বাসর রাতে বেড়াল মারা সহজ কাজ নয়

দ্রোহী এর ছবি
লিখেছেন দ্রোহী (তারিখ: সোম, ১৭/০৯/২০০৭ - ৩:০৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গতকাল রাতেই – ঠিক সাড়ে দশটায় আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু বশীর মারা গেল। রাত সাড়ে বারোটার দিকে আমরা সবাই মিলে তাকে ঠেলেঠুলে কবরে ঢুকিয়ে দিয়ে আসলাম। কবরে ঢোকার ব্যাপারে তার তেমন আগ্রহ ছিল না – সে চাইছিলো বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আরও কিছুক্ষন আড্ডা পেটাতে। কিন্তু সারাদিন খাটাখাটুনির পর বন্ধুত্বের কাতর আহ্বান এর চাইতে চৌকির আহ্বান অনেক বেশী আকর্ষণীয় লাগছিল। সেকারনেই তাকে কবরে ঠেলে দেয়া।

বশীরের সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা যতটা আত্মিক, তার চাইতে ও বেশী আর্থিক। গত কয়েক বছরে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে বাড়তে চল্লিশ হাজার অব্দি গিয়ে পৌঁছেছে।

আজ সকালে মেস ম্যানেজার আমায় ডেকে বললেন,“কিরে ভাই। দুমাস ধরে বিনা ভাড়ায় বেশ তো চৌকিদারি করছেন – আজকের মধ্যে ভাড়া না দিলে বিছানাপত্র সব বারান্দায় যাবে – জমিদারী করতে হবে তখন।”

শীতের রাতে জমিদারী করার চাইতে চৌকিদারি করাটাই শ্রেয়তর মনে হয় আমার কাছে। আর তাই বশীরের কাছে যাওয়া।

বশীরের বাড়ীটা দেখতে বেশ সুন্দর – বাগান ঘেরা একতলা বাড়ী। মেক্যানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পর রড – সিমেন্টের আড়তদারি করে বেশ পয়সা বাগিয়েছে সে। তাই বউ বাগাতেও বেগ পেতে হয়নি তাকে।

গিয়ে দেখি বাড়ীর সামনের বারান্দার বশীরের ছোট ভাই হেলাল মুখস্থ হয়ে বসে আছে। এই বাঁদরটা পুরোপুরি উড়নচন্ডী – পয়সা উড়ানোই তার একমাত্র কাজ। হেলালের মত উড়নচন্ডী ছেলে, যাকে কিনা সবসময়ই পরের মুখে হস্তক্ষেপ করতে দেখা যায় – সেই ছেলেকে মুখস্থ হয়ে বসে থাকতে দেখলে উদ্বিগ্ন হবারই কথা।

‘দাদা কোথায়?’

‘হাসপাতালে’ – হেলালের সংক্ষিপ্ত উত্তর।

বিয়ের আরেক অর্থ নিজের কবর খোঁড়া। আর কবর যে পাতালমুখী হবে এ বিষয়ে কার সন্দেহ থাকতে পারে। সেকারনেই পাতালের কথায় ভাবিত হইনা।

“গতকাল রাতে যে ঢুকিয়ে দিয়ে এসেছি সেই তখন থেকেই আছেন বুঝি?” হাসি মুখে জিজ্ঞাসা করি আমি।

হেলাল ততোধিক মুখ ভার করে জবাব দেয় –“মাঝরাতের দিকে একবার বেরিয়েছিলেন । আর ঢুকতে পারেননি সেখানটায়। অ্যাম্বুলেন্স এসেছিলো কিনা!”

অ্যাম্বুলেন্সের কথায় ভয় খাই! বাসর রাতে অনেক পুরুষের শৌর্য – বীর্যের কাহিনী লোকমুখে প্রচুর শুনেছি। তেমনি কিছু একটার আশংকায় ভাবিত হই।

“ভাবী ভালো আছেন তো এখন?” হেলালের দিকে আড়াআড়ি ভাবে প্রশ্ন ছুড়ে দিই।

বিস্মিত চোখে হেলাল বলে, “ভাবীর তো কিছু হয় নি। তিনি খারাপ থাকবেন কেন? হাসপাতালে নিতে হয়েছে দাদাকেই।”

“কেন? দাদাকে কেন?”

“দাদা বাসর রাতে বিড়াল মারতে গিয়েছিলেন। মারবেন কি – উল্টো নিজেই পা ভেঙ্গে মরে পড়ে আছেন এখন।” হেলালের উত্তর আমায় তাড়া দেয় – তাড়নায় ও ফেলে দেয়। আর্থিক তাড়না – যা কিনা আত্মিক তাড়নার চাইতেও বেশী শক্তিশালী।

আর্থিক সম্পর্ক রক্ষাকল্পে আত্মিক সম্পর্ক উন্নয়নের প্রয়োজন অনুভব করতে থাকি। আর তাই কথা বাড়াতে যাই না, হেলালের কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে হাসপাতালের দিকে পা বাড়াই।

হাসপাতালে গিয়ে দেখি বশীর চৌকিদার হয়ে খবরের কাগজ পড়ছে। “কি নতুন জামাই? আপনার পা’য়েরা কেমন আছে?" হাসিমুখে জিজ্ঞাসা করি আমি।

“আর বলবেন না দ্রোহী ভাই। রেডিও – আলনা সব ভেঙে বসে আছি।” মুখ ভার করে বলে বশীর।

আমি অবাক হই, “ওগুলো হাতের হাড় না? কিন্তু আপনার না পা ভাঙলো? ”

“আরে ধুর! আমি হাড়ের কি জানি? আমি বলছিলাম বিয়েতে উপহার পাওয়া রেডিও, আলনার কথা।” বিরক্তি প্রকাশ করতে দ্বিধা করে না বশীর।

আমি জিজ্ঞাসা করি, “ঘটনাটা খুলে বলুন তো!”

বশীর বলতে শুরু করে, “আপনিতো জানেনই বাসর রাতে বিড়াল মারতে হয়। তাই একটা বিড়াল বাসর ঘরে লুকিয়ে রেখেছিলাম যাতে প্রয়োজন পড়লে ব্যবহার করা যায়। গিয়ে দেখি বউ আমার ভীষন শান্তিপ্রিয়। আর তাই বিড়াল মারার কথা মনে রইলো না।”

“তারপর?” ছোট্ট করে বলি আমি। অনেকটা তাল দেবার জন্যই।

বশীর বলতে থাকে: “মাঝরাতে খাট থেকে নামতে যাচ্ছিলাম পানি খাবার জন্য। অন্ধকারে পা গিয়ে পড়েছে বিড়ালের পিঠের উপর। পিঠের উপর এই অযাচিত পৃষ্ঠপোষকতা তার সহ্য হয়নি। তাই একেবারে নামিয়ে দিয়ে গেছে আমায়।” বলে মুখ নামিয়ে চেয়ে থাকে পায়ের দিকে।


মন্তব্য

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

"সহজ কাজ নয়" সিরিজের আরো একটি। দারুণ লেখার হাত আপনার। আরো আসুক।

আপনার লেখা সম্পর্কে দুয়েকটা কথা প্রাইভেট মেসেজিং-এর (ধন্যবাদ মা.মু.) জন্যে তুলে রাখছি, যা খোলা মঞ্চে বলা ঠিক মনে করি না।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

দ্রোহী এর ছবি

গাল দেবেন নাকি?


কি মাঝি? ডরাইলা?

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আসলেই শব্দের এইরকম অসাধারন ব্যবহারের জন্য আপনাকে লাল সালাম। অসাধারন হয়েছে। হাসি

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

দ্রোহী এর ছবি

ক্রেডিট আমার নয়, শিবরামের!


কি মাঝি? ডরাইলা?

হিমু এর ছবি
দ্রোহী এর ছবি

হাসি কাঁহাতক আর অশ্লীল থাকা যায়?


কি মাঝি? ডরাইলা?

অতিথি লেখক এর ছবি

একটা ইউরোপীয় কৌতুক মনে পড়লো।
বাসর রাতের আগে বাবা ছেলেকে বললেন, 'প্রথম রাতেই দাম্পত্যকর্মটি করতে যেয়ো না। বরং স্ত্রীকে দেখিয়ে হস্তমৈথুন করে ঘুমিয়ে পড়ো।'
বিস্মিত পুত্র জানতে চাইলো, 'কেন?'
'শুরুতেই বউকে জানিয়ে দেয়া প্রয়োজন যে, তাকে ছাড়াও তোমার দিব্যি চলে যাবে।'

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

এখন বুঝতে পারছি কেন আরিফ জেবতিক মশাই আপনার লেখাগুলো পছন্দ করছেন।

...............................
আমার লেখাগুলো আসে স্বপ্নের মাঝে; স্বপ্ন শেষে সেগুলো হারিয়ে যায়।

দ্রোহী এর ছবি

আমি বুঝতে পারিনি! আমায় বলবেন কেন জেবতিক মশাই আমার লেখাগুলো পছন্দ করেন?


কি মাঝি? ডরাইলা?

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

পড়লাম। ভাল লাগলো।

সৌরভ এর ছবি

অনেকদিন পর একটা শ্লীল লেখা দিলেন তাও দেখি অতিথির কমেন্টে গেলো গেলো অবস্থা।

জব্বরালি হইসে।



আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

দ্রোহী এর ছবি

সৌরভ,

তুমি আর আমি মিলে একটা দল করি? তুমি দুঃখের লেখা ছাড়বা আর আমি বড়দের লেখা।

যেদিন তুমি আনন্দময় লেখা লিখবা ওইদিন আমি সববয়সী দের উপযোগী লেখা লিখবো।


কি মাঝি? ডরাইলা?

আরিফ জেবতিক এর ছবি

সচলায়তন কেন সৃষ্ঠি করা হয়েছে এর কারন কেউ জানতে চাইলে এতোদিন বিস্তর লম্বা আর ঘুরানো প্যাচানো উত্তর দিতাম।এখন একটা উদাহরনই যথেষ্ঠ হবে আশাকরি।

দ্রোহীর লেখাগুলো দেখিয়ে বলা যাবে,"দ্যাখ ব্যাটা।এই রকম লেখক আগে কেমন চিপায় ছিল,এখন ভালো আলো বাতাসে কেমন ফুল ফুটাচ্ছে।"

দ্রোহীর লেখার এই ফল্গুধারা অব্যাহত থাকুক।
আরেকজন ভালো মানের রম্য লেখককে স্বাগতম জানাই।

দ্রোহী এর ছবি

আন্নে আঁরে মারি হালান। আঁত্তোন কি ভালা লাগে!!


কি মাঝি? ডরাইলা?

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

শম্পা একদিন বলছিল - আপনাকে কেউ কেউ আদর করে বশির ডাকে। সত্য নাকি?
তাহলে তো এই লেখার ঘটনাটা - - -

দ্রোহী এর ছবি

আমার চৌদ্দগুষ্টির কারও নামই বশীর নয়। তবে শম্পা আমাকে মাঝে মাঝে আদর করে বশীর ডাকতো।

হাসি


কি মাঝি? ডরাইলা?

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

নিশ্চিত হইলাম। শম্পার মুখে বশির সংক্রান্ত অন্যান্য যা শুনছি ওগুলো আপনাকে নিয়েই। জাঝা

দ্রোহী এর ছবি

আমিও জানতে পারলাম শম্পা আমাকে কত্তো ভালোবাসে!!!! হাসি


কি মাঝি? ডরাইলা?

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

সিম্পলি সুপার্ব!

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

দেঁতো হাসি

অচেনা এর ছবি

আপনে মারছিলেন্নি বিলাই?

-------------------------------------------------
'অত্তাহি অত্তনো নাথো, কোহিনাথো পরোসিয়া'

নিজেই নিজের প্রভু, অন্য কোন প্রভুর প্রয়োজন নাই।

দ্রোহী এর ছবি

নাহ্ কমরেড। মারতে পারিনি - উল্টো বিলাই আমারে মেরে দিছে।


কি মাঝি? ডরাইলা?

শামীম এর ছবি

বিভিন্ন ধরণের বিপদ সিরিজ আর সহজ কাজ নয় সিরিজ ---- দুইটাই সেইরকম হচ্ছে। ________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

ধুসর গোধূলি এর ছবি
তারেক এর ছবি

হায় হায়! সহজ কি কিছুই নাই?
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

দুর্বাশা তাপস এর ছবি

পেন্নাম গুরু, আপনার হয়।

==============================
আমিও যদি মরে যেতে পারতাম
তাহলে আমাকে প্রতি মুহূর্তে মরে যেতে হত না।

দ্রোহী এর ছবি

মাত্র ১ বছর হল বিয়ে করলাম। এখুনি - এত তাড়াতাড়ি কি হবে? আরও কয়েক বছর যাক, তারপর ভাবা যাবে না হয়।


কি মাঝি? ডরাইলা?

আরিফ জেবতিক এর ছবি

জাতি শম্পা সংক্রান্ত ইতিহাস জানতে ইচ্ছুক।

দ্রোহী এর ছবি

শম্পা সম্পর্কে আমার শালী হয়। শিমুলের সাথে প্রেম ছিল বেচারীর। আপাতত অন্য কারো বউ।

বেচারীর স্মৃতি নিয়ে শিমুল, "ছাদের কার্ণিশে কাক" উপন্যাসটি লিখেছে।


কি মাঝি? ডরাইলা?

সৌরভ এর ছবি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

জিফরান খালেদ এর ছবি

এই এক্ষণ থেকে আপনি আমার ফ্যাভারিট রাইটার (আমার পরে যদিও, এক নম্বরে আমি)!

পেট ব্যাথা করাই দিলেন মিয়া!!

mahi এর ছবি

heloo, eta to shibramer ekta golpo, apnar name chalalen keno?

দ্রোহী এর ছবি

আমি শিবরামকে মনে প্রাণে ভক্তি করি, তার ছাপ ও অনুসরণ করার চেষ্টা করি, যদিও হয়না মোটেও। যদি বলে দিতেন কোন গল্পটা, তাহলে খুশি হতাম।


কি মাঝি? ডরাইলা?

স্পর্শ এর ছবি

আরেহ দারুণ!!

এরকম আরো লিখেন না ক্যান? আপনার লেখার হাত আসলেই দুর্দান্ত।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

দ্রোহী এর ছবি

লিখবো লিখবো। তাড়া কীসের? হাসি


কি মাঝি, ডরাইলা?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।