দ্বিতীয় জীবন

মৃদুল আহমেদ এর ছবি
লিখেছেন মৃদুল আহমেদ (তারিখ: শনি, ১৬/০৫/২০০৯ - ১:২১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

খালেদ চাচার মিটিংয়ে যাওয়া হল না।
মাঝপথে রাস্তাটা ঘুরে গেল।
দিব্যি যাচ্ছিলাম ভদ্রলোকের মতো। শুক্রবারের রাস্তা, ফাঁকা হওয়ার কথা, কিন্তু কেন যেন অনেক ট্রাফিক আজকে। ডানদিকে ডিভাইডার ঘেঁষে ছুটে যাচ্ছি। আচমকা প্রায় দোতলা বাসের সমান হাইটের বড় একটা বাস ডানে কেটে আমার দিকে তেড়ে এল। দ্রুত ব্রেক কষে আরো ডানে ডিভাইডারের আরো কাছে ঘেঁষে গেলাম।
কোনো লাভ হল না। তারপরই জীবনের অন্যতম দুর্লভ এক্সপেরিয়েন্সটি ঘটল!
বিকট একটা শব্দ হল বাম পাশে... তখন বুঝি নি বামপাশের চাকা বসে টায়ারটা ফেটে গেছে, মুহূর্তে আমার গাড়িটা চরকির মতো বামে ঘুরে গেল দারুণ স্পিডে, ঠিক রাস্তার মাঝখানে... বাসটা হালকা একটু ব্রেক কষে আরেকটা ধাক্কা মারল আমার গাড়িটাকে, দেখলাম, উল্টে যাচ্ছি... স্টিয়ারিং ধরে কীভাবে সামলালাম জানি না! এরপর দেখি বাসটা আমাকে ছেঁচড়াতে ছেঁচড়াতে নিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে... এরপর এই ঝামেলা থেকে মুক্তি পাবার জন্য সে ছোট একটা ব্রেক কষল, আমার গাড়িটা একটু ফ্রি হয়ে যেতেই সে এগিয়ে এসে আবার ধাক্কা মারল... এবার গাড়ি ছুটল পিছন দিকে, ধড়াম করে এসে ধাক্কা খেল ফুটপাথের সাথে!
একটা ভাঙ্গা মুড়ির টিনের মতো আমার গাড়িটা পড়ে রইল রাস্তার পাশে, বড় বাসটা ৫ সেকেন্ডের জন্য থামল সিগন্যালে, ট্রাফিক পুলিশ দেখেও না দেখার ভান করল, বাসটা বেরিয়ে গেল দ্রুত...
গাড়ির দরজা থেকে আমি বেরোলাম বিপুল বিস্ময়ে... এতগুলো ধাক্কা খাবার পর, এতগুলো গাড়ির ভিড়ে দুইবার চরকির মতো পাক খাবার পরও আমি সুস্থ আছি? ঠিকমতো আছি? একটাও আঁচড় পড়ে নি?
রাস্তার পাশে তখন লোকজনের ভিড়... আমাকে একজন বলল, সিএনজি নিয়ে গিয়ে ব্যাটাকে ধরেন! আমার মানিব্যাগ, সেলফোন সবসময় ড্যাশবোর্ডের ওপর থাকে, সে দুটোর একটাও দেখতে পাচ্ছি না... গাড়ির কাচের টুকরোয় ভর্তি গাড়ির ভিতরটা... গাড়ি ছেড়ে যদি সামনে এগিয়ে যাই, জানি ও দুটোকে আর কোনোদিনও দেখতে পাব না...
মাথা ঠাণ্ডা করে নিজেকে সামলালাম। ফোন দিলাম লীলেন ভাইকে। জানালাম, আসতে পারছি না। আমার জন্যে অপেক্ষা করার দরকার নেই। তারপর, ধারেকাছের বন্ধুবান্ধবকে ফোন দিলাম, আয় তোরা! আমি ভাঙ্গা একটা গাড়ি নিয়ে জরদগবের মতো দাঁড়িয়ে আছি ব্যস্ত রাস্তার পাশে।
শুক্রবার। বন্ধের দিন। সবারই কোনো না কোনো পার্টি। পারিবারিক অনুষ্ঠান। ব্যস্ততা। এসবের মধ্যেই বন্ধুরা ছুট লাগাল। কিন্তু সবাই অনেক দূরে। আসতে যে অনেক সময় লাগবে। এই সময়টুকু কিছুই করার নেই।
--কী হইছিল ভাইজান?
সাধারণ চেহারার একটা লোক। চোখে স্বাভাবিক কৌতূহল। লোকটাকে কী করে বোঝাই কী হয়েছিল। আমার জীবনের বিশাল এক প্রত্যক্ষ দর্শন ঘটেছে আজকে, আমি দ্বিতীয় জীবন পেয়েছি, যেটা নাও পেতে পারতাম। এর চেয়ে অনেক সহজে মানুষ মারা যায় পথেঘাটে।
এই বিশাল অভিজ্ঞতার ওজন একা নিতে পারছি না। ক্লান্ত লাগছে।
একটা সিগারেট ধরাতে খুব ইচ্ছে করছে। কিন্তু গাড়ি ছেড়ে নড়তে পারছি না। বন্ধুরা নিশ্চয় পকেটভর্তি সিগারেট নিয়ে আসবে। এসেই বলবে, তুই চুপচাপ পাশে বসে থাক, আমরা সব দেখছি...
মানুষে ঠাসা রাজপথে আমি চরম নিঃসঙ্গতায় আক্রান্ত হলাম।
সন্ধ্যার অন্ধকার নেমে আসছে। আমি অপেক্ষা করছি। পরম বুভুক্ষুর মতো। বন্ধুদের পরিচিত মুখ আর অতি পরিচিত সিগারেটের ধোঁয়া...


মন্তব্য

সুমন চৌধুরী এর ছবি

অক্ষত আছেন তো?


অজ্ঞাতবাস

নজমুল আলবাব এর ছবি

কি বলেন এইসব???

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

মূলত পাঠক এর ছবি

এইটা গল্প হলেই খুশি হতাম। সুস্থ আছেন জানলে আশ্বস্ত হই।

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

আছি ভাই। অলৌকিকভাবে অক্ষত। এত ঠাসাঠাসির পরও।
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়...

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

উজানগাঁ এর ছবি

সুস্থ আছেন জেনে আশ্বস্থ হলাম।

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

আশ্বস্ত হয়েই পড়ছিলাম, কারণ পোস্ট করার মতোন সুস্থ আছেন সেটা বোঝা যাচ্ছিল। আমি দূর্বল হার্টের লোক, এইসব খবর শুনে হজম করতে পারি না। আপনি ভালো থাকুন।

এক্সিডেন্টের জন্য না, এক্সিডেন্টের পরে বাসটা যে আপনাকে রেখে চলে গেলো সেই জন্য দেশটাকে আমার ভয়ঙ্কর মনে হয়!

স্নিগ্ধা এর ছবি

মৃদুল - সত্যিই এই দিনপঞ্জীটা তো না-ও লেখা হতে পারতো, হলো যে, হতে পারলো যে সেটাই আসল! ভালো থেকো ......

স্বাধীন এর ছবি

দ্বিতীয় জীবনই বটে। সুস্থ আছেন জেনে আশ্বস্থ হলাম।

হিমু এর ছবি

আপনি সামনের কয়েকটা দিন বিশ্রাম নিন।

ট্রাফিক পুলিশরা জীবনেও কিছু দেখে না। বুয়েটের সামনে একবার চমন আরা চম্পা নামের একটা মেয়েকে আক্ষরিক অর্থেই পিষে চলে গেলো একটা বাস, প্রায় চল্লিশ গজের মতো রাস্তা তার রক্তে মাখামাখি হয়ে ছিলো। ছেলেরা দৌড়ে গিয়ে মোটর সাইকেলে বসা এক সার্জেন্টকে বললো, ভাই ধরেন বাসটারে ধরেন। সে সানগ্লাস চোখ থেকে নামিয়ে বলে, ঐটা আমার কাজ না। পোলাপাইন ধরে তারে কিলানো শুরু করলো, হারামজাদা তোর কাজ তাহলে কী? মোটরসাইকেলে বসে বাল ফালানো? বেগতিক দেখে সে ছুট দিলো, একটু পরে পুলিশের বড় কর্তারা হাজির। গাড়ি থেকে নেমে কী ধমক! ভিড় থেকে কে একজন যেন একটা ডাবের আধলা ছুঁড়ে মারলো। বাস, শুরু হয়ে গেলো ইঁট মারা। পুলিশের গাড়ির সবকয়টা গ্লাস ভাঙার পর গাড়ি ছাত্রদের ফুঁড়ে পালালো। এরপর দাঙ্গা পুলিশ এসে উপস্থিত সবাইকে দিলো ধাওয়া। বুয়েটের তরুণ শিক্ষকদের দুয়েকজনকেও তারা সেদিন ডান্ডাপেটা করেছিলো। চম্পা মেয়েটা মরে গিয়ে বুয়েটের সামনে দিয়ে বাস চলা থামাতে পেরেছিলো। আমার মনে হয় বাংলাদেশে রক্ত না দিলে কোন কিছুর মূল্য শোধ করা আর সম্ভব নয়। প্রতিটি সাধারণ জিনিস, যা এমনিতেই সভ্য দেশে থাকা উচিত, হওয়া উচিত, তা মানুষকে প্রাণের বিনিময়ে কিনতে হয়।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

সচল জাহিদ এর ছবি

হিমু, ঘটনাটা মনে করে দেবার জন্য ধন্যবাদ। আমার মনে আছে আমি তখন বুয়েট সেফটি মুভমেন্টের সাথে যুক্ত। পরেরদিন আমি, বাবুভাই, ফয়সাল গেলাম তখনকার ছাত্রকল্যান পরিচালক জয়নাল আবেদীন সারের কাছে বুয়েটের সামনের রাস্তা দিয়ে বাস চলাচল বন্ধ করার দাবী নিয়ে আর যেখানে মেয়েটে মারা গেছে দেখানে একটা স্মৃতিসৌধ করতে। কিছুদিন বাস চলাচল বন্ধ ছিল এখন মনে হয় আবার শুরু হয়েছে।

-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

হ্যাঁ, বিশ্রাম নেয়াটা জরুরি।
আমার হাত-পা কাটে নি, কিন্তু মেন্টালি একদম ফ্রিজ হয়ে আছি।
আমার বউয়েরও আমার সাথে যাবার কথা ছিল মিটিংয়ে, খুব ভাগ্য ভালো যে, শেষমুহূর্তে সে বলল, নাঃ, থাক, ঘরে বেশ কিছু কাজ জমে আছে!
সে বেচারা প্রেগনেন্ট মানুষ, কালকে সে বেরোলে অক্ষত দেহে থাকত না... বাসায় এসে যতবার তার দিকে তাকাচ্ছি, ততবারই সে কথা মনে করে শিউরে উঠছি!
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়...

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

আনিস মাহমুদ এর ছবি

লীলেন বলেছিল অ্যাকসিডেন্টের কথা, কিন্তু সেটা যে এত ভয়াবহ তা তো বুঝতে পারিনি আমরা কেউই। আমরা বরং ইয়ার্কি মারছিলাম যে, সময়মত বেরুলে তো এই বাসটা মৃদুলের নাগাল পেত না। এত গুরুতর দুর্ঘটনা জানলে আমরা হয়ত প্রথমে যেতাম আপনাকে উদ্ধার করতে, তারপর মিটিং করতাম।

আপনি সুস্থ আছেন জেনে ভাল লাগছে।

.......................................................................................
Simply joking around...

.......................................................................................
Simply joking around...

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

সেইজন্যেই বিস্তারিত জানাই নি। মিটিংয়ের মনোযোগ নষ্ট হত। ওটা অনেক জরুরি।
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়...

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

সচল জাহিদ এর ছবি

মৃদুল ভাই আপনি ভাল আছে যেনে আশ্বস্ত হলাম।

-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

অনিকেত এর ছবি

সত্যি, বড় আজব এই দেশ!!
যাক, আপনি অক্ষত আছেন---এই-ই অনেক!

ভাল থাকবেন সকল সময়!!

সাঈদ আহমেদ [অতিথি] এর ছবি

এই হলো আমাদের দ্বিতীয় জীবন!
আমাদের দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ জীবন দেয়া কতোইনা সহজ সৃষ্টিকর্তার জন্য! "কত কিছু করার ছিল" বলে জীবন যখন দীর্ঘশ্বাস ফেলে, মুহূর্তেই দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ জীবন পেয়ে যাই আমরা।
একজীবনকেই কেটে কেটে কতবার যে ফেরত দিল!

তোমার সাথে না কথা হলো দুপুরে? এরমাঝেই এতকিছু! ফোন দিচ্ছি... ফোন ঠিক আছে?

মামুন হক এর ছবি

মৃদুল কি বলব ভেবে পাচ্ছিনা, কিছুদিন আগেই গেল তোর জ্বর-জারি আর এখন এই মারাত্মক দুর্ঘটনা। একটু সাবধানে থাকিসরে ভাই! আগামী কিছুদিন বউ-বাচ্চার সাথে নিরবিলি সময় কাটা, এই ধরনের ঘটনার ধাক্কা সামলাতে সময় লাগে। কপাল ভালো তুই অক্ষত আছিস আর সাথে ভাবী বা আর কেউ ছিলনা।
মুড ভালো হলে আর দু'একটা আদম ভুনা করে ফেল!

দময়ন্তী এর ছবি

কি সাংঘাতিক!!!
ভাল থাকুন৷ সুস্থ্ থাকুন৷ নিরাপদে থাকুন৷ ওফ!!

একরাস্তা লোক, কেউ বাসটার নম্বর নেয় নি? লোকে পালাতে দিল বাসটাকে? বাস ড্রাইভারের তো লাইসেন্স ক্যানসেল এবং বেশ কয়েকবছরের হাজতবাস হওয়া উচিত্৷

আমার এই গত শুক্রবারেই হয়েছে৷ হাইওয়ে দিয়ে যাচ্ছিলাম, আস্তে আস্তেই৷ সামনে একটা ছোটমত ট্রাক৷ ডানদিকের লেন পুরো ভর্তি৷ হঠাত্ ট্রাকটা বেমক্কা রিভার্স করল আর গদাম করে আমার বাঁদিকে মারল৷ পুরো উইন্ডস্ক্রীন, বাঁদিকটা ভোগে গেছে৷ মন খারাপ

-------------------------------------------------------
"নিভন্ত এই চুল্লিতে মা
একটু আগুন দে
আরেকটু কাল বেঁচেই থাকি
বাঁচার আনন্দে৷'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

সবাইকে অনেক ধন্যবাদ। আশ্বস্ত থাকুন, মানসিকভাবে ছাড়া আর কোনো আঘাতই পাই নি।
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়...

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

আপনি যে অক্ষত আছেন এটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার ... ঘটনার বর্ণনা পড়ে আমি ভাবছিলাম হাতেমুখে ব্যান্ডেজ নিয়ে এই লোক কিভাবে ব্লগ লিখেছে !! ... পরে কমেন্ট পড়ে আশ্বস্ত হলাম ... ভালো থাকবেন
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

কীর্তিনাশা এর ছবি

কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা মৃদুল ভাই।

তাড়াতাড়ি মানসিক সুস্থতা ফিরে পান - এই কামনা রইলো।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

রণদীপম বসু এর ছবি

গতকাল লীলেন ভাই এবং নজরুল ভাইকে ফোনে নিশ্চিৎ করেছিলাম যে আমি আসবো। শেষবার নজু ভাইয়ের সাথে সম্ভবত সাড়ে চারটায় ফোনে কথা হলো। তখন বাইরে বাতাস থেমে গেলেও ঝিরঝিরে বৃষ্টি হচ্ছিল। কম্পু বন্ধ করে ভাবলাম ১০/১৫ মিনিট বিছানায় বিশ্রাম নিয়ে রওয়ানা দেই। এই ১০/১৫ মিনিট যে সাথে আরো একটি অতিরিক্ত ঘন্টা পেটে হজম করে নেবে তা তো বুঝিনি ! হঠাৎ করে বউ কেন যে বেঁকে বসলো, সেটা রহস্য ! খারাপ আবহাওয়ায় আরো বেরিয়েছি অনেক। বাসার নিকটবর্তী কোন স্থানে জঙ্গি অস্ত্র-শস্ত্র আবিষ্কার বা অন্যকিছু হয়তো তার মনে ইফেক্ট করে থাকতে পারে। যাক্, তবু বেরিয়েই দু-কদম গিয়ে রাস্তা পানি জমে আছে আর হালকা বৃষ্টি। রিক্সা নেই। সন্ধ্যা হয় হয়। কতক্ষণ পর যুক্তিহীনভাবে বাসায় ফিরে আসা।
কথা দিয়ে কথা না রাখার নজির আমার নেই। মনে অপরাধবোধ আর যুক্তিহীনতা নিয়ে ফোন করেও জানাইনি যে আমি আসবো না। এভাবেই একটি রাত নেমে এলো কাল। অনেক রাত করে ঘুমোতে যাবার পুরনো অভ্যাসে ঘুমাতে গেলাম।
একটু আগে ঘুম থেকে উঠে কম্পু খোলেই এই দ্বিতীয় জীবনের কাহিনী ! বড় জটিল ঘূর্ণাবর্তের মধ্যেই আমাদের জীবন-যাপন আসলে !

মৃদুল দা', গত মিটিং-এ আপনার এই গাড়িটি করেই কচুক্ষেত এগিয়ে দিয়েছিলেন আমাকে। ড্রাইভিং সিটে আপনি। আর পাশে আমি কতো নিরাপদেই না বসে ছিলাম। আমাকে যথাস্থানে পৌঁছে দিয়ে স্বভাবজাত সৌজন্যে ভরিয়েও দিয়েছিলেন। অথচ কতো নিরাপত্তাহীনতা কেটে কেটেই না আপনাকে এগিয়ে যেতে হয়েছিল হয়তো, যা আরোহী হিসেবে আমরা ভাবিও না কখনো। ভাববো কী করে ! ড্রাইভিং সিটে বসে আপনি এতো স্বাভাবিক সৌন্দর্য ধরে থাকেন কী করে !
ধক্ করে ওঠেছিলো বুকটা। লেখাটা পড়তে পড়তে রুদ্ধশ্বাসে শুধু বোঝার চেষ্টা করেছি আপনার সর্বশেষ অবস্থাটা। আপনি সুস্থ আছেন জেনে শেষে স্বস্তি পেলাম।
কিছুই বলার নেই আমার। এ সময়ে কী বলতে হয় তা আমার জানা নেই যে ! ভালো থাকুন ভাই, সুস্থ ও সেইমতো সুন্দর থাকুন। এটা আমার তীব্র কামনা !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

নিবিড় এর ছবি

ভাল আছেন জেনে ভাল লাগল মৃদুল ভাই


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

মৃদুল, শুভ কামনা আপনার জন্য। এর বেশি কিছু বলার ক্ষমতা আমার নেই।

বাসটাকে থামালে বা ড্রাইভারকে ধরলেও কিছুই হত না। যারা এই ধরণের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছেন তারা এই সত্যটা জানেন।

এই ৭ই মে রাতে আমার স্ত্রী, আমাদের ছেলে আর আমার শাশুড়ী রাতে বাসায় ফিরছিলেন। আমার বাসার কাছেই সোহাগ পরিবহনের একটা বাস হঠাৎ পিছন দিক থেকে এসে আমাদের গাড়িটাকে আস্তে আস্তে ডানদিক থেকে চেপে ফেলতে থাকে। আমাদের ড্রাইভারের শত চেঁচামেচিতেও ড্রাইভার গাড়িটিকে পিষে ফেলা বন্ধ করে না। একসময় হঠাৎ সোহাগের ড্রাইভারের মনে দয়ার উদ্রেক হওয়ায় সে পিষে ফেলা বন্ধ করে। আমার বাসা কাছে হওয়ায় বাসটাকে থামানো যায়, ড্রাইভারকেও নামানো যায়। কিন্তু দেখা গেল সোহাগের সব যাত্রী, রাস্তার অন্য সব বাসের কর্মীরা আমার আর আমাদের ড্রাইভারের উপর মারমুখি হয়ে উঠল। আমার বোধ বলে সোহাগ পরিবহন সারা দেশ জুড়ে দামী দামী, বিশাল বিশাল সব বাস চালাচ্ছে বিভিন্ন রুটে। এই কর্মের জন্য তাদের যে পরিমান muscle বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিস্তৃত আছে তাতে আমার মত চুঁনোপুটির কিছুই করা সম্ভব না। আমি মাথা নিচু করে দুমড়ানো গাড়ি নিয়ে বাসায় ফিরি।

এই ঘটনাটি যখনই মনে হয় তখন আমি আর স্বাভাবিক থাকতে পারি না। আপনারাই একবার ভেবে দেখুন, একটা বিশাল আকৃতির ভলভো বাস একটা টয়োটা করোলাকে এক পাশ থেকে পিষে যাচ্ছে, ভিতরে মৃত্যু আতঙ্ক চোখে নিয়ে আমার স্ত্রী-পুত্র বাসটিকে দেখছে। ক্ষমা করবেন, কোন সৎবাক্য তখন আমার আর মনে হয় না, আমার শুধু মনে হয় সব কিছু ধ্বংস করে দেই।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

বলেন কী পাণ্ডবদা? এমন অবস্থা হয়েছিল? এই ৭ তারিখে? ইস...
আচ্ছা, আমাকে বলেন, সোহাগের নাহয় অনেক মাসল পাওয়ার এবং লোকজন, কিন্তু যে যাত্রীরা ছিল সেই বাসে, তারা কেন মারমুখি হয়ে উঠল? তোরা তো হারামজাদা একটা টিকিট কেটে বাসে উঠেছিস, তোরা তো সোহাগের শেয়ার কিনিস নি! তোরা তো ব্যাটা আমাদের মতোই সাধারণ নাগরিক, সোহাগের পক্ষ নিয়ে চেচাচ্ছিস কি তোরা এই বাসের একটা টিকিট কিনেছিস বলেই? এ কী বিচিত্র মানসিকতা!
আমরা আসলে অনেক স্বার্থপর এবং খারাপ...
আপনার অবস্থাটা বুঝতে পারি পাণ্ডবদা, এই অভিজ্ঞতার ভার সামলাতে আপনার অনেকদিন লাগবে... বৌদি, আপনার শ্বাশুড়ি এবং আপনার ছেলের জন্য সহমর্মিতা।
আমাদের দেশে যেহেতু আইনের আশ্রয়ে কিছু হয় না, আমরা সাধারণ নাগরিকরা বঞ্চিত হই, তাহলে আমাদের আর্মস রাখার সুযোগ দিলেই হয়, আমার সন্তান, আমার পরিবারের দিকে এমন নির্দয়ভাবে যারা আক্রমণ নিয়ে এগিয়ে আসে, যেন তাদের দু-চারটার লাশ ফেলে দিয়ে সতৃপ্তিতে ফাঁসির দড়িটা গলায় পড়তে পারি!
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়...

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

স্নিগ্ধা এর ছবি

একটা বিশাল আকৃতির ভলভো বাস একটা টয়োটা করোলাকে এক পাশ থেকে পিষে যাচ্ছে, ভিতরে মৃত্যু আতঙ্ক চোখে নিয়ে আমার স্ত্রী-পুত্র বাসটিকে দেখছে।

ষষ্ঠ পান্ডব - কিচ্ছু বলার নেই!

শামীম এর ছবি

গল্প হলেই বেশি খুশি হতাম।

কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে এ ধরণের ভীতিকর অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে আমাদের কখনও কখনও যেতে হয়। শারীরিকভাবে সুস্থ্য আছেন জেনে ভালো লাগলো। গাড়িটার জন্য খারাপ লাগলেও এই ফাঁড়াটা ওটার উপর দিয়ে গিয়েছে - এটা মন্দের ভালো।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

‍‌শিউরে উঠলাম।
আঘাত লাগেনি, বেঁচে গেছেন সেটাই দুর্ঘটনা। এদেশে এরকম ঘটনার পর সুস্থ বেঁচে থাকাটাই দুর্ঘটনা। কী টুনকো জীবন।

রাস্তাঘাটের অনাচারে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে তেমন কোন দেশ এশিয়ায় দেখি না। আফ্রিকায় যাইনি, বলতে পারবো না।

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

সুস্থ আছেন জেনে স্বস্তি পেলাম।
ভালো থাকুন, মৃদুল ভাই।

.........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

মুস্তাফিজ এর ছবি

ভালো থাকুন, মৃদুলদা।

...........................
Every Picture Tells a Story

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

কী সর্বনাশ! ভালো থাকুন, নিরাপদে থাকুন...

দ্রোহী এর ছবি

কী সব্বোনাশ!!!

স্পর্শ এর ছবি

সুস্থ আছেন জেনে হাঁফ ছাড়লাম!

এবার সম্রাট অশোক হয়ে যান! হাসি


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

তানবীরা এর ছবি

ভালো আছেন দেখে ভালো লাগলো।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

khaled এর ছবি

mridul vai,

thanda mere jaoa kake bole ekon bujhte parchi.

Ei Nepale boshe himalayer cheyeo thanda.
FB chatting e ektu avash o dilen na?

Chuti nen and come to Nepal. I will take you to some places.

Thik koira bolento ghotonata shotti kina.

Khaled

ভুতুম এর ছবি

সুস্থ থাকুন প্রার্থনা থাকলো।

-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি

পলাশ দত্ত এর ছবি

আসলেই দ্বিতীয় জীবন।
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

তানভীর এর ছবি

কী বলবো বুঝতে পারছি না। দেশে বাসা থেকে বের হওয়া মানে তো এক রকম জান হাতে নিয়ে বের হওয়া। সুস্থ, স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি এ রাষ্ট্র থেকে পেতে আমাদের হয়তো আরো বহুকাল অপেক্ষা করতে হবে, আরো অনেক প্রথম, দ্বিতীয় জীবন এভাবে বিনা কারণে বলি দিতে হবে। আপনি ভাগ্যবান যে দ্বিতীয় জীবন পেলেন! আমরা বড়ই ভাগ্যবান!

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

ভালো আছেন জেনে বিরাট স্বস্তি পেলাম মৃদুল ভাই।

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

স্বস্তি পেলাম অনেক। আর ভাবছি যে আর কত সাবধান হলে অন্যেরা আমাদের ঠুকবে না!

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আহা দ্বিতীয় জীবন!

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

অনেক বড় বিপদ গ্যালো তাইলে, কানের পাশ দিয়া, হ্যাঁ অনেক বেশি শব্দ কইরাই গ্যালো।
কী বলবো বুঝতে পারছি না।
মন খারাপ
গাড়ির ক্ষতি হলেও আর মানসিক-মানবিক বিপর্যয়েও আপনি শরীরে অক্ষত আছেন জেনে ভালো লাগলো।
সাবধানে থাকেন।
নিরাপদ থাকেন।
ভালো থাকেন।

___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

রানা মেহের এর ছবি

কী ভয়ংকর ঘটনা মৃদুল ভাই
আর না হোক এমন
খেয়াল রাখবেন নিজের
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

জি.এম.তানিম এর ছবি

সুস্থ আছেন জেনে স্বস্তি পেলাম। খুব দ্রুত মানসিক চাপটাও কাটিয়ে উঠুন। শুভকামনা।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।