প্রজন্মের রহস্য অথবা নিছক কাল্পনিক

নৈষাদ এর ছবি
লিখেছেন নৈষাদ (তারিখ: বুধ, ২৮/০৪/২০১০ - ১০:৩৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সোমবার সকালে অফিসে এসে ইন্টারনেটে দেশের একটা পত্রিকার হেডিংগুলি পড়া শুরু করছি সবে, ডেস্কে রাখা ফোনটা বেজে উঠল। মাথা উঁচু করে নাম দেখলাম – সুজান। ঠিক চিনতে পারলাম না। ‘হ্যালো’ বলতেই ওপাশ থেকে রিনরিনে গলা, ‘হাইয়া, আমি সুজান, উইলিয়াম ক্যাম্পবেলের এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি। বিল (উইলিয়াম) আপনার সাথে দেখা করতে চাচ্ছেন। লাঞ্চের আগ কি দেখা করার সময় হবে আপনার?’ ‘নিশ্চয়ই’ - আমার উত্তর, ‘কয়টায় বলুন’। - ‘এই ধরুন, কোয়ার্টার টু ইলেভেন’। - ‘ঠিক আছে’।

কিছুটা অস্বস্তি হল। অপারেশনস এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিঙের এই প্রভাবশালী ডাইরেক্টার উইলিয়াম ক্যাম্পবেল ওবিইর আমার সাথে কী কাজ? এবং এত শর্ট নোটিশে? তবে একধরণের ভাললাগাও কাজ করল।

যুক্তরাজ্যে অবস্থিত আমাদের কোম্পানির এই হেড অফিসে এসেছি মাত্র দুই সপ্তাহের জন্য। ফেব্রুয়ারীর ঠান্ডা এবং বোরিং সন্ধ্যা গুলি ছাড়া বেশ আরামেই আছি। পরশু সন্ধ্যায়, অর্থাৎ শনিবার সন্ধ্যায় অফিসের পার্টিটা খুব উপভোগ করেছি যদিও। এমনিতে এধরণের পার্টিতে আড্ডার ‘কোর গ্রুপে’ ঢোকে আড্ডা চালিয়ে যাওয়া কঠিন, তবে আমার ডিপার্টমেন্ট এ ব্যাপারে আবার সতর্ক। উপভোগ যাতে করতে পারি সে ব্যাপারটাতে খেয়াল রাখে। বিশেষ করে ফিওনা নামের মেয়েটা – পুরোটা সময়ই পাশে ছিল।

জিন এন্ড টনিকের তৃতীয় গ্লাশটা হাতে নিয়ে ললনাদের একটা গ্রুপের সাথে শুধু আড্ডা শুরু করেছি, ফিনান্সের গোমরামূখো মাইক্যাল এসে ঘোষণা দিল – জিন আসলে মেয়েদের ড্রিংক। হাতের গ্লাশ উঁচু করে দেখালো পুরুষরা আসলে ‘হুইস্কি’ খায়। মেজাজটা যখন খারাপ হতে শুরু করেছে তখনই ইংলিশ রবার্ট এসে আরেক থিওরি দিল, ‘একচুয়েলি, ইংলিশ জেন্টলম্যানরা জিন খায়। হুইস্কি হল স্থুল রুচির লোকের পানীয়’।

চতুর্থ গ্লাস শেষ হওয়ার পর হঠাৎ করেই চোখ গেল মেয়েটার দিকে। আমার দিকেই চেয়েছিল, চোখাচোখি হওয়াতে অন্যদিকে চাইল। লম্বা কালো চুল, ভীষণ মায়াময় চেহারা, গভীর কালো বিষন্ন একজোড়া চোখ। প্রথমেই যে কথাটা মনে হল – শি স্ট্যান্ডস আউট।

ফিওনা পরিচয় করিয়ে দিল – ‘জুডিথ ক্যাম্পবেল। উইলিয়াম ক্যাম্পবেলের মেয়ে’। প্রাথমিক কুশলাদি বিনিময়ের পরে যখন কথা বলা শুরু করব, ফিওনা টেনে নিয়ে চলে গেল। ভারত থেকে সেকন্ডমেন্টে আসা সোয়ামি না ফোয়ামিদের গ্রুপটা নাকি আমার সাথে কথা বলতে খুব ইচ্ছুক। কোন মানে হয়?

জিনের প্রভাবই হয়ত, জুডিথের চেহারাটা ভুলতেই পারছিলাম না। খালি সুযোগ খোঁজছিলাম কিভাবে জুডিথের সাথে কথা বলা যায়। একসময় ফিওনা জানতে চাইল, ‘ডু ইউ থিংক শি ইস বিউটিফুল’? বলে কী? কিন্তু সাবধান হতে হল। একজন সুন্দরীর কাছে আরেক সুন্দরীর সুনাম করার বিষয়ে শাস্ত্র কী উপদেশ দিয়েছে? হাতের গ্লাশ দেখিয়ে বললাম, ‘আরে পাঁচ নম্বর চললে পৃথিবীর সব মেয়েকেই সুন্দর লাগে। এমন কী ....’।

কাটায় কাটায় পৌনে এগারোটায় বিলের রুমে ঢুকলাম। কালো এবং ধুসর চুলের চশমা পরা চমৎকার এক ভদ্রলোক। যুক্তরাজ্যে আমার সময় কেমন কাটছে থেকে শুরু করে যখন বাংলাদেশের অপারেশনস এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এর খবর জানতে চাইল তখন সাবধান হলাম। হালকা চালের এসব কথা আসলে একেকটা স্টেটম্যান্ট। উদ্যেশ্য কী ব্যাটার?

কিন্তু দ্রুতই অন্য টপিকে চলে গেল। - ‘জর্জ সেদিন বলছিল তুমি নাকি বড় হয়েছ বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব দিকে, ইন পার্টিক্যুলার চা বাগানে’।
- ‘হ্যা’ – স্বস্তি ফিরে পেলাম।

- ‘বাই এনি চান্স তুমি কি “ফুলটুল্লা” গিয়েছ কখনো’? বুঝলাম ফুলতলা চা বাগানের কথা বলা হচ্ছে, বানানের জন্য ইংরেজি উচ্চারণ টা ফুলটুল্লা হয়ে যাচ্ছে। ‘অবশ্যই। অনেক পুরানো থেচ-রুফের বিরাট এক বাংলো আছে’। ঢাকা থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে চাইলেন।

- ‘মার্চে একবার যেতে চাই। তুমি কিছুটা গাইড করলে খুব খুশি হব’।
- ‘অবশ্যই। ইট উইল মাই প্ল্যাজার টু অ্যাকোম্প্যানি ইউ। কিন্তু ফুলতলা ইন পার্টিক্যুলার..., কোন বিশেষ কারণ’?
- ‘হ্যা, আমার গ্র্যান্ড প্যারেন্টসদের কবর আছে সেখানে, দেখতে যাব’।

আমাকে পরবর্তী প্রশ্নের সুযোগ না দিয়ে যখন প্রায় অশালীন ভাবেই অন্য অফিসিয়্যাল কথায় চলে গেলেন, আমি একটা পরিষ্কার বার্তা পেলাম – এ ব্যাপারে আর কোন কথা না। বিলের সম্বন্ধে যা শুনেছি, এ আচরণ মেলাতে পারলাম না।

ফিরে আসতেই ‘করপোরেট ঔৎসুক্য’ নিয়ে ফিওনা প্রায় ঝাপিয়ে পড়ল – ‘কী বলল বিল’? উদাস মুখে আমি উওর দিলাম, ‘শনিবার রাত থেকে জুডিথের শয়নে স্বপনে নাকি শুধু আমি। বেচারি’।

ঢাকায় ফিরে আসার আগে ফিওনাকে পীড়াপীড়ি করলাম উইলিয়ামের ব্যাক্তিগত ইনফোরমেশন কিছু দেয়া যায় কিনা সেই ব্যাপারে। -‘আরে বাবা পূর্বপুরুষের ইনফোরমেশন চাচ্ছি তো, উত্তরপূরুষের না’। ‘ইটস বিটুইন ইউ আন্ড মি’ এবং কসম-টসম খাওয়ার পর কিছু তথ্য পাওয়া গেল, যদিও পূর্ব পুরুষের ব্যাপারে তেমন কিছুই জানা গেল না। কয়েকটা অপ্রাসঙ্গিক তথ্য পেলাম। বিলের মা অর্থাৎ সোফি ক্যাম্পবেলের বিয়ে পারিবারিক বলয়েই হয়েছিল এবং পরে স্বামীর সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছল। সোফি শেষ দিকে বিষন্নতায় আচ্ছন্ন ছিলেন এবং তিনি শেষ জীবনে আত্মহত্যা করেছিলেন। বিলও নাকি বিষন্নতার জন্য একবার সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে কন্সাল্টেশনের জন্য গেছল। আরেকটা তথ্য জানা গেল বিলের একমাত্র ছোট ভাই গ্রীসে বছরখানেক আগে মারা গেছে। ডিটেইলস জানা যায়নি – তবে সেটা নাকি একটা ‘অ্যাক্সিডেন্ট’।

কোম্পানির ট্রেন্ডের উপর ভিত্তি করে মনে একটা হালকা আশা ছিল, বিল হয়ত নিজের বাসায় একদিন চায়ের দাওয়াত দিবে। চায়ের দাওয়াত কিংবা জুডিথের সাথে দেখা কোনটাই হল না ঢাকায় ফিরে আসার আগে।

যাহোক, ঢাকায় ফিরে এসে কিছুটা দিবা-স্বপ্নও দেখলাম। মিস্টার এবং মিসেস ক্যাম্পবেলকে অফিসের জিপে তুলে দিয়ে আমি জুডিথকে আমার গাড়িতে করে নিয়ে যাব। তারপর সেই স্মরণীয় ঢাকা-ফুলতলা ড্রাইভ...। একদিন রাইফেলস স্কোয়ারে পরিচিত ভিডিওর দোকানে গিয়ে কিছু ইংরেজি গানের ক্যাসেটও কিনলাম গাড়ির জন্য। দোকানি অবশ্য বলেছিল, ‘বস, আপনেতো বাংলা গান শুনেন, হঠাৎ ইংলিশ গান কেন?’ তারপর বিটকেল একটা হাসি দিয়ে ছয়টা রোমান্টিক ইংরেজি গানের ডিভিডি ধরিয়ে দিল। তারপর যেদিন উইলিয়াম ক্যাম্পবেলের ট্র্যাভেল প্ল্যানে দেখলাম তিনি একাই আসছেন বাংলাদেশে, রাগের চোটে অফিস থেকে বাইরে চলে এলাম।

ঢাকা থেকে ফুলতলার যাওয়ার ব্যবস্থাটা আগেই করে রাখা হয়েছিল। ঢাকা থেকে ফুলতলা পর্যন্ত আমি এবং উইলিয়াম যে জার্নিটা করলাম সেটাকে এককথায় প্রকাশ করলে হয় - করূণ। সারাটা পথই অস্বাভাবিক গম্ভীর ছিল উইলিয়াম। যাক, বিকাল নাগাদ আমরা বাগানের সেই পুরানো বাংলোয় ম্যানেজারের আতিথ্য গ্রহণ করলাম। ম্যানেজার আবার পারিবারিক ভাবে পরিচিত এবং একাই থাকেন বাগানে।

সন্ধ্যায় হালকা পানীয়ের আসরে পানীয় স্পর্শ করতে পারলাম না – নট অ্যালাউড। পূর্বপুরুষ নিয়ে কথা বলার ব্যাপারে বিল তেমন ইন্টারেস্ট না বোঝতে পেরে ম্যানেজার চাচা এ ব্যাপারে আর কিছু জানতে চাইলেন না। ন’টার মধ্যে ম্যানেজার চাচা এবং বিল বেডরুমে।

আমি এসে বাংলোর বিশাল বারান্দায় বসলাম। সোডিয়াম লাইটের হলুদাভ আলো, বোগ্যানভিলিয়ার ঝাড়, ফাল্গুনের উথাল-পাতাল হাওয়া এবং দূরে আবছা ভাবে ভেসে আসা ঢোলের আওয়াজের এক অপার্থিব পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। হঠাৎ ভীষণ নিঃসঙ্গ মনে হল নিজেকে। অসহ্য হয়ে একটা সময় বেডরুমে চলে আসলাম। ঘুম আসল না, বই পড়তে চেষ্টা করলাম, মন বসাতে পারলাম না। ছটফট করতে করতে একসময় ঘুমিয়ে পরলাম।

পরদিন ছকে বাধা কর্মকান্ড। প্রথমেই গেলাম বাংলোর পিছনের টিলার উপর ঝোপঝারের ভিতরে ইদানিং পরিস্কার করা বিলের পূর্বপুরুষের কবরে। সিমেন্টে বাধানো পাশাপাশি দুটো কবর। একটাতে ছোট এপিটাফের উপর লেখা ।। জুলিয়েট ক্যাম্পবেল ।।১৮৮৬ – ১৯১১ ।।। অন্যটিতে লেখা - ।।ফিলিপ জে ই ক্যাম্পবেল ।।১৮৬৮ – ১৯১১ ।।।

যেমনটি প্রত্যাশা ছিল, তেমন কিছু না। বেশ সাদামাটা কবর। আমার আরও প্রত্যাশা ছিল কিছু আবেগময় দৃশ্যের অবতারনা হবে। কিছুই হল না। উইলিয়াম শুধু চোখ বন্ধ করে মিনিটখানেক সেখানে দাঁড়িয়ে রইলেন। কোন ছবি না, কোন আবেগ না। কোন ধরণের প্রার্থনা কি? হতে পারে।

আমি আর ম্যানেজার চাচা চুপচাপ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছি। উইলিয়াম প্রার্থনা শেষ করে আমাদের দিকে ফিরলেন। গাড়ির দিকে হাত দেখিয়ে বললেন ‘শ্যাল উই?’। বোঝলাম উনার কাজ শেষ, এবং কিছুটা অবাকই হলাম বলতে হবে। এই এক মিনিটের জন্য এতদূর আসা। তারপর প্ল্যান আনুযায়ী ফ্যাক্টোরি এবং সেকশনে যাওয়ার কথা। আমি ক্ষমা চেয়ে বাংলোয় ফিরে গেলাম। কাল আমাদের ফিরে যাওয়ার কথা।

রাতে বারান্দাতে নিঃসঙ্গ সেই মোহমুগ্ধ পরিবেশ। এগারোটা বাজার ঘন্টা বাজানোর পর ইশারায় চৌকিদারকে ডাকলাম। ভাঙ্গা ভাঙ্গা ভজপুরি হিন্দিতে আশৈশব পরিচিত টোনে যখন এক কাপ চায়ের কথা বললাম, তখন একটা অদৃশ্য বন্ধন তৈরী হয়ে গেল চৌকিদারের সঙ্গে। সে এখন জানে আমি তার ‘ভাষা’ বুঝব।

আস্থে আস্থে বৃদ্ধ চৌকিদারের গল্পের ঝাপি খুলতে শুরু করল, এসে যোগ দিল আশিতিপর বাবুর্চি। জানলাম গত একশ বছর ধরে কবরের সেই মেমসাহেবের (জুলিয়েট) প্রেতাত্মার রাত-বিরাতে তার নিজের মেয়েকে খোঁজে বেড়ানোর কাহিনী। আর সাহেব (ফিলিপ) বন্দুক নিয়ে কাকে যেন খোঁজে।

- ‘মেয়েকে খোঁজে’? বংশানুক্রমিক মুখে মুখে চলা গল্পের সূত্র ধরে জানা গেল জুলিয়েটের মৃত্যুর সময় তার তিন বছরের একটা মেয়ে ছিল। মৃত্যুর কারণও জানা গেল, যদিও কিছুটা অস্পষ্ট। ফিলিপ গুলি করে অথবা গলা টিপে মেরেছিলেন তার স্ত্রী জুলিয়েটকে। তারপর ফিলিপ নিজেই আত্মহত্যা করেন। বোঝা গেল একই সালে মৃত্যুর রহস্য। তবে সংশয় থেকে যায় তথ্যগুলি কতটুকু প্রামাণিক এ নিয়ে।

জানা গেল এ ঘটনার পরপরই তিন বছরের মেয়েকে তাদের কোন আত্মীয় অথবা বন্ধু এসে যুক্তরাজ্যে নিয়ে যায়। তারপর তাদের কেউ আর বাংলাদেশে আসেনি।

গল্পের সূত্র ধরে আরেক বাংগালি চরিত্রের খোঁজ পেলাম – শশধর বাবু। বাগানে অ্যাপ্রেন্টিস হিসাবে যোগদেয়া কিশোর, যিনি নাকি মেমসাহেবের ‘প্রেমিক’ ছিলেন। ফিলিপ স্ত্রীকে হত্যার আগে শশধর বাবুকে বন্দুক নিয়ে খোঁজছিলেন। একটা ত্রিভূজ প্রেমের প্যাটার্ন পাওয়া যাচ্ছে। আরেক বৃটিশ চরিত্রের নামও চলে আসল – কিফোর্ড সাহেব (হয়ত ক্লিফোর্ড)। শশধর বাবু আবার ক্লিফোর্ডকে হত্যারও চেষ্টা করে নাকি একটা সময়। আরেকটি বাংগালি নারী চরিত্রেরও আভাস পাওয়া গেল – মাধবী। কিন্তু ক্লিফোর্ড এবং মাধবীর ভূমিকাটা ঠিক বোঝা গেল না। একবার মাধবীকে শশধর বাবু প্রেমিক হিসাবেও দেখা গেল। আরেকটা বিষয় জানা গেল যে মাধবীর মৃত্যু স্বভাবিক ছিল না এবং মাধবীর মৃত্যু নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে একধরণের অসন্তোষ ছড়িয়ে পরেছিল ম্যানেজমেন্টের বিরুদ্ধে।

বারান্দার বড় ঘড়িতে দুটো বাজার শব্দ-সংকেত শোনার পর চৌকিদার ঘন্টা মারতে গেল। একটা গল্পের খোঁজে আমার উত্তেজনা তখন তুঙ্গে।

ক্লিফোর্ডের কী হয়েছিল জানা গেল না। মাধবীর উত্তরপুরুষদেরও কোন খবর পাওয়া গেল না। শশধর বাবু নাকি হিমালয়ে গিয়ে সাধু হয়ে গেছেন বা এ ধরণের কিছু। তবে জানা গেল শশধর বাবুর পারিবারিক খবর বাগানের অধীর বাবু নাকি জানেন। আমাদের আলোচনা যখন শেষ হল যখন চৌকিদার ভোর চারটার ঘন্টা বাজাতে গেল।

বেশ সকালে ম্যানেজার চাচার কাছে বলে চলে এলাম অধীর বাবুর বাসায়। রাত্রের শোনা তথ্যের থেকে বেশি কিছু জানা গেল না। শুধু জানা গেল শ্রীমঙ্গলের রাজঘাট চা বাগানের হেড ক্লার্কের সাথে শশধর বাবুদের পারিবারিক সম্পর্ক আছে।

ফুলতলা থেকে আমরা সকাল ১১ টার দিকে রওয়ানা দিলাম। আমি রাস্থায় আমার মার কাছে রয়ে গেলাম। ড্রাইভার আমার গাড়ি মার বাসায় রেখে গেছে। পরদিন মার ‘তোদের এখন সময়ের বড়ই অভাব’ জাতীয় অভিযোগ শুনতে শুনতে ১০ টার দিকে একাই ঢাকার দিকে রওয়ানা দিলাম।

পথে সোজা শ্রীমঙ্গল থেকে মাইল দশেক ভিতরে রাজঘাট চা বাগানে চলে এলাম। নিজের পরিচয় দেয়ার পর হেড ক্লার্ক জানাল শশধর রায়ের ভাতিজা (কৌশিক রায়), যিনি আরেকটা বাগান থেকে রিটায়ার্ড করেছে, এখন শ্রীমঙ্গলে নিজের বাড়িতে থাকেন। হেড ক্লার্কের ছেলেকে নিয়ে কৌশিক রায়ের বাসায় চলে আসলাম। আথিতেয়তার মুগ্ধ হলাম। কিন্তু শশধর রায়ের কথা উঠতেই কৌশিক সাহেবকে কিছুটা নিস্পৃহ মনে হল।

যতটুকু জানা গেল শশধর রায়ের সাথে জুলিয়েটের ‘একটা সম্পর্ক’ ছিল। আবার মাধবীর সাথেও হালকা ভাবে একটা সম্পর্কের ব্যাপার উঠে আসল। শশধরের ব্যাপারে বেশি কিছু জানা গেল না। হিমালয়ে সাধু হয়ে চলে গেছে এতটুকুই শুধু জানা গেল।

কিছুটা যেন বিরক্ত কৌশিক রায়। কেন অতীত নিয়ে এই খোঁচাখোঁচি। শেষে পুরানো একটা ট্রাংকের থেকে একটা বাক্স বের হল। পোকায় খাওয়া দুটা চিঠি পাওয়া গেল জুলিয়েটের – প্যাঁচানো হাতে লেখায় আবেগ ভরা চিঠি, যেন কোন কিশোরীর লেখা। মানের দিক থেকে তেমন উন্নত মানের নয় হয়ত কিন্তু আমি চমৎকৃত হলাম জুলিয়েটের সাহস দেখে। হঠাৎ একটা ছবি দেখলাম – বিশ/বাইশ বছরের এক তরুণীর সাদাকালো ছবি - চমকে উঠলাম কি? ভীষণ মিল পেলাম জুডিথের সাথে। আমি জানতাম না সপ্তদশ শতাব্দির শেষের দিকে এমন সুন্দর সাদাকালো ছবি উঠানো যেত। কৌশিক রায় অনিচ্ছার সাথে বললেন এটা সোফি ক্যাম্পবেলের ছবি, জুলিয়েটের একমাত্র কন্যা।

আমার জন্য এটাও একটা চমক। সোফি ক্যাম্পবেলের ছবি এখানে আসল কী করে? কৌশিক ব্যাখ্যা করলেন ষাটের দশকের প্রথম দিকে একটা বাক্স আসে শশধর রায়ের নামে, সোফি ক্যাম্পবেলের কাছে থেকে। বাক্সটা আসে বৃটিশ হাইকমিশনের মাধ্যমে। কিন্তু তখন শশধর অলরেডি গৃহত্যাগ করেছে। আমার মনে হল শশধরের ব্যাপার তার পরিবার একসময় খুব চাপের মধ্যে ছিল।

- ‘কী ছিল এতে’? – অধীর আগ্রহে জানতে চাইলাম।
- ‘একটা সোনার ব্রেসলেট’। দেখতে চাইলে বললেন বিক্রী করে দেয়া হয়েছে অনেক আগেই। এতটুকু জানা গেল সেই ব্রেসলেটে জে, সি অক্ষর গুলো খোদাই করা ছিল (ধরে নিলাম জুলিয়েট ক্যাম্পবেল)।

-‘আর কিছু ছিল কি’?
– ‘হ্যাঁ একটা চিঠি’।

পোকায় খাওয়া দুই পাতার সেই চিঠি পাওয়া গেল। কঠিন এবং হেঁয়ালিভরা ভাষা। এখানে সেখানে পোকায় খাওয়ায় অনেক অর্থ বোঝা যায় না। হেঁয়ালির মাঝে মাঝে কিছু কথার গুরুত্বপূর্ণ কথার বাংলা করলে দাঁড়ায় ...

...হৃদয়ের গহীনে (innermost recesses of heart) থাকা রহস্য (secret) কে সেখানেই থাকতে দিতে হয়...।
… cardinal sin কখনো পিছু ছাড়বে না... না আমাদের না তোমাদের।
… প্রজন্মান্তরে চলতে থাকা অভিশাপের থেকে মুক্তি পেতে... (পাতা ছেড়া)।
… redemption কথাটা তিনবার পেলাম, কিন্তু পাতা ছেড়া থাকায় প্রেক্ষিতটা বোঝা গেল না।

আর কিছু পাওয়া গেল না।

বিকেল তিনটা বেজে গেছে। মা ফোন করে জানতে চাইল আমি কোথায়। আর দেরি না করে ঢাকার দিকে দিলাম।

গাড়ি চালাচ্ছি, কিন্তু মাথায় ঘুরছে পুরো বিষয়টা। একটা সরল ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর চেষ্টা করলাম...

জুলিয়েটের থেকে ফিলিপ প্রায় ১৮ বছরের বড় ছিল। জুলিয়েট যখন মৃত্যু বরণ করেন, তার বয়স ছিল মাত্র পচিশ। স্বামী প্রায়ই বাইরে বাইরে থাকে। প্রায় কিশোরীর মত আবেগে ভরপুর জুলিয়েটের জীবনে শশধর নামের এক কিশোর এসে উপস্থিত হয়। নিঃসঙ্গতা থেকে মুক্তি পান জুলিয়েট।

সোফির রহস্যে ভরা চিঠি এবং জুলিয়েটের উত্তরপুরুষের ‘ডার্ক’ ফিচার সোফি আসলে শশধরেরই সন্তান এমন একটা ধারণাকে সমর্থন করে। হয়ত এই দ্বন্দ্বই জুলিয়েটের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শশধর পালিয়ে গিয়ে বেচে যায়। এও ধরণা করা যায় সোফি ব্যাপারটা জানতে পেরেছিল – হয়ত কোন চিঠি বা অন্য কোন ভাবে।

তাহলে প্রশ্ন থাকে সোফি কেন পিতাকে স্বীকৃতি দিল না। হয়ত বৃটিশ আভিজাত্যের কাছে এই অসম পিতৃত্বের পরিচয় গৌন হয়ে যায়। কিন্তু অন্তর্দ্বন্দ্বই অবশেষে বিষন্নতা আর আত্মহত্যার কারণ। তবে সেই এত কষ্ট করে সেই হেঁয়ালিপূর্ণ চিঠি এবং সোনার ব্রেসলেট পাঠানোর মানে কী? ১৯১১ সালে সোফি যদি ৩ বছরের হয় তবে ষাটের দশকে তার বয়স হয়েছিল পঞ্চাশের উপরে। তবে কি আত্মহত্যার আগে সেই বাক্স পাঠানো হয়েছিল। তখন তো শশধরের বয়স ৭০ এর উপরে হওয়ার কথা।

তবে কি উইলিয়ামও এটা জানে? যার ফলে পূর্বপূরুষের প্রতি একধরণের উদাসীনতা? উইলিয়াম এখানে আসলই বা কেন? এক মিনিট চোখ বন্ধ করে থাকার জন্য? Redemption?

প্রজন্মান্তরে চলতে থাকা অভিশাপের ব্যাপারটাই বা কী? ক্যাম্পবেল পরিবারের প্রত্যেক প্রজন্মেই অপঘাতে মৃত্যু হচ্ছে। redemption এর কথা বলা হচ্ছে। কীভাবে বা কী থেকে দায়মুক্তির কথা বলা হচ্ছে?

এই পাজলে মাধবী কিভাবে ফিট হচ্ছে? যে কার্ডিন্যাল সিনের কথা বলা হচ্ছে, সেটাই বা কী? মাধবীর মৃত্যুই কী সেই পাপ, অথবা জুলিয়েট-শশধরের বিবাহ বহির্ভুত সম্পর্ক? পাজলে ক্লিফোর্ডই বা কীভাবে ফিট হচ্ছে।

শশধরের ব্যাপারে তার পরিবার এত নিষ্পৃহ কেন? পরিবারকে অনেক চাপ সহ্য করতে হয়েছে? অথবা শশধরের 'ম্লেচ্ছ'দের সাথে অনৈতিক সম্পর্কের ব্যাপারটা গুরুত্ব পাচ্ছে?

মাধবীর উত্তরপুরুষের কথা কেউ জানে না কেন? এমনকি কোন গল্পও নেই।

সম্বিৎ ফিরে পেলাম ভৈরব ব্রিজের টোল প্লাজাতে এসে। দু’ঘন্টার মধ্যেই ঢাকায় পৌছে যাব। পিছনে ফেলে এসেছি শৈশবের স্মৃতি আর রহস্য।

সামনে ঢাকা – এত চিৎকার করি, কিন্তু এর মোহ থেকে বের হওয়া সম্ভব না। কাল থেকে আবার সেই একঘেয়ে কর্মজীবন, এখানে রহস্যের কোন স্থান নেই।


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

যদিও অন্যের কষ্টের কথা, তারপরও লেখাটা উপভোগ করলাম। একটা উপন্যাসের বীজ আছে এই পোস্টে।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

তাসনীম এর ছবি

পুরো সহমত।

++++++++++++++
ভাষা হোক উন্মুক্ত

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

নৈষাদ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

মিসলিড করার জন্য দুঃখিত। নিজের কল্পনাশক্তির স্বল্পতার জন্য আমার লেখায় আমি নিজের চেনা পারিপার্শিকতার মধ্যেই ঘুরে বেড়াই। তবে জুলিয়েট-শশধর ব্যাপারটা পুরোই কাল্পনিক।

লেখার সময় আরও কয়েকটা ‘লিড’ নিয়ে চিন্তা করছিলাম। কিন্তু লেখাটা বড় হয়ে যাচ্ছে দেখে বাদ দিয়েছি।

উপন্যাস লেখার ব্যাপারে কখনও চিন্তা করিনি। তবে নিজের ক্ষমতা এবং ধৈর্‌্যের ব্যাপারে সন্দিহান।

লেখার ব্যাপারে অনেক বাধার মধ্যে ইদানিং একটা বড় বাধা হয়ে দাড়াচ্ছে বানানের ব্যাপারে বিভ্রান্তি। ভুল বানান লিখতে ইচ্ছা হয় না। আবার কিছুক্ষণ পর পর আভিধান খুলে খোঁজ করতেও ইচ্ছা হয়না অথবা করার ধৈর্‌্য থাকে না। সচলায়তনে যাঁরা বানানের ব্যাপারে অন্যদের সাহায্য করেন, তাঁরা কোন এক বিচিত্র কারণে আমার ব্যাপারে ‘বৈষম্যমূলক’ আচরণ করেন।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

বাস্তব আসলেই কল্পনার চেয়েও রোমাঞ্চকর অনেক সময়...পড়তে পড়তে প্রায়ই নীলকুঠি সংক্রান্ত অনেকগুলো গল্প/ইতিহাসের কথা মনে হচ্ছিলো...

_________________________________________

সেরিওজা

নৈষাদ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ সুহান। এটা যদিও কল্পনাই... ঃ(

হরফ এর ছবি

বাব্বাঃ বেশ জটিল রহস্য তো। লেখা ভাল লাগলো।

"ছুটলে কথা থামায় কে/আজকে ঠেকায় আমায় কে"

ছুটলে কথা থামায় কে/আজকে ঠেকায় আমায় কে

নৈষাদ এর ছবি

ধন্যবাদ।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- আপনার লেখা নিয়ে দ্বিধায় থাকি। সত্যি না গল্প বুঝে উঠতে পারি না। সত্যি হলে, সবকিছুই কেমন রহস্যজনক, রোমাঞ্চকর।

আপনার চা বাগানের বাংলোর বারান্দার বর্ণনা চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছিলাম। আমার ছোটবেলার শখ অমন একটা বাংলোতে থাকবো। হলো না! মন খারাপ

নৈষাদ'দা, জুলিয়েট ক্যাম্পবেলের এপিটাফের সন-তারিখটা আপনার মনোযোগ দাবী করছে। একটু দেখবেন কি! হাসি
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

নৈষাদ এর ছবি

দ্বিধার কিছু নাই বস। এটা আনকন্ডিশনাল চাপাবাজি।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
শতবর্ষের পুরানো এপিটাফ তো, ১ এর পরের সংখ্যাটা কিছুটা অস্পষ্ট হয়ে গেছল...সন-তারিখটা ঠিক করা হল।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

শ্বাসরুদ্ধকর...
এক দমে পড়ে ফেললাম।
এইটা তো পুরা সিনেমার কাহিনী!
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নৈষাদ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ।
এইটা তো পুরা সিনেমার কাহিনী! - বস, এটা কি কমপ্লিমেন্ট নাকি অন্যকিছু?চোখ টিপি

যুধিষ্ঠির এর ছবি

লেখায় দারুণ একটা সাসপেন্স তৈরী করেছেন। আমিও এক নিশ্বাসে পড়ে ফেললাম।

নৈষাদ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

শরতশিশির এর ছবি

খুব ভাল লাগলো, টান টান লেখা আর রহস্য-রোমাঞ্চ তো আছেই। অনেকবার চা বাগানে গেছি, থেকেছি, তাই আপনার মুগ্ধ করার মত বর্ণনার সাথে নিজের চোখে দেখার দৃশ্যের মিল পেলাম অনেক।

এরকম 'লেজেন্ড', 'মিথ' নিয়ে গল্প পড়তে সবসময় ভাল লাগে। নিশ্চয়ই উইলিয়াম ডালরিম্পল-এর উপন্যাস পড়েছেন ('In Xanadu', 'White Mughals')? আপনার এই লেখাতে সেই 'ব্যাপার' আছে, যেটা হিমু বললো। সময় যদি পান, তো লিখে ফেলুন এরকম আরও গল্প কিম্বা এটাই হয়ে যেতে পারে একটা রহস্যোপোন্যাস। চিন্তা করে দেখতে অনুরোধ করছি। হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

নৈষাদ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
white mughals পড়া হয়েছে , কিন্তু In Xanadu পড়া হয়নি।
ইতিহাসের উপর ভিত্তি করে লেখা গল্প বা উপন্যাস আমারও প্রিয়।

শরতশিশির এর ছবি

আমার মাত্র মনে হলো, চা বাগান নিয়ে গল্প আছে 'ম্যান বুকার প্রাইজ' পাওয়া 'The Inheritance of Loss'-এ, কিরাণ দেসাই-এর। কালিম্পং চা বাগানে গল্পের শুরু। তারপর আরও অন্যান্য থিম উঠে আসে, তবে মূলত dislocation নিয়ে আত্মপরিচয় খুঁজে ফেরার চমৎকার উপন্যাস এটি। শুরু হতে পারে কিন্তু আপনার গল্প ফিনলেইজ বা এরকম বনেদী চাবাগান থেকেই। তাই না?

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

নৈষাদ এর ছবি

Inheritance of Loss - অবশ্যই পড়েছি।

মনে আছে বইটা বুকার পাওয়ার পর একাধিক বার খোঁজ করেছিলাম আজিজ এবং নিউ-মার্কেটে। পাইনি। যখন ভাবছি কীভাবে যোগাড় করা যায়, ঠিক তখনই ট্র্যাফিক-জ্যাম কপি হাতে চলে এল। এখন খুব আলোচিত বইয়ের ট্র্যাফিক-জ্যাম কপি খুব তাড়াতাড়িই ট্র্যাফিক জ্যামে চলে আসে...।

‘Diaspora’ উপর লেখাও আমাকে ভীষণ আকর্ষণ করে।

শরতশিশির এর ছবি

আচ্ছা! বাহ্‌, ঢাকায় আসলে তাইলে আপনার সাথে বই এক্সচেঞ্জ করতে হবে, কী বলেন?

আমার একমাত্র লেখা সচলে মাল্টিকালচার/ ডায়াসপোরা নিয়ে। যেহেতু আপনি পড়েন, সাহস করে তাই বলে ফেললাম। পড়ে জানিয়েন কেমন লাগলো। আই উইল লুক ফরওয়ার্ড টু ইট। হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

নৈষাদ এর ছবি

১। সাদরে গৃহীত হল।
ম্যানেজমেন্টের উপরও বই আছে (যেমন ধরুণ কম্পেনসেশন এন্ড বেনিফিট টাইপ দেঁতো হাসি)

২। জানাব।

শরতশিশির এর ছবি

হুমমমমম! আচ্ছা ঠিক আছে, দেখা যাবে। তার আগে ভাবীকে বলেন যে, ডিসেম্বারে আমাদের রিইউনিয়ান হতে পারে (আমরা সব হলিক্রসের), কেমন?

ওকে! হাসি
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

রাহিন হায়দার এর ছবি

পড়ার মাঝপথে ট্যাগ দেখতে হল আবার।
দারুণ!
________________________________
তবু ধুলোর সাথে মিশে যাওয়া মানা

নৈষাদ এর ছবি

ধন্যবাদ। ট্যাগ কিন্তু মিসলিডিং হতে পারে।;(

কাকুল কায়েশ এর ছবি

এক কথায় - অপূর্ব! অথবা জোশশ! হাততালি

পড়তে পড়তে বারবার কেবল মনে হচ্ছিল, চা-বাগানের কোন এক বাংলোতে রাতে শুয়ে শুয়ে যদি এরকম গল্প/উপন্যাস মলাটবন্দী অবস্থায় পড়তে পারতাম! হাসি

আপনার লেখার ধরণ তো অসাধারণ! এরকম প্লট নিয়ে একটা উপন্যাস লেখার কথাটা কিন্তু ভেবে দেখতে পারেন!

==========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!

==========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!

নৈষাদ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

টিউলিপ এর ছবি

উপন্যাসের দাবি জানিয়ে গেলাম।
___________________

রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি

___________________

রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি

নৈষাদ এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে।

মূলত পাঠক এর ছবি

পড়ে মুগ্ধ হলাম, আবার এট্টু ঘেঁটেও গেলাম, এইটা ফ্যাক্ট না ফিকশন?

নৈষাদ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। ... ফিকশন।

তুলিরেখা এর ছবি

রহস্য-রোমাঞ্চ রোমান্টিকতা বৈধ অবৈধ ভালোবাসা ঘৃণা চাওয়া পাওয়ার দ্বন্দ দেশবিদেশের আলোছায়া --শক্তিশালী উপন্যাসের বীজ আছে এই লেখায়।
মনে পড়ে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের অল্প পরিচিত কিন্তু শক্তিশালী উপন্যাস "উপনিবেশ" এর কথা।
ভেবে দেখবেন নাকি উপন্যাস এর কথা?

-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

নৈষাদ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের উপন্যাস "উপনিবেশ" পড়া হয়নি তো। নামও শুনেছি বলে মনে করতে পারছি না।
পড়তে হবে তো।

অতিথি লেখক এর ছবি

বাহ! চমৎকার। এক নিশ্বাসে পড়লাম।
তার্কিক

নৈষাদ এর ছবি

ধন্যবাদ।

সাফি এর ছবি

অসাধারণ

নৈষাদ এর ছবি

ধন্যবাদ।

দ্রোহী এর ছবি

এটা কি স্মৃতিচারণ নাকি গল্প? যদি গল্প হয় তবে বলবো দুর্দান্ত এক উপন্যাস হতে পারে এই গল্পটা থেকেই?

নৈষাদ এর ছবি

গল্পই। অনেক ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

দ্রোহী এর ছবি

যদি গল্প হয় তাহলে বলবো এটাকে উপন্যাসে রূপ না দিতে পারলে বেশ বড়মাপের অপরাধ করবেন আপনি।

দেঁতো হাসি

নৈষাদ এর ছবি

রূপ দিতে পারার সম্ভাবনা তো দেখছি না বস। ভাবছি একজনকে রিকোয়েস্ট করব উপান্যাসে রূপ দিবার জন্য। কোন কারণে ‘হিট’ হলে ‘প্যাটেন্ট ভাঙার’ দায়ে বিশাল চিল্লাচিল্লি করব, দরকারে মামলা করে দিব। দেঁতো হাসি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

১. লেখাটা যদি এই পর্যায়েই রেখে দিতে চান তাহলে কিছুটা সম্পাদনা করতে হবে। আরেকবার পড়লে আপনিই বুঝতে পারবেন কী করতে হবে।

২. আরো অনেকের মত আমারও অভিমত লেখাটা নিয়ে এখানেই থেমে যাবেন না। বড় গল্প বলুন (টলস্টয়ের হিসাবে), আর উপন্যাসই বলুন (এখনকার হিসাবে) গল্পটার কলেবর বৃদ্ধির সব উপাদান এখানে উপস্থিত আছে। ক্যানভাসটা যথেষ্ট বড় আর চরিত্রের সংখ্যাও কম নয়।

৩. চা-বাগান, রাবার বাগান, জুট মিল, কটন মিল, উপকূলীয় মাছধরা কেন্দ্রীক জীবনগুলোর অভিজ্ঞতা যাদের আছে তারা একটু চেষ্টা করলেই এক একটা বৃহদায়তন উপন্যাস নামিয়ে দিতে পারার কথা। চা-বাগান নিয়ে আপনার যে বিপুল অভিজ্ঞতা আছে বলে আমরা জানি, তাতে আপনার কাছে আমরা অমন একটা দাবী জানাতেই পারি। আপনার ভাষা সাবলীল, বর্ণনা সুন্দর, মানবিক অনুভূতিগুলোর প্রকাশও পরিমিত। So, একবার একটু চেষ্টা করে দেখুন না।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নৈষাদ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
১. পরের বার যখন দেখা হবে আপনার সাথে, অতি অবশ্যই আমি এই ব্যাপারটাতে আপনার ফিডব্যাক চাইব।
২. মনে থাকল....। দেখি...।
৩. আবার অনেক ধন্যবাদ।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

অসাধারণিক্স।

---------------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

নৈষাদ এর ছবি

ধন্যবাদ।

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

অসাধারন!!!

কঙ্কালকে মানুষ বানাবেন, আশাবাদ রইলো হাসি

পড়তে পড়তে সৈয়দ মুজতবা আলী'র একটা গল্প মনে পড়লো এরকম ধাঁচের... নামটা ভুলে গেছি দেঁতো হাসি

নৈষাদ এর ছবি

ধন্যবাদ।
সিমন, আপনি তো জানেন সারা জীবন শুধু মানুষকেই কঙ্কাল বানালাম, এখন উলটো কথা বললে হবে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সৈয়দ মুজতবা আলীর উপন্যাসটার নাম "অবিশ্বাস্য"।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নিবিড় এর ছবি

দারুণ দারুণ চলুক

একটু চেক করে দেখবেন, সম্ভবত এপিটাফে জুলিয়েটের বয়সের জায়গায় ফিলিপের বয়স এবং ফিলিপের বয়সের জায়গায় জুলিয়েটের বয়স বসে গেছে।


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

নৈষাদ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ নিবিড়।
ঠিক করা হল।

স্নিগ্ধা এর ছবি

অনেকের বলা কথাটাই আমিও বলতে বাধ্য হচ্ছি - আপনি উপন্যাস লেখেন একটা, নিদেনপক্ষে একটা বড় গল্প!

ভালো লাগলো, খুব!

নৈষাদ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

অতিথি লেখক এর ছবি

দারুণ লাগলো। বড় করে লেখা হলে পড়া শেষে আরো তৃপ্তি পেতাম।
পড়তে পড়তে দুইবার ট্যাগ দেখলাম সত্যি না গল্প বোঝার জন্য।

মেয়ে

রাজ এর ছবি


আমি কিন্ত সত্যিই ভেবেছিলাম এটি একটি সত্যি ঘটনা! দারুণ প্লট। আপনার চিন্তা শক্তি যথেষ্ট গভীর। ধরে নিচ্ছি আপনার প্রথম লেখা, সেই বিবেচনায় (ভাষা এবং শব্দের ব্যবহার ইত্যাদি বাদে : এটি কিন্ত আমার ব্যক্তিগত অভিমত!) আপনি সফল। তবে লেখার জন্য মনে হয় আরো বেশী সময় দিতে হবে। একটু চটুল ভাষায় বলি (আশা করি ক্ষমা করবেন) : আপনার মশাই হবে!!!

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

এক রকম আলস্যে আপনার লেখাগুলো মন দিয়ে পড়া হয়নি। যদিও প্রায়ই ভাবি, সময় পেলে একটানা পড়ে ফেলবো হাসি

এটা পড়ে মুগ্ধ হলাম...
দারুণ লাগলো গতি এবং বর্ণনা।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি ইদানীং বসে বসে সচলের আর্কাইভ ঘাঁটি। ঘেঁটে ঘেঁটে যেসব সম্পদ পাই প্রায়অই তা আমাকে অবাক করে। আজকেও করেছে। চমৎকার একটা লেখা। আমিও এক নিঃশ্বাসে পড়েছি। আপনার লেখায় আসলেই সাবলীল একটা ভাব আছে। একটা উপন্যাস লিখে ফেলুন।

পলাশ রঞ্জন সান্যাল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।