ে হেলান দিয়ে প্রেম করে ১৩ আর ১৪ ফেব্রুয়ারিসহ সারাবছর। কিন্তু কজন চেনে এই বসুনিয়াকে? বসুনিয়ার আবক্ষ মূর্তিটার একটা ছবির সন্ধানে গুগলালাম, কিন্তু হায় সেখানে শুধুই বক্ষমান সুন্দরীদের ছবি!

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

বাবুবাংলা এর ছবি

কালের কন্ঠে একটা প্রতিবেদনে রাউফুন বসুনিয়ার সমাধির ছবি পেয়ে কম্পিঊটারে সেভ করে রেখেছিলাম।

জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

মুস্তাফিজ এর ছবি

নজরুল ভাই আমি সেই ঘটনা লেখবো।

...........................
Every Picture Tells a Story

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

হাততালি (হাততালি) হাততালি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

হিমু এর ছবি

অপেক্ষায় থাকলাম মুস্তাফিজ ভাই।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

চলুক
মুস্তাফিজ ভাই, এটা লিখে রাখাটা প্রচণ্ড দরকার আমাদের জন্য, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনি যে লিখেছেন, তা তো অনেকেই জানেন না। তাই এখানে লিঙ্ক দিয়ে রাখলাম।

তোমার মৃত্যুতে পৃথিবীর তিনভাগ জল হয়ে গেছে অশ্রু, রাজপথ হয়েছে সাহসী মিছিল

(পাঠকদের বলছি, দু'টি পোস্ট পর পর না পড়লে মিস্কর্বেন কিন্তু!)

অতিথি লেখক এর ছবি

বসুনিয়ার আবক্ষ মূর্তিটার একটা ছবির সন্ধানে গুগলালাম, কিন্তু হায় সেখানে শুধুই বক্ষমান সুন্দরীদের ছবি!

নজরুল ভাই,
উইকিমিডিয়া কমন্সে বসুনিয়ার আবক্ষ মূর্তির ২টি ছবি রয়েছে। ছবিগুলো তুলেছেন রাগিব ভাই। একটা ছবি নিচে দিয়ে দিলাম।

মূল ছবিটি দেখতে এই লিংকে যান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থাপনা এবং ভাস্কর্যের আরও ছবির জন্য কমন্সের এই পাতাটি দেখতে পারেন।
সবশেষে এমন একটা লেখার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

--সাদাচোখ

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ সাদাচোখ...
রণদা সেদিন তুলেছে কিছু

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

এজাজ আলম এর ছবি

আমার লিখার ক্ষমতা নাই কিন্তু বুকে অনেক কথা তাই লিখতে পারিনা। নজরুল ইসলাম আপনি আমার অনেক না বলতে পারা কথা লিখে দিলেন । ভীষন ভাল লাগলো । ধন্যবাদ আপনাকে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এই যে আপনি লিখে ফেলেছেন দুটো বাক্য, এভাবেই লিখে ফেলুন। ধন্যবাদ আপনাকে

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

আজ স্বৈরাচার বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম শহীদ, সেই সময়ের বাকশাল সমর্থিত জাতীয় ছাত্রলীগ ঢাবি সাধারণ সম্পাদক রাউফুন বসুনিয়ার ২৬তম শাহাদাত দিবস। স্বশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করছি স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের এই সাহসী সৈনিককে। রাউফুন বসুনীয় স্মৃতি চিরজীবী হোক

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

বাবুবাংলা এর ছবি

ধন্যবাদ, রক্তাক্ত মধ্য ফেরুয়ারীর সেই স্মৃতিকে তুলে আনার জন্য।

নজরুল ভাই, জানেন কি মিছিলে ট্রাক তুলে দেয়ার ঘটনাটা কবে?
সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনের সময় ছাত্র মিছিলে ট্রাক তুলে পিষে মারার ঘটনা নিয়ে “লেফটেনেন্ট জেনারেল ট্রাক” নামে একটা কবিতা ছিল। লেখকের নাম মনে নেই।

“শিক্ষাভবন অভিমুখে সামরিক শাসন ভাঙ্গার প্রথম মিছিলে তুমি ছিলে
রক্তাক্ত ১৪ই ফেব্রুয়ারীর কাফেলায় তুমি ছিলে”
(বসুনিয়াকে নিয়ে কবিতার দুটো লাইন মনে আছে, আবৃত্তি শুনেছিলাম শিমুল মুস্তাফার কন্ঠে)

জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনের সময় ছাত্র মিছিলে ট্রাক তুলে পিষে মারার ঘটনা নিয়ে “লেফটেনেন্ট জেনারেল ট্রাক” নামে একটা কবিতা ছিল। লেখকের নাম মনে নেই।

লেখকের নাম ফরহাদ মজহার ।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

Chhanda  এর ছবি

যতদুর মনে পড়ে কবিতাটি মোহন রায়হান-এর।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ছাত্রদের মিছিলে ট্রাক তুলে দেওয়ার ঘটনাটি ঘটে ঠিক একবছর পরে, ১৯৮৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে। ট্রাক চাপায় শহীদ হন সেলিম এবং দেলোয়ার।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

হ । ১৯৮৪ সালে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন স্তিমিত করার কৌশল হিসেবে উপজেলা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন এরশাদ। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে ছাত্ররা উপজেলা নির্বাচনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে। ১৯৮৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি উপজেলা নির্বাচন বাতিলের দাবিতে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের একটি মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গুলিস্তান অভিমুখে যাওয়ার সময় পুলিশ মিছিলটিকে ট্রাক দিয়ে ধাওয়া করে। পুলিশের ট্রাক ছাত্রদের মিছিলের ওপর তুলে দিয়ে ট্রাকের তলায় পিষ্ট করে হত্যা করে সেলিম ও দেলোয়ারকে। ৮৩'র ১৪ ফেব্রুয়ারির পর মাত্র এক বছরের ব্যবধানে আবারও ছাত্রদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়। ছাত্র হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে তৎকালীন সময় কবি ফরহাদ মজহার 'লেফটেনান্ট জেনারেল ট্রাক' শিরোনামে একটি কবিতা লিখেন। কবিতা লেখার অপরাধে ফরহাদ মজহারকে গ্রেপ্তার করে সামরিক সরকার।[সুত্র]

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

অতিথি লেখক এর ছবি

ট্রাকের ঘটনায় মোট ৫ মারা গিয়েছিলেন না ?

মনমাঝি

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

২ জন। সেলিম আর দেলোয়ার।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

অদ্রোহ এর ছবি

আফসোস, আমরা এমন এক অভাগা প্রজন্ম, যারা ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ভালবাসার ছদ্ম মোড়ক পরিয়ে আরাধনা করে এসেছি, স্যাটেলাইট-পত্রিকায় ভালবাসার বেসাতিতে নিজেদের উজাড় করে দিয়েছি, অথচ আমাদের অগ্রজদের এই ত্যাগের কাহিনি আমাদের লোভাতুর নজর এড়িয়ে যায়...

নজু ভাই, লেখাটার জন্য অন্তরের ভেতর থেকে ধন্যবাদ জানবেন...

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ অদ্রোহ। আপনি তো আছেন, আপনার মতো আছে আরো অনেকে, আপনারাই ছড়িয়ে দেবেন এই ইতিহাস। ভালোবাসার বন্যায় অন্যায় ঢাকা যাবে না।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

দারুণ লেখা ভাই। আমি নিজেই কিছুদিন ধরে একটা লেখাতে ১৯৮৩ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারীর কিছু ডিটেইল যোগ করার জন্য খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম, ঐ মিছিলে ছিলেন এমন কয়েকজনের সাথে কথাও হয়েছে। আপনার এই লেখাটা অনেক তথ্য বহুল হয়েছে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

বিপ্লবী স্বপ্ন

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আপনার সেই লেখাটা পড়ার সুযোগ পাবো কোথায়?

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

নজরুল ভাই। অশেষ কৃতজ্ঞতা আপনার এই লেখাটার জন্যে। অনেক পুরোনো কথা মনে করিয়ে দিলো। যে সীমাহীন দুরাবস্থার ভিতরে কেটেছে আমাদের, সেই দুঃস্বপ্ন আবার খোঁচা দিয়ে গেলো।

স্বৈরাচার বিরোধী সব শহীদের জন্যে শ্রদ্ধা । বিশেষ করে মহারাজার কথা খুবই মনে পড়ে। পাশে দাড়িয়ে তার মৃত্যু দেখতে হয়েছিলো।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আপনার অভিজ্ঞতার কথাগুলো লিখে ফেলেন তাজ ভাই... পড়তে চাই

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

দিফিও-1 এর ছবি

উপরে দেখলাম একজন লজ্জিত হয়েছেন এই ভেবে যে, ২০০৭ এর আগে তিনি এই কথাগুলো জানতেননা। তাহলে আমি কী বলব ভেবে পাচ্ছিনা, আমি আজকের আগে এই কথাগুলো জানতামনা।

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, আর ৮৩-র সেইসব ভাই-বোনদের কথা স্মরণ করছি শ্রদ্ধাভরে। সুশিক্ষার মত মৌলিক অধিকারের জন্যও যে আমাদের রক্ত দিতে হয়েছে, এই চিন্তাটা আজকে বড় নাড়া দিয়ে গেল।

আপনার রেফারেন্সের বইগুলো পড়ার আগ্রহ হচ্ছে খুব।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ব্যাপার না, জানলেন তো, এখন সবাইকে জানান। বইগুলো পড়ে ফেলেন... প্রকাশনীর নামও তো দিয়ে দিলাম... এবিষয়ে আরো পড়াশোনা করতে চাইলে জানাবেন...

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখকের রোজনামচায় চার দশকের রাজনীতি পরিক্রমা প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ ১৯৫৩-৯৩, আব্দুল হক

এই বইটির প্রকাশনীর নামটি বলবেন প্লিজ...

বিপ্লবী স্বপ্ন

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ইউপিএল
বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলন নিয়ে বেশি আগ্রহ থাকলে ড. মোহাম্মদ হান্নান এর "বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস" বইটি পড়ে দেখতে পারেন। দশ খণ্ডের বই। প্রকাশনীর নাম মনে করতে পারছি না আপাতত। আগ্রহ থাকলে জানায়েন, আমি প্রকাশনীর নামটা লেখকের কাছ থেকে জেনে জানাবো আপনাকে।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

হু, পাওয়া গেছে, ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস [দশ খণ্ড] বইটির প্রকাশক আগামী প্রকাশনী...

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অমিত এর ছবি

লেখাটার জন্য নজরুল ভাইকে গুরু গুরু

আজকাল অনেককেই বলতে শুনি এরশাদের সময়ই ভাল ছিলাম,অনেক নতুন রাস্তাঘাট হয়েছিল, আরও কত উন্নতি !
শুনে মনে হয় আমাদের আরও শখানেক বছর লাগবে মেরুদন্ড সোজা হতে

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এই একটা ভেলকী আছে, সামরিক শাসকরা সবসময়ই অবকাঠামোর ওপর জোর দেন। আইয়ুব খানরে দেখেন, ঢাকার দারুণ দারুণ কিছু স্থাপনা তার সময়ে করা। জিয়াও খাল টাল কেটে অস্থির। এরশাদ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক যোগাযোগ আর ঢাকা শহর রক্ষা বাঁধ বানাইছে।
সামরিক শাসকরা অবকাঠামোগত উন্নয়ন করে, এটা স্রেফ আই ওয়াশ। আর সামরিক বাহিনীর নিয়মই এটা। ধরেন খুব রিমোট একটা এড়িয়ায় ত্রাণ দরকার, আমরা যেভাবে পারি সেখানে গিয়ে চাল ডাল দিবো। কিন্তু সামরিক বাহিনী তা করবে না, তারা সবার আগে সেখানে একটা বেইলি ব্রিজ বানাবে... যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠিক করবে আগে, তারপর ত্রাণ দিবে... এটা তাদের সিস্টেমের অংশ।

এরশাদও সেই সিস্টেমেরই লোক। তল দিয়ে যে দেশের আমলাতন্ত্র, শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সবকিছু একেবারে ধ্বংশ করে দিয়ে গেছে এটা কেউ দেখবে না, কারন এটা খোলা চোখে দেখা যায় না মন খারাপ

আমরা চোখের সামনে যা আছে তাই শুধু দেখি...

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

নজরুল ভাই,

লেখাটা খুব ভালো হয়েছে। ভালবাসা দিবসের প্রকৃত ভালবাসা কার পাওয়া উচিত সেটা আরও স্পষ্ট হলো।
আমার জন্য ১৪ তারিখ এখন শুধু ভালবাসার নয়, শ্রদ্ধারও বটে।

এই লেখাটা কয়েকদিন নীড়পাতায় রাখার অনুরোধ করছি, সকলের এটা জানা দরকার...ফেইসবুকে শেয়ার তো করলামই।

ভালো থাকুন।

_______________________
মেঘদুত

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

পড়ার জন্য ধন্যবাদ মেঘদূত

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ধূসর স্বপ্নরা এর ছবি

এরকম একটি লেখা আমি পেয়েছিলাম গত বছর ১৪ই ফেব্রুয়ারী ইংলিশ প্রত্রিকার ম্যাগাজিন এ। তখন এই বিষয়টি নিয়ে জানার আগ্রহ জন্মায়। নজরুল ভাই এর পোস্ট সেই আগ্রহটা অনেকাংশে মিটাল।
ধন্যবাদ নজরুল ভাই ... আপনি গুরু গুরু ^:)^

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

সত্য চাপা দিয়ে রাখা যায় না। প্রকাশ হবেই। সবাই জানবেই একসময় যে "এরশাদ একটা বিশ্ব বেহায়া"

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

কোথাকার মন্তব্য কোথায় চলে এসেছিলো, তাই ঘ্যাচাং

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

রানা মেহের এর ছবি

অসাধারণ একটা লেখা নজরুল ভাই।
ছবিগুলো দেখে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো।
দেশের পত্রিকা কিংবা টিভি চ্যানেল কি একদম এই বিষয়ে কোন কথা বলেনা?

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

পত্রিকাগুলো চিপায় চাপায় একটুখানি লেখা ছাপে। আর চ্যানেলগুলো তখন ভালোবাসায় মত্ত থাকে। এসব অনুষ্ঠান পাবলিক "খায় না" তাই বিজ্ঞাপন স্পন্সর পায় না, তাই প্রচার করে না চ্যানেলগুলা। অথচ বেশিরভাগ টিভি চ্যানেলের বার্তাবিভাগের বড় পদে অন্তত এমন একজন আছে যে একসময় ৯০ এর গণআন্দোলনের নিউজ কাভার করতো কোনো না কোনো পত্রিকার হয়ে।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

অসাধারণ লেখা।
যেভাবেই হোক আমাদেরকে এই ১৪ই ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন্স ডের তামসা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

৯০এর আন্দোলনের খুব জনপ্রিয় স্লোগান ছিল- এরশাদের বুড়া গালে, জুতা মারো তালে তালে--
এরশাদের মতো ভন্ড ও প্রতারক এই মহাবিশ্বে বিরল।
--
কালো ও সাদা

তিথীডোর এর ছবি

শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা! শ্রদ্ধা
লেখাটার জন্য নজরুল ভাইকে অনেক ধন্যবাদ!

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ধন্যবাদ তিথী

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

কুটুম এর ছবি

ক) অসাধারণ একটা লেখা. তথ্যসূত্র সমন্বিত এমন একটা লেখা তুলে ধরার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ. আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে ইতিহাস তুলে ধরা খুবই প্রয়োজন.

খ) শফিক রেহমান কি এই দিনটিকে আড়াল করার জন্য 'ভ্যালেন্টাইন ডে' নিয়ে এসেছিল নাকি তা জানা নেই.
তবে আজ হোক কাল হোক বিশ্বে উদযাপিত এই দিনটা চলে আসতই.. ইন্টারনেটের আধুনিক এই যুগে বাঙালি ও পিছিয়ে নেই..
মা দিবসে আমরা যেমন মাকে ভালবাসি বলি, সেরকম ভালোবাসা দিবসে প্রিয় মানুষটাকেও ভালবাসি বলাতে আমি দোষের কিছু পাই না হাসি
তবে অবশ্যই ইতিহাস কে আড়াল করার জন্য নয়.
আবার কিছু মোল্লারা কাফিরদের প্রচলিত প্রথা বলে ভ্যালেন্টাইন ডে কে নাজায়েজ ঘোষণা করে.
আমার কাছে intention টাই বড় কথা..

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আমাদের তো পয়লা বসন্তই আছে, আর কী চাই?

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

তারপরের ইতিহাস তো আরো করুণ। কত ছাত্রনেতা বিকোলো, কত রাজনীতিক ডিগবাজি খেল। কবিকে লিখতে হলো,

বেশ্যাকে তবু বিশ্বাস করা চলে
রাজনীতিকের ধমনী শিরায় সুবিধাবাদের পাপ
বেশ্যাকে তবু বিশ্বাস করা চলে
জাতির তরণ রক্ত পুষেছে নির্বীর্যের শাপ

ক্যাডেট কলেজে পড়েছিলাম তাই এই মহান আন্দোলনের শুরুটা দেখিনি। তবে ৮৬ তে এইচএসসিই পাশ করে যখন ঢাকায় এলাম, তখন মনে হল শীর্ণ স্রোতস্বিনী প্রমত্তা রূপে ব্রক্ষ্মপুত্রের বিশালতা লাভ করেছে। কিন্তু আমরা কি জানতাম, আরো অনেক রক্তের নদী সাঁতরে কুলে ভিড়তে হবে?

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

বেশ্যাকে তবু বিশ্বাস করা চলে
রাজনীতিকের ধমনী শিরায় সুবিধাবাদের পাপ
বেশ্যাকে তবু বিশ্বাস করা চলে
জাতির তরণ রক্ত পুষেছে নির্বীর্যের শাপ

যিনি লিখেছেন তিনি শতাব্দির অন্যতম একটা সত্যি উপলব্ধি করেই এটা লিখেছেন। অনেকটা এমনই বলেছিলেন সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রপতি রোনাল্ড রিগ্যান-

"Politics is supposed to be the second oldest profession. I have come to realize that it bears a very close resemblance to the first."

এই হলো রাজনীতিবিদ। হায়রে দুনিয়া। যৌনকর্মীকে যে টাকা দেয় যৌনকর্মী ঠিক তারেই সার্ভিস দেয়। আর রাজনীতিবিদেরা টাকা খায় একজনের আর চোদা খায় অন্যজনের। আবার যাদের টাকা আর চোদা খায়, তারা দুজনও আবার রাজনীতিবিদ।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আন্দোলনের মূল সময়টাই তো আপনি সামনে থেকে দেখেছেন... ৮৭র পর থেকে আন্দোলন জোড়ালো হতে থাকে

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

এই আপাত নিরিহ ভালোবাসা দিবস যে আমাদের এত বড় একটা তাৎপর্য্যপূর্ণ দিনকে প্রতিস্থাপন করে ফেলছে আর তথা কথিত পন্ডিতজনেরা বসে বসে গন মাধ্যমগুলোতে তাল দিচ্ছে ভাবতেই কেমন অবাক লাগছে! টেলিভিশন আর পত্রিকার সাংবাদিকরা একজন সচেতন ব্লগারের চেয়ে এদিক থেকে দুর্বলই থেকে যাবে বোধহয়।

আমাদের এই আরচিস হলমার্কের গিফট্শপের ভীরে হারিয়ে যাওয়া প্রজন্মের সামনে এই দিনটি সমন্ধে ছবি সহ বিস্তারিত ইতিহাস তুলে ধরার জন্য অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা।

রকিবুল ইসলাম কমল

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ধন্যবাদ

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

এই বিশ্ব বেহায়ার সময় থেকেই আমাদের রক্তে দূর্নীতির বিষ বাস্প ঢোকা শুরু হয়।
ধন্যবাদ নজরুল ভাই তথ্যবহুল এই লেখাটার জন্য।

অনন্ত আত্মা

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি


কামরুল হাসানের আঁচড়ে এই সেই বিশ্ব বেহায়া

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা শ্রদ্ধা

লেখার জন্য গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ধন্যবাদ

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অনুপম ত্রিবেদি এর ছবি

নজরুল ভাই, আপনারে পায়ে ধইরা সালাম। অনেকদিন কথায় কথায় আপনাকে আমার মনের এই ক্ষোভটার কথা বলছি - এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের কথাটা আমরা কেউ সেভাবে বুক ফুলিয়ে বলিনা। আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখি নাই, কিন্তু এই আন্দোলনগুলা দেখছি, অনেক পেপার কাটিং আর ছবি ছিলো কিন্তু তার একটাও রক্ষা করতে পারি নাই - বার বার বাসা বদলের কারণে। আপনি শুরু করছেন, ভাই প্লিজ এইটা বন্ধ কইরেন না। আমরা শুধু ইতিহাস বিকৃত করতেই জানি, এই প্রজন্মটারে জানানো দরকার এই স্বাধীন দেশে কতটা পরাধীন ছিলাম আমরা এই নির্লজ্জ, বেহায়াটার আমলে।

আমি এখনও খুব গর্ব বোধ করি - ৮৭ আর ৯০ এর গন আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়াতে।

১৪ ফেব্রুয়ারীর ভালোবাসা হোক সকল শহীদের বিপ্লবী আত্মার প্রতি ভালোবাসা, আর কিছু না।

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

আমি এখনও খুব গর্ব বোধ করি - ৮৭ আর ৯০ এর গন আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়াতে।

------আরিফ ভাই , আপনাকে হাজার সালাম। গুরু গুরু

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

আমি এখনও খুব গর্ব বোধ করি - ৮৭ আর ৯০ এর গন আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়াতে।

৮৭ তে শুধু মফস্বঃলে মিছিল করে বেড়িয়েছি, রেললাইনের পাটি উপড়েছি (রেলের কর্মীরাই টুলস দিয়ে উপড়ে দিতো অবশ্য), হরতাল ভঙ্গ করে চলা দুনিয়ার বাস আটকেছি। কিন্তু সত্যিকার আন্দোলন করেছি ৯০ তে। যে দল করতাম সেই দলটার নাম বলছিনা অনেকের এ্যালার্জি আছে বলে (তাই বলে শিবির না কিন্তু)। বিপ্লবী দেখলে আমার শ্রদ্ধায় মাথা অবনত হয় প্রতিনিয়ত। আপনার জন্যেও ঠিক সেই অনুভূতি জ্ঞ্যাপন করলাম।

কদমবুসির ইমো।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আমি এখনও খুব গর্ব বোধ করি - ৮৭ আর ৯০ এর গন আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়াতে।

চিমটি হাসি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

achena এর ছবি

১৪ ফেব্রুয়ারীর ভালোবাসা হোক সকল শহীদের বিপ্লবী আত্মার প্রতি ভালোবাসা, আর কিছু না।
চলুক

সুরঞ্জনা এর ছবি

আমার জন্ম '৮৬ তে। আমার মতো আমার সতীর্থ দের অনেকেই এসব কিছুই জানে না।
জানবে কি করে?
মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বই পড়ে জেনেছি, বাবা-মা, গুরুজনদের মুখে গল্প শুনেছি। এরশাদের সময় নিয়ে শুধু ভাসা ভাসা জানা যে সে সময় হরতাল হতো প্রচুর, আর স্বৈরাচার পতনের আন্দোলোন হয়েছিল।
আন্দোলনের বর্ণনা কোথাও পাই নি।

মন থেকে ধন্যবাদ জানাই। আর শ্রদ্ধা, শহীদ দের প্রতি। কত লোকেই তো জীবন অবসান করে, উৎসর্গ করতে পারে ক'জন?

শ্রদ্ধা

............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্‌ চিনে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

কত লোকেই তো জীবন অবসান করে, উৎসর্গ করতে পারে ক'জন?

দারুণ একটা কথা বললেন

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

তারাপ কোয়াস এর ছবি

শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা শ্রদ্ধা

অসংখ্য ধন্যবাদ নজরুল ভাইকে। এ বিষয়ে ধারাবাহিক ভাবে লেখার অনুরোধ করছি।


love the life you live. live the life you love.

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

চেষ্টা করবো। ধন্যবাদ আপনাকে

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

অসাধারণ এই ডকুমেন্টারি। অনেক ধন্যবাদ নজরুল ভাই। মুস্তাফিজ ভাইয়ের লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ধন্যবাদ পিপিদা

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নীলকান্ত এর ছবি

এর কিছুই জানতাম না ভেবে খুব খারাপ লাগছে।
অনেক ধন্যবাদ নজরুল ভাই লেখাটার জন্য। প্রিয়তে নিলাম।


অলস সময়

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এখন তো জানলেন? আপনার কাঁধে দায়িত্ব রইলো অন্যদেরকে এটা জানানোর

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

মাহবুব রানা এর ছবি

অশেষ কৃতজ্ঞতা নজরুল ভাই, এ দিনে এমন লেখা পড়াবার জন্য।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ধন্যবাদ রানা

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

নজরুল, লেখাটির জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে । আজকে সচলায়তনে আপনার ও গৌতমের লেখা দু'টো পড়তে পড়তে খুব আবেগতাড়িত হলাম । ১৯৮৩ এর এই গণ আন্দোলনের সময় আমার বড় বোন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে আটকা পড়ে । উত্তাল সেই সময়ে কয়েকদিনের জন্য তার কোন খোঁজ পাইনি । স্বাধীন দেশে এক বিশ্ব বেহায়ার হাতে অবরুদ্ধ আমরা কী যে অসহায় সময় পার করেছি!

ডাঃ মিলন যেদিন মারা গেলেন সেদিন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে ছিলাম...জানি না সেদিনের শোনা অসংখ্য গুলির শব্দের মধ্যে ঠিক কোন গুলিটা ছিল...তারপর যতবার কলা ভবনের পাঠাগারের পাশের রাস্তা দিয়ে হেঁটে গিয়েছি ডাঃ মিলনের স্মৃতিসৌধের সামনে দিয়ে..যতবার ডাঃ মিলনের মা, স্ত্রী ও শিশুকন্যা শামার ছবি দেখেছি পত্রিকায়...কী যে কষ্ট পেয়েছি...

যতবার নূর হোসেনের ছবি দেখি ততবার ঘৃনা জানাই বিশ্ব বেহায়া হোসেন মোহাম্মদ এরশাদকে । ভন্ড, মিথ্যুক এই লোকটিকে হাসিনা, খালেদা ক্ষমা করতে পারে, রাজনৈতিক হিসেব নিকেশে দর কষাকষি করতে পারে । সেদিনের রাজপথে থাকা একটি মানুষও কোনদিন তাকে ক্ষমা করবে না । উত্তর প্রজন্মও একদিন জানবে ১৪ই ফেব্রুয়ারী ব্যবসায়ী শফিক রেহমানের লাল-গোলাপী ভালবাসার ফানুসের চেয়ে অনেক বড় এক অর্জনের দিন । অনেক মহৎ এক দিন । ব্লগের পাতায় সেই মহৎ ত্যাগের ইতিহাস লেখার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ, নজরুল ।

জন্মভূমির সকল বীর সন্তানদের জন্য রেখে যাই শ্রদ্ধাঞ্জলি ।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আপনার দেখা অভিজ্ঞতাগুলো লিখে ফেলুন, অনুরোধ

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

সিরিজ করেন নজুভাই, ছড়িয়ে দেই একে।

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

সিরিজ! কঠিন কাজ... দেখা যাক, তবে মাঝে মধ্যে সময় পেলে এই আমলটা নিয়ে লিখবো

ধন্যবাদ আপনাকে

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

Onindita এর ছবি

আসলেই কী বিস্মৃতিপরায়ণ জাতি আমরা!
সব ভুলে আমরা ভ্যালেন্টাইনস ডে পালনে ব্যস্ত।
অসাধারণ লেখা নজরুল।
এসময়ে খুব দরকার ছিল এ কথা গুলো মনে করিয়ে দেবার।
কৃতজ্ঞতা জানাই।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ধন্যবাদ অনিন্দিতা

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ধূসর স্বপ্নরা এর ছবি

গোলাপ এবং প্রেম ভালোবাসার কাছে সর্বদাই কি হেরে যাবে আমাদের শ্রেষ্ঠ অর্জনগুলো?

মাঝে মাঝে মনে হয় ... আমাদের আসল রূপ এর উপরে কারা যেন কৃত্রিমতার প্রলেপ লাগিয়ে দিয়ে গেছে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ধন্যবাদ

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

আমাদের যাদের আশির দশকে জন্ম, তারা এরশাদের সময়ের বাংলাদেশ দেখেই বড় হয়ে ওঠার শুরু, দেশের যোগাযোগ অবকাঠামো যে সত্যি উন্নয়ন হয়েছিল এই সময়ে সেই সত্য এখনো দেখি, ঢাকাকে ঢেলে সাজানো হচ্ছিলো এটাও মনে আছে কিছুটা, আরো মজার হলো গেল নভেম্বরে মুজিবনগর গিয়ে জানলাম আমবাগানের সৌধ নির্মাণের প্রথম প্রকল্প এরশাদেরই! কিন্তু স্বৈরাচারী শাসকের স্বৈরাচারী ভূমিকা সম্পর্কে ঠিক করে বোঝার বয়স হয় নাই, আর সেই বয়স হতে হতেই এই সব সত্য ইতিহাস চাপা পড়ে গেছে লাল রঙ, রেস্টুরেন্টে দুজনের জন্যে স্পেশাল অফার, কার্ডের দোকান আর টিভির বস্তাপচা একই কাহিনির নাটকের ভিড়ে।

টিভি চ্যানেলগুলো বা সংবাদপত্র, পত্রিকাগুলো এগুলো ইতিহাস তুলে ধরবে কী করে, যেখানে আমাদের বিরোধী দলীয় নেত্রী উঁচু টুলে বসে, দুই পাশে মাটিতে বসা সাঈদী, গো আ, নিজামীকে নিয়ে সভা করার ছবি দেখাতে/ছাপাতে হয়, যেখানে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর দলের হাত মেলাতে হয় স্বৈরাচারের সাথেই! আমরা স্ববিরোধিতা করতেই তো শিখি আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান থেকে, সুবিধাবাদী চরিত্র আর নিজেদেরই মূলমন্ত্রের বিরুদ্ধাচারণ চলে।

ছোট ছিলাম, আগ্রহ কম ছিল, দুই একটা ঘটনার মাঝে ডাক্তার মিলনের ঘটনাটা আবছা মনে আছে। তাঁর স্ত্রী আর ফুটফুটে পিচ্চি মেয়েটাকে চিনতাম অনেক আগে, বিদেশের মাটিতে। সে সময়ে পত্রিকার পাতায়, টিভির প্রতিবেদনে ওঁদের পরিবারের সাক্ষাৎকার থাকতো। এমনটাও শুনেছিলাম যে নব্বইয়ের দশকের শুরুর ঠিক সেই সময়ে দেশের বাইরে পাঠানোটাও আসলে প্রশাসনের তরফ থেকে সুষ্ঠু বিচার এড়িয়ে ধামাচাপা দিয়ে দেবার পন্থার অংশ ছিল। অনেক দিন পরে আজ শামার কথা মনে পড়লো। আজকের শামা কত বড় হয়েছে? কেমন লাগে বাবা-কে ছাড়া বড় হতে?

ছবি সব দেখতে পারছিনা নেট স্পিডের কারণে। কিন্তু আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ নজরুল ভাই, এই লেখাটার জন্যে। আমাদের প্রজন্মের জানা দরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী ইতিহাসগুলোও পরিস্কার করে। মুস্তাফিজ ভাইয়ের লেখার অপেক্ষায় রইলাম।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ডা: মিলনের পরিবারের সঙ্গে এখনো যোগাযোগ আছে?

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

নাহ, '৯৪ এর পরে আর যোগাযোগ হয় নাই। '৯৫ এর দিকে শেষ টিভিতে দেখেছিলাম মনে হয়। আপনার লেখাটা পড়ে অনেকদিন পরে শামার হাস্যোজ্জ্বল মুখটা মনে পড়ে গেল।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

সচল জাহিদ এর ছবি

এই লেখাটি না পড়লে অনেক কিছু অজানা থেকে যেত। তোমায় স্যালুট নজু।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ধন্যবাদ জাহিদ

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

Taniz এর ছবি

ফাটাফাটি। ‌

Taniz এর ছবি

ফাটাফাটি

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ধন্যবাদ

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নৈষাদ এর ছবি

তিনটি প্রথম সারির সংবাদপত্রের পাতা উল্টালাম আজ সকালে। কোথাও কিছু দেখলাম বলে মনে হল না। আন্ততপক্ষে চোখে পরার মত কোন খবর নেই এই বিষয়ে, না হলে তো চোখে পরত।

নীলকান্ত এর ছবি

আমিও এটাই চিন্তা করছিলাম নৈষাদ ভাই। কিছুই নেই, পত্রিকায়। আগেও ছিল না, এখনও নেই।


অলস সময়

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

দেখলাম, একটা অক্ষরও নাই পত্রিকায়!

একটা অক্ষর জায়গা পেলো না দিপালী সাহারা! যেন এরকম কোনো ঘটনা পৃথিবীতে ঘটেইনি কোনোদিন!

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

স্বৈরশাসক এরশাদের বিষয় লেখাটি চমৎকার এবং ১৪ ফেব্রুয়ারি বাঙ্গালির জন্য কি হওয়া উচিত তা খুব ভাল ভাবে উঠে এসেছে। কিন্তু লেখকের লেখার শেষ দিকটার সাথে আমি সহমত পোষণ করছি না। এটা খুবই ভুল ধারনা।
"শফিক রেহমান নামক একজন সাংবাদিক" --- ১। এরশাদের শাষণামোলে এই শফিক রেহমানের লেখা তার জন্য কাল হয়, তাকে নির্বাষনে পাঠান হয়।
২। আর তাকে দায়ি করছেন ১৪ ফেব, কালচারের জন্য, আরে ভাই আপনি কি চাঁদে থাকেন? হুযুগে বাঙ্গালি জাতি যেকোন ভাবে একে নিয়ে আসতো। কারণ আমাদের পেটে ভাত না থাকুক, আমাদের ক্যমেরা ফোন আছে, কোক পেপ্সি খাই, প্রতিটা বাড়িতে হিন্দি সিরিয়াল, বলিউড কালচার।
তাই ১৪ ফেব, কালচারের জন্য শফিক রেহমান লাগে না, হিন্দি চ্যনেল আর আমদের দেশপ্রেমহীন মানষিকতাই যথেষ্ট।

সব শেষে বুড়া বয়সে অর্থনঐতিক সবাধীনতা থাকলে ভীম্রতি আস্তেই পারে।
-Nocturnalbd

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

অন্য অনেকের মতোই শফিক রেহমানকেও দুইভাগে বিচার করতে হবে, ৯০ পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী।
৯০ পূর্ববর্তী শফিক রেহমান ঠিকাছে, কিন্তু তারপরের শফিক রেহমান? এখনকার শফিক রেহমান?
একসময় যে শফিক রেহমানকে হিরো ভাবতাম, সেই তাকে কেন এখন "শফিক রেহমান নামক একজন সাংবাদিক" লিখি? নিজেই কি তিনি নিজেকে আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করেন নাই?
কোথায় তার সেই চেতনা?

যদি থাকতো তাহলে "যায় যায় দিন" সাপ্তাহিকের মধ্য ফেব্রুয়ারির বিশেষ সংখ্যা ভালোবাসা দিবস নিয়ে হতো না, হতো "স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস বিশেষ সংখ্যা"। যায় যায় দিন পত্রিকার রাস্তাটার নাম লাভ রোড না থেকে দাবী উঠতো "দীপালি সাহা সড়ক" নামকরণের।

আর জ্বি, অবশ্যই আমাদের দেশপ্রেমহীন মানসিকতাই যথেষ্ট... কিন্তু অন্য অনেক কিছুর মতো এই দেশপ্রেমহীনতারও পথ প্রদর্শকও এরকম ভণ্ডরা... এজন্যই এরা আজকের এবং আগামী প্রজন্মের কাছে ধিকৃত হবে। আপনি চাঁদে না থেকে বরং ধূলি ধুসরিত এই ধরাধামে নেমে আসুন

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

নজরুল ভাই, অনেক ধন্যবাদ প্রকাশনীর নামটা মনে করে জানানোর জন্য। গতকাল বইমেলা থেকে গণআন্দোলন বইটা কিনেছি, রেফারেন্স পাচ্ছি অনেক।

আর আমার লেখাটা খুলনা ভার্সিটির একটা লিটল ম্যাগ এ প্রকাশিত হবে বলে মনে হচ্ছে। এটা ছাপা হলে তারপর কোন ব্লগে দিব। সচলের পোষ্টগুলা অনেক ভাল লাগে, লেখারও ইচ্ছা ছিল এখানে, কিন্ত সচল হওয়ার প্রসেসটা অনেক গোলমেলে লেগেছে, তাই আর চেষ্টা করিনি।

আমার লেখাটাতে আমি আপনার এই লেখাটাও রেফারেন্স হিসেবে রাখতে চাই, সেটার অনুমতি চাইছি। জানাবেন আশা করি।

বিপ্লবী স্বপ্ন

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

গোলমালের কিছু নাই, লিখলেই হয়। যাহোক, লেখাটা ব্লগে দিলে একটু দিয়েন পড়ার জন্য অন্তত।
আর অনুমতি রইলো অফুরন্ত। ভালো থাকবেন

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

সচলের পোষ্টগুলা অনেক ভাল লাগে, লেখারও ইচ্ছা ছিল এখানে, কিন্ত সচল হওয়ার প্রসেসটা অনেক গোলমেলে লেগেছে, তাই আর চেষ্টা করিনি।

আয় হায়! কী বলেন! সচলায়তনে লেখার নিয়ম তো মোটেও গোলমেলে না! আপনি খালি নিবন্ধন করে পোস্ট দিন, পোস্টের নিচে নিবন্ধন করা নাম:(সম্ভব হলে ই-মেইল আইডি সহ)। মডারেটরদের কেউ পড়ে দেখবেন, আগে অন্যত্র প্রকাশিত হয়েছে কিনা ইত্যাদি চেক করে দেখবেন, তারপরে সেটা পোস্ট হয়ে যাবে। কিছুই এক্সট্রা করতে হবেনা, (বা|ড়তি খাটনি যা হবার তার সবই মডারেটরদের চোখ টিপি )। লিখতে থাকলে, আর সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকলে (মন্তব্য, পোস্টের মাধ্যমে), আপনি অচিরেই হা-চল মানে হাফ-সচল হয়ে যাবেন। আর 'পূর্ণ সচল' হওয়া আর 'অতিথি' হিসেবে নিজের নিবন্ধীকৃত নামে পোস্ট/কমেন্ট দেয়ার (হাচলত্ব) তেমন বেশি পার্থক্য নেই আসলে। লিখুন হাত-পা খুলে। হাসি

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

গৌতম এর ছবি

ধন্যবাদ নজরুল ভাই অনেক তথ্যমূলক পোস্টটা দেয়ার জন্য। যারা বলে যে, এই দিনের ইতিহাস তাদের জানা নাই- অন্তত তাদেরকে এই লিংক ধরায়া দেয়া যাবে।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ধন্যবাদ গৌতমদা...

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

ধন্যবাদ নজরুল ভাই। ইতিহাস উচ্চারিত হোক বারবার...

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ধন্যবাদ শিমুল ভাই...

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

পত্রিকাগুলো ভালোবাসা ছাপে, এসব সংবাদ ছাপে না।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ভালোবাসাই তো ভালো, হিংসা বিদ্বেষ ঘৃণার চর্চা ভালো না... অতীত ভুলে যেতে হবে...

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

FYI: আমারদেশ কিন্তু গতকাল গুরুত্ব সহকারে ফিচার করেছে -
স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে রক্তাক্ত আন্দোলনের সূচনা
জাকির হোসেন

আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি। সামরিক স্বৈরাচারী এরশাদবিরোধী আন্দোলনের এক অগ্নিঝরা দিন। ১৯৮৩ সালের এই দিনে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে সূচিত হয়েছিল প্রথম বড় ধরনের আন্দোলন, যা মধ্য ফেব্রুয়ারির আন্দোলন হিসেবে পরিচিত। সেই থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত দিনটি স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। গত কয়েক বছরের ‘ভ্যালেনটাইন ডে’র প্রভাব নতুন প্রজন্মের চেতনায় দিবসটি নাড়া দিতে পারছে না। তারা বুঝতে পারছে না ফাগুনের এই আগুনঝরা দিনের সঙ্গে মিশে আছে ১৯৮৩ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের শহীদ জাফর, জয়নাল, দিপালী সাহার লাল টকটকে রক্ত—আত্মত্যাগের এক সংগ্রামী ইতিহাস।
১৯৮৩ সালের এই দিন মজিদ খানের শিক্ষানীতি বাতিল এবং সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্রদের বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জয়নাল, জাফর, দিপালী সাহাসহ অনেকে। জেনালের হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের দিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এরপর প্রায় এক বছর ধরে চলে আন্দোলনের প্রস্তুতি। ১৯৮২ সালে শিক্ষা দিবস (১৭ সেপ্টেম্বর) সামনে রেখে মজিদ খানের শিক্ষানীতি বাতিল এবং সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ১৬ সেপ্টেম্বর মৌন মিছিল করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (মুনির-হাসিব), জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী, ছাত্র ইউনিয়ন এবং ছাত্রঐক্য ফোরামসহ কয়েকটি সংগঠন। এরপর ১৯৮২ সালের ৭ নভেম্বর উপলক্ষে ৮ নভেম্বর বিক্ষোভ মিছিল করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (মুনির-হাসিব)। পুলিশ এ মিছিলের ওপর বেপরোয়া হামলা চালায় এবং লাঠিচার্জ করে। ফলে পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদের তীব্র সংঘর্ষ বাধে এবং এ সংঘর্ষ কয়েক ঘণ্টাব্যাপী চলে। পুলিশ একপর্যায়ে কলাভবনের ভেতরে ঢুকে ছাত্র এবং শিক্ষকদের ওপর বেপরোয়া হামলা চালায়। এতে অনেক ছাত্রছাত্রী এবং কয়েক শিক্ষক আহত হন। এ পরিপ্রেক্ষিতে এদিন (৮ নভেম্বর) ছাত্র সংগঠনের মধ্যে ঐক্য আরও দৃঢ় হয় এবং ১৪টি ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হওয়ার পর ১৩ ডিসেম্বর এ সংগঠন বিক্ষোভ-সমাবেশ কর্মসূচির ডাক দেয়।
এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীকালে ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি এরশাদের শিক্ষা উপদেষ্টা মজিদ খানের শিক্ষানীতি বাতিল এবং সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি দেয়া হয়। এ কর্মসূচি সফল করতে ছাত্রদের একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল সকাল প্রায় ১১টার দিকে শিক্ষা ভবনের সামনে পৌঁছলে পুলিশ বাধা দেয়। ফলে ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে পুলিশ গুলি চালায়। পুলিশের গুলিতে নিহত হন জয়নাল, জাফর এবং দিপালী সাহাসহ কয়েকজন। নিহতদের কয়েকজনের লাশ গুম করে সরকার। বিকালে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা এবং বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও ঢাকা শহরে কারফিউ জারি করা হয়। একইসঙ্গে ওই সময় পুলিশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রাবাসে ঢুকে ছাত্রছাত্রীদের ওপর বেপরোয়া হামলা চালায় এবং ব্যাপক সংখ্যক ছাত্রকে গ্রেফতার করে। ছাত্রহত্যা এবং পুলিশি হামলার প্রতিবাদে পরদিন এ আন্দোলন জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। ফলে পরদিন সরকার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করে।
কিন্তু সামরিক স্বৈরাচারী এরশাদের শাসনামলে সংবাদপত্রের ওপর এতই নিষেধাজ্ঞা ছিল যে, এই বিক্ষোভ এবং ছাত্রহত্যার ঘটনার বিষয়ে পরদিন কোনো পত্রিকা সরকারের প্রেসনোটের বাইরে অন্য কোনো খবর প্রকাশ করতে পারেনি।
তবে এ ঘটনার প্রতিবাদে বিশিষ্ট চিন্তাবিদ কবি ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহারের লেখা দুটি কবিতা তখন ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং কবিতা দুটি সে সময়ের আন্দোলনকারীদের কাছে আজও স্মরণীয় হয়ে আছে। ১৯৯২ সাল পর্যন্ত দিনটিতে বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ স্বৈরাচার-প্রতিরোধ দিবস হিসেবেই পালন করে আসছিল। তবে আন্দোলনের তিন দশক পার না হতেই নতুন এ দেশের মানুষের কাছে বিস্মৃত হতে চলেছে জয়নাল, জাফর ও দিপালীদের নাম।
তবে সে সময়ের আন্দোলনকারীরা এখনও ভুলতে পারেননি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সেই নিহত সহযোদ্ধাদের। আজ সকাল সাড়ে ৮টায় ১৪ ফেব্রুয়ারি নিহতদের স্মরণে হাইকোর্টের কাছে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন তারা। এতে অন্যান্যের মধ্যে অংশ নেবেন বিশিষ্ট চিন্তাবিদ, কবি ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার, মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’র সম্পাদক আদিলুর রহমান খান, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ড. ফয়জুল হাকিম প্রমুখ।
১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারির পরদিন (১৫ ফেব্রুয়ারি) দৈনিক ইত্তেফাক ‘গতকালের ঘটনা সম্পর্কে সরকারি প্রেসনোট—’ এবং দৈনিক সংবাদ ‘রাজধানীতে কার্ফ্যু : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা’ শিরোনামে প্রধান খবর হিসেবে প্রকাশ করে। ইত্তেফাকে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়, ‘গতকাল (সোমবার) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ সরকার এক প্রেসনোটে ঢাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গের লক্ষ্যে পরিচালিত ক্রমবর্ধমান ও পরিকল্পিত ছাত্রগোলযোগ বন্ধের উদ্দেশ্যে কতিপয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ঘোষণা করিয়াছেন। প্রেসনোটে বলা হয়, এই ছাত্রগোলযোগ শান্তিপ্রিয় জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করিতেছিল। ঢাকায় ছাত্রদের একদিনের উস্কানিমূলক গোলযোগের প্রেক্ষিতে সরকার নিম্নোক্ত ব্যবস্থাবলী ঘোষণা করিয়াছে :
(১) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হইয়াছে। এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হইবে। আজ (মঙ্গলবার) সকাল ৯টার মধ্যে ছাত্রদের সকল আবাসিক হল ত্যাগ করিতে হইবে।
(২) সভা, শোভাযাত্রা, সমাবেশ ও ধর্মঘট নিষিদ্ধ ঘোষণা সংক্রান্ত বিধিসমূহ কঠোরভাবে প্রয়োগ হইবে।
(৩) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সন্ধ্যা ৬টা হইতে ভোর ৫টা পর্যন্ত এবং মেট্রোপলিটন ঢাকার অবশিষ্ট এলাকায় রাত্রি ১০টা হইতে ভোর ৫টা পর্যন্ত সান্ধ্য আইন বলবত্ থাকিবে।
ঘোষণায় বাংলাদেশ সচিবালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকায় গোলযোগে পর্যবসিত ঘটনাবলীর উল্লেখ করা হয়। ১৪টি রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনসমূহের মোর্চা তথাকথিত ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ঘোষণা কয়িয়াছিল যে, তাহারা সরকারী নীতির প্রতিবাদে সচিবালয় অবরোধ করিবে।
সকাল ১১টায় তাহারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সমবেত হয় এবং বক্তারা সামরিক আইন ভঙ্গ করিয়া ছাত্রদেরকে আইন নিজের হাতে তুলিয়া লওয়ার আহ্বান জানাইয়া উত্তেজনাপূর্ণ বক্তৃতা দেয়। ছাত্রনেতা নামধারী এই সকল পেশাদার উস্কানিদাতাদের উস্কানিতে ছাত্ররা একটি শোভাযাত্রা বাহির করে, যা কিনা সামরিক আইনে নিষিদ্ধ। সরকারের বিরুদ্ধে ধ্বনি দিতে দিতে তাহারা একযোগে সচিবালয়ের দিকে অগ্রসর হইতে থাকে এবং পুলিশ পুরাতন হাইকোর্টের কার্জন হল সংযোগস্থলে তাহাদিগকে থামাইয়া দেয়। অতঃপর উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তিরা কর্তব্যরত পুলিশের প্রতি ব্যাপকভাবে ইট নিক্ষেপ করিতে শুরু করে এবং পুলিশ কর্ডন ভাঙ্গার চেষ্টা করে। সংখ্যাগত কারণে কোণঠাসা হইয়া শুধুমাত্র লাঠি ও বেতের ঢাল সজ্জিত পুলিশ বিপদগ্রস্ত হয় এবং জনতাকে ছত্রভঙ্গ করিবার জন্য হোসপাইপের সাহায্যে পানি নিক্ষেপ করে। উহা ব্যর্থ হইলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করিয়া ছত্রভঙ্গ করিয়া দেয়।’...(দৈনিক ইত্তেফাক : ১৫ ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার ১৯৮৩)।
এরশাদের ক্ষমতা দখল : ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ জেনারেল এরশাদ এক রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন। রাজনৈতিক দলগুলো এরশাদের এভাবে ক্ষমতা দখলকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা না করে অনেকটাই নীরবে মিলিটারি স্বৈরশাসন মেনে নিতে বাধ্য হয়। রাজনৈতিক দলগুলো মেনে নিলেও ছাত্ররা মেনে নেননি এই সামরিক অভ্যুত্থান। সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্বৈরাচার এরশাদ ক্ষমতায় ছিল ৮ বছর ২৫৬ দিন। এ সময় দেশের হাজার হাজার মানুষ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে কারাবরণ করেছে। হত্যা-গুমের শিকার হয়েছে অসংখ্য নারী-পুরুষ। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থৈকে। বিশেষত ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি মিছিলে পুলিশের গুলিতে ছাত্র নিহত হওয়ার পর থেকেই দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে ওঠে।
রক্তাক্ত ১৪ ফেব্রুয়ারির প্রেক্ষাপট : এরশাদের সামরিক শাসন জারির প্রথম দিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ করেন। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে পোস্টার লাগাতে গিয়ে বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর তিন সদস্য গ্রেফতার হন। এই ছাত্রনেতারা হলেন শিবলী কাইয়ুম, হাবিবুর রহমান ও আবদুল আলী। পরে সংক্ষিপ্ত সামরিক আদালতে তাদের সাত বছরের কারাদণ্ড হয়। সেই থেকে শুুরু হয় সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্রদের আপসহীন লড়াইয়ের দিনগুলো।
বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতারা ২৬ মার্চের স্বাধীনতা দিবসে সাভারের স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে গিয়ে শহীদ বেদিতেই সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। মিছিলের খবর শুনে সাভার সেনানিবাস থেকে সেনাবাহিনী চলে আসে, স্মৃতিসৌধে ছাত্রদের ওপর চালায় নির্মম নির্যাতন।
সরকারি ফরমান ও তত্পরতার কারণে সে সময় সরাসরি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়লেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে দেয়ালে লাল-কালো অক্ষরে এরশাদের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে দেয়াল লিখন অব্যাহত থাকে। দেয়ালে উত্কীর্ণ হয়—‘এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার শ্রেষ্ঠ সময়।’ ছাত্রদের দেয়াল লিখন সমানে মুছতে থাকে সামরিক সরকারের তল্পিবাহক পুলিশ বাহিনী। পুলিশ যত দেয়াল সাদা চুন টেনে মুছে ফেলে, ছাত্ররা ততই দেয়াল লিখন চালিয়ে যেতে থাকে। এভাবেই সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে চলছিল দীর্ঘমেয়াদি সংগ্রামের প্রাথমিক প্রস্তুতি।
এ সময় ছাত্রনেতারা একটি সর্বাত্মক গণতান্ত্রিক ছাত্র আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছিলেন। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে বিবৃতি প্রদান করা হয়। সেটাই ছিল সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে প্রথম লিখিত প্রতিবাদ।
১৪ ফেব্রুয়ারি ঘটনার প্রতিবাদে ফরহাদ মজহারের লেখা দুটি কবিতার একটি তুলে ধরা হলো :

লাশসকল প্রতিশোধ নেবে

গুম হয়ে যাওয়া লাশসকল প্রতিশোধ নেবে—
বীভত্স কফিনহীন মৃতদেহ রাস্তায় রাস্তায়
মোড়ে মোড়ে
অলিতে গলিতে
অন্ধিতে সন্ধিতে
তোমাদের শান্তিশৃঙ্খলা স্থিতিশীলতার গালে
থাপ্পড় মেরে
অট্টহাসি হেসে উঠবে।

ভোরবেলা
দাঁতের মাজন হাতে ঢুকবে বাথরুমে—
সেখানে লাশ
তোমাদের প্রাতঃরাশে রুটি-মাখনের মধ্যে লাশের দুর্গন্ধ
তোমাদের ভোর সাড়ে সাতটার ডিমের অমলেটে লাশের দুর্গন্ধ
তোমাদের পানির গ্লাসে লাশের দুর্গন্ধ
তোমাদের চায়ের কাপে গলিত নষ্ট মৃতদেহের রক্ত;
লাশসকল প্রতিশোধ নেবে
লাশসকল হত্যার বদলা চায়।

রিকশায় তোমাদের পাশে যে বসে থাকবে
দেখবে সে একজন লাশ
টেম্পোবাসে তোমাদের গা ঘেঁষে যে বসে পড়বে
দেখবে সে একজন লাশ
ফুটপাতে তোমাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যে হাঁটছে
দেখবে সে একজন লাশ

অলিতে গলিতে
অন্ধিতে সন্ধিতে
চড়াও হয়ে
লাশসকল প্রতিশোধ নেবে।

প্রতিটি লাশের গায়ে ৩৬৫টি গুলির দাগ
(দিনে একবার করে বাংলাদেশকে বছরে ৩৬৫ বার হত্যা করা হয়)
জবাই করে দেওয়ার ফলে অনেক লাশের কণ্ঠনালী ছেঁড়া
অনেকের চোখ হাত পা বাঁধা
অনেককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে—
অনেককে হাড়মাংসসুদ্ধ কিমা বানানো হয়েছে প্রথমে
পরে থেঁতলে থেঁতলে পিণ্ডাকার দলা থেকে
তৈরি করা হয়েছে কাতারবদ্ধ সেনাবাহিনী
ওদের মধ্যে অনেককে দেওয়া হয়েছে মেজর জেনারেল পদ
একজনকে নিয়োগ করা হয়েছে
প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে
তাদের সবার চেহারাসুরত বরফের মতোই ঠাণ্ডা ও নিষ্পলক
এই হচ্ছে লাশসকলের সুরতহাল রিপোর্ট

তারা সামরিক কায়দায় উঠে দাঁড়ায়
অভিবাদন দেয়
অভিবাদন নেয়
অভিবাদন গ্রহণ করে
এবং সর্বক্ষণ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের
পরবর্তী বিক্ষোভ মিছিলকে
মেশিনগান মেরে উড়িয়ে দেবার পরিকল্পনা আঁটতে থাকে—
তোমরা আতংকিত হলে লাশসকল অট্টহাস্য করে ওঠে
তারা তোমাদের সেনাবাহিনীর মতোই
নিজেদের সেনাবাহিনী গঠন করে নিয়েছে—

কারণ
লাশসকল প্রতিশোধ চায়।

লাশসকল তোমাদের অফিস করিডোরে ফাইলপত্রে
হাজির থাকবে
তারা সংবাদপত্র অফিসে নিখোঁজ সংবাদের রিপোর্টার হয়ে
বসে থাকবে
তারা রেস্তোরাঁয় হোটেলে হোটেলে
মরা মানুষের কঙ্কাল হয়ে ঝুলে থাকবে।

বিকেলে পার্কে সিনেমাহলে ঘরের সামনে
ফুলবাগানে লাশ
লাশসকল অভিনয় জানে
তারা মহিলা সমিতি মঞ্চে অভিনয় করতে চায়
তারা জীবিতদের মতো কথা বলবে
সংলাপ উচ্চারিত হবে নির্ভুল
সর্বত্র
সবখানে
সবজায়গায়
লাশসকল তোমাদের অনুসরণ করবে।

লাশসকল মনে করিয়ে দিতে চায়—
বুট ও খাকির নীচে বাংলাদেশের মৃতদেহ থেকে
পচনের আওয়াজ বেরুচ্ছে
তারা বুঝিয়ে দিতে চায়—
পাছায় রাইফেলের বাঁট মেরে শুয়োরের বাচ্চার মতো
তোমাদের খোঁয়াড়ে রাখা হয়েছে।

রাত্রিবেলা তোমাদের স্ত্রীদের ওপর
তোমাদের মেয়েমানুষদের ওপর
চড়াও হয়ে
লাশসকল ঝুলিয়ে দেবে
তোমরা
নিবীর্য
নপুংসক
লিঙ্গহীন
উত্থানরহিত।

একদিন
জেনারেলদের মাথার খুলি লক্ষ্য করে
সমস্ত লাশ একযোগে
দ্রিম দ্রিম
ক্রাট ক্রাট
সাব-মেশিনগান
৩৬৫ বার
প্রতিদিন একবার করে বাংলাদেশকে হত্যার প্রতিশোধে
লাশসকল অট্টহাস্য করে উঠবে—

লা শ স ক ল প্র তি শো ধ চা য়
গু ম হ য়ে যা ও য়া লা শ স ক ল
প্র তি শো ধ নে বে।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

হা হা হা হা... মজা পাইলাম।
আমারদেশ এই রিপোর্ট করছে এবং শেষে ফরহাদ মাজহারের কবিতা দিছে... এর পিছনে কুনো রাজনৈতিক গন্ধ নাই...
অন্য পত্রিকাগুলো ভুলে ভুলে থাকতে চাইতেছে... এর পিছনেও কুনো রাজনৈতিক গন্ধ নাই হাসি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

আপনে লুক্টা ভালু না , খালি গন্ধ খুজেন শয়তানী হাসি
আমারদেশের এই প্রতিবেদনের কথা কিন্তু আমিও জানতাম না , বরবাদ লিঙ্কটা শেয়ার না করলে জানাই হত না ।

বরবাদের লিঙ্ক শেয়ারের পিছনেও কুনো রাজনৈতিক গন্ধ নাই শয়তানী হাসি

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

অতিথি লেখক এর ছবি

ভুলিনি কিন্তু সেভাবে কি মনেও রেখেছি!! নিজের কাছেই অনেক বড় একটি প্রশ্ন...
অকৃতজ্ঞ আমার অথবা আমাদের জন্যে অসাধারণ-তথ্যবহুল একটি লেখা... গৌতম'দার লেখাটিও মাত্র পড়লাম, মনটাই খারাপ হয়ে গেলো...

"চৈত্রী"

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ধন্যবাদ

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

শোভন এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ নজরূল ইসলাম কে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আপনাকেও ধন্যবাদ

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

তারেক অণু এর ছবি

অনেক পরে হলেও আজ পড়া হল। স্যালুট নজু ভাই।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ অণু

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

মেঘলা মানুষ এর ছবি

টিভি ছাড়লে কি দেখব? ভালোবাসা দিবসের নাটক, তারকা দম্পতিকে নিয়ে টক শো (উপস্থাপিকার আহ্লাদী গলায়," আচ্ছা, বলুন তো আপনার হাসবেন্ডের প্রিয় রং কোনটি?")

কোন চ‌্যানেলে এই বিষয়ে কোন টুঁ শব্দটিও শুনব বলে মনে হয় না।
হয়ত, এরশাদ আমলের মিডিয়ার সেন্সরশিপ (ship) এখনও ভাসছে.

[আমার ব্যক্তিগত বিশৃাস: সেই নষ্ট নায়কের পরে আমরা সামনে এগুইনি একটুকুও, আর সেই চক্কর থেকে আমরা এখনও বের হইনি]

achena এর ছবি

এরশাদের আমলে আমার জন্ম। ছোটবেলাতে টিভিতে এরশাদ কে দেখে আমার বাবা কেন এত গালিগালাজ করতেন। আজ অনেক কিছু জানা হল, যা আগে জান্তাম না।
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া আপ্নাকে।
শহিদ ভাইদের কে আমার গুরু গুরু

সুমন ধ্রুব  এর ছবি

ধন্যবাদ লেখাটা শেয়ার করার জন্য

ahasnat এর ছবি

এ বিষয়টা জানতাম না। ধন্যবাদ নজুভাই।

গুরু গুরু গুরু গুরু

দিলরুবা সুলতানা এর ছবি

অশেষ ধন্যবাদ এত সুন্দর এবং তথ্যবহুল লেখার জন্য।

নেপাল রায় এর ছবি

অশেষ ধন্যবাদ এত সুন্দর এবং তথ্যবহুল লেখার জন্য। ফেসবুকে শেয়ার করলাম।

তিথীডোর এর ছবি

এই পোস্টটা আগামি দু-তিন স্টিকি করে রাখা যায় না?

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

চলুক

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

অতিথি লেখক এর ছবি

অশেষ ধন্যবাদ নজরুল ভাইকে। অনেকদিন পরে হলেও পড়া হলো।

লেখাটি অন্তত "মনের মুকুরে" অংশে আগামী দুই দিন রেখে দেয়া হোক।

কড়িকাঠুরে

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

গুরু গুরু গুরু গুরু
অসাধারণ একটা লেখা। বিষয়টা আমার নিজেরই জানা ছিলনা। সবার জানা উচিত।
অনেক অনেক ধন্যবাদ নজরুল ভাই।

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

নাবিক  এর ছবি

বাংলাদেশের এই সকল ছাত্ররা কোথায় যারা কোন প্রকার ভয়ভীতির পরোয়া না করে আন্দোলন করত। আমরা কি দিন দিন মুরগি হয়ে যাচ্ছি।

ঈয়াসীন এর ছবি

চলুক

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

অতিথি লেখক এর ছবি

অসাধারন এক পোষ্ট নজরুল ভাই। গুরু গুরু

শেয়ার দিলাম ফেসবুকে।

মাসুদ সজীব

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

এই লেখাটি কি প্রতিবছর ফেব্রুয়ারির ২য় সপ্তাহে স্টিকি করে রাখা যায়?

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

মাসুদ সজীব এর ছবি

সহমত। গোল্ডফিশ বাঙালিকে বারবার ইতিহাস মনে করিয়ে দেওয়া অত্যাবশকীয় কাজ।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

রাসিক রেজা নাহিয়েন

পৃথ্বী এর ছবি

চলুক


Big Brother is watching you.

Goodreads shelf

আয়নামতি এর ছবি

শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা।
লেখকের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
------
সাক্ষী কথাটা কিন্তু মন্দ বলেননি। ভেবে দেখতে পারেন সচল মডুরা।

অতিথি লেখক এর ছবি

খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা লেখা।

লেখককে ধন্যবাদ।

রাসিক রেজা নাহিয়েন

স্বপ্নের ফেরিওয়ালা  এর ছবি

অনেক দেরিতে হলেও আজ পড়া হল,অনেক নতুন তথ্য জানলাম।
কত সত্য ইতিহাস যে আমাদেরকে ভুলিয়ে রাখা হয়েছে ভাবতেই অবাক লাগে!
এই লেখাগুলা আমাদের মত অল্প বয়সী তরুণদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়াটা খুবই প্রয়োজন।

কর্ণজয় এর ছবি

কত বছর পর, পুরোটাই জীবন্ত-- টেনে সিয়ে যায়, ক্রোধে- কান্নায়- চিৎকারে

শেহাব এর ছবি

খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা লেখা।

অতিথি লেখক এর ছবি

valentines day তো পুরা বিশ্বেই পালিত হয়. এই একটা দিনে যত ফুল, কার্ড , চকলেট, ৫ তারা রেস্তোরা ইত্যাদির যত ব্যবসা হয় সারা বছরে কয়টা দিনে এত টা হয়.শফিক রেহমান একটা ভন্ড বদমাইশ ঠকবাজ একট আলোক। কিন্তু valentines day কে বাংলাদেশ এ আনার জন্য শুধু একা শফিক রেহমান রে দোষারোপ করে কি লাভ. তিনি না আনলেও এই দিবস এমনি এমনি চলে আসত । ১লা ফাল্গুন কে বাদ দিয়ে তো কেউ ভালবাসা দিবস উদযাপন করছে না. এক টার সাথে আরেকটা ফ্রি।তাই valentines day কে দোষারোপ না করে এই চেষ্টা করে পারি যেন valentines day এর পাশাপাশি মানুষ ওই আন্দোলন টাও মানুষ মনে রাখে। আর এই জন্য মূল দায় দেশের সংবাদ মাধ্যম এর ই. ৮৩ র আন্দোলন সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না. মাত্র গত বছর জানতে পেরেছি। ছবি আর লেখা খুব ভালো লাগছে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।