সেলস - তাবলীগ স্টাইল

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি
লিখেছেন ষষ্ঠ পাণ্ডব (তারিখ: শনি, ১৪/০২/২০০৯ - ৪:৫০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কয়েকদিন আগে ঢাকার বাইরের আমাদের একজন বড় কাস্টমার এসেছেন, ব্যবসার অবস্থা নিয়ে কথা হচ্ছে। হঠাৎ কাস্টমার ভদ্রলোক তাবলীগের উপর বেশ ক্ষেপে গেলেন, যদিও তিনি যথেষ্ঠ ধার্মিক মুসলিম। জিজ্ঞেস করলাম, “ব্যাপার কী? তাবলীগের উপর ক্ষেপলেন কেন”? উত্তর দিলেন, “আর বলবেন না! এদের জন্য ঠিকমত ব্যবসা করাই মুশকিল হয়ে যাচ্ছে”। আমি ভাবলাম তার এলাকায় তাবলীগের গাস্ত (প্রচারণা) বুঝি খুব জোরে-শোরে হচ্ছে, রাস্তায় দাঁড় করিয়ে বা তার অফিসে বসে বয়ান করে সময় খেয়ে দিচ্ছে। কিন্তু ভদ্রলোকের অভিযোগের বিস্তারিত শুনে আমি তো থ!

ভদ্রলোকের বয়ান অনুযায়ী, আজকাল তাবলীগের এক শ্রেণীর হুজুর আমাদের ব্যবসা যে সব পণ্য নিয়ে, সেগুলো ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে কিনে নিয়ে অন্য সব জেলা-উপজেলায় বিক্রি করছেন। এতে নাকি ব্যবসায়ে একটা অসম প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। তার অভিযোগে আমি একটু ধন্দে পড়ে গেলে তিনি ব্যাপারটা সহজভাবে ব্যাখ্যা করলেন।

আমাদের ব্যবসায়ের পণ্যগুলোর একটা বড় অংশ হচ্ছে ছোট আকারের মেশিন এবং নানা রকম স্পেয়ার পার্টস। তাবলীগের একশ্রেণীর হুজুর ঐসব মেশিন-স্পেয়ারস ঢাকা-চট্টগ্রাম থেকে বেশ দরাদরি করে কিনে তাদের বিশাল বোঁচকাতে পোরেন। তারপর সেই বোঁচকা নিয়ে চিল্লাতে বা “দিন লাগাতে” বের হয়ে পড়েন। তারা থাকেন মসজিদে (বোঁচকাসহ), খান মসজিদে (দলের খাবার), বেশির ভাগ যায়গায় যান হেঁটে বা বাসে। ফলে তাদের অপারেশনাল কস্ট পড়ে কম, ওভারহেড বলে কিছু নেই। পক্ষান্তরে সেলসের জন্য আমাদের সেলস এক্সিকিউটিভদের বেতন-বোনাস, টিএ/ডিএ, সেলস রিপ্রেজেনটেটিভদের কমিশন, গোডাউন খরচ, ডিলার কমিশন, অফিস ওভারহেড, মার্কেট প্রমোশন হ্যানো-ত্যানো হাজারোটা খরচ আছে। ফলে তাবলীগের ঐসব হুজুরেরা প্রত্যন্ত এলাকার বাজারে একই জিনিষ অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক দামে বিক্রি করতে পারেন। ফলে জেলা পর্যায়ের ডিলাররা তাদের উপজেলা পর্যায়ের কাস্টমারদের কাছে আর জিনিষ বিক্রি করতে পারছেন না।

আবার তাবলীগের ঐসব হুজুরেরা বেশ দরাদরি করে যেসব জিনিষ কেনেন তার বড় অংশই হচ্ছে নকল পণ্য। এখানে ঐসব পণ্যের ব্যাপারে তাদের অজ্ঞতা আর কমদামে জিনিষ কেনার প্রবণতা কাজ করে। প্রান্তিক পর্যায়ে নকল পণ্য সহজেই বিক্রি করা যায় বলে বিভিন্ন ব্রাণ্ডের ডিলাররা এতে খাবি খেতে থাকেন। একই হুজুর একই এলাকায় বার বার যান না বলে নকল পণ্য বিক্রির জন্য তাদের ধরাও যায় না। আবার সাধারণ মানুষদের হুজুরদের সততার ব্যাপারে অন্ধ বিশ্বাস থাকায় কেউ নকল পণ্য নিয়ে ধরা পড়লেও কোন ব্যবস্থা নেয়া যায় না।

তাবলীগের হুজুরেরা সাধারণতঃ অন্যের দান-উপহার নেন না। তবে দল পর্যায়ে ধনী সদস্যর পক্ষ থেকে সবার জন্য বা দরিদ্র সদস্যর জন্য ব্যয়ের কালচার আছে। এখন দলগুলো যদি নিজেদের খরচ নিজেরাই উপায় করার রাস্তা ধরেন তাহলে তা সুস্থ্য পথেই হওয়া উচিত। ধর্মের আড়ালে বা মসজিদকে ব্যবহার করে বা মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা করা কোন ভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।

ধর্মকে বর্ম করে ব্যবসা করার, মসজিদকে গোডাউন হিসাবে ব্যবহার করার এহেন অভিনব কায়দা যার মাথা থেকে এসেছে সে যে এলেমদার লোক সন্দেহ নেই। সিদ্ধান্তটি কেন্দ্রিয় না ব্যক্তি পর্যায়ের তা জানি না। কেন্দ্রিয় হলে এ’নিয়ে ভাবার বিষয় আছে। ব্যক্তি পর্যায়ে হলে তা আরো দশজন হুজুরের মধ্যে ছড়িয়ে পরা বিচিত্র কিছু না। এর consequence কী হবে তা নিয়ে যুগপৎ কৌতুহল আর শংকায় আছি।

বিঃদ্রঃ তাবলীগের হুজুরদের দিয়ে সচলের কেউ নিজেদের পণ্য সেলস-মার্কেটিং করানোর চেষ্টা করলে এই পোস্টের লেখককে রয়্যালটি দিতে হবে।


মন্তব্য

রায়হান আবীর এর ছবি

দারুন আইডিয়া তো...

=============================

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ব্যবহার করতে গেলে আমাকে রয়্যালটি দিতে হবে।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

বাউলিয়ানা এর ছবি

ছাত্রাবস্থায় তাবলীগের লোকজনদের দেখলেই একধরনের সমীহ হতো..
মনে হতো একদম মাটির মানুষ..
যত দিন যাচ্ছে, দেখা যায় সেই মাটিতে যথেষ্ট পরিমান পোকা-মাকড়ের বসতি..

দৃশা এর ছবি

মুজিব ভাইয়ের দেখছেন বই লইয়ায় পলাইয়া গেল! আর আমি এই জিনিস কাজে লাগাইলে তো টেরও পাইবেন না! তাইলে কিসের রয়্যালটি। দেঁতো হাসি
-------------------------------------------------------------
দুঃখ তোমায় দিলেম ছুটি...
বুক পাঁজর আজ ফাঁকা।
দুঃখ বিদায় নিলেও সেথায়...
দুঃখের ছবি আঁকা।

দৃশা

মাহবুবুল হক এর ছবি

ধর্মের আড়ালে বা মসজিদকে ব্যবহার করে বা মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা করা কোন ভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।

এ কথাটি মাওলান-মুফতিদের পছন্দ হবে না। তারা হাদিস কোরান দিয়ে প্রমাণ করতে পারবে যে বিষয়টিতে না-জায়েজ কিছু নেই। তবে আপনার বিঃদ্রঃ পড়ে হাসি থামাতে পারলাম না । এমন চালু একটি বিষয় সবাইকে জানানোর জন্য ধন্যবাদ। আশা করি সেজন্য রয়্যালটি দিতে হবে না।
.................................................................................................................
কোথাও রয়েছে যেন অবিনশ্বর আলোড়ন:
কোনো এক অন্য পথে - কোন্ পথে নেই পরিচয়;
এ মাটির কোলে ছাড়া অন্য স্থানে নয়;
সেখানে মৃত্যুর আগে হয় না

--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।

মাহবুবুল হক এর ছবি

পুনশ্চ : এমন চমত্কার একটি আইডিয়া আপনি কবিদের জন্য উপহার দিলেন যে বই মেলায় বেচাবিক্রি কমে যেতে পারে।
.................................................................................................................
কোথাও রয়েছে যেন অবিনশ্বর আলোড়ন:
কোনো এক অন্য পথে - কোন্ পথে নেই পরিচয়;
এ মাটির কোলে ছাড়া অন্য স্থানে নয়;
সেখানে মৃত্যুর আগে হয় না

--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।

স্নিগ্ধা এর ছবি

আমি "এহেন অভিনব কায়দা" য় সেলস বা মার্কেটিং করতে চাই না, চুরি করতে চাই না, কিছুই করতে চাই না ---

শুধু যার মাথা থেকে এহেন ফায়দা লোটার কায়দা বেরিয়েছে, ইট্টুস তাঁর পায়ের ধুলো নিয়ে বোয়মে রাখতে চাই - বাকী জীবনটা এনশাল্লাহ বুদ্ধির অভাবে আর কষ্ট পেতে হবে না !!!

এনকিদু এর ছবি

তাবলীগি দলটাও গেল । টাকার মজা বুঝে ফেলেছে । দুনিয়ার মায়া কঠিন জিনিস বাহে !


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

ডা: আলী র্মতুজা এর ছবি

না বাহে, এগুলো বিশ্বাস করাও পাপ, টাকার মজা তো জন্ম থেকেই সবাই জানে, মজা নিলে এতো দেরী কেনো ? দেথেন এখানে আবার জামায়াতে ইসলামি ঢুকে পড়লো কিনা? যারা আসল ধর্ম ব্যাবসায়ী.....

পলাশ দত্ত এর ছবি

বিষয়টা খুব ইন্টারেস্টিং। এবং বিপদজনক।

আবার তাবলীগের ঐসব হুজুরেরা বেশ দরাদরি করে যেসব জিনিষ কেনেন তার বড় অংশই হচ্ছে নকল পণ্য। এখানে ঐসব পণ্যের ব্যাপারে তাদের অজ্ঞতা আর কমদামে জিনিষ কেনার প্রবণতা কাজ করে। প্রান্তিক পর্যায়ে নকল পণ্য সহজেই বিক্রি করা যায় বলে বিভিন্ন ব্রাণ্ডের ডিলাররা এতে খাবি খেতে থাকেন। একই হুজুর একই এলাকায় বার বার যান না বলে নকল পণ্য বিক্রির জন্য তাদের ধরাও যায় না। আবার সাধারণ মানুষদের হুজুরদের সততার ব্যাপারে অন্ধ বিশ্বাস থাকায় কেউ নকল পণ্য নিয়ে ধরা পড়লেও কোন ব্যবস্থা নেয়া যায় না।
-এই জায়গাটা বুঝতে একটু সমস্যা হচ্ছে। প্রথমত, তাবলীগের হুজুররা আসল পণ্য বিক্রি করছেন, কিন্তু তাদের জীবনযাপনের স্টাইলের কারণে এক্ষেত্রে দামের ক্ষেত্রে আসল কোম্পানিটিকেই টেক্কা দিচ্ছেন; দ্বিতীয়ত, তারা নকল পণ্যও বিক্রি করছেন- বিষয়টা কি এরকম
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

হিমু এর ছবি

বুদ্ধিটা দারুণ।


হাঁটুপানির জলদস্যু

তানভীর এর ছবি

তাবলীগের মধ্যে যারা চিল্লায় গিয়ে ব্যবসা করে তারা যে আসলে তাবলীগ নয় বরং দুষ্ট একটা চক্র- এটা তাবলীগ সম্পর্কে যাদের সামান্য হলেও ধারণা আছে, তাদের বোঝার কথা। অন্যের অভিযোগের ভিত্তিতে আপনার পোস্ট, শিরোনাম- তাই ভাল লাগে নি বা 'ষষ্ঠপান্ডবসম্মত' মনে হয় নি। তাবলীগ স্টাইল না বলে বরং অন্যভাবে বিষয়টা তোলা যেত। তাবলীগ কোন রাজনৈতিক বা ব্যবসা সংগঠন নয় বা সে অর্থে সংঘবদ্ধ কোন সংগঠনও নয়। এখানে সবাই ব্যক্তিগতভাবে আসে স্রষ্টার উদ্দেশ্যে কিছু ব্যয় করার আশায়। এখন যদি কোন চক্র একে কেন্দ্র করে আর্থিক লাভের আশায় তাবলীগে যোগ দেয়, তবে তা নিঃসন্দেহে তাবলীগের আদর্শ থেকে বিচ্যুত। আপনারা যদি তেমন 'শংকিত' হন কাকরাইল মসজিদে আলাপ করে দেখতে পারেন। কিন্তু যেহেতু এখানে সবাই ব্যক্তিগত ও বিচ্ছিন্নভাবে আসে, তাই কেন্দ্রীয়ভাবে কতদূর, কী করা সম্ভব- জানি না।

আর তাবলীগ যারা করে তাদের শুধু ধর্মীয় চেহারায় না দেখে আর দশটা মানুষের মত দেখলেই অনেক কিছু বোঝা সহজ হয়ে যায়। একটা উদাহরণ দেই। আমাদের এক খুব ফাযিল বন্ধু ছিল, যাকে আমরা 'শয়তানের হাড্ডি' বলে ডাকতাম। একদিন বলা-কওয়া নেই, দেখি সে তাবলীগের হুজুর হয়ে গেল। আমরা তো খুবই অবাক। সে কেন হঠাৎ হুজুর হয়েছিল, আমি জানি না। কিন্তু হুজুর হওয়ায় তার দুষ্টামীর হাত থেকে বাঁচাতে আমরা খুবই স্বস্তি পেয়েছিলাম। কিন্তু যে আগে সারাজীবন নানা কিসিমের বাঁদরামী করে গেছে, সে কি হুজুর হয়েও সবসময় চুপ থাকতে পারে? তাই, মাঝে মাঝে দেখতাম তার অতীত হঠাৎ করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠত। বাইরের একটা লোক তখন হয়ত ভাবত- 'আরে হুজুর ব্যাটা এত বদমাইশ!' কিন্তু আমরা জানি, আগের তুলনায় এগুলাতো ডাল-ভাত। তাবলীগ যারা করে তাদের বেশিরভাগের ব্যাকগ্রাউন্ডই এরকম, এমনকি অনেকে আছে যারা অতীতে নানা অপরাধের সাথে যুক্ত ছিল। হয়তো জীবনের কোন ঘটনা, কোন দুঃখবোধ তাদের তাবলীগে নিয়ে এসেছে। মাঝে মাঝে এদের স্খলনে তাই তাবলীগের কোন ভূমিকা না থাকলেও, আমরা তাবলীগকে দোষ দিয়ে ফেলি এবং স্বীকার করছি আমিও এর ব্যতিক্রম ছিলাম না। আমার সেই বন্ধুটিকে আমি আগে কখনো শ্রদ্ধা না করলেও, এখন করি। আমার চেয়ে সুবিধাবঞ্চিত, সমাজের নানা সু্যোগবঞ্চিত হয়েও জীবনকে পালটে ফেলার যে দুঃসাহস তার আছে, আমার তা নেই; কখনো ছিল না।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

প্রিয় তানভীর, আপনার মন্তব্যর প্রসঙ্গে বলছিঃ

১। তাবলীগ সম্পর্কে আমার ধারনা খুব একটা কম নয়। আমি দীর্ঘদিন ধরে এদের সাথে মিশেছি, থেকেছি। এ’কথা ঠিক যে এরা “দুনিয়াবী” জিনিষগুলোর প্রতি মোহগ্রস্থ নন, তাই একজন সৎ তাবলীগ চিল্লায় গিয়ে ব্যবসা করবেননা। পাশাপাশি তাবলীগের স্বার্থকে এরা বড্ড বেশি বড় করে দেখেন। সেই দেখায়, চিল্লায় গিয়ে ব্যবসা করাকে তাবলিগের জন্য প্রয়োজনীয় মনে হলে তারা তাই করবেন। একটা উদাহরণ দেই। আমার এক বন্ধুর পিতা বৎসরে বেশ কয়েকবার পূর্ণ চিল্লা দিতে (৪০ দিন) ঘর থেকে বের হতেন। তিনি কিন্তু চিল্লা শেষে অফিসে ফিরে ঐ চিল্লার দিনগুলোর বেতনও তুলতেন। অফিসে অনুপস্থিত থেকে, কাজ না করে এই বেতন নেয়া কে কিন্তু তিনি নাজায়েয মনে করতেন না। এ’নিয়ে তার অনুশোচনাও ছিল না। একই ব্যাপার আমার যেসব বন্ধু তাবলীগ করেন তাদের মধ্যেও দেখেছি। এটি সম্ভবতঃ তাদের কেন্দ্রিয় সিদ্ধান্তের অংশ। ব্যবসার ব্যাপারটি যদি কেন্দ্রিয় সিদ্ধান্তের অংশ হয় তাহলে অবশ্যই এতে আপত্তির ব্যাপার আছে।

২। পোস্ট এবং এর শিরোনাম আপনার খারাপ লাগলে আমি দুঃখিত। এটি “ষষ্ঠপাণ্ডবসম্মত” মনে না হলে তার ব্যর্থতাও আমারই। তবে আমি গয়রহ সকল তাবলীগকে বা তাদের প্রতিষ্ঠানকে দোষারোপ করিনি। আমি জানি বিষয়টি স্পর্শকাতর তাই সংশয়সূচক শব্দই বেশি ব্যবহার করেছি। লেখাটি একেবারে শোনা কথার উপর নির্ভর করে নয়। বিষয়টির সত্যতা যাচাই করা হয়েছে। তবে সেই পর্যবেক্ষণ নিয়ে কথা বলে পোস্টের কলেবর বড় করার কোন প্রয়োজন মনে করিনি।

৩। তাবলীগ নিঃসন্দেহে একটি সুসংগঠিত প্রতিষ্ঠান। এর সংঘ কাঠামো, নেতৃত্বের ধরণ আমাদের পরিচিত অন্য সব সংগঠণের ন্যায় নয় বলে অন্যরকম লাগে। একটু খেয়াল করলেই তা বুঝতে পারবেন। আমি এব্যাপারে এই পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করতে চাচ্ছি না।

৪। তাবলীগে গিয়ে যদি কেউ সৎ হয়ে যান তাহলে সেটি তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। হয়তো সেখানে এই মুভমেন্টটারও ভূমিকা আছে। সেটি নিয়ে বলার কিছু থাকতে পারেনা। তবে তাদের সিস্টেমে যে কিছু গলদ আছে সেটা বোঝা যায় নিদারাবাদ হত্যাকাণ্ডের নায়ক কুখ্যাত তাজুল যখন কাকরাইল মসজিদে আশ্রয় পায়। এখানে তাবলীগের কোন দোষ নেই। শুধু তাদের সিস্টেমটা কিছুটা ত্রুটিযুক্ত। সেই ত্রুটির ফোকর গলে কেউ ব্যবসা করলে তাতে তাবলীগের দোষ হয় না। আমিও সেই দোষ দেই নি।

৫। আমরা যারা এই দেশে জিনিষ-পত্র বেচা-বিক্রির কাজ করি তারা জানি এখানে এমন অনেক এলেমদার মানুষ আছেন যারা যেন-তেন-প্রকারেণ ব্যবসা করেন। “হালাল” সাবানের কনসেপ্ট এমন সব এলেমদারদের মাথা থেকেই এসেছে। ইংলিশ মিডিয়াম মাদ্রাসা বা ইসলামী ক্যাডেট কলেজের মত হাজারোটা ধর্মগন্ধী প্রডাক্ট এরা বাজারে ছেড়েছেন। তাবলীগের সরলমনা মানুষদের নিয়ে এমন এলেমদারদের কেউ যদি বাজারে নেমে থাকেন তাহলে অবাক হবার কিছু নেই।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

@তানভীর

তাবলীগ কোন রাজনৈতিক বা ব্যবসা সংগঠন নয় বা সে অর্থে সংঘবদ্ধ কোন সংগঠনও নয়। এখানে সবাই ব্যক্তিগতভাবে আসে স্রষ্টার উদ্দেশ্যে কিছু ব্যয় করার আশায়।

এটা বোধহয় ভুল। তাবলীগ-এর পুরো কার্যক্রম একটি সাংগঠনিক ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে। সবকিছুই কেন্দ্র থেকে চালিত হয়। আন্তর্জাতিক কমিটিও আছে। মানুষগুলো ব্যক্তিউদ্যোগে গেলেও কাকরাইল মসজিদ থেকে দল ভাগ করে দেওয়া হয়। অঞ্চল ভাগ করা হয়।
মার্কেটিং-এর আইডিয়াটা ব্যক্তি উদ্যোগে বা কেন্দ্রীয় উভয়ভাবেই হতে পারে।
এখন তাবলীগের খরচ মেটাতে যদি তারা আয় ইনকামের পথ খুঁজে নেন, তাদেরকে দোষ দেওয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে ব্র্যান্ডগুলোকেই খুঁজে নিতে হবে নতুন পলিসি।

তাবলীগে সবাই স্রষ্টার উদ্দেশ্যে কিছু ব্যয় করার আশায় আসে না হয়তো। তাবলীগে যায় কয়েক পদের লোক।
প্রথম অংশ স্কুল কলেজ থেকে সদ্য বের হওয়া। এলাকাভিত্তিক তাবলীগ অংশগুলো স্কুলে স্কুলে গিয়ে গিয়ে দাওয়াত দিয়ে দিয়ে আনে। এবং এই ছাত্রদের বেশিরভাগই যায় স্রেফ বিষয়টা দেখতে। তাবলীগওয়ালারাও এটা জানে। কিন্তু তারা এটাও জানে যে এদের মধ্যে দুয়েকজন একেবারে নিবেদিতপ্রাণ তাবলীগার হয়ে যায়।
আরেকটা অংশ যায় বুড়ারা। যারা দ্বীনের রাস্তায় নিজেকে উৎসর্গ করে। তারা একটার পর একটা চিল্লা করতেই থাকে। ফেরতের নাম গন্ধ নাই। মৃত্তুর আগ পর্যন্ত তাবলীগেই কাটায়।
কিছু লোক আছে যারা সাংগঠনিকভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত। নিবেদিতপ্রাণ কর্মী। এদের মধ্যে অনেক ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার অধ্যাপকও আছেন।
আর কিছু আছে অপরাধী, আসামী। অনেকে স্রেফ গা ঢাকা দিতে তাবলীগকে ব্যাবহার করে।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

মাহবুবুল হক এর ছবি

সহমত। শুধু ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি নয় তাবলিগের সদস্যদের মধ্যে গোষ্ঠীস্বার্থ প্রাধান্য দেয়ার প্রবণতাও আছে। এটি ক্রমশ বাড়ছে।
.................................................................................................................
কোথাও রয়েছে যেন অবিনশ্বর আলোড়ন:
কোনো এক অন্য পথে - কোন্ পথে নেই পরিচয়;
এ মাটির কোলে ছাড়া অন্য স্থানে নয়;
সেখানে মৃত্যুর আগে হয় না

--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- শুনেছি (এবং পত্রিকা মারফত পড়েছি) অনেকে খুন-খারাবী করে গা ঢাকা দিতে মুখভর্তি দাড়ি গজিয়ে তাবলীগে চলে যায়। এখন এদেরকে দিয়ে যদি তাবলীগের বাকি সদস্যদের বিচার করা হয় তাহলে বোধহয় ব্যাপারটা খানিকটা অন্যায় হয়ে যাবে।
শ্রদ্ধেয় ষষ্ঠ পাণ্ডবকে বোধহয় এর বেশি আর কিছু বলার দরকার নেই এই অধমের। হাসি
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

প্রিয় গোধুলী, আমার লেখাটা যদি আপনার আরেকবার পড়ার সময় হয় তাহলে দেখতে পাবেন তা সংশয়পূর্ণ সব শব্দে ভরপুর। আমি এমন কি ব্যবসা করা হুজুরদের প্রসঙ্গ বলার সময়ও প্রতিবার "এক শ্রেণীর", "ঐসব" এমন সব শব্দ ব্যবহার করেছি। আমি জানি বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর তাই যথাসম্ভব সতর্কতা অবলম্বনের চেষ্টা করেছি। এরপরও যদি আপনার মনে হয় আমি সাধারণীকরণ করার চেষ্টা করেছি, তাহলে বলতেই হয় আমার ভাষা আমার মনোভাবকে প্রকাশ করতে ব্যর্থ হয়েছে। দুঃখিত।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

তানবীরা এর ছবি

মার্কেটিং সাবজেক্টটা কি পড়ছিলাম তালগোল পাকায় যাচ্ছে। তবে মার্কেটিং মনে হচ্ছে দিন দিন পশ্চিমা বিশ্ব পিছায়ে পড়তেছে। যেটা আজকে বাঙ্গালীরা করতেছে তাহা ইউরোপীয়ান কোনদিন করতেই পারবে না মুহাহাহাহাহ

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

ভূঁতের বাচ্চা এর ছবি

চিল্লার দাওয়াত কেউ আমাকে দিতে আসলেই দাবড়ানি দেই আমি !
এখন দেখতেসি চিল্লা নিয়েও ব্যবসা ! এদের ধর্মীয় মনোভাব নিয়েই এখন প্রশ্ন করতে হয় !
------------------------------------

--------------------------------------------------------

MIZAN এর ছবি

MODU JOKON KAW PAN KORE TOKON BUJE AR SHAD....

UPO RER VAIA RA CHOLEN NA PRACTICALLY TABLIG TA KI DAKE ASI... CHOEN NA ODER SATE, VESI NA 3 DINER JONNO..........

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।