গান ও গল্প- অল অ্যালং দ্য ওয়াচটাওয়ার

ওডিন এর ছবি
লিখেছেন ওডিন (তারিখ: বিষ্যুদ, ০২/০৬/২০১১ - ২:১৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গানটা প্রথম শুনি তিরানব্বই এর গ্রীষ্মে। ছায়াচ্ছন্ন, পুরোনো একটা মফস্বল শহরের মায়াবী এক দুপুরে। স্কুল গরমের ছুটি। (হ্যাঁ, সেইসময়কার স্কুলগুলোতে গরমের ছুটি বলে একটা ব্যপার ছিলো।) আমি সকাল থেকেই ঘাঁটি গেড়েছি এক বন্ধুর বাসায়। ওদের বাসা শহরের একেবারে মধ্যিখানে হলেও বাসার সামনে একটা আর পেছনে দুইটা পুকুর ছিলো। আর পেছনে প্রায় অন্ধকার জঙ্গলের মতো একটা বাগান। তাই পুরো সকাল আর দুপুরবেলা কেটেছে ওদের বাগান আর পুকুরে হুটোপুটি করে। বন্ধুর বাবা মা যথেষ্ট প্রশ্রয় দেন আমাদের, তারপরেও মোটামুটি উদ্দাম লাগামছাড়া ছেলেমানুষীরও একটা সীমা আছে। আমাকে যখন তৃতীয়বারের মত পুকুর থেকে তুলে আনা হলো তখন তারা আমাদের পুরো কর্মকান্ডে ভেটো দিলেন। আমি সাঁতার জানতাম না, কিন্তু সেই তুচ্ছ ব্যপারটা আমাকে পানি থেকে কখনো দূরে রাখতে পারেনি। আপনারা জানেন নিশ্চয়ই, এগারো-বারো বছর বয়সে নিজেদের অদম্য মনে হয়। কিছুই আমাদের কিছু করতে পারে না। কারো কোন ক্ষমতা নেই আমাদের ক্ষতি করার। আমাদের আঘাত দেয়ার। অনন্তকাল বেঁচে থাকবো আমরা। উই আর বয়েজ, অ্যান্ড উই আর মেড টু লিভ ফরেভার।

খুব গান শুনতাম আমরা, মিউজিক বিষয় ওই বয়সেই একটু ইঁচড়ে পাকা ছিলাম। ডিপ পার্পল, রেইনবো, ব্ল্যাক সাবাথ। ডিও। এসি/ডিসি। আর অনেক। মাথা মুছতে মুছতে বন্ধুর ঘরে পায়চারি করছি, সে ক্যাসেট প্লেয়ারে একটা রেকর্ড করা ক্যাসেট ঢোকালো। জিজ্ঞেস করলাম- কি? সে বলে হেনড্রিক্স, শুনেছিস কিছু? আমি বললাম- শুধু নাম।

শুরু হলো ড্রামস আর বেইজের প্লাকিঙ, এরপরেই অপার্থিব একটা সুর। জিমি হেনড্রিক্সের গিটার। কান খাড়া করে থাকলাম

"There must be some way out of here" said the joker to the thief

হুমম। তস্কর আর বিদূষক আলাপ করছে। তা ভালোই। তো কি ব্যপারে?

"There's too much confusion", I can't get no relief

আচ্ছা। তাই নাকি? কেন? বিদূষক চিন্তিত। কিসের থেকে মুক্তি চাইছে সে?

সেই মাথায় ঢুকে গেলো গানটা। আরেকটা পুরোনো ক্যাসেট নিয়ে সেইটার গান মুছে এই গানটা রেকর্ড করলাম। শুনতে হবে।

"No reason to get excited", the thief he kindly spoke
"There are many here among us who feel that life is but a joke
But you and I, we've been through that, and this is not our fate
So let us not talk falsely now, the hour is getting late".

তাইতো। উতলা হওয়ার কোন কারন নাই, আমাদের মত অনেকেই আছে। জীবনটাকে খুব পরিহাসের বিষয় মনে হয় মাঝে মাঝে। নাকি জীবনই পরিহাস করে আমাদের সাথে। নিষ্ঠুর নির্মম ঠাট্টা।

কিন্তু আমাদের নিয়তি এইরকম না। কেউ কিচ্ছু করতে পারবে না আমাদের। আমরা অজেয়। অমর।

উই আর বয়েজ, অ্যান্ড উই আর মেড টু লিভ ফরেভার।

All along the watchtower, princes kept the view
While all the women came and went, barefoot servants, too.

Outside in the distance a wildcat did growl
Two riders were approaching, the wind began to howl

পাদটীকা

  • ১.
    গানের ভিডিওটা ভিয়েতনাম যুদ্ধের অনেক ছবি দিয়ে বানানো একটা স্লাইডশো। দেখলে মন খারাপ হওয়ার বিরাট একটা সম্ভাবনা থাকবে।

    অরিজিনাল গানটা লিখেছিলেন বব ডিলান, হেনড্রিক্স এইটা কাভার করেন তার ইলেকট্রিক লেডিল্যান্ড রেকর্ডে, ১৯৬৮ সালে। হেনড্রিক্সের ভার্সনটা এত জনপ্রিয় হয় যে পরে স্বয়ং বব ডিলানও তার লাইভ পারফেমেন্সে হেনড্রিক্সের ভার্সনটাই বাজাতেন।

    আমি যখনই কোন গানের তালিকা করি, এই গানটা সবসময়েই এক নম্বরে থাকে


মন্তব্য

অপছন্দনীয় এর ছবি

গানে হাসি

ভিডিও দেখে মন খারাপ :( মন খারাপ

ছায়াচ্ছন্ন, পুরোনো একটা মফস্বল শহরের মায়াবী এক দুপুরে।
........................
ওদের বাসা শহরের একেবারে মধ্যিখানে হলেও বাসার সামনে একটা আর পেছনে দুইটা পুকুর ছিলো।

দেঁতো হাসি - মনে হয় জায়গাটা আন্দাজ করতে পারছি দেঁতো হাসি

ওডিন এর ছবি

নিউ সার্কুলার রোড হাসি

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

বেশ তো! আমি এইটা আগে শুনি নাই! লেখাটা অসাধারণ হইছে!

আমি আজকে সারা সন্ধ্যা অ্যাঞ্জেলাকে দিয়ে মাথা মাসাজ করে নিলাম। ছেমড়ি বলল,
গতকাল মরছে, জাহান্নামে গেছে,
আজকে হবে হিসেব-নিকেশ...

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

খেকশিয়াল এর ছবি

ভাষাহীন করে দিলা হে! হাসি

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

ফাহিম হাসান এর ছবি

ওফ! বব ডিলান। অসাধারণ একজন মানুষ। চলুক

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

মাত্র সাতাশ বছর বেঁচে থাকা একটা ছোক্‌রা কী গান যে করে গেছে তা যে শোনেনি তাকে বোঝানো যাবে না। একি এলএসডি-অ্যাম্ফিটামিনের গুণ? তাই যদি হতো তাহলে দুনিয়াতে আরো কয়েক হাজার হেনড্রিক্স থাকতো। আরেক প্রতিভা জিম মরিসনও বেঁচেছিলেন ঐ সাতাশ বছরই। তাঁর মারা যাবার কারণ নিয়ে কানাঘুষায় যা শোনা যায় তাও একই প্রকারের। বব মার্‌লে এঁদের চেয়ে মোটে নয় বছর বেশি বেঁচেছিলেন। এই তিনজন যদি আজো বেঁচে থাকতেন তবে আজকের ...........রা কোথায় থাকতো!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

পড়েছি পোস্ট করবার সাথে সাথেই, সারাদিন ঘুরেফিরে ভাবলাম কী বলতে চাই... আসলেই ভাষাহীন হয়ে আছি...

উই আর বয়েজ, অ্যান্ড উই আর মেড টু লিভ ফরেভার।

লেখাটা অসামান্য লাগলো... অ্যান্ড ইট শর্টা হেল্পড... ধন্যবাদ তোমাকে।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

ওডিন এর ছবি

ওই সময়টাতে নিজেদের আসলেই ইনভিনসিবল মনে হতো। সুপারহিরো। হাসি মনে হতো হতচ্ছাড়া জীবন কিচ্ছু করতে পারবে না আমাদের। ধরতেই পারবে না। আজকাল রাতের বেলা ব্যাটাকে না দেখলেও অনুভব করতে পারি, জমাট অন্ধকারের সাথে ওর শার্টের ঘষা লেগে একটা খসখস শব্দ হয়। বুঝি, কাছেপিঠেই ঘাপটি মেরে আছে। অপেক্ষা করছে ফিরে আসার।

আসমা খান, অটোয়া। এর ছবি

লেখাটি খুব খুব ভালো লাগলো!!!

কৌস্তুভ এর ছবি

চলুক

কবি-মৃত্যুময় এর ছবি

কী দারুণ!! চলুক চলুক

All along the watchtower, princes kept the view
While all the women came and went, barefoot servants, too.
Outside in the distance a wildcat did growl
Two riders were approaching, the wind began to howl

কল্যাণF এর ছবি

হেন্ড্রিক্সের এই গানের খানিক্টা কি ফরেস্ট গাম্প সিনামেয় ব্যবহার হইছে? ইসসস...সচল থিকা আমার কাইটা পড়া লাগবে, গত কিছুদিন থিকা খালি পড়তেছি, কখনো কখনো পুরান পুরান লেখা খুঁজে পড়তেছি, কাজ কাম মাথায় উঠছে, আপনারা কিছু লোক এমন লেখেন কেমনে? চলুক

ওডিন এর ছবি

মনে হয়। আমি ঠিক নিশ্চিত না। ফরেস্ট গাম্পে ভিয়েতনাম যুদ্ধের অংশটায় সেভেনটিজের অনেক গান ব্যবহার করা হয়েছে, খুব সম্ভব এটাও।

এমনে আর কেমনে লিখি। এইটা একটা এমনে এমনে লেখাই ছিলো। শুরু করেছিলাম ফেসবুক স্ট্যাটাস হিসেবে। একটু লম্বা হয়ে এই লেখাটা হয়ে গ্যালো আরকি। হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।