এনস্কেডের দিনপঞ্জি - ২

রেশনুভা এর ছবি
লিখেছেন রেশনুভা (তারিখ: সোম, ১৪/০৯/২০০৯ - ২:৩৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


চারটা থেকে একটা বেছে নিতে ভালই পারতাম। পিচ্চিকালের পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল সেটাই বলে। বিপদ হয়ে যায় তখনই যখন দু’টা থেকে একটা বেছে নিতে বলা হয়। অবধারিত ভাবেই ভুল করব। কয়েক ঘন্টা আগে ঘটে যাওয়া কাহিনী শুনুন।

কাপড় ধুতে হবে। আগের বাসাতে কাপড় ধুতে পয়সা দেয়া লাগত না। এখন যে বাসাতে এসেছি এখানে লাগবে; দুই ইউরো মাত্র। এখানেই পেরেশানীর শেষ নেই। দুই ইউরো দিয়ে বিশেষ এক কয়েন কিনতে হবে এবং সেটাও কিনতে হবে একেবারে হাউজিং অফিসে যেয়ে। গত শুক্রবারই কয়েন নিয়ে এসেছিলাম। হারিয়ে যাবার ভয়ে একটি মাত্র।

বিশাল এক ব্যাগ ভর্তি কাপড় নিয়ে হাজির হলাম ওয়াশিং রুমে। পা দেয়া মাত্রই কেন জানি মনের মধ্যে কু-ডাক শুরু হল। কারণটা হল, উপর নিচে দুইটা মেশিন এবং কয়েন ঢোকানোর জন্য একেবারে উপরে দুইটা বাক্স। কোন মেশিনের জন্য কোন বাক্স এরকম কোন চিহ্ন বা নির্দেশনা নেই। যাই হোক কাপড়গুলো উপরের মেশিনটাতে ঢুকিয়ে দুঁদে গোয়েন্দাদের মতন পর্যবেক্ষণ করলাম কোন ধরনের কোন চিহ্ন যদি পাওয়া যায় তাই। নিষ্ফল প্রচেষ্টা। বেছে নিলাম বাঁয়ের বাক্সটা। কয়েনটা ঢুকিয়ে দিলাম এবং বোতাম টিপে দিলাম মেশিনের। একা একাই হেসে উঠলাম। ২ ইউরো গচ্চা এবং তারচেয়েও বড় কথা আজ আর কাপড় ধোয়া হবে না।

ইচ্ছা ছিল কাপড় ধুতে দিয়ে একটু ঘুরেফিরে বেড়াব। ক্যামেরা সাথেই ছিল। চামে বালিকাদের ছবি তোলারও ক্ষীণ বাসনা ছিল। যদিও এখন পর্যন্ত এই কাজেও ব্যর্থ। কাপড়গুলো আবার ব্যাগের ভিতরে ভরে ওখানেই রেখে বেরিয়ে এলাম। আমার বাসা পাঁচতলায় এবং ঐসময় উঠা-নামা করতে আর মন চাইছিল না। নিশ্চয়ই কেউ আর গান্ধা কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে ভেগে যাবে না।

সাইকেল চালাতে চালাতে এক ভেন্ডিং মেশিনের সামনে আসতেই কোমল পানীয় পান করার চিন্তা মাথাচাঁড়া দিয়ে উঠল। ও বলে রাখা ভালো, আমি কিন্তু ভোজাদার। ১ ইউরো ৩০ সেন্ট দিয়ে বোতাম টিপে দিলাম। হাফ লিটার এর একটা বোতল বেরিয়ে আসল। নেবার জন্য নিঁচু হতেই দেখি আরো একটা বোতল বের হল। টাসকি লাগলাম। অতঃপর ভাবলাম, এতো আমার ক্ষতিপূরণ। আর এক প্রস্থ হাসি দিয়ে দু’টো বোতলই বগলদাবা করলাম। মানুষ চায় এক, আর হয় আরেক। এইবার কিন্তু আমি খুশি।

মাঠে যেয়ে দেখি অনেক পাখি আর কবুতর রোদ পোহাচ্ছে। পাখি উড়ার দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করার সখ অনেক দিনের। কিন্তু আমার এই দুর্বল লেন্স নিয়ে সেই আশায় গুঁড়ে বালি। তারপরও ভাবলাম চেষ্টা করে দেখি। ‘কন্টিনিউয়াস ফোকাস’ এ রেখে পাখিগুলোকে ব্যাপক বিরক্ত করলাম। এক একটাকে লক্ষ্য করে ওদের দিকে ছুটে যাই আর একইসাথে শাটার টিপতে থাকি। দু’একটা ছবি দিয়ে দিলাম এইখানে; যদিও ছবির মান জঘন্য।

ছবি ১: পাখি, পালাবে কোথায়?
উড়ে যায়

ছবি ২: হাঁটতে হাঁটতেই পেলাম জংলী ফুল
জংলী ফুল

শীতের আগমনী বার্তা দেখা যাচ্ছে প্রকৃতিতে। গাছের পাতা লালচে এখন। আর কিছুদিন পর পুরো টাকবেল হয়ে যাবে। থাকবে শুধু হাড় জিড়জিড়ে ডালগুলো। ভাবলাম কিছু লাল পাতার ছবিও তুলে রাখি।

ছবি ৩: লাল পাতাওয়ালা গাছের শুধু পাতা
লাল পাতা

মানুষও একটা সময় ঐ হাড় জিড়জিড়ে গাছগুলোর মতন হয়ে যায়। সবাইকেই নতি স্বীকার করতে হয়। আমার ছোট মামা খুব ভালো ফুটবল খেলতেন। একটা সময় যখন খুলনার খালিশপুর-দৌলতপুরের শিল্পাঞ্চল গমগম করতো, তখন খুলনা জেলা লীগে ঐ মিলগুলোই সবচেয়ে ভালো দল গঠন করতো। আমার মামা ওরকম কোন সময়েই খেলেছেন। পরে কোচিং ও করিয়েছেন। ছোটবেলায় মনে আছে ছোট মামার মিলের সেই কোয়ার্টারে গেলেই সবচেয়ে মজা হত। মামার মিল থেকে লীজ নেয়া পুকুর ছিল। মাছ চাষ করতেন। আমি, আমার দুই মামাত ভাই-বোন, আরো অনেক পিচ্চি-পাচ্চা মিলে মাছ ধরতে যেতাম। মামা বড়শিতে খাবার লাগিয়ে দিতেন। মাঝপুকুরে যেয়ে জাল ফেলতেন। তখন নামতে পারতাম না মামার সাথে। সাঁতার জানতাম না যে। কত কত স্মৃতি ছোট মামার সাথে। মামার বাসায় গেলেই পান খাওয়া হত। মামা খুব মজা করে পান বানাতেন, মিষ্টি পান। রান্নাও করতেন খুব ভালো; মামীর চেয়েও ভালো।

আচ্ছা, এগুলো এখানে লিখছি কেন? এইটাতো দিনপঞ্জি, ছেলেবেলার স্মৃতিচারণ নয়। লিখেই যখন ফেলেছি থাক না হয়। কিছুক্ষণ আগে বাবা ফোন দিয়েছিল। ছোট মামা আর নেই। আমার সাথে তাঁর শেষ দেখা হয়েছিল বারডেমের কোন এক কেবিনে মাস ছয়েক আগে। ক্যান্সার ধরা পড়ার পরে একেবারে প্রথম পর্যায়ে ছিল তখন। আমি যখন এখানে আসি মামা তখন চিকিৎসার জন্য ভারতে। মামার কাছ থেকে বিদায়টুকু নিয়ে আসা হয়নি। মামাও আমাকে আর সুযোগটা দিলেন না।

মন খারাপ করিয়ে দিলাম সবার? মন খারাপ করবেন না। কোন এক পোস্টে আমার এক মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তীরুদা বলেছিলেন “জীবন তো সবসময় একই গতিতে বহমান নদী নয়”। না হয় আমার জন্য জীবন-নদী টা এখন একটু বেশিই খরস্রোতা। দু’পাড় শুধু ভেঙ্গেই চলেছে। কোন এক সময় হয়ত আবার নদীর বুকেই জেগে উঠবে নতুন কোন মাটি, কোন বসতি বা নতুন কোন স্বপ্ন।


মন্তব্য

রেজওয়ান এর ছবি

আপনার নিক দেখে পড়ার সময় একটি বাক্যে এসে "বালিকার" উদ্ধৃতিতে খটকা লাগল। পরে দেখলাম আপনার নামও রেজওয়ান। আসেন গলা মেলাই। আপনি কিন্তু আমার চেয়ে ভাল ছবি তোলেন।

আপনার মামার আত্মা শান্তি পাক।

পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?

রেশনুভা এর ছবি

নিক দিয়ে বিভ্রান্ত করার জন্য দুঃখিত। দেঁতো হাসি
অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

তানবীরা এর ছবি

নদীর স্রোত যাই থাকুক, জীবন এক সময় এডজাষ্ট করে ফেলে। ভালো থাকুন।
---------------------------------------------------------
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

রেশনুভা এর ছবি

একদম ঠিক কথা; তবু কেন জানি মাঝে মাঝে একেবারেই ভালো লাগে না।
আপনিও ভালো থাকবেন আপু।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

বস, আমাদের নিজের জীবন-নদী কতোটা খরস্রোতা, কতোটা রাক্ষসী— এটা বোধকরি আরেকটা নদী না দেখলে বুঝতে পারা প্রায় অসম্ভব!

বালিকার ফটুক তোলার ব্যাপারে একটা টিপস দেই আপনাকে। এই যে নিচের এই ফটুকটা। এখানে ফটুগ্রাফার কিন্তু বুঝেও নাই যে সে আসলে কী মূল্যবান জিনিষ তুলছে আমার ফটুক তুলতে গিয়া। এই এঙ্গেলে ফটুক তোলবেন সব, এইটাই হইলো টিপস! চোখ টিপি

..

___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

ধূগোদা রক্স

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

রেশনুভা এর ছবি

লা-জওয়াব। কঠিন টিপস। দেঁতো হাসি

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ঠিক আছে।
...............................
নিসর্গ

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

পড়েছি দেঁতো হাসি
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

এটাই লাইফ বস! অনেক কিছুই মেনে নিতে হয় অনিচ্ছা সত্বেও

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

কীর্তিনাশা এর ছবি

চমৎকার লেখেন আপনি। ছবিও চমৎকারা..........

ভালো থাকবেন আর বেশি বেশি পোস্ট দিবেন। হাসি

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

অনিকেত এর ছবি

বেশ বেশ---

নজমুল আলবাব এর ছবি

আপনার নিকটা বিভ্রান্তিকর।

লেখা ভালো লেগেছে। ছবিও সুন্দর।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

রেশনুভা এর ছবি

অপু ভাই, আপনি নিশ্চয়ই আর বিভ্রান্তিতে পড়বেন না। হাসি
কি করমু কন? রেজওয়ান ভাই অনেক আগেই দখল নিছে নামের। দেঁতো হাসি

হিমু এর ছবি
রেশনুভা এর ছবি

নিক টা মেয়ে মেয়ে হয়ে গেছে তাই ...

নজমুল আলবাব এর ছবি

নিকটা মেয়েদের বলে মনে হয়। পুরনো ব্লগের কথা মাথায় আনলে বিভ্রান্তির কারণটা আপনার কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবার কথা হিমু।

রেশনুভা যদি নিকটা পাল্টে ফেলেন তাহলে মনে হয় ভালো হয়। সচল এর মতো ক্লোজ সাইটে এটাই হওয়া উচিত বলে মনে হয়। মেয়ে নিক নিয়ে একটা ছেলে ঘুরবে, সেটা কেমন যেনো। চোখ টিপি

আচ্ছা, রেশনুভা আপনার আসল নাম নয়তো? সেটা হলে আগে থেকে স্যরি বলে রাখছি।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

তীরন্দাজ এর ছবি

আপনার বাচনভঙ্গী সুন্দর! ভালো লাগলো ছবিগুলোও!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

সমুদ্র এর ছবি

আপনি তো আর "রুকি" নাই মিয়া, ছবিতে হাত এসে যাচ্ছে! ইউরোপে গেলেই দেখি সবাই এক্সপার্ট ফটুগ্রাফার হয়ে যায়! জংলী ফুলের ছবিটা দারুণ লাগলো, আর গাছেরটা কেমন অন্ধকার যেন।
দিনপঞ্জি থেকে স্মৃতিচারণের এই ট্রানজিশান ভালো লাগলো।

মামার আত্না শান্তিতে থাকুক, এই দোয়া করি।

"Life happens while we are busy planning it"

নিবিড় এর ছবি

হুম


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

রেশনুভা এর ছবি

প্রকৃতিপ্রেমিক, কিংকর্তব্যবিমূঢ়, শাহেনশাহ সিমন, কীর্তিনাশা, নজমুল আলবাব, তীরন্দাজ ....... নামগুলার ওজন দেখছেন নি!
সকালে উঠেই আমার সব প্রিয় ব্লগারদের মন্তব্য দেখে দাঁত আর ভিতরে ঢুকতেছে না।
দেঁতো হাসি :D দেঁতো হাসি
অনেক ধন্যবাদ সবাইকে ... আপনাদের মন্তব্য পাওয়ার জন্য যে উন্মুখ হয়ে বসে থাকি, তাই ... হাসি

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

লেখাটা অনেক ভালো হইসে, রেশনুভাই। দেঁতো হাসি

প্রথম ছবি দুইটা মারাত্মক সুন্দর। খুব ভাল্লাগল। মামার কথা পড়ে মন খারাপ হয়ে গেল।

আরো লেখেন....

দুর্দান্ত এর ছবি

নামের শেষ এ 'ভা' থাকলেই ইদানিং পূর্ব ইউরোপীয় মেয়ে মনে হয়।
--
এন্স্‌খেদেতেই আছেন যেহেতু, অক্টোবর ১০ এ আইন্দ্‌হোফেন এ আসছেন তো?
--
আপনার মামা যেখানেই থাকুন, আশা করি ভাল আছেন, পোলাপানদের ফুটবল শেখাচ্ছেন আর তাদের নিয়ে মাছ ধরছেন, আর আপনার এই লেখাটাও পড়ছেন।

রেশনুভা এর ছবি

হাহাহা......ঠিক বলছেন। কি করুম কন বস? 'রেজওয়ান' ভাই আগে থেইকা নাম নিয়া নিছে। তাই আমি একটা পছন্দমতন নিক নিলাম।

আরে, আমি তো জানতামই না। আসুম না মানে... অক্টোবর ১০ আস্তে এতো দেরি ক্যা? দেঁতো হাসি

প্রবাসিনী এর ছবি

ভাইয়া, প্রথম ছবিটা ফাটা ফাটি হয়েছে

________________________________________________

হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে

________________________________________________

হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে

রেশনুভা এর ছবি

তোর মন্তব্য পাইয়া আমারো এখন ফাটাফাটি লাগতেছে। হাসি

রায়হান আবীর এর ছবি

বালিকাদের ছবি দেখতে মঞ্চায় দেঁতো হাসি


পুচ্ছে বেঁধেছি গুচ্ছ রজনীগন্ধা

রেশনুভা এর ছবি

এই চাওয়ায় কোন পাপ নাই ... ভালোবাসা আছে ... চোখ টিপি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।