সম্পূরক জিজ্ঞাসা : গোলাম আজমের সাথে সরকারের কোন চুক্তি হয়েছে কিনা জানতে চাই ...

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ১৭/০৮/২০১১ - ১০:০৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

শহীদজননী বলেছিলেন,

আবেগপ্রবণ জাতি হিসেবে আমাদের একটা মহাত্রুটি রয়েছে। আমরা ইতিহাস তৈরি করি কিন্ত তা রক্ষার জোরালো তাগিত আমাদের নেই। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে ইতিহাসই একটি জাতির পরিচয়, ইতিহাসই একটি জাতির বিকাশের অনুপ্রেরণা। ... একাত্তরের কুখ্যাত ও ঘৃণ্য দালাল গোলাম আজম আবার যখন জামাতে ইসলামীর আমীর নিরররবাচিত হয়ে দেশে তার রাজনৈতিক মতলব হাসিল করতে ফনা তুলেছে তখন স্বাভাবিকভাবে আবার একবার যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের অমর শহীদের বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান রেখেই আমাদের প্রতিরোধ গড়তে হবে।

এই গণদুশমনের বিচার বাংলার মাটিতে করে তাকে নির্মূল করাটাই হোক আমাদের লক্ষ্য। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনা লাঞ্ছিত হতে দেব না- এই প্রতিজ্ঞা আজ প্রতিটি বাঙালির হৃদয়কে উজ্জীবিত করুক, এই আমার প্রত্যাশা।"

জাহানারা ইমাম,
১ ফাল্গুন, ১৩৯৮ - আলী আকবর টাবীর 'মুক্তিযুদ্ধে দৈনিক সংগ্রামের ভূমিকা'র ভূমিকায়

মুক্তিযুদ্ধে গোলাম আজম ছিল সবচেয়ে বড় স্বাধীনিতাবিরোধী। একাত্তরে তার ভূমিকা সুস্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ হয়ে আছে তাদেরই মুখপত্র 'দৈনিক সংগ্রাম'এর যুদ্ধকালীন সংখ্যায়। এ ছাড়া দৈনিক আজাদী, দৈনিক পাকিস্তান, দৈনিক ইনকিলাব এবং বিভিন্ন ছবিতে বিমূঢ় হয়ে আছে এই ঘৃণ্য নরপশুর বিভিন্ন কীর্তিকলাপ।

যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশ দালাল (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আইন ১৯৭২ (রাষ্ট্রপতি আদেশ নং-৮) - এর অধীনে অভিযুক্তদের তালিকায় ১১৩ নং আসামী গোলাম আজম। যার নামে হুলিয়া জারি হয় এইভাবে -

অধ্যাপক গোলাম আজম
পিতা- মওলানা গোলাম কবির
গ্রাম- বীরগাঁও, থানা- নবীনগর, জেলা- কুমিল্লা এবং
১১৯, এলিফেন্ট রোড, থানা- রমনা, জেলা- ঢাকা
আদালত- মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেট ব্রাহ্মণবাড়িয়া অথবা ঢাকা সদর (দক্ষিণ)
হাজিরার তারিখ- ২২ ফেব্রুয়ারী ১৯৭২

১৯৭৩ সালের ১৮ই এপ্রিল সরকারী এক আদেশে আরো ৩৮ জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সাথে গোলাম আযমকেও বাংলাদেশের নাগরিক হবার অনুপযোগী ঘোষণা করা হয়।

“সরকারী এক নোটিফিকেশনে বলা হয় :
বাংলাদেশ সরকার ৩৯ ব্যক্তিকে বাংলাদেশে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘোষণা করেছেন। এই ৩৯ ব্যক্তি বাংলাদেশে নাগরিকত্ব পাবে না। ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ নাগরিকত্ব আদেশের (অস্থায়ী বিধান) তিন নম্বর ধারাবলে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে নাগরিকত্ব লাভের অযোগ্য ব্যক্তিরা হলেনঃ সর্বজনাব...।
এদের মধ্যে গোলাম আযম হলেন ৮ নম্বর।”
(দৈনিক বাংলা/ ২২ এপ্রিল, ১৯৭৩ ইং)

কিন্তু, সময়ের স্রোতে ক্ষমতার পালাবদলের মাঝে জিয়াউর রহমানের আনুকূল্যে গোলাম আজম পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে সাময়িক ভাবে বাংলাদেশে আসে এবং কোন ভিসা ছাড়াই ১৯৭৮-১৯৯৪ পর্যন্ত বাস করে। অলিখিত ভাবে স্বাধীনতাবিরোধী দল জামায়াতে ইসলামীর আমীর রূপে ২০০০ সাল পর্যন্ত কাজ করে।

এরই মধ্যে জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গঠিত হয় গণআদালত। ২৬ মার্চ ১৯৯২ এ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রায় দেয়া হয় গণআদালতের। সেদিন গোলাম আজমের বিরুদ্ধে যে অভিযোগনামা তোলা হয়েছিল তা ছিল :

গণআদালত মোকদ্দমা নং ১/১৯৯২
বাংলাদেশের গণমানুষ, অভিযোগকারী
বনাম
জনাব গোলাম আযম
পিতা : মওলানা গোলাম কবির
সাকিন : পাকিস্তান

বর্তমান অবস্থান: ১১৯, কাজী অফিস লেন, মগবাজার, থানা: রমনা, জেলা: ঢাকা, অভিযুক্ত ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী কর্তৃক গণহত্যা, লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগ, জনপদ ধ্বংস, নারী ধর্ষণ প্রভৃতি অপরাধজনক কাজে মদদকারী এবং স্বয়ং শান্তি কমিটি, আল বদর, আল শামস বাহিনী গঠন করে এবং হানাদার পাকিস্তানী বাহিনীকে রাজাকার বাহিনী গঠন করায় প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করে গণহত্যা, লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগ, জনপদ হত্যার নীলনকশা প্রণয়ন করে, নিজস্ব বাহিনী আল বদর, আল শামস দিয়ে তাদের হত্যা করানো এবং মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীকালে 'পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি" গঠন করে বিদেশী শত্রুর চর হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে অপরাধ সংগঠনের অভিযোগে অভিযুক্ত।

অভিযোগকারীর পক্ষে কৌসলিবৃন্দ :
১. এডভোকেট জেড আই পান্না
২.এডভোকেট শামসুদ্দিন বাবুল
৩. এডভোকেট উম্মে কুলসুম রেখা
অভিযুক্তের পক্ষে গণআদালত নিযুক্তীয় কৌসুলী :
১. এডভোকেট মো. নজরুল ইসলাম

এরপর গণআদালতে গোলাম আজমের বিরুদ্ধে একে একে ১৫ জন সাক্ষ্য দেন (গণআদালত সম্পর্কে পড়তে হলে ক্লিক করুন)। এরপর আদালত রায় দেন এভাবেই -

গণআদালত উপরে বর্ণিত সাক্ষ্য প্রমানাদি সঠিকভাবে পর্যালোচনা করে ১-৬ এবং ৯-১৫ নং সাক্ষীগণ পন্ডিত এবং সমাজের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি ৭/৮ নং সাক্ষীদ্বয় শহীদ পিতার পুত্র। তাদের সাক্ষ্য এত সহজ-সরল এবং এমন প্রত্যয়ী যে, তাদের সাক্ষ্য বিন্দুমাত্র সন্দেহের উদ্রেক করে না। আমরা সাক্ষীদ্বয় প্রদত্ত সাক্ষ্য সত্য এবং দাখিলকৃত প্রদর্শনীসমূহ অকাট্য বিবেচনা করের সর্বসম্মতভাবে অভিযুক্ত গোলাম আযমের বিরুদ্ধে প্রতিটি অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে বলে মনে করি এবং আনীত প্রতিটি অভিযোগের প্রত্যেক অপরাধে তাকে দোষী সাব্যস্ত করছি। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সমস্ত গণতান্ত্রিক দেশে উপরোক্ত অপরাধ দৃষ্টান্তমূলক মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ।

যেহেতু গণআদালত কোনো দণ্ডাদেশ কার্যকর করে না, সেহেতু অভিযুক্ত গোলাম আযমকে আমরা দোষী সাব্যস্ত করে তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের নিকট অনুরোধ জানাচ্ছি।

যাইহোক, এখন চলে যাচ্ছি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তার বিভিন্ন উক্তির কাছে যেগুলো আমাদের আবারও পরিচয় করিয়ে দিবে স্বাধীনতাবিরোধী এই শকুনের সাথে। মনে করিয়ে দেবে এই গোলাম আজমের কুচক্রের কথা, পাকিস্তানপ্রেমের কথা। হেডিং-এ থাকা তারিখগুলো ঐ তারিখে পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে প্রধানত গোলাম আজম কি বলেছিল তা উল্লেখ করা আছে।

৮ এপ্রিল

দৈনিক সংগ্রামে পূর্ব পাকিস্তান জামাতে ইসলামীর আমীর গোলাম আজম, প্রাদেশিক প্রচার সম্পাদক নুরুজ্জামান এবং ঢাকা জামাতের সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারোয়ার যুক্ত বিবৃতিতে উল্লেখ করেছিল : "পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ সশস্ত্র অনুপ্রবেশকারীদের কোন স্থানে দেখা মাত্র খতম করে দেবে।"

১২ এপ্রিল

গোলাম আজমের একটি বেতার ভাষণ গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করে দৈনিক সংগ্রাম। সে ভাষণে গোলাম আজম বলেছিল : "ভারত সশস্ত্র অনুপ্রবেশকারী প্রেরণ করে কার্যত পূর্ব পাকিস্তানের দেশপ্রেমকে চ্যালেঞ্জ করছে। পূর্ব পাকিস্তানের নিরস্ত্র জনগণকে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সংঘর্ষে নিয়োজিত করে পূর্ব পাকিস্তানকে দাসে পরিণত করতে চায়।"

১৩ এপ্রিল

শান্তি কমিটি গঠনের পর ১২ এপ্রিল ব্যাপক ঢাকঢোল পিটিয়ে ঢাকায় মিছিল বের করা হয়। মিছিলের পুরোভাগে নেতৃত্ব দিয়েছিল কুখ্যাত গোলাম আজম, খান এ সবুর, পীর মহসেন উদ্দীন, মতিউর রহমান নিজামী। মিছিলের পর গোলাম আজমের নেতৃত্বে একটি মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছিল, সেখানে গোলাম আজম পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে সত্যিকারের মুসলিম সৈনিক হিসেবে দেশ রক্ষার যোগ্যতা অর্জনের জন্য আল্লাহর দরগাহে দোয়া করেছিল। সত্যিকারের মুসলমান ও পাকিস্তানি হিসেবে বেঁচে থাকার ও পাকিস্তানে চিরদিন ইসলামের আবাসভূমি হিসেবে টিকিয়ে রাখার জন্য সর্বশক্তিমানের নিকট দোয়া করেছিল।

২১ জুন

দৈনিক সংগ্রামে লাহোরে গোলাম আজমের সংবাদ সম্মেলনকে গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরা হয়। সেই সংবাদ সম্মেলনে গোলাম আজম বলেছিল, "পূর্ব পাকিস্তানের অধিক সংখ্যক অমুসলমানের সহায়তায় শেখ মুজিবুর রহমানের হয়ত বিচ্ছিন্নতার ইচ্ছা থাকতে পারে, তবে তিনি প্রকাশ্যে কখনও স্বাধীনতার জন্য চিৎকার করেননি। অবশ্য তার ছয়দফা স্বাধীনতাকে সম্ভব করে তুলতে পারত। মওলানা ভাসানী, অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ, আতাউর রহমান খান এরাই মূলত বিচ্ছিন্নতার দাবি তোলেন। বিচ্ছিন্নতার জন্য শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু যারা প্রকাশ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন শুরু করেছিলেন তাদের তো গ্রেফতার করা হয়নি। সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানের প্রায় সকল দুস্কৃতিকারীদের উৎখাত করেছে এবং বর্তমানে এমন কোন শক্তি নাই যা সেনাবাহিনীর প্রাধান্যকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে।"

২২ জুন

গোলাম আজম পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর ভূয়সী প্রশংশা করে বলেছিল, “বেআইনি ঘোষিত আওয়ামী লীগ কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানে সৃষ্ট সাম্প্রতিক গোলযোগ ১৮৫৭ সালের বাংলা বিদ্রোহের চেয়েও দশগুণ বেশী শক্তিশালী ছিল”।
একই দিন পত্রিকাতে গোলাম আজমের বড় ছবিসহ একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। সেখানে গোলাম আজম বলেছিল : পূর্ব পাকিস্তানের মুসলমানরা ইসলামকে কখনও পরিত্যাগ করতে পারবে না। এ কারণে তারা পাকিস্তানকেও ত্যাগ করতে পারবে না। পূর্ব পাকিস্তান ইসলাম ও পাকিস্তানের জন্য অপরিসীম ত্যাগ স্বীকার করেছে। আরো কোরবানি দেয়ার জন্য তারা প্রস্তুত আছে।"

২৩ জুন

পত্রিকায় গোলাম আজমের বরাত দিয়ে একটি সংবাদ এসেছিল, 'পূর্ব পাকিস্তানিরা সর্বদাই পশ্চিম পাকিস্তানি ভাইদের সাথে একত্রে বাস করবে' শিরোনামে। সেদিন সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় গোলাম আজমের একটি সাংবাদিক সম্মেলনের বক্তব্য ছাপা হয়। সেখানে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে গোলাম আজম বলেছিল, “নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ৬ দফা কর্মসূচীর উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া। যেসব দল খোলাখুলিভাবে বিচ্ছিন্নতার আন্দোলন শুরু করেছিল এবং স্বাধীন বাংলা গঠনের জন্য জনতাকে উত্তেজিত করেছিল সেসব দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছিল”।

৩ আগস্ট

পত্রিকাটিতে গোলাম আজমের বরাত দিয়ে আসে, “এই যুদ্ধ শুধু অস্ত্রের যুদ্ধ নয়, আদর্শিক যুদ্ধ। আল্লাহর দীনকে প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে, এই দেশকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যুদ্ধে আমাদের জয়ী হতেই হবে।”

১২ আগস্ট

মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানোর সময় পাকিস্তানের দালাল মওলানা মাদানী মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত হয়েছিল। দৈনিক সংগ্রাম এ খবর গুরুত্বের সাথে প্রচারণা করে, সেখানে গোলাম আজমের বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছিল : “আওলাদে রসুল মওলানা মাদানীর শাহাদাত তথাকথিত বাংলাদেশ আন্দোলন সম্পর্কে মুসলমানদের সচেতন করার জন্য যথেষ্ট”।
একই দিন আরো বলেছিল, “ইসলাম, পাকিস্তান ও মুসলমানদের দুশমন তথাকথিত বাংলাদেশ আন্দোলনের সমর্থকরা আর যাই হোক দেশের ভালো ভালো সৎ লোক, ইমানদার লোক, পাকিস্তানের প্রতি অনুগত ও আস্থাভাজন লোকদের বহুসংখ্যককে ইতিমধ্যে শহীদ করেই ছাড়েনি তারা মওলানা মাদানী সাহেবের মত একজন সর্বজনশ্রদ্ধেয় আলেম, বুজুর্গ পীর এবং মোখলেছ পাকিস্তানিকেও শহীদ করতে সাহসী হয়েছে যার সমগ্র জীবন ইসলাম ও পাকিস্তানের জন্য ওয়াকফ। তার শাহাদাতে গোটা পাকিস্তানের মুসলিম মানস চরমভাবে বিক্ষুব্ধ। তথাকথিত বাংলাদেশ আন্দোলনের সমর্থকদের উচিত তাদের ঈমানকে দূরস্ত করা। মওলানা মাদানীর এ শাহাদাতের সত্যিকার মর্যাদা তখনই সম্ভব যখন পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিটি মুসলমান নিজ নিজ এলাকার দুস্কৃতিকারীদের তন্ন তন্ন করে তালাশ করে তাদের থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য রাতদিন চেষ্টা করবে”।

১৪ আগস্ট

পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে গোলাম আজম ‘পাকিস্তান সৃষ্টির উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত করার জন্য প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান’ শিরোনামে বিবৃতিতে বলেছিল, “ঐক্য ও সংহতি বর্তমানে সংকটাপন্ন। রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ বহিসত্রুদের দ্বারা হুমকির সম্মুখীন। ভারতীয় অপপ্রচারে বিভ্রান্ত বিদেশী সংবাদপত্র ও বৃহৎ শক্তিবর্গ পাকিস্তানের প্রতি অবন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব প্রকাশ করেছে।”

১৬ আগস্ট

আজাদী দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংঘ আয়োজিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমাবেশে গোলাম আজম যে বক্তৃতা দিয়েছিল তা ছাপা হয়। সে বলেছিল, “পাকিস্তান এখন তার অভীষ্ট লক্ষ্যের পথে যাত্রা শুরু করেনি। আর এটাই হচ্ছে জাতীয় মূল সংকট।বাংলাদেশ বাঙ্গালিদের দ্বারা শাসিত হবে এ মতবাদ শেখ মুজিব বা শ্রী তাজউদ্দীনের। এ জন্যই তথাকথিত বাঙালি বীরেরা পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশ কায়েম করেছে”।

১৮ আগস্ট

দৈনিক সংগ্রামে গোলাম আজম ‘ইতিহাসের দৃষ্টিতে পাকিস্তান’ শিরোনামে একটি উপসম্পাদকীয়তে লিখেছিল, “হিন্দুদের সাথে এক জাতি হয়ে এবং হিন্দু ভারতকে বন্ধু মনে করে অদুরদর্শী কতক মুসলিম নেতা বাঙালি মুসলমানদেরকে সর্বক্ষেত্রে বহু পেছনে ঠেলে দিয়েছে। এর ধাক্কা সামলিয়ে বাঙালি মুসলমানদের আবার অগ্রগতি লাভ করতে হলে মুসলিম জাতীয়তাবোধকেই জাগ্রত করতে হবে।” একই লেখায় গোলাম আজম পাকিস্তানের নামকরণ নিয়েও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বলেছিল, “দুনিয়ার প্রত্যেক রাষ্ট্রের নামই স্থান, ভাষা, জাতি বা ঐতিহাসিক নাম থেকে নেয়া হয়। কিন্তু, পাকিস্তান নাম এ ব্যাপারে ব্যাতিক্রম। এ নাম যা বিশেষ একটি উদ্দেশ্যের প্রতি সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দান করে। এ নামের অর্থ হল পবিত্র স্থান।” অথচ এ কথা সবাই জানে যে ভারতবর্ষের পাঁচটি মুসলিম অধ্যুষিত স্থানের নামের প্রথম বর্ণ নিয়ে লন্ডনে আইনশাস্ত্রে অধ্যনরত ছাত্র রহমত আলী পাকিস্তান নামকরণ করেছিল।

৮ সেপ্টেম্বর

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা দিবস উপলক্ষে কার্জন হলে গোলাম আজমের বক্তৃতা পত্রিকায় আসে। সেখানে গোলাম আজম বলেছিল, “পাকিস্তানি সৈন্যদের যদি সামরিক ট্রেনিং এর সাথে সাথে সঠিকভাবে যদি আদর্শিক ট্রেনিং দেয়া হত তবে তাদের কিছু অংশ পাকিস্তানের অস্ত্র দিয়ে পাকিস্তাঙ্কে ধ্বংস করার জন্য মাথা তুলে দাঁড়াত না।”

১৭ সেপ্টেম্বর

রাজাকারদের উদ্দেশ্যে গোলাম আজমের একটি ভাষণ প্রকাশিত হয়। সেখানে গোলাম আজম বলেছিল, “... কিছু সংখ্যক লোক আমাদের মধ্যে থেকে পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে। যারা তাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে তারাই এর জন্য দায়ী। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম।যারা পাকিস্তান ও ইসলামের দুশমন,যারা আমাদের উপর আঘাত হানে যারা হাজার হাজার আলেমকে শহীদ করেছে। এমনকি নবীর বংশধরদের রক্তে এ দেশের মাটি রঞ্জিত হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম।”

১৮ সেপ্টেম্বর

রাজাকার শিবিরে দেয়া ভাষণে গোলাম আজম বলেছিল : “একমাত্র মুসলিম জাতীয়তার পূর্ণ বিশ্বাসী ব্যক্তিরাই পাকিস্তানের হেফাজতের জন্য জীবন দান করতে পারে।”

১৯ সেপ্টেম্বর

গোলাম আজম মোহাম্মদপুরে রাজাকারদের সমাবেশে ভাষণে বলেছিল, “বাইরের শত্রুর চেয়ে ঘরের শত্রু বেশি ক্ষতিকর। আমাদের ঘরেই এখন অসংখ্য শত্রু তৈরি হয়েছে। সেই শত্রু সৃষ্টির কারণ আর যাই হোক সেদিকে নজর দিতে হবে। কালেমার ঝাণ্ডা উঁচু রাখার জন্য রেজাকারদের কাজ করে যেতে হবে।”

২৬ সেপ্টেম্বর

যুদ্ধকালীন সময়ে ১২ আগস্ট ডা: আব্দুল মোত্তালিব মালেককে গভর্নর নিযুক্ত করে গঠিত মন্ত্রীসভায় ঠাঁই পাওয়া জামাতের দুই নেতা নবনিযুক্ত মন্ত্রীসভার শিক্ষামন্ত্রী আব্বাস আলী খান ও রাজাকার বাহিনীর স্রষ্টা রাজস্বমন্ত্রী খুলনার মওলানা এ কে এম ইউসুফের জামায়াত কর্তৃক অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে গোলাম আজম বক্তৃতায় বলেছিল, “দেশের সাম্প্রতিক সঙ্কট ও দুস্কৃতিকারীদের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের দরুণ যে সব পাকিস্তানি প্রাণ হারিয়েছেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী লোক জামায়াতে ইসলামীর সাথে জড়িত। জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান ও ইসলামকে এক ও অভিন্ন মনে করে।” - দৈনিক পাকিস্তান, ২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

পরবর্তীতে গোলাম আযম মওলানা মওদুদী থেকে জরুরি বার্তা পেয়ে ২২ নভেম্বর লাহোরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সরকার তার নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ায় বাংলাদেশে আর ফেরত আসতে না পেরে গোলাম আযম সৌদি আরবে গিয়ে হজ পালন করে এবং সেখান থেকে দুবাই, আবু ধাবি, কুয়েত, বৈরুত, লিবিয়ায় গিয়ে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে এবং একটি প্রতিবিপ্লবের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। এরপর গোলাম আযম ১৯৭৮ পর্যন্ত ইংল্যান্ড প্রবাসী ছিল। ১৯৭৮ থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত বাংলাদেশে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বাস করে গোলাম আযম। পরবর্তীতে ১৯৯৪ সালে জন্মস্থানের যুক্তিতে সুপ্রিম কোর্ট তার নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়। ২০০০ সাল পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর আমীর পদে ছিল এই জঘন্য নরপশু। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের পাঁচ নং এ সুস্পষ্টভাবে ছিল :

৫. সুশাসন প্রতিষ্ঠা :
৫.১ সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ শক্ত হাতে দমন করা হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা করা হবে।

এবং বর্তমানে যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসীন এর জন্য ইশতেহারের এ পঞ্চম ধারাটিই প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে এ ব্যাপারে কারও কোন বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। কিন্তু, ভাল কোন খবর নেই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম আগাচ্ছে একেবারেই ঢিমেতালে। সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

তথ্যসূত্র :
১। আপনার হাতেই যখন প্রমাণ, গোলাম আযমকে কেনো ছাড়া হবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী?- ব্লগার অমি রহমান পিয়াল
২। উইকিপিডিয়া
৩। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবীতে উত্তাল সেই গণআদালত (ফেসবুক নোট) - জনৈক Hulo Beral
৪। গোলাম আজমের বিচার শুরু হবে কবে? - ব্লগার আবু সাঈদ জিয়াউদ্দিন
৫। মুক্তিযুদ্ধে দৈনিক সংগ্রামের ভূমিকা - আলী আকবর টাবী |১ম খণ্ড (12.68 MB)| |২য় খণ্ড (1.13 MB)| |৩য় খণ্ড (1.34 MB)|
৬। একাত্তরের ঘাতক ও দালালরা কে কোথায়, প্রকাশনা মুক্তিযুদ্ধ চেতনা বিকাশ কেন্দ্র, তৃতীয় সংস্করণ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৮
৭। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে গোলাম আজমের ভূমিকা নিয়ে একটি প্রকাশনা (2.66 MB)
৮। ছবি - গুগল, নিজ সংগ্রহ।

পাদটীকা :
এই পোস্ট তাহলেই সার্থক হবে যদি সরকার গোলাম আজমকে গ্রেফতারের আওতায় এনে বিচারকার্য সম্পন্ন করেন। অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী! জাতিকে দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে লাখো শহীদের রক্তের ঋণ কিছুটা হলেও শোধ করুন। নাহলে, ইতিহাস আপনাকে ক্ষমা করবে না।

লিখেছেন : পাপী (riz.nashin@gmail.com)

ছবি: 
24/08/2007 - 2:03am
24/08/2007 - 2:03am
24/08/2007 - 2:03am
24/08/2007 - 2:03am

মন্তব্য

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

চলুক

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

পাপী [অতিথি লেখক] এর ছবি

ধন্যবাদ। দাবি জোরালো করুন। গোলাম আজম বিচারের বাহিরে থাকলে সব কিছু অণ্ডুল হয়ে যাবে। সরকারের কেউ হয়ে থাকলে সাধারণ মানুষদের মনোভাবটা সরকারকে প্লিজ জানান। এমনিতেই ৪০ বছর দেরী হয়ে গেল, আর দেরী করবেন না।

অট : আচ্ছা পূর্ণ সচল হতে কতদিন লাগতে পারে? লেখাটা কি এখন অন্য কোন ব্লগে দেয়া যাবে? আমি ভাবছি দিয়ে দিব। (উত্তরের অপেক্ষায় থাকব)

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

গোলাম আযমকে এমনকি গ্রেফতারও না করা একটা একটা রহস্য। নাকি সে এখন আর রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ না? আমার ধারণা, বাংলাদেশবিরোধী রাজনীতির এক নম্বর ব্যক্তি এখনও গোলাম আযম।

পোস্ট সুপার লাইক।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

পাপী [অতিথি লেখক] এর ছবি

@বলাই দা,

আমার ধারণা, বাংলাদেশবিরোধী রাজনীতির এক নম্বর ব্যক্তি এখনও গোলাম আযম।

অতি অবশ্যই সঠিক ধারণা। কিন্তু, সরকার কেন একে গ্রেফতার করছে না তাই জানতে চাই। আর সাধারণ পাবলিকও গোআ'র নাম মুখে নেয় না। অনেকদিন ধরেই ইচ্ছা ছিল এটা তুলে ধরার। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

সাফি এর ছবি

পোস্টে ৫ তারা। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় সরকার গোলাম আযমকে ভয় পায়!

পাপী [অতিথি লেখক] এর ছবি

ধন্যবাদ। কিন্তু, কিসের এ ভয়? প্রথম প্রথম সরকার ভয়ে ছিল যদি সৌদি আরব কোন রিঅ্যাক্ট করে, কিন্তু যখন এটাও জানা গেলো যে সৌদি আরবও যুদ্ধাপরাধ বিচারকে সমর্থন জানিয়েছে ... তখন ভয় কি?

ফাহিম হাসান এর ছবি

প্রমাণের পাহাড় সবাই দেখতে পাচ্ছে, শুধু প্রশাসন নির্বিকার। আপনার কাছ থেকে এমন পোস্ট আরো আসুক।

সাফি এর ছবি

ডুপ্লি ঘ্যাচাং

পাপী [অতিথি লেখক] এর ছবি

তথ্যসূত্রের প্রথমে থাকা অমি রহমান পিয়াল ভাইয়ের একটা পোস্ট থেকে ঘুরে আসুন। ধন্যবাদ।

তানিম এহসান এর ছবি

জানিনা, তবে কেন যেন মনে হয় আওয়ামী লীগ হয়তো একদম নির্বাচনের আগে আগে একটা সুরাহার দিকে যাবে অথবা ঝুলিয়ে রেখে বলবে আরেকবার ভোট দিন, পরেরবার এসে ঝুলিয়ে দেবো।

সোজা ধরে ধরে ঝুলিয়ে দিলেই হতো, যে যেমন তার সাথে তেমন করাই উচিত - সবকিছু নিয়ে রাজনীতি চলেনা। এইসব পশু আর দানবের সাথে সভ্য আচরণ আমাদের মানিয়েছে কিনা সেটা ইতিাহাস বলবে, তবে যুদ্ধাপরাধীর বিচার বিষয়টাকে ক্রমাগত ’রাজনীতি’র পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার মাসুল না দেশকে দিতে হয়। আদিবাসি ইস্যূতে সরকার আন্তর্জাতিক চাপের তোয়াক্কা করেনা, এই পশুদের বিচারের বেলায় এতো সউদী-আমেরিকান জুজুর ভয় কেন?

জামাত কিন্তু বসে নেই ভাই, আমরা জাহাঙ্গীরনগরে দুই দুইবার শিবির এর আক্রমন প্রতিহত করেছি নব্বই এর দশকে, যতটুকু তখন এবং পরেও দেখেছি তাতে বলতে পারি, ঘৃণিত পশুরা যেহেতু নিজেই নিজের কাছে কোনঠাসা থাকে, তার জন্য সবসময়ই যুদ্ধ এবং তাদের জন্য সব নিজেদের কাছে সব জায়েজ - আর আমাদের রাজনীতিবিদরা কেবলই রাজনীতি করে, ঘেন্না ধরে গেছে।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ বিষয়টা উথথাপন করার জন্য।

অপেক্ষায় আছি, সব ব্যাথা ভুলে যাবো বিচারের সেই মাহেন্দ্রক্ষণে!

pathok(sam) এর ছবি

চলুক আদিবাসি ইস্যূতে সরকার আন্তর্জাতিক চাপের তোয়াক্কা করেনা, এই পশুদের বিচারের বেলায় এতো সউদী-আমেরিকান জুজুর ভয় কেন?

পাপী [অতিথি লেখক] এর ছবি

@ তানিম এহসান ভাই,

জানিনা, তবে কেন যেন মনে হয় আওয়ামী লীগ হয়তো একদম নির্বাচনের আগে আগে একটা সুরাহার দিকে যাবে অথবা ঝুলিয়ে রেখে বলবে আরেকবার ভোট দিন, পরেরবার এসে ঝুলিয়ে দেবো।

তাহলে আমারও আওয়ামী লীগকে বলতে হবে রাস্তা মাপেন। জাতির সংগে বিশ্বাসঘাতকতা করে নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারলে আমার কি আসে যায়? লীগ, দল কাউরেই পুছি না। স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী রাজনীতির সাথে ছিলাম থাকব।

আদিবাসি ইস্যূতে সরকার আন্তর্জাতিক চাপের তোয়াক্কা করেনা, এই পশুদের বিচারের বেলায় এতো সউদী-আমেরিকান জুজুর ভয় কেন?

আগে ছিল, এখন কিন্তু নেই আর। সৌদি-আমেরিকা-ব্রিটেন সহ সবাই কনফার্ম করছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার একান্তই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। ওরা এ ব্যাপারে কিছুই বলবে না। এরপরও আর কি ভয় থাকতে পারে? আমার তো মনে হয় এটা সদিচ্ছার অভাব। সত্যিই সব দুঃখ ভুলে যাব ঐ মাহেন্দ্রক্ষণটা এলে ... ধন্যবাদ আপনাকে।

সুরঞ্জনা এর ছবি

চলুক

............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্‌ চিনে।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

দারুন একটা সময়োগযোগি লেখা। চলুক

সরকারকে এই প্রশ্নগুলোর জবাব দিতে হবে। বোম্বাই মুলোর ঘ্রাণ শুকতে শুকতে গাধা আর নাকের সামনে বোম্বাই মুলে ঝুললেও মালুম করে না। শোকাতে হলে গাধার নাকের সামনে এবার অন্য কিছু ঝুলান হে সরকার বাহাদুর। আর বোম্বাই মুলো নয়।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

পাপী [অতিথি লেখক] এর ছবি

@রাতঃস্মরণীয়,

সরকারকে এই প্রশ্নগুলোর জবাব দিতে হবে।

একই কথা। শুধু একটি জিজ্ঞাসার উত্তর জানতেই এই পোস্ট।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

দারুণ লেখা।

...নবীন ভোটারদের কাছে যুদ্ধাপরাধের বিচার করবার দাবি দিয়ে ক্ষমতাসীন দল প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে, এই আশাতেই আছি।

আরো লিখুন।

পাপী [অতিথি লেখক] এর ছবি

...নবীন ভোটারদের কাছে যুদ্ধাপরাধের বিচার করবার দাবি দিয়ে ক্ষমতাসীন দল প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে, এই আশাতেই আছি।

কিন্তু, সব কিছুরই একটা মাত্রা আছে। আশা ছেড়ে দেয়াও যেমন উচিত না, আবার আমাদের মত অতি উচ্চাশা পোষণ করাও ঠিক না বোধ হয়। যেভাবে আগাচ্ছে বিচার কার্যক্রম, কেমনে কি হবে তাই ভাবছি। সরকারের মেয়াদ আছে আর ২ বছর।

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এই অসাধারণ সুলিখিত পোস্টটির জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ভাই। চলুক চলুক

বিচার হওয়ার আগ পর্যন্ত আমাদের এ ধরণের কার্যক্রমের মাধ্যমে বারবার মনে করিয়ে দিতে হবে যুদ্ধাপরাধের বিচার বাস্তবায়নের কথা!!! ওরা ভুলে যেতে পারে, কিন্তু আমাদের ভুলে যাওয়া চলবে না, মনে করিয়ে দিতে হবে!!!!


_____________________
Give Her Freedom!

পাপী [অতিথি লেখক] এর ছবি

বিচার হওয়ার আগ পর্যন্ত আমাদের এ ধরণের কার্যক্রমের মাধ্যমে বারবার মনে করিয়ে দিতে হবে যুদ্ধাপরাধের বিচার বাস্তবায়নের কথা!!!

শুধুমাত্র সরকারের টনক নাড়ানো আর সবাইকে মনে করিয়ে দেয়া যে একটা শুওরের বাচ্চা এখনও খোয়াড়ের বাইরে আছে - এই কারণেই পোস্ট লেখা। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

দিগন্ত বাহার () এর ছবি

চলুক চলুক চলুক

চরম উদাস এর ছবি

চলুক

ধুসর গোধূলি এর ছবি

বাংলাদেশের 'জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব' নিয়ে কেউ কিছু জানেন? যে কোনো শিশু বাংলাদেশে জন্ম নিলেই সে বাংলাদেশের নাগরিক হয় নাকি তার পিতা-মাতার ন্যুনতম একজনকে বাংলাদেশের বৈধ নাগরিক হতে হয়? (সম্ভবত দ্বিতীয়টাই সঠিক, কারণ আমি যতদূর জানি নতুন প্রজন্মের বিহারীরাও বাংলাদেশের বৈধ নাগরিক না)

গোলাম আযমের স্ত্রী'র কি নাগরিকত্ব ছিলো যখন গোলাম আযমের বাংলাদেশের কোনো নাগরিকত্ব ছিলো না!

এই তথ্যগুলো জানা দরকার! গোলাম আযমের ছেলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কী হিসাবে যোগদান করেছিলো! তার কি শুরু থেকেই বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ছিলো নাকি পাকিস্তানের নাগরিকত্ব ছিলো? বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করার ক্ষেত্রে নাগরিকত্বের পূর্বশর্ত কী? গোলাম আযমের ছেলের নিযোগের ক্ষেত্রে সেই শর্তসমূহে কোনো রকমের শিথীলতা অবলম্বন করা হয়েছিলো কি?

যদি করা হয়ে থাকে, তাহলে সেইসব চুতিয়া বাঞ্চোতদেরও গোলাম আযমের সাথে একি সাথে বিচারের সম্মুখীন করতে হবে বাংলাদেশের তিরিশ লাখ শ্রেষ্ঠ প্রাণের সাথে বেঈমানী করার জন্য। গোলাম আযম আর তার দলকে যে বা যারা আঁচলের নিজে, আস্তিনের নিচে লুকিয়ে রেখে বাংলাদেশের মানুষের সাথে রাজনীতি নোংরা খেলা খেলে বিচার তাদেরও হতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ গোলাম আযম নামক পশু আর তার পৃষ্ঠপোষকদের ছাড়বে না।

রাজনীতির খেলা অনেক দেখছে বাংলাদেশের মানুষ। এবার ঠ্যাঙানোর পালা।

যুধিষ্ঠির এর ছবি

চলুক

যুধিষ্ঠির এর ছবি

বেশ গোছানো আর সুলিখিত পোস্ট। পোস্টের জিজ্ঞাসা আমারও।

দুর্দান্ত এর ছবি

চলুক x ১০০

নৈষাদ এর ছবি

চলুক

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

চলুক
একেক কইরা সব শুয়োররে নিয়ে পোস্ট দিতে থাকেন।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অমিত এর ছবি

চলুক

আশরাফ মাহমুদ এর ছবি

চলুক

ধরবে না, ধরলে-ও বিচার করবে না। এই বদমাশগুলোর বিচার যে সরকার করবে আমি আজীবন তাদের চোখ বুজে ভোট দিয়ে যাবো।

ইস্কান্দর বরকন্দাজ এর ছবি

মনে হচ্ছে, আওয়ামী লিগ এই ইস্যুটা (যুদ্ধাপরাধীদের বিচার) ঝুলিয়ে রাখবে, যাতে এটার মূলা দেখিয়ে পরবর্তীতে আবারও ক্ষমতায় আসা যায়।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

গোলাম আজমের পাসপোর্ট জব্দ করেছে সরকার। এরকম একটা গুজব শোনা যায় কিছুদিন পরপর। এটার সত্যাসত্য কেউ জানেন?

গোলাম আজম সরকারের নজরবন্দি(কেউ কেউ গৃহবন্দিও বলে ফেলেন)। এরকম একটা গুজবও ডালপালা মেলছিল কদিন, এটা নিয়ে কেউ জানেন?

তবে গো.আজম বিষয়ে আ-লীগ সরকারের অবস্থান নিয়ে আমার ব্যক্তিগত ধারণা- সরকার চায় গোলাম আজমের স্বাভাবিক মৃত্যু হোক। তারপর তাকে মরনোত্তর মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে। সাপও মরলো, আরবজাহানও সন্তুষ্ট থাকলো।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

পাপী [অতিথি লেখক] এর ছবি

@নীড় সন্ধানী, পাসপোর্ট জব্দের গুজবটা আমিও শুনেছিলাম। কিন্তু, এর সত্যতার কিছুই জানিনা।

তবে গো.আজম বিষয়ে আ-লীগ সরকারের অবস্থান নিয়ে আমার ব্যক্তিগত ধারণা- সরকার চায় গোলাম আজমের স্বাভাবিক মৃত্যু হোক। তারপর তাকে মরনোত্তর মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে। সাপও মরলো, আরবজাহানও সন্তুষ্ট থাকলো।

আমার এই পোস্ট দেয়ার দুদিন পর গতকাল টিভিতে দেখলাম, সংসদের ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী গোলাম আজমকে গ্রেফতারের দাবী জানিয়েছেন। মুরোদ থাকলে আওয়ামী লীগ বিচার করে তবেই ক্ষান্ত দিবে। তা না হলে, দেশে আবার জলপাই রঙ- এর লোকগুলা আসতে পারে ...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।