মিনহাজ আর ফেরেনি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি
লিখেছেন ষষ্ঠ পাণ্ডব (তারিখ: বুধ, ২১/১০/২০১৫ - ৩:৩২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

স্কুলে পড়ার সময় মিনহাজ আমাদের সাথে নূরুল আমীন স্যারের ব্যাচে পড়ত। ব্যাচটা পাঁচমিশালী ধরনের ছিল। সেখানে নানা ক্লাসের ছেলেমেয়েরা গণিত আর সাধারণ বিজ্ঞানের বিষয়গুলো পড়তে যেতো। স্যার একাই একঘর ছেলেমেয়েকে পড়াতেন তাই সেখানে পড়ার চেয়ে গল্পগুজব বেশি হতো। আমাদের ব্যাচের মিনহাজ আর জুনিয়র ব্যাচের সিন্‌হা জোক বলার জন্য জনপ্রিয় ছিল। সময়টা ছিল পতিত সামরিক স্বৈরাচার এরশাদের শাসনামল, তাই বেশির ভাগ জোক ছিল এরশাদ আর তার বিবি-গোলামদের নিয়ে। মিনহাজ নির্বিকার মুখে ভয়ঙ্কর অশ্লীল সব জোক বলে যেত,আর বাকিরা সেসব শুনে হেসে গড়িয়ে পড়তো। সেসবের ছিঁটেফোঁটা শুনে স্যার মাঝে মাঝে কাঠের রুলার নিয়ে আমাদেরকে তাড়া করতেন বা কারো পিঠে বিরাশী সিক্কার চড় বসিয়ে দিতেন। তবে আমরা জানতাম স্যারও মিনহাজের জোক শুনতে মজা পেতেন। এজন্য মিনহাজের কপালে কোনদিন রুলারের মার বা বিরাশী সিক্কার চড় জোটেনি।

মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবার পর আমাদের দিনের বেশিরভাগ সময় কাটতো তোলারাম কলেজের মাঠে ক্রিকেট খেলে বা চাষাঢ়া রেলস্টেশনে লুকিয়ে বিড়ি ফুঁকে। তখন একদিন হঠাৎ আবিষ্কার করি মিনহাজ আর আমাদের সাথে নেই। প্রথমে কয়েকদিন কেউ ব্যাপারটা গা করেনি। ভেবেছিল কোথাও বেড়াতে গেছে বুঝি। কিন্তু দুই সপ্তাহ পার হয়ে যাবার পরও তার দেখা না পাওয়ায় আরাফাত,সাঈদ,পুলক বা প্রীতম যাদের সাথে ওর বেশি খাতির ছিল তাদের কেউ খোঁজ নিতে ওর বাসায় যায়। ওর মায়ের কাছ থেকে জানা গেলো মিনহাজ বিদেশে চলে গেছে। ঐ অতটুকুন ছেলে কোন দেশে গেলো!

ঐসময় লোকে কাজ করার জন্য সৌদী আরব,আমিরাত বা কুয়েত যেতেন। কেউ কেউ যুদ্ধওয়ালা দেশ ইরাক-ইরানেও যেতেন। কাতার-বাহরাইন-ওমান-জর্দান-লেবাননের মতো দেশে লোকে কম যেতেন সেখানে কম পয়সা মেলে বলে। ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-প্রফেসররা যেতেন লিবিয়া-ইরাক-ইরানে। কেউ কেউ সিঙ্গাপুর যাওয়াও শুরু করেছিলেন। ‘লাভ ইন সিঙ্গাপুর’ সিনেমার বদৌলতে সিঙ্গাপুর তখন স্বপ্নের দেশ। লাখ টাকা বেতনের দেশ জাপানে যেতে পারতেন লাখে একজন। দক্ষিণ কোরিয়া-তাইওয়ান-মালয়েশিয়ায় যাবার কথা তখনো খুব বেশি জন ভাবেননি। সাইপ্রাস-সাইপান-মরিশাসের মতো দেশের নাম তখনো কেউ প্রায় শোনেননি। খুব ভাগ্যবানেরা পশ্চিম জার্মানী যেতে পারতেন। তবে সেটা সেখানে থেকে যাবার উদ্দেশ্যে,কাজ করে ফিরে আসার জন্য না। সিলেটের লোকজন সাধারণত ব্যবসা করতে বা থাকতে আর ডাক্তারেরা উচ্চশিক্ষা গ্রহনের জন্য ইংল্যান্ড যেতেন। যারা কম্পিউটারের ওপর পড়তে চাইতেন তারা আমেরিকা যেতেন। উচ্চশিক্ষার জন্য কানাডা-অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড যাবার হিড়িক পড়তে তখন আরো দেড় দশক বাকি ছিল। জানা গেলো মিনহাজ অমন কোন দেশে যায়নি। সে গেছে থাইল্যান্ডে! থাইল্যান্ডে কেউ কাজ করতে যায় এটা আমাদের চিন্তায়ও আসেনি। বস্তুত থাইল্যান্ড এতো বছর পরে এখনো বিদেশী শ্রমিক-কর্মজীবি নেবার মত অবস্থায় পৌঁছেনি।

আমাদের যা জানা ছিল না তা হচ্ছে মানব পাচারকারীরা তাইওয়ান বা জাপানে পাঠানোর নাম করে তখনই থাইল্যান্ড বা হঙকঙ রুটে লোক পাঠানো শুরু করেছিল। এই সেদিনও থাইল্যান্ডের অ্যামবেসিতে গিয়ে দাঁড়ালেই ট্যুরিস্ট ভিসা পাওয়া যেতো। হঙকঙ বা দক্ষিণ কোরিয়াতে পোর্ট এন্ট্রি ভিসা নিয়ে আমরাই ভ্রমণ করেছি। তাই দালালরা এই রুটগুলোতে বিমানে করেই লোক পাঠাতে পারতো। তাইওয়ান বা জাপানের ভিসা পাওয়া কোন কালেই সহজ ছিল না। তার ওপর বাংলাদেশী পাসপোর্টে তখন সিল মারা থাকতো ‘Valid for all countries of the world except Israel, Taiwan and Republic of South Africa’। ব্যাংকক বা হঙকঙের ‘তাইপেই ইকোনমিক এন্ড কালচারাল অফিস’ থেকে ভিসা যোগাড় করা না গেলে শুরু হতো আসল খেলা। থাইল্যান্ডের পৌঁছানোরা বনজঙ্গল পেরিয়ে দক্ষিণ থাইল্যান্ড বা মালয়েশিয়ার সমুদ্র থেকে নৌকায় করে তাইওয়ান যাবার চেষ্টা করতেন। বনজঙ্গল পার হতে হতো বলে এর কোড নেম ছিল ‘টারজান ভিসা’। যারা হঙকঙ দিয়ে যেতেন তারা হঙকঙ থেকেই নৌকায় উঠতেন। আর জাপানগামীরা দক্ষিণ কোরিয়া থেকে নৌকায় উঠতেন। টারজান ভিসা হোক বা হঙকঙ/কোরিয়া দিয়ে হোক সবাইকেই শেষ পর্যন্ত ‘সাগরভাসা ভিসা’ নিতে হতো। এই সাগরভাসা পর্যায় পর্যন্ত যারা টিকতেন তাদের মধ্যে যাদের তখনো বাংলাদেশী পাসপোর্ট টিকে থাকতো তাদের বলা হতো ‘সবুজ পাতা’। সবুজ পাতা থাকলে বিপদে আপদে বাংলাদেশ দূতাবাসের সাহায্য পাবার বা বাংলাদেশে ডিপোর্ট করার ক্ষীণ আশা থাকতো। নয়তো সীমান্তরক্ষী, কোস্টগার্ড, ইমিগ্রেশন পুলিশ জাতীয় কারো হাতে পড়লে নাগরিকত্ব প্রমাণের অভাবে অনির্ধারিতকাল জেলে কাটাতে হতো। যে অল্প কয়েকজন শেষ পর্যন্ত তাইওয়ান বা জাপানে যেতে ও টিকতে পারতেন তারা ছাড়া বাকি সবার পরিণতি বোধগম্য। ঐসব রুটের মাটি খুঁড়লে বা সাগরের তলায় অনুসন্ধান চালালে ঐ হতভাগ্যদের কঙ্কালের অবশেষ হয়তো পাওয়া যেতে পারে। তবে এই সবই জানতে পেরেছি এসব শুরু হবার বহু বছর পরে।

আমরা মাঝে মাঝে মিনহাজের খোঁজ নিতে গেলে ওর মা আমাদের জানাতেন মিনহাজ ব্যাংককে ভালো চাকুরি করছে, বেতন মাসে পনের হাজার টাকা। ওই আমলে পনের হাজার টাকা বেতন আমাদের ধারণার বাইরে ছিল,কারণ ওই টাকায় ছয় ভরির বেশি স্বর্ণালঙ্কার মিলতো। কোন কাজ না জানা,একটা পুঁচকে ছেলেকে কেউ মাসিক পনের হাজার টাকা বেতন কেন দেবে এই প্রশ্নটা আমাদের মাথায় বা আমাদের বড়দের মাথায়ও আসতোনা। আমরা ভাবতাম থাইল্যান্ড খুব ধনী দেশ যেখানে যেতে পারলেই অনেক অনেক টাকা বেতনের চাকুরী পাওয়া যায়। এরপর একটা সময় আসে যখন আমরা কলেজে ক্লাস করা শুরু করি,নতুন সব বন্ধু পাই আর একটু একটু করে মিনহাজকে ভুলে যাই।

এর বহু কাল পরে মিনহাজের যখন খোঁজ করেছি তখন জানা গেছে মিনহাজ আর কোনদিনই ফেরেনি। কেউ কখনো তার কাছ থেকে কোন পোস্টকার্ড,চিঠি বা ফোন পায়নি। সম্ভবত ওর বাড়ির লোকজনও কখনো সেসব পায়নি। আজ অনুভব করতে পারি ওর মা কত কষ্ট বুকে বেঁধে আমাদেরকে বলতেন,“মিনহাজ ব্যাংককে ভালো চাকুরি করছে,বেতন মাসে পনের হাজার টাকা”। সমবয়সী ছেলেরা যখন কলেজে যাচ্ছে, ক্রিকেট খেলছে, জোরে গান বাজাচ্ছে, হুশ করে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে,আবাহনী-মোহামেডান নিয়ে হাতাহাতি করছে তখন তার নিজের ছেলে বিদেশের কোন জেলে, নাকি জঙ্গলে, নাকি সাগরে ভাসছে, নাকি ... থাক্‌ ওসব অলক্ষুণে কথা ভাবতে নেই। এই কথা মনে হলে আমাদের তখনকার মূঢ়তা নিয়ে এখনো নিজের ওপর প্রচণ্ড রাগ হয়। আমরা এতোটা গাধা ছিলাম কেন!

মিনহাজের তুলনায় আমাদের পাড়ার ওয়াদুদ,মামুন আর মোহাব্বাতের কপাল বরং অনেক ভালো ছিল। ওয়াদুদ ব্যাংকক থেকে,মামুন কুয়ালালামপুর থেকে আর মোহাব্বাত হঙকঙ থেকে দেশে ফিরে আসতে পেরেছিল। পাশের পাড়ার বাবুল দক্ষিণ কোরিয়ায় টিকে গিয়েছিল। যে কারখানাতে সে কাজ পেয়েছিল তার মালিক তার মতো আরো কিছু বাংলাদেশী, ভারতীয় আর পাকিস্তানীকে কারখানার প্রাঙ্গনে ডরমিটরিতে রাখতো,বাইরে বের হতে দিত না,কোরীয় কর্মীদের দিয়ে বাজার-সওদা করে দিত। কিন্তু বাবুল তো কোরিয়াতে থাকার জন্য যায়নি। তার লক্ষ্য জাপান। তাই দালালদের সহযোগিতায় এক রাতে দক্ষিণ এশীয় আরো অনেকের সাথে তারা জাপান যাবার জাহাজে চেপে বসে। সেই জাহাজ অচিরেই জাপানী কোস্টগার্ডদের কবলে পড়ে। মাস ছয়েক জেল খেটে অবশেষে বাবুল কপর্দকহীন অবস্থায় দেশে ফিরতে পারে। তবে বাবুলের মতো সৌভাগ্য সবার হয় না। অনেক দালাল সাগরভাসাদেরকে জাহাজে যাত্রী বা কর্মীদের মতো না চড়িয়ে মাল পরিবহনের কন্টেইনারে ঢুকিয়ে নিত। কন্টেইনার খুললে দেখা যেতো গরমে,অক্সিজেনের অভাবে আর পিপাসায় অনেকেই মারা গেছেন। সাধারণ কন্টেইনারে করে নেয়ার ব্যাপারটা জানাজানি হয়ে গেলে দালালরা সাগরভাসাদের কম্বলে মুড়িয়ে,সাথে অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে রেফ্রিজারেটেড কন্টেইনারে করে পাচার করতো। এই ক্ষেত্রে মৃত্যুর হার আগের পদ্ধতির চেয়ে বহুগুণ বেশি। এসব গল্প একসময় সবাই জেনে গেলেও সাগরভাসা ভিসা নিয়ে যাবার লোকসংখ্যা দিন দিন কেবল বাড়তেই থাকে। ক্রমে ক্রমে সাগরভাসার রুটে তাইওয়ান-জাপানের সাথে অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ আর আমেরিকাও যুক্ত হয়। ইন্দোনেশিয়া বা পাপুয়া নিউগিনি থেকে অস্ট্রেলিয়া, উত্তর আফ্রিকা বা তুরস্ক থেকে ইউরোপ, মেক্সিকো বা বাহামা থেকে আমেরিকা।

স্থল পথে ভারত-পাকিস্তান হয়ে ইরান-ইরাক-তুরস্ক যাবার ব্যাপারও দেখেছি। আমাদের পাড়ার মিলন এভাবে ইরানে গিয়ে কয়েক বছর জেল খেটে এসেছিল,আর আবুল পাকিস্তানে কয়েক মাস দিনমজুরী করে ফেরত এসেছিল। ব্যয়বহুল আর জটিল পদ্ধতি বলে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে,নির্যাতিত সংখ্যালঘু পরিচয় দিয়ে,বিভিন্ন ট্রেড শো,সেমিনার বা শর্ট কোর্সের নাম করে উত্তর আমেরিকা আর ইউরোপে যাওয়ার সংখ্যা সব সময়ই কম ছিল। তবে সোভিয়েত ইউনিয়ন, চেকোশ্লোভাকিয়া আর যুগোশ্লাভিয়ার বিলুপ্তি এবং পূর্ব ইউরোপে কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসানের পর ইউরোপে যাওয়ার নতুন রুট খুলে যায়। বাংলাদেশ থেকে গণচীনের ভিসা নিয়ে পেইচিঙ থেকে স্থলপথে মঙ্গোলিয়া হয়ে বা সরাসরি রাশিয়া হয়ে পোল্যান্ডের ভেতর দিয়ে জার্মানী অথবা সেখান থেকে ফ্রান্স,ইতালী যাওয়া হতো। অতি সাহসী কেউ কেউ বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোতে,ইউক্রেনে বা পোল্যান্ডে থেকে যেত। কলম্বিয়া থেকে মেক্সিকো হয়ে আমেরিকা যাবার ঘটনা সম্ভবত এখনো আছে। এইসব প্রতিটি পদ্ধতিতে সাফল্যের হার অর্ধেকও না,মৃত্যুর হার ভয়াবহ। রুমানিয়া,অস্ট্রিয়া,স্লোভেনিয়া সীমান্তে সীমান্তরক্ষীদের গুলিতে বা তাদের পাহারা-কুকুরদের কামড়ে নিহত হবার খবর শুনেছি। প্রচণ্ড শীতে নগ্ন করে বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখার মতো বর্বরতার কথা শুনেছি। আরো যা কিছু নিষ্ঠুরতার কথা শুনেছি সেগুলো লেখার মতো সাহস আমার নেই। ত্রিশ বছর আগে মিনহাজদের সংখ্যা শতকরা একজনও ছিল না, আর এখন ডজন ডজন জন মানুষ মিনহাজ হতে এক পায়ে খাড়া। গল্পের বাকি সবকিছু ত্রিশ বছরে বিশেষ পাল্টায়নি, বরং আরও ভয়াবহ হয়েছে।

মিডিয়াতে গার্মেন্টস রপ্তানীর আয়ের অঙ্কটা যখন বলা হয় তখন ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি’র মাধ্যমে কাঁচামাল আমদানীতে ঐ আয়ের কতটা আবার বিদেশে চলে যায় সেটা কখনো বলা হয় না। আয়টা থেকে ব্যয়টা বাদ দিলে দেখা যেতো গার্মেন্টস রপ্তানীর আয় সব খাতের মধ্যে প্রথম হওয়া দূরে থাক,তৃতীয়ও হতো কিনা সন্দেহ। অন্যদিকে বাংলাদেশী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্সে অমন কোন ব্যাপার নেই। তবু আনুসাঙ্গিক কিছু ব্যয় (বিমান ভাড়া,ভিসা ফি,অন্যান্য অনুমতির ফি ইত্যাদি) বাদ দিলেও এর নেট আয়ের অঙ্কটা অন্য যে কোন খাতের চেয়ে অনেক অনেক বেশি হয়। কিন্তু গার্মেন্টস মালিকরা কর অবকাশসহ অন্যান্য যেসব সুবিধা রাষ্ট্রের কাছ থেকে পেয়ে থাকেন তার এক শতাংশ সুবিধাও অনাবাসী শ্রমিক-কর্মজীবিরা পান না। তার ওপর বিমান বন্দরে নানা সংস্থা ও সংগঠন কর্তৃক তাদেরকে সীমাহীন হয়রানীর ঘটনা ঘটে। এসব সবাই জানেন,এসব নিয়ে নিয়মিত কথা হয়,কিন্তু এগুলোর স্থায়ী প্রতিকার হয় না।

গত পঁয়তাল্লিশ বছরে বাংলাদেশ থেকে যদি পাঁচ কোটি মানুষ বিদেশে কাজ করতে গিয়ে থাকেন তবে আরো পাঁচ কোটি মানুষ প্রতারক দালালদের খপ্পরে পড়ে স্বর্বস্বান্ত হয়েছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত খুব কম জন দালালকে আইনের আওতায় আনা গেছে, আর শাস্তি হয়েছে আরও কম জনের। কোন সরকার এই ব্যাপারে উদ্যোগী হয়ে স্বতন্ত্র ও কঠোর আইন প্রনয়ণ করেনি। জনশক্তি রপ্তানীকারকদের সংগঠন বায়রা আজ পর্যন্ত প্রতারক দালালদের নির্মূল করার জন্য কোন কঠোর কর্মসূচী দেয়নি বা সরকারের ওপর যথেষ্ট চাপ প্রয়োগ করেনি। দশকের পর দশক ধরে চোখের সামনে ঘটা এমন বড় আকারের অপরাধের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের যথাযথ প্রতিরোধমূলক ও প্রতিকারমূলক পদক্ষেপের ঘাটতি আমাদেরকে হতাশ করে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সবচে’বড় খাতটির প্রতি এমন অবহেলা অবিমৃষ্যকারিতা।

বাংলাদেশ থেকে কেউ যখনই বিমানে করে বিদেশে যান তখনই ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের নানাবিধ প্রশ্নের মুখোমুখি হন। এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। তাতে কখনো কখনো যে বাড়াবাড়ি হয়না এমনটা নয়। তবে সব দেশের ইমিগ্রেশনে এমন ফ্যাঁকড়া আছে। তাতে বিশেষ আপত্তি করার কিছু নেই। কিন্তু আপত্তিটা ওঠে তখনই যখন দেখা যায় ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের ছাড়পত্র নিয়ে প্রতারক দালালরা প্রায়ই বিদেশ গমনে প্রত্যাশীদের অবৈধ শ্রমিক হিসাবে বিভিন্ন দেশে নিয়ে যায়। সামান্য কয়েকটি প্রশ্ন করেই একজন দক্ষ ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা যে মানুষটি অবৈধ শ্রমিক হিসাবে বিদেশে যাচ্ছেন তাকে সনাক্ত করে ফেলতে পারেন। ইমিগ্রেশন থেকে ফেরত পাঠানোর ঘটনা ঘটে তবে তার সংখ্যা পার পেয়ে যাওয়াদের সংখ্যার তুলনায় নগণ্য। স্বাভাবিকভাবে এখানে অদক্ষতার চাইতে সিস্টেমের গলদের প্রশ্নটা বেশি সামনে চলে আসে। এই ব্যাপারটাতে কঠোর হলে অনেক বড় বিপর্যয় গোড়াতেই ঠেকিয়ে দেয়া যাবে।

বাংলাদেশী বিমান সংস্থাগুলো ছাড়া অন্য কোন দেশীয় বিমান সংস্থার বিমানে উঠলে দেখবেন তারা যাবতীয় ঘোষণা ইংলিশ এবং তাদের মাতৃভাষায় দেয়,বাংলায় নয়। তাদের কর্মীরাও বাংলা বলতে অক্ষম। সেখানে ইংলিশ আর তাদের মাতৃভাষার সংবাদপত্র সরবরাহ করা হয়,কোন বাংলা পত্রিকা নয়। অথচ ঐ একই বিমান সংস্থা অন্য গন্তব্যে যাতায়তের সময় তাদের ভাষা তিনটা বা চারটা হয়ে যায়। এই ব্যাপারে আমাদের সরকারের তরফ থেকে ঐসব বিমান সংস্থাকে কখনো কোন নির্দেশনা দেবার কথা শুনতে পাইনি। এর ফলে বাংলাদেশী বিমান সংস্থাগুলোর বাইরে অন্য সব বিমানে ওঠা ইংলিশ-না-জানা বাংলাদেশী শ্রমিককূলকে বিমানে উঠতে না উঠতেই প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়। এহেন উদাসীনতা আমাদের শ্রমিকদের প্রতি রাষ্ট্রের অবহেলাকে নির্দেশ করে।

বিদেশে আমাদের দূতাবাসগুলোতে প্রবাসীদেরকে যে পরিস্থিতিগুলোর মুখোমুখি হতে হয় সেগুলো বাংলাদেশে কোন সরকারী দপ্তরে সংগঠিত পরিস্থিতিগুলোর অনুরূপ। কিন্তু দেশে যে দীর্ঘসূত্রিতা,জটিলতা ও হয়রানী উপেক্ষা করা যায় বিদেশে অনেক সময়েই সেগুলো সহ্য করা অসম্ভব হয়ে ওঠে। এই সত্যগুলো সবার জানা,এগুলো নিয়ে অনেক কথা হয়েছে কিন্তু অবস্থার বিশেষ পরিবর্তন হয়নি। মধ্যপ্রাচ্যে যে সব বাংলাদেশী শ্রমিকের শিরচ্ছেদ বা ফাঁসিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ঘটনা ঘটেছে সেখানে রাষ্ট্রের হয়তো আরও কিছু করার অবকাশ ছিল। যে হাজার হাজার বাংলাদেশী বিদেশের কারাগারে বন্দী রয়েছেন তাদেরকে দেশে ফেরানোর ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগও কখনো খুব দৃশ্যমান নয়। বস্তুত একটি স্বাধীন, সার্বভৌম দেশের উপযুক্ত মর্যাদাশীল, দেশপ্রেমিক, দৃঢ় বৈদেশিক নীতি গৃহীত ও অনুসৃত না হলে অপর রাষ্ট্রের কার্যক্রমে প্রতিনিয়ত মার খাবার সম্ভাবনাই থাকে। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একটু সামান্য উদ্যোগ প্রান্তিক পর্যায়ে লাখ লাখ শ্রমিকের জীবন বাঁচিয়ে দিতে পারে।

চার দশকের বেশি সময় ধরে কর্মোপলক্ষে কয়েক কোটি মানুষ দেশের বাইরে গেলেও সরকারী উদ্যোগে রপ্তানীযোগ্য দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার মতো প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়নি। প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের নামে যেসব প্রতিষ্ঠান বর্তমানে বিদ্যমান আছে তাদের কাছে প্রাপ্ত প্রশিক্ষণে দেশে চাকুরি পাওয়াই মুশকিল। অথচ বৈদেশিক চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন মেয়াদে নানা ট্রেডের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা গেলে এইসব শ্রমিকেরাই অদক্ষের বদলে দক্ষ হিসাবে গৃহীত হতো এবং তাতে মোট আয়ও বহুলাংশে বৃদ্ধি পেতো।

এই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলিম হওয়ায় দেশে আরবী ভাষা বানান করে পড়তে পারা লোকের সংখ্যা ১০ কোটির কম নয়। অথচ তাদের মধ্যে ১০ লাখ জনও আরবী ভাষাটি শুনে বোঝার, বলতে পারার, পড়তে পারার ও লিখতে পারার যোগ্যতা রাখেন না। অথচ এই ১০ কোটির বেশি মানুষ বছরের পর বছর মসজিদে/মক্তবে/মাদ্রাসায়/স্কুলে আরবী পড়া শিখেছেন। এই মানুষগুলির দৌড় ঠেলেঠুলে কুরআন তিলাওয়াত পর্যন্ত, কুরআনের অর্থ বোঝাতে নয়। এমন অদ্ভূত, অর্থহীন ভাষা শিক্ষার ব্যাপার দুনিয়ার আর কোথাও আছে কিনা সন্দেহ। আমি পূর্ব এশীয়, ইউরোপীয় ও আমেরিকান মুসলিমদের মধ্যে দেখেছি যারা চার/পাঁচ বছর মসজিদ/মক্তবে আরবী ভাষা শিক্ষা গ্রহন করেছেন তারা সবাই আরবী ভাষা শুনে বোঝার, বলতে পারার ও পড়তে পারার যোগ্যতা রাখেন। আমরা কেন চার/পাঁচ বছর মসজিদ/মক্তবে গিয়েও সেটা পারিনা সেটা তাদের বোধগম্য নয়। অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় এই যে, এই দেশের কোটি কোটি মানুষ মধ্যপ্রাচ্যে চাকুরি বা ব্যবসায় করলেও তাদের খুব খুব কম জন আরবী ভাষাটি জানেন। মধ্যপ্রাচ্যগামীদের কাজ চালানোর উপযোগী আরবী ভাষা শেখানোর সরকারী বা বেসরকারী উদ্যোগ নেই বললেই চলে। আরবী না জানার দরুণ মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশীদের হয়রানী ও অন্যায়ের শিকার হওয়া বা ন্যায়বিচার না পাওয়ার ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।

জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর আর জনশক্তি রপ্তানীর ব্যাপারটি পেশাদারী মনোভাব ও দক্ষতার সাথে পরিচালনা না করার দরুণ যত দিন গেছে প্রতারক দালালচক্র ক্রমশঃ শক্তিশালী হয়েছে। দিনের পর দিন উপকূলীয় অঞ্চলে হাজার হাজার মানুষকে জড়ো করে নৌকায় করে পাচার করার ব্যাপারটিতে নানা পর্যায়ের ক্ষমতাবানরা যুক্ত হয়ে আজকে সেটা ভয়াবহ পর্যায়ে নিয়ে গেছে। থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়ায় বাংলাদেশীদের গণকবর পাওয়ার ব্যাপারটি এক দুই মাসের ব্যাপার নয়। যখন এই সত্য আবিষ্কার হয় যে, এই কর্মের সাথে থাই সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সামরিক বেসামরিক কর্মকর্তারা জড়িত তখন তার বাংলাদেশী প্রান্তকে আরো সাবধানতার সাথে খতিয়ে দেখার অবকাশ আছে।

একটা খুব স্বাভাবিক প্রশ্ন। যারা সাগরভাসা হয়ে যান তারা বা তাদের পরিবারের কেউই যে এর বিপদ সম্পর্কে কিছুই জানেন না তা নয়। দালাল বা আড়কাঠিরা নানা রূপকথার গল্প শোনায় বটে তবে যারা যান তারা জানেন সমুদ্র হেলাফেলার বিষয় না, কাগজপত্র ছাড়া বা অবৈধ উপায়ে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। এবং সেই ঝুঁকি যে জীবনের ঝুঁকি তাও তারা জানেন। আজকের দিনে কাউকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে এভাবে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়, কিন্তু মানুষ লোভ ছাড়তে পারে না। মানুষের মধ্যকার একটা সাধারণ আশা হচ্ছে – ‘বিপদ আছে জানি, কিন্তু আমি পার পেয়ে যাবো’। বাস্তবে খুব খুব কম জনই পার পান, বাকি সবাইকে চরম মূল্য শোধ করতে হয়।

কেউ কেউ বলেন উচ্চ বেকারত্বের হার, শ্রমের মর্যাদা না থাকা এবং সামাজিক নিরাপত্তার অভাব মানুষকে এই পথে ঠেলে দেয় – এই কথা আংশিক সত্য। কারণ, এই ফ্যাক্টরগুলো কমবেশি সব সময়েই বিদ্যমান ছিল। কিন্তু গত পঁচিশ বছরে সারা দুনিয়াজুড়ে মানব পাচার ব্যবসাটিকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তোলায় এই হার এখন ভয়াবহ পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। এই ব্যাপারটিতে রাষ্ট্র কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন না করলে ভবিষ্যতে পৃথিবীর আরও অনেক কোনে বাংলাদেশীদের গণকবর আবিষ্কৃত হতে পারে। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রতিকারমূলক ব্যবস্থাও নিতে হবে। এর জন্য সর্বাগ্রে লাগবে জনশক্তি রপ্তানীর ব্যবস্থাটি দালাল-প্রতারক-আড়কাঠি মুক্ত করা, দুর্নীতি মুক্ত করা, সহজ ও কম ব্যয় সাপেক্ষ করা, দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা, ভাষাশিক্ষার ব্যবস্থা করা। তাছাড়া পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সরকারের সাথে আলোচনা করে আরও অধিক হারে বাংলাদেশী কর্মজীবি নিয়োগের ব্যবস্থা করা।

মিনহাজ যদি বিদেশে যেতে চায় তাহলে সেটা ভুল কিছু না। তবে দেখতে হবে মিনহাজ যেন বৈধভাবে, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নিয়ে, কাজের নিশ্চয়তা নিয়ে যায়। মিনহাজ যাক, তাতে ক্ষতি কিছু নেই। তবে চাইলে মিনহাজ যেন যখন খুশি ফিরে আসতে পারে। মিনহাজ যেন হারিয়ে না যায়।


মন্তব্য

তানিম এহসান এর ছবি

মিনহাজ যদি বিদেশে যেতে চায় তাহলে সেটা ভুল কিছু না। তবে দেখতে হবে মিনহাজ যেন বৈধভাবে, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নিয়ে, কাজের নিশ্চয়তা নিয়ে যায়। মিনহাজ যাক, তাতে ক্ষতি কিছু নেই। তবে চাইলে মিনহাজ যেন যখন খুশি ফিরে আসতে পারে। মিনহাজ যেন হারিয়ে না যায়। চলুক চলুক

গুরু গুরু

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

মিনহাজ যাক, তাতে ক্ষতি কিছু নেই। তবে চাইলে মিনহাজ যেন যখন খুশি ফিরে আসতে পারে। মিনহাজ যেন হারিয়ে না যায়।

চলুক

মানুষের মধ্যকার একটা সাধারণ আশা হচ্ছে – ‘বিপদ আছে জানি, কিন্তু আমি পার পেয়ে যাবো’। বাস্তবে খুব খুব কম জনই পার পান, বাকি সবাইকে চরম মূল্য শোধ করতে হয়।

রায়হান আবীরের 'মানুষিকতা' গ্রন্থের একটি অনুচ্ছেদের কথা মনে পড়ে গেল। মানুষের এই ছেঁড়া শিকের প্রতি লোভ এবং আশার কারণটি ঠিক কি? সমাজবৈজ্ঞানিকেরা কি বলেন?

মধ্যপ্রাচ্যগামীদের কাজ চালানোর উপযোগী আরবী ভাষা শেখানোর সরকারী বা বেসরকারী উদ্যোগ নেই বললেই চলে। আরবী না জানার দরুণ মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশীদের হয়রানী ও অন্যায়ের শিকার হওয়া বা ন্যায়বিচার না পাওয়ার ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।

স্কুল-কলেজে দ্বিতীয় ভাষা কেবলমাত্র ইংরেজী না রেখে একাধিক রাখা কি সম্ভব, যেখানে বেছে নেবার সুযোগ থাকবে? অনুমোদিত ভাষাসমূহের সাথে বৈদেশিক শ্রমবাজারের একটা সংযোগ থাকবে। মক্তব-মাদ্রাসায় যেভাবে কেবলমাত্র "কোরান রিডিং পড়ার জন্য" আরবী শেখান হয় সেটি সুকুমারের নাটিকার পাঠশালায় "আই গো আপ, ইউ গো ডাউন" এর অর্থ "গুদোমে উই ধরিয়াছে, তাই গরু কান্দিতেছে" করবার মতই।

মিডিয়াতে গার্মেন্টস রপ্তানীর আয়ের অঙ্কটা যখন বলা হয় তখন ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি’র মাধ্যমে কাঁচামাল আমদানীতে ঐ আয়ের কতটা আবার বিদেশে চলে যায় সেটা কখনো বলা হয় না। আয়টা থেকে ব্যয়টা বাদ দিলে দেখা যেতো গার্মেন্টস রপ্তানীর আয় সব খাতের মধ্যে প্রথম হওয়া দূরে থাক,তৃতীয়ও হতো কিনা সন্দেহ।

এ ব্যাপারটা জানা ছিল না। এ নিয়ে পরিসংখ্যান সমেত বিস্তারিত লিখুন না।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এ নিয়ে পরিসংখ্যান সমেত বিস্তারিত লিখুন না।

- পণ্ডশ্রম! এই ব্যাপারে সরকার, মিডিয়া, বিশেষজ্ঞরা যে জানেন না তা তো নয়। তাহলে তারা বলেন না বা লেখেন না কেন? কারণ, এই ব্যাপারটা সামনে আনতে কোন পক্ষই আগ্রহী না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

গার্মেন্টস খাতের এই ব্যাপার সরকার মিডিয়া থেকে শুরু করে সবাই ভালোভাবে জানেন। কিন্তু গালভরা জনপ্রিয়তা প্রচারে বিঘ্ন ঘটাবে বলে চেপে রাখে।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

নীড় সন্ধানী এর ছবি

সম্ভব হলে এই পোস্টটিকে ছাপিয়ে কয়েকটা কপি বাংলাদেশ জনশক্তি রপ্তানী অধিদপ্তর সহ নানান সরকারী দপ্তরে দিয়ে আসতাম।

শুধু একটা জায়গায় দ্বিমত করছি।

বাস্তবে খুব খুব কম জনই পার পান, বাকি সবাইকে চরম মূল্য শোধ করতে হয়।

আমার ধারণা উল্টো। আমার মনে হয় যতজন অবৈধপথে যায় বেশীরভাগই পার পেয়ে যায়। সংবাদে যেসব খবর আসে তার চেয়ে বহুগুন বেশী মানুষ বিদেশের পথে অবৈধ যাত্রা করে। এবং খুব কম মানুষকে চরম মূল্য দিতে হয়। যার ফলে অবৈধ পথে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে বিদেশ যাবার জন্য এখনো হাজার হাজার মানুষ দৈনিক নানান দিকে ছুটছে। বিপদ নিয়ে প্রচার মাধ্যমে এত ফলাও প্রচার তাদের থামাতে পারছে না।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আমার মনে হয় হিসাবে একটু ফাঁকি আছে বস্‌! অবৈধ পথে যারা যায় তারা কতগুলো বিষয় নিয়ে ভাবেন নাঃ

১। যত টাকা খরচ করে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সে গেল সেই ইনভেস্টমেন্ট কত বছরে উঠে আসে।
২। এই ব্রেক ইভেন পয়েন্টে পৌঁছানোর জন্য তাকে জীবনের কী কী মূল্য দিতে হয়েছে।
৩। প্রবাসে থাকাকালীন সময়ে নানা প্রকার দালাল, মাস্তান আর প্রশাসনের লোককে কী পরিমাণ টাকা দিতে হয়েছে।
৪। ইনভেস্টমেন্ট উঠে আসার পর সম পরিমাণ টাকা লাভ করতে তার আরও কত বছর লাগে।
৫। ইনভেস্টমেন্ট ব্রেক ইভেন পয়েন্টে যাওয়া পর্যন্ত ইনভেস্টমেন্টের অপরচুনিটি কস্ট কত।

এসব হিসেব করতে পারলে অবশ্য মিনহাজ কোনদিন দেশ ছাড়তো না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

হাসিব এর ছবি

আমি অনেক মিনহাজের সাথে কথা বলেছি। আমি যেখানে থাকি তার আশপাশে ইটালিতে মিনহাজদের সংখ‍্যা সবচাইতে বেশি। আমি তাদের সাথে কথা বলার সুযোগ হলে প্রায় প্রত‍্যেককেই জিজ্ঞেস করি তাদের দেশত‍্যাগের কারণ কী। আমি তাদের যুক্তির বিপরীতে যুক্তি দিতে পারিনি কখনো।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

একজন মানুষের ব্যাকগ্রাউন্ড যাই হোক না কেন মর্যাদার সাথে নিজের জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ পাওয়াটা তার মৌলিক অধিকার। এই পাওয়াটা দুই ভাবে হতে পারে। এক, তাকে তার যোগ্যতা ও সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ দেয়া হবে যার পারিশ্রমিক কমপক্ষে ঐ প্রয়োজনীয় পরিমাণের সমান। দুই, তাকে যতদিন পর্যন্ত কাজ দেয়া না যাবে ততদিন পর্যন্ত রাষ্ট্র তাকে ঐ পরিমাণ দিয়ে যাবে। রাষ্ট্র যখন এই নিশ্চয়তাটা দেয় না তখন মিনহাজের মাথায় উপরে আমার বলা ৫টা পয়েন্টের কোনটাই আর আসে না। তখন যদি আপনি মিনহাজের মুখোমুখি হন, তখন তার দেয়া যুক্তির বিপরীতে আপনি আর কোন যুক্তি দিতে পারবেন না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নজমুল আলবাব এর ছবি

চমৎকার।

বিমানবন্দরের হয়রানি আর ভাষা শিাক্ষাটা হলেও অনেক অনেক ভালো হতো মানুষগুলোর। সাগরভাসা আর টারজান ভিসা নিয়া আসলে বলার কিছু নাই।

মিনহাজরা ভালো থাকুন।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

মাঝে মাঝে ভাবি এতো অবহেলা, এতো অনাদর, এতো অবিচার, এতো অন্যায়, এতো অত্যাচার সয়ে মিনহাজরা দেশে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পাঠায়। অথচ আমাদের মধ্যে কোন কৃতজ্ঞতাবোধ নেই কেন? কেন আমরা যে পাতে খাই সে পাতই ছিদ্র করি!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

কনফুসিয়াস এর ছবি

হাই কমিশানের লোকেদের আচরণ নিয়ে নানা অভিজ্ঞতা শুনেছি এখানেও। আমার নিজের একবার কথা শেষ হবার আগেই ফোন কেটে দিয়েছিলো ও পাশের বাংলাভাষী ভদ্রমহিলা, পরে কল ব্যাক করে শুনলাম তার কাজের সময় শেষ হয়ে গিয়েছিলো, আমাকে ফোনে রেখেই উনি তাই দিন শেষ করে চলে গেছেন। এরকম অবিশ্বাস্য কাণ্ড আমাদের দেশীয় হাইকমিশান বলেই হয়তো করা সম্ভব।
আমি টের পেয়েছি 'দেশী' লোকদের সাথে যা খুশি করা যায় এরকম মানসিকতা থেকে এমনকি প্রবাসে চাকুরী করা লোকেরাও বের হতে পারেন না। এটার শেকড় সম্ভবত আমাদের অনেক গভীরে, আরও কয়েক শত বছর পরে হয়ত আমরা সব মানুষকে সমান সম্মান করার মত গুণ অর্জন করতে পারবো।
-------
আর রাষ্ট্র নিবে ব্যবস্থা? দেশে চাল নাই তেল নাই নুন নাই, আর ওরা ভাববে প্রবাসীদের একটু সম্মানজনক অবস্থান নিয়ে? কি জানি, আমি এখন এতটা আশাবাদী নই।

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

উনি কি আপনারটা খান না পরেন যে আপনার কথা শুনতে যাবেন! উনার কী ঠ্যাকা! ঠ্যাকা তো আপনার। সুতরাং আপনি নিজে গিয়ে দিনের পর দিন ধর্ণা দেবেন।

------------------------

আমি নিজেও আশাবাদী না। সত্যি বলতে কি আমি আশা করার যৌক্তিক কোন কারণ দেখতে পাই না। যারা বড় বড় আশার বাণী শোনান তাদের কথায় আবেগ আছে, যুক্তি নেই।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

আমার কিন্তু মনে হয় প্রায় ক্ষেত্রেই মিনহাজরা জেনে শুনে অন্ধকূপে ঝাঁপ দেয়। কখনও ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়, মিলে যায় আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপ। তা প্রলুব্ধ করে নতুন নতুন আরও মিনহাজদের, তারাও চোখ বুঁজে ঝাঁপ দেয়। তারপর জো জিতা ওহি সিকান্দার, জো হারা ও সালে মিনহাজ। সিকান্দারদের রক্ত নিংড়ানো টাকায় দেশ এগিয়ে যায়, দেখতে ভালোই লাগে, কিন্তু মিনহাজদের কথা কেউ মনে রাখে না। শুধু তাদের মায়েরা আমৃত্যু নীরবে অশ্রুমোচন করে যান, আর কালে ভদ্রে পাণ্ডবদের মত বেরসিক টাইপের কিছু বন্ধু তাদের স্মৃতিচারণ করে পরিবেশের ছন্দপতন ঘটান।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আপনার বক্তব্যের সাথে দ্বিমত করার কিছু নেই। তবে এই অন্ধকূপে ঝাঁপ দেবার ব্যাপারটা হ্রাস করে আনার উপায় আছে। সেটা না করাটা আমাদের অবিমৃষ্যকারিতা।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার অবজারভেশন আর সাবলীল লেখার ভাষা সবসময়ই মুগ্ধ করে ।
গুরু গুরু

অবৈধভাবে বিদেশে যাওয়ার অনেকগুলো রুট সম্পর্কেই কোন ধারনা ছিল না ।

আমাদের আশপাশ থেকে প্রতিদিন এমন অনেক মিনহাজ হারিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু যতদিন না নিজের ঘরের মিনহাজ হারাচ্ছে ততদিন আমরা কি করে যেন এক অদৃশ্য উদাসহীনতার চাদরে নিজেদের আলাদা করে রাখতে পারি ।

হাইকমিশন গুলো প্রসংগে ঃ
দেশের বাইরে হাইকমিশনে কাজ করা লোকজন নিয়ে আসলে নতুন করে কিছু বলার দেখি না । বাংলাদেশ থেকে স্কিল্ড ওয়ার্কার বা শিক্ষিত কমিউনিটির যারা দেশের বাইরে যায় তারা নিজ দেশের অ্যাম্বাসির চেয়ে ঐ দেশের ইমিগ্রেশন অফিসেই (অধিকাংশ সময় ভিসা নবায়নের কাজে অথবা লাল/নীল পাসপোর্টের প্রয়োজনে ) বেশি ধর্না দেয় । আর একবারে শ্রমিক শ্রেনীর মানুষগুলোর মাঝে আসলে কতজন অ্যাম্বাসীর অস্তিত্ব বা দায়িত্বের খোঁজ রাখে সে বিষয়ে আমার সন্দেহ আছে । ইউকেতে বাংলাদেশী অ্যাম্বাসীতে ভিড়ের বড় অংশটাই এখানে কয়েক পুরুষ ধরে ঘাটি গাড়া সিলেট অঞ্চলের লোকের । আর যেসব দেশে মিনহাজদের ঢল ( মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো) সেখানে বাংলাদেশের অ্যাম্বাসেডর বা অ্যাম্বাসী আসলে কতটা ক্ষমতা রাখে সে বিষয়ে আমি আসলেই সন্দিহান । সরকারের তরফ থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষেটে খাওয়া মানুষগুলোর ব্যপারে উদাসহীনতার কারণে অ্যাম্বাসীও এদের সাথে তাচ্ছিল্যপুর্ন আচরন করে । তাই অ্যাম্বাসীর সার্ভিস উন্নত করা বলতে আমি মুলত দেশের ফরেন পলিসির ঢালাও পরিবর্তন ছাড়া এই অবস্থার উন্নতি দেখি না ।

উন্নত বিশ্বের অনেকদেশেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্কিল্ড লোকবলের অভাব রয়েছে । উন্নয়নশীল দেশের বিদেশ এবং কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয় এই ক্ষেত্র গুলো চিহ্নিত করে নিজের দেশে সে ক্ষেত্রগুলোতে প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করে এবং লবিং এর মাধ্যমে স্কিল্ড ওয়ার্কার রফতানী করে । যেমন ইউনাইটেড কিংডমের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসে হাজার হাজার ফিলিপিনো নার্স কাজ করে । এরা সবাই ফিলিপাইনের সরকার অনুমোদিত এজেন্সির মাধ্যমে প্রশিক্ষন নিয়ে এসেছে । এভাবে টার্গেটেড ভাবে স্কিল্ড ওয়ার্কার রফতানীর বিষয়ে নজর না দিলে দেশের মিনহাজদের অন্ধকুপে ঝাঁপ দেয়া ছাড়া উপায় থাকবে না ।

মামুনুর রশীদ
mamun babu 2001 at gmail dot com
===================================
হাজারো মানুষের ভিড়ে দাড়িয়ে আমি মানুষেরেই খুঁজে ফিরি

শিশিরকণা এর ছবি

সম্প্রতি আমেরিকাতে বাংলাদেশি এম্ব্যাসির সেবা নেবার সুযোগ হলো। এরা বিশেষ করে সিলিকন ভ্যালি এলাকার উচ্চ শিক্ষিত বাংলাদেশিদের সেবা দেন, সে হিসেবে তাদের থেকে আরও বেশি পেশাদারিত্ব আশা করেছিলাম। তারা অযথাই নিজেদের কাজ জটিল করছেন সিদ্ধান্তহীনতার অভাবে, তাই মনে হলো। আর ব্যবহার? সরকারী লোক বলে সেই নাক উঁচু ভাবটা ছাড়তে পারেন নি। বিনয় এক দুর্লভ গুণ, বা আদতেই এটাকে গুন মনে করা হয় কি না আর, কে জানে?

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আমরা যারা দেশে থাকি, তারা প্রতিনিয়ত সরকারী লোকজনের তাচ্ছিল্যপূর্ণ ব্যবহার সহ্য করি। এগুলো নিয়ে বলতেও ইচ্ছে করে না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

মামুনুর রশীদ, আপনার মন্তব্যের শেষ অনুচ্ছেদে বলা ব্যাপারটা আমি একবার কতিপয় কর্তার সাথে আলোচনা করেছিলাম। আমার এমনতরো অবাস্তব ও অপ্রয়োজনীয় ভাবনা তারা মোটামুটি ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছিলেন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

মন্তব্যটি এই পোস্টের গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন! চলুক

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

হাসিব এর ছবি

বিদেশে এ‍্যাম্বেসির প্রধান কাজ ঢাকা থেকে ওখানে কোন হোমড়াচোমড়া কেউ গেলে তাদের খায় খাতির করা। লন্ডনে এ‍্যাম্বেসিতে ভিড় করা যাদের কথা বললেন তারা আসলে ঐ হোমড়াচোমড়াদের সেবাযত্ন করে প্রভাবপ্রত‍্যাশি লোকজন। যেসব দেশে হোমড়াচোমড়াদের গমনাগমন বেশি সেখানে এ‍্যাম্বেসিতে ভিড়ও বেশি।

তাই অ্যাম্বাসীর সার্ভিস উন্নত করা বলতে আমি মুলত দেশের ফরেন পলিসির ঢালাও পরিবর্তন ছাড়া এই অবস্থার উন্নতি দেখি না ।

দেশের ফরের পলিসি নির্ভর করে দেশের পেশিশক্তির ওপর। এইটা বাংলাদেশের নাই। এই কারণে ফরেন পলিসি ইচ্ছা করলেও রিফর্ম করা সম্ভব না। যেটা সরকার করতে পারে সেটা হলো দূতাবাসগুলোর সেবার মান বাড়ানো। আমার অভিজ্ঞতায় এম্বেসিগুলো ভুদাই কোয়ালিটির লোকজন বসে থাকে। তাদের ধারণা মফস্বলের ডিসি এসপিকে যেমন সবাই খাতিরযত্ন করে মাথায় তুলে স‍্যার স‍্যার করে সেরকমটা প্রবাসীরাও করবে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

দেশের ফরের পলিসি নির্ভর করে দেশের পেশিশক্তির ওপর

- আমার ধারণা এই কথাটা আমাদের জন্য সত্য নয়। আমাদের পেশীশক্তি তৈরী হলেও আমাদের আচরণ অমেরুদণ্ডী প্রাণীর মতো থাকবে। আমরা হচ্ছি 'নতজানু মনন, অপচিত মেরুদণ্ড'সম্পন্ন জাতি। একটু খেয়াল করলে দেখবেন বিদেশী লোকজনকে ডিল করার ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান টেবিলের যে পাশেই হোক, আমাদের আচরণ পালটায় না।

আমাদের সরকারী লোকজনের পোস্টিং বাংলাদেশের মফস্বলেই হোক আর ওয়াশিংটন ডিসিতে হোক তাদের গড় সামষ্টিক আচরণ একই প্রকার থাকে। এক সময়ে আমরা কয়েকজন একটা বিশেষ অর্থে 'দাস মনোবৃত্তিসম্পন্ন' টার্মটা ব্যবহার করতাম। সেই বিশেষ অর্থটা হচ্ছে জাগতিক সকল সম্পর্ককে শুধুমাত্র প্রভু-দাস সম্পর্ক মনে করা। এতে কিছু সময় তার সামনের জনকে নিজের দাস মনে করা হয়, আর বাকি সময় নিজেকে সামনের জনের দাস মনে করা হয়।

উপরের দুই অনুচ্ছেদে ব্যতিক্রমকে বিবেচনায় নেয়া হয়নি। ব্যতিক্রম চিরকালই ব্যতিক্রম, এবং সেটা স্বাভাবিক নিয়মের অংশ। গড় সামষ্টিক আচরণে ব্যতিক্রমের প্রভাব নগণ্য।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মরুদ্যান এর ছবি

চমৎকার বিশ্লেষণ। গুরু গুরু

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

গগন শিরীষ এর ছবি

দারুন লাগল!

অতিথি লেখক এর ছবি

গার্মেন্টস খাতকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে শীর্ষ রপ্তানি আয়ের খাত হিসেবে দেখানোর সাথে বিশেষ প্রণোদনাসহ নানা আরোো নানা বরাদ্দ জড়িত। কারণ আর যাই হোক লক্ষ লক্ষ শ্রমিকদের কথা বিবেচনা করে নয় বরং মালিকপক্ষের কথা চিন্তা করেই গার্মেন্টস ক্ষেত্রে আমাদের সরকারগুলো পজিটিভ ভূমিকা পালন করে। আরেকটি কারণ হচ্ছে এ মালিকদের অনেকেই আবার প্রত্যক্ষ বচা পরোক্ষভাবে রাজনীতির সাথে যুক্ত। অর্থ এবং প্রতিপত্তি দুক্ষেত্রেই গার্মেন্টস মালিকদের অবস্থান এমন যে তার পক্ষ সরকার চোখ বুজে নিয়ে নেয়। অন্যদিকে সাগরপথে বা অন্য কোনো পথে বা টারজান ভিসায় যারা ভাগ্যান্বেষণে বের হয়ে হারিয়ে যায় তাদের প্রায় সবাই অর্থ কাঠামোর অনেক নিচে অবস্থান করে। তাদের নিয়ে ভাববার দায় কোনো সরকারেরই নেই কারণ তারা মিছিল বড় করা বা সমাবেশে জড়ো হওয়া ছাড়া আর কোনো কাজেই লাগে না। তাই মিনহাজরা হারিয়ে যাবে এইতো স্বাভাবিক।

লেখাটা ছুঁয়ে গেল পাণ্ডবদা।

স্বয়ম

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

লক্ষ লক্ষ শ্রমিকদের কথা বলে যে দোহাইটা দেয়া হয় সেই ব্যাপারে একটা কথা পরিষ্কারভাবে বলে রাখতে চাই। টাকা সিন্দুকে ভরে রেখে দিলে টাকা ডিম পাড়বে না। বরং সেখান থেকে খরচ করতে করতে এক সময় রাজার ভাণ্ডার ফুরিয়ে গিয়ে রাজা ফকির হয়ে যাবে। সুতরাং একজন পুঁজিপতি নিজের লাভের জন্যই কোন না কোন খাতে টাকা খাটায়। শ্রমিকরা সেখানে শ্রমের বিনিময়ে মজুরী পায়। বস্তুত শ্রমিককর্তৃক পণ্যে যে পরিমাণ মূল্য সংযোজিত হয়, শ্রমিকের মজুরী তার এক ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ মাত্র। সুতরাং এখানে মহত্ত্ব দেখানোর কিছু নেই। এখানে কেউ দেশ-জাতি উদ্ধার করে ফেলছে না। গার্মেন্টস না হলে তারা অন্য কোন কিছুর কারখানা দিতো। গার্মেন্টস মালিকেরা যে সব কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হয় তার ৫%-এর জন্যও শ্রমিকের দায় নেই। গার্মেন্টস মালিকদের শক্তি - তারা ধনী মানুষ। সুতরাং রাজনৈতিক দলগুলোর তাদের ওপর নির্ভরশীলতা আছে। তাই তাদেরকে মাথায় তুলে রাখা হবে এটাই স্বাভাবিক।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

হাসিব এর ছবি

গার্মেন্টস খাতকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে শীর্ষ রপ্তানি আয়ের খাত হিসেবে দেখানোর সাথে বিশেষ প্রণোদনাসহ নানা আরোো নানা বরাদ্দ জড়িত।

গার্মেন্টস খাতকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে শীর্ষ রপ্তানি আয়ের খাত হিসেবে দেখানো হয় এটা আমার কাছে নতুন তথ‍্য। আপনি আপনার মন্তব‍্যের ব‍্যাকাপ এভিডেন্স দিতে পারবেন?

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখাটা ছুঁয়ে গেছে, সেইসাথে অনেক অনেক তথ্য জানাও হলো। কেবল মিনহাজরা কবে মাথা উঁচু করে কাজে যাবে আর মাথা উঁচু করেই ফিরে আসবে সে প্রশ্নের জবাবা জানা নেই।

দেবদ্যুতি

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

মাসখানেক আগে দুজন ভিকটিমের সাথে কথা হলো। নদী, সাগর, জঙ্গল, হাজতবাস শেষে শুধু কংকাল নিয়ে দেশে ফিরেছিল তারা। এমন অবস্থা ছিল দুজনের যে চোখের পানিও শুকিয়ে গেছে। মানব পাচার আইনে দায়েরকৃত মামলাসমূহের ফলাফল দ্রুত আর কার্যকর হবে আশা করি।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।