আমার বাবা

মাশীদ এর ছবি
লিখেছেন মাশীদ (তারিখ: শুক্র, ০৭/০৯/২০০৭ - ৪:২৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


আমি আমার মায়ের মেয়ে। সেই ছোটকাল থেকে আমার মা-ই আমার সব। বাসার সবচেয়ে ছোট ছিলাম, সবসময় দেখেছি আমার মা আমাকে আগলে আগলে রাখে, সাথে আরো আগলে রাখে আমার বড় দু'বোন। আমার বাবার সাথে তাই সেই ছোটকাল থেকেই আমার অনেক দূরত্ব।

আর আগলে রাখার অনেক কারণ-ও ছিল! আমার অধ্যাপক বাবাকে ছোটকাল থেকেই দেখেছি ভীষণ বদরাগী। হুট করে রেগে যায় কিছু হলেই। সব ব্যাপারেই ভীষণ কড়া, বিশেষ করে পড়ার ব্যাপারে। মনে আছে, স্কুলে রেজাল্টের দিন কি রকম ভয়ে ভয়েই না স্কুলে যেতাম। প্রথম তিনজনের ভিতর না থাকলে তো বাসায় যাওয়াই যাবে না! আমার বোনদেরকেও দেখতাম কেমন ভয়ে ভয়ে থাকে। আব্বার কাছে অংক করতে বসে প্রতিদিন দেখতাম আমার মেজবোন চড় খেয়ে কাঁদতে কাঁদতে ফেরত আসছে। একবার ক্লাস সেভেনের রেজাল্টের পরে আব্বা অফিস থেকে বাসায় ফোন করল। আব্বার সাথে আমার কথোপকথন ছিল অনেকটা এমন:

আব্বা: রেজাল্ট কি?

আমি: ফার্স্ট হয়েছি।

আব্বা: গুড, গুড। (একটু থেমে) তা, নোরীনের রেজাল্ট কেমন হল?

আমি: নোরীন থার্ড হয়েছে।

আব্বা: (চিৎকার দিয়ে) দেখেছ কত এগিয়ে গেছে???

বলাই বাহুল্য, আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। এখনো প্রায়ই ভাবি আব্বা আমার থেকে সেদিন কী চেয়েছিল। পরীক্ষার হলে নিজের উত্তর লেখার পরে আমার কি উচিত ছিল নোরীনের খাতায় কালি ছুঁড়ে আসা? আমার ক্লাসমেট সেই নোরীন ক্লাস এইটে ক্যানাডায় চলে গিয়ে আমাদের বহু আগে গোল্ড মেডেল পেয়ে কেমিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং এ আন্ডারগ্র্যাড করে এখন এম আই টি তে পি এইচ ডি'র প্রায় শেষের দিকে, যেখানে আমি টেনে-টুনে মাস্টার্স শেষ করলাম মাত্র।

পড়া নিয়ে আব্বার বাড়াবাড়ি নিয়ে আরো অনেক মজার গল্প আছে। সবচেয়ে মজার গল্পটা আমার বিয়ের সময়কার। বিয়ের আকদ্ পড়ানোর সময়, খুবই গুরুগম্ভীর পরিবেশ, আমি আর আমার মা পালাক্রমে কান্নাকাটি করছি। আমি যে বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছি, সেটা নিয়ে আমার বাবাকে বেশি চিন্তিত মনে হল না। তার চিন্তা অন্যখানে। বিয়ের একমাসের মাথায় আমি মাস্টার্স করতে দেশের বাইরে চলে যাব, সেখানে আমার প্রোগ্র্যামিং ল্যাঙ্গুয়েজ জানার দরকার থাকতে পারে, কিন্তু ঐদিকে আমার বিদ্যার অবস্থা খুবই খারাপ। আব্বা অরূপের কথা শুনেছে যে সে এইদিকে বেশ ভাল। তো কাজী যখন বিয়ে পড়ানো শেষ করেছে, মেয়ের বাবার যেখানে ছেলেকে গিয়ে বলার কথা 'বাবা, আমার মেয়েকে দেখেশুনে রেখো', সেখানে আমার বাবা আমার বরকে গিয়ে বলল,'বাবা, আমার মেয়েকে প্লিজ একটু C প্রোগ্র্যামিং শিখিয়ো'!

এই হল আমাদের বাবা। সামনে আমরা ডাকি আব্বা। পিছনে আমাদের বোনেদের মধ্যে কোডনেমটাও কাকতালীয়ভাবে ছিল C - ক্যাট বা বিড়ালের ছোট ফর্ম, কারণ আব্বার পায়ের আওয়াজ পাওয়া যেত না। যখনি আমরা পড়ায় ফাঁকি দিয়ে অন্যকিছু করতাম, তখনি নিঃশব্দে সেখানে চলে আসার এক অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল। পড়া ছাড়াও নানা কড়াকড়ি ছিল বাসায়। বোনেদের কারো কোনখান থেকে ফিরতে একটু দেরী হলেই অন্যদের উপর দিয়ে ঝড় বয়ে যেত। ‌এসব সময় আমাদের বোনেদের ভরসা ছিল আম্মা। ছোটকাল থেকেই তাই আমার মা যেমন আমার বন্ধু, আমার বাবার সাথে তেমনি এক বিশাল দূরত্ব। তাকে নিয়ে আমাদের ভয় আর নানা অভিযোগ। পারতপক্ষে ধারে-কাছে যাই না।

ইউনিভার্সিটিতে ঢুকেও সেটার কোন ইমপ্রুভমেন্ট হল না। টের পেলাম, আমার বাবার সাথে যেকোন কনভার্সেশান গ্রেডের দিকে চলে যায়। আমরা হয়তো একসাথে টিভি দেখছি, আমি হয়তো কথা শুরু করলাম 'বাহ্! আন্ডারওয়াটার ওয়ার্ল্ড নিয়ে ন্যাট জিও'র এই শো'টাতো খুব সুন্দর!' এটা বলে, কিন্তু কথার শেষে দেখা যাবে আব্বা বলছে 'তুমি গত টার্মে ফ্লুয়িড মেক্যানিক্সে জানি কী গ্রেড পেয়েছিলে'? দূরত্ব শুধু বেড়েই চলে। পরীক্ষার সময় তাই থাকে বাড়তি চাপ। না পড়ার চেয়ে টেনশানেই পরীক্ষা সেইরকম ভাল হয় না। ইউনির সামগ্রিক রেজাল্ট খুব খারাপ না হলেও, প্রথম পাঁচের মধ্যে থাকা হল না। আর তাই ফ্যাকাল্টিতেও জয়েন করা হল না। সেই বিশ্ববিদ্যালয়েরই অধ্যাপক আমার বাবা খুবই হতাশ হলেন আমাকে নিয়ে। আর এই হতাশা দেখে আমার হল রাগ। এই রাগ মনে হয় ছিল সেই ছোটকাল থেকে পড়া নিয়ে বাড়াবাড়ি রকমের এক্সপেকটেশানের জন্য পুঞ্জীভূত আক্রোশ।

ততদিনে আমার বাবার রিটায়ার্মেন্টের বয়স চলে এসেছে। আমরা দু'জন একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়লাম নিজেদের মধ্যে বিশাল দূরত্ব, আর তার সাথে দু-পাক্ষিক রাগ নিয়ে। আমার ইচ্ছা অ্যাডফার্মে ঢোকা, আমার বাবার ইচ্ছা হয় হাইয়ার স্টাডিস নয় কোন টিচিং লাইন। যাহোক, কেমন করে যেন দু'জন একই প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে চাকরি নিলাম। আব্বা অধ্যাপক হিসেবে, আমি পার্ট-টাইম একটা কোর্স নিতে। আমার জন্য এর থেকে খারাপ আর কিছুই তখন হতে পারেনা। আব্বা আর আমি এক খানে! একসাথে যাওয়া-আসা! সবসময় লুকিয়ে লুকিয়ে থাকা আমার মাথায় বাজ পড়ল।

সেই চাকরি আমি করলাম প্রায় পাঁচ মাস। মাস্টার্স করতে বিদেশে চলে আসার আগ পযর্ন্ত। ঐ পাঁচ মাসে অনেকদিনের অনেক কিছু বদলে গেল অনেক। আব্বার সাথে কখনো বাসার গাড়িতে বা কখনো এক বাসে যাওয়া-আসার ফাঁকে ফাঁকে কেমন করে যেন এতদিনে দূরত্ব ঘুঁচতে থাকল একটু একটু করে। লাঞ্চ করার জন্য ঐ ইউনি'র রাস্তার আশেপাশের প্রায় সব দোকান কিছুদিনের মধ্যেই চষে ফেললাম আমরা দু'জন। আমি টের পেলাম, বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন খাবার টেইস্ট করে আনন্দ পাবার ইন্টারেস্টটা আমার জেনেটিক। এই প্রথম আব্বাকে দেখা শুরু করলাম অন্য আলোয়।

এরপর আস্তে আস্তে আরো অনেক মিল খুঁজে পেলাম। আমি টের পেলাম, আমার বাবার থেকে আমি শুধু চিংকুটাইপ চেহারাটাই পাইনি, খুব আশ্চর্য হলেও, আমার আরো অনেক কিছুই আমার বাবার মতন। আমার বাবা আর আমি টিভিতে প্রায় এক জিনিস দেখি, সে HBO-ই হোক বা Discovery. ইন ফ্যাক্ট, বেডরুমে রাখা টিভি দু'জন একই ভঙ্গীতে আরাম করে বিছানায় কাত হয়ে পড়ে দেখি। আমরা দুইজনই P G Wodehouse এর বইয়ের ভীষণ ফ্যান। আব্বার পুরনো কালেকশান আমি কিছু বাড়িয়ে দিলাম। আরেকটা ব্যাপার খেয়াল করলাম, আমরা তিনবোনই আমাদের বাবার বিখ্যাত মেজাজটাও ইনহ্যারেট করেছি।

বিদেশে চলে আসার পরে সবকিছু নিয়ে নিজের মত করে ভাবার অনেক সময় যখন পেলাম, তখন এসব মিল আরো প্রকট হয়ে গেল। আমারো এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়াতে ভাল লাগে, ভাল লাগে তার ছবি তুলতে। আমার বাবারও সেই আমলে বক্স ক্যামেরা ছিল, ছিল ভিডিও ক্যামেরা। আমার একদিন বয়সের সাউন্ড ছাড়া ভিডিও ছিল। আর ছিল অসংখ্য ছবির স্লাইড যেগুলো অনেক আগে আব্বার ইউরোপ ভ্রমণের সময়কার। ছোটকালে স্লাইড আর ভিডিও প্রোজেক্টারে সেসব ছবি দেখা ছিল আমাদের সবচেয়ে দারুন এন্টার্টেইনমেন্ট। গতবছর যখন আমার কাছে বেড়াতে এল, দেখলাম ঠিক যেসব জায়গা আমার প্রিয়, আব্বারো সেসব ভাল লাগল।

যাহোক, একা থাকতে গিয়ে টের পেলাম অনেক কিছু। নিজেকে চিনতে থাকলাম অন্যভাবে। টের পেলাম, আমি সবার সাথে খুব ভাল থাকি, কিন্তু খুব কাছের মানুষদের সাথে হুটহাট খারাপ ব্যবহার করি মাঝেমাঝেই, যেটা হয়তো ঠিক মীন করিনা। রেগে যাই পট করে, তবে রাগ পুষে রাখি না কখনোই। ছোটকালের অনেক ঘটনা অন্য আলোয় দেখা শুরু করলাম। সবসময় ভেবে এসেছি অলটাইম গম্ভীর আর রাগী-রাগী থাকা আব্বা হয়তো আমাদের জন্য কেয়ার করেনা তেমন। কিন্তু নানা স্মৃতি এখনকার আলোয় আবার দেখতে গিয়ে মনে হল অনেক কিছুই হয়তো আমি ভুল বুঝেছি সেসময়। আব্বাও হয়তো আমার মতই রাগ পুষে রাখেনি কোনদিন। আব্বাও হয়তো আমার মতই কেয়ার করে। কিন্তু আমি তো উল্টো ভেবে আরো দূরে সরে গেছি। ছোটকালে মানুষ কত ভুল বুঝেই না কত সময় নষ্ট করে!

স্মৃতি হাতড়ে মনে হল, আমার সবকিছুর মধ্যেই আমি যত দূরেই পালাতে চেয়ে থাকিনা কেন, আমার বাবা আমার পাশে সবসময়ই ছিলেন। সেই স্কুল থেকে নিয়ে আসাই হোক, বা এখন ভিসা অফিসে নিয়ে যাওয়াই হোক। পড়া নিয়ে এককালের বাড়াবাড়ির যৌক্তিকতাটাও এখন বুঝতে পারি অনেক যখন দেখি অনেক কালচারাল এক্টিভিটির মধ্যেও পড়াটা সিরিয়াসলি নেয়া এখন হ্যাবিটে দাঁড়িয়েছে, আর এই হ্যাবিটের জন্যই অনেক কম পড়েও অনেকের থেকে ভাল করা অনেক সহজ হয়ে গেছে। দেশ ছাড়ার সময় এয়ারপোর্টে এখন যেমন করুণ মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকেন, মনে হয়ে যায় সেরকমই করুণ মুখে দাঁড়িয়েছিলেন আমার পাশে, ক্লাস টু'তে যেদিন DMC'র ইমার্জেন্সিতে আমার কেটে যাওয়া ঠোঁটে সেলাই দেয়া হচ্ছিল।

কিন্তু এতদিনের দূরত্ব হুট করেই পার হতে পারিনা। যখন মা'কে ফোন করি প্রায় রোজ আর মা বাসায় না থাকলে কালে-ভদ্রে আব্বা ফোন ধরলে বলে ওঠে 'কি রে মা, কেমন আছিস? তোমার মা'এর জন্য আমি তো চান্সই পাইনা কথা বলতে!' তখন মনে হয় এক দৌড়ে ছুটে যাই দেশে। আমাকে দেখতে দু'জন যেবার বেড়াতে আসল, আমি আমার বন্ধু মা'কেই বেশি সময় দিলাম। চলে যাবার পরে কিন্তু বাবাকেই মিস করলাম বেশি। সবসময় ভাবি, অনেক সময় নষ্ট করেছি ভুল ভেবে, এখন ঠিক করব, কিন্তু কেন যেন আরো সময় চলে যেতে থাকে। এবার দেশে গিয়েও কেমন করে যেন সময়গুলো সব মা আর বন্ধুদেরকেই দিয়ে দিলাম। আব্বাও কেমন যেন, আগের মতই ডিসট্যান্ট, অনুভূতির বহির্প্রকাশ প্রায় নেই। শুধু একদিন প্রবাসী আমার আর আমার মেজবোনকে নিয়ে দুঃখ করে বলল,'কেন যে তোমরা এত দূরে থাক!' আমার বুক ভেঙে কান্না পেল। আব্বা কোন দূরত্বের কথা বলল? শুধু কি ভৌগোলিক, না আরো বেশি?

আমার মায়ের মত আব্বা কোনদিন পারেনি খুব সহজেই আমাদের 'ভালবাসি' বলতে। আজকে খুব হতাশ লাগে যখন দেখি সেটা আমিও পারছি না। আমার খুব বলতে ইচ্ছা করে 'আব্বা, প্লিজ, আমার মতো তুমিও আমাকে ভুল বুঝো না। বিশ্বাস কর, আমিও চাই না দূরে থাকতে। আমিও চাই সবরকম দূরত্ব দূর করে ভীষণ কাছে আসতে।'


সৌরভের পোস্ট পড়ে মনটা খারাপ হয়ে গেল ভীষণ আজকে। তাই আমার ভুল বোঝা বাবাকে নিয়ে লিখতে ইচ্ছা করল খুব। ছবিটা আমার তোলা, যখন গত বছর আমার কাছে বেড়াতে এসেছিল আর আমার দেয়া চাইনিজ ফতুয়া পরে পুরোপুরি চীনাম্যান হয়ে ঘুরে বেড়িয়েছিল, তখনকার।


মন্তব্য

হাসিব এর ছবি

এইটা জামাল ভাস্করের পড়া দরকার


ছাগু পাগু ও উটুতাড়ক, দ্য এটিম ।

মাশীদ এর ছবি

থ্যাংকস্, হাসিব ভাই।
আমারো দরকার ছিল ভাস্করদা'রটা পড়ে দেখা।


হারিয়ে যেতে হবে আমায়
ফিরিয়ে পাব তবে।


ভাল আছি, ভাল থেকো।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

দারুন মাশীদ, দারুন। ভাগ্যিস তোর এই লেখক প্রতিভা মাঝে মাঝে জাগে, নাহলে আমাদের লেখা ছাড়তে হত। (এট্টুসখানি পিঠ চুলকানি চোখ টিপি )

====
মানুষ চেনা দায়!

মাশীদ এর ছবি

হি হি হি!
থ্যাংকস্, সুমন।
পিঠ চুলকে দেয়ায় দারুণ আরাম পেলাম চোখ টিপি


ভাল আছি, ভাল থেকো।


ভাল আছি, ভাল থেকো।

হাসিব এর ছবি

জামাল ভাস্কর লিখেছেন:
তার একটা ক্রোমোজোম ছাড়া আর কিছু তো আমার শরীরে থাকনের সম্ভাবনা নাই অদূর ভবিষ্যতে...তাইলে আমাতে ক্যান আমার পিতা ইমমোর্টালিটির ছায়া দেখতে পাইবো? নামেও তো কোন মিল নাই...বা যতোটুক আছে সেইটাতো আরো শত হাজার মানুষের সাথেই আছে!

আপনে জামাল ভাস্করের যেই পোস্ট পড়ছেন আমি সেইটারে মিন করি নাই । উনি ইমর্টালিটি নিয়া একটা কঠিন পোস্ট দিছিলেন । নানারকম দার্শনিক আলাপের ছত্রছায়ায় উনি আলোচনাটা করছিলেন বইলা আমি কোন মন্তব্য সেইখানে করি নাই । খুব সহজ অর্থে যেইটা বুঝি মানুষ তার সন্তানের মধ্যে ক্রোমোজম বিষয়ক জ্ঞাত বিজ্ঞানের অতিরিক্ত কিছু দেখে । ক্রোমোজন বিষয়ক বিজ্ঞানটা না জাইনাও বেশীরভাগ প্রানীর মতো মানুষও তার সৃষ্টি থিকা নিজের সন্তানের মধ্যে নিজের ছায়া দেখতে অভ্যস্ত । আপনে যেমন নিজের মধ্যে আপ্নের বাবারে খুইজা পাইছেন তেমনটা আপনের বাবা আপনের জন্মের পর আপনের মুখ দেইখা তার চেয়ে অনেক বেশী মিল খুইজা পাইছেন । সেই মিলগুলো আমি নিশ্চিত এখনও আপনের বাবা মিলায়ে দেখেন । আমার নিজের বাবা এখন বৃদ্ধ । সে যখন তার নাতিরে নিয়ে ঘুমায় তখন দুইজনরে একরকমই দেখতে লাগে । সেই একই রকম ঘাড় কাত করে ঘুমানো । আপনের বাবা আপনের ছোটবেলায় যখন আপনেরে কোলে করে ঘুমাইতেন তখন আপনের দাদাদাদিও নিশ্চয় এরকমই কিছু মিল খুইজা পাইতো । এই পিতা হইতে সন্তানের মধ্যে বৈশিষ্ট্যের প্রবাহটা বোধহয় জামাল ভাস্কর ধরতে পারেন নাই । মানুষ হয়তো সন্তানের মধ্য দিয়া এইভাবেই অমরত্ব খুইজা পায় ।


ছাগু পাগু ও উটুতাড়ক, দ্য এটিম ।

হাসান এর ছবি

ছোটবেলা থেকেই আমাদের সবারই হয়তো বাবা চরিত্রের সাথে বরাবরই দুরত্ব ছিল। কিন্তু যতই বয়স বাড়তে থাকে, কেমন করে যেন নিজের চরিত্রের মধ্য থেকেই তাঁর চরিত্রটুকু স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

বরাবরের মতোই খুব সুস্বাদু হয়েছে।

--------------------------
পাগলামীর একটা সীমা আছে ...

মাশীদ এর ছবি

বেশ কঠিন পোস্ট দেখেই হয়তো ঐ পোস্টটা এড়িয়ে গিয়েছিলাম। এখন পড়ে দেখলাম and got your point@হাসিব ভাই।

আসলেই তাই মনে হয় রে হাসু! ধন্যবাদ।


ভাল আছি, ভাল থেকো।


ভাল আছি, ভাল থেকো।

উৎস এর ছবি

ভাস্করদার কমেন্ট টা কি এই পোস্টে ছিল?

মাশীদ এর ছবি

না, ভাস্করদার কমেন্টটার পোস্টের লিংক হাসিব ভাইয়ের কমেন্টে আছে।


ভাল আছি, ভাল থেকো।


ভাল আছি, ভাল থেকো।

কনফুসিয়াস এর ছবি

বাহ, এক পোস্টেই হাসি কান্না সব অনুভূতি পাইয়ে দিলে।
খুব ভালো লাগলো।

-যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

ভাস্কর এর ছবি

আমার ঐ অবজারভেশনটা একান্তই আমার নিজের অবজারভশন ছিলো। তার কারন আমি আমার বাবা দিবসের রচনায় খানিকটা হইলেও কইতে চেষ্টা করছি। ছোটবেলা থেইকাই আমি সচেতন ভাবে আমার বাবা যেমনে জীবনরে দেখেন তার বাইরে গিয়া দেখনের কিম্বা তার জেশ্চার-পোশ্চারের কিঞ্চিত কিছু থাকলে সেইটা বর্জনের চেষ্টা করছি...


বরফখচিত দেশ ক্যান এতোদূরে থাকো!


স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...

হাসিব এর ছবি

আমি প্রথম পোস্টটার রেফারেন্স টানলাম এই কারনে যে ওটা একটা তর্ক হিসেবেই উপস্থাপিত হইছিলো ।


ছাগু পাগু ও উটুতাড়ক, দ্য এটিম ।

ভাস্কর এর ছবি

আমার লেখার ঐ অঙশটা একটু ব্যক্তিকেন্দ্রীকই হইচে তা ঠিক...তয় যদি এইটা তর্কের বিষয় হয় তাইলে আমি আরেকটা পোস্ট নামাইতেছি।
হাসি


বরফখচিত দেশ ক্যান এতোদূরে থাকো!


স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...

মাশীদ এর ছবি

ঠিক বলেছেন, শুভ ভাই! এই কক্সবাজারে কখনো নিয়ে যায়নি দেখেও আমার খুব রাগ ছিল। এবারে দেশে গিয়ে এই একটা খুব ভাল কাজ হল - আব্বা-আম্মার সাথে প্রথমবারের মত কক্সবাজার যাওয়া। ভাগ্যিস একদিনের এই ট্রিপটা দিয়ে আসতে পেরেছি।


ভাল আছি, ভাল থেকো।


ভাল আছি, ভাল থেকো।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

এতো ভালো লেগেছে যে,কী কমেন্ট করব আপাতত:বুঝতে পারছি না।
আমার নিজেরই বাবাকে নিয়ে লিখতে ইচ্ছা হচ্ছে এখন।

নজমুল আলবাব এর ছবি

আমার বাবাটা এত বাচ্চা বাচ্চা...

মাশীদ তুই কত ভালো লিখিস এই ব্যপারে তোর কোন ধারনা আছে?

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

পাথরের বুক চিরেই বয়ে যায় ঝর্ণা নীরবে, নিঃশব্দে।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

মাশীদ এর ছবি

ধন্যবাদ সব্বাইকে হাসি !


ভাল আছি, ভাল থেকো।


ভাল আছি, ভাল থেকো।

সৌরভ এর ছবি

হায় হায়, এই লেখা আমি পড়লাম একদিন পরে।

মাশীদাপু, আমার খুব ছোট একটা স্বপ্ন কি জানো, আমি বাচ্চাদের খুব কাছাকাছি বাবা হতে চাই।

------ooo0------
বিবর্ণ আকাশ এবং আমি ...


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

নিঘাত তিথি এর ছবি

আপু,
আজকে এতদিন পড়ে পড়লাম লেখাটা, ছিলাম না যে বাসায়। এক লেখায় কত আমেজ নিয়ে এসেছো...মনটা ভালো না, আর বেশি দিন হয়ত নেই, বাবাকে ছেড়ে যেতে হবে...

সৌরভ,
তোমাকে আমাদের বাসায় দাওয়াত দিলাম। আমার বাবাকে দেখে যাও আর জেনে যাও কাছাকাছি বাবা কেমন করে হতে হয়!

--তিথি

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

অমিত আহমেদ এর ছবি

এমন লেখা লিখা ঠিক না।

মনটা খারাপ হয়ে গেল, দেশে ফোন দিতে ইচ্ছে হচ্ছে এখন।

************************
আমার বেলা যে যায় সাঁঝ-বেলাতে
তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে

ঝরাপাতা এর ছবি

মা-দের জন্য শারমিনী আব্বাসীর একটা চমৎকার বই আছে, 'আমার মেয়েকে বলি'। বাবাদের জন্যও এরকম কিছু থাকা দরকার। লেখাটা অসম্ভব রকম ভালো লেগেছে।
_______________________________________
রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

ফারুক হাসান এর ছবি

এই লেখাটা কুলসুমের লেখা এযাবতকালের সেরা।
(বুকে হাত)

-----------------------
এই বেশ ভাল আছি

মাশীদ এর ছবি

অনেকগুলো কমেন্ট জমেছিল, খেয়ালই করিনি!
সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।


ভাল আছি, ভাল থেকো।


ভাল আছি, ভাল থেকো।

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

অনেক পরে পড়লাম ... খুব ভাল হইছে ...

দ্রোহী এর ছবি

কি চমৎকার লেখা!
নিজের বাবাকে দেখতে ইচ্ছা করছে খুব! মন খারাপ


কি মাঝি? ডরাইলা?

হাসান মোরশেদ এর ছবি

মাশিদের কবিতা কই?
----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

মন্তব্য সহ কেমনে আনলি?
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

মাশীদ এর ছবি

আনিনি তো!
ধুর!
একটা ভুল বানান ঠিক করে সংরক্ষণ করতে গিয়ে এই হাল!
ধুর!


ভাল আছি, ভাল থেকো।


ভাল আছি, ভাল থেকো।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

অসাধারণ ভাল লাগলো, আপু। সময় নেই হাতে, তাই বিস্তারিত লিখতে পারলাম না। আমার বাবার কাহিনীও অনেকটা একই রকম। লিখবো পরে।

দৃশা এর ছবি

কিছু বলার নাই...এই অধমের ওই লেভেলের ভাষা জ্ঞান নাই যে এই লেখার প্রশংসায় সুন্দর কিছু কথা বলবে।
শুধু বলে গেলাম খুব ভাল লাগল ।

দৃশা

আরিফ জেবতিক এর ছবি

আবারও একই কমেন্ট।

অতিথি লেখক এর ছবি

মাশীদ আপু ,তোমার আব্বা আমার প্রিয় একজন মানুষ সবসময়!আম্মুর খুব প্রিয় চাচা,আব্বুর খুব প্রিয় স্যার,নানাভাইয়ার খুব প্রিয় একজন কাছের সহকর্মী আর একজন অসাধারণ ভাল মানুষ তিনি যাঁর কাছে আমি সব সময় অবারিত একটা স্নেহ সবসময় পেয়েছি নাতনির সম্পর্ক থাকায়।কিন্তু তোমার আঁকা ভীষণ সৎ একটা ক্যানভাসের ছবিতে উনাকে নতুন করে চিনতে খুব ভাল লাগল।

মুস্তাফিজ এর ছবি

এটা পড়ে মনে হল আব্বাকে নিয়ে আমারও কিছু লেখা উচিত

...........................
Every Picture Tells a Story

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

এতো ভীষণ ভালো লাগলো আপু! ঠিক কতোগুলো শব্দে কতরকম ভাবে বলা যায় জানিনা, তাই সংক্ষেপেই বলতে হয় খুব ভালো লেগেছে। বাবাকে নিয়ে আমারও একটা লেখা আছে আর সেই লেখাটার পরেই মনে হয় আমি হাচল হই, মনে পড়ছে না, আর সেটা দেখতেও ইচ্ছা করছে না এখন। দেখলেই মন খারাপ হবে। বাবার সাথে আমার সম্পর্কটা কেমন সেটা ভাবতে ইচ্ছা করবেনা যেমনটা কখনও করে না। মা কিংবা বাবার সাথে কখনই খুব কমফোর্টেবল ছিলাম না। কখনই বলা হয় নাই ভালো বাসি। এমনকি আম্মুর বা আব্বুর জন্মদিনে কিছু আনলেও হাতে দিতে পারি না, টেবিলে রেখে আসি লুকিয়ে। কোথায় জানি একটা বাধা কাজ করে। এতসব অক্ষমতা যে কবে দূর হবে কে জানে। মন খারাপ

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

তিথীডোর এর ছবি

এই লেখা এতদিনে পড়লাম!

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

ধুসর জলছবি এর ছবি

বাবাকে নিয়ে লেখা যে কোন কিছুই আমাকে টানে বেশী , আর এই লেখাটা তো এককথায় অসাধারন।

মর্ম এর ছবি

মনের মুকুরের সবচেয়ে ভাল গুণ হচ্ছে হঠাৎ করে হারিয়ে যাওয়া এক একটা লেখা নতুন জীবন পায়!

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।