একদিন এক স্রোতস্বিনী কে পার হয়ে যাব বলে প্রবল উদ্যমে ঘুম থেকে উঠে দাড়িয়েছিলাম। আমার পূর্বপুরুষ যারা সেই একই স্বপ্নকে বুকে ভরে গিয়েছিলেন স্রোতস্বিনীর উপারে , তাদের কারু নামগন্ধও ফিরে আসেনি কখনো -এই মর্মে সতর্কবাণী জারি করে আবারো ঘুমিয়ে পড়লো আমার আত্নজা। তার ভাবলেশহীন ঘুমন্ত মুখ আমার স্মৃতিকে প্রতারিত করলো কিছুটা - যারা কেবল তার ছায়াকে সঙ্গিনী করে হারিয়ে গিয়েছিল দূর কুয়াশায় অ ...
তাকে সবাই দেখে।
হেঁটে অথবা রিকশায়। যেই যায় তাকিয়ে দেখে তাকে।
শুধু তাকায় না সে। কোন ভ্রুক্ষেপ নেই, নেই কোন বিকার।
সে আছে তার আপন খেয়ালে, খড়কুটোর ছায়ায়।
একেবারে নগ্ন সে।
আমিও দেখি তাকে সিগারেটের ধোঁয়ায় চোখে আগুন জ্বালিয়ে। রিকশা চলে যায় আপন গতিতে তাকে পাশ কাটিয়ে। সে থেকে যায় তার জায়গায়, নগ্ন একা।
আমি চোখ ফেরাই। রঙ্গিন চশমার নিচে ঢাকা পড়ে যায় আমার হাস্যরত চোখজোড়া। নিজের উপর হ ...
আমি অবশ্য অশ্রুত ছিলাম না কোনদিন। কেউ থাকেও কি তা, বিশেষত ‘হিয়ারিং’ আর ‘লিসেনিং’ এর বাংলা যদি হয় একই। আশ্চর্যজনকভাবে আমার পক্ষপাত ছিলো প্রথমটার প্রতি। তীক্ষন দৃষ্টি সবার হজম হয় না, আমার হতো না। আমার স্বর মৃদু থেকে মৃদুতর হয়ে আড়াল দিতে থাকে আমাকে আর আমি, আরো অনেকের মতো, আস্তে আস্তে নির্বিঘ্ন হয়ে উঠতে থাকি। আমার কন্ঠস্বর একসময় উড়ে যায় কিন্তু তার সূতা রেখে যায় আমার বাম হাতের কনিষ্ঠ ...
সরু গলি, চেনা রাস্তা শুধু টানে। যতবার এ-পথ দিয়ে ফিরি ততবার চোখ টেনে ধরি যতদূর যায়। সরব জনপথ, কেবল আমিই কাউকে দেখি না। নিথর আঁখি কাকে খোঁজে!... আজও স্পর্শের ঘ্রাণে দু'চোখ কেন্দবিন্দুতে খোঁপ গেঁড়ে বসে। দূরপথের যাত্রী, নেশাতুর চোখ, অদেখাক্লান্তি লেগে থাকে কপালের ভাঁজে। কাঁচা ঘুমের নেশায় ঢলে পড়ে চোখ। যাতায়াতের জন্য এই একটি মাত্র রাস্তা। গলির কাছাকাছি আসতেই মনের অগোচরে নেশা কাটে। চলন ...
ছোট্ট এক গল্প।
একজন মাত্র তার কথক, একজনই তার নায়ক।
জানালার পর্দা একটাই, এ মাথা থেকে ও মাথা।
একটাই তার ফুলহাতা শার্ট, একটাই তার ফরমাল প্যাণ্ট।
তাই হয়তো আজ সে একলা দাঁড়িয়ে, হোয়াইট বোর্ডটার দিকে তাকিয়ে।
দরজাগুলো বন্ধ। বাতিগুলো সব জ্বলছে, তারা ঝলমলে তাদের আলো।
নতুন কিছু নয় তার জন্য। প্রায়ই সে বসে থাকে এভাবে, সবশেষে।
শূন্য ঘর জুড়ে একজোড়া শূন্য দৃষ্টি দিয়ে যায়।
হঠাৎই সে হেসে ওঠে। ...
১.
কালুগাজী মনে মনে কি কি সব যেন ভাবে আর খ্যাক খ্যাক করে হাসে। নিভে যাওয়া বিড়ির টুকরার দিকে উদাস চোখে তাকায়। জীবন এই রকমই। আজ বড় বেশি দার্শনিক হয়ে উঠতে চায় যেন মন। জেলে কেটে যাওয়া এতগুলো বছরে অনেকখানি দূর্বল হয়ে এসেছে বোধ , কিছুটা ফিকে হয়েছে এতকালের অমিত সাহস। তাই বলে এরকম কাপুরুষের মত
খুন হতে হবে! কালুগাজী নিজে কথনো খুন করতে ভয় পায়নি। ফরেস্ট অফিসারের চোখে চোখ রেখে কোপ দিয়েছিল গলা ...
ছেলেবেলায় একটা অদ্ভুত খেলার সাথী ছিল আমার। লাবু পাগলি।
লাবু পাগলি চেঁচাতো না, লাফাতো না। মানুষ দেখলে তেড়ে যেত না। শুধু কেমন কেমন করে যেন হাঁটতো, কেমন কেমন করে যেন কথা বলতো। আর খালি হাসতো। পাগল তো, তাই।
খুব ছোটবেলার কথা তো, ভাল করে কিছু মনেও নেই। শুধু মনে পড়ে, লাবু পাগলি আমার পুতুলের শাড়িটা পরিয়ে দিত, নারকেল পাতা দিয়ে চশমা বানিয়ে দিত। আর আমার অসুখ হলে মুখের উপর উবু হয়ে মাথায় ইলিবিলি ...
দুপুর পড়ে এলে পর শাহেদের জানালা দিয়ে রোদ ঢুকে। বিকেলের পড়ন্ত রোদ। ছোট জানালা তার ঘরে, একটাই। সমস্ত দিন ধরে বিশ্বচরাচর ধুয়ে এসে বিকেলের রোদ যেন জানালা ধরে ঢুকে পড়ে। তার খাটের পায়ার কাছে এসে আলগোছে চুপটি করে বসে থাকে। একটু জিরিয়ে একটা আদুরে বেড়ালের মতো। বেশ ভালো লাগে শাহেদের।
সুতপা যেন বুঝতে পারে শাহেদের এই ভালোলাগা। তাই তো, কোন কথা না বলে নীরবে বসে থাকে তার পাশে। তবুও চোখের আদর ...
বিচার
ছোট্ট অপুরও যে একটা মন আছে এবং সেই ছোট্ট মনটা যে এখন ভীষন খারাপ তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। বাবা ডাকছেন। ছোট বোনটার উপর তাই ভীষণ রাগ হচ্ছে। এই রাইমাটা এমন পাজী। ঠিকই গিয়ে বাবাকে নালিশ করেছে। আচ্ছা, বড় ভাই হিসেবে না হয় ওকে একটা কিলই দিয়েছি, তাই বলে ভ্যাঁ করে কেদে-কেটে নালিশ করতে হবে কেন?
অপুর বাবা নেজামত সাহেব পত্রিকা পড়ছিলেন। অপু তার কাছে গিয়ে দাড়ালো। রাইমাটা পাশেই ব ...
বিকেলটা হাসছিল। চাহিবামাত্র রিকশা পেয়ে যাওয়ায় নীতুও। রোদ কমে গেছে। হেমন্তের সূর্যে তাপ নেই।
রিকশাটা গলিতে ঢুকতেই চেইনটা পড়ে গেল। রাস্তার একপাশে থেমে গেল। পেছনে গিয়ে চেইন টানাটানি করছে রিকশাওয়ালা। জায়গাটা নির্জন। এঁদো গলি। কোন বাসাবাড়ি নেই এদিকে। দুপাশে আধভাঙ্গা দেয়াল।
নীতু বুঝে ফেলেছে কেন চেইনটা পড়ে গেল হঠাৎ। যে কোন সময় একটা সিএনজি টেক্সী এসে দাঁড়াবে পাশে। পিস্তল/চাপ ...