সত্যপীর এর ব্লগ

নটে গাছটি মুড়োলঃ গরীব বামুন

সত্যপীর এর ছবি
লিখেছেন সত্যপীর (তারিখ: সোম, ২৭/০২/২০১২ - ৩:৪৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১৮৮৩ সালে প্রকাশিত রেভারেন্ড লাল বিহারী দে রচিত Folk Tales of Bengal বইতে গ্রামবাংলার কিছু লোককাহিনী পাওয়া যায়। সেই লোককাহিনী নিয়ে সিরিজের আজ প্রথম পর্ব, গরীব বামুন।
….........................................................

এক ছিল গরীব ব্রাহ্মণ, তার এক বউ আর চার বাচ্চা। ভারি গরীব সে, খাওয়া জুটতো না তার। নিজের সহায় সম্পত্তি বলে কিছু ছিলনা, বড়লোকের দেওয়া দানের পয়সাতেই তার দিন চলতো। কারো বিয়েশাদী কি শ্রাদ্ধ থাকলে তার মেলা ইনকাম হত, কিন্তু দুঃখের বিষয় লোকে নিয়মিত বিয়ে করতো না আর প্রতিদিন দুচারটে লোকও মরতোনা। তাই বড় কষ্টে ছিল সে। বউ তাকে দিনে দুইবার আকাইম্মা বলে ঝাড়ি দিত, বাচ্চাগুলি ক্ষিধের জ্বালায় ঘ্যানঘ্যান করতো কানের পাশে। কিন্তু সে গরীব হলেও লুক ভালো, প্রতিদিন ঘড়ি ধরে পূজাপাঠে তার কামাই ছিলনা। সে ছিল শিবের সঙ্গী দেবী দূর্গার পূজারী। লাল কালিতে দেবী দুগগার নাম একশ আটবার না লিখে সে জলস্পর্শ করতো না। সারাদিন কথায় কথায় সে দেবী দূর্গার নাম মুখে নিত।


দেশে বিদেশেঃ গান শোনা

সত্যপীর এর ছবি
লিখেছেন সত্যপীর (তারিখ: শনি, ২৫/০২/২০১২ - ১১:০৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

যখন সেভেন এইটে পড়ি ফিডব্যাকের বঙ্গাব্দ ১৪০০ অ্যালবামটি বের হয়। ভারি চমৎকার কভার, ভাঁজ খুলে দেখা যায় প্রতিটি গানের লাইন আর সাথে পাতাজোড়া ব্যান্ড সদস্যদের ছবি। ক্যাসেটের দাম ছিল তখন চল্লিশ টাকা, একসাথে অত টাকা বের করা সহজ ছিল না। যাহোক কোনভাবে কিনে শুনার পরে মাথা ঘুরে গিয়েছিল, আরে এমন গান তো শুনিনি। এরকম গানের আগে কবিতার লাইন? কোথাও রোমাঞ্চ নেই, খাঁটি করুণ বাস্তবতা, এবং এই বাংলাদেশেরই কথা? অথবা মনে পড়ে তোমায় গানটির শেষ লাইনে “...এবং এক মিনিট নিরবতায়” কথাটির সাথে টিকটক টিকটক শব্দ? নাহ আরো কিছু গান শুনতে হচ্ছে।


নবাবনামা - দুই

সত্যপীর এর ছবি
লিখেছেন সত্যপীর (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৩/০২/২০১২ - ১২:৪৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রথম পর্ব এখানে

মুর্শিদ কুলির মৃত্যুর পর কটক থেকে দুই অনুচর নিয়ে বাংলায় হাজির হন জামাতা সুজা খান। ওই দুই অনুচর ছিল দুই ভাই, একজনের নাম হাজি আহমেদ আরেকজনের নাম আলিবর্দি খাঁ। কেউ বলে এরা দিল্লীর বিরাট বংশের লোক, তবে দুষ্টলোকের রটনা হল হাজি আহমেদ ছিল একটি ভৃত্য আর আলিবর্দি ছিল হুক্কাবরদার। বড় ভাই হাজি আহমেদ অতি চতুর ও বুদ্ধিমান, তিনি মন্ত্রিপদ বাগিয়ে নিলেন। শোনা যায় নবাবের হেরেমে পাইকারি মেয়ে সাপ্লাই করার জন্য তিনি দাগী আসামীদের নিয়ে দল গড়েন। তিনি নাকি একটি কচি সুন্দরী ভেট হিসেবে বগলে না নিয়ে কখনোই নবাবের দরবারে যেতেন না। ছোট ভাই আলিবর্দি ছিলেন কড়া ধাঁচের, পাক্কা সৈনিক মনোভাব। তাকে নবাবের অধীনে একটি ঘোড়সওয়ার কোম্পানীর প্রধান বানানো হয়।


দেশে বিদেশেঃ পাবলিক বাস

সত্যপীর এর ছবি
লিখেছেন সত্যপীর (তারিখ: সোম, ২০/০২/২০১২ - ১০:৫৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাংলাদেশে বাস ড্রাইভার (এবং ট্রাক ড্রাইভার) কে ডাকা হয় ওস্তাদ। ওস্তাদ অর্থাৎ দক্ষ, সুনিপুন, পটু। কোন একটি বিষয়ে অগাধ পান্ডিত্যের অধিকারী। চলাচলের প্রায় অনুপযুক্ত কিছু যানবাহন নিয়ে ঢাকাসহ সমগ্র বাংলাদেশ পাঁচ টনের রাস্তায় এরা যে ধুন্দুমার কান্ড লাগিয়ে দেয় এতে তাদের ওস্তাদ না ডেকে উপায় নেই।


নবাবনামা - এক

সত্যপীর এর ছবি
লিখেছেন সত্যপীর (তারিখ: শনি, ১৮/০২/২০১২ - ১০:২১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাংলার নবাব মুর্শিদ কুলি খান ছিলেন অত্যন্ত কড়া শাসক। মৌলবাদ হল অফ ফেম এর সুপারস্টার আওরঙ্গজেবের তল্পিবাহক মুর্শিদ কুলি, যেমন গুরু তেমনই তার চেলা। মানুষ প্রজা নিপীড়ন করে তিনি প্রজা জমিদার দুটাই নিপীড়ন করতেন। তিনি ছিলেন কনভার্টেড মুসলমান, দলে দলে লোকে খৎনা করে মুসলমান হচ্ছেনা দেখে তার খালি মনে হত কেনু কেনু। ঠিক আওরঙ্গজেবের মত (অথবা জিন্নার মত, অথবা মোল্লা ওমরের মত, অথবা জামাতের মত) তার দৃঢ় সংকল্প ছিল সোনার দেশটা মুসলমান দিয়ে ভরিয়ে তোলার।


পাহাড়ের ইঁদুর

সত্যপীর এর ছবি
লিখেছেন সত্যপীর (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৬/০২/২০১২ - ১০:৫১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ছত্রপতি শুনলে মনে হয় ছাতি মাথায় মানুষ বুঝি। মারাঠি ভাষায় ছত্রপতি অর্থ সম্রাট। সংস্কৃত শব্দ ক্ষেত্র (এলাকা) থেকে ছত্র, সুতরাং ছত্রপতি=ক্ষেত্রপতি=ফিল্ড মার্শাল। মোগল সাম্রাজ্যের মাথাব্যথার কারন হয়ে ওঠা দুর্ধর্ষ মারাঠা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ ভারতের সকল হিন্দু মৌলবাদীদের কলিজার টুকরা। হিন্দু প্রজানিপীড়নকারী মুসলমান মোগল বাদশার বিপক্ষে তিনি ধারাল হিন্দু তলোয়ার নিয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন বলে কথিত আছে। তবে পৃথিবীর অন্যান্য নেতার মতই তার আসল ধর্ম ছিল ক্ষমতা, ক্ষমতার লোভে তিনি যে মোগলের সাথে আজ আড়ি দিতেন কাল তাকেই বুখে আয় বাবুল বলে ডাক দিতেন। শিবাজী প্রতিষ্ঠিত মারাঠা বাহিনী ছিল প্রথম শ্রেণীর গেরিলা যোদ্ধা, সংখ্যায় বৃহত্তর সৈন্যবাহিনীকে ছোট ছোট সুশিক্ষিত মারাঠা দলের হিট অ্যান্ড রান পদ্ধতিতে নাকাল করতে জুড়ি ছিলনা। ছেলে ঘুমালো পাড়া জুড়ালো বর্গী এল দেশে, ছেলেবেলায় পড়া কবিতার বর্গী হল এই মারাঠা গেরিলার দল।


টেরম টেরম যুদ্ধ

সত্যপীর এর ছবি
লিখেছেন সত্যপীর (তারিখ: শনি, ১১/০২/২০১২ - ১০:৩২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মোগল সাম্রাজ্যের সর্বশেষ প্রতাপশালী বাদশা আওরঙ্গজেব ছিলেন একটি এক্সপোর্ট কোয়ালিটি শয়তানের লাকড়ি। গদিতে বসার জন্য তিনি তার প্রতিটি ভাইকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হত্যা করেন, পিতা শাজাহানকে জেলের ভাত খাইয়ে মারেন। গদিতে বসে তিনি গণহারে হিন্দুদের খৎনা করে মুসলমান বানাতে থাকেন, ধর্মীয় বৈষম্যমূলক জিজিয়া কর পুনরায় চালু করেন, হাজার বছরের পুরোন মন্দির প্যাগোডা ধুলোয় মিশিয়ে দেয়া হয়। তিনি ভন্ডামীরও বাদশা ছিলেন, সকাল বিকাল কুরান শরীফ মাথায় ঠেকিয়ে জিহাদি জোশ দেখালেও রাতে নিজেরই বিয়ে করা হিন্দু বউয়ের কোমল বুকের খাঁজে নাক ডুবিয়ে ঘুমাতে তার আটকাতো না। প্রখর বুদ্ধিমান, প্রতারকশিরোমণি ও চরম ধুরন্ধর মহীউদ্দিন মুহম্মদ আওরঙ্গজেব ছিলেন একটি ক্রিমিনাল মাস্টারমাইন্ড।


চিনসুরা

সত্যপীর এর ছবি
লিখেছেন সত্যপীর (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৯/০২/২০১২ - ১১:০৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

চান্দেরনগরের মাইল তিনেক দূরেই ওলন্দাজ কুঠি চিনসুরা। তখন বাংলার নবাব মীর জাফর। ইংরেজের বদান্যতায় গদীতে বসেছিলেন বলেই হয়তো কবে আবার চড় দিয়ে নামিয়ে দেয় সেই ভয় তার ছিল। তাই নবাব ওলন্দাজদের বাংলায় একটা কুঠিস্থাপনের অনুমতি দেন যেন আবার পোল্টি খাওয়ার দরকার পড়লে আরেক সাদা লোকের সাহায্য পাওয়া যায়। বাটাভিয়া

পাদটীকা

  • ১. চিনসুরা অর্থাৎ বর্তমান পশ্চিম বাংলার চুঁচুড়া
  • ২. বর্তমান ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তাক


দেশে বিদেশেঃ নাপিত

সত্যপীর এর ছবি
লিখেছেন সত্যপীর (তারিখ: রবি, ০৫/০২/২০১২ - ৭:২৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মগবাজারে কোন এক জায়গায় টিউলিপ বলে এক সেলুন ছিল। ওইখানে আব্বা আমাদের তিন ভাইকে চুল কাটাতে নিয়ে যেতেন যখন আমি একবারে ল্যাদাবাচ্চা। মনে আছে ওরা প্রতিবার ছোট একটা রঙিন কার্ড দিত, একপিঠে দোকানের নামধাম অন্যপিঠে ক্যালেন্ডার। আমাদের তিন ভাইতে তুমুল ফাইট চলতো ঐ মহামূল্যবান কার্ড নিয়ে। তখন স্কুলে যেতাম একটা স্টীলের পেনসিলবক্স নিয়ে, উপরে সুপারম্যানের ছবি আর হিম্যানের স্টিকারওয়ালা। ঐ পেনসিলবক্সের ভিতর জায়গা হত কার্ডের। কোনদিন ক্যালেন্ডার দিনতারিখ দেখার জন্য ব্যবহার করেছি বলে মনে পড়েনা, দিন-তারিখ দেখার তেমন দরকারও হতনা। শুধু মাথায় থাকতো স্কুল বৃহস্পতিবার হাফ আর শুক্রবার পুরো ছুটি। ওইটে জানার জন্যে বালকের ক্যালেন্ডার প্রয়োজন নেই।


জিহাদ অথবা নিছক বাঁশের গল্প

সত্যপীর এর ছবি
লিখেছেন সত্যপীর (তারিখ: শুক্র, ০৩/০২/২০১২ - ৫:১২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দোর্দন্ড প্রতাপশালী ইংরেজের কামানের সামনে পলকা বাঁশের কেল্লা নিয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন আমাদের বাংলার তিতুমীর। তিনি ছিলেন একটি আস্ত মৌলবাদী, শুধু ইংরেজ নয় সকল কাফিরের বিরুদ্ধেই তার গুষ্টি কিলাই মনোভাব ছিল। তবে ইংরেজদের সাথে ঘাড় ত্যাড়ামি করার জন্য তাকে হাই ফাইভ দেয়া যায়।