মন্তব্যের মন্তাজ - ১

অনিকেত এর ছবি
লিখেছেন অনিকেত (তারিখ: রবি, ১৭/০২/২০০৮ - ১২:২৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এক ----
সারাটা ছোট বেলা কাটিয়ে দিলাম ভুগোল কে ভয় পেয়ে। কোথায় কোন পাহাড়, কি তার সর্বোচ্চ শৃংগের নাম, কোন শহরের কি নাম (শিকাগো---বাতাসের শহর) এরকম হাজারো ফ্যাকড়া।

কিছুতেই মনে রাখা যাচ্ছে না। শেষে ঠিক করলাম এই ভাবে জীবন চলতে পারে না। পাহাড় আর নদী গুলো একটু বেশি ঝামেলা করছিল। তাই মনস্থির করে ফেললাম, যে দেশেরই নদী হোক না কেন, ইউরোপের কোন নদী হলে আমি ওইটাকে প্রশান্ত মহা সাগরে ফেলে দেব।উপ-মহাদেশের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আরো সোজা। Randomly বঙ্গোপসাগর বা ভারত মহাসাগরে ফেলে দিলেই হল। পাহাড়্গুলো ঝামেলা করছিল।
নদীর মত সহজে কোথাও ফেলে দিতে পারছিলাম না। অনেক চিন্তা করে শেষে আরো চিন্তাবিদরা যা করেন, আমিও তাই করলাম। কিছু কিছু পাহাড়ের নাম মুখস্থ করে তারপর আমার যেখানে ইচ্ছা সেখানে নিয়ে যাচ্ছিলাম। আমার নিজের কেরামতিতে আমি নিজেই মুগ্ধ হয়ে গেলাম, যখন দেখলাম যে হাফ-ইয়ার্লিতে আমি ভুগোলে বেশ ভালো নম্বর পেয়ে গেলাম।

স্বীকার করতেই হবে যে টেকনিকটা খারাপ ছিলো না। কিন্তু ধরা খেয়ে গেলাম বার্ষিক পরীক্ষায়। আমার ধারনা ছিল যে ভুগোল স্যাররা আসলে পরীক্ষার খাতা দেখেন না। কোন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ সারা পৃথিবীর কোন চিপায় কি আছে সেইটা মুখস্ত করে রাখার জন্য তার জীবনের 'মুল্যবান' সময় অপচয় করছে, এইটা আমি ভাবতেই পারিনা। তার উপর কেউ শুধু মুখস্ত করেই ক্ষান্ত নন, এই বিষয়ে গাদা খানেক ছেলে কি সব হাবিজাবি লিখেছে, সেইটা আবার নিরীক্ষা করে দেখছেন.........আমার কাছে সেইটা অসম্ভবের আরেক নাম।
তাই আমার স্থির বিশ্বাস ছিল যে, স্যাররা আসলে তাদের পোলাপানদের খাতা দেখতে দিয়ে দেন, আর বলে দেন যে,on average ষাট-পয়ষট্টির বেশি যেন মার্ক না দেয়। হয় আমার ভূগোল স্যারের ছেলেপিলে ছিল না অথবা স্যার আসলেই সেই সব বিরল প্রজাতির লোক যারা খাতা খুটিয়ে পড়েন।

যে কারনেই হোক না কেন, সে বার ভূগোলে কম নাম্বার পাওয়াটাই আমার জন্য শেষ ভোগান্তি ছিল না, নেপথ্যে স্যারের হাতে কানমলাও খেয়েছিলাম।

কেউ কি খেয়াল করেছেন যে ভূগোল, ভয় আর ভোগান্তি---- এই তিনটাই 'ভ' দিয়ে শুরু?
হুমম.........

দুই-----------

ভূগোলকে নিয়ে আমার প্রতিহিংসার শেষ ছিল না। যদি খুব 'ব্যা'-করন মেনে বলতে চাই, তাহলে আমাকে প্রতিহিংসার বদলে 'জিঘাংসা' শব্দটা ব্যবহার করতে হবে। কাজেই আমার খুশির অন্ত ছিল না যখন আমি 'আবিষ্কার' করলাম যে আমাদের ভুগোল বইয়ে একটা 'মস্ত' বড় ভুল রয়েছে। শুধু তাই নয়, অনাদিকাল হতে এই ভুল চলে এসেছে। আমি ছাড়া আর কারো চোখেই এই জিনিসটা ধরা পড়েনি!

ব্যাপার আর কিছুই না, যে কোন দেশের বিবরনে লেখা থাকে, অমুক দেশের 'আয়তন' অমুক হাজার বর্গমাইল। আয়তন শব্দটা আমরা সাধারনত 3D বস্তুর জন্য ব্যবহার করি। এবং তার একক 'বর্গ' নয়---- 'ঘন'। দেশের মানচিত্র নিয়ে যখন কথা বলি তখন আমরা ত্রিমাত্রিক অবস্থা নিয়ে ভাবিনা। আমরা একটা 'ক্ষেত্রফল' বের করি। আর কে না জানে যে ক্ষেত্রফল একটা দ্বিমাত্রিক বিষয়। দেশের তাই আয়তন হবে না, হবে 'ক্ষেত্রফল'। আমার এই যুক্তির স্বপক্ষে আরো প্রমান মিলল, যখন ভুল করে একটা ইংরাজি ভুগোল বইয়ে হাত পড়ে গিয়েছিল। সেখানে তারা যেকোন দেশের 'area' নিয়ে কথা বলে-----'volume' নিয়ে নয়।

আমার অন্যতম প্রিয় শত্রুর এই দোষ ধরতে পেরে, সে রাতে (এবং তার পরের কয়েক রাতে) আমার বেশ গভীর ঘুম হয়েছিল------এইটা বেশ মনে আছে।


মন্তব্য

স্নিগ্ধা এর ছবি

ভূগোল অসহ্য ......... !

অনিকেত এর ছবি

যাক, আরেক জন কে পাওয়া গেল।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

আরেকজন আছে এদিকে। চোখ টিপি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

স্বপ্নাহত এর ছবি

ভূগোল জানার জন্য মজার,পরীক্ষার খাতায় লেখার জন্য মোটেও নয়...

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

রাগিব এর ছবি

ভূগোল বইগুলো লেখা হয় খুব বাজে করে। ঠিক মতো করে লিখলে, মজা করে ভূগোল শেখালে অনেক ভালো লাগতো।

যেমন ধরুন ইকুয়েডর দেশটার কথা। ঐদেশী এক সহকর্মীর একটা ছবিতে দেখলাম, একটা স্তম্ভ, ঠিক নিরক্ষরেখা বরাবর। মানে তার এক দিকে উত্তর গোলার্ধ আর আরেক দিকে দক্ষিন গোলার্ধ। অনেকেই মজা করা দুই গোলার্ধে পা রেখে ছবি তুলছে। এরকম মজার মজার সব তথ্য দিয়ে ভূগোল শেখানো দরকার। তা না করে কোন জায়গায় কত ট্রিলিয়ন টন কয়লা আছে, আর কোথাকার মাটি কী রকম, তা মুখস্ত করে কোনো লাভ হবে না।
----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
http://www.ragibhasan.com

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

অনিকেত এর ছবি

এক্কেবারে সহমত

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

বহু কষ্টে আফ্রিকার খনিজ সম্পদের বিবরণটা মুখস্ত করেছিলাম - আখ-স্বহীকতা-টি (আকরিক লৌহ, খনিজ তেল, স্বর্ন, হীরা, কয়লা, তামা, টিন) ফর্মূলায়। এর বাইরে অস্ট্রেলিয়ার বনজ সম্পদের ক্যাঙ্গারু আর অপসাম আঁকতেই টাইম শেষ। অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশের অংক মনে হতো সূচকের চ্যাপ্টারের চেয়েও কঠিন। মন খারাপ

অনিকেত এর ছবি

শিমুল ভাই,

খাঁটি কথা বলেছেন। অষ্ট্রেলিয়ার পশুপাখি, দক্ষিন আমেরিকার খনিজ সম্পদ এইসব হাবিজাবি শিখছি। এই দিকে নিজের দেশের ইতিহাসটা ভালো করে পড়ানো হয় না।

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

এরকম সূত্র তৈরি করে আমিও (এবং বন্ধুরাও) পড়তাম; কিন্তু তার মানে এই নয় যে, একজন এই বুড়া বয়সেও এগুলা মনে করে রাখবে!!!!

আপনি কি ভূগোলের টিউশনী করান নাকি ভাই?!!

___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"

কনফুসিয়াস এর ছবি

মহাকাশ চ্যাপ্টারটা কি ভুগোলের ভিতরে? ঐটা কিন্তু আমার বেশ ভালো লাগে।
-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

রায়হান আবীর এর ছবি

আল্লাহ না করুক। এইটা যেন ফিজিক্স এর মধ্যে হয়। আমিন।

অনিকেত এর ছবি

আমি নিশ্চিত এইটা Physics এর মাঝে পড়ে।
তারপরও আপনার সাথে 'আমিন'

নন্দিনী এর ছবি

আপনার লেখা পড়ে অনেক দিনের পুরোনো একটা কথা মনে পরে গেল। আমার শিক্ষক মামার কল্যাণে আমি ক্লাস নাইনে পড়ার সময় ভাল ছাত্রী (আত্বীয়দের কাছে) হবার সুবাদে ক্লাস সেভেনের ইংরেজীর খাতা দেখবার দায়িত্ব পাই। তখন কি যে উত্তেজনা ! কি যে উত্তেজনা !! মামার পড়ার রুমে চেয়ার টেবিলে বসে ভারিক্ষী চালে সকাল-সন্ধা খাতা দেখি আর কি যে সব নম্বর দেই নিজেই জানিনা। কি ভাবে কিভাবে যেন ক্লাসের কিছু ছেলেমেয়ের মধ্যে জানাজানি হয়ে গেল ব্যাপারটা। অমনি বলা নেই কওয়া নেই ওরা মামার বাড়ির পুকুর পাড়ে ঘুরঘুর করতে লাগল বিকাল বেলা - আমাকে পটানোর জন্য। এখনও ভাবলে শিক্ষক হিসেবে মামার দায়িত্বজ্ঞানহীনতার কথা মনে করে শিউরে উঠি । ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দর দেখতে ছেলেটাকে সবচেয়ে বেশী নম্বর দিয়েছিলাম আমি । যে কিনা কোন মতে টেনেটুনে পাশ করা ছাত্র। তার ইংরেজীর উত্তরপত্র ও ছিল তথৈবচ । কি করেছি এখনও ভাবলে লজ্জায় লাল হই আর মামাকে ধিক্কার দেই মনে মনে ...

হিমু এর ছবি

ভূগোল আমার খুবই প্রিয় একটা বিষয় ছিলো, বিশেষ করে ম্যাপ আঁকতে খুব ভাল্লাগতো, যদিও ভালো আঁকতে পারতাম না তেমন। দামড়া হয়ে যাবার পরও ম্যাপ আঁকার হ্যাপা থেকে মুক্তি পাইনি, আমার প্রতিবেশী পিচ্চিদের সবার স্কুলের খাতায় বাংলাদেশের ম্যাপ এঁকে দিতে হয়েছে।

আমার মনে হয় বাচ্চাদের অনেক ছোট বয়স থেকে ভূগোলের ব্যাপারগুলি একটু একটু করে শেখানো উচিত, একবারে দুম করে অনেক কিছু শিখতে না দিয়ে। এখন তো গুগল ম্যাপস আছে, আরো আকর্ষণীয় করা যায় ব্যাপারটাকে, ভূগোল বইয়ের রচয়িতারা চিন্তা করে দেখতে পারেন এ নিয়ে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

দ্রোহী এর ছবি

ছোটবেলায় ভূগোল পড়ে জানতে পেরেছিলাম পৃথিবী গোল। প্রচলিত বুদ্ধিমত্তা অনুযায়ী আমারও ধারণা ছিল কোনভাবে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারলেই পৃথিবীর অন্তপ্রান্ত আমেরিকায় চলে আসা যাবে।

এখন আমি আমেরিকায় আসতে পেরেছি কিন্তু হাজার ইচ্ছা থাকলেও বাংলাদেশে যেতে পারি না। (ধুর াল...মনটা খারাপ হয়ে গেল)


কি মাঝি? ডরাইলা?

অনিকেত এর ছবি

@নন্দিনীঃ আপনার মন খারাপ করার কিছুই নেই এতে। আপনার তো করার কিছুই ছিল না। বড়রা যদি ছোটদের ভুল পথ দেখিয়ে দেন তবে আর কি করা? কিন্তু আপনাকে সাধুবাদ আপনার সৎ মন্তব্যের জন্য। ভুল অনেকেরই হয়,স্বীকার করতে মেরুদন্ড লাগে। সবচাইতে ভালো লাগল আপনার মার্কিং strategy দেখে। দারুন!!!!

@হিমু, আপনার সাথে একমত।

@দ্রোহী, আপনার মনটা যে কারনে খারাপ হল, সেই একই কারনে আমার মনটাও খারাপ হল। কি আর করা?

নন্দিনী এর ছবি

সবচাইতে ভালো লাগল আপনার মার্কিং strategy দেখে। দারুন!!!!

.........................ভাই এখন আর সে মন নাই । অতএব চিরউন্নত মমশীর !............হাসি

নন্দিনী

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।