যাদুকরী রাজকুমারীর গল্প (রুশ উপকথা অবলম্বনে)

তুলিরেখা এর ছবি
লিখেছেন তুলিরেখা (তারিখ: বিষ্যুদ, ১২/১১/২০০৯ - ৩:১৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এই গল্পে নামধামের ব্যাপারে আর কিছু কিছু ঘটনা ইত্যাদির ব্যাপারে বাঙালী নাম আর সংস্কৃতিকে ব্যবহার করা হয়েছে বলে গল্পটার অনেকটাই রূপবদল ঘটে গেছে।

বহু বহুকাল আগে,এক দেশে এক রাজা ছিল। তার ছিল বিরাট ঝলমলে রাজপ্রাসাদ, হাতিশালে হাতি, ঘোড়াশালে ঘোড়া। বিরাট সৈন্যবাহিনী। দেশ জুড়ে ছড়ানো অজস্র সম্পদ। রাজার রাজত্বে প্রজারা খুবই সুখে ছিল। তারা দু'বেলা রাজার গুনগান করতো।

রাজার ছিল তিন ছেলে। ঝকমকে তিন রাজপুত্তুর। তারা শাস্ত্র ও শস্ত্রশিক্ষা করে বড়ো হয়ে উঠছিল। ছেলেরা যখন বেশ বড়ো হয়েছে, রাজার রানী তাকে বললো, "এবার ছেলেদের বিয়ের বন্দোবস্ত করো। এরপরে তো এদের হাতেই দায়িত্ব দিয়ে আমাদের অবসর নিতে হবে প্রজাপালন থেকে।"

রাজা বললেন, "তাই হবে। তবে তার আগে তাদের একটা পরীক্ষা নেবো আমি। তাদের ধনুর্বিদ্যার পরীক্ষা। নির্দিষ্ট জায়গা থেকে তারা তিনজনে তীর ছুঁড়বে। যে মেয়ে যার তীর কুড়িয়ে পাবে, সেই মেয়েই হবে তার বৌ।"

শুনে রানী একই সঙ্গে ভারী অবাক আর শঙ্কিত হল। এ তো পুরোপুরি ভাগ্যের হাতে ছেলেদের ছেড়ে দেওয়া! এইভাবে তাদের জন্য স্ত্রী নির্বাচিত হবে? কত কত রাজকন্যাকে দেখেশুনে ছেলেদের জন্য বৌ আনবেন ঘরে,তারা হবে রূপে লক্ষ্মী গুণে সরস্বতী,তা নয়, এ কেমন উৎপেতে ব্যপার?

তিনি রাজাকে এইধরনের অদ্ভুত্ পরিকল্পনা থেকে নিরস্ত করার অনেক চেষ্টাই করলেন, কিন্তু রাজা কিছুতেই শুনলেন না।খুবই একগুঁয়ে আর জেদী রাজা,একথা বলতেই হবে। তখন রানী এক গোপন বন্দোবস্ত করলেন। তিনি গোপণে বিভিন্ন রাজ্যের রাজকন্যাদের সংবাদ পাঠালেন যেন তারা ছদ্মবেশে তার মহলে আসে। রাজপুত্রদের তীরন্দাজির প্রতিযোগিতার দিন তিনি তাদের তীরছোঁড়ার অঞ্চল থেকে বেশ খানিকটা দূরে দূরে ছদ্মবেশে দাঁড় করিয়ে রাখলেন যাতে তীর এসে পড়লেই তারা ছুটে গিয়ে তুলে নিতে পারে। আর তাহলেই তো কেল্লাফতে। রাজপুত্তুরের বৌ হয়ে যাবে, কম কথা? ভাগ্যে থাকলে ভবিষ্যতে কোনোদিন রানীও হয়ে যেতে পারে।

তিন রাজপুত্র প্রতিযোগিতার দিন সকালে নির্দিষ্ট স্থান থেকে তীর ছুঁড়ে মারলেন-বড়ো রাজপুত্র পুবের দিকে,মেজো পশ্চিমে আর ছোটো দক্ষিণে। তীরে রাজকীয় চিহ্ন আঁকা ছিল আর রাজপুত্রদের নাম লেখা ছিল। এরপরে তারা বাবার নির্দেশে ঘোড়ায় চড়ে চলল তাদের তীরের কি গতি হলো দেখতে। বাবা তাদের বলেছে,যে মেয়ে যার তীর তুলবে,সেই হবে তার স্ত্রী।

বড়ো রাজপুত্র ঘোড়ায় চড়ে আশায় আশংকায় চললো পুবের দিকে। মাইলখানেক গিয়ে সে দেখতে পেল একজন সুন্দরী তরুণী তার তীর হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সে তাকে নিজের ঘোড়ায় তুলে নিয়ে রাজপ্রাসাদে ফিরলো। সে ছিল পাশের রাজ্যের রাজকুমারী।

মেজো রাজপুত্র ঘোড়া নিয়ে পশ্চিমে চলতে চলতে মাইলদুয়েক গিয়ে দেখা পেল তার তীরের। এক রূপসী কন্যা তার তীর হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। মেজো রাজপুত্র তাকে নিজের ঘোড়ায় তুলে নিল।রাজপ্রাসাদে ফিরতে ফিরতে সে তার কাছে জানতে পারলো যে সে চন্দ্রপত্তনের রাজকন্যা।

ছোটো রাজপুত্র ইরাবান ঘোড়ায় চলেছিল দক্ষিণে। সে চলে আর চলে আর চলে। তীরের দেখা আর পায় না। মাইলের পর মাইল পথ পেরিয়ে তার ঘোড়া শ্রান্ত হয়ে পড়ে।সে গাছের ছায়ায় ঘোড়াকে একটু বিশ্রাম দিয়ে আবার চলে।অনেক অনেক পথ পার হয়ে সে এসে পৌঁছয় তরাইনের জলা অঞ্চলে। এখানে সে তার তীরের দেখা পায়।একটি ব্যাঙ,তার তীর মুখে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।
রাজপুত্তুর বলে," ওগো ব্যাঙ, আমার তীর ফেরৎ দাও, দয়া করে।"
ব্যাঙ ঠিক মানুষের গলায় বলে,"ফেরৎ দিই, যদি তুমি আমায় বিয়ে করো।"
রাজপুত্তুর শিউরে ওঠে। বিয়ে? এই কদাকার ব্যাঙকে? তা কিকরে সম্ভব? সে কাতর গলায় বলে," তোমায় আমি কেমন করে বিয়ে করবো? আমি যে মানুষ, তুমি যে ব্যাঙ!"
ব্যাঙ অভিমানের গলায় বলে," তবে তোমার তীর নাহয় নাই ফিরে পেলে।"
রাজপুত্র ব্যস্ত হয়ে বলে,"তীর যে আমায় ফিরে পেতেই হবে।"
ব্যাঙ বলে," তাহলে আমায় তোমার বিয়ে করতেই হবে।"

রাজপুত্র হতাশ হয়ে নিজের মাথার উষ্ণীষ খুলে পেতে দেয়। বলে,"ঠিক আছে, ভাগ্যে যখন আমার এই আছে। এই হোক তবে। এসো, এর ওপরে বসো। তোমায় প্রাসাদে নিয়ে যাই।"

ব্যাঙ খুশী হয়ে বলে," তুমি বড়ো ভালো, রাজপুত্র। তোমার ভালো হবে, দেখো তোমার অনেক ভালো হবে।" রাজপুত্র ব্যাঙকে উষ্ণীষে মুড়ে কাঁধে নিয়ে ঘোড়ায় চড়ে প্রাসাদে ফিরে আসে।

পরদিন রাজা মহাসমারোহে তার তিন পুত্রের বিবাহ দেন। বড়োজনের সঙ্গে পাশের রাজ্যের রাজকন্যার, মেজোজনের সঙ্গে চন্দ্রপত্তনের রাজকন্যার আর ছোটোজনের সঙ্গে এই নামহীনা ব্যাঙের। সবাই ছোটো রাজপুত্র আর তার ব্যাঙ বৌকে নিয়ে হাসাহাসি আর ব্যঙ্গ করছিল। ছোটো রাজপুত্র দু:খে অপমানে মাথা নীচু করে ছিল। অনুষ্ঠান শেষ হলে সে ব্যাঙকে নিয়ে নিজের ঘরে চলে এলো।

ঘরে এসে ব্যাঙটাকে মেঝেতে রেখে (ছুঁড়ে ফেলেনি কিন্তু, আস্তেই রেখেছিল, সে এমনিতে খুব সহৃদয় ছিল কিনা!) নিজে বিছানায় উপুড় হয়ে পড়ে রইলো। ব্যাঙ থপ থপ করে লাফাতে লাফাতে এসে তার বালিশের কাছে উঠলো। বললো, "প্রিয় রাজপুত্তুর, আমার জন্যই তোমার এই হেনস্থা হলো। তুমি বরং আমাকে সাজা দাও।"

ইরাবান হাত বাড়িয়ে তার ব্যাঙ বৌয়ের স্যাঁতসেতে গায়ে আলতো হাত বোলাতে বোলাতে কান্না চেপে বলে, "না না তোমার আর কি দোষ বলো। সবই আমার কপাল।"

ব্যাঙ খুব নরম গলায় বলে,"তুমি খুব ভালো ইরাবান, তুমি খুব ভালো।" তারপরে রাজপুত্তুরের হাতের আঙুলের উপরে নিজের মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে। রাজপুত্র ক্লান্তিতে ভেঙে ঘুমিয়ে পড়ে বলে টের পায় না যে সে ঘুমোলেই ব্যাঙ ছদ্মবেশ ত্যাগ করে হয়ে যায় এক অপরূপা রাজকন্যা। তার রূপের ছটায় ঘর আলো হয়ে যায়।

বেশ কয়েক দিন গেছে কেটে। রাজা এবার ঠিক করেছেন তার বৌমাদের পরীক্ষা নেবেন। প্রথমদিন হবে তাদের রন্ধনের পরীক্ষা। তিনি তার প্রিয় পদটি রান্না করার নির্দেশ দিলেন বৌমাদের। পরদিন সকালে তিনি তা চাখবেন ও নম্বর দেবেন। শুনে তো ইরাবানের মাথায় হাত। দুই দাদা হাসতে হাসতে চলে গেল, সে মাথা নীচু করে চোখের জল চেপে ঘরে এলো। এসে সে বসেই আছে, কপাল টিপে ধরে, দেখে ব্যাঙ কাছে এলো। বললো," কি হয়েছে,রাজপুত্র?"

রাজপুত্র টের পেয়েছে যে তার ব্যাঙ বৌ এমনিতে ভালো। তাই বললো," সে কথা শুনে আর কি করবে বৌ? যা হবার নয়,তা তো আর করতে বলতে পারিনা তোমায়।"
"কি সে জিনিস,ইরাবান?"
"বাবা তার প্রিয় পদটি রান্না করতে বলেছেন তার বৌমাদের। কাল সকালে তিনি তা খেয়ে দেখবেন কে কেমন রাঁধলো।তুমি তো মানুষ নও, ব্যাঙ, কিকরে তুমি রান্না করবে লুচি আর মাংসের ঝোল?"

"এই কথা? এই জন্য তুমি ভাবছো এত? ভেবো না, ঘুমোতে এসো, দেখো রাত পোহালে সব ঠিক হয়ে যাবে। জানোনা, রাত পোহালে বুদ্ধি বাড়ে?"

হতাশ ইরাবান ভাবে, না ঘুমিয়ে জেগে জেগে ভাবলেই কি আর সমস্যা সমাধান হবে? তার চেয়ে ঘুমোনোই ভালো। এই ভেবে সে তার ব্যাঙ বৌকে পাশে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। সে ঘুমোলেই ব্যাঙ ছদ্মবেশ খসিয়ে হয়ে যায় রাজকন্যা।

বিছানা ছেড়ে জানালার কাছে গিয়ে সে ডাকে তার যাদুকরী সহকারিণীদের। রাত্রির আকাশে উড়ে উড়ে এসে পড়ে তারা। সে বলে, "সখীরা, তোমরা বানাও সেরা ময়দার সেরা লুচি আর বানাও লবঙ্গ এলাচ দারুচিনি দেওয়া চমত্কার মশলাদার মাংসের ঝোল। সঙ্গে বড়ো বড়ো আলু দিতে ভুলো না যেন।ঠিক যেরকম আমার বাবা, যাদুকর সম্রাট, উত্সবের দিনে খেতে ভালোবাসতেন।"

কিছুক্ষণের মধ্যেই সখীরা সব তৈরী করে, সোনারুপোর পাত্রে রেখে রেশমী রুমাল ঢাকা দিয়ে আবার উড়ে যায় আকাশে। রাজকন্যা নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুম যায়।

পরদিন সকালে যখন সে আবার ব্যাঙের বেশে,তখন ইরাবান ওঠে ঘুম থেকে।সে তো লুচি মাংসের ঘ্রাণে অবাক।রেশমী রুমালের ঢাকনা সরিয়ে ফুলকো ফুলকো লুচি দেখে তো সে প্রায় মেঝেতে পড়ে যায়।সত্যি সত্যি তার ব্যাঙ বৌ এইসব বানিয়েছে? সে মহানন্দে সব নিয়ে চললো রাজার কাছে।সেখানে অন্য রাজপুত্ররা তখন এসে পড়েছিল।

প্রথমে বড়ো বৌমার হাতের রান্না চেখে দেখতে ঢাকনা খুললেন রাজা। লুচি তুলে ছিঁড়তে গেলেন, উ:, লুচি তো নয়, যেন চামড়া। কোনোক্রমে একটুকরো ছিঁড়লেন। তারপরে মাংসের ঝোলে ডুবিয়ে মুখে দিয়েই রাজা মহা খাপ্পা। এ কেমন ঠাট্টা! ঝোলে এতটুকু নুন নেই? রাজা রেগে বললেন," এ যা রান্না হয়েছে দশে চারও পাবে না। টেনেটুনে সাড়ে তিন।"

অপ্রসন্নমুখে বড়ো বৌমার খাবার একপাশে সরিয়ে রেখে রাজা এবার মেজো বৌমার লুচিতে হাত দিলেন। এ লুচি যদিও একেবারে চামড়া নয়, তবু সেরকম উঁচুদরেরও নয়। এবার মাংসের ঝোলে লুচির টুকরো ডুবিয়ে মুখে দিয়েই বিষম খেলেন রাজা। নুনে একেবারে পোড়া! এ জিনিস খেতে পারে মানুষে? রাজা রেগে লালচে হয়ে বললেন, "এই নাকি রাজাকে খেতে হলো!এই রান্না দশে পাবে মোটে দুই।"

রাজা হতাশ হয়ে ছোটো বৌমার খাবারের পাত্রের ঢাকনা সরালেন। এখানে লুচিগুলিকে দেখেই তিনি খুশী হয়ে উঠলেন। মুচমুচে ফুলকো লুচি। তিনি তুলে এক কামড় দিলেন। আহা, মুখে যেন অমৃতের স্বাদ। তিনি শুধু শুধু লুচিই খেয়ে নিলেন কয়েক কামড়। তারপরে মাংসের ঝোলের ঢাকনা খুলে খাবেন কি! সুগন্ধেই তো তিনি প্রায় বিবশ। তারপরে ধাতস্থ হয়ে লুচির খন্ড দিয়ে মুড়ে খানিকটা ঝোল আর মাংস খেলেন। একবার খেয়ে আবার খেলেন, আবার খেলেন। তারপর মুখ টুখ মুছে বলনে," হ্যাঁ, এই হলো প্রকৃত ভালো রান্না। রাজকীয় রান্না। বাবা ইরাবান, ছোটো বৌমার যদি এই রান্না হয়ে থাকে, তবে সত্যিই এর তুল্য আমি আর দেখিনি আমার সারা জীবনে। কত সময় কত দেশে গিয়েছি নিমন্ত্রণে আমন্ত্রনে উত্সবে অনুষ্ঠানে। খেয়েছি কতরকমের ভালো ভালো রান্না। কিন্তু এর তুল্য স্বাদ আমি আর কোথাও পাই নি আগে। শুধু একবার যাদুসম্রাটের দেশের উত্সবে নিমন্ত্রিত হয়ে প্রায় এইরকম জিনিস খেয়েছিলাম। ছোটো বৌমাই যদি এ জিনিস বানিয়ে থাকে সে দশে দশ পাবারই যোগ্য। বরং কয়েক নম্বর বোনাস পাবে, এক্সট্রা ক্রেডিট।"

ইরাবান মাথা নীচু করেই দাঁড়িয়ে ছিল।তাই সে দেখতে পায় নি দাদারা তার দিকে কেমন হিংসুটে চোখে চেয়ে চেয়ে দেখছে। রাজা হাত নেড়ে বড়ো দুই ছেলেকে চলে যেতে বললেন। তারপরে ছোটো ছেলেকে কাছে ডেকে বললেন," খোকা, সেদিন তোকে নিয়ে সবাই অনেক ঠাট্টা ইয়ার্কি করেছিল। আমিও তো কোনো বাধা দিই নি ওদের।আমারও দোষ আছে। জানি তুই খুব কষ্ট পেয়েছিস। আজ তোকে আর তোর বৌকে ভালো ভালো উপহার দেবো। আর কষ্ট পাসনা, কেমন?"

ছোটো রাজপুত্তুরের চোখে জল আসছিল। কিন্তু সে কোনোক্রমে সামলে নিয়ে বললো," না না, ঠিক আছে। সবই আমার কপাল। তোমার দোষ কেন হবে? তোমার কোনো ত্রুটি নেই। উপহার দিতে হবে না। আমার ব্যাঙ বৌ কি করবে উপহার নিয়ে? সে তো আর মানুষ নয়, ব্যাঙ মাত্র। আর আমারও কিছু চাই নে, এমনিই আমার অনেক আছে।"

রাজা তার অভিমানী ছেলেকে কাছে টেনে নিয়ে ওর মাথার চুল ঘেঁটে দেন। জোর করে ওকে অনেক উপহার দেন। সোনার কুন্ডল, স্বর্ণহার, রেশমী কাপড়, ধাতুর তীর ও তূণ, কারুকাজ করা তীক্ষ্ণ তলোয়ার। ছোটো বৌমার জন্যও দেন স্বর্ণালংকার, রেশমবস্ত্র ইত্যাদি। ইরাবান সেসব নিয়ে হরিষে বিষাদে ঘরে ফিরে যায়।

আরো কেটে গেছে বেশ কিছুকাল। রাজার আবার খেয়াল চাপলো বৌমাদের পরীক্ষা নেবেন। এবারে কী পরীক্ষা? এবারে নেবেন বৌমাদের শিল্পদক্ষতার পরীক্ষা। তিনি নির্দেশ দিলেন এক সপ্তাহের মধ্যে প্রত্যেক পুত্রবধূকে তৈরী করে দিতে হবে সুন্দর রাজপোশাক। নির্দিষ্ট দিনে (এক সপ্তাহ পরে)তিনি তা পরে পরে দেখবেন ও নম্বর দেবেন। শুনে তো ইরাবানের মাথায় হাত। কি করে তার বেচারা ব্যাঙ বৌ বানাবে রাজপোশাক?

দুই দাদা হাসতে হাসতে চলে গেল, যাবার সময় তাকে ছোট্টো করে একটু টিটকিরি দিতেও ভুললো না। ইরাবান কোনোরকমে টলতে টলতে, হোঁচোট খেতে খেতে নিজের ঘরে এলো। এসে সে বসেই আছে, আলো জ্বালে নি, কিচ্ছুনা, বসে বসে আকাশ পাতাল ভাবছে। মুখ তার রীতিমতো কালো হয়ে গেছে। ব্যাঙ তখন ঘরে ছিল না, ইরাবানের মহলের বাগানে ঘুরছিল।

ঘরে ফিরে ইরাবানকে অন্ধকার ঘরে মাথা টিপে ধরে বসে থাকতে দেখে চমকে গিয়ে থপ থপ করে কাছে এলো।বললো," প্রিয় রাজপুত্র, কী হয়েছে? কেন তোমার মুখ শুকনো? চোখ বসে গেছে? কী হয়েছে আমায় বলো।"

ইরাবান তার ব্যাঙ বৌকে হাতে তুলে নিয়ে আস্তে আস্তে বলে,"কি হবে তোমায় বলে? শুধু শুধু দু:খ বাড়বে। বাবা আবার পরীক্ষা নিতে চান।এবার সব বৌমাকে বানাতে হবে রাজপোশাক। এক সপ্তাহ সময় দিয়েছেন।তারপরে তিনি পোশাক পরে দেখবেন আর নম্বর দেবেন।" এই পর্যন্ত বলে দু:খে বেচারার গলা বুজে যায়।

ব্যাঙ বৌ হেসে ওঠে। বলে,"এই কথা? এই জন্য তুমি এতো ভাবছো রাজপুত্তুর? মুখে হাসি নেই, ঘরে আলো নেই? ভেবো না রাজপুত্তুর। ভেবো না। নিশ্চিন্তে ঘুম যাও রাতে। দেখবে সকালে সব ঠিক হয়ে গেছে। জানোনা রাত পোহালে বুদ্ধি বাড়ে?"

ইরাবান তার ব্যাঙ বৌয়ের দিকে চেয়ে দেখে। আগেরবারের অবাক ব্যাপার স্মরণ করে তার মনে হয়, হয়তোবা হতেও পারে। ভাবে রাত জেগে জেগে বসে বসে ভাবলে কি আর সমস্যা সমাধান হবে? তার চেয়ে ঘুমোনোই ভালো। এই ভেবে সে তার ব্যাঙ বৌকে পাশে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। সে ঘুমোলেই ব্যাঙের ছদ্মবেশ খসিয়ে উঠে বসে যাদুকর সম্রাটের কন্যা,অপরূপা যাদুকরী বিশ্ববিমোহিনী ভানুমতী। তার রূপের ছটায় ইরাবানের ঘর দুলে ওঠে।

সে নবনীতকোমল দুগ্ধফেননীভ শয্যা ছেড়ে বাতায়নের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।মন্ত্র পড়ে ডাক দেয় তার যাদু সহকারিনীদের। রাতের আকাশে উড়ে উড়ে এসে পড়ে তারা।তখন ভানুমতী বলে,"সখীরা, তোমারা তৈরী করো সেরা রেশমের সেরা রাজপোশাক, ঠিক যেমনটি আমার বাবা উত্সবের দিনে পরতে ভালোবাসতেন। তাতে গেঁথে গেঁথে দিও মণি মুক্তা হীরা জহরত্। সঙ্গে আরো তৈরী করো সেরা উষ্ঞীষ, তাতে গাঁথা থাকবে মস্তো বড়ো আলো ঝলকানো হীরে।"

যাদুকরী রাজকুমারীর সহকারিনীরা সঙ্গে সঙ্গে কাজে লেগে যায়। প্রথম রাতে তৈরী হয় পোশাকের এক সপ্তমাংশ, তারপরে তারা উড়ে চলে যায়। রাজকুমারী আবার ব্যাঙের ছদ্মবেশ ধরে রাজপুত্র ইরাবানের পাশে শুয়ে পড়ে। এইভাবে প্রতি রাত্রে তৈরী হতে থাকে রাজপোশাক। ইরাবান এর কিছুই জানতে পারেনা।সে তখন থাকে ঘোর নিদ্রায় অভিভূত। সাত রাত কাজ হবার পরে রাজপোশাক ও উষ্ণীষ তৈরী শেষ হয়। সবকিছু গুছিয়ে ভাঁজ করে রেশমী ঢাকনায় ঢেকে এতদিন পরে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে যায় যাদুকরী ভানুমতী।

পরদিন সকালে উঠে ইরাবান তো পোশাক দেখে একেবারে চমকে মেঝেতে পড়ে যায় আরকি। এত সুন্দর সূক্ষ্ম কারুকার্য করা মহার্ঘ্য পোশাক তো সে জীবনেও দেখেনি। এত হীরা মণিমুক্তা জহরত্ পান্না চুনী পোশাকে! আলো ঠিকরে যাচ্ছে রত্নগুলি থেকে। সদ্য ঘুমভাঙা চোখ একবার কচলিয়ে নিয়ে আবার ভালো করে দেখে ইরাবান। সত্যি এসব তৈরী করেছে তার ব্যাঙ বৌ? এ তো সামান্য ব্যাঙ নয়! নিশ্চয় এ ব্যাঙের ছদ্মবেশে অন্য কেউ।

সে তার ব্যাঙ বৌকে চেপে ধরে,"বলো তুমি কে? বলতেই হবে। নিশ্চয় তুমি ছদ্মবেশিনী। বলো তুমি কে।"

ব্যাঙ বলে,"আজকে নয় রাজপুত্র, দোহাই তোমার। আজকে আমাকে ছেড়ে দাও। সময় হলে আমি নিজেই তোমাকে বলবো আমার সব কাহিনি। দয়া করে আজকে আমাকে ছেড়ে দাও, জোর কোরো না, তাতে খুব ক্ষতি হবে। কটা দিন ধৈর্য ধরো। দোহাই তোমার।"

ব্যাঙের গলা এত কাতর শোনালো যে ইরাবান তাড়াতাড়ি তার মুঠো আলগা করে ফেললো। অত্যন্ত অনুতপ্ত গলায় বললো,"আমি বুঝতে পারিনি। তোমায় আমি কক্ষণো জোর করবো না। তোমার যখন ইচ্ছে হবে তখনই বোলো।"

রাজার কাছে তিন রাজপুত্রই এসে পৌঁছলো প্রায় একই সময়ে। সঙ্গে রেশমী পেটিকায় তাদের বৌদের বানানো রাজপোশাক। প্রথমে রাজা বড়ো ছেলের হাত থেকে নিলেন পেটিকা। পোশাক বার করে ঝেড়ে খুললেন তার ভাঁজ।নিতান্ত সাদামাঠা পোশাক। রাজা অবহেলায় নিজের গায়ের উপরে ফেলে দেখে বললেন, "পোশাক হয়েছে বটে। তবে রাজার উপযুক্ত নয়। চাষীদের গায়ে মানাবে। মেরেকেটে এ পাবে দশে তিন।" শুনে বড়ো রাজপুত্রের মুখ ধূসর হয়ে গেল।

এরপরে মেজো ছেলের হাত থেকে পেটিকা নিয়ে পোশাক বার করলেন। কিন্তু যেই না ভাঁজ খুলতে গেলেন, অমনি বেকায়দার টানে সেলাই খুলে এলো। ফরফর করে উড়তে লাগলো পোশাকের রেশম কাপড়। পট পট করে খুলে পড়লো কয়েকটা সোনার বোতাম। রাজা তো রেগে মেগে একাকার। বললেন,"আমার সঙ্গে ঠাট্টা হচ্ছে? হ্যাঁ? এসব কী? এত সোনারূপো মণিমুক্তো সাঁটতে গেছে,অথচ সেলাইটুকু শক্ত করে করতে পারেনি? যাও,এ পাবে দশে আড়াই।"

এরপরে তিনি ইরাবানের হাতের পেটিকা খুললেন।খুলেই তার মুখ আলো হয়ে গেল।ঝলমলে সেই রাজপোশাক সতর্ক যত্নের সঙ্গে বার করলেন পেটিকা থেকে। নিজের পোশাকের উপরেই গলিয়ে নিলেন সেটি। উঁচুদরের সূক্ষ্ম সূচীকর্ম করা সেই পোশাক রাজ-অঙ্গে সগৌরবে শোভা পেতে লাগলো।অজস্র রত্ন থেকে আলো ঝলকিত হয়ে সকলের চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছিল। এরপরে পেটিকায় আবার উষ্ঞীষও আছে দেখে তো রাজা একেবারে আহ্লাদে আটখানা। রাজমুকুট খুলে রেখে তিনি সেই উষ্ঞীষ মস্তকে ধারণ করলেন।

রাজার মুখে হাসি তো আর ধরে না। বললেন,"হ্যাঁ, এই হলো প্রকৃত রাজপোশাক। এ তার থেকেও উঁচুদরের। এ সম্রাটের উপযুক্ত পোশাক। সত্যি করে বলো পুত্র ইরাবান, এ কি সত্যি তোমার ব্যাঙ বৌয়ের তৈরী করা?"

ইরাবান মাথা নীচু করে আস্তে আস্তে বলে,"হ্যাঁ। তারই করা। আমার এর বেশী কিছু জানা নেই পিতা।"

তার দুই দাদা তার দিকে জ্বলন্ত চোখে তাকিয়ে ছিল।তারা এবার দুজনেই রাজাকে বললো,"পিতা, আমাদের অনুরোধ,আপনি একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আপনার সব বৌমাদের তাতে নিমন্ত্রণ করুন। সকলে আসবে তাদের সেরা পোশাকে সেজে,সেই সভায় হবে তাদের রাজকীয় আদবকায়দার পরীক্ষা। এটা কি ভালো প্রস্তাব নয়?"এই বলে তারা একবার নিজেদের মধ্যে চোখাচোখি করে হেসে নিল।

ইরাবান মনে মনে ঠাকুরকে ডাকছিল, যেন রাজা কিছুতে রাজী না হন।রাজী হয়ে গেলে যে একেবারে সাড়ে সব্বোনাশ। কিকরে তার বৌ সভায় এসে রাজকীয় আদবকায়দার পরীক্ষা দেবে? সে যে মানুষই নয়, ব্যাঙ! কিন্তু যেখানে বাঘের ভয়, সেখানে সন্ধে হয়।জানাই তো আছে। রাজার শুনে খুবই পছন্দ হয়ে গেল প্রস্তাবটি। তিনি মহা উত্সাহে রাজী হয়ে গেলেন।

বললেন "ঠিক আছে,তাই হবে। আগামী শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে সব বৌমা আসবেন আমার সভাগৃহে, সেখানে তাদের নিমন্ত্রণ।" শুনে ইরাবানের মুখ সাদা হয়ে গেল ভয়ে। কেমন করে এই পরীক্ষায় পাশ করবে তার বেচারা ব্যাঙ বৌ?

দাদারা হাসতে হাসতে নিজের মহলে যাবার সময় বলে গেল,"ইরাবান, তোর বৌকে সাজিয়ে গুছিয়ে আনিস কিন্তু। পিছলিয়ে না পড়ে লোকে। ব্যাঙের গা যা পেছল, বেকায়দায় কারু পা পড়লে আর দেখতে হবে না। সাবধানে, ইরাবান। ভগবান না করুন, বাবাই যদি পিছলে যান!"

ইরাবানের চোখে সত্যি সত্যি এবার জল আসছিল। কি অসহায় সে, কি নিরুপায়! কি করবে এবার? দু দুবার পাশ করে গেছে বৌ,কিন্তু এবার? শুকনো মুখে ঠোক্কর খেতে খেতে নিজের মহলে ফিরল ইরাবান। সে সত্যিই সব অন্ধকার দেখছিল এবার। এসে সে বসেই আছে মাথা নীচু করে,মুখে কোনো কথা নেই।

দেখে ব্যাঙ থপথপিয়ে কাছে এলো। বললো,"কী হয়েছে রাজপুত্তুর? কী হয়েছে তোমার? আমাকে বলবে না?"

ইরাবান তার ব্যাঙ বৌকে হাতে তুলে নিয়ে আস্তে আস্তে ওর পিছলে গায়ে আঙুল বোলাতে লাগলো, কিন্তু কিছুতেই বললো না কি হয়েছে। ব্যাঙ বহু অনুনয় করলো, বহু কাকুতিমনতি করলো, কিন্তু ইরাবানের মুখে রা নেই। সে কিছুতেই বলবে না।

শেষে হাল ছেড়ে দিয়ে ব্যাঙ বললো, "ঠিক আছে বলবে না তো বলবে না। বয়ে গেল। কিন্তু এভাবে বসে বসে রাত কাটিয়ে দেবে নাকি? চলো ঘুমোতে চলো।"

ইরাবান এত ক্লান্ত ছিল যে এই কথা ঠেলতে পারলো না। কোনোরকমে খাটে এসে বিছানায় গা ঢেলে দিলো। ভাবলো, আ:, এবার ঘুমোতে হবে। কিন্তু ঘুমোতে সে পারলো না।বিছানায় শুয়ে ছটফট করতে লাগলো।এদিকে সে না ঘুমোলে তো ভানুমতীও ব্যাঙের ছদ্মবেশ ছাড়তে পারছে না! মহা মুশকিল।

রাজপুত্র একবার এপাশ একবার ওপাশ করে।কিছুতেই ওর চোখে ঘুম আসে না।ব্যাঙরূপী যাদুকরী রাজকন্যা চীনাংশুকের বালিশে মাথা দিয়ে শুয়ে মিটমিট করে দেখে,কখন ঘুমে চোখ বুজে আসে ইরাবানের। মাঝরাত প্রায় নিঘুমে পার হয় দেখে শেষে ভানুমতী নিদ্রা-যাদু প্রয়োগ করে। এবার আর কি করে না ঘুমিয়ে পড়ে জেগে থাকবে ইরাবান? ও ঘুমোলেই ছদ্মরূপ ছেড়ে ভানুমতী নিজের রূপ ধরে ঘুমিয়ে পড়ে।

এইভাবে দিন যায়,রাত কাটে।চাঁদ ক্ষয় হতে হতে একদিন মিলিয়ে যায়, অমাবস্যার আকাশে তারা ফুটফুট করে। যাদুতে ঘুমে অচেতন ইরাবানের পাশে জেগে বসে থাকে যাদুকরী। জানালা দিয়ে আকাশের ছায়াপথের দিকে চেয়ে চেয়ে তার চোখ জলে ভরে যায়। কতকাল সে নিজের মাকে বাবাকে দেখতে পায় নি!সেই যাদুরাজ্যের রাজপ্রাসাদ, সখাসখীরা, শোভন-উদ্যান,সভাগৃহ-স্বপ্নের মতো মনে পড়ে তার।

আসে শুক্লপক্ষ। রাজপুত্তুরের ছট-ফটানি বাড়ে। এখন যাদুপ্রয়োগেও ওকে ঘুমপাড়াতে বেশ কষ্ট হয় ভানুর। চতুর্থীর রাতে সম্পূর্ন ভেঙে পড়ে ইরাবান। পরদিন যে তার ব্যাঙ বৌকে রাজসভায় গিয়ে আদবকায়দায় পরীক্ষা দিতে হবে! এদিন আর না বলে পারলো না ইরাবান। কিন্তু শেষে বললো,"যদি ওরা তোমায় অপমান করে বৌ, তাহলে আমি তক্ষুণি তোমায় নিয়ে এই রাজ্য ছেড়ে চলে যাবো।"

ব্যাঙ ওকে বলে,"তুমি চিন্তা কোরো না রাজপুত্র। সেসব কিছু হবে না।তুমি রাজপুত্র, তুমি সেজেগুজে আগে একা যাবে। ওরা জিজ্ঞেস করলে বলবে, বৌ পরে আসবে। জানেই সবাই যে মেয়েদের সাজতেগুজতে একটু বেশী সময় লাগে। পরে যখন কড় কড়াৎ করে শব্দ হবে খুব জোরে, সবাই ভয় পেয়ে যাবে, তখব বোলো,"ও কিছু নয়, আমার ব্যাঙ বৌ এলো কৌটোয় চড়ে।" পারবে তো বলতে?

রাজপুত্তুর ঘাড় হেলিয়ে বলে, "হ্যা, পারবো।"

ধীরে ধীরে লোকজন আসতে আরম্ভ করলো। প্রথমে বড়ো রাজপুত্র তার স্ত্রীকে নিয়ে,তারপরে মেজো রাজপুত্র তার বৌকে নিয়ে,তারপরে গুটি গুটি পায়ে ইরাবান,নতমুখ।

"সে কি রে,তোর বৌকে আনলি না?"বড়দা জিজ্ঞাসা করলো।

"সে আসছে,একটু পরে।"কোনোরকমে বললো ইরাবান।

দেখতে দেখতে ঘন্টা কেটে গেল,এরপর রাজার আদেশে বড়ো টেবিলে খাবার পরিবেশন যেই শুরু হয়েছে, সকলে পানীয়ের গ্লাসে চুমুক দিয়েছে মাত্র, এমন সময় ঘড় ঘড়াম ঘড়াম্ম্ম করে ভীষন আওয়াজে সকলে কেঁপে ওঠে। রাজামশাইএর ভুরু কুঁচকে ওঠে। "কিসের আওয়াজ?"

ইরাবান আস্তে আস্তে আস্তে ভয়ে ভয়ে বলে,"ও কিছু না,আমার ব্যাঙ বৌ বুঝি এলো কৌটোয় চড়ে।"

রাজসভাগৃহের সমস্ত সোনারূপাহীরাজহরতের ঝালকানিকে নিষ্পভ্র করে দিয়ে দুয়ার ঠেলে প্রবেশ করে এক অপরূপা রাজকন্যা।আকাশের মতো নীল তার শাড়ী,তাতে অসংখ্য তারার চুমকি বসানো। তার চুলে পম্পাসরোবরের ঢেউ,তার মধ্যরাত্রিনীল দুচোখের তারায় উজ্বল আলোর কারুকাজ।তার দুইটি বাহু পুষ্পিত লতার মতো, তার চলা উর্মিল। সকালবেলাকার শ্বেতপদ্মের মতো সুন্দর তার মুখ, তাতে আনন্দের জ্যোতি।

রাজকন্যা এসে রাজামশাইকে প্রণাম করে বলে,"পিতা, আমি আপনার কনিষ্ঠা পুত্রবধূ। আপনার আশীর্বাদ চাই।" অতি মধুর সুরেলা তার কন্ঠস্বর। রাজামশাই ভারী খুশী হয়ে আশীর্বাদ করেন।

এরপর রাজকন্যা তার ডানহাত নড়ায়, নীলশাড়ীর আঁচল ওড়ে, সভার ডানপাশে দেখা দেয় আশ্চর্য সুন্দর এক সরোবর। তাতে কলহংসেরা খেলা করে বেড়ায়। রাজকন্যা তাঁর বাঁহাত নাড়ায় , সভার বাঁপাশে সৃষ্টি হয় এক তুষারাবৃত পর্বত, তাতে ঝর্ণারা স্তব্ধ হয়ে আছে। হাতে তালি দিতেই ঝর্ণাগুলি প্রাণ পেয়ে ঝরঝর করে ঝরে পড়তে থাকে সে যাদুপাহড় বেয়ে,নদী হয়ে বয়ে যায়-যাদুসরোবরে এসে মেশে।

রাজারানী খুব খুশী,অন্যরাও খুশী,শুধু ইরাবানের দুই দাদা আর তার বৌরা খুশী নয়। রাজারানী তাদের এই যাদুকরী পুত্রবধূকে আদর করে নিমন্ত্রণ খাওয়াচ্ছেন, এমন সময় দেখা গেল ইরাবান সভায় নেই।

চমকে উঠে ভানুমতী রাজার অনুমতি নিয়ে প্রায় দৌড়ে এলো তার মহলে। এসে দেখে যা সর্বনাশ হওয়ার তা হয়ে গেছে। ইরাবান ভানুমতীর রেখে যাওয়া ব্যাঙের ছালটা পুড়িয়ে দিয়েছে। সে বুঝতেই পারেনি কি করে বসেছে।সে ভাবছে বেশ বাহাদুরির কাজ করেছে। ভানু কপাল চাপড়ে মাটিতে পড়ে কাঁদতে লাগলো একেবারে একটা বাচ্চা মেয়ের মতো। ইরাবান বিস্মিত।

একটু পরে ভানুমতী বললো,"এ কী করলে রাজপুত্র? এক বছর এইভাবে ব্যাঙ সেজে থাকতে পারলেই আমার অভিশাপের মুক্তি হতো। তুমি সেটুকু ধৈর্য ধরতে পারলে না ইরাবান? তোমার প্রাসাদে তোমার রানী হয়ে সারাজীবন আমি সুখে থাকতে পারতাম।কিন্তু এখন? আর উপায় নেই। এখুনি আমাকে নিয়ে যাবে অমর। সে আমাকে বন্দী করে রাখবে। সে বড়ো নিষ্ঠুর। আর আমার মুক্তি হবে না।"

ইরাবান এসে জড়িয়ে ধরলে রাজকন্যাকে। বললো, "কে তোমাকে নিয়ে যাবে রাজকুমারী? কেউ নিয়ে যেতে পারবে না।মিথ্যে তুমি ভয় পাচ্ছো ভানুমতী। দেখো, এই তো আমি। চোখ মোছো। কেন তুমি কাঁদছো?"

কিন্তু তখনি একটা দারুণ ঝড় এলো,তার মধ্যে থেকে হা হা হা হা করে একটা বিকট হাসি ভেসে এলো। ঝড়ের ধাক্কায় উল্টে পড়ে গেলো ওরা দুজন। বিদ্যুত্ চমকে উঠলো আকাশে, ভীষন বজ্রের ধ্বনি কানে তালা লাগিয়ে দিলো প্রায়। ভয়ে ইরাবান চোখ বন্ধ করলো। ঝড় থামলে যখন রাজপুত্র উঠে বসলো, তখন ঘরে সে একা।রাজকুমারী ভানুমতী আর কোথাও নেই।

ইরাবান দৌড়ে গেলো বাগানে। না সেখানো কেউ নেই। ছুটে গেল, কহ্লারসরোবরের ধারে,সেখানেও কেউ নেই।ছুটে গেল তার প্রাসাদের ঘরে ঘরে,না ভানুমতী কোথাও নেই। এবার কাপাল চাপড়ে মাটিতে পড়ে নিজেই কাঁদতে লাগলো সে।কেন সে না জেনে বোকার মতো---

কিন্তু সেই রাত্রির পরে ভোর হলো। ইরাবান যোদ্ধার পোশাকে তার প্রিয় ঘোড়া তুরীয়ানের পিঠে বসে বেরিয়ে এলো বাইরে। রাজপ্রাসাদে গিয়ে সব বললো বাবামাকে। তারপরে বাবার অনুমতি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। হারিয়ে যাওয়া ভানুমতীকে উদ্ধার করে আনার জন্য। সে জানে এ কাজ কঠিন, খুবই কঠিন। তবু সে এও জানে, যে একাজ না করে তার আর কোনো উপায় নেই।

দিনের পর দিন সে চলে আর চলে আর চলে। কোথায় যাবে, কিভাবে খুঁজবে,কাকে জিজ্ঞাসা করবে,কিচ্ছু জানেনা।তবু চলে।তার তুরীয়ানকে ছুটিয়ে নিয়ে চলে রাজ্য থেকে রাজ্যান্তরে। সকাল থেকে সন্ধ্যা হয়, সূর্য অস্তে নামে, ক্লান্তি এসে ইরাবানকে আর তার তুরীয়ানকে আচ্ছন্ন করে। তারা থামে, পথের ধারের কোনো সরাইখানায় আশ্রয় নেয়। রাত্রিটা সেখানে কাটিয়ে আবার পরদিন ভোরে চলা শুরু করে।

এইভাবে পার হয়ে যায় অনেকদিন।একদিন দুপুরবেলা এক নদীর ধারে ইরাবান দেখে একজন জটাজূটধারী সাধু বসে আছেন। সেদিন খুব গ্রীষ্ম, ইরাবান অত্যন্ত ক্লান্ত ও তৃষার্ত বোধ করছিল। তুরীয়ানেরও মুখে ফেনা উঠে গেছিল। নদীর ধারে থেমে নদীর জল পান করে দুজনেই একটু সুস্থ হলো।

এবার রাজপুত্তুর সাধুর কাছে গিয়ে তাঁকে প্রণাম করে মাটিতে বসলো একটু বিশ্রাম করবে বলে।
সাধু নিজে থেকেই বললেন, "কী চাও তুমি বত্স?"
রাজপুত্র মুখ তুলে খুব ক্লান্ত গলায় বললো,"আমি একজনকে খুঁজছি। বহুদিন ধরে। আমি কি সফল হবো?"
সাধু হেসে বললেন,"জানি তুমি কাকে খুঁজছো।"
রাজপুত্র দারুণ অবাক হয়ে গেছে, বললো,"আপনি জানেন? কাকে খুঁজছি?"
সাধু বললেন,"তুমি খুঁজছো তোমার স্ত্রী, যাদুকরী রাজকুমারী ভানুমতীকে। কী, আমি ঠিক বলেছি?"

ইরাবান সাধুর পায়ে লুটিয়ে পড়ে বললো," আপনি আমায় দয়া করুন। আমারই ভুলে আমি তাকে হারিয়েছি। বলুন কি করলে তাকে ফিরে পাবো?"

সাধু বললেন,"তুমি সব কথা জানোনা। জানো কি যাদুকরী ভানুমতী জন্মেছিল তার বাবা যাদুসম্রাটের চেয়েও বেশী যাদুজ্ঞান নিয়ে? তাই তার বাবাই তাকে অভিশাপ দেন। সে ব্যাঙ হয়ে যায়। পরে তা থেকে মুক্তির উপায়ও একটা ঠিক হয়। সেই পথেই সব চলছিল।কিন্তু তুমি ওর ছদ্মবেশ আগে ভাগে পুড়িয়ে দিয়ে গন্ডগোল করে ফেলেছ। এখন তাকে নিয়ে গেছে অমর কাশ্যপ। সে ওকে বন্দী করে রেখেছে অত্যন্ত সুরক্ষিত জায়গায়। সেখানে পৌঁছনো অত্যন্ত কঠিন, প্রায় অসম্ভব।"

কঠিন প্রতিজ্ঞার গলায় ইরাবান বলে,"যতো কঠিনই হোক, আমাকে সেখানে যেতেই হবে।দয়া করুন সাধুবাবা।পথ বলে দিন।আমাকে প্রায়শ্চিত্ত করতে দিন।"

ইরাবান এত কাতরভাবে অনুনয় করছে দেখে সাধুবাবার মন গলে জল। তিনি ওকে পথ বলে দিলেন অমর কাশ্যপের সুরক্ষিত পুরীতে পৌঁছনোর। আরো বলে দিলেন,"শোনো রাজপুত্তুর। মন দিয়ে শুনে নাও। অমর কাশ্যপের প্রাণ আছে ছোট্টো এক সোনার সূচের ডগায়। সেই সূচ আছে এক ডিমের ভিতর।সেই ডিম আছে এক হাঁসের পেটে। সেই হাঁস আছে এক খরগোসের পেটে আর সেই খরগোস আছে এক বিরাট বটগাছের কোটরে। সেই গাছ নিত্যদিন পাহারা দেয় অমর,তার চোখের মণির মতো।যদি সেই দুরূহ সূচ উদ্ধার করে তার ডগাটা ভেঙে ফেলতে পারো তবেই কাশ্যপ মরবে। তাহলেই, একমাত্র তাহলেই ভানুমতীর মুক্তি।"

শুনে ইরাবানের মনটা একটু দমে গেল।পারবে কি এত সাংঘাতিক কঠিন শর্ত পালন করে উদ্ধার করে আনতে তাকে? তবু সে মনে মনে সাহস সঞ্চয় করে বললো,"আশীর্বাদ করুন, যেন সফল হই।"

সাধুবাবা দুহাত তুলে আশীর্বাদ করলেন তাকে। রাজপুত্র ঘোড়া চড়ে রওয়ানা হলো রাজকন্যা উদ্ধারে।

পথে প্রথমে পড়লো কনকনে ঠান্ডা তুষারের নদী। সেই ঠান্ডা সহ্য করে ওপারে পৌঁছে পড়লো এক গহন জঙ্গল। অসংখ্য হিংস্র বন্যজন্তু সমাকীর্ন সে জঙ্গল পার হয়ে পড়লো এক বিশাল উঁচু পাহাড়। সেই পাহাড়ের পাদদেশে বসে ইরাবান যখন বিশ্রাম নিচ্ছে তখন ধেয়ে এলো এক বিরাট ভল্লুক। তাকে মারতে যখন ইরাবান অস্ত্র তুলেছে, সে কাতর অনুনয় করে বললো,"মেরো না মেরো না রাজপুত্তুর। হয়তো কখনো আমি তোমার কোনো উপকার করতেও পারি বা।" রাজপুত্রের দয়া হলো।সে ভল্লুককে চলে যেতে দিলো।

এবার ঘোড়া নিয়ে এগোতে এগোতে পথে পড়লো এক খরগোস।তাকে মারতে গেলেও সে মানুষের গলায় বললো,"মেরো না মেরো না রাজপুত্তুর। হয়তো আমি কোনোদিন তোমার কোনো উপকার করতে পারি।" রাজপুত্তুর তাকেও ছেড়ে দিলো।

সেইদিন সন্ধেবেলা এক বিরাট উপত্যকার কাছে পৌঁছে রাজপুত্র দেখলো, আকাশে অনেক হাঁস উড়ছে। খিদেও পেয়েছিল খুব রাজপুত্রের, ধারে কাছে দোকানপাটও কিছু ছিলনা। তাই রাজপুত্তুর ভাবলো,"একটা হাঁস মেরে রোস্ট করে খেলে কেমন হয়?" ভেবে যেই না তীর ধনুক তুলেছে হাঁস মারবে বলে,অমা এক হাঁস অমনি মানুষের গলায় বলে কিনা," রাজপুত্তুর যদি তুমি হাঁস না মারো,তাহলে কোনোদিন আমি তোমার কোনো বড়ো উপকার করবো।" ইরাবান অবাক হয়ে তীর ধনু নামিয়ে ফেললো, মাটিতে উষ্ণীষের শয্যা পেতে শুয়ে সেই রাতে অনাহারেই সে নিদ্রা গেলো।

পরদিন আবার ঘোড়া চড়ে সে চললো। চলে আর চলে, চলে আর চলে। অবশেষে পৌঁছলো সমুদ্রতীরে। সেখানে এক বিরাট পাইক মাছ শুয়ে ছিল সমুদ্রতীরের বালিতে। ক্ষুধার্ত রাজপুত্র যেই না তাকে মারতে গেছে অমনি সে বললো,"মেরো না গো, ভালোমানুষের ছেলে। কি জানি হয়তো কোনোদিন আমি তোমার কোনো উপকার করবো।" দয়ালু রাজপুত্র তাকে জলে ছেড়ে দিলো।

আরো বহুদিন অনেক পথ চলে সে অবশেষে পৌঁছালো কাশ্যপের পুরীতে। দূর থেকেই দেখতে পাচ্ছিল সেই বিরাট বটগাছ। কিকরে সে গাছের কোটর থেকে খরগোসকে বার করবে ভেবে ভেবে মাথা কুটছে, এমন সময় কোথথকে এসে উদয় হলো সেই ভল্লুক। সে তিনলাফে গাছের কাছে পৌঁছে কোটরের ভিতরে হাত ঢুকিয়ে দিয়ে বার করে আনলো খরগোসটাকে। কিন্তু খরগোস ভল্লুকের মুঠো ছাড়িয়ে ছুট দিলো খুব জোরে। রাজপুত্র হায় হায় করছে, অমনি সেই পুরানো বন্ধু খরগোস এসে ছুটে পিছু নিল পলাতক খরগোসের। সেই গিয়ে ঘাড়ে কামড়ে ধরলো খরগোসটার। রাজপুত্র যেই গিয়ে তলোয়ার দিয়ে খরগোসটাকে কেটেছেন অমনি তার পেট থেকে হাঁস বেরিয়ে উড়ে গেলো আকাশে। এবার আকাশের দিকে তাকিয়ে রাজপুত্র কপাল চাপড়াচ্ছেন, অমনি রাজপুত্রের সেই বন্ধু হাঁস এসে এই হাঁসের পিছু নিল।বন্ধু হাঁস যেইনা গিয়ে এই পলাতক হাঁসের ঘাড়ে পড়েছে, অমনি এই হাসের পেট থেকে ডিম খসে পড়লো নীচে সমুদ্রে।জলে ডুবে গেলো তা। এবার আর কোনো আশা নেই ভেবে রাজপুত্র জলের ধারে বসে কাঁদছেন অমনি জল থেকে মাথা তুললো সেই পাইক মাছ। ডিমটা তার মুখে ধরা।

রাজপুত্র তো আহ্লাদে আটখানা। অনেক ধন্যবাদ দিয়ে ডিমখানা নিয়ে পাথরে ঠুকে ভাঙলো রাজপুত্তুর। সেই ছোট্টো সূচখানা জ্বলজ্বল করে উঠলো আলোয়। রাজপুত্র ডগাটা ভেঙে ফেলে পাথরের টুকরো দিয়ে ঘষে ঘষে চূর্ণ করে ফেল্লেন। তার সঙ্গে ধ্বংস হলো অমর কাশ্যপ।

এবার রাজপুত্র চললেন কাশ্যপের পুরীতে। সেখান থেকে বন্দিনী রাজকন্যা ভানুমতীকে উদ্ধার করে নিয়ে চললেন নিজ রাজ্যে। যেদিন তারা রাজারানী হিসাবে অভিষিক্ত হলো, সেইদিন রাজ্যের সমস্ত লোকতো নিমন্ত্রিত হয়েছিলই, তাদের সঙ্গে খুশীভরা মনে যোগ দিয়েছিল সেই বন্ধু ভালুক, হাঁস, খরগোস আর পাইক মাছ।

তারপরে? তারা সুখে শান্তিতে সংসার করেছিল বহু বহু বছর।

***


মন্তব্য

স্নিগ্ধা এর ছবি

ফুলকো লুচি আর বড় বড় আলু দেয়া মাংসের ঝোল, না?! রাজামশাই এক্সট্রা ক্রেডিট দিয়ে থাকতে পারেন, কিন্তু আমি এক্সট্রা মাইনাস দিলাম রেগে টং

আপনার অন্যান্য গল্পের/উপকথার তুলনায় একটু বেশি লম্বা ছিলো কি এটা?

পড়তে যে খুব ভালো লাগলো, সেটা না বললেও বুঝে নেবেন হাসি

তুলিরেখা এর ছবি

আরে সামান্য লুচি মাংস। পোলাও কোর্মা তো আর না! হাসি

আসলে এই গল্পটা বছর পাঁচেক আগে একটা পত্রিকার ছোটোদের বিভাগে দেবার উদ্দেশ্যে লিখছিলাম, কিন্তু দেওয়া হয় নাই। দৈর্ঘ এই কারণেই একটু বেশী।

আপনার ইয়ে মানে অভিনন্দন বুঝিয়া পাইলাম। হাসি
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

হিমু এর ছবি

উপর্যুক্ত কারণেই কইষ্যা মাইনাস।

গল্পটা পড়ে মনে পড়লো প্রেমেন্দ্র মিত্রের একটা গল্পের কথা, "কালরাক্ষস কোথায় থাকে।" যদিও সেটার প্লট সম্পূর্ণই অন্যরকম।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

তুলিরেখা এর ছবি

আপনার মাইনাস বুঝিয়া পাইলাম। লুচিমাংস ফেডেক্স করিয়া পাঠাইলাম। হাসি

"কালরাক্ষস কোথায় থাকে" পড়া নাই আমার। মুখে মুখে গল্পটা কইয়া দিবেন?

-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

অনিন্দিতা চৌধুরী এর ছবি

খুব ভাল লাগল। একদম ছোটবেলায় চলে গিয়েছিলাম।
আহা লুচি মাংসের জন্য বড্ড আফসোস হচ্ছে।

তুলিরেখা এর ছবি

ধন্যবাদ অনিন্দিতা।
আফসোস করে কী আর হবে! বরং মাংস রাঁধুন, ফুলকো ফুলকো করে লুচি ভাজুন। ভেজেছেন?। এবারে আমার পাতে দিন। হাসি
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

একেবারে জেনুইন ঠান্‌দিদির কাজ করেছেন!!

ভিনদেশী গল্পগুলোর সাথে আমাদের দেশী গল্পগুলোর অনেক মিল থাকে, তাই এমন ভার্সান সবাই পছন্দ করার কথা। তাছাড়া নিজের জানার সীমার গল্পগুলোর উপাদান পেলে শিশুদের কাছে তা আরো উপভোগ্য হয়ে ওঠার কথা।

অনিকেতের মত হাজার তারাভরা আকাশ উপহার দিলাম।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

তুলিরেখা এর ছবি

আপনার তারাভরা আকাশ রেখে দিলাম আকাশে ছড়িয়ে। ভালো থাকবেন।

আসলে আমার দ্বিধা ছিলো গল্পটা পোস্টানোর ব্যপারে, এতটাই পালটে গেছে রুশ উপকথাটা যে ভাবছিলাম হয়তো অনেকের কাছে তেমন জুৎসই লাগবে না। যাই হোক, আপনাদের উৎসাহ পেয়ে ভালো লাগছে, ভরসা পাচ্ছি।
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আপনি ছিলেন বলেই পাঠ তালিকায় আবার যুক্ত হলো রূপকথা

তুলিরেখা এর ছবি

শুনে খুবই ভালো লাগছে। পড়ুন। আপনার দক্ষ লেখাগুলোর মধ্যে সুকৌশলে ঢুকিয়ে দিন উপাদান। বলতে কি এগুলো তো চিরকালের গল্প, ফিরে ফিরে আসে।
এইসব গল্প গুলোর মধ্যে আসলেই চিরন্তন খাঁটি একটা কিছু আছে, মানুষের ভিতরের যে চিরশিশু তাকে তো খাঁটি জিনিস না দিলে চলেনা, বলুন? -----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

যুধিষ্ঠির এর ছবি

চমৎকার লাগলো!

কেনো যেনো মনে হলো, আমাদের ছোটবেলায় পড়া অনেকগুলো রূপকথার গল্পের মিলমিশ এটা। মানে, আমি বলতে চাইছি যে, দেশ বিদেশের রূপকথাগুলোতে তো একরকম মিল থাকেই, কিন্তু এই রুশ গল্পটার ভেতরে আমাদের দেশী রূপকথার অনেকগুলো গল্পের সমাহার দেখতে পেলাম যেনো।

চলুক

তুলিরেখা এর ছবি

সত্যিই বিভিন্ন জায়গার রূপকথা উপকথা কিংবদন্তীতে অনেক মিল।
এই গল্পটায় সত্যি আমাদের চেনা গল্পগুলোর সাথে মিলে যায় এমন অনেক উপাদান আছে।
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

বইখাতা এর ছবি

খুবই শান্তি পাইলাম। হাসি

তুলিরেখা এর ছবি

পাইলেন? শুনিয়া আমিও শান্তি পাইলাম। হাসি
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

মুস্তাফিজ এর ছবি

রূপকথা পড়তে ভালোই লাগে, সাথে যোগ হয়েছে আমার ছেলে, আপনার পোস্ট দেখলেই বলে পড়ে শোনাও।

.........................................
I think what I think because that's how I am. You think what you think because that's how you are.

...........................
Every Picture Tells a Story

তুলিরেখা এর ছবি

শুনে যে কি ভালো লাগলো! পিচ্চিদের কেউ একজনও যদি এইসব উপকথার গল্পগুলো শুনে খুশি হয়, তারচেয়ে ভালো আর কিছু হতে পারে না। বড়োদের জন্য তো সিনেমা টিনেমা নানা রকম খটমট গল্পের বই টই আছেই, পিচ্চিদের জন্য যত্নে করা বইয়ের যে খুব অভাব।
ভালো থাকবেন।

-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

জুয়েইরিযাহ মউ এর ছবি

অতঃপর যুগ যুগ ধরে সুখ-শান্তির বসবাস।
আহ্ ! রূপকথা, স্বপ্ন-বিভোর সুখকথা হাসি
--------------------------------------------------------------
জানতে হলে পথেই এসো, গৃহী হয়ে কে কবে কি পেয়েছে বলো....


-----------------------------------------------------------------------------------------------------

" ছেলেবেলা থেকেই আমি নিজেকে শুধু নষ্ট হতে দিয়েছি, ভেসে যেতে দিয়েছি, উড়িয়ে-পুড়িয়ে দিতে চেয়েছি নিজেকে। দ্বিধা আর শঙ্কা, এই নিয়েই আমি এক বিতিকিচ্ছিরি

তুলিরেখা এর ছবি

ধন্যবাদ মউ। হাসি
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

সাফি এর ছবি

আহা আহা সাধু সাধু। ঠানদি দীর্ঘজীবি হোন হাসি

ওডিন এর ছবি

এই গল্পটার একটা রাশান পপ-আপ বুক (এর বাংলা কি হবে? ত্রিমাত্রিক চিত্রসংবলিত শিশুতোষ পুস্তিকা??) আমার কাছে কিভাবে কিভাবে যেনো এখনো রয়ে গেছে!

এরিজন্য এইবার সবাই আমাকে হিংসা করতে পারেন। দেঁতো হাসি

খুব সুন্দর করে লিখেছেন বলে অনেক ধন্যবাদ। ইরাবান নামটা চেনা চেনা লাগছে। অর্জুন আর উলুপির ছেলের নাম নাকি?
---------------------------------------------
ফুল ফোটে? তাই বল! আমি ভাবি পটকা। চিন্তিত

তুলিরেখা এর ছবি

বলেন কী আপনি! এই গল্পের পপ আপ বই রয়ে গেছে!!!!! লোকে তো হিংসে করবেই!
আচ্ছা, "পেন্সিল ও সর্বকর্মা" কি আপনার আছে? থাকলে উইকিতে তুলে দেবেন? বা পিডিএফ বানিয়ে দেবেন?
হ্যাঁ, আপনি ঠিকই বলেছেন , অর্জুন আর উলুপীর ছেলের নাম ছিলো ইরাবান। কী সুন্দর নামটা না? সমস্ত মহাভারতে এত সুন্দর নাম আমি খুব কমই পেয়েছি!

----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আচ্ছা সোভিয়েত দেশটাতো আর বেঁচে নেই। প্রগতি/রাদুগা/মীর-এর বইগুলোর মালিক তাহলে কারা হয়? অমন কোন মালিক না থাকলে বইগুলো (যার কাছে যা আছে) স্ক্যান করে নেটে আপলোড করে দেয়া যায় না? আর মালিক পেলে তাদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই না হয় বাংলা বইগুলো আপলোড করে দেয়া যায়। বাংলা বই নিয়ে রুশ্‌কী মালিকের বিশেষ মাথাব্যথা থাকার কথা না। তাতে আমাদের শৈশব ফিরে আসুক বা না আসুক যাদের শৈশব সামনে আসবে তাদের উপকার হবে।

আইসক্রীম দে ভেনিয়া কাশ্‌কিনকে! আইসক্রীম দে!!



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

আরে মাত্র কালকে ফেসবুকে নজরুল ভাইকে এই রিকোয়েস্ট করলাম। আপলোড করলে কি যে ভাল হয়। কি ভীষণ ভাল হয়।

তুলিরেখা এর ছবি

অতি চমৎকার হয়। বইগুলোর গল্পগুলো একেকটা রত্ন!

আহা সেই ঝলমলে বাজ ফিনিস্ত! আর সেই রাগী যাদুকর রাজা অদীক্ষিত ললাট! কিছুতেই মেয়ে ভাসিলিসাকে ইভানের সঙ্গে বিয়ে দেবে না! কতদিনের সেইসব গল্প!

তাছাড়া সিরিয়াস গল্পের বইগুলো-ইস্পাত, মানুষের মত মানুষ, ধলা কুকুর শামলা কান, সার্কাসের ছেলে, পাহাড় ও স্তেপের আখ্যান-এগুলোও আপলোড হলে চমৎকার হয়। "প্রথম শিক্ষক" গল্পটা কোনোদিন কি ভোলার?

আর "ভোল্গা থেকে গঙ্গা" কারুর কাছে থাকলে প্লীজ পিডিএফ বানিয়ে আপলোড করে দিন।
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

পেন্সিল আর সর্বকর্মা আমার কাছে আছে। ঝলমলে বাজ ফিলিস্তের পালক অর্ধেক অনুবাদ করে বসে আছি দুই বৎসর ধরে। এবার দেখি শেষ করতেই হবে। একটা ভালো স্ক্যানারও কিনতে হবে দেখি। হে ভাই-বোনেরা একটা সাইট বানান দেখি! সেখানে আমরা একে একে বইগুলো আপলোড করতে থাকি। মামলা খেলে সবাই একসাথে না হয় ডাল-রুটি খাওয়া যাবে।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

তুলিরেখা এর ছবি

তাহলে খুব চমৎকার হয়। আরে টেকনিকাল লোকেরা গেলেন কই? ঝটপট একটা সাইট বানিয়ে ফেলুন না!
আহা, সেই " ফিনিস্ত, ফিনিস্ত, কোথায় আমার ঝলমলে বাজ, কই গেলি তুই? আর ঘুমায় না, ওঠ ওঠ " কতদিন শুনি না। শীগগীর করে আপলোডান।
বাবাইয়াগাকেও কতদিন দেখিনা! হেঁটে-বেড়ানো বাড়ীর বুড়ী বাবাইয়াগা! কাঁকড়পাথরকড়াইমটর মেশানো চালগম ভাসিলিসাকে বাছতে দিয়ে যে কিনা খিকখিক করে হাসে আর বলে "না বাছতে পারলে গেলি তুই, এক্কেবারে গেলি।" (গ্রীক উপকথার খুব সুন্দর গল্প কিউপিড আর সাইকির গল্পেও এরকম একটা ইভেন্ট আছে, ভেনাসদেবী সাইকিকে পরীক্ষা করার জন্য পাঁচরকমের দানা মেশানো গমের স্তূপ দিয়ে বলেছিলেন সবরকমের দানা আলাদা করতে। হয়তো রুশদেশ থেকে এ গল্প গুপী হয়ে গ্রীসেরোমে গেছে হাসি )
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।