অনেক আগে একটা খেলা ছিল

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি
লিখেছেন সুবিনয় মুস্তফী (তারিখ: রবি, ২০/০৪/২০০৮ - ৭:২৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সেই খেলার একটা নাম ছিল 'দ্য জেন্টলম্যান'স গেম'। অবাঞ্ছিত বা অন্যায্য কিছু ঘটলে সেটাকেও বলা যেতো 'দ্যাট'স নট ক্রিকেট'। মানে ক্রিকেট খেলার সাথে ভদ্রতা বা মার্জিত আচরণ - এই জিনিসগুলোকে আলাদা করে দেখার উপায় ছিল না। বডিলাইন বা বীমার-বাউন্সারের মত ক্রাইসিস পেরিয়েও ১৫-২০ বছর আগ পর্যন্ত একটা মার্জিত খেলা হিসেবেই সবাই জানতো ক্রিকেট-কে।

তারপরে এলো ওয়ান-ডে ক্রিকেট, আর তারপরে দিনে দিনে শুরু হলো কর্তৃপক্ষদের টিভি চ্যানেলের জন্যে বেশ্যাবৃত্তি। আসলো টাকার খেলা, দাঊদ ইব্রাহিম, শারজাহ। আসলো স্প্রেড বেটিং, ম্যাচ থ্রোয়িং, জুয়াড়ীর দল, মাঝরাতে ফোন কল। হ্যান্সি ক্রনিয়ে'র প্লেন আকাশ থেকে টুপ করে পড়ে গেল, ব্যান হলো আজহার, মারা গেলো ঊলমার।

সবই ক্রিকেট নামের এই অপূর্ব খেলাটাকে বেশ্যাদের হাতে তুলে দেওয়ার ফলাফল। এখন এসেছে টুয়েন্টি-টুয়েন্টি নামের এক তৃতীয় শ্রেনীর প্রহসন। এতে কারুকাজ বা subtlety'র বিন্দুমাত্র স্থান নাই - সৌন্দর্য বা সৌকর্য খুঁজতে যাওয়া এতে বাতুলতা মাত্র। সবই এখন মোটা দাগে মার্কিন ধাঁচের ভাড়ামো। রাম-দায়ের মত ব্যাট, লাশের মত মরা পিচ। মাকসুদের ভাষায় বলতে হয় - 'তুই শালা আঙ্গুলচোষা তথাকথিত ক্রিকেটপ্রেমী, দে হাততালি, বাউন্ডারি বাউন্ডারি আর ছক্কা ছক্কা বলে।'

দ্রুত লয়ের এই শতাব্দীতে খেলাটির আর কি পরিণতি হতে পারতো? জানা নেই। তবে ক্রিকেট বোধ হয় আজ তার বিবর্তনের শেষ অবস্থায় এসে পৌঁছেছে। সেই অবস্থাটা কি, তা বোঝানোর জন্যে নীচের এই একটা ছবিই যথেষ্ট। যাদের জন্যে খেলা আজকে এখানে এসেছে, তাদের প্রতি ধিক্কার জানানো ছাড়া আর কিছু বলার নেই।


বাঙ্গালোরে ওয়াশিংটন রেডস্কিন্স-এর চিয়ারলীডার দল। পড়ুন Sepia Mutiny-র ব্লগার আর পাঠকদের মন্তব্য


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

সবই বিবর্তন রে ভাই।

রানা মেহের এর ছবি

অনেক দিন পর আপনি লিখছেন।
ভালো লাগছে খুব।

আর ক্রিকেট????
থাক এই প্রসঙ্গ

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

সৌরভ এর ছবি

ভদ্রলোকেরা এখন ক্রিকেট খেলে নাকি?
জানতাম না তো।

হ্যান্সি যেদিন চোখমুখ কালো করে স্বীকার করেছিলো, ঈশ্বর তাকে ভুল পথে নিয়ে গেছেন, সেদিনই "ভদ্রলোকেদের খেলা" লেবেলটা ঝরে গেছে।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

কনফুসিয়াস এর ছবি

ক্রিকেট নিয়ে মুস্তফীর বক্তব্যের সাথে কমবেশি একমত।

কিন্তু একটা ব্যপারে তীব্র আপত্তি জানাচ্ছি। বেশ্যা বা বেশ্যাবৃত্তিকে গালাগাল হিসেবে ব্যবহার করাটা মানতে পারছি না। আপনার পোস্টের এই কথাগুলো বড়বেশি চোখে লাগছে।

-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

অতিথি লেখক এর ছবি

দিন শেষে ক্রিকেট তো শুধু মাত্র একটা খেলাই, নাকি? পরিবর্তন আসবেই, একে আটকানোর কোন উপায় নেই। এরকম যখন ওয়ানডে শুরু হয়েছিল, তখন ও অনেকে জাত গেল জাত গেল বলেছিল, আর এখন একই ব্যাপার ঘটছে ২০-২০ নিয়ে।
মানুষ মরে গেলে পঁচে যায়, বেচে থাকলে বদলায়, এই আরকি।
~রেনেট

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

এ দেশে অ্যাডাল্ট ক্লাব/বারগুলিকে জেন্টলমেন'স ক্লাব বলা হয়, যেখানে স্বল্পবসনা বা বসনহীন নারীশরীর আশেপাশে বিচরণশীল।ছবিটা দেখে মনে হচ্ছে, সে অর্থে ক্রিকেট এখনো জেন্টলমেন'স গেম-ই থাকছে! চোখ টিপি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

হিমু এর ছবি

আমি ভাবছি সেসব চাচামিয়াদের কথা, যারা ক্রিকেটের সেই জেন্টলমেনোজোয়িক যুগে গ্যালারির সামনে বসে হইহই করতেন। আমার তো মনে হয় তাঁরা রীতিমতো ক্ষেপে উঠবেন এই দৃশ্য দেখে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

হিমু এর ছবি

একটা ছড়া লিখি চামেঃ

দুবলা খেলুড়ে ব্যাট হাতে নিয়ে
চার মেরে হলো হয়রান
চিয়ারলীডার তিনজনা নাচে
দুলিয়ে তাদের ছয় রান।
দর্শক খুশি, ফিল্ডার খুশি
খুশি আয়োজকবৃন্দ
চাচামিয়া এক গর্জান, "ঐ
ছেড়ি, জামা কিসু পিন্দ!"


হাঁটুপানির জলদস্যু

ক্যামেলিয়া আলম এর ছবি

গতির ধারা বেয়ে পরিবর্তন আসে ---- সে কেউ চাক আর না চাক -- আর বেশ্যা আমার কাছে শ্রদ্ধার একটি শব্দ ------ উপরের ছবিকে বেশ্যার যোগসূত্র বলে আমার মনে হয় নি ---- এ শুধুই বিনোদনের জন্য করা ---- আমি দুঃখিত আপনার সাথে একমত না হতে পারার জন্য
.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........

.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........

দিগন্ত এর ছবি

কালে সব খেলাই এরকম পণ্যে পরিণত হবে। আর সব খেলাই নয়, সব মানুষও ... আমেরিকায় এসে এই রূপান্তরটা চোখে পড়ছে ... আস্তে আস্তে করে আমাদের দেশও একই পথে হাঁটছে।


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

অতিথি লেখক এর ছবি

কিছু কিছু মন্তব্যর সাথে একমত হতে পারলাম না।

এখন এসেছে টুয়েন্টি-টুয়েন্টি নামের এক তৃতীয় শ্রেনীর প্রহসন। এতে কারুকাজ বা subtlety'র বিন্দুমাত্র স্থান নাই - সৌন্দর্য বা সৌকর্য খুঁজতে যাওয়া এতে বাতুলতা মাত্র।

তাই যদি হয় তাহলে ভিভ রিচার্ডসের নাম এত শ্রদ্ধার সাথে উচ্চারিত হয় কেন?রিচার্ডস বলকে বল মনে করতেন না ,ভাল কি মন্দ সমানে ধুমাতেন।ভিভের খেলায় যদি আপত্তি না থাকে টুয়েন্টি-টুয়েন্টিতে তাহলে আপত্তি থাকবে কেন।ভাল একটা বলকে সীমানা ছাড়া করা কি এতই অশৈল্পিক?

বেশ্যাবৃত্তিকে গালাগাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।বিষয়টা কেন জানি চোখে লাগল।
eru

-------------------------------------------------
সুগন্ধ বিলোতে আপত্তি নেই আমার
বস্তুত সুগন্ধ মাত্রই ছড়াতে ভালবাসে।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

ক্রিকেটের ধর্ষন চলছে পুজিবাদী তরিকায় ।


ইয়ে ...চিয়ার লীডার না কী যেন কইলেন ..ঐটা কিন্তু খারাপ না ।
বাংলাদেশে চালু করা যায় । সিনেমার ধুমসী ধুমসী এক্সট্রাদের দিয়ে যদি চালু করা হয় , তাহলে খেলাতে দর্শকের অভাব হবে না ।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

যে কারণে ক্যামেলিয়া আলম বেশ্যাবৃত্তির দায়ে ‌'বেশ্যা' কে গালিতে পরিণত করার বিরোধী সেই একই কারণে আমি 'সিনেমার ধুমসী ধুমসী এক্সট্রাদের' হেয় করায় আপত্তির কারণ পাই। তারা বিউটি বিজনেসের বাজারে কম দামি ও কম দক্ষ পণ্য, উপরূন্তু মধ্যবিত্ত সুরুচিতে বেমানান। ঐশ্বরিয়া বা নিকোল কিডম্যানকে নিয়ে কি আমরা ওরকম বলি? বললেও ঐ 'ধুমসী'রা কিংবা সুডৌল চিক্কন হলিউডি-বলিউডি নায়িকাদের আলাদা করে দোষারোপ করা কেন? তারা তো পুরুষের তৈরি করা সমাজে পুরুষতান্ত্রিক বাজারে পুরুষের মনোরঞ্জনের খোরাক। তারা একবার পণ্য হিসাবে অপদখলকৃত আরেকবার নারী হিসাবে অবমানিত। ঐ নাচ এবং এই নায়িকারা তো পুরুষদেরই কৃতকর্ম।
দুঃখিত আতিশয্য করে ফেললাম বোধহয়।
;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;
মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

পরিবর্তনশীল এর ছবি

ভালো বলেছেন।
তবে কিছু কথা পুরোপুরি মানতে পারলাম না।
আমার মনে হয় মাঠের বাইরে চীয়ার লীডারদের লাফালাফি মাঠের খেলায় কোন প্রভাব ফেলে না।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

জিফরান খালেদ এর ছবি

চিয়ারলীডারিং একটা মহৎ শিল্প এই দুনিয়ার!

তবুও আমার মুস্তফীদা'র প্রতিটা বক্তব্যে অকুন্ঠ সমর্থন রইলো... বিশেষ করে বেশ্যাবৃত্তির ব্যাপারে... দারুণ লিখসেন বস...

সৌরভ এর ছবি

উৎসাহ প্রদর্শক নারী!


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

খোদার লানত বর্ষিত হোক এদের উপর। কলাম-লেখক টুংকু অবশ্য ডানপন্থী/ রক্ষণশীল সংবাদপত্র ওয়াল স্ট্রীট জার্নালের সাথে অনেকদিন ধরে জড়িত। প্রথম জেনারেশান ভারতীয়-মার্কিনী। মার্কিন সংস্কৃতি দিয়ে ভারত সয়লাব হয়ে যাওয়ায় - হোক চিয়ারলীডিং-এর মত সর্বনিকৃষ্ট এক্সপ্রেশান - টুংকু'র উল্লসিত হবারই কথা।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

দিগন্ত এর ছবি

টুংকু'র উল্লসিত হবারই কথা

- উল্লসিত না হলেও উল্লাসের কথা লেখার কথা ... কারণ আমেরিকানরা সেটাই শুনতে চায় ... তাদের প্রবর্তিত সংষ্কৃতি ছড়িয়ে পড়ছে দিকে দিকে ...


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

একমত / দ্বিমত যারা প্রকাশ করেছেন, তাদের সকলকে ধন্যবাদ।

ক্রিকেট'কে অনেকে একটা নিছক খেলা বলেই দেখে থাকেন। আবার আমার মত যারা হার্ড-কোর ট্র্যাডিশনালিস্ট, তাদের কাছে ক্রিকেট শুধু খেলাই না, বরং মহোত্তম খেলা, খেলার রাজা। (ক্লাস সিক্স থেকে ক্লাস এইট পর্যন্ত সময়টা আমি ক্রিকেটের ইতিহাস বিষয়ে যত বই ছিল বৃটিশ কাউন্সিল পাঠাগারের স্পোর্টস সেকশনে, সব খেয়ে ফেলেছিলাম। আজকালকার পোলাপান যেমন কম্পিউটার গেমের নানান খুঁটিনাটি মুখস্থ জানে, আমি তেমন ব্র্যাডম্যানের সেরা স্কোর বা গাভাস্কারের ব্যাটিং গড় বা হোল্ডিং-এর মোট উইকেট সংখ্যা জানতাম।)

এই খেলার বিষয়ে আমি তাই পুরোপুরিই ট্র্যাডিশনালিস্ট। আমি এটাও বিশ্বাস করি যে একটা উৎকৃষ্ট টেস্ট ম্যাচের কাছে আর যে কোন মানব-রচিত ক্রীড়ার মান বা উত্তেজনা ম্লান হয়ে যায়। ২০০৫ সালের অমর অ্যাশেজ সিরিজ যাদের দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল, প্রতিদিনের প্রতিটি সেশন, তারা হয়তো বুঝবেন কি বলতে চাচ্ছি। তাই এইসব টুয়েন্টি-টুয়েন্টি বা ওয়ান-ডে, ফ্ল্যাট পিচে টেকনিক বিবর্জিত ক্রস-ব্যাট মাস্তানি বা মার্কিন ললনার ন্যাংটা নর্তন কুর্দন - এসব পছন্দ হয় না। প্রকৃত বাঙ্গালি সংস্কৃতির সাথে শিরীন বা তিশমার গানের যেই সম্পর্ক, টুয়েন্টি টুয়েন্টি'র সাথে প্রকৃত ক্রিকেটের সেই একই সম্পর্ক।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

সুমন চৌধুরী এর ছবি

একমত।
আমিও ক্রিকেট প্রশ্নে প্রাচীনপন্থী। এখনো নেভিল কার্ডাসের চোখে ক্রিকেট দেখি।



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

আমিও ।

হিমু এর ছবি

টুয়েন্টি-টুয়েন্টি জুয়াড়িদের জন্যে ঠিকাছে।

ভাবছি আমাদের মোনোপোলি টুর্নামেন্টে চিয়ারলীডার আমদানি করা যায় নাকি।


হাঁটুপানির জলদস্যু

হিমু এর ছবি

চিয়ারলীডারের একটা ভালো বাংলা বার করা দরকার। জোশবালিকা হলে কেমন হয়? কিংবা জোশবণিতা?


হাঁটুপানির জলদস্যু

অতিথি লেখক এর ছবি

খেলাকে খেলার মতো করে দেখতে পারলেই মনে হয় ভালো।
-নিরিবিলি

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

আমিও আপনার মতোই রক্ষণশীল এক্ষেত্রে ,,,

বিশেষ করে চিয়ার লিডিংয়ের ব্যাপারটা একেবারে পশ্চিমা স্টাইলেই নকল করে ভার্বাটিম ব্যবহার করাটা শুধু এই ইম্প্রেশনই দেয় যে আমাদের এশীয়ানদের ক্রিয়েটিভিটি নেই ,,, জাপান-কোরিয়া-চীন সবাই এক ,,, এটাই কি আল্টিমেইট জোশ-প্রডিউসার? এই প্রশ্নটা থেকে যায়

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

আমার মন্তব্য সম্ভবত অধিকাংশ পয়েন্টেই দ্বিমতের দিকে যাবে। হাসি

ক্রিকেট বিষয়ে, খেলাধুলার প্রধান উদ্দেশ্য ফান। এই ফানের জন্য ক্রিকেটের তথাকথিত সতীত্ব-রক্ষা তত্ত্বকে জলাঞ্জলি দিতে হলে গোঁড়া রক্ষণশীলদের যদি একটু মন খারাপও হয়, অধিকাংশই মানুষই খুশী হবে। এখানে সতীত্ব রক্ষা বলতে বুঝাচ্ছি, টেস্টক্রিকেটকে দেবতা বলে পুঁজা করা এবং সেইসাথে আর সব ফর্ম্যাটকে আউলফাউল ভাবার প্রবণতা। টেস্টক্রিকেটই শিল্প আর টুয়েন্টি-টুয়েন্টি মানে শুধু মারো কাটো - এটা একেবারেই ভুল এবং একপেশে ধারণা। ক্রিকেট একটু মনোযোগ দিয়ে দেখলেই যে কেউ বুঝতে পারবে; তবে উন্নাসিকতা নিয়ে দূরে সরে থাকলে ওভারে ৮ রান হলো কেন, সেটা নিয়েই মাথা খারাপ হতে হবে। ওভারে কত রান হলো, সেটা বড় কোনো বিষয় না। বিষয় হলো প্রতিদ্বন্দিতা। এক্ষেত্রে একজন ভালো বোলার এবং ভালো ব্যাটসম্যান দুয়েরই কারিশমা দেখানোর সুযোগ পুরোপুরিই আছে টুয়েন্টি-টুয়েন্টিতে। আর ক্রিকেটকে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় করতে শর্ট ভার্সনের বিকল্প নেই। আপনি-আমি ৫ দিন টেস্ট ম্যাচ দেখলেও ক্রিকেটের সাথে অপরিচিত কাউকে ৫ দিন বসিয়ে রেখে এ খেলায় আগ্রহী করে তুলতে পারবেন না। ৩ ঘন্টার ২০-২০তে যা সহজেই করা যায়।

বাণিজ্য বিষয়ে, আমরা পছন্দ করি আর না-ই করি, টাকার কারবার নাহলে চাকা নড়বে না। ক্রিকেটও এর ব্যতিক্রম নয়। ফুটবলের তুলনায় ক্রিকেটে টাকা পয়সার লেনদেন এখন পর্যন্ত নগণ্যই বলা যায়। আইসিসির ওপর বিসিসিআই-এর নিয়ন্ত্রণ জিনিসটা টাকার জন্যই আসে এইং আমিও সেটা অপছন্দ করি। কিন্তু এই বিষয়গুলোকে দূর করতে হলে ক্রিকেটের গ্লোবালাইজেশনের বিকল্প নেই এবং তথাকথিত 'ভদ্রলোকের খেলা' [ব্রিটিশ স্ট্যান্ডার্ডে] হিসেবে ক্রিকেটকে রেখে দিলে এরকম মনোপলি থেকে কখনোই বের হওয়া যাবে না।

চীয়ার লিডিং জাতীয় ব্যাপারগুলো বিজনেসের অংশ, সেইসাথে ফান। এক্ষেত্রে সাপলাই ডিমান্ডের সমীকরণ চলে আসবে। পাবলিক চীয়ার লিডিং না খাইলে এটা অচিরেই উঠে যাবে আর পাবলিক পছন্দ করলে থাকবে। তবে যারা স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে আসে, তারা খেলা দেখতেই আসে, চীয়ারলিডারদের নৃত্য বোনাস। কেউই শুধু নৃত্য দেখতে স্টেডিয়ামে আসে না। ছবির ব্যাপারে খারাপের কি আছে, এটা বুঝলাম না। পোশাক বেশি ছোট হয়ে গেছে? তাইলে অলিম্পিক থেকে মেয়েদের অনেক ইভেন্টই বাদ দিতে হবে হবে। যেমন ধরেন, জিমন্যাস্ট মেয়েগুলা! কিসব টাইট ফিটিং পোশাক পরে, কার্ভগুলা সব বুঝা যায়। ছিঃ। তারপরে টেনিসের মেয়েগুলা। একটু দৌড় দিলেই স্কার্ট উঠে গিয়ে প্যান্টি দেখা যায়!

ক্রিকেটের ভার্সনের সাথে জুয়াড়ির ব্যাপারটা ঠিকঠাক বুঝি নাই। টুয়েন্টি-টুয়েন্টিতে জুয়া চলে আর টেস্টে জুয়া চলে না, এমনটা বলতে চান না নিশ্চয়ই।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

যে খেলায় যেমন পোশাক মানানসই সেরকম হতে পারে। কিন্তু খেলাগুলো আমরা পরিবার নিয়ে দেখি। দ্বিতীয়ত, মেয়ে নাচানোর কোনো ডিমান্ড কি দর্শকেরা করেছিল, করলে কত ভাগ এবং তার কত ভাগ নারী আর কত ভাগ পুরুষ (এর মধ্যে টিভি দর্শকদেরও রাখতে হবে)? তৃতীয়ত পুরো ব্যাপারটার মধ্যে যে পুরুষালী অবলোকনকাম চরিতার্থতার ব্যাপার আছে তাকে আমার নিরীহ মনে হয় না। ডিমান্ড কিন্তু সৃষ্টি ও পুষ্ট করা হয়। পাবলিক স্পেসের নীতিমালা লংঘনের স্বাধীনতা বাণিজ্যকে দেয়া যায় কি?
;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;
মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

তীরন্দাজ এর ছবি

মুক্তবাজারের যুগে যে যেখানে পারে, কোপ দেয়।

"বেশ্যা" প্রশ্নে কনফুসিয়াসের সাথে সহমত!
**********************************
যাহা বলিব সত্য বলিব

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

বণিকরা সব জায়গায় ঢুকে পড়েছে। তারা ঢুকবেই। আপনার দারিদ্র, আপনার চাহিদা, আপনার সমস্ত কিছুর সুবাদেই। কেউ ঠেকাতে পারবে না তাদের।
এখন ঘটনা হচ্ছে, বণিকের দরকার ভোক্তা। ঐ একটা জায়গাতে কিন্তু তারা ধরা। ইচ এন্ড এভরি কাস্টমার তাদের কাছে লক্ষ্নী। চিয়ার লিডার বলুন আর টোয়েন্টি টোয়েন্টি বলুন, দর্শক যদি তা না নেয়, বণিক কিন্তু সেই খাতে খরচ করবে না!
আর ভালোমন্দ চিনতে পৃথিবীর কোনো জাতির কোনো মানুষ ভুল করে না! যেটা মন্দ, কদিন সেটা আপনাকে সাময়িক ফূর্তি দিলেও সবসময়ের আনন্দ দিতে পারবে না!
ভালোরা দুনিয়ার নিয়মেই টিকে থাকে, মন্দগুলো দুদিন বাদে ঝরে পড়ে যায়! শুধু মাঝখান থেকে কয়দিন তাদের কিছু দাপট দেখতে হয়, এই আর কি!

------------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

ক্রিকেট বুঝি না, কিন্তু এটা বুঝি ক্রিকেট এখন কালচার ইন্ডাস্ট্রির আর আদর্শহীন জাতীয়তাবাদকে পুঁজির খেদমতে লাগানোর আংটা।
:::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

সব বিষয়ে সবাই কখনও একমত হবে এটা ভাবাটা ঠিক নয়। এখানেও তাই।

তবে আমি সবকিছুর জন্যই একটা ভাবমূর্তির কথা বলি। সেটা রক্ষা করার মানসিকতা থাকা উচিৎ।

ভালো লিখেছেন। আর শব্দ চয়ন সংক্রান্ত ওপরের অনেকের মতামতগুলো ভেবে দেখবেন অবশ্যই।

___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।