স্কুলপর্ব-১

আরিফ জেবতিক এর ছবি
লিখেছেন আরিফ জেবতিক (তারিখ: মঙ্গল, ২৬/১০/২০১০ - ৪:৪৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১.
গত কয়েকদিন আগে সুন্দরবন গেছি। ঠিক বনে বলা যায় না, বনের মাঝ দিয়ে খাল ও নদীতে বজরা নিয়ে ঘুরাঘুরি করাটাই মূল কাজ। বজরার ছাদে আরাম করে বসে গল্প করছি, এ সময় এক বড় আপা জিজ্ঞেস করলেন,‌"আপনার বাচ্চাকে কোন স্কুলে দিলেন?' আমি হেসে উনার ভুল ভাঙ্গালাম, ‌'বাচ্চার বয়েস মাত্র সোয়া দুই বছর, তিন বছর পার হলে স্কুলে দেব।' উনি বুঝলেন, কোথাও গড়বড় হচ্ছে। বললেন, 'আগামী বছর স্কুলে দেবেন মানে? আগামী বছরের স্কুলগুলো ভর্তি তো বোধহয় সব শেষ হয়ে গেছে!'
এবার আমার অবাক হওয়ার পালা। আমরা প্রথমবারের মতো বাবা মা হয়েছি, ৩ বছর বয়েসে বাচ্চা প্লেগ্রুপে দেব, সে বাচ্চা ঘন্টা দুয়েক খেলাধুলা করে ফিরে আসবে, একটা অভ্যাস হবে যাওয়া আসার; এরকমটাই ধারণা করে বসে আছি। সেক্ষেত্রে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে যদি ক্লাস শুরু হয়, তাহলে বড়জোর জুন জুলাইর দিকে ইশকুল টিশকুলে খোঁজখবর নেয়া যেতে পারে, পুরো একবছর আগে খোঁজ নেয়ার তো কোনো মানে নেই!

কিন্তু বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে আমি আঁকাশ থেকে পড়লাম। বেশির ভাগ স্কুলেরই নাকি ভর্তি কার্যক্রম শেষ হয়ে গেছে অথবা যাবো যাবো করছে। আমি তখন ছিলেম মগন গহীন ঘুমের কোলে!

২.
আমি যে এলাকায় থাকি তার আশেপাশে কোনো ভালো বাংলা মিডিয়াম স্কুল নেই। যা আছে, সেগুলো সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, সেই বিদ্যালয়গুলোর ওপর বোধগম্য কারনেই আমার কোনো আস্থা নাই। সুতরাং বাংলা এবং আরবি মিডিয়ামের বাইরে আমার গন্তব্য ইংরেজি মিডিয়াম।

মফস্বলের ছেলে হিসেবে মাঠের প্রতি আমার একধরনের অন্ধ আসক্তি আছে। আমরা ছোটোবেলায় বাড়ির পাশে বড় বড় মাঠে খেলাধুলা করে বড় হয়েছি, মাঠকে আমি তাই খুব গুরুত্ব দেই। শুধুমাত্র বাসার পাশে একটি ভালো মাঠ এবং পার্ক আছে, সেই পার্কে আমার মেয়ে বিকেলে আমার মায়ের সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়, এই আনন্দে আমি প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় দ্বিগুন ভাড়া দিয়ে একটি বাসায় থাকি। অন্য এলাকায় গেলে আমাদের দুজনের অফিস কাছে হয়, বাসা ভাড়াতেও অনেক সুবিধা পাওয়া যায়, কিন্তু মাঠ পাওয়া যায় না, এটা একটা বড় সমস্যা।

তো, এই মাঠপ্রীতির জন্য, মাঠ আছে, তেমন স্কুল বাছাই করা শুরু করলাম। বাছাই তালিকা অবশ্য অতি সংক্ষিপ্ত। অতি উচ্চমূল্যের স্কুলগুলোতে ভর্তি করার কোনো কারন আমি দেখি না। নার্সারি টু থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত পড়তে আমার মাত্র কয়েক হাজার টাকা খরচ হয়েছে, সেখানে মাসে মাসে অর্ধলক্ষ টাকা খরচ করা মার্কা স্কুলে পড়ানোর চিন্তা করার জন্য যে সাহস ও সামর্থ্যের দরকার হয়, সেটি আমার নেই।
সুতরাং মাঝারি খরচের স্কুলগুলোতে তল্লাশি দিলাম।

এসব স্কুলের প্রায় সবারই ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গেছে। উত্তরায় খুব বিখ্যাত একটা স্কুল পাওয়া গেল। এদের মাঠ আছে, রেজাল্টও ভালো। সুতরাং স্কুল হিসেবে এটি আমার পছন্দের শীর্ষে থাকলো। তাছাড়া যাতায়াত ব্যবস্থাও সহজ, মাত্র দুই ঘন্টায় স্কুল থেকে বাসায় পৌঁছা যায়, সুতরাং দিনে দিনে স্কুলে গিয়ে ফিরে আসাও সম্ভব। ভাগ্যক্রমে সে স্কুলের ভর্তি প্রক্রিয়া এ মাসের শেষ পর্যন্ত বহাল আছে, এটাও খুশির খবর।

৩.
অবশেষে ভর্তি ফরম প্রদানকারী মহিলার মুখোমুখি হতে পারলাম।
তিনি বললেন, ‌"আপনি কি আমাদের ভর্তি প্রক্রিয়াটি জানেন?'
আমি বললাম,' জ্বি না। জানি না।'
তিনি বিষয়টি ব্যাখ্যা করলেন," বাচ্চাকে এসে একজন আপনাদের কাছ থেকে নিয়ে যাবে। ঐ যে ক্লাসরুম দেখছেন, ওখানে নিয়ে যাবে। এই সময়ের মাঝে বাচ্চা কাঁদতে পারবে না। কাঁদলে সে ফেল। না কাঁদলে ক্লাসরুমের মধ্যে নিয়ে গিয়ে তাঁর ভর্তি পরীক্ষা হবে।'

আমি বললাম,"কাঁদলে ফেল?"
"জ্বি।' তিনি নিশ্চিত করলেন।
আমি এবার বললাম, "কিছু মনে করবেন না, একটা সোয়া দুই বছরের বাচ্চাকে একটা সম্পূর্ণ অপরিচিতি পরিবেশে তাঁর বাবা-মা'র কাছ থেকে একজন অপরিচিত মানুষ এসে ধরে নিয়ে যাবে, সেই বাচ্চা কাঁদবে না, এটাকে কি আপনার অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে না?"
তিনি বললেন, "অস্বাভাবিক হবে কেন? স্বাভাবিক বাচ্চারা তো কাঁদে না।"
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। তারপর শান্তভাবে বললাম," আমি আপনার সঙ্গে একমত নই। একটা সোয়া দুই বছরের বাচ্চা এরকম অবস্থায় যদি না কেঁদে আপনাদের সঙ্গে রওনা হয়, আমার কাছে সেটাই বরং অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। আমার বাচ্চা অস্বাভাবিক না।
প্রত্যেক বাবার মতো আমিও মনে করি আমার বাচ্চা অসাধারণ মেধাবী। সে নয়মাস বয়েসে হাঁটতে শিখেছে, স্পষ্ট উচ্চারণে কথা বলতে পারে, অনেক কিছু মনে রাখতে পারে। তাঁকে ছোটোবেলা থেকে যেসব ছড়া বলে ঘুম পাড়ানো হয়েছে, তার মাঝে অন্তত কুড়িটি ছড়া তার এই বয়েসেই মুখস্ত। সে নোটন নোটন পায়রাগুলি এমন ভাবে অভিনয় করে দেখাবে, আপনি দেখে মুগ্ধ হবেন।
কিন্তু আমার বাচ্চা কাঁদবে কি না, এরকম নিষ্ঠুর ও হাস্যকর একটা পরীক্ষার মুখোমুখি করতে আমার আপত্তি আছে। আপনি দয়াকরে ফরম ফেরত নিয়ে আমার টাকা ফেরত দিন।"
ভদ্রমহিলা মুখ কালো করে ফরম ফেরত নিলেন।
(অবশ্য আমার এই বোকামির মাশুল গুনতে হচ্ছে, আত্মীয় স্বজনরা চিৎকার শুরু করেছেন। আমার ধারণা দুয়েকদিনের মাঝেই এই স্কুলের একটি ভর্তি ফরম আমার বাসায় নিয়ে আসা হবে।)

৪.
রাতে এ বিষয়টা নিয়ে গল্প করছিলাম এক বন্ধুর সঙ্গে। শুনলাম আরেক কাহিনী। বন্ধুর ভাইয়ের বাচ্চা আরেক বিখ্যাত স্কুলে পড়ে। স্কুল কর্তৃপক্ষ সেই বাচ্চার বাবাকে ডেকে নিয়ে দুইদিন শাসিয়ে দিয়েছিলেন,"আপনার বাচ্চাকে বাসা থেকে বাথরুম করিয়ে পাঠাবেন। সে বাথরুমে বেশি সময় নেয়। আমাদের পাঁচশ বাচ্চা, বাথরুম মোটে একটা। এত সময় নিলে তো চলবে না।"
কয়েক মাস পরে ৩ বছরের সে বাচ্চার ইউরিন ইনফেকশন হয়েছে। বাচ্চার ভাষ্যমতে," বাথরুমে যেতে চাইলে মিস বকা দেয়।" এজন্য বাথরুম চেপে রেখে রেখে বাচ্চাটি অসুস্থ!

৫.
মাঝখানের বিতং গল্প বাদ দিয়ে যাই। শুধু বলি, মাঠের আশা বাদ দিয়ে এখন ম্যাচবক্স স্কুল খোঁজা শুরু করেছি।
গুলশানে আরেকটা স্কুলের খবর পাওয়া গেছে। সে স্কুলে আগামী মাসের নির্দিষ্ট দিনে গিয়ে ভর্তি ফরম আনতে হবে। ভর্তি ফরম মাত্র ১ দিনই দেয়া হবে, ফরমের সংখ্যাও নির্দিষ্ট। (একাধিক দিনে দিলে ক্ষতি কি এই প্রশ্ন করলে নিশ্চয়ই কোনো জবাব পাওয়া যাবে না।)।
যেহেতু মাত্র ১ দিনই সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ফরম বিলি হবে, সুতরাং ভোর ৬টা থেকে অভিভাবকদের ভিড় শুরু হয়। গত বছর মারামারিও হয়েছে স্কুলের সামনে।
শুভার্থীরা বারবার বলে দিচ্ছেন, আমি যাতে ভোর ৬টার আগে গিয়ে সেখানে পৌঁছাই। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগের দিন রাতেই আমি স্কুলের সামনে চলে যাবো, নিশ্চয়ই একটি ফরম আমার ভাগ্যেও জুটে যেতে পারে।

৬.
এক বন্ধু কানাডা মাইগ্রেশন করছে। গতকাল সে পাসপোর্ট ডেলিভারী পেয়েছে। রাতে ফোন করে খবর দিচ্ছে। কথায় কথায় বললো," যেতে চাই নি, কিন্তু কী করব এই পোড়ার দেশে? মাঝে মাঝে দম বন্ধ হয়ে আসতে চায়।"
এধরনের কথা শুনলে আমি সাধারণত খুব খারাপ ভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাই।
শুধু এই বেলা কিছু বলতে পারলাম না।
আমি ফোন বন্ধ করে চুপচাপ বারান্দায় বসে থাকলাম।
মাঝে মাঝে আমারও দম বন্ধ হয়ে আসতে চায়...।


মন্তব্য

বাউলিয়ানা এর ছবি

আনন্দের সাথে হাতে চা-টা নিয়ে পড়তে বসেছিলাম। শেষে মন খারাপ

তাছাড়া যাতায়াত ব্যবস্থাও সহজ, মাত্র দুই ঘন্টায় স্কুল থেকে বাসায় পৌঁছা যায়, সুতরাং দিনে দিনে স্কুলে গিয়ে ফিরে আসাও সম্ভব।

খুব স্বাভাবিক ভাবে লিখলেন। কিন্তু পড়ে আমার মনে হলো, দিনে দিনে স্কুলে গিয়ে ফিরে আসতে পারবেন বলে আপনি খুশি হলেন!

আরিফ জেবতিক এর ছবি

জ্বি, খুশি হলাম। হাসি
কারন বাকিগুলোতে দিনে দিনে গিয়ে ফিরে আসার সম্ভাবনা খুব কম।
উত্তরা থেকে মহাখালীতে আসতে ২ ঘন্টা সময় লাগে। হাসি
ধানমন্ডির কোনো স্কুলে দিলে বোধহয় ফিরে আসতে বাদ মাগরিব হয়ে যাবে।

রাব্বি [অতিথি] এর ছবি

কোথায় আছি আমরা?

আরিফ জেবতিক এর ছবি

ঢাকা শহরে।

দুর্দান্ত এর ছবি

সহানুভূতি জানিয়ে গেলাম।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

ধন্যবাদ।

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

ভয়ই হচ্ছে এখন ভাইয়া। আমার স্কুলের সময়ে বেতন শুরু হয়েছিলো ৮৫ টাকা থেকে। ১২৫ টাকায় ক্লাস টেন শেষ করে এস.এস.সি দিয়েছি। এখন শুনি আমার পিচ্চি বইনকে প্রতি বছর ভর্তির সময়ে দশ হাজার টাকার বেশী ডোনেশনই দিতে হয়! মন খারাপ কী দিন যে আসতেসে সামনে!

-----------------------------------------------------------------------------------
...সময়ের ধাওয়া করা ফেরারীর হাত থিকা যেহেতু রক্ষা পামুনা, তাইলে চলো ধাওয়া কইরা উল্টা তারেই দৌড়ের উপরে রাখি...

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

সামনে আসিবেক কেনু, এখনই তো আসা শুরু হইছে।
ক্লাস টেনে মাসে মাত্তর এক লাখ টাকা স্কুল বেতনেও ঢাকায় স্কুল আছে, সেই স্কুলেও আবার সিট পাওয়া যায় না। হাসি ১২৫ টাকায় পড়লে কি আর হইবেক?
যার যেমুন পছন্দ, যার যেমুন হিম্মত। হাসি

বেনামা এর ছবি

আমি পড়েছি ধানমণ্ডির কাছে একটা ৪৯ বছরের পুরনো বিশা-আ-আ-ল মাঠওয়ালা সরকারি স্কুলে। ১৯৯৪ সালে ক্লাস ওয়ানে সরকারি বেতন ছিল ৪ টাকা, আর টিফিনের জন্য ১৫ টাকা। এই ১৯ টাকাই ছিল বাঁধা বেতন, আর বছরের শুরুতে আর পরীক্ষার আগে আরো কিছু দিতে হত। ২০০৪ সালে ক্লাস টেনে উঠতে উঠতে সরকারি বেতন হল ১২ টাকা, আর টিফিনের ফি ২০ টাকা, তবে ক্লাস এইটে বৃত্তি পাওয়ার জন্য ওই ১২ টাকাও দিতে হয়নি...

আর এখন এইসব ইংলিশ মিডিয়াম আর বেসরকারি স্কুলের বেতনের কথা শুনলে দীর্ঘশ্বাস আসে শুধু...

ভ্রান্ত পথিক [অতিথি] এর ছবি

স্কুলের ফি দেখে মনে হলো দেশতো অনেক এগিয়ে গেছে। মানুষ এত টাকা পায় কোথায়?

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার দেওয়া লিঙ্ক দেখে মাথা পাগলপ্রায়!!!
এই স্কুলটা একদিন দেখে আসতে হবে! এই স্কুলের ক্লাস টেনের এক সপ্তাহের বেতন আমার পুরো অনার্স ডিগ্রির জন্য অনুমিত ব্যয়(সমস্ত ফি + হল ভাড়া+ পরীক্ষা ফি) এর চেয়েও বেশি।
একটা মজার কথা মাথায় এল। এই স্কুলের কোন ছাত্রের জন্ডিস হলে তার বাপের পুরো এক লাখ টাকা পানিতে!!!
এই ভেবেই কিছুটা সুস্থ লাগছে এখন।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

শিরোনাম দেখে ভাবছিলাম বুঝি স্কুল লাইফ নিয়ে ই-বুকের ডাক দিচ্ছেন। পড়ে দেখলাম কাহিনি গুরুতর!

আপনার প্রত্যক্ষ করা চিত্রটা বোধ'হ ঢাকাবাসী সব বাবামার জন্যই প্রযোজ্য। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় আর আংরেজি মিডিয়াম স্কুল- এর মাঝা মাঝি পড়াশুনা শুরু করার আর কিছুই নেই। মফস্বলে এই সমস্যাটা আছে কি-না আমি শিউর না। একটা বাচ্চা স্কুলের গণ্ডীতে গিয়ে খেলাধূলা করবে, এটা মনেহয় মফস্বলের জন্য না।

সেখানে একটা বাচ্চা খেলবে মুক্ত পরিবেশে যতোদিন, যেভাবে তার ইচ্ছে হয়। দাদা-দিদা'র সাথে উঠোনময় দৌঁড়ে বেড়াবে, পাড়াময় শোর উঠাবে, চিৎকার করে বাড়ি মাথায় তুলবে, রাতদিন, যখন খুশি তখন। এর মধ্যে আদর্শলিপি, ছড়া পাঠ হবে তার। হবে স্কুলের মজার মজার গল্প শোনা এবং ছবি আঁকাও টুকটাক। যেদিন সে খুশি মনে স্কুলে যেতে চাইবে, সেদিন তাকে নিয়ে ভর্তি করে আসা হবে স্কুলে। এক স্কুলেই দশ ক্লাশ পাড়! হিসাব সোজা।

একটা বাচ্চা যে মায়ের গন্ধ ছাড়া আর কিছুই ভালো মতো চেনে না, তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে স্কুলের একটা অপরিচিত পরিবেশে অপরিচিত মানুষের হাতে ছেড়ে দিলে তার মনের অবস্থাটা কি আর শিশুসুলভ থাকবে? শিশুদেরকে জোর করে 'বড়' বানিয়ে দিয়ে কী লাভটা হচ্ছে আমাদের!



বিএসএফ—
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ

আরিফ জেবতিক এর ছবি

অদ্ভুত এবং উদ্ভট সব কিছুতেই আমাদের আগ্রহ।

সুমিমা ইয়াসমিন [অতিথি] এর ছবি

খুব কষ্ট হয় এ সময়ের বাচ্চাদের স্কুল যাত্রার কঠিন অবস্থা দেখে। স্কুলে যাওয়ার জন্য যাদের অগ্নি পরীক্ষা দিতে হয়!
তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আজকালকার অভিভাবকদের কিছু বাড়াবাড়ি আছে।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

অভিভাবকরা আসলে বেশির ভাগই সিস্টেমের শিকার।
ভিকারুননেসায় এবার ভর্তি পরীক্ষা হবে না, লটারি হবে।
এর বিরুদ্ধেও অভিভাবকরা মিছিল করতেছে।
এক মহিলা বলছেন, দুই বছর কোচিং করাইছি, এখন লটারি মানি না !

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

জানুয়ারি মাসে নিধিকে এক স্কুলে ভর্তি করাতে নিয়ে গেলাম। ইন্টারভিউ দিতে হবে বাপ মাকে। আমি সাধারণত খুব আউলা ঝাউলা জামাকাপড় পরি। সেদিন একটু ভদ্রস্থ হয়ে যেতে বাধ্য হইলাম। তিন জাঁদরেল বদ্রমহিলা সামনে বসা। [বলা বাহুল্য আমি জীবনে কোনোদিন চাকরির ইন্টারভিউ দেই নাই]
আমার সাথে নানান বাতচিত হইলো। আমি হাসি হাসি মুখে বেশ অনেক কথা বললাম, তাদের পছন্দ হইলো। কিন্তু নিধির সঙ্গে কথা বলতে গেলেই বিপত্তি, সে তাগো লগে কথা কইবো না। নতুন কারো সঙ্গে আলাপ জমতে নিধির একটু সময় লাগে। ফলে কোনো কথাই বললো না তাগো লগে। বাতিল...

গত ছয়মাস ধরে নিধিকে খালি এই প্রশিক্ষণই দিতেছি যে টিচার জিজ্ঞেস করলে কী কী বলতে হবে... দেখা যাক এবার কী হয়। আর নাইলে মগবাজার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করাবো চিন্তা করতেছি। এতো ঝামেলা আর ভালো লাগে না।

টাকা বিষয়ে আর কী বলবো?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

আরিফ জেবতিক এর ছবি

হ, আমরারও শুনেছি ইন্টারভিউ নিবে।
একটা স্যুট ভাড়া নিব ভাবতেছি কারো কাছ থেকে। হাসি

ধুসর গোধূলি এর ছবি

ভালো দেইখা একটা লুঙ্গি কিনেন বেগতিক ভাই। এক নম্বর রুহিতপুরী লুঙ্গি, ধবধবে সাদা, পাড়ে আবার জরির কাজ করা। তারপর সেইটা পরে কোনাটা হাত দিয়ে একটু উঁচিয়ে ধরে তারপর গিসে হাজির হন ইন্টারভিউয়ে।

কসম খোদার, আমার মাইয়ার লাইগা স্কুলে আমারে এমনে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকলে আমি উপরে বর্ণিত ড্রেস কোডই ফলো করতাম।



বিএসএফ—
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ

জাহামজেদ এর ছবি

আরিফ ভাই, আমাদের স্কুলে সর্ব্বোচ্চ বেতন কত ছিল আপনার মনে আছে ?

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

আরিফ জেবতিক এর ছবি

আমি ৫টাকা মাসিক বেতনে পড়েছি, ওটাও আসলে বেতন ছিল না, টিফিন বিল। সরকারী ২টা বৃত্তি পেলে ক্লাস সিক্স থেকে টেন অব্দি বেতন লাগতো না।

ক্লাস থ্রি তে ৭ টাকা দিতাম। ওপরের ক্লাসগুলোতে মনে হয় ৮/৯ টাকা ছিল।

কাজী মামুন এর ছবি

কাঁদলে সে ফেল!

এ কোন দুনিয়া!!

=================================
"রঙিন কাফনে মোড়া উৎসুক চোখে
ছায়া ছায়া প্রতিবিম্ব দেখি
মানুষ দেখি না।।"

=================================
"রঙিন কাফনে মোড়া উৎসুক চোখে
ছায়া ছায়া প্রতিবিম্ব দেখি
মানুষ দেখি না।।"

অতিথি লেখক এর ছবি

বাস্তবধর্মী, ভালো লেগেছে। তবে এহেন সমস্যা বোধ করি শুধু ঢাকা বা বড় বিভাগীয় শহরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

পৃথিবী [অতিথি] এর ছবি

আমি চার দেয়ালের মাঝে বড় হয়েছি দেখেই মনে হয় খোলা মাঠের বিশেষত্বটা ঠিক ধরতে পারি না। গ্রামাঞ্চলে আমি বেশ অস্বস্তি বোধ করি, এরকম শূন্যতার সাথে নিজেকে ঠিক খাপ খাওয়াতে পারি না।

আমি ছয়টা বছর ধানমন্ডীর একটা স্বনামধন্য ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে পড়েছিলাম, ওই স্কুলের ছেলে-মেয়েরা প্রায়ই ও'লেভেল(মাধ্যমিক) এবং এ'লেভেলে(উচ্চ মাধ্যমিক) ওয়ার্ল্ড হাইয়েস্ট নম্বর পেত। খরচ ছিল অভাবনীয়, কিন্তু ওখানে এত যত্ন নিয়ে পড়াতো যে পরে সেন্ট যোসেফে ভর্তি হয়ে আমি "বাংলা মিডিয়াম" শিক্ষা ব্যবস্থার দশা দেখে বড় ধরণের একটা ধাক্কা খেয়েছিলাম। স্কুলটার পড়াশোনার ব্যবস্থা কিছুটা দেশের আর দশটা স্কুলের মত হলেও প্রত্যেকটি টার্মে আমাদের অন্তত একটা পাঠ্য বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত প্রোজেক্ট করা লাগত। স্কুলটাতে আমার পড়াশুনার অভিজ্ঞতা ছিল দারুণ(সাহিত্য যে আনন্দদায়ক হতে পারে, তা এই স্কুলটাতে না পড়লে কখনওই বুঝতাম না), শুধু ইংলিশ মিডিয়ামের পরিবেশটা ভাল না লাগার কারণেই পরে স্কুলটি ছেড়ে দিই।

অন্যসব ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো আমার স্কুলের মত কিনা জানি না, তবে আমি মনে করি ইংলিশ মিডিয়ামগুলোর একমাত্র সমস্যা হল এগুলোতে পড়লে সদিচ্ছা থাকলেও বাঙ্গালী সংস্কৃতি আস্বাদন করা যায় না। কিছু কিছু স্কুলের খরচ অতিরিক্ত বেশি, কিন্তু তাদের সেবাও খুব একটা খারাপ না।

দুর্দান্ত এর ছবি

ওই স্কুলের ছেলে-মেয়েরা প্রায়ই ও'লেভেল(মাধ্যমিক) এবং এ'লেভেলে(উচ্চ মাধ্যমিক) ওয়ার্ল্ড হাইয়েস্ট নম্বর পেত।

ও/এ লেভেল এর পরীক্ষায় কি নম্বর বা মেধাক্রম দেয়?

পৃথিবী [অতিথি] এর ছবি

ইয়ারবুকে তো প্রত্যেকটি বিষয়ে প্রাপ্ত নম্বর প্রদর্শন করতে দেখলাম। কয়েকদিন আগেই এক বন্ধুর কাছ থেকে খবর পেলাম সে নাকি অর্থনীতির এক পেপারে ফুল মার্ক পেয়েছে। তবে প্রত্যেকটি পরীক্ষার্থীর মেধাক্রম প্রকাশ করা হয় না, সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্তদের নামটাই কেবল প্রকাশ করা হয়।

মুস্তাফিজ এর ছবি

সহানুভূতি জানাইলাম, বাকিটা ফোনে আলাপ করুমনে।

...........................
Every Picture Tells a Story

ফ্রুলিক্স [অতিথি] এর ছবি

প্রাইমারী ফ্রিতে পড়েছি। হাইস্কুলে ১০ টাকা বেতন ছিলো। কলেজে মনে হয় ৩৫ টাকা।
বন্ধুদের সাথে আলাপে এসব কিছুটা জেনেছি। এখন নাকি সবই খাচার ভিতরেই পড়াশোনা।
ভর্তি যুদ্ধ পরে আরো কতোযুদ্ধ সামনে আসতেছে শুধু অপেক্ষা।
সমবেদনা

শিশিরকণা এর ছবি

হোম স্কুলিং করান। হলিক্রসের লটারি জোগাড় করেন। লটারির পরও ঐখানে একটা ভাইভার মতো হয়। যতদূর জানি, পোলাপান বেশি পাকনা হইলেই বয়স বেশি সন্দেহে বাদ পড়ার চান্স থাকে।(আমি ওয়ানে বাদ পড়ছিলাম, পরে সিক্সে পরীক্ষা দিয়ে ঢুকছি) মাঠ আছে এখন পর্যন্ত, ১২ ক্লাশ পর্যন্ত শান্তি।

তবে বাংলা মিডিয়ামের সিলেবাস আর বই এর তুলনায় ইংলিশ মিডিয়ামের বইগুলা অসাধারণ। মোস্তাফা জব্বার আর শাহজাহান তপন এর বইগুলা অনেক আগেই এক্সপায়ার করছে। বাচ্চাদের জন্য আনন্দময় কিছু বই বের করা দরকার, প্রয়োজনে ইংলিশ মিডিয়াম এর বই থেকে কপি করে হলেও...

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

স্বাধীন এর ছবি

এই ক্ষুদ্র দেশে এতগুলো মানুষ কেমনে জায়গা দিবেন আপনি? আর এতো এতো মানুষ হলে সব কিছুই সম্ভব এই দেশে।

শেষে যে বন্ধুর কথা বললেন সেটাই চরম বাস্তবতা। এই সব চিন্তার জন্যই মানুষ একবার বাহিরে গেলে আর ফেরত যেতে চায় না। দেশে ফিরে যাবো এই স্বপ্ন নিয়ে পিএইচডিতে এসেছি। পিএইচডি শেষের দিকে, এখন জীবনের কঠিনতম সিদ্ধান্তটি নেবার পালা। যুক্তি আর আবেগ দুইয়ের দ্বন্দ্ব চলছে সারাক্ষণ।

ছোট্ট দু'টি উদাহরণ দেই। বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পড়েছে হঠাৎ। কি করবেন বুঝতে পারছেন না। হেলথ লিঙ্কে ফোন দিন, তারাই বলে দিবে কি করতে হবে। যদি ভাবেন ফোনের কথায় ভরসা নেই, সোজা ইমার্জেন্সীতে খালি পৌছঁতে পারলে হল, যা ব্যবস্থা নেওয়ার ডাক্তার/নার্সরাই করবে। ইমার্জেন্সী যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারবেন বলে মনে হচ্ছে না, ৯১১ ফোন করবেন, কিছুক্ষনের মধ্যেই প্যারামেডিক্স এসে হাজির হবে। ৯১১ টা বাদে বাকি সব ফ্রি। ৯১১ও ফ্রি পাবেন, যদি কোন ইন্সুরেন্স করা থাকে।

এবার স্কুলের কথা। সব এলাকাতেই লোকাল স্কুল আছে। তারপরেও যদি আরো ভালো স্কুলে দিতে চান, ফর্ম পূরণ করে দিলে, মেয়েকে ইন্টারভিউর জন্য ডেকেছে। আমরা খুবই চিন্তিত কারণ মেয়ে আমাদের অনেক কিছুই পারে না। তো যথারীতি ইন্টারভিউ শেষে টীচার প্লিজড। বলে যে আমি কি ইন্টারভিউ নিবো, উলটা তোমাদের মেয়েই আমার ইন্টারভিউ নিয়েছে। টীচার বলে যে আমি জানতে চাইলাম অমুক লেটার দিয়ে কোন শব্দ বলতে পারো। সে বলে তুমি জানো, আমি এটা জানি। এটা কিভাবে স্পেল করে জানো? এভাবে, ইত্যাদী। এভাবেই পনেরো মিনিটের ইন্টারভিউ হলো। বললো, শি ইজ রেডি ফর গ্রেড ওয়ান। তবে এপ্লিকেশন কিছু বেশি পড়েছে, তাই লটারী হবে। ক্রস ইউর ফিংগার। জীবনে কোনদিন লটারী লাগেনি, তবে এইটা লেগেছে। তবে সমস্যা ছিল না, লোকাল স্কুল ছিল সব সময়ই। এটা ভাল স্কুল ছিল বলে অনেকেই আসতে চায় এই স্কুলে। তবে কারোর এক বছর না হলে, পরের বছর আবার চেষ্টা করে। এই হল এখানকার ব্যবস্থা।

নৈষাদ এর ছবি

শুভকামনা রইল।

ভর্তির পরও অনেক সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে। জানার অনেক কিছু আছেরে ভাই - শিখছি।

তাসনীম এর ছবি

বাংলাদেশে এটা বিশাল একটা সমস্যা, সমবেদনা আপনার জন্য। সব প্রবাসী বাংলাদেশীই বাংলাদেশকে "পোড়ার দেশ" মনে করেন না, কিন্তু প্রবাসী অনেকেই এই কারণে দেশে ফিরতে চান না। শিশুপালনের একটা পর্বে আমি আমার অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছিলাম, মাঝে মাঝে মনে আমাদের দেশে এরকম ভর্তি পরীক্ষা হলে কত ভালো হতো!

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

দাস জাহিদ [অতিথি] এর ছবি

মানুষের বাচ্চা গুলোকে রোবোট বানাতে মানুষ(?) এত ব্যস্ত কেন বুঝিনা?

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

... এরপরে পরে থাকে ভর্তির পরীক্ষা, ছেলে নয় মা বাবার অগ্নিপরীক্ষা...

মফস্বলে চলে যেতে ইচ্ছে করে এইসব দেখে।
_________________________________________

সেরিওজা

সচল জাহিদ এর ছবি

স্কুল যুদ্ধ। এইখানে ভালই আছি, ৫ এর আগে স্কুল নাই। ৪ এ কিছু প্রিস্কুল আছে। ছেলেকে আগামী সেপ্টেম্বরে দিব সেইখানে দিব।

----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
সচল জাহিদ ব্লগস্পট


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

অতিথি লেখক এর ছবি

রাফিনকে ২০১০-এ স্কুলে দিয়েছিলাম কিন্তু বিভিন্ন কারনে ছাড়িয়ে আনতে হয়েছে। ঝামেলায় আছি বেশ। এবার আবার দিতে হবে।

খুলনায় আমাদের স্কুলেই প্রথম স্কুল বাস আসে ১৯৮১ সালে। আমার বাসের কার্ড নাম্বার ছিলো ১, তা আবার সবাইকে দেখিয়ে বেড়াতাম। আর বেতন ছিলো ৫-১৫ টাকা, টিফিন ৫ টাকা আর বাসভাড়া ৫ টাকা। এটা ছিলো খুলনার কূলীন স্কুল, লায়ন্স স্কুলের অবস্থা।

আপনি যে বর্ণনা দিলেন তা অনেক ক্ষেত্রেই অমানবিক, বিশেষ করে পিসু আটকে রাখাটা। হাজার হাজার টাকা বেতন নিয়ে শতশত বাচ্চা ভর্তি করছে অথচ টয়লেট একটা, কি আজব!

শিক্ষা ব্যবস্থা যে এখন ব্যবসায় রূপ নিয়েছে, কথাটা আসলেই সত্যি। আমরা যারা সত্তর-আশির দশকে যারা স্কুলে লেখাপড়া করেছি আমারদেরকে ব্যাথিত করে। হয়তো আমাদের বাচ্চারা বড় হতে হতে যা দেখছে এটাকেই জেনে যাবে আদর্শ শিক্ষাব্যবস্থা হিসেবে।

রাতঃস্মরণীয়

অতিথি লেখক এর ছবি

ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল আর বাথরুম যাওয়া নিয়ে চন্দ্রবিন্দুর ঐতিহাসিক গানটার কথা মনে পড়লঃ

Get this widget | Track details | eSnips Social DNA

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

এত এত দামী দামী স্কুল। আর পাঁচশ বাচ্চার জন্য একটা টয়লেট।
আহা ওদেরকে একটু ইংল্যান্ডের দিকে তাকাতে বলেন।

প্রতি ২০ জনের জন্য একটা টয়লেট না থাকলে স্কুল করার অনুমতিই পাবে না।

উপরের বর্ণনা ও অভিজ্ঞতা থেকে যা শেখা দরকার তা হলো একটা স্কুল দেন। বাচ্চাদের বোটানিক্যাল গার্ডেনে নিয়ে গাছ চেনাবেন, চিড়িয়াখানায় নিয়ে প্রাণী, থিম পার্কে নিয়ে রং।
তারা স্কুলে গিয়ে বন্যার গলায় রবীন্দ্র সংগীত শুনবে। জুয়েল আইচের যাদু দেখবে। শামীম আরা নীপার নাচ উপভোগ করবে।
জ্যামিতি বাক্স ভরে পোকামাকড় পুষবে। দুরবিন দিয়ে তারা গুনবে।

দিয়ে দেন। দিয়ে দেন। একটা স্কুল দেয়ার এখনই সময়।
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

হাসিব এর ছবি

কাছাকাছি বর্ননার একটা স্কুল চিনি [ফেইসবুক গ্রুপ]। তবে সেখানে সুবিধাবঞ্চিতরা পড়ে। একারণে হয়তো জ্যামিতি বাক্স, দুরবিন, চিড়িয়াখানাটা হয়ে ওঠে না।
________________________________________________
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি

সমব্যথি এর ছবি

খুব সম্ভব শোমোচৌ বর্ণিত স্বপ্নের স্কুল আদলে এই ঢাকা শহরেই দু'একটা স্কুল গড়ে উঠছে। ছায়ানটের শিশু শিক্ষা উদ্যোগ 'নালন্দা', 'অরণি' বা চট্টগ্রামের 'ফুলকি' কিছু অনন্য উদাহরণ।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার বয়স পাঁচ হওয়ার পর থেকে আমাকে বাসায় পড়ানো হত। সাত বছর হওয়ার পর প্রথম স্কুলে যাই, ক্লাস-টুতে ভর্তি হই যদিও। আমি ঠিক কোনভাবেই বুঝে উঠতে পারিনা, কেন তিন-বছর বয়স থেকেই স্কুলিং শুরু করতে হবে। এর কি সত্যিই কোন দরকার আছে?

সজল

কাঠপুতুল এর ছবি

তিন বছরে প্লে গ্রুপে ঢুকলাম। কেঁদেকেটে একাকার করে দিতাম।
চার বছর বয়সে একটা সরকারি স্কুলে ভর্তি হলাম, ক্লাস ওয়ান। বেতন ছিল মনে হয় পাঁচ টাকা। রওশান আপা ভাংতি দিতে পারতেন না। ঝাড়ি দিতেন, ভাংতি টাকা আনিনি বলে। আবার কাঁদতাম।
এরপরে এলাম ঢাবির আণ্ডারে একটা স্কুলে। প্রথমে তিনশ টাকা বেতন, আস্তে আস্তে বেড়ে গিয়ে আসল পাঁচশতে। প্রতি মাসে এক্সাম ফি দেওয়া লাগে দেড়শ টাকা। মাঝে মাঝে মনে হয়, আমার কি দায় পড়েছে এক্সাম দেবার? দিমু না ফি। বাবার পকেটটা গৌরী সেনের ব্যাগ না। এক্সাম দিয়া উপরের ক্লাসে না উঠাইলে এসএসসি দেওয়ার মানুষ থাকবে না, স্কুলের রেজিস্ট্রেশান থাকবে না। আমার কি দায়? শ্যামলী নাসরিন আমার শুরুর দিকের এই স্কুলের অধ্যক্ষা।
উপরের মন্তব্যগুলা পড়ে ভাবছিলাম, এই জেনারেশনের একটা উদাহরণ নাই। দিয়া দিলাম তাই।
বাচ্চাগুলার জন্য সমবেদনা থাকল। আরও দিন আসতেসে রে ভাই, আসতেসে।

কৌস্তুভ এর ছবি

বাড়িতে বলে রাখতি হবে, আমার বিয়ার লগে মাইয়া দেখা শুরু করার আগেই যেন নাতিনাতনির লগে ইস্কুল দেইখ্যা রাখে...

তুলিরেখা এর ছবি

ইস্কুলের সামনে ইঁট রাইখা তারপরে বিবাহ। -----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

সাইফ তাহসিন এর ছবি

আপনার পোস্ট পড়ে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে, আমি সরকারী স্কুলে পড়েছি, স্কুল মানে আনলিমিটেড ফূর্তি, হাউকাউ, মাইরপিট, খেলাধুলা, দুষ্টামি। দেশে থাকলে মানুষের চোখ উল্টানি দেখেও সরকারী স্কুলেই দিতাম বাচ্চাকে।

আরেকটা জিনিস লক্ষ করি ইদানিং, পাড়াপড়শির নাক গলানোর মাত্রা দিনকেদিন বেড়েই যাচ্ছে, "আল্লাহ! এখনো ভর্তি করেন নাই! এখনো হেন করেন নাই, তেন করেন নাই"। ব্যক্তিগত সীমারেখা বলে কিছু আছে বলে তারা মনে করেন না, বরং গায়ের জোরে ঘাড়ে চেপে "উপকার" করছেন এমন ভাব বেশি দেখি। এসব ব্যাপারে আমি খুব ঠোটকাটা। এমনভাবে খারাপ কিছু একটা বলে দেই যাতে ভবিষ্যতে ২ বার চিন্তা করতে বাধ্য হন তারা "উপকার" করার সময়
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।