ভারতীয় ভিসা পাওয়া কি আজকাল স্বর্গের টিকিট পাওয়া নাকি!

মুজিব মেহদী এর ছবি
লিখেছেন মুজিব মেহদী (তারিখ: রবি, ০৪/০১/২০০৯ - ৮:২০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এমন নয় যে, ভারতে আমি এবারই প্রথম যেতে চাচ্ছি ; কিংবা এমনও নয় যে, ভিসার মেয়াদের অতিরিক্ত এক ঘণ্টা সময়ও আমি কখনো ওদেশে কাটিয়েছি, তবু অনেক সময়-শ্রম-সম্মান-তেলপানি খরচাসমেত ১২ দিন অপেক্ষা করেও আমার ভিসাটা হচ্ছে না। হচ্ছে না তো হচ্ছে না, কবে হবে বা আদৌ হবে কি না সে সংবাদটাও ঠিকঠাক জানা যাচ্ছে না। এখন চলছে যন্ত্রণাকর অপেক্ষা। এদিকে আমার যাবার সময় একেবারেই নিকটবর্তী হয়ে এসেছে। ফ্লাইট কনফার্ম করবার সময় বয়ে যায় যায় অবস্থা।

গত কয়েক বছরে আমি আরো কয়েকবার বৈধ উপায়ে ও পথে ভারতে গিয়েছি। একবারও এজন্য আমার ফরমে স্বাক্ষর করা ছাড়া আর কোনো ভূমিকা রাখতে হয় নি। ট্র্যাভেল এজেন্টরাই করিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক মুম্বাই হামলার পর থেকে ভারতীয় ভিসা প্রক্রিয়াটি অসম্ভবরকম জটিল (বিড়ম্বনাকর ও বিরক্তিকরও) হয়ে গেছে। তারা হয়ত এখন যাকে-তাকেই জঙ্গি সন্দেহ করে বসছে! অথচ কে জানে তাদের সৃষ্ট সব ফাঁকফোকর গলিয়েই আসল জঙ্গি দেশে ঢুকে যাচ্ছে কি না!

আমি প্রয়োজনীয় সব ধরনের কাগজপত্রসহ আবেদন করেছি গত ২৩ ডিসেম্বর। আবেদনপত্র জমা দেয়ার ভোগান্তিটা একেবারেই মাত্রাছাড়া। এজন্য সব ভিসাপ্রার্থীকে রোদবৃষ্টিধূলিহাওয়া মাথায় নিয়ে এক দীর্ঘ কিউতে দাঁড়াতে হয়। শুনেছি রাত চারটার দিকে গেলে প্রথম ৫০ জনের মধ্যে জায়গা পাওয়া যায়, যদিও জমা দেয়ার সময় সকাল ৮টা-১২টা। এই পঞ্চাশজনের মধ্যে ৪০ জনই থাকে দালাল। যারা প্রকৃত ভিসাপ্রার্থীদের কাছে ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০০ টাকা পর্যন্ত দামে ওই স্পেসটা বিক্রি করে। যারা দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ানোর ঝামেলা থেকে বাঁচতে চান, তারা ওটা কিনে নেন। আমি গুলশানের ভিসা অফিসে গিয়ে পৌঁছি ৯.৩০-এ। ততক্ষণে লাইন শুটিং ক্লাবের সামনেটা ছাড়িয়েছে। কেউ কেউ বলল, দেড়হাজার লোকের লাইন। ত্রিশ মিনিট মতো দাঁড়িয়ে থেকেও যখন দেখলাম লাইন এক হাতও এগোচ্ছে না, তখন আশঙ্কা হলো, হয়ত আমাকে আরো একদিন আসতে হবে। তখনই এক দালাল এসে প্রস্তাব দিল, এক হাজার টাকা দিলে সে ঢুকবার ব্যবস্থা করে দেবে। কীভাবে? পুলিশ এগিয়ে দেবে। যদিও দুর্নীতির বিরুদ্ধেই আমার অবস্থান, তবু এই দুর্নীতির প্রস্তাবটা মনে ধরল। রফা হলো ৪০০ টাকায়। হাতে রোলওয়ালা একটা ভারতীয় পুলিশকে পারাপারের দায়িত্ব দেয়া হলো। সে বলল, আসেন আমার সঙ্গে। লাইন ছেড়ে ওকে ফলো করে মিশে গেলাম প্রথম ৭ জনের মধ্যে। আরও ৪৫ মিনিটের মধ্যে আমার জমা দেয়ার কাজ সম্পন্ন হলো। ডেলিভারি ডেট দেয়া হলো ২৮ তারিখ। কিন্তু ২৮ তারিখ ভিখারির মতো ৪ ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে-বসিয়ে রেখে জানানো হলো, আসে নি আমারটা।

ওইদিন ৫টার দিকে ৩০০ জনের একটা লাইনে দাঁড়ালাম। ১০০ জনের মতো যাবার পরে লাইন আর নড়ে না, নড়েই না। এক ঘণ্টা পর খবর এল, যাদের হলুদ স্টিকার কেবল তারা আসুন। হলুদ স্টিকারধারীরা লাইন থেকে বেরিয়ে চলে গেল ও খুশি হয়ে বেরিয়ে আসল। আমি দেখলাম, আমার স্টিকার নীল। এর মানে হলো হলুদ স্টিকারওয়ালারা চেয়েছিল টুরিস্ট ভিসা। আমি চেয়েছি কনফারেন্স ভিসা। অর্থাৎ আমি মিথ্যা করে টুরিস্ট ভিসা চাইলে যথাসময়েই ভিসা হতো, সত্য বলায় এবারটায় ফেঁসে গেছি!

এই কদিনে আমি লোক ধরেছি জনা দশেক। এঁদের মধ্যে আছেন প্রখ্যাত অভিনেতা, প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী, তরুণ সাংবাদিক, জাদরেল কবি, ব্যাংক কর্মকর্তা, হাইকমিশনের কর্মকর্তা প্রমুখ। সবাইকে অনেকানেক তেল দিয়েছি। কাজে আসে নি। সেদিন একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির রেফারেন্সে গেলাম স্টেট ব্যাংক অব ইনডিয়ার একজন নারী কর্মকর্তার কাছে। তিনি ওই ব্যাংকের ক্লায়েন্টদের ভিসা আবেদন ভিসা অফিসে রেফার করার কাজও করেন। তিনি আমাকে বসিয়ে রেখেই একে-তাকে ফোন করে জানালেন যে, আমার ভিসাটা আন্ডার দ্য প্রসেস। তিনি প্রয়োজনীয় খোঁজখবর করবেন জানালেন। ফাঁকে তিনি জেনে নিলেন, আমার ও আমাদের অফিসের লেনদেন কোন ব্যাংকের সাথে। বললাম। উনি জানালেন, আমাদের সঙ্গে কারোর পঞ্চাশ লক্ষ টাকার মতো লেনদেন হলে তার আর লাইনে দাঁড়াবারই দরকার হয় না। আমরাই ভিসা প্রসেস করে দেই!

গতকাল আলাপ হলো হাইকমিশনের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে, যিনি একজন কবিযশোপ্রার্থী। তিনি আজ বিকেল চারটেয় আমাকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেন। বলেন যে, আপনার দুয়েকটা বইপত্র সঙ্গে নিয়ে আসেন। ভাবলাম, যতই অ্যাপয়েন্টমেন্ট করা থাকুক, একটা ফোন দিয়েই যাত্রা করা উচিত। ফোন করে তাকে আমার পুরো পরিচয় দিতে হলো আবার করে। বললেন, পনেরো-বিশ মিনিট পরে আবার কল করতে। না, আবার করতে হলো না। তিনিই কল দিয়ে জানালেন, আপনার পাসপোর্টটা আসে নি এখনো। আরো দুদিন লাগবে। আমি বললাম, আরো দুদিন পরে হলে তো ভিসাটা আমার কোনো কাজেই লাগবে না। কারণ ৬ তারিখেই আমাকে যাত্রা করতে হবে। আর তাছাড়া ফোন করে স্ট্যাটাসটা তো আমি নিজেও জানতে পারতাম। একজন কবিতাকর্মী হিসেবে আমি আসলে একজন কবি-কর্মকর্তার কাছে ফেভার চাই। আপনি চাইলে আমাকে সেটুকু ফেভার করতে পারেন। তিনি বললেন, সরি আমি পারি না, ব্যাপারটা এখন আর আমার হাতে নেই। ওটা অন্য সেকশনে আছে। আমি আবারও বললাম, দেখুন আমিও একটা কাজ করি। ফেয়ার কোনো বিষয়ের প্রতি সুপারিশ অন্য সেকশনে হলেও করার রেওয়াজ আছে। আমি নিজেও আমার কলিগকে এরকম অনুরোধ করতে পারি। করিও। আমি চাই আপনিও করবেন। এবার তার জবাব এরকম, এখন যার কাছে আছে তিনি আমার কলিগ নন। তিনি আমার বসেরও বস। বস কখনো কলিগ হন না। তার পিছলানো দেখে এবার আমি অন্য কথা বলি, আমি কিন্তু আপনার সঙ্গে আজ দেখা করবার জন্য তৈরি ছিলাম। আমার লেটেস্ট দুটো বই, আমার সম্পাদিত জার্নালের একটি কপি, আমার অফিসের একটি ডায়েরি আপনাকে গিফট করবার জন্য সঙ্গে নিয়েছি। তিনি বললেন, আপনি চাইলে আজ দেখা করতেই পারেন, আপনার সঙ্গে পরিচয়টা হলো, সেটাই লাভ। কিন্তু আমি ভিসাটা কনফার্ম করতে পারব না। বললাম, তাহলে এখন আমার করণীয় কী? বললেন, কাল চারটায় আমি নিজেই ফোন দিয়ে আপনাকে অবস্থাটা জানাব। আমি বলি, আপনি কি অন্তত আমাকে এটা কনফার্ম করতে পারেন যে কাল পাব? তাহলে আমি ফ্লাইটটা কনফার্ম করতে পারি। উনি বললেন, না, তা করতে পারি না। অগত্যা আমি জানাই, ঠিক আছে, আমি কাল আপনার ফোনের অপেক্ষা করব। আশা করি, তখন আপনার কাছ থেকে একটা পজিটিভ রেসপন্সই পাব। তিনি বললেন, আমি চেষ্টা করব। আমি বলি, ভিসা হোক বা না হোক, কাল অন্তত আপনার সাথে আমার দেখা হওয়া দরকার। তিনি বললেন, আচ্ছা, আসুন।

কেবল এবার নয়, জীবনেও যদি আর কখনো ভারতে যেতে না-পারি তো আমার বিশেষ কোনো ক্ষতিটতি হবে না বলেই জানি। যাওয়াটা আমার জন্যে প্রত্যাশিত ছিল কেবল এজন্য যে, অন্ধ্রপ্রদেশে আগে আমি কখনো যাই নি। নতুন যেকোনো জায়গার প্রতি একটা টান মানুষমাত্রেরই থাকে। আমার আবার নতুন জায়গায় গেলে কিছু লেখাটেখাও হয়। তাছাড়া আপডাউন এয়ারফেয়ার, বোর্ডিং-লজিং সবটাই ছিল আয়োজকদের। এটাও আকর্ষণের একটা কারণ। নইলে যে ট্রেনিং নিতে আমি ওখানে যেতে চাচ্ছি, ওটা নিলে আমার কোনোদিক দিয়ে নতুন আরেকটা কিছু গজাবে না। কিংবা না-যেতে পারলে কোনোদিক থেকে আমার একটা কিছু ঝরবেও না। কিন্তু সাধারণ মানুষের সাথে ব্যাটাদের এহেন রঙ্গতামাশা দেখে আমার মধ্যে যে অপমানবোধের জন্ম হয়েছে, এটা খুব সহজে মুছে যাবে বলে মনে হয় না।

প্রকৃতপক্ষে এখন আর ভিসা পাওয়া নয়, অপেক্ষায় আছি পাসপোর্টটা কত তাড়াতাড়ি ফেরতে পাওয়া যায় তার জন্য। অভিজ্ঞ একজনের কাছে শুনলাম, ভিসা রিজেক্টেড হলে কখনো-কখনো পাসপোর্ট হারিয়েও যায়। কিংবা না-হারালেও ফিরে পেতে মাসকয়েক বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। ইস, না জানি আরো কত ভোগান্তি রয়েছে আমার কপালে!


মন্তব্য

সবজান্তা এর ছবি

মুজিব ভাই, আপনি ধন্য ! আপনি পোস্ট দেওয়ার মত শক্তি শরীরে বাকি রাখতে পেরেছেন।

আমি ১৬ তারিখ গিয়েছিলাম, ২৮ তারিখ ফেরত এসেছি। যদিও ভিসা ডিউ ডেটেই ফেরত পেয়েছি, তবে তার পরও ভোগান্তি নেহায়েত কম না। ক্লান্ত হয়ে আর কিছু লিখি ই নি !


অলমিতি বিস্তারেণ

মুজিব মেহদী এর ছবি

আর শক্তি! অন্য কিছু করার সামর্থ্য নেই বলেই হয়ত লিখলাম। নিজের চুল ছেঁড়া আর লেখা ছাড়া আর তো পারি না কিছু।

আপনি সম্ভবত টুরিস্ট ভিসা চেয়েছিলেন। তাই না?
..................................................................................
দেশ সমস্যা অনুসারে
ভিন্ন বিধান হতে পারে
লালন বলে তাই জানিলে
পাপ পুণ্যের নাই বালাই।

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

অতিথি লেখক এর ছবি

মুজিব ভাই এ কী শুনাইলেন! খুবই শঙ্কায় আছি। সামনেই আমার ভারতে যাওয়ার একটা পরিকল্পনা ছিল।
এখন আপনার লেখা পড়েতো মনে হচ্ছে সেই পরিকল্পনার ইতি টানাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
(মহসীন রেজা)

মুজিব মেহদী এর ছবি

যাওয়াটা যেজন্যেই হোক, মিথ্যা করে হলেও টুরিস্ট ভিসা চাবেন। মিথ্যার অনেক লাভ।
..................................................................................
দেশ সমস্যা অনুসারে
ভিন্ন বিধান হতে পারে
লালন বলে তাই জানিলে
পাপ পুণ্যের নাই বালাই।

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

মুশফিকা মুমু এর ছবি

হায় হায় ! মন খারাপ
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

মুজিব মেহদী এর ছবি

তা নয় তো কী!
..................................................................................
দেশ সমস্যা অনুসারে
ভিন্ন বিধান হতে পারে
লালন বলে তাই জানিলে
পাপ পুণ্যের নাই বালাই।

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

সবজান্তা এর ছবি

মুজিব ভাই, আপনার স্টিকারের হিসেবটা সম্ভবত ঠিক না। স্টিকার দেওয়া হয় র‌্যান্ডমলি (যতদূর জানি )। কারণ, আমারাই পেয়েছিলাম নীল স্টিকার, আবার আমাদেরই ভ্রমন সংগী একজন পেয়েছিলেন লাল স্টিকার।

কখন কোন স্টিকার আসে, তা সম্পূর্ণ কপাল। কোনদিন নীল আগে আসে তো, কোনদিন হলুদ।

তবে আমাদের একটা সুবিধা ছিলো, যেহেতু আমরা সপরিবারে গিয়েছিলাম, আমার মা দাঁড়িয়েছিলেন আমার পাসপোর্ট নিয়ে। মেয়েদের লাইন তুলনামূলক ছোট হয়। আরেকটা কথা, ন্যাশনাল আইডি কার্ড নিয়েছিলেন ? এ'টা দিলে ঝামেলা বেশ কিছুটা কম হয়, যদিও পুরাতন ফর্ম বিধায় সেখানে এর উল্লেখ নেই, তবুও আমরা দিয়েছিলাম।


অলমিতি বিস্তারেণ

মুজিব মেহদী এর ছবি

জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া হয় নি, তবে ওর বিকল্প হিসেবে কমিশনার প্রদত্ত পরিচয়পত্র ছিল। ওই পরিচয়পত্রের ওখানে আর কোনো মাজেজা তো নেই।

কী জানি, স্টিকারের হিসেবটা ভুল হলেও হতে পারে।
..................................................................................
দেশ সমস্যা অনুসারে
ভিন্ন বিধান হতে পারে
লালন বলে তাই জানিলে
পাপ পুণ্যের নাই বালাই।

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

জিজ্ঞাসু এর ছবি

কলিকাতা গিয়ে হুমকি-ধামকি ব্যবসা করতে ও বাড়ি কিনে সেখানে বাসিন্দা হয়ে থাকতে কী ভিসা চাইতে হয়?

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

মুজিব মেহদী এর ছবি

এই অর্থে আমি কখনো যাই নি, ফলে বাস্তব অবস্থাটি জানি না। তবে নিয়মমতো তো ভিসা চাইতে হয় বলেই জানি।

আচ্ছা, হুমকি-ধামকি ব্যবসাটা কীরকম?
..................................................................................
দেশ সমস্যা অনুসারে
ভিন্ন বিধান হতে পারে
লালন বলে তাই জানিলে
পাপ পুণ্যের নাই বালাই।

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

রণদীপম বসু এর ছবি

যাক্, জীবনে কখনো পাসপোর্টই করা হয়নি বলে রক্ষা, কোন টেনশান নেই ! ১৯৯৭ সালে রাইটার্স ফোরাম থেকে চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, থাকা খাওয়া তাদের, তখন চাকরির বেমক্কা অবস্থায় পাসপোর্ট করার সুযোগই হয়নি। সেবার শওকত ওসমান, শামসুর রাহমান থেকে শুরু করে অনেকেই গিয়েছিলেন কোলকাতা। আমার যাওয়া হয়নি...।
মুজিব ভাই, পাসপোর্ট থাকাটাই কি ঝামেলার... ! আমি আরো পাসপোর্ট করবো করবো করছি....!

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

মুজিব মেহদী এর ছবি

না না, পাসপোর্ট থাকাটাই ঝামেলার হবে কেন? পাসপোর্ট বরং থাকাই দরকার। কখনো কোনো প্রয়োজনে আপনাকে দেশের বাইরে কোথাও যেতে হতে পারে। তখন পাসপোর্ট না-থাকাটা আপনার জন্য অনেক অসুবিধার কারণ হবে। জরুরিভাবেও পাসপোর্ট করা যায়, তবে অনেক টাকা লাগে। স্বাভাবিক সময়ে হলে টাকা কম, ঝামেলাও কম। করে ফেলেন।
..................................................................................
দেশ সমস্যা অনুসারে
ভিন্ন বিধান হতে পারে
লালন বলে তাই জানিলে
পাপ পুণ্যের নাই বালাই।

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

প্রকৃতিপ্রেমিক (অফলাইনে) এর ছবি

কোন এজেন্সীকে দিলে হয়না? আমি ২০০২এ যখন গিয়েছিলাম তখন এরকম কাকে যেন দিয়েছিলাম। তারাই করে দিয়েছিল। জায়গাটা মনে নেই তবে গ্রীনরোড-মিরপুর রোডের সংযোগ রাস্তার উপরে ছিল অফিসটা।

মুজিব মেহদী এর ছবি

আপনি সম্ভবত লেখাটা পুরোপুরি ফলো করেন নি। তাহলে হয়ত একথা বলতেন না।

তা যাই হোক, সেই সুখের দিন আর নেই। এখন আপনাকেও লাইনে দাঁড়াতে হবে।
..................................................................................
দেশ সমস্যা অনুসারে
ভিন্ন বিধান হতে পারে
লালন বলে তাই জানিলে
পাপ পুণ্যের নাই বালাই।

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

পুরা লেখাটাই ফলো করেছি, মন্তব্যসহ। আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিয়ে অফলাইনে মন্তব্যটা দিয়েই বুঝতে পেরেছি বুড়িগঙ্গা দিয়ে অনেক পানি গড়িয়েছে খাইছে

শামীম এর ছবি

সমবেদনা জানাচ্ছি ... ... আমারও ঘটেছিল এমন, তবে পরিপ্রেক্ষিত ভিন্ন ছিল
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

মুজিব মেহদী এর ছবি

শামীম ভাই, আপনার ভোগান্তি তো দেখি আমার চাইতে বেশিই হয়েছিল।
অবশ্য বলা যায় না, আমার তো এখনো ফুরায় নি পথ। ব্যাটারা আরো কতদূর নাকানি চুবানি খাওয়াবে কে জানে!
..................................................................................
দেশ সমস্যা অনুসারে
ভিন্ন বিধান হতে পারে
লালন বলে তাই জানিলে
পাপ পুণ্যের নাই বালাই।

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

শামীম এর ছবি

পরবর্তীতে গত ফেব্রুয়ারীতে কলকাতায় একটা কনফারেন্সে আমার দুটো পেপার পাবলিশ হয়েছিল (কো-অথর হিসেবে) .... এই অসভ্যতা দেখার কোন ইচ্ছা আর নাই তাই প্রেজেন্ট করতে যাওয়ার চিন্তা বাদ দিয়েছিলাম। যদিও আমার জাপানি প্রফেসররা বলেছিল যে পুরা ট্যূরের খরচ দেবে।

দেশের টাকা খরচ যদি করতেই হয় তাহলে সেটা ভারতে নয়। দেশেই বেড়ানোর অনেক সুন্দর জায়গা আছে।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

সবজান্তা এর ছবি

শেষে অংশটার সাথে পুরোপুরি একমত হতে পারলাম না। যদি আপনি এ'টা বিরক্তি আর রাগের থেকে বলে থাকেন, তা'হলে হয়ত বুঝতে পারলাম, কিন্তু ঠাণ্ডা মাথায় বললে দ্বিমত আছে।

ভারতের মত বিশালাকৃতির দেশে, যেখানে বৈচিত্র্যময়তার শেষ নেই, ঘুরতে যাওয়া অর্থহীন, এমনটা আমার মনে হয় নি। অন্তত, আর কিছু না হোক, পাহাড় দেখার জন্য হলেও, ভারত যাওয়া যেতে পারে।


অলমিতি বিস্তারেণ

শামীম এর ছবি

রেগে মাথা গরম করে কী লাভ। রেগে মাথা ঠান্ডা রেখেই বলেছি। পাহাড় দেখতে নেপালে যাইতে রাজি আছি।

(আমার নানা বাড়ি আসামে, আমি সেখানেই জন্মেছিলাম ...)
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

কবি এর ছবি

ট্যুরিস্ট হিসাবে আবেদন করাই মনে হয় আপনার জন্য ভালো ছিল

দিগন্ত এর ছবি

আমার ধারণাই নেই যে ভারতীয় ভিসা এর থেকে সহজে হতে পারে। দেশে যে কোনও সরকারী অফিসে, সরকারী কাজে গেলে এর থেকে অনেক বেশী খারাপ সময় কাটে ... সুতরাং ... মুম্বাই হামলার সাথে এর সত্যিই কোনো সম্পর্ক আছে বলে মনে হয় না, সবটাই লোকদেখানো - আসলে কাজ না করার অছিলা।


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

হিমু এর ছবি

ভারত সরকারের হাইকমিশন কি বাংলাদেশের নাগরিকদের ভিসা সংক্রান্ত কাজকর্ম আরেকটু সহজে করার জন্যে রিসোর্স বাড়াতে বা পদ্ধতি অপটিমাইজ করতে পারেন? অনলাইনেও একটা অংশ তুলে দেয়া যেতে পারে।

একটা কৌতূহল জাগলো পোস্ট পড়ে। ভারতে আমরা ঠিক কী কী কাজে যাই? একটা লিস্ট কি করা যায়?


হাঁটুপানির জলদস্যু

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

দৈব ক্রমানুসারে-

১। ভ্রমণ
২। চিকিৎসা
৩। ব্যবসায়িক

তীরন্দাজ এর ছবি

আপনার ভোগান্তির কাহিনী শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল। ভিসা সংক্রান্ত বিষয়ে ভারতীয়দের ইতরামো সর্বজনবিদিত। কয়েক বছর আগে আমাকেও এখানে ভুগতে হয়েছিল।

অনেকক্ষন বসেছিলাম ওদের দুতাবাসে। অনেক ভারতীয়ও এসেছিলেন দূতাবাসে পাসপোর্ট সংক্রান্ত ও অন্যান্য কাজে। দেখলাম তাদের সাথেও কর্মকর্তাদের ব্যাবহার। এতো অদ্ভুত যে, একসময় হাস্যকর হয়ে দাঁড়ায়।

সে তুলনায় বাংলাদেশ দূতাবাস অন্ততপক্ষে এখানকার প্রবাসীদের সাথে ভালো ব্যাবহার করে।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

হিমু এর ছবি

ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে ঢুকতে গেলে এই পর্যায়টা কেমন কাটে? উত্তর আশা করছি সচলায়তনের ভারতীয় সদস্যদের কাছ থেকে (যদি অভিজ্ঞতা থেকে থাকে)।


হাঁটুপানির জলদস্যু

দিগন্ত এর ছবি

ভিসা আবেদনপত্র সশরীরে বাংলাদেশ হাইকমিশনে না গিয়েও জমা দেওয়া যায়, ভিসাও পাওয়া যায়। তবে আমার ক্ষেত্রে আমি হায়দ্রাবাদে থাকি ও সেখানে বাংলাদেশ হাইকমিশন নেই জেনেও ভিসা না দিয়ে আমাকে সশরীরে আসতে বলা হয়েছিল। তাই আবার ঝামেলায় না গিয়ে পরের দিন "ভেতর থেকে" করানো হল। আমাকে যেতে হয়নি হাসি

আমার বউ ভারতীয় ভিসা পেতে চূড়ান্ত ঝামেলার সম্মুখীন হয়, আমি ভারতীয় হওয়া সত্ত্বেও। এমপ্লয়মেন্ট ভিসা পেতেও সমস্যা হয়েছিল - অফিসিয়ালরা বলে বাংলাদেশীদের এমপ্লয়মেন্ট ভিসা দেওয়াই হয় না। তবে এখন শুনি পাওয়া যাচ্ছে - আমাদের ইউনিভার্সিটির কিছু কিছু ছেলে-মেয়ে পাচ্ছে। তবে স্টুডেন্ট ভিসা পেতে কোনো সমস্যা হয় না। আমার দাবী আর কোনো দেশ আমাকে ভিসা প্রত্যাখ্যান করেনি (চিন, আমেরিকা)।

তবে ঝামেলা চিনও করেছে। বলা হল ২ মাসের জন্য যাব দিল ১ মাসের ভিসা। প্রতি মাসে গিয়ে ভিসা রিনিউ করতে বলল। কিন্তু আমাকে সেখানেও লাইনে দাঁড়াতে হয়নি কোম্পানীর কল্যাণে।

সবথেকে সহজ হল আমেরিকার ভিসা পাওয়া। সবাই পায়। মুখ দেখেই দিয়ে দেয়। আমি দুবার গেলাম। দুবারই সুন্দর হয়ে গেল। কিন্তু আমার বউকে বাংলাদেশী বলে ১ বছরের ভিসা দিল আর আমাকে ভারতীয় বলে ৩ বছরের। এখানেও ডিস্ক্রিমিনেশন - পলিসিই নাকি এরকম।


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

আলমগীর এর ছবি

আপনি তো দেখছি আমাদের জামাই বাবু!

ধুসর গোধূলি (যাচাই করা হয়েছে) আবার  এর ছবি

একবারই ভারতীয় ভিসার জন্য দাঁড়াতে হয়েছিলো, কানের কাছে নানান ডেডলাইনের গুল্লি নিয়ে। বছর চারেক আগের সে ঘটনায় কোন রকমে উতড়ে গেলেও যতোক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম, মুখ থেকে অনবরত অভিসম্পাতে দুষ্ট শব্দ বের হয়েছে বেশ জোরেশোরেই। কান ধরছিলাম, আর খাড়ামু না ভিসার লাইগ্যা। এখন তো মুজিব ভাইয়ের অভিজ্ঞতার কথা শুনে মনে হচ্ছে, 'জয় মা হরি, তুমি দূরে থাকো, আমি এইখানেই মরি!'

রানা মেহের এর ছবি

হিমু লিখেছেন:
ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে ঢুকতে গেলে এই পর্যায়টা কেমন কাটে? উত্তর আশা করছি সচলায়তনের ভারতীয় সদস্যদের কাছ থেকে (যদি অভিজ্ঞতা থেকে থাকে)।


হাঁটুপানির জলদস্যু

কলকাতার বন্ধু প্রিয়জিত - শ্রীপর্না ঢাকা যাবে ফেব্রুয়ারীতে।
তাদের ভিসা আনার দিন শ্রীপর্নার সাথে গেলাম লন্ডনের বাংলাদেশ দুতাবাসে।

গিয়ে জানা গেলো
ভারতীয়দের বাংলাদেশের ভিসা নিতে কোন ফি লাগেনা।

তারা সাধারণত ভিসায় যেসব কাগজ পত্র লাগে, নিয়ে গিয়েছিল।
আমি নিয়েছিলাম আমার ব্যান্ক স্টেটমেন্ট টাইপ কিছু।

দূতাবাস কর্মকর্তারা কিছুই দেখলেন না।
পাসপোর্ট দেখে বললেন
দুদিন পর এসে ভিসা নিয়ে যেতে।
ক্ষমা চাইলেন সেদিনই পাসপোর্ট না দিতে পারায়।

ভিড়ের জন্য লাইনে কিছুক্ষন দাঁড়ানো বাদ দিয়ে
সমস্ত প্রক্রিয়ায় সময় লাগলো ছয় সাত মিনিট।
পরের সোমবার গিয়ে প্রিয়জিত ভিসা নিয়ে এলো।

গল্প শেষ

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

হিমু এর ছবি

ভারতীয় হাই কমিশন কি এই পদ্ধতির একটি অংশ অনলাইনে করতে পারে না? ধরা যাক বিভিন্ন খাত আছে, ভ্রমণ, চিকিৎসা, ব্যবসা, শিক্ষা, ধর্মীয়, হুদাই ... তো যে সময়ে যেতে হবে তার এক মাস আগে এসব অনলাইন ফর্মে পূরণ করে জমা দিতে হবে। ইন্টারভিউয়ের অ্যাপয়েন্টমেন্ট মেইল করে জানিয়ে দেয়া হবে একটা টিকেট নাম্বারসহ, সেটা নিয়ে যোগাযোগ করতে হবে নির্ধারিত দিনে।

ইমারজেন্সি হলেই কেবল ফি রাখা হবে, নইলে নয়।


হাঁটুপানির জলদস্যু

সবজান্তা এর ছবি

আমি যতদূর জানি, ভারতীয় ভিসা এখনো ফ্রী।

বর্তমানে বাংলাদেশে ভারতীয় ভিসার প্রসেসিং এর কাজ করে স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া। যে ১৭৩ টাকার মত আমরা দেই ( ভ্যাট সহ মোট ২০০ টাকা), সে'টা স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার প্রসেসিং চার্জ, এই টাকা ভারতীয় দূতাবাসের খাতে জমা হয় না।


অলমিতি বিস্তারেণ

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম হাসি
দু বছর স্টুডেন্ট ভিসায় ভারতে ছিলাম । এজ়েন্ট দিয়েই ভিসা লাগানো, ভিসা রিনিউ সব । একমাত্র লিমিটেশন ছিলো বছরে ৪ এন্ট্রি । কিন্তু আসতাম বছরে ৮/১০ বার । তার ও ব্যবস্থা ছিলো । শুধুমাত্র ভারতের জন্য আরেকটা লাল রঙয়ের পাসপোর্ট ছিলো । সেটায় লাগানো থাকতো টুরিষ্ট ভিসা । এটা শেষ হলে ওটা, ওটা শেষ হলে এটা ।

হায়, সেদিন আর নাই । শুনে কষ্ট পেলাম । ভারতে যাওয়া আমার কাছে পাশের বাড়ী বেড়াতে যাবার মতো অনুভূতি । তার জন্য এতো ঝামেলা করতে কি ভাল্লাগে?
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সবুজ বাঘ এর ছবি

পাশের বাড়ি কীরে? কয়দিন আগেই তো নিজের বাড়ি আছিল রে..

সবজান্তা এর ছবি

সদ্যই ভারত ভ্রমনের অভিজ্ঞতা (১৬ ডিসেম্বর - ২৮ ডিসেম্বর) থেকে কিছু কথা যোগ করা যেতে পারে।

প্রতিদিন হাজার দু'য়েকের বেশি লোক ভিসার জন্য লাইনে দাঁড়ায়। ছেলেদের লাইনে যদি আপনি সকাল ৭ টার পর আসেন, তাহলে ধরেই নিতে পারেন, আপনার পাওয়ার সম্ভাবনা অতীব ক্ষীণ। আর এর চেয়েও আমরা - বাঙ্গালীরা। লাইনে দাঁড়ানো আমাদের ধাঁতেই নেই। সুন্দর মত লাইনে দাঁড়ালে যেখানে অনেকেই আমরা দিতে পারি, সেখানে সবাই বেলা ৯-১০টার দিকে এসে চাই যেন, লাইনের শুরুতে দাঁড়াতে পারি। নৈমিত্তিক এই হাঙ্গামা মেজাজটা আরো খারাপ করে দেয়। সে তুলনায় আপনি নিশ্চিতভাবেই জমা দিতে পারবেন যদি সকাল ৭টার মধ্যে আপনার স্ত্রী কিংবা মা কিংবা মেয়ে- কারো মাধ্যমে আপনার পাসপোর্ট জমা দিন ( অবশ্যই তাদেরকেও আপনার ভ্রমনসঙ্গী হতে হবে)।

সাধারণত দুই/তিন দিন পর একটা ডেটে বিকাল বেলা পাসপোর্ট ফেরত দেওয়া হয়। আমাকে এ যাত্রায় মোট দুই দিন দাঁড়িয়েছিলাম। যদিও চার-পাঁচ ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পা ধরে গিয়েছিল, তবুও পেয়েছিলাম ডিউ ডেটেই। অভিজ্ঞতা থেকে যা বুঝলাম, খুব কপাল খারাপ না হলে ভিসা নির্ধারিত দিনেই ফেরত দেওয়া হয়, আর তা না হলে পরের দিন।

তবে মুম্বাই হামলার পর, দৃশ্যপট অনেকটা বদলে গিয়েছে। আপনার যদি সুদৃশ্য একখানা দাড়ি থাকে, কিংবা আপনি বোরখা পরে লাইনে দাঁড়ান, তাহলে ভিসা পাওয়া নিঃসন্দেহে কঠিন হয়ে পড়বে। এ ছাড়া প্রতিনিয়ত ভারতীয় সংবাদপত্রে যেভাবে বাংলাদেশি জঙ্গী কিংবা বাংলাদেশ ব্যবহার করে কীভাবে পাকিস্তানী জঙ্গীরা ভারতে ঢুকে যাচ্ছে - তার মনকাড়া বর্ণনা দেয়, তাতে অবস্থা যে কী হবে তা বলা মুশকিল।

সবচেয়ে ভোগান্তি হয় ভারতে যেয়ে। যদি আপনি বাংলাদেশি মুসলিম হন, তাহলে কলকাতার হোটেলে সীট পাওয়া রীতিমত সৌভাগ্য হবে। আমার পরিচিত এক ভদ্রলোক, কয়েকদিন আগেই গিয়েছিলেন, কোন হোটেলে সীট পাচ্ছিলেন না। সাত-আটটা খুঁজে, একটায় পেলেন। রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে নিঁচে যেয়ে যখন ফর্ম ফিলাপ করার সময় বললেন বাংলাদেশি, তাঁকে পত্রপাঠ বিদায় করে দেওয়া হল।

দুঃখের কথা আর নাই বা বলি ?


অলমিতি বিস্তারেণ

দিগন্ত এর ছবি

আপনার যদি সুদৃশ্য একখানা দাড়ি থাকে, কিংবা আপনি বোরখা পরে লাইনে দাঁড়ান, তাহলে ভিসা পাওয়া নিঃসন্দেহে কঠিন হয়ে পড়বে।

মজার কথা, কোলকাতার বাংলাদেশ হাইকমিশন শুনলাম একই কাজ করে। সেখানেও লম্বা দাড়ি বা বোরখা পড়া ভারতীয়দের ভিসা পাওয়া কঠিন।


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

মুস্তাফিজ এর ছবি

পাস্‌পোর্টে সাংবাদিক, লেখক, কবি, ফটোগ্রাফার ইত্যাদি লেখা থাকলে ভারতীয় ভিসা পেতে ঝামেলা বেশী, চৌদ্দ গুষ্ঠির খোঁজ খবর নেয় ওরা।

গন্তব্য যদি হয় এমন কোন জায়গা যেখানে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে, সেক্ষেত্রে ভারতীয় ভিসা পাবার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

যিনি আবেদন করেছেন একই নামের কেউ যদি বাংলাদেশী কিংবা ভারতীয় পুলিশের তালিকায় থাকেন তাহলে খবর আছে।

আগে ভারতীয় ভিসা এজেন্সির মাধ্যমে হতো, এখন সে সুবিধা নাই, সরকারী ভাবেই এটা বন্ধ।

কোন মিটিং বা অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণের জন্য ভিসা চাইলে আমন্ত্রন কারী প্রতিষ্ঠানের উচিৎ সরাসরি আমন্ত্রণের কপি ভিসা অফিসে প্রেরণকরা, এক্ষেত্রে আমন্ত্রন কারী প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে খোঁজ খবর করা হয়।

...........................
Every Picture Tells a Story

অমিত [অতিথি] এর ছবি

ভিসামুক্ত বিশ্ব আন্দোলনে কাছা মেরে নামি তাইলে সবাই মিলে

অতিথি লেখক এর ছবি

কনফারেন্স ভিসায় 'ঝামেলা' হয়, দু'দিক থেকেই। মানে দেশ-ভারত, ভারত-দেশ। আমার অবশ্য দেশের ফরেন মিনিস্ট্রি থেকে 'জিও' থাকা সত্ত্বে পনেরদিন ঘুরিয়ে ভারতীয় হাইকমিশন 'না' বলেছে, যদিও ট্যুরিস্ট ভিসা চেয়েছিলাম। স্ত্রী-শিশুপুত্র কোলকাতার এক হোটেলে উঠল। পরেরবার অবশ্য দয়া হল ওদের। তিনদিন পরে আমি যোগ দিলাম কোলকাতায়। সেই থেকে প্রতিজ্ঞা করেছি শুধুমাত্র মৃত্যু এড়ানোর জন্য হলে ভারত যাবার কথা ভাবব।

প্রফাইল

....................................................................................................................
এভাবেই স্থবির ঘর একদিন উড়ে যাবে
উড়ে উড়ে যাবে

মুজিব মেহদী এর ছবি

সর্বশেষ চেষ্টাও ফলপ্রসূ হলো না আমার। ট্র্যাভেল এজেন্ট বাজেট এভিয়েশনকে পাঁচটার দিকে ফ্লাইট ক্যান্সেল করবার কথা জানিয়ে দিলাম।

ভিসা অফিস বলল, আরো দিনদুয়েক লাগতে পারে। কিন্তু আজকের পরে ভিসা হলে তা আমার কোনো কাজেই আসবে না। তাই ওই কবি-কর্মকর্তাকে অনুরোধ করলাম যে, আমি যাতে আজই পাসপোর্টটা ফেরত পেতে পারি সে ব্যবস্থা করে দেন। এই বাজে জায়গায় আমি আরেকবার আসতে চাই না।

উনি বললেন, আশা করি এটা করতে পারব। সেকেন্ড সেক্রেটারি বরাবরে একটা আবেদন লিখে দেন, বলে তিনিই কাগজ এগিয়ে দিলেন। লিখে দিলে উনি নিজে ভিসা সেকশনে গিয়ে পাসপোর্টটা এনে দিলেন। মনে মনে বললাম, বাঁচলাম বাবা। চা সাধলেন। বললাম, আপনাদের চা খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না। বললেন, ধরে নিন আপনি ভিসার জন্যে আসেননি। বন্ধুর সাথে দেখা করতে এসেছেন। এসময় রুমে ঢুকলেন রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী বুলবুল ইসলাম। তাঁরও ভিসা সংক্রান্ত কাজ। বুলবুল ভাই এসেছেন বলে তাঁর সম্মানে চা খেতে রাজি হলাম।

ফিরে আসার পথে ভদ্রলোক বললেন, ফারদার যদি কখনো আপনার ভারতীয় ভিসা দরকার হয়, লাইনে না দাঁড়িয়ে আমাকে দেবেন, আমি করে দেব। আরও এক বছর আছি আমি। আমি ধন্যবাদ দিয়ে নিজের পথ মাপলাম।

মেজাজটা খুবই খারাপ হয়ে আছে।

..................................................................................
দেশ সমস্যা অনুসারে
ভিন্ন বিধান হতে পারে
লালন বলে তাই জানিলে
পাপ পুণ্যের নাই বালাই।

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

হিমু এর ছবি

ভারত রে তুঁহু দেখি শ্যাম সমান!

এইরকম অব্যবস্থাপনার কথা প্রপার চ্যানেলে ভারত সরকারকে অবহিত করা হোক। পরিস্থিতির উন্নয়ন না ঘটলে এর প্রতিবাদ হিসেবে আমরা ভারতীয় টিভি চ্যানেল বর্জন করতে পারি চোখ টিপি


হাঁটুপানির জলদস্যু

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

এত্ত ঝামেলা! নাই বা গেলাম তাহলে ইন্ডিয়া মন খারাপ

মাস দু'য়েকের মাঝে একবার ভারত যাওয়ার একটা পরিকল্পনা ছিল। কিছুটা দমে গেলাম পোস্টটা পড়ে। তবে আশার ব্যাপার একটাই - গেলে ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য দাঁড়াব, আশা করি সেক্ষেত্রে ঝামেলা কম হবে।

মুজিব ভাই, অনেক কষ্ট করেছেন। আপনার জন্য খারাপ লাগল।

সবুজ বাঘ এর ছবি

মাইনষেরে মাল না খাওয়াইলে কি এমুনই অয়?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।