প্রবাসিনীর দিনলিপি ১

প্রবাসিনী এর ছবি
লিখেছেন প্রবাসিনী [অতিথি] (তারিখ: রবি, ১৩/০৯/২০০৯ - ১২:১০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বেশ কয়েকদিন লেখা হচ্ছে না। সোওয়াজিল্যান্ড নিয়ে লেখা শুরু করেছি, কিন্তু জুত পাচ্ছি না। মাথায় অনেক চিন্তা, অনেক ভাবনা। নানা কারণে মন খুব অশান্ত, বেশ অস্থির অবস্থা।


জীবনের লক্ষ্য নিয়ে প্রায়ই চিন্তা করি। এই কয়েকদিন আরো বেশি করছি। গত সপ্তাহে আমার ডিপার্টমেন্টে ওরিয়েনটেশন ছিলো। মোট ৭ জন নতুন আমরা। আমি ও ইরানের একজন মাস্টার্স-এর জন্য, বাকিরা পিএইচডির জন্য। ওদের মাঝে আমি সবচেয়ে ছোট, ইরানের মেয়েটার আরেকটা মাস্টার্স আছে। কথা বলে জানলাম, আমার ডিপার্টমেন্টে একটু অভিজ্ঞ ছাত্র পছন্দ করে। সেখানে আমি কীভাবে ঢুকলাম আল্লাহই জানে।

যাই হোক, ওরিয়েনটেশনে পরিচয় পর্বে সবাই জানতে চায় কী নিয়ে রিসার্চ করবো।অন্য সবাই বেশ পরিষ্কার আর গোছানো ভাবে তাদের রিসার্চ কথা বললো (কত টপিকঃ খাদ্য নিরাপত্তা, ইরানের মহিলা লেখক, কানাডার গ্রামীন চিকিৎসা, ইত্যাদি ইত্যাদি), আর আমি আকুপাকু করে হাতরাই, বুদ্ধিমান কিছু বলার চেষ্টা করি। অবশেষে মনে পড়লো ভর্তির আবেদনে কী লিখেছিলাম। সেইটাই মাথা নাড়িয়ে নাড়িয়ে, মুখ বানিয়ে বানিয়ে বলি। গত কয়েকদিনে একই কথা বলতে বলতে মুখে ফেনা উঠে গেছে। নিজেকে কেমন যেন ভণ্ড ভণ্ড লাগে। সবার কত পরিকল্পনা, কত ইচ্ছা। তারা পৃথিবী, সমাজ কত কিছু বদলাতে চায়, আমি শুধু বসে বসে শুনি। আমার ওই রকম কোনো পরিকল্পনা নাই।

আমি আসলেই একাডেমিক লাইফে কেন আসলাম? কারণ, ছাত্র থাকা বেশ মজার, চিন্তা কম, ঝামেলা কম। এই চিন্তায় না হয় মাস্টার্স শেষ করলাম, কিন্তু তারপর কী করব? চাকরি? এই নিয়ে এখন চিন্তা করছি কেন? কারণ মঙ্গলবার আডভাইসরের সাথে মিটিং। তাঁকে আমার মাস্টার্স এর প্ল্যান লিখিত দিতে হবে। কোন টার্মে কী কী ক্লাস নিতে হবে, রচনা (extended essay) না থিসিস লিখবো, এইসব। এক্সটেন্ডেড এসেতে ৩ ক্রেডিট আর থিসিসে ৯ ক্রেডিট। মাস্টার্স করতে সব মিলিয়ে ৩০ ক্রেডিট লাগে, এসে লিখলে বেশি কোর্স নিতে হবে। পিএইচডির জন্য সবাই থিসিস পছন্দ করে।

এখনই এই সব চিন্তা করতে ভাল লাগছে না, কিন্তু উপায় নাই।


আরেকটা বিশেষ কারণে মন একটু বেশি খারাপ। আমার আম্মুর সাথে গত চার দিন ধরে কথা হয় না। আমি গত ৬ বছর ধরে একা একা থাকলেও আম্মুর সাথে আমার সপ্তাহে তিন চার বার কথা হয়। আম্মু আমার উপর রাগ করে আছে।

এই সামারে আমার পাখির সাথে পরিচয় হয়, জীবনের খুব ভাল সময় কেটেছে তার সাথে। ঢাকা ছেড়ে আসার আগে জানতে পারলাম পাখিও কিছুদিন পর উড়াল দিবে।আমাদের শেষদিনটা ছিল বেশ ঝামেলার। কী বৃষ্টি ছিল সেই দিন! পানি জমে যাচ্ছে, পাখি বাসা থেকে বের হতে পারছে না বৃষ্টির জন্য। হয়তো সেদিন আকাশও চায়নি আমরা বিদায় নেই। যাই হোক, এক সময় বৃষ্টি থামল, পাখির হাত ধরে ঘুরাঘুরি।

সেই দিন আমার পরিচিত “কেউ” আমাকে পাখির সাথে দেখে, এবং আম্মুকে জানায়। তবে বেশ পরে -- এই কয়েকদিন আগে। আম্মু আমাকে জিজ্ঞেস করায় সব কিছই স্বীকার করতে হয়। শুনে আম্মুর বেশ মন খারাপ -- যদি পছন্দ হয়ে থাকে তাকে বলিনি কেন, কেন তাকে বাইরের মানুষের কাছ থেকে শুনতে হলো, কেন পাপার সাথে পরিচয় করায় দেই নাই, এই জন্যই কি আমি বাকি প্রস্তাবগুলো ফিরিয়ে দিয়েছি,ইত্যাদি।

মা খুবই মন খারাপ করেছে। অন-লাইনে আসে না, আমাকে ফোন দেয় না। আমি অন-লাইতে মেসেজ দিলে জবাবও দিচ্ছে না। আমিও ফোন দিচ্ছি না, না জানি কী বলবে।

ভালো লাগছে না…


আজকে দুপুর বেলা হুমায়ূন আহমেদের "নবনী" উপন্যাসটা পড়লাম। এবার দেশ থেকে আসার আগে তাঁর নির্বাচিত প্রেমের উপন্যাস “ভালোবেসে যদি সুখ নাহি” কিনে এনেছিলাম। ওইটারই পাতা উল্টাতে উল্টাতে শুয়ে ছিলাম, নবনী চোখে পড়ল আর পড়া শুরু করে দিলাম। বেশ আগে লেখা, লেখার মান ভালো। সেইটা পড়তে পড়তে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি, ঘুমিয়ে উল্টা-পাল্টা স্বপ্ন দেখেছি। একেবারে বেড়া-ছেড়া অবস্থা!


মন্তব্য

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

ভাষা আর বানানের উন্নতি চোখে পড়ার মত ... গুড জব চলুক

লেখা ভালো লাগসে ... আমার কাছে এই ধরণের ব্লগপোস্ট খুব ভালো লাগে, সো চলতে থাকুক ...
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...

প্রবাসিনী এর ছবি

থ্যাঙ্গু। আপনার পোস্টটা দেখে লিখতে ইচ্ছা করল, তাই লিখে ফেললাম।
________________________________________________

হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে

________________________________________________

হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে

অতিথি লেখক এর ছবি

মার সাথে কথা বলুন। মন থেকে Sorry বলুন। দেখবেন ভালো লাগছে। কেন পড়ালেখা করি-এই জাতীয় চিন্তাভাবনা আমাকেও প্রায়ই আক্রান্ত করে। তারপর ভাবি হচ্ছে যা হয় হোক, জীবনতো কেটে যাচ্ছে একরকম।

প্রবাসিনী এর ছবি

আম্মুর সাথে কথা হয়েছে। আসলেই বেশ ভাল লাগছে।

________________________________________________

হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে

________________________________________________

হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

একেবারে অকপট লেখা। আদর্শ "ব্লগর ব্লগর"। আমিও বলি, মায়ের সাথে কথা বলো। 'মা' তো... রাগ করলেও কতটুকুই বা করবে!

প্রবাসিনী এর ছবি

ঠিক মনে হ্য়। কত ক্ষণইবা রাগ করে থাকা যায়?
________________________________________________

হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে

________________________________________________

হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে

ছন্নছাড়া এর ছবি

পাখীকে পরিচয় করাই দিলেই পারতা...

প্রবাসিনী এর ছবি

নিজেই দাও।
________________________________________________

হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে

________________________________________________

হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে

রায়হান আবীর এর ছবি

আমিই দেই? কী বলেন জ্যোতি ভাই? দেঁতো হাসি


পুচ্ছে বেঁধেছি গুচ্ছ রজনীগন্ধা

ছন্নছাড়া এর ছবি

দে, কইস যে ভাল AOC খেলি।। খাইছে

রায়হান আবীর এর ছবি

AOC খেলা ভালু যোগ্যতা হিসেবে পরিগনিত নাকি... হায় হায় আমার কী হইবো তাইলে খাইছে


পুচ্ছে বেঁধেছি গুচ্ছ রজনীগন্ধা

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

আমার খুব কাছের এক বন্ধু গত মাসে ভ্যাঙ্কুভার চলে গেছে। যোগাযোগ হচ্ছে না তেমন। খুব ব্যস্ত। আপনার লেখা পড়ে মনে হলো তার সঙ্গে কথা বলছি। ধন্যবাদ। এই জনই ব্লগ।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

নীল নক্ষত্র [অতিথি] এর ছবি

ভ্যানকুভেরে থাকেন এমন কেও যদি ক্যাপ্টেন সেলিম (Mariner) নামে কাওকে চিনেন তাহলে কি আমি তাকে যোগাযোগ করার সবিনয় অনুরোধ জানাতে পারি?

গৌতম এর ছবি

লেখা পড়তে ভালো লাগছে।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

সাইফ তাহসিন এর ছবি

নাম পালটে নিক নিয়েছ, নিকটা বেশ ভালো লাগল। আর আসলেও লেখার গঠন খুব ভালো লাগল, আশাকরি লেখার গতি এবং পরিমান আরো বাড়বে।

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লাগছে আপনার উন্নতি দেখে। চালিয়ে যান।

রেনেসাঁ

তানবীরা এর ছবি

একেবারে বেড়া-ছেড়া অবস্থা!

হুঃ আঃ বেশ আছর রেখেছে দেখা যাচ্ছে ঃ)
---------------------------------------------------------
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

অতিথি লেখক এর ছবি

মা রাগ করেনি, অভিমান করেছে। যাক রাগ ভেঙ্গেছে জেনে ভাল লাগল।

দময়ন্তী এর ছবি

সুন্দর লেখা৷
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

জি.এম.তানিম এর ছবি

চলুক
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

অনিকেত এর ছবি

চমৎকার লেখা!!!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।