অ্যান্টি-বেঙ্গলি রেইসিজম

শুভাশীষ দাশ এর ছবি
লিখেছেন শুভাশীষ দাশ (তারিখ: শুক্র, ১৭/০৬/২০১১ - ৭:১০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১৯৭১ সালে মাত্র নয় মাসে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ত্রিশ লক্ষ বাঙ্গালিকে নির্মমভাবে হত্যা করে। একটা সুপরিকল্পিত গণহত্যার পেছনে জাতিবৈরিতার কথাটুকু পাকিস্তান কখনো স্বীকার করতে চায় না। পাকিস্তানি জেনারেলরা তাদের আত্মজীবনী ভরিয়ে রাখে ভেজাল আত্মরতিতে। সেগুলোতে একাত্তরে হত বাংলাদেশের মানুষের সংখ্যা ছাব্বিশ হাজার বা তার চেয়ে কম। শর্মিলা বসু এদের অর্থপুষ্ট হয়ে গবেষণার কল্পজগৎ তৈরি করে জাতিবৈরিতার দায়টুকু উলটো চাপিয়ে দেন ১৯৭১ এর আশপাশের সময়কালের পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ঘাড়ে। এসব এড়িয়ে আসল ইতিহাসটুকু জেনে নেয়ার দায় আমাদের।

পাকিস্তানিদের উন্মত্ত হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞের কথা অনেক বইতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে প্রকাশিত অজস্র বই বাদ দিয়ে ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বাইরে প্রকাশিত বইগুলোতে বাঙালিদের প্রতি পাকিস্তানের জাতিবৈরী আচরণের তথ্য নিয়েই এই লেখাটি।

অমিতা মালিকের ‘দা ইয়ার অফ দা ভালচার’ গ্রন্থে পাকিস্তানিদের অমানুষিক নির্যাতনের নানা উদাহরণ দেয়া আছে। পাকিস্তানিদের এই অমানবিক আচরণের কারণ জানতে চেয়ে কিছু প্রশ্ন করেছেন বইয়ের প্রায় শেষ পর্যায়ে।


মালিক (১৯৭২:১৫৭)

হিটলার যেভাবে ইহুদি নিধনে নেমেছিল, ইয়াহিয়া বাঙালিদেরকে মশা মনে করে পিষে মারতে চেয়েছিলেন ১৯৭১ সালে। নিয়াজি বাঙালিদের অভিহিত করতো চিকেন বা মাঙ্কি হিসেবে। জাতিবৈরী এইসব বিশেষণ আকচারই প্রয়োগ করেছে পাকিস্তানি সেনা বা জেনারেলরা। নিয়াজির এইসব বর্ণবাদী নেম কলিং-এর কথা বর্ণিত আছে আর. জে. রামেলের ‘ডেথ বাই গভর্নমেন্ট’ বইতে। রামেল তাঁর বইতে বিভিন্ন গণহত্যায় হতাহতদের সংখ্যা নির্ধারণে একটি গাণিতিক পদ্ধতির আশ্রয় নিয়েছেন। ১৯৭১ সালের গণহত্যা নিয়ে তাঁর কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছে এইরকম কিছু রেফারেন্সের উল্লেখ করে (হতাহতদের সংখ্যা তিন লক্ষ থেকে শুরু করে ত্রিশ লক্ষের কিছু কিছু তালিকা প্রকাশ করে) পনের লক্ষের প্রতি তাঁর গাণিতিক সিদ্ধান্তের কথা বলতে চেষ্টা করেছেন। যদিও রামেল স্বীকার করেছেন- বিশ্বাসযোগ্য মনে হলেও তাঁর দেয়া রেফারেন্সের অথেনটিসিটি নিয়ে সন্দেহমুক্ত নন। বাংলা ভাষায় রচিত বইগুলোর তথ্য তিনি তাঁর হিসেবে ব্যবহার করেননি। নতুন নতুন গণকবরের সন্ধান পাওয়ার তথ্য রামেল সংগ্রহ করেছেন বলে তাঁর বই বা গবেষণায় কোনো উল্লেখ নেই। ফলে রামেলের পনের লক্ষের হিসাব গ্রহণযোগ্য বলে একেবারেই মানা যায় না। তবে রামেল তাঁর বইতে পাকিস্তানিদের বর্বরতার কিছু কিছু বর্ণনা দিয়েছেন। পাকিস্তানিরা যে বাঙালিদের প্রতি জাতিবৈরী আচরণ করেছে- এই তথ্যও বইতে যোগ করেছেন।


রামেল (১৯৯৬: ৩৩৫)


নারায়ন (২০০৯: ২১২)

বাংলাদেশের মানুষদের নিচু অঞ্চলের লোক, নিচু জাতের লোক, বেঁটে, কালো এইসব মনে করে পাকিস্তানিরা তাচ্ছিল্য করতো। হিন্দুদের সাথে থেকে থেকে এই অঞ্চলের লোকজনের মধ্যে হিন্দুয়ানি ঢুকে গেছে মনে করে পাকিস্তানিরা বাংলাদেশের মুসলমানদের সাচ্চা মুসলমান বলে গণ্য করতো না। পাকিস্তান তার সৈন্য ও সাধারণ জনতাকে বাঙালি জাতির প্রতি হীন মনোভাব তৈরি করাতে এক ধরণের বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছিল। ফলে পুবে ঘটে যাওয়া বিশাল গণহত্যা নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানি জনগণের

মধ্যে কোনোপ্রকার প্রভাব ফেলেনি। অশোক কাপুর তাঁর ‘পাকিস্তান ইন ক্রাইসিস’ বইতে ইয়াহিয়া আমলের ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ছক আকারে দিয়েছেন। সেখানে বাঙালিদের প্রতি পাকিস্তানিদের রেইসিস্ট আচরণ একটা কারণ হিসেবে উল্লেখ আছে। বাঙালিদের ক্ষেত্রে কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে পাকিস্তানি সৈন্যদের প্রতি বিদ্বেষ।


কাপুর (১৯৯১: ৮৩)

পাকিস্তানিদের ‘অ্যান্টি-বেঙ্গলি রেইসিজম’ সম্পর্কিত তথ্য আছে আরো অনেক বইতে। প্রাসঙ্গিক দুটি উল্লেখ নিচে দেয়া হলো। অ্যান্থনি মাসক্যারেনহাসের বরাত দিয়ে জানা যায় পাকিস্তানি সৈন্যদের অভিপ্রায় ছিল- গণহত্যা, ধর্ষণ, অত্যাচার ইত্যাদির মাধ্যমে এথনিক ক্লিনজিং করা।


গার্লাক (২০১০: ১৩০)


কেইমার (২০০৭: ৫৭৩)

ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করানোর পেছনে নিয়াজির প্রত্যক্ষ ইন্ধন ছিল। এই জঘন্যতম লোকটির বিকৃত মানসিকতার কথা বিস্তারিত আছে হাসান আব্বাসের ‘পাকিস্তান’স ড্রিফট টু এক্সট্রিমিজম: আল্লাহ, দা আর্মি অ্যান্ড আমেরিকা’স ওয়ার অ্যান্ড টেরর’ বইটিতে। একটা জায়গার কথা এখানে লিখব। সেটুকু পড়েই নিয়াজির নোংরামি কিছুটা আন্দাজ করা যাবে।

Niazi had earlier vowed that before the Indian Army took the capital of East Pakistan, Indian tanks would have to rode over his body. Between the promise and surrender, many a Bangali woman was raped by Pakistani soldiers in the ardency of their jihad. Niazi condoned this for sheer practical considerations. He is reported to have said: “One cannot fight a war here in East Pakistan and go all the way to the western wing to have an ejaculation!” [আব্বাস (২০০৫: ৬৬)]

১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাদের ব্যারাকে পর্ণো ছবির চালান সাপ্লাই দিয়ে সৈন্যদের তাতিয়ে রাখানোর তথ্য আছে সুসান ব্রাউনমিলারের ‘অ্যাগেইনস্ট আওয়ার উইল’ বইতে। এর পেছনের কারণ বিশ্লেষণ করে ঘটনাটির উল্লেখ আছে শিলা জেফ্রির ‘দা ইন্ডাসস্ট্রিয়াল ভ্যাজাইনা’ বইতে। পাকি সৈন্যদের মধ্যে ধর্ষকাম পৌরুষ মানসিকতার উন্নতি ঘটাতে এইসব বিকৃত পর্ণো ছবি ট্রেইনিং দেয়া হতো।

The use of prostitution in its many forms to comfort and entertain soldiers, to pump them up, to maintain their military aggression, is pervasive across militaries and conflict zones. Pornography can be used in military training too, to encourage soldiers to distinguish themselves from women and develop their aggressive masculinity. Pornography was used, for instance, to encourage aggression when the Pakistani army invaded Bangladesh in 1971. Brownmiller reports that ‘n some of the camps, pornographic movies were shown to the soldiers, “in an obvious attempt to work the men up,” one Indian writer reported’ (Brownmiller, 1975, p. 82). Hundreds of thousands of rapes of Bangladeshi women were carried out by the soldiers who had been so thoroughly ‘worked up’. Ruth Seifert makes the important point that militaries make offers of masculinity to soldiers. Male soldiers expect a consolidation of their masculine status and receive this from training and the male bonding around violence in warfare. Ruth Seifert calls this ‘the elevation of masculinity that accompanies war in western cultures’ (Seifert, 1994, p. 65) [জেফ্রি (২০০৯: ১০৯)]

পাকিস্তানিরা চেয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষের মনোবলকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিতে। ধর্ষণ, গণধর্ষণ, উলঙ্গ করে গ্রাম প্রদক্ষিণ, পরিবারের লোকজনের সামনে মেয়েদের বলাৎকার থেকে শুরু করে শিউরে ওঠার মতো আরো নানা কিছু করেছে বর্বর পাকিস্তানি সেনারা। ভারতীয় মেজর লক্ষণ সিং তাঁর ‘ইন্ডিয়ান সোর্ড স্ট্রাইকস্‌ ইন ইস্ট পাকিস্তান’ বইতে পাকিস্তানি তরুণ সৈন্যদের বিকৃত ধর্ষকাম মানসিকতার কথা বলেছেন।

We learned from a captured diary about the misdeeds of a young officer. He had ordered three Razakars to undress a Bengali girl and rape her publicly in the presence of her mother-in-law. This should be the depravity of their minds. Through torture, rape and inhuman treatments, they had dehumanized themselves. [সিং(১৯৭৯: ৪৪)]

পাকিস্তানিরা তাদের কৃতকর্মের জন্য কখনো লজ্জাবোধ করেনি। জঘন্যতম অমানবিক ঘটনা ঘটানোর পরেও হানাদার বাহিনীর এক সেনার আস্ফালন নিয়ে একটি ঘটনার বিবরণ আছে অমিতা মালিকের বইতে।


মালিক (১৯৭২:১৫৪)

হাসান আব্বাস তাঁর বইতে বাঙালি জনগোষ্ঠীর প্রতি পাকিস্তানি শাসকদের জাতিবৈরি আচরণকে বুঝতে চেষ্টা করেছেন। তিনি প্রশ্ন তুলতে চেয়েছেন- পাকিস্তানিরা কি আদৌ বাংলাভাষী এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে মানুষ মনে করতো, নাকি হিটলারীয় উন্নাসিকতায় ভেবে নিতো সাব-হিউম্যান হিসেবে?

The new commander, Lieutenant General Tikka Khan, in line with military junta’s dictates, inflicted on East Pakistan a reign of horror- of random rape, mindless arson, and gratuitous murder of innocents. It brought upon Pakistan external shame. The orders that led to this carnage could only have been given by half-formed men untouched by any higher value that separates humans from animals. The passion unleashed could have been so only because the Bengalis could not have been considered anything but a subject people- and even among the comparatively refined imperialists of the Western nations, subject people were considered only subhuman, to be treated with nothing more than condescension, and that only as long as they behaved themselves. The tragedy of East Pakistan had been implanted fight at the inception of that state. [আব্বাস (২০০৫: ৬৬)]

দেখা যাচ্ছে- পাকিস্তানেরা সামরিক বাহিনী বাঙালিদের শায়েস্তা করার জন্য এদেরকে ‘সাবজেক্ট পিউপিল’ বলে গণ্য করতো। অত্যাচার, নিপীড়ণের মাধ্যমের এদের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দেয়াই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। জাতিগত ঘৃণা কতোটা ভয়ানক হলে (এবং স্বাধীন বাংলাদেশ যাতে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে সেইজন্য) আত্মসমর্পণের দুই দিন আগে রাজাকার, আলবদরদের সহায়তায় বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞে মেতেছিল এই পাকিস্তানি সেনারা- এসব ভাবলে অবাক হতে হয়।

পাকিস্তানি জেনারেলরা তাদের আত্মজীবনীতে জাতিবৈরিতার ভাষ্যটুকু ঢেকেঢুকে রাখেনি। জেনারেল মিঠা, জেনারেল গুল, আইয়ুব খান প্রত্যেকের মেমোয়ারে এই ভাষ্য পাওয়া যায়। আইয়ুব খানের আত্মজীবনী ‘প্রভু নই বন্ধু’ পড়লে এর মধ্যকার ‘অ্যান্টি বেঙ্গলি রেইসিজম’ এর মাত্রা বোঝা যায়। আইয়ুব খান ১৯৪৮ সালের প্রথমদিকে দুই বছরের জন্য [i]জেনারেল অফিসার কমাণ্ডিং হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানে আসেন। বাংলাদেশিদের কথা বলতে গিয়ে এই অঞ্চলের লোকজনের অশিক্ষা, অপারগতা, অক্ষমতা নিয়ে তিনি বারবার খেদ প্রকাশ করেছেন। বাঙ্গালিরা খাঁটি পশ্চিম পাকিস্তানিদের সাথে যোগ্যতায় পারে না দেখে পশ্চিম পাকিস্তানিদেরকে নিজেদের দুরবস্থার জন্য দায়ী করে বলে তিনি বইতে লিখেছেন।

এখানকার নয়া মধ্যবিত্ত সমাজ পশ্চিম পাকিস্তানিদের প্রতি এক ধরণের বিরূপ ধারণা পোষণ করে। তারা কর্মক্ষেত্রের নানা জায়গায় পশ্চিমাদের কাছ থেকে পিছিয়ে আছে বলে অভিযোগ করে। এখানকার আঞ্চলিক সরকার নানা চাপের মুখে আছে। এইসব সমস্যা কাটিয়ে ওঠার মতো দক্ষ সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবকাঠামো তৈরি করার কোনো উদ্যোগ তারা নেয় না। এইজন্য এই এলাকার তরুণদের শিক্ষা ও কারিগরি দক্ষতায় উন্নত হতে হবে। কিন্তু এইসবের জন্য যে মানসিক প্রস্তুতি, শ্রম ও ধৈর্যের প্রয়োজন সেটাতে তাদের আগ্রহ নাই। সহজ পথটা হচ্ছে অন্যকে দোষারোপ করা- এরা সেটাই করছে। তাদের যাবতীয় ব্যর্থতার দায় চাপাতে চাইছে পশ্চিম পাকিস্তানিদের ওপর। ... এই অঞ্চলে আছে চার কোটি মুসলমান, পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ মুসলমান জনগোষ্ঠীর বসবাস এখানে। অথচ দেশের কাজে লাগবে এইরকম একটা মানুষ এখানে খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। ... আমি মাঝে মাঝে অবাক হই নেতৃত্ব দেয়ার মতো মানুষ এই অঞ্চলে একজনও নেই দেখে। [খান (১৯৬৯: ২২-২৫)]

এবার সাম্প্রতিক প্রসঙ্গে আসি। পাকিস্তানি পরমাণু বিজ্ঞানী পারভেজ হুডবয় পাকিস্তানের বিজ্ঞানী কাদের খানের ন্যক্কারজনক বক্তব্য “If we had had nuclear capability before 1971, we would not have lost half of our country – present-day Bangladesh – after disgraceful defeat.” এর প্রতিবাদে একটা লেখা প্রকাশ করেন দা এক্সপ্রেস ট্রিবিউনে। লেখাটির অনুবাদ ছাপানো হয় প্রথম আলোতে। অনুবাদটি করেন ফারুক ওয়াসিফ।

পারভেজ হুডবয় তাঁর লেখায় লিখেছেন-

Let’s revisit 1971. Those of us who grew up in those times know in our hearts that East and West Pakistan were one country but never one nation. Young people today cannot imagine the rampant anti-Bengali racism among West Pakistanis then. With great shame, I must admit that as a thoughtless young boy I too felt embarrassed about small and dark people being among our compatriots. Victims of a delusion, we thought that good Muslims and Pakistanis were tall, fair, and spoke chaste Urdu. Some schoolmates would laugh at the strange sounding Bengali news broadcasts from Radio Pakistan.

হুডবয়ের এইটুকু বক্তব্যের মধ্যে পাকিস্তানিদের মধ্যে বাঙালিদের প্রতি জাতিবৈরিতার প্রণোদণা ঢুকিয়ে দেবার একটা চিত্র পাওয়া যায়। নিজেদের উচ্চগোত্রের, শ্বেতবর্ণের মনে করার পাশাপাশি বাঙালিদেরকে খাটো ও কৃষ্ণবর্ণের মনে করার চিন্তাভাবনা ঢুকিয়ে দেয়া হতো অল্প বয়সেই। যেকোনো ধরণের জাতিবৈরিতার মধ্যে এই ধরণের চর্চার দেখা মেলে। হুডবয় যেভাবে স্পষ্ট করে ‘অ্যান্টি-বেঙ্গলি রেইসিজম’ ব্যবহার করেছেন পাকিস্তানিদের কাছ থেকে সেটার দেখা প্রায় মিলেই না। প্রথম আলোর সৌজন্যে পাকিস্তান-বাংলাদেশ পুনর্মিত্রতার ঝাণ্ডাধারি হামিদ মির এই তিনটা শব্দ একসাথে কোথাও ব্যবহার করেছেন বলে মনে মনে হয় না।

ফারুক ওয়াসিফের অনুবাদ খারাপ কি ভালো সেটা বিচারের ভার পাঠকের। তবে তিনি এই অনুবাদে জাতিবৈরিতার মতো কড়া শব্দ ব্যবহার করেন নাই। করেছেন ‘বিদ্বেষ’ এর মতো তুলনামূলকভাবে কোমল শব্দ। অনুবাদকৃত অংশটুকু পড়ি-

চলুন, আবার ১৯৭১ সাল ঘুরে আসি। আমরা যারা সে সময়টায় বড় হয়েছি, তারা অন্তর থেকে জানি, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান এক দেশ হলেও কখনোই এক জাতি ছিল না। আজকের তরুণ পাকিস্তানিরা কল্পনাও করতে পারবে না সে সময় পশ্চিম পাকিস্তানিদের মনে কী পরিমাণ বাঙালি-বিদ্বেষ কিলবিল করত। আমি শরমিন্দা হয়ে স্বীকার করি, আমার মতো সামান্য এক বালকও আমাদের চেয়ে খাটো ও কালোমতো বাঙালিদের স্বজাতিভুক্ত ভাবতে বিরক্ত হতাম। আমরা ছিলাম এক বদ খোয়াবের শিকার। আমরা ভাবতাম, লম্বা, ফরসা আর চোস্ত উর্দু বলিয়েরাই সাচ্চা মুসলমান আর ভালো পাকিস্তানি। রেডিও পাকিস্তানের অদ্ভুত ভাষায় উচ্চারিত বাংলা খবর শুনে স্কুলের বন্ধুরা হাসাহাসি করত।

এই অনুবাদ নিয়ে আর বিশ্লেষণে না যাই। একটু খুঁটিয়ে পড়লেই হুডবয়ের ইংরেজির চড়া আওয়াজটা যে ওয়াসিফের কোমল অনুবাদে ঠিকঠাক আসে নাই সেটা বোঝা যাবে।

বিদ্বেষ শব্দটা আমরা যারা ১৯৭১ সালে সংঘটিত ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা ও ধর্ষণের জন্য রাষ্ট্র পাকিস্তান ও তার জনগণকে এখনো ক্ষমা করিনি তাদের জন্য কিছুটা খাটে। ত্রিশ লক্ষ পাকিস্তানিদের মেরে-কেটে সাফ করে এথনিক ক্লিনজিং করার ইতিহাস আমাদের নেই। ফলে বিদ্বেষ শব্দটা আমাদের জন্য মোটামুটি ঠিক শোনালেও রেইসিজম বা জাতিবৈরিতার মতো ভারি অপরাধ আমাদের ঘাড়ে পড়ে না। অন্যদিকে পাকিস্তানের মজ্জার মধ্যে গেড়ে বসে আছে Anti-Bengali Racism বা বাঙালিদের প্রতি জাতিবৈরিতা। বেটে, কালো ও নিম্ন জাতিসত্ত্বার মানুষ মনে করে ত্রিশ লক্ষ বাঙালিকে তারা গণহত্যায় হত করেছে। পাকিস্তানিরা যে এখনো বাংলাদেশের মানুষের প্রতি জাতিবৈরী আচরণ থেকে মুক্ত নয় তার প্রমাণ সাম্প্রতিক কালে ঘটে যাওয়া গগনের ঘটনা। আর পাকিস্তানিরা যা করেছে বা করে সেটাকে রেইসিজম বলার মুরোদ বা বাংলা করার মুরোদ যাদের নাই, তাদেরকে করুণাই করি- অন্য কিছু নয়।

সূত্র:
১। Malik, Amita, The Year of the Vulture, Orient Longman, New Delhi, 1972
২। Rummel, R.J., Death by Government, Transaction Publishers, USA, 1996
৩। Narayan, Anjana, Purkayastha, Bandana, Living our religions: Hindu and Muslim South Asian American women narrate their Experience, Kumarian Press, USA, 2009
৪। Kapur, Ashok, Pakistan in Crisis, Routledge, London, 1991
৫। Gerlach , Christian, Extremely Violent Societies: Mass Violence in the Twentieth-Century World, Cambridge University Press, USA, 2010
৬। Kiernan, Ben, Blood and Soil: A World History of Genocide and Extermination from Sparta to Darfur, Yale University Press, USA, 2007
৭। Abbas, Hassan, Pakistan’s Drift to Extremism: Allah, the Army and America’s War and Terror, ME Sharpe, NY, 2005
৮। Jeffreys, Sheila, The Industrial Vagina: The political economy of the global sex trade, Routledge, London, 2009
৯। Singh, Maj. General Lachhman, Indian Sword Strikes in East Pakistan, Vikas Publishing House Pvt. Ltd, New Delhi, 1979
১০। Khan, Md. Ayub, Friends not masters,: A political autobiography, Oxford University Press , Karachi, 1967

----
বই কৃতজ্ঞতা:
জালাল ভাই
ICSF লাইব্রেরি

বানান সংশোধনী:
আনন্দী কল্যাণ

----


মন্তব্য

মারভিন এর ছবি

অনেক খাটাখাটনি করেছেন গুরু গুরু । এই লেখা ছড়িয়ে যাক।

তারাপ কোয়াস এর ছবি

গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু
তবুও গুয়েবাড়ারা রিকনসিলিয়েশন তত্ত্ব নিয়ে হাজির হয়!!
সরাসরি প্রিয়তে রাখলাম এই পোষ্ট।


love the life you live. live the life you love.

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

গুরু গুরু

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

পাগল মন এর ছবি

অসাধারণ লেখা।
এটাকে ছড়িয়ে দিতে হবে সবার মাঝে। সবার জানা দরকার এসব।

------------------------------------------
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।

দ্রোহী এর ছবি

চমৎকার, পরিশ্রমী লেখা। চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ুক।

হয়তো একদিন পাকিস্তান রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাইবে। হয়তো বাংলাদেশ সেদিন পাকিস্তানের সেই অপরাধকে ক্ষমা করে দিয়ে বুকে টেনে নেবে। তারপরও পাকিস্তান ও তার জনগণের জন্য আমার বুকের ভেতর পুষে রাখা ঘৃণাটুকু কোনদিন যাবে না। আমার সন্তানদের ভেতর, আমার বংশধরদের ভেতর এই ঘৃণাটুকু সংক্রমিত করে দিয়ে যাব আমি। এ আমার প্রতিজ্ঞা।

guest_writer এর ছবি

গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু

নির্ঝরা শ্রাবণ

নীলাক্ষী এর ছবি

নিজের মনের রাগ দুঃখ খুব মার্জিত ভাবে প্রকাশ পেয়েছে । এরকম সংযম ও শান্ত পৌরুষ-ই পারে, পিশাচের পৈশাচিকতাকে নগ্ন করতে.
....ধন্যবাদ ও অভিনন্দন !!! গুরু গুরু

বইখাতা এর ছবি

চলুক

ফারুক হাসান এর ছবি

গুরু গুরু

এরকম পরিশ্রমী লেখার মূল্য অনেক। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

নৈষাদ এর ছবি

চলুক

কল্যাণ ফৌজদার এর ছবি

গুরু গুরু গুরু গুরু চলুক

মাহবুবুল হক এর ছবি

ধন্যবাদ, অসাধারণ লেখা। প্রিয় পোস্টে রাখলাম।

--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।

ধূসর স্বপ্নগুলো এর ছবি

ভাল লাগল, ধন্যবাদ পোস্ট এর জন্য ...

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

তথ্যে বিশ্লেষী, প্রেরণায় আশ্লেষী!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

জি এম সালাহউদ্দীন এর ছবি

আপনার লেখাগুলো বেশ পরিশ্রম করে লেখা;এটাও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। ধন্যবাদ আপ্নাকে...এ প্রয়াস আশা করি অব্যাহত রাখবেন...মাঝে মাঝে যখন মনে হয় আমার এ মানব জন্মের যৌক্তিকতা কি? তখন ই মনে হয় নিজে যা জেনেছি শিখেছি সেটা আমার উত্তর পুরুষে ছড়িয়ে দিয়ে যাওয়াতে কম সার্থকতা নেই...রিলে রেসের মত আমার হাতের ব্যান্ড নিয়ে আমার সন্তান দৌড়াতে থাকবে একটা সহনশীল উন্নত ও সভ্য জাতি গঠনে...তাই দ্রোহী-র সাথে একমত জানালাম।

ওডিন এর ছবি

আমরা খুব দ্রুত সবকিছু ভুলে যাই। তাই ঠিক করলাম কয়দিন পর পর এসেই এইখানে কমেন্ট করে এই লেখাটাকে একটু ঠেলা দিয়ে যাবো। দরকার আছে। হাসি

ধৈবত(অতিথি) এর ছবি

গুরু গুরু গুরু গুরু শ্রমসাধ্য লেখা
হুডবয়ের লেখার লিঙ্কটাকী দেয়া যাবে। অথবা অনুবাদের লিঙ্কটা দিলেও সই।

অপছন্দনীয় এর ছবি

চলুক

kala Howlader এর ছবি

আশা ছিল পাকিস্তান থেকে বের হয়ে বাংলাদেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হবে। কিন্তু অচিরেই মনে হোল শুধু নামটিই পাল্টেছে, মানুষের মানসিকতা পাল্টায় নি। হতাশায় মাতৃভূমি ছেড়েছি ১৯৮২তে। সচলায়তন পড়ে মনে আশা জাগে।

guest_writer এর ছবি

দরকারী লেখা। চালিয়ে যান চলুক

guest_writer এর ছবি

দরকারী লেখা। চালিয়ে যান চলুক

আমি জানি না

অদ্রোহ এর ছবি

কদিন আগেই জনযুদ্ধের গণযোদ্ধা বইটা পড়লাম। পাকিস্তানি সামরিকজান্তা আমাদের কি দৃষ্টিতে দেখত সেটা কি তাদের বিকারগ্রস্ত অত্যাচারের ধরন দেখেই আঁচ করা যায়না?

আর জানতে ইচ্ছে করে, জাতিবৈরিতাকে বিদ্বেষ নামের পেলব শব্দ দিয়ে আড়াল করে ওনারা কোন পাঁয়তারা কষছেন...

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

guest_writer এর ছবি

দরকারী লেখা। চালিয়ে যান চলুক

========
আমি জানি না

guest_writer এর ছবি

দরকারী লেখা। চালিয়ে যান চলুক

==========
আমি জানি না

jisan এর ছবি

আপনার এই লেখাগুলোর জন্যে আপনাকে অনেক অনেক শ্রদ্ধা এবং ভালবাসা। আপনার এভাবে পড়াশুনা করে আমাদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার আন্দোলন কখনো থামবেনা এই কামনা করি। আমরাও শ্রদ্ধার সাথে নিজের সীমানার বাইরে ছড়িয়ে দিবো এই বার্তাগুলো। কষ্ট হয় পড়তে, হাত পা ঘাড় শক্ত হয়ে আসে রাগে। চোখে পানি আসে ক্রোধে। আপনার লেখায় কখনো কমেন্ট করা হয়নাই। তবে সবসময় ছড়িয়ে দিয়েছি(শেয়ার করেছি), সাধ্যমতো।
আবারো আপনাকে অনেক শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

অসাধারণ পরিশ্রমসাধ্য এই লেখাটির জন্য ধন্যবাদ। অরূপের একটা চমৎকার গুন আছে, চট করে মানুষের পোলারিটি সেন্স করা। ফারুক ওয়াসিফকে যখন আমরা চিনতে পারিনি ঠিকমতো তখন অরূপই এই লোকটার চটচটে নোংরা পাল্টি খাওয়া চরিত্র ধরে ফেলে। এতদিন পরে এসে আমি পদে পদে অরূপকে ধন্যবাদ দেই, দুমুখো এই লোকটির লেখা সচলায়তন ধারণ করছে না দেখে।

রাগিব এর ছবি

শুভাশীষ, একটা অনুরোধ করি, এই লেখাটা ইংরেজিতে লিখে পেপার আকারে কোনো জার্নালে পাঠা। জানি না, তোর প্রকৌশলী ব্যাকগ্রাউন্ড বাধা হবে কি না, কিন্তু এই বিষয়ে একাডেমিক লেখার দরকার আছে। একাডেমিকভাবে এই বিষয়ে কেউ কাজ করে না বলেই শর্মিলার মতো জ্ঞানপাপীরা চাপা পিটাচ্ছে ফরমায়েসী লেখায়, আর নানা পত্রিকাতে সেটা পাবলিসিটিও পাচ্ছে।

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

রাগিবের পরামর্শের সাথে সহমত। ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাকগ্রাউন্ড এইখানে কোনো সমস্যা হবার কথা না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মন মাঝি এর ছবি

২০০% সহমত !

****************************************

তানভীর এর ছবি

পাকিরা কম-বেশি সবাই মানসিকভাবে অসুস্থ। এমন নয় যে তারা এভাবেই জন্মায়- যে পরিবেশে, যে শিক্ষায় তারা বড় হয়; ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে রেসিজম গড়ে ওঠে। 'পাকিস্তান' মানে পূণ্য ভূমি, জগতে তারাই সবচেয়ে পূণ্যবান ইত্যাদি ইত্যাদি ধ্যান-ধারণা নিয়ে তারা বেড়ে ওঠে। 'বাঙালি' তাদের কাছে ১৯৭১ এর আগে থেকেই 'আতরাফ' বা ছোটজাত, একাত্তরের পরে বাঙালির নতুন পরিচয় 'গাদ্দার'। হামিদ মীর, ফয়েজ আহমেদ, আসমা জাহাঙ্গীররা সামনে যত মিঠা কথাই বলুক, আড়ালে তারাই দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে বাঙালির গাদ্দারির কারণেই পাকিস্তান টুকরো হয়ে গেছে। তারপরও যদি পাকিস্তান একাত্তরের গণহত্যার জন্য সরকারিভাবে ক্ষমাপ্রার্থনা করতো, দোষীদের বিচারের ব্যবস্থা করতো তবে এসব ধানাই-পানাই মাফ করে দেয়া যেত। ফারুক ওয়াসিফ বা রুবাইয়াত পাকিস্তানের সাথে পুনর্মিত্রতার জন্য যতই পা চাটাচাটি করুক, 'ম্যারি মি আফ্রিদি' বা 'পাকিস্তান জিন্দাবাদ' প্ল্যাকার্ড নিয়ে বাঙালি কুলাঙ্গাররা যতই উচ্ছাস দেখাক- দিন শেষে তাদের পরিচয় তাদের পেয়ারা পাকিদের কাছে গাদ্দার ছাড়া আর কিছুই না। এদের জন্য আসলে করুণাই হয়।

guest_writer এর ছবি

পাকি গুলার মাফ নাই, কোন মতেই ওদের ক্ষমা করা যাবে না।

সারাজীবন এই জানোয়ারগুলা কে ঘৃণা করে যাব।

===========
আমি জানি না

মেঘলা মানুষ এর ছবি

অনেক তথ‌্য দিয়ে, খাটনি করে লিখেছেন। আপনাকে হ্যাটস অফ।

এই কাল্পনিক 'বড় মানুষি' এদের কি অবস্থায় ফেলেছে তা তো দেখাই যাচ্ছে

অনিকেত এর ছবি

অসাধারণ লেখা!!
সরাসরি প্রিয়তে নিয়ে রাখলাম

ফাহিম হাসান এর ছবি

পাকিস্তানীদের মনস্তত্ত্ব নিয়ে আলোচনাটা ভালো লেগেছে। শুধু ঘৃণা জেগে রয়।

আশালতা এর ছবি

যুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ নাকি ছাব্বিশ হাজার মানুষ মারা গেল সেটা বিতর্কের কারণ হওয়াটা আমার বোধগম্য হয়না । অন্যায় ভাবে একজন মানুষও যদি মারা হয় তাহলেও কি তা অন্যায়কারীর জন্য যৌক্তিক হয়ে যায় ? নিহতের সংখ্যা অনেক বড় না হলে কি তা সুবিচার পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেনা ?
এই শয়তানগুলোকে ঘৃণা করি বললেও কেন যেন পুরোটা প্রকাশ করতে পারছিনা মনে হয় । এই লেখাটা আসলেও ছড়িয়ে দেয়া খুব দরকার । সচলকে এরকম পদক্ষেপ নেবার অনুরোধ জানাই ।

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

নীলকান্ত এর ছবি

রাগিব ভাইয়ের সাথে একমত। লেখাটা ইংরেজিতে দরকার। আমাদের দেশের সম্পর্কে অনেক ভুল তথ্য বাইরের দেশের মানুষদের দেওয়া হয়। ইংরেজিতে এ লেখাগুলো না থাক্যা অনে সময় রেফারেন্স হিসেবে দিতে পারি না তাদের।


অলস সময়

আলতাফ হোসেন (অতিথি) এর ছবি

অত্যন্ত মহৎ একটি কাজ। আমি অভিভূত! শুভাশীষ, অভিনন্দন, তোমাকে, আনন্দীকেও। সে-ও কাজ করেছে তোমার সঙ্গে।

কালো কাক এর ছবি

হুমম ....... আর এই পাকিস্তানের ব্যাপারে আমাদের দায়দায়িত্ব আছে
"এখন ডুবতে বসেছে বলে বসে বসে পাকিস্তান নামের দেশটির ডুবে যেতে দেখা মানবিক নয়, ............."

আহ !!! বাঙ্গালীর এখন মানবিক হতে হবে ......

অমিত আহমেদ এর ছবি

খুব মন দিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়লাম। দারুণ!
রাগিব ভাইয়ের সাথে একমত। কষ্ট হবে, তবু আরেকটু খেটে লেখাটি কোনো জার্নালে পাঠিয়ে দিন। ভালো রেফারেন্সের অভাব আমরা সবাই কম-বেশি বোধ করি নির্বোধদের সাথে কথা বলতে গেলে।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

মন্তব্য এবং শেয়ার করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

আপাতত আরো কিছু ব্যাপারে শংকিত হবার মতো ঘটনা আছে। শর্মিলার বইয়ের পক্ষ নিয়ে দা গার্ডিয়ানে লেখা নামিয়েছেন ইয়ান জ্যাক। সেটার পক্ষে বক্তব্য রেখে এসেছেন নয়াদিগন্তের নিয়মিত লেখক জামায়াতপন্থী সিরাজুর রহমান। একাত্তরে তিন লাখ মৃতের অথেনটিক হিসাব তিনিই বঙ্গবন্ধুকে দিয়েছিলেন যা শেখ মুজিব ফেনিয়ে ত্রিশ লক্ষ করে ফেলেছেন- নার্সিসিস্ট তিনলাখবাদী এই সিরাজুর রহমান এই একই ভাঙা রেকর্ড বাজাতে বাজাতে অস্থির হয়ে আছে দীর্ঘদিন। সুযোগ পেয়ে সেটা গার্ডিয়ানেও ফলিয়ে এসেছে।

Apparently he arrived in London under the impression that East Pakistanis had been granted the full regional autonomy for which he had been campaigning. During the day I and others gave him the full picture of the war. I explained that no accurate figure of the casualties was available but our estimate, based on information from various sources, was that up to "three lakh" (300,000) died in the conflict.

To my surprise and horror he told David Frost later that "three millions of my people" were killed by the Pakistanis. Whether he mistranslated "lakh" as "million" or his confused state of mind was responsible I don't know, but many Bangladeshis still believe a figure of three million is unrealistic and incredible.

এই অনেক বাংলাদেশি কারা? আমাদের পরিচিত কেউ কেউ নাতো?

নয়নিকা মুখার্জি অল্পে সেগুলোর উত্তর দিয়েছেন। ডেইলি স্টারে সিরাজুর রহমানের এই ভূমিকার নিন্দা করেছেন সৈয়দ বদরুল আহসান। সেটার প্রতিক্রিয়া সিরাজুর রহমান আবারো একগাদা মিথ্যা ঠেসে একটা লেখা নামিয়েছেন জামায়াতের মুখপাত্র নয়া দিগন্তে

শর্মিলা সুযোগ পেলেই বলে বসেন,

A key question about the "controversy" over Dead Reckoning is why this book is stirring such passions when other works do not. One reason for this is that there are precious few studies of the 1971 war based on dispassionate research. This is the first book-length study that reconstructs the violence of the war at the ground-level, utilising multiple memories from all sides of the conflict.

শর্মিলা, রুবাইয়াত, সিরাজুর রহমান-রা নিজেদের মিথ্যাচারে ঠাসা তথ্য বা গবেষণা নিয়ে নার্সিসিজম করে যাচ্ছেন অনবরত। এগুলোকে প্রতিহত করতে হবে একসাথে মিলে।

--

আপনাদের পরামর্শ মাথায় নিলাম। লেখাটা ইংরেজিতে অনুবাদ করে জার্নালে পাঠানোর চেষ্টা করবো। হাসি

অন্য একটা ব্যাপার- এই লেখা আরেকটু সম্পাদনা করে (বিশেষত ইংরেজি কোটগুলো বাংলায় অনুবাদ করে) বাংলাদেশের প্রধান সারির পত্রিকাগুলোতে পাঠালে পুনর্মিত্রতার এইসব দিনে তারা কি আদৌ ছাপাতে আগ্রহী হবে?

স্বাধীন এর ছবি

আমি আরো একটি ব্যাপার লক্ষ্য করলাম। সিরাজুর রহমান, আসিফ নজরুল কিংবা মাহমুদুর রহমান থেকে শুরু করে সব জামাত কিংবা বিনপি পন্থী লেখকের কলামগুলোকে কিছু নির্দিষ্ট ব্লগে পাওয়া যাবে। আমি কিছু ব্লগের নাম দিলাম (সোনারবাংলাদেশ, কালজয়ী, প্রিয় ব্লগ (গুগুলে সার্চ করলেই পাওয়া যাচ্ছে এদেরকে) ) তারা পত্রিকাগুলো থেকে নিয়মিত ভাবে এই সব লেখকের লেখা আর্কাইভ করে থাকে। এই ব্লগগুলোর উদ্দেশ্য কি বা কারাই এর পেছনে? এই আর্কাইভের পেছনে ভালো সময় লাগে, এবং নিয়মিত পেইড লোকজন না থাকলে এতো লেখা আর্কাইভ করা সম্ভবপর নয়। বুঝা যাচ্ছে তারা বেশ ভালো ভাবেই আগাচ্ছে। সে তুলনায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকেরা কতটুকু সংগঠিত? ICSF এর কাজের জন্য প্রচুর স্বেচ্ছাসেবকের প্রয়োজন হয়, সেটাও নিয়মিত পাওয়া সম্ভব হয় না। অথচ এই ব্লগগুলো কিভাবে নিয়মিত এই আর্কাইভিং করে যাচ্ছে নির্দিষ্ট কিছু লেখকের লেখা, তাও আবার একই লেখা একাধিক ব্লগে। বড়ই চিন্তার বিষয়। আরো মজার ব্যাপার হচ্ছে এই ব্লগগুলো যে লেখাগুলো পত্রিকা হতে আর্কাইভ করছে সেটি উল্লেখ করে না। সোনার বাংলাদেশ বাদে বাকিরা সুত্র উল্লেখ করে না। কলাম লেখকদের ছবি দিয়ে এমন ভাবে লেখাগুলো প্রকাশ করে যেন এই সব লেখকেরা এইসব ব্লগে লিখে। সেই সাথে সাধারণ ব্লগারদের কিছু লেখা থাকে। এভাবে তারা নিজেদেরকে ব্লগ হিসেবে পরিচয় দিয়ে মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে।

lনাবিক এর ছবি

শুভাশীষ ভাইয়া, আমার সাথে একটু যোগাযোগ করবেন? আমি আশা করি লেখাটা কোনো মেইন স্ট্রিমের সাহিত্য পত্রিকায় দেওয়া যায় কিনা সে ব্যবস্থার বন্দোবস্ত করতে পারবো।

MMMMM  এর ছবি

আমি এটা share করছি friend der sathe

dr.shakil এর ছবি

Good to see that now Pakistan is passing how horrible condition US,Natto,Uk everyone is '
physically, financially, &.... they are no longer a country having their own identity let alone dignity. this how they'll have to pay for the past deeds.

দময়ন্তী এর ছবি

চলুক

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

এক চোরের উপর লেখা বেশ মোটাসোটা একটা ইংরেজি বই পড়ছি ইদানিং তাই নিয়মিত সচলে বসা হচ্ছেনা বেশ কিছুদিন ধরে। ভাগ্যিস লেখাটা মিস হয়ে যায়নি। মন্তব্য বিশেষ নেই, শুধু বলছি থামবেন না। এগুলো সবার জানা প্রয়োজন। রাগিবের সাথে সম্পূর্ণ একমত। ইংরেজি অনুবাদ করে এর আন্তর্জাতিক প্রচার প্রয়োজন।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

নীল রোদ্দুর এর ছবি

আপনার মত একজন কলমযোদ্ধাকে মন থেকে শ্রদ্ধা জানাই।

-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়

 জাতিস্মর এর ছবি

অনেক পরিশ্রমী পোস্ট । অনেক কিছুই জানতে পারলাম এবং বুঝলাম যা জানতাম কিন্তু বুঝতাম না । আপনার বিশ্লেষণ ক্ষমতা অসাধারণ !!! আপনার জন্য শুভেচ্ছা রইল ।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

মন্তব্যের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।

ঢাকাইয়্যা যাদুকর () এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ শুভাশীষ'দা, প্রচুর খাটুনি করে লিখেছেন
পাকি গুলার মাফ নাই, অন্তত আমি মাফ করবনা (দ্রোহীর উপরের মন্তব্যের সাথে ১০০% সহমত)

কিন্তু এই নব্য পাকি/ছাগু গুলারে নিয়ে চিন্তাই আছি, এরা খুব দ্রুত আমাদের সমাজের শিরা/উপশিরাতে মিশে যাচ্ছে
তাই রাগিব ভাই-এর মন্তব্যের সাথে ২০০% সহমত - দয়া করে এই কষ্টের ফসলকে বৃথা যেতে দিবেন না

ঢাকাইয়্যা যাদুকর

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।