লেখক, তুমি বিনে সবই ঠিক!

গৌতম এর ছবি
লিখেছেন গৌতম (তারিখ: রবি, ০৮/০৮/২০১০ - ৪:৩২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

“এবারের বর্ষার বইমেলায় সচলায়তনের লেখকদের মধ্য থেকে একমাত্র গৌতমেরই বই বেরিয়েছে”- নজরুল ভাইয়ের মুখে এমনতর কথা শুনে স্বাভাবিকভাবেই ভড়কে যাই। কারণ এ সময়ে আমার কোনো বই বের হওয়ার কথা না। একটা ছোটখাট ও অগুরুত্বপূর্ণ বই বেরিয়েছে গত ফেব্রুয়ারির বইমেলায়, এমনই আরেকটা হয়তো সামনে বেরুবে- যদি প্রকাশক দয়া করেন। আমি তাই কিছুটা অবাক হয়ে ও প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে সেদিন নজরুল ভাইয়ের মুখে তাকালাম। তিনি বললেন, "আসেন, দেখাই কোন স্টলে আপনার লেখা বই পাওয়া যাচ্ছে।" বলতে বলতে তিনি হাঁটা শুরু করলেন, আমিও অনুগামী হলাম।

স্টলে পৌঁছানোর আগে হঠাৎ করেই বুঝে গেলাম-- এটা আমি না, ওই গৌতমদের কারো একজনের কাণ্ড! গৌতম রায় নামে এদেশে একাধিক লেখক আছেন-- একজন অপরাধবিচিত্রায় নানা ধরনের রসালো রিপোর্ট লিখেন (তার লেখা পড়ে মজা পাই, কারণ সুড়সুড়ি লাগে), আরেকজন গান লিখেন (যদিও তার লেখা গান আমি কোনোদিন শুনি নি, ক্যাসেটের ফ্ল্যাপে দেখেছি), যার গান দেশের নামিদামি শিল্পীরা (যেমন- মণিকিশোর, এস ডি রুবেল ইত্যাদি) গেয়ে থাকেন। আর এই নামে পশ্চিমবঙ্গের একজন বিখ্যাত লেখক তো আছেনই, যার একটা বই পড়তে গিয়ে আমার অন্তত দশটা বই পড়ার সময় যায়‍!

স্টলে পৌঁছানোর আগেই যখন এই সিদ্ধান্তে পৌঁছে গেছি, তখনই নজরুল ভাই স্টল থেকে বইটা বের করলেন। এভারেস্টজয়ী মুসা ইব্রাহীমের ওপর লেখা একটা বই। আমি বইটা উল্টেপাল্টে দেখলাম-- মৌলিক কোনো বই না, মুসা ইব্রাহীম এভারেস্ট জয়ের পর পত্রপত্রিকায় যেসব লেখা ছাপা হয়েছে, সেগুলোর সংকলন এটি। কেউ একজন এগুলো যোগাড় করে ‘সম্পাদিত’ বই হিসেবে ছেপে দিয়েছেন, বইয়ের দাম মাত্র ১০০ টাকা। মুসার এভারেস্ট জয়ের খবর পেয়ে আমি সচলায়তনেই একটা ব্লগ লিখেছিলাম, যেটা পরে দৈনিক যুগান্তরে পুনর্মুদ্রিত হয়। দৈনিক যুগান্তরের ‘বিচ্ছু’র সম্পাদক, মুসা ও আমার বন্ধু আশীফ এন্তাজ রবি সচলায়তনের লেখাটি পড়ে আমাকে ফোন করে লেখাটা দৈনিক যুগান্তরে ছাপানোর অনুমতি চায়-- পত্রিকাটি মুসাকে নিয়ে বিশেষ পৃষ্ঠা বের করবে যেখানে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন সহপাঠীর লেখা ছাপবে। সচলায়তনে আমার লেখাটা দেখে তারা সেটাই ছাপতে আগ্রহী হয়, আমিও সানন্দে অনুমতি দিই। সচলায়তন ও দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত ওই লেখাটিই দেখি বইমেলায় প্রকাশিত এই বইটিতে।

নজরুল ভাই স্টলে বসা লোকটির সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন, ভদ্রলোককে জানালেন যে এই বইয়ে আমার একটি লেখা আছে। ভদ্রলোক তাড়াতাড়ি আমাকে একটা সৌজন্য কপি উপহার দিলেন এবং তারও যে একটা লেখা আছে সেটা বের করে দেখিয়ে দিলেন। আমিও সাতপাঁচ না ভেবে বইটি নিয়ে চলে আসি-- যদিও পরে বুঝেছি এটা একটা ভুল কাজ হয়েছে।

বাসায় এসে বইটির কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। রাতে ঘর গুছাতে গিয়ে প্যাকেট থেকে বইটি বেরুতেই আবার একটু উল্টেপাল্টে দেখি। আমার লেখাটাও। প্রথমে ভেবেছিলাম, লেখক হয়তো ,পত্রিকা বা সচলায়তন, যেখান থেকে লেখাটা সংগ্রহ করেছেন, সেটার সূত্র উল্লেখ করেছেন; কিন্তু তেমন কিছুই সেখানে নেই। এবার অবাক হওয়ার পালা। আমার একটা লেখা ছাপলো, অনুমতি তো নিলোই না; কিন্তু তাই বলে কি সূত্রটাও উল্লেখ করবে না?

পরদিন আবার বর্ষার বইমেলায় যাই এবং ‘সম্পাদক’ কিংবা ওই প্রকাশনার মালিককে খুঁজি। পাই না। আমার ইচ্ছে ছিল, তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা কেন আমার অনুমতি ছাড়া আমার লেখা প্রকাশ করা হলো? আর লেখার সূত্রই বা কেন প্রকাশ করা হলো না? জানতে পারলাম, আগামী কাল বা শেষ দিন হয়তো তাদের দেখা পাওয়া যেতে পারে। বইটা আবার উল্টেপাল্টে দেখলাম, ফোন নম্বর দেয়া আছে। তাদেরকে সরাসরি না পেলে ফোন করব ভেবে রেখেছি।

ঠিক এরকমই একটা ঘটনা ঘটেছে এবারের ফেব্রুয়ারির বইমেলায়। আমার অন্যতম প্রিয় বিজ্ঞান-লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ ‘সমকামিতা’র ওপর একটা বই লিখেছেন, প্রকাশ করেছে শুদ্ধস্বর। বইটির পাতা উল্টাতে উল্টাতে হঠাৎ করেই দেখি আমার একটা লেখা- জেন্ডার বিষয়ে, যেটি লিখেছিলাম এই সচলায়তনেই। একটু অবাকই হলাম; তারপর দেখি আমার লেখাটিকেও সেখানে সম্পাদনা করা হয়েছে। লেখক অবশ্য সেখানে সচলায়তনের সূত্রটি উল্লেখ করেছেন কিন্তু খটকা লাগলো এ কারণে যে, অভিজিৎদা আমাকে চেনেন। তিনি চাইলেই একটা ইমেইল করে আমার কাছ থেকে লেখাটি তাঁর বইতে দেয়ার অনুমতি চাইতে পারতেন! আমার পক্ষ থেকে অনুমতি না দেয়ার তো কিছু ছিল না; বরং এরকম একটা বইয়ে আমার লেখা যাবে, সেটা ভেবে সানন্দেই রাজি হতাম। অবশ্য অবাক হওয়ার চাইতে দুঃখটাই বেশি পেয়েছিলাম, যে কারণে একবার ভেবেছিলাম অভিজিৎদাকে ইমেইলে জানাবো, কিন্তু দুঃখবোধ আর কিছুটা অভিমানের কারণে জানাই নি। অভিজিৎদা বড় লেখক, তিনি আমাকে একেবারেই না জানিয়ে তাঁর বইয়ে আমার লেখাটা সম্পাদনা করে ছেপে দিবেন- ব্যাপারটায় আমি আসলে আহত হয়েছি। অবশ্য প্রকাশক শুদ্ধস্বরকে আমি মৌখিকভাবে বিষয়টি জানিয়েছিলাম এবং টুটুল ভাই বলেছিলেন, ব্যাপারটা লেখককে জানাতে।

***
যিনি লিখেন, তিনিই লেখক- এই সংজ্ঞা ছাড়া লেখক হওয়ার আর কোনো যোগ্যতা আমার নেই। মাঝে মাঝে লেখার চেষ্টা করি মাত্র, কিন্তু সেগুলো যে লেখা হয় না; তা সবচেয়ে ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারি আমি নিজেই। তারপরও প্রত্যেকটি মানুষের, ছোট হলেও, নিজের সৃষ্টির প্রতি একটা মায়াবোধ কাজ করে। আমার লেখার ক্ষেত্রেও তাই। আমার লেখা আমাকে না জানিয়ে ছাপা হলে লেখার প্রতি সেই মায়াবোধটা সংশ্লিষ্ট সম্পাদক বা লেখকের প্রতি চাপা রাগে পরিণত হয়। সচলায়তনে আমার প্রোফাইলে লেখা আছে- আমার লেখার সব লাইসেন্স ক্রিয়েটিভ কমন্সের by-nc-nd-এর আওতায় রক্ষিত। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে চাইলে অবশ্যই আমার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে হবে। অর্থাৎ অবাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করলে কেবল লেখার সূত্র আর নাম দিলেই হবে; আর বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে চাইলে আমার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে হবে। উপরের দুটো উদাহরণেই দেখতে পাচ্ছি, দুটো বই-ই বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে প্রকাশিত, অর্থাৎ লেখক বা প্রকাশক সেখান থেকে লাভ করবেন। তাহলে কি আমার অনুমতিটা নেয়ার দরকার ছিল না?

প্রশ্ন উঠতে পারে, এ ধরনের বইতে লেখা ছাপতে গেলে আদৌ লেখকের অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন আছে কিনা? সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল শেষ হওয়ার পর একটি বই দেখেছিলাম যেখানে একজন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত নানা কলাম ও সাক্ষাৎকার গ্রন্থবন্ধ করে ‘সম্পাদিত’ হিসেবে ছেপেছেন। ধারণা করি, সেখানে কোনো লেখকেরই অনুমতি নেয়া হয় নি। পরে আরেকটা বই দেখলাম, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেই শেখ হাসিনা গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে মুক্তি পাওয়া পর্যন্ত তাঁকে নিয়ে পত্রপত্রিকায় যা যা লেখা ছাপা হয়েছে, সেগুলোরও ‘সম্পাদিত’ সংকলন। তার মানে অন্যের লেখা সংগ্রহ করে সম্পাদনার নামে গ্রন্থবদ্ধ করে ছাপানোর রেওয়াজ আছে- সেটা বৈধভাবে হোক বা অবৈধভাবে। আমার প্রশ্ন হলো, এভাবে লেখা প্রকাশের পর লেখক কি আপত্তি জানাতে পারেন? কীভাবে জানাতে পারেন? নাকি এভাবে লেখা প্রকাশ নিয়মানুযায়ী সিদ্ধ?

দ্বিতীয়ত, সংশ্লিষ্ট লেখকের অনুমতি না নিয়ে কেবল মূল সূত্র উল্লেখ করে কি কেউ তার নিজের বইতে আরেকজনের লেখা ছাপাতে পারেন? যদিও বা ছাপাতে পারেন, তাহলে সেটি হুবহু না ছাপিয়ে সম্পাদনা করতে পারেন কিনা?

***
মুসা ইব্রাহীম-বিষয়ক বইতে আমাকে না জানিয়ে আমার লেখা ছাপানোর প্রতিবাদ করবো। আরেকদিন বইমেলায় যাবো, যদি প্রকাশক বা সম্পাদককে সামনাসামনি পাই, তাহলে সামনাসামনিই জানাবো। না হলে ফোনে জানাবো। তাও সম্ভব না হলে প্রকাশকের ঠিকানা আছে, প্রয়োজনে সেখানে জানাবো। অভিজিৎদাকে হয়তো কিছুই জানাবো না, হয়তো এই পোস্টের মাধ্যমেই তিনি জেনে যাবেন, আর তাঁর প্রকাশক তো জানেনই। এই পোস্টটুকু লিখলাম কারণ হয়তো এই পোস্টে প্রাসঙ্গিক আরো কিছু আলোচনা উঠে আসবে; হয়তো এই পোস্ট পড়ে ভবিষ্যতে একজন সত্যিকার লেখকের লেখা ছাপানোর আগে লেখক-সম্পাদক-প্রকাশক অনুমতি চাওয়ার প্রয়োজনটুকু অনুভব করবে; কিংবা হয়তো এগুলো যে আদৌ অনুমতি চাওয়ার কোনো বিষয় না, সেটাও উঠে আসবে কারো না কারোর মন্তব্যে।


মন্তব্য

হাসিব এর ছবি

এই ধরনের কাজগুলো অনৈতিক। নিন্দা জানালাম এসবের। এই কাজে নিয়োজিত লেখক ও প্রকাশক উভয়ের দায় নেয়া উচিত।

রানা মেহের এর ছবি

আসলে দেশে এই 'সম্পাদিত' কাজটা এতোই সাধারন যে কেউ একে ভুল মনে করেন না।
গৌতম
আপনি পারলে আপনার এই লেখার একটা কপিও ওই ভদ্রলোককে দিয়ে দেবেন।
(সম্ভাবনা আছে যদিও সেটাও কোন বইয়ে চলে আসার) হাসি
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

নিঃসঙ্গ গ্রহচারী [অতিথি] এর ছবি

হয়তো এই পোস্টে প্রাসঙ্গিক আরো কিছু আলোচনা উঠে আসবে; হয়তো এই পোস্ট পড়ে ভবিষ্যতে একজন সত্যিকার লেখকের লেখা ছাপানোর আগে লেখক-সম্পাদক-প্রকাশক অনুমতি চাওয়ার প্রয়োজনটুকু অনুভব করবে;

মূর্তালা রামাত এর ছবি

এধরনের কাজ অবশ্যই নিন্দনীয়......কিন্তু আমাগো দেশে কে শোনে কার কথা!!!

মূর্তালা রামাত

অতিথি লেখক এর ছবি

অনুমতি নেওয়ার চর্চাটা একেবারেই নেই অনেকের মধ্যে। দুঃখজনক।

সুমিমা ইয়াসমিন

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

বেশ অবাক হলাম।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

সমস্যা হচ্ছে, আমাদের পুরো সংস্কৃতিটাই এভাবে গড়ে উঠছে। পত্রিকাগুলোতে আকছার 'ছবি: ইন্টারনেট' নাম দিয়ে ছাপা হচ্ছে।
এর শক্ত প্রতিবাদ হওয়া প্রয়োজন।

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

প্রিয় গৌতম দা,
মেডিকেলে থার্ড ইয়ারের দিকে আমার অর্থঘটিত ঝামেলা দেখা দেয়। টিউশনি করতে ভালো লাগেনা। তাই অন্য একটা উপার্জনের পথা খুঁজছিলাম। বন্ধু মেহেদি জানালো অনুবাদ করতে পারো। এরপর আমি দেখা করলাম হাসান খুরশীদ রুমি ভাই এর সাথে। তিনি অনুবাদ দিলেন। সায়েন্স ফিকশন আর থ্রিলার ছোট গল্প। খাটা খাটুনি করে অনুবাদ করলাম। জমা দিলাম। বলা হলো ১৫ দিনের মাঝেই সন্মানী পেয়ে যাবা। ভালো কথা, ভাবলাম কয়েকটা দিন ভালো থাকা যাবে। ১৫ দিন এরপর গিয়ে কতদিনে দাড়ালো জানিনা। ফেব্রুয়ারীর বই মেলায় বই বের হল। আমার নামও গেছে কিন্তু সেই আকাঙ্খিত দ্রব্যটি আসেনি। কাজটায় রুমি ভাই এর কিছু করার ছিলোনা। প্রকাশক না দিলে আর কি করা? অনেক পরে, প্রায় দু বছর পর টাকা পেয়েছি,তখন অবশ্য আর টাকার সমস্যাটা ছিলোনা। এরপর একটা আস্ত বই অনুবাদ করলাম। দ্যা হান্ট ফর রেড অক্টোবর। লেখক টম ক্ল্যান্সি। ইয়া থান ইট সাইযের বই। প্রকাশক টাকা দেবার কথা বললেই গা মোচড়ান। ফোন দিলে ধরেন না। শেষ পর্যন্ত বছর খানেক পর কিছু টাকা পেলাম। সেইখানেই শেষ। গত বই মেলায় অনেকের পাশাপাশি আমিও ড্যান ব্রাউনের দ্যা লষ্ট সিম্বল অনুবাদ করেছিলাম। এই অনুবাদ আকাশ প্রকাশনী থেকে আমার নামেই বেরিয়েছিলো। টাকা ?? পাইনি। পাবোনা জানি। ঐ টাকা দিয়ে একটা ডিজিটাল এস এল আর কেনার ইচ্ছা ছিলো। আশার গুড়ে পিসাব। ভাই, পাওনা টাকাই পাওয়া যায়না। আর কি বলবো?
ভালো থাকবেন।----------------------------------------------মানিক

হাসান মোরশেদ এর ছবি

ঐ টাকা দিয়ে একটা ডিজিটাল এস এল আর কেনার ইচ্ছা ছিলো।

ড্যান ব্রাউন এর অনুবাদ করে ডিএসএলআর কেনার টাকা পাওয়া যায়?
ভাইরে, আমারে ঐ প্রকাশকের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিন দেঁতো হাসি
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

হাসিব এর ছবি

এখানে দু'টো বিষয়। প্রথমত, আপনাকে কাজ করিয়ে সে কাজের জন্য পাওনা টাকা দেয়া হয়নি বা দিতে গড়িমসি করা হয়েছে। এই নিন্দার্হ কাজটা পত্রিকা সম্পাদক, প্রকাশক সবাই আকছার করে থাকেন। দ্বিতীয়ত, প্রকাশক কি এইসব অনুবাদের জন্য অরিজিনাল প্রকাশককে রয়্যালটি দেন? মনে হয় না। সেই অর্থে এই ধরনের বই প্রকাশ করাও আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।

হিমু এর ছবি

লেখাচোর আর টাকাচোরদের নামধাম প্রকাশ করে দেবেন সবসময়। দুনিয়াশুদ্ধু লোকজনকে জানাবেন যে অমুক ব্যক্তি আপনাকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিয়ে পয়সা দেয়নি।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

আলমগীর এর ছবি

কারো বই অনুবাদ (করে প্রকাশ) করার আগে যথাযথ অনুমতি নেয়ার দরকার আছে। আপনি সেটা নিয়েছেন বলে মনে হচ্ছে না। চুরির টাকার ভাগ পাননি - এই যা।

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

হাসান মোরশেদ ভাই,
কষ্টের কথা কইলাম আর আপনে মজা পাইলেন??

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

উনি বোধহয় মজা পাননি, মানিক ভাই; অবাক হয়েছেন। আমিও অবাক হচ্ছি কারণ অনুবাদের সম্মানী দিয়ে আপনি ডিএসএলআর কিনতে চাইছেন হাসি

হাসান মোরশেদ এর ছবি

মজা পাইনি রে ভাই। জেনে ভালো লাগছে অনুবাদ করে এতোটাকা পাওয়া সম্ভব। ডিএসএলআর দাম তো আর কম না, তাই।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

গৌতম, মন্দ কাজ হতে হতে তা আমাদের মজ্জায় এমন মিশে গেছে যে এখন তা আর মন্দ মনে হয় না । নৈতিকতার পতনের তলানীতে পৌঁছে গেলে আর সে বোধ থাকে না । সে কারনেই, কেউ আর প্রতিবাদও করে না । কিন্তু প্রতিবাদ করার সাহস, স্পৃহাকে জাগিইয়ে রাখতে হবে । কে কী করছে, কী ভাবছে তা না ভেবে নিজের কাজটুকু করে যাওয়াই সবচেয়ে বড় যুদ্ধ । আপনাকে দূর থেকে অভিবাদন জানাচ্ছি …

……………………………………
বলছি এক জ্যোতির্ময়ীর কথা

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

আলমগীর এর ছবি

আপনার নেম এন্ড শেম পলিসি অবলম্বন করাটা ভাল লেগেছে। আমাদের মধ্যে পেশাদারি মনোভাব যদ্দিন না আসছে ততদিন এটা চলুক। সাধুবাদ।

গৌতম এর ছবি

আপনার মন্তব্যটা বুঝলাম না আলমগীর ভাই। নেম এন্ড শেম পলিসি সম্পর্কে কিছু জানি না বলেই বোধহয়! তবে আমি কোনো পলিসি অবলম্বন করি নি। সেদিন খুব বেশি খারাপ লেগেছিল ওই বইয়ে আমার নামটা দেখে, তাই প্রতিক্রিয়াটা লিখে ফেললাম।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

আলমগীর এর ছবি

এর আগে আরো দুটো ঘটনার কথা মনে পড়ছে সচলায়তনেই যেখানে ক্ষুব্ধ সচল অভিযুক্তের নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক ছিলেন। এখানে অভিমানের কিছু নেই, যে চুরি করেছে তার বিরুদ্ধে যদি বাস্তবে কিছু করার সামর্থ্য না থাকে, নাম প্রকাশ করে দিন জনসন্মুখে। এটাই নেম এন্ড শেম পলিসি।

কনফুসিয়াস এর ছবি

আমিও বলি, এরকম কাহিনি জানা মাত্রই নাম ধাম সহ ঘোষণা দিয়ে ফেলাই ভাল, চক্ষুলজ্জায়ও যদি কারও কিছু হয়!

-----------------------------------
আমার জানলা দিয়ে একটু খানি আকাশ দেখা যায়-

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

অভিজিৎ এর ছবি

গৌতম,

আপনি খুব বড় সড় অভিযোগ করেছেন। আমি বুঝতে পারছি বিষয়টা স্পর্শকাতর। আমি অনেকদিন ধরেই ব্লগ ফলো করি না, এভাবে এখানে আমার সম্বন্ধে না লিখে আপনিও তো আমাকে জানাতে পারতেন বিষয়টা। আমার এই লেখাটা কখনোই চোখে পড়তো না, যদি না আমার একজন শুভানুধ্যায়ী এই লিঙ্কটি আমাকে ফরওয়ার্ড না করতেন।

আমি কিন্তু আপনার লেখা নিজের বলে চালাইনি। এভাবে চোর তস্কর বলে যেভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে (আপনি না বললেও অন্যন্য মন্তব্যকারীরা বলছেন) সেটা কি ঠিক? আমি কিন্তু মূল বইয়ে আপনার লেখার কোন অংশ ব্যবহার করিনি, ব্যবহার করেছি বইয়ের পরিশিষ্টে। তাও খুবভালভাবে সূত্র উল্লেখ করেছি, কোন অস্পষ্টতা রাখিনি। লিখেছি -

এ অংশটি গৌতম রায়ের ‘সেক্স এবং জেন্ডার- পার্থক্যটা যেখানে’ (সচলায়তন, বুধ, ২০০৯-০৮-১৯ ১৩:৩৫) থেকে উদ্ধৃত এবং এই বইয়ের লেখক কর্তৃক সংযোজিত এবং পরিমার্জিত। এ ছাড়া কিছুটা অংশ সংযোজিত হয়েছে সেলিনা হোসেন এবং মাসুদুজ্জামান সম্পাদিত ‘জেন্ডার বিশ্বকোষ’ (প্রথম খণ্ড) থেকে।

দেখুন, আমি আপনার লেখা উল্লেখ করেছি প্রোপার রেফারেন্স সহ। এমনকি যে সমস্ত জায়গায় আপনার সাথে দ্বিমত করেছি (সেগুলো নিয়ে ব্লগেও আলোচনা হয়েছিল) সেগুলো ব্লগেই আলাদাভাবে উল্লেখ করেছি, কারণ আপনার সবটুকুর সাথে আমি একমত ছিলাম না। আমরা আসলে অনেক লেখকেরই রেফারেন্স, উদ্ধৃতি ব্যবহার করি, অনেক সময়ই ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগের সুযোগ হয়ে উঠে না। তারপরেও আপনি যখন অভিযোগ করছেন, সেটা আমি গুরুত্বের সাথেই নিচ্ছি। কিন্তু আপনার বা কারো লেখাই আমি কখনবো নিজের বলে চালাইনি, সেই প্রশ্নই উঠে না।

এখানে একটি ছোট বক্তব্য আছে আমার। আপনি আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। আমি কিন্তু আপনার লেখার রেফারেন্স দিয়েছি, তথ্যসূত্র উল্লেখ করে, এমনকি আপনার অনলাইন লেখার লিঙ্ক-এর রেফারেন্সও দিয়েছি। কিন্তু একটি জিনিস বোধ হয় আপনি ভুলে গেছেন, কিংবা বলতে চাননি। আপনার লেখাটার বড় অংশ সেলিনা হোসেন এবং মাসুদুজ্জামান সম্পাদিত ‘জেন্ডার বিশ্বকোষ’ (প্রথম খণ্ড) থেকে নেয়া হয়েছে। এমনকি শুরু থেকে অ্যান ওকলের উদ্ধৃতি সহ মূল ধারণাটি যেভাবে লিখেছেন তা সেলিনা হোসেনের "জেন্ডার" (পৃষ্ঠা ৫৭২) অংশ থেকে উদ্ধৃত (সামান্য একটু এদিক ওদিক করা হয়েছে আপনার লেখায়)। একটি উদাহরণ দেই। আপনি সেক্সের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে যা লিখেছেন,

"সেক্স হচ্ছে নারী ও পুরুষের মধ্যকার বৈশিষ্টসূচক ভিন্নতা যা শারীরিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে নারী-পুরুষের স্বাতন্ত্র্য নির্দেশ করে। এটি শারীরবৃত্তীয়ভাবে নির্ধারিত নারী-পুরুষের প্রাকৃতিক প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য বা জৈবিক কারণে সৃষ্ট এবং অপরিবর্তনীয়।" আর দেখুন সেলিনা হোসেন কি লিখেছেন -

"...সেক্স হচ্ছে প্রাকৃতিক বা জৈবিক কারণে সৃষ্ট নারী ও পুরুষের মধ্যকার বৈশিষ্টসূচক ভিন্নতা বা শারীরিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে নারী-পুরুষের স্বাতন্ত্র্য । এই স্বাতন্ত্র শারীরবৃত্তীয়ভাবে নির্ধারিত। তা অপরিবর্তনীয়।

জেন্ডার সম্পর্কে আপনি আরো লিখেছেন,

জেন্ডার হচ্ছে নারী ও পুরুষের সামাজিক পরিচয় যা একইসাথে সামাজিকভাবে নারী-পুরুষের সম্পর্ক ও ভূমিকাকে নির্দেশ করে।

আর দেখুন সেলিনা হোসেন কি লিখেছেন -

আর জেন্ডার হচ্ছে সামাজিকভাবে গড়ে ওঠা নারী-পুরুষের পরিচয়, নির্ধারিত নারী পুরুষের মধ্যকার সম্পর্ক যা সমাজ কর্তৃক আরোপিত। সমাজই এক্ষেত্রে নারী পুরুষের ভূমিকা নির্দিষ্ট করে দেয়

তারপরে আপনিও অ্যান ওকলের উদ্ধৃতি নিয়ে এসেছেন, ঠিক যেভাবে সেলিনা হোসেন ব্যবহার করেছেন অ্যান ওকলকে একই লেখায়। আমি আর উদ্ধৃতি দিয়ে দিয়ে লেখার পরিসর বাড়াচ্ছি না, আশা করি আপনি বুঝতে পারছেন কি বলতে চাইছি। সেলিনা হোসেন বইটি প্রকাশ করেছেন ২০০৬ সালে। আপনি ব্লগটি লিখেছেন ২০০৯ সালে এসে। কিন্তু আপনার লেখার কোথাও সেলিনা হোসেনের নাম উল্লেখ করেননি। আমি ইচ্ছে করলে শুধু সেলিনা হোসেনের লেখা থেকেই আমার বইয়ের অংশটি তৈরি করতে পারতাম। সেলিনা হোসেন আমাদের কাজের সাথে পরিচিত (অতীতে তিনি মুক্তমনা ও শিক্ষা আন্দোলন মঞ্চের বিভিন্ন সেমিনারেই এসেছিলেন), এবং উনাকে আমার বইয়ের প্রুফ রীডার অঞ্জনকে দিয়ে পাণ্ডুলিপি/বই পাঠোনো হয়েছে। আপনার রেফারেন্সও সেই সাথে দিয়েছি, এবং শ্রদ্ধার কারণেই আপনার আর সেলিনা হোসেনের লেখার মিলটুকু কোথাও প্রকাশ করি নি।

আর সম্পাদনার ব্যাপারে আবারো বলছি, ব্লগেই আপনার লেখার যে জায়গাগুলো নিয়ে দ্বিমত হয়েছিল আমার সেগুলোকেই আরেকটু স্পষ্ট করার চেষ্টা করেছিলাম, যদিও সেটা বইয়ে স্পষ্ট করে বলা হয়নি। আমার ধারণা ছিলো আপনার ব্লগেই যেহেতু সেটা নিয়ে কথা হয়েছিল, তাই সেগুলো পুনরুক্তি করে বইয়ের পরিসর অযথা বাড়াতে চাইনি ( রেফারেন্সে তো বলেছিই আপনার লেখাটির কথা, সুতরাং কারো আগ্রহ হলে তিনি সেটি অনুসরণ করেই অনলাইনে দেখতে পারবেন)। তারপরেও স্বীকার করছি, আপনার সাথে যোগাযোগ করেই হয়তো ব্যাপারটা করা উচিৎ ছিল। আমার ভুল স্বীকার করছি এ ব্যাপারে। আপনার যদি তারপরেও আপত্তি থাকে, পরবর্তী সংস্করণে ঠিক করে দেব।



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

গৌতম এর ছবি

অভিজিৎদা, আপনার বিরুদ্ধে আমার অভিযোগটা খুব একটা বড় নয়; দেখুন ওখানে দুঃখবোধ কিংবা অভিমানের সুরটাই বেশি বেজেছে। আপনি সূত্রসহ নাম উল্লেখ করেছেন, সেটা আমিও আমার লেখায় বলেছি। একটা বিষয়ে দ্বিধায় ছিলাম, (যদি স্মৃতি প্রতারণা না করে থাকে, কারণ আপনার বইটা আমি সেই ফেব্রুয়ারির বইমেলায় দেখেছিলাম, তারপর আর দেখি নি) ওখানে সম্ভবত আপনি আমার লেখাটাতে কিছুটা সম্পাদনাও করেছিলেন। আমার প্রশ্ন ছিল- এভাবে আরেকজনের লেখা সম্পাদনা করা যায় কিনা?

হ্যাঁ, আপনাকে আমি ইমেইলেও ব্যাপারটা জানাতে পারতাম। কিন্তু জানাই নি ওই অভিমানের কারণেই। আপনার লেখার ভক্ত আমি, স্বাভাবিকভাবেই এরকম একটা ঘটনা ঘটার পর কিছুটা খারাপ লেগেছে। তাছাড়া প্রথমে ভেবেছিলাম প্রকাশের তাড়াহুড়াজনিত কারণে আপনি হয়তো আমাকে আগে জানাতে পারেন নি, বই প্রকাশ হওয়ার পরে হয়তো জানাবেন। কিন্তু দেখলাম যে, সেরকমটাও ঘটে নি। তারপরও এই ঘটনা হয়তো আপনার কোনোদিনই জানা হতো না, যদি না সেদিন প্রথম ঘটনাটা ঘটতো। প্রসঙ্গক্রমেই প্রথম ঘটনার পর আপনার কথাটা এখানে এসেছে। আর আপনি আমার লেখা নিজের বলে চালিয়েছেন, সেটাও কিন্তু আমি কোথাও বলি নি।

এবার আমার বিরুদ্ধে আপনার আনা অভিযোগটার উত্তর দিই।

আপনি যদি ওই লেখাটা আবার পড়েন ও মন্তব্যগুলো খেয়াল করেন, তাহলে দেখবেন একটি জেন্ডার কর্মশালায় যাওয়ার পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে একদিনের একটি কর্মশালার অর্জিত জ্ঞান আমার ওই লেখাটি। এর বাইরে বেশি কিছু আমি জানতাম না। নৈষাদের মন্তব্যের প্রতিউত্তর থেকেই এটা বুঝতে পারবেন। স্বাভাবিক কারণেই সেলিনা হোসেন ও মাসুদুজ্জামানের সম্পাদিত 'জেন্ডার' বইটি আমার পড়া হয় নি, এখনও পড়া হয় নি। সুতরাং তাদের বই থেকে একটু হেরফের করে বা এদিক-ওদিক করে লেখার প্রশ্নই আসে না। আবারও বলি, একদিনের জেন্ডার কর্মশালায় অর্জিত জ্ঞানের প্রকাশ ছিল ওই লেখাটি। সেখানে যিনি আমাদেরকে হ্যান্ডআউট সরবরাহ করেছিলেন, সেই হ্যান্ডআউটে এই বিষয়টি ছিল, যা আমাদের পড়তে হয়েছে। পাশাপাশি ওই প্রতিষ্ঠানে থাকাকালীন প্রায় একই সময়ে পদোন্নতির পরীক্ষা থাকায় এগুলো আরো ভালোভাবেই পড়তে হয়েছে। হ্যান্ডআউট পাওয়ার সময় সংশ্লিষ্ট হ্যান্ডআউট লেখককে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, তার এই লেখাগুলো আমার লেখা বা অন্যান্য কাজে ব্যবহার করতে পারবো কিনা। তিনি সানন্দে মৌখিক সম্মতি দিয়েছিলেন। আপনার এই মন্তব্য পড়ার পর আমি আবার তার সাথে যোগাযোগ করে এই মিলটুকুর কথা জানাই। তিনি প্রতিউত্তরে আমাকে জানান যে, হ্যান্ডআউট তৈরির সময় অনেক বইয়ের সাহায্য তাকে নিতে হয়েছে। সেখানে সেলিনা হোসেন ও মাসুদুজ্জামানের বইটিও ছিলো। কিন্তু তারপরও তিনি কনফিডেন্ট যে, হ্যান্ডআউট তৈরির সময় তিনি মূলত নানা ইংরেজি বইয়ের সাহায্যই নিয়েছিলেন। তিনি এটাও বলেছেন যে, সম্ভবত এমনটা ঘটতে পারে যে তারা সবাই এসমস্ত লেখালেখিতে একই উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন যে কারণে ভাষার এই মিলটুকু পাওয়া গেছে। সুতরাং এক্ষেত্রে সেলিনা হোসেনের লেখা এদিকওদিক করে প্রকাশের কোনো ঘটনা আমার তরফ থেকে ঘটে নি।

আশা করি আমার অবস্থান আমি পরিষ্কার করতে পেরেছি।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

অভিজিৎ এর ছবি

অভিজিৎদা, আপনার বিরুদ্ধে আমার অভিযোগটা খুব একটা বড় নয়; দেখুন ওখানে দুঃখবোধ কিংবা অভিমানের সুরটাই বেশি বেজেছে। আপনি সূত্রসহ নাম উল্লেখ করেছেন, সেটা আমিও আমার লেখায় বলেছি। একটা বিষয়ে দ্বিধায় ছিলাম, (যদি স্মৃতি প্রতারণা না করে থাকে, কারণ আপনার বইটা আমি সেই ফেব্রুয়ারির বইমেলায় দেখেছিলাম, তারপর আর দেখি নি) ওখানে সম্ভবত আপনি আমার লেখাটাতে কিছুটা সম্পাদনাও করেছিলেন। আমার প্রশ্ন ছিল- এভাবে আরেকজনের লেখা সম্পাদনা করা যায় কিনা?

হয়ত আপনার কাছে অভিযোগটি বড় নয়, কিন্তু আমার কাছে এটি খুব বড়ই। আপনি যখন স্বীকার করেছেন যে আমি বইয়ের আপনার নাম সূত্র সহ উল্লেখ করেছি তখন এ নিয়ে খুব বেশি আলোচনা করার ইচ্ছে আমারো নেই। কিন্তু আপনি যেভাবে ঢালাওভাবে এটি একটি লেখা লিখে ফেলেছেন তাতে আমার মনেই বরং অভিমানের সুর বাজার কথা। আমার ধারনা ছিল আপনি আমার লেখালিখির সাথে পরিচিত, আর লেখকদের সম্মানের বিষয়ে আমার মনোভাবও আপনার অজানা থাকার কথা নয়। কিন্তু মূসা ইব্রাহিমের কোন বইয়ের সাথে আমাকেও যেভাবে জড়িয়েছেন তাতে অনেকেরই মনে হতে পারে যে আমি আপনার লেখা চুরি করেছি (দেখুন অনেকে মন্তব্যে ইঙ্গিতও করেছেন, এবং সেখানে আপনি প্রতিবাদ করেননি)। আপনার লেখার সম্পাদনা বিষয়ে আগেই ক্লিয়ার করেছি। যে জায়গাগুলো নিয়ে দ্বিমত হয়েছিল আমার সেগুলোকেই আরেকটু স্পষ্ট করার চেষ্টা করেছিলাম। আর পর্যাপ্ত রেফারেন্স উল্লেখ করেই।

আপনি নিজেও জানেন আপনার সেক্স বনাম জেন্ডার বিষয়ক সংজ্ঞার ব্যাপারটি তিয়ে তুলকালাম করছেন আমার বইয়ের পরিশিষ্টের খুব ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ। ওটা না দিলেও বইয়ের কোন ক্ষতি বৃদ্ধ হতো না। এমনকি আপনি যা লিখেছেন আপনার ব্লগে প্রায় পুরোটুকুই (লাইন বাই লাইন) সেলিনা হোসেন এবং মাসুদুজ্জামান সম্পাদিত ‘জেন্ডার বিশ্বকোষ’ (প্রথম খণ্ড)তে আছে। আমি সেটা নিয়েই কাজ করতে পারতাম। তা না করে আপনার লেখার সাথে পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছি আমার বইয়ের মাধ্যমে আমার সদিচ্ছা থেকেই ( কারণ আপনিই ব্যাপারটি ব্লগে তুলে এনেছেন)। এখন সেটার জন্য যদি আমার পিঠে গুলি করা হয়, তবে আমি সত্যই অসহায়।

আপনি লিখেছেন -

আপনি যদি ওই লেখাটা আবার পড়েন ও মন্তব্যগুলো খেয়াল করেন, তাহলে দেখবেন একটি জেন্ডার কর্মশালায় যাওয়ার পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে একদিনের একটি কর্মশালার অর্জিত জ্ঞান আমার ওই লেখাটি। এর বাইরে বেশি কিছু আমি জানতাম না। নৈষাদের মন্তব্যের প্রতিউত্তর থেকেই এটা বুঝতে পারবেন। স্বাভাবিক কারণেই সেলিনা হোসেন ও মাসুদুজ্জামানের সম্পাদিত 'জেন্ডার' বইটি আমার পড়া হয় নি, এখনও পড়া হয় নি। সুতরাং তাদের বই থেকে একটু হেরফের করে বা এদিক-ওদিক করে লেখার প্রশ্নই আসে না।

আপনার কথা আমি মেনে নিলাম, কিন্তু ২০০৬ সালে প্রকাশিত একটি বইয়ের লেখার সাথে আপনার সেক্স এবং জেণ্ডার বিষয়ক লেখাটির একেবারে লাইনে লাইনে মিল। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। আপনি একটি লেখা লিখেছেন, তার সবকিছুই ২০০৬ সালের একটি বইয়ে আছে, ব্যাপারটা একটু কাকতালীয় নয়? সেলিনা হোসেনের বইটি তো জেন্ডার বিষয়ে বাংলা বইগুলোর মধ্যে ক্লাসিক হিসেবে বিবেচিত। আপনি চাইলে আমি সেলিনা হোসেনের 'জেন্ডার' বিষয়ক অংশটি লেখাটা পুরোটাই কপি করে দেখাতে পারতাম। এটা আপনার জন্য মোটেই মঙ্গলজনক হত না। তারপরেও আমি ধরে নিচ্ছি আপনি জেন্ডার কর্মশালায় যাওয়ার পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে জেন্ডার বিষয়ক হ্যান্ড আউট থেকেই লিখেছেন। কিন্তু আপনি একটি লেখা প্রকাশ করেছেন, সেটা আগেকার একটি বইয়ে রয়ে গেছে (ধরে নিলাম এটা কোন কর্মশালার হ্যান্ড আউটের মাধ্যমেই না হয় তৈরি) , এটতে কি লেখকের কোন দায় একেবারেই থাকে না? আপনি আরেকজন লেখক সম্বন্ধে এত বড় অভিযোগ করলেন, অথচ নিজের বেলা দায়ভার নেবেন না সেটা কিরকম হল?

তারপরেও বেনিফিট অব ডাউট আমি আপনাকে দিচ্ছি। কারণ বাংলাদেশের কর্মশালাগুলোতে অনেক কিছুই হয়, তার শিকার আপনি হয়তো হয়েছেন। আমার আক্ষেপ এইটাই আমি যদি প্রকাশ্যে আপনার লেখটি নিয়ে সেলিনা হোসেনের বই থেকে ইণ্ডাইরেক্টলি চুরির অভিযোগ আনতাম, এবং একটি ব্লগ লিখে ফেলতাম (এবং সচলায়তনকেও অভিযুক্ত করতাম কেন এই সাইটে এ ধরনের কপিরাইটেড ম্যাটেরিয়াল আছে), ব্যাপারটা কি শোভন হত? ব্যাপারটা আমার চোখে পড়লেও আমি কিছু বলিনি আপনার প্রতি সম্মানবশতঃই। আর যেখানে আপনি আমার সম্বন্ধে লিখছেন সেখানে আমি অনেকদিন ধরেই ব্যক্তিগত কিছু কারণে লিখি না।

তারপরেও আমি কিন্তু স্বীকার করেছিই যে, আপনার সাথে যোগাযোগ করেই হয়তো ব্যাপারটা করা উচিৎ ছিল। আমার ভুল স্বীকার করছি এ ব্যাপারে। যে সময়টায় আমি আপনাকে ইমেইল করব ভাবছিলাম, সে সময় আপনি নিজের বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, আপনার ইমেইলও আমি পেয়েছিলাম, অভিনন্দনও জানিয়েছিলাম, মনে পড়ে? আমি চাইনি সেই সময় আপনাকে বিরক্ত করতে। পরে একেবারেই ভুলে গিয়েছিলাম। কিন্তু যেটা আমি কখনোই ভুলে যাইনি, সেটা হল রেগফারেন্স আপনার নাম খুব পরিস্কার ভাবে উল্লেখ করতে। আর আপনিও কিন্তু এগুলো লেখার আগে আমার সাথে যোগাযোগ করে নিতে পারতেন, তাই না? দেখুন আমার বইয়ের সব কিছু নিয়ে আমি নিজে সন্তুষ্ট নই। সেই বইয়ে স্নিগ্ধা আলীর একটি অংশ থাকার কথা ছিল (হ্যা পারমিশন নিয়েই সেগুলো দেয়া )। কিন্তু বই প্রকাশের পরে দেখা গেল অংশটি নেই। প্রকাশক প্রুফ রিডিং এর সময় সেটি বাদ দিয়েছিলেন, এবং সেটা আমি জানতামও না। উনি বাদ দিয়েছিলেন শ্রদ্ধেয় মীজান রহমানের একটি অংশও। এই ব্যাপারগুলো আমাকে লজ্জিত করে। কারণ, বইয়ের মুখবন্ধে তাদের লেখার কথা উল্লেখ আছে, অথচ মূল বইয়ে নেই। আমি সেগুলো নিয়ে তুলকালাম করি নি। স্নিগ্ধা বা মীজান ভাইও করেন নি -কেন তাদের লেখা থাকবে বলেও থাকলো না -ইত্যাদি। তারা বুঝেছিলেন বই প্রকাশের সময় বহু কিছুর মধ্য দিয়ে প্রকাশক এবং লেখকদের যেতে হয়। তারা বন্ধুতার নিরিখেই ব্যাপারটা বুঝে নিয়েছিলেন। আপনার ব্যাথা সম্ভবতঃ তাদের তুলনায় বেশি। আপনাকে আমি কোন কৈফিয়ত দিচ্ছি না (যে জায়গায় সমস্যা সেটা স্বীকার করছিই), কিন্তু আমিও আশা করব যে, আপনি অন্ততঃ আমার অবস্থানটা বুঝবেন, এবং ব্লগে এসে এ ধরণের ঢালাও অভিযোগ করার আগে আরো একবার ভাববেন।



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

আরিফ জেবতিক এর ছবি

অভিজিৎ,
বিষয়টি নিয়ে আপনার খোলামেলা কথাগুলো ভালো লাগলো।

একটা অফটপিক প্রসঙ্গ এখানে বলি।
যতদূর জানি আপনি মুক্তমনার সঙ্গেও জড়িত।
আমার মনে হয় মুক্তমনাতেও অনুমতি ছাড়া লেখা প্রকাশের যে চর্চা আছে, সে ব্যাপারেও মুক্তমনা কর্তৃপক্ষের সচেতনতার বিষয়টি আপনি তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষন করতে পারেন। এই ব্যাপারগুলো থেকেই মাঝে মাঝে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরী হয়।

অভিজিৎ এর ছবি

আমার নজরে কিছু পড়লে আমি তো জানাবই, আপনার নজরে কিছু পড়লে আপনাকেও সহযোগিতা করতে অনুরোধ করা হচ্ছে। মুক্তমনাতেও অনুমতি ছাড়া লেখা প্রকাশ করা হয় না, তারপরেও কোন ব্লগার করে থাকলে যদি সেটা আপনার নজরে পড়ে তা অবশ্যই সেখানে জানাবেন।

ভাল লাগলো আপনার মন্তব্য।



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

আরিফ জেবতিক এর ছবি

দুটো ক্ষেত্রে আমি আপনাকে উদাহরন দিতে পারি। আমার একটা লেখা প্রকাশিত হয়েছিল, যা শুধুমাত্র সচলায়তনের জন্য লেখা হয়েছিল। যদিও আমি বিষয়টি নিয়ে আপত্তি করিনি, ব্যক্তিগত ভাবে মুক্তমনায় আমার লেখা প্রকাশে কোনো আপত্তি নেই, কিন্তু পদ্ধতিগত ভাবে অনুমতির বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার।
আরেকবার সচলায়তনের পডকাস্ট 'বটুমিয়া' মুক্তমনায় প্রকাশ করা হয়েছে, ঐ পডকাস্টটিও যতদূর জানি শুধুমাত্র সচলে প্রকাশ করার জন্যই বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে তৈরী করা হয়েছিল।

অভিজিৎ এর ছবি

আরিফ ভাই,
আমার যতদূর মনে পড়ে আপনিই আপনার একটি লেখা আমাকে পাঠিয়েছিলেন মুক্তমনায় প্রকাশের জন্য (আপনি চাইলে আমার ইমেইল খুঁজে দেখতে পারি)। সেটি নিয়ে লুনা শিরীনের একটি মন্তব্য নিয়ে বিতর্কও হয়েছিল, মনে আছে? সেটার প্রতিক্রিয়াও আপনি ব্যক্ত করেছিলেন আলাদা ভাবে। এর বাইরে আপনার কোন লেখা কেউ কি কোথাও থেকে নিয়ে প্রকাশ করেছিল? করা হলে জানাবেন। আর বটু মিয়ার ব্যাপারটা মনে করতে পারছি না। যদি সত্য হয়ে থাকে, তবে সেটা মুছে ফেলা হবে।

মুক্তমনা ব্লগ হবার পরে আমরা এধরণের অন্য ব্লগের থেকে নিয়ে লেখা প্রকাশ খুব কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত করি। এমনকি একই লেখা বিভিন্ন ব্লগে প্রকাশও নিরুৎসাহিত করা হয়। এরপরেও বিচ্ছিন্নভাবে কোন ঘটনা ঘটতেই পারে, এবং সেজন্য আমরা আপনার এবং সবারই সহযোগিতা চাই। অন্য ব্লগেও মাঝে সাঝে এ ধরণের ব্যাপার ঘটতে দেখি। আসলে এখানে ব্লগারদেরই দায়িত্ব এ ধরনের কিছু যেন তারা না করেন। কারো চোখে পড়লে প্রতিবাদ করেন, সেভাবেই ব্যাপারগুলোর নিষ্পত্তি হয়। আশা করি বুঝতে পারছেন। আসলে ব্লগ হবার আগে অনুমতির একটা ব্যাপার ছিল, কারণ তখন সেটি ছিল ওয়েবসাইট, কিন্তু ব্লগ হবার পরে ব্লগারদের উপরেই সেই দায়িত্বটুকু থাকে। যেমন, গৌতমের লেখাটির ব্যাপারে তো আমি সলায়তনকে দায়ী করতে পারি না, তাই না? ব্যাপারটা অনেকটা সেরকমই। তারপরেও আপনার মন্তব্য আমি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছি, এবং কোন ধরণের ত্রুটি থাকলে আমরা অবশ্যই সংশোধনের চেষ্টা করব।

আপনার সহযোগিতার জন্য আবারো অনেক ধন্যবাদ।



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

আরিফ জেবতিক এর ছবি

না, ঐ লেখাটি আমি পাঠাইনি, লেখাটি সচলায়তনে লেখা হয়েছিল। এমনকি লেখাটি প্রকাশিত হওয়ার পরেও আমি জানতে পারি নি লুনা শিরীনের প্রতিক্রিয়াটি প্রকাশিত হওয়ার পূর্বে।

তখন সচল অমিত আহমেদ আমাকে মেইল করে জানান, এবং তাঁর কাছ থেকেই মুক্তমনায় আপনার সংশ্লিষ্ঠতার খবর জেনে আমি লুনা শিরীনের লেখার প্রতিক্রিয়াটি আপনার কাছে পাঠাই।

আপনি ইমেল না খুঁজে বরং আমার পাঠানো প্রতিক্রিয়া লেখাটির প্রথম প্যারাটি খেয়াল করে দেখুন। যেখানে আমি একটা সুক্ষ কৌতুক করে এই লেখা প্রকাশের বিষয়টিকে প্রথমেই সামনে এনেছি এবং তারপরই ধারণা করেছি যে লেখাটি আপনিই সচলায়তন থেকে মুক্তমনায় নিয়ে গেছেন। যেহেতু প্রতিক্রিয়ার লেখাটি আপনার কাছে মেইল করে পাঠিয়েছিলাম, সুতরাং আমার ধারণার বিষয়টি আপনার জানা থাকার কথা।

আমার পাঠানো লেখার শুরুতেই আছে:

অনুজতূল্য তরুন লেখক অমিত আহমেদ এর মেইল মারফত জানতে পেরেছি যে মুক্তমনায় আমার একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছে।মুক্তমনায় লেখা প্রকাশিত হওয়ার বিষয়টি আমার মতো তুচ্ছ লেখকদের জন্য একটা ভালো লাগার বিষয়, তাই মুক্তমনার মডারেটরদেরকে আমার কৃতজ্ঞতা। ধন্যবাদ অভিজিৎকে যিনি লেখাটি আমার সচলায়তন ব্লগ থেকে মুক্তমনাতে নিয়ে আসার কষ্টটুকু করেছেন।

---
এবং আমার ধারণা এই লেখাগুলো মুক্তমনা ব্লগ হওয়ার আগেরই ঘটনা, যতদূর মনে পড়ে তখন পিডিএফ হিসেবেই লেখাগুলো প্রকাশিত হতো। এখন যদি অনুমতির ব্যাপারে সতর্কতা তৈরী হয়, তাহলে সুখের বিষয়।

বিশেষ করে নেটে প্রকাশিত লেখাগুলোর ব্যাপারে আমাদের মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার আচরণ দেখে মনে হয়, এগুলো কম্পিউটার নিজে নিজে লেখে, তাই প্রকাশ করায় কারো অনুমতির তোয়াক্কা করার দরকার নেই।
কিন্তু আমি-আপনি বা আরো অনেকেই, আমরা যারা মূলত নেটকে সম্বল করেই লেখালেখি করি, তাঁরা সবাই মিলেই এই সচেতনতার জায়গাটুকু তৈরী করতে হবে। আমাদের সবার ভুমিকাই এখানে অনেক।

অভিজিৎ এর ছবি

আরিফ জেবতিক,

ইমেইল প্রতিক্রিয়াটি আপনি মুক্তমনায় পাঠিয়েছিলেন, এটা নিশ্চিত (আপনার পাঠানো এটাচমেন্ট সহ লেখাটি আমার একাউণ্টে আছে - reaction about Luna Shirin's articleThursday, September 20, 2007 3:54 AM)। মূল লেখাটির ব্যাপারে আমার ধারণা ছিলো যে, হয় আপনি পাঠিয়েছিলেন নয়তো ব্যাপারটি আপনার অনুমতি নিয়েই করা হয়েছিল। কিন্তু, লুনা শীরিনের প্রতিক্রিয়ায় আপনার মন্তব্যে বোল্ড করা অংশটি সেই অনুমানের বিরুদ্ধে যায় বলেই মনে হচ্ছে। কিন্তু আপনি যেভাবে নিশ্চিত হয়ে আমার নাম উল্লেখ করেছেন, তাতে আমার মনে হয়েছে আমাদের মধ্যে লেখাটি ছাপানোর ব্যাপারে এক ধরনের পূর্ব যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছিল (হয়তো আমি ছাপানোর আগে ইমেইল করেছিলাম বা এই ধরনের কিছু), এবং তার ভিত্তিতেই তা প্রকাশিত হয়েছিল। যেহেতু ব্লগ তৈরির আগেকার ঘটনা, অনেক কিছুই ধারণা থেকে বলছি। সে যাই হোক, ভুল হয়ে থাকলে সেটার তো সংশোধন করতে হবে। এটার দায় দায়িত্ব আপাততঃ আমি নিচ্ছি।

আসলেই সবাই মিলেই এই সচেতনতার জায়গাটুকু তৈরীর কাজ করতে হবে। আপনার সহযোগিতার জন্য আবারো ধন্যবাদ।



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

আরিফ জেবতিক এর ছবি

ব্যাপারস না, এইগুলা হইতেই পারে এক সময়। নিজেদের মানুষের মাঝে এগুলো কোনো সমস্যা না অনেক সময়ই, কিন্তু প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই নর্মসগুলোর জোরালো প্র্যাকটিস থাকা ভালো।

গৌতম এর ছবি

বাহ! এখন তো দেখি উল্টো আপনিই আমার পিঠে গুলি করতে বসলেন!

আপনি যদি আমার কথার ভুল ব্যাখ্যা করেন, তাহলে আমার কী করার থাকে? প্রয়োজনে পুরো লেখাটিই ভালো করে আবার পড়ুন, এবং তারপর দেখুন মুসা ইব্রাহীম সম্পর্কিত বইয়ের ব্যাপারে আমার মনোভাব আর আপনার বইয়ের ব্যাপারে আমার মনোভাব এক কি-না! এই পার্থক্যটুকু যদি আপনি না বুঝেন, তাহলে আমি আর কী করতে পারি? আমার লেখা ও মন্তব্যে আমি আমার অবস্থান পরিষ্কার করেছি, এখন উল্টো যদি আপনি আমাকে আক্রমণ করতে শুরু করেন, তাহলে আপনার চেয়ে বেশি অসহায় আমি।

আমি আপনার পক্ষ থেকে কোনো বেনিফিট অব ডাউটও চাচ্ছি না। কারণ মূল ঘটনাটি কী সেটা আমি পরিষ্কারভাবেই বলেছি। আপনি যদি বলেন, হ্যান্ডআউটের লেখাগুলো এর আগে কোথাও প্রকাশিত হয়েছিল কিনা, সেটা খুঁজে বের করা আমার দায়িত্ব ছিল, তাহলে অবশ্য অনেক দায় আমাকেই নিতে হয়। আর যে মিলটুকুর কথা বললেন, সে ব্যাপারে হ্যান্ডআউট রচয়িতার বক্তব্যও আমি তুলে ধরেছি। এখন আপনি যদি সত্যিই আমাকে দোষী করতে চান, তাহলে আপনার উচিত ছিল, ওই লেখাটি প্রকাশের সময়ই সেটি ধরিয়ে দেয়া। তা হলে হয়তো আপনার বক্তব্য বা আক্ষেপ আজকে এতোদূর গড়াতো না। সেটি না করে উল্টো আমার 'মঙ্গলের' কথা চিন্তা করে সেটা তো করলেনই না, বরং আপনার বইতে ছেপে দিলেন। আমি যদি 'ইন্ডাইরেক্টলি চুরি' করেই থাকি, তাহলে আপনার বই প্রকাশের পর এই 'ইন্ডাইরেক্ট চুরি'র দায়ভারও আপনাকে নিতে হয়। কারণ আপনি শুরুতেই সেই লেখা দেখেছেন, সেখানে মন্তব্যও করেছেন, কিন্তু এই কথাগুলো আগে বলেন নি। বরং সেটিকে আপনার বইতে প্রমোট করেছেন। তখন এই কথাগুলো বললে সেগুলো আমি সংশ্লিষ্ট হ্যান্ডআউট রচয়িতাকে সেগুলো দেখিয়ে তাকে আপনার কনসার্নগুলো আরো ভালোভাবে জানাতে পারতাম (আপনার বর্তমান কনসার্ন ইতোমধ্যেই তাকে জানিয়েছি)।

...আর আপনার অবস্থান আমি বুঝেছি বলেই আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগের সুরটা অন্যরকম ছিলো- সম্ভবত আপনি সেটা বুঝতে পারেন নি কিংবা আমার দুর্বল লেখনির কারণে সেটা বুঝাতে ব্যর্থ হয়েছি। আমার এই অভিযোগের (অভিযোগের চেয়ে অনুযোগ বলাই বোধহয় ভালো) কারণে আপনি আহত হয়েছেন, সেটা বুঝতে পারছি। কিন্তু আপনি স্নিগ্ধা আপার লেখার জন্য অনুমতি নিতে পারলেন কিন্তু আমাকে পূর্বে বা পরে একটা ইমেইল দিতে পারলেন না- সেটা নিয়েও না হয় আমি আর কথা বাড়ালাম না। আর ছোট্ট কয়টি লাইন যদি আপনার কাছে তুলকালাম মনে হয়, তাহলে আমার আর কী বলার আছে! তারপরও এতো কথা বাড়তো না, যদি না আপনার রিপ্লাইটা সেরকম হতো। উল্টো আমার অবস্থানটিকে আপনি 'ব্যথা সম্ভবত তাদের তুলনায় বেশি' বলে বিদ্রুপও করেছেন‍! ভালো! আমার অভিযোগটি ঢালাও কিনা- সেটাও আপনাকে আরো একবার ভাবার অনুরোধ করবো।

ভালো থাকবেন।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

হিমু ভাই,
আমি আকাশ প্রকাশনীর কথা বলছি।
প্রকৃতি প্রেমিক,
সাধারনত অনুবাদের সন্মানী খুবই কম। পরিশ্রমের তুলনায় আরকি। তবে এই বইটার ক্ষেত্রে প্রকাশক ৪৫দেবেন বলেছিলেন। বইটার নাকি বাজার ভাল। কাটতি ভাল হবে। বই মেলাতেও তাই দেখলাম। বই আনে আর শেষ হয়। টাকা পাইনি। সে যাক।

আলমগীর ভাই,
অনুমতির ব্যাপারে আমি সেবা প্রকাশনীর শওকত হোসেন ভাই এর সাথে কথা বলেছি। তিনি বললেন যে এই অনুমতির ব্যাপারটা হয় মূল লেখকের এজেন্ট আর প্রকাশকের সাথে। কোন এজেন্ট সরাসরি অনুবাদকের সাথে কোন চুক্তি বা অনুবাদককে কোন অনুমতি দেননা। দেন প্রকাশক কে। এখানে তো ভাই আমার করার কিছু নাই। চুরির টাকার ভাগ নেয়ার কথা বলেছেন। ভালো লাগলো। মাঝে মাঝে মানুষ অযথা আক্রমন করে মজা পায়। কেউ মজা পাচ্ছে , দেখতেও ভাল লাগে। ভালো থাকবেন আলমগীর ভাই।-----------------------------মানিক

আলমগীর এর ছবি

কোন এজেন্ট সরাসরি অনুবাদকের সাথে কোন চুক্তি বা অনুবাদককে কোন অনুমতি দেন না। দেন প্রকাশক কে। এখানে তো ভাই আমার করার কিছু নাই।

আপনি নিজের অধিকারটা বুঝতে পারছেন, কৃতিত্ব এবং পাওনা টাকা; প্রকাশক যখন টাকা দিতে চায় না তখনও বোঝেন আপনার প্রাপ্য পাচ্ছেন না। যে বইটা অনুবাদ করলেন তার কভারের পেছনে যে কপিরাইট নোটিশ আছে সেটা বুঝতে চাচ্ছেন না। অনুবাদক হিসাবে নিজের নাম যাবে, কৃতিত্ব ঠিক থাকবে, কিন্তু আপনি দায়টা স্বীকার করছেন না। বলছেন প্রকাশক ওই কথা বলেছে।

করণীয় আছে, অনুবাদ না করা। আপনার দ্বিতীয় অনুভূতিটা ঠিক না। আপনি নিজে যেদিন একটা ভাল বই লিখবেন আর অন্যরা সেটা আপনার অনুমতি ছাড়াই যা-তা করবে সেদিন বুঝবেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমাদের দেশের বিভিন্ন অসংগতির মধ্যে আরো এক মাইঙ্ক্যারচিপা হইল এইটা! অনুমতির বিষয়টা মনে হয় বাহুল্য বলেই ধরে নিয়েছে! :@

গৌতমদা, প্রকাশক ব্যাটা মেলায় আসবেই। শুধু ধৈর্য ধরে থাকুন আর মেলায় নিয়মিত আসুন।

---- মনজুর এলাহী ----

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- একটা ভালো সমাধান দেই।
আমার মতো কনটেন্টলেস, আউল-ফাউল লেখা শুরু করে দেন। ভুলেও কেউ আপনার লেখা কোথাও ছাপাবে না, গ্যারান্টি আমার। দেঁতো হাসি
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

যাক এদ্দিনে আমার মতো একজন (সত্যিকারের) ব্লগার পেলাম!

আলমগীর এর ছবি

তিন নাম্বারে নাম লিখাইলাম।

ধুসর গোধূলি এর ছবি
প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

হো হো হো

দ্রোহী এর ছবি

হে হে হে.........আমার উপরে কেউ নাই। আমার লেখা তো সচলায়তনের ই-বুকেও জায়গা পায় না। বই তো অনেক দূরের ব্যাপার। হো হো হো


কি মাঝি, ডরাইলা?

আলমগীর এর ছবি

আপনে বাদ, কাটপিস কর্তেপারেন্না চোখ টিপি

দ্রোহী এর ছবি

কী কন না কন! পারি না মানে? পর্বতে কাটপিস দেখতে দেখতেই না এত বড় হইলাম খাইছে ! এত দেখছি, একটুও কি শিখি নাই?
হো হো হো


কি মাঝি, ডরাইলা?

দ্রোহী এর ছবি

সৌজন্য কপি পেয়েছেন এতেই খুশি থাকেন। ধরে যে মার দেয়নি তাই অনেক।


কি মাঝি, ডরাইলা?

আরিফ জেবতিক এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি আপনি মিয়া সত্যি সত্যিই এক পিস! এরকম চট করে উইটি কমেন্ট করেন কিভাবে!

দ্রোহী এর ছবি

বলা যাবে না। ওস্তাদের নিষেধ আছে। হো হো হো


কি মাঝি, ডরাইলা?

বোহেমিয়ান এর ছবি

দ্রুহিদার সাথে একমত!!! যেই অবস্থা চলতেছে!!

এইভাবে লিখে লিখে মুখ খুলে দিতে হবে চোরদের।
_________________________________________

_________________________________________
ওরে! কত কথা বলে রে!

ফারুক হাসান এর ছবি

প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে আমরা কিন্তু অনেককেই কোট করি তাদেরকে না জানিয়েই, কিন্তু যথাযথ রেফারেন্স দেয়াটা অবশ্যকর্তব্য। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, রেফারেন্স দিয়ে ছাপিয়ে দিলেই কি দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়? সবচেয়ে বড় কথা, কতটুকুর বেশি কোট করলে বা হুবহু ছাপালে লেখকের পূর্বানুমিতি নিতে হবে?

অনেক সময় কিন্তু একটা মাত্র ইলাস্ট্রেশন কিংবা বৈজ্ঞানিক প্লট ছাপলেও অনুমতির প্রয়োজন পড়ে।

গৌতম এর ছবি

কোট করা আর পুরো লেখা দেয়ার মধ্যে একটা পার্থক্য নিশ্চয়ই আছে ফারুক ভাই। তবে আপনার প্রশ্নটি 'কতটুকুর বেশি কোট করলে বা হুবহু ছাপালে লেখকের পূর্বানুমতি নিতে হবে' সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।