ফ্রেন্ডস্‌ অব মেহেরজান-২

শুভাশীষ দাশ এর ছবি
লিখেছেন শুভাশীষ দাশ (তারিখ: মঙ্গল, ১৯/০৪/২০১১ - ৮:৩৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

রুবাইয়াত হোসেনের ‘মেহেরজান’ সিনেমা শর্মিলা-বসু-প্রকল্পের একটি ক্ষুদ্র শাখা। শর্মিলা বসু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহাসিক সত্যকে একপাশে সরিয়ে একটা নতুন কিছু আবিষ্কারে মত্ত। একাত্তরে হানাদার পাকিস্তানিদের গণহত্যার দায় বাংলাদেশি তথাকথিত জাতীয়তাবাদীদের দিকে ঘুরিয়ে দিতে দীর্ঘদিন ধরে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। রুবাইয়াত হোসেনের গবেষণা, আগ্রহ, সিনেমা নির্মাণ অন্ধভাবেই শর্মিলা বসুর ঘরানাকে অনুসরণ করে। শর্মিলা বসুর মতোই তিনি একাত্তরের যুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় দেখান, বর্বর পাকিস্তানিদের নৃশংস হত্যাকাণ্ড ও ধর্ষণের ব্যাপারে কোনোপ্রকার আগ্রহ প্রকাশ না করে বরং একাত্তর পরবর্তী সময়ে ঘটা ঘটনাবলিকে ফালাফালা করে বিশ্লেষণ করতে চান তাঁর লেখায় আর মুক্তিযুদ্ধকে গন্ডগোলের কাল বলে হাজির করেন চলচ্চিত্রে।। পাকিস্তানিদের বর্বরতার কথা উল্লেখ করেও একাত্তর পরবর্তী সময়ে বীরাঙ্গনাদের প্রতি স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের আচরণ কি ছিল সেটা দেখিয়ে দেয়ার কাজ করার মতো গবেষক ও আছেন। নয়নিকা মুখার্জি তাঁর গবেষণার আগ্রহে রেখেছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে। শর্মিলা বসুর মিথ্যাচারকে অ্যাকাডেমিকভাবে মোকাবেলা করে এসেছেন অ্যাকাডেমিক ভব্যতা মেনে চলে।

মেহেরজানের প্রদর্শনী বন্ধ হয়ে যাবার পর পরিচালিকা রুবাইয়াত হোসেন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, তাঁর সিনেমা আন্তর্জাতিক গবেষকদের কাছে পাঠানো হয়েছে। তাদের কাছ থেকে সাড়া আসার পর অনলাইন কম্যুনিটির কুৎসার জবাব দেয়া হবে। এর মধ্যে একটা সাড়া পাওয়া গেছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, জার্নালে লেখার মাধ্যমে প্রথম সাড়া দিয়েছেন নয়নিকা মুখার্জি। রুবাইয়াত তাঁর বন্ধুমানুষ বলে লেখায় সিনেমাটার ইতিহাস বিকৃতির বিপক্ষে কোনো যুক্তি স্থান পায় না। বাংলদেশের ব্লগে ‘মেহেরজান’ সিনেমার বিপক্ষে যেসব যুক্তি দেখানো হয়েছিল সেগুলো কিছুটা সংক্ষেপিত আকারে রেফারেন্স উল্লেখের তোয়াক্কা না করে তিন পৃষ্ঠার একটা রিভিয়্যু লিখে ছাপিয়েছেন ভারতের Economic & Political Weekly তে। নয়নিকা মুখার্জির মতো ভালো গবেষক বন্ধুত্বের খাতিরে ইতিহাসকে সম্পূর্ণভাবে বিকৃত করা একটা সিনেমার বিপক্ষে তাঁর মতামত তুলে স্পষ্টভাবে তুলে ধরেন নি। এটা দুঃখজনক।

অনলাইন পত্রিকা বিডিনিউওজ২৪ মেহেরজানের পক্ষে লড়ার জন্য লেখকদের নিয়োগ দিয়েছে। গোলটেবিল বৈঠকে ফরহাদ মজহার, ফাহমিদুল হকেরা মেহেরজানের পক্ষে গাঁইগুঁই করলেও সলিমুল্লাহ খানের স্পষ্ট বিরোধিতায় তাদের জ্ঞান কপচানো বেশিদূর এগোয়নি। কিছুদিন আগে সেখানে একটা লেখা নামায় জনৈক ফাহাম আব্দুস সালাম। তার আক্রমণের বিষয়বস্তু ‘মেহেরজান’ ইস্যুতে বাংলা ব্লগোস্ফেয়ারের আচরণ। প্রথমে তিনি অন্য একজন লেখককে ধরেন। মশিউল আলমের ‘পাকিস্তান’ গল্পটির ভূয়সী প্রশংসা করেন। এই গল্প ধরার কারণ- এই গল্পে পাকিস্তানিদের মানবিক দিক খুব সুন্দরভাবে দেখানো হয়েছে। মশিউল আলমের সেই গল্প নিবিষ্ট পাকিপ্রেমের সাতকাহন। শর্মিলা বসুর কল্পজগতের নায়ক-নায়িকারা এই গল্পে এসে কথা বলে যায়।

পাকিস্তানের একজন নর বা নারীর সাথে বাংলাদেশের একজন নারী বা নরের প্রেমের ঘটনা যে ঘটেনি তা নয়। তবে একাত্তরে এই ধরণের ঘটনা ঘটার সম্ভাব্যতা খুবই অল্প। স্বাধীনতা যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর পাকিস্তানি হানাদারদের বর্বরতার সত্য এক পাশে সরিয়ে রেখে দেশের জনগোষ্ঠীর একাংশ পাকিপ্রেমে মশগুল। পাকিস্তানি খেলোয়ারদের সমর্থন দেয় বাংলাদেশের ক্রিকেট অনুরাগীদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ। ‘দিনশেষে এটা তো খেলাই’ তত্ত্ব দিয়ে এই জঘন্য নিয়াময়-অযোগ্য অপ-মানবিকতার দ্রুত প্রসার দেখতে পাই। তবে গল্পে, উপন্যাসে, প্রবন্ধে কিংবা সিনেমায় এই পাকিপ্রেম তত্ত্ব ঠিক নির্মোহ থাকে না। জেনোসাইডের দায়, ধর্ষণের দায় থেকে সেখানে পাকিস্তানি চরিত্র বা চরিত্রগুলোকে মুক্ত করানোর একটা জোর চেষ্টা থাকার কারণে লেখাগুলো কৃত্রিম। একজন ধর্ষক পাকি জেনারেল কিংবা সেপাইয়ের ধর্ষণের কথা, গণহত্যার কথা জেনেও একটি নারী চরিত্র সেই ধর্ষকের প্রেমে পড়েছে নিয়ে কোনো গল্প আসেনি। লেখককে তাই পাকিস্তানিদের মানবিকতার বিষয়টি কল্পনা করতে হয়। এটাই ফাহমিদুল কথিত বেনেডিক্ট এন্ডারসনের ভাষায়, ‘কল্পিত সমাজ’ (ইমাজিনড কমিউনিটি)-এর আষাঢ়ে কাহিনী।

ফাহাম লিখেছেন-

মানুষের আচরণ দ্বন্দ্বে ভরা, যা সবসময় যুক্তি দিয়ে বোঝানো সম্ভব না, নর-নারীর সম্পর্কে তো নয়ই। শিল্পীর কাজ এই দ্বন্দ্বকে পরিস্ফুট করা। দ্বন্দ্ববিহীন চরিত্র পানসে, ল্যাবরেটরির সংশ্লেষিত পানির মতোন। কিন্তু একটা প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই চলে আসে: একজন আগাগোড়া পাকিস্তান বিদ্বেষী শিক্ষিত বাঙালি যুবক যদি কোন পাকিস্তানি মেয়ের প্রেমে পড়তে পারে তাহলে কোনও বাঙালি কিশোরী কেন পাকিস্তানি যুবকের প্রেমে পড়তে পারে না ?

এই একই রকমের কথার বাইরে কথা বলার যোগ্যতা রাখে না অনেকেই। তাদের তত্ত্বগুলো আঁশটে- নর-নারীর সম্পর্ক তো জাত বিচারে হয় না। পাকিস্তানি মানেই অমানবিক না। এইরকম আরো কিছু ক্লিশে কথা। সঙ্গমকাতর লোলুপ নর-নারী অনেক ক্ষেত্রেই অনেক কিছু বিচার করে না। সেটা তাদের নিজস্ব সমস্যা। সেটাকে গুরুত্ব দেয়ার কিছু নেই। কিন্তু রাষ্ট্র, একাত্তর সব টেনে এনে পাকিস্তানিদের মানবিকতার উর্দি পরিয়ে দিলে সমস্যা আছে। বাংলাদেশের পাকিস্তানি সমর্থকেরাও নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করাতে চেষ্টা করে। এই চেষ্টা না করে ‘আমি বারবার ধর্ষিত হতে ভালোবাসি’ প্লেকার্ড নিয়ে মাঠে গেলে কারো আপত্তি থাকবে না। কারণ সেটা তার নিজস্ব সমস্যা। এই মর্ষকামী মানসিকতার ঠিকঠাক উপস্থাপনা এসেছে ডেভিড লিঞ্চের ‘ব্লু ভেলভেট’ সিনেমায় ডরোথির প্রতি ফ্রাঙ্কের স্যাডিস্ট আচরণ। স্লাভো জিজেক এটাকে ফ্রাঙ্কের ফ্যান্টাসি না বলে বলেছেন ডরোথির ফ্যান্টাসি। ডরোথির ভেতরের হতাশা আর বিপর্যয় মর্ষকামের মধ্যে দূর হয়। সুতরাং বলা যায়, ডরোথি রূপী মেহেরজানের মনোবিকলনকে ভালোবাসার সূত্রে গাঁথার অনর্থক চেষ্টা করেছেন মেহেরজানের পক্ষের সমর্থকেরা।


ডেভিড লিঞ্চের ‘ব্লু ভেলভেট’

ফাহাম লিখেছেন-

কিন্তু আমি আশ্চর্য হয়েছি, বাংলা ব্লগস্ফেয়ারে এর প্রতিক্রিয়া দেখে। বেশিরভাগের আবেদন—যেন চলচ্চিত্রটি নিষিদ্ধ করা হয়।

ফাহাম যেখানে লেখা নামান সেটাও অনলাইন মাধ্যম। অথচ সেখানে লিখেই ব্লগকে গালি দিতে দ্বিধা করেন না। ‘মেহেরজান’ বর্জনের আহবানকে ভুলভাবে মানে করে তার গায়ে নিষিদ্ধকরণের লেবেল এঁটেছে ওয়াসিফ, ফাহমিদুল থেকে শুরু করে মেহেরজানের পক্ষে জান লড়িয়ে দেয়া লেখককূল। এদিকে সুমন জাহান নামের তার একটি লেখায় একজন মেহেরজান নিয়ে অনলাইন কম্যুনিটির আচরণকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করেন-

1. Thematic objection: Theme is wrong
2. Content objection: Details are wrong
3. Boycott: Boycott the film because it is offensive
4. Freedom of art: It is fiction so anything is permissible
5. Freedom of speech/expression: Banning is wrong

সচলায়তনে লেখকেরা ‘মেহেরজান’র ভুল বয়ানের বিরুদ্ধে নিজেদের শাণিত যুক্তি উপস্থাপন করেছে- কিন্তু বর্জন বা বয়কটের কথা বললেও নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে কোনো বক্তব্য দেয় নি। unheardvoice.net নামের ব্লগ মেহেরজানের পক্ষে লড়তে থাকে। মেহেরজানকে বর্জনের আহবানকে মুক্তচিন্তার স্বাধীনতায় বাধা-প্রদান নিয়ে বক্তব্য প্রদান করতে থাকে। অথচ মুক্তচিন্তার নামে ইতিহাস বিকৃতি নিয়ে তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায় না। ফারুক ওয়াসিফের পুনর্মিত্রতার সূত্রে কাতর হয়ে সুমন জাহান লিখেন-

For that to happen, these groups like Sachalayatan and Unheard Voice have to unite toward a common goal of formatting a new narrative - a human narrative devoid of partisanship or any other agenda than the future of Bangladesh.

নানারকম এটাসেটামিক্সের পর এই নিউ ন্যারেটিভের কথা আসায় মুখ বিষিয়ে ওঠে। কারণ সত্য কথা তো নয়া ন্যারেটিভে নতুন চেহারা নিবে না। ফলে unheardvoice এর বিতর্কিত অবস্থানের সাথে মিলেঝুলে কিছু করার চিন্তা সুমনা জাহানের ফ্যান্টাসিতেই সম্ভব।

ফাহামের লেখায় ফিরে আসি। ফাহাম চেয়েছেন ‘পাকিস্তানি মাত্রেই খারাপ নয়’ এই কথাকে ইনিয়ে বিনিয়ে নানাভাবে ব্যাখ্যা করানোর। সব পাকিস্তানিদের নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহ নেই। মূল আগ্রহ জাতি হিসেবে পাকিস্তান রাষ্ট্রের একাত্তরের গণহত্যা ও ধর্ষণের প্রকৃত ইতিহাস। পশ্চিম পাকিস্তানের জনতা তাদের জেনারেলদের হত্যাকাণ্ডের বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। ফলে দায় তাদের ওপরও বর্তায়। ধর্ষক ও খুনে রাষ্ট্র পাকিস্তানকে ঘৃণার মধ্যে জাতীয়তাবাদের ঘুঘু দেখার অর্থ নেই।

একাত্তরের প্রকৃত ন্যারেটিভে আগ্রহ থাকলেই তাকে ইদানীং জাতীয়তাবাদী হয়ে যেতে হয়। মেহেরজানের মূল প্রণেতা এবাদুর রহমান। তাঁর বহি ‘গুলমোহর রিপাবলিক’ পাঠকপ্রিয়তা পায়নি। আস্তাকুড়ে ধুঁকতে থাকা এই লেখাটিকে কুড়িয়ে এনে সিনেমা বানিয়ে রুবাইয়াত একটা কল্পজগৎ তৈরি করেছেন। সেখানে একাত্তরের আসল চেতনাকে এককথায় নাকচ করে দেয়ার চেষ্টা প্রচুর। এসব কাজে নগদ লাভ- যুদ্ধাপরাধীদের অপরাধকে লঘু করে ফেলা। চিহ্নিত শত্রু পাকিস্তানকে বধ করাতে তাই মেহেরজানের নিবিষ্ট ফ্যান পাকিপ্রেমী ফাহামের শান্তি আসে না। চব্বিশ বছরের শোষণ, অত্যাচার, ত্রিশ লক্ষ লোকের হত্যাকাণ্ড, অমানবিক ধর্ষণযজ্ঞ তার চোখে বেমালুম অদৃশ্য হয়ে যায়।

শেষ প্যারার আগে লিখেছেন-

সবচাইতে বড় কথা, যে কারণে আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম সে পশ্চিম পাকিস্তানি লুণ্ঠনজীবী শাসকগোষ্ঠীর এমন একটি অপরাধের সন্ধানও কি আপনি দিতে পারেন যা বর্তমান বাংলাদেশী শাসকগোষ্ঠীর মাঝে অনুপস্থিত ?

বাংলাদেশের কোনো সরকারের গায়ে ত্রিশ লক্ষ লোকের গণহত্যার কলঙ্ক লেগে নেই। পাকিস্তানিদের চেয়ে বাংলাদেশ ভালো চলছে না কিংবা এদেশের সরকারের অপরাধের মাত্রা কোন অংশে পাকিস্তানি হানাদারদের বর্বরতার চেয়ে কম নয় বলে যারা আমোদ লাভ করেন, তারা এক একজন ডরোথি বা মেহেরজান।

বিহারি লেখক একবাল আহমেদ ১৯৭১ সালে যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ‘দা নিউ ইয়র্ক রিভিয়্যু অব বুকস্‌’ এ একটা চিঠি ছাপান। সেখানে তিনি পাকিস্তানিদের বর্বরতার কথা স্বীকার করে নিলেও সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত তিনি গণহত্যায় নিহত লোকদের সংখ্যা গণনা করেন আড়াই লাখ পর্যন্ত। সূত্র উল্লেখের পরোয়া তিনি সেখানে করেন না। তবে বিহারি হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে তিনি লিখেছেন-

According to reliable reports, which were not challenged by the government, no more than 10,000 persons were killed or wounded by Bengali nationalists in the riots against the Biharis. At the beginning of August, however, West Pakistan military authorities issued a white paper which claimed that 100,000 people were killed by the Bengali opposition. These and other exaggerated claims in the white paper were obviously intended to justify trials and possible death sentences for opposition leaders.

ত্রিশ লক্ষ থেকে সাতাশ লক্ষ শহীদের উপস্থিতি বেমালুম গায়েব করে দেয়ার জন্য ইংরেজি ভাষায় পাকিস্তানিরা সমানে লিখে চলছে। ১৯৭১ সালের যুদ্ধ নিয়ে প্রত্যক্ষ মিথ্যা অভিজ্ঞতার কাসুন্দি ধারাবাহিকভাবে ছাপিয়ে চলছে পাকিস্তানি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। এদের ন্যারেটিভের চোটে ১৯৭১ সালের প্রকৃত ইতিহাস একসময় কাউন্টার ন্যারেটিভ হয়ে পড়বে বলে আশংকা করি। বাংলাদেশিদের মধ্যে রুবাইয়াত, ভারতের শর্মিলা বসু পাকিস্তানিদের তুমুল ভক্ত হয়ে ইংরেজি ভাষায় বিরামহীন শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। তাহমিমা আনামের উপন্যাসে একাত্তর প্রেক্ষাপট হিসেবে এনে কাল্পনিক কথাবার্তা বেশি শোনায়। হাসান ফেরদৌস সুযোগ পেলেই প্রথম আলোতে জেনারেল মিঠা, পাকি-বাংলাদেশ দো আঁশলা লেখক রূপা ফারুকির লেখা নিয়ে মধ্যে মধ্যেই উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েন। ফারুক ওয়াসিফ মেহেরজানের মুখপাত্র ও বিবেকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ইচ্ছে থাকলে শর্মিলা বসুকে মেহেরজানের চোখ দিয়ে তিনি দেখতে পারতেন। কিন্তু মেহেরজান নিয়ে পাঠক এমনিতেই বিলা হয়ে আছে। তাই এই সুযোগে শর্মিলা বসুর প্রতি বিষোদ্‌গার টাইপ রিভার্স পোস্ট তিনি ব্লগে ও প্রথম আলোতে ছাপান।

মেহেরজান প্রসঙ্গে নয়নিকা মুখার্জির আলোচনাকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা না করে তাঁর লেখায় মেহেরজানের পক্ষে থাকার ইঙ্গিতগুলোকে একটু লক্ষ করি-

The movie was sold out on all the days it had a chance to run. ... Various personal comments have also been made about the director in many of the blogs in relation to her financial and familial links, her education background in women and south Asian studies in the United States and the United Kingdom. ... The gender politics of what has been derogatorily referred to as Pakisongom (union with the Pakistani) on the blogs has been criticised the most. ... In terms of cinematography the film is beautiful, the music is brilliant and the director obviously has an amazing eye for image. ... In light of the brilliant (yes, flawed too) attempt made by this young female director, the film should be re-released in cinema halls in Bangladesh.

আপাতত এখানেই কথা শেষ।

(সমাপ্ত)

--
ফ্রেন্ডস্‌ অব মেহেরজান-১


মন্তব্য

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

চলুক ।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

পাগল মন এর ছবি

যুদ্ধ শেষ হয়নি আমাদের। যুদ্ধ চলছে, চলবে।
৭১ এ ফাকিস্তানী হানাদার আর রাজাকারদের বিরুদ্ধে ছিল যুদ্ধ আর এখন নব্য রাজাকারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে। চালিয়ে যান, পাশে থাকবো ইনশাআল্লাহ।

------------------------------------------
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।

Golam Mostofa এর ছবি

মাঝে মাঝে স্বাধীনতা বিরোধীদের সাহস এবং সংগঠিত শক্তি দেখে খুব ভয় পাই। আমাদের এই দেশ স্বাধীনতার পর দীর্ঘ পথ অতিক্রম করলেও এখনো মনে হয় স্বাধীনতা যে কোন সময় ছিনতাই হয়ে যেতে পারে ধর্মযুধিষ্ঠিরদের হাতে। আমাদের আরো বেশি সংগঠিত হওয়া দরকার।

হিমু এর ছবি

ফাহাম আবদুস সালাম বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুলের জামাতা। কাজেই পাকিপ্রেম এবং "বর্তমান শাসকগোষ্ঠী" নিয়ে তার অভিযোগ ঠিক হাওয়া থেকে উড়ে আসেনি। ঢ়ৈষূ তার খোঁয়াড়ে একে একে সব মগবাজারীকে জড়ো করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, সালাম সেখানে ক্ষুদ্র সংযোজনমাত্র। এইখানেই আম্লীগ-বিম্পি মিলেমিশে একাকার, পাকিপ্রেমের ইস্যুতে আবুলের মেয়ে রুবাইয়াতের পশ্চাৎ বাঁচাতে ছুটে আসে ফখরুলের জামাই সালাম। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে লীগের মেয়ের সাথে কোনো বিম্পির ছেলেকে গলা মিলাতে শুনি না কেন?

পাকিদের পক্ষে একটা অদ্ভুত যুক্তি দেখলাম তার লেখায়। "প্রচুর" পাকির সাথে মিশে তিনি উপলব্ধি করেছেন, পাকিরাও মানুষ, তারাও আমাদের মতোই, ইত্যাদি ইত্যাদি। একজন পাকিস্তানী কতটা আদবসম্পন্ন, কতটা ভদ্র, কতটা মিশুক, কতটা উদার, সেগুলোর কোনো মূল্যই নেই তার বাংলাদেশ-ইস্যুতে মনোভাবের ব্যাপারে। আমি নিজে একজন পাকিস্তানীর সাথে কয়েক বছর ধরে হলের এক ফ্ল্যাট শেয়ার করছি, পাকিস্তানের চারটা প্রদেশের প্রচুর ছাত্রের সাথে আলোচনার সুযোগ আমার হয়েছে, বাংলাদেশ প্রসঙ্গে তাদের মনোভঙ্গি ইয়াহিয়ার চেয়ে ভিন্ন কিছু বলে মনে হয়নি। যে পাঞ্জাবি ছেলেটিকে প্রথম সাক্ষাতে সবচেয়ে নম্রভাষী বলে মনে হয়েছিলো, বাংলাদেশ নিয়ে তাকেই সবচেয়ে হিংস্র আচরণ করতে দেখেছি। যারা ভাবেন, পাকিস্তানের নতুন প্রজন্মের মনোভাব তাদের বাপদাদার থেকে ভিন্ন, তাদের অনুরোধ করবো পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশের তরুণদের সাথে মিশে দেখতে।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

সবচাইতে বড় কথা, যে কারণে আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম সে পশ্চিম পাকিস্তানি লুণ্ঠনজীবী শাসকগোষ্ঠীর এমন একটি অপরাধের সন্ধানও কি আপনি দিতে পারেন যা বর্তমান বাংলাদেশী শাসকগোষ্ঠীর মাঝে অনুপস্থিত ?

এই প্রশ্ন করা লোকগুলো পাকিস্তানে হিজরত করে না কেন, সেটাই বিস্ময়।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

আরিফ জেবতিক এর ছবি

আমি একটা ইন্টারেস্টিং বিষয় চিন্তা করছি এখানে।
হামিদ মীরের স্পনসরশিপ নেয়া প্রথম আলো-প্রথম আলোর সাংবাদিক মশিউল আলমের গল্পের রেফারেন্স-প্রথম আলোর অন্যান্য কয়েকজন সাংবাদিকের মেহেরজানকে জায়েজ করণের দৌঁড়ঝাপ-প্রথম আলোর সাবেক সাংবাদিক ব্রাত্য রাইসুর মেহেরজান প্রেমাক্রান্ত লেখা প্রকাশের নহর...একটা অদ্ভুত মিল।
এবাদুর রহমানের গুলমোহর রিপাবলিক বইটি কখনো প্রথম আলোর বর্ষসেরা বই হিসেবে পুরস্কার পেয়েছিল কি না সেটা জানতে পারলেই বিষয়টা পুরো বুঝতে পারতাম।

হিমু এর ছবি

আমি ঠিক নিশ্চিত নই, কিন্তু অনেককে বলতে শুনলাম, মেহেরজানের বিজ্ঞাপনের দায়িত্ব পেয়েছে মতির ছেলে সাশার বিজ্ঞাপনী সংস্থা। সেটা সত্য হয়ে থাকলে, মেহেরজানের বাণিজ্যিক বিফলতা সাশার বিজ্ঞাপন বাণিজ্যের স্বার্থের বিপরীতে যায়। আবার আলুতে মেহেরজানকে সরাসরি প্রমোট করতে গেলে আলুর অডিয়েন্সের একটা বড় অংশকেও সরাসরি চটানো হয়, যা কিছু ভালু স্লোগানটা একেবারে সরাসরি পাছামারা খায়। অতএব এই দায়িত্বটা একটু আলগোছে চাপানো হয়েছে বাংলার চে গুয়েবাড়া ফারুক, পাকিমুগ্ধ গল্পকার মশিউল, সাহিত্যকেরানী ঢ়ৈষূ, ভাড়াটে শিক্ষক হাফমিদুলদের ওপর। পাকিমুগ্ধ গল্পকার মশিউল কিন্তু তার গপ্পোখানা প্রথম আলোতে লেখার সাহস পায়নি, লিখেছে বিডিনিউজের খোঁয়াড়ে। ফারুক গুয়েবাড়া কিন্তু তার রিকনসিলিয়েশনের দোকান আলুর উপসম্পাদকীয় পাতায় খোলেনি, খুলেছে সামু আর ফেসবুকে। একমাত্র হাফমিদুলই নিজের পুরনো লেখাকে ছাপ মেরে আলুতে লিখে পানি কতটা গরম তা পরখ করতে নেমেছিলো, আর সাজ্জাদ মহাশয় সাহিত্যের পাতায় ফয়েজ আহমেদ ফয়েজের বন্দেগিতে নেমে তার শের তর্জমা করে মেহেরজানের পরোক্ষ হামদ গেয়েছিলেন। আজাদের মা-কে নিয়ে উপন্যাস লিখে সেটার জোরে একুশে পদক বাগানোর দৌড়ে আছেন বলেই হয়তো আনিসুল কিছু বলেননি, নাহলে হয়তো উনিও ফুট-মিটার একাকার করে মেহেরজানের গরুকে গাছে তুলতেন। শুধু তা-ই নয়, মেহেরজান ইস্যু থেকে নিজেদের সম্পৃক্ততার ব্যাপারটা একটু ঝাপসা করার জন্য ঘটনার পরপরই যোগাযোগমন্ত্রী আবুলকে নিয়ে অনলবর্ষী কিছু রিপোর্টও করেছিলো আলু।

আর এবাদুড় আগে আলুবেল প্রাইজ না পেলেও, ভবিষ্যতে পেতে দোষ কী? আলুবেল না পেলে আটরশি মেমোরিয়াল সাহিত্য পদক পাবে।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

তবে আফসোস হচ্ছে বিডিনিউজের জন্য। এত চেষ্টা করেও মেহেরজান ইস্যুরে জমানো গেল না। হাসি

হিমু এর ছবি

হাফমিদুল বাদে বাকি কারোই খ্যাপের কামাই হালাল হয় নাই এইবার। হাফুই একমাত্র ছহি জজবা নিয়ে মাঠে আছে। বাকি সব কয়টাই (দ্দীণূ, ফারুক, ঢ়ৈষূ, মগবাজার) ম্যাচ ফিক্সিং করেছে বলে মালুম হচ্ছে।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

ধুসর গোধূলি এর ছবি

বিডিনিউজ মেহেরজান আর রুবাইয়াতের পক্ষে লড়ছে এটার চেয়ে বড় সত্য হলো "আর্টস" বিডিনিউজের আলাদা একটা শাখা। যেটা চলে স্বাধীনভাবে। এবং এটা এখন চালায় ভ্যাব্দা ঢ়ৈষু। মজহার কিংবা ফাহমিদুলদেরকে এই ভ্যাব্দা ঢ়ৈষুই তার আর্টসের দরবারে ডেকে এনে মেহেরজান বিষয়ে একটা ভজঘট পাকানোর চেষ্টা করেছে। কেনো করেছে, সেটা ভ্যাব্দা নিজেই ভালো বলতে পারবে। কিন্তু আমার ধারণা হলো, কিছু মানুষ থাকে যাদের মধ্যে রাগীমন সিন্ড্রোমের প্রবল এবং অনিরাময়যোগ্য আধিক্য থাকে। একটা কিছু করে সামনে আসার চেষ্টা! নেতিবাচক প্রচারণাও এদের কাছে বিশাল এক প্রচারণা।

বাংলা ব্লগের শুরুতে যখন এই ভ্যাব্দা ঢ়ৈষুকে কেউ হিন্দি চুল দিয়েও পুছতো না তার 'দোরা কাউয়া' টাইপের কোবতে পড়ে। তখন সে শুরু করেছিলো কুখ্যাত রাজাকার কামারুজ্জামানের ছেলে ওয়ামীর পক্ষ নিয়ে। এই ওয়ামী যে মুক্তিযোদ্ধাদের 'কুকুর' আর মুক্তিযুদ্ধকে 'দুই কুকুরের কামড়া কামড়ি' বলে উল্লেখ করেছিলো। ঢ়ৈষুর মানসিক ভারসাম্যতা নিয়ে তখনই বুঝা হয়ে গিয়েছিলো। আর হাঁড়ির একটা ভাত টিপলেই যেমন বুঝা যায় বাকিগুলোর অবস্থা তেমনি ঢ়ৈষুকে দিয়েই বুঝা যায় মেহেরজান আর রুবাইয়াতের পক্ষ নিয়ে লড়তে থাকা 'কমরেড'দের সম্পর্কে।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

আলাদা শাখা হলেও আলাদা ভাবে চলতে পারে না।
বিডিনিউজ একটি মিডিয়া এবং সেখানকার সবগুলো বিভাগের জন্যই বিডিনিউজকেই দায়িত্ব নিতে হয়। ওটা স্বাধীন মিডিয়া না, সম্পাদিত মিডিয়া।
সচলে আমার লেখার দায় আমার, সচল কর্তৃপক্ষের না; কারণ এখানে আমার লেখা সম্পাদনা পেরিয়ে আসে না। কিন্তু মিডিয়ায় সম্পাদকের উপরই দায়িত্বের ষোলআনা।
তবে ব্রাত্য রাইসুর ব্যক্তিগত জোশ আছে এ ব্যাপারে, যেসব লেখা দেখলাম, সেগুলোর বেশিরভাগই অর্ডারি বলেই মালুম হয়।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

বিডিনিউজ একটি মিডিয়া এবং সেখানকার সবগুলো বিভাগের জন্যই বিডিনিউজকেই দায়িত্ব নিতে হয়।

--- একমত


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

ফাহিম হাসান এর ছবি

সলিমুল্লাহ খান যেভাবে ধুয়ে ফেলছে, তাতে মেহেরজানের ফ্রেন্ডদের নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল! বুমেরাং হয়ে গেছে পুরো আড্ডাটা।

যুধিষ্ঠির এর ছবি

ফারুক ওয়াসিফ, সুমন জাহান এবং অন্যান্য যে সব লেখার লিঙ্ক-বিহীন রেফারেন্স দিয়েছেন, সেগুলোর লিঙ্ক দিয়ে দেবেন একটু কষ্ট করে?

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

দিলাম। হাসি

নাশতারান এর ছবি

ধরন

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

ডোবারব্যাং এর ছবি

ফাহাম হলেন, বিএনপির (আগামী?) মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামাতা...তার স্ত্রী হলেন মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বড় মেয়ে মির্জা শামারুহ...অস্ট্রেলিয়াতে এই দুজনের সুখের সংসার...
রয়েচুদ্দিন এই দুজনকেই বিডিয়ার্টসে ঝুলাচ্ছে আজকাল...সাপও মরল, ভবিষ্যতের লাইনটাও ক্লিয়ার থাকলো...ইহা হয় ভৃত্য রয়েচুদ্দিনীয় লাইন...

কুলদা রায় এর ছবি

১. আমার বেশ কিছু পাকিবন্ধু আছেন। একজন অব: কর্নেল আশরাফ। ডাঃ আল্লারাখা শেখ। সাবেক এক মন্ত্রীর ভাই রেয়াজ মাহমুদ এবং সোহেল শফি। ওরা খুবই আন্তরিক ব্যবহারে। আমার সঙ্গে ওদের গল্পগুজব হয়। খানাপিনাও হয়। লোক হিসাবেও মন্দ নয়। খুব রসিক। তবে ওদে চারজনেরই ধারনা--
ক) একাত্তরে ভায়ে ভায়ে গণ্ডগোল হয়েছিল। মাঝখানে ইন্ডিয়া এসে গ্যাঞ্জাম পাকিয়েছে। যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে।
খ) একাত্তরে পাকিস্তানীরা কোনো হত্যা বা নির্যাতন করেনি। এগুলা সবই গুল। আর রেফ করার প্রশ্নই আসে না। কারণ পাকিসেনারা ইমান আকিদা মেনে চলে।
গ) বাংলাদেশীরা তাদের ভুল বুঝতে শুরু করেছ। তারা আবার পাকিস্তানে ফেরত আসবে।
এ বিশ্বাস সব পাকস্তানীদেরই।
২. মেহেরজান ছবির প্রমোর দায়িত্বে শাশা--মতি মিয়ার ছেলে।
৩. কাবেরী গায়েন, রোবায়েত এবং ফেরদৌসী প্রিয়দর্শিনী প্রথম লেখাটি যখন প্রথম আলোতে দিল তখন মতি মিয়া ফারুক ওয়াসিফ, ফাহমিদ, আবুলকন্যা রুবায়েতকে ডেকে আনেন প্রথম আলো অফিসে। সাজ্জাদ শরীফের তত্তাবধানে ফারুক রুবাইয়েতের বয়ানে উক্ত লেখাটির একটা জবাবী লেখা প্রস্তুত করে। সহযোগিতা করে বাকী দুজন। এবং মতি মিয়া কাবেরীদের লেখার সঙ্গে রুবায়েতের জবাবী লেখাটাও প্রকাশ করেন। সাংবাদিকতার ইতিহাসে এটা একটা বিরল ঘটনা। ফাহমিদ আরেফিন স্যারের পেয়ারের লোক।
৩. মেহেরজানবান্ধবদের নিয়ে পর্যায়ক্রমে লিখুন। সত্য উন্মোচিত হোক।

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

সাফি এর ছবি

সবচাইতে বড় কথা, যে কারণে আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম সে পশ্চিম পাকিস্তানি লুণ্ঠনজীবী শাসকগোষ্ঠীর এমন একটি অপরাধের সন্ধানও কি আপনি দিতে পারেন যা বর্তমান বাংলাদেশী শাসকগোষ্ঠীর মাঝে অনুপস্থিত ?

এইটা পড়লেইতো মেজাজটা খারাপ হয়।

সিরাত এর ছবি

এই একই রকমের কথার বাইরে কথা বলার যোগ্যতা রাখে না অনেকেই। তাদের তত্ত্বগুলো আঁশটে- নর-নারীর সম্পর্ক তো জাত বিচারে হয় না। পাকিস্তানি মানেই অমানবিক না। এইরকম আরো কিছু ক্লিশে কথা। সঙ্গমকাতর লোলুপ নর-নারী অনেক ক্ষেত্রেই অনেক কিছু বিচার করে না। সেটা তাদের নিজস্ব সমস্যা। সেটাকে গুরুত্ব দেয়ার কিছু নেই। কিন্তু রাষ্ট্র, একাত্তর সব টেনে এনে পাকিস্তানিদের মানবিকতার উর্দি পরিয়ে দিলে সমস্যা আছে। বাংলাদেশের পাকিস্তানি সমর্থকেরাও নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করাতে চেষ্টা করে। এই চেষ্টা না করে ‘আমি বারবার ধর্ষিত হতে ভালোবাসি’ প্লেকার্ড নিয়ে মাঠে গেলে কারো আপত্তি থাকবে না। কারণ সেটা তার নিজস্ব সমস্যা। এই মর্ষকামী মানসিকতার ঠিকঠাক উপস্থাপনা এসেছে ডেভিড লিঞ্চের ‘ব্লু ভেলভেট’ সিনেমায় ডরোথির প্রতি ফ্রাঙ্কের স্যাডিস্ট আচরণ। স্লাভো জিজেক এটাকে ফ্রাঙ্কের ফ্যান্টাসি না বলে বলেছেন ডরোথির ফ্যান্টাসি। ডরোথির ভেতরের হতাশা আর বিপর্যয় মর্ষকামের মধ্যে দূর হয়। সুতরাং বলা যায়, ডরোথি রূপী মেহেরজানের মনোবিকলনকে ভালোবাসার সূত্রে গাঁথার অনর্থক চেষ্টা করেছেন মেহেরজানের পক্ষের সমর্থকেরা।

এই প্যারাগ্রাফটা আমি বুঝলাম না। 'পাকিস্তানি মানেই অমানবিক না' কথাটা ক্লিশে কেন? আপনি ব্লু ভেলভেটের উদাহরণ দিয়ে কি বলতে চাইছেন এটা সেসব লোকের মানসিক সমস্যা? আপনি কি বলছেন পাকিস্তানি মানেই অমানবিক, বিশেষত '৭১-এর এক্সট্রাপোলেশনে; বা বিশেষত পাকিস্তানের রাডিকালিজমে, পাকিস্তানি আমজনতার এখনো বাংলাদেশ সম্পর্কে আগের প্রজন্মের ধারণায়?

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

সিরাত,

যেটুকু কোট করেছো, সেখানেই উত্তরটা আছে। পাকিস্তান সমর্থনে যারা মানবিকতার উর্দি পরে থাকে তারা বারবার এই একই কথা বলার কারণে কথাটা ক্লিশে হয়ে গেছে।

পাকিস্তানি জনগণ মাত্রেই অমানুষ- এই বক্তব্য এখানে নেই। এদিকে একাত্তর থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত রাষ্ট্র পাকিস্তান ও তার জনগণ এমন কিছু করে দেখায়নি যাতে একাত্তরে তাদের পাপের দায় কিছুটা কমে। ফলে প্রজাতি হিসেবে তারা মানুষের সব বৈশিষ্ট্য নিয়ে হাজির হলেও আমি কিছুটা সন্দেহের চোখেই দেখি।

একটা কাউন্টার প্রশ্ন, মেহেরজান সম্পর্কে তোমার অনুভূতি কি?

সিরাত এর ছবি

"পাকিস্তানি জনগণ মাত্রেই অমানুষ- এই বক্তব্য এখানে নেই। এদিকে একাত্তর থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত রাষ্ট্র পাকিস্তান ও তার জনগণ এমন কিছু করে দেখায়নি যাতে একাত্তরে তাদের পাপের দায় কিছুটা কমে। ফলে প্রজাতি হিসেবে তারা মানুষের সব বৈশিষ্ট্য নিয়ে হাজির হলেও আমি কিছুটা সন্দেহের চোখেই দেখি।"

আপনি কি বলতে চাইছেন সমষ্টিগতভাবে পাকিস্তান মানবিক বৈশিষ্ট্য প্রদর্শনে ব্যর্থ ('প্রজাতি হিসেবে')?

যদি তাই হয়, তাহলে সমষ্টির অংশবিশেষও সাধারণভাবে লেস দ্যান হিউম্যান, গড়ে। পূর্ন মানুষ নয় আর অমানুষ দুটোর মধ্যে দূরত্ব আছে, মানি। আপনার মত কি, এই নুয়ান্স চ্যালেঞ্জ করাটা কি সন্দেহজনক?

ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, রাষ্ট্র আর ব্যক্তির মত ভিন্ন হতে শুধু পারে না, হওয়া উচিৎ। আমার সাথে আমার রাষ্ট্রের মতের পার্থক্য আছে। আমার রাষ্ট্র আমার ব্যক্তিগত ধর্ম এনডর্স করে না উদাহরণস্বরূপ।

যাই হোক, আপনার উত্তরে প্যারাটি আবার পড়লাম, এবং উত্তরের প্যারাটিও। এইখানে আর ডিকনস্ট্রাক্ট না করি, কারণ ভাষামাত্র এমার্জেন্টও বটে, ডিকনস্ট্রাক্ট করে আর কদ্দূর যাওয়া যাবে? আমার মনে হয়েছে আপনি পাকিমাত্রই (বা 'রা') অমানবিক, ওদিকেই ড্রাইভ করছেন। এখানে যুক্তির চেয়ে ডগমার প্রকোপ বেশি। মানছি আমিও যুক্তি ছেড়ে এমার্জেন্ট ইত্যাদি সফিস্ট্রির দিকে চলে গেছি। কি আর করা। এসব বিষয় তো আর গণিত নয়, আর পারিপার্শ্বিক উপেক্ষা করে কেবল ভাষা দেখা বেকুবামিও। কেবল আমি একমত হতে পারলাম না অন্তত উল্লেখিত প্যারায় আপনার এসারশন-এর সাথে।

এই লাইনটা যদি আরেকটু দেখি: "ডরোথি রূপী মেহেরজানের মনোবিকলনকে ভালোবাসার সূত্রে গাঁথার অনর্থক চেষ্টা করেছেন মেহেরজানের পক্ষের সমর্থকেরা।"

লেবাননে ইসরায়েল আক্রমণ করার সময় দক্ষিণ লেবাননের কোন মেয়ে যদি দ্রুজ ইসরায়েলি কোন সেনার প্রেমে পড়ে যায় (হয়তো এরা অফেন্সিভ স্পিয়ারহেড না, পিছনের 'শান্তিরক্ষী'), সেটা কি আপনার মতে মনোবিকলন?

প্যারার প্রথমে আপনিই বলেছেন "সঙ্গমকাতর লোলুপ নর-নারী অনেক ক্ষেত্রেই অনেক কিছু বিচার করে না।" এ কারণেও জিজ্ঞেস করছি। এই বাক্যেও বিশেষণগুলি কিছুটা পয়েন্টেড নয় কি? মেহেরজান অতিরিক্ত-রোমান্টিসাইজড, আপনি সুনিলের একটা উপন্যাস নিয়েও লেখা দিয়েছিলেন, এ বিষয়ের সাথে ট্যানজেনশিয়ালি সম্পর্কিত।

হাইপোথেটিকালি এ ধরণের পরিস্থিতি কতটা অসম্ভব? যদি হয়, সেটা কি বিকারগ্রস্ততার পরিচায়ক?

এখানে আরেকটা প্রশ্ন করা যায়। প্রেমে কি মানুষ জেনে-বুঝে পড়ে সাধারণত? হাসি

৩ - মেহেরজান নিয়ে মত

দেখি নাই। এ্যাড দেখসি, বিলবোর্ডে, ভালো লাগে নাই। তারপর রিভিউ ইত্যাদি পড়লাম। দেখার কিছুটা আগ্রহ জাগসিলো তখন, কিন্তু হাতের কাছে পাই নাই।

আপনি তো আমার অনুভূতি আংশিক জানেনই। সচলায়তনের সবগুলা লেখাই পড়ছি, বাইরেরও কিছু কিছু। আমার তো নাঈম মোহাইমেনের মতামতও খারাপ লাগে নাই চোখ টিপি ; ফেসবুকে শেয়ার দেয়ার পর আপনার সাথে কিছু আলাপ হইলো, যদিও পরে হাসিব ভাইয়ের লেখায় এটা নিয়ে আলোকপাত হইসিলো।

যা বুঝি, মেহেরজানে রোমান্টিকিকরণ থ্রেশোল্ড ক্রস করে চলে গেসে বহুদূর।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

রাষ্ট্র আর ব্যক্তির মত ভিন্ন হতে শুধু পারে না, হওয়া উচিৎ।

উচিৎ অনুচিৎ ঠিক কইরা দিলে, 'ডগমার প্রকোপ' এড়ানো কঠিন। আর 'ভ্যালু জাজমেন্ট' না কইরাও কোনো উচিৎ অনুচিৎ ঠিক করা মুশকিল। আপনারে তীব্র স্ববিরোধী মনে হৈতেছে।

ব্যক্তিগত ধর্ম

এই কথাটা স্যার আমার রোমান্টিকিকরণ থ্রেশোল্ড ক্রস কৈরা কৈ জানি গেল গা ...


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

সিরাত এর ছবি

উচিৎ অনুচিৎ ঠিক কইরা দিলে, 'ডগমার প্রকোপ' এড়ানো কঠিন। আর 'ভ্যালু জাজমেন্ট' না কইরাও কোনো উচিৎ অনুচিৎ ঠিক করা মুশকিল। আপনারে তীব্র স্ববিরোধী মনে হৈতেছে।

হইতেই পারে। মানুষরে সবক্ষেত্রে গাণিতিকভাবে কনসিসটেন্ট হইতে হবে কেন?

ব্যক্তিমাত্র ভ্যালু জাজমেন্ট তো করতেই পারে। হিজাব-নিকাব পোস্টে সেইটা নিয়া আলোচনাও হইতেসে। সেটার সাথে তো রাষ্ট্রের মতের অমিল থাকতেই পারে।

আমার আমারে স্ববিরোধী মনে হয় নাই। আপনার মনে হইতেই পারে। আমার আগের কিছু ব্লগ পোস্টও আপনার তেমন ভাল্লাগেনাই, ব্যাঙ্গাত্মক 'স্টিকি কইরা দেন' মন্তব্য করসেন। আবার দুয়েকখান হয়তো ভালোও লাগসে। সেটা আপনার ভ্যালু জাজমেন্ট। এখন আমার কোন পোস্ট যদি কেবল আপনার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সচল কর্তৃপক্ষ ব্যান কইরা দেয়, সেটা হবে 'রাষ্ট্রীয় ডগমা'-র মত অনেকটা। সেটা একেবারে সব ক্ষেত্রেই করণযোগ্য না, সেটা বলতেসি না।

আমি যেমন এখানে আরেকটা ভ্যালু জাজমেন্ট দেই; এই 'স্ববিরোধী' শব্দটা আমার বেশ ক্লিশে লাগে। এটার সাথে শুভাশীষদা ব্যবহ্রত মনোবৈকল্যের কিছুটা সম্পর্ক আছে। এখানে আমার মনে হয়, (ইন্টারপ্রেটেশন ভুল হইতেই পারে), উনি ভালই ভ্যালু জাজমেন্ট আরোপ করসেন, অতঃপর ডগমার প্রকোপ এবং এমারজেন্ট কনক্লুশন। সায়েন্টিফিকভাবে দেখলে জিনিসটা রিগরাস মেথডের বাইরে। কিন্তু মানবচরিত্রকে সেভাবে বিনির্মাণ করা কি সম্ভব (এখন যদি কন বিনির্মাণ ম্লেচ্ছ টার্ম, তাইলে ক্যামনে কি?)।

আপনার আমারে স্ববিরোধী মনে হইতেসে ডগমা > ভ্যালু জাজমেন্ট > সাজেস্টিভ কনক্লুশনের কারণে। এই একই জিনিস তো শুভাশীষদাও করসেন। ক্যান, আমি তো ওনার হাত কোথাও বান্ধি নাই। তাইলে আপনার খালি আমারে স্ববিরোধী মনে হয় ক্যান? ব্যক্তি হিসেবে আমি কেবল আমার মত আর ইনক্লাইনেশন দিসি। কে ১০০% ব্যাকওয়ার্ড-বিনির্মাণ করতে পারসে এখানে?

এই কথাটা স্যার আমার রোমান্টিকিকরণ থ্রেশোল্ড ক্রস কৈরা কৈ জানি গেল গা ...

কি আর করা! আপনার অনেক কথাও আমার এমনে যায় গা মাঝে-মধ্যে... চোখ টিপি

যাউকগা, আরেকবার বুঝানোর চেষ্টা করা যায়। আমার ধর্ম কোন স্ট্রাকচারড বড়ধর্মে পড়ে না। বাংলাদেশের সংবিধান এদিক দিয়া বেশ গ্রে, কালোর দিকে গ্রে। চাইলে এটা নিয়ে আমারে বিপদে ফালানো সম্ভব হইতে পারে, থিওরেটিকালি। আমার ব্যক্তিগত ডগমা/জাজমেন্ট হইলো ব্যক্তিমাত্রই ক্রিড কাস্টমাইজ করে।

*

যাই হোক, ভাইজান, আপনার আলোচনার অ্যাঙ্গেল দেইখা আমার ভ্যালু-জাজমেন্টাল/ডগমাটিক মাইন্ড মনে করতাসে আপনি আমারে 'দা আদার সাইড' ধইরা নিতে পারেন। সকালে আসার সময় হিচেন্সের আত্মজীবনীতে আর্জেন্টাইন স্বৈরশাসক ভিডেলার কাহিনী পড়তে পড়তে আসতেসিলাম। আমি এখানে যেইসকল 'ফাইন ডিসটিংকশন' করতেসি, বাস্তব জীবনের ঠেলায় পড়লে যে এসব অনেকটাই উইড়া যাইতে পারে, সে ব্যাপারে আমার কোনই সন্দেহ নাই। হিচেন্স কারে জানি উদ্ধৃত কইরা বলসিলেন সেটাই লিবারেলিজম আর পার্টি-লাইন সোশ্যালিজম/কমিউনিজমের পার্থক্য, এই 'আজাইরা রোমান্টিকনেস'-টা। তারপরও, সেই সোশ্যালিজম/কমিউনিজম তো আলটিমেটলি এই লিবারেলিজম-এর ধারণার উপরই সুপারভেনড, নাকি? হাসি

ভাল থাইকেন।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

থাক্লাম।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, রাষ্ট্র আর ব্যক্তির মত ভিন্ন হতে শুধু পারে না, হওয়া উচিৎ

আচ্ছা, ধরে নিলাম পাকিস্তান রাষ্ট্র আর তার নাগরিকদের মত আলাদা। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের সাইটে, উইকিপিডিয়াতে, ইউটিউবে, অন্যান্য সাইটে যেসব পাকিস্তানি নাগরিকদের মত প্রকাশ করতে দেখা যায় এইসব ইস্যুতে, কেন তাদের মতামত রাষ্ট্র পাকিস্তানের সাথে মিলে যায় সবসময়? ইন্টারনেটে তো রাষ্ট্রর খবরদারি নেই, আইন নেই, তাহলে সেই একই ভাই-ভাই থিওরি আর ভারতের ষড়যন্ত্রে বাংলাদেশের স্বাধীন হওয়া, গণহত্যা অস্বীকার করা ইত্যাদি সেই রাষ্টের "স্বাধীন" মত প্রকাশ করা নাগরিকরা করে থাকেন? আর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা পাকিস্তানি ছাত্র/ছাত্রীরা, কর্মক্ষেত্রে পাকিস্তানি সহকর্মীরা, বেশিরভাগেরই একই মতামত। রাষ্ট্রের আইন/সংবিধান সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের প্রতিফলন নয় কি? বেশিদূর না গিয়ে বাংলাদেশের সংবিধানের দিকে তাকালেই তো তা বোঝা যায়। "ধর্মনিরপেক্ষ ইসলামী রাষ্ট্র" বাংলাদেশ।

পাকিস্তান ক্ষমা প্রার্থনা/ ক্ষতিপূরণ ইত্যাদি করবে না, কারণ পাকিস্তানের বেশিরভাগ মানুষ তা চায় না। যদি কখনো জনমত তৈরি হয়, অবস্থা হয়ত পাল্টাবে। বাংলাদেশ "ধর্মনিরপেক্ষ" হবে না, কারণ দেশের বেশিরভাগ মানুষ তা চায় না। যদি কখনো দেশের মানুষ চায়, হবে।

সিরাত এর ছবি

মানি। আমার এই বাক্যটা এভাবে ইন্টারপ্রেটেড হোক সেটা আমি চাইনি, যাহোক হয়েছে, সেটা আমার ব্যর্থতা। আমি আসলে এখানে বাংলাদেশি সংবিধানে ধর্মের সংজ্ঞার সাথে নিজের ব্যক্তিগত মতের পার্থক্য তুলে ধরতে চাইছিলাম।

রাষ্ট্রিকভাবে পাকিস্তানের অবস্থানের বিরোধী আমি নিজেও। ব্যক্তিগতভাবে আমি পাকিস্তানিদের হয়তো আরো ছাড় দেবো। (এখানে খারাপ লাগতেসে, কারণ 'আলটিমেটলি আপনি আমার শত্রু না' ধরণের একটা অনুভূতি হচ্ছে; মনে হচ্ছে কড়া ডেভিলস এডভোকেসি করতেসি, কিছুটা হুদাই। হাসি ) এই 'উপসংহার', বা আসলে বলা উচিত 'অনুমিতির সূচনা' ব্যক্তির নিজের। হিমু ভাই-ই তো মনে হয় বললেন ব্যক্তিগতভাবে পাকিস্তানিদের সাথে উঠাবসা করে উপসংহারে পৌঁছানোর কথা। আমি জীবনে দুইজনের সাথে ভাল ইন্টারাক্ট করসি, 'অনুমিতির সূচনা' তাদের উপর কিছুটা তো ভিত্তি করাই; এই 'প্রাইমিং' এড়ানো কঠিন। এখন যদি কেউ ব্যক্তিগত স্ট্যান্ডার্ডের সাথে মিলিয়ে আমাকে তুলনা করে বিষিয়ে যায় (বা আনন্দিত হয়), সেটা... কি আর বলার? সেই ব্যক্তির ব্যাপারে যথেষ্ট কেয়ার করলে এ্যাপ্রোচ পাল্টাবে হয়তো।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

১।

সার্বিকভাবে পাকিস্তানিরা বাংলাদেশ ইস্যুতে পাকিস্তানি জেনারেলদের চেয়ে ভিন্ন কোনো আচরণ করে নাই। পাকি ব্লগগুলোতে শর্মিলা বসু তাদের গডমাদার। পাকিস্তানের প্রায় সব প্রজন্ম একাত্তরে গণহত্যায় নিহত ত্রিশ লোক বাঙালির সাথে তারা দশ হাজার বিহারি (যাদের অনেকেই আবার রাজাকার, আলবদরদের সাথে মিলে বাঙালি হত্যায় নেমেছিল) হত্যাকাণ্ডকে একই পাল্লায় রেখে বিহারি হত্যাকাণ্ডকে বেশি ওজনের মনে করে। ইদানীং আলু পত্রিকায় হামিদ মীর এক ধরণের আপোষরফার ক্ষমার প্রস্তাব মারাচ্ছেন। ডন পত্রিকায় সাম্প্রতিক লেখাটা পড়লে তাহলে এদের আচরণের আন্দাজ কিছুটা পাওয়া যায়। লেখাটার শেষ প্যারাটা দেখি।

It may be too late to convene trials for suspected Pakistani war criminals — too many of them have gone to their graves without expressing remorse or regret. But an unqualified apology from Pakistan to Bangladesh, albeit 40 years too late, would still not go amiss.

তাদের যাবতীয় আগ্রহ যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার অপরাধকে লঘু করে প্রচারের চেষ্টা করা। তারপর একটা মামুলি ক্ষমা প্রার্থনা। একটা রাষ্ট্রের ও তার জনগণের অমানবিক আচরণ কতোটা বাড়ন্ত হলে একটা গণহত্যার দায় স্বীকার করে নিয়ে ক্ষমা চাইতে চল্লিশ বছরের বেশি লেগে যায়।

আর ‘লেস দ্যান হিউম্যান’ কে কারে মনে করতো সেটা জানতে হলে তোমাকে স্বাধীনতার দলিলপত্রে পড়তে হবে।

২।

ব্যাপারটা হচ্ছে শোষক বনাম শোষিত। মানুষ সাধারণত শোষিত বা ধর্ষিত হতে ভালোবাসে না। স্বাভাবিক মানুষ শোষক বা ধর্ষককেও তাই ভালোবাসে না। এখানে পাকিস্তান-বাংলাদেশের সাথে ইস্রায়েল-ফিলিস্তিন কিংবা হুটু-তুতসি যেকোনো কিছুর তুলনা চলে। সব মানুষ স্বাভাবিক নয়। অস্বাভাবিকেরা ধর্ষণে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ আমোদ পেতে পারেন বলে ধর্ষকগোষ্ঠীকে প্রেমের চোখে দেখতে পারেন। অনেকে ধর্ষকগোষ্ঠীর কারো দ্বারা প্রাণে বেঁচে যায় দেখে অটোম্যাটেড প্রেম ঘাড়ে এসে পড়ে। ইদানীং অনেকেই এই ধরণের সম্পর্ককে নিওলিবারেল দৃষ্টিতে দেখছেন। এতে অপরাধ-হত্যা-ধর্ষণ নানা চলকের ওপর ভর করে আপেক্ষিক হয়ে পড়ে। তবে সাদা দৃষ্টিতে এগুলো মনোবিকলন। মনোবিকলন অনেক কিছু সৃষ্টি করে, কল্পনা করে। উদাহরণ মেহেরজান থেকেই দিই। রুবাইয়াত এবাদ গং সেই পাকিস্তানি-কিন্তু-ভালোমানুষের উদাহরণ দিতে বেলুচি সৈন্যকে বেছে নিয়েছে। এদিকে রুবাইয়াতের সাক্ষাৎ গুরু শর্মিলা বসু আবার দাবী করছেন- একাত্তরে বাংলাদেশে কোনো বেলুচি সৈন্যই আসে নাই। এটাকে সত্য ধরলে ‘বেলুচি সৈন্য আর তার প্রেমে পড়া’ রুবাইয়াত-এবাদের কল্পনা হয়ে পড়ে। এটা তাদের মনোবৈকলিক কল্পনার জগৎ।

যুদ্ধাবস্থায় পড়লে রাষ্ট্র আমজনতার হাগা পর্যন্ত এসে হামলে পড়ে। সেটাকে অস্বীকার করে গুলাবি প্রেমে মত্ত হওয়াকে মনোবিকলনের বেশি আর কি বলা যায়।

৩।

আহা। নাইম মোহাইমেন।

সিরাত এর ছবি

আপনার এই উত্তরের উত্তর অনিন্দ্য ভাই আর আনন্দীদির উত্তর আংশিক পাবেন। আপাতত আর না বলি। হাসি

এখানে বলে রাখা দরকার, আমার 'চ্যালেঞ্জ' আপনার লেখনি থামানোর উদ্দেশ্যে নয়। আপনি চান পাঠক আপনার লেখা পড়ে জানুক; হয়তো জাজমেন্ট ফর্ম করুক। ব্যক্তিগতভাবে জাজমেন্ট ফর্ম করা নিয়ে আমার কিছু প্রশ্ন এখানে কেবল তুলে ধরেছি, এই। এর মানে এই নয় যে আমি বিকল্প-বিপরীত জাজমেন্ট ফর্ম করেছি, কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে মাঝে মধ্যে মনে হয় যে এ ধরণের প্রশ্ন তুললেই একধরণের কালারিং (সরি, কালারিং টার্মটা ক্লিশে) এর সমুহ সম্ভাবনা, যেটা অমূলকও নয়, সচলায়তনে আমার ব্যাকগ্রাউন্ড দেখলে। কিন্তু আমার পয়েন্ট হল, আমিও তো পাঠক, এবং রিইনফোর্সমেন্ট-এর বাইরে আমার মতকে চ্যালেঞ্জ করতে পারাটাও তো আপনার সাফল্যের অংশ হওয়া উচিৎ?

হ্যাঁ, নাইম মোহাইমেনের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক লেখা নিয়ে হাসিব ভাই লিংক দিয়েছিলেন, যেখানে ওনার টার্মিনোলজি নিয়ে হাসিব ভাইয়ের আপত্তি ছিল। আমি ওটা পড়েছি। তারপরও মেহেরজান বিষয়ে ওনার মতামত আমার খারাপ লাগেনি। সবারই তো ব্যাকগ্রাউন্ড থাকবে, মানছি ব্যক্তিগতভাবে অনেকে ব্যাকগ্রাউন্ড দ্বারা বেশি প্রভাবিত হবেন। সেভাবে দেখলে ফ্রি উইলের আর তাৎপর্য রইলো কি? আমার কাছে জিনিসটাকে বেশ হতাশাজনক লাগে, এবং একজন ব্যক্তির পজিশন যে কোন বিষয়ে সময়ে পাল্টাতে পারে। হোয়াটেভার। হাসি

ধন্যবাদ!

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

তারপরও মেহেরজান বিষয়ে ওনার মতামত আমার খারাপ লাগেনি।

নাইম মোহাইমেনের লেখাটার মধ্যে ছদ্মছাগুভাব তো নাই। তার অবস্থান পরিষ্কার। ফ্রি উইলের নামের হাদুম্পাদুম তিনি ডেইলি স্টারে ছাপাইছেন। এটাকে নির্ভেজাল ভালোবাসার গল্প হিসেবে চালানোর চেষ্টার ত্রুটি করেন নাই। রুবাইয়াতরে পাত্তা দেয়ার জন্য এবাদরে পাত্তা দিতে চান নাই, যদিও এবাদের স্ক্রিপ্ট ৯৯% ফলো করছে রুবাইয়াত। লেখাটা পুরাটাই প্রভুখণ্ড। একটা জায়গা দেখি খালি-

The problem is that the basic narrative is still blurry in a global context.

পাকিস্তানিরা জেনারেলরা মনের মাধুরি মিশিয়ে একাত্তরের স্মৃতিচারণ করে। বাংলাদেশের ডেইল স্টারের নাইম,তাহমিমা, রুবাইয়াত আংরেজিতে পাকিবান্ধব হয়ে সেগুলোর পক্ষে যুক্তি শানায়। পরে নাইম এসে পাক্কা ফল ঘোষণা করেন, golobal context এ মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস এখনো দুর্বোধ্য।

আর পেইড লেখার মধ্যে ফ্রি উইল থাকে ক্যামনে?

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

ঈমান থাকলি পরে, ফিরি ফিরিও পেইড হওয়া যায় দেঁতো হাসি


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

অনেকে ধর্ষকগোষ্ঠীর কারো দ্বারা প্রাণে বেঁচে যায় দেখে অটোম্যাটেড প্রেম ঘাড়ে এসে পড়ে। ইদানীং অনেকেই এই ধরণের সম্পর্ককে নিওলিবারেল দৃষ্টিতে দেখছেন।

বিস্তারিত ব্যাখ্যা করবেন আপনার উল্লেখিত প্রসঙ্গে নিওলিবারেলিজম কীভাবে আসে।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

লেখাপড়া কম জানি। হাসি

নিওলিবারেল থিয়োরি মনে করে মানুষের উপকার করতে চাইলে মার্কেট ফোর্স শক্ত করতে হবে। দায়বদ্ধতা জিনিসটাকে বায়বীয় করে সবকিছুকে মুনাফাকেন্দ্রিক করে ফেলে এই রাজনীতি। এগুলার উপ্রে দুই তিন পৃষ্ঠার একটা লেখা দাঁড় করানোর পরে সেটা বাদ্দিয়ে নিওলিবারেল গণিত নামের একটা টুকুন গল্প লিখে ফেলছিলাম। সময় পেলে পইড়েন।

অটোম্যাটেড প্রেমের ব্যাপারটা "আমি বীরাঙ্গনা বলছি" তে কিছুটা পাবেন।

একটা তথ্য দেই: নিওলিবারেল রাজনীতির সাথে পুনর্মিত্রতার রাজনীতি (Politics of Reconciliation) মিলিয়ে পড়েন। কিছু কিছু জিনিস তখন বোঝা যাবে।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

নিওলিবারেল থিয়োরি মনে করে মানুষের উপকার করতে চাইলে মার্কেট ফোর্স শক্ত করতে হবে। দায়বদ্ধতা জিনিসটাকে বায়বীয় করে সবকিছুকে মুনাফাকেন্দ্রিক করে ফেলে এই রাজনীতি

থেকে

অনেকে ধর্ষকগোষ্ঠীর কারো দ্বারা প্রাণে বেঁচে যায় দেখে অটোম্যাটেড প্রেম ঘাড়ে এসে পড়ে। ইদানীং অনেকেই এই ধরণের সম্পর্ককে নিওলিবারেল দৃষ্টিতে দেখছেন। এতে অপরাধ-হত্যা-ধর্ষণ নানা চলকের ওপর ভর করে আপেক্ষিক হয়ে পড়ে।

এই কথায় আসাটা আমার জন্যে একটা কষ্টকল্পনা। দুই তিন পৃষ্ঠা লিখছিলেন যেহেতু, নিশ্চয়ই পড়াশোনা করেছেন। যোগসূত্রটা আরও স্পষ্ট করে দেখালে ভালো হয়। বিশেষ করে একারণে যে আপনার লেখায় নিওলিবারেলিজমের প্রতি অভিযোগ আসছে। জিনিসটা কী, কেহই জানে না। আমি বড়জোর আপনি উপরে যে সংজ্ঞা দিলেন, ওদ্দূরই কেবল জানি। এখন আপনি হয়তো ভাবছেন নিওলিবারেলিজমের কথা এনে আপনি সবগুলো পক্ষকেই নির্ণীত করতে পারছেন। কিন্তু আমার দৃষ্টিতে এটা লেখাকে দুর্বল করবে। খুব সহজেই ভাবা সম্ভব যে আপনি সম্ভবত অ্যান্টি-নিওলিবারেল রাজনীতির পক্ষ হতে আপনার প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্যে মেহেরজানদের সাথে নিওলিবারেলদের মিলিয়ে দিয়ে এক নয়া ডিসকোর্স রচনা করছেন। দেখুন এতে কিন্তু আপনার বাদবাকি বিস্তারিত গবেষণা পলিটিসাইজড হয়ে গেলো। ফলে নিওলিবারেলের ঘাড়ে "ইতিহাস থেকে গণহত্যা, গণধর্ষণের মতো নারকীয় সত্যগুলিকে মুছে ফেলার জন্য তৈরি হয় নানারকম কমিশন" চাপাতে গেলে আরও শক্ত যোগসূত্র প্রয়োজন। নাহলে আপনার পাঠকদের ধরেন না বুঝেই ইমান আনতে হয় এই ব্যাপারে। হয়তো ওই দুই তিন পৃষ্ঠার লেখাটাই আবার ঘষে মেজে নামানো দরকার। যোগসূত্রগুলো সুন্দর করে একদিন পরিষ্কার করুন। নয়তো আপনার ব্যাখ্যাগুলো আপনার ভিতরেই থেকে যাচ্ছে।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

নিওলিবারেলদের নিয়ে আপনার ঈমানি জোশ আমিও কিছুটা খেয়াল করছি। আপনি কোনো একদিন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে আপনার ধারণা হাজির করুন। আমার লেখা আমি ঠিকই হাজির করাবো। সেই পর্যন্ত ধৈর্য রাখুন।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

রেফারেন্স ছাড়া কথা কওয়া কি অভ্যেসই করে ফেলবেন নাকি? দেখান দেখি কী খেয়াল করছেন? মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে ধানাইপানাইকে সনাক্ত করতে গিয়ে মাঝখান দিয়ে ভিন্ন একটা রাজনৈতিক বক্তব্য ব্যাখ্যাহীনভাবে ঢুকিয়ে দিলে সেই চর্চাকে শক্তভাবে প্রশ্ন করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

আপনি নিওলিবারেলদেরকে ব্যাখ্যা না দিয়ে একটা পক্ষে ফেলবেন। ব্যাখ্যা যে চাইবে তাকেও আবার ব্যাখ্যাহীনভাবে নিওলিবারেলদের নিয়ে ইমানি জোশধারী বানাতে চাইবেন। আপনিও ব্যাখ্যা দেবার আগে কোনকিছুকে একটা পক্ষ বানিয়ে দেবার চর্চা থেকে বিরত থাকার ধৈর্যটা রাখুন না?

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

রেফারেন্স ছাড়া কথা কওয়া কি অভ্যেসই করে ফেলবেন নাকি?

নিজের গত কয়েকটা লেখা পড়ুন। নাকি সেগুলোর রেফারেন্স আমাকে দেয়া লাগবে? আপনার সাথে তো বেশি আলাপে যাই নাই। এর মধ্যে আমার কথার মধ্যে রেফারেন্স না দেয়ার অভ্যাস দেখে ফেললেন? আকাশে বাতাসে গুলি ছোঁড়া প্র্যাক্টিস করতেছেন নাকি ইদানীং?

নিওলিবারেলরা কি করে সেটাতো চলক আকারে বলেছি। অল্পে না বুঝলে অপেক্ষা করতে দোষ নাই।

আরো একটা ব্যাপার- নিওলিবারেলদের নিয়ে কিছু বললে আপনার অসুবিধা বুঝতে পারছি না। আপনার রাজনৈতিক অবস্থান কি নিওলিবারেলের পক্ষঘেঁষা? যদি তাই হয়, তবে ঈমানি জোশ বললে ক্ষতি কি? যা বিশ্বাস করেন সেখানে ভালোমতো ঈমান রাখেন। পরে সুযোগে আলাপ করা যাবে।

মন মাঝি এর ছবি

এটাই ফাহমিদুল কথিত বেনেডিক্ট এন্ডারসনের ভাষায়, ‘কল্পিত সমাজ’ (ইমাজিনড কমিউনিটি)-এর আষাঢ়ে কাহিনী।

মেহেরজান সংক্রান্ত বিভিন্ন আলোচনাগুলিতে বেনেডিক্ট এন্ডারসনের জাতীয়তাবাদ ও 'কল্পিত সমাজ' সংক্রান্ত রেফারেন্স বারবার আসাতে আমার খুব কৌতুহল হচ্ছিল তার বক্তব্যটা আসলে কি জানার জন্য। দুঃখের বিষয় মূল বই সংরহ করা সম্ভব হয়নি। তাই ইন্টারনেটই ভরসা করলাম। মূল বই নয়, তবে সেখান থেকে কিছু ইন্টারেস্টিং উদ্ধৃতি এবং কিছু সাক্ষাৎকার পেলাম।

জাতি, জাতীয়তাবাদ ও 'কল্পিত সমাজ' সংক্রান্ত তার এই সংজ্ঞাটা আমার ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছে (দীর্ঘ হওয়ায় আর অনুবাদ করলাম না) : --

"In an anthropological spirit, then, I propose the following definition of the nation: it is an imagined political community - - and imagined as both inherently limited and sovereign.

"It is imagined because the members of even the smallest nation will never know most of their fellow-members, meet them, or even hear of them, yet in the minds of each lives the image of their communion. Renan referred to this imagining in his suavely back-handed way when he wrote that 'Or l’essence d'une nation est que tons les individus aient beaucoup de choses en commun, et aussi que tous aient oublié bien des choses.” With a certain ferocity Gellner makes a comparable point when he rules that 'Nationalism is not the awakening of nations to self-consciousness: it invents nations where they do not exist.' The drawback to this formulation, however, is that Gellner is so anxious to show that nationalism masquerades under false pretences that he assimilates 'invention' to 'fabrication' and 'falsity', rather than to 'imagining' and 'creation'. In this way he implies that 'true' communities exist which can be advantageously juxtaposed to nations. In fact, all communities larger than primordial villages of face-to-face contact (and perhaps even these) are imagined. Communities are to be distinguished, not by their falsity/genuineness, but by the style in which they are imagined. Javanese villagers have always known that they are connected to people they have never seen, but these ties were once imagined particularistically-as indefinitely stretchable nets of kinship and clientship. Until quite recently, the Javanese language had no word meaning the abstraction 'society.' We may today think of the French aristocracy of the ancien régime as a class; but surely it was imagined this way only very late. To the question 'Who is the ‘Comte de X?’ the normal answer would have been, not 'a member of the aristocracy,' but 'the lord of X, 'the uncle of the Baronne de Y,'or 'a client of the Duc de Z.'

"The nation is imagined as limited because even the largest of them encompassing perhaps a billion living human beings, has finite, if elastic boundaries, beyond which lie other nations. No nation imagines itself coterminous with mankind. The most messianic nationalists do not dream of a day when all the members of the human race will join their nation in the way that it was possible, in certain epochs, for, say, Christians to dream of a wholly Christian planet.

"It is imagined as sovereign because the concept was born in an age in which Enlightenment and Revolution were destorying the legitamcy of the divinely-ordained, hierarchical dynastic realm. Coming to maturity at a stage of human history when even the most devout adherents of any universal religion were inescapably confronted with the living pluralism of such religions, and the allomorphism between each faith's ontological claims and territorial stretch, nations dream of being free, and, if under God, directly so. The gage and emblem of this freedom is the sovereign state.

"Finally, it is imagined as a community, because, regardless of the actual inequality and exploitation that may prevail in each, the nation is always conceived as a deep, horizontal comradeship. Ultimately it is this fraternity that makes it possible, over the past two centuries, for so many millions of people, not so much to kill, as willingly to die for such limited imaginings.

"These deaths bring us abruptly face to face with the central problem posed by nationalism: what makes the shrunken imaginings of recent history (scarcely more than two centuries) generate such colossal sacrifices? I believe that the beginnings of an answer lie in the cultural roots of nationalism."

Anderson, Benedict. Imagined Communities: Reflections on the Origin and Spread of Nationalism. Revised Edition ed. London and New York: Verso, 1991, pp. 5-7.

****************************************

হিমু এর ছবি

কিছু ম্লেচ্ছ নাম বললে নির্বোধ পাঠক নড়েচড়ে বসে, বোঝে যে লেখক একজন জ্ঞানী ব্যক্তি। প্রকৃতপক্ষে মেহেরজান ইস্যুতে বেনেডিক্ট অ্যান্ডারসনের এই কল্পিত কৌমের প্রাসঙ্গিকতা কোথায়, সেটা ব্যাখ্যা করতে হাফমিদুল নিদারুণভাবে ব্যর্থ। এই ব্যর্থতার কারণ হচ্ছে, মেহেরজানের লেখাটা তার অন্য এক প্রসঙ্গে লেখা গরুর রচনা থেকে চোথা মেরে তৈরি করা। এখানে বেনেডিক্ট অ্যান্ডারসনের নামটা একটা ব্যালাস্ট হিসেবে কাজ করছে কেবল। ধান্ধাবাজদের এরকম কিছু ব্যালাস্ট তৈরি থাকে, হাফুর আছে বেনেডিক্ট অ্যান্ডারসন, দ্দীণূর যেমন আছে জাঁ বদ্রিয়া আর ৎসিগমুন্ট বোমান। এই নামগুলো কুমীরের ছানার মতো ঘুরেফিরে সব লেখায় দেখতে পাবেন। বেনেডিক্ট অ্যান্ডারসন প্রকৃতপক্ষে হাফমিদুলের জ্ঞানের ফিতায় অমোচনীয় কালিতে লেখা ২৬ ইঞ্চি, সে এটা দিয়ে দুনিয়ার সব হাতা, আস্তিন আর ছাতি মেপে চলছে।

দুর্বৃত্তের হয়ে কলম ধরলে এই ধরনের কিছু নামের ভারে জ্ঞানপাপীদের বিচি ঝুলতে ঝুলতে মেঝেতে ঘষ্টা খাওয়া শুরু করে। ব্যাপার না।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

মনমাঝি ভাই,

বেনেডিক্ট এন্ডারসনের সম্পূর্ণ বই। এবার এই বইয়ের উপ্রে একটা রিভিয়্যু নামান। হাসি

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

চলুক

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

আব্দুল ওয়ারেশ এর ছবি

চালিয়ে জান। সত্য উতঘাটিত হোক।

সামিমুল মওলা এর ছবি

ভাই, আমি BDNEW24 মেহেরজানে লড়েছিলাম, রেয়াত দিইনি!ওখানে খুঁজলেই আমার নাম ও লেখা পাবেন! আমি বিশেষ ব্যাস্ত মানুষ, তাও ছাড়িনি, আমার পক্ষে যতটুকু সম্ভব ! আমি আপনাদের লেখা আজ হঠাতই দেখলাম, মেহেরজান নিয়ে ২ পর্বই এক নজর দেখলাম! আমার বয়স ৫৪-৫৫ বছর! আমি আপনাদের লেখা দেখে গর্বিত, study ও Knowledge দেখে মুগ্ধ ও আশান্বিত!যে জাতির এ ধরনের সন্তান আছে, তাকে কেউ খাটো করতে পারবে না! আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা! আমার দোওয়া ও আশীর্বাদ রইলো! বাংলা লিখতে কস্ট হয়, অভ্যস্ত তো নই! ওদের আহবান করেছিলাম, যে কোনদিন টেবিলটকে আসতে, প্রমান করে দেব ওদের চাইতে অনেক বেশী লেখা পড়া জানা মানুষ ও বক্তা এদেশে আছে, তারা সব কিছুর সাথে সিনেমাও বোঝে! সাড়া মেলেনি! এখন বুঝলাম, গর্ভস্রাব শর্মিলার নাম শুনেই বুঝেছি কি ঘটেছে!
আজ বুঝেছি, আমাকে লাগবে না, আপনারা ঢের বেশী পড়েন ও জানেন, তাই এ বাংলা শঙ্কামুক্ত! দয়া করে BDNEW24 এ পারলে আমার মন্তব্য গুলো দেখবেন মেহেরজানে! যদিও বেশীর ভাগ আলোচককেই আমার মনে হয়েছে সাজিয়ে আনা!
-Shamimul Moula, Ph.D. M.Phil. MPH. MBBS.

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

হাসি

সার্থক এর ছবি

আলোচনা ভালু পাইলাম। শুনতেছি ওয়াকার ইউনুসকে বাংলাদেশের কোচ বানানোর চিন্তা ভাবনা চলতেছে, ব্যাপারটার সত্যতা যাচাই করে গেলে তখন আরো ভালু ভালু পোস্ট চাই হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।