মিলগ্রামের পরীক্ষা - কোথায় রয়েছে আদেশ, আনুগত্য, বিবেক, আর নৈতিকতার সীমারেখা?

রাগিব এর ছবি
লিখেছেন রাগিব (তারিখ: রবি, ২১/০৯/২০০৮ - ২:০৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সময়টা ১৯৬১ সাল। কুখ্যাত নাজি যুদ্ধাপরাধী অ্যাডলফ আইখম্যানকে ইজরায়েল ধরে নিয়ে গিয়ে বিচার করছে, লাখ লাখ মানুষকে গ্যাস চেম্বারে পাঠাবার অপরাধে। আইখম্যান, তথা অন্যান্য নাজি যুদ্ধাপরাধীরা নিজেদের সাফাই গাইতে যে যুক্তিটি দেয়, তা হলো, তারা সবাই হুকুমের দাস। হিটলার ও তার সহযোগীদের হুকুমই তারা তামিল করেছে মাত্র।

আইখম্যানের সেই যুক্তি টেকেনি, কিন্তু হুকুম তামিল করতে মানুষ কত দূর পর্যন্ত যেতে পারে, তা দেখতে ইচ্ছে হলো মনোবিজ্ঞানী স্ট্যানলি মিলগ্রামের। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মিলগ্রাম নিজেকে প্রশ্ন করলেন - দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের গণহত্যায় অংশ নেয়া আইখম্যান ও তার লাখ লাখ সহযোগী কি কেবল কর্তৃপক্ষের আদেশ মেনে চলছিলো? এদের সবাইকে কি সক্রিয়ভাবে অপরাধে অংশগ্রহনকারী বলা চলে? (("Could it be that Eichmann and his million accomplices in the Holocaust were just following orders? Could we call them all accomplices?")

এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে মিলগ্রাম এক সেট পরীক্ষা চালালেন। পরীক্ষাটি অভিনব - অংশগ্রহনকারীদের জানানো হয়নি এর আসল উদ্দেশ্য কী। বরং তাঁদের অন্য কথা বলে সম্মানির বিনিময়ে পরীক্ষাতে অংশ নিতে বলা হয়।

পরীক্ষার বিস্তারিত

মিলগ্রামের পরীক্ষাটিতে প্রতি দফায় ৩ জন ব্যক্তি অংশ নেয় - পরীক্ষক, ছাত্র (নির্যাতনের শিকার), এবং শিক্ষক (পরীক্ষাতে অংশগ্রহনকারী ব্যক্তি)। আসলে এদের মধ্যে কেবল "শিক্ষক"ই হচ্ছেন পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারী - বাকি দুই জনেই হলো মিলগ্রামের নিযুক্ত অভিনেতা। পরীক্ষকের ভূমিকাতে গম্ভীর মুখের কর্তৃস্থানীয় চেহারার একজন ব্যক্তি সাদা অ্যাপ্রন পরে অভিনয় করেন। ছাত্রের ভূমিকায় অংশ নেন ৪৭ বছর বয়স্ক একজন হিসাবরক্ষক, যাঁকে মিলগ্রাম এই জন্য প্রশিক্ষণ দেন। পরীক্ষায় "শিক্ষক" এর ভূমিকায় অংশ নেয়া ব্যক্তিকেই কেবল পরীক্ষার উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানানো হয়নি। অংশগ্রহনকারী ব্যক্তিদের কেবল বলা হয়েছিলো যে, তারা নানা পরিস্থিতিতে মানুষের স্মৃতিশক্তি ও শেখার ক্ষমতা কীভাবে কাজ করে, তার উপরে একটি পরীক্ষাতে অংশ নিবেন।

শিক্ষককে বোঝানো হয়েছিলো যে, কে শিক্ষক হবে আর কে ছাত্র হবে, তা লটারির মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়েছে, কিন্তু আসলে লটারিটি ছিলো সাজানো। কে কী করবে তা নির্ধারণ করার পরে শিক্ষক ও ছাত্রকে দুটি আলাদা কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। তারা যোগাযোগ করতে পারতেন, কিন্তু একে অন্যকে দেখতে পারতেন না। কিছু কিছু পরীক্ষাতে শিক্ষককে বলা হয়েছিলো যে, ছাত্রের ভূমিকায় অংশ নেয়া ব্যক্তির হৃদরোগ রয়েছে।

শিক্ষককে প্রথমে ৪৫ ভোল্টের বৈদ্যুতিক শক দিয়ে দেখানো হয় যে, ছাত্র ভুল করলে তাকে ঠিক এই রকমের শক দেয়া হবে। শিক্ষককে দেয়া হয় জোড়া জোড়া শব্দের তালিকা, যা "ছাত্র"কে শেখাতে হবে। শিক্ষক এই তালিকাটির শব্দগুচ্ছগুলি ছাত্রকে পড়ে শোনান। তার পরে প্রতি জোড়া শব্দের প্রথমটি শিক্ষক পড়ে শোনান, আর তার পর ছাত্রকে জোড়ার দ্বিতীয় শব্দ কোনটি হবে, তা জানতে চাওয়া হয়। চারটি সম্ভাব্য শব্দ থেকে একটি বেছে নিতে বলা হয়। জবাব ভুল হলে শিক্ষককে বলা হয় ছাত্রকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে শাস্তি দিতে। প্রতিবার ভুল করার সাথে সাথে বৈদ্যুতিক শকের ভোল্টেজ বাড়ানো হয়, এক পর্যায়ে এই মাত্রা ৩০০ ভোল্ট পার হয়ে যায়।

পরীক্ষাতে "শিক্ষক" এর ভূমিকায় অংশ নেয়া ব্যক্তিদের বোঝানো হয়, ভুল জবাবের জন্য "ছাত্র"দের আসলেই বৈদ্যুতিক শক দিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে কোনো শকই দেয়া হয়নি। ছাত্রের ভূমিকায় অভিনয় করা অভিনেতাটি ইলেক্ট্রিক শক দেয়ার সুইচের সাথে গোপনে একটি টেপ-রেকর্ডার সংযুক্ত করে দেন। প্রতিবার শক দেয়ার সুইচ চাপার সাথে সাথে টেপ রেকর্ডার থেকে ব্যথার চিৎকারের শব্দ বের হয় যা শিক্ষক শুনতে পান। কয়েকবার শক দেয়ার পরে অভিনেতাটি দুই কক্ষের মধ্যকার দেয়ালে বাড়ি দিতে শুরু করেন, আর বলতে থাকেন তার বুকে ব্যথা করছে। এর কিছু পরে "ছাত্রের" সব চিৎকার বন্ধ হয়ে যায়।

auto
পরীক্ষার এই পর্যায় আসতে আসতে শিক্ষকের ভূমিকায় অংশ নেয়া অধিকাংশ মানুষই পরীক্ষা বন্ধ করা ও ছাত্রের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেয়ার জন্য পরীক্ষককে অনুরোধ করেন। কেউ কেউ ১৩৫ ভোল্টের সময়ে থেমে যান, এবং এই পরীক্ষার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। কিন্তু পরীক্ষক শিক্ষককে বোঝান, এখানে কোনো সমস্যা নেই, এবং শিক্ষক কিছুর জন্য দায়ী থাকবেন না। এটা শোনার পরে অধিকাংশ মানুষই পুনরায় শক দেয়া শুরু করেন। অবশ্য ছাত্রের যন্ত্রণার চিৎকার শুনে অনেকেই বেশ চিন্তিত হন।

শিক্ষক যদি কখনো পরীক্ষা বন্ধ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন, তখন পরীক্ষক তাকে কড়া ভাষায় পর পর আদেশ দেন :

১. দয়া করে পরীক্ষা অব্যাহত রাখুন।

২. পরীক্ষার স্বার্থে আপনাকে কাজ অব্যাহত রাখতে হবে।

৩. আপনার এই পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়াটা বাধ্যতামূলক।

৪. পরীক্ষা বন্ধ করার কোনো অধিকারই আপনার নেই, আপনাকে অবশ্যই কাজ চালিয়ে যেতে হবে।

এই ৪টি আদেশের পরেও যদি শিক্ষক পরীক্ষা বন্ধ করতে চান, তাহলে পরীক্ষাটি তখন শেষ করে দেয়া হয়। অন্যথায় ছাত্রকে পরপর ৩ বার ৪৫০ ভোল্টের শক দেয়ার পরে পরীক্ষা বন্ধ করা হয়।

ফলাফল
প্রাথমিক ভাবে মনে হতে পারে, কোনো সাধারণ মানুষই এভাবে অন্যকে অত্যাচার, নির্যাতন করতে থাকবে না। ছাত্রটি কষ্ট পাচ্ছে টের পাওয়া মাত্র অবশ্যই থেমে যাবে শিক্ষকের বৈদ্যুতিক নির্যাতন ... মানুষকে কষ্ট দেয়ার আগেই বিবেক বাধ সাধবে।

মিলগ্রামও তাই ভেবেছিলেন। পরীক্ষাটি চালাবার আগে মিলগ্রাম ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্ত্বত্ত্বের ১৪ জন ছাত্রকে জিজ্ঞেস করেন, এই পরীক্ষার ফল কী হবে বলে তারা মনে করে। এই ছাত্রদের সবাই একমত পোষণ করেন যে, খুব অল্প (গড়ে ১.২%) মানুষই সর্বোচ্চ ভোল্টেজ ৪৫০ ভোল্টের শক দিবে। মিলগ্রাম নিজের সহকর্মীদেরকেও একই প্রশ্ন করেন, এবং তাঁরাও একই মত প্রকাশ করেন।

মিলগ্রামের প্রথম দফার পরীক্ষাতে ৬৫% (৪০ জনে ২৬ জন) অংশগ্রহনকারী ৪৫০ ভোল্টের সর্বোচ্চ শকটি প্রদান করেন। অবশ্য এদের অনেকেই কোনো না কোনো সময়ে এই শক প্রদান করতে দ্বিধাগ্রস্ত হন, যদিও ৩০০ ভোল্টের নিচে শক দিতে কেউই দ্বিধাগ্রস্ত হননি। পরীক্ষা শেষে অংশগ্রহনকারীদের সবার সাক্ষাতকার নেয়া হয়। এদের অনেকেই তখন বলেন যে তারা পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য প্রাপ্ত সম্মানী ফেরত দিবেন।

পরবর্তীতে অধ্যাপক মিলগ্রাম ও অন্য মনোস্তত্ত্ববিদেরা এই পরীক্ষাতে বিভিন্ন বৈচিত্র্য আনেন, যদিও সব ক্ষেত্রেই একই ফলাফল পাওয়া যায়। (ইয়েলের পরীক্ষার সাথে দুই এক ক্ষেত্রে পার্থক্য ছিলো, যেমন অনেক ক্ষেত্রে পরীক্ষকের আদেশের প্রতি কিছু কিছু প্রতিরোধ দেখা যায়)। এছাড়াও মিলগ্রাম পরে পরীক্ষার স্থান/এলাকা পরিবর্তন করে দেখেন, তাতে করে আদেশ মানার কোনো রকমফের হয় কি না। যেমন, কোনো কোনো পরীক্ষা চালানো হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে, কোনোটি কোনো শহরের বাণিজ্যিক এলাকায়)। দেখা যায়, পরীক্ষার এলাকাটি যত সম্মানজনক/গুরুত্বপূর্ণ আদেশ মানার হার ততো বেশি।

ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ড, বাল্টিমোর কাউন্টির অধ্যাপক ডঃ টমাস ব্লাস এই পরীক্ষার ফলাফলের উপরে নীরিক্ষা চালান। তিনি দেখতে পান, জীবননাশী বৈদ্যুতিক শক দিতে প্রস্তুত "শিক্ষক"দের হার সব সময়ই এক থেকেছে , ৬১-৬৬% - পরিবেশের পরিবর্তনে এই হার পাল্টায়নি।

মিলগ্রাম প্রথম তাঁর এই পরীক্ষার কথা ১৯৬৩ সালে "জার্নাল অফ অ্যাবনর্মাল অ্যান্ড সোশাল সাইকোলজি"তে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রবন্ধে তুলে ধরেন। পরবর্তিতে এই পরীক্ষার বিস্তারিত তথ্য ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত মিলগ্রামের লেখা বই Obedience to Authority: An Experimental View. এ প্রকাশ করা হয়।

মিলগ্রাম ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত তাঁর নিবন্ধ "The Perils of Obedience", এ এই পরীক্ষার ফলাফল তুলে ধরেন - তাঁর ভাষায়।

The legal and philosophic aspects of obedience are of enormous importance, but they say very little about how most people behave in concrete situations. I set up a simple experiment at Yale University to test how much pain an ordinary citizen would inflict on another person simply because he was ordered to by an experimental scientist. Stark authority was pitted against the subjects' [participants'] strongest moral imperatives against hurting others, and, with the subjects' [participants'] ears ringing with the screams of the victims, authority won more often than not. The extreme willingness of adults to go to almost any lengths on the command of an authority constitutes the chief finding of the study and the fact most urgently demanding explanation.

Ordinary people, simply doing their jobs, and without any particular hostility on their part, can become agents in a terrible destructive process. Moreover, even when the destructive effects of their work become patently clear, and they are asked to carry out actions incompatible with fundamental standards of morality, relatively few people have the resources needed to resist authority.

(অনুবাদ - আদেশ মেনে চলার আইনগত ও দার্শনিক গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু মানুষ বাস্তবে কী করবে, তা দর্শন বা আইন দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। আমি ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে খুব সাধারণ একটি পরীক্ষার মাধ্যমে দেখতে চেয়েছিলাম, একজন সাধারণ ব্যক্তি কেবলমাত্র কর্তৃপক্ষের আদেশের জন্য অন্য আরেক ব্যক্তিকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে কতক্ষন নির্যাতন করতে পারবে। পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারীদের নৈতিকতা, মানবতা ও বিবেকের বিরুদ্ধে "কর্তৃপক্ষ" আদেশ দিয়েছে। কিন্তু, অংশগ্রহনকারী ব্যক্তিদের কানে নির্যাতিত ব্যক্তিদের বেদনার চিৎকার বার বার প্রতিধ্বনিত হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কর্তৃপক্ষের আদেশেই তারা নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। এই পরীক্ষায় যা বের হয়েছে, তা হলো, মানুষ কর্তৃপক্ষের আদেশে যেকোনো রকম কাজ করতে পারে, তা যত ভয়াবহই হোক না কেনো।

অন্য মানুষের প্রতি তীব্র বিদ্বেষ, ঘৃণা পোষণকারী, বা পাশবিক চরিত্রের অধিকারী নয় - এমন সাধারণ মানুষও অশুভ শক্তির ক্রীড়ণক হয়ে অত্যাচার চালাতে পারে। এমনকি, যখন তাদের কাজের ভয়াবহ ফলাফল চোখের সামনে সুস্পষ্ট ভাবে প্রকাশ পায়, তখনো মানুষ কেবলমাত্র উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশে নৈতিকতা ও বিবেকবিরোধী অনেক কাজ করে চলতে পারে। খুব অল্প মানুষেরই কর্তৃপক্ষের বিরূদ্ধে গিয়ে নৈতিকতা ও বিবেক অনুযায়ী কাজ করার ক্ষমতা রয়েছে।

ব্যাখ্যা

অধ্যাপক মিলগ্রাম পরীক্ষাটির ফলাফল ব্যাখ্যা করার জন্য দুটি তত্ত্ব দেন।

* প্রথমটি হলো theory of conformism (অন্যদের সাথে এক হয়ে চলার তত্ত্ব)। বিপদের সময়ে সাধারণ ব্যক্তিরা (যাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার মতো ক্ষমতা বা দক্ষতা নেই) কর্তৃপক্ষের উপরেই দায়িত্ব নেয়ার ভার ছেড়ে দেয়।

* দ্বিতীয়টি হলো agentic state theory, যেখানে মিলগ্রামের মতানুসারে আদেশ মেনে চলার প্রবণতার মূল কারণ হলো, নিজেকে অন্যের ইচ্ছা পালনের ক্রীড়নক হিসাবে গন্য করা। এটা যে ব্যক্তি করেন, তিনি এই কাজ গুলোর পরিণামের জন্য নিজেকে আর দায়ী দেখেন না। কোনো ব্যক্তির মানসিকতায় এই ধরণের পরিবর্তন এসে গেলে তিনি অন্যের আদেশ নির্দ্বিধায় মেনে চলতে থাকেন।

----------

তার মানে কী দাঁড়ালো? কর্তৃস্থানীয় ব্যক্তিদের আদেশে মানুষ নিজের বিবেক বিসর্জন দিয়েও বহু ভয়াবহ ঘটনা দিব্যি ঘটাতে পারে, কেবল নিজেকে প্রবোধ দিয়ে যে, এটার জন্য সে দায়ী না। লক্ষ্যনীয়, এই পরীক্ষাটি যাদের উপরে চালানো হয়, তারা রীতিমত সাধারন মানুষ, মোটেও তারা সামরিক বাহিনীর সদস্য না যে নির্বিচারে আদেশ মানতে তারা অভ্যস্ত।

পরবর্তীতে বিভিন্ন ঘটনা থেকে মিলগ্রামের এই তত্ত্বের সমর্থন মিলেছে। সাম্প্রতিক কালে পুলিশ সেজে ফোন করে অনেক ক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষকে দিয়ে ভয়াবহ অপরাধ করিয়ে নেয়া গেছে। যারা এসব অপরাধ করেছে, তারা কখনোই নিজের বিবেকের ধার ধারেনি, বরং আদেশ পেয়ে তা মেনে চলার যুক্তি দেখিয়েছে।

যুদ্ধাপরাধ যারা করে, তারা কি তাহলে আপনার আমার মতোই সাধারণ মানুষ? আমার মন বলতে চায়, মানুষ এতো খারাপ হতে পারে না, কিন্তু আদেশ মেনে চলার এই প্রবণতা বিশ্বের ইতিহাসে বার বার করে ফিরে আসে, প্রকাশ পায় সাধারন মানুষের বিবেক বিসর্জনে।

তবে কি, আমরা নিছক আদেশেরই দাস?

(তথ্যসূত্রের জন্য বাংলা উইকির নিবন্ধ http://bn.wikipedia.org/wiki/মিলগ্রামের_পরীক্ষা , বা ইংরেজি উইকিতে দেখুন।)


মন্তব্য

আলমগীর এর ছবি

আমাদের মধ্যেকার মর্ষকামী ভাবটা চাপা থাকে নৈতিকতা/সামাজিকতার আড়ালে। দায়টা কারো উপর চেপে দিতে পারলে আর সমস্যা হয় না। গ্রামে চোর ধরা পড়লে, পেটানোর মানুষের অভাব হয় না। শালিশ-বিচারে যদি পাথর-ছোঁড়া, দোররা মারা, চোখ তুলে নেয়া বা পাকিস্তানের মতো ধর্ষণ করা শাস্তি নির্ধারিত হয়, আশ্চর্যের বিষয় হলো, সেটা কার্যকর করার জন্য স্বেচ্ছাসেবী সবসময় তৈরি থাকে। এই মানুষের মনোতত্ত্ব।

পুতুল এর ছবি

"তবে কি, আমরা নিছক আদেশেরই দাস?"

অন্তত ব্রুদার আইখম্যানের বেলায় সেটা প্রযোজ্য নয়। বার্লিনে আইখম্যানের কর্মস্থল বান সে (বান লেক) একটা মিউজিয়াম আছে। ৭/৮ বছর আগে সেটা দেখেছি। নাস্যীদের কর্মপদ্ধতি সেখানে খুব ভাল করে সংরক্ষিত আছে। সে স্মৃতি মনে হলে এখনো শরীরের লোম খাড়া হয়ে যায়। মনের ভার কমাতে একটা প্রতিবেদ লিখেছিলাম।
ব্রুদার আইখম্যানরা খুব ডান্ঠা মাথায় ইহুদি নিধনের পরিকল্পনা করতেন সেখানে বসে।
সে অন্য প্রসংগ, আলোচ্য গবেষনার উপর একটা ফিল্ম দেখেছিলাম। সেখানে মানুষের ভেতর লুকিয়ে থাকা পশুত্ব সুযোগ পেলে কী ভাবে ডাল পালা মেলে, তা দেখানো হয়।
এর সাথে যদি কোন দর্শণ যোগ হয়, তাহলে ভয়ঙ্করতা ভয়াবহ। যেমন নাসিরা মনে করত (এখনো অনেকে মনে করে) ঈশ্বর তাদের শ্রেষ্ঠ মানুষ বানিয়ে পাঠিয়েছে, আর সব মানুষদের উপর প্রভূত্ব করার জন্য।
র‌্যব মনে করে তারা চোর-ডাকাত মেরে সরকারী হুকুম তামিলের সাথে সাথে জাতীর উপকার করছে।
আবার দেখা যায় তাৎখনিক ভাবে দেখা গেল অনেক মানুষ ধর্ষণ করছে। বা দুটো দল মারপিট করছে। বিচ্ছিন্ন ব্যাক্তি এই দুই দলে তার পরিচিত কাউকে পেলে কোন কারণ না জেনেই মারপিটে যোগদেয়।
মোট কথা নিজের বিবেক (যদি এ জাতীয় কিছু থেকে থাকে) দল বা গোত্রের সমালোচনায় না গিয়ে আপাতত যা গোত্র করছে তার পক্ষেই থাকে।

আপনার আলোচনার বিষয়টি খুব ইন্টারেষ্টিং।
**********************
কাঁশ বনের বাঘ

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

রাগিব এর ছবি

এই ব্যাপারটা নিয়ে আমি বেশ বিভ্রান্ত। ঘরের টেবিলে বসে আমি নিজে হয়তো জোর গলাতে বলতে পারি অনেক কিছু, কিন্তু কিছু পরীক্ষা আর বাস্তবতা অন্য কথা বলে। স্ট্যানফোর্ড প্রিজন এক্সপেরিমেন্ট এরকম আরেকটা পরীক্ষা, যাতে অংশগ্রহনকারীদের দুই ভাগ করে অর্ধেক কয়েদী, আর অর্ধেক কারারক্ষী, এরকম ভাগ করা হয়। কয়েক দিনের মাথাতেই দেখা যায়, কারারক্ষীরা কয়েদীদের উপরে অত্যাচার চালাচ্ছে। অথচ এরা নিতান্তই সাধারন মানুষ।

মানব মনস্তত্ত্ব বড়ই জটিল ... এই সব পরীক্ষা তাই প্রমাণ করে।

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
http://www.ragibhasan.com

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

ধূসর মানব [অতিথি] এর ছবি

Corporate World এ তো একটা কথা চালু আছে। “Boss is always right”.

অনেকে হয়তো অন্যভাবে দেখবে, Corporate আর Crime এক নয়। কেউ করে সম্মানের জন্য, আর কেউ করে টাকার জন্য। তবে ইতিহাসে তো দেখি বিজয়ীর গান। পরাজিতর কথা কেউ বলেনা। অথবা বলতে দেয় না।

হিরোশিমার কথা মনে হয় আরেকটু detail আসত, যদি আমেরিকা হেরে যেত। আমি ধারনা করি।

দেবোত্তম দাশ এর ছবি

সত্যিই জটিল !!!
------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি

------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !

শিক্ষানবিস এর ছবি

লেখাটা খুব ভাল লাগল। বিষয়টাকে আমি এভাবে দেখছি,
পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই গভীরভাবে চিন্তা করে না। একারণেই অতীতের কুসংস্কার দূর করে বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ গঠন করা যাচ্ছে না। কারণ, মানুষ তো বিজ্ঞান বা দর্শন পড়েই না, চিন্তা করা তো দূরের কথা।
তাই মানুষের চিন্তাধারা গঠিত হয় তার সমাজ ও রাষ্ট্র দ্বারাই। অধিকাংশ মানুষই স্রোতে ভেসে যায়। যারা গভীরভাবে চিন্তা করে তারাই স্রোতের প্রতিকূলে যাওয়ার সাহস করে।
বিবেক সবারই আছে, কিন্তু সেই বিবেককে বোধহয় অধিকাংশই খাটায় না। খাটালে পৃথিবীতে হিটলারের মত নরঘাতক বিকশিত হতে পারত না।

নাৎসিরা বোধহয় জার্মানদের মধ্যে একটা শ্রেষ্ঠত্ব ও ঘৃণা জাগিয়ে তুলতে পেরেছিল। নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব আর ইহুদিদের প্রতি ঘৃণা। অধিকাংশই এই স্রোতে ভেসে গেছে। কিন্তু অস্কার শিন্ডলারের মত অনেকে ঠিকই স্রোতের প্রতিকূলে চলেছেন। অবশ্য এদের সংখ্যা অনেক কম।

পুতুল এর ছবি

"কিন্তু অস্কার শিন্ডলারের মত অনেকে ঠিকই স্রোতের প্রতিকূলে চলেছেন। অবশ্য এদের সংখ্যা অনেক কম।"

হ্যা ঠিক বলেন শিক্ষানবিস, আসলে এদের সংখ্যা কম হলেও বিশেস করে হিটলারের বিরোদ্ধে আত্মঘাতি/অন্তরঘাত মূলক হত্যা চেষ্টা কিন্তু অনেক। হয়তো ঘৃনিত হতেই এতগুলো হত্যাচেষ্টা হিটলারের বিরোদ্ধে সফল হয়নি।

**********************
কাঁশ বনের বাঘ

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

শিক্ষকদের কি যথাযথভাবে ব্রিফ করা হয়েছে যে ৩০০-৪০০ ভোল্টের বিদ্যুত শক কতটা ভয়াবহ হতে পারে, মানুষ যে বাঁচবেনা, এগুলো?
নাকি ধরে নেয়া হয়েছে যে পরীক্ষায় অংশ নেয়া শিক্ষকেরা বৈদ্যুতিক শক সম্পর্কে সম্যক ধারনা রাখেন?

মূল কথা, উত্তর দিতে না পারলে বৈদ্যুতিক শক দিতে হবে বলে ৪৫ ভোল্টের শক দিয়ে কি তাদের মনের ভেতর অবচেতনভাবে
"বৈদ্যুতিক শক তেমন বড়সড় ব্যাপারনা" এরকম কিছু ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে কিনা প্রশ্ন জাগে।

তবে স্ট্যানফোর্ডের কারাগারের কাহিনীটা আসলেই আশ্চর্যজনক!
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

রাগিব এর ছবি

৪৫ ভোল্টের শকও কিন্তু কম না। ১২ ভোল্টের ব্যাটারি থেকে শক নিয়েই দেখুন, কী ভয়াবহ লাগে। আর ২০০-৩০০ ভোল্ট যে ভয়াবহ শক, তা তো কমন সেন্সেই আসে, তাই না? আর এর সাথে যুক্ত হলো ছাত্রের ব্যথার মরণ চিৎকার। কাজেই এক্ষেত্রে শিক্ষকেরা পুরো জেনে বুঝেই কাজ করেছে ধরে নিতে পারি।

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
http://www.ragibhasan.com

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

দিগন্ত এর ছবি

আমার লাগানো ভিডিওটা দেখতে পারেন, ওটাতে আছে শিক্ষকদের আগে থেকেই বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে শক কেমন লাগে।


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

আপনার দেয়া ভিডিও লিংকটা দেখে সন্দেহটা আরো ঘনীভূত হলো .... তিনশো ভোল্টের শক দেয়ার পর একজন প্রতিবাদ করে পরীক্ষকের কাছে যখন শুনলো ব্যাপারটা শুধু পেইনফুল, হার্মফুল না, পারমানেন্ট ড্যামেজ হবেনা, তখনই সে আবার কন্টিনিউ করলো।

এখানেই সমস্যাটা, টিচারদের কারো পরিস্কার ধারনা নেই যে কত ভোল্টের শক কতক্ষণ দিলে কি ঘটতে পারে ,,, তবে দেখুন তারা পার্মানেন্ট ড্যামেজের ব্যাপারটা বারবার তুলে আনছে

এখানেই মোরশেদ ভাইর কমেন্টটার গুরুত্বটা আসে যে একটা মার্জিন অবশ্যই টানা আছে ...সেটাকে এখানে আমরা হার্মফুল/ড্যামেজ এসব দিয়ে টানতে পারি

যেমন ধরুন, আমার ধারনায় (যদিও ৩০০ ভোল্টের শক খাইনি), ৩০০ ভোল্টের শক খাওয়া মানে মরে যাওয়া ,,, খুব অল্প সময়ের জন্য হলেও শরীরের যে অংশে যাবে সেটা পুড়ে কয়লা হয়ে যাবার কথা ,,,, এটা কারো হাতে ছুরি দিয়ে একটা ঘাই দেয়ার চেয়ে বেশী মারাত্মক ,,,,

সেখানেই প্রশ্নটা আসে, টিচারদের যদি বলা হতো যে একবার ভুল উত্তরের জন্য লারনারের পাছায় একটা করে ছুরির ঘাই দিয়ে আসতে, তারা কি কেউ যেতো? আমার মনে হয়না।

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

পলাশ দত্ত এর ছবি

প্রিয় পোস্টে এ্যাড করলাম। পড়ার মতো মানসিক শক্তি এখন নাই।

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

s-s এর ছবি

খুব ই ভয়ঙ্কর ব্যাপার।

ভেরি ডিস্টার্বিং, যদি সত্যি হয়।

ভেরি,ভেরি ডিস্টার্বিং।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

নৈতিকতা’ একটি অস্পষ্ট ধারনা মাত্র যা আবহাওয়ার মতো দ্রুত বদলে যায় ।

-অরুন্ধতী রায় ।

তবে আমার নিজস্ব বিবেচনা-কিছু কিছু বিষয়ে মানবজাতি এক্সপেরিমেন্টাল লেভেল পেরিয়ে এসেছে যেমন নৈতিকতা । নৈতিকতা বিষয়ে একটা সার্বজনীন সিদ্ধান্তে আসার মতো যথেষ্ট ম্যাচিওরিটি কি মানুষের এখনো আসেনি?

দাসপ্রথা একসময় মানুষের কাছে অনৈতিক মনে হয়নি । একটা উদাহরন দিতে বাধ্য হচ্ছি( দুঃখিত যদি কারো ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে)- ইসলামের প্রথম যুগেই মদ্যপান কে একেবারে হারাম ঘোষনা করে দেয়া হয়েছে কিন্তু দাসপ্রথাকে কিন্তু স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করা হয়নি যদি ও নানাভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে । প্রশ্ন উঠতে পারে- তুলনামুলক মানদন্ডে কোনটা বেশী অনৈতিক? মদ খাওয়া নাকি দাসপ্রথা?

যৌন নির্যাতন এক সময়ের মানুষের কাছে অনৈতিক ছিলোনা । দুই গোত্রের যুদ্ধ হলে নারীদের লুটে নেয়া তখন স্বাভাবিক ছিলো ।

আজকে কিন্তু ইউনিভার্সেল একটা জায়গায় আমরা এসে গেছি যখন- দাসপ্রথা,যৌন নির্যাতন এগুলোকে স্পষ্টভাবেই সকল মানুষ অনৈতিক বলে মেনে নিচ্ছে ।

ঠিক একই রকম ভাবে শারীরিক নির্যাতন ও অনৈতিক বিবেচিত হওয়া উচিত আদেশ, আনুগত্য,বিবেকের সীমারেখা পেরিয়ে ।

আর যুদ্ধাপরাধ? যুদ্ধ নিজেই তো একটা অনৈতিক বিষয় ।

রাগিব কে ধন্যবাদ একটা মাইন্ডব্লোয়িং পোষ্টের জন্য ।
-------------------------------------
"শিয়রের কাছে কেনো এতো নীল জল? "

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

রণদীপম বসু এর ছবি

তাহলে কি সেই কথাটাই ঠিক, অরিজিনালী মানুষ আসলে একটা হিংস্র পশুই ? শিক্ষা, দর্শন, সামাজিকতা, আইন ইত্যাদি একটা মুখোশের মতো বা প্রলেপের মতো আঠা হয়ে বসে থাকে তার অবয়বে। কোনভাবে সেই আঠাটা আলগা হলেই আসল চেহারার মানুষ বা পশুর রূপটি বেরিয়ে আসে।

প্রসঙ্গ ও বিষয় হিসেবে দুর্দান্ত পোস্ট হয়েছে। এরকম লেখা আরো আরো চাই।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

জিফরান খালেদ এর ছবি

এইটাই মাথায় ঘোরে। হবস বেটাই তাইলে ঠিক?

পরিবর্তনশীল এর ছবি

কেন যেন বিশ্বাস হচ্ছে না। বিশ্বাস হচ্ছে না। মানুষ!!!
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

খুবই ইন্টারেস্টিং লেখা। দারুন লাগল। স্ট্যানফোর্ড প্রিজন এক্সপেরিমেন্ট সম্পর্কেও লিখে ফেলুন সময় পেলে।
__________________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?

রানা মেহের এর ছবি

খুব ইন্টারেস্টিং লেখা।
ভালো লাগলো
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

দিগন্ত এর ছবি

একটা বর্তমান উদাহরণ নিজের চোখে দেখে নিন, যারা ইউটিউব দেখার মত ব্যান্ডুইথ পাবেন নিজের ঘরে (১০ মিনিটের ভিডিও)


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- ইন্টারেস্টিং লেখা। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কেনো এমন নির্দয় আদেশ দেয় তার কারণ জানার কোনো উপায় নেই?
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

দিগন্ত এর ছবি

স্ট্যানফোর্ড প্রিসন এক্সপেরিমেন্ট নিয়ে ভিডিওটা দেখুন (প্রিন্ট টা পুরোনো কিন্তু মাত্র ৫ মিনিটের ভিডিও) -


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

চমৎকার বিষয়, চমৎকার লেখনী! বিরাট একটা কমেন্ট করবে ভেবে বসলাম। এর মাঝে একটা ফোন এসে মনটা খারাপ করে দিল।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

হিমু এর ছবি

দুর্ধর্ষ পোস্ট।


হাঁটুপানির জলদস্যু

তানবীরা এর ছবি

রাগিব, জানতামই না এরকম কিছুও আছে। খুব ভালো জিনিস নিয়ে লিখেছেন।
আমরা আসলে বেশীর ভাগ লোকজনই সুযোগের অভাবে ভদ্রলোক। হালকা বাতাসে মুখোশ খুলে যায়।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

রাগিব এর ছবি

আসলেই ... এরকম কিছু যে আছে, বিশ্বাস হতে চায় না। কিন্তু যখন বসনিয়ার কথাটা ভাবি, নিতান্ত সাধারণ মানুষই সেখানে অমানবিক সব যুদ্ধাপরাধ করেছে অনায়াসে - তখন মনে হয়, মিলগ্রামের এক্সপেরিমেন্টটা ঠিকই দিয়েছে।

আর পোস্টের শেষে দেয়া ফোন স্ক্যামের লিংকটা দেখুন, এটা কিন্তু গত কয়েক বছরে অনেকবার হয়েছে। ওটা নিয়েই অনেক লেখা যায় ... বিশ্বাস হতে চায় না, কেবল ফোনে কেউ বলছে বলেই মানুষ এরকম অত্যাচার করতে পারে।

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
http://www.ragibhasan.com

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

তানভীর এর ছবি

এই এক্সপেরিমেন্টের উপর সিএনএন না কোথায় একটা ডকুমেন্টারি দেখছিলাম মনে পড়তেছে। কিন্তু জিনের বাদশা যেটা বলল আমারো সেটাই মনে হয়েছে- শকের ভয়াবহতা কী রকম হতে পারে, সেটা সম্পর্কে আসলে বোধহয় কেউ বুঝে উঠতে পারে নাই। আড়ালে সাউন্ড দেয়া এক জিনিষ, আর সামনা-সামনা ভয়ংকর কিছু ঘটতে দেখা অন্য জিনিষ। আর এরা সবাই নির্দোষ কিছুতে অংশ নিচ্ছে সেটা ভেবেই হয়তো প্রথমে এখানে এসেছিল। এরকম কিছু ঘটতে পারে সেটার জন্য তারা মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিল না। একটা লোক যখন এটাকে অপরাধ হিসেবে জানবে তখন তার রিএকশ্যান ডেফিনেটলি অন্যরকম হবে। যখন একটা লোক জানে যে সে নির্দোষ কিছুতে অংশ নিচ্ছে এবং তদারকির জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ আছে তখন তার কাছে ব্যাপারটাকে ভয়াবহ মনে না হওয়াই তো স্বাভাবিক।

এ গবেষণার রেজাল্টের ভিত্তিতে হঠাৎ অন্য একটা প্রশ্ন মাথায় আসল- এখন রাজাকাররা যদি বলে- 'আমরা আসলে পাকি হুজুরদের আজ্ঞাবহ ছিলাম, কি করেছিলাম আসলে বুঝতে পারি নাই'- তাহলে কি তাদের দোষগুলা মাফ হয়ে যাবে? যুদ্ধ বিশেষ করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অপরাধ ও হিংস্রতা বিষয়ে ইদানীং কিছু লেখা পড়ছি। সেখানে বিভিন্ন গবেষক ও মনোবিদরা বলছেন- যুদ্ধকালীন অবস্থা এমনই যে এ সময় একই মানুষ একই সাথে মানবিক ও অমানবিক আচরণ করতে পারে। কোন বিশেষ পরিস্থিতিতে যেমন সে দয়ালু আচরণ দেখাতে পারে, আবার অন্য কোন বিশেষ পরিস্থিতিতে সেই সাধারণ মানুষই হিংস্র হয়ে উঠতে পারে। কাজেই মানুষের অপরাধকে কেইস বাই কেইস বা পরিস্থিতি অনুযায়ীই বোধহয় বিবেচনা করা উচিত। হাতুড়ে হিসেবে এই আমার অভিমত হাসি

= = = = = = = = = = =
ঊষার দুয়ারে হানি আঘাত
আমরা আনিব রাঙা প্রভাত
আমরা ঘুচাব তিমির রাত
বাধার বিন্ধ্যাচল।

দিগন্ত এর ছবি

এগুলো মানুষেরা ট্রাইবাল কালচারের অঙ্গ। মানে মানুষ যখন ছোটো ছোটো গোষ্ঠী হিসাবে বসবাস করত তখন নেতার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা দলের মধ্যে বেঁচে থাকার একটা ভাল হাতিয়ার ছিল। স্বাভাবিকভাবেই, অন্ধের মত অথরিটি অনুকরণ করাও মানুষের মজ্জাগত হয়ে গেছে। আমি খুব জানতে ইচ্ছুক একইরকম পরীক্ষা জংগলের উপজাতিয়দের মধ্যে কি রেজাল্ট দেয়। তবে তাদের মত করে পরীক্ষাটা ঠিকঠাক সাজাতেও হবে।


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

অতিথি লেখক এর ছবি

কয়েক বছরের ভার্চুয়াল ফোরামের অভিজ্ঞতায় বলতে পারি-
খুব সাধারণ সংসারী সন্তানপালনকারী স্নেহময় মানুষদের দেখেছি ভিন্ন মতের মানুষের উপরে ভয়াবহ হিংস্র হয়ে উঠতে,নিজের মতে দল জোটাতে আর সেই বিপরীতপক্ষীয় একলাকে ভার্চুয়াল গণধোলাই দিতে। অবাক কান্ড হলো অন্যরা যারা এটাকে অন্যায় মনে করে তারা নীরব থাকে, একলা মানুষের পাশে দাড়ায় না, পরে সাফাই দেয় "দলছুট" হতে তার ভয়।
হয়তো আমরা মনে মনে আজো সেই পাথরযুগের মানুষই, "দলছুট" হতে যার ভয়।

ধূসর মানব [অতিথি] এর ছবি

'আমরা আসলে পাকি হুজুরদের আজ্ঞাবহ ছিলাম, কি করেছিলাম আসলে বুঝতে পারি নাই'- তাহলে কি তাদের দোষগুলা মাফ হয়ে যাবে? যুদ্ধ বিশেষ করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অপরাধ ও হিংস্রতা বিষয়ে ইদানীং কিছু লেখা পড়ছি। সেখানে বিভিন্ন গবেষক ও মনোবিদরা বলছেন- যুদ্ধকালীন অবস্থা এমনই যে এ সময় একই মানুষ একই সাথে মানবিক ও অমানবিক আচরণ করতে পারে।

অদ্ভুত অদ্ভুত কিছু জিনিস ঘুরছে মাথায়

১। মাও বিপ্লব যদি ব্যার্থ হত, আমরা কিভাবে দেখতাম উনাকে?
২। কিংবা সফল হলো নকশালরা? ইতিহাস কেমন হত?
৩। শান্তিবাহিনী সফল হল? তাদের ইতিহাসে কিভাবে আসবে বাংলাদেশ?
৪। বাংলাদেশে বসবাসরত পাকিস্তানিরা (বিহারী) লিখে ফেল্লো ৭১ এর কিছু কথা। আমাদের কথা কিভাবে লিখবে তারা?
৫। রবিন্দ্রনাথের অথবা হুমায়ুনের “আমার ছেলেবেলা” লিখল তাদের বাসার কাজের ছেলে অথবা মেয়েরা। কেমন হত সেসব?

রাগিব এর ছবি

এরকম What If analysis নিয়ে লেখার কথাটা বেশ কয়েক দিন ধরে মাথায় ঘুরছে। Butterfly effect এর মতো ছোট ছোট ঘটনা ইতিহাসকে ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত করে। অন্য কিছু যদি হতো তাহলে ইতিহাস কীরকম পালটে যেতো, সেটা আসলে ভাববারই মতো।

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
http://www.ragibhasan.com

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

ধূসর মানব  [অতিথি] এর ছবি

লিখে ফেলুন, একটু সময় লাগলে লাগুক, লিখে ফেলুন। আচ্ছা হিটলার যদি রাশিয়ার পিছনে না লাগত, কিংবা জাপান যদি পার্ল হারবার আক্রমন না করত, তাহলে কি হত?

দূর এইটা নিয়া আর চিন্তা করব না

এক্জন এর ছবি

রাগিব ভাই
চমতকার লেখা।

এক্জঅন মানুষ কে যদি সব রকম authority দেয়া হয় যার কুন দায় তার নেই ,তাহলে সে কতখানি ভয়ন্কর হতে পারে? ধরুন মিলগ্রামের পরীক্ষাটিতে পরীক্ষকের ভুমিকাতে এক্জন সাধারন মানুষকে বসান হলে? এরকম কন পরীক্ষা কি হয়েচে?
আর লেখা আশা করি।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এক্ষেত্রে মনে হয় আদেশকারী একটা ফ্যাক্টর। গবেষনার আদেশকারী আর সেনাবাহিনীর কমাণ্ডারের আদেশের মধ্যে তফাত হবে। আবার কোনো মতাদর্শবাদী দলের নেতার আদেশের কার্যকরিতাও অন্যরকম হবে। নেতার নির্দেশে শুধু অন্যকে ধ্বংশ না... নিজেকে ধ্বংশ করার রেওয়াজও তো কম নাই।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

এক্জন এর ছবি

@নজরুল ভাই
সাধারন ভাবে আমার আপনার মতই মনে হছে। কিনতু যদি সে রকম সুযোগ পায় , তাহলে সাধারন মানুষ কতখানি violent হতে পারে। আমি আশা করি সেই পরীক্ষার ফলাফল মিলগ্রামের পরীক্ষার মত হবে না।

শামীম এর ছবি

তানভীর ভাইয়ের মন্তব্যের পাশাপাশি আরেকটা বিষয় চিন্তা করে অবাক লাগে,

শিবির দলটা এই পরীক্ষণের ফলাফলটা নিজেদের অনুকুলে ব্যবহার করছে। প্রথমে মিষ্টি কথা দিয়ে কর্মীদেরকে কমান্ড মেনে চলার অভ্যাস করাচ্ছে। তারপর যখন ওগুলো চোখে ঠুলি পড়া আজ্ঞাবহ প্রাণীতে পরিণত হয় তখন রগ-কাটা বা এর চেয়ে ভয়াবহ কাজ করিয়ে নেয়।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

Fahad Faisal  এর ছবি

হয়ত আপনাদের এই সেদিনের কথা মনে আছ!!! আওয়মীলীগের আক্রমণাত্লক লগি বৈঠা মিছিলে বি এন পি + জামাতের পাশবিক আচরন। কতজন ছিল সাধারন জনগন এবং কতজন ছিল প্রশিক্ষিত আমি জানি না কিন্তু ফলাফল ভয়াবহ। আমরা কিভাবে দলবদ্ধভাবে মানুষ হত‌্যা করতে পারি তা জানার জন্য অন্যকারো পরিক্ষা নিয়ে গবেষণা না করে নিজেদের নিয়ে গবেষণা করলে হয়ত নিজেদের সচেতন হবার মত কিছু বের হতে পারে। আমরা কবে একে অপরের প্রতি সহমর্মি হব আল্লাহই জানেন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।