গত দেড়শ বছরে রংপুরের বন্যপ্রাণী

তারেক অণু এর ছবি
লিখেছেন তারেক অণু (তারিখ: শনি, ০৪/০৬/২০১৬ - ৫:৪৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১৮৭৬ সালে প্রকাশিত W W Hunter-এর A Statistical Account of Bengal এর মালদহ, রংপুর এবং দিনাজপুরের ভলিউম থেকে রংপুরের বন্যপ্রাণী অংশটি অনুবাদ করা হল।

স্তন্যপায়ী প্রাণী-

বাঘ এবং চিতাবাঘের সংখ্যা এখন আগের চেয়ে বেশ বেশি বলেই মনে হয়। বুকানন হ্যামিল্টনের ভাষ্যমতে তিনি যখন এই অঞ্চলে ছিলেন তখন বাঘ এবং চিতাবাঘের দর্শন পাওয়া বেশ বিরল ছিল। বত্রিশহাজারি নামের এক জায়গায় এই প্রাণীদের কারণে প্রতি ২-৩ বছরে অন্তত একজন মানুষ এবং প্রতি বছর ১৫-২০টা গরু মারা যেত। ১৮৭১ সালে এই জেলার কালেক্টর জানিয়েছিলেন যে অত্র অঞ্চলের নানা জায়গায় এদের সংখ্যা ভালই বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্রের চরগুলোতে। বুনোমহিষ এবং হরিণের প্রাচুর্য অনেক বেশি। বুকানন হ্যামিল্টনের মতে স্থানীয় শিকারিরা এই পশুদের ফাঁদ পেতে শিকার করত, এবং কিছু বাচ্চাকে জীবন্ত আটকাতেও সমর্থ হত। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে, যখন জল বেড়ে যাবার কারণে প্রাণীর পাল একটু উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিত। এই সময়ে শিকারিরা নৌকা নিয়ে যেয়ে বর্শা দিয়ে আক্রমণ করে বুড়ো প্রাণীদের হত্যা করত, এবং মাঝে মাঝে শাবকদের জীবন্ত আটকাতে সমর্থ হত। মহিষ শিকার করা হত এর শিং এবং চামড়ার জন্য। শিকারিরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আগাম টাকা নিয়ে রাখত। সাধারণত ২-৩ জন একসাথে, লুকাবার বিন্দুমাত্র চেষ্টা না করে বুনো মহিষের কাছে যেয়ে বিষ মাখা তীর দিয়ে আক্রমণ করত। সেই তীরের সামান্য আঘাতও কয়েক ঘন্টার মধ্যে ভয়াবহ বিপদ হিসেবে দেখা দিত, যে সময়ে নিরাপদ দূরত্বে দাড়িয়ে শিকারিরা অপেক্ষা করত প্রাণীটির মৃত্যুর জন্য।

কালো ভালুকও দেখা যেত, তবে অপেক্ষাকৃত দুর্লভ। যদিও সিনহেশ্বর বনে অনেক ভালুক আছে, এবং তাদের হাতে অতি উৎসাহী বনগামী মানুষ মাঝে মাঝে খুন হয়। তারা আম, কাঁঠাল, কলা, মধু খায়, তবে অন্য শস্য বা গবাদি পশুর ক্ষতি করে না। এই শতাব্দীর শুরুর দিকে রংপুরের পূর্ব এবং উত্তর-পশ্চিম দিকে অনেক হাতি দেখা যেত, এখন মাঝে মাঝে মানব বসতি থেকে দূরে দেখা যায়। তবে এরা শস্যক্ষেত্রের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর ছিল। হামিল্টনের মতে ধান পাকার মৌসুমে হাতির হাত থেকে ফসল রক্ষার জন্য নিয়মিত পাহারার দিতে হত। সাধারণত ১২-১৪ ফিট উপরে মাচা বেধে তাতে অন্তত দুইজন লোক সবসময় থাকত, যাদের অন্যতম কাজ ছিল পালাক্রমে মাচার উপরেই আগুন জ্বালিয়ে রাখা। হাতি, হরিণ বা বন্য শুকর আক্রমণ করলে দুই পাহারাদার মিলে চিৎকার করে, ঢোল বাজিয়ে তাদের তাড়াবার চেষ্টা করত। কিন্তু কখনোই প্রাণীগুলোকে আক্রমণ করত না।

হাতিরা বর্ষাকালে শালবনেই থাকত আর শুকনো মৌসুমে নল-বনে। সাধারণত এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাতায়াতের জন্য হাতিরা নিজেদের জন্য একটি নিয়মিত পথ করে নেয়। অনেকেই সেখানে পোষা মেয়ে-হাতি রেখে বুনোহাতি ধরার চেষ্টা করে। পোষা হাতিটি লম্বা দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়, যে দড়ির এক প্রান্তে আবার একটি ফাঁস থাকে, যা পোষা হাতির মাহুত বুনো হাতিটির গলায় পরিয়ে দেবার চেষ্টা করে। সেটি পরানো হয়ে গেলেই পোষা হাতিটিকে সরিয়ে নেওয়া হয়, আর বুনো হাতিটিকে পায়েও দড়ি বেঁধে গাছের সাথে আটকে রাখা হয় কিছুটা পোষ না মানা পর্যন্ত। এই উপায়ে ধরা হাতিরা সাধারণ ছোট আকারের হয়, উচ্চতা সাড়ে ছয় ফিটের মত, এবং এদের মৃত্যুহার খেদার মাধ্যমে ধরা হাতিদের চেয়ে অনেক বেশি। মেছপাড়া এবং হাওড়াঘাটে ফাঁদে আটকে হাতি ধরা হয়। হাতি চলাচলের পথে গর্ত করে ডালপালা দিয়ে ঢেকে ফাঁদ পাতা হয়। ফাঁদে একটি হাতি পড়া মাত্রই কাছে থাকা মানুষেরা যথাসম্ভব হট্টগোল করে, আলো দেখিয়ে হাতির পালকে অন্যদিকে ভাগিয়ে দেয়, নতুবা তারা আবার সেই আটকে পড়া হাতিকে উদ্ধার করে আনতেও পারে! হাতির পাল দূরে যেতেই ফাঁদে আটক হাতির সাথে দড়ি বেঁধে গর্তের এক দিক কিছুটা ঢালে পরিণত করে গাছে বেঁধে তাকে তুলে আনা হত। এটাও হাতি ধরার জন্য খুবই বাজে একটা পদ্ধতি, প্রায়ই গর্তে পড়া হাতিটি এত বাজে ভাবে আহত হত যে আর বাঁচত না। মাঝে মাঝে দাঁতের জন্যও হাতি শিকার করা হত। বন এবং নলবনে গণ্ডারদের দেখা নিয়মিত মিলে, বিশেষ করে গোলাপাড়া অঞ্চলে। তারা মানুষ বা শস্য কারো জন্যই মোটেও ক্ষতিকর প্রাণী নয়। যদিও অনেকেই তাদের শিং এবং চামড়ার জন্য গণ্ডার শিকার করেই জীবিকা নির্বাহ করে। মুখে প্রচলিত কিছু ঔষধি গুণের জন্য এদের শিং এর ব্যপক চাহিদা। এছাড়া শিং দিয়ে বালা এবং হিন্দু পূজায় ব্যবহার করার জন্য পেয়ালা বানানো হয়। চামড়া দিয়ে ঢাল এবং নিশানা পরীক্ষার মডেল বানানো হয়।

বুনোপ্রাণীদের (মূলত বাঘ এবং চিতাবাঘ) কারণে মানুষ মারা যাবার যে সংখ্যা পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া গেছে তা হল ১৮৬৬-৬৭ সালে ৪৯ জন, ১৮৬৭-৬৮ সালে ৩৫ জন, ১৮৬৮-৬৯ সালে ৩৮ জন। প্রতি বছর গড়ে ৪১ জন। সরকার কতৃক এই ৩ বছরে বুনোপশু মারার জন্য যে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে তা হল- ১৮৬৬-৬৭ সালে ২ পাউন্ড ৮ শিলিং ১টি বাঘ ও ৯টি চিতাবাঘের জন্য।, ১৮৬৭-৬৮ সালে ১৪ পাউন্ড ১৬টি বাঘ এবং ১টি চিতাবাঘের জন্য, এবং ১৮৬৮-৬৯ সালে ১ পাউন্ড ১৫ শিলিং ১টি বাঘ এবং ৫টি চিতাবাঘের জন্য।

অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীরা –

এই জেলার সর্বত্রই বন্য শূকরের দেখা মেলে। তবে সিনহেশ্বর বং এবং পাঙ্গা বনের গুলো বিশেষ ধরনের হিংস্র। এই অঞ্চলের হিন্দু কৃষকেরা জাল পেতে বন্য শূকর ধরে এবং এদের মাংস খায়। কিন্তু এদের যথেচ্ছ শিকার করে নির্মূল করার কোন চেষ্টা চালানো হয় না, কেবল মাঝে মাঝে খাবার জন্যই শিকার করা হয়। নানা জাতের অসংখ্য হরিণ আছে যারা ফসলের জন্য ক্ষতিকর। সবচেয়ে বেশি দেখা যায় Gaoj (Bhalangi) হরিণ, এছাড়াও আছে চিত্রা হরিণ, মায়া হরিণ, পারা হরিণ, মাস্ক ডিয়ার, কমন অ্যান্টিলোপ ইত্যাদি। কোন জাতের মানুষই হরিণ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে না, তাদের চামড়ারও কোন চাহিদা নাই। যদিও অনেক কৃষক অবসর সময়ে হরিণ শিকার করে মাংসের জন্য, যা টাটকা ভাবে খাওয়া হয় কিংবা ধোঁয়ার মাধ্যমে শুঁটকি করে। সাধারণত গর্ত, ফাঁদ বা জাল দিয়ে হরিণ ধরা হয়। অনেক সময় একজন শিকারি মাথায় হারিকেন বনে রাতের বেলা বনে গেলে আলোতে আকৃষ্ট হয়ে হরিণেরা কাছে আসে, এবং তীরের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়।

মেছপাড়া বনে দুই ধরনের এপের দেখা মেলে, স্থানীয়রা দুইটিকেই উল্লুক বলে ডাকে। একটার বর্ণ ধূসর, অন্যটির কুচকুচে কালো, সাথে চওড়া সাদা ভ্রূ। দুই জাতেরই আকৃতি, চিৎকার, ব্যবহার একই ধরনের। (বর্ণনা শুনে মনে হচ্ছে পুরুষ এবং নারী উল্লুকের কথা বলা হয়েছে!)। উল্লুকেরা বেশ বড় দলের থাকে, চিৎকার চেঁচামেচি করলেও বেশ লাজুক স্বভাবের। শুকনো মৌসুমে পানির অভাবের জন্য যখন এরা বনের নিরাপদ আশ্র্য থেকে বেরোয়, তখন দুর্বল ভঙ্গীর হাঁটার জন্য প্রায়ই মানুষের হাতের ধরা পড়ে। প্রাপ্তবয়স্ক উল্লুকেরা ধরা পড়ার পর বেশি দিন বাঁচে না কিন্তু শিশু উল্লুকেরা বেশ পোষ মেনে যায়। মাকড়সা এবং গঙ্গাফড়িং এদের প্রিয় খাবার হলেও এরা বুনো ফল, মাছ, পাতা ইত্যাদি খেয়ে থাকে। বনের খাটো-লেজী বানর থাকে, যাকে স্থানীয়রা মর্কট বলে। লম্বা লেজের হনুমানেরাও এই বনে বিচরণ করে। এই দুই প্রাণীই নিরামিষাশী, এবং বাগান ও ফসলের ক্ষেতের জন্য অতি ক্ষতিকর।

মেছপাড়ার লোকেরা মাঝে মাঝে লজ্জাবতী বানরও ধরে। এই নিশাচর শিকারি প্রাণীটি মূলত ছোট ছোট পাখি খেয়ে থাকে, যা সে রাতের বেলা ধরে। এদের স্বভাবের সাথে বাদুড়ের অনেক মিল, আলোতে চমকে যায়, দিনের বেলা গাছের ডালে ঝুলে বিশ্রাম নেয়, ভারতের বড় বাদুড়দের মতই।

রংপুরের সবখানেই শেয়াল আর খেঁকশেয়াল দেখা যায়, মাঝে মাঝে হায়েনাও। সজারুও আছে, তবে খুব বেশি সংখ্যায় নয়। এদেরও মাংসের জন্য শিকার করা হয়। খরগোশ এখানের সর্বত্র আছে। উদবিড়াল বেশ দেখা যায়, এবং জেলার উত্তরাঞ্চলে উদবিড়ালের চামড়া বিক্রি হয় ভুটানি বাজারের জন্য, তবে এর চামড়া সংগ্রহের চল খুব একটা নেই। ঢাকার কয়েকজন শিকারি এবং ব্রহ্মপুত্র তীরের গানরার জাতির লোকেরা ঢাকায় রপ্তানির জন্য উদবিড়াল মেরে থাকে। সাধারণত মধ্য নভেম্বর থেকে মধ্য ডিসেম্বরের মধ্যে তারা একটি তরুণ উদবিড়ালকে জ্যান্ত ধরে আনে। ঐ দুই মাসই হচ্ছে শিকারের মৌসুম। শিকারিরা প্রথমে একটি জায়গা খুঁজে বের করে যেখানে অনেক উদবিড়াল আছে, তারপর সেখানে তরুণ উদবিড়ালকে সেখানে বাঁশ না নলের সাথে বেঁধে নিজে লুকিয়ে থাকে। তার চিৎকারে শীঘ্রই অন্যান্য ভোঁদড়েরা এগিয়ে আসে, এবং বর্শার আঘাতে মারা যায়। নাক থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত এরা সাড়ে তিন ফিট হয়ে থাকে।

ব্রহ্মপুত্র নদী ভর্তি শুশুক। গাংরার নামের এক জাতের জেলেরা তেলের জন্য শুশুক শিকার করে থাকে। জেলেদের মতে ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১১ এপ্রিলের মধ্যে এরা সন্তান প্রসব করে, প্রতিবার একটি করে। এরা বাচ্চাকে সাধারণত এক মাসের বেশি দুধ খাওয়ায় না, এর মাঝেই শুশুকছানার দাঁত গজিয়ে যায় এবং তারা নিজেদের খাবার জোগাড় করে নিতে পারে। সারা বছরই শুশুক শিকার চলে, কিন্তু মধ্য জানুয়ারি থেকে মধ্য মার্চে মূল শিকারের মৌসুম। দ্রুতগামী নৌকায় বসে জেলেরা সতর্ক দৃষ্টি রাখে যে কোন সময় শুশুক নিঃশ্বাস নেবার জন্য উপরে আসবে, তখনই বিশেষ ধরনের কোঁচ ( যাতে ১ ফুট দীর্ঘ ৩টি লোহার শিক থাকে) নিক্ষেপ করে শুশুক মারা হয়। হাড়-চামড়া ফেলে দেবার পর এর মাংস টুকরো টুকরো করা হয়, তারপর দেড় ঘণ্টা একটি মাটির পাত্রে জ্বাল দেওয়া হয়। এরপরে সেখানে মাংস থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া তেল ছেকে নেওয়া হয়। একটি শুশুক থেকে ১০ থেকে ১৫ সের তেল পাওয়া যায়।

পাখি-

রংপুরের পাখিরা খাদ্য এবং ব্যবসা কোনটারই খুব একটা কাজে আসে না। হরিয়াল, বটেরা, ময়ূর, বাতাই, ডাহর, বগলা, চ্যাগা, হাঁস সবখানেই অনেক বেশি সংখ্যায় পাওয়া যায়। যদিও স্থানীয়দের মাঝে খাদ্য হিসেবে এদের চাহিদা নেই, বরং পাখির মাংস হিসেবে এরা মাঝে মাঝে বক, চড়ুইই খেয়ে থাকে। বনমুরগি সবখানেই আছে, কিন্তু নোংরা ঘেঁটে খায় বলে একে কেউ খেতে চায় না। নুলিয়া এবং তেলিংগা নামের দুই দলিত জাতের মানুষেরা পাখি ধরে পোষ মানিয়ে বিক্রি করে, যাদের অধিকাংশই টিয়া। আবার অনেক সময়ই ধরা পাখি অনেকগুলো তারা খেয়ে ফেলে যেহেতু কেনার মত ক্রেতা পাওয়া যায় না। কৃষকেরা মূলত পাতি-ময়না, টিয়া। এছাড়া ভিমরাজ (বড় র্যাংকেট-ফিঙ্গে) যা বুলফিঞ্চের মত সুরেলা কণ্ঠে আরো জোরালো ভাবে ডাকতে পারে, নিয়মিত বিক্রি হয়। দক্ষিণের মাঝিরা এই পাখিগুলো আগ্রহ নিয়ে কেনে। টিয়া এবং বাবুই কৃষকদের শত্রু, এবং ক্ষেত থেকে তাদের দূরে রাখতে সার্বক্ষণিক পাহারার দরকার হয়। ডোবা এবং পুকুরে বেগুনী-কালেমের ছড়াছড়ি। পাখিটি অনেক শস্য নষ্ট করে। শীতকালে রংপুরে দুই ধরনের সারস সবখানে দেখা যায়, পাতি-সারস এবং দেশি-সারস। এরা প্রত্যেকেই ধান খায়। শীতের শুরুতে উত্তর থেকে পাখিগুলো আসে, আবার তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করলে যাত্রা শুরু করে। শুষ্ক মৌসুমে ব্রহ্মপুত্রের চরে গগনবেড়দের খুব দেখা যায়। বর্ষাকালে এরা গারো পাহাড়ে চলে যায়, যা তাদের প্রজনন কেন্দ্র।

সরীসৃপ-

রংপুরে নানা ধরনের সরীসৃপ দেখা যায়। ব্রহ্মপুত্রের কিনারে বসবাসকারী মানুষদের কাছে কাছিম এবং কচ্ছপ খাবারের অন্যতম অংশ, কিন্তু জেলার পশ্চিমাঞ্চলে আবার খাদ্য হিসেবে এর কদর নেই। “গাঙরা” নামে ব্রহ্মপুত্রের এক মানব সম্প্রদায়ের কচ্ছপ ধরা নিয়মিত পেশা, যদিও সকল জেলেই এদের ধরে থাকে। গাঙরারা কোঁচ দিয়েই কচ্ছপ শিকার করে, তারপর পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে মাংস বিক্রি করে দেয় যারা সারা দেশে এর সরবরাহ করে, বিশেষ করে গারোদের কাছে যারা কচ্ছপের মাংসের ভীষণ ভক্ত। নদীর কাছিম নানা ধরনের হয়, সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ছিম না পানিমেছ কাছিম যেগুলো ৫-৬ ফুট লম্বা এবং যাদের খোলা ১৪ ইঞ্চি পুরু হয়। এরা মধ্য আগস্ট থেকে মধ্য সেপ্টেম্বরের মধ্যে ডিম পাড়ে। অনেক সময়ই জেলেরা একটি গর্ত থেকে ২০০টি ডিমও পায়।। আরেক কাছিমের নাম ডানাইল, যে লম্বায় ৫ ফুট এবং পুরুত্বে ২ ফুট হয়! এটি অপেক্ষাকৃত বিরল এবং ছিম কাছিমের চেয়ে সুস্বাদু বলা হয়। আর জাট কাছিম সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, যদিও খেতে ছিম কাছিমের চেয়ে ভাল কিন্তু এরা ১৮ ইঞ্চির চেয়ে লম্বা হয় না। পিঠে চারটা গোলাকার হলুদ বৃত্ত থেকে একে সহজেই আলাদা করা যায়। উল্লেখিত সব কাছিমই নদীতে থাকে, কিন্তু স্থলের কচ্ছপদের মত তীরে বা বাদাতে খুব একটা দেখা যায় না। ডুরা আরেক ধরনের নদীর কাছিম, কিন্তু এই নামে স্থল কচ্ছপও আছে! এটি ২ ফুট লম্বা হয়ে থাকে, এবং এর মাংসের স্বাদ উপরের সবগুলোর চেয়ে উত্তম বলে দাবী করা হয়। যে ৬ ধরনের স্থল কচ্ছপ মূলত দেখা যায় তারা হচ্ছে- ৬ ইঞ্চি লম্বা সালিডুরা, কুজি কাটুয়া, পাংচুতি, খাগড়াকাটা এবং কড়ি কাইট্টা। সবাই এক ফুট মতো লম্বা হয়। স্থল কচ্ছপদের কালে ভদ্রে নদীতে দেখা গেলেও মূলত বাদায় দেখা যায়, এবং এরা মাটির নিচে গর্ত করে। (কাছিমের নামগুলো যেভাবে মূল বইতে আছে সেইভাবেই দেওয়া হল।)

ব্রহ্মপুত্রে ২ ধরনের কুমির দেখা যায়, মেছোকুমির বা ঘড়িয়াল এবং স্বাদু পানির কুমির। গাংরারা দুই কুমিরকেই শিকার করে থাকে। জেলেদের সাক্ষ্যে জানা গেছে তাদের শিকার করা ১৫ ফিট লম্বা কুমিরের ওজন ১৮ ফিট লম্বা ঘড়িয়ালের ওজনের চেয়ে ঢের বেশি। পানিতে কুমির মানুষ এবং গবাদিপশু দুইকেই আক্রমণ করলেও সে শান্ত, লাজুক প্রাণী। এমনিতেই চরে শুয়ে থাকা অবস্থায় তার কাছে গেলে সে বিপুল বিক্রমে জলের ভিতরে পালিয়ে যায়। এর জলাভূমি, পুকুর সবকিছুতেই থাকে। একমাত্র খরার সময় নদীতে চলে আসে। এরা নদীর তীরে গর্ত খুড়ে সেখানেই বাস করে। ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ১০ মার্চের মধ্যে এরা সেই গর্তে ২০ – ৩০টি ডিম দেয়। সাধারণত ১ মাস বয়স পর্যন্ত এরা বাচ্চার লালনপালন করে, মাছ ধরে খাওয়ায়, তারপর ছানারা নিজেই নিজের দেখভাল করতে পারে।

ঘড়িয়াল কোন সময় বদ্ধ পানি বা গর্তে থাকে না। এটা মানুষ বা গবাদিপশু কাউকেই আক্রমণ করে না এবং শুধু মাছ খেয়েই বেঁচে থাকে। কুমিরের মতই এই মৌসুমে এরা ডিম পাড়ে। নদীর কিনারে খাদ করে ১০-১২টি ডিমে দিয়ে বালি দিয়ে ঢেকে রাখে। স্ত্রী ঘড়িয়াল সারাদিন ডিমগুলোকে দেখে দেখে রাখে, রাতে নদীতে যায়। মধ্য মে থেকে মধ্য জুনের মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বেরোয়। এরপর মা তাদের ১ মাস লালন করে। ঘড়িয়ালের ডিমকে স্মল পক্স এবং বসন্ত রোগের প্রতিষেধক হিসেবে মনে করা হয়!

জেলেরা যখন যে কোন ধরনের কুমির দেখে, তারা বিশেষ ধরনের কোঁচ দিয়ে শিকারের চেষ্টা করে। বিশেষ ধরনের হালকা ভেলায় কাঠের টুকরোর সাথে দড়ি দিয়ে ধাতব অস্ত্রটি বাধা থাকে। গাঙরারা ১৫-২০ গজ দূরত্বে অতি নিখুঁত ভাবে কোঁচ ছুড়তে পারে। কোঁচ কুমিরের দেহে গেঁথে যাবার পর সে ডুব দিলেও কাঠ এবং দড়ির সাহায্যে বোঝা যায় প্রাণীটি কোথায় আছে। সম্ভব হলে দ্রুতগতির হাল্ক নৌকা নিয়ে কাছে যেয়ে সরীসৃপটিকে তারা আরেকবার আঘাত করে এবং তীরে টেনে তোলে। এদের দেহ থেকে পাওয়া তেল পোড়া ত্বকের উপশমের জন্য ব্যবহার করা হয়, কিন্তু ঘড়িয়ালের তেলের দাম কুমিরের তেলের চেয়ে ৩-৫ গুণ বেশি।

দুই ধরনের গুইসাপের দেখা মিলে এখানে, কিন্তু অপেক্ষাকৃত বিরল।

এখানে বিশাল সব সাপ পাওয়া যায়, বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে সবকিছু জলের নিচে চলে গেলে ভেসে থাকা অল্প কয়েকটা দ্বীপে এবং মানুষের বাড়িতে আশ্রয় নিতে তারা চলে আসে, অনেক সময়ই সাপের কামড়ে মানুষের মৃত্যুও হয়। বিগত ৩ বছরে রংপুরে সাপের কামড়ে মারা যাওয়া মানুষের সংখযা ১৮৬৬-৬৭সালে ৫৭ জন, ১৮৬৭-৬৮ সালে ৫৫ জন এবং ১৮৬৮-৬৯ সালে ৯২ জন। প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৬৮ জন। সাপ মারার জন্য সরকার থেকে কোন পুরষ্কারের ঘোষণা নেই।

মাছ- এই জেলায় অন্তত ১২৬ ধরনের মাছ পাওয়া যায়। (এর পরে তাদের বিশাল তালিকা আছে সেটা আর দিলাম না। )

(আমরা চাই এভাবেই দেশের প্রতিটি জনপদের হারিয়ে যাওয়া কাহিনী উঠে আসুক নতুন প্রজন্মের কাছে। আপনি কি দায়িত্ব নেবেন যে অঞ্চলে আছেন অন্তত সেখানের গল্প শোনানোর? তাহলে খুব দ্রুত আমাদের অজানা অতীত জানা হয়ে উঠবে শুধু ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে নয়, আমাদের প্রজন্মের কাছেও!!!)

অন্য জেলার বুনোপ্রাণীর ইতিহাস-

ঢাকা

রাজশাহী

খুলনা

ময়মনসিংহ

বরিশাল


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

গুল্লি

তারেক অণু এর ছবি

আর গুল্লি না ! এক কালে যা চালানো হইছে!

সোহেল ইমাম এর ছবি

কত প্রজাতির প্রাণীইনা ছিল আমাদের জেলা গুলোয় এখন এসব রূপকথার গল্পের মত মনে হয়। আমরা যে ক’টা পশুপাখি আমাদের ছেলেবেলায় দেখেছি তাও হয়তো পরবর্তী প্রজন্মের কাছে রূপকথার মত শোনাবে। মন খারাপ

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

তারেক অণু এর ছবি

অবস্থা ঐ রকমই, কিন্তু হাল ছাড়া যাবে না

শেহাব এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

তারেক অণু এর ছবি

শুভেচ্ছা

হাসিব এর ছবি
  • বত্রিশহাজারি, সিনহেশ্বর বনে - এই নামগুলো কি এখনো আছে?
  • বইটা ১৮৭৬ সালের আগে লেখা হয়েছে। অর্থাৎ ব্রহ্মপুত্র তখনও এখন আমরা যেটাকে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র বলি সেটা ছিল। ১৮৮৭ সালের ভূমিকম্পের পরে গতিপথ পরিবর্তন হয়ে আরও পশ্চিমে সরে আসে। আমার প্রশ্ন হল ভূমিকম্পের আগে রংপুরের আলাপে ব্রহ্মপুত্র আসলে তখন রংপুর জেলাকে বহু বড় হতে হয়। কথা হল সেই সময়টাতে রংপুরের সীমানা কতো বড় ছিল?
অতিথি লেখক এর ছবি

বত্রিশহাজারী নেই, সিংহেশ্বর আছে। বত্রিশহাজারী নামে খুঁজলে এখন কিছুই পাবেন না, কারণ নামটা বানানো, চাপিয়ে দেয়া। বত্রিশহাজারীর ইতিহাস ঘাঁটলে অষ্টাদশ শতকের দ্বিতীয় ভাগে রংপুরের আকার সম্পর্কে আপনার সংশয়ের উত্তর পেয়ে যাবেন।

হিমালয়ের দক্ষিণ পাদদেশ হচ্ছে তরাই। বৃহত্তর তরাইয়ের পূর্বাঞ্চলের বন হচ্ছে ডুয়ার্স, আর ডুয়ার্সের পশ্চিমের বন হচ্ছে বৈকণ্ঠপুর। এর সীমানা পূর্বে তিস্তা নদী, পশ্চিমে মহানন্দা নদী। অঞ্চলটা আসলে কোচ বেহারে রাজ্যের (কামতাপুর)। কোচ রাজাদের অধীনে থেকে বৈকণ্ঠপুর শাসন করতো রাইকাত পরিবার। তাদের শাসন চলেছে ১৫২৩ থেকে ১৭৭১ পর্যন্ত। প্রথমে রাজধানী ছিল শিলিগুড়ি। ১৬৮০ সালে ভুটিয়া ইনভেশনের সময় রাইকাতরা প্রথমে কামতাপুরের পুরোটা নিজেদের অধীনে আনার চেষ্টা করে। পরে রংপুরের (এখনকার দিনাজপুর) ঘোড়াঘাটের ফৌজদারের কাছে নতি স্বীকার করে উচ্চাশা ত্যাগ করে। ১৭২০ সালে তারা রাজধানী জলপাইগুড়িতে সরিয়ে আনে। এরপর তাদের ওপর বাংলার নবাবের রংপুরের ফৌজদারের অবিরাম চাপ চলতে থাকে। কিন্তু রাইকাতরা হার মানে না। কিন্তু ১৭৫৭ সালে ব্রিটিশদের জয়ের পর আর স্বাধীনতা ধরে রাখা সম্ভব হয় না। ১৭৬৫ সালে একে সাময়িকভাবে রংপুরের অধীন করা হয়। ১৭৭১ সালে একে পুরোপুরি অধিগ্রহন করা হয়। রাইকাতরা ব্রিটিশদের অধীনে জমিদার হয়ে পড়ে। তাদের দেশের নাম হয়ে যায় বত্রিশহাজারী, কারণ কেন্দ্রের কাছে এর বার্ষিক রাজস্ব জমা নির্ধারণ করা হয় ৩২,০০০ রূপী। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে ঊনবিংশ শতকে বৈকণ্ঠপুর বা বত্রিশহাজারী বন উত্তরে হিমালয় থেকে দক্ষিণে রংপুর-রাজশাহী-বগুড়া-পাবনার লোকালয় (মানে ডাউন তিস্তা), পূর্বে ডুয়ার্স থেকে পশ্চিমে মহানন্দা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

সিংহেশ্বর রংপুরের খুব কাছে নয়। কারণ এর অবস্থান তৎকালীন ভাগলপুরে। এখন নানা ভাগজোক হয়ে বিহারের মাধিপুরা জেলায় পড়েছে।

১৮৫৮ সালের বেঙ্গলের যে ম্যাপ পাওয়া যায় তাতে দেখা যায় রংপুরের সাইজ বিশেষ একটা বড় না। তিস্তার পূর্ব/উত্তর পাড় ধুব্‌রি এবং পশ্চিম/দক্ষিণ পাড় রংপুর। রংপুরের দক্ষিণে বগুড়া, পশ্চিমে মালদহ, দিনাজপুর; উত্তরে নবাবগঞ্জ (এই জায়গাটা বোধকরি শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি-আলীপুরদুয়ার)।

তারেক অণু এর ছবি

০ সেই দায়িত্ব স্থানীয় বন্ধুদের দিয়েছি আপাতত।
০ অবশ্যই অনেক বড় ছিল, এইখানে আছে ৩৪৭৬ বর্গ মাইল! কিন্তু কোন কোন এলাকা নিয়ে এইটা জানতে হলে ঘাটাঘাটি করতে হবে।

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

এই অংশে নাম না জানা অতিথিকে তাঁর সংযোজনের জন্য ধন্যবাদ।
না, রংপুরের আয়তন তখন খুব একটা বড় ছিল না, যেমনটা অনুমিত হয়। ব্রিটিশদের অধিকারের সময় বৃহত্তর রংপুর জেলা বলে কিছু ছিল না। এর কিছু অংশ ছিল দিনাজপুর রাজার অধীনে, বেশ কিছুটা অংশ ঘোড়াঘাট সরকারের অধীনে, কুড়িগ্রাম মহকুমা অঞ্চলটি ছিল কামরূপ(রাঙ্গামাটি সরকার) রাজ্যের অন্তর্গত, নীলফামারী আর লালমনিরহাটের প্রায় সমূদয় অংশ ছিল কোচবিহার রাজ্যের অধীনে। ব্রহ্মপুত্রের খাত পরিবর্তনও পরবর্তীকালে গঠিত রংপুর জেলার সীমানায় তেমন কোন প্রভাব ফেলে নি, কারন এটা ঘটেছে আরও ভাটিতে। ব্রিটিশ দখলদারিত্বের প্রথম দিকেই রংপুর ও দিনাজপুর জেলা গঠন করা হয়। রংপুরের জন্য কুড়িগ্রাম, নীলফামারী আর লালমনিরহাট ছাড়াও ঘোড়াঘাট সরকার থেকে জায়গা নিয়ে রংপুর সদর ও গাইবান্ধা অঞ্চল যুক্ত করা হয়। সুতরাং সৃষ্টির পর থেকে ১৯৮৪ সালে এরশাদের আমলে মহকুমার বিলোপ হওয়া পর্যন্ত রংপুর জেলার বিশেষ হ্রাসবৃদ্ধি ঘটে নি।
ব্রহ্মপুত্রের খাত পরিবর্তনের কারনে বড় একটি নদী যমুনার উদ্ভব ঘটেছে। যমুনা আগেও ছিল ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদী হিসেবে তুলনামুলকভাবে একটি ছোট নদী রুপে। পরে সেই ছোট্ট শাখানদীটিই মূল খাত হয়ে গেলে এর দু-পাড়ের গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও জামালপুর মহকুমায় কিছু সংযোজন বিয়োজন করে সমন্বয় সাধন করা হয়। যেমন সিরাজগঞ্জের বেশ কিছুটা অঞ্চল আগে ছিল ময়মনসিংহ জেলার অধীন, আর কুষ্টিয়া কিছুটা অঞ্চল ছিল পাবনা জেলার অধীন। নদীখাতের পরিবর্তনের ফলশ্রুতিতে সিরাজগঞ্জকে পাবনা জেলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

এইটাতো রূপকথার মতো মনে হচ্ছে। তার মানে বঙ্কিমচন্দ্র যেইকালে এই এলাকায় লাঠি ঘুরাইতেন তখন গণ্ডারেরাও শিং বাগায়া চলাফেরা করত

তারেক অণু এর ছবি

হ। কয়দিন পর দেশে বাঘ আছিল এইটাও রূপকথা মনে হবে।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

অসুবিধা নাই; মুস্তাফিজ ভাইর ছবি দিয়া কয়েকশ বছর কাটায়া দেয়া যাবে

জিপসি এর ছবি

সিরিজটা ভালো হচ্ছে, চলুক।
ছোট কচ্ছপকে বরিশাল এলাকাতেও কাইট্টা নামে ডাকে আজও।

------------------------------------------------------------------------------
জিপসিরা ঘর বাঁধে না,
ভালবাসে নীল আকাশ

মাহবুব লীলেন এর ছবি

সিলেটে কয়- কাটুয়া

অতিথি লেখক এর ছবি

তখন কত সুন্দর বন ছিল! আর এখন শুধু বনের ছবি আর স্মৃতিটুকু আছে।

সাইয়িদ রফিকুল হক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।