নবাবনামা - দুই

সত্যপীর এর ছবি
লিখেছেন সত্যপীর (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৩/০২/২০১২ - ১২:৪৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রথম পর্ব এখানে

মুর্শিদ কুলির মৃত্যুর পর কটক থেকে দুই অনুচর নিয়ে বাংলায় হাজির হন জামাতা সুজা খান। ওই দুই অনুচর ছিল দুই ভাই, একজনের নাম হাজি আহমেদ আরেকজনের নাম আলিবর্দি খাঁ। কেউ বলে এরা দিল্লীর বিরাট বংশের লোক, তবে দুষ্টলোকের রটনা হল হাজি আহমেদ ছিল একটি ভৃত্য আর আলিবর্দি ছিল হুক্কাবরদার। বড় ভাই হাজি আহমেদ অতি চতুর ও বুদ্ধিমান, তিনি মন্ত্রিপদ বাগিয়ে নিলেন। শোনা যায় নবাবের হেরেমে পাইকারি মেয়ে সাপ্লাই করার জন্য তিনি দাগী আসামীদের নিয়ে দল গড়েন। তিনি নাকি একটি কচি সুন্দরী ভেট হিসেবে বগলে না নিয়ে কখনোই নবাবের দরবারে যেতেন না। ছোট ভাই আলিবর্দি ছিলেন কড়া ধাঁচের, পাক্কা সৈনিক মনোভাব। তাকে নবাবের অধীনে একটি ঘোড়সওয়ার কোম্পানীর প্রধান বানানো হয়।

এই দুইটি মুসলমান ভাই ছাড়াও দুইটি হিন্দুকে চাকরী দেন সুজা, তাদের নাম আলম চান আর জগতশেঠ। আলম চান পরিচিত ছিলেন রায় রাজন হিসেবে, ব্যবসা বাণিজ্যে তার ব্যাপক অভিজ্ঞতা। এক ধরনের ব্যাবসাদার ছিল যারা নবাবের আজ্ঞা পদে পদে পালন করতো কিন্তু তার মূল ধান্দা ছিল পয়সা বানানো, রায় ছিলেন ওইরকম লোক। জগতশেঠের উত্থান আওরঙ্গজেবের আমলে, তিনি ছিলেন মুর্শিদাবাদের বনেদী ব্যাংকিং পরিবারের লোক। মুর্শিদ কুলির বাংলা বিহার উড়িষ্যার নবাব আর দেওয়ান হবার জন্যে যে পয়সা লেগেছিল তার অন্যতম উৎস ছিলেন জগতশেঠ।

সুজা খান ছিলেন নরম সরম টাইপ, চারপাশের সবার মন যুগিয়ে চলতেন তিনি। মরহুম শ্বশুরের আটক জমিদারদের তিনি মুক্ত করে দিলেন, আর বললেন টাকা ঠিকঠাক মত দিলে আর যন্ত্রনা করা হবেনা তাদের। কিছু কিছু ট্যাক্স তিনি মকুব করে দিলেন। এরপরে চার অনুচরের হাতে শাসন ছেড়ে তিনি বোতল ও যুবতীর পৃথিবীতে মনোনিবেশ করলেন।

কয়দিন পরে বিহারের ডেপুটি নবাবের পোস্ট খালি হল, আর হাজি আহমেদ তার হেরেমের কানেকশন খাটিয়ে ভাই আলিবর্দিকে ঐ চাকরির ব্যবস্থা করে দিলেন। নবাব সুজার বউ মুর্শিদ কুলির মেয়ে বেঁকে বসলেন যে তিনিই আলিবর্দিকে অফিসিয়াল তকমা দিবেন। মোগল রীতিনীতির ঘোর বিরোধী এই মেয়েমানুষের আবদার, কিন্তু নরম দিলের সুজা তা মঞ্জুর করলেন। আলিবর্দি খাঁ দাঁতে দাঁত চেপে অপমান হজম করে জেনানামহলে গিয়ে ডেপুটি নবাব টাইটেল নিতে বাধ্য হলেন।

এদিকে দুই ভাইকে নিয়ে জামাই আদর দেখে তরুন রাজপুত্র সরফরাজ খান তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন। তিনি খোলা দরবারে প্রকাশ্যে পিতাকে বললেন যে তিনি দুইটি সাপ পুষছেন, এই সাপ একদিন পরিবারটিকে দংশন করে হত্যা করবে। সুজা এই দেখে ছেলেকে সোজা ফাটকে পুরে দিলেন, আর ধুরন্ধর হাজি তাকে বের করে আনলেন। সরফরাজ কিন্তু তবুও দুই ভাইয়ের প্রতি বিদ্বেষ পুষে রাখলো।

এদিকে দুই ভাই দিল মন নিজ নিজ কাজে। হাজি আহমেদ জমিদারদের বোঝাল সে-ই তাদের মুক্ত করে এনেছে, সুজা একটা দুর্বলচিত্ত লোক ইত্যাদি। বিহারের ডেপুটি আলিবর্দি বিবিধ রাজাকে আমন্ত্রন জানিয়ে তাদের সাথে বিএফএফ পাতালেন, তাদের সাথে ভ্রাতৃত্ব ও মৈত্রীর বন্ধনে জড়াবার দৃঢ় শপথ ব্যক্ত করলেন। তারপরে পাটনায় ডেকে কল্লা নামিয়ে দিলেন। বাকিদের সশস্ত্র আক্রমন করা হল, তাকে শাসক মেনে নিয়মিত টাকা পাঠানোর হুকুম হল। এই পুরো ব্যাপারটায় আলিবর্দির সঙ্গী ছিল এক আফগান, তার নাম আব্দুল করিম খান। পনেরোশ আফগান যোদ্ধা নিয়ে সে সাহায্যে এসেছিল।

আলিবর্দি এরপরে মন দেন হিন্দু চুকওয়াড় জাত বশ্য করতে। এরা ছিল সাহসী যোদ্ধা, পাটনা আর মুঙ্গেরের মাঝামাঝি শাম্ব নদীর তীরে এরা থাকতো। চুকওয়াড়ের রাজা ভারি ত্যাড়া লোক, কখনোই কোন পয়সাকড়ি নবাবকে ছোঁয়াত না। এমনকি সে মোগলদেরও মানত না। মুঙ্গেরের উপর দিয়ে যাওয়া যাবতীয় জাহাজ পাকড়ে সে নিয়মিত চান্দা আদায় করতো। এইরকম স্বাধীন রাজার দলই ইয়োরোপীয়ানদের ব্যাপক দৌড়ের উপর রাখত, তাদের জাহাজে পাহারাদার রাখতে হত। কোলকাতায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর মেজর হান্টের সাথে প্রায়ই এদের হাতাহাতি হত।

১৭৩০ সালে রাজা গেল মরে। তার ছেলে, মোটে সতেরো বছর বয়েস, আলিবর্দির সাথে চুক্তিতে এল আর খাজনা দিতে রাজি হল। দুই পক্ষই ভারি সাবধানতা অবলম্বন করলো খাজনা উত্তোলনের সময়। মুঙ্গেরের পাশে নির্দিষ্ট স্থানে রাজা অনধিক তিরিশটি অনুচর নিয়ে টাকা দিতে আসতেন, আর এক মোগল অফিসার এসে টাকা নিয়ে যেত। তার সাথেও থাকত তিরিশ প্রহরী।

১৭৩৫ সালে গঙ্গা ধরে এক ইংরেজ বহর পয়সা আর মাল নিয়ে পাটনা কুঠি যাচ্ছিল। হলওয়েল নামে এক তরুন সিভিলিয়ান ছিল কমান্ডার, আর ক্যাপ্টেন হলকম্ব ছিল সৈন্যের নেতৃত্বে। বিশে অক্টোবর ভোরবেলা তারা মুঙ্গেরের কাছে বনের ধারে থামে। এগারটার দিকে একটি ঝুড়িভর্তি মাছধরা নৌকা আসতে দেখা গেল। নৌকা থামিয়ে দেখা গেল ঝুড়িতে মাছ নয় মানুষের কাটা মাথা দিয়ে ভরা। শোনা গেল আলিবর্দির একটি চরম বিশ্বাসঘাতকতার গল্প। ওইদিন সকালে বাৎসরিক খাজনা দিতে তিরিশ অনুচর সহ রাজা গিয়েছিলেন, গিয়ে দেখেন আলিবর্দির চারশ সিপাই। রাজা ও তার অনুচরদের কল্লা নামিয়ে ঝুড়িভর্তি করে এই নৌকায় পাঠান হয় আলিবর্দির কাছে।

একই দিনে আলিবর্দি চুকওয়াড়ের রাজধানী শাম্ব নগরী ধ্বংস করতে লোক পাঠান। সন্ধ্যার দিকে ইংরেজরা দূর থেকে নগরীর ধোঁয়া ওঠা দেখতে পায়। কিশোরী রাণী তার নাবালক সন্তান নিয়ে ঘর আটকে সব ভৃত্য দূর করে দেয়, তারপরে ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। আলিবর্দির সিপাইরা এসে দেখে বিলকুল ফাঁকা। বিবিধ ঘরবাড়ি তছনছ করে আগুন ধরিয়ে তারা বাড়ির পথ ধরে।

এইসময় আফগান আব্দুল করিম ভারি ঘাড় ত্যাড়ামি করছিল দেখে আলিবর্দি একে ঠান্ডা করার ব্যবস্থা করেন। আব্দুল করিমকে প্রাসাদে ডাকা হয়, আর ঢোকামাত্র আততায়ীর দল তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে কেটে পিস পিস করে। আফগান সিপাইরা এতে ব্যাপক ভীত হয়, আলিবর্দির বিপক্ষে তারা টু শব্দটিও আর করে না।

এদিকে দিল্লীর সাথে আলিবর্দির আরেক গুটি চলছিল। সুজা খানকে হটিয়ে নিজেই বিহারের স্বাধীন নবাব হবার ধান্দা ছিল তার। দিল্লী দরবারের নানান উজিরনাজিরকে ঘুষ পাঠিয়ে খোদ মোগল সম্রাটের কান পর্যন্ত যাওয়ার ব্যবস্থা করেন তিনি। সুজা খান খবর পেয়ে হাজি আহমেদকে গারদে ভরেন। কিন্তু তিনি নরম দিলওয়ালা লোক, আলিবর্দির আখের গুড়ের মত মিষ্টি চিঠি পেয়ে আর হেরেমের নারীদের অনুরোধে তিনি হাজিকে ছেড়ে দেন। হাজি আহমেদ আবার স্বমূর্তি ধরেন।

হঠাত একদিন ঘুম থেকে উঠে সুজা দেখেন তিনি চালে হেরে গেছেন। তার পুরোন চাকর আলিবর্দি খাঁকে বিহারের নবাব করার হুকুম জারি করে চিঠি দিলেন স্বয়ং মোগল সম্রাট। সুজার ক্রোধের অবধি রইল না, তিনি দুই বদমাস ভাইয়ের সানডে মানডে ক্লোজ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু আচমকা তার মৃত্যু ঘটে, কেউই ঠিক করে বলতে পারেনা কিভাবে। বিশ্বাস করা হয় হাজি আহমেদের ইশারায় জেনানামহলের কেউ তাকে বিষ খাইয়ে মারে।

সুজা খান একটি অস্থির সময়ে বেঁচে ছিলেন। হিন্দুস্তানের সর্বশক্তিমান মোগল শাসন তখন ঢিলে হয়ে আসলেও বহালই ছিল। সুজা অত্যাচারী ছিলেননা তার শ্বশুর মুর্শিদ কুলির মত। তার কর্মচারীদের তিনি নানান পদের খাবার পাঠাতেন নিয়মিত, এমনকি মুর্শিদাবাদে অচেনা আগন্তুকদেরও সাদরে বরণ করা হত। কেউ ঘুষ খায় এই অভিযোগ এলে সোজা ডিসমিস করে দেয়া হত, আর খবর প্রদানকারীর মিলত নগদ পয়সা।

সুজার একটি নোটবই ছিল, হাতির দাঁতে বাধানো। ওইখানে তিনি তার পরিচিত সকলের নাম টুকে রাখতেন, আর কয়দিন পর পর একেকটা নামের পাশে একটি টাকার অংক বসাতেন। ঐ টাকা সরাসরি নবাব পাঠাতেননা, করতেন কি খাতক জমিদারদের কাছে ঐ নাম পাঠাতেন যেন জমিদার নবাবকে খাজনা বুঝিয়ে দেবার বদলে ঐ ব্যক্তির কাছে টাকা পৌঁছে দেয়। জমিদারেরা খুশি হয়ে ঐ টাকা সহ কিছু উপরি উপহারসুদ্ধা লোকটির কাছে বুঝিয়ে দিত।

(চলবে)

জেমস হুইলারের “The History of India from the Earliest Ages: pt. I. Mussulman rule. pt.II. Mogul empire. Aurangzeb” অবলম্বনে।

…............................................................
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ লিখকের মতামতের জন্য অনুবাদক দায়ী নহেন।


মন্তব্য

মরুদ্যান এর ছবি

চলুক পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

সত্যপীর এর ছবি

চাল্লু

..................................................................
#Banshibir.

বান্ধবী এর ছবি

সুজা খানকে আকর্ষণীয় চরিত্র মনে হচ্ছে। লিখতে থাকুন পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

সত্যপীর এর ছবি

নরম মানুষের দুনিয়ায় ভাত নাইরে ভাই। বেচারা কিছুই করে যেতে পারে নাই।

উৎসাহ দেবার জন্যে থ্যাঙ্কু আপু।

..................................................................
#Banshibir.

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

চলুক
আগামী পর্বের অপেক্ষায় পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

সত্যপীর এর ছবি

আইচ্ছা খাড়ান।

..................................................................
#Banshibir.

তারেক অণু এর ছবি
সত্যপীর এর ছবি

দেশবিদেশে ঘুরতেসেন বেশি পপকন খায়েননা অনু ভাই, পেট খারাপ করবো খাইছে

..................................................................
#Banshibir.

কালো কাক এর ছবি

সুজা চরিত্রটাকে ইংরেজরা বেশ ভাল এঁকেছে দেখা যাচ্ছে।
এইসব রাজরাজরা'রা তো নিজেরা নিজেরা ব্যাপক কাটাকাটি করেছে দেখা যায়, এদের প্রজা শাসনের ইতিহাসগুলো কি জানাবেন পীর সাহেব?

সত্যপীর এর ছবি

হ কাটাকাটিরই দুনিয়া।

প্রজাশাসনের ইতিহাস পেলে লিখে ফেলবো। তবে আমার মনে হয় ঐ ব্যাপারে নবাবে নবাবে ব্যাপক মিল, সবাই ছিল একই রকম ফাউল।

..................................................................
#Banshibir.

দিগন্ত এর ছবি

প্রজাশাসনের কোনও দরকার ছিল না, ওইটা জমিদাররা চালাত। জমিদার খাজনা দিয়ে গেলে প্রজা বাঁচল কি মরল সেটা কে দেখে?


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

সত্যপীর এর ছবি

চলুক

..................................................................
#Banshibir.

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

সত্যপীরের জয় হোক!
অনুবাদ খুব ভালো হইছে।
আর জেমস সাহেবের জন্য রইল-

সত্যপীর এর ছবি

জেমস সাহেবরে আর পিডাইয়োনা ভাই, বেচারা গণপিটুনি খাইতেসে আমার লিখায় খাইছে

তোমার টিপু সিরিজের পাশাপাশি মারাঠা সাম্রাজ্য নিয়ে কিছু লিখবা নাকি? আমি ভালো তেমন কিছু পাচ্ছিনা, কিন্তু এদের ঘটনা বড়ই আগ্রহোদ্দীপক।

..................................................................
#Banshibir.

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

মারাঠাগো লইয়া লেখতে পারি তয় আগে মহীশুর শ্যাষ করি। হাসি
এক কাজ কর তুমি না হয় লেইখা ফালাও। আমি তো তোমার মত মজা কইরা লেখতে পারি না। খাইছে
আমি তোমারে কিছু বই রেফার করতে পারি।
দাঁড়াও খুইজা বাহির করি।

সত্যপীর এর ছবি

মহীশুর চট করে শেষ করার দরকার নাই। চলুক কয়দিন। পরে হায়দার আলীরেও ধরতে পারো ক্যাঁক করে।

আমার লিখা মজা হইতে পারে কিন্তু ফ্যাক্টের গ্যারান্টি থাকেনা। আমিতো তোমার মতো গবেষনা করে লিখিনা দুম করে অন্ধ অনুবাদ করে দেই। তাই পাঠকের কাছে তোমার লিখার গুরুত্ব বেশি হওয়া উচিৎ। আমার লিখার মূল আকর্ষন পোস্ট না, কমেন্ট সেকশনে আমরা যে তুমুল ইতিহাস আলোচনায় মেতে উঠি ঐটে আমার হাবিজাবি লিখার মূল কৃতিত্ব।

দেও বই রেফার করে, কপিরাইট এক্সপায়ার্ড দিয়ো কিন্তু।

..................................................................
#Banshibir.

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

মহীশুর সিরিজের চার আর পাঁচ নং পর্ব টাইপ করা শেষ করলাম। বছরের ক্রমানুসারে লিখছি; সিরিজটা একটু বড় হবে মনে হয়। প্রথমে শুধু টিপুকে হাইলাইট করার ইচ্ছা থাকলেও হায়দারের সুলতান হবার পরের সময় হতে লিখছি। আমার মহীশুর সিরিজট পুরোপুরিই যুদ্ধের ইতিহাস; এখানে হায়দার-টিপু-ব্রিটিশ-মারাঠা-নিজামদের চরিত্র, শাসন-পদ্ধতি বা, সে সময়ের ভারত উপমহাদেশের সাধারণ মানুষরদের অবস্থা বর্ণনা করিনি। তুমি এক কাজ কর না! সে সময়ের মানুষদের জীবন পদ্ধতি, রাষ্ট্র ব্যবস্থা, শাসকদের চরিত্র নিয়ে লিখো। আমরা তো সাধারণত: ভারতের ইতিহাস বলতে শুধু মারমারি-কাটাকাটি-যুদ্ধের ইতিহাস দেখি।

০১ মার্চ থেকে আবার নির্বাসনে যেতে হবে ওঁয়া ওঁয়া । একটা কোম্পনীর অডিটের কাজে কুমিল্লা যাচ্ছি। ব্লগে আবার ঢুকতে পারবো মনে হয় আগামী মাসের মাঝামাঝিতে।

আর, সত্যপীরের অনুবাদ চলতে থাকুক। হাসি

সত্যপীর এর ছবি

সাধারন লোকের জীবনযাপন নিয়ে সাদারা বই লিখেছে অল্পই। দেখি কিছু পাই কিনা। মারামারি কাটাকাটি যুদ্ধের ইতিহাসই লিখতে হবে মনে হচ্ছে।

ঠিক আসে মার্চের মাঝে ফিরত এসে একসাথে চার/পাঁচটা পোস্ট দিয়ে দিলেই আমরা খুশী চাল্লু

..................................................................
#Banshibir.

তাসনীম এর ছবি

চলুক

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

উচ্ছলা এর ছবি
অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

চলুক চলুক চলুক


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

অমিত এর ছবি

চলুক চলুক চলুক চলুক

সত্যপীর এর ছবি

একটা একটা করে হাত বাড়তেসে চাল্লু

..................................................................
#Banshibir.

অন্যকেউ এর ছবি

খাইছেরে কাহিনি! পুরাই দেখি কল্লাকাটা ইতিহাস!

সামনে কী আসে দেখার জন্য বসলুম পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম নিয়ে। হাসি

_____________________________________________________________________

বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।

সত্যপীর এর ছবি

আরো কল্লা নামবো। বাংলার ভাগ্যাকাশে দুর্যোগের ঘনঘটা আইল বলে!

..................................................................
#Banshibir.

চরম উদাস এর ছবি

চলুক চলুক চলুক চলুক চলুক

অন্যকেউ এর ছবি

চলুক চলুক চলুক চলুক চলুক চলুক
দেখি কদ্দূর যায়! খাইছে

_____________________________________________________________________

বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।

কুমার. এর ছবি

হাততালি
মোগল আমলে তো পুরা আনরিয়েল টুর্নামেন্ট খেলা হইত, কে কারে অফ করে হিসাব নেই।
চরিত্র মেলা বেশী, পড়তে পড়তে ভুলে যাই কে কার শালা। একটা লিস্ট অফ চরিত্র থাকলে মন্দ হইত না।

সত্যপীর এর ছবি

ঠিক কইসেন, সবাই সবার শালা। শালাময় দুনিয়া।

..................................................................
#Banshibir.

উদ্ভট রাকিব এর ছবি

পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

ধুসর গোধূলি এর ছবি

বাকাপ চলুক
আচ্ছা, আংরেজদের এই ইতিহাসের খণ্ড কি ঊনিশো সাতচল্লিশের পরেও আছে? তাতে শেরে বাংলা, সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা ভাষানী, বঙ্গবন্ধু- প্রমূখদের সম্মন্ধেও কি লেখা আছে? বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর ব্যাপারে? চিন্তিত

সত্যপীর এর ছবি

সবই আসে, থাকবো না ক্যান? যুগে যুগেই ইংরেজরা নিজেদের মতন ইতিহাস লিখসে। তবে কপিরাইটেড বই, অনুবাদ করলে মডুমামা পিটানি দিবার সম্ভাবনা।

..................................................................
#Banshibir.

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

তোমার লাইগা একখান ইমো বানাইছি। দেখ পছন্দ হয় কি-না?

এইখানে একটা গুঁতা দেও।

সত্যপীর এর ছবি

সাব্বাস। চ্রম হইছে। মনে হইতসে নবাব বাদশারে দেইখা ভেংচি কাটতেসি। নিজে আঁকসো নাকি? বিরাট কামেল রাজা দেখি তুমি।

তারেকাণুর ইমোটাও জটিল। এইবার চরম উদাসের ইমো লাগবো। বান্দরের ভেটকিওলা ইমো।

..................................................................
#Banshibir.

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

আরে না কি যে কও! এত বড় অন্ত:জাল আছে না। দেঁতো হাসি

সত্যপীর এর ছবি

চোখ টিপি

..................................................................
#Banshibir.

কৌস্তুভ এর ছবি

র‍্যান্ডম র‍্যাম্প্যান্ট কাটাকাটি চলছে দেখি! অ্যাঁ

সত্যপীর এর ছবি

হ যে যারে সামনে পায় কল্লা ঘ্যাচাং। ব্যাপক বিনোদন।

..................................................................
#Banshibir.

প্রখর-রোদ্দুর এর ছবি

চলুক

দুর্দান্ত এর ছবি

"এই দুইটি মুসলমান ভাই ছাড়াও দুইটি হিন্দুকে চাকরী দেন সুজা, তাদের নাম আলম চান আর জগতশেঠ। আলম চান পরিচিত ছিলেন রায় রাজন হিসেবে, ব্যবসা বাণিজ্যে তার ব্যাপক অভিজ্ঞতা। এক ধরনের ব্যাবসাদার ছিল যারা নবাবের আজ্ঞা পদে পদে পালন করতো কিন্তু তার মূল ধান্দা ছিল পয়সা বানানো, রায় ছিলেন ওইরকম লোক। জগতশেঠের উত্থান আওরঙ্গজেবের আমলে, তিনি ছিলেন মুর্শিদাবাদের বনেদী ব্যাংকিং পরিবারের লোক। মুর্শিদ কুলির বাংলা বিহার উড়িষ্যার নবাব আর দেওয়ান হবার জন্যে যে পয়সা লেগেছিল তার অন্যতম উৎস ছিলেন জগতশেঠ।"

১) বানংলার ইতিহাস নাটকে এই নামে আমরা সেই মুরশিদ কুলির সময় থেকে সিরাজুদ্দোউলা পরয্ন্ত একটি চরিত্র অবধারিতভাবে খুঁজে পাবো। কিন্তু এই নামে একাধিক ব্য়াক্তি থাকার সম্ভাবনা বেশী 'জগতশেঠ' কে আজকের ধারনায় একটা ব্য়ান্কিনং কনংগ্লোমারেট বলা যেতে পারে। ওলন্দাজ ইস্ট ইন্ডিয়ান কোম্পানির ততকালীন কান্ট্রি-ডিরেক্টর তাইলেফের আমস্টারডামে বোরডের কাছে লিখছে (১৭ অক্টোবর ১৭৫৫)" হুগলি জগতশেঠ কুঠি পরিচালিত হয় শেঠ মানিকচান্দজি ও শেঠ আনন্দচান্দজি এর নামে, ঢাকা কুঠি পরিচালিত হয় শেঠ মানিকচান্দজি ও শেঠ ফতেচান্দজির এর নামে, এবনং পাটনার কুঠি ও আফিম-সোরার কারখানা পরিচালনা করে শেঠ মানিকচান্দজি ও দয়ানন্দজি।"

২) জগতশেঠরা জৈন ছিল, হিন্দু নয়।

৩) নবাব সুজার মত সাইজের লোকের জগতশেঠকে চাকুরি দেওয়ার সাহস পাবার কথা নয়। যেমন বরিশালের মেয়র কখনো বসুন্ধরার সোবহানকে চাকুরি দেওয়ার সাহস পাবেনা। আরেকটু খুলে বলি। ১৭১০ এর পারসিক-মোঘল-মারাঠা যুদ্ধের ডামাডোলে কামান ও হাতমশালের ব্য়াবহার বেড়এ যাওয়ায় মোঘল-মারাঠা দুদিকেই বারুদের চাহিদা উত্তরোত্তর বাড়ছিল। জগতশেঠের পরিবার সেসময়ে ভারতের সবচাইতে বড় সোরা (বারুদের কাঁচামাল, আর যার কাঁচামাল) উতপাদক ও সরবরাহকারি ছিল। পোল্য়ান্ড ও ফ্রান্সের সোরার খনি ফুরিয়ে আসার ফলে সেসময়ের ইউরোপেও জগত শেঠের সোরার চাহিদা তুনংগে ওঠে।

জগতশেঠের আরেকটি বানিজ্য় ছিল ব্য়ান্কিনং। ক্য়াশ ও ক্রেডিট দুটোই। পরিবারের প্রধান মানিক্চান্দের ম্রিত্য়ুর পরে ১৭১৪ সালে ফতেহচান্দ পরিবারের প্রধান হয়, সেসময়ে ঢাকা, পাট্না, চিশুরা ও দিল্লীতে এই পরিবারের টাকশাল ছিল। বানংলার সুবাদারের ঢাকা প্রতিনিধি তার আদায় করা টাকা জগতশেঠের ঢাকা কুঠিতে জমা করে একটা রশিদ নিত। সেটা কেউ একজন মুরশিদাবাদে নিয়ে জমা দিত। মুরশিদাবাদের সুবাদারের টাকা দরকার হলে, সেই রশিদ চিশুরার টাকশাল থেকে ক্য়াশ করে নিতে পারতো। অথবা সিধা দিল্লী পাঠিয়ে দিতে পারতো। সেখানেও সম্রাট চাইলে সেই রশিদ ক্য়াশ করতে পারতো। এইসব রশিদ (ব্য়ান্কনোট বা হুন্ডি)র তখন একটা সেকেন্ডারি ক্রেডিট বাজার চালু হয়, এবনং পুরো সম্রাজ্য়ব্য়াপি এই বাজারের নিয়ন্ত্রক ছিল জগতশেঠ।

তরক করা যেতে পারে, যে আসলে কে কার চাকুরিদার ছিল। যেখানে সুবাহ থেকে দিল্লী পরযন্ত বেশীরভাগ মুদ্রাতারল্য়ই ফতেহচাঁদের পরিবারের নিয়ন্ত্রনে, তখন সম্রাট-নবাব-সুবেদারের সেনানী ও প্রশাসনই আদতে এঁদের অধিনস্ত। পরের দশকগুলোতে আমরা দেখবো একের পর এক ররিনখেলাপি রাজপুরুষকে সরিয়ে এরাই নতুন লোককে বসিয়েছে, এবনং সেই প্রক্রিয়ায় দেশী শুল্কাআদায়কারির বদলে বিদেশী শুল্ক আদায়কারি এসেছে। প্রথম ভারতীয় বিদ্রোহের পর ও মূলত আমেরিকার সিভিল যুদ্ধএর সময়ে (মারকিন তুলা সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেল) নতুন জয়েন্ট স্টক ব্য়ান্কারেরা ভারতের দিকে চোখ ফেরানোর ফলে (এইচ এস বি সি ও স্টান্ডারড চারটারড ব্য়ান্কগুলো এদের অন্য়তম), ও সেই সাথে এধরনের পারিবারজয়েন্ট ইনংল্য়ান্ডের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার আগ পরযন্ত এই কাঠামো অটুট ছিল।

সত্যপীর এর ছবি

দুর্দান্ত কমেন্ট। গুরু গুরু

জগতশেঠ লোকটি তো বেশ উত্তম জাঝা ছিলেন মনে হচ্ছে। এর উপরে কিছু খুঁজতে হচ্ছে।

..................................................................
#Banshibir.

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।