কাব্যকথা

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি
লিখেছেন ষষ্ঠ পাণ্ডব (তারিখ: শনি, ২০/০৯/২০০৮ - ১২:৩৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

“যে কবিতা শুনতে জানে না সে আজন্ম ক্রীতদাস থেকে যাবে”

কবিতাপ্রেমী মানুষদের মধ্যে তারাই হতভাগা যারা কবিতার রসে নিমজ্জমান কিন্তু এক লাইন কবিতাও লিখতে পারেন না। আমি হচ্ছি সেই দলের প্রথম কাতারের মানুষ। স্কুল জীবনে আমাদের বাংলা বা ইংরেজী পাঠ্যপুস্তকে যে সমস্ত কবিতা পড়ানো হয় (কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া), বা সেগুলো যে কায়দায় পড়ানো হয় তাতে কোন মানুষের মনে কবিতার প্রতি আগ্রহ বা ভালোবাসা জন্মানো সম্ভব বলে মনে হয় না। যারা পাঠ্যপুস্তক প্রনয়ণ করেন তারা সম্ভবতঃ কবিতার রস বঞ্চিত মানুষ। নয়তো জাগরনমূলক, শিক্ষামূলক, উদ্দীপনামূলক ইত্যাদি এমন সব বিদঘুটে কবিতা পাঠ্যতালিকার অন্তর্ভূক্ত হয় কি করে? কোন কবি বা কবিতার নাম উল্লেখ করছি না। কারন, ঐসমস্ত বিদঘুটে কবিতার লেখকরাও কবি। হয়তো তাদের ভাল কবিতাও আছে কিন্তু নির্বাচকরা অজ্ঞাত কারনে সেসব কবিতা খুঁজে পান না।

যারা কবিতা পড়তে ভালোবাসেন, তাদের অধিকাংশের এই অভ্যাস গড়ে ওঠার পিছনে অবদান সাধারণতঃ পাঠ্যপুস্তক বহির্ভূত কোন বই বা স্কুল বহির্ভূত কোন মানুষ। বাংলাদেশের আর দশটা মানুষের মত আমিও ছেলেবেলায় মায়ের কন্ঠে ছড়া, ঘুমপাড়ানী গান আর বাবার কন্ঠে আবৃত্তি শুনেছি। তবে তাতে কবিতার প্রতি আগ্রহ তৈরী হলেও এই ভালোবাসা তৈরী হয়নি। বাসায় টেবিলে রাখার কবিতার অবধারিত দুই বই “সঞ্চয়িতা” আর “সঞ্চিতা” উলটে-পাল্টেও কবিতা পড়ার বিশেষ কোন আগ্রহ জন্মে নি। তবে বাবার কন্ঠে হিং-টিং-ছট, সামান্য ক্ষতি বা লিচুচোরের কথা আজো মনে পড়ে।

যে বয়সে ছেলে-মেয়েরা টুকটাক প্রেমে পড়তে শুরু করে, সে বয়সেই তাদের মাথায় কবিতার ভুতও চাপে। আমি এমনই জরদগব ছিলাম যে সেই বয়সেও মাথায় কবিতার (বিশেষতঃ তথাকথিত প্রেমের কবিতার) ভুত চাপেনি। স্কুল ম্যাগাজিনে যখন ক্লাশের অন্যদের ছোট ছোট কবিতা ছাপা হত তখন স্বভাবতই ঈর্ষাবোধ করতাম। কিন্তু মাথার চুল ছিঁড়ে ফেললেও আমার মাথা থেকে এক লাইন কবিতা বের হত না।

খেলার, ছবি আঁকার, গান গাওয়ার বা বাদ্যযন্ত্র বাজানোর যোগ্যতা না থাকায় এক সময় অপেক্ষাকৃত স্বল্প-আয়াসের কবিতা আবৃত্তির দিকে ঝুঁকে ছিলাম। তবে তা নিতান্তই প্রতিযোগিতা কেন্দ্রিক। প্রতিযোগিতা শেষ তো কবিতা শিকেয় উঠলো। স্কুল জীবনের শেষভাগে হাতে-পায়ে দুর্বল থাকায় মনের ভেতর জমে থাকা নানা ক্ষোভ হঠাৎ করেই ফুঁসে ওঠার সুযোগ পেল বিপ্লবাত্মক কবিতা আবৃত্তিতে। কবিতা পড়ার সেই শুরু। আমার তখনকার নায়ক-কবি নির্মুলেন্দু গুণ। তার কবিতার সঙ্কলন “নির্বাচিতা” ততদিনে বের হয়ে গেছে। নির্বাচিতা তখন আমার আর আমার মত রাঙামুলোদের হাতে হাতে, মুখে মুখে। খুঁজে বের করতে লাগলাম নজরুল আর ফররুখের বিদ্রোহাত্মক আর জাগরনমূলক কবিতা। হঠাৎ করেই পর পর কয়েকটা প্রতিযোগিতার কল্যানে পরিচয় হল সুনীল, আল মাহমুদ, আবু জাফর ওবায়েদুল্লাহ আর হেলাল হাফিজের সাথে। অবাক হয়ে আবিষ্কার করলাম একটা নতুন জগত যা আমার মত মোটাবুদ্ধির মানুষকেও আমূল নাড়া দিয়ে গেল।

“আমি কি রকম ভাবে বেঁচে আছি”, “কবিতা এমন”, “আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি” আর “নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়”র পথ ধরে বাকদেবী আমার ঘরে এলেন। তারপরের কুড়ি বৎসরের ইতিহাস কবিতা খোঁজা আর কবিতা পড়ার। একসময় আপাত বাজারে দুর্লভ আবুল হাসান, অরুনাভ সরকার, আবু জাফর আর কায়েস আহমেদের মত কবিগণকে আবিষ্কার করতে লাগলাম। শামসুর রাহমান আর জীবনানন্দ দাশ তখনো পাঠ্যপুস্তকের কবি। শক্তি চট্টোপাধ্যায় আর জয় গোস্বামীতে মুগ্ধতাও তৈরী হচ্ছে একটু একটু করে।

মাঝখানে যখন রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়লাম, তখন কিছুদিন সুকান্ত, সুভাষ আর নাজিম হিকমাতেরা আমার মাথা দখল করেছিলেন। তবে সে ভুত দ্রুতই কেটে যেতে থাকে বিশুদ্ধ কবিতার আবির্ভাবে। কল্লোল যুগের কবিদের কবিতা যখন আবিষ্কার করি তখন নিজেকে রামবোকা ছাড়া আর কিছু মনে হয়নি। এই অনন্য কাব্যসম্ভার হাতের কাছে ছিল অথচ তার মূল্যই বুঝতে পারিনি! আমি আস্তে আস্তে কবিতা কি জিনিষ, ছন্দ কাকে বলে, রস কি, কবিতার প্রকারভেদ কি শিখতে শুরু করলাম। “কন্ঠশীলন”-এ যে কয়দিন যাতায়ত করেছি তাতে দেখেছি সেখানে বিশুদ্ধ উচ্চারন বা ভালো আবৃত্তি করা শেখানো হয়, তবে তাতে শিক্ষার্থীর মনে কবিতার প্রতি বিশেষ কোন আকর্ষন তৈরী হয় বলে মনে হয় না।

পাণ্ডবদের একটা সাধারন গুন হচ্ছে তারা কম-বেশী আবৃত্তি করতে পারেন। বাকী পাণ্ডবেরাতো আর ষষ্ঠ পাণ্ডবের মতো না, তারা কবিতা চিনেন, কবিতা বোঝেন। তাই পাণ্ডবত্ব লাভের সাথে সাথে বাকী পাণ্ডবদের কল্যানে বিশুদ্ধ কবিতার জগতে প্রবেশ করতে শিখি। সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত যিনি আমার মন-মগজ জুড়ে আছেন, তিনি জীবনান্দ দাশ। তাঁর কাব্যসমগ্র আজো আমার টেবিলে বিদ্যমান। পাতাগুলো খুলে খুলে গেছে তবু তাই বার বার পড়া হয়। আনন্দের সময়ও তিনি, কষ্টের সময়ও তিনি। এত বিচিত্র আর এত অসাধারাণ সব কবিতা লিখে গেছেন যে তাঁকে সুরলোকের মানুষ বলে মনে হয়।

জীবনানন্দ পাঠের একটা বড় প্রাপ্তি হচ্ছে একটা কবিতাকেই বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন প্রেক্ষিতে নানারূপে আবিষ্কার করা। আর কবিতার ফর্ম আর কনটেন্ট নিয়ে এত যে এক্সপেরিমেন্ট করেছেন যে তা একমাত্র গুরুদেবের সাথে তুলনীয়। অথচ তাতে তাঁর কবিতা, কবিতাই থেকে গেছে। কবিতার সৌন্দর্য বা রস একটুও টসকায়নি তাতে। তার প্রমান তাঁর একই কবিতার ভিন্ন দুই রূপ “স্বভাব” আর “দুর্দিন” বা সম্পূর্ন নতুন ফরমাটে লেখা “কয়েকটি লাইন”। কথাটা অবশ্যই ধৃষ্টতার মত শোনাবে, তবে আমার কাছে যা সত্য বলে মনে হয় তা বলতে দ্বিধা করব না। আমার কাছে কবি হিসেবে জীবনানন্দ দাশ গুরুদেবের চেয়েও অনেক অনেক উপরে। এতে আমার মূর্খতা বা মূঢ়তাও যদি প্রকাশ পায় তবে এই মূর্খতা বা মুঢ়তার জন্য আমার কোন লজ্জা নেই।

কাব্যের পৃথিবীতে প্রবেশ করে যে বড় বড় লাভগুলো হয়েছে তার একটি হচ্ছে নতুন নতুন মানুষের বন্ধুত্ব লাভ। কবিতাপ্রেমীরা কবিতার টানেই যেন একজন আরেক জনের কাছে চলে আসেন। আমার জীবনে এর বড় প্রমান আমার সাথে অন্য পাণ্ডবদের বা যিনি বেপথু পাণ্ডবকে গৃহী করেছেন তাদের সাথে আমার আজকের এই সম্পর্ক।

আজ বিশই সেপ্টেম্বর। আজ তৃতীয় পাণ্ডব আর আমার সংসার-সম্রাজ্ঞীর জন্মদিন। কাব্যলক্ষী বাকী পাণ্ডবদের বা তাদের ঘরণীদের অধরা থাকলেও আশ্চর্যজনক ভাবে শুধুমাত্র এই দুইজনের জন্য তা অনায়াস প্রয়াস। হরিকেল নিবাসী ইন্দ্রপুত্রের ঘরে লক্ষ্মী বিরাজ করলেও আজ আর সেখানে কাব্যলক্ষ্মী থাকেন কিনা জানি না। হয়তো তারই অবহেলা বা সুভদ্রার প্রবল প্রতাপে তিনি অভিমান করেছেন। যে ঘরে ষষ্ঠ পাণ্ডবের বাস সেখানে কাব্যলক্ষ্মীর আরাধণা কঠিন ব্যাপার। তবু দিশা নিভৃতে তার সাধনা করে যান। কে জানে তার প্রচেষ্টায় এই ঘরেও হয়তো একদিন সত্যি সত্যি কাব্যলক্ষ্মী প্রতিষ্ঠা পেয়ে যাবেন।

“সবচেয়ে সুন্দর সোরাহীটি সাধারণ কাদা-মাটি দিয়ে তৈরী,
সবচেয়ে সুন্দর কবিতাটি সাধারণ শব্দগুলো দিয়ে তৈরী।“

(মধ্য এশিয়ার “আভর” ভাষার কবিতা থেকে)


মন্তব্য

ঝরাপাতা এর ছবি

লেখাটা দুর্দান্ত হয়েছে।


যে রাতে গুঁজেছো চুলে বেগুনি রিবন বাঁধা ভাট,
সে রাতে নরকও ছিলো প্রেমের তল্লাট।
. . . . . . . . . . . . . . . . . . (আবু হাসান শাহরিয়ার)


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

যার যার জন্মদিন তারে তারে শুভেচ্ছা

আর

কবিতাপ্রেমী মানুষদের মধ্যে তারাই হতভাগা যারা কবিতার রসে নিমজ্জমান কিন্তু এক লাইন কবিতাও লিখতে পারেন না।

এই কথাটা একেবারেই উল্টা
যারা কবিতা লেখে তারা কবিতার ভেতরে ঢুকতে পারে না
কবিতার মজটাও পায় না
যারা কবিতা লেখে না তারাই ধরতে পারে কবিতা ঠিক কোনখানে কবিতা হয়ে উঠে

আর
পুরো লেখাটা অনেক বেশি চমৎকার

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

যেহেতু নিজে কবিতা লিখতে পারি না তাই আপনার বক্তব্যের জোর প্রতিবাদ করতে পারছিনা। কিন্তু একজন কবি তো একই সাথে একজন কাব্য-পাঠকও। তাহলে তিনি রসটা পাবেন না কেন? আর রসটা যদি তিনি না-ই পান তাহলে নিজের কবিতায় নতুন রসের যোগান দেন কিভাবে? রস চুরি করার জিনিষ নয়, বোধের ব্যাপার। যিনি নিজেই অনুভবটা করতে পারেন না তিনি বোধের ঊন্মেষ ঘটাবেন কি করে?

আপনার গদ্যের সাথে আমার পরিচয় আছে, কাব্যের সাথে নয়। আপনি যদি কবি হিসেবে এই মন্তব্য করে থাকেন তাহলে অনুগ্রহ করে বিষয়টা বুঝিয়ে বলবেন কি? আমি কবিদের ঈর্ষা করি তবু সাহায্যের জন্য তাদের কাছেই হাত পাততে হয়।

===============================
তোমার সঞ্চয় দিনান্তে নিশান্তে পথে ফেলে যেতে হয়


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

কবিদের কবিতাপাঠ নির্মোহ হয় বলে আমার মনে হয় না
তারা কিছু কবিতা পড়েন যে কবিদের তারা ব্যক্তি হিসেবে পছন্দ করেন তাদের এবং পড়ার পরে একটা গড় প্রসংশা করেন
আর কিছু কবিতা পড়েন কবিতার খুঁত ধরার জন্য

আর কিছু কিছু কবিতা পড়নে আগের জেনারেশনের যাতে কবিতার সাথে তাদের যোগাযোগ আছে সেটা প্রমাণ করতে পারেন

কিন্তু আমি কোনো কবিকে অন্যকারো নতুন কোনো ভালো কবিতা আবিষ্কার করতে দেখিনি
তারা যে কবিতাগুলোকে ভালো বলেন। খেয়াল করলে দেখা যাবে সেগুলো মূলত বিভিন্ন সময় সমালোচক এবং পাঠকদের আবিষ্কার করা কবিতা

কোনো কবিই অন্য কোনো কবির কোনো নতুন কবিতাকে ভালো বলে আবিষ্কার করেছেন বলে আমার জানা নেই

০২

আমি কবিতা একেবারেই পড়ি না এখন
আর লিখিও না

জিফরান খালেদ এর ছবি

হাহাহা... লীলেন ভাই তো ফাটায়া দিলেন...

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

মাফ করবেন, এতে কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর হল না। তর্ক করার ইচ্ছে আমার নেই, তবে জানার ইচ্ছে আছে। আপনি যেহেতু কবিতা লিখতেন তাই আপনি একটু ভাবলেই উত্তরটা দিতে পারার কথা। আর যদি সেটুকুও ভাবতে না চান তাহলে আর কি করা! আবার কখনো কোন কবিকে পেলে তাকে সাধতে হবে।

===============================
তোমার সঞ্চয় দিনান্তে নিশান্তে পথে ফেলে যেতে হয়


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রণদীপম বসু এর ছবি

“সবচেয়ে সুন্দর সোরাহীটি সাধারণ কাদা-মাটি দিয়ে তৈরী,
সবচেয়ে সুন্দর কবিতাটি সাধারণ শব্দগুলো দিয়ে তৈরী।“

সহজ কথা যায় না বলা সহজে। সেটাও পারেন কেবল কবিরাই । যিনি সত্যিই কবি।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

হাসান মোরশেদ এর ছবি

জানিয়ে গেলাম , আমি ও আছি আপনার দলে ।
পড়তে পারি, পড়তে হয়,পড়তে থাকি কবিতা- কিন্তু লিখতে পারিনা যে মন খারাপ
-------------------------------------
"শিয়রের কাছে কেনো এতো নীল জল? "

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

কবিতা লিখতে না পারার দুঃখতো আছেই, তবু তা পড়তে যে পারছি, রস নিতে পারছি, এও কম না। একটা জীবন না হয় কবিতা পড়েই পার করি।

===============================
তোমার সঞ্চয় দিনান্তে নিশান্তে পথে ফেলে যেতে হয়


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- ক্রীতদাসই থেকে যাবো আজন্ম! মন খারাপ

আচ্ছা, পাণ্ডবত্ব লাভের ব্যাপারটা একটু বলেনতো।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

জিফরান খালেদ এর ছবি

আমারো একই কথা... এই ব্যাপারটা না জানলেই নয় দেখি...

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

পাণ্ডবত্ব লাভের ব্যাপারটা কি তাতো জানতে চাইতেই পারেন। তবে উত্তরটা গুছিয়ে, ছোট করে এখানে দিতে পারব না। আশা করি অদূর ভবিষ্যতে এগুলো নিয়ে পোস্ট দিতে পারব।

===============================
তোমার সঞ্চয় দিনান্তে নিশান্তে পথে ফেলে যেতে হয়


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

হুম । সেই ভালো।
যখনই পান্ডবদের কথা বলেন, কেমন রহস্যময় মনে হয়।

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

যুধিষ্ঠির এর ছবি

এই প্রসঙ্গে একটা শের মনে পড়ে গেলো...

খুশবু কাঁহাসে অতি হ্যায় মুঝে মালুম নেহি,
আউর শের কি চলন ক্যায়সি হ্যায়, সামাঝমে আতি নেহি

কবিতার চলাফেরা তো এরকমই হবে, দূর থেকে ভেসে আসা হালকা সুগন্ধের মত, কখনো ধরা যাবে কখনো যাবে না। পাণ্ডবদের মতই রহস্যময়... আবেগের কোন অভিধান নেই, তাই বেরসিক পাঠক জব্দ...

প্রিয় সহপাণ্ডব, বেশ ভালো হল লেখাটা।

জীবনানন্দ প্রসঙ্গে, যাদের "সমগ্র"টার দশা ষষ্ঠ-র বইটার মত, বা যাদের হাতের কাছে সেটাও নেই, তাদের জন্য এই জায়গাটা

এক লহমা এর ছবি

মনের মুকুরে একটা অসাধারণ ব্যাপার! মনের মুকুরে একটা অতি যাচ্ছেতাই ব্যাপার - ঘুমাতে যাওয়ার সময় লগইন করিয়ে ছাড়ল। হাসি

ইচ্ছে হচ্ছিল তোমার লেখাটা চলতে থাকুক, চলতেই থাকুক।

তোমার সংসার-সম্রাজ্ঞীর জন্মদিন উপলক্ষে আগাম শুভেচ্ছা।

তোমার দিশা ঠিক রাখা, নিভৃত কাব্য সাধক দিশার কাব্য-র সাথে পরিচয়-এর আকাঙ্ক্ষা জানিয়ে রাখলাম।

বোদলেয়ার বলেছিলেন - এমন কি গদ্য লেখার সময়ও কবিতাকে না ছাড়তে। “Always be a poet, even in prose.” সমস্ত চমৎকার গদ্যলেখার ক্ষেত্রে এটা সত্য। তোমার অনবদ্য গদ্যগুলির মধ্যের কবিকে যদি কোন পাঠক না পেয়ে থাকেন, সেটা পাঠকের অনবধানতা, তাঁর কমতি।

একটা পুরোনো কিছু পড়াই (নূতনের দেখা নেই বলে) -

নৈমিত্তিক 

অবধারিত আর্তনাদ, খরখরে চোখ
যেন  বরফ আর আগুন ছুঁয়ে যাচ্ছে একসাথে  - 
“ কি লাভ হোলো? সেই ভুলে গেলে? ” 

আর কি! 

এক কাপ চা, একটু আদা দিয়ে
কপালে হাতের ছোঁয়া 
“ বলেছিলাম, তোমার ঠান্ডা সহ্য হয় না ” -

এই তো!

সামনে এসে জামাটা একটু টেনে দিলে
অবাধ্য চুল আঙ্গুলের চাপে যতটা বসে
“ ইচ্ছে করে, বাড়িতেই রেখে যাই ” -

এ টুকুই !

আধো ঘুমের ভিতর জেগে উঠে
মাথাটা টেনে বুকের মাঝে
“ঘুম আসছে না? এসো। ”

শান্তি! 

ভালবাসার কতটুকু আর লাগে!

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এক দশক আগের লেখায় নতুন মন্তব্য পাওয়া যে কী আনন্দের! অসংখ্য ধনব্যবাদ।

আপনার শুভকামনা যথাস্থানে পৌঁছে দেয়া হবে।

দিশার কিছু কবিতা সচলেও প্রকাশিত হয়েছিল। আপনাকে তার সন্ধান জানিয়ে দেবো।

যিনি কবিতা লিখতে জানেন তাঁর গদ্যেও কবিতা ধরে রাখতে পারেন। আর আমার শ্রেণীর গদ্য লিখিয়েদের প্রচেষ্টা ওই কবিতাটার মতো -

ফল বহিয়াছো, পাওনিকো স্বাদ - হায় রে ফলের ঝুড়ি
লক্ষ বছর ঝরণায় ডুবে রস পায় নাকো নুড়ি

শেষটা যে ভাবে করলেন তার জন্য গুরু গুরু


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সোহেল ইমাম এর ছবি

একলহমার মতই মনে হচ্ছিলো লেখাটা চলতেই থাকুক, চলতেই থাকুক।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।