বাঙলাদেশের সাহিত্য > স্বপ্ন ও বাস্তবতা

মনজুরাউল এর ছবি
লিখেছেন মনজুরাউল (তারিখ: শুক্র, ২৫/০৭/২০০৮ - ১১:২৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

........ শেষ অংশ......

এখানকার ‘নিয়তি’ উদোম খেলার জন্য যন্তরপাতি তুলে দিয়েছে কর্পোরেট মরদের হাতে। যারা বেশ্যালয়ে যান কেবলই বিদ্ধ করতে নয়, বেশ্যালয়ের ছাও -পোনা প্রসব করিয়ে কর্পোরেশনের সংখ্যাবৃদ্ধি করতে। দাবার বোর্ডের সেই ঘুঁটি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটা কালজয়ী উপন্যাস হতে দেয়নি। সত্তর দশকের নকশাল আন্দোলন নিয়ে একটা ‘মহাশ্বেতা দেবী’ হতে দেয়নি। মিলিটারি শাসন নিয়ে একটা ‘ডেথ অফ অ্যা কর্নেল’ বা ‘কর্নেলের চিঠি’ হতে দেয়নি। চরম শ্রেণী বৈষম্যের লোহার ঘরে বাস করেও কারো হাত দিয়ে একটা ‘বিরসামুন্ডা’ লিখতে দেয়নি। গ্রাম আর প্রকৃতির কোটি সন্তানের একজনও একটা ‘তিস্তাপারের বৃত্তান্ত’ লেখেনি। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর এই বাংলার পূর্বভাগে কোনো ধীমান ‘আত্মহত্যার অধিকার’ ‘হারানের নাতজামাই’, ‘ছোট বকুলপুরের যাত্রী’, ‘সরীসৃপ’-এর মতো গল্প লেখেননি। না, ভুল বলা হলো, লিখতে দেওয়া হয়নি। ওরকম অনেক ‘ছোট বকুলপুরের যাত্রী’, মুড়িমুড়কির ঠোঙা হয়েছে ছাপতে না পেরে। আরজ আলী মাতুব্বরকে তার রচনা ছাপা অক্ষরে না- দেখেই মরে যেতে হয়েছে। সরদার ফজলুল করিমকে নিজের ছাপা বই নিজেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারে ফেরি করতে হয়েছে। লেখক লিখে স্বাচ্ছন্দ চায় না, চায় স্বীকৃতি। ছাপা হওয়া একমাত্র স্বীকৃতি। ছাপা না হলে রবীন্দ্রনাথ নেহায়েত ঠাকুরবাড়ীর ছোটজমিদার। নজরুল স্রেফ বন্দুকধারী সেপাই। সৈয়দ হক ডাক্তার গৃহিণীর পতিপ্রবর। নাজমা জেসমিন চৌধুরী যে ‘বাংলা উপন্যাস ও রাজনীতি’ লিখে গেছেন সেটাও মেইনস্ট্রিমে আসেনি। কপি শেষ। বই শেষ। অন্য কোনো বিদ্ব্যত্জন পুনঃপ্রচারের উদ্যোগ নেয়নি, কারণ শপিংমলের শোভা ঠিক নয় ওটা। বঙ্গসন্তানদের শিক্ষিতজনদের প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমী সরকারের টাকায় বর্ধমান হাউস দখল করে কার্যত এখন কেবল অভিধান বার করে। আগে তবুও সমাজতান্ত্রিক দুনিয়ার প্রচারনায় প্ররোচিত হয়ে হোক অথবা সেই বিদ্রোহের দশকের অনুপ্রেরণায় হোক কিছু ভালো কাজ তারা করতেন। এখন কেবলই অভিধান আর অর্ডারি কবিতার বই- ‘দস্যিরা সব পালিয়ে গেল’- এসব! ফি বছর এই কর্তারা একটা সাবজেক্ট ঘোষণা করে দিয়ে লেখা আহ্বান করেন। সময় বেঁধে দেওয়া ওই ‘সাবজেক্ট’ নিয়ে যে আদিষ্ট হওয়া লেখকরা লেখেন তারা আসলে লেখেন না, আদেশ পালন করেন। আদেশে ঘোড়া-গাধার মিলন ঘটিয়ে হয়তো বা খচ্চর পয়দা করা যায় সাহিত্য হয় না। হলে ঔরঙ্গজেব হতেন ভারতবর্ষের সেরা লেখক। আইয়ুব খান হতেন প্রাচ্যের লেভ তলস্তয়। আমাদের এরশাদ হতেন পাবলো নেরুদা কিংবা উমর সুলেমানভ।

‘মত্ত থাকুক তত্ত্ব তর্কে বিজ্ঞ-জ্ঞানীর দল,
কাছে এসো সখি, নাই বা শুনলে সে জটিল কোলাহল।
এসো দুজনাতে হট্টগোলের একটু নিভৃতে দূরে,
বসে নিজেদের আনন্দে মাতি সুধা পাত্রের সুরে।’
-ওমর খৈয়াম।

ইতিমধ্যে বঙ্গের ধীমান লেখককুল জেনে গেছেন, পাবলিশিং হাউসগুলো (আমেরিকার চেইনশপ কর্পোরেট হাউস যেন) কী চাইছে। হাউসগুলোতে এখন মাসকাবারি বেতনভুক্ত পড়ু-য়া আছেন। ওদের বলা হয় বাছাইকমিটি বা রিভিউ কমিটি। যেমন আছে সরকারের মোটামাইনের ফিল্মি সেন্সর বোর্ড। যারা ভেজাগতরের ঘসাঘসিতে ‘টিক’ চিহ্ন দেয়, চুমুতে বেঢপভাবে ফুলে ওঠা নায়িকার বুকের ওপর জুম করে গিরিখাদ দেখানোতে ‘টিক’ তো পরকীয়ায় ‘ক্রস’। হাত-পা-মুণ্ডু কেটে আলাদা করে নেওয়াটা এদের কাছে হরর নয় কদর্য নয়, বরং সন্তানের মুখে মাই তুলে দেওয়া কদর্য! এই মাপের একদল ‘ক্রিটিক’ দিয়ে প্রকাশক টাইকুনরা ইনোভেশন দেখতে চান। সেটা বঙ্গের লেখককুল জেনে গেছেন। এলেম খরচ করে জানতে হয়েছে সেই এলেমের পেছনেও আরো আলেম-জালেমর পয়সা যোগ আছে। এইমতো অবস্থায় বাংলা সাহিত্যকাশে উথাল-পাথাল করে সর্বাঙ্গ দিয়ে লিখতে থাকলেন হূমায়ুন আহমেদরা। কচি কচি ছেলেমেয়েদের ভেতরকার সাহিত্য-ভ্রুণ খসে গেলো। অনূঢ়া হলেন তারা। কেউ কেউ ‘হিমু’ হওয়ার উদগ্রবাসনায় হলুদ জামা পরে বোহেমিয়ান হলেন। সৈয়দ হক খেলারামকে আচ্ছা করে খঁচিয়ে খেলালেন। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ‘অনতিক্রান্তবৃত্ত’, ‘আরণ্যক দৃশ্যাবলী’, ‘আমার পিতার মুখ’-এর মতো প্রণিধানযোগ্য রচনার অতীত ভুলে ‘ইহজাগতিকতা’ লিখতে শুরু করলেন। দুঁদে কলামিস্ট আব্দুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর হাত দিয়ে ‘সম্রাটের ছবি’ গোছের কিছুও আর বেরুল না। আহমদ শরীফ যেটুকু থুয়ে গেছিলেন তাকে কেউ টেনে বড়ো করলো না। আহম্মদ ছফা বীরদর্পে আঙিনা কাঁপিয়ে মানিকের শূণ্যস্থান পূরণের বেজায় সম্ভাবনা জাগিয়েও একফালা সোঁদাগন্ধের মাংশের পেছনে কলম ও মনন ব্যয় করলেন। দেবেশ রায় পারলেন, কেন আমি পারলাম না- ভাবতে ভাবতে ফটাস করে মরে গেলেন। মরার আগে এম আর আখতার মুকুল নকশালবাড়ীর বাজার আছে ঠাওর করে কমরেড আজিজুল হককে নিয়ে লিখতে গিয়ে হেগে-মুতে ফর্দিফাই করে ফেললেন। তসলিমা নাসরীন এসে না নারীবাদী, না মানবতাবাদী অবস্থানে বসে বাজারের বাও বুঝে চটি সংস্করণকে মোটা বানিয়ে সাহিত্য বিয়োলেন। সেখানে তাবত পুরুষ ‘অংকশায়ীকে’ ধরাশায়ী করলেন। এস ট্রিলজি অর্থাৎ স্যাডিজম, সেক্স, আর শক কম্পাইল করে সমরেশের ‘বিবর’কে ফেল খাওয়াতে গিয়ে দেখলেন যৌবনমত্ত শরীরী সুধা অবগাহনাকল্পে বিবশ যামিনী স্খলন পূর্বারাগানুরাগেমথিতমোক্ষ নমস-স্বৈ: নমস-স্বৈ: নম: নম: হা।
এই গোত্র থেকে একটু দূরে স্বতন্ত্র অবস্থানে হুমায়ুন আজাদ হাঁটলেন অন্য ধারায়। মানিক হওয়ার জন্য যেটুকু অংক কষতে হয়, মার্কসবাদ চর্চা করতে হয়, দেবেশ হওয়ার জন্য শ্রীকাকুলাম, অন্ধ্র, ফাঁসি দেওয়া নকশালবাড়ি, খড়িবাড়ি ঘুরতে হয়, জলপাইগুড়ি রেল স্টেশনে পেটো ফাটার কার্বাইড শুকতে হয়, সেটুকু কষ্ট করলেন না। ধরলেন সিমন বিভ্যুঁয়ারকে, লিখলেন ‘ দ্বিতীয় লিঙ্গ’। এ কথা স্বীকার করলেন, কিন' হেনরি ল্যুইস মর্গানের ‘এ্যানশিয়ন্ট সোসাইটি’ থেকে ‘নারী’ বানিয়ে স্রেফ চেপে গেলেন। অথচ ‘কবি অথবা দণ্ডিত অপুরুষ,’ ‘ধর্মানুভূতির উপকথা ও অন্যান্য’-এর মতো মৌলিক লেখা নিয়ে তিনি দিব্যি ঘোর তমসা কাটাতে পারতেন। পারতেন পূর্ববঙ্গের এক পিস বিনয় ঘোষ হয়ে উঠতে। আগামী প্রকাশনী আর হুমায়ুন আজাদ, কে কাকে খেলো, কে কাকে ভর করলো বোঝা গেলো না। না, ঠিক হলো না, রোমেনা আফাজের দস্যু বনহুরের কাহিনীর মতো হলে বলা যেতো ‘কোথা থেকে কী হলো বোঝা গেলো না, বনহুর মুহূর্তে নূরীর বাহুবন্ধন হতে আলগা হয়ে গরাদপথে অদৃশ্য হয়ে গেলো’। কিনতু তা তো নয়। আমরা জানি। হুমায়ুন আজাদকে আগামীতে পেয়েছিল। তাই তিনি লিখলেন ‘পাকসার জমিন সাদ বাদ’-এর মতো অদরকারি ‘অসংস্কৃত’ রচনা। এই মতো কাজ যখন হয়ে যেতে পারে তখন প্রকাশনা শিল্প অন্যমাত্রায় উঠে যায়। সে তখন বাজার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না, বাজারই প্রকাশনা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
আল মাহমুদ। বাংলার দুই ভাগেই সমান জনপ্রিয়। শব্দের ওপর বেজায় দখলি মুন্সিয়ানা দেখাতে পারা একমাত্র কবি। রাজনৈতিক দর্শনের কাচুলি ভালোভাবে গিট না বাঁধলে যা হয়। কবিতায় যৌবন, যৌনতা ঘাটাঘাটি, ছানাছানি করে ক্লান- হয়ে পরলৌকিতার দোকানে ঠেক নিলেন। নিজাম ডাকাতের মতো। প্রথমে ডাকাত, পরে আউলিয়া। কবিতায় মানুষ-প্রকৃতি ফুরিয়ে এলে সেই শূন্যস্থান দখল করলো সাত আসমান, বোরাক ঘোড়া, দুলদুল, কারবালা, খন্দক, ওহুদ। শেষে চাইলেন গদ্য লিখবেন। লিখবেন তো বটে, কী লিখবেন? কেন যা ‘উইন্ড’ চাইচ্ছে। সংবাদপত্রের ভারী চমৎকার শব্দ ‘উইন্ড’। অর্থাৎ বাতাস যেদিকে বয় সে দিকে পাল ওড়াও। তিনি গদ্য লিখলেন- ‘বিপ্লবী নায়ক নৌকা থামিয়ে বিড়ি ধরিয়ে মাতরানিকে খুঁজছে। মাতরানির ঘরে গেলো, এবং মাতরানির সঙ্গেঃ!’.......... আনন্দবাজারী কর্পোরেট হাউস থেকে যেমন বাজারি সুনীল বেরিয়েছে (না বেরিয়ে উপায়ও নেই) তেমনি এ দেশের কর্পোরেট হাউসের কাজ হয়ে উঠল সরদার ফজলুর করিমদের মতো দর্শনের ধীমান মানুষদের অর্থহীনতার, আশ্রয়হীনতার সুযোগ নিয়ে তাকে দিয়ে ‘বাজার করার, ব্যাংক থেকে টাকা তোলার কেচ্ছা’ লেখানো। ‘গাছপাথর’কে সত্যিকার অর্থে ‘পাথর’ বানিয়ে সিরাজুল ইসলামকে ‘নিকম্মা’ করে দেওয়া। বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরকে গুলশানের এক নম্বর চক্করে বন্দি করে দেওয়া। আর সারা ৫৬ হাজার বর্গমাইলের অপ্রস্ফুটিত আগামীর ফয়েজ, শরীফ, ছফা, গাফ্‌ফার, ওয়াহিদ, রায়হান, আজাদ, সিরাজুল, আকমল, মাহবুব, নরেণদেরকে ওয়েস্ট পেপার বাস্কেটে ছুড়ে ফেলা। কেননা ওগুলো বিশ্বায়নের দোকানে ডিসপ্ল্লেবল নয়, সেলেবল নয়। কেননা আজকাল এডবি, কোর্য়াক দিয়ে মালটি ডাইমেনশনাল ম্যাট প্রচ্ছদের কোনায় কর্পোরেট হাউসের বিজ্ঞাপন থাকতে হচ্ছে। প্রকাশনা উৎসবে কোনো না কোনো বহুজাতিক কোম্পানির স্পন্সর থাকতে হচ্ছে। প্রদত্ত ভাষণের এক একটা পার্ট এক একটা কোম্পানি স্পন্সর করছে। সেখানে বিকোনোর জন্য সাহিত্য কোনো ডিসপ্ল্লেবল-সেলেবল কমোডিটিজ নয়।

‘আমি দেখতে পাচ্ছি,
আমার চোখের সামনে,
আমার এতোকালের দেখা
পুরোনো দুনিয়াটা পাল্টে যাচ্ছে’,
-নবারুণ ভট্টাচার্য।

......শেষ।


মন্তব্য

জিফরান খালেদ এর ছবি

আপনার বক্তব্যের অব্জেকটিভ কিন্তু আমি পেলাম না। কে উঠতে দিলো না? কারা?

পড়তে বেশ লাগলো... একটা রাগান্বিত ফ্লো আছে। সেই কারণেই সর্বোচ্চ রেটিং দিলাম। মানেহীন রেটিং যদিও।

তবে, আপনি আসলেই কি বলতে চাচ্ছেন, আমার কাছে স্পষ্ট নয়। একটা সময়কালকে দোষারোপ করতে চাইলেন?

আমি কিন্তু এইটা মাথায় রাখার সময়ে অসময়ে চেষ্টা করি যে - লিখালিখি, আর্টিস্টিক এক্সপ্রেশান আমরা যারে বলি, যে মাধ্যমেই হোক, এইসব নার্সিসিজমের শীর্ষ প্রকাশ। আমরা প্রত্যেকেই ইগোম্যানিয়ায় আক্রান্ত। কম-বেশি।

মনজুরাউল এর ছবি

সময়কালকে নয়। শ্রেণী কে। বাকি চারটি পর্ব হলে হয়তবা কিছুটা পষ্ট করা যেত। তবে বিশাল সাইজ আর অদরকারি ভেবে এখানেই শেষ করেছি। পাঠের বিরক্তি যত কম হয় ততো ভাল।
---------------------------------------------------------

আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

জিফরান খালেদ এর ছবি

বিরক্তির কথা আসছে কেন?

বিরক্তিও তো একটা পাঠ-প্রতিক্রিয়া... ওইটা মাথায় রেখেই তো বোধকরি লিখা হয়।

সে যাক, আমি বাকি পর্বগুলো পড়বার আশা রাখি। আমার কাছে ব্যাপারটা স্পষ্ট করা দরকার। আর, শ্রেণীর ব্যাপারটা লীলেন ভাই ব্যাখ্যা করেছেন বলেই মনে হচ্ছে।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

ভালো লাগলো না। আগাগোড়া একটি নেতিবাচক রচনা। চটকদারি ভাষায় যথেচ্ছ গালাগালি দিয়ে ভরা। আগের পর্বের মন্তব্যে বলেছিলাম, আমাদের অর্জনও কিছু আছে যা আপনার চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে অথবা আপনি স্বীকার করতে প্রস্তুত নন। কারণ, আপনি সবকিছু অস্বীকার করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েই লিখতে বসেছেন বলে মনে হলো। যতোটুকু স্বীকার করেছেন, যাদের স্বীকার করেছেন - সেসবও পচে-গলে গেছে বলে আপনার সিদ্ধান্ত।

সরদার ফজলুল করিমের প্রসঙ্গ ধরে দুয়েকটা কথা বলি। তাঁর সম্পর্কে আমিও এক ধরনের মুগ্ধতা ও শ্রদ্ধা পোষণ করি। কিন্তু তাঁর মৌলিক প্রবন্ধ বা অনুবাদের ব্যাপক পাঠক আমাদের দেশে আছেন - এই ধারণার মধ্যেই একটা ভ্রান্তি লক্ষ্য করি। আমাদের দেশে শিক্ষিত মানুষের হার এবং সাহিত্য বা মননশীল গ্রন্থের পাঠকের সংখ্যা মনে রাখলে স্বীকার করতেই হবে যে, সরদার ফজলুল করিমের রচনা খুব বেশি মানুষের কাছে যাওয়ার কথা নয়। তাঁর বই কিনতে লোকে দোকানে হুমড়ি খেয়ে পড়বে না, এই বাস্তবতা আপনি বিবেচনায় নিচ্ছেন বলে মনে হলো না।

রাজনীতি ও রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতাপ বিবেচনায় নিয়েছেন, কিন্তু এই ভূমির অর্থনৈতিক, সামাজিক ও শিক্ষাগত অবস্থার দিকে আপনার চোখ পড়েছে বলে মনে করার কোনো কারণ পাওয়া যাচ্ছে না।

সুউচ্চ মঞ্চে দাঁড়িয়ে সারমনের মতো শোনাচ্ছে আপনার পর্যবেক্ষণ ও বক্তব্য, বাস্তবের মাটিতে পা রেখে বিষয়গুলি দেখার চেষ্টা করলে অন্যরকম ছবি দেখতে পাবেন বলে আমার বিশ্বাস।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

মাহবুব লীলেন এর ছবি

বাবা মা যখন বাচ্চাকে কানে ধরে ইসকুলে পাঠায় তখনও কিন্তু ভেতের ভেতরে মূল ইচ্ছাটাই থাকে বাচ্চাকে বিক্রয়যোগ্য করে তোলা

সেখানে বাচ্চা বড়ো হয়ে নিজেকে বিক্রি করতে চাইলে দোষটা কোথায়?

০২
লেখকদের সম্পর্কে যখন আমরা আলোচনা করি তখন তাদেরকে যেন দেবতা না বানিয়ে আলোচনা আগাতে পারি না
কিন্তু তারও যে ডায়রিয়া হয় আর হলে স্যালাইন কিনে খেতে হয় সেটা ভুলে যাই

যে দেশের মানুষ নেংটি জোগাড় করার চিন্তায় ঘুমাতে পারে না সাররাত সেই দেশে যে অত অত লেখক জন্ম নেয়;
অসুস্থ হলে ভিক্ষা করে দরিদ্র লেখক তহবিল না তুলে তার সুস্থ হবার সম্ভাবনা নেই জেনেও লেগে থাকে তার কোনো দাম নেই?

০৩
গ্রামের মায়েররা নিজের ছেলে অন্য ছেলের কাছে মাইর খেয়ে বাড়ি ফিরে এলে উল্টা ছেলেটে ঠ্যাঙায়
কেন তুই ওর সাথে পারলি না। কেন মাইর খেয়ে এলি। কেন দুই ঘা দিয়ে আসতে পারলি না

আমরাও আমাদের লেখকদের নিয়ে কথা বলার সময় কেন আমাদের লেখকরা অমুক তমুকের মতো লেখে না এই প্রশ্ন তুলে ধরি
কেন বিক্রি হয়ে গেলো তা নিয়ে তাকে খোঁচাতে থাকি

অথচ গতকাল জন্ম নেয়া এই দেশে সাহিত্যের উত্তরাধিকার যে গত পরশু দিনের
আর আজ পর্যন্ত যেই দেশের মানুষের ৯৯ ভাগের কাছে সাহিত্য খায় না মাথায় দেয় সেই চিন্তা করার সুযোগ নেই নেংটি আর খুদ জোটানোর ঠেলায়
সেই মানুষের কাছে আমরা দাবি করি- কেন তুমি বই কেনো না?
কেন তুমি লেখকে খালি সাহিত্য করতে দাও না?
আর এইসব জেনেও মাটি কামড়ে পড়ে থেকে যেই লেখক লিখে সে যখন আর কামাড়নোর মতো মাটিও পায় না তখন গিয়ে তার গলা টিপে ধরি- ওই ব্যাটা তুই ওইটা করলি কেন?
_ তুই কেন টাকার লোভ করলি?
_ তুই না খেয়ে মরবি কিন্তু খাওয়ার কথা বলতে পারবি না

০৪

লেখদের সম্পর্কে আলোচনা করার সময় আমরা এখনও নজরুলের সেই ভণ্ড লাইনকে মাথায় রেখেই আলোচনা করি
' হে দারিদ্র তুমি মোরে করিয়াছ মহান'

বাংলার লেখক আর শিক্ষকরা না খেয়ে হলেও খালি মহান থাকবে
দারিদ্র তাদের অলংকার তাদের অহংকার
হুমায়ূন আজাদ মরার আগে যখন জার্মানে যাবার জন্য জার্মান এ্যামবেসির কেরানিদের কাছে কাকুতি মিনতি করেন তখন কেন করেন সেটা ভাবি কেউ?

ঢাবির কয়জন টিচার আছেন যারা বইরে ক্ষেপ মারেন না?
এনজিওতে কনসালটেন্সি করেন না
যে দুয়েকজন আছেন তার মধ্যে হুমায়ুন আজাদ
ভার্সিটির মাস্টারি তাকে কত দিতো?
হুমায়ুন আজাদ কি খালি লেখক ছিলেন? নাকি তিন তিনটা ছেলেমেয়ের বাবাও ছিলেন?

খালি ঢাকা ভার্সিটির মাস্টারি দিয়ে তিনটা ছেলেমেয়ের পড়াশোনা তো দূরের কথা। পকেট খরচ হয়?

হুমায়ুন আজাদ সৈয়দ হক আল মাহমুদ বিক্রি করলে লেখাকেই করছে
লেখা তো ছাড়েনি
বিনা বিনিময়ের আশায় আমাদেরকে অনেক কিছু দিয়ে তারপর তার নিজের দিকে তাকিয়েছে। যখন দেখেছে তাদের দিকে তাকানোর সামর্থ আমাদের নেই

কিন্তু তাদরে সাথের অনেকই তো কিছুই না দিয়ে চলে গেছে পুরো আত্মা বিক্রি করে

এরা তো আছে
দিয়েছে
দিচ্ছে
হয়তো আরও দেবে

এদের উপরে অত ক্ষোভ কেন?

০৫
অক্টাভিও পাজ এক সাক্ষাতকারে পরজন্মে ভারত অঞ্চলের কবি হয়ে জন্মাতে চেয়েছিলেন
তার যুক্তি ছিল- ইউরোপে কবিরা ইনস্টিটিউশনালি একসেপটেবল কিন্তু সোসালি এ্যাভয়ডেবল
আর ভারত অঞ্চলে কবিরা ইনস্টিটিউশনালি এ্যাভয়ডেবল কিন্তু সোশালি একসেপ্টেবল

আমারও সেই ভারতেরই অংশ
আমরা বুঝি বা না বুঝি
পড়তে পারি বা না পারি
এই জাতি এখনও ঘরে কবিদের ছবি টানিয়ে রাখে
সামাজিক রাজনৈতিক আন্দোলনে এখনও লেখদের সম্পৃক্ত করে
আর হাজার হাজার তরুণ চাকরির যত্ন ছেড়ে
ভবিষ্যত ভাসিয়ে দিযে এসে লিখতে বসে

কিন্তু যখন সে বুঝে বা না বুঝে বয়স্ক হযে যায় কিংবা বাবা মা হয়ে যায়
তখন সেই বয়সের জন্য কিংবা পিতৃত্বের জন্য নিজেকে নিয়ে বাজারে তুলতে বাধ্য হয়

কিন্তু তার পরেও তো লিখছে
অথচ যে আমি তার সমালোচনা করি সে আমি তো নিজের পা থেকে মাথা পর্যন্ত সব কিছুই বিক্রি করে দিয়েছি বিনা প্রশ্নে

আর যখন আমি বুঝে গেছি যে সে লিখছে না কিছুই তখন আমিই বা কেন কিছু একটা লিখে বুঝিয়ে দেই না- ইহাকে বলে লেখা....?

০৬
বিক্রি যখন হবেই তখন ফকিন্নি বাজারে বিক্রি হবার চেষ্টা করে কী লাভ?
যার ট্যাকে পয়সা আছে সেই কপোরেটের কাছেই তো বিক্রি হতে যাবে
নাকি আমার কাছে এসে বলবে যে আমি বিক্রি হতে চাই?

০৭

বাংলাদেশের সাহিত্য নিয়ে অত হতাশ হবার কিছু দেখি না আমি
আমাদের ঝামেলা হচ্ছে আমরা লেখকদের গলায় বুটের চাপ দিযে ভালো লেখা বের করে ফেলতে চাই

অথচ ভালো একটা লেখার সামনে পেছনে পাশাপাশি আরো লক্ষ লক্ষ বিষয় কাজ করে- প্রয়োজন পড়ে সেটা মাথাও রাখি না

যাক না
আরো কয়েকটা জেনারেশন যাক
তার পরে না হয় সেই লেখক পাবো আমরা
আপতত যারা যা কিছু দিচ্ছে সেটুকুকই তো দিচ্ছে বিনা মাগনায়
সেটুকুই নেই...

০৮
আর আপনার এই লেখাটা কোনোমতেই 'বাঙলাদেশের সাহিত্য > স্বপ্ন ও বাস্তবতা' নয়
এটা হলে হতে পারে বাংলাদেশের লেখকদের সমাজ বাস্তবতা

মনজুরাউল এর ছবি

আমার এক ওয়াগন + আপনার এক ওয়াগন মিলে যে ‌'মালগাড়ি' তার ঘটর ঘটর এত রাতে কারো ভাল লাগবে না। আপনার মন্তব্য নিয়ে নাহয় কাল মন্তব্য করব। শুভরাত্রি।

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

মনজুরাউল এর ছবি

আমি যা বলতে চেয়েছি তাতে আমি পরিষ্কার। আপনি আপনার লেখায় নিজেই স্ববিরোধি হয়েছেন।

১। এই ত্বত্ত কোন জার্নালে পেলেন?প্রতিটি বাবা মা বিক্রয়যোগ্য করার জন্য স্কুলে পাঠায়?তাই যদি হবে তাহলে মেয়েকে নাচ,ছেলেকে মারামারি শেখালেই তো চলে !

২। আপনি হয়ত বানান অথবা নিজেই ভাবেন। আমি কাউকে দেবতা বানাইনি,চিহ্নিতও করিনি।

৩। আপনার এই প্যারার কোন মন্তব্য করা যায় না। প্যারাটা স্ববিরোধিতায় পূর্ণ।

৪। তার মানে আপনি স্বীকার করছেন যে উল্লেখিত লেখকরা বিক্রি হয়েছেন। এবং বিক্রি হওয়াটা আপনার কাছে জাস্টিফাইড?বাহ বেশ। আমার কাছে 'বিক্রি হওয়া স্বত্তা 'গারবেজ। কেরানি,কর্তা,আমলা,রাজনীতিবিদদের বিক্রি হওয়া সাহিত্যের জন্য তেমন ক্ষতিকর নয়,লেখকের বিক্রি হওয়ার পর আর যাই হোক সাহিত্য হয় না। স্বত্তা বিকোনো লেখকদের দিয়ে যে মহত্ কিছু হয় না সেটাই আমি দেখাতে চেয়েছি। এদের উপরে অত ক্ষোভ কেন? 'ক্ষোভ কেন' সে প্রশ্ন আপনি করতে পারেন না। ক্ষোভ,ভাললাগা,পছন্দ-অপছন্দ প্রকাশ লেখকের ব্যক্তি স্বাধিনতা।

৫। সাধারণত কবিদের নিয়ে আমি মন্তব্য করতে চাই না। আপনি যে বাস্তবতার কথা বলছেন অধিকাংশ কবি সেই বাস্তবতাকে স্কেপ করেই কবিতা লেখেন বলে আমার ধারণা।

৬। এই দেখুন, আপনি স্বীকার করলেন যে ফকিন্নিবাজারে বিক্রি হওয়ার চে' করপোরেটের কাছে বিক্রি হওয়া ভাল ! আমার লেখা বিক্রি হওয়া দের বিরুদ্ধে,তা সে যার কাছেই বিক্রি হোক। আপনার সিদ্ধান্তে দাঁড়াচ্ছে-'কাপড় তুললে ' সাদাচামড়ার দোকানে তোলাই ভাল ! কামিনি-কান্চন দু'ই মেলে ! সাব্বাস !

৭। ভাল লেখার জন্য বুটচাপার বিষয় নয়। আপনি ভুল বুঝছেন। বলা হচ্ছে এটাই আমাদের বাস্তবতা। বিক্রি হওয়া আর বিনা মাগনায় দেওয়াকে জাস্টিফাই করার সংস্কৃতি যত দিন আমরা লালন করব ততদিন এই-ই পাওয়া যাবে, যা এখন পাওয়া যাচ্ছে। চূড়ান্ত বিচারে যা গার্বেজ।

৮। আমার শিরোনামটাও দেখছি বদলে দেওয়ার নসিয়ত করছেন ! বাহ বাহ ! কোনমতেই এটা শিরোনাম হতে পারে না ?সমালোচকের মাত্রা কী ছাড়িয়ে গেলেন না ? যদি আপনার দেওয়া শিরোনামে লিখতে হতো তাহলে বোধকরি আমার মুন্ডু চিবোনোর ব্যবস্থা করতেন..........সমাজ বাস্তবতা ? ক'টা কবিতা লিখেছেন ক্রসফায়ার নিয়ে,কৃষক হত্যা নিয়ে,কাস্টডিতে হত্যা নিয়ে, আ কৃষককে বাস্তুহারা করা নিয়ে ? একটাও না ।

#আমি নিশ্চিত আমার লেখা ঠিক ঠিক জায়গামত আঘাত করেছে।

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

মাহবুব লীলেন এর ছবি

#আমি নিশ্চিত আমার লেখা ঠিক ঠিক জায়গামত আঘাত করেছে।

একেবারে ১০০% একমত
নাহলে অত কথা বলার দরকার পড়তো না
বলতামও না

দুয়েক লাইন পড়ে চলে যেতাম অন্য কোথাও

০২

স্ববিরোধীতার কথা বলেছেন
অবশ্যই
ধর্মে স্ববিরোধীতার জায়গা নেই কিন্তু সাহিত্যে আছে
হোক তা লেখায় কিংবা আলোচনায় কিংবা সমালোচনায়

০৩

বাকি পর্বগুলি সম্ভবত সচলে যাবে না। ভোরের কাগজে যাবে। সচলের পাঠক-সমালোচক-লেখকদের পছন্দের ব্যারোমিটারে এটি 'উর্ত্তীর্ন' হতে পারেনি'

আমাকে নয়। অন্য কাউকে দেয়া এই কমেন্ট সম্পর্কে কমেন্ট হলো সচলের পাঠকদের কাছে উত্তীর্ণ নাহলে অত বড়ো লেখা মাঝরাতে বসে কেউ পড়ে?
আর অত বড়ো বড়ো কমেন্ট করে?

০৪

আর আমার ব্যাপারে ক্ষেপার কারণ নেই ভাইজান
যে লেখাটা আমার ভালো লাগে না সেই লেখাটা আমি পড়িও না। আর পড়লেও কমেন্ট করি না
আর যেটা ভালো লাগে সেটাতেই কমেন্ট করি
কিন্তু কী কারণে যেন অনেকগুলো কথা লেখার পরেও 'ভালো লেগেছে' 'খুব ভালো হয়েছে' এই জাতীয় কথাগুলো লিখতে ভুলে যাই

০৫
দেন এখানেই পরের পর্বগুলো দেন
পড়ে পড়ে আরো কিছু স্ববিরোধীতাপূর্ণ কথা বলি

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

লীলেন ভাইয়ের কমেন্টের সাথে একমত। আমাদের সংস্কৃতিতে সবচেয়ে ক্ষতিকারক কোন উদ্ধৃতি যদি কিছু থেকে থাকে সেটা হলো
নজরুলের এই ফালতু লাইন "হে দারিদ্র্য তুমি মোরে করেছো মহান"। নজরুলরে আসলেই মহান করছিলো কি না জানি না, কিন্তু ৯৯% মানুষ দারিদ্র্যের চাপে পড়ে মহান হয় না। বরং তাদের মন মানসিকতা সংকুচিত হয়, টাকার চিন্তা তাদের সমস্ত চেতনাকে জুড়ে থাকে। অভাব তাদের ভেতর এবং বাইরে থেকে কুড়ে কুড়ে খায়। এই দারিদ্র্য এড়াতে গ্রামের জোয়ান মরুতে গিয়ে কামলা তো খাটেই। এমনকি দেশের নামী-দামী প্রতিভাধর লেখকরা পর্যন্ত পশ্চিমে গিয়ে ইমিগ্র্যান্ট হয়ে যান। ক্ষতি কাদের হয়? ফকির দেশ আরো ফকিরত্ব অর্জন করে। আর এরই মধ্যে কেউ কেউ নজরুলের লাইন ধরে দারিদ্র্যকে রোমান্টিসাইজ করে। আর লেখকদের দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে বলে, শালা তুই কেন বৈরাগী হইতে পারোস না?
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

হিমু এর ছবি

আমার মনে হয় নজরুলের এই কবিতাটা সবাই মিসইন্টারপ্রিট করেন। শেষ চারটা লাইন পড়ে দেখবেন। পুরো কবিতাটাই সারক্যাস্টিক। পুরোটা পড়লে মনটা হঠাৎ করে খারাপ হয়ে যায়। কারো লেখা থেকে একটা অংশ উদ্ধৃত করতে করতে সেটাকে পঁচিয়ে কালো বানিয়ে ফেললে সেই লেখার মাহাত্ম্য আপাতদৃষ্টিতে কমলেও, পূর্ণপাঠের আগে সেটা সম্পর্কে একটা সিদ্ধান্তে আমরা চলে এলে মুশকিল।


হাঁটুপানির জলদস্যু

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

হতে পারে, পূর্ণ কবিতা আমারও পড়া নাই। কিন্তু এই উদ্ধৃতিটা জনমানুষের কাছে এইভাবেই পরিচিত হয়ে আসছে - দারিদ্র্যের এক রকমের গ্লোরিফিকেশান হিসাবে। আমি সেই সর্বপ্রচলিত ইমেজটা নিয়েই বলছিলাম।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍ভাই, প্লিজ, রাগ করবেন না, কিন্তু একটা কথা না বলেই পারছি না। আপনার সাম্প্রতিক লেখা ও মন্তব্যগুলো পড়ে আমার যা মনে হলো, তা-ই বলছি: আপনি কোনও এক কারণে আপনার চারপাশের সবকিছু এবং সবার ওপর মহাক্ষিপ্ত।

আমি খুব খুশি হবো আমার ধারণা ভ্রান্ত প্রমাণিত হলে।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর?

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

মনজুরাউল এর ছবি

তাই কি? নিশ্চই আপনার ওপর নয়।

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

যেমন হুমায়ুন আজাদের ছিলো, আহমদ ছফার ছিলো, এবং এক ক্ষুরে মাথা কামানোর দেশ বাংলাদেশে খুব একটা বিশেষ দেখা যায় না সেরকম একটা স্বকীয় বিশ্লেষণী ক্ষমতা ও ভঙ্গি আছে মনজুরুলের।

লেখাটি পড়েছিলাম ভোরের কাগজে, কম্পিউটারে একটা কপিও আছে, তারপরও আবার পড়লাম। লেখাটির গতি, ব্যবচ্ছেদের ধার এবং মূল বক্তব্য অবশ্যই নাড়া দেয় গভীরে। এই কাজটাই হয়তো লেখক করতে চেয়েছেন। আমি অবাক হবো না, যদি কোনোদিন শুনি এই মূল্যায়নটা পড়েই গন্ডগ্রামে কোনো লেখক কাগজ টেনে নিয়েছিলেন দুর্দান্ত কোনো সাহিত্য রচনা করার জন্য। এই লেখার সব কথার সাথে আমি হয়তো একমত হবো না, তা হওয়ার দরকারও নেই, তবু এটা মানবো নি:সন্দেহে এটা শক্তিশালী লেখা।

মুহাম্মদ জুবায়েরর কাছে নেতিবাচক মনে হয়েছে লেখাটিকে, বা মনে হয়েছে সবকিছু অস্বীকার করেন বলে আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন লেখক। এই দায়টা সম্ভবত: লেখকের ভাষাভঙ্গির ঘাড়েই যায়। কিন্তু মনজুরুলের ভাষা-ভঙ্গিতে প্রবলভাবে বুঝা যায় এমন একটা নিজস্বতা আছে - এটাকে সৃষ্ঠিশীলতার ধ্বনাত্মক দিক হিসেবেই বিবেচনা করাটাই সঙ্গত বলে আমার মনে হয়। প্রাবন্ধিকের মিনমিনে কণ্ঠ নয় মনজুরুলের, সাহিত্যের অধ্যাপকের মত নানা মাপকাঠি দিয়ে মাপজোখ করেও কথাগুলো সাজাননি। একধরণের রাগ, ক্রোধ - যেন অনেকটা নিজের ওপরই গোস্বা - নিয়ে আত্মসমালোচনায় বসেছেন গোটা দেশের সাহিত্যসৃষ্টির। আর সাহিত্যে সফলতাকে তিনি বেধেঁছেন অনেক উঁচু তারে। তার বিবেচনায় খুব কম লেখকই সেই উচ্চতা অতিক্রম করেছেন। তার এই বিচারকে নেতিবাচক না বলে আমরা চাঁছাছোলা কড়া সমালোচনাও বলতে পারি।

এখানে লেখাটি পড়ে ভিন্ন একটা মাত্রা পাওয়া গেলো মন্তব্য থেকে - এটা পাঠকদের যেমন পাঠের ভিন্ন মাত্রার সুযোগ দেবে তেমনি লেখকের যুক্তিগুলো শাণিত করতে তাকেও প্রাণিত করবে।

এসব বিবেচনায় জিফরানের সাথে আমিও একমত বাকী পর্বগুলোও আসা উচিত সচলায়তনে।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

মনজুরাউল এর ছবি

বাকি পর্বগুলি সম্ভবত সচলে যাবে না। ভোরের কাগজে যাবে। সচলের পাঠক-সমালোচক-লেখকদের পছন্দের ব্যারোমিটারে এটি 'উর্ত্তীর্ন' হতে পারেনি। 'ভৈরবি' যে প্রভাত কালের রাগ সেই সময় এবং মাত্রাজ্ঞান ছিল। শুধু আপনার অনুরোধেই দিয়েছিলাম।

কোলকাতার 'স্টেটসম্যান 'লেখাটা ছেঁপেছিল(এটা এক পর্বই,স্পেস বিবেচনায় দু'ভাগ করে দেওয়া)। ওরা বছর তিনেক ধরে মাঝে মধ্যে আমার লেখা ছাঁপে। বাকি অংশ ভোরের কাগজে অথবা ওদের দেব।

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

জিফরান খালেদ এর ছবি

সম্ভবতঃ টম্ভবতঃ মানি না। এখানেই দিতে হবে। আমি নিজে অনুত্তীর্ণ পাঠক, আমার আবার ব্যারোমিটার আসে নাকি? যাগো আসে, তাগোর দলে আমি নাই। সুতরাং আমারে বঞ্চিত করতে পারবেন্না। গুনাহ হবে।

আর, আমার মন্তব্যে আপনে আশা করি কিছু মনে করেন্নাই? আমার প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন তুলে ধরসিলাম। এই যা...

ছোট ভাইয়ের লগে ঝামেলা কইরেন্না, সেন্টু খামু নাইলে! হ! লেহা এইহানেই দিবেন!

শেষ কথা!

রাফি(লগইন করলাম না) এর ছবি

বাকি পর্বগুলো চাই......। আপনি আসলে কী বুঝাতে চাইছেন এখনো আমার কাছে স্পষ্ট না। তবে এ লেখার মূল বক্তব্যের সাথে একমত।
তবে লীলেন ভাই এর কথা মাথায় রাখতে হবে ।
মানিক একটা উপন্যাস লেখার জন্য জেলেপাড়ায় গিয়ে থাকতে পারেন।
বিভূতি তার লেখালেখির জন্য চাকরি ছেড়ে নিভৃতচারী হতে পারেন।
কিন্তু সত্তর দশক পরবর্তী সময়ে আমরা তেমন devoted(ভাল কোন বাংলা মাথায় আসছে না) লেখক পাইনি। বাস্তব বা সংসারজীবনের এই সীমাবদ্ধতা মাথায় রেখেই কিন্তু কথা বলতে হবে।
বাকি সব পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

মানিক একটা উপন্যাস লেখার জন্য জেলেপাড়ায় গিয়ে থাকতে পারেন।
বিভূতি তার লেখালেখির জন্য চাকরি ছেড়ে নিভৃতচারী হতে পারেন।
কিন্তু সত্তর দশক পরবর্তী সময়ে আমরা তেমন devoted(ভাল কোন বাংলা মাথায় আসছে না) লেখক পাইনি।

বিষাদসিন্ধু লিখতে কিন্তু মীর মশারফ হোসেনকে কারবালার প্রান্তরে উপস্থিত থাকতে হয়নি।

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

তা তো ঠিকই, চাঁদ নিয়ে কবিতা লেখার চল মানুষের চাঁদে যাওয়ার আগেও ছিল। কারণ চাঁদ উঠতো মনে। সেকারণে বিষাদ সিন্ধুর কারবালা আরবে নয়, বাঙালি মুসলমান কৃষকের মনের মন্দিরেই বিস্তৃত ছিল। আরবের হাসান-হোসেনের দেখা তাই সেখানে নাই।
লেখালেখিতে অভিজ্ঞতার মিশাল অবশ্যই ধর্তব্য, তবে সেটাই চূড়ান্ত নয়। তা যদি হতো তাহলে ব্যাঙের আত্মকথা ব্যাঙই লিখতো ডারউইন সাহেবকে লিখতে হতো না।

জানার পক্রিয়া সরলরৈখিক নয়, আবার মারেফতি নয়। নারী সবার জীবনেই (পুরুষের, যেহেতু নারীর নির্মাণ পুরুষই করে সাহিত্যে) আসে, তবুও কেন রবীন্দ্রনাথের নারী আর অমিয়ভূষণ মজুমদারের নারী আলাদা হয়। মানিকের জেলে আর অদ্বৈত মল্লবর্মণের জেলে আর ইলিয়াসের মাঝিরা এক নদীতে ভাসে না?

বড় লেখকদের কারো দেখাই পুরোটাই মোহ নয়, কিন্তু রবীন্দ্রনাথের বিপ্লবী হিমালয়ে যায় (গোরা) আর ইলিয়াসের বিপ্লবী তেভাগার মাঠে মাঠে ছোটে।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

হিমু এর ছবি

বাকি পর্বগুলি সম্ভবত সচলে যাবে না। ভোরের কাগজে যাবে। সচলের পাঠক-সমালোচক-লেখকদের পছন্দের ব্যারোমিটারে এটি 'উর্ত্তীর্ন' হতে পারেনি।

মনজু ভাই, একটা প্রশ্ন ছিলো, অনেকদিনের।

এই যে একটা লেখা লিখে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া, এ ব্যাপারটাকে আপনি কিভাবে দেখেন? মূলধারার কাগজে লেখার প্রতিক্রিয়া পাঠকদের কাছ থেকে ঠিক কিভাবে আসে? কতটুকু সময় ধরে?

সচলে এ লেখাটা দেয়ার পর ২৪ ঘন্টার মধ্যে লেখক বাদে ৮৮ জন পাঠক লেখাটি পড়েছেন, পনেরোটি মন্তব্য এসেছে লেখকের মন্তব্যসহ। ভোরের কাগজ বা স্টেটসম্যানে লেখাটি ছাপালে পাঠকের সংখ্যা বহুগুণিত হবে, সন্দেহ নেই, কিন্তু পাঠকের কাছ থেকে লেখকের কাছে ফিডব্যাক কিভাবে পৌঁছুবে? ই-মেইলের মাধ্যমে? সম্পাদকের কাছে পাঠানো চিঠিতে?

আমার অভিজ্ঞতা বলছে এই লেখাটি এই সপ্তাহে আরো প্রায় শ'খানেক পাঠক পড়বেন মন দিয়ে, হয়তো আরো জনা বিশেক মন্তব্য রাখবেন। সচলায়তনে প্রায় প্রতিটি লেখাই দেখবেন ঘুরে ফিরে শ'তিনেক বার পঠিত হয়। ভোরের কাগজ বা স্টেটসম্যানের সাথে আমরা পাঠকসংখ্যা নিয়ে পাল্লা দেয়ার কথা ভাবছি না, কিন্তু ফিডব্যাক কি সচলায়তনে একেবারেই কম?

একটা দুর্যোগ চলছে সচলায়তনে, কর্তৃপক্ষের বিরাগভাজন হয়েছে সে, আর চারদিকে গুঞ্জন-ফিসফাস-হঙ্কার, আপনার লেখাটি হয়তো সে ডামাডোলের ধোঁয়ায় বহু পাঠকের দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। বা হয়তো এ ধরনের লেখার পাঠকই সচলায়তনে কম। কিন্তু ব্যারোমিটার সম্পর্কে আপনি এতো কম সংখ্যক মন্তব্য দেখেই সিদ্ধান্তে চলে এলেন?

আজ যদি এই পাঠকেরা এই একই মন্তব্য ভোরের কাগজ বা স্টেটসম্যানের রেফারেন্স দিয়ে আপনাকে চিঠি লিখে জানাতো, আপনি কি সেখানেও লেখা বন্ধ করে দিতেন ব্যারোমিটারের পারদের অনুচ্চতার কথা ভেবে?


হাঁটুপানির জলদস্যু

জিফরান খালেদ এর ছবি

হিমু ভাই,

আমার মনে হয় না, মনজু ভাই পাঠের সংখ্যা, মন্তব্যের সংখ্যা - এইসবকে পারদ ভাবসেন।

পাঠরূপ এবং পাঠকের প্রতিক্রিয়া-ধরণ বোধহয় উদ্দিষ্ট ছিল। এই ব্যাপারে আমরা লেখক থেকেই জানতে পারবো বলে আশা রাখি।

মনজুরাউল এর ছবি

এক মত। এখন এক বন্ধুর পিসি থেকে লিখছি। রাতে বাসায় ফিরে পূর্ণ কথা বলা যাবে।

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

জনাব মনজুরুল হক, (নাকি মনজুরাউল?) আপনার লেখার দুটি পর্বই পড়েছি। আপনার মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং অধিকারের প্রতি সম্মান রেখে সবিনয়ে বলি-

১। কলকাতার স্টেটসম্যান এ আপনি ওদের লেখকদের এরকম ফার্দাফাই করে লিখুন তো একটি লেখা। দেখুন তো ওরা ছাপে কি না।
ওদের দাদাগিরিতে এমনিতেই আমরা পেরেশানিতে আছি।

২। কোন মাপকাঠিতে দেবেশ রায়কে স্ট্যান্ডার্ড ধরে আমাদের এগোতে হবে?

৩। হাসান আজিজুল হক, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, মাহমুদুল হক, সৈয়দ শামসুল হক, আহমদ শরীফ, আহমদ ছফা, হুমায়ূন আহমেদ, হুমায়ুন আজাদ, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, আবদুল গাফফার চৌধুরী, এম আর আখতার মুকুল, আল মাহমুদসহ বাংলাদেশের অক্ষম লেখকদের আপনি ক্ষমা করে দিন।

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

মাহবুব লীলেন এর ছবি

একেবারে একমত রিটন ভাইয়ের সাথে
আমাদের কিছু লেখক আছে ইন্ডিয়া গিয়ে আমাদের লেখকদের গালাগলি করে কল্কে পেতে চায়

বাংলাদেশের লেখকদের গালি দিয়ে লিখলে ইন্ডিয়ার পত্রিকায় ছাপাবে খুব যত্ন করে
(পারলে তসলিমা নাসরিনের কাগজের বাণ্ডিলগুলোর মতো ফটোকপি করেও বিলাতে পারে)

কিন্তু বালাদেশের লেখকদের প্রসংশা করে কিছু লিখলে কিংবা তাদের কোনো লেখককে সমালোচনা করে লিখলে ছাপায় কি?

০২

আরেকটা কথা
মনজুরাউল সাহেব বাংলাদেশের সব লেখককে একেবারে ছিলে ফেললেন
কিন্তু তার লেখার সামান্য সমালোচনা উনি সহ্য করতে পারলেন না
এটা কী রকম কথা?

০৩

রিটন ভাইতো একটা ছোট তালিকা দিয়ে বলেছেন তাদের ক্ষমা করে দিতে
আমি বলবো- বাংলাদেশের যারা যারা লিখছে তাদরে সবাইকে আপনি ক্ষমা করে দেন...

মনজুরাউল এর ছবি

ভাইজান আমার নাম নিয়ে অন্তত আমার কোন সন্দেহ নেই।

১। জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব দের বিরুদ্ধে লেখা নিশ্চয় লেখক দের বিরুদ্ধে লেখার চেয়ে ওজনদার । নন্দিগ্রাম নিয়ে আপনার ভাষায় ‘ফর্দিফাই ’ করার পরও সেই লেখা ছাপা হয়েছিল।
দাদাগিরিতে পেরেশান অন্য ব্যাপার।

২।অদিতি মহসিনের সাথে এক স্বাক্ষাত্কারে আহম্মদ ছফা বলেছিলেন...দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বাঙলা সাহিত্যে ‘তিস্তাপারের বৃত্তান্ত’ র মত উপন্যাস লেখার কথা ছিল এই বঙ্গের কারো। সেটা লিখলেন
দেবেশ। স্ট্যান্ডার্ড আমার নয়, ছফা ভাইয়ের।

৩। বেশ বেশ ।এই সাথে কি আপনাকেও? তথাস্ত!
.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আমি চিরকালই অগ্নিপূজক, তাই মঞ্জু ভাইয়ের গরলাগ্নির সেবায় লাগলে আনন্দিতই হব। এবং চাইব, আপনার লড়াইটা লেখা-মন্তব্য হয়ে তারপরও চলতে থাকুক আমাদের মধ্যে। ফলত, আপনার না লেখার অভিমান মানব না। মানলে আপনাকেই দুষতে হয় যে!

আপনার লেখায় নেতির বসত মনে হলেও, তাতে ইতির হাত-ইশারা আছে। নেতির মাধ্যমে যে ইতির আগমনের আবহ আমরা বানাতে চাই, তার প্রস্তুতি আছে। তবুও এত কথার পরে বলব, সত্যিকার অর্থে এতে আমি বিশ্লেষণ পাইনি, নৈতিক বিচার পেয়েছি। বিচারের ধারাভাষ্য ব্যতিরেকে হঠাত রায় এলে একটা চমকানি খেতে হয় বৈকি। তাই চমকেছি। এবং আপনার ভাষা ও লেখনীর ঘূর্ণিপাকে আটকে ঢূকে পড়েছি। এখন কয়েকটা পাক আলবত খাব।

গোবরে পদ্মফুল এই বঙ্গদেশে কিছু ফলেছে বোধ হয়। এটাও স্টেটমেন্ট হয়ে গেল। তার থেকে বলি, বাংলাদেশের সাহিত্যেও একটা সাধনার ব্যপার আছে। এখানকার জীবনপ্রবাহকে ধরবার একটা মেহনত আমাদের সবচে' বাজারি (হুমায়ুন আহমেদ) আর সবচে' সন্ন্যাসী লেখকের (আহমদ ছফা) মধ্যেও দেখতে পাই। একে তুচ্ছ করে ফেলে দিতে পারি না। এঁদের অবদানেই বাংলাদেশের সাহিত্যকে আলাদা করে চেনা যাচ্ছে। এ বিষয়ে আশু-আগামীতে লিখবার ইচ্ছা রাখি।

এবং আমি একমত যে, যার জন্য সাহিত্য কঁকিয়ে কঁকিয়ে এগোচ্ছে, সেটার দায় শ্রেণীর-সমাজাধিপতির। কিন্তু কেবল বাজারকে দোষ দিলে, শ্রেণীর সীমানায় আটকে থাকা অভিযাত্রীদের সংগ্রামশীলতার বিচার হয় না। ব্যক্তিদেরও দায় আছে, এবং সাহিত্য যে মাত্রায় সাবজেকটিভিটির কারবার, সেই মাত্রায় সেই দায় তাদের নিতে হবে। নিতে হবে তাদের আদর্শের-জীবনবোধের। তাঁরা কেন বারবার দেবতা বানাতে গিয়ে বাঁদর গড়লেন? আবার যারা বানরের রূপে দেবতাকে গড়লেন, তাঁদের কেন চেনা হল না; ইত্যাদি রকমারি প্রশ্ন তাই হারিয়ে যায়। হারিয়ে যায় নিরিখের বিচার। ক্রিটিকের ভিত্তিটা ধরিয়ে না দিলে আলোচনা এগয় না। আবার সংজ্ঞার্থ ঠিক করে আলোচনা শুরু করাও ক্লান্তিকর। এক লেখাতেই সব পুরে দেয়া হবে, এমন আশা করলে সমালোচককে ব্যকরণশাস্ত্র লিখতে বলার মতো বেয়াদবি হয়ে যাবে।

কডওয়েল স্টাডিজ ইন এ ডায়িং কালচার লিখেছিলেন, ক্রিটিকের মাধ্যমে নতুন মান ও মানুষ বের করার তাগিদে। আমি মূল্যায়নের স্পিরিটের সঙ্গে একাত্মা হয়েও তাই দেহটাকে আলাদা রাখছি।

ভূত ঝাড়াতে ঝাঁটার বাড়ি দরকার হয়। আপনার দেয়া এই ঝাঁকুনিতে ঘোর কাটতে পারে; এই ভরসায়...

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

রণদীপম বসু এর ছবি

০১. প্রথমজন: আচ্ছা তোকে যে এতো মার মারলো, তুই সহ্য করলি কীভাবে !
দ্বিতীয় জন: তোমাকেও হাত-পা বেঁধে মার দিক্, দেখো কীভাবে সহ্য হয়।
আমাদের লেখকদেরকে কেন লিখছে না এমন প্রশ্নে এরকম উত্তর আসাটা অস্বাভাবিক কিছু ?

০২. লেখাটা অসম্পূর্ণ এবং তৃষ্ণা মেটে নি।

০৩.

বাকি পর্বগুলি সম্ভবত সচলে যাবে না। ভোরের কাগজে যাবে। সচলের পাঠক-সমালোচক-লেখকদের পছন্দের ব্যারোমিটারে এটি 'উর্ত্তীর্ন' হতে পারেনি।

কথাটা অহঙ্কারসুলভ হয়ে গেছে। লেখা পড়ে সমৃদ্ধ মন্তব্যগুলো না হলেই কি লেখক পরিতৃপ্তি পেতেন ? ভারী লেখা লিখতে গিয়ে এতো ভারী চিন্তা ও কষ্ট করতে পারলেন, অথচ সহজ করে ভাবতে পারলেন না যে লেখাতে একটা আকর্ষণ ছিলো বলেই অনেকেই পড়ছেন এবং বড় বড় মন্তব্যও করছেন।

০৪. সৃজনশীল একজন লেখক হিসেবে তিনি ভাবলেন কী করে যে, সব সৃজনশীল মানুষের চিন্তা একই ছাঁচের হবে ? ভিন্নমত থাকাটাই স্বাভাবিক এবং উচিৎও। নইলে সৃজনশীলতার স্রোত অবরুদ্ধ হয়ে যায়। প্রতিটা মানুষের চিন্তা চেতনাই ভিন্ন ভিন্ন। এটাকে সহজভাবে নিতে না পারলে একজন লেখক লিখবেন কী নিয়ে ?

০৫. পাঠকের মতভিন্নতাকে স্বাভাবিক ও ইতিবাচক স্পৃহায় নেয়ার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।

এরকম লেখা সচলায়তনে আরো বেশি করে আশা করছি। আমাদের উপর রাগ করছেন কেন ? ধন্যবাদ।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

মনজুরাউল এর ছবি

AMI GOTO DUDIN DHORE DE-LINK. JE PC TE LIKHCHI TATE BANGLA HOCCHE NA. JARA MONTYOBBO KORACHEN TADER SHOKOL KE THANKS. AAMAR NET OK HOLE AGAIN KOTHA HOBE.

THANKS EVERYBODY.SPECIALY LOT OF THANKS TO MR. MAHBUB LILEN.

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

হিমু এর ছবি

আপনি যদি ইউনিকোডে লিখে অভ্যস্ত হন তাহলে CTRL + ALT + U চাপুন।


হাঁটুপানির জলদস্যু

মনজুরাউল এর ছবি

হিমু ভাই আপনার সব প্রশ্নের উত্তর হয়ত দিতে পারব না, তবে আমি আপনার মন্তব্যের সাধে একমত। এ প্রসঙ্গে শুধু এতটুকুই বলতে পারি:

আমি বিশ্বাস করি লেখক প্রধানত লেখে তিনটি কারণে-
প্রথমত: সমাজ-শ্রেণী 'র প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে।
দ্বিতীয়ত: সমাজ-শ্রেণীর অন্তত একজনও যদি তার লেখা পড়ে আঁধার কাটাতে পারে,একজনও যদি শ্রেণীসচেতন হয়ে ওঠে, একজনও যদি অন্যায়-অবিচারকে রুখে দাঁড়াতে শেখে সেই আশায়।
তৃতীয়ত:লেখা ছাড়া অন্য কোন সৃজনশীল মাধ্যমে তার চিন্তভাবনা,দায়বদ্ধতা,আর গণমানুষের কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ নেই বলে।

অনেকে হয়ত আরো অনেক কারণে লেখেন। জানিনা।

এটা ঠিক একটা লেখা নিয়ে সচলে তাত্ক্ষনিক ভাবে যে ক্রীয়া-প্রতিক্রীয়া পাওয়া যায় তা প্রিন্ট মাধ্যমে সম্ভব নয়।যদিও সেখানে হাজার হাজার মানুষ পড়েন। সেটাই একমাত্র কারণ সচলের বদলে সেখানে দেওয়া, তেমন নয়।

সচলের লেখক-পাঠক-সভ্য দের সামান্যতম অবমূল্যায়ন না করে আমার ধারণাটা জানাচ্ছি: এ ধরণের আক্রমনাত্মক বিক্ষুব্ধ (তাও আবার নিজেরই বিরুদ্ধে) লেখা পড়তে,আলোচনা -সমালোচনা করতে তাঁরা খুব একটা অভ্যস্থ নন। (অবশ্যি এটা আমার পুর্বাহ্নেই স্থিরকৃত মূল্যায়ন নয়)। সে কারণে প্রথম প্রহরেই যে সমালোচনাটা এসেছে সেটাকে আমি সমালোচনা বলতে পারছি না। ওটা অনেকটা ব্যক্তিআক্রমন। তাও সমালোচনামান্যভাষায় হলে কথা ছিল না।‌'তীরের' লক্ষ ছিল লেখার বদলে লেখক। কিছু উদাহরণ:-----


কিন্তু কী কারণে যেন অনেকগুলো কথা লেখার পরেও 'ভালো লেগেছে' 'খুব ভালো হয়েছে' এই জাতীয় কথাগুলো লিখতে ভুলে যাই

দেন এখানেই পরের পর্বগুলো দেন
পড়ে পড়ে আরো কিছু স্ববিরোধীতাপূর্ণ কথা বলি

‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍ভাই, প্লিজ, রাগ করবেন না, কিন্তু একটা কথা না বলেই পারছি না। আপনার সাম্প্রতিক লেখা ও মন্তব্যগুলো পড়ে আমার যা মনে হলো, তা-ই বলছি: আপনি কোনও এক কারণে আপনার চারপাশের সবকিছু এবং সবার ওপর মহাক্ষিপ্ত।

৩। হাসান আজিজুল হক, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, মাহমুদুল হক, সৈয়দ শামসুল হক, আহমদ শরীফ, আহমদ ছফা, হুমায়ূন আহমেদ, হুমায়ুন আজাদ, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, আবদুল গাফফার চৌধুরী, এম আর আখতার মুকুল, আল মাহমুদসহ বাংলাদেশের অক্ষম লেখকদের আপনি ক্ষমা করে দিন।

আরেকটা কথা
মনজুরাউল সাহেব বাংলাদেশের সব লেখককে একেবারে ছিলে ফেললেন
কিন্তু তার লেখার সামান্য সমালোচনা উনি সহ্য করতে পারলেন না
এটা কী রকম কথা?

রিটন ভাইতো একটা ছোট তালিকা দিয়ে বলেছেন তাদের ক্ষমা করে দিতে
আমি বলবো- বাংলাদেশের যারা যারা লিখছে তাদরে সবাইকে আপনি ক্ষমা করে দেন...

পাঠক মতামত, ভিন্নমত,পাঠকপ্রিয়তা,সৃজনশীলতার বহুমুখিতা এসব কোন কিছু নিয়েই আমার দ্বিমত নেই ।সচলে বাকি পর্বগুলো দিতে না চাওয়ার মধ্যেও সামান্যতম অহংবোধ নেই।না দিতে চাওয়ার মূল কারণ, প্যারাসাইট মিডলক্লাস,মাফিয়া,সংস্কৃতির সোলএজেন্ট,আপোষকামি এলিয়েনেটেড ভদ্রলোকদের বিরুদ্ধে যে লেখা সেটা অ্যাফ্লুয়েন্ট আরবানাইজড রা মেনে নেবেন না। কাগজের পাঠক মূলত গণমানুষ।তারা তাদের শত্রুদের চিনুক। এ ধরণের লেখায় শত্রু চিনতে পারে তারা। নিজে যে ভাবে ভাবে সেই ভাবনা যখন লেখক,ছবিনির্মাতা বা নাট্যকারের মধ্যে দেখে তখন একাত্ম হতে চায়। হতে পারে।
সচলের পাঠক-লেখক অধিকাংশই সমাজের সুবিধাভোগি অংশ। তাদের সবার অন্তত একটা কম্পিউটার আছে।অধিকাংশই সুশীল সংস্কৃতমনা ।তাদের ভ্যালুজের ভেতর এরকম'র'বিশেষণ প্রবেশের পথ পায় না।
না ভাই আমি 'ক্ষেপে' যাই নি, অবাকও হইনি। শুধু স্মিত হয়েছি 'ধরণ' একং 'প্রকরণ; দেখে। পাঠকপ্রিয়তা আমার কাছে সামান্যতম অর্থ বহন করে না। আমি জানি ক্যাপিটালিজমের দিকে তাক করা দু'টি মিজাইলের একটি 'ডাস ক্যাপিটাল' অন্যটি 'দ্য অরিজিন অব স্পিসিস.'....... বিশ্বের সবচে' অজনপ্রিয় বই। তাতে কী হয়েছে? ওই দুটি বই-ই বিশ্ব এবং গোটা মানব জাতিকে নাড়িয়ে দিয়েছে। আরো অনেক কাল ধরে দেবেও।

আমি মোলায়েম মাখোমাখো করে বলতে পারি না, লিথতেও পারি না।আমি চাষাগোত্রের মানুষ অবগুন্ঠিত কিছু নয়, যা চোখের সামনে সোজা-সরল ভাবে দেখি তা-ই সোজাসাপ্টা ভাবে লিখে যাই । তাতে কারো এ্যারিস্ট্রোক্র্যাসির ফাউন্ডেশনে ধাক্কা লাগল কি লাগল না তা নিয়ে ভাবি না। এটাই আমার স্টাইল। আমি চোখ কে চোখ-ই বলতে শিখেছি। আঁখি,নয়ন,পল্লব,অক্ষি...এ আমায দিয়ে হবার নয়।

শেষে তিনটি প্রতিক্রিয়ার কথা:(ক) লেখাটা ফেব্রুয়ারিতে ছাপার পর আকরাম স্যার ডেকে বলেছিলেন...... 'গাধা কোথাকার,অনেককেই তো দেখলাম ছেড়ে দিয়েছিস? কেন ভয় পেয়েছিলিস?(খ) জনৈক লেখপাঠগোত্রিয় মাস্তান (নিজেকে আ.মাহমুদের ভক্ত পরিচয় দিয়ে) আমার হাড্ডি গুড়ো করার হুমকি দিয়েছিল।(গ)জনা পাঁচেক ঢাবি শিক্ষার্থী চাঁদা তুলে ছাপতে চেয়েছিল, আবার গোটা সাতেক আ্যাংরি তরুণ সেল ফোনে দেখেটেখে নিতে চেয়েছিল।

শেষ কথা: আমি বিশ্বাস করি আমাদের দেশটাতে সঠতা,বজ্জাতি,বদমায়েশি,দালালি,আর হিপোক্র্যাসির পাপের সন্তান রা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। যে কোন ভাবে দেশের আশিভাগ খেটেখাওয়া মানুষের মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে খাচ্ছে। সমাজের অগ্রগামী অংশ লেখক,কবি-সাহিত্যিক,বুদ্ধিজীবীদের দায়িত্ব কর্তব্য ছিল প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করা। এই হিপোক্র্যাটদেরই বিরুদ্ধে আমার কলম। চলছে। চলবে।

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

হিমু এর ছবি

আমি আপনার দীর্ঘ মন্তব্যের পর আবারও সেই পুরনো প্রশ্ন করি। ভোরের কাগজ বা স্টেটসম্যানের পাঠক যে গণমানুষ, তাদের পক্ষ থেকে যদি আপনার সাথে যোগাযোগ করা হতো, এবং আইটালিক্সে যে মন্তব্যগুলো তুলে দিয়েছেন, সেরকম মন্তব্য তাঁরা করতেন, আপনি কি ভোরের কাগজ বা স্টেটসম্যানে না লিখে অন্যত্র লেখার উদ্যোগ নিতেন?

লেখার বদলে লেখকের দিকে তীর ছোঁড়ার ব্যাপারটায় আমি একটু বিভ্রান্ত হই বরাবরের মতো। আমি কিন্তু আপনার লেখাতেও বেশ কয়েকজন লেখকের প্রতিই নিক্ষিপ্ত তীরের পালক দেখতে পেয়েছি। আপনি যেমন মোলায়েম মাখোমাখো করে লিখতে পারছেন না, তেমনি করে হয়তো অনেকে সমালোচনা করতে পারছেন না।

আপনার কলম চলুক, সে প্রত্যাশাতেই এই প্রশ্নগুলো আপনাকে করা। তাছাড়া আরো কয়েকটি আগ্রহোদ্দীপক মন্তব্য ও প্রশ্ন উঠে এসেছে এই পোস্টের আলোচনায়, সেসব সম্পর্কে আপনার মন্তব্য বা প্রত্যুত্তর পাঠের আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় রইলাম।


হাঁটুপানির জলদস্যু

জিফরান খালেদ এর ছবি

মনজু ভাই,

আপনার লিখার একজন গুণমুগ্ধ পাঠক হিশাবে এই ছোট মন্তব্য।

লিখার যে কারণসমূহ দিলেন, আমি দ্বিমত পোষণ করি। এক্সপ্রেশান ব্যাপারটাই তাইলে একটা ডিডাক্টিভ ক্লাস টুল হয়া যায়। সাহিত্যের উদ্দেশ্য বয়ান করতে গেলে প্রকারান্তরে এক্সপ্রেশান এর যে কম্পার্টমেন্টালাইজেশান, সেইটার একটা সমাজতাত্বিক ব্যাখ্যা প্রদান করা জরুরী।

আপনার লিখাটা একটা চমতকার নিদর্শন সাব্জেক্টিভ এক্সটেরিয়র মনোলগের। তবে, আপনার বিশ্লেষণে আপনি যে প্যারামিটার ব্যবহার কইরা অ্যাডভান্টেইজড সার্কলরে ভিলিফাই করলেন, প্রায় বিপরীত বা সমধর্মী প্যারামিটারে জুবায়ের ভাই, রিটন ভাই বা লীলেন ভাই এর মন্তব্যকে উড়াইয়া দেয়া কি যায়? হ, ঠিক যে, আপনার লিখায় আপনি অ্যাফ্লুয়েন্ট শ্রেণীরে গলা চাইপা ধরসেন, কিন্তু, নিজের শ্রেণী-অবস্থান নির্ধারণে ঠিক এইরূপ নিশ্চয়তার সাথে কেউ আপনার কথনরে ক্যাটাগরাইজ করলে আপনে কি কিছু মনে করবেন?

আপনার অনেক মন্তব্যেও ব্যক্তি মুখ্য হয়া উঠসে। কিন্তু, আমি মাথায় রাখার চেষ্টা করতেসি যে ঐ ব্যক্তির চেয়ে আপনি ব্যক্তির শ্রেণীরূপরে বেশি আইডেন্টিফাই করতেসিলেন। শ্রেণী শব্দটাই যে বিবৃতির বয়ান দেয়, সেইটাই আমার ভিতর সংশয় তৈরি করে।

আদর্শিক পাটাতন প্রত্যেকের দাড়াঁবার কি জায়গা? এই ধরণের স্ট্যান্ডার্ডাইজড স্কিম ইন্ডিভিজুয়্যালিটি ক্ষুণ্ণ করে বইলা আমার ধারণা।

শেষে কই, আপনে কোনো একটা কারণে লিখেন। সেইটার লগে আমি একাত্ম না হইতে পারলে সমস্যাটা কোন অন্ধকার গুহায় নিক্ষেপ করবো? নাকি আসমানেই ঝুলাইয়া রাখন লাগবো?

সেই বিচারে, সৈয়দ আহমদ শামীমের কবিতা ধার করতে হয়,

'কিছুই নয়
নিরবতা ভালো মনে হয়'

আপনে ব্যাজার হবেন না। সচলের পাঠকরে যেইভাবে ব্যবচ্ছেদ করসেন, সেইটা মাথা রাইখ্যাও আপনার লিখা চলুক এই আশাই করি। ভাল থাকেন মেধাবী সেনানী!

মনজুরাউল এর ছবি

হ্যাঁ জরুরি বটে। তবে সমাজতাত্বিক ব্যাখ্যাটা যদি এরকম হয়...বাংলাধদশ ,ইথিওপিয়া,সুদান কিংবা ফিলিস্তিনের সমাজবাস্তবতার সাহিত্য আর নরওয়ে,সুইডেন কিংবা সুইজারল্যান্ডের সমাজবাস্তবতার সাহিত্য এক হতে পারে? প্রথমোক্তদের সাহিত্য জীবন বাঁচাতে । দ্বিতীয়দের জীবন রাঙাতে অথবা মাধুর্যময় করতে।

আমার প্যারামিটার দিকনির্দেশ করছে দুটি দলকে। যারা চড়াদামে বিবেক কিনতে চাচ্ছে,যারা বার্গেনিং শেষে নিজেকে বিক্রি করে হুকুমবরদার হয়ে যাচ্ছে। না তাদের মন্তব্যকে মোটেই উড়িয়ে দিচ্ছি না। তারা যে লিমিটেশনের কথা বলছেন সেই লিমিটেশন প্রতিটি বাঙালির প্রতি মুহূর্তের বেঁচে থাকার ভেতরেই। সেটা শিরধার্য করেই এই জনপদের মানুষ জন্মায়,বড় হয়,গানগায়,কবিতা লেখে। লেখক অবশ্যই সবার মত হাসি-কান্না মেশানো মানুষ। আরো পরিষ্কার করে লেখক অগ্রসর মানুষ। সমাজবাস্তবতা,অভাব অনটন বিরুদ্ধস্রোত ,বন্দুকের নল ..কোন কিছুই তার সিদ্ধান্তের প্রতিবন্ধক হতে পারে না। সেটা হলে সুকান্ত কবিতা না লিখে ঠোঙা বানিয়ে বেঁচে সাচ্ছন্দ খুঁজতেন।

শ্রেণী শব্দটা আমার মধ্যে কোন সংশয় সৃষ্টি করে না। শ্রেণীর স্ট্যান্ডার্ড ইন্ডিভিজু্য়ালিটির ধারণাটাই গোলমেলে। আমি ইন্ডিভিজু্য়ালিটির বিপক্ষে।

"মেধাবী সেনানী"?!

এই আড়াআড়ি খোঁচা স্বত্বেও আপনাকে কংগ্রাচু্লেশন ধীমান।

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

জিফরান খালেদ এর ছবি

হাহাহা... শ্রদ্ধা করে আপনারে মেধাবী কইলাম, আপনার প্রফাইল আগে দেখা হয় নাই, অইটাতে যে লাইনটুকু আসে, সেটা গোচরে আইবার পরে আপনারে সেনানী কইতে আমার বাজে নাই। সেইটাও সম্মান করেই। আমি খোঁচা দিয়া লিখি না রে ভাই। পারি না। এই সচলে একবারই ওই খোঁচাখুঁচি করসিলাম, সেইটাতে নিজেই লজ্জিত হইসিলাম।

সুতরাং, আমি আপনার 'আপনাকে কংগ্রাচু্লেশন ধীমান' কথাটুকু ধরেই নিচ্ছি ভাল অর্থে বলা।

আপনি ইন্ডিভিজুয়্যালিটির বিপক্ষে এইটা পরিষ্কার হইলেই আগে থেকেই আমার ধারণা অনেক আলোচনা, ভুল তর্ক এড়ানো যাইতো। যাক, এইটা জানলাম, লাভই হইলো।

আপনি ভাল থাকেন, এই কামনা...

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

হুমম, লেখকের কলম চলবে এ জন্যই তো সচলায়তন। যে কলম নন-ভার্চুয়াল জগতে থেমে যায় তাকেও আকাশে লেখার খাতা এগিয়ে দেয়ার ব্যবস্থাই তো রয়েছে ব্লগে।
সুতরাং মনজুরাউল, লিখে যান...

-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

ধ্রুব হাসান এর ছবি

চলুক মানসিকভাবে ও অস্তিত্বগতভাবে, এমন কি বলতে পারেন শ্রেণীগত অবস্থান থেকেও আমি বিরুদ্ধ শেণীর লোক; কিন্তু তবুও আপনাকে অভিবাদন এরম ঢঙ্গে সত্য উচ্চারণের জন্য। যদি আমরা জাতিগতভাবে কিছুটাও আগায় তা হয়তো কেবল সম্ভব ভক্তিবাদের গায়ে থু থু ছিটিয়ে। চিয়ারস্‌! চলুক
ইচ্ছে হলে এখানেও বাকী লেখাগুলো দিন, আমার মতো কিছু সুবিধেভোগী ইন্টেরেক্টিভ মানুষজন পড়ুক! বড় কাগজের পাঠক জনগোষ্ঠির একটা বড় অংশ হলেও অবস্থানগত কারনে তারা হলেন বোবা। তাই ঐ জায়গায় আপনিই অবিসংবাদিত নেতা বা লেখক। এখানে দিলে এটলিষ্ট আমরা আপনাকে বায়বীয়ভাবে হলেও ছুতে পারি! কি বলেন?
আগুন জ্বলুক ...... চলুক

কীর্তিনাশা এর ছবি

আমি মুর্খ তবু বলি আগুন জ্বলুক।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

মনজুরাউল এর ছবি

যিনি নিজেকে 'মূর্খ' বলতে পারেন তিনিই প্রকৃত প্রাজ্ঞ ।
আগুনটা আগে নিজের মধ্যেই জ্বালানো দরকার ।

ধন্যবাদ।

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।