আমাদের হাতে অভিজিৎ রায়ের রক্ত

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি
লিখেছেন ত্রিমাত্রিক কবি (তারিখ: রবি, ১৫/০৩/২০১৫ - ২:৪০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

একটা মেয়ে কেন ধর্ষিত হয়? এই প্রশ্নটা শুনলেই উত্তর দেয়ার জন্যে নানা কিসিমের আগ্রহী লোক জমায়েত হয়ে যায়। সেটা হোক বন্ধুদের আড্ডায়, সুশীলদের সেমিনারে, অনলাইনে অথবা অফলাইনে। প্রায় প্রত্যেকটা মানুষেরই এই ব্যাপারে কিছু বলার থাকে সাধারণত। নীতি-নৈতিকতা নিয়ে জ্ঞান দেয়ার সুযোগ মানুষ সাধারণত ছাড়ে না। এছাড়াও মেয়েদের পোশাক আশাকের ব্যাপারে জ্ঞানগর্ভ কিছু বলার মতো কথা নেই, কত রাতের পর ভদ্র ঘরের মেয়েরা বের হয় না, বা বের হওয়া উচিত না সেই বিষয়ে দেয়ার মতো নিজস্ব অথবা ধারকৃত মতামত নেই, এমন মানুষ সংখ্যায় খুব বেশি না। মেয়েরা নরম টিউব আর ছেলেরা শক্ত টায়ার, টায়ার ছাড়া শুধু টিউবে গাড়ি চালালে পেরেক তো ফুটবেই এরকম উপমাও দেন আমাদের বিখ্যাত সেলিব্রেটিরা। সেখানে শত শত লাইক পড়ে, সাথে দুই একটা গালিও হয়ত। পত্রিকায় মেয়েটার ছবিসহ খবর ছাপা হয়, শিরোনাম হয় ‘তরুণী ধর্ষিত’। সেখানে রিপোর্টের ফাঁকে ফাঁকে লেখা হয় মেয়েটার কামিজের দৈর্ঘ্য কতটুকু ছিল, মেয়েটা কত রাতে বাড়ি ফিরছিল। সবাই প্রশ্ন করে, ‘কেন ধর্ষিত হলো মেয়েটি?’ একটা মেয়েকে তো কেউ এমনি এমনি ধর্ষণ করে না, কত মেয়েই তো একা একা চলে, কই তাদের তো কিছু হয় না!

এই প্রশ্নগুলো করার মধ্যেই একটা কৌশল থাকে। যে বাক্যে প্রশ্ন করা হয়, লক্ষ করলে দেখা যাবে সেই বাক্যে মূল ‘কর্তা’ অনুপস্থিত থাকে প্রায় সবসময়। বাস্তব ঘটনাকে সঠিক উপস্থাপন করতে পারে এমন কোনো বাক্য রচনা করা হলে সেখানে মেয়েটাকে বাক্যে ‘কর্ম’ হিসেবে রাখতে হতো, ‘কর্তা’ হিসেবে থাকত ধর্ষক পুরুষ। কিন্তু খুব কৌশলে সেই বাক্যটাকে বদলিয়ে দিয়েছি আমরা। তাই আমরা প্রশ্ন করি, ‘মেয়েটি কেন ধর্ষিত হলো?’ যেন ধর্ষণ প্রক্রিয়ায় ধর্ষক নামের পুরুষের কোনো অস্তিত্ব নেই।

আজকের লেখায় এই গুরুত্বপূর্ণ আর অধিকাংশ লোকের জন্য আগ্রহোদ্দীপক এই প্রশ্নটিকে পাশ কাটিয়ে আরেকটি প্রশ্ন নিয়ে ভাবতে বসেছি আমি। অভিজিৎ রায় খুন হলেন কেন? অভিজিৎ রায়রা কেন এভাবে মারা যান? কেন খুন হন রাজীব হায়দার বা হুমায়ুন আজাদ? একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারি, এই প্রশ্নগুলোও ঠিক একই ধাঁচের এক একটা প্রশ্ন। প্রত্যেকটা বাক্যেই ‘কর্ম’কে খুব কৌশলে ‘কর্তা’ বানিয়ে দেয়া হয়েছে। আমরা চাই কেন খুন হলেন অভিজিৎ রায় বা রাজীব হায়দার তার কারণ খুঁজে বের করতে। আর বাক্যে ‘কর্তা’ যেহেতু অভিজিৎ রায়রা, তাই কেন তিনি খুন হলেন, কেন তাঁরা খুন হচ্ছেন সেই কারণ খুঁজতে গেলে তো তাঁর বা তাঁদের কাজের মধ্যেই খুঁজতে হবে!

আজকের আলোচনায় বাকিদেরকে সরিয়ে রেখে অভিজিৎ রায়ের দিকেই ফেরাই বরং। কেউ প্রশ্ন করে বসতেই পারেন, অভিজিৎ রায়ের যে রাতের আঁধারে খুন হলেন, তাহলে অভিজিৎ রায়ের কি কাপড় ঠিক ছিল না নাকি? ওহ, না না উনি তো পুরুষ মানুষ, ওনার কাপড় ঠিক না থাকলেও চলে। তাহলে? শুনলাম বইমেলার গেটের কাছে কোপাইছে, তা উনি কি লিখতেন টিখতেন নাকি? অ্যাঁ। তো কোথায় লিখতেন উনি? আচ্ছা আচ্ছা, ব্লগে লিখতেন! বইটইও ছিল? কী বলছেন! হুম সন্দেহ তো খাপে খাপে মিলে যাচ্ছে আমার। নামে তো হিন্দু, কিন্তু বউটাতো মুসলমান লাগে। নাস্তিক নাকি? আমি আগেই ধরছিলাম, ব্লগার, আবার মুসলমান মেয়ে ভাগায়ে নিছে। ইসলাম বিদ্বেষী না হয়েই তো যায় না। বিপরীতে আপনি প্রশ্ন করতেই পারেন, ‘তা আপনে তার বইটই পড়ছেন নাকি কিছু? কী লিখছে সে?’ আরে বই পড়া লাগে নাকি, বোঝাই যায়, একটা লোককে তো কেউ এমনি এমনি কোপায় না। কত লোকই তো লেখালেখি করে, হুমায়ূন আহমেদ কি লেখালেখি কম করছে? ইমদাদুল হক মিলন, সুমন্ত আসলাম এরা কি লেখে না? আনিসুল হক তো প্রতিদিন মেলায় অটোগ্রাফ দিতে আসে, কই তাদের তো কেউ কোপায় না। এমনি এমনি কিছু হয় না ভাই, এক হাতে তালি বাজে না। তাছাড়া জানেন নাকি, অনেকে দেশের বাইরে নাগরিকত্ব নেয়ার জন্যে এইসব ইসলামবিদ্বেষী লেখা লেখে। অ্যাঁ, কী বললেন? উনি আমেরিকার নাগরিক? হেহে তাইলে বোঝেন, এইসব লিখেই তো নাগরিকত্ব পাইছে। আর এখন আমেরিকার নাস্তিক্যবাদী আর খ্রিস্টান মিশনারিদের টাকা খেয়ে বাংলাদেশের মতো নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশের মানুষের ধর্ম নষ্ট করতে আসছে। তার কি সাহস আছে আমেরিকা নিয়ে লেখার? পারলে দেখান এরকম একটা লেখা!

অভিজিৎ রায়ের মৃত্যুর প্রেক্ষিতে করা উপরের প্রশ্নগুলো কাল্পনিক, এই কথা কেউ ভেবে থাকলে ভুল করবেন। গত কয়েকদিনে এইসব প্রশ্ন শুধু আমার নিজের পরিচিত ছোট্ট গণ্ডির মধ্যেই বারবার উত্থাপিত হতে দেখলাম নানাভাবে। ঘটনাটা শোনার পর যতটা বিমূঢ় হয়েছি, যতটা কষ্ট পেয়েছি, তার চেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছি সম্ভবত অনেক পরিচিত, অর্ধপরিচিত, অপরিচিত আর বিখ্যাত অর্থাৎ সুপরিচিত মানুষের নানা প্রতিক্রিয়ায়, প্রশ্নে আর মন্তব্যে। অভিজিৎ রায়ের সহব্লগার, সহলেখক, নিজেই নিজেকে প্রগতিশীল দাবি করেন এমন অনেকের মন্তব্য, আলোচনা দেখে কয়েকদিন শুধু হতবাক হয়ে বসে ছিলাম।

তো, এই বিষয় নিয়ে এখন আমি লিখছি কেন? নতুন কী লিখব আমি? বিস্তর লেখালেখি তো হলো এই কয়দিন, ব্লগে, ফেসবুকে, টুইটারে, পত্রিকায়, বাঁশেরকেল্লায়। বিভিন্ন গোষ্ঠী আর দলের লোক লিখলেন, লিখলেন বিভিন্ন বিশ্বাস আর মতের লোক, বিভিন্ন মন আর মননের লোক। কেউ লিখলেন এই সুযোগে দলের পক্ষে কিছু বলে নিজের জায়গাটা কতটা পাকা করা যায় সেই ভেবে, কেউ লিখলেন সরকারকে এক হাত দেখে যায় নাকি সেই ভেবে, কেউ লিখলেন বিচারহীনতার সংস্কৃতি নিয়ে, কেউ লিখলেন শুধু নিজের ক্ষোভটুকু জানাতে, বেদনাটুকু ভাগ করে নিতে। কেউবা কিছু লিখলেন না। কেউ লিখলেন না, কারণ অভিজিৎ রায় তাদের কাছের কেউ ছিলেন না, কেউ লিখলেন না লিখলে লোকে নাস্তিক বলবে বলে, কেউ লিখলেন না কারণ লিখলে যা লিখবেন তাতে তাকে কিছু লোক হয়ত অমানবিক বলবে, কেউ লিখলেন না লিখতে পারেন না বলে, কেউ লিখলেন না, কারণ লিখে কিছু হয় না।

আমি আজ লিখতে বসছি এই হত্যাকাণ্ডে নিজেদের দায়টা খতিয়ে দেখতে। আয়নায় নিজের এবং নিজেদের মুখটা একটু দেখে নিতে। ধরে নিচ্ছি এই হত্যার সাথে সরাসরি সর্বোচ্চ দশজন বা বিশজন জড়িত আছেন, যাদেরকে আমরা হয়ত খুনি হিসেবে চিহ্নিত করতে চাচ্ছি। কিন্তু আমার কেবলই মনে হচ্ছে এই হত্যায় আমারও অংশগ্রহণ আছে, আমার আর আমাদের দায় আছে, আমার হাতেও লেগে আছে অভিজিৎ রায়ের রক্ত। আমার নিশ্চুপ থাকার দায় আছে, আমার নির্বুদ্ধিতার দায় আছে, আমার সহনশীলতার দায় আছে।

অভিজিৎ রায় বা রাজীব হায়দার বা হুমায়ুন আজাদ বা অন্য আরও অনেকেই যারা মূলত মুক্তচিন্তা, ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লেখালেখি বা মৌলবাদের বিরুদ্ধে অবস্থানের কারণে আক্রমণের শিকার হয়েছেন, আমরা জানি এই হত্যাকাণ্ডগুলোর কোনোটারই বিচার হয়নি ঠিকঠাক। ঠিক যেমনি বিচার হয়নি আরও অনেক অনেক হত্যাকাণ্ডের। বিগত কিছুদিনের সবচেয়ে আলোচিত বিশ্বজিৎ হত্যা, সাগর-রুনি হত্যার কথা বলা যায়। এই হত্যাকাণ্ডগুলো নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, পত্রপত্রিকায় প্রচুর আলোচনা হয়েছে। আরও প্রতিদিন নাম না জানা, নজরে না আসা হত্যা হচ্ছে, মানুষ মারা হচ্ছে পেট্রোল বোমায় রাজনৈতিক কর্মকান্ডের নামে, ভুল নকশায় ভবন নির্মাণের কারণে অল্প কিছুদিন আগেও মারা পড়েছে হাজারের উপর মানুষ, লঞ্চডুবিতে শত শত মানুষ মারা যাচ্ছে প্রতি বছরই। নানা অপরাধ হচ্ছে, ধর্ষণ হচ্ছে প্রতিদিন। বিচার না হওয়ার সংস্কৃতি আমাদের আছে, খুব ভয়াবহভাবেই আছে। সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। তাহলে এত শত শত মৃত্যুর মিছিলের মধ্যে আলাদাভাবে অভিজিৎ রায়ের মৃত্যু নিয়ে লিখতে বসলাম কেন?

আমার দৃষ্টিতে এই দুই ধরনের হত্যার মধ্যে খুবই মৌলিক কিছু পার্থক্য আছে। স্বাভাবিকভাবে বেশিরভাগ অপরাধমূলক কাজ মানুষ করে কোনো ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক লাভের জন্য। ধরে নেই সাগর-রুনির হত্যাকান্ডের কথা। সেখানে আমি আমার পরিচিত কাউকে দেখিনি এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে কোনো আদর্শগত কারণ খুঁজতে, সবাই মেনে নিয়েছেন, বুঝেছেন যে এই হত্যাকাণ্ড কোনো ব্যক্তিগত লাভ লোকসানের সাথে জড়িত, এইজন্যে এই হত্যাকাণ্ডকে কেউ জাস্টিফাই করতে আসেন নি। যাঁরা খুন হয়েছেন তাঁদের পোশাক কেমন ছিল, সেটা নিয়ে মূলধারায় আলোচনা হয়নি। মোটাদাগে সবাই এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়েছেন। বিচার না হলে আক্ষেপ করেছেন, সরকারের সমালোচনা করেছেন, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে দোষ দিয়েছেন। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডকে মহান হিসেবে দেখানো, বা তাঁদের কর্মফল হিসেবে দেখানোর চেষ্টা আমি অন্তত কাউকে করতে দেখিনি। একইভাবে লঞ্চডুবি বা ভবনধসে বা কর্তৃপক্ষের অবহেলায় যাদের অপঘাতে মৃত্যু হয়, খুব অসুস্থ মস্তিষ্কের কিছু লোক ছাড়া এই মৃত্যুকে তাদের কর্মফল হিসেবে ঘোষণা করে না। এইসবের কারণে আমরা সবাই সরকার, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা থেকে শুরু করে ভবনের মালিক, পরিবহন মালিক সবাইকেই দোষের ভাগীদার করি, যৌক্তিকভাবেই। তাদের শাস্তি দাবি করি। কিন্তু হুমায়ুন আজাদ, রাজীব হায়দার বা অভিজিৎ রায়রা যখন খুন হন, তখন এই আমরাই অশ্লীল আচরণ শুরু করি। আমরা কারণ খুঁজতে বসে যাই, অভিজিৎ রায়ের কাপড় ঠিক ছিল তো?

অভিজিৎ রায়কে বইমেলার গেটের কাছে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে, খবরটা শোনার পর আমার কিছু করার ছিল না। আমি তো যিশু নই, ডাক্তারও নই। মৃত অভিজিৎ রায় বা আহত বন্যা আহমেদকে সামান্যতম সাহায্য করার ক্ষমতা আমার নেই। তাই আমার সকল অক্ষমতা নিয়ে ইন্টারনেটে টিভি চ্যানেলের লিংক খুলে বসি। টিভির স্ক্রলে দেখাচ্ছিল, অভিজিৎ রায় মারা গেছেন, আর তাঁর স্ত্রী বন্যা আহমেদ গুরুতর আহত, অবস্থা আশঙ্কামুক্ত নয়। একাত্তর টিভিতে কোনো একজন উপস্থাপিকা (নাম জানি না, তখন নাম খুঁজে দেখার মতো মানসিকতাও ছিল না) একজন জনপ্রিয় অনলাইন ব্যক্তিত্বকে (ব্লগার, অ্যাক্টিভিস্ট) ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে সংযুক্ত করেছেন। স্মৃতি থেকে লিখছি। উপস্থাপিকা বারবার সেই অতিথিকে জিজ্ঞেস করছেন, আপনি কি অভিজিত রায়ের লেখা বই পড়েছেন, বইয়ে লেখা ছিল এমন কিছুর জন্যেই কি হত্যা করা হয়েছে তাঁকে? অতিথি বারবার বিষয়টি খোলাসা করতে চাচ্ছেন, একজন লেখক বইয়ে কী লিখেছেন সেটা এখানে বিবেচ্য নয় বা হওয়া উচিত নয় (ঠিক যেমন ধর্ষণের পর মেয়ের পোশাক নিয়ে কথা বলা অপ্রাসঙ্গিক এবং অনুচিত)। অতিথির মুখ থেকে কাঙ্খিত উত্তর পাবার জন্য বারবার একই ধরনের প্রশ্ন করে যাচ্ছেন উপস্থাপিকা। অতিথির মুখ থেকে সুবিধাজনক কথা বের করতে না পেরে যতদূর মনে পরে উপস্থাপিকা নিজেই বইটি খুলে বসলেন এবং সেখান থেকে কিছু কিছু অংশ পড়লেন। পড়ার পর আবার অতিথিকে প্রশ্ন করতে থাকলেন এ ধরনের কিছু লেখার জন্যেই তাকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে কি না। আমার মনে পড়ে যায়, হুমায়ুন আজাদকে হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণের পরে কোনো এক সাক্ষাৎকারে ঠিক এরকম একটি কথাই বলেছিলেন জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ।

প্রশ্নকর্তা: বাংলাদেশের লেখকরা কি স্বাধীন?
হুমায়ূন: হ্যাঁ, বাংলাদেশের লেখকরা স্বাধীন।
প্রশ্নকর্তা: তাহলে ড. হুমায়ুন আজাদকে মরতে হলো কেন?
হুমায়ূন: কারণ যে বইটা তিনি লিখেছিলেন, তা এতই কুৎসিত যে, যে কেউ বইটা পড়লে আহত হবে। তার জন্য মৌলবাদী হতে হয় না।

পরের কথাটি না বললেও আমরা এই বাক্যের উদ্দেশ্য বুঝে নিতে পারি। পরে যা স্পষ্ট করে বলা হয়নি তা হলো, “হুমায়ুন আজাদকে সাধারণ একজন মানুষও আহত হয়ে আঘাত পেয়ে হত্যা করতে পারে, এইজন্যে মৌলবাদী হবার দরকার নেই”, হুমায়ূন আহমেদ কি আহত হয়েছিলেন হুমায়ুন আজাদের বই পড়ে? তিনি কি এতটা আহত হয়েছিলেন যে খুন করতে ইচ্ছা হয়েছিল? সে কথা আমরা কখনই জানতে পারব না। বা একাত্তর টিভির যে উপস্থাপিকা বইয়ের ভেতরে মেরে ফেলার কারণ হিসেবে যেসব আপত্তিকর বাক্য খুঁজে কোট করার চেষ্টা করছেন, সেটা কি তাঁর নিজের কাছেও আপত্তিকর বাক্য? হলে কতটা আপত্তিকর? এতটাই আপত্তিকর যে এইসব খুঁজে খুঁজে বের করে খুনকে জাস্টিফাই করে ফেলা যায়? এটা কি দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা?

আমরা কেন যেন ধারণা করে নেই, আমাদের ষোলো কোটি লোকের দেশে মৌলবাদী লোক সংখ্যায় খুব বেশি নয়। কুপিয়ে মেরে ফেলার মতো মানুষ খুব বেশি নয় বলেই আমরা বিশ্বাস করি। সেই কথা হয়ত মোটা দাগে সত্যিও, কিন্তু এর সাথে এটাও সত্যি যে কুপিয়ে মেরে ফেলাটাকে হালাল করে দেখার মতো মানুষ কম তো নয়ই বরং অনেক অনেক বেশি। গুটিকয়েক মানুষ বাদে, এমনকি যাঁরা নিজেদের প্রগতিশীল বলে দাবি করেন, ধর্মনিরপেক্ষতার বুলি আওড়ান তাঁদের পর্যন্ত এই ঘটনার পরে পকেট থেকে টুপি বের করে শুধু সেই টুপি পরতেই দেখা গেল না, এইসব হত্যাকাণ্ড হালাল করার জন্য নানারকম যুক্তি দিতেও দেখা গেল।

এখন মোটামুটি বিখ্যাত (এবং অবিখ্যাত) সব ব্যক্তি এবং ব্যক্তিত্বেরই ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট আছে। তাঁরা সেসব সক্রিয়ভাবে ব্যাবহার করে থাকেন। সেখানে বাকস্বাধীনতার প্রয়োগ ঘটান এবং এর মাধ্যমে তাঁরা বেশিরভাগই নিজেদের একটা সমাজসচেতন স্যুডোইমেজ তৈরি করেছেন। তাদের কারও কারও লাখের ওপর অনুসারী (ফলোয়ার), যারা মোটামুটি বলদের মতো এসব ব্যক্তিত্বের লেখায় লাইক দিয়ে এসব ব্যক্তিত্বের অনুরাগী অনুসারী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে থাকেন। আমি প্রায় বেকার ধরনের মানুষ, তাই এরকম বিখ্যাত আর অখ্যাত কিছু ব্যাক্তির ফেসবুক অভিজিৎ রায়ের মৃত্যুর পর একটু ঘুরে ফিরে দেখলাম।

কেউ ফেসবুকে কিছু না বললেই সেই বিষয়ে তিনি কোনো সিদ্ধান্তে আসেন নি বা সেই বিষয় নিয়ে ভাবিত নন এ কথা আমি বলতে চাইছি না। কিন্তু প্রথম আলোর উপসম্পাদক আনিসুল হক বা ফেসবুক সেলিব্রেটি আরিফ আর হোসেন (মূলত ছাগু, যে কিনা দাবি করে তারাই বাংলাদেশ) -এর মতো জনপ্রিয় লোকজন যারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ এবং অগুরুত্বপূর্ণ যেকোনো বিষয়ে নিজেদের মূল্যবান মতামত দিয়ে জাতিকে সমৃদ্ধ করতে ভোলেন না কখনোই, তাঁরা অভিজিৎ রায়ের হত্যার বিষয়ে কোনো কথাই বললেন না। আরেকজন বিখ্যাত সেলিব্রেটি আব্দুন নূঢ় তুষাঁড় ‘আসল বাঘ আর সার্কাসের বাঘ’ শিরোনামে একটি বিষ্ঠাতূল্য লেখা প্রসব করলেন। সেখানে তিনি লিখলেন, ‘সন্ত্রাস কি কেবল শারীরিক? মোটেও তা নয়’। এরপর লিখলেন, ‘মুক্তচিন্তা কতটুকু মুক্ত বা ধর্মচিন্তা কতটুকু সীমাবদ্ধ? এই জটিল প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে, আমি কেবল বলতে চাই, মানুষ ততটুকুই স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে, যতটুকুর সে উপযুক্ত হয়েছে। স্বাধীনচিন্তা বা মতপ্রকাশ অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, তবে সেটির প্রকাশভঙ্গি যদি এক পক্ষকে ক্ষেপিয়ে তোলে তবে সে বিষয়ে আমাদের চিন্তা করার দরকার আছে।’ মেরুদণ্ডহীন সুশীল সেলিব্রেটি বলে মনের কথাটা সরাসরি বলারও সাহস নেই। সুশীলতার মোড়ক খুলে ফেললে আমরা দেখতে পেতাম, তিনি বলছেন, ‘অভিজিৎ খুন হয়েছেন কারণ তিনি উগ্র নাস্তিক’। যেই কথাটা একটু কম সুশীল লোকজন আর অন্য আরও অনেক ফেসবুক সেলিব্রেটি রাখঢাক না করে বলে দিয়েছেন। অনলাইনে একটি অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপের হর্তাকর্তা ব্যক্তিদের কথাবার্তা আর মতামতের কিছু নমুনাও এই লেখার সাথে দিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছি।

ভাই ভাই অভিজিত রায়রে কুপায়া মারছে!!
উত্তর: তো কি বাল ফালানি গেছে?
এইটা কি কইলেন ভাই? একটা মানুষ কুপায়া মারছে আর আপনি এইভাবে কইলেন? একজন মানুষ হিসেবে তো অন্তত এইসব হত্যাকান্ডের নিন্দা জানাইতে পারতেন!! আপনে মিয়া মানুষই না
উত্তর: গত দুই মাস যাবত দেশে আগুনে পুড়ায়া মানুষ মারা হইতেছিল... অভিজিত রায়ের কি বালটা ফালানি গেছে? যায়া দেখো অভিজিতের টাইম লাইন... গত জানুয়ারি আর ফেব্রুয়ারি মাসে তার টাইম লাইনে মানুষ পোড়া নিয়া কিছু আছে কিনা... ধর্ম কচলানি ছাড়া আর কি বালটা ফালাইছে...একজন মানুষ হিসেবে তো অন্তত এইসব হত্যাকান্ডের নিন্দা জানাইতে পারত!!!
অভিজিত হত্যাকান্ডে আমি খুশী না... দুঃখীও না...
এইসব ইউসলেস প্রোডাক্ট সমাজে থাকলেই কি আর না থাকলেই কি? সারাদেশে যখন মানুষ পেট্রোলে পুইড়া মারা হইতেছিল তখন অভিজিত সুশীলতার কলা মুখে দিয়া চুষতেছিল...
আই ডোন্ট ফিল এনিথিং ফর দ্যাট বোনলেস চিকেন

খাসীরা ছাগুদের পারপাস সার্ভ করে আর ছাগুরা খাসীদের কর্মে প্রেরণা যোগায়...
এরা একে অপরের পরিপুরক... একজন না থাকলে আরেকজনের মুল্য নাই...
ছাগুদের কামকাইজ নাই দিনরাত্রি আকাম কুকাম কইরা সন্ধ্যা হইলে কুরান হাদিস প্রচারে নামে এই ফেসবুকে আইসা...
আর খাসীরা তাদের উগ্র নাস্তিকতা প্রচারের জন্য বাইছা নেয় সন্ধ্যাবেলার ফেসবুক... বিপরীত মেরুর হইলেও এরা আসলে কাজে কর্মে একি স্ট্রাটেজি ফলো করে... খাসীরা কলম মারফতে অশিক্ষিত ধার্মিকদের পুটকিতে খুচা দেয় আর সেই খুচা খায়া অশিক্ষিত ধার্মিকেরা খাসীর কল্লা বরাবর একটা কোপ দেয়...
এইসব জামাত/শিবির বা অন্ধ মৌলবাদীরা ইসলাম ধর্মকে অবমাননার পর্যায়ে নিয়ে যায়
যার কারনে অনেকে ইসলাম ঘৃণা করে ধর্ম বিদ্বেষীদের দলে যোগ দেয়
আর ধর্ম বিদ্বেষীরা ধর্মকে অশ্লীল ভাষায় আক্রমন করে এবং
সাধারন ধর্মভক্তদের উগ্র ধর্ম ভক্ত বানিয়ে জামাত শিবির বা মৌলবাদী দলে যোগ দিতে উতসাহিত করে
ছাগুরা নিজেদের ছাগুত্ব প্রচারে বাধা পাইলে আম্লিগ হয়া যায় নাস্তিক...
আর খাসীরা খাসীত্ব প্রচার করতে গিয়া ছাগুদের কাছে কোপ খাইলে আম্লিগ হইয়া যায় মৌলবাদী
কত মিল...
নাস্তিকতা এক্টা বিশ্বাস...
নিজেদের মাঝে আলাপ চারিতায় নাস্তিকতা আসতেই পারে... দোষের কিছু নাই...
বাট নাস্তিকতা যখন প্রচারে নামে তখন সেইটা আরেক্টা ধর্ম হিসেবেই আত্মপ্রকাশ পায়...

এদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকও আছেন, বা এমন লোক আছেন যারা অন্তত নিজেদেরকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক বলে দাবি করে থাকেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সোচ্চার থেকে মুক্তিযুদ্ধের একটি মূল স্তম্ভ ধর্মনিরপেক্ষতাকে ভুলে গিয়ে তারা টিভি পত্রিকায় বিবৃতি দেন। তারকা ব্লগার অমি রহমান পিয়ালের একটি টিভি সাক্ষাৎকার এখানে আমি এমবেড করে দিচ্ছি। এই সাক্ষাৎকারে কী কী কথা বলা হয়েছে সেই বক্তব্যের কিছু প্রাসঙ্গিক অংশ আমি এখানে তুলে দেবার চেষ্টা করছি। আর আগ্রহী পাঠকের জন্য পুরো ভিডিও তো থাকছেই। অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় বিখ্যাত ব্লগার এবং অ্যাক্টিভিস্ট অমি রহমান পিয়াল বলছেন,

মুক্তচিন্তার গন্তব্য এখন বিদেশ, একশ্রেণির ছেলেপেলে এখন এটাকে বিদেশ যাওয়ার উপায় হিসেবে নিচ্ছে ... ... এক শ্রেণির মধ্যে একটু উগ্র ভাব, যারা নিজেদের মুক্তমনা বলে দাবি করছে, মুক্তচিন্তা করে বলে দাবি করছে, দেখা যাচ্ছে এই উগ্র সাম্প্রদায়িকদের সাথে তাদের নূন্যতম তফাত নেই

যেটা বোঝা গেল, দেশের একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বিশ্বের একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করা ড. অভিজিৎ রায় তাহলে বিদেশে যাবার জন্য লেখালেখি করতেন!

অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতারকৃত ফারাবীর ফেসবুক হুমকির কারণে বই বেচাকেনার জনপ্রিয় ওয়েবসাইট রকমারি ডট কম আর তার কর্ণধার মাহমুদুল হাসান সোহাগের ক্ষমাপ্রার্থনার ইতিহাস আমরা সবাই জানি। আমরা জানি রকমারি ডট কমের নির্লজ্জ আচরণের পরেও শুধুমাত্র আর্থিক লাভের কথা চিন্তা করে প্রায় (অল্প কিছু সাহসী ব্যতিক্রম) কোনো প্রকাশক বা লেখকই অভিজিৎ রায়ের পাশে দাঁড়ান নি, রকমারিতে নিজেদের নির্লজ্জ বিপণন করে গেছেন। আমাদের চিন্তার বাতিঘর যে লেখক সমাজের হবার কথা তাঁদের এরকম নির্লজ্জ আচরণ কি অভিজিৎ রায়ের হত্যাকারীদের সাহস দেয় না? অল্প কিছু বছর আগে প্রগতিশীল নামধারী পত্রিকা প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের মৌলবাদি শক্তির কাছে গিয়ে জোড়হাতে ক্ষমাপ্রার্থণা করার ছবিটি সম্ভবত আমাদের সুশীল শ্রেণির আচরণের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে। সদ্য সমাপ্ত বইমেলায় রোদেলা প্রকাশনীর ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমির সিদ্ধান্ত তো রীতিমতো লজ্জাজনক। কিছুদিন আগে কেবলমাত্র লেখালেখির কারণে কয়েকজন ব্লগারকে গ্রেফতার করে সরকারও আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে, এই পথে আমরা মূলত একা।

এরকম অসুস্থ, অর্ধ আর অস্বচ্ছ চিন্তার মানুষ আমাদের মধ্যে আছেন সেটা আমাদের বড়ো দুঃখ নয়। আমাদের বড়ো দুঃখ, আমরা এইসব মানুষদের উচ্চ আসনে বসিয়েছি। হুমায়ূন আহমেদ, আনিসুল হক আর আরিফ আর হোসেনের কাছে আমরা আমাদের চিন্তা চেতনা বন্ধক রেখেছি। আমাদের চিন্তাভাবনার ভার এইসব মধ্যচিন্তক সুবিধাবাদীদের হাতে সমর্পণ করেছি।

আমরা যারা কিছুটা কথা বলার সুযোগ পাই, খাদ্যবস্ত্রের বাইরেও অন্য কিছু নিয়ে কিছুটা ভাববার সুযোগ পাই এবং বলতে চাই তারা অধিকাংশই দেশের মধ্যবিত্ত জনগণ। আমরা মধ্যবিত্ত, সেটা আমাদের বিত্তের সীমাবদ্ধতা। সেই সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করার ক্ষমতা হয়ত আমাদের নেই। কিন্তু আমরা যেন পণ করেছি এই মধ্যবিত্ত আমরা মধ্যচিত্তও হয়ে থাকব, না হলে এই রকম মেরুদণ্ডহীন, অনৈতিক মানুষগুলোকে কেন আমরা তারকা বানিয়েছি? উচ্চ আসনে বসিয়েছি? আমরা মধ্যবিত্তরা নিজে কোনো বিত্ত সৃষ্টি করতে পারি না, পূর্বপুরুষের রেখে যাওয়া জমিজমা ভাগাভাগি করে বড়োজোড় একটা ছাপোষা চাকরি করে আমাদের জীবন কাটিয়ে দেই। আমাদের জীবনের সর্বোচ্চ সংগ্রাম এই জমির জন্যে ভাইয়ে ভাইয়ে, ভাইয়ে বোনে, বোনে বোনে যুদ্ধ। কিন্তু বিত্তের মতো চিত্তও আমরা উত্তরাধিকারসূত্রে পেতে চাই, এখানে যে চর্চার কোনো ব্যাপার থাকতে পারে সেটা আমাদের বোধের বাইরে। আমরা আসলে অনেক বেশি মিডিওকার লোকজন চাই, কেউ সেই মধ্যচিত্তের পোষ মানা প্রাণ আর মাঝারি উচ্চতা ছাড়িয়ে বড়ো হতে শুরু করলেই আমাদের মধ্যবিত্তের ততোধিক মধ্যচিত্ত উসখুস করতে থাকে। কিন্তু অধিকাংশ মধ্যবিত্ত তার নিজের উসখুসের তাড়না মেটাতেও সাহস করেন না। তখন কোনো কোনো ‘উগ্র’ মধ্যচিত্ত এই ‘উগ্র’ লোকটির বর্ধিষ্ণু চিত্তকে কোপ দিয়ে নামিয়ে ফেলেন। এটা যেন ইসলামের পরিভাষায় ঠিক ফরযে কিফায়া। ফরজে কিফায়া হলো এমন একটা ইবাদত যেটা লোকালয় থেকে একজন অন্তত পালন না করলে সবাই দোষের ভাগীদার হয়, একজন করলে সবার দায়মুক্তি ঘটে। এই দুই একজন তথাকথিত ‘উগ্র’ মধ্যচিত্ত এই ফরযে কিফায়া পালন করতে এগিয়ে আসে আর বাকি সব উসখুস জনতার যেন নিজে সাহস করে এই কাজে এগিয়ে না আসতে পারার কারণে এই ব্যাক্তিকে ডিফেন্ড করা নিজের দায়িত্ব মনে করে।

মধ্যবিত্তের সামাজিক নির্লিপ্ততার আরেকটা উদাহরণ দেবো আমি এখানে। আমি অভিজিৎ রায় হত্যার পর ঢাকার বেশ কয়েকটি মসজিদে জুমার নামাজে খুতবায় কী আলোচনা হচ্ছে সেই বিষয়ে কিছু বন্ধু-বান্ধবের মাধ্যমে খোঁজ খবর নেয়ার চেষ্টা করি। অনেকগুলো মসজিদেই এই দিন নাস্তিকতা এবং ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তিকারীদের নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ‘নাস্তিকদের বাংলার জমিনে কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না’, এই কথাবার্তা বাংলাদেশে নতুন না। কিন্তু সচরাচর মসজিদের হুজুরেরা বিশেষ করে শহরাঞ্চলের মসজিদের হুজুরেরা (অনেকে নিজে উগ্রবাদী মতবাদ ধারণ করলেও) অতি উগ্রবাদী ওয়াজ পরিহার করেন বলে আমার ধারণা হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে শাহবাগের পরে এবং বিশেষ করে অভিজিৎ হত্যার পরের দিন বিভিন্ন মসজিদে এই রকম টোনে আলোচনা হয়েছে। মজার ব্যাপার হলো অধিকাংশ শ্রোতা অধিকাংশ সময় হুজুর বা ইমামদের এরকম উগ্র বয়ান সরাসরি খুব একটা গুরুত্বের সাথে নেন না, কিন্তু এর প্রত্যক্ষ বিরোধিতাকেও দরকারি মনে করেন না। মূলত নিজের ধর্ম সম্পর্কে না জানা আর দুর্বলতা এর একটি কারণ। আর একটি কারণ হলো সাধারণত কেউ যদি এসবের প্রতিবাদ করেন তাহলে সাধারণত প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী মূলত তাঁকে বা তাঁদেরকে একা করে ফেলে নাস্তিক বা ইসলামের শত্রু বা মুরতাদ নামকরণের মাধ্যমে। তখন কারও পরিণতি হয় অভিজিৎ রায় বা রাজীব হায়দারের মতো, সৌভাগ্যবান অনেকেই হয়ত বেঁচে থাকে মৃত্যুর ভয়কে সঙ্গী করে।

আরেকটি লক্ষ করার মতো বিষয় হলো, মুক্তমনা বলুন আর ভিন্নচিন্তার মানুষ বলুন তাঁদের মুখ যখন কখনও ভয় দেখিয়ে বা কখনও আইন প্রয়োগ করে বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে, কিন্তু একই সাথে প্রতিক্রিয়াশীলরা কিন্তু প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষকে আরও উগ্র সাম্প্রদায়িক করে তোলার চেষ্টা করছেন। ঢাকার বিভিন্ন মসজিদের ইমামের জুমার খুতবা নিয়মিত আপডেট করা হচ্ছে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। সেরকম একটি ওয়েবসাইটে ঢুকে একজন ইমামের একটি উক্তি পেয়ে গেলাম একটা খবরের হেডলাইন হিসেবে, ‘দুই মহিলার হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা দরকার’। খবর পড়ে বুঝলাম এটা সেই ইমাম সাহেবের রাজনৈতিক অবস্থান। যদিও মসজিদের খুতবায় সরাসরি এরকম বক্তব্য অধিকাংশ সময় এনারা পরিহার করেন, বরং অধিকাংশ সময়ে ইনিয়েবিনিয়ে ঘুরিয়েপেঁচিয়ে এই ধরনের কথা বলে থাকেন। ধর্মীয় দুর্বলতার কারণে আমরা বুঝেও না বোঝার ভান করে থাকি। কেউ যদি এসে যুক্তিতর্ক করতে যান তাহলে অনেকেই হয়ত বলে ওঠেন, ‘না এটা তো প্রকৃত ইসলাম নয়’। কিন্তু আমরা আমাদের এইসব মতামত শেষ পর্যন্ত যিনি এই রকম মৌলবাদের বিরোধিতা করে তাঁকে ঠেকাতেই ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু যাঁরা এই তথাকথিত ‘অপ্রকৃত’ ইসলামের ঝান্ডা বহন করে আসছেন তাঁদের ঠেকাতে আমাদের বিশেষ কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয় না। এদের হাতেই আমরা কথা বলার জন্য মাইক ছেড়ে দিচ্ছি। একটি এলাকায় জুম্মার নামাজে প্রায় সকল স্তরের শিক্ষিত আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন মানুষ, যারা নিজেদের ধর্মপ্রাণ কিন্তু মৌলবাদী নন বলে দাবি করেন, বা উদার ধার্মিক বলে দাবি করেন এমন মানুষ আসেন বলে আমার ধারণা। কিন্তু এই ধরনের মানুষের উগ্র কথা দিনের পর দিন মাসের পর মাস শুনে যেতে আমাদের সমস্যা হয় না। কেউ বিশ্বাস করতেই পারেন, সেই স্বাধীনতায় আমরা হস্তক্ষেপ করতে পারি না, চাই না, কারণ আমরা চিন্তার স্বাধীনতায় বিশ্বাসী হতে চাই, কিন্তু এরকম মানুষকে আমরা আমাদের মুখপাত্র হিসেবে বক্তা হিসেবে মেনে নিচ্ছি। আমাদের শিশুরা বাবার সাথে জুম্মার নামাজ পড়তে যায়, এওরকম বক্তৃতা শুনে তারা বড়ো হচ্ছে, আমাদের এই বক্তারা কি তাহলে আমাদের চিন্তারই প্রতিনিধিত্ব করে? নাকি আমরা এতটাই ভীতু আর নির্লিপ্ত হয়ে পড়ছি, যে প্রতিবাদ পর্যন্ত করতে পারছি না। সেটা যদি হয় তাহলে সেটাও আশার কথা। কিন্তু আমার কেন যেন বারবার মনে হচ্ছে, বেশিরভাগ মানুষের ভেতর থেকে প্রতিবাদটা আসছেই না। আমরা উসখুস করা মধ্যচিত্ত হয়েই টিকে আছি, সেই সুযোগই এরা নিচ্ছে। এইসব খুতবা আর ওয়াজ কি আমাদের পুলিশ অফিসাররাও শোনেন না? এইসব বক্তৃতা কি তাঁদেরও মনন তৈরি করে না? সেইজন্যেই কি তাঁরা তাদের সামনে অভিজিৎ রায়কে কোপাতে দেখলেও চুপ করে থাকেন? তাদের ভেতরে একটা জাস্টিফিকেশান কি ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে আছে?

কিন্তু একটু ভেবে দেখলে বুঝতে পারি আমার হাতেও অভিজিৎ রায়ের রক্তের দাগ, কারণ এইসব খুতবায় আমিও ছিলাম, আমার ভাই ছিল, আমার বাবা, বন্ধু ছিল। সেইসব শুনে হাসিমুখে বাসায় এসে গরুর মাংস, রুইমাছ আর পুঁইশাক দিয়ে ভাত খেয়ে হাত ধুয়ে ফেলেছি আমিও, ফেসবুকিং করেছি, সুবিধাজনক জায়গায় লাইক দিয়েছি। আমার শুধু বারবার মনে হয়, আমার আর আমাদের এই মধ্যচিত্ত, সুবিধাবাদী মানসিকতাই কি এমন একটি সমাজ তৈরি করছে না যেখানে একজন অভিজিৎ রায় বা রাজীবকে হত্যার পর সাথে সাথে নানা দল থেকে নানা রকম জাস্টিফিকেশান তৈরি হওয়া শুরু হয়ে যায়? আমরা খুঁজে বের করতে শুরু করি, ঠিক কী কারণে খুন হলেন অভিজিৎ রায়? কেমন পোশাক পরতেন তিনি? একটু ভেবে দেখলে দেখতে পাবো, নিজের আর নিজেদের মুখটা আয়নায় দেখলে দেখতে পাবো, অবশ্যই সরকারের দোষ আছে, বিচারহীনতার সংস্কৃতির দায় আছে, আইন কানুনের দুর্বলতা আছে, তার সাথে সাথে আছে আমাদের চিন্তার মধ্যপন্থা, আছে আমাদের সুবিধাবাদী মানসিকতা, আছে আমাদের সুশীলতা, আছে কালো আর সাদাকে এক করে দেখার মতো বুদ্ধিবৃত্তিক লাম্পট্য। আমার হাতেও আছে রক্তের দাগ।

অভিজিৎ এমন একজন মানুষ যিনি এই মধ্যচিত্তের বাইরে যেতে পেরেছিলেন। চিন্তার মধ্যত্ব থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছিলেন তিনি। তিনি যা বিশ্বাস করেছিলেন আর যা বিশ্বাস করেন নি তা উচ্চারণ করতে পেরেছিলেন স্পষ্ট ভাষায়। এই বের হয়ে আসা মানেই তাঁর সব চিন্তা যে সঠিক তা কিন্তু নয়, কিন্তু উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত বোধ আর চিন্তার বাইরেও চিন্তার জগৎ থাকতে পারে, ভুল হোক ঠিক হোক সেই চিন্তা আপনি মানুন আর নাই মানুন, সমাজে সেইসব প্রান্তিক চিন্তাও শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করবে, শুধু চিন্তাকে প্রকাশ করার জন্য কাউকে হত্যা করা হবে না, অভিজিৎ রায় তো এইসব কথাই বলেছিলেন। না, মিস্টার পিনাকি ভট্টাচার্য, অভিজিৎ রায়ের রক্ত আর হেফাজতের মিথ্যা রক্ত এক না, শহিদ মুক্তিযোদ্ধার রক্ত আর রাজাকারের রক্ত এক না, যাঁরা অন্যায়ের বিপক্ষে যুদ্ধ করে তাঁদের রক্ত আর যারা তাঁদের হত্যা করার চেষ্টা করে তাদের রক্ত এক না। কারণ একদল শুধু চায় এই চিন্তার মধ্যবিত্ততায় আমাদের আক্রান্ত করতে, বৃত্তের বাইরে যা কিছু আছে সব কিছু ভুলিয়ে দিতে আমাদেরকে অন্ধকার সময়ের দিকে নিয়ে যেতে। কিন্তু অভিজিৎ রায়রা তাদের কথা শোনেন না। মৌলবাদিদের হাতে নিজ বাড়িতে আক্রান্ত হওয়া কবি শামসুর রাহমান অনেক অনেক আগেই হয়ত অভিজিৎ রায়, হুমায়ুন আজাদদের কথাই লিখে গিয়েছিলেন কবিতায়।

                বলেছিলে তুমি ‘যে কথা কখনো
                বাজে না হৃদয়ে গান হয়ে কোনো,
                সে কথা ব্যর্থ ম্লান।‘
                বলেছিলে আরো, ‘যে জীবন কারো
                প্রাণকে করে না আলোয় প্রগাঢ়
                সে জীবন নিস্ফল।’
                বুঝি তাই প্রেমে বড়ো উৎসুক
                তুলে ধরেছিলে স্বদেশের মুখ
                নিবিড় অঙ্গুলিতে।
                খোলা রাস্তায় মিছিলে মিছিলে
                চকিত প্রহরে ছড়িয়ে কী দিলে,
                চৌদিকে থরথর;
                তোমার আমার কাঙ্খিত ভোর
                আসার আগেই স্বপ্ন বিভোর
                তোমাকে হানল ওরা।
                এই আলো আরো পবিত্র হবে
                তোমার রক্ত-রাঙা বৈভবে
                বলল ব্যাকুল পাখি।
                যে-আলো তোমার চোখে
                            নেচেছিল,
                যে, আলো তোমার বুকে
                            বেঁচেছিল,
                আমরা প্রার্থী তারই।


মন্তব্য

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

............................................

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

............................

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

এক লহমা এর ছবি

আমাদের হাতে অভিজিৎ রায়ের রক্ত

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

হ্যাঁ, কিন্তু এই রক্ত মুছে ফেলার মতো কিছু করতে পারছি না।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রতিটা ঘটনার পর আপনার মত কিছু মানুষ কিছু একটা লিখে তারপর হাতে যে রক্তের দাগ লেগে আছে সে উপলব্ধি ভুলে গিয়ে আবার নিত্যকাজে ব্যাস্ত হয়। আমার ভাবনায় ভুল হতে পারে,তবে এমনও দেখছি কিছু প্রিয় ব্লগার এই ঘটনার পর শোকের আয়ু খুব দ্রুত কাটিয়ে উঠে নৈমিত্তিক ভ্রমনব্লগ অথবা উপন্যাস লেখায় ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে , খুবই দৃষ্টিকটুভাবে ! আরে, সেটাই তো স্বাভাবিক।

রাজর্ষি

সঞ্জয় মজুমদার এর ছবি

যত দামী হ্যান্ডওয়াশ ব্যবহার করি না কেন আমাদের হাত থেকে এই রক্তের দাগ মোছে না। আমাদের এই সুবিধাবাদী চরিত্র তৈরী করছে আরো রক্ত ঝড়ার উপলক্ষ।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

তাও আমরা বদলাব না। কেউ বদলাতে চাইলে তাকে সবাই পেছন থেকে টেনে ধরব। আমাদের দোষ যা করে তা অন্য সবাই, আমরা সবাই সাধু-সন্ত।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

টিউলিপ এর ছবি

এই ঘটনার পরে তথাকথিত প্রগতিশীলদের মুখোশ খুলে যেতে দেখে নিজের উপরেই ঘেন্না এসে গেছে।

___________________

রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

হ। আরও ঘেন্না ধরে নিজের অক্ষমতায় মন খারাপ

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সাম্প্রতিককালে আমার পড়া সবচে' সেরা লেখাটি হচ্ছে সুমন চৌধুরীর 'ব্লগার মরে না'। এই পোস্টটি পড়ার পর সেরার তালিকায় এই লেখাটিকেও অন্তর্ভূক্ত করতে বাধ্য হলাম। পরে বিস্তারিত মন্তব্য করার ইচ্ছে রাখি, আপাতত এই স্বীকৃতিটুকু জানিয়ে গেলাম।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

সারাদিন পরে ব্লগে ঢুকে আপনার বিস্তারিত মন্তব্যই পেয়ে গেলাম।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

ফারুক হাসান এর ছবি

লেখাটা পড়ে লগইন করলাম, শুধু জানানোর জন্য যে এই লেখাটি আমার পড়া চিন্তাজাগানি‌য়া লেখার সেরাগুলির একটা।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ ফারুক ভাই। আসলে এগুলো অনেকদিনের জমা করা ক্ষোভ আর উপলব্ধি। অভিজিৎ রায়ের হত্যাকান্ড উপলব্ধিগুলোর প্রাসঙ্গিকতাই বাড়ালো শুধু। অথচ সেই প্রাসঙ্গিকতা না বাড়লেই খুব খুশি হতাম।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

সাকিব এর ছবি

চতুর্থ প্যারাতে যেসব কথা বলেছেন তা একটুও মিথ্যা না..সমাজের বেশিরভাগ মানুষের মুখে এই কথা!

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

হ্যাঁ, আর আমরা সবাই সেই সমাজের অংশ।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

দিগন্ত এর ছবি

দুর্দান্ত উপস্থাপনা।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ দিগন্তদা।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

নাশতারান এর ছবি

চলমান ঘটনাবলী আর তার পটভূমির সামগ্রিক একটা ছবি উঠে এলো এক পোস্টে। চলুক

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

সমস্যা হলো বেশিরভাগ মানুষ পোস্ট পড়ে ভুলে যাবে। নিজেকে নিজের সামনে দাঁড়া করাবে না। আমি মানুষ হিসেবে আজ থেকে কাল কতটা বদলালাম, নিজের ভুল কতোটা সংশোধন করলাম এইসব কেউ ভাববে না।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

নাশতারান এর ছবি

আমার ধারণা আরো হতাশাজনক। যাদের মধ্যে এই বোধগুলো বিদ্যমান, যারা এই টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তারাই পোস্টটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়েছে, এবং একাত্মতা বোধ করে বিপন্ন বোধ করেছে। বাকিরা চোখ বুলিয়ে মুখ ফিরিয়ে নেবে কিংবা আদৌ পড়বে না। নিজের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কজনই বা বিপন্ন হতে চায়? তাও লিখে যেতে হবে। ভাবনার স্বাক্ষর রেখে যেতে হবে।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

হুম। কথা সত্যি।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

অনেক জরুরি এই লেখাটার জন্য ধন্যবাদ। যে কথাগুলো নানান সময় আমি বা আমরা অনেকেই ভাবি কিন্তু সেভাবে প্রকাশ করতে পারি না বা করা হয় না, সেইসব কথাগুলোই উঠে এসেছে সুন্দরভাবে।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকেও। অনেকদিনের ক্ষোভ আর পর্যবেক্ষণ। চুপ থাকতে না পেরে লিখলাম।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

১. ঘটনা বর্ণনা বা বিশ্লেষণে, এবং অতি অবশ্যই মতামত বা সিদ্ধান্ত দিতে 'কর্তা' ও 'কর্মের' আপেক্ষিক অবস্থান সুবিধাজনকভাবে পালটে দেবার সংস্কৃতি বক্তা/লেখক/মতমতদানকারী/সিদ্ধান্তদাতার ব্যক্তিগত বিশ্বাস, শিক্ষা ও অবস্থানের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত। যে শিক্ষা একই বিষয়কে নিজের সুবিধা মতো কখনো কালিক আর কখনো কালোত্তীর্ণ, অথবা কখনো স্ট্রেইট আর কখনো মেটাফর বলে দাবী করে - এমন সংস্কৃতি তার উপজাত। স্বেচ্ছায় বা বাধ্য হয়ে মানুষকে যে অবদমন মেনে নিতে হয় তার আউটবার্স্টের হালকা একটা উপায় এক্সপ্রেশনে এমন অবস্থান গ্রহন করা।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

ভাষার এই ধরণের ব্যবহারের ওপর নজর দিলে সেই বিষয়ে আমরা সমষ্টিগতভাবে কী ধরণের মতামত ধারণ করি সেই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হতে পারে বলে মনে হচ্ছে। বা বিভিন্ন সমাজে একই ধরণের বাক্য কোন বাচ্যে করা হয় সেটার সাথে সেই সমাজের সেই ঘটনার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির কোরিলেশান যাচাই একটা ইন্টারেস্টিং বিষয় হতে পারে।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

২. ব্যক্তি/গোষ্ঠী/জাতি/মতবাদ সম্পর্কে প্রিকনসেপশন ধারণ করা এবং তা যাচাই করে না দেখাটা বেশির ভাগ মানুষের অভ্যাস। ওকলাহোমার ঘটনার পরে আমার এক মার্কিন বন্ধু এই ব্যাপারে মুসলিম ইমিগ্রান্টদের দায়ী করে জ্বালাময়ী বক্তব্য দিয়েছিল। পরে যখন সত্যটা প্রকাশিত হয় তখনও সে এর পেছনে মুসলমানদের ষড়যন্ত্র আছে বলে মত প্রকাশ করেছিল। এই জন্য ভুয়া ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো মতবাদগুলো, আজগুবী বিষয়াবলী বা উগ্রপন্থা এতো সহজে লোকজনকে গিলিয়ে ফেলা যায়। এভাবে 'নরিয়েগা একজন খারাপ লোক' এটা বলে বলে লোকজনকে বিশ্বাস করানো হয়েছিল। এতে যখন অন্য একটা দেশ তাকে নিজের দেশ থেকে ধরে এনে জেলে পুরে দিল তখন সবাই সেটাকে ঠিক বলে মনে করলো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

এক কথায় এই ব্যাপারটাই তো রেসিজম, তাই না?

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

৩. প্রাসাদ-অট্টালিকা ধ্বংস হয়ে যাবে, সৌধ-মূর্তি গুড়িয়ে যাবে, ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য কোন কীর্তিই টিকে থাকবে না। তবে লেখা টিকে থাকবে - যদি তা কালোত্তীর্ণ হয়, যদি তা পিরিয়ড পিস হয়। লেখাটা এজন্যই জরুরী কারণ, রিসিভার যখন যেভাবে খুশি বার বার পড়ে এটার মর্মার্থ উপলদ্ধি করতে ও প্রয়োজনে আত্মস্থ করতে পারবে। এখানে চটক দিয়ে বা ফাঁকি দিয়ে পার পাবার উপায় কম।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

৪. বিচারহীনতার সংস্কৃতি ছ্যাঁচড়া চুরিকে প্রশ্রয় দিতে দিতে এক সময় জাতি বা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধকেও ছাড় দিয়ে ফেলে। এই সংস্কৃতি মানুষের মনে এমন চিন্তার উদ্রেক করে যে, এখানে অপরাধ করলে কারো কিছু হয় না। এই বিপদজনক ধারণাটি যখন উদাহরণসহ মানুষের মনে গেড়ে বসে তখন একটা জাতির বেশিরভাগ মানুষ চিন্তাচেতনায় ক্রিমিনালে পরিণত হয়। এই ক্রিমিনালরাই এক সময় সব ধরনের অপরাধের সপক্ষে সাফাই হাজির করতে থাকে। মুর্খের দল যেটা বোঝে না, তার বিরুদ্ধে অন্যায় করা অপরাধীও এই একই সাফাই দেবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

কল্যাণ এর ছবি

খুব জরুরী পর্যবেক্ষণ। এর সাথে আরও আছে সব কিছু সাঁটে মেরে দেওয়ার প্রবণতা, নির্লজ্জ লোভ আর চরম স্বার্থপরতা। এইগুলা এখন রীতিমত চর্চা হয় সমাজে মন খারাপ

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

কল্যাণ এর ছবি

ঘ্যাচাং

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

৫. একজন মানুষকে হত্যা (মৃত্যুদণ্ড অর্থে) করার অধিকার একমাত্র বিদ্যমান রাষ্ট্র ধারণ করে। তাও আবার এই পূর্বশর্তে যে, আলোচ্য ব্যক্তি এমন অপরাধ করেছে যা বিদ্যমান রাষ্ট্রের আইনে মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ > যথাযথ আইনী প্রক্রিয়া অনুসরণের পর আলোচ্য ব্যক্তির বিরূদ্ধে মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে > সকল স্তরের আদালত ও আপীল বিভাগ এবং দণ্ড মওকুফের অধিকারী ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল রেখেছে। এর বাইরে কাউকে হত্যা করা, হত্যায় সাহায্য করা, হত্যাকাণ্ডকে সমর্থন করা এবং হত্যাকাণ্ডকে জাস্টিফায়েড করার চেষ্টা প্রত্যেকটিই আলাদা আলাদা অপরাধ। এমনকি কেউ যদি টিআরপি বাড়ানোর আশায়ও এমনটা করে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া উচিত।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

অন্তত এদের জবাবদিহিতার ব্যবস্থা থাকা উচিত।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

পৃথ্বী এর ছবি

অনলাইনে একটি অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপের হর্তাকর্তা ব্যাক্তিদের কথাবার্তা আর মতামতের কিছু নমুনাও এই লেখার সাথে দিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছি।

এই একটিভিস্ট গ্রুপের কথাবার্তা দেখে বুয়েটে মেকানিক্যালের ছাত্র ছাত্রলীগ কর্মী আরিফ রায়হান দীপের হত্যাকাণ্ডের কথা মনে পড়ল। তাকে হত্যার আগে গুজব ছড়ানো হয়েছিল বুয়েট মসজিদের কোন এক হুজুর হেফাজতের সমাবেশের জন্য খাবার পাঠানোতে দীপ নাকি সেই হুজুরকে মারধোর করেছে। তাকে হত্যার পর বুয়েটের ফেসবুক গ্রুপে ছাগু আর সুশীলরা ইনিয়ে বিনিয়ে বলতে লাগলো, "যদিও দীপ ছেলেটা বেয়াদপ ছিল, তবুও তাকে খুন করা উচিত হয়নি"। বলা বাহুল্য, বেয়াদপ আর উদ্ধত ছাত্রলীগ কর্মীকে কুপিয়ে আক্ষরিক অর্থেই দুই ভাগ করার "কর্ম" ভুক্তভোগী "কর্তা" এর কীর্তির মাঝে বিলীন হয়ে গেছে। বেয়াদপ পোলা সাইজ হইছে তাতেই সবাই খুশ, যদিও আরেকটু "মানবিক" ভাবে খুন করলে ভালো হতো।

হত্যাযজ্ঞকে ভুক্তভোগীর কীর্তির মাঝে বিলীন করে দেওয়ার এই প্রবণতায় ওইসব ছাগু-সুশীলদের সাথে এইসব এক্টিভিস্টদের একটা পার্থক্য আছে। ছাগুরা ইচ্ছাকৃতভাবে খুনটাকে ঘোলাটে করতে উদ্যত ছিল, অন্যদিকে এই এক্টিভিস্টরা মনে করে যতক্ষণ না পর্যন্ত্য কোপটা তাদের উপর পড়তেছে, ততক্ষণ পর্যন্ত্য অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া মরণযোগ্য অপরাধ। এরা বুঝতেছে না চাপাতিসন্ত্রাসীদের অনুভূতিতে এরাও আঘাত দিয়ে আসতেছে। আজকে অনুভুতির দোহাই দিয়ে "খাসী" দের মারতেছে, কালকে ওই একই অনুভূতির দোহাই দিয়ে "চেতনাব্যবসায়ী" দের মারবে। কলমের জবাব কলম দিয়ে দেওয়ার প্রিন্সিপলটা কমোডে ফ্লাশ করে দিলে নিরস্ত্র কেউই নিরাপদ না।


Big Brother is watching you.

Goodreads shelf

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

ভয়াবহ এই একটা সংস্কৃতি শুরু করছে এই গ্রুপটা। আরও অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে এরকম মত ধারণ করে, কিন্তু এই রকম একটা গ্রুপ একটা আদর্শবাদী আন্দোলনের স্পিরিট ধ্বংস করতে যথেষ্ট।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

অবশ্যপাঠ্য লেখা।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ অনার্য সঙ্গীত।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

এমন একটা পোস্টের বড্ড দরকার ছিল ত্রিমাত্রিক দা। স্যালুট টু ইউ।

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

আপনাকে ধন্যবাদ রনি ভাই।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অনিকেত এর ছবি

নিজের নপুংসক মধ্যবিত্ত সত্ত্বাকে চাবকে লাল করে দিল এই লেখাটা!
নিজের অনেক না-বলা কথা স্পষ্ট হয়ে উঠল তোমার কলমে
বড় জরুরি এমন লেখা--এমন এই সময়ে !!

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

আমার মনের কথা আরও অনেকেরই মনের কথা ভেবে ভালো লাগছে। আমাদেরই চেষ্টা করতে হবে উঠে দাঁড়াতে।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

ওয়াহিদ এর ছবি

অপরাধ যাই হোক না কেন, ভিক্টিমকেই সবসময় দোষী সাব্যস্ত করতে হবে। এতে দুইটি উপকারীতাঃ এক, আমি নিজে যেহেতু ঐ একই দোষে দোষী নই, তাই আমার ক্ষেত্রে এমনটা ঘটবেনা ভেবে মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যায়। দুই, যেহেতু ভিক্টিম নিজের দোষেই অপরাধের স্বীকার হয়েছে, তাই ঘটনার বিচার নিশ্চিত করার সামাজিক দায়ভার এবং না করতে পারার বিবেকের দংশন থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

বিবেকের দংশন টিকে থাকলেও ভালো ছিল। আমার মনে হয় না বিবেকের দংশন বলে কিছু টিকে আছে।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার কি মন্তব্য করা উচিৎ বুঝতে পারছি না। হয়ত আর সব বিষয়ের মত এখানেও আমার অক্ষমতা...

রাসিক রেজা নাহিয়েন

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

সবার অন্তত নিজ নিজ গণ্ডিতে সচেতনতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করা দরকার।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

সাইদ এর ছবি

সচলায়তনের নীড় পাতা কি বন্ধ?? এটা দেখাচ্ছে " We are experiencing system problem. We will return as soon as the problem is fixed. "

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

বন্ধ হবার তো কথা না!

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

চমৎকার একটা লেখা। এইসব ছাড়া ছাড়া ভাবনা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল, কিছু প্রকাশ পাচ্ছিল, কিছু পায়নি। ইদানিং সময়ে পড়া অসাধারণ লেখাগুলোর একটি। ধন্যবাদ।

সোস্যাল নেটওয়ার্কের কল্যাণে, সবাই কোনো না কোনোভাবে পণ্যায়নের সাথে যুক্ত, যেখানে নিজেই, নিজের নোট, এপ্রোচ এসবই এক একটি পণ্য। পণ্যের ধারণার সাথে সাথেই বাজারের ধারণাটি যুক্ত। বাজার পড়ে যাওয়ার ভয়টিও তাই সবসময় হাজির থাকে। সাথেতো চাপাতির ভয়টা বিল্ট-ইন হয়ে আছে, অনেকদিন থেকেই। আরো জোর পাচ্ছে, যতদিন যাচ্ছে। রাস্তায় বের হলে, বেশকিছু স্থান আছে মাইকিং করে করে টাকা তোলা হয়, মাদ্রাসা বা মসজিদের জন্য। আগে বলা হতো- ‘আল্লার রাস্তায় দান করিলেআখেরাতে পাওয়া যায়---’ কিন্তু একদিন হাতিরঝিলের এদিকটায় শুনলাম- ‘শহীদী রাস্তায় দান করুন, আল্লার সৈনিকদের জন্য দান করুন’-- এই বিবর্তনটা কিন্তু একদিনে হয় নাই। আরেকটা উদাহরণ দেয়া যেতে পারে, গেল বছর রোজার সময়, ফার্মগেট ওভারব্রিজের গোড়ায় একজন হ্যান্ডমাইক হাতে, কোনো মেয়েকে দেখলেই বলছে- ‘মাথায় কাপড় দেন’-- ধমকের সুরে। এরকম একজনকে (অপ্রকৃতস্থ) ধানমন্ডিতে দেখেছিলাম একই বছরে। দুজন আলাদা। একজন অপৃকতস্থ এবং তার ক’দিন পর সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ। কেউ কিছু বলছে না। বিবর্তনটা চোখে পড়ে। মজার বিষয় হচ্ছে- টাকা সংগ্রাহককে যখন প্রশ্ন করলাম- ‘যুদ্ধ টুদ্ধ নাকি’ তখন সে এতোটাই ভড়কে গেল যে, যদ্ধের বাসনাটা ধরা পড়ে। আর দ্বিতীয়জন, অর্থাৎ পর্দার দাওয়াত করা লোকটাকে প্রথমদিন এড়িয়ে এলেও, দ্বিতীয় দিন সেই যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেতেই খুঁজে বের করে দাবড়ানি দিয়েছিলাম।

মূল কথা এটা না, এ দুটি অভিজ্ঞতাই ঢাকায় প্রথম। জোরপূর্বক খাবারের দোকান বন্ধ রাখা বা এসব যখন করা হয় এবং তা যখন ক্রমেই স্বাভাবিক হিসেবে চিহ্নিত হয় সমাজের চোখে, থকন মসজিদে জেহাদের ডাক দিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকে না। আমরা সবাই পণ্য হয়ে বসে আছি। আমাদের সম্পদ (মাথার চুল থেকে শুরু করে পায়ের নখ) এতো বেশি যে হারানোর অনেক কিছু আছে। তাই আমরা সবাই কথা বলি দায়সারার জন্য। ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দেই।

অভিজিৎ হত্যার পরেরদিন ফেসবুক ভরে গেল এই সম্পর্কিত স্ট্যাটাসে। তারপরদিন? সদ্য প্রকাশিত বইয়ের বিজ্ঞাপন, ভ্রমণের ছবি, দার্শনিক বক্তব্য, বিশ্বকাপ ইত্যাদি অজস্র। এই প্রতিটিই স্ট্যটাস হিসেবে এক একটি পণ্য।

যা হোক অনেক বড় একটা মন্তব্য করলাম, অনেকটা অহেতুকই বলা যায়। তবু করলাম।

আপনার লেখা সত্যি এতোটাই ভালো লেগেছে যে একদিকে যেমন বলার কিছু নাই, তেমনি অনেক কিছু বলতেও ইচ্ছে করছে। নিবৃত্তি সহজসাধ্য না। আমরা সবাই পালাতে চাই আসলে। পলায়ন শব্দটা আমাদের অস্থিতে ঢুকে গেছে যার উপরে হাজির আত্মপ্রতারণার মাংশ। আর এই শরীরসর্বস্বতা দিয়েই আমরা হত্যা করে যাচ্ছি অভিজিৎদের।

স্বয়ম

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

নিজের যা কিছু বলার আছে লিখে ফেলুন না একটা পোস্টে। কারও কোনো কিছু না ফেলা গেলেও সময়টা তো তোলা থাকল।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

ইয়ামেন এর ছবি

অসাধারন। আসলেই অভিজিৎ রায়ের খুন এবং তার পরবর্তী প্রতিক্রিয়ার উপর সেরা লেখাগুলোর একটি। ধন্যবাদ ত্রিমাত্রিক কবিকে।

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

সব বেদনা মুছে যাক স্থিরতায়
হৃদয় ভরে যাক অস্তিত্বের আনন্দে...

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

আপনাকেও ধন্যবাদ ইয়ামেন ভাই।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

মাসুদ সজীব এর ছবি

অঞ্জন রায় যেমন বলেছেন

ফেসবুক-ব্লগে ধর্মকে আক্রমন করে যারা লেখে তারাই নাকি বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে।

তার চোখে রাজাকার-খুন-সন্ত্রাস-দুর্নিতি-মৌলবাদ-অপ-শাসনকারী-পেট্রোলবোমাকারী-লুটপাট-দখলদারি-মিথ্যাচারকারী এগুলো কোনটাই দেশের জন্যে ক্ষতিকর নয়, সব ক্ষতি নাস্তিকরা করে। এমন সহি কপাট মুর্খ প্রগতিশীল মানুষে চারপাশ ভরে উঠছে দেখতে খারাপ লাগে না।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

মুখ আর মুখোশ দেখতে দেখতে ক্লান্ত।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

সুমিমা ইয়াসমিন এর ছবি

আবারও অনেকগুলো মুখোশ খসে পড়তে দেখলাম। যেগুলো এতো মুখ ভেবে ভুল করেছিলাম।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

মন খারাপ

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

তারেক অণু এর ছবি

।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

_______

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

গান্ধর্বী এর ছবি

রক্তের দাগ ভুলে আবার যার যার নিজস্ব মুখোশ পরা হয়ে গেছে।

------------------------------------------

'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

হুম মন খারাপ

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

এই দাগ রয়েই যাবে বোধহয়, উঠবে না কিছুতেই।

দেবদ্যুতি

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

ধীরে ধীরে আরও জমে যাচ্ছে একসময় রক্ত ছাড়া আর কিছু থাকবে না। সবকিছু নষ্টদের অধিকারে চলে যাবে।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

দেব প্রসাদ দেবু এর ছবি

একাত্তর টিভির সেই উপস্থাপিকা ছিলেন ফারজানা রূপা। উনি আসলে চাইছিলেন কেউ একজন কথা বলুক যিনি বিশ্বাসের ভাইরাস বইটি পড়েছেন। হ্যাঁ, কোন নির্দিষ্ট বই তখন আলোচনার ফোকাস হতে পারেনা, যেটি মুন্সি ওভার ফোন বলতে চাইছিলেন। কিন্তু রূপার কন্সেন্ট্রেসান ছিলো কেউ একজনের সাথে বিশ্বাসের ভাইরাস বইটি নিয়ে কথা বলবে। পরে রূপা আমার লেখা একটি রিভিউ'কে বইয়ের অংশ ভেবে পড়া শুরু করে! সে যাই হোক আলোচনাটি ঘটনার মুড ধরে রাখতে পারেনি। তাছাড়া ঐ মুহূর্তে ঐ আলোচনা শুনার মতো মানসিক অবস্থাও কারো ছিলোনা।

আপনার এই লেখায় সম্ভাব্য সব সুশীল কুশীলের মনোভাবকে যেভাবে তুলে এনেছেন সেটি এক কথায় অসাধারণ। আমার পড়া সবচে' ভালো একটি বিশ্লেষণ অভিজিৎ হত্যাকাণ্ড ও তার পরবর্তী ঘটনা প্রবাহ বা প্রতিক্রিয়া নিয়ে।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

মুন্সি ভাই খুব ভালোভাবে বিষয়টা ট্যাকেল করছিলেন। উপস্থাপিকা এতবার বলার পরেও অভিজিৎ রায়ের পোশাক নিয়ে মন্তব্য করেন নি। কিন্তু সাংবাদিকেরা হিট অব দ্যা মোমেন্টে টিয়ারপি বাড়ানোর জন্য যা করেন এগুলা কি সাংবাদিকতার নীতির পরিপন্থি না? নাকি সাংবাদিকতার নীতিমালা বলে কিছু নাই ইয়ে, মানে...

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

জীবনযুদ্ধ এর ছবি

আপনার লেখার প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি লাইনের সাথে সহমত। অসাধারণ একটি লেখা, যেটি ছড়িয়ে দেয়া উচিত সবখানে।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

আয়নামতি এর ছবি

অন্যায় অনাচার দেখেও না দেখার ভান করতে করতে কেমন জানি জড়ভরত হয়ে যাচ্ছি।
আগে রাস্তায় যে কোনো সামান্য ঘটনায় লোক ছুটে আসতো, এখন দূরে দাঁড়িয়ে মজা দেখি।
এভাবে চলতে থাকলে অভিজিৎ হারানোর সংখ্যা বাড়তেই থাকবে।
উটকোদের ধমকে আরো অনেক রোদেলা প্রকাশনী বন্ধ হবে....
ভালো লাগে না আসলে হতাশ হতে, তবুও কেন জানি হয়ে যাই এমন সময়গুলোতে।
আমরা যারা লিখতে চাই কিন্তু পারিনা, তাদের সবার হয়েই আপনি লিখেছেন যেন!
অনেক ধন্যবাদ শান্ত এমন লেখার জন্য।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

এই দূরে দাঁড়িয়ে মজা দেখা লোকেদের মধ্য থেকেও যে দুইএকজন অভিজিৎ হতে থাকবে না, এই নিশ্চয়তাটুকুই দেয়া যাচ্ছে কেবল।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

গগন শিরীষ  এর ছবি

ভাল লেগেছে! সবাই কেমন যেন ভুলে যেতে বসেছিল,আপনি আবার মনে করিয়ে দিলেন।ধন্যবাদ!

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

আপনাকেও ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

নজমুল আলবাব এর ছবি

আবেগ দিয়ে নিয়ন্ত্রিত মানুষ অনেক কিছু গুছিয়ে করতে পারেনা বা বলতে পারেনা। লিখতে পারাটাতো পরের বিষয়। আমার নিজের ক্ষেত্রে সেটাই ঘটে এরকম সময়। ভেতরে ভেতরে ঝড় চলে, প্রকাশ করা হয় না। আপনার লেখাটাকে খুব বেশি নিজের মনে হলো।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

প্রকাশ করে ফেলেন আলবাব ভাই। তাহলেও কিছুটা সাহস পাই।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

মাসুদ এর ছবি

"আমার হাতেও আছে রক্তের দাগ"
ধন্যবাদ ত্রিমাত্রিক কবি। অভিজিৎ হত্যাকান্ড ও ভণ্ড সুশীলদের প্রাসঙ্গিক প্রতিক্রিয়াগুলোর উপর শ্রেষ্ঠ লেখাটা পড়লাম।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

রানা মেহের এর ছবি

ভাইয়া, তোমার এই লেখাটা আগেই পড়েছি।
আজ আবার পড়লাম। মাথা নীচু হয়ে গেল লজ্জ্বায়।
আমি আমরা সবাই দায়ী এই মৃত্যু আর ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য।
তুমিতো স্বীকার করতে পারলে, আমি তাও পারলামনা।

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

আমরা সবাই দায়ী কমবেশি এই অচলায়তন সৃষ্টির জন্য। কিন্তু শুধু দোষ স্বীকার করে কী হবে? আমাদের কি কোনো উপায় নেই এই অচলায়তন ভেঙ্গে ফেলার? জানিনা।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

সুমন চৌধুরী এর ছবি

সব মরণ নয় সমান

কল্যাণ এর ছবি

খুব ভাল লিখেছেন। অসাধারণ, অবশ্যপাঠ্য একটা লেখা। আপনাকে ধন্যবাদ।

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

অতিথি লেখক এর ছবি

অসাধারন একটা লেখা। দেরীতে হলেও পড়লাম। অবস্থাতো এখনও পাল্টায়নি। ক্ষোভ হয় এই নীরবতা দেখে, ঠিক অভিজিৎ রায়কে হত্যা করার দিন যেমন হয়েছিল।

সোহেল ইমাম

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।