বাড়ি বদলের গল্প ৪: কম্পুকাহন

মাহবুব লীলেন এর ছবি
লিখেছেন মাহবুব লীলেন (তারিখ: মঙ্গল, ২১/০৭/২০১৫ - ৫:৪১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দশ হাজার টেকা বেতনের কামলারে আশি হাজার টেকা ঋণ দিব কেডায়? তার উপরে জুম্মায় জুম্মায় আটদিন হয় নাই আসছে ঢাকায়; চাকরি এখনো অস্থায়ী। চাল নাই চুলা নাই; ধরার মতো ল্যাঞ্জা নাই; পরনের কাপড় বাদ দিলে এক বাকশো বইপত্র ছাড়া থাকার মধ্যে আছে কয়েকটা জিন্স ফতুয়া টি-শার্ট অ্যাশট্রে আর দুই জোড়া জুতা...

২০০২ সালের মাঝামাঝি ঢাকায় এসেই আমি ব্যাংক থেকে ব্যাংকে ঘুরি- একটা লোন চাই কম্পিউটার কিনব...

হ্যাঁ হ্যাঁ নিশ্চয়ই কইয়া ব্যাংকাররা আমারে শর্ত দেয় অ্যাকউন্ট না খুললে লোন অ্যাপ্লিকেশন করা যাবে না। আমি পাঁচশো এক হাজার দুই হাজার টেকা জমা দিয়া অ্যাকাউন্ট খুইলা অ্যাপ্লিকেশন কইরা পড়ি তাগো প্রশ্নের মুখে- কম্পিউটার দিয়া আপনি কী করবেন?
- বই লিখব
- নোট বই?
- না সাহিত্য। কবিতা গল্প .
- সেইগুলা কি বিক্রি হবে?
- দুই চাইরটা তো হবেই
- দুই চাইরটা বই বেইচা লোন শোধাইবেন কেমনে?
- চাকরির বেতন থাইকা শোধ দিমু
- আপনি যে বেতন পান তাতে ঠিকমতো লোন শোধ হইবার কথা না। তার উপরে আপনের চাকরি এখনো টেম্পোরারি...

ব্যাংকগুলা আমারে লোন দেয় না। অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য জমা দেওয়া টাকাগুলা ওপেনিং চার্জ- সার্ভিস চার্জ- রিলেশনশিপ ফি- চেকবই চার্জ- মিনিমাম ব্যালেন্স মার্জিন ইত্যাদি ইত্যাদি নাথিং ফি কাটতে কাটতে গায়েব হইয়া যায়...

কোনো কোনো ব্যাংক বাসায় লোক পাঠায়। তারা আইসা দেখে আরো অনেকের লগে মেঝেতে একটা চাদর বিছাইয়া আমি ঘুমাই। তারা জিগায় বাসা ভাড়া কত দেন?
আমি কই- দিতে হয় না। এক বন্ধুর বান্ধবী আমাদের বিনা পয়সায় থাকতে দিছে তার বাসায়
তারা জিগায়- আপনের লোনের গ্যারান্টার কারা হবে?
আমি কই- এইতো যাদের দেখতাছেন তারা
তারা কয়- ইনাদের দেইখা তো মনে হয় না যে আশি হাজার টেকার জামিন্দার হইবার মতো ক্ষেমতা আছে কারো...

আমি আরো আরো ব্যাংকে যাই। কেউ কয়- বইটই লেখা বাদ দিয়া যদি কম্পিউটার কিন্না নীলক্ষেতে টাইপিস্টের বিজনেস করতে চান তয় চেষ্টা কইরা দেখতে পারি...
আমি কই- না। আমি খালি আমার বই টাইপ করতে চাই...

অবশেষে একখান আন্তর্জাতিক লোকাল ব্যাংকের সন্ধান পাই। তাগো লোনের নাম অ্যানি পার্পাস লোন। মানে টেকা নিয়া আপনি কী করবেন না করবেন তারা তা জিগাইব না। খালি শক্তপোক্ত গ্যারান্টার পাইলেই তারা লোন দিয়া দিব। তো এই যাত্রায় আমি দুইজন কঠিন শক্ত গ্যারান্টার জোগাড় কইরা ফালাই। দুইজনেরই অ্যাকাউন্ট আছে সেই ব্যাংকে। ব্যাংক তাগো লগে যোগাযোগ কইরা আমারে জিগায়- ইনাদের পটাইলেন ক্যামনে?
আমি কই- একজনের বাচ্চার ইস্কুল ম্যাগাজিনের লাইগা চাইরটা কবিতা লেইখা দিছি। আর আরেকজন এমনিতেই দয়া কইরা রাজি হইছে...

এই ব্যাংক আমারে লোন দিতে রাজি হয়। কিন্তু জিগায়- কম্পিউটার তো তিরিশ চল্লিশ হাজার টেকায় পাওয়া যায়। আপনি আশি হাজার দিয়া কী করবেন?
আমি কই- বড়ো মনিটর- ভালো কনফিগারেশন আর বড়ো সাউন্ড সিস্টেমসহ আমার কম্পিউটারের দাম পড়ব ষাইট হাজারের মতো। তার পরে পাঁচ হাজার টেকা দিয়া কিনব একটা চেয়ার; দশ হাজার টেকায় টেবিল আর লগে একটা প্রিন্টারও কিনতে চাই....
তারা হাসে- কম্পিউটার কিনতে পারবেন সেইটাই আপনের ভাগ্য। চেয়ার টেবিল লাগব না। টুলে বইসাই কাম সারেন। আর খামাখা প্রিন্টার দিয়া কী কাম?

আমি গাঁইগুঁই করি। কিন্তু তারা সিদ্ধান্ত জানায়ে দেয়- আপনেরে আমরা ষাইট হাজার টেকার বেশি কিন্তু দিতে পারব না...
আমি কঁচুমাচু করি- টেকাটা বাড়ান যায় না ভাইজান?
তারা কয়- স্যরি। ষাইটে রাজি থাকলে বলেন; প্রসেস চালু করি
আমি কই- ঠিকাছে। তাই সই

এরা আমারে তাগো অ্যাকাউন্টে আগে কোনো টাকা হান্দাইতে কয় নাই। এই কারণেই আমি বড়ো খুশি আছিলাম তাগো উপর। কিন্তু লোন নিতে রাজি হইবার পর কয়- ষাইট হাজার টেকা রিসিভ করলেও ক্যাশ কিন্তু পাইবেন ছয় হাজার টেকা কম?
- ক্যান?
- ক্যন আবার? বিবিধ প্রকার ফি আছে না? লোন নিবেন; ফি দিবেন না? তার উপরে পয়লা মাসের কিস্তি আগাম কাইটা রাখব আমরা...
হ্যানো ফি ত্যানো ফির একটা লিস্টি আমারে দেখাইয়া কয়- এই দেখেন ছয় হাজার টেকার হিসাব...

হাতে চুয়ান্ন হাজার পাইবার শর্তে ষাইট হাজার টেকার দায় হজম কইরা আমি জিগাই- আইচ্ছা ভাইজান আমার চেয়ার টেবিল প্রিন্টার কিনার লাইগা কোনো বুদ্দি আছেনি আপনাগো?

লোকটা আমারে বহুত বোঝায়- লোন বহুত খবিশ জিনিস। খামাখা ওইসবে আর যাইয়েন না। তার থাইকা আপনে খাড়ায়ে খাড়ায়ে কম্পিউটারে সাহিত্য করেন...
আমি কই- আমার কিন্তু ঠিকঠাক মতো বসা লাগব। কোনো বুদ্ধি থাকলে দেন...

শেষ পর্যন্ত লোকটা আমারে কয়- আপনি একটা ক্রেডিট কার্ড কইরা ফালান। আপনার দুই গ্যারান্টার কইয়া দিলে অমুক ব্যাংক থাইকা আপনি একটা ক্রেডিট কার্ড পাইয়া যাইতে পারেন। ক্রেডিট কার্ডে আপনি পঞ্চাশ হাজার টেকা পর্যন্ত তুলতে পারবেন...

ক্যাশ টেকা খরচা করা মানে হইল অতীতের ইনকাম খর্চানো। আর ক্রেডিট কার্ডে খর্চা মানে ভবিষ্যতের ইনকাম খরচ কইরা ফালানো। লোনও তো তাই। আইচ্ছা যাই...

সেই অমুক ব্যাংকখান পুরা বিদেশি ব্যাংক। কাগজপত্র হাবিজাবির তারা খোঁজ করে কম। দুই গ্যারান্টারের বিষয়ে নিশ্চিত হইয়া তরুণী ব্যাংকার আমারে জিগায়- ভিসা না মাস্টার কার্ড; কোনটা নিবেন?
আমি কই- দুইটায় কী তফাত?
ব্যাংকার কয়- এই ধরেন পেপসি আর কোকাকোলার মতো আরকি। নাম দুইটা কিন্তু কাম একই
আমি কই- আমি ম্যানুয়াল ইকোনোমিক্সের মানুষ। অতসব বুঝি না। আপনি আমার লাইগা একটা ঠিক কইরা দেন...
সে হা কইরা আমার দিকে তাকাইয়া হাসে- তাই? ঠিকাছে। আপনি ভিসা নেন। এই কার্ডটা দেখতে সুন্দর...

সন্ধ্যাবেলায় আধা ইংলিশ আধা বাংলায় সেই ব্যাংককন্যার ফোন- আপনার কাছে একটা প্রশ্ন আছে আমার...

এই কথা শুইনা আমি পুরাই ঘাবড়ায়া গেলাম। আবার না আমার আয়-ইনকাম জাইনা কইয়া দেয় যে তারা কার্ড দিলেও আমারে ভরসা করতে পারে নাই দেইখা সেইটা অ্যাক্টিভেট করব না আর...

বুকের ভয় গলায় চাইপা আমি কই- কী বিষয় বলেন তো শুনি?

ব্যাংককইন্যা প্রশ্নের উত্তর না দিয়া নিজের বায়োডাটা কইতে শুরু করে- আমি অস্ট্রেলিয়া দেশে ইকোনোমিক্সের অমুক শাখা নিয়া পড়াশোনা করছি। তারপর দুই বচ্ছর হয় দেশে আইসা চাকরি নিছি এই ব্যাংকে...

আমি তার অর্ধেক কথা বুঝি আর অর্ধেক না বুইঝাই অপেক্ষা করতে থাকি অস্ট্রেলিয়ান প্রশ্নবোধক ইংরেজিতে কোন সময় না সে আমারে স্যরি শুনাইয়া দেয়...

সে তার কাহিনি শেষ কইরা আমারে কয়- আপনি আইজ কার্ড নিবার সময় ইকোনোমিক্সের একটা শাখার নাম কইছিলেন না?

আমি আবার ডরাইলাম। আমার হাতে কার্ড দিয়া এখন ইকোনোমিক্সের পরীক্ষায় ফেইল করাইয়া কইতে চায় যে মডার্ন ইকোনোমিক্স বুঝি না দেইখা তাগো কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা আমার নাই। আমি ঢোক গিলা কই- ইকোনোমিক্সের শাখা? আমি?...

ব্যাংককইন্যা হাসে- আপনি নিশ্চয়ই ইকোনোমিক্সের অনেক খোঁজ খবর রাখেন। যেহেতু এইটা আমার ভার্সিটির বিষয় আর আমি মূলত ইকোনোমিক্সে মাস্টারি করার পরিকল্পনায় আছি তাই এই বিষয়ে আমার আগ্রহ একটু বেশি...

আমি ধান্দায় পড়লেও নিজের ধান্দা নিজের ভিত্রে চাইপা জিগাই- আপনের প্রশ্নটা কী?
সে কয়- আপনি না কইছিলেন আপনি ম্যানুয়াল ইকোনোমিক্সের মানুষ?
আমি কই- হ; ঠিকই তো। কইছিলাম তো...
সে কয়- ওয়েলফেয়ার ইকোনোমিক্স পর্যন্ত জানি। ম্যানুয়াল ইকোনোমিক্সটা কার থিওরি একটু আমারে বলবেন? এইটার বইপত্র কই পাওয়া যায়?

আমি অতক্ষণে নিশ্চিত হই এই ফোনের লগে কার্ডের কোনো সম্পর্ক নাই। এইটা হইল একজন ক্যারিয়ারিস্ট বিদ্যার্থীর আজাইরা বিদ্যা অর্জনের প্রচেষ্টা। আমি কই- ম্যানুয়াল ইকোনোমিক্সটা কিন্তু আমার আবিষ্কার...
- আপনার? আপনি ইকোনোমিস্ট? কোন ভার্সিটি?
- আমি কই ভার্সিটি না। ফুটপাথ। আর ম্যানুয়াল ইকোনোমিক্স হইল কামলাগো অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। মানে হইল দশ টেকা মজুরি হইলে দিনের শেষে ক্যাশ ধরাইয়া দেওয়া কিংবা অর্ধেক মজুরি দিয়া বাকি অর্ধেক কিয়ামতের দিন শোধ করার লাইগা পকেটে রাইখা দেওয়া। তো ব্যাংকের বাইরে এই রকম ক্যাশনির্ভর কামলাগো অর্থনীতি বুঝাইতে আমি কইছিলাম যে আমি হইলাম গিয়া ম্যানুয়াল ইকোনোমিক্সের মানুষ...

অস্ট্রেলিয়ান ইংরেজিতে প্রতিটা বাক্য গিয়া শেষ হয় এক রকম প্রশ্নবোধক ধাক্কা দিয়া। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ান স্টাইলের হাসিও যে প্রশ্নবোধক হয় সেইটা পয়লা বুঝলাম ব্যাংককইন্যার হাসিতে- আপনে ব্যংকে আইসা ফাইজলামি করছেন?

আবার ডরাইলাম। কইলাম- ফাইজলামি করি নাই। সরলভাবে সত্য কথাটা কইছি...
- অথচ আপনের কথার উপর ভরসা কইরা দুইজন সিনিয়ররে আমি ম্যানুয়াল ইকোনোমিক্স নিয়া জিগাইছি। আমার ভার্সিটির প্রফেসররেও ইমেইল করছি...

যাউক গা। ম্যানুয়াল ইকোনোমিক্সে আমার কার্ড খোয়া যায় নাই। বরং কার্ড পাইয়া এলোপাথাড়ি খরচা করার ফলে যখন বেসামাল অবস্থা তখন এই ব্যাংককইন্যা নিজের চাকরির রিস্ক নিয়া আমারে বহুত বড়ো দেনা থাইকা বাচাইয়া দিছিল তার ক্ষমতার অপব্যহার কইরা...

লোনের লাইগা দৌড় শুরুর পুরা এক বচ্ছরের মাথায় চেয়ার টেবিল সাউন্ড সিস্টেম প্রিন্টার ইউপিএসসহ কিনতে পারলাম এক সেট ডেস্কটপ কম্পিউটার। অবশ্য তার পরের তিন তিনটা বচ্ছর আমারে টের পাইতে হইছে আন্তর্জাতিক লোকাল ব্যাংক কাহাকে বলে। রিলেশনশিপ ফি আর সরকারি ট্যাক্স কত প্রকার ও কী কী?

একগাদা রিরাইটেবল সিডিতে আছিল আমার সকল লেখা। এক কম্পিউটার অপারেটররে ঠিকা দিয়া দিছিলাম আমার সমস্ত হাতের লেখা টাইপ কইরা দিতে। সকল কিছুই প্রবর্তন ফন্টে লেখা। সিলেটে যে অফিসে আমি কামলা দিতাম সেই অফিসে এক রুমে বসতাম আমি আর এক সিনিয়র কলিগ। আমাদের দুইজনের লাইগা একটা শেয়ার কম্পিউটার আছিল সেইখানে। সিনিয়র কলিগ তেমন একটা কম্পিউটার ব্যবহার করতেন না। আমিই চালাইতাম আর ফাঁকে ফাঁকে টাইপিস্টের কম্পোজ করা লেখা গুলা ধুমায়ে এডিট কিংবা বানান ঠিক করতাম সেই কম্পুতে...

এক্সপি আইসা গেলেও তখনো বাংলা লেখার লাইগা উইন্ডোজ৯৮-এর এক চেটিয়া বাজার। আমি কম্পুতে নিলাম দুইটা উইন্ডো। ৯৮ আর এক্সপি। প্রবর্তন পয়সা দিয়া কিনতে হয় বইলা ইউজার কম। মাইনসের লগে ফ্লপি আদান প্রদান করতে গেলে বিজয় ছাড়া প্রায় বিকল্প নাই...

কম্পুতে নতুন লেখা লেখি এক্সপিতে বিজয়ে। পুরান লেখা এডিট করি ৯৮-এ প্রবর্তন ফন্টে। বইয়ের পাণ্ডুলিপি করি আর প্রকাশক খুঁজি। আস্তে আস্তে ২০০৩ শেষ হয় হয়; প্রকাশক নিশ্চিত হয় না। একেকজন একেক কথা কয়। কবি জফির সেতুও নিজের পয়লা বই করার লাইগা ঘোরে। হঠাৎ আমারে কয়- পয়সা খরচা কইরাই যদি বই করতে হয় তবে নিজেগো একজনেরই না হয় প্রকাশনা হউক?
- সেইটা কেডা?
- টুটুল...

আহমেদুর রশীদ টুটুল। লিটল ম্যাগাজিন শুদ্ধস্বরের সম্পাদক। প্রকাশনা করার ইচ্ছা জানাইছে সেতুরে। সেতু আমারে প্রস্তাব দেয়- চল আমাগো নিজেদেরই না হয় একটা প্রকাশনা সংস্থা হউক...

টুটুলের বহুত আগেই নিজস্ব কম্পিউটার আছিল। কিন্তু ছায়াছবি দেখা আর গেম খেলা ছাড়া কম্পুতে হাত দেয় নাই সে। সেতুর বিসিএস প্রশিক্ষণের অংশ হিসাবে আছে কম্পিউটার চালানোর উপর ফার্স্টক্লাস পাওয়া সার্টিফিকেট; কিন্তু জীবনেও কম্পিউটার ধরে নাই সে। তাই টাইপগুলা আমি করি। আমার একপাশে বইসা বিড়ি টানতে টানতে টুটুল দেখায় ফর্মেটিং আর আরেকপাশে চায়ের কাপ হাতে নিয়া সেতু ধরাইয়া দেয় ভুল বানান...

দুইটা সম্পূর্ণ বই টাইপ হয় আমার কম্পিউটারে। আমার প্রথম বই 'কবন্ধ জিরাফ' আর জফির সেতুর প্রথম বই ‌'বহুবর্ণ রক্তবীজ'। দুইটাই কবিতা। আর এই দুইটা কবিতার বই দিয়াই ২০০৪-এর ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয় প্রকাশনী হিসাবে শুদ্ধস্বরের যাত্রা...

হঠাৎ একদিন টুটুল সংবাদ দিলো জাহাঙ্গীরনগর ভার্সিটির সরকার ও রাজনীতির এক ছাত্র টিউশনি বাদ দিয়া বইসা বইসা বাংলা স্পেল চেকার বানায়। জাহিদুল ইসলাম রবি। শুদ্ধশব্দ নামে অদ্ভুত এক জিনিস বানাইছে সে। ৯৯ ভাগ বাংলা বানান সংশোধন করা যায় তার স্পেল চেকারে। শব্দের রুট ধরাইয়া দিলে অটোমেটিক সবগুলা ভিন্নরূপ ধরতে পারে। নতুন শব্দও যোগ করা যায় ডিকশনারিতে। আর সবচে বড়ো কথা তখন পর্যন্ত দুই বাংলায় বাংলা টাইপের যত প্রোগ্রাম সবগুলা থাইকা সবগুলায় লেখা কনভার্ট করা যায় মাত্র একটা ক্লিক দিয়া....

স্পেলচেকারটায় আরো কিছু কাজ দরকার। কিন্তু এখন পর্যন্ত একটা কপিও বিক্রি হয় নাই বইলা হলে টিকা থাকার লাইগা রবির টিউশনি না কইরা উপায় নাই। আমি কই- আমিই না হয় হইলাম তোমার প্রথম ক্রেতা; তুমি টিউশনি বাদ দিয়া এইটারে ঠিকঠাক করো..

আমার কম্পিউটারটা হইয়া উঠে শুদ্ধশব্দের ল্যাব। রবি একেকটা ভার্সন করে; আমি ব্যবহার করি; তারে ফিডব্যাক দেই আর সে শুদ্ধশব্দরে আরো আপডেট করে। পাশাপাশি আমি তার কনভার্টার দিয়া প্রবর্তনে টাইপ করা আমার হাজারো পৃষ্ঠা বিজয়ে কনভার্ট কইরা ফালাই। জীবনের মতো বিদায় দেই প্রবর্তন ফন্ট আর উইন্ডোজ৯৮। টাইপিস্টের টাইপ করা সবগুলা লেখা প্রুফ করি। একেবারে বাংলা একাডেমি বানান নিয়মে; খালি ক্লিক দিয়া...

আমার কম্পুতে আমি কোনো অ্যান্টিভাইরাস ব্যাবহার করতাম না। অ্যান্টিভাইরাস ছাড়াই চলে প্রায় টানা দশ বছর। এই দশ বছরে শ দেড়েকের বেশি বই প্রুফ-এডিট আর ফর্মেটিং হইছে আমার কম্পুতে। রাতের পর রাত। দিনের পর দিন। সম্ভবত বাংলা ইউনিকোডে প্রথম প্রকাশনা; মুহাম্মদ জুবায়ের রচনাবলি আর সচলায়তন সংকলন; তাও প্রসেস হইছে এই কম্পিউটারে। এবং তারপর..। একদিন ঠাস কইরা মইরা গেলো আমার কম্পিউটার। হার্ড ডিস্ক ক্রাশ...

ততদিনে আমি আরো বহুত বহনযোগ্য কম্পিউটার ব্যবহার করি। সব লেখা আর শুদ্ধশব্দের ব্যাকাপ আছিল দেইখা কান্নাকাটি করা লাগে নাই। যদিও ব্যাকাপ-বিহীন হাজার খানেক সফট বইয়ের লাইব্রোরি; অনেকগুলা ফিল্ম আর প্রচুর ছবি রিকোভারি দিয়াও উদ্ধার করতে পারি নাই...

কাজে না লাগলেও বিশাল সেটের অব্যবহৃত কম্পিউটারটা থাইকা গেলো আমার বেডরুমে। আমি খালি চেয়ার আর টেবিলটা ব্যবহার করতাম আমার সর্বশেষ নবাবি বাস্তবায়নের লাইগা। আমার শেষ পর্যন্ত টিকে থাকা নবাবিটা আছিল সকাল বেলা চেয়ারে বইসা টেবিলে পা তুইলা বিড়ির সাথে নিজের হাতে বানানো এক মগ চা খাওয়া। মাইয়ার বাপ হওয়ার আগে পর্যন্ত কম্পিউটারের চেয়ার আর টেবিলটা ধইরা রাখছিল আমার নবাবি। তারপর সেই নবাবিটা গেলেও বাসাটা বিশাল আছিল দেইখা জায়গার কোনোই অভাব আছিল না পরিত্যক্ত জিনিসটা রাখার। অন্য একটা ঘরে প্রায় তিন বছর জিনিসটা ফালাইয়া রাখছিলাম ধুলা খাওয়ার লাইগা। কিন্তু একটা সময় আসলো বাড়ি বদলের প্রশ্ন...

টেবিল ৫০০ টাকা- ইউপিএস ৫০০ টাকা- সাউন্ড সিস্টেম ৫০০ টাকা- মনিটর ৩০০ টাকা- সিপিউ ৩০০ টাকা আর কালার প্রিন্টার ৩০ টেকা মাত্র। মোটমাট ২১৩০ টেকা পাইলাম ভাঙারি দোকানে সব বিক্রি কইরা দিয়া। তেরো বচ্ছর পরে কম্পিউটার সেট বিক্রি কইরা ছত্রিশ কিস্তিতে শোধ করা লোনের অন্তত একটা কিস্তির টেকা ফেরত পাইলাম আমি...

কিন্তু বাকিটা?
স্পেল চেকার শুদ্ধশব্দ আর আগাবে না। সোর্স ফাইলসহ রবির ল্যাপটপ চুরি হইয়া গেছে। সর্বশেষ এক্সপি ভার্সনটা টিকা আছে আমার একটা ল্যাপটপে। রবির পক্ষে আর এই স্পেল চেকার তৈরি কিংবা আপডেট সম্ভব না; এক্সপি নিজেই এখন ইতিহাস। আর বহুত বয়স্ক আমার ল্যাপটপটা যেকোনোদিন মইরা যাইতে পারে বিনা নোটিসেই। এবং তারপর আবার কেরানি প্রক্রিয়ায় খুঁইটা খুঁইটা বানান সংশোধন...

বই প্রকাশ বাংলাদেশে লাভজনক না বইলা লেখকরেই প্রকাশকের পুরা দায়িত্ব নিতে হয়। প্রকাশক শুধু দায়িত্ব নেন ছাপানোর। সম্পাদনা- বানান- ফর্মেটিং কিংবা কম্পিউটার থেকে কম্পিউটারে যাতায়াতে ফন্ট ভাঙাভাঙি সব দায় পড়ে লেখকের ঘাড়ে। কিন্তু লেখকরা আবার পুরাই উদাসীন এই জগতে...

একটা মিশন নিছিলাম; একশোজন লেখকের প্রথম বইয়ে কাজ করব লেখকদের পাশে বসায়ে; এডিট- প্রিফ- ফর্মেটিং আর প্রকাশনার বেসিকটা ধীরে ধীরে ধরায়ে দেবো যাতে অন্তত পরে নিজের প্রকাশনাটা নিজে ম্যানেজ কইরা নিতে পারেন...

আমার একশোজনের টার্গেট পার হয়ে গেছে বহু আগে। কিন্তু সেই লেখকদের পরের বইগুলাও দেখি একই ভুল নিয়া প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশে প্রকাশকেরা বইয়ের দায়িত্ব কোনোদিনও নিবেন না সেইটা জানা কথা। তয় যেটা জানতাম না তা হইল বাংলাদেশের লেখকরা শিখতে চান না কিছুই। মূলত এক্কেবারে বেহুদা গেছে আমার এই কেরানি সাপোর্ট...

ইউনিকোড হুহু করে এগোচ্ছে অনলাইনে। সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাসেবায় তৈরি এই প্রক্রিয়া আর কতদিন লাগবে ছাপা প্রকাশনের সম্পূর্ণ উপযোগী হইতে? প্রথম দুইটা বই করতে গিয়া যতসব বিষয় আলাপ করছিলাম সেইগুলা কি মনে রাখছে টেকনিক্যাল কেউ? কে জানে?

আর সেতু যে বলছিল আমাদের নিজেদের একটা প্রকাশনী হওয়ার কথা? সেই শুদ্ধস্বর?
আমার কম্পুতে শুরু হইয়া গত বারো বছরে হাজার তিনেকের বেশি বই প্রকাশ করা আমাদের প্রকাশনী শুদ্ধস্বর থাকবে তো? নাকি ভাঙারি দোকান থেকে পাওয়া ২১৩০ টাকাই হবে আমার কম্পিউটার থেকে পাওয়া একমাত্র অর্জন?
২০১৫.০৭.২০ সোমবার

বাড়ি বদলের গল্প ৩: বিষণ্ন পত্রাবলি
বাড়ি বদলের গল্প ২: লিটল ম্যাগাজিন
বাড়ি বদলের গল্প ১: দখলদারি


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

কী যে দিন গেছে আপনাদের, এরকম লেখা না পেলে জানতেই পারতাম না। আমরা যে কত আরামে বাংলা লিখি, আপনাদের সংগ্রামটা টের পাই না...

- উদ্দেশ্যহীন

মাহবুব লীলেন এর ছবি

যত দিন আরামে থাকা যায় ততদিনই লাভ

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

মাহবুব লীলেন এর ছবি

হ। কী আর করা

এক লহমা এর ছবি

গুরু গুরু আপনে একটা অমানুষ! গুরু গুরু

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

মাহবুব লীলেন এর ছবি

মানুষ হইলে তো হইতই। নব্বই সালে একপাতা প্রুফ দেখলে নিতাম ২০ টেকা। আর ২০০৩ সালের পরে বছরের পর বছর প্রুফ দেখলাম মাগনায়; টাইপও করে দিলাম মাগনা (যারা করাইত তাগো আবার থাকা খাওয়া বিড়ি চা সবসহ পুরা মাগনা প্যাকেজ)

সাতিহ্য ফাহিত্য বাদ দিয়া নীলক্ষেতে টাইপ করতে বসলে আর পরের বাড়িতে কাম কইরা খাইতে হইত না আইজ

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

রম্যের আড়ালে কি নিদারুন বিষাদ!

মাহবুব লীলেন এর ছবি

বিষাদ অখন আর বিকায় না ভাইজান; সব কিছুতেই কিছু স্বাদ দেয়া লাগে

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

আহা শুদ্ধস্বর! থাকবে থাকবে! যাবে কই হাসি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

মাহবুব লীলেন এর ছবি

হ। থাউক

ময়ুখ কিরীটি এর ছবি

বাড়ি বদলের এই পর্বতেই সম্পূর্ণ আনন্দটা পেলাম- ঠিক মহাভারতের মতোই!! ঋণপ্রাপ্তি যতটা রসময় ছিল শেষাংশে সংগ্রামটা ততটাই বিষাদময় ঠেকলো চিন্তিত ......আসলেই

রম্যের আড়ালে কি নিদারুন বিষাদ!

আমিও প্রাগৈতিহাসিক একটা কম্পু নিয়ে বিপদে আছি.....স্বেচ্ছায় ঘাড়ে করে বয়ে এনে এখন তাড়াবার পাঁয়তারা করছি- দেখা যাক!!

মাহবুব লীলেন এর ছবি

সময় থাকতে বিদায় করেন; সে নিজে যদি বিদায় নেয় তাইলে কিন্তু কানতে হইব

থার্ড আই এর ছবি

তৃপ্তি নিয়ে আপনার কাহিনী পড়লাম। আপ্নিতো তাও শেষ পর্যন্ত লোন পাইছিলেন। শুনেছি ঢাকায় নিয়ম করে ব্যাংকগুলো সাংবাদিকদের লৌন দেওয়া নিষিদ্ধ করে রেখেছে।

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

মাহবুব লীলেন এর ছবি

সাংবাদিক আর মিডিয়ার লোকজন লোন পায় না কারণ তাদের পদবীগুলা ব্যাংকারা বোঝে না। পদবী দেইখা বোঝে না উনি সংবাদের উপরের দিকে কাজ করেন নাকি নীচে...

সাংবাদিকদের পদবিগুলা যদি ব্যাংকের মতো কইরা দেওযা যায়; যেমন নিউজ অফিসার; সিনিয়র নিউজ অফিসার; ডেপুটি এডিটিং ম্যানেজার... তাইলে কিন্তু লোন পাইবেন

তাসনীম এর ছবি

অসাধারণ লাগলো।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ধন্যবাদ

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

আপনার বাড়ি বদলের গল্পগুলো শুনে আমার দেশ বদলের গল্প মনে পড়ে যায়। বদল মানেই ফেলে আসা। বাড়ি বদলে তাও কিছু বই টই সাথে রাখতে পেরেছেন। আমি একবার সব বই টই ছেড়ে দেশ বদল করলাম বঙ্গ থেকে কেনা জ্যাকেট আর হাতমোজা সঙ্গী করে। আবার সেখানে যখন নিজের মতো একটা জায়গা শহর একটা লাইব্রেরি গড়ে উঠছে, তখন মাথায় ক্যারা উঠে আবার দেশ বদল। এবার সঙ্গী শুধু একটা সুটকেস। আবার নতুন দেশ নতুন জায়গা, নতুন বই, নতুন বন্ধু, নতুন কাজ। তারপর আবার দেশ বদল। সঙ্গী শুধু একটা সুটকেস। বদলাতে বদলাতে বদলে যাওয়াই আমাদের নির্ভুল নিয়তি।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

মাহবুব লীলেন এর ছবি

তাই লিখি দিল বিশ্ব নিখিল দুবিঘার পরিবর্তে

আপনার লাইগাই বোধহয় রবীন্দ্রনাথের এই লাইন লেখা

আপনি এখন ব্যক্তিগত বইয়ের মায়া ছাইড়া দুনিয়ার সব বইয়ের মালিকানা দাবি করতে পারেন (মনে মনে)

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

ভাইরে, সাধের বইগুলো আত্মীয়-বন্ধু বান্ধবকে দান করে দিয়ে, কিছু বিক্রি করে দিয়ে দেশ বদল করলাম। এখানেও আস্তে আস্তে একটা সংগ্রহ হচ্ছে - আরো বাড়বে। আবারও বদলাতে হবে কিনা জানি না - কিন্তু বইগুলোর কথা "শয়নে স্বপনে ভুলিতে পারিনে"।

____________________________

সো এর ছবি

চলুক
অনেকদিক থেকেই ভাবছিলাম সচলের এক্সপেরিয়েন্সড কাউকে 'বই কিভাবে ছাপাবেন' সূচক একটা পোস্ট দিতে বলবো।
এখান থেকে একটা ঝাপসা ধারণা পেলাম।
আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

মাহবুব লীলেন এর ছবি

একবার আছাড় খাওয়ার অভিজ্ঞতা যেমন দ্বিতীয়বার আছাড় না খাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা দেয় না
তেমনি প্রিন্টিংএর কোনো অভিজ্ঞতাই কোনো কাজে লাগে না

০২
বই প্রিন্টিং ধর্মের মতো; আমাদের উপর নাজেল হইলে আমরা তা অনুসরণ করি আর বলি- প্রকাশক যা কিছু করেছেন; মঙ্গলের জন্য করেছেন; আমি বেবুঝ মানুষ; আমার বই উল্টাপাল্টা করার মধ্যে আমার সাহিত্য জীবনের যে কোন উজ্বল ভবিষ্যতের ইংগিত লুকাইয়া আছে; তা কেবলই তিনি জানেন...

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

আর বহুত বয়স্ক আমার ল্যাপটপটা যেকোনোদিন মইরা যাইতে পারে বিনা নোটিসেই।

মানে আবার ব্যাংক লোনের পায়তারা, আবার সুন্দরি ব্যাংকার, আবার অর্থনীতির নতুন তত্ত্ব! ভালোই, চালিয়ে যান!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আমিতো সুন্দরী কই নাই? আপনে জানলেন কেমনে? আপনি তিনারে চিনেন? বড়োই দয়ালু ব্যাংকার

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

আমি সুন্দরি কইছি, মনটা সুন্দর মানে দয়ালু তো, তাই! জানছি আপনার লেখা আর মন্তব্য পইরা! হাসি

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রকাশক শুধু দায়িত্ব নেন বই ছাপানোর

কথাটা যে কতটা সত্যি সেটা বুঝেছি এইবারের বইমেলায় নিজের প্রথম বই বের করতে গিয়ে। প্রুফ চেক সহ প্রতিটা লাইন আমি লিখে দিয়েছি তারপরেও ফন্ট তো ভেঙেছেই বানানগুলোও যাচ্ছেতাই ছিল। জিজ্ঞেস করায় বলে আপডেটেড টেক্সট এর বদলে আগের টেক্সট ছাপিয়ে দিয়েছে। কোন বিকার নেই, এমন নাকি হতেই পারে। বইমেলার স্টল থেকে প্রায় ৫০ কপি বই বিক্রি হয়েছে সেটার টাকা এখনও দেয় নি, ঘুরাচ্ছে। আবার বলে সামনের বইমেলায় বের করবার জন্য অগ্রিম টাকা যেন দিয়ে রাখি। আমিও চুপ আছি। আগে পাওনাগুলো হাতে পাই, তারপর কিছু কথা শোনাব। আপনার লেখাটা দারুণ লেগেছে।

ফাহমিদুল হান্নান রূপক।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

এইটারে দুঃখ হিাসাবে না নিয়া শিক্ষা হিসাবেই নিলেই ঝামেলা শেষ; এইটা এমন শিক্ষা যা অনন্ত কালেও শেষ হয় না; আবার পয়লা পুস্তকে শিকা বর্ণমালা দিয়া দ্বিতীয় পুস্তকের বাক্য পড়া যায় না...

০২
সাহিত্যের লগে টেকার কী সম্পর্ক? সাহিত্য হইবে মনের আনন্দে; তারপর পাঠকদের আনন্দিক করতে পারলে লেখক যেদিন কোমায় যাইব তখন পাঠক/প্রকাশকরা দরিদ্র লেখক সহায়তা তহবিল কইরা সাপোর্ট দিব...

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাইরে আনন্দের জন্যই তো নিজের খরচে বই বের করসিলাম। ব্যাপক আনন্দ পেয়েছি। হাসি তবে আপনাকে কেউ যখন বলবে যে বই বিক্রির টাকা জমেছে এসে নিয়ে যান এবং তারপর থেকেই মূলা ঝুলাঝুলি তখন বিরক্ত তো লাগবেই। তবে আশার কথা হচ্ছে সামনের বইটা মনে হয় নিজের পকেট থেকে খরচ না করেই বের করা সম্ভব হতে পারে। হাসি

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

মাহবুব লীলেন এর ছবি

টেকা খর্চা না করে বই প্রকাশের জন্য আগাম অভিনন্দন;

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ভীষণ একটা এক্সাইটিং সময়ের মধ্যে দিয়ে গেছেন আপনারা। হ্যাটস অফফ!

মাহবুব লীলেন এর ছবি

এক্সাইটমেন্ট খারাপ না; কিন্তু হাতে হাতে প্রুফ দেখার যন্ত্রণা আর প্রকাশনার সময় বাংলা ফন্টের বিকট ভাঙাভাঙি থেকে কবে রেহাই পাব জানি না

মরুদ্যান এর ছবি

হাততালি

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আইচ্চা

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

১। একশোজন লেখকের প্রথম বইয়ে কাজ করব লেখকদের পাশে বসায়ে; এডিট- প্রিফ- ফর্মেটিং আর প্রকাশনার বেসিকটা ধীরে ধীরে ধরায়ে দেবো যাতে অন্তত পরে নিজের প্রকাশনাটা নিজে ম্যানেজ কইরা নিতে পারেন...

২। ইউনিকোড হুহু করে এগোচ্ছে অনলাইনে। সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাসেবায় তৈরি এই প্রক্রিয়া আর কতদিন লাগবে ছাপা প্রকাশনের সম্পূর্ণ উপযোগী হইতে? প্রথম দুইটা বই করতে গিয়া যতসব বিষয় আলাপ করছিলাম সেইগুলা কি মনে রাখছে টেকনিক্যাল কেউ?

এই দুইটা জিনিস ডিটেইলসে লিখে ফেলেন না। লিখিত আকারে থাকলে নতুন লেখকরা সহজে পেতে পারবেন, আর কেউ চাইলে ইউনিকোডে বাংলা লেখার সফটওয়্যার তৈরির সময়ে আপনার লেখার সহায়তা নিতে পারবেন।

____________________________

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।