স্মৃতির শহর -১: জন্মেই দেখি ক্ষুব্ধ স্বদেশভূমি

তাসনীম এর ছবি
লিখেছেন তাসনীম (তারিখ: মঙ্গল, ০৯/০২/২০১০ - ১:০৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পাখির ডানার শব্দে সচকিত
সকালবেলার মতো আমার শৈশব
প্রত্যাবর্তনের দিকে ফেরাবে না মুখ
কস্মিনকালেও।

(দশটাকার নোট এবং শৈশব; শামসুর রাহমান)

আমাকে যদি টাইম মেশিন দিত কেউ, তাহলে আমি ঠিক ঠিক চলে যেতাম শৈশবে, যেখানে এখনো একজন আইসক্রিমওয়ালা দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু সেই কপাল কি আমার আছে, যদিও ঘুমে জাগরনে আমার সব ভ্রমণ শৈশবের অভিমুখে। এই সিরিজটা আমার শৈশব নিয়ে। সচলের বলতে গেলে তেমন কারোর সাথেই ব্যক্তিগত পরিচয় নেই। আমার স্মৃতিকাহিনী পড়ে কার কি লাভ হবে বলতে পারছি না। তবে শৈশব এবং কৈশোরকে ধরতে পারার মাঝে এক ধরনের ব্যক্তিগত সুখ আছে, যতই দূরে যাই ছেলেবেলা থেকে ততই যেন মন ছুঁতে চায় তাকে। স্মৃতিপীড়ায় আনন্দ আছে বেশ, যদি সেই আনন্দের কিছুটাও আপনাদের দিতে পারি তবেই আমি খুশি। তবে আপনাদের বিরক্তি উৎপাদন হলে জানাবেন; থেমে যাব অবশ্যই।

স্বাধীনতার আগে আমার জন্ম। সুতরাং আমার জীবনের প্রথম কিছু অংশ আমি নিশ্চয় পাকিস্তানি (এখন বলি পাক্কু) ছিলাম। একটু বড় হওয়ার পর এটা নিয়ে আমার কিছুটা ক্ষোভ ছিল, আরেকটু পরে জন্মালেইতো আমি বাংলাদেশী হয়ে জন্মাতে পারতাম।

আমার জীবনের প্রথম কয়েক বছর কেটেছে ধানমন্ডির এডুকেশন সেন্টারের (বর্তমানে নায়েম নামে পরিচিত) কলোনীতে। জায়গাটা বিশাল, পেছনে বিডিআর, সামনে গভঃ ল্যাবরেটরি স্কুল এবং ঢাকা কলেজ। শহরের ঠিক মাঝখানে হলেও জায়গটাতে একটা মফস্বল মফস্বল গন্ধ ছিল। আমরা "সেন্টার" বলতাম জায়গাটাকে। এখনও পুরানো লোকজন মাঝে মাঝে সেন্টার বলে ফেলে, যদিও নাম বদলে গেছে বহু বছর আগে।

১৯৭১ এ জায়গাটা ছিল পাকিস্তান আর্মির সুরক্ষিত এলাকা, অনেকে পালালেও আমাদের সেই উপায় ছিল না তাই অবরুদ্ধ জীবন যাপন চলত আমাদের পরিবারের। যুদ্ধের শেষদিকে শুরু হয় ভারতীয় বাহিনী এয়ার রেইড, অন্যতম লক্ষ্যবস্তু ছিল বিডিআর যার অবস্থান আমাদের বাসার ঠিক পিছনে। সুতরাং যেকন মুহুর্তে লক্ষ্যভ্রষ্ট বোমার আঘাতের ভয়। আম্মাকে পরে জিজ্ঞেস করেছিলাম কতখানি ভয়ে ছিলেন তাঁরা, উত্তর ছিল প্রথমে ভয় থাকলে তা পরে কেটে যায়...রাতে মুক্তিবাহিনীর হামলা আর ভারতীয় বোমার আওয়াজ বেশ মধুরই নাকি লাগত।

আমার তিন বছর বয়েসে আমার পরিবার সেন্টার ছেড়ে তেঁজগায়ে আমাদের নিজেদের বাসায় এসে উঠে। এর প্রায় আরো তিন বছর পরে আমি গভঃ ল্যাবরেটরি স্কুলে ভর্তি হই এবং সেখান থেকে ঢাকা কলেজ, সুতরাং সেন্টার ছেড়ে গেলেও ওই এলাকায় আমার আরো বারো বছর যাতায়াত ছিল। আমার শৈশব এবং কৈশোরের অনেক খানি জুড়েই আছে তেঁজগা আর ঢাকা কলেজ এলাকার স্মৃতি।

স্মৃতির রঙ্গিন কাচের ভেতর দিয়ে তাকালে সবকিছুই মনোরম লাগে -- আমার কথা না, বুদ্ধদেব বসু লিখেছিলেন পুরানো পল্টন নিয়ে। সুতরাং শৈশব, কৈশোর এবং যৌবনের ঢাকা যে বর্নিল লাগবে তা আর আশ্চর্য কি। কিন্তু এটাও সত্য যে ঢাকা শহরটা তখনও এরকম অচেনা হয়ে যায় নি। আজকের ঢাকাকে দেখলে মনে হয় শহরটা ধুঁকছে, কিন্তু সত্তর দশক এবং আশির দশকের ঢাকা মনে হয় আসলেই তিলোত্তমা ছিল আজকের এই আধপোড়া শহরটার তুলনায়।

আমার শৈশবের প্রথম স্মৃতি হোল আমার মা...আম্মা যেন কাকে বলছিলেন আমার সম্বন্ধে..."ওর বয়স তো তিন পুরলো"। সময় হিসেব করে দেখলে সালটা হবে ১৯৭৩ এর শেষ দিক। দেশের অবস্থা তখন বেগতিক, দুর্ভিক্ষ শুরু হয় হয়, রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগ সরকার বেশ বিপর্যস্ত। আমার অবশ্য তখন কোন কিছুই বোঝার কথা নয়। কিন্তু গাড়ি থামিয়ে রক্ষীবাহিনীর তল্লাশী, তেঁজগা স্টেশন (আমাদের বাড়ি থেকে মাত্র ১০০ গজ দূরে) থেকে সারি সারি দুর্ভিক্ষ আক্রান্ত মানুষের মিছিল...ভাত বড় দুর্লভ তখন...তারা একটু ভাতের ফ্যান পেলেই খুশি...এসব এখনো একটু একটু মনে পড়ে যায়। কার্যকর কোন বিরোধী দল না থাকায় জাসদ তখন ওই ভূমিকায়, মুজিব আমলের শেষদিকে বুয়েটের কোন একজন জুনিয়ার শিক্ষক (নিখিল?) বোমা বানাতে গিয়ে মারা পড়েন এটাও ঝাপসা মনে আছে।

ছাড়া ছাড়া ভাবে চলচ্চিত্রের মত পনেরই অগাস্টের ঘটনা মনে আছে, বাসার সবার হাবভাব থেকে বোঝা যাচ্ছিল যে সাঙ্ঘাতিক কিছু হয়েছে। আমি স্কুলে ভর্তির কয়েকমাস আগে জিয়াউর রহমান জাসদ সমর্থিত সিপাহী জনতার বিপ্লবে ক্ষমতায় এসেছেন, এবং কয়েদ করেছেন সতত বিপ্লবী কর্ণেল তাহেরকে। এগুলো সবই পড়া ইতিহাস কিন্তু মাঝে মাঝে স্মৃতিতে "Sneak Preview" এর মত কিছু কিছু ছবি দেখি।

তবে এটা বেশ মনে আছে জিয়া আসার পর দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বেশ উন্নতি হয়, আওয়ামি লীগকে মোকাবিলা করতে জিয়া আস্তাকুঁড় থেকে উঠিয়ে প্রতিষ্ঠিত করলেন চিহ্নিত রাজাকারদের। পরবর্তীতে সংবিধানের মুসলমানী করিয়ে যে মৌলবাদের উত্থান হোল, তা থেকে আজো নিস্তার মেলেনি আমাদের। বংগবন্ধু যদি কঠিন হাতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতেন এবং নিজ দলের লুটেরা চাটুকারদের নিয়ন্ত্রন করতেন তবে বোধহয় অন্যরকম হোত আজকের বাংলাদেশ, হয়ত ভারতের সাথে পাল্লা দিতাম আমরা টেকনোলজিতে। ১৯৭১ এর পর আমরা সামনে হাটিনি বেশি, আমদের হণ্টন বোধহয় বেশি হয়েছে পশ্চাতে।

১৯৭৭ এর অক্টোবরে জাপান এয়ারলাইন্সের একটা বিমান ছিনতাই করে জাপানী রেড আর্মি। বিমানটা পুরান এয়ারপোর্টের পাশে লালদিঘীর মাঠ বলে একটা জায়াগার রাখা ছিল। আমাদের বাসা থেকে হাটা দূরত্বে জায়গাটা, আমরা সদল বদলে গিয়ে দেখে আসলাম দূর থেকে, ফার্মগেটের ব্রীজ থেকেও প্লেনটার লেজ দেখা যেত। আমরা সবাই উত্তেজিত। বিটিভি ছিনতাইয়ের ঘটনা "লাইভ" কভার করছিল, সম্ভবত সেটাই বিটিভির প্রথম লাইভ কভারেজ। স্ক্রিনের কোনায় লেখা "লাইভ", আমাদের ভাড়াটিয়া মতিউর চাচা বোঝালেন "লাইভ" মানে বিমানের সব যাত্রী জীবিত আছেন। জিয়াকে অনেকগুলো ক্যু মোকাবিলা করতে হয়, এই সময়েও একটা ক্যু হয় যার কিছুটা মনে হয় টিভিতে দেখা গেছে। পরে জেনেছি জিয়াউর রহমান নির্দয়ভাবে মানুষ মেরেছেন সেই ঘটনার পরে এবং আরও অনেক অনেক সৈনিক পরবর্তি সময়ে বিভিন্ন ক্যুতে । নিয়তির অনিবার্য পরিণতি বোধহয় তাই লেখা ছিল তার নিজেরও ললাটে। শৈশবের প্রথম স্মৃতির বাংলাদেশকে চিন্তা করে দেখলে বিক্ষুব্ধ ডকুমেন্টারি ফিল্ম মনে হয়।

তবে আমি মোটেও চিন্তিত ছিলাম না উদ্ভট উটে চড়া বসা স্বদেশ নিয়ে। স্কুল কামাই ছিল নিয়মিত। বাবা মা কাজে গেলে আমি ঘুরে বেড়াতাম আপনমনে। আমাদের বাসাটাও মফস্বল শহরের বাসার মত, তেঁজগা পুরো শহর হয়নি তখন। আমাদের বাসায় অনেকগুলো নারিকেল গাছ, আম, লিচু, পেয়ারা, জাম্বুরা, জামরুল (যাকে আব্বা বলতেন মণ্ডাফল), পাশের বাসার কামরাঙ্গা গাছের প্রায় পুরোটাই আমাদের বাসায় পড়েছে যাতে প্রতিদিন টিয়াপাখি আর নানা রঙের প্রজাপতি আসে। আমার দুপুরগুলো কাটত তাদের সাথে। বাসার খুব কাছে বিশাল এক জাম গাছ, যেখানে ভূত না থেকে যায় না। বাসার পাশেই টেকনিকাল কলেজের (পরে নাম হয় বিজ্ঞান কলেজ) পুকুর আর একটু দূরে খ্রীস্টানদের কবরস্থান। সন্ধ্যার পর গা একটু ছমছম করত। আমি গন্তব্যহীন হেটে বেড়াতাম সারাদিন পাড়াময়।

আমি মনে হয় আজও ঘুরে বেড়াচ্ছি গন্তব্যহীন... সফর শেষ করে মন ফিরতে চায় সেই স্বপ্নঘেরা সবুজ শহরে যদিও আজকের ঢাকা থেকে আম, জাম, লিচু, নারিকেল, টিয়া, প্রজাপতি, পুকুর, ভূতপ্রেত সবাই বিতাড়িত হয়েছে, আমিও কি নির্বাসিত না ওদের মতই?

####


মন্তব্য

ওডিন এর ছবি

স্মৃতিচারণ চমৎকার হচ্ছে তাসনীম ভাই। যে যাই বলুক, থামাথামির কোন দরকার নেই। পরের পর্বগুলোর জন্য সাগ্রহে অপেক্ষা করবো।

আমাদের ভাড়াটিয়া মতিউর চাচা বোঝালেন "লাইভ" মানে বিমানের সব যাত্রী জীবিত আছেন।
দেঁতো হাসি
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

তাসনীম এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে ওডিন। অনেকটা স্বগত সংলাপের মত লেখা ভালো লেগেছে জেনে খুশি লেগেছে।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

তিথীডোর এর ছবি

দুর্দান্ত শিরোনাম!
লেখায় চলুক
থামার তো প্রশ্নই আসেনা...

--------------------------------------------------
"আমি তো থাকবোই, শুধু মাঝে মাঝে পাতা থাকবে সাদা/
এই ইচ্ছেমৃত্যু আমি জেনেছি তিথির মতো..."
*সমরেন্দ্র সেনগুপ্ত

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

তাসনীম এর ছবি

ধন্যবাদ তিথীডোর, তাহলে চলবে লেখা হাসি

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

পুতুল [অতিথি] এর ছবি

চমৎকার!

তাসনীম এর ছবি

ধন্যবাদ পুতুল।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

রেনেট এর ছবি

হুবুহু একই মন্তব্য, এবং একই লাইন কোট করব ভেবে লগিয়ে দেখি ওডিন করে ফেলেছে মন খারাপ

চমৎকার লাগলো। থামার কথা মুখে আনা আইনতঃ নিষিদ্ধ
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

তাসনীম এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে...চেষ্টা করব চালু রাখতে।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

বাউলিয়ানা এর ছবি

ফ্রন্টফুটে এসে অসাধারন ভঙ্গিমায় খেলেছেন, বল চলে যাচ্ছে এক্সট্রা কাভার দিয়ে সোজা সীমানার বাইরে...
আমরা পুরো ইনিংস দেখার অপেক্ষায় আছি। হাসি

তাসনীম এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে...তবে ইনিংসটা আমাদের টাইগারদের মত হতে পারে...দ্রুত উইকেটের পতন হাসি

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

ফাহিম এর ছবি

থামলে খবর আছে!

=======================
যদি আমি চলে যাই নক্ষত্রের পারে —
জানি আমি, তুমি আর আসিবে না খুঁজিতে আমারে!

=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;

তাসনীম এর ছবি

ডরাইসি হাসি
+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

শাফক্বাত এর ছবি

আমাদের ভাড়াটিয়া মতিউর চাচা বোঝালেন "লাইভ" মানে বিমানের সব যাত্রী জীবিত আছেন
বেশ মজা পেলাম এটা পড়ে।
আপনার তো হিংসে করার মত ছোটবেলা দেখি, গাছগাছালি আর ভুতের হানা, টিয়াপাখি তো আমি আজ পর্যন্ত খাঁচার বাইরে দেখিই নাই ঢাকা শহরে!
লিখেন আপনি প্লীজ। ইস্‌ পরের লেখা কখন? কি যেন কোটা-ফোটার ব্যাপার সেপার আছে না?
তাড়াতাড়ি লিখেন, অনেক অনেক ডিটেইল দিয়ে। ৫০ পর্ব হলেও এটা একদিন আপনার মেয়েরা পড়ে মজা পাবে। হাসি
==========================================
পরদেশী বঁধু, ঘুম ভাঙায়ো চুমি আঁখি।
যদি গো নিশিথ জেগে ঘুমাইয়া থাকি,
ঘুম ভাঙায়ো চুমি আঁখি।।

তাসনীম এর ছবি

ধন্যবাদ, চেষ্টা করব চালু রাখার। ৮০ এর দশকের শুরু পর্যন্ত তেঁজগাও বেশ গ্রাম গ্রাম ছিল। টিয়া পাখি ছিল বিস্তর...আর ভূত...দুই একটা ছিল নিশ্চয়...ভূত আবার আমার দারুন প্রিয় জিনিস।

মেয়েরা পড়বে কিনা জানিনা, স্কুলে যাওয়ার আগে বাংলা ছড়া বলত, এখন বাংলা বলতে চায় না, বড়টার প্রভাবে ছোটজনও ইংরেজী শিখছে। শুধু ভাষা নয়, কালচারটাও।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

শাফক্বাত এর ছবি

শুধু ভাষা নয়, কালচারটাও।- এই কথাটায় কি ভুল করে কোনও দীর্ঘশ্বাস টের পেলাম?
জানেন আমার একজন স্কুল বান্ধবী ক্যালিফোর্নিয়ায় থাকে; যেভাবে তার মেয়ের মনে বাংলাদেশের সংস্কৃতির বীজ রোপন করার চেষ্টা করে, সেরকম কিন্তু এইদেশের মাটিতে বসে আমরা কেউ করিনা। পারিওনা করতে। কারণ কাকে আপনি "কালচার" বলবেন? বরং আমার সাত বান্ধবী (সবাই স্কুলের সময়কার) প্রবাস থেকে তাদের বাচ্চা দেশে বেড়াতে আনার পর আমি লজ্জায় মরে যাই। মনে হয় যেন ওদের বাচ্চা আমারগুলোর চেয়ে বেশিমাত্রায় বাঙালী।
দেশের এইসময়কার মিশ্র কালচার প্রবাসের তুলনায় এমন কিছু ভাল দেখিনা।
যাক, এ-নিয়ে লিখতে গেলে অনেককিছুই লেখা যায়। সামারা-আনুশাকে আদর দেবেন আমার হয়ে।
==========================================
পরদেশী বঁধু, ঘুম ভাঙায়ো চুমি আঁখি।
যদি গো নিশিথ জেগে ঘুমাইয়া থাকি,
ঘুম ভাঙায়ো চুমি আঁখি।।

তাসনীম এর ছবি

কিছুটা দীর্ঘশ্বাস অবশ্যই আছে। এখানেও অনেকে ছেলে মেয়ে বাংলাদেশি কালচার শিখে। দেশি নাচ, গান শেখার জায়গা আছে, প্রচুর অনুষ্ঠানও হয়। তবে আমার অনেক সময় মনে হয় বাবা মা জোর করে কালচার আর ধর্ম শেখান, কালচারটা আসলে স্বতস্ফুর্ত (বানান ভুল হোল না তো?) শেখার বিষয়। দেশি কালচার আমরা মাঝে মাঝে স্যালাইনের মত দেই শিশুদের।

এটা নিয়ে লিখব আরেকদিন...এখন দৌড়ের উপর আছি হাসি

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

হিমু এর ছবি

এই পোস্টটা পড়ে দেখবেন সময় পেলে। ঢাকার পুরনো সময়ের স্মৃতিচারণ পড়তে ভালো লাগে।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

তাসনীম এর ছবি

পড়েছি...ধন্যবাদ আপনাকে। কিছু ছবি আছে, চেষ্টা করব কোন শেয়ারড সাইটে আপলোড করতে।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- আমি ঢাকার না। কিন্তু ঢাকার কিছু ছবি আমি দেখেছি। আমার গ্রাম ভালো লাগে। ছবির সে ঢাকার প্রেমে পড়েছিলাম আমিও। এখন আমার গ্রামও আমার ভালো লাগে না। গ্রাম নেই যে আর।

বন শহরের ঊনিশো কুড়ি সালের একটা পেইন্টিং দেখেছি। শহরের মধ্যকার খুব ব্যস্ত একটা স্কয়ারের চিত্র। আমার খুব ইচ্ছে করে টাইম মেশিনে চড়ে ঊনিশো বিশ সালের সেই সময়টায় ঘুরে আসি গিয়ে।

নির্বাসিত। কথাটা আসলেই ভেতরে আলোড়ন তুলে ফেলে। আসলেই তো। নিজেকে খুঁজতে গিয়ে নির্বাসিত হয়ে গেলাম চারপাশের সবকিছু থেকেই!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

তাসনীম এর ছবি

পুরানো শহর আমারো ভালো লাগে...

আর নির্বাসিত...শুধু তসলিমা নাসরিন নন, আমরা সবাই নির্বাসিত বাহিরে অন্তরে হাসি

ধন্যবাদ ধূসর গোধূলি।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লাগলো। শৈশব স্মৃতি আসলেই অনেক মধুর হয়। ধন্যবাদ আমাদেরকে স্মৃতিকাতর করার জন্য।

============
কামরুজ্জামান স্বাধীন।

তাসনীম এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে স্বাধীন।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

অমিত এর ছবি

লেখাটা ভাল লাগল। আমার জন্ম ৭০ দশকের শেষ দিকে। এখনও মনে হয় আশির দশকের ঢাকার মত সুন্দর শহর খুব কমই দেখেছি।

তাসনীম এর ছবি

ধন্যবাদ অমিত। ৭০ এর দশকের ঢাকায় আধুনিক সুবিধার কমতি ছিল, সেই বিচারে ৮০ দশকের ঢাকাই সেরা।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

তানভীর এর ছবি

চলুক

আমার কাছে পুরান ঢাকা এখনো ভালো লাগে (মানে ৫-৬ বছর আগে যেমন ছিলো আর কী)। নতুন ঢাকার কোন ক্যারেকটার নাই- বৈশিষ্ট্যহীন শহর।

তাসনীম এর ছবি

তবে আমার মতে ঢাকা সবচেয়ে ভালো ছিল ৮০ এর দশকে। ধন্যবাদ তানভীর মন্তব্যের জন্য।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

একজন [অতিথি] এর ছবি

আপনার সব লেখাই মুগ্ধ হয়ে পড়ি, এই স্মৃতিকথা মুগ্ধতা আরো বাড়িয়ে দিল।

তাসনীম এর ছবি

ধন্যবাদ অচেনা একজন।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

আশরাফ মাহমুদ এর ছবি

এরকম লেখা আরো লেখেন, খুঁটিনাটি তুলে ধরে। অনুরোধ রইল।
==============================
ঢাকার মৌন ঘ্রাণে বকুলফুলের নাভি
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ

তাসনীম এর ছবি

চেষ্টা করব আশরাফ, ধন্যবাদ আপনাকে।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

মূলত পাঠক এর ছবি

খুব বেশি রকমের ভালো লিখেছেন, পড়ে মুগ্ধ হলাম। পরের পর্বের প্রতীক্ষায়।

তাসনীম এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ পাঠক, ভালো লেগেছ শুনে খুশি হলাম। ভালো থাকুন।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

ভাল্লাগ্লো মাকুমাজান...

_________________________________________

সেরিওজা

তাসনীম এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে সুহান।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

মৃত্তিকা এর ছবি

ভালো লাগলো!

তাসনীম এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে মৃত্তিকা।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

অতনু এর ছবি

এমিল তোর লেখা পড় মনটা বেশ ভরে গেল। এর অনেক কিছুই আমারো মনে আছে। তোর মতো লেখার হাত বা উত্সাহ কোনোটাই নেই। অসাধারণ হয়েছে লেখাটা। যে সময়ের কথা লিখেছিস সে সময় আমরা থাকতাম ধানমনডি। জামান সারের পাশের বাড়ই টায়। তারপরে যাই মতিঝিল। তোপখানা রোড এ ইগলুর একটা পারলার ছিল, বিকেলে তখন ডাউনটাউন মানে ফাকা রাস্তা। বাবার সাথে বেড়ঈএ আমরা দুভাই স্টইল এর কাপ এ আইস্ক্রঈম খেয়ে ফিরতাম।

তাসনীম এর ছবি

অতনু অনেক ধন্যবাদ তোকে।

ইগলুর পারলারটার কথা আমারো মনে আছে, আমরাও মাঝে মাঝে ওখানে যেতাম। এই লেখাকে লিখে নিজে বিস্তর আনন্দ পাচ্ছি, টুক করে ছোটবেলায় ফিরতে পারছি।

এই ছাড়া আর কোনভাবেই ফেরা সম্ভব না হাসি

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

দিগন্ত বাহার [অতিথি] এর ছবি

স্ক্রিনের কোনায় লেখা "লাইভ", আমাদের ভাড়াটিয়া মতিউর চাচা বোঝালেন "লাইভ" মানে বিমানের সব যাত্রী জীবিত আছেন

আরেক দফা হাসতে-হাসতে খুন হাসি

আজকের ঢাকা থেকে আম, জাম, লিচু, নারিকেল, টিয়া, প্রজাপতি, পুকুর, ভূতপ্রেত সবাই বিতাড়িত হয়েছে, আমিও কি নির্বাসিত না ওদের মতই?

চমৎকার লেখা !

দিগন্ত বাহার [অতিথি] এর ছবি

স্ক্রিনের কোনায় লেখা "লাইভ", আমাদের ভাড়াটিয়া মতিউর চাচা বোঝালেন "লাইভ" মানে বিমানের সব যাত্রী জীবিত আছেন

আরেক দফা হাসতে-হাসতে খুন হাসি

আজকের ঢাকা থেকে আম, জাম, লিচু, নারিকেল, টিয়া, প্রজাপতি, পুকুর, ভূতপ্রেত সবাই বিতাড়িত হয়েছে, আমিও কি নির্বাসিত না ওদের মতই?

চমৎকার লেখা !

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।