বেঁচে থাক রাধাচূড়া

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি
লিখেছেন ষষ্ঠ পাণ্ডব (তারিখ: সোম, ০১/০৬/২০০৯ - ২:০৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পলাশী নিয়ে এনকিদুর মন্তব্য দেখেই সন্দেহ হয়েছিল একটা কিছু ঘাপলা হয়েছে। কিন্তু কী হয়েছে তা আঁচ করতে পারিনি। গতকাল সকালে দিলকুশা থেকে ধানমণ্ডি যেতেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হল।

যখনই আমাকে সাবেক এশিয়ান হাইওয়ে ধরে চানখাঁর পুল থেকে আজিমপুরের দিকে যেতে হয় তখন বখশীবাজারের মোড় পার হলেই আমার চোখ একবার ডানে একবার বাঁয়ে ঘুরে যায়। প্রথমেই বাঁয়ে চোখে পড়ে ফজলে রাব্বী হলের ভেতরের পোড়ো মন্দির আর ঝুড়ো বটগাছ, তারপর ডানে উঁচু পাচিল ঘেরা বুয়েটের ক্রিকেট মাঠ। তারপর লাল রঙের রেজিস্টার বিল্ডিং-এর কোনা পার হয়ে আখাম্বা ইএমই বিল্ডিং, এদিকে বাঁয়ে আহসানউল্লাহ হলের ঝাউগাছগুলো। আবার ডানে বুয়েটের মেইন গেটের ভিতর দিয়ে দেখার চেষ্টা - অবস্থা কী বোঝার জন্য। এরপর গোটা শরীরটাই বাঁয়ে ঘুরে যায়। রেইনট্রীতে ঢাকা একে একে তীতুমীর, শেরে বাংলা আর সোহরাওয়ার্দী হল। আমার তৃষ্ণার্ত চোখ খোঁজার চেষ্টা করে সোহরাওয়ার্দী হলে সেই বিশেষ রুমটা আর তার বর্তমান বাসিন্দাদের। হলের ছোট গেট পার হতেই রাজধানী কনফেকশনারি আর তাসমিয়া ফটোস্ট্যাট দিয়ে পলাশী বাজার শুরু। তারপর একে একে আরো ফটোকপির দোকান, ফলের ঝাঁকা নিয়ে বসে থাকা হকার, গরুর মাংসের দোকান, বড় বড় লোভনীয় আকারের মাছ নিয়ে বসা জেলেরা, কাঁদি কাঁদি কলা ঝোলানো চায়ের দোকান। এরপর ঝপ করেই বাজারটা ঢাকেশ্বরী রোডের দিকে মোড় নিয়ে শেষ।

এই আমাদের পলাশী - পলাশী বাজার, পলাশীর মোড়। ঢাকেশ্বরী থেকে এক লেন, আজিমপুর থেকে ইডেন ঘেঁষে দুই লেন, নীলক্ষেত থেকে ফ্রেপড ঘেঁষে দুই লেন, ফুলার রোড থেকে সলিমুল্লাহ হল ঘেঁষে দুই লেন আর বুয়েট থেকে দুই লেন - মোট নয় লেনের পাঁচটি রাস্তার জাংশান। আমার আর আমার মত আরো কয়েক হাজার মানুষের টীন এজের শেষ ভাগ থেকে প্রথম যৌবনের চারণভূমি। দুনিয়ার সব শহরের পুরোনো, ঐতিহ্যবাহী আর বড় বাজারগুলো নিয়ে গল্পের শেষ নেই। এই মিনি সাইজের পলাশী বাজার নিয়েও কিন্তু আমাদের গল্পের শেষ নেই।

ফটোকপি করতে হবে? ছোটো পলাশী! খিদে পেয়েছে? ডাইনিং - ক্যান্টিন - ক্যাফে বন্ধ? ছোটো পলাশী! অসময়ে চা খেতে চাই? ছোটো পলাশী! নিজেরা মিলে একটা ফিস্টি দিতে চাই? ছোট পলাশী! টুকটাক দরকারী সব জিনিষ লাগবে? ছোটো পলাশী! মাঝরাতে খিদে পেয়েছে কিন্তু বেশি দূর যাবার রেস্ত নেই? ছোটো পলাশী!

তাসমিয়া ফটোস্ট্যাটের সামনের লো-বেঞ্চগুলোতে বসে চা খেতে খেতে দুনিয়ার কত তাবৎ সমস্যার সমাধান হয়ে গেল। কত প্রেম জোড়া লাগল, কত প্রেম ভেঙ্গে গেল। কত মহৎ মহৎ সব পরিকল্পনা তৈরি হল যেগুলো কোনদিন আলোর মুখ দেখেনি। কত ছোট-খাটো সিদ্ধান্ত থেকে কত বড় বড় কাজ হয়ে গেল। ১৯৬২ সাল থেকে ২০০৯ পর্যন্ত সাতচল্লিশ বছরে সাতচল্লিশ প্রজন্মের পঁচিশ হাজারেরও উপরে ইঞ্জিনিয়ার, আর্কিটেকট আর প্ল্যানার এই পলাশীর চা-সিগারেট-কলা-বিস্কুট-ধুলা-ধোঁয়া খেয়ে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ল।

না, পলাশী বাজার আর নেই। বাজার ভেঙ্গে টিন দিয়ে ঘিরে রাখা। ভিতর থেকে হলুদ রঙা এক্সকেভেটরের লম্বা হাত দেখা যায়। সম্ভবতঃ এখানে বহুতল সুপার মার্কেট বানানো হবে। রাস্তার পাশে নির্মাণের ক্ষেত্রে যে দোকানদারী সংস্কৃতি এখন বাংলাদেশকে গ্রাস করেছে তাতে অমন হবার সম্ভাবনাই বেশি। একটা জায়গা সারা জীবন একই প্রকার থাকবে তা অবশ্যই ঠিক না। নতুন নির্মাণ অবশ্যম্ভাবী। তবে নির্মাতা যখন বুয়েট কর্তৃপক্ষ তখন আমার মনটা আশংকিত হয়। কারণ, তাঁদের ডিজাইনে বানানো ইএমই বিল্ডিং, ইউআরপি বিল্ডিং, রশীদ হল আর নতুন অ্যাকাডেমিক বিল্ডিং দেখলে প্রকৌশল-স্থাপত্য পরিকল্পনা আর রুচিবোধ নিয়ে হতাশ হতে হয়। পলাশী বাজারে অমন আখাম্বা কিছু ওঠার চেয়ে ঐ নোংরা বাজারটাই ভালো ছিল। আমার আশংকা সত্যি নাও হতে পারে। তবে এঁদের নিয়ে আমি আশা করারও কিছু দেখিনা - ইতিহাস সাক্ষী।

পলাশী বাজারের ঢাকেশ্বরী রোডের কোনায় একটা পুরোনো রাধাচূড়া গাছ আছে। এই ভাংচুরের মধ্যেও গাছটা কীভাবে যেন টিকে আছে। মৌসুম বুঝে সে সোনারঙা ফুলে গা ভরিয়ে রেখেছে। বাজারটা না থাকায় গাছটা এখন বেশ ভালোভাবে চোখে পড়ে। আমার ভয় নির্মাণের সৌন্দর্য রক্ষার্থে রাধাচূড়াটা না আবার কাটা পড়ে। কে জানে ফল দেয়না, ভালো কাঠ হয়না, খালি গ্রীষ্মে কিছু ফুল দেয় এমন অকম্মা গাছ রাখার চাইতে আরেকটা দোকান বানানোর সুবুদ্ধি কারো মাথায় চলে আসে কিনা।

এই বৈরী সময়ে ফুলভরা একটা রাধাচূড়া যে শান্তি দেয় তা হাজারোটা নান্দনিক চেহারার বিল্ডিং দিতে পারে না। আমাদের পলাশী বাজার আর তার স্মৃতি না হয় আমাদের মনেই থাক, কিন্তু রাধাচূড়াটা যেন বেঁচে থাকে। প্রতি বছর গ্রীষ্মে ফুলে ফুলে ভরে উঠে পথিকের মন প্রশান্তিতে ভরে তুলুক।

***************************************************

পরিবার (Kingdom):Plantae
পর্ব (Division):Magnoliophyta
শ্রেণী (Class): Magnoliopsida
বর্গ (Order): Fabales
গোত্র (Family): Fabaceae (সাবেক Leguminosae)
উপ-গোত্র (Subfamily): Caesalpinioideae (সাবেক Caesalpinieae)
গণ (Genus): Peltophorum
প্রজাতি (Species): P. pterocarpum
দ্বিপদী নাম (Binomial name): Peltophorum pterocarpum
ইংরেজী নামঃ Copperpod, Golden Flamboyant, Yellow Flamboyant, Yellow Flame Tree, Yellow Poinciana
বাংলা নামঃ রাধাচূড়া


মন্তব্য

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

গাছটি দীর্ঘজীবি হোক।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আমারও তাই কামনা। কী জানি কী হয়!



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

স্নিগ্ধা এর ছবি

তাসমিয়া ফটোস্ট্যাটের সামনের লো-বেঞ্চগুলোতে বসে চা খেতে খেতে দুনিয়ার কত তাবৎ সমস্যার সমাধান হয়ে গেল। কত প্রেম জোড়া লাগল, কত প্রেম ভেঙ্গে গেল। কত মহৎ মহৎ সব পরিকল্পনা তৈরি হল যেগুলো কোনদিন আলোর মুখ দেখেনি। কত ছোট-খাটো সিদ্ধান্ত থেকে কত বড় বড় কাজ হয়ে গেল। ১৯৬২ সাল থেকে ২০০৯ পর্যন্ত সাতচল্লিশ বছরে সাতচল্লিশ প্রজন্মের পঁচিশ হাজারেরও উপরে ইঞ্জিনিয়ার, আর্কিটেকট আর প্ল্যানার এই পলাশীর চা-সিগারেট-কলা-বিস্কুট-ধুলা-ধোঁয়া খেয়ে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ল।

বাহ!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এমন অভিজ্ঞতাতো আপনারও থাকার কথা। কলাভবনের চারপাশের চায়ের দোকান আর ফটোকপির দোকানে (আপনাদের সময় অবশ্য এখনকার মত এত দোকান ছিলনা) কখনো আড্ডা মারেন নি?



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আফসোস হয় কোন কিছুতেই দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা না থাকায় মন খারাপ

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সব পরিকল্পনাই নির্দিষ্ট মেয়াদ সম্পন্ন। অবস্থার ফেরে সেই মেয়াদ কমে বা বাড়ে। সেটি সমস্যা নয়। সমস্যা হয় পরিকল্পনাটি স্বাভাবিকতা, মানবিকতা, মূল্যবোধ বা রুচিবোধের বাইরে গেলে।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

হিমু এর ছবি

তবে নির্মাতা যখন বুয়েট কর্তৃপক্ষ তখন আমার মনটা আশংকিত হয়। কারণ, তাঁদের ডিজাইনে বানানো ইএমই বিল্ডিং, ইউআরপি বিল্ডিং, রশীদ হল আর নতুন অ্যাকাডেমিক বিল্ডিং দেখলে প্রকৌশল-স্থাপত্য পরিকল্পনা আর রুচিবোধ নিয়ে হতাশ হতে হয়।

আমার বড় নানাভাই বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। এফ আর খান বা জামিলুর রেজা চৌধুরীরা তাঁর ছাত্র। তিনি নিজের ছিমছাম ছায়াঘেরা বৃক্ষরাজিশোভিত একতলা বাড়িটি ভেঙে দু'টি অতি কদাকার উঁচু ভবন নির্মাণ করেছিলেন নিজের নকশায়। অথচ তাঁর সৌন্দর্যবোধের অভাব ছিলো না। কেন যেন মনে হয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নকশাকারদেরও এই একই সমস্যা। এঁরা যখন নিজেদের কোন কিছু তৈরি করেন, কোথাও একটা গোলমাল হয়ে যায়।

বুয়েটে আমার অতি প্রিয় কয়েকটি চিপার মধ্যে একটি হচ্ছে রেজিস্ট্রার ভবনের আশপাশটা। আশা করি এই ঐতিহ্যমন্ডিত ছিমছাম ভবনটিতে কর্তৃপক্ষের চোখ বা হাত পড়বে না।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আপনার পর্যবেক্ষণের সাথে একমত। আরো অনেকগুলো বিষয়ে আমাদের এমন অহেতুক সীমাবদ্ধতা লক্ষ করেছি। বিষয়গুলো মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, কিন্তু গুছিয়ে উঠতে পারছি না।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মূলত পাঠক এর ছবি

ভাল্লাগ্লো

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মামুন হক এর ছবি

এই বৈরী সময়ে ফুলভরা একটা রাধাচূড়া যে শান্তি দেয় তা হাজারোটা নান্দনিক চেহারার বিল্ডিং দিতে পারে না। আমাদের পলাশী বাজার আর তার স্মৃতি না হয় আমাদের মনেই থাক, কিন্তু রাধাচূড়াটা যেন বেঁচে থাকে। প্রতি বছর গ্রীষ্মে ফুলে ফুলে ভরে উঠে পথিকের মন প্রশান্তিতে ভরে তুলুক।

খুব ভালো লাগলো পড়ে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ। মনের শান্তির এই ব্যাপারটা বোঝার ক্ষমতা সবার হোক। তাহলে আর আফসোস করতে হবে না।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

যুধিষ্ঠির এর ছবি

তাসমিয়া ফটোস্ট্যাটের সামনের লো-বেঞ্চগুলোতে বসে চা খেতে খেতে দুনিয়ার কত তাবৎ সমস্যার সমাধান হয়ে গেল।

এইখানে আমারও অনেক সমস্যার সমাধান হইসে! কিন্তু এই জায়গার নাম যে তাসমিয়া ফটোস্ট্যাট এইটা আমি জানতামই না!

আরও একটা জিনিস আগে জানতাম না, রাধাচূড়া ফুল হলুদ রং-এর হয়। দেঁতো হাসি

লেখা ভাল্লাগসে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধর্ম্মপুত্র, আপনার চোখতো তখন অন্যসব দিকে থাকতো তাই দোকানের নাম কখনো চোখে পড়েনি। এখনতো জায়গাটাই আর নেই, নয়তো হস্তিনাপুরে ফিরলে দেখতে পেতেন।

রাধাচূড়ার ব্যাপারে উইকি কাকার এই লিঙ্কটা দেখুন।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

শামীম রুনা এর ছবি

শেষ হয়ে যাচ্ছে এইবারের রাধাচূড়ার হলুদ উৎসব।

_________________________________________________________
খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি,এক পৃথিবী লিখবো বলে-একটা পাতাও শেষ করিনি।

_________________________________________________________
খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি,এক পৃথিবী লিখবো বলে-একটা পাতাও শেষ করিনি। ( জয় গোস্মামী)

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

কয়েক দফায় পরপর কয়েকদিন জুড়ে ভারী বর্ষণ কৃষ্ণচূড়া-রাধাচূড়া-ক্যাসিয়া-পেল্টোফোরাম-সোনালু-জারুল-জ্যাকারাণ্ডা উৎসবে ইতি টেনে দিয়েছে।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দুর্দান্ত এর ছবি

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির অফিস থেকে নীলক্ষেতে যাওয়ার রস্তার সেগুন গাছগুলো আর নেই। ধানমন্ডি লেকের ৮এ ঘেঁষে সেই বিশাল আকাশ নীম আর তার তলার ঘণ গন্ধরাজের ঝোপগুলোও নেই।

এদিকে দেখুন, মানিক মিয়া সড়কটাকে চিরে ফেলে তাতে গুঁজে দেয়া হয়েছে কিছু কৃষ্ণচুড়া, রাধাচুড়া আর খেজুর।

তবে গতবার শঙ্করের মোড়ে দেখি এক নতুন বট গাছ বেশ ঘাড় ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে গেছে। টিকলে হয়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ঢাকাতে "গাছ নেই"-এর হিসেব করলে এক পোস্টেও শেষ করতে পারবেন না।

রোড ডিভাইডার আর আইল্যাণ্ডগুলোতে চারদিক দিয়ে শক্ত করে কংক্রীটের গাঁথুনী দিয়ে বড় বড় গাছ স্থাপন (রোপন নয়) করার চেষ্টা করা হয়েছে। দেখলে গাছগুলোর জন্য মায়াই লাগে। কোথাও কোথাও স্পনসরদের পয়সায় ঝোপঝাড় বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। সড়ক ভবনের গাছগুলোর মত কখনো এগুলোকে মামারা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করে কেটে না ফেললেই হয়।

ঢাকার কিছু কিছু জায়গায় খেজুর গাছ লাগানোর হাস্যকর চেষ্টা করা হয়েছে। আরবীতে সাইনবোর্ড লাগানো এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে মূল শহরে আসার পথের রাস্তায় ব্যাপকভাবে খেজুর গাছ লাগিয়ে আরব জাহানের সাথে বেশ একটা ইত্তেহাদ আনার কোশেশ করা হয়েছে।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- একদা সবুজ ঢাকা হয়ে যাচ্ছে চান্দিছওলা ঢাকা! মেনে নিতে কষ্ট হয়। "সভ্যতার চিমনীর কালো ধোঁয়ার সাথে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের এক টুকরো আকাশ", লেখকের ভাষায়!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

চান্দি থেকে চুল অনেক আগেই গেছে। এখন চামড়াটুকু বাঁচলে হয়।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

কীর্তিনাশা এর ছবি

এই বৈরী সময়ে ফুলভরা একটা রাধাচূড়া যে শান্তি দেয় তা হাজারোটা নান্দনিক চেহারার বিল্ডিং দিতে পারে না। আমাদের পলাশী বাজার আর তার স্মৃতি না হয় আমাদের মনেই থাক, কিন্তু রাধাচূড়াটা যেন বেঁচে থাকে। প্রতি বছর গ্রীষ্মে ফুলে ফুলে ভরে উঠে পথিকের মন প্রশান্তিতে ভরে তুলুক।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

চমৎকার লেখা, বরাবরের মতোই। খুব ভাল লাগল।

পড়তে গিয়ে যে প্রশ্নটা করব ভাবছিলাম, যেটা হিমু ভাইয়ের মন্তব্যেও উঠে এসেছে, বুয়েট এত প্রসিদ্ধ সব স্থাপত্যশিল্পীর জন্ম দিয়েছে/দিচ্ছে, কিন্তু নিজেদের নকশায় তৈরি করা তাদের ভবনগুলো তাহলে এত 'কদাকার' কেন?

যুধিষ্ঠির এর ছবি

এ বিষয়টা নিয়ে আলাদাভাবে বিস্তারিত আলোচনা হতে পারে (অবশ্যই সেটা ষষ্ঠ পাণ্ডব বা অন্য কেউ শুরু করবেন হাসি)। আমার ধারণা এর মূল কারণ হলো চোথা-নির্ভর পাঠ্যক্রম। মৌলিক ডিজাইনের জন্য যে মুক্তচিন্তার চর্চা দরকার সেটা বুয়েটে আমার সময়ে কোথাও দেখিনি।

ফকির লালন এর ছবি

যে কোন ধরনের আমলা নির্ভর প্রশাসনে একধরনের একরৈখিকতা ও প্রোটোটাইপ হবার সুযোগ থাকে। কাজকে সহজ করার উদ্দেশে সমষ্টির দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা প্রথায় পরিনত করবার প্রবনতা থেকে এর জন্ম হয় কিন্তু পরে প্রশাসন তার নিজের তৈরী মানসিকতায় নিজেই বন্দী হয়ে পড়ে। এর প্রতি সযত্ন ও মনোযোগী না হলে আমলাতন্ত্রের এটাই নেমেসিস।

বুয়েটে এটা বেশ টের পাওয়া যায়, সে কারনেই সেখানে মেধার সমাবেশ স্বত্বেও সৃষ্টিশীলতার অভাব বোধ যথেষ্ট। ক্যাম্পাস বর্ধন, পরিবর্ধনে তার অন্যথা হবার কথা নয়। বুয়েট নকশায় স্থাপত্যের নান্দনিকতার চাইতে উপযোগীতার প্রভাব বেশী। দুটোর টেকসই মিলনের ব্যাপারটা উপেক্ষিতই থেকে যায়। অনেকটা ছাত্র থাকতে আমরা অনেকেই যেমন ইংরেজী, ম্যানাজমেন্ট, একাউন্টিং, ইকোনমিক্স ক্লাস গুলো প্রকৌশলের মূল বিষয় গুলোর চেয়ে হাল্কা ভাবে নিয়েছি, তেমনি।

পুরোটাই অবশ্য আমার ব্যক্তিগত হাইপোথিসিস, খানিকটা অভিজ্ঞতা লব্ধ; কোন অকাট্য
যুক্তি দাড় করাতে পারবো না।

পলাশী বাজারের অপমৃত্যুর সাথে জীবনের একটা টুকরোও চলে যাবে। জেনে মন খারাপ হলো, আর বলতে পারবোনা, এইখানে একদিন আমিও ছিলাম। সব enlargement ই growth নয়, তার কোন কোনটা ক্যান্সারও। বহুতল পলাশী বাজারকেও তাই মনে হচ্ছে।

নাশতারান এর ছবি

তড়িৎ ও কম্পুকৌশল বিভাগের জন্য যে নতুন দালান উঠেছে সেখানে ওদের কোন ক্যাফে নেই, গাছাপালা নেই, খেলার জায়গা নেই। ইট-সুড়কি মাড়িয়ে ছেলেমেয়েরা ক্লাস করতে যায়। এখন গাছপালা লাগালেও সেগুলো বড় হয়ে দালানের মাথা ছুঁতে ছুঁতে আরো অনেক সংযোজন-বিয়োজন হবে। যারা ঐ ক্যাম্পাসে চার-পাঁচ বছর নিয়মিত যাতায়াত করতে বাধ্য তাদের জন্য দুঃখ হয়।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বুয়েটে আমাদের যা শিক্ষা দেয়া হয়েছে তার কারিকুলামে বড় ধরণের ঘাটতি আছে। এজন্য বড় বড় নির্মাণ হয় কিন্তু সেগুলোর ভালো উপযোগিতা থাকেনা বা সৌন্দর্য থাকেনা বা মানবিক স্পর্শ থাকেনা। এই প্রসঙ্গে আমার প্রায়ই গুরুদেবের "তাসের দেশ"-এর কথা মনে হয়।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নাশতারান এর ছবি

এই কি সেই রাধাচূড়া? নতুন বিল্ডিং এর পাশ থেকে তুলেছিলাম ছবিটা। গত বছরের মে মাসে।

radha

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।