খরকোশ কেন মামুনের দেখা পায় না?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি
লিখেছেন ষষ্ঠ পাণ্ডব (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৯/০৩/২০০৯ - ৫:২৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

শহীদুল জহিরের উপন্যাস “মুখের দিকে দেখি”(২০০৬)-তে আমরা জাদুবাস্তবতার যা কিছু দেখে চমৎকৃত হই, চিন্তান্বিত হই তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দুইজন মামুনের উপস্থিতি। একজন মামুনুল হাই পুরোনো ঢাকার ভূতের গলির বাসিন্দা সিলভারডেল কেজি স্কুল-সেন্ট যোসেফ স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র, পরবর্তীতে ইস্টার্ণ ব্যাংকের এভিপি, জুলি ফ্লোরেন্সের নাছোড়বান্দা প্রেমিক, সাদাসিধে-নিপাট ভদ্রলোক। অন্যজন মামুন ওরফে কুতুব মিনার ওরফে আইবেক ওরফে খরকোশ, চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বাসিন্দা, এম ভি মায়ের দোয়ার কাপ্তান, দুর্ধর্ষ চোরাচালানী, ঠাণ্ডা মাথার খুনী, রিপু তাড়িত, হুরে জান্নাত আসমানতারার সাথে যার সম্পর্ক ঈদিপাস এষণায় তাড়িত। পুরোনো ঢাকার ভূতের গলির বাসিন্দা মিসেস জোবেদা রহমানের গর্ভজাত মামুন দি নিউ চন্দ্রঘোনা স মিল এণ্ড টিম্বার ডিপোটে কাঠের ভুষি আনতে গিয়ে দুইজন মামুনে পরিনত হয়। আমরা অবশ্য কাঠের ভুষির স্তুপ থেকে একজন মামুন হতে দুইজন মামুনের উদ্ভব দেখতে পাইনা অথবা ভুষি নিয়ে মামুনুল হাইয়ের ভূতের গলিতে প্রত্যাবর্তন প্রত্যক্ষ করি না। তবে ঘটনা প্রবাহে আমরা বুঝতে পারি যে, দি নিউ চন্দ্রঘোনা স মিলের কাঠের ভুষির স্তুপ থেকে মামুনুল হাই ভূতের গলিতে প্রত্যাবর্তন করে আর খরকোশ সাতকানিয়ার পথে রওয়ানা হয়।

যেহেতু মামুনুল হাই নিজের অবস্থানেই বাস করে তাই নিজের অস্ত্বিত্ব বা পরিচয় নিয়ে তার মধ্যে কোন সঙ্কট সৃষ্টি হয় না। দি নিউ চন্দ্রঘোনা স মিলের দুইজন শ্রমিক, ইদ্রিস আর মকবুল, মিসেস জোবেদা রহমানের কাছে মামুনের গন্তব্য ও পরিচয় সম্পর্কে সংশয় সৃষ্টি করলেও তা হালে পানি পায় না মামুনুল হাইয়ের সশরীর উপস্থিতির কারণে। সংশয়টির পুনরায় উদ্ভব হয় যখন বহু পরে খরকোশ আত্মপরিচয় সঙ্কটে পড়ে এবং ভূতের গলিতে মিসেস জোবেদা রহমানের কাছে এসে দাবী করে, “আমি আপনের চেলে”। এই পর্যায়ে এসে আমরা দেখতে পাই খরকোশ মিসেস জোবেদা রহমানের কাছে বারবার আসে, টাকার বস্তা আনে, দামী গাড়ি আনে, বান্দরের সাথে অসম লড়াই করে, মামুনের আশৈশব প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী মাঙ্কি বয় চাঁন মিঞার সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু আশ্চর্যের সাথে আমরা লক্ষ্য করি, খরকোশের সাথে মামুনুল হাইয়ের কোনভাবেই সাক্ষাত হয় না, ফোনেও কথা হয় না। উপন্যাসের শেষে এসে সব চরিত্র যখন পরিনতি পেতে যাচ্ছে তখনও মামুনুল হাই ঢাকাতেই থাকে, খরকোশ সম্ভবত সাতকানিয়ার দিকে রওয়ানা হয়। এমন কি দুইজনের ঢাকা অবস্থানকালে একজন অন্যজনের ব্যাপারে কোন প্রশ্নও তোলে না। তাই স্বাভাবিকভাবেই আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে এই দুই মামুন আসলে কে বা কারা? তারা কি আসলেই দুইজন মানুষ? কেনই বা তাদের একজনের সাথে আরেকজনের দেখা হয় না?

দি নিউ চন্দ্রঘোনা স মিলের কাঠের ভুষির স্তুপ থেকে আমরা মামুনুল হাইকে ভূতের গলিতে প্রত্যাবর্তন প্রত্যক্ষ না করলেও আমরা জানি সে নিশ্চিতভাবেই ঘরে ফিরেছিল। আর খরকোশকে সাতকানিয়ার পথে রওয়ানা হতে এবং তার সেখানকার জীবনের বিস্তারিত বিবরণ আমরা লেখকের কাছ থেকেই পাই। তাহলে ধরে নিতে হবে যে দি নিউ চন্দ্রঘোনা স মিলের কাঠের ভুষির স্তুপে মামুন অথবা খরকোশ যখন ঘুমিয়ে ছিল, তখন মামুনুল হাই সেখান থেকে উঠে নিজের ভুষিভরা বস্তা নিয়ে ভূতের গলিতে ফিরে গিয়েছিল আর ঘুমন্ত খরকোশ সারের বস্তা আর কাঠের ভুষির সাথে ট্রাকে করে সাতকানিয়া রওয়ানা হয়ে যায়। দি নিউ চন্দ্রঘোনা স মিলের কাঠের ভুষি আনতে যাওয়া মামুনুল হাই কী করে দুইজন মানুষে পরিনত হয়?

ত্রৈলোক্যনাথ মূখোপাধ্যায়ের “ডমরু-চরিত”(১৯২৩)-এ আমরা দেখি গাছে ঝোলা সাধু সবুজ রঙের ধোঁয়া দিয়ে ডমরুধরের অন্নময় কোষ হতে প্রাণময় কোষকে বের করে ফেলেন। ফলে ডমরুধর বায়ু দ্বারা গঠিত সূক্ষ্ম বা লিঙ্গ শরীর লাভ করেন। আর সাধুর প্রাণময় কোষ ডমরুধরের অন্নময় কোষে প্রবেশ করে নিজেই ডমরুধর সেজে বসেন। এই প্রক্রিয়ায় ব্যক্তির সূক্ষ্মত্ব লাভের জন্য কমপক্ষে দুইজন মানুষ প্রয়োজন হয়, যেখানে অন্ততঃ একজন অন্যজনের দেহটিকে অধিকার করে। মামুনুল হাইয়ের ক্ষেত্রে কাঠের ভুষি কান্ডে আমরা একাধিক ব্যক্তির উপস্থিতি দেখতে পাই না। তাই এখানে সূক্ষ্ম শরীর ধারণের বা অন্যের দেহ ধারণের ত্রৈলোক্যনাথীয় থিয়োরী খাটেনা।

আবার বিভূতিভূষন বন্দোপাধ্যায়ের “দেবযান”(১৯৪৪)-এ যতীন যে সূক্ষ্ম শরীর লাভ করে জীবলোকের সমান্তরাল মরলোকে বাস করেন, সেখানে সূক্ষ্ম শরীর লাভ করার পূর্বশর্ত ব্যক্তির মৃত্যু। কাঠের ভুষি কান্ডে মামুনুল হাই মারা গিয়েছিল বলে আমরা জানতে পারি না, তাই ধরে নিচ্ছি সে তখন মারা যায়নি। তাই তার সূক্ষ্ম দেহ ধারণের প্রশ্নও ওঠে না। আর এইক্ষেত্রে সূক্ষ্ম দেহ ধারণ করলেও মোট ব্যক্তির সংখ্যা এক-ই থাকে, দুই হয় না। যেহেতু আমরা এখানে পরিষ্কারভাবে দুই লোকেশনে দুইজন মামুনের দেখা পাই। এবং তাদের কেউ সমান্তরাল মরলোকে নয় বরং একই সাথে একই জীবলোকে বাস করে। তাই এখানে সূক্ষ্ম দেহ ধারণ করে মরলোকের বাসিন্দা হবার বিভূতিভূষনীয় থিয়োরী খাটে না।

যদি দ্বিতীয় কোন ব্যক্তির উপস্থিতি না থাকে এবং দি নিউ চন্দ্রঘোনা স মিলের কাঠের ভূষির স্তুপে মামুনুল হাইয়ের মৃত্যু না হয়ে থাকে তাহলে দুইজন মামুনের উদ্ভবের ব্যাপারে আমরা আমাদের কল্পনার রাশকে একটু আলগা করে দিতে পারি।

হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তার সূত্রানুসারে যখন বস্তুর ভরবেগ জানা থাকলে একটি স্থানাঙ্ক ব্যবস্থায় তার অবস্থান আর নিশ্চিত করা যায় না। তাই জানা ভরবেগের কোন বস্তুর বেগ একটি নির্দিষ্ট স্থানাঙ্ক ব্যবস্থার (ধরা যাক কার্তেজীয়) সাপেক্ষে শুণ্য হলেও, অর্থাৎ মোট ভরবেগ শূণ্য হলেও, ঐ স্থানাঙ্ক ব্যবস্থায় তার অবস্থান আর x, y আর z দিয়ে নির্ধারণ করা যাবে না। তাহলে আমাদের চারপাশের চোখের দেখা পৃথিবীতে বস্তুর ভরবেগ আর অবস্থান নিয়ে অমন তোঘলকী কান্ড দেখতে পাইনা কেন? উত্তরটি আমরা জানি যে, অনিশ্চয়তার সূত্রের এই তোঘলকী রূপটি দেখতে হলে বস্তুকে হতে হয় অতি ক্ষুদ্র কণিকা আর বিদ্যমান প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবকটির মান অতি ক্ষুদ্র বলে (৬.৬২৬০৬৮৯৬X১০-৩৪)। তাই অতি ক্ষুদ্র বস্তু যেমন ইলেকট্রনের অবস্থান নিউক্লিয়াসের অষ্টদিকে একটা স্তরে মেঘের মত। আমরা জানি ইলেকট্রনটি সেখানে আছে কিন্তু নিশ্চিত করতে পারিনা ঠিক কোথায় আছে। আলোর বেগ, মহাকর্ষীয় ধ্রুবক ইত্যাদিকে না ঘাঁটিয়ে যদি প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবকের মান বেড়ে ২ বা ৩ এর মত বড় সংখ্যায় হলে আমাদের চারপাশের বড় বড় সব বস্তুর অবস্থাও ঐ ইলেকট্রনের মত হয়ে যাবে। সেখানে একজন মানুষ আমাদের কাছে আসলে আমরা তাকে আমাদের সব দিকেই দেখতে পাবো, কিন্তু নিশ্চিত করে বলতে পারবো না সে ঠিক কোথায় আছে। অনেকটা - “এইখানে সরোজিনী শুয়ে আছে; - জানি না সে এইখানে শুয়ে আছে কিনা”-র মত। এই একটা দেখার সাথে আরেকটা দেখার দূরত্ব যদি ভূতের গলি আর সাতকানিয়া হয় তাহলে, শুধু প্ল্যাঙ্ক সাহেবকে একটু কড়কে দিয়ে, দুইজন মামুনকে কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে । কিন্তু এই দুর্বল কাল্পনিক ব্যাখ্যাটি আমরা এখানে প্রয়োগ করতে পারি না। কারণ, অমনটা হলে মামুন আর খরকোশ আসলে একই ব্যক্তি হত এবং তারা প্রতি মুহূর্তে একই আচরণ করত। কিন্তু আমরা তো দেখতেই পাচ্ছি মামুন এবং খরকোশ দুইজন দুই ব্যক্তি এবং তাদের আচরণ এক নয়। সুতরাং বৃহৎ মানের প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবকের থিয়োরীও এখানে অচল।

আমরা যদি মায়াবাদের সত্যতাতে বিশ্বাস স্থাপন করি তাহলে মামুন বা খরকোশের মধ্যে যে কোন একজনের উপস্থিতিকে মায়া বলে ধরে নিতে পারি। সেক্ষেত্রে তাদের দুজনের দেখা হওয়াতে বাধা থাকার কথা না। কিন্তু তাতো হয় না। তাছাড়া প্রথম সত্ত্বার সাপেক্ষে দ্বিতীয় সত্ত্বার উপস্থিতি সংক্ষিপ্তও নয়। আর গোটা গল্পের কোথাও মায়াকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে এমন কোন প্রমাণও আমরা পাই না। বরং অধিকাংশ ঘটনাপ্রবাহ রূঢ় বাস্তব এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক সত্যের ন্যায়। তাই এই “মামুন প্রপঞ্চ”র ব্যাখ্যার জন্য মায়াবাদের আশ্রয় নেয়াও আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

মামুন এবং খরকোশের আচরণ ভিন্ন। তাদের এই ভিন্ন আচরণ থেকেই বরং তাদের অস্ত্বিত্বের ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করা সহজতর। চরিত্র বিশ্লেষণ করলে মামুনুল হাই আর খরকোশকে আর এল স্টীভেনসনের “স্ট্রেঞ্জ কেস অভ ডঃ জেকিল এণ্ড মিঃ হাইড”(১৮৮৬)-এর সাথে কিছুটা তুলনা করা যায়। এই তুলনা শুধু মামুন আর খরকোশের চরিত্রের গুণ বিচার পর্যন্তই চলবে, তার বেশি নয়। কারণ, ডঃ জেকিল আর মিঃ হাইড আসলে একজনই মানুষ। সেখানে অজানা বস্তু সম্বলিত সালসা খেয়ে একজন মানুষের ভেতরের বিপরীত সত্ত্বা বের হয়ে আসে যেখানে তার চরিত্রের রূপ চেহারাতেও ফুটে ওঠে। কিন্তু মামুন আর খরকোশতো দুজন ভিন্ন মানুষ, তারা কোন সালসা খায়নি, এবং একজন আরেকজনে পরিবর্তিত হতে পারে না। তাই এখানে আর এল স্টীভেনসনীয় ব্যাখ্যাও চলবে না।

চরিত্রের কথা যখন উঠল তখন আমরা বরং ভালোভাবে মামুন আর খরকোশের চরিত্র লক্ষ্য করি। এর কিছুটা এই পোস্টের শুরুতেই বলেছিলাম। আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করি, চরিত্র বিচারে মামুন আর খরকোশ একজন আরেকজনের বিপরীত ধর্মসম্পন্ন। অর্থাৎ, মামুনকে যদি বলি বস্তু (matter) তাহলে খরকোশকে বলতে হয় প্রতিবস্তু (anti-matter)। এইবার আমাদের জন্য ব্যাপারটা সহজ হয়ে গেল। আমরা জানি, বস্তু আর প্রতিবস্তুর সাক্ষাত হলে বিপুল শক্তি বিকিরণ করে উভয়েই বিলুপ্ত হয়ে যাবার কথা। তাই মামুন আর খরকোশের দেখা হলে বিপুল শক্তি বিকিরণ করে উভয়েই বিলুপ্ত হয়ে গল্প শেষ করে দিত। সুতরাং বলা যায় মামুন আর খরকোশ হচ্ছে বস্তু আর প্রতিবস্তু। হয়তো কাঠের ভুষির স্তুপে বিপুল শক্তি গ্রহন করে মামুনুল হাই এই দুই সত্ত্বায় বিভাজিত হয়। তাই মামুন আর খরকোশের সাক্ষাত হওয়া সম্ভব নয়।

এই পর্যন্ত কল্পনাটি ঠিকই ছিল। কিন্তু গোল বাঁধালো অভিমন্যুর পাঠানো এই লিঙ্কটি। কোন কুক্ষণে “মুখের দিকে দেখি”নিয়ে শ্বেত যবনের পুরীতে নির্বাসিত অভিমন্যুকে বস্তু-প্রতিবস্তুর এই ধারণাটির কথা বলেছিলাম। তক্কে তক্কে থেকে অভিমন্যু এখন বস্তু-প্রতিবস্তুর সহঅবস্থানের এই বেয়াড়া ধারণাটি আমার মাথায় ঢুকিয়ে দিলেন। এখন আমি যাই কোথা! তাহলে মামুন আর খরকোশও কি পরস্পরের দেখা পায় যা আমাদের পর্যবেক্ষণের আওতায় পড়েনা? হয়তো তাই, যদি আমরা কাজুহিরো ইয়োকোতা, জেফ লুনডীন আর এফ্রাইম স্টেইনবার্গের পর্যবেক্ষণকে সত্য বলে ধরে নেই। তাহলে যা দেখতে পাচ্ছি তাতো আছেই, যা দেখতে পাচ্ছিনা তাও আছে - হয়তো তা ঈশ্বর অথবা ভুত। যা দেখতে পাচ্ছিনা তা যদি শক্তিকে অনস্তিত্ব থেকে আরো নিচে - নাস্তিতেও নিয়ে যেতে পারে, তাহলে এই প্রবল নাস্তি সমগ্র আস্তির জগতকে একটা নঞর্থক জগতে কি রূপান্তরিত করতে পারে না?

পর্যবেক্ষণের এই পার্থক্য বা সীমাবদ্ধতাকে স্বীকার করলে আমাদের চারপাশের পৃথিবীটা কিন্তু শহীদুল জহিরের বর্ণনার মত একই সাথে “হ্যাঁ” এবং “না” এর পৃথিবীতে পরিণত হয়। সেক্ষেত্রে আমরা বরং দুই মামুনের এই সমস্যাটির সমাধান শহীদুল জহিরীয় কায়দায়ই কল্পনা করার চেষ্টা করি।

তারপর কোন এক দিন ভূতের গলিতে মিসেস জোবেদা রহমানের বাসায় অথবা শেপালী আপাদের উঠানের গয়াম গাছের নিচে অথবা নারী শিক্ষা মন্দিরের গলিতে জুলি ফ্লোরেন্সের বাসার কাছে মামুন আর খরকোশের দেখা হয়ে যায় অথবা হয়না। দেখা হবার সময় হয়তো মামুনের হাতে থাকে জুলি ফ্লোরেন্সের চেস্টিটি বেল্ট কাটার জন্য ভারী ধারালো ছেনী আর খরকোশের হাতে থাকে আবুল কাশেম ৪৭ অথবা দুজনেরই হাত খালি থাকে। ছেনীর আঘাতে আর আবুল কাশেম ৪৭-এর গর্জনে হয়তো দুইজন মামুনই ধ্বংস হয়ে যায় অথবা তাদের কিছুই হয় না। আমরা প্রত্যক্ষ করিনা বলে হয়তো লুসিয়েন হার্ডির প্রপঞ্চকে সত্য প্রমাণিত করে তাদের দুইজনের সাক্ষাত হয় কিন্তু তাদের কিছু হয় না। হয়তো খরকোশ নামের কেউ কখনোই ভূতের গলি দূরে থাক ঢাকাতেই আসেনা। অথবা ঢাকায় আসলেও মামুন আর হুরে জান্নাত আসমানতারার কাঠের খাঁচায় পুনর্জন্ম নেয়ার প্রচেষ্টায় রত খরকোশ হয়তো একই সাথে মিসেস জোবেদা রহমানের ছেলে হিসেবেই থেকে যায়।


মন্তব্য

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আপনারে একটা উত্তম জাঝা দিলাম...
ফাটায়া ফেলছেন...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

কী ফাটাইলাম? আপনার মাথা না কি আমার মাথা?



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

মামুনের হো হো হো
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ভাগ্যিস! বাঁচা গেল!!



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

দুর্দান্ত লেখা, পাণ্ডব'দা। মুগ্ধ হয়ে পড়লাম পুরোটা। কতোটা ভালো লেগেছে, সেটা বোঝাবার মতো ভাষা জানা নেই। স্যালুট জানালাম আপনাকে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ। আপনাদের ভাল লাগলে আমার লেখা সার্থক।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

হিমু এর ছবি

আমিও একটা পাতি প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলাম, একটু আত্মমার্কেটিং করি এইফাঁকে খাইছে ...



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আমার লেখাটি কোনভাবেই উপন্যাসটির রিভিউ নয়। আপনার লেখাটি কী তা নিয়ে আপনি শুরুতে ভূমিকাও দিয়ে দিয়েছেন। তাহলে আমরা এবার বাকীদের কাছে আবেদন রাখি কেউ যেন উপন্যাসটির পূর্ণাঙ্গ রিভিউ লেখেন। শহীদুল জহির আরো গভীরভাবে পাঠ, আরো বিস্তৃত পরিসরে আলোচনা, আরো ব্যপকভাবে পরিচিতকরণ ও সম্ভব হলে অনুবাদের দাবী রাখেন।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অম্লান অভি এর ছবি

ষষ্ঠ পাণ্ডব'দা আপনাকে ধন্যবাদ।
একটা বিশ্লেষণ কত শক্তিশালী হতে পারে তার নিত্তি তো আমার কাছে নেই, তবে যে বেশ ভারী তা বলা যায়। লিংক গুলোও পড়লাম, এক নতুন জগতের সন্ধান মিলল। সবচেয়ে বড় যে চেনা হলো সেটা একজন বোদ্ধা পাঠক কিরকম হতে পারে বিশ্লেষক!

মরণ রে তুহু মম শ্যাম সমান.....

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ। এই মণিহার আমায় নাহি সাজে।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

তানবীরা এর ছবি

কতো ভালো ভালো জিনিসের স্বাদ থেকে বঞ্চিত রইলো এ জীবন, আফশোস আর আফশোস।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সিগনেচারে লেখেন "চাই না কিছুই", আবার না পাবার জন্য আফসোশও আছে। এটা কেমন হল? আগামীতে কখনো আপনি ঢাকা আসলে যদি দেখা হয় তখন এই বইটা নাহয় আপনাকে উপহার দেয়া যাবে। তবে অনিশ্চিত সেই ভবিষ্যতের আশায় না থেকে বইটা এখনই যোগাড় করার চেষ্টা করুন। নয়তো আসলেই একটা ভাল বই থেকে বঞ্চিত থাকবেন।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

তানবীরা এর ছবি

আপনি এখনই বইটা দিতে চাইলে আমার কেউ কালেক্ট করে নিয়ে আসবে। তারপর আমার কাছে পৌঁছে যাবে।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আমি যখন কাউকে উপহার দেই তখন উপহার যার জন্য আমি তার হাতেই দিতে পছন্দ করি। এইক্ষেত্রে ডাকবিভাগ, ক্যুরিয়ার সার্ভিস, নিজের বা উপহারপ্রাপকের বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, পরিবারের সদস্য ইত্যাদির ব্যবহার আমার একদম না-পছন্দ।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

হুহু এর ছবি

নিষাদ।
হিউঘ এভারেট।
এনট্যঙ্গলমেন্ট।
মিগেল আনখেল আস্তুরিয়াস।
বহুবিশ্ব
সিপিটি সিমেট্রি
সিপিটি সিমেট্রিক কোয়ান্টাম থিওরি যেখানে হ্যামিল্টোনিয়ান কমপ্লেক্স ।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

দয়া করে বিস্তারিত মন্তব্য করুন। তাতে আমার এবং অন্য পাঠকদের উপকার হবে।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

হুহু এর ছবি

১।"নিষাদ" হুমায়ুন আহমেদের একটি উপন্যাস, এখানে একটি মানুষ অযুতজীবনে ছড়িয়ে আছে। উপন্যাসটির লেখনগাঁথুনি তেমন ভালো না পুরানো লেখাগুলো যেমন প্রথমদিকের হিমুর গল্প বা নন্দিত নরকের সাথে তুলনা করলে, কিন্তু আখ্যানভাগ নতুন ভাবনার।

২। হিউঘ এভারেট দেন কোয়ান্টাম মেকানিক্সের নতুন ব্যখা, বলেন সব সম্ভাবনাই বাস্তবায়িত হয় ভিন্ন ভিন্ন সমান্তরাল বিশ্বে। এই যে আমি হুহু হয়তো ভিন্ন জগতে হাহা রূপে ঘুরে বেড়াই আবার আরেক জগতে হয়তো হিহি রূপে নানা গন্ডগোল বাধাই। কিন্তু জগতগুলি সমান্তরাল, হাহা হিহি হুহু র দেখা হয় না কখনো।

৩। এনট্যাঙ্গলমেন্ট হলো বিনাসুতার মালা, দুই বস্তু কোরিলেটেড হয়ে আছে তা নিজেরা তারা যেখানেই থাক, হয়তো তাদের মাঝে লাখ আলোকবর্ষের ব্যবধান। প্রায় স্পুকি অ্যাকশন অ্যাট এ ডিসট্যান্স এর মতন ব্যাপার। সাম্প্রতিক এক্সপেরিমেন্টে সত্যতা প্রমাণিত।

৪। মিগেল আনখেল আস্তুরিয়াস হলেন লেখক, ম্যাজিক রিয়ালিজম এর একজন দিকপাল।

৫। সিপিটি সিমেট্রি হলো চার্জপ্যরিটিটাইম সিমেট্রি,বস্তুকে প্রতিবস্তুতে বদলে আয়নায় দেখা প্রতিবিম্ব নিলে আর সময়ের গতি পিছনবাগে ফিরিয়ে দিলে সব নাকি একই থাকে, এরেই কয় প্রতিসাম্য।

৬। নতুন পিটি সিমেট্রিক কোয়ান্টাম গতিবিদ্যা, এতে অবজার্ভেবল এর অপারেটার হার্মিশিয়ান না হলেও চলে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

মন্তব্যর ব্যাখ্যার জন্য ধন্যবাদ। একটা অনুরোধ করি, এবার একটু কষ্ট করে পদার্থবিজ্ঞানের আলোকে এই বিষয়গুলোর উপর একটা বিস্তারিত পোস্ট দিন। বিষয়টা ইন্টারেষ্টিং, অনেকেই মজা পাবেন, অনেকেই নতুন কিছু জানতে পারবেন।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

খুবই বিশ্লেষণ মূলক লেখা...
বিষয়বস্তু একটু কঠিন হলেও আপনি সুন্দর উপস্থাপন করেছেন। দারূন ভালো লাগলো !!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রানা মেহের এর ছবি

একটা কঠিন লেখা হয়েছে।
ওয়েল গুড
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

পরিবর্তনশীল এর ছবি

মারাত্নক একটা লেখা। অসাধারণ! মাথা আউলায়ে দেবার জন্য যথেষ্ট, শহীদুল জহির পড়ে যেমন হয় তেমন।

দুর্দান্ত আপনার লেখার স্টাইল। ফ্যান হইয়া গেলাম।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ। "শহীদুল জহির পড়ে যেমন হয় তেমন" - এটা একটু বেশি হয়ে গেল না?



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

শিক্ষানবিস এর ছবি

চমৎকার লিখেছেন।
এখনও "মুখের দিকে দেখি" পড়া হল না। কাহিনী আর থিম জেনে তো তাজ্জব। এটা পড়ার আগে কোনভাবেই মৃত্যুবরণ করা যাবে না।

হার্ডির প্যারাডক্স নিয়ে কখনই এমন উপলব্ধি আসেনি। বলা যায় না, হয়ত উপন্যাসটা পড়েই হার্ডির প্যারাডক্সের সাথে পরিচয় ঘটে যাবে। আপনার লেখা পড়েই তো অনেকখানি বুঝে গেছি।

ম্যাজিক রিয়েলিটি জিনিসটাই খুব ভাল লাগে। "Like Water For Chocolate" সিনেমাটা দেখেই এ নিয়ে মুগ্ধতা এসেছিল। এটাকে বোধহয় ম্যাজিক রিয়েলিজমের সেরা সিনেমা বলা যায়।


অন্ধকারের উপর লাঠিপেটা করে লাভ নেই, আলোক জ্বালালেই অন্ধকার দূর হবে

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এই অল্প বয়সে মরা-বাঁচা ইত্যাদি আপনার চিন্তা করার দরকার নেই। বইটা যোগাড় করে পড়ে ফেলুন।

প্রশ্নটা পুরোনো যে, "ইতিহাসের বই পড়ব, নাকি আইভানহো পড়ব"। উত্তরটা সহজ, জানার জন্য - শেখার জন্য ইতিহাসের বই পড়ব। আর আনন্দের জন্য - উপলদ্ধির জন্য আইভানহো পড়ব। পদার্থবিজ্ঞান বা গণিত তো জ্যোতিষচর্চার মত বায়বীয় ব্যাপার নয়, আর সাহিত্যতো জীবনের প্রতিচ্ছবি। তাই সাহিত্য পাঠে পদার্থবিজ্ঞান বা গণিতের পাঠের নতুন উপলদ্ধি জন্মাতেই পারে।

"Like Water For Chocolate" মুভিটি দেখা হয়নি। নামটি জানানোর জন্য ধন্যবাদ। দেখতে পেলে এ'নিয়ে নাহয় কথা বলা যাবে।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।