| শ্রদ্ধেয় রাহাত খান, এভাবেও মিথ্যাচার করা যায় !

রণদীপম বসু এর ছবি
লিখেছেন রণদীপম বসু (তারিখ: মঙ্গল, ২২/০৩/২০১১ - ১০:০৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা নন’- ১৯ মার্চ ২০১১ তারিখের দৈনিক কালের কণ্ঠে এরকম শিরোনামের একটা উপসম্পাদকীয় কলামে চোখ পড়তেই চমকে ওঠলাম ! আরো চমক অপেক্ষা করলো যখন লেখক হিসেবে এটাতে স্বনামখ্যাত সাহিত্যিক সাংবাদিক শ্রদ্ধেয় রাহাত খানের নাম দেখলাম ! (প্রিয় ব্লগেও রাহাত খানের একই লেখার লিংক এখানে) যিনি একজন বিশিষ্ট সাহিত্যিক তো বটেই, তার ওপর দৈনিক ইত্তেফাক-এর মতো সমৃদ্ধ ও দীর্ঘ ঐতিহ্যবাহী একটি পত্রিকায় যিনি অনেকদিন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ফলে এতোকালের প্রতিষ্ঠিত একটি সত্যকে দুমড়ে দেয়া শিরোনামের এরকম একটি লেখা পড়ার আগেই নিজস্ব ভাবনা-রাজ্যটা যে দুলে ওঠবে ভীষণ তা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে ! কিন্তু লেখাটা পড়ার পর সেই দুলুনিটা ঠেকলো গিয়ে আমাদের কথিত বিজ্ঞবানদের নিজেদের যা কিছু ইমেজ তা হাস্যস্পদ করে সুকৌশলে ভিত্তিহীন অভিযোগের মাধ্যমে অন্য কোন সম্মানিত নাগরিকের ইমেজ ধ্বংসের বিকৃত সুচতুরতা দেখে। এটাকেই হয়তো বলে নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রাভঙ্গ করা। সমাজের মানী ব্যক্তিদের মধ্যে এই অভ্যস্ততা দেখে আমরা সাধারণ নাগরিকরা যে কতোটা হীনম্মন্য হয়ে পড়ি তা হয়তো তাঁরা ভেবে দেখারও প্রয়োজন মনে করেন না। এভাবে আমাদের শ্রদ্ধা জানানোর তালিকা থেকে তাঁরা তাঁদের নামটাকে ধুসর করে দিয়ে আমাদের মনোজগতে যে অমোচনীয় দাগ কেটে দেন সেটা তাঁরা মুছবেন কী করে ! আবারো মনে পড়লো শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সেই বিখ্যাত পঙক্তিটার কথা- ‘দেখায় বড়র মতো, বড় নয় কেউ।’
.

[ছবি: ১৪ অক্টোবর ২০০৬: শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তি ঘোষণার পর ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ড. ইউনূস ও অন্যান্য]
.
শুনেছি রাম জন্মের ষাট হাজার বছর পূর্বেই নাকি রামায়ণ রচিত হয়। রামায়ণে বর্ণিত এই কথাটা সংশ্লিষ্ট বিশ্বাসীরা হয়তো কায়মনোবাক্যেই বিশ্বাস করেন। বিশ্বাসের কাছে যুক্তি কোন্ ছাই ! কেননা দেবর্ষি নারদই যখন বাল্মীকিকে আশ্বস্ত করেন এই বলে যে- তুমিই রচিবে যাহা তাহাই সত্য, অন্য কিছু নয় ! তখন তো আর বিশ্বাস না করে জো নেই ! সর্বশক্তিমান প্রভু চাইলে কী না করতে পারেন ! অতএব যা হবার তা-ই হলো, আমরা বিশ্বাস করে নিলাম যে রামায়ণ-বর্ণিত কাহিনী অনুযায়ী ভারতের অযোধ্যায় রাম জন্ম নিলেন, একদিন পাকেচক্রে তিনি সদলে বনবাসে গেলেন এবং ঘটনাপরম্পরায় রাম-রাবণের যুদ্ধও সংঘটিত হলো। অবশেষে রাম তার অবতারসুলভ ক্ষমতার প্রয়োগ ঘটিয়ে রামরাজ্যের প্রতিষ্ঠা করে ফেললেন। এখন সেই রামও নেই আর সেই অযোধ্যাও নেই। অথচ এই সাহিত্য-ফেলাচিটা রামায়ণ বিশ্বাসীদের কেউ একবার ভেবে দেখারও প্রয়োজন বোধ করলেন না যে, রামায়ণের রচনাকাল থেকে ষাট হাজার বছর আসলে কতদূর ! রামায়ণের কথা যদি সত্যিই হয়, তাহলে আদৌ কি রাম এখনো জন্ম নিয়েছেন, কিংবা আরো কতো হাজার বছর পর রামের জন্ম নেয়ার কাল ঘনিয়ে আসবে ?

এক হিসেবে এই বিশ্বাসীদের দোষ দেয়ার কোন সুযোগ নেই যতক্ষণ না রামায়ণের রচনাকাল থেকে ষাট হাজার বছর অতিক্রম করে এর সত্যাসত্য যাচাই করার সুযোগ পাই আমরা। সে পর্যন্ত ওটাকে নাহয় সে-যুগের কল্পবিজ্ঞান সাহিত্য হিসেবেই বিবেচনায় রাখি ? কিন্তু যে ঘটনা আগেই ঘটে গেছে এবং এরপর পৃথিবীর নদীগুলোয় অনেক পানিও গড়িয়ে গেছে তা পাল্টানোর ক্ষমতা কি স্বয়ং বিধাতাও রাখেন ? এটাকেই আমরা ইতিহাস বলি। কিন্তু বিধাতা সে ক্ষমতা না রাখলেও বাঙালির সে ক্ষমতা যে বহু আগেই অর্জিত হয়ে গেছে তা বোধ করি এখন আর কেউ অস্বীকার করবেন না। নইলে ওঠতে-বসতে বাংলায় ইতিহাস-বিকৃতি নামক শব্দযুগলের হরদম ব্যবহারে আমাদেরকে প্রতিনিয়ত নাজেহাল হতে হতো না। এখন আমাদের মহান স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে বিতর্ক হয়, সংশ্লিষ্ট জনদের মৃত্যুর পর স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে বিতর্ক হয়, মুক্তিযোদ্ধা-রাজাকার নিয়ে, সুশীল-অশীল নিয়ে বিতর্ক হয়, ইত্যাদি কতকিছু ! এবার এর সাথে আরেকটি বিষয় যুক্ত হলো, গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠাতা বিতর্ক।
.

[ছবি: ১৪ অক্টোবর ২০০৬: শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তি ঘোষণার পর ঢকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় ড. ইউনূসের পাশে বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্ণর ড. আতিউর রহমান ও অন্যান্য]
.
প্রফেসর ইউনূসকে নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বহু বিতর্ক রয়েছে। যে যার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই এ বিতর্কে পক্ষাবলম্বন করেন। কেউ রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে, কেউ অরাজনৈতিক দৃষ্টিতে, কেউ কর্পোরাল ভঙ্গিতে, কেউবা অর্থনৈতিক দৃষ্টিতে দেখেন। আবার কেউ দেখেন সামাজিক দৃষ্টিতে। এটা যার যার নিজস্ব চিন্তা-চেতনা, দায়বোধ ও নাগরিক অধিকারের ব্যাপার। যে যার মতো করে দেখতেই পারেন। মতামত প্রকাশ করার অধিকারও তিনি ধারণ করেন। তবে তা অবশ্যই বস্তুনিষ্ঠ তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই হতে হয়। কিন্তু কেউ যদি এসবের তোয়াক্কা না করে ইচ্ছাকৃতভাবে তথ্য বিচ্যুতি বা বিকৃতি ঘটিয়ে প্রকাশ্যে অন্য নাগরিকের প্রতিষ্ঠিত ইমেজ ধ্বংস করার বিতর্কে নামেন, তাহলে তাঁর উদ্দেশ্য সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করাও নাগরিক অধিকারের পর্যায়ে পড়ে। শ্রদ্ধেয় রাহাত খানের লেখাটি পড়ে ধারণা করছি তিনি সেরকম একটি খারাপ দৃষ্টান্ত রাখার ভূমিকাতেই অবতীর্ণ হয়ে তাঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধার আসনটিই টলিয়ে দিতে বসেছেন। কেননা ড. ইউনূস সম্পর্কে তাঁর মনগড়া ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে তিনি বস্তুনিষ্ঠতা হারিয়ে যেভাবে উদ্দেশ্যমূলক ইতিহাস বিকৃতির পরাকাষ্ঠা দেখালেন তাতে করে তাঁর মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা তো হারালোই, গোটা লেখাটাই একটা অন্তঃসারশূন্য বিকৃত বাগাড়ম্বরে পরিণত হয়েছে।
.

[ছবি: ১৪ অক্টোবর ২০০৬: শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তি ঘোষণার পর সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনে ড. ইউনূস ও অন্যান্য]
.
পাঠকের অবগতির জন্য জানিয়ে রাখা বাঞ্ছনীয়, এ লেখার উদ্দেশ্য ড. ইউনূস বন্দনা নয় বা তাঁর সম্পর্কে আমার অবস্থান উপস্থাপন করাও নয়। এবং কাউকে অসম্মান করাও এ লেখার উদ্দেশ্য নয়। বরং বস্তুনিষ্ঠতার অভাব ও উদ্দেশ্যমূলক তথ্যবিকৃতির মাধ্যমে কিভাবে রাহাত খানের মতো একজন বিশিষ্ট ব্যক্তির লেখাও বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে ফেলে তা দেখানো। কেননা তাঁর লেখায় যেভাবে ভুল ম্যাসেজ দেয়া হয়েছে তাতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের তথ্য অনভিজ্ঞ পাঠক যে নিমেষেই বিভ্রান্ত হয়ে ভুল তথ্য ও ধারণা লালন করবেন তা তিনিও জানবেন না। তথ্য জানার অধিকার যেমন সবার রয়েছে, তেমনি তথ্যবিকৃতিকারীকেও তার দায় নিতে হয়।

জনাব রাহাত খান তাঁর লেখায় ড. ইউনূস বিষয়ক আমাদের এতোকালের জানা সত্যকে মাটিচাপা দিয়ে একটি সিদ্ধান্ত টেনে ফেলেছেন এভাবে-

‘তবে একটি ভুল তথ্য তাঁর ওপর আরোপ করা হয়। বলা হয়, তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা। কথাটা সত্য নয়। ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশ সরকার। দেশের প্রচলিত আইন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রবিধান ও তদারকির আওতায় একটি বিশেষায়িত ব্যাংক হিসেবে ১৯৯০ সালে এর প্রতিষ্ঠা। ড. ইউনূসকে প্রতিষ্ঠাতা ম্যানেজিং ডাইরেক্টর পর্যন্ত বলা যেতে পারে। তবে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা তিনি নন কোনোক্রমেই।’

রাম-রহিম-যদু-মধু কেউ যদি উপরোক্ত কথাগুলো বলতো তাহলে হয়তো আমরা পাগলের প্রলাপ ভেবে হেসেই উড়িয়ে দিতাম। কিন্তু এই কথাগুলোই যখন একজন রাহাত খান বলেন তখন তা আর হেসে উড়িয়ে দেয়ার উপায় থাকে না। কেননা উপরোক্ত কথাগুলোর পরই তিনি পরবর্তী বাক্যবিন্যাসে এটাই বুঝাতে চেষ্টা করেছেন যে একজন সাধারণ ম্যানেজিং ডাইরেক্টর হিসেবে ড. ইউনূসকে অপসারণ কতোটা যুক্তিসঙ্গত। তাঁকে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে স্বীকার করে নিলে রাহাত খানের পরবর্তী কথামালা অসার হয়ে যায় ! অতএব কোনভাবেই প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে স্বীকার করে নেয়া চলবে না। ফলে তিনি সুকৌশলে একটি কাল্পনিক বানোয়াট তথ্য দিয়েই তাঁর কথা টেনেছেন। অর্থাৎ তিনি নিজেই আরেকটি নতুন ইতিহাস রচনা করে ফেললেন ! জনাব রাহাত খান বলবেন কি তিনি কোথায় এ তথ্য পেয়েছেন যে, গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা হয়েছে ১৯৯০ সালে ? সাহিত্যে কল্পনা মূখ্য হলেও ইতিহাসে কল্পনাবিলাসের স্থান নেই, এ কথাটা যদি সাহিত্যিক রাহাত খানকে অঙ্গুলিনির্দেশ করতে বলতে হয় তাহলে এর চাইতে দুর্ভাগ্য আমাদের আর কী আছে ! কাল্পনিক ইতিহাস রচনা করতে গিয়ে জনাব রাহাত খান হয়তো স্বেচ্ছায় ভুলে গিয়েছিলেন যে, ড. ইউনূসের অর্জিত বহু দেশি-বিদেশি পুরস্কারের মধ্যে একটি ছিলো ১৯৮৫ সালে প্রাপ্ত বাংলাদেশ ব্যাংক পুরস্কার। আর ১৯৮৪ সালে তিনি লাভ করেন ফিলিপাইনের রেমন ম্যাগসাসে পুরস্কার। নিশ্চয়ই ড. ইউনূসকে রামায়ণের কাহিনীর মতো গ্রামীণ ব্যাংকের জন্মের আগেই এ পুরস্কার দেয়া হয়নি।
.

[ছবি: ১৪ অক্টোবর ২০০৬: জাতীয় স্মৃতিসৌধের মন্তব্য বইয়ে লিখিত অনুভূতি ব্যক্ত করছেন নোবেল লরিয়েট ড. ইউনূস]
.
প্রকৃত তথ্য হচ্ছে, ১৯৮৩ সালের অক্টোবরে বিশেষ সংসদীয় অধ্যাদেশ বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে একটি বিশেষায়িত ও স্বতন্ত্র ব্যাংক হিসেবে গ্রামীণ ব্যাংক (Grameen Bank) প্রতিষ্ঠিত হয়। এবং তখনকার অর্থমন্ত্রী ছিলেন আমাদের বর্তমান অর্থমন্ত্রী মহোদয়ই। সময়ের কী পরিহাস ! প্রকৃতপক্ষে গ্রামীণ ব্যাংকের জন্ম তারও আগে, সেই ১৯৭৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্প হিসেবে। এ ব্যাপারে জানতে হলে প্রফেসর ইউনূসের (Dr. Yunus) কোন এক জন্মদিনে উইশ করে লেখা ‘আটাশে জুন, এক অভিনব মানুষ ড. ইউনূসের জন্মদিন’ শীর্ষক এই পোস্টটাতে ঢুঁ মারলে এক নজরে ড. ইউনূসের জীবন ও কর্ম ইতিহাসের একটা টাচ-লাইন পেয়ে যেতে পারেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে ড. ইউনূসকে নিয়ে উদ্দেশ্যমূলক কিছু বিতর্কের প্রেক্ষিতে প্রচলিত যে বিষয়গুলো নিয়ে অহেতুক পানি ঘোলাঘুলি চলতো তাঁর একটা আউট-লাইন দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে তাঁর অন্য এক জন্মদিনে পোস্ট করা এই ‘জন্মদিনের শুভেচ্ছা পোস্ট বনাম প্রফেসর ইউনূসকে নিয়ে উত্থিত প্রশ্নগুলো’ শীর্ষক লেখাটিতে। এছাড়া দুই বাঙালি নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন ও ড. ইউনূসের দারিদ্র্য দর্শনের একটা ছোট্ট তুলনামূলক আলোচনা রয়েছে এই ‘প্রফেসর ইউনূস ও অমর্ত্য সেন, ভিন্ন স্রোতে অভিন্ন মুখ’ শিরোনামের লেখাটায়। তবে হালের ২০মার্চ ২০১১এ দৈনিক প্রথম আলোয় বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহানের (Rehman Sobhan) ‘চাই রাষ্ট্র নায়কোচিত প্রজ্ঞা’ শিরোনামের গুরুত্বপূর্ণ এই লেখাটা বর্তমান প্রেক্ষাপটে একটি গভীর পর্যবেক্ষণ আমাদেরকে যথেষ্ট চিন্তার খোরাক দেবে বলে মনে হয়। জনাব রেহমানের এই লেখাটার সর্বক্ষেত্রেই একমত হতে হবে এমন কথা নেই, তবে এখান থেকে হয়তো আমরা আমাদের অজানা আরো অনেকগুলো তথ্য পেয়ে যেতে পারি।

সে যাক, আমরা পূর্বের আলোচনায় ফিরে আসি। কেউ হয়তো বলতে পারেন যে জনাব রাহাত খান (Rahat Khan) হয়তো ১৯৮৩ সালের জায়গায় ভুল করে ১৯৯০ লিখে ফেলেছেন। এটা বিশ্বাসযোগ্য হতো যদি তিনি এরপরও উদ্দেশ্যমূলকভাবে আরো কিছু তথ্যবিকৃতির আশ্রয় না নিতেন। তাঁর গোটা লেখাটিতে নিজের ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ তুলে ধরার নামে একজন প্রতিষ্ঠিত প্রবীন সাংবাদিক ও সাহিত্যিক হিসেবে নিজের নামের প্রতি বিন্দুমাত্র সুবিচার না করেই তিনি যেসব তথ্য উপাত্ত মুখস্থ বুলির মতো উগরে দিলেন সেখানে সাহিত্যিক বা সাংবাদিকসুলভ তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই না-করার আরেকটি কটু দৃষ্টান্ত বাড়ালেন শুধু। এই আকালের দেশে আমাদের শ্রদ্ধা রাখার তালিকাটা আরেকটু হ্রাসই করলেন তিনি। নইলে ড. ইউনূস সম্পর্কে এভাবে নিশ্চিত করে বলতেন না-

‘বাংলাদেশে তাঁর জন্ম, বাংলাদেশি বলে তাঁর পরিচিতি, অথচ আশ্চর্যের বিষয় ড. ইউনূস কোনো দিন, এমনকি নোবেলপ্রাপ্তির পরও বাঙালির গর্ব ও ঐতিহ্যের প্রতীক শহীদ মিনারে যাননি। কোনো দিন যাননি সাভারের স্বাধীনতা স্মৃতিসৌধে।’

.

[ছবি: কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে মিডিয়া ক্যামেরা ঘিরে রেখেছে নোবেল লরিয়েট ড.ইউনূসকে]

সাংবাদিকতার মহান পেশা যাঁর গৌরবময় অর্জনের তালিকায় শুধু নয়, ইত্তেফাকের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী পত্রিকার যিনি ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ছিলেন, তিনি কী করে এভাবে বেমালুম ইতিহাস হজম করে ফেলেন ! কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়। কিন্তু নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের মতো এতো বড়ো একজন ব্যক্তিত্ব যিনি দুনিয়া জুড়ে এই দেশ ও জাতির মুখ উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর করেছেন এবং করছেনও, তাঁর নামে গোয়েবলসীয় কায়দায় মিথ্যাচারের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে তাঁর চরিত্র হননের পেছনে রাহাত খানের মতো ব্যক্তির কী ফায়দা সেটাও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বৈকি। ২০০৬ এর ১৩ অক্টোবর এই জাতি যখন নোবেল পুরস্কারের মতো বিশাল সম্মানপ্রাপ্তির আনন্দে উল্লসিত, তার পরদিনই বাঙালির গর্ব ও ঐতিহ্যের প্রতীক শহীদ মিনার ও জাতীয় স্মৃতি সৌধে ড. ইউনূসের শ্রদ্ধা নিবেদনের সচিত্র প্রতিবেদন দেশের প্রধান প্রধান পত্রিকায় কি সেটা ফলাও করে প্রকাশিত হয়নি ? তা কি বাঙালি এতো সহজেই ভুলে যাবে বলে রাহাত খান মনে করছেন ! বাঙালি সম্পর্কে তিনি এই ধারণাই পোষণ করেন ! তিনি কিভাবে ভাবলেন যে ডজন ডজন মিডিয়া-ক্যামেরা ছাড়া আর কোন ক্যামেরা সেখানে যায় নি ! সেদিনের সাংবাদিক ভাইদের কাছেও আমার জানতে ইচ্ছে হয়, এতো এতো ক্যামেরার উৎপাতে আমরা কৌতুহলী যারা শুধু এক নজর কাছে থেকে দেখবার জন্যে ড. ইউনূসের ধারেকাছেও ঘেষতে পারিনি, সেইসব স্টিল ক্লিক ও ভিডিও ক্লিপগুলো কি শুধুই লোক দেখানো ছিলো ? আহা সেলুকাস !
এ ছাড়াও জনাব রাহাত খান আরেক জায়গায় লিখেছেন-

‘সমাজে সামান্য কিছু ক্ষেত্র ছাড়া যিনি গ্রামীণ ব্যাংকের উচ্চ হারের ক্ষুদ্রঋণে দারিদ্র্যমোচনে তেমন সফল হননি, যিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় গণহত্যাকারী পাকিস্তানের বিপক্ষে কোনো প্রতিবাদ জানাননি, আমেরিকায় নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে যিনি আত্মরক্ষায় সচেষ্ট ছিলেন, দেশের প্রাকৃতিক ও রাজনৈতিক বিপর্যয়ের সময় যিনি সর্বদা তাঁর নেপথ্যচারিতা ও নিষ্ক্রিয়তা রক্ষা করেছেন নির্লিপ্তভাবে- সেই তিনি, ব্যবসা-বাণিজ্যের শিরোমণি ড. মুহাম্মদ ইউনূস পেলেন শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার। শান্তি পুরস্কারের প্রতি নোবেল কমিটির এই দৃষ্টিভঙ্গিকে পরিহাস ছাড়া আর কী বলা যায়।’

তিনি নোবেল কমিটি ও পুরস্কার নিয়ে তাঁর পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করতেই পারেন, এ ব্যাপারে কোন বিতর্কে যাওয়া আমার কাম্য নয়। কিন্তু উপরিউক্ত উদ্ধৃতির সাথে তাঁর লেখার প্রথমোক্ত উদ্ধৃতিটুকু মিলিয়ে দেখলে বক্তব্যের স্ববিরোধীতা কি পাঠকের চোখে পড়ে না ? প্রথমেই তিনি কিন্তু ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে অস্বীকার করলেন। তাঁর মতানুযায়ী সরকারই এর প্রতিষ্ঠাতা এবং ড. ইউনূস সেখানে একজন বেতনভোগী এমডি। সেক্ষেত্রে তাঁর কথিত গ্রামীণ ব্যাংকের উচ্চ হারের ক্ষুদ্রঋণের আয় ও দায় কার কাঁধে বর্তায় সেটুকু কি তিনি খোলাশা করে বলবেন ? আসলেই কি গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণের সুদ উচ্চ হারের ? এ মুহূর্তে এটাও আমার বক্তব্যের লক্ষ্য নয়। আমার বক্তব্য স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় ড. ইউনূসের কার্যক্রম নিয়ে জনাব রাহাত খান যা বললেন তা নিয়ে। যদি বলি রাহাত খান অনেকটা না-জেনেই এ কথাগুলো বলেছেন, তাহলে আমাদের প্রিন্টিং মিডিয়ায় পত্রিকা-সম্পাদক হিসেবে রাহাত খানের যোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন উত্থাপন করা হবে। তাই এ কথা আমি বলছি না। কারণ আমি বিশ্বাস করি না যে রাহাত খান জানেন না ড.ইউনূস সেসময় আমেরিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা ফেলে রাতদিন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরিতে ব্যস্ত ছিলেন এবং পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে নিজের আঁকা ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুন সম্বলিত নিয়মিত একটি নিউজলেটার প্রকাশ করে গেছেন। কিভাবে বিশ্বাস করবো যে রাহাত খান জানেন না মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সেই নিউজলেটারগুলোর ভলিউম এখনো সংরক্ষিত আছে ? জাতীয় প্রেস ক্লাবের অদূরে সেই জাদুঘরে যাওয়ার সময় না হলে অন্তত সেখান থেকে একটা ভলিউম কাউকে দিয়ে কিনে আনতেও পারেন ! ভেবে আশ্চর্য হই, যে কালের কণ্ঠে রাহাত খানের উপসম্পাদকীয়টা ছাপা হলো এই মার্চ মাসে, এক বছর আগের আরেক মার্চে এই পত্রিকাতেই মগজ ধোলাই নামের ট্যাবলয়েডে মুক্তিযুদ্ধকালীন কার্যক্রম নিয়েই ড. ইউনূসের একটি সাক্ষাতকার যে ছাপা হয়েছিলো, সেটাও রাহাত খানের নজরে আসেনি তা বলি কী করে !
.

এই হতভাগা দেশে সাধারণ মানুষ কখনো ইতিহাস বিকৃত করে না, বিকৃত করে বিশিষ্ট জ্ঞানপাপী জনেরাই। কথিত আছে, উদ্দেশ্যমূলক এরকম তথ্যবিকৃতির কারণে এদেশে যেমন বহু মুক্তিযোদ্ধা ভিক্ষা করে বেড়ায়, তেমনি অনেক রাজাকারও মুক্তিযোদ্ধার লেবাস পরে দম্ভ করে বেড়ায়। রাহাত খান আজ মুক্তিযুদ্ধে ড. ইউনূসের ন্যূনতম ভূমিকাকেও যেভাবে অস্বীকার করলেন, তা অব্যাহত থাকলে আগামীতে তিনিই যে আরেক কাল্পনিক ইতিহাস ফেঁদে ড. ইউনূসকে রাজাকার যুদ্ধাপরাধী বানিয়ে বিচার চেয়ে বসবেন না তা বিশ্বাস করি কী করে ! এসব ঘটনার বাহুল্যে আমরা এখন আশ্চর্য হওয়ার ক্ষমতাও বোধ করি হারাতে বসেছি।

এই পোস্টের ফাঁকে ফাঁকে প্রামাণ্য হিসেবে কিছু সংগৃহীত ছবি জুড়ে দিলাম এজন্যেই যে, এসব ছবিই বলবে আমাদের সম্মানিত রাহাত খানরা কিভাবে নিজের প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠিত ইতিহাসও সুযোগে পাল্টে দিতে বিন্দুমাত্র কসুর করেন না। আমাদের শ্রদ্ধার জায়গাগুলো এভাবে বিলীন হয়ে যাক এটা চাই না বলেই এ প্রতিক্রিয়াটার জন্ম। ড. ইউনূস, গ্রামীণ ব্যাংক ও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা তর্ক-বিতর্ক চলছে দেশি-বিদেশি মিডিয়াগুলোতে। এসব হাইপোথিটিক্যাল আলোচনা-তর্কে যাওয়ার জন্যে বর্তমান পোস্ট নয়। কারণ টাইম ইজ দ্য বেস্ট টিচার। সময়ই একদিন কাউকে না কাউকে দিয়ে প্রকৃত সত্যটুকু খুঁড়ে খুঁড়ে তুলে আনবে। সে পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে বৈ কি। তবে সত্যকে অস্বীকার করে কোন অর্জনই যে আসলে অর্জন নয় এটা যেন আমরা কখনোই ভুলে না যাই।

পরিশেষে আবারও বলে রাখি, কোন রাম-শ্যাম-যদু-মধু যদি এই উদ্দেশ্যমূলক লেখাটা লিখতো তাহলে লেখাটাকে গুরুত্ব দেয়ার কোন আগ্রহ থাকতো না। কিন্তু রাহাত খানের মতো বিশিষ্ট একজন ব্যক্তি যখন এরকম ভুল তথ্য সম্বলিত লেখা বাজারে ছাড়েন তখন সেটাকে আর গুরুত্ব না দিয়ে উপায় থাকে না। কেননা সচেতন নাগরিক হিসেবে জেনেশুনে এরকম তথ্যবিকৃতি এড়িয়ে যাওয়া অপরাধ ভেবেই এই প্রতিক্রিয়াটা বাধ্য হয়ে লিখতে হলো। এই পোড়ার দেশে তথ্যবিকৃতির বিপজ্জনক ধারা রোধ হওয়া আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম ও তাদের সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার জন্যেই জরুরি এখন। আশা করি কেউ এটাকে কোনভাবেই ব্যক্তিবিদ্বেষ হিসেবে নেবেন না।

[ লেখাটি ব্যক্তিগত ব্লগ হ-র-প্পা তে প্রকাশিত ]


মন্তব্য

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

এ বিষয়ে রাহাত খানের বক্তব্য আশা করছি।

প্রয়োজনীয় পোস্ট রণ'দা। আপনি না লিখলে জানার উপায় থাকতো না। অনেক ধন্যবাদ লেখার জন্য। যদিও আগেই আপনার ব্লগে পড়েছি।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

রণদীপম বসু এর ছবি

হুমম রতন, আপেতাপে ক্যামেরায় শাটার টেপার একটা ফজিলত এবার টের পাওয়া গেলো। আরো ভালো যে কম্পুর কোঞ্চিপা থেকে ইতোমধ্যে ডিলিট করি নি বলে !
ধন্যবাদ। দেশে আসছেন কবে ?

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

তানভীর এর ছবি

চলুক

কালের কন্ঠ বোধহয় দৈনিক মতিকন্ঠকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবে 'সংবাদ বদলে দেবার' প্রতিযোগিতা শুরু করেছে চাল্লু রাহাত খানরা তাই উপ-সম্পাদকীয়তেও রম্য লেখা শুরু করেছেন। তবে তার এসব মিথ্যাচার নতুন না। একবার ইত্তেফাকে তিনি চোরাকারবারি প্রিন্স মুসা বিন শমসেরকে হিরো বানিয়েও কীসব রম্য লিখেছিলেন। এখন মনে হয় আরেক চোর প্রিন্সের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চালাচ্ছেন।

সাফি এর ছবি

মন্তব্যে লাইক

সাফি এর ছবি

তথ্য সম্বৃদ্ধ লেখা রণদা। মুক্তিযুদ্ধে ওনার ভূমিকা জানা ছিলনা। ব্লগের অত্যাচারে সাংবাদিকরা যে এখন কই যাবে!

রণদীপম বসু এর ছবি

একাধারে মাইক্রোস্পোপিক ও টেলিস্কোপিক ক্ষমতার সমন্বয়ে অন্তর্জালিক চোখ যে কতো তীক্ষ্ণ ও কার্যকর এখন, তা আমাদের সাংবাদিক ভাইয়েরা যত তাড়াতাড়ি বুঝবেন ততই মঙ্গল।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

ফাহিম হাসান এর ছবি

@ সাফি ভাই,

ব্লগের অত্যাচারে সাংবাদিকরা যে এখন কই যাবে!

চলুক

রণদীপম বসু এর ছবি

কালের কণ্ঠ ২১ মার্চ ২০১০ সংখ্যায় প্রকাশিত ড.ইউনূসের অনুসন্ধানী সাক্ষাৎকারের স্ক্যান কপি ফেসবুক থেকে শেয়ার করলাম নিচে:

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

অমিত এর ছবি

নিন্দা জানিয়ে গেলাম

ফাহিম হাসান এর ছবি

মুক্তিযুদ্ধে ড. ইউনূসের ভূমিকা সম্পর্কে জানা ছিল না। ধন্যবাদ।

ফাহিম হাসান এর ছবি

যে কালের কণ্ঠে রাহাত খানের উপসম্পাদকীয়টা ছাপা হলো এই মার্চ মাসে, এক বছর আগের আরেক মার্চে এই পত্রিকাতেই মগজ ধোলাই নামের ট্যাবলয়েডে মুক্তিযুদ্ধকালীন কার্যক্রম নিয়েই ড. ইউনূসের একটি সাক্ষাতকার যে ছাপা হয়েছিলো, সেটাও রাহাত খানের নজরে আসেনি তা বলি কী করে !

গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

দ্রুত চোখ বুলিয়ে গেলাম। স্মৃতিসৌধ বা শহীদ মিনারের যাওয়ার বিষয়টা নিয়ে রাহাত সাহেব কেন মিথ্যাচার করলেন তা বুঝতে ব্যর্থ হলাম। কারণ এধরনের মিথ্যাচার সহজেই ধরা পড়ে।

রণদীপম বসু এর ছবি

শ্রদ্ধেয় রাহাত খানের সবেধন প্রিন্টিং যুগ থেকে যে এ প্রজন্মের ইন্টারনেট-যুগ অনেক এগিয়ে গেছে এবং তাঁদের চোখে যে অন্তর্জালিক পাওয়ার যুক্ত হয়ে গেছে, সেটা বোধ করি তিনি শুনলেও কখনো বোঝার বা জানার চেষ্টা করেন নি।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

একজন পাঠক এর ছবি

সত্য আজ কঠিন পরীক্ষার মুখে, কে কার পক্ষ কেন নেয় বলা মুশকিলঃ http://www.weeklyblitz.net/1302/more-information-on-grameen-bank-revealed

লিংকটা দিলাম আরেক পক্ষের বয়ান হিসেবে, আওয়ামী-বামবাদী-ইউনুসবিরোধী ইত্যাদি ইত্যাদি

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

ব্যক্তিগতভাবে যদিও আমি ইউনূসের ঋণবানিজ্য ও রাজনীতির বিরুদ্ধে তবুও লেখাটা ভালু লাগল রণদা।
ভাল লাগা কিছু লাইন কোট করছি-

যে যার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই এ বিতর্কে পক্ষাবলম্বন করেন। কেউ রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে, কেউ অরাজনৈতিক দৃষ্টিতে, কেউ কর্পোরাল ভঙ্গিতে, কেউবা অর্থনৈতিক দৃষ্টিতে দেখেন। আবার কেউ দেখেন সামাজিক দৃষ্টিতে। এটা যার যার নিজস্ব চিন্তা-চেতনা, দায়বোধ ও নাগরিক অধিকারের ব্যাপার। যে যার মতো করে দেখতেই পারেন। মতামত প্রকাশ করার অধিকারও তিনি ধারণ করেন। তবে তা অবশ্যই বস্তুনিষ্ঠ তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই হতে হয়।

সাহিত্যে কল্পনা মূখ্য হলেও ইতিহাসে কল্পনাবিলাসের স্থান নেই

এই হতভাগা দেশে সাধারণ মানুষ কখনো ইতিহাস বিকৃত করে না, বিকৃত করে বিশিষ্ট জ্ঞানপাপী জনেরাই।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নীড় সন্ধানী এর ছবি

আমিও রাহাত খানকে শ্রদ্ধার চোখে দেখতাম। কিন্তু ঠিক কার মনোতুষ্টির জন্য ওই লেখাটা লিখলেন, এখনো বুঝে উঠতে পারছি না। ভর পড়ন্ত বয়সে যাদের মগজে ত্রুটি দেখা দেয় তাদের লেখালেখির মতো বিষয়ে না যাওয়াই উচিত। রাহাতখানের লেখাটা তার সাম্প্রতিক ভারসাম্যহীনতার প্রমাণ দেয়।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

দ্রোহী এর ছবি

পীরপূজা বড় প্রাণঘাতী! তা সে ড. ইউনূসই হোক অথবা মেজর রাহাত খান!

গুরুত্বপূর্ণ লেখার জন্য রণ'দাকে ধন্যবাদ। মেজর (অব) রাহাত খানের কি আর ব্লগে উত্থাপিত প্রশ্নের জবাব দেবার সময় হবে?

নাশতারান এর ছবি

রণদা, রাহাত খান কিন্তু বেশ পুরোনো বুদ্ধিজিগোলো। আগে যখন ইন্টারনেটের এত ব্যবহার ছিলো না, ব্লগ ছিলো না, প্রিন্ট মিডিয়ার অনেকেই অন্যের আঁটি চুষে মহীরূহ সেজে বসার সুযোগ পেয়েছেন। রাহাত খানের হাটে হাঁড়ি ভাঙার জন্য আর অজানা কিছু তথ্য জানানোর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। মুক্তিযুদ্ধে ড. ইউনূসের ভূমিকা সম্পর্কে জানা ছিলো না। বরং উনার উপর বেশ বিরক্ত ছিলাম আনু মুহাম্মদের লেখাটা পড়ে।
সেখানে লেখা- "রাজনীতি নিয়ে বলেন কিন্তু যুদ্ধাপরাধী বিরোধী আন্দোলনে তিনি(ড. ইউনূস) বিরক্তি প্রকাশ করেন, বলেন এগুলো অতীতের বিষয়। সামরিক শাসন বিরোধী কোন বক্তব্য তাঁর থেকে কেউ শোনেনি।"
এর সত্যতা কতখানি? আমি কোনো সূত্র খুঁজে পাইনি। কেউ পেয়ে জানালে খুব ভালো হতো।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

অতিথি লেখক এর ছবি

ড. ইউনুস কে অনেকে যেরকম দেবতা বানাচ্ছেন তার সংগে যে রকম এক মত নইআবার তাকে দানব বানাোর প্রক্রিয়ার সংগেও নই ।আপনার লেখাটি ভাল লাগল আর

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সেই বিখ্যাত পঙক্তিটার কথা- ‘দেখায় বড়র মতো, বড় নয় কেউ।’

এর সাথে আরও দুটি কথা মনে পড়ল আবু শাহরিয়ারের “বামনদের দেশে উচ্চতাই বড় দোষ”
আর রাহাত খানদের মো দের প্রসংগেই বুঝি হুতুম পেচা্র নকশায় কালী প্রসংগ সিং লিখেছিলেন “আমাদের মাঝে অনেকে এমন আছেন যারা সতীনের বাটিতে গু গুলে খেলে যদি সতীনের বাটি নষ্ট হয় তবে না হয় একটু গু গুলে খেলেনই ”

রাজিব মোস্তাফিজ এর ছবি

রণদা, লেখাটার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে যাই ! ড: ইউনূসের 'গরিবের ব্যাংকার' বা 'Banker To The Poor' একটা আগ্রহউদ্দীপক বই হতে পারে বর্তমান কনটেক্সটে !

----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!

মহাস্থবির জাতক এর ছবি

মুক্তিযুদ্ধে ইউনূসের বিস্তারিত ভূমিকা জানার জন্যে তাঁরই আত্মজীবনীমূলত গ্রন্থটি (ফরাসি থেকে অনূদিত এবং কলকাতায় প্রথম বাংলায় প্রকাশিত-এটা সম্পর্কেও আমি কৌতূহলী কেন একজন বাংলাদেশের নাগরিকের আত্মজীবনী বাংলায় প্রথম ছাপা হয় কলকাতা থেকে) পড়া যেতে পারে।

_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

রণদীপম বসু এর ছবি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। তবে আপনার কৌতুহলে আমিও একটু বিভ্রান্ত। কেননা আমার কাছে মাওলা ব্রাদার্স থেকে প্রকাশিত ড. ইউনূসের যে আত্মজীবনীমূলক বইটি রয়েছে 'গ্রামীণ ব্যাংক ও আমার জীবন' শিরোনামে ওখানে প্রথম প্রকাশের সাল রয়েছে ২০০৪।
কলিকাতার প্রকাশনাটা কত সালের বলবেন কি ?

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

হেলাল এর ছবি

রণদা,
আপনার এই লেখা থেকে ডঃ ইউনুসকে আরো জানলাম। রাহাত খানরা ভুলে যায় যে সবাই স্বার্থের কাছে নিজেকে বিক্রি করেনা। ফলে আসল সত্য বের হবেই।
আপনাকে ধন্যবাদ আমাদেরকে এই বিষয়টা জানানোর জন্য। FB এ শেয়ার দিলাম।

guest_writer এর ছবি

আম্লীগকে মাঝে মাঝে একটা নিউরাল নেটওয়ার্কের মত মনে হয়। অনেকগুলো মগজের একটা শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। এই নেটওয়ার্কের কেন্দ্রে যে মগজ থাকে তার চিন্তা তার আকাঙ্খা অনুরনিত হয় প্রান্তের আর সকল মগজে। ক্রমেই প্রান্তের মগজগুলোর নিজস্বতা লোপ পায়, সে শুধু কেন্দ্রের নির্দেশিত পথেই হাঁটে। কিন্তু আপাত বিচ্ছিন্ন এই মগজগুলো যখন একি তাল-লয়ে গান গায় তখন সেটাকেই সুমধুর লাগে, পরম সত্য বলে হয়। এভাবেই খল হয়ে যান বিচারপতি হাবিবুর রহমান। হয়তো এভাবেই একদিন রাজাকার হয়ে যাবেন ইউনুস। হতাশা আরো বেড়ে যায় যখন দেখি দুএকজন শক্তিশালী সচলও এই নেটওয়ার্কের প্রান্তীয় মগজ।

ফাহিম হাসান এর ছবি

হতাশা আরো বেড়ে যায় যখন দেখি দুএকজন শক্তিশালী সচলও এই নেটওয়ার্কের প্রান্তীয় মগজ।

তাই না? কী পোস্টে কী মন্তব্য করলেন আপনি?

guest_writer এর ছবি

আপনি কি মন্তব্যের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন? তাইলে একটু বিশদ করা যাক। নিউরাল নেটওয়ার্কের কেন্দ্রীয় মগজ ইউনুসের বিরুদ্ধে, তাই রাহাত খানের মত প্রান্তীয় মগজ থেকে আমরা এ ধরণের প্রডাকশন দেখতে পাই। কিছুদিন আগে 'বাজিকরের খপ্পরে দেশ' এ জাতীয় মন্তব্য করে কেন্দ্রীয় মগজের বিরাগভাজন হয়েছেন বিচারপতি হাবিবুর রহমান।পরে প্রান্তীয় মগজে এই বিরাগের প্রতিক্রিয়া দেখেছে সবাই। এই লেখার প্রথম প্যারায় একদম অপ্রাসঙ্গিকভাবে এই বিচারপতিকে বিদ্রুপ করে সংশ্লিষ্ট সচল নিজেকে প্রান্তীয় মগজভূক্ত করেছেন। উক্ত সচল অত্যন্ত শক্তিশালী হওয়ায় হতাশা বেড়েছে। রণদীপম বসুর লেখার ফোকাস কিন্তু রাহাত খানদের দুঃখজনকভাবে মিথ্যূক হয়ে যাওয়ার ঘটনায়। আমার মতে এই ধরণের ঘটনা ঘটছে ওই নিউরাল নেটওয়ার্কের ক্রমবিস্তৃতির কারণে। তাই আমার মন্তব্যটি 'কী পোষ্টে কী মন্তব্য' না মোটেই ।

হিমু এর ছবি

তাহলে তো বদরুদ্দিন উমরকেও আওয়ামী লীগের ইউনূস শাখার আমির বলতে হবে, তাই না?

বিচারপতি হেবোর বাজিকর তত্ত্ব লেখা কাগজটা আলবদর সরকারের আমলে তার কোন পাঞ্জাবির গহীনে যে লুকিয়ে ছিলো, আল্লা মালুম। আলবদর সরকারের আমলে কোনো উচ্চবাচ্য করতে শুনিনি ওনাকে, কেবল একবার হাজির হয়েছিলেন ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানী ক্র্যাকডাউনকে "পিটুনি অভিযান" লিখে নিজের আসল চেহারা দেখাতে। বিচারপতি হেবোকে বিদ্রুপ করার জন্য আওয়ামী লীগ হতে হয় না, একটু সচেতন হলেই চলে।

তা আছেন কেমন ভাইটু? শ্বশুর সাহেব তো প্রমোশন পেয়ে গেলেন। পার্টি দেন একদিন।

নাশতারান এর ছবি

এই মন্তব্যগুলো কেন জানি বেনামেই আসে।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

guest_writer এর ছবি

'এই মন্তব্যগুলো' শব্দগুচ্ছ ইঙ্গিত দেয় যে আপনি আমার উপরের মন্তব্যটিকে কোন একটি শ্রেণীতে শ্রেণীবদ্ধ করেছেন। প্লীজ একটু বলবেন কী সেই শ্রেণি, কোন কারণে এই শ্রেণীকরণ? সেটি কি কোন পরিচিত বা প্রখ্যাত নাম না থাকার কারণে। কী করব বলেন? সচলায়তনে যে আমার নাম নিবন্ধিত নয়। আমি যে হিটখোর সচলায়তনের নাম-পরিচয়হীন অগনিত পাঠকের একজন এবং নিশ্চিতভাবে স্প্যামবট নই। আমাদের মত সাধারণদের এত অবিশ্বাস কেন করেন!

নাশতারান এর ছবি

মন্তব্যের শেষে নিজের নাম/ছদ্মনাম দিয়ে দেবেন।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

হিমু এর ছবি

সেটার জন্য সাহস লাগে তো। শ্বশুর ক্ষমতায় না গেলে তো সেই সাহস পাবেন না উনি। একটু সময় দেন বেচারাকে।

মাহে আলম খান এর ছবি

রণ'দা,

মুক্তিযুদ্ধে ড. ইউনুসের এই প্রোএকটিভ অবদানের কথা জানতাম না। কম্পাইল্ড বাই সামসুল বারী টা কেডা।

রানা মেহের এর ছবি

ড ইউনুস এখন বিপদে আছেন।
তাকে লাথি মারার জন্য চামচিকারা লাফঝাপ করবেই।
রণদাকে ধন্যবাদ লেখাটার জন্য

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

অনিকেত এর ছবি

লেখাটার জন্যে আপনার অনেক ধন্যবাদ প্রাপ্য, রণদা!

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ড: ইউনুস যদি দোষী হন, আদালতে মামলা চলছে সেখানে বিচার হবে। কিন্তু স্মৃতিসৌধে কোনোদিন যান নি ধরনের মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার কারণ কী?
পুরনো সাংবাদিকতার খোলস যেসব সাংবাদিক এখনো ছাড়তে পারেন নাই, তাদের আপাতত লেখালেখি মুলতবী রাখাই উচিত। নাইলে ঘাটে ঘাটে মরবে

লেখাটার জন্য ধন্যবাদ

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

আবুল আহসান মনি এর ছবি

সকলের অবগতির জন্য এখানে গ্রামীন ব্যাংকের প্রতিবাদ/বক্তব্যটি দেয়া হলো।

ভালো কথা রন'দা, মুখোশ খুলে দেয়া পোষ্টের জন্য ধন্যবাদ।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

রাহাত খান যা করেছেন, তর্কাতীত ভাবেই তা পঁচাকাজ। নিন্দনীয়। নিন্দা জানালাম। রণ'দাকে ধন্যবাদ।
যুদ্ধ যতো ন্যায় সঙ্গত থাকুক, বেঠিক অস্ত্র প্রয়োগে কোন ফল হয়না- এটা রাহাত খানের মতো জ্ঞানপাপীদের বুঝা উচিত। আর গ্রাউন্ডওয়ার্ক না করে সবাইকে সবকিছু নিয়ে লিখতে হবেই- এমন কোন কথা নেই।

মুক্তিযুদ্ধের সময় ইউনুস সাহেব কার্টুন এঁকেছেন। ভালো করেছেন। তাকে ও ধন্যবাদ। কার্টুন আঁকার সুবাদে দেখলাম ডঃ জাফর ইকবাল তার বইয়ে মুক্তিযুদ্ধে যে সব প্রবাসী অনবদ্য অবদান রেখেছেন যেমন আবু সাইদ চৌধুরীদের পাশে তার নাম উল্লেখ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া স্থগিত করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে ফিরে যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন- এমন তরুনের সংখ্যা ও একেবারে কম নয়। সেই তুলনায় কার্টুন আঁকা- খারাপ না!

উপরে বুনোর মন্তব্যে দেখলাম

"রাজনীতি নিয়ে বলেন কিন্তু যুদ্ধাপরাধী বিরোধী আন্দোলনে তিনি(ড. ইউনূস) বিরক্তি প্রকাশ করেন, বলেন এগুলো অতীতের বিষয়। সামরিক শাসন বিরোধী কোন বক্তব্য তাঁর থেকে কেউ শোনেনি।"
এর সত্যতা কতখানি? আমি কোনো সূত্র খুঁজে পাইনি। কেউ পেয়ে জানালে খুব ভালো হতো।

মুক্তিযুদ্ধের সময় কার্টুন আঁকিয়ে ভদ্রলোকের মুখে কখনোই যুদ্ধাপরাধ বিরোধী আন্দোলনের সমর্থন কিংবা সহানুভূতির কথা শুনা যায়নি( শহীদ জননীর শুরু করা আন্দোলনের শুরু হয়েছিলো উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সুশীল সমাজের মানুষকে সাথে নিয়ে, ডঃ ইউনুস তাদের মধ্যে ছিলেননা)। তিনি নোবেল পাবার পর ইসলামী ছাত্র শিবিরের গেলমানরা পুস্পস্তবক নিয়ে গিয়েছিল তার কাছে, তিনি ও বিগলিত হাসিতে ফটোসেশন করেছিলেন( এই ছবি নেটে ঘাঁটলে সহজেই পাওয়া যাবে)
পনের বছরের সামরিক শাসনের সময় সামরিক শাসন বিরোধী কোন ভূমিকা তার ছিলো, এমন প্রমান কেউ দেখালে খুশী হই বরং গত সামরিক তত্বাবধায়ক সরকারের গুডবুকের প্রথমেই তিনি ছিলেন, এতো সবারই জানা।

ডঃ ইউনূস যদি শুধু ব্যাংকার/ব্যাবসায়ী হয়ে থাকতেন তাহলে রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ থাকতোনা কিন্তু তিনি নিজেকে সেখানে সীমাবদ্ধ রাখেননি, রাজনীতিক হয়ে উঠেছেন। তাই তার রাজনৈতিক অবস্থানটি নিয়ে আলোচনা/সমালোচনা ও জরুরী।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি
রণদীপম বসু এর ছবি

শুভাশীষ দা, বহুল ব্যবহৃত এই ছবিটা দেখে মনে হলো বর্তমানে যাঁরা কট্টর ইউনূস বিরোধী, একটু চেষ্টা করলে একই সময়ে একই স্থানে তোলা ড.ইউনূসের সাথে তাঁদের অনেকের ছবিই দেখাতে পারবো। এতে কী প্রমাণ হয় ?
আসলে নোবেল পাওয়ার পরপরই দেশের সকল শ্রেণীর সকল মতের লোকজনই এক খুবই উল্লাসমুখর পরিবেশে প্রফেসর ইউনূসকে উইশ করেছেন আর একইসাথে তাঁরা যার যার ছবিও উঠিয়ে নিয়েছেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে ওই সময়ে ওখানে কিন্তু কৌতুহলী আমারও উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য হয়েছে। আমার তো মনে হচ্ছে এটাও জোর করে এক ধরনের অগ্রহণযোগ্য ইতিহাস তৈরির প্রচেষ্টা !!

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

রণ'দা,

গ্রহণযোগ্য কিংবা অগ্রহণযোগ্য ইতিহাস তৈরির কোনো চেষ্টা এখানে হয়নি। ছবিটা ইন্টারনেটে ছিল, হাসান মোরশেদের উদাহরণ পরিপ্রেক্ষিতে সেটা শুধু এই জায়গায় এনে দিয়েছি। এতে কিছুই প্রমাণ হয় না। আর প্রমাণ করানোর কিছুই নেই।

রণদীপম বসু এর ছবি

সরি, আপনি অন্যভাবে নেবেন না। আপনার এখানে ব্যবহারের জন্যেই শুধু বলছি না ! অনেক জায়গাতেই এই ছবিটার ব্যবহার দেখেছি, এবং এই একটা মাত্র ছবিই ! আমি জানি আপনি কিছু প্রমাণের জন্যে দেননি, কিন্তু অনেকে অন্য জায়গায় এই ছবিটা দিয়ে অনেক কিছু বুঝানোর চেষ্টা করেছে। এ নিয়ে আমি কোথাও বিতর্কেও নামি নি বা প্রয়োজন বোধ করিনি। এখানে সেই একই ছবিটা দেখে তথ্য হিসেবে উপরোক্ত মন্তব্যের কথাগুলো বলা। ইন ফ্যাক্ট, ইতিহাস তার স্বাভাবিক গতিতেই চলা উচিৎ মনে হয়। শুভ কামনা।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

একজন মানুষ এর ছবি

অস্ত্র হাতে মুক্তিযুদ্ধ করেছিল দেড় লাখ বাঙালি। এর বাইরে লাখো, কোটি বাঙালি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল নানাভাবে দেশের ভেতরে ও বাইরে। কারো অবদান কম নয়। বাংলাদেশের সব মানুষ কি আপনার-আমার পছন্দের সব কিছুতে একমত হবে, হতেই হবে? রাস্তায় নামতে হবে? এরকম একমতের সমাজ কোথায় আছে?

রাজনীতি করতে চাওয়াটাই তাহলে ড. ইউনূসের অপরাধ! এই দেশে খুনিরা রাজনীতি করতে পারে, সাম্প্রদায়িক কীটেরা রাজনীতি করতে পারে- খালি ইউনূস করতে পারবেন না! করতে গেলে কামাল হোসেন, বি চৌধুরীর মতো হয় রাস্তায় মার খেতে হবে, নয় আমাদের কলমে বিদ্ধ হতে হবে! যিনি রাজনীতিই করতে পারলেন না, তার অবস্থান নিয়ে কি জরুরি আলোচনা হবে?

হাসান মোরশেদ এর ছবি

রাজনীতি করতে চাওয়াটাই তাহলে ড. ইউনূসের অপরাধ!

আমি কি কোথাও তাই বলেছি ভাই? রাজনীতি করতে চাওয়া সব নাগরিকের অধিকার। তবে কিনা অস্বাভাবিক সময়ে ফাঁকা মাঠে নেমে রাজনীতিতে বাজিমাত করার চেষ্টা করাটা কিঞ্চিৎ সন্দেহজনক, এই আর কি।

রাজনীতি করতে হলে রাস্তায় মার খাওয়ার হ্যাডম নিয়েই নামতে হয়, এটা শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই সত্য নয়। তৃতীয় বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের জন্যই সত্যি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রবীন যারা তারা পাকিস্তান আমলে পুলিশ-আর্মি-এনএসএফের গুন্ডাদের সাথে ফাইট করেই রাজনীতি করেছেন, পরের এরা সামরিক শাসকদের সাথে ফাইট দিতে হয়েছে। এটা নিয়ে কান্নাকাটি করার কিছু নেই।
ইউনূস সাহেব যদি মনে করে থাকেন তার রাজনীতির সময় খালি সামরিক সমর্থনের সুসময় বহাল থাকবে তাহলে তিনি ভুল জলে নেমেছিলেন ভুল করে। ভুলের সমালোচনা হবেই।
আর মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য তো আমি ইউনূস সাহেবকে ধন্যবাদই জানালাম। আপনার চোখে পড়েনি? আমি শুধু বলেছি একই রকম অবস্থায় থেকে কেউ কার্টুন এঁকেছেন আর কেউ জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন। পার্থক্য অতি সামান্য হাসি

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

বইখাতা এর ছবি

রাহাত খানের এইরকম মিথ্যাচারে অবাক হয়েছি...খারাপ লাগলো। লেখাটা ভাল লেগেছে রণদীপম'দা।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

রাহান খান অফ যা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।