থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার : একটি সুনির্মিত চলচ্চিত্র?

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ০৭/০৩/২০১০ - ৯:৩১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

(এই লেখাটি গত ০৬ মার্চ ২০১০ তারিখে কিছুটা সংক্ষিপ্তভাবে 'দৈনিক সমকাল'-এ প্রকাশিত হয়েছে। এখানে সম্পূর্ণ লেখাটি দেয়া হলো।)

থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার : একটি সুনির্মিত চলচ্চিত্র?
নাদির জুনাইদ

বাংলাদেশের মূলধারার চলচ্চিত্রের গতানুগতিক কাহিনী ও নির্মাণপদ্ধতি নিয়ে মধ্যবিত্ত দর্শকের অসন্তোষ দীর্ঘদিনের। আর তাদের রুচির সাথে মানানসই বিকল্প ধারার শৈল্পিক ও বাস্তবধর্মী চলচ্চিত্রও আমাদের দেশে তৈরি হয়েছে অনিয়মিতভাবে। ইদানীং বলা হচ্ছে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত দর্শক আবার কোন কোন ছবি দেখার জন্য দল বেঁধে হলে আসছে। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী নির্মিত থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার ছবিটি গত ডিসেম্বর মাসে মুক্তি পাবার আগেই পত্রপত্রিকায় ব্যাপক প্রচার পেয়েছিল। ফারুকী নিজেও একটি সংবাদপত্রে তাঁর লেখায় ছবিটি দু’টি বিদেশী চলচ্চিত্র-উৎসবে দর্শক-সমালোচকদের এবং সর্বোপরি বিখ্যাত ইরানি চলচ্চিত্র পরিচালক আব্বাস কিয়ারোস্তামি’র কতো প্রশংসা পেয়েছে তার বিবরণ দেয়ার পর সারা দেশের দর্শকদের দলে দলে হলে গিয়ে ছবিটি দেখার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এই ছবিতে ফারুকী আমাদের সমাজে একজন অবিবাহিতা নারীকে যেসব সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় তা উপস্থাপনের কথা বলেছিলেন। সব কিছু মিলিয়ে আমরা একটি ভিন্ন মেজাজের এবং সামাজিক দায়িত্ব সচেতন চলচ্চিত্র দেখার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠেছিলাম।

ফারুকী’র এই চলচ্চিত্রে রুবা একজন অবিবাহিতা নারী, যে মুন্না’র সাথে বসবাস করতো। কিন্তু হঠাৎই খুন করার অভিযোগে মুন্নাকে জেলখানায় বন্দী হতে হয়, আর তখনই একলা নারীর জন্য এই সমাজ কতটা সমস্যাসঙ্কুল তা বিভিন্ন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে রুবা’র কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। রুবার পুরনো বন্ধু তপু এক সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়, এবং ক্রমশ রুবা তপু’র প্রতি আকর্ষণ অনুভব করতে শুরু করে। মুক্তি পাবার পর ছবিটি দেখতে হলে দর্শক সমাগমও হয়েছে যথেষ্ট। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত একাদশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে এই ছবিটির জন্য ফারুকী সেরা পরিচালকের পুরষ্কার পেয়েছেন। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে কী ধরনের চলচ্চিত্র অনেক মধ্যবিত্ত দর্শককে আকৃষ্ট করছে এবং দেশে অনুষ্ঠিত চলচ্চিত্র উৎসবে পুরষ্কারও পাচ্ছে তা বোঝার জন্যই এই ছবিটির বক্তব্য ও নির্মাণশৈলীর বিভিন্ন দিক যাচাই করার প্রয়োজন অনুভব করি।

কিন্তু বিশদভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় নির্মাণশৈলীর নান্দনিকতা কিংবা সমাজসচেতন বক্তব্যের গভীরতা কোন দিক দিয়েই অনেক-প্রচার-পাওয়া এই ছবিটি উল্লেখ করার মতো সাফল্য অর্জনে সক্ষম হয়নি। বরং হাতে গোণা কিছু প্রশংসনীয় দৃশ্য ছাড়া পুরো ছবিটিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে বিভিন্ন মামুলি দৃশ্য, সস্তা বিনোদন, অত্যন্ত হালকা কথাবার্তা, চটুলতা এবং একঘেঁয়েমি। এছাড়াও বাংলাদেশে একজন নিঃসঙ্গ নারীকে যেসব সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তারও অসম্পূর্ণ, অতি-সরল এবং গতানুগতিক বর্ণনাই কেবল উঠে এসেছে এই ছবিতে। পরিচালক তাঁর পূর্বের ছবিগুলো থেকে উঁচু মানের একটি ছবি এবার নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছেন সেকথাও জোর দিয়ে বলার সুযোগ থাকে না, এবং কোন জটিল সামাজিক সমস্যার সূক্ষ্ণ বিশ্লেষণ প্রদানে পরিচালকের দক্ষতা নিয়ে তাই স্বাভাবিকভাবেই সন্দেহ প্রকাশের অবকাশ তৈরি হয়।

যদিও থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার শুরু হয়েছিল শক্তিশালী একটি দৃশ্যের মধ্য দিয়ে। একজন পুরুষ রাস্তায় একাকী দাড়িয়ে থাকা রুবাকে যৌনকর্মী ভেবে নেয়, এবং রুবাকে তার সঙ্গে যাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করতে থাকে। রুবা নিশ্চুপ থেকে লোকটিকে উপেক্ষা করলে হঠাৎ এক পর্যায়ে লোকটি রুবার মুখে থুথু নিক্ষেপ করে চলে যায়। এই দৃশ্যটি দর্শককে আঘাত করে, দর্শকের মনের শান্ত অবস্থা বিঘ্নিত হয় দৃশ্যটির রূঢ়তায়। একজন নিঃসঙ্গ নারীর কষ্টের জন্য যারা দায়ী তাদের প্রতি তীব্র ক্রোধ দর্শক-মনে তৈরি হতেও সময় লাগে না। সমাজ-সচেতন ছবিতে এমন মর্মস্পর্শী দৃশ্যের ব্যবহারই স্বাভাবিক। এই দৃশ্যটি দেখে মনে হচ্ছিলো ছবিটি হয়তো কার্যকর নির্মাণপদ্ধতির মধ্য দিয়ে সমাজের কিছু অন্যায় বলিষ্ঠভাবে তুলে ধরতে যাচ্ছে। কিন্তু একটি চিন্তাশীল ও বিশ্লেষণী ছবি দেখার আশা আর পূরণ হয় না, কারণ সামাজিক সমস্যার মূল কারণগুলি জোরালোভাবে প্রকাশের পরিবর্তে ছবিতে ক্রমশই প্রাধান্য পেতে থাকে ব্যক্তিগত সম্পর্কের কাহিনী, আর দর্শককে হালকা বিনোদন দেয়ার মতো বিভিন্ন দৃশ্যের বহুল ব্যবহারের মধ্য দিয়ে ছবিতে একজন নিঃসঙ্গ নারীর সমস্যা উপস্থাপন হয়ে ওঠে দায়সারা ধরনের।

ফারুকী মূলত রুবার সাথে কয়েকজন কপটস্বভাবী প্রৌঢ়ের কুরুচিপূর্ণ আচরণ এবং রুবার থাকার জন্য বাড়ি পাওয়ার অসুবিধা দেখাবার মধ্য দিয়ে এই সমাজে একজন অবিবাহিতা নারীকে যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তার বর্ণনা তুলে ধরেছেন। নিঃসন্দেহে বলা যায় আমাদের সমাজে অবিবাহিতা নারীদের বিভিন্ন জটিলতর সমস্যারও মুখোমুখি হতে হয়, কিন্তু ফারুকী কেবলমাত্র সহজে অনুমান করা যায় এমন কয়েকটি সমস্যা দেখানোর মধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টির বিশ্লেষণ সীমিত রেখেছেন। রুবার সাথে প্রৌঢ়দের অসংযত আচরণের দৃশ্যগুলিতে আবার ব্যবহার করা হয়েছে সস্তা কৌতুক, ফলে দৃশ্যগুলি গুরুত্ব হারিয়েছে অনেকটাই। আমাদের সমাজে হালকা ইয়ারকিপূর্ণ আচরণের মাধ্যমে কোন নিঃসঙ্গ নারী খারাপ-স্বভাবের পুরুষের অন্যায় আচরণ থেকে রেহা্ই পায় কী না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। রুবা কিন্তু খুব সহজভাবেই হাসিবিদ্রুপের মধ্য দিয়ে এই পুরুষদের প্রতিরোধ করে। ফলে এই দৃশ্যগুলিকে যথেষ্ট বাস্তবসম্মত বলেও মনে হয় না। আবার কখনো এই প্রৌঢ়দের বাজে মানসিকতা বোঝার পরও রুবা তাদের সাথে চটুল কথাবার্তা চালিয়ে যায়। এমনকি একটি দৃশ্যে একজন প্রৌঢ়কে বিদ্রুপ করে রুবা যে কথাটি বলে তা সম্পূর্ণই অশালীন শোনায়। নিজের শিষ্টাচার বজায় রেখেও যে কারো অশোভন আচরণের প্রতিবাদ করা যায়, ফারুকী এই যৌক্তিক ও প্রয়োজনীয় বক্তব্যটি নিজ ছবিতে উপেক্ষা করলেন, এবং তাঁর ছবির মূল চরিত্রটিকেও সেই সাথে দুর্বল করে তুললেন।

তাঁর আগের ছবিগুলির চেয়ে এই ছবিটির নির্মাণপদ্ধতি ভিন্ন হবে বলে ফারুকী উল্লেখ করেছিলেন। তিনি আরো বলেছিলেন যে হাস্যরসের পরিবর্তে এই ছবিতে তিনি ইউরোপীয় আভাগার্দ ছবির কিছু পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। কিন্তু তাঁর পুরনো ছবিগুলির মতো এই ছবিতেও প্রায়ই ব্যবহার করা হয়েছে কিছু হালকা কৌতুককর দৃশ্য যা কোনভাবেই ব্যঙ্গাত্মক হয় নি, বরং সেসব দৃশ্য ছবিটিতে কেবল স্থূলতাই যোগ করেছে। যেমন তপুর কনডম কেনার একটি দৃশ্য প্রয়োজনহীনভাবে দীর্ঘায়িত করে দেখানো হলো। বার বার হালকা সংলাপ আর কৌতুককর দৃশ্য ব্যবহারের মধ্য দিয়ে ছবির মেজাজকেই লঘু করে তোলা হয়েছে, আর সেই লঘুতার কারণে ছবিতে পরাবাস্তববাদী কায়দায় দেখানো কয়েকটি দৃশ্য আর কার্যকর অভিঘাত তৈরি করতে পারে না।

ছবিটিতে বিনোদননির্ভর চলচ্চিত্রের অনেক উপাদানই ব্যবহার করা হয়েছে। জনপ্রিয় গায়ক তপু একটি অন্যতম চরিত্রে অভিনয় করেছেন, এবং বিভিন্ন দৃশ্যে তাঁর ভূমিকা কেবল ছবিটির চাকচিক্য বাড়িয়েছে। রুবাকেও প্রায় সবসময়ই ফ্যাশনসম্মত পোষাক পড়া অবস্থায় দেখা যায় এবং তাকে উপস্থাপন করা হয় আকর্ষণীয়ভাবে, যদিও এই চরিত্রটি টানাপোড়েনের মাঝ দিয়ে যাওয়া একজন নারীর চরিত্র ছিল। রুবা এবং তপুর একসাথে সময় কাটানোর একই ধরনের একাধিক দৃশ্য ক্রমশ একঘেঁয়ে হয়ে ওঠে; গতানুগতিক এই দৃশ্যগুলিকে বিভিন্ন টেলিভিশন নাটক বা বিজ্ঞাপনের দৃশ্যের মতো্ই মনে হয়, চলচ্চিত্রের চিত্তাকর্ষক দৃশ্য তা কোনভাবেই হয়ে উঠতে পারে না।

ফারুকীর আগের ছবিগুলির মতো এই ছবিতেও ভোগবাদী সংস্কৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখানো হয়েছে। ছবির চরিত্ররা শহুরে ভোগবাদী জীবনের আয়েশকে উপভোগ করেছে সম্পূর্ণভাবে। বহু দরিদ্র মানুষের এই সমাজে একটি সমস্যাভিত্তিক চলচ্চিত্রে ভোগবাদী সমাজের বিভিন্ন দিককে এতো আকর্ষণীয়ভাবে দেখানোর প্রবণতাটির প্রশংসা করা যায় না; অথচ ফারুকী নিয়মিতভাবেই তার চলচ্চিত্রে এই কাজটি করে চলেছেন। ছবিতে রুবাকে বেশিদিন কষ্টের মধ্য দিয়ে যেতে হয় না। তপুর সাথে সে একটি দামী ফ্ল্যাটে থাকে; অফিসের পুরুষ বসও তার কাজে সন্তষ্ট হয়ে তার প্রতি সদয় থাকেন। আমাদের সমাজে অনেক অবিবাহিতা নারীই রুবার মতো স্বাধীন, স্বচ্ছল এবং স্বস্তিপূর্ণ জীবন কাটাতে পারে না। ছবিতে দু’জন সঙ্গীর মধ্যে একজনকে বেছে নেয়ার ব্যাপারে রুবার যে মানসিক দ্বন্দ্ব দেখানো হয়েছে, আমাদের সমাজে বিবাহিতা-অবিবাহিতা নির্বিশেষে নারীদের তার তুলনায় অনেক গভীর সামাজিক ও মানসিক অশান্তির সম্মুখীন হতে হয়। ফারুকীর ছবি তাই প্রকৃতঅর্থে কোন তীক্ষ্ণ সামাজিক বিশ্লেষণ তুলে ধরে না; তা হয়ে ওঠে চাকচিক্য আর অগভীরতা সর্বস্ব একটি মামুলি চলচ্চিত্র।

ছবিটির চিত্রনাট্যও অত্যন্ত দুর্বল; ফারুকী এবং লেখক আনিসুল হক যৌথভাবে ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন। ছবিটিতে বার বার নানা ধরনের অসঙ্গতি চোখে পড়ে। মুন্না খুনের অভিযোগে জেলে গেলেও দেখা গেল সে আবার খুব সহজেই জেল থেকে ছাড়া পেয়ে যায়। ছবিতে কখনোই স্পষ্ট হয় না যে রুবা আর মুন্না কী বিবাহিত না তারা কেবল একসাথে বসবাস করছে। ছবির সংলাপ বরাবরই অত্যন্ত সাদামাটা, এবং কখনো রীতিমতো অপছন্দনীয়। অতি সাধারণ মানের কাহিনী ও সংলাপের এই ছবিতে শক্তিশালী অভিনয় প্রদর্শনের সুযোগও ছিল না; এমন কী খ্যাতিমান অভিনেতা আবুল হায়াত-এর অভিনয়ও উপভোগ্য হয় না কারণ তাঁকে অতিনাটকীয় ভাবে অভিনয় করতে হয়েছে। ক্যামেরার সুচিন্তিত ব্যবহারও ছবিতে দেখা গিয়েছে কমই।

ছবিতে নিজের মা’এর সাথে রুবাকে কর্কশভাবে কথা বলতে দেখা যায়; যদিও পরবর্তীতে তার মা’এর মৃত্যুর পর রুবা শোকগ্রস্ত হয়ে ওঠে। ফারুকী’র পুরনো ছবি ব্যাচেলর-এও একজন অন্যতম নারী চরিত্রকে তার মা’এর সাথে উদ্ধতভাবে কথা বলতে দেখা যায়। আর ফারুকীর আরেকটি ছবি মেড ইন বাংলাদেশ-এ একজন তরুণ তার মেয়েবন্ধুকে মেয়েটির বাবার প্রসঙ্গে বলে ‘এসব আব্বা-টাব্বা বাদ দাও তো’। ভোগবাদী সমাজের বিভিন্ন প্রলুব্ধকর দিক বার বার নিজের ছবিতে তুলে ধরার পাশাপাশি, মা-বাবার প্রতি কমবয়সীদের রূক্ষ আচরণের দৃশ্যও নিয়মিতই দেখা যাচ্ছে ফারুকীর ছবিতে। এই সময়ের দর্শকদের জন্য ফারুকী তাঁর ছবির মাধ্যম কোন্ মূল্যবোধ নির্মাণ করছেন সেই প্রশ্নটি তাই স্বাভাবিকভাবেই উঠে আসে।

ফারুকী আব্বাস কিয়ারোস্তামি’র মতো একজন বিশ্বনন্দিত আর্ট ফিল্ম নির্মাতার কাছ থেকে পাওয়া প্রশংসার কথা নিজের লেখায় উচ্ছ্বসিতভাবে বর্ণনা করলেও, একই লেখায় তিনি তাঁর ছবির দর্শকদের আশ্বস্ত করেছেন এই বলে যে থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার কোন আর্ট ফিল্ম নয়। একজন বিখ্যাত আর্ট ফিল্ম নির্মাতার কাজের প্রতি নিজের আকর্ষণের কথা ফারুকী সবিস্তারে জানাচ্ছেন, অথচ সারা দেশের দর্শকদের জন্য চিন্তাসমৃদ্ধ আর্ট ফিল্ম তিনি নিজে নির্মাণ করছেন না। ফারুকী কী এমনটাই ধরে নিয়েছেন যে বাংলাদেশের দর্শকরা একটি অর্থবহ আর্ট ফিল্ম অনুধাবনে সক্ষম নন? অথবা ফারুকীর ছবির দর্শক হয়তো তাঁরাই যারা কোন আর্ট ফিল্ম দেখতে আগ্রহী নন; যারা বিনোদননির্ভর, হালকা চলচ্চিত্র দেখতেই পছন্দ করেন। আর এই কারণেই হয়তো নিজের ছবি মুক্তি পাবার আগে ফারুকীকে সেই দর্শকদের নিশ্চিন্ত করতে হয় এই বলে যে এটা কোন আর্ট ফিল্ম নয়। কোন দেশের পরিচালক-দর্শকদের আর্ট ফিল্মের প্রতি এমন মনোভাব থাকা দুঃখজনক, কারণ আর্ট ফিল্মের প্রতি অনীহা প্রদর্শন এক অর্থে আব্বাস কিয়ারোস্তামি, সত্যজিৎ রায়, লুই বুনুয়েল, জঁ-লুক গদারের মতো আরো অনেক বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্রকারের অসাধারণ সৃষ্টি থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখারই সামিল। অনেক সমস্যা-জর্জরিত আমাদের দেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রসঙ্গ নিয়ে বক্তব্যধর্মী চলচ্চিত্র নির্মাণ করা সমাজের স্বার্থেই খুব জরুরি। কিন্তু ফারুকীর নতুন ছবি চলচ্চিত্রের নান্দনিকতা এবং সামাজিক দায়িত্বশীলতার বিচারে সন্তোষজনক নয়। এবং ছবিটি কোন চিন্তাশীল ও সমাজসচেতন বক্তব্যও প্রদানেও ব্যর্থ। তবে দেখা যাচ্ছে বর্তমানে আমাদের সমাজে এমন একটি ছবিরও বিভিন্ন দিক দিয়ে সাফল্যলাভের সম্ভাবনা কম নয়। আর এমন পরিস্থিতি আমাদের চলচ্চিত্র ও সমাজের জন্য কতোটা হিতকর তা আমাদের ভেবে দেখা প্রয়োজন।

নাদির জুনাইদ: সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

নাদির জুনাইদ


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

সচলায়তনে স্বাগতম।

অন্যত্র প্রকাশিত লেখাকে সচলায়তনে প্রকাশ নিরুৎসাহিত করা হয়। আপনি যেহেতু সচলের আসরে নবাগত, আমরা আশা করবো আপনি নতুন সব সুলিখিত লেখা আমাদের জন্যে পোস্ট করবেন।

সচলের রীতিনীতির ব্যাপারে আপনার অবগতির জন্যে এর নীতিমালাটি পড়ে দেখার অনুরোধ করবো।

পোস্টটি সম্পর্কে পরে মন্তব্য করছি আবার।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

অতিথি লেখক এর ছবি

নীতিমালাটি দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। নীতিমালাটি পড়ে দেখলাম। নীতিমালায় যে নীতিসমূহ অনুসৃত হবে তার তালিকায় এবং যেসব দিককে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে সেই তালিকায় সম্প্রতি সংবাদপত্রে প্রকাশিত লেখা প্রকাশ করা যাবে না এই বিষয়টির উল্লেখ দেখলাম না। অন্য কমিউনিটি ব্লগে ইতিমধ্যে প্রকাশিত লেখা এখানে প্রকাশিত হবে না এই বিষয়টির উল্লেখ আছে। সেক্ষেত্রে সংবাদপত্রে যে লেখা আংশিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে, তার মূল লেখাটি এখানে প্রকাশের জন্য প্রেরণ করা এই নীতিমালা অনুযায়ী নিয়মবিরোধী হচ্ছে না। তবে সম্পূর্ণ নতুন লেখা প্রত্যাশা করা অবশ্যই সমর্থনযোগ্য। এই বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে নিশ্চিত করতে হলে এই নীতিমালায়ও কিছু বিষয়ের সংযোজন প্রয়োজন যাতে করে লেখকদের কাছে সব নিয়ম সম্পূর্ণভাবে স্পষ্ট হয়।

আমাকে তথ্য দেয়ার জন্য আপনাকে আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আমি অতিথির সাথে একমত। প্রথমতঃ লেখাটির একটি পূর্ণাঙ্গ অংশ এখানে প্রকাশিত হয়েছে। দ্বিতীয়তঃ মূল লেখাটি মুদ্রিত মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। মডারেটরদের কাছে পূর্নবিবেচনার অনুরোধ জানাই।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

সাদা-মডু এর ছবি

আপনার যুক্তি সঠিক। লেখাটি প্রথম পাতায় প্রকাশিত হলো। আপনি নীতিমালার ব্যাপারে যে ত্রুটি নির্দেশ করলেন, সেটিও সংশোধনের সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি। ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখাটি প্রথম পাতায় প্রকাশের সিদ্ধান্তের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

চমৎকার বিশ্লেষণ! ছবিটি দেখার সুযোগ হয়নি এখনও। তবে ইদানীং ফারুকী সাহেবের নাটক ও ছবি গুলো রীতিমত বিরক্তিকর হয়ে উঠেছে! আপনার কাছ থেকে ধারালো লেখা পাবার আশায় থাকলাম।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

তিথীডোর এর ছবি

"থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার" দেখতে গিয়েছিলাম শখ করে, ইশকুল, কলেজ এবং ভার্সিটির অনেক কজন বন্ধুকে জড়ো করে...
যদিও ছোট ভাই এবং বন্ধুরা আগেই ওয়ার্নিং দিয়েছিলো এটা ঠিক বাচ্চাদের মুভি নয়! (স্ল্যাং/ চটুল রসিকতা একেবারেই পছন্দ করিনা বলে পরিচিত গন্ডিতে আমাকে 'বাচ্চা মেয়ে' বলা হয়)
হতাশ হয়েছিলাম ভীষণভাবেই..

মুভির দূর্বল জায়গাগুলো বেশ ভালোভাবেই পয়েন্ট আউট করেছেন, রিভিউয়ারের প্রতি তাই ধন্যবাদ রইলো!

তবে একটি দৃশ্যে তিনটি ভিন্ন বয়সী রুবার সমুদ্রসৈকতে বসে থাকার দৃশ্যটা চোখে লেগে আছে এখনো...

--------------------------------------------------
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

স্পর্শ এর ছবি

সচলায়তনে স্বাগতম।
লেখাটি মুগ্ধ করেছে। বক্তব্যে এবং বিশ্লেষণী ক্ষমতায়। ফারুকীর নাটক/সিনেমা নিয়ে নিজেও কিছু লিখবো লিখবো করছি। কিন্তু অনেকদিন থেকেই তার কোনো নাটকই তেমন টানছে না। তাই দেখা-লেখা হয়ে উঠছে না। লেখার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। মূলধারার মিডিয়ার এরকম জনপ্রিয় একজন নির্মাতাকে এধরণের ক্ষুরধার সমালোচনার সম্মুখীন না করলে শেষে এটা সমাজের জন্যই ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়।

পূর্বপ্রকাশিত ভার্সনের থেকে যদি এটা কিছুটা পরিবর্ধিত হয়ে থাকে। তাহলে লেখকের প্রথম লেখা হিসাবে এটাকে প্রথম পাতায় দেওয়া যেতে পারে।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

হিমু এর ছবি

আপনার সিভিটি কৌতূহলবশে খুঁজে বের করে দেখলাম। আগ্রহোদ্দীপক।

সিনেমাটি দেখা হয়নি, আপনার রিভিউটির লিখনশৈলীর প্রশংসা করছি, কিন্তু বক্তব্যের সাথে সহমত বা দ্বিমত পোষণের উপায় থাকছে না।

তবে আনিসুল হক ও মোস্তফা সরোয়ার ফারুকীর যৌথ চিত্রনাট্য এবং ফারুকীর পরিচালনা, যেটাকে মোটা দাগে হক-ফারুকীর সিনেমা বা হক-ফারুকীর নাটক বলে থাকেন আমদর্শক, কিছু চটকদার, সুড়সুড়ি-দেয়-এমন বিষয়ের পুনরুক্তিপ্রবণ বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। তরুণ-তরুণীর যৌথ নির্জনতা খোঁজা, সেখানে তাদের আচরণ, যৌনতাকে মাথার পেছনে হাত ঘুরিয়ে নাক দেখানোর মতো করে দেখানোর প্রচেষ্টা, কিছু "হাসির কথা" ... এর মধ্যে দিয়েই সিনেমা শেষ হয়ে যায়। ঐ সিনেমা পরবর্তীতে আবার দেখার উৎসাহ পাই না দর্শক হিসেবে। ভালো সিনেমা বোধহয় ওভাবেই অনেকে সংজ্ঞায়িত করবেন, যা অন্তত একাধিকবার দেখার আগ্রহ তৈরি করবে।

এই দু'জনের নাটক-সিনেমা মূলত সিনেজগতের কাণ্ডারী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে আনিসুল হকের প্রথম-আলো সম্পৃক্ততার জন্যে, আমার কাছে এমনই মনে হয়েছে। পত্রিকাটি এই জুটির তৈরি নাটক-সিনেমা, কখনো কখনো হয়তো জুটির ভবিষ্যতের খাতিরেই একাকী ফারুকীর তৈরি নাটক-সিনেমাকে বাংলাদেশের সিনেমা জগতের উজ্জ্বলতম জ্যোতিষ্ক হিসেবে কাভারেজ দিয়ে আসছে বরাবর। ফারুকী পার্টনার নির্বাচনের ব্যাপারে অত্যন্ত সফলই বলা যায়, বিজ্ঞাপনের কাজ এক ধাক্কায় অনেকদূর এগিয়ে গেছে। তিনি যদি কোনো আবুল, কুদ্দুস বা সোলায়মানকে নিয়ে নামতেন, এই মানের সিনেমা বানিয়ে হালে পানি পেতেন না।

ফারুকীর নাটক-সিনেমাগুলো কিছুদিনের দর্শক মনোযোগ পায় এর উপসর্গগুলোর কারণে। বয়স্কা ম্যাডামের সাথে ছাত্রের প্রেম [চড়ুইভাতি] ... এই প্রেম কি যৌন না প্লেটোনিক তা-ও বোঝার উপায় থাকে না, দর্শকের কল্পনার ওপর ছেড়ে দেয়া হয় ... খা খা ক্যাম্পাসে ছাত্রদের বাবার বয়সী লোকজন স্থাপত্যবিদ্যার ছাত্র সেজে অভিনয় করে যায়, এসব দেখে খুব বিরক্ত লেগেছিলো। ব্যাচেলর সিনেমাটিও কিছু যৌন চর্চা [লিটনের ফ্ল্যাট] আর হাহাকার চেঁচামেচির সংগ্রহের বেশি কিছু হয়ে উঠতে পারেনি। সব চরিত্রই বড় জোরে কথা বলে, সব মেয়ে বাসার অন্যদের সাথে চিৎকার করে কথা বলে, এবং একটা সন্দেহ হয়, সিনেমায় নির্দিষ্ট লিখিত সংলাপ বলে কিছু সম্ভবত নেই, মোটের ওপর ভাবটা বুঝিয়ে অভিনেতা অভিনেত্রীকে ছেড়ে দেয়া হয়, তাদের মুখে যা আসে যেমন আসে তারা বলে যান। ক্যামেরা ঘুরতে থাকে। এমনি করে যা বেরিয়ে আসে এডিটিং রুমের মলদ্বার দিয়ে, তাকেই বলা হচ্ছে সিনেমা, এবং মিডিয়ার সশব্দ কাভারেজে সেটিই হয়ে যাচ্ছে আমাদের চোখের খাদ্য, আর "মধ্যবিত্তকে আবার সিনেমা হলে ফেরাচ্ছে" এমন বাহ্বা জুটছে অগাধ।

আর উঠতে বসতে কিয়োরোস্তামি। এই কিয়োরোস্তামি নামটা আর ফারুকীর উচ্চারণ করা উচিত না। তিনি এটি দর্শক ও কাগজপাঠকের ওপর একটি মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ফেলার জন্যে করেন। কিয়োরোস্তামির কাজ যারা দেখেননি তারাও এখন ফারুককীকে ঢাকাই কিয়োরোস্তামি ভাবা শুরু করে দিয়েছেন। একটা লোক যদি দিনমান জপে, টারান্টিনো টারান্টিনো টারান্টিনো ... যে টারান্টিনো দেখেনি সে মনে করবে বাপরে, এই লোকই হয়তো পুওর ম্যানস টারান্টিনো ... ! ফারুকীর উচিত একজন ফারুকী হবার চেষ্টা করা, হরিদাস পাল না হয়ে, বড় বড় লোকজনের নাম না আউড়ে। আর বড় বড় ফিল্মনির্মাতারা বরাবরই নতুন তরুণদের ব্যাপারে উদার। কিয়োরোস্তামি কি এতবড় অভদ্র লোক যে বাংলাদেশ থেকে এক ছোকরা তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি তাকে মুখের ওপর "তোমার সিনেমা ভাল্লাগেনাই" বলবেন? কে জানে! বললেই বা জানবো কী করে!

সিনেমা নির্মাতাদের দায় বোধহয় কেবল তুবড়ে যাওয়া ডিস্ট্রিবিউশন কার্ভে সরু এক চিলতে মধ্যবিত্তের প্রতিই হওয়া উচিত নয়। হলে সিনেমার মূল দর্শক এখনও নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্তেরা। তাদের রুচি নিয়ে প্রচুর নাক সিঁটকানো কথাবার্তা থাকলেও, তাদের রুচিকে সরাসরি পর্নোগ্রাফিক তৃপ্তির দিকে ঠেলে না দিয়ে নাচে গানে ভরা ধুমধাড়াক্কা সিনেমারও হয়তো প্রয়োজন আছে। সেসব সিনেমায় বাস্তবতাবিবর্জিত কাহিনীর বদলে হয়তো প্রয়োজন আছে আরেকটু বাস্তবঘেঁষা কাহিনীর, পর্দায় ভেসে ওঠা ঘোলা ছবির বদলে দরকার আছে ভালো ল্যাব থেকে ডেভেলপ হয়ে আসা ফিল্মে ঝকঝকে সিনেমা। মূল দর্শক শ্রেণীটিকে একেবারে হিসেব থেকে বাদ দিয়ে মধ্যবিত্তের নিজস্ব রুচি নিয়ে স্বগত স্বমেহন সিনেমার কোনো উপকারে আসবে কি না, এটা একটা তর্কের বিষয় হতে পারে। গাছের গোড়া কেটে আগায় পানি ঢালা আর মূত্রত্যাগ করা, দুই-ই সমান নিরর্থক।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

উদ্ভ্রান্ত পথিক এর ছবি

দারুন রিভিও!! যদিও সিনামাটা দেখা হয় নাই তবে আপনার লেখার প্রশংসা না করে পারছি না!
আশা করি সচলে আপনার লেখা নিয়মিত পাবো হাসি
---------------------
আমার ফ্লিকার

---------------------
আমার ফ্লিকার

ওয়াইল্ড-স্কোপ এর ছবি

সাক্ষাত্কার -

ট্রেইলার -

আমার ইদানিংকালের পছন্দের গান (তপু আনিলার জুটি রকস) - এই একটি গানের জন্যই ছবিটি দেখব চোখ টিপি

তিথীডোর এর ছবি

তপুর প্রয়োজনহীনভাবে দীর্ঘায়িত করা অংশটি বেশ কয়েকবছর আগের হিন্দি মুভি "তেরে লিয়ে" থেকে কপি করা...

--------------------------------------------------
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

পলাশ দত্ত এর ছবি

সচলায়তনে স্বাগত।

ফিল্মটা দেখি নাই। তাই আলোচনায় পুরোপুরি অংশ নিতে পারতেছি না।

একটা কথা শুধু মনে হচ্ছে : মা-বাবার প্রতি কমবয়সীদের রূক্ষ আচরণের দৃশ্যও নিয়মিতই দেখা যাচ্ছে ফারুকীর ছবিতে । এটা কিন্তু বানানো নয়, এটাই বাস্তবতা।

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

নাশতারান এর ছবি

এই সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম পুর্বাপর ফিরিস্তি না জেনেই। কোনরকম উচ্চাশা ছাড়া।

দেখে মনে হলো ফারুকী তার কলাকুশলীদের দৃশ্যের মূলভাব বুঝিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন। তারা যে যা পেরেছেন নিজের মত করে গেছেন। ফারুকী তাদের সামনে পিছে ডানে বাঁয়ে ঘোরাঘুরি করেছেন হ্যান্ডিক্যাম হাতে।

মুগ্ধ হয়েছি ফারুকীর দুঃসাহসিকতায়। এত গালমন্দ শোনা চাট্টিখানিক কথা নয়। প্রচলিত রীতিতে নিষিদ্ধ এবং বিতর্কিত অনেক কিছুই আছে ছবিতে। সেটা বাণিজ্যিক স্বার্থে না হয়ে থাকলে ভালো। তবে যথেষ্ট শক্তিশালী কাঁধে বন্দুক রাখার সুযোগ না পেলে ফারুকী এতখানি সাহস দেখাতেন কীনা সন্দেহ।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

রিভিউয়ারের বিশ্লেষণে মুগ্ধ...। আপনি সময় করে আমাদের জন্যে আপনার দেখা বিভিন্ন চলচ্চিত্রের এই জাতীয় রিভিউ দেবেন- আশা রাখি।

_________________________________________

সেরিওজা

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

ভাইরে, খুব সখ করে একদঙ্গল বন্ধুবান্ধব নিয়ে বহু প্রতীক্ষিত এই সিনেমা দেখতে গিয়ে যদি সামনের সিটের পাঁচমাসের বাচ্চাটা চোখে না পড়ত, তাহলে বলতাম ২০০ টাকা পুরাই লস! দিনে দুইটা করে সিনেমা দেখা বেকার আমার নিত্য নৈমিত্তিক কাজ, এই সিনেমা দেখাটা আমার কাছে সময় নষ্ট ছাড়া কিছু মনে হয়নাই। তাও পুরোটা সময় হলে ছিলাম, অন্তত কোনও কিছু নিয়ে মন্তব্য করার আগে তা সম্পর্কে জানা দরকার এই মনোভাবের জন্য, আর হয়তোবা আগ্রহও ছিলো শেষ পর্যন্ত ভালো কিছু হয় কী না দেখার জন্য! মন খারাপ

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

আর...লেখা খুব ভাল্লাগলো...চমৎকার বিশ্লেষণ!

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

নারদ মুনি [অতিথি] এর ছবি

সিনেমা নিয়ে যখন আমি রিভিউ লিখবো তখন আমার জানা থাকা উচিত আমি সিনেমার ভাষা সম্পর্কে জানি কীনা , একটা ভালো সিনেমার উপাদান কী কী । আরও সোজা সাপ্টা বললে সিনেমার ফ্রেমিং , মন্তাজ , শব্দ , রংয়ের ব্যবহার এবং অবশ্যই গোটা সিনেমার প্রেক্ষাপট ও তৎজনিত বাস্তবতা । দুই একটা কথা বলি ।

ক্যামেরা:

এখানে অসাধারন কিছু হ্যান্ডহেল্ড শট আছে । এবং বেশ কিছু দীর্ঘ দৈর্ঘ্যের শট আছে যা অনেক ট্রিকি এবং নান্দনিক (MISE-EN-SCENE)।এই ধরনের শট সার্থকভাবে নেয়া পরিচালকের অনেক বড় কৃতিত্ব।

কিছু কাল্পনিক দৃশ্য এবং তার রূপায়ন চমৎকার।

মন্তাজ :

যখন পাশাপাশি দুটো সম্পর্কহীন শট অথবা একই শটের আপাত: সম্পর্কহীন দুটো অংশ একটি তৃতীয় অর্থের তৈরী করে তা মন্তাজ। এর জন্য দরকার কল্পনা । (উদাহরন - চার্লি চাপলিনের Modern Times এর প্রথম সিনে পাশাপাশি একদল ভেড়া ও মানুষের দলের শট)।

http://www.youtube.com/watch?v=a0XjRivGfiw

এই ছবিতেও আমরা চমৎকার কিছু মন্তাজ দেখি।
১। রুবা লুকিয়ে রুটি খাবার সময় সেই ফ্রেমেই একটা কুকুরের খাওয়া আমাদের বুঝায় রুবার অসহায়তা - তার জীবন কুকুরের চেয়ে ভালো কিছু না।

২। যখন মন্টু জেল থেকে বের হয়ে অনেকদিন পর শুতে যায় তখন হঠাৎ আমরা রুবার ছবির জায়গায় একটি পুতুল দেখি রুবার মতো । রুবার শরীরটা শুধু মন্টুর কাছে এটা বুঝানোর জন্য এর চেয়ে ভালো মন্তাজ আর কী হতে পারে?

৩। রুবা ও মন্টুর ডিভোর্স হয়ে যাবে । মন্টুর সেটা একেবারেই ইচ্ছা না । তারা সাতদিন সময় নেয় এডজাস্টমেন্ট হয় কীনা দেখার জন্য। এসময় একটা ইমেজ দেখানো হয়।

মন্টু হাঁটছে,খুব জোরে হাঁটছে । সরে যাচ্ছে তার আশেপাশের গাছপালা - রাস্তা সব । মন্টু জোরে হাঁটছে । রাস্তা গাছপালা আরো জোরে সরে যাচ্ছে । মন্টু একটা বিন্দু হয়ে যাচ্ছে - হারিয়ে যাচ্ছে - তার ইচ্ছা থেকে - জীবন থেকে।
অসাধারন ! চমৎকার মন্তাজ। আর কিছু লাগে না ।

আরও অনেক কথা বলা যায়। সেগুলো বেশী টেকনিক্যাল হবে এবং কমেন্ট আরো বড় হয়ে যাবে তাই লিখছি না।

আর সিনেমাটার সামাজিক ও বিষয়গত দিক নিয়ে একটা লিখা লিখসিলাম । সেটার লিংক দিচ্ছি।
জানি না অন্য ব্লগের লিংক দেয়া ভ্যালিড কীনা । না হলে ডিলিট করে দেবেন।

http://www.somewhereinblog.net/blog/shuvro05/29073000

যেই কথাটা বলার জন্য এই কমেন্ট সেটা হলো - সিনেমা নিয়ে লেখার আগে আসুন আমরা সিনেমা নিয়ে পড়াশোনা করি - এটা কী তা জানার চেষ্টা করি - তারপর লিখি । আর কমেন্ট করার সময়ও একটু সচেতন হই । কারন , আপনাকে যারা পছন্দ করেন এবং যারা সিনেমাটা দেখেননি ,আপনার একটা ভুল কমেন্ট একটা সিনেমার ব্যাপারে তাদের মনে ভুল ধারনা তৈরী করবে - এই কথাটা সব সিনেমার লেখার কমেন্টের ব্যাপারে প্রযোজ্য।

নারদ মুনি

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

স্টার সিনেপ্লেক্স, বলাকারা একটা কাজ করতে পারে, টিকিট বেচার আগে দেখে নিতে পারে ক্রেতার কোনো ফিল্ম এপ্রিসিয়েশন কোর্স করা আছে কী না।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- কিংবা সিনেমা শুরু হওয়ার আগে ফারুকীর একটা ডেমনস্ট্রেশন। মিনিমাম দশ মিনিটের, নারদ মুনি স্টাইলে।
অনেকটা প্লেনে উঠে বসার পর প্লেন পানিতে পড়ে গেলে ডুবে যাওয়ার আগে কেমনে হাত তুলে টাটা দিবেন, সেটা যেভাবে দেখানো হয়!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ফারুকী নিজে ঘোষণা দিছে এটা আর্ট ফিল্ম না, হার্ট ফিল্ম। অথচ এখন নারদ মুনিদের কথা শুনে মনে হইতেছে এই ছবি দেখতে বা এটা নিয়ে কথা বলার আগে আর্ট ফিল্ম তো আর্ট... এক্কেবারে ফিল্মবিদ হইতে হইবো।

এইজন্যই ছবিটা বুঝি নাই কিছু, না বুইঝাই চইলা আইতে হইলো। আগে জানলে একটু পড়াশোনা কইরা যাইতাম ফিল্ম বিষয়ে। তাইলে মনে হয় পুরাটা দেখতে যোগ্যতা হইতো
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নারদ মুনি [অতিথি] এর ছবি

আপনাদের কথা শুনে খুব ভালো লাগলো। সিনেমা দেখার জন্য পড়াশোনা করতে হবে তা বলি নাই। আমি বলসি যখন আপনি কোনো বিষয়ে লিখতে যাবেন তখন সেটা নিয়ে পড়াশোনা করা উচিত । সবাইকে লিখতে হবে সিনেমা নিয়ে এমন কোনো কথা নাই। যে যেটা বোঝো সেটা নিয়ে লিখুক। আর্ট ফিল্ম হার্ট ফিল্ম কোনো বিষয় না - ফিল্মটা কতটা সার্থক ,কতটা ফিল্ম এটাই ব্যাপার। আপনার নিন্দায় আনন্দিত। হাসি

আমরা বাঙ্গালীরা কখনোই আগে থেকে নিজেদের কাজকে ভালো বলি না। বিশ্ববাসী সার্টিফিকেট দিলে আমরাও গুনগান শুরু করি। এটা নতুন কিছু না ।

পপি - ময়ূরীর নাচে,বৃষ্টিতে ভেজায় আমাদের আপত্তি ছিলো না - আপত্তি এই নতুন কিছু করার চেষ্টাতে। আমিও বলি আপনাদের সাথে - ইহা খুবই বাজে,কর্দমাক্ত,নোংরা একটি সিনেমা - এবং
যতদিন পর্যন্ত আমরা ৪৫-৪৬ লক্ষ টাকায় একখানা এ্যভাটার বা থ্রি ইডিটয়স বা তার কপি বানাতে না পারব ততদিন বাংলা সিনেমার সব চেষ্টা ভুয়া - সব বাংলা সিনেমা ভুয়া - পরিচালকরা বস্তির সন্তান।

ভালো থাকবেন।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আগে বলবেন না যে সারয়ার ফারুকীর সিনেমা দেখে কিছু বলা নিষেধ? মুখ বুজে থাকতে হবে? এটা আগে বললেই পারেন, অথবা বলবেন সিনেমার টাইটেলে বড় করে লিখে দিতে যে "এই সিনেমা চোখ বুজে দেখে মুখ বুজে থাকতে হবে" দর্শকের এই সিনেমা নিয়ে কথা বলা নিষেধ!

ব্যাচেলর দেখে একটা পত্রিকায় লিখছিলাম দুকথা। সেটা পড়ে পরিচালকের এক পাণ্ডা সহকারী পত্রিকা অফিসে ফোন করে জিগাইছিলো এইটা কোন নজরুল ইসলাম? পরিচয় জানানোর পরে তো আমি ডরে ছিলাম মাইর মুইর দেয় কী না? দেয় নাই। দেঁতো হাসি
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

না-রদ না-রদ

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

পপি - ময়ূরীর নাচে,বৃষ্টিতে ভেজায় আমাদের আপত্তি ছিলো না - আপত্তি এই নতুন কিছু করার চেষ্টাতে। আমিও বলি আপনাদের সাথে - ইহা খুবই বাজে,কর্দমাক্ত,নোংরা একটি সিনেমা - এবং
যতদিন পর্যন্ত আমরা ৪৫-৪৬ লক্ষ টাকায় একখানা এ্যভাটার বা থ্রি ইডিটয়স বা তার কপি বানাতে না পারব ততদিন বাংলা সিনেমার সব চেষ্টা ভুয়া - সব বাংলা সিনেমা ভুয়া - পরিচালকরা বস্তির সন্তান

মন্তব্যটা ঠিক শালীন মনে হচ্ছে না। সিনেমা নিয়ে আপনার মত বিস্তৃত পড়াশোনা হয়ত নেই, কিন্তু 'শ্রাবণ মেঘের দিন' চলচ্চিত্রের জন্যে পরিচালককে হাততালি এবং 'দশ নম্বর(নাকি নয় নম্বর ??) মহাবিপদ সঙ্কেত' চলচ্চিত্রের জন্যে ঐ একই পরিচালককে কটুবাক্য প্রদানে আমি পিছপা হবো না...।

_________________________________________

সেরিওজা

হিমু এর ছবি

এখানে একটু সমস্যা আছে। পপিময়ূরীদের সিনেমাগুলোর টার্গেট অডিয়েন্স বোধহয় "আমরা" না। সেগুলোর নির্মাতারা সিনেমা বানান নিম্নবিত্তকে সস্তায় বিনোদন যোগানোর জন্যে। সিনেমার ভাষা নিয়ে তারা একদমই ভাবিত না। তবে তাদের সিনেমারও নিজস্ব ভাষা আছে, তাদের দর্শক সেটা বোঝে। এই নির্মাতারা তাদের সিনেমার প্রচারের জন্যে এখনও পোস্টার আর রেডিওর ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। এরা কিয়োরোস্তামি নিয়ে কথা বলে না, টিভি পর্দায় এসে বাংলা সিনেমার ত্রাতা সেজে কথাও বলে না। এরা চুপচাপ গরীব লোককে সস্তায় কিছু মোটা মেয়ের নাচ দেখিয়ে টাকা রোজগার করছে। সিনেমা উচ্ছন্নে গেলো কি না তা নিয়েও তারা ভাবিত না। পপিময়ূরীর সিনেমা আমরা তেমন দেখি না বলে তাদের নিয়ে আমরা কখনও লেখার প্রয়োজনও বোধ করি না।

কিন্তু একজন ফারুকী যখন এসে লম্বা লম্বা কথা বলেন, কিয়োরোস্তামির নাম বলেন, তখন আমাদের মতো সিনেমার-ভাষা-না-জানা মানুষের মনে নানারকম আশার সঞ্চার হয়। আমরা আকাশজুড়ে শুনিনু, ঐ বাজে, ঐ বাজে! এই বুঝি এসে পড়লো আমাদের সত্যজিৎ, আমাদের গদার, আমাদের বেরতোলুচ্চি! পরে সিনেমা দেখে আমরা হতাশ হই। দেখি, কীসের কী, যে লাউ সে কদু।

আপনি যে কয়েকটি দৃশ্যের কথা বললেন, সেগুলোর সমালোচনা করা আমার উদ্দেশ্য নয়, যেহেতু আমি সিনেমাটি দেখিনি। তবে ফারুকীর আগের দুয়েকটা কাজ দেখেছি, এবং টেলিভিশনের পর্দায় আর কাগজে তার বিভিন্ন বাকতাল্লা পড়েছি। আমার কাছে তারপর তার নাটক সিনেমা দেখে মনে হয়েছে, রাস্তার ক্যানভাসার যেমন তার মার্কা লাগানো ১ নং শিকড় বাকড় খেলে ডাইনোসরকেও গর্ভবতী করে ফেলার মতো পুরুষকারের আশ্বাস দিতে পিছপা হয়না, ফারুকীর কথাবার্তাও সেরকম। তিনি তার সিনেমা নিয়ে শুরুতে বেশ অভিনব বিজ্ঞাপন করেছেন [বিজ্ঞাপন নির্মাণে ফারুকী খারাপ না, আমার ধারণা তিনি সিনেমা নির্মাণ করেন এই বিজ্ঞাপননির্মাণ ব্যবসায় কনুই মেরে জায়গা করার জন্যেই], সেগুলি চটকদার ছিলো, কিন্তু তার পণ্যের মানকে সেগুলিই বরং অতিক্রম করে গেছে।

আপনি যদি আলমগীর কবির বা সালাহউদ্দিন জাকি বা তারেক মাসুদের দিকে তাকান, দেখবেন তাঁরা কথা কম বলেন বা বলতেন, কাজ বেশি করেন বা করতেন। ফারুকী একটি দু'বার দেখার মতো সিনেমা নির্মাণ করলে আমি খুশিই হবো, তাঁকে স্বাগত জানাবো, নিজের ভালো লাগার কথা জানাবো। কিন্তু তাঁর সিনেমা দেখে ভালো না লাগলে কয়েকটি শটকে সিনেমার ব্যাকরণের পৈতা লাগিয়ে পার করে দেয়ার পক্ষপাতী আমি নই। সিনেমা শুধু অনেকগুলো শটের মধ্যে কয়েকটা শট নয়, সমস্তটুকু নিয়েই সে সিনেমা।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

যেই কথাটা বলার জন্য এই কমেন্ট সেটা হলো - সিনেমা নিয়ে লেখার আগে আসুন আমরা সিনেমা নিয়ে পড়াশোনা করি - এটা কী তা জানার চেষ্টা করি - তারপর লিখি । আর কমেন্ট করার সময়ও একটু সচেতন হই ।
উপরে হিমুর মন্তব্যে লেখকের সিভি আছে। একটু কষ্ট করে দেখে নিলে কোট করা বাক্যগুলো হয়তো আপনি লিখতেন না।

নাশতারান এর ছবি

নারদ মুনি,
ছবিটি দেখে আমার জানাশোনা আর দশজনের মত বিবমিসা আমার হয়নি। তবে খুব উচ্চমার্গীয় কোন শিল্পখন্ডও মনে হয়নি। আপনার দেয়া লিঙ্কটা দেখলাম। লিভ টুগেদার বিষয়ে আপনার বিশ্লেষণের সাথে আমি সহমত। রুবার স্বপ্নদৃশ্যের চিত্রায়নও সুন্দর হয়েছে। রুবার চিন্তার টানাপোড়েনকে শৈশব, কৈশোর আর যৌবনে বিভক্ত করে দেখানোর কনসেপ্টটাও দারুণ। জানিনা এটা ফারুকীর মৌলিক কন্সেপ্ট কীনা।
তারপরেও চলচ্চিত্র হিসেবে আহামরি কিছু বলতে পারছি না একে। আমি এমন কিছু চলচ্চিত্র বোদ্ধা নই। হয়তো আমার রুচিও খারাপ। সেটা বিবেচ্য নয়। আমার ভালো লাগলে বলব, না লাগলেও বলব।
ক্যামেরার কাজ বাজে মনে হয়েছে। আগেও বলেছি, মনে হয়েছে ফারুকী হ্যান্ডিক্যাম নিয়ে ছুটে ছুটে শ্যুট করেছেন। ঘোরানো সিঁড়ি দিয়ে রুবা নেমে আসছে এমন একটা দৃশ্য আছে। দৃশ্যটি অমসৃণ এবং ক্লান্তিকর।
রুবা যখন আবুল হায়াতের (চরিত্রটির নাম মনে নেই) বাসা ভাড়া চাইতে গেলো, চাচামিয়া ঠায় চেয়ে ছিলেন রুবার বুকের দিকে। ক্যামেরা যে হারে নড়াচড়া করছিলো, বুঝতে পারছিলাম না ক্যামেরাম্যান কি এক হাতে ক্যামেরা সামলে আরেক হাতে পিঠ চুলকাচ্ছিলেন কীনা।

আর একটা কথা। আপনার মন্তব্যের সুরে মনে হচ্ছে আপনি এই পোস্টের লেখক যথেষ্ট জ্ঞানগম্যি ছাড়াই (!) আস্ত একটা সমালোচনা লিখে বসলেন দেখে আপনি বেশ নাখোশ। লেখকের যোগ্যতার প্রমাণ না দিয়েই বলি একটা মুভি ভালো লাগল কী লাগল না তা তার ভিত্তিতে যে কেউ সমালোচনা করতে পারেন। আপনার আক্রমনাত্মক ভঙ্গিটি আমি সুনজরে দেখছি না।

ফারুকী একজন চলচ্চিত্র ব্যবসায়ী। আমরা তার ভোক্তা। তিনি "কিয়োরোস্তামি"র মূলো ঝুলিয়ে আমাদের "থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার" খাওয়ালে তাকে গালি খেতেই হবে।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

বোহেমিয়ান এর ছবি

চমৎকার কমেন্ট ।
চলুক
আমি মুভিটা দেখি নি , তবে সিনেপ্লেক্স এ টাকা খরচ করার মত মুভি উনি বানান বলে মনে হয় না । যা দেখার ছোট পর্দায় ই দেখি ।
চড়ুইভাতি দেখার পর ফারুকী রে আর ভালো লাগে নাই । মেইড ইন বাংলাদেশ , ব্যাচেলর কে আমার টেলিফিল্ম মনে হইছে , ফিল্ম না । (আমি কিন্তু ফিল্ম এর ডেফিনিশন দিতে পারব না , একটা রুমের মধ্যে ১২ জন লোকের বাক্যালাপ ও আমার কাছে ফিল্ম মনে হইছে, আগুনের পরশমণি মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মিত আমার প্রিয় ফিল্ম , কিন্তু ফারুকীর ভিডিও গ্রাফিকে ফিল্ম বলতে নারাজ )

রিভিউ ভালো লাগছে ।
আপনাকে সচলে স্বাগতম ।
__________________________
হৃদয় আমার সুকান্তময়
আচরণে নাজরুলিক !
নাম বলি বোহেমিয়ান
অদ্ভুতুড়ে ভাবগতিক !

_________________________________________
ওরে! কত কথা বলে রে!

নারদ মুনি [অতিথি] এর ছবি

আপনার কথাগুলো ভালো লাগলো । একটা বিষয়ে একমত না । আমি খুবই গোবেচারা মানুষ । কাউকে আক্রমন করার কোনো শক্তি নাই । তবে এটা আমি জানি একজন মানুষের ব্যক্তিগত ভালো লাগা না লাগা একটা মুভির সমালোচনা হতে পারে না । একটা গনিত করবার কৌশল আপনার কাছে ভালো না লাগতে পারে কিন্তু সেই কৌশল বা টেকনিকটিকে বাজে বলা সমালোচনা না - সেটা আসলেই সঠিক না ভুল - সঠিক হলে কেনো সঠিক - ভুল হলে কেনো ভুল ,নিরপেক্ষ যুক্তি সহকারে তা দেখানোই সমালোচনা।

আর একটা মজার কথা বলি। ক্যামেরা Shake এর ব্যাপারে আপনি যেটা বলতে চেয়েছেন সেটা ইচ্ছাকৃতভাবে করা । 35mm ক্যামেরা Tripod এ mount করা থাকলে তা না কোনোভাবেই কাঁপবে না। এটা একটা জনপ্রিয় টেকনিক । এটা Handheld শট বা হাতে ক্যামের নিয়ে নেয়া শট।এটা করা হয় শটকে আরও বেশী প্রাকৃতিক করার জন্য। Camera Shake এই শটের একটা বৈশিষ্ট্য।

চেনা উদাহরন দিচ্ছি - 'Saving Private Ryan' এ যুদ্ধের দৃশ্য এবং বর্তমানের 'Heart Locker' এর প্রায় পুরোটাই। এদের ক্যামেরাম্যান নিয়ে নিশ্চয়ই আপনার সন্দেহ নেই ।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- গণিতের ব্যাপার টেনে যে উদাহরণ দিলেন সেটায় হাসবো না কাঁদবো ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না। ঐকিক নিয়মের গণিত যদি আপনি সুদকষার নিয়মে করে মিলিয়ে দিয়ে বলেন এটাই নতুনত্ব, তাইলে তো ভাই মহাপিরোবলেম! এখন হয়তো আপনি উদাহরণ দিবেন ব্রাজিলের বিগ ফিলের। বলবেন, "গোল হওয়াটাই বড় কথা, কেমনে হলো সেটা মোটেও বড় কথা না!"

আশাকরি বলবেন না এমন কথা। কারণ, ইতোমধ্যেই ফারুকীর নামের শেষে তাঁর ভাই-বেরাদররা যেসব যশটশ টেনে আনছেন, সেগুলো উচ্চারণ করতেই আলহা-জিহ্বার অবস্থা কাহিল।

আচ্ছা ভাই নারদ মুনি, আপনি আবার কোনো ভাবে ফারুকীর সাহেবের ভাই-বেরাদর গোছের কেউ নন তো! ইচ্ছাকৃত ক্যামেরা শেকিং নিয়ে যা বললেন, তারপর থেকে কেমন জানি সন্দেহ হচ্ছে! ফারুকীর ভাই বেরাদর না হলে তিনি ক্যামেরা কি জেনে বুঝেই শেইক করিয়েছেন নাকি পিঠ চুলকাতে গিয়ে করিয়েছেন, সেটা এতো কনফিডেন্টলি বলা মুশকিল!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

নারদ সাহেব ফারুকীর বেরাদর। আলবৎ।

ফারুকী মনে হয় বেলুচি অভিনীত ইর্‌রিভার্সিবল সিনেমা দেখে কাঁপাইতে শিখছেন। এই সিনেমা্র সাথে ফারুকীর জ্ঞানগম্যির মিল আছে। আর উনি কথায় কথায় কিয়ারোস্তামিকে ডেকে আনেন কেনু কেনু কেনু?

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

উনি কথায় কথায় কিয়ারোস্তামিকে ডেকে আনেন কেনু কেনু কেনু?

সম্ভবত উনি মনে করছেন আব্বাস কিয়ারোস্তামি বায়েজীদ বোস্তামির ভাই টাই কেউ হবে।

ফারুকী মনে হয় বেলুচি অভিনীত ইর্‌রিভার্সিবল সিনেমা দেখে কাঁপাইতে শিখছেন।

একটা ইররিভার্সিবলই বানাইতো নাহয়... চোখ টিপি
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নারদ মুনি [অতিথি] এর ছবি

আপনাদের কথা শুনে খুব খারাপ লাগলো । ভালো থাকেন সবাই । আমি শুভ । বুয়েটে ফাইনাল ইয়ার এ পড়ছি । ফারুকী বা তার চৌদ্দ গুষ্টি আমার কেউ লাগে না এবং ফারুকীর এর আগের একটা কাজও আমার মুভি মনে হয় নি (মেড ইন বাংলাদেশ,চড়ুই ভাতি,ব্যাচেলর)। এটা দেখে আমার সীমিত পড়াশোনায় যা মনে হইসে সেটা বুঝানোর চেষ্টা করসি । নারদ মুনি আর ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াতে যাবে না । ব্লগিং করতে এসেই ভালো একটা অভিজ্ঞতা হলো । আমি কারো স্তুতি পছন্দ করি না,তা উনি যত বড়ই হোন। ভাবসিলাম সবাই এই অভিজাত ব্লগে যাই বলুক যুক্তি দিয়ে বলবে । আমি আসলেই লজ্জিত । আপনাদের সবার কাছে ।

নারদ মুনি

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

শুভ,
আপনার খারাপ লাগার জন্য দুঃখিত। আপনিও ভালো থাকুন। ফারুকী আপনার কিছুই লাগেনা জানলাম। কিন্তু আমার লাগে। ফারুকী যখন থেকে নাটক বানানো শুরু করছে ৯৮ তে, সেই ভোকাট্টা থেকেই তার সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক। এখনো। তার কঠোর সমালোচনা পত্রিকায় লেখার পরের সপ্তাহেই আমি তার অফিসের ছাদে বইসা আড্ডা দিতে পারছি পুরা সন্ধ্যা। তাতে তার সঙ্গে আমার সম্পর্কের অবনতি হয় না।

এখানে পোস্টটা সিনেমার রিভিউ। যিনি লিখেছেন, তিনি যে আপনার চেয়ে বেশি অন্তত ফিল্ম বোঝেন, অন্তত পড়ালেখার দিক দিয়ে, তা আপনার বোঝা উচিত ছিলো। আমরা যারা বলছি, তারা কেউ এখানে সমালোচনা করি নাই। একটা সমালোচনার প্রেক্ষিতে আমাদের নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করছি। আমি যদি এই সিনেমাটা নিয়ে রিভিউ লিখি কোথাও [সে আশা নাই], তাহলে নিশ্চয়ই আমি এই ভাষায় কথা বলবো না। সমালোচনার ভাষা আমার সম্ভবত জানা আছে।

আপনি প্রথমেই এখানকার সবাইকে অপমান করেছেন, এটা অন্যায়। একটা জায়গায় লিখতে হলে আগে সেখানকার মানুষগুলো কে কী তা বোঝার চেষ্টা করুন। না জেনে কারো সম্পর্কে কথা বলা ঠিক না। বেঠিক কথা বললে সে অভিজ্ঞতা ভালো হওয়ার কোনো কারণ নাই। আপনার ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে। যুক্তি দিয়ে কথা শুনতে হলে আগে নিজে যুক্তি দিয়ে কথা শুরু করুন। এখানে সবাই ফিল্ম মূর্খ্য সেই ঢিল ছোঁড়ার আগে পাটকেলটার কথা বিবেচনা করুন। ধন্যবাদ। আপনার কাছ থেকে ভালো সিনেমার ভালো রিভিউ পড়ার আগ্রহ রইলো।

বাংলা সিনেমার দূর্দশাকালে অবশ্যই ভালো সিনেমার চেষ্টাকে আমরা স্বাগত জানাবো। কিন্তু তার মানে এটা না যে সবকিছুকেই আমি প্রশংসার জোয়াড়ে ভাসিয়ে দিবো। পিঠ চাপড়ানি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরিচালকের ক্ষতিই করে। ফারুকীর ক্ষতি করছে তার ভাই বেরাদর শ্রেণীর কিছু লোক। কোনো মেধাবী মানুষকে ধ্বংসের জন্য তার একটা অনুগত চ্যালাদলই যথেষ্ট। হুমায়ুন আহমেদের বর্তমান খোলসটা দেখেন... বুঝবেন।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

শুভ,

আপ্নের দিলে চোটাইলে সরি। আপ্নে আর কাম পান নাই- মন্তাজের সংজ্ঞা খাটাইছেন ফারুকীর উপ্রে। সোহানুর রহমান সোহানের উপ্রে খাটাইলেও কেউ কিছু কইত না।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত যে চলচ্চিত্র বিশ্লেষকের অবশ্যই চলচ্চিত্র বিষয়ে ব্যাপক অ্যাকাডেমিক লেখাপড়া থাকতে হবে, এবং 'চলচ্চিত্র ভাষা' বা 'ক্যামেরা ভাষা' বিষয়টি সম্পর্কে তাঁর সুস্পষ্ট ধারণা থাকা বলতে গেলে বাধ্যতামূলক। আমি যেহেতু এই বিষয়টি গভীর গুরুত্বের সাথে মেনে চলি, তাই এই দিকটি পরিপূর্ণভাবে মাথায় রেখেই আমি একটি চলচ্চিত্র বিশ্লেষণ করি। এই লেখাটির ক্ষেত্রেও বলাবাহুল্য এই দিকটিকে গুরুত্ব দিতে আমার ভুল হয়নি।

এই রিভিউটিতে আমি বলেছি যে ক্যামেরার সুচিন্তিত ব্যবহার ছবিতে দেখা গিয়েছে কমই। এই কথাটি আমি অত্যন্ত সচেতনভাবে বলেছি কারণ চলচ্চিত্র ভাষার বিশদ বিশ্লেষণ করলে ফারুকীর এই ছবি খুবই অনাকর্ষণীয় ও সাদামাটা। চলচ্চিত্র বিষয়ে যথাযথ জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি মাত্রই জানেন, চলচ্চিত্র ভাষাকে আমাদের তখনই প্রশংসা করতে হয় যখন ক্যামেরার মাধ্যমে অত্যন্ত সুচিন্তিত, গভীরভাবে সৃষ্টিশীল, বুদ্ধিদীপ্ত, গভীর দ্যোতনাময় এবং আগে-কখনো-দেখানো হয়নি এমনভাবে একটি খুবই অর্থবোধক দৃশ্য তৈরি করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন প্রথিতযশা চলচ্চিত্রকারদের কাজে এধরনের অনেক দৃশ্য আছে, যা প্রকৃত ও উৎকৃষ্ট 'চলচ্চিত্র ভাষা' বুঝতে আমাদের সাহায্য করে। ফারুকীর ছবিতে চলচ্চিত্র ভাষার ব্যবহারকেও আমাদের এই মাপকাঠিতে বিচার করেই বুঝতে হবে।

আপনি কুকুরের দৃশ্যটি, মন্টুর বিন্দু হয়ে যাওয়ার দৃশ্য এবং রুবার মতো পুতুলের দৃশ্যগুলিকে চমৎকার মন্টাজ দৃশ্য হিসেবে বর্ণনা করেছেন, কিন্তু এই দৃশ্যগুলি কী আসলেই মনে-দাগ-কাটার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী? এবং এই দৃশ্যগুলি কী গভীর কিছু অর্থ অত্যন্ত সুচিন্তিতভাবে এবং অভিঘাতের সাথে আমাদের সামনে তুলে ধরছে? আমরা যখন চলচ্চিত্র-ভাষার প্রেক্ষিতে একজন পরিচালকের কাজের বিচার করবো তখন অনেক বিস্তৃত এবং গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠিতেই কিন্তু সেই বিচার করতে হবে; এমন বললে চলবে না যে সত্যজিৎ রায় বা ইয়াসুজিরো ওজু'র সাথে কী আর ফারুকীর কাজের তুলনা চলে? কারণ আমরা জানি চলচ্চিত্র বুঝতে হলে সবাইকে এর বিভিন্ন দিক বুঝতে হবে, এবং এই 'সবাই' এর মধ্যে চলচ্চিত্রকার নিজেও অন্তর্ভূক্ত।

সত্যজিৎ রায় এর 'কলকাতা ট্রিলজি' র তিনটি ছবিতে (প্রতিদ্বন্দ্বী, সীমাবদ্ধ, জন অরণ্য) বলতে গেলে প্রতিটি দৃশ্যেই আছে অসাধারণ চলচ্চিত্র ভাষার ব্যবহার। চলচ্চিত্র ভাষার আলোচনা করতে গিয়ে আপনি মন্টাজ, মিসঅনসেন এর কথা বলেছেন। কিন্তু এ তো কেবল সচরাচর ব্যবহার করা শব্দ, কিন্তু এই মন্টাজ, মিসঅনসেন তৈরি হচ্ছে যেসব ধারণার মধ্য দিয়ে যেমন -- সিগনিফায়ার, সিগনিফায়েড, ডেনোটেটিভ মিনিং, কনোটেটিভ মিনিং, আইকন, ইনডেক্স, সিম্বল, মেটোনিমী, সিনেকডাকি, ট্রোপ চলচ্চিত্র ভাষার এই অতি প্রয়োজনীয় দিকগুলি যা সেমিওলজির ধারণা থেকে এসেছে, আবার একই সাথে ফ্রয়েডীয় মনোসমীক্ষণগত চলচ্চিত্র তত্ত্বের নানা দিকগুলির অসাধারণ, অবাক করে দেয়ার মতো বুদ্ধিদীপ্ত ব্যবহার বার বার উঠে এসেছে এই ছবিগুলিতে যা আমাদের একই সাথে মুগ্ধ ও বিস্মিত করে। বলা যায় মৃণাল সেন এর 'কলকাতা ট্রিলজি'র (ইন্টারভিউ, কলকাতা ৭১, পদাতিক) অসাধারণ চলচ্চিত্র ভাষার কথা; তাঁর 'আকালের সন্ধানে' এবং 'ভূবন সোম' এর কথা। মৃণাল সেন চলচ্চিত্র ভাষা নিয়ে যেভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন তেমন তো আর অন্য কোন ভারতীয় চলচ্চিত্রকার করেননি। ঋত্বিক ঘটক এর 'সুবর্ণরেখা' আর 'যুক্তি তক্কো আর গপ্পো'র চলচ্চিত্র ভাষার ব্যবহারে কুলেশভ এফেক্ট কী চোখে পড়ে না? আইজেনস্টাইন, ক্র্যাকার, মেটজ্, জঁ মিত্রি, আন্দ্রে বাঁজাঁ এদের তত্ত্বের প্রয়োগ এই ছবিগুলিতে আছে কী নেই তা নিয়ে আমার অনেক বড় গবেষণা করতে ইচ্ছে করে। জঁ লুক গদারের ছবির চলচ্চিত্র ভাষা নিয়ে আর কীই বা বলার আছে। চলচ্চিত্র ব্যাকরণ আর সেই ব্যাকরণ ভাঙ্গা বুঝতে হলে দেখতে হয় গদারের ছবি। চলচ্চিত্র ভাষার অসাধারণ প্রয়োগ আমরা দেখি ত্রুফো, রেনে, রোমার, রিভেত, শ্যাব্রলের ছবিতে।

মনে পড়ে ফেলিনির 'লা ডলসে ভিটা' তে যীশুমূর্তির হেলিকপ্টারে বাঁধা অবস্থায় উড়ে যাবার দৃশ্য? আপনি ছবিতে শব্দের কথা বলেছেন, খেয়াল করে দেখুন ওসমান সেম্বেনের ছবিতে শব্দহীনতা কীভাবে অর্খ তৈরি করেছে, কুরোশাওয়ার 'রশোমন' এ জঙ্গলের ভেতর শব্দ কীভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, 'প্রতিদ্বন্দ্বী' তে সত্যজিৎ রায় জুতোর শব্দকে কীভাবে ব্যবহার করেছেন। রঙ এর ব্যবহারের নান্দনিকতা বোঝার জন্য দেখা যায় আনতোনিওনি'র 'ব্লো-আপ' বা 'রেড ডেসার্ট' বা হিচককের বিভিন্ন রঙীন ছবিগুলি আর রঙহীনতার নান্দনিকতা বোঝার জন্য দেখতে হয় পন্টেকর্ভোর 'ব্যাটল অফ আলজিয়ার্স' বা বুনুয়েলের 'লস অলভিদাদোস' এর মতো ছবি। চলচ্চিত্র ভাষায় আবহসঙ্গীতের মাধুর্য খেয়ালের জন্য আমরা দেখি স্করসেসী'র 'ট্যাক্সি ড্রাইভার', বার্নার্ড হারম্যান এর যে সঙ্গীত চলচ্চিত্র ভাষাকেও নির্মাণ করে। চিন্তা করে দেখুন ওজু, ফাসবিন্ডার, মিজোগুচি, কিয়ারোস্তামি, কিসলোভস্কি কিংবা স্যাম পেকিনপা'র প্রতিটি ছবিতে কীভাবে গভীর চিন্তাসমৃদ্ধ চলচ্চিত্র ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। ইংমার বার্গম্যান এর 'শেম', 'পারসোনা', 'হাওয়ার অফ দ্য উলফ্', 'স্মাইলস্ অফ এ সামার নাইট', 'সেভেন্থ সীল', 'দ্য সাইলেন্স' প্রতিটি ছবি নিয়েই চলচ্চিত্র ভাষার ওপরে দীর্ঘ ক্লাস নেয়া যেতে পারে। উল্লেখ করতে পারি সোলানাস আর গেটিনো'র ইতিহাস-সৃষ্টিকারী 'লা হোরা দো লস হরনোস' এর চলচ্চিত্র ভাষার কথা। রোমান পোলানস্কি'র 'নাইফ ইন দ্য ওয়াটার' বা 'রিপালশন' এর চলচ্চিত্র ভাষাও কী সহজে ভোলার মতো! বেরতোলুচ্চি বা আন্দ্রে ভাইদা'র ছবিগুলির চলচ্চিত্র ভাষা আর আরও পিছিয়ে গেলে রসেলিনি আর পাসোলিনি দেখিয়েছেন কীভাবে এই চলচ্চিত্র ভাষাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায়। আলিয়া'র 'দ্য লাস্ট সাপার'? আর মার্কিনী ইন্ডি পরিচালক জিম জারমুশ এর 'মিস্ট্রি ট্রেইন' বা 'ডেড ম্যান', আর যাদের কথা বলাই হলো না সেই রুশ পরিচালকরা? আইজেনস্টাইন, বা তারকোভস্কি? তাঁদের চলচ্চিত্র ভাষার কথা সবাই জানেন।

ফারুকীর এই ছবির চলচ্চিত্র ভাষাকে এতোক্ষণ যেসব পরিচালকের কথা লিখলাম তাদের কারো ছবির সাথেই কোনভাবে তুলনা করা যায় না। আর যখন উৎকৃষ্ট চলচ্চিত্র ভাষা বলতে আমরা কী বুঝি তার অনেক উদাহরণ আমাদের সামনে আছে তখন ফারুকীর এই ছবির কুকুরের দৃশ্যটি, বিন্দু হয়ে যাওয়ার দৃশ্য, ভিন্ন বয়সী রুবার পাশাপাশি বসে থাকার দৃশ্য, পুতুলের দৃশ্য সবই সেই উদাহরণগুলির সাথে তুলনায় অনেক সাদামাটা দেখায়। চলচ্চিত্র ভাষা নিয়ে প্রশংসা পেতে হলে যে কোন পরিচালককেই অনেক গভীর চিন্তাশীলতার প্রমাণ দিয়ে তা অর্জন করতে হবে। কারণ তাঁকে মনে রাখতে হবে এক্ষেত্রে তাকে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে খুবই সৃষ্টিশীল, মেধাবী মানুষদের সঙ্গে। অতি সহজে, দায়সারা ভাবে এখানে সফল হওয়া যায় না। বাংলাদেশের পরিচালক, অভিজ্ঞতা কম এসব বিষয়ও এখানে বিবেচনায় আসবে না। সত্যজিৎ রায় যখন অসাধারণ চলচ্চিত্র ভাষার মাধ্যমে 'পথের পাঁচালী' নির্মাণ করেন তখন তো তাঁর ছবি নির্মাণের পূর্ব-অভিজ্ঞতা ছিল না। তাঁর যা ছিল তা হলো চলচ্চিত্র বিষয়ে বিস্তর পড়ালেখা আর পান্ডিত্য আর এক গভীর সৃষ্টিশীল মন।

আপনি এই ছবিতে হ্যান্ড-হেল্ড শটের প্রশংসা করেছেন। কিন্তু শুরুতে এমন একটি হ্যান্ড-হেল্ড শট এই ছবির মূল চরিত্রের মানসিকতার সাথেই খাপ খায় না এমন দৃশ্যের সাথে দেখানো হয়েছে এবং সেই শটটি এই ধরনের শটের যে প্রভাব তা মোটেও তৈরি করতে পারে নি। পুরো ছবিতে যেই রুবাকে দেখা যায় খুবই সাহসী সেই রুবাই শুরুর দৃশ্যে রাস্তা দিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে চলে; সেই রুবাকে তার কিছু পরেই দেখা যায় একজন যুবকের সাথে এবং পুলিশদের সাথে সাহসের সাথে কথা বলছে। কাজেই শুরুর দৃশ্যটি পুরো ছবির সাথে খাপ খায় না। এধরনের ভুল একজন পরিচালকের নিজের ছবির ডিটেইল এর দিকে মনোযোগ কম থাকলে ঘটে, এবং তা তার ছবিকে সচেতন দর্শক ও বিশ্লেষকদের কাছে দুর্বল করে তোলে। আর এমন দৃ্শ্যে যেভাবে অত্যন্ত জোরে ঝাঁকুনি দিয়ে হ্যান্ড-হেল্ড শট ব্যবহার করা হয়েছে তা মোটেও সুচিন্তিত মনে হয় না, আর স্বাভাবিকভাবেই এমন দৃশ্যকে 'অসাধারণ' বলারও কোন যৌক্তিক কারণ থাকে না। সত্যজিৎ রায় এর 'প্রতিদ্বন্দ্বী', 'জন অরণ্য' আর পন্টেকরভো'র 'ব্যাটল অফ আলজিয়ার্স' ছবিগুলিতে হ্যান্ড-হেল্ড শটের প্রয়োগ দেখলে বোঝা যায় কীভাবে এই বিশেষ শটটি কোন্ দৃশ্যে দর্শককে বাস্তবতার ধারণা দিতে সক্ষম। গভীর চিন্তা ছাড়া আর অস্বাভাবিকভাবে এই শট ব্যবহার করলে তা কোন সুফল আনতে পারে না।

চলচ্চিত্র নিয়ে লেখার আগে চলচ্চিত্র নিয়ে পড়ালেখা করার কথা আপনি উল্লেখ করেছেন, আমি এজন্য আনন্দিত হয়েছি। আমি যখন বেশ ক'বছর আগে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়-এ ফিল্ম স্টাডিজে মাস্টার্স করছিলাম, তখন আমার সবচেয়ে আগ্রহ ছিল চলচ্চিত্র ভাষা ভালভাবে শেখার প্রতি। আমার সৌভাগ্য যে আমি প্রফেসর ডেভিড রডোউইক, লী গ্রিভসন, এড বাসকম্ব, মার্ক বেটজ্, কে ডিকিনসন এর মতো জাঁদরেল এবং পৃখিবীবিখ্যাত চলচ্চিত্র পন্ডিতদের আমার শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলাম, এবং তাঁরাই আমার ছাত্র হিসেবে করা কাজগুলি মূল্যায়ণ করেছেন। আমার মিসঅনসেন বিশ্লেষণ এর প্রশংসা সেখানে সরাসরিভাবেই করা হয়েছিল। চলচ্চিত্রে মাস্টার্স ডিগ্রী নিয়ে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিরে এসে আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম এ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের 'ফিল্ম সেন্স অ্যান্ড ক্রিটিসিজম' কোর্সটি পড়াতাম, তখন আমার ছাত্রছাত্রীদের আমি সবচেয়ে জোর দিয়ে পড়াতাম যে বিষয়টি তা হলো 'চলচ্চিত্র ভাষা'। কারণ আমি নিজেও মনে করি চলচ্চিত্র বুঝতে হলে এই বিষয়টি বোঝা খুবই জরুরি। আমি গত দেড় বছর হলো অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ে চলচ্চিত্র বিষয়ে উচ্চতর গবেষণা করছি, এবং আমার এই কাজ শেষ হবে ২০১২ সালে। বহু দেশের বহু সিরিয়াস চলচ্চিত্র নিয়ে আমাকে প্রতিনিয়ত কাজ করতে হচ্ছে। আর এই সব ছবির চলচ্চিত্র ভাষা বিশ্লেষণ আমার এই কাজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক।

আমি যদি 'থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার' ছবিটির চলচ্চিত্র ভাষা নিয়ে আমার লেখাটি লিখতে চাইতাম, তাহলে আমি কেবল তা নিয়েই লিখতাম। কিন্তু আমি লিখেছি ছবিটির একটি রিভিউ এবং রিভিউতে একটি ছবির সিনেমাটিক দিকের পাশাপাশি সামাজিক, রাজনৈতিক বক্তব্য প্রদানের দিকটিও আলোচনা করা হয়। আর যেহেতু এই ছবিতে চলচ্চিত্র ভাষা'র প্রয়োগ অত্যন্ত সাধারণ ও সাদামাটা, তাই তার প্রশংসা করাও সম্ভব হয়নি। আর কোন ছবিতে এতো হালকা বিনোদনমূলক উপাদান ব্যবহার করা হলে, সেই ছবির ভাল মান ক্ষুণ্ণ হয় স্বাভাবিকভাবেই। তখন দু'একটি ভাল দৃশ্যও আর কার্যকর অভিঘাত তৈরি করতে পারে না। এই ছবিটি কোন দিক দিয়েই গতানুগতিকের গন্ডী অতিক্রম করতে পারেনি। এটা কেবলই আরেকটি বাণিজ্যিক ছবি; আর বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য প্রধান হলে সুচিন্তিত চলচ্চিত্র ভাষার পরিবর্তে ছবিতে বহু দর্শককে-সহজে-আকৃষ্ট করার উপাদানসমূহই বেশি প্রাধান্য পাবে, এ আর আশ্চর্য কী। অথচ এমন একটি ছবিই আমাদের দেশে গণমাধ্যমে এতো গুরুত্ব পেলো। আমরা তাই দেখে ভাবলাম হয়তো ছবিটি ভিন্ন ধাঁচের কোন ছবি। আর সিনেমা হলে যেয়ে ছবির নানা গতানুগতিক বাণিজ্যিক উপাদান আর সাধারণ মান দেখে আমাদের বিস্মিত আর হতাশ হতে হলো। তাই আমাদের দেশে এমন একটি ছবিকে এতো বেশি গুরুত্ব দেয়ার এই চর্চাটির সমালোচনা করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। তৃতীয় বিশ্বের নানা দেশ সহ অন্যান্য আরো বহু দেশে যখন অসাধারণ চলচ্চিত্র ভাষা নির্ভর চলচ্চিত্র নিয়মিতভাবে তৈরি হচ্ছে, তখন বাংলাদেশে আমরা বক্তব্য ও নির্মাণশৈলীর বিচারে দুর্বল এধরনের একটি চলচ্চিত্র নিয়ে সন্তষ্ট ও উচ্ছ্বসিত হতে পারি না। কারণ আমাদের চলচ্চিত্র এবং সমাজ এর জন্য তা কোন ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে না।

আপনার মন্তব্যের জন্য আপনাকে আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

নাদির জুনাইদ
সহকারী অধ্যাপক
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

s-s এর ছবি

আপনার চমৎকার রিভিউটি মুগ্ধ করেছে, তার থেকেও বেশি এই উত্তরটি।
কারণ, অনেকদিন পর কারো লেখা থেকে আমি কিছু শিখতে পারলাম। লেখার ভঙ্গী খুবই আকর্ষক ও তত্ত্বতথ্য ভারে ন্যুব্জ নয়। খুব ভালো লেগেছে। বিনীত প্রশংসা ও অভিনন্দন।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার মন্তব্য পড়ে খুব ভালো লাগলো। তবে আমি পজিটিভ দিকগুলো ফোকাস করতে চেয়েছি শুধুমাত্র একটা কারনে যে আমরা যাতে একটা নতুন চেষ্টাকে Ignore না করি। শিল্পসম্মত দারুণ একটি ছবি তৈরী হওয়ার জন্য ভালো দর্শক তৈরী হওয়া জরুরী । আর সেটা না হওয়া পর্যন্ত আমরা একবারেই কোনো কালজয়ী ছবি আশা করতে পারি না। আর সেই প্রক্রিয়ার একটা ধাপ এই ছোট প্রচেষ্টাগুলোকে স্বাগত জানানো । এর পরেও মেধার একটা ব্যাপার থাকবেই । কেউ চাইলেই বা চেষ্টা করলেই সেভেন্থ সীল,রশোমন বা ব্যাটেলশিপ পটেমকিন বানাতে পারে না। সেটা ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতা। আশাকরি আপনি আমার কথা বুঝতে পারছেন।
ভালো থাকবেন।
একটা কথা - সত্যি মনতাজগুলো আপনার ভালো লাগে নি?

নারদ মুনি

অনন্ত [অতিথি] এর ছবি

অসাধারণ রিভিউ আর সাথে অসাধারণ জবাব! আপনাকে আশা করি নিয়মিত সচলায়তনে পাব।

===অনন্ত===

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

বাহ!

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

@নাদির জুনাইদ

আপনার বিশ্লেষণ ভাল। আপনাকে দুটা প্রশ্ন?

১। তাইওয়ানের নিউওয়েভ সিনেমার কোন কিছু কি আপনি দেখেছেন?
২। স্লাভো জিজেক সম্পর্কে আপনার ধারণা কি?

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার বিশ্লেষণ আপনার ভাল লেগেছে জেনে ভাল লাগলো। পূর্ব এশিয়ার ছবি নিয়ে আমার আগ্রহ তুলনামূলকভাবে কম। আমি বেশি পছন্দ করি দক্ষিণ এশিয়া, ল্যাটিন অ্যামেরিকা, আফ্রিকা ও ইউরোপের ছবি, এবং এই সব চলচ্চিত্র নিয়েই আমি বেশি কাজ করেছি। তবে হউ শাও শিয়ান এর কাজকে আমি খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। 'আ সিটি অফ স্যাডনেস', 'দ্য পাপেটমাস্টার' উঁচু মানের ছবি। 'দ্য ফ্লাইট অব দ্য রেড বেলুন' ও ভাল। এডওয়ার্ড ইয়াং এর দারুণ ছবি 'মাহজং' কে প্রথমে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়নি, কিন্তু যেই ছবিটি 'গোল্ডেন হর্স ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড' পেলো অমনি সেই ছবির গুরুত্ব বেড়ে গেল। তাইওয়ানের নিউ ওয়েভ নির্মাতাদের অনেক সমস্যা নিয়েই এগোতে হয়েছে। যেমন হয়েছে ভারতের নিউ ওয়েভ নির্মাতাদের। সবার তো আর গদার-ত্রুফোর মতো অনেক অগ্রসর দর্শক পাওয়ার সৌভাগ্য হয় না। 'আ ব্রাইটার সামার ডে' আর 'দ্য টেরোরাইজার্স' এর জন্য এতো প্রশংসা পাবার পর, ইয়াং কে অবশ্য 'ই ই' এর জন্য সমালোচনা শুনতে হচ্ছে। এমন অবস্থাও এই কনসিউমারিস্ট সময়ে আমাদের দেশে দেখা যাওয়া বিভিন্ন পরিস্থিতির কথা মনে করিয়ে দেয়। এখন 'চাকা' আর তৈরি হচ্ছে না; যেই 'চাকা' ফ্রান্সেও অনেক প্রশংসিত হয়েছে। বিদেশী দর্শকদের কোন বাংলাদেশী ছবি দেখাবার প্রয়োজন হলে যেই ছবিটি কিছুটা কনফিডেন্স নিয়ে দেখানো যায়। মনে হয় না 'প্রিয়তমেষু' ফ্রান্সে ব্যাপক প্রশংসা পাবে; অথচ 'চাকা'র মতো আরেকটি ছবি আর তৈরি হচ্ছে না। 'ই ই' অবশ্য কানে পুরষ্কার পেয়েছে; কিন্তু আমি এমিলি ইউহ-উ ইয়েহ এর কথাটি গুরুত্বপূর্ণ মনে করি; তিনি 'ক্রাউচিং টাইগার হিডেন ড্রাগন' এর স্টাইল এর সাথে এই ছবির খুব একটা পার্থক্য খুজেঁ পাননি। সাই মিঙ লিয়াং এর 'ভিভ লা'মু' আমাকে অনেক পূর্ব ইউরোপীয় ছবির কথা মনে করিয়ে দেয়, যে ধরনের ছবি আমার খুব পছন্দ।

জিজেক সম্পর্কে আমার ধারণা এককথায় বলতে গেলে আমি বলবো যে আমি তাঁর কাজ আগ্রহের সাথে পড়ি। সত্যিকার অর্থে বলতে গেলে আমি সব দার্শনিক আর তাত্ত্বিক এর কাজই গভীর আগ্রহের সাথে পড়ি, কারণ এরা কেউ হালকা কাজ করেননি, এদের সবার কাজই চিন্তাসমৃদ্ধ। আর সবার সিরিয়াস কাজই কোন না কোন ভাবে আকর্ষণীয়। কিছু ইংরেজি শব্দ আমার খুব প্রিয়, তার মধ্যে দুটি হলো 'সাব্লাইম' আর 'আইডিওলজি'। কাজেই জিজেকের কাজের প্রতি আমার আ্গ্রহ যে থাকবেই এটা খুব স্বাভাবিক। আমি মার্কসবাদ সমর্থন করি, খুব প্রয়োজনীয় তা মনে করি, যদিও আমি কখনোই কোন কিছু অন্ধভাবে সমর্থন করি না, মার্কসবাদও না। তবে পোস্টমর্ডানিস্টদের 'গ্র্যান্ড ন্যারেটিভ' বাতিল করার ক্ষেত্রে যেরককম কঠোর অবস্থান, আর সত্য-মিথ্যার আপেক্ষিকতা সংক্রান্ত যে বক্তব্য তার সাথে নিজেকে যুক্ত করার চেয়ে আমি গেলনার, গিডেন্স, হেবারমাস, উলরিখ বেক এর বক্তব্য শুনলেই স্বস্তি বোধ করি। আর এ কারণেই জিজেক এর বিভিন্ন বক্তব্যের প্রতিও আমার এক ধরনের গ্রহণযোগ্যতা আছে। জিজেক সম্পর্কে আমার ধারণা খুব অল্প কথায় দিলাম। আরো অনেক ধারণাই আছে, তবে এই মুহুর্তে আমি যে কাজ করছি তাতে করে জিজেক বিষযে আমাকে বেশি কাজ করতে হচ্ছে না। আমার কাজ জুড়ে এখন সবসময় আছে ফ্যানন, ক্যাবরাল, সেজার, সাইদ, ভাবা, অ্যাডোরনো, হোর্কহাইমার, মারকিউস, ব্রেখট্, বেনজামিন আর আরো অনেক পোস্টকলোনিয়াল আর সাবঅলটার্ন স্টাডিজ এর চিন্তাবিদরা, এবং অবশ্যই মার্কস। তবে খুব শীগগিরই হয়তো আরো দু'জনকে প্রয়োজন হবে, একজন হানা আরেন্ডট্, আর অন্যজন জিজেক। এই ভোগবাদী সময়ে রাজনৈতিক চলচ্চিত্রের প্রয়োজনীয়তা ও সাফল্যের সম্ভাবনা নিয়ে জিজেকের বক্তব্যে কোন কোন গোষ্ঠীর প্রতি ঝাঁঝ থাকারই কথা।

আপনার প্রশ্নগুলির জন্য ধন্যবাদ।

নাদির জুনাইদ

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

জুনাইদ ভাই,

আপনাকে হাচল হতে দেখলাম। সিনেমা নিয়ে লেখালেখি করুন এখানে।

হউ শাও শিয়ান 'আ সিটি অফ স্যাডনেস' নিয়ে একটা লেখা দাঁড় করছি। আমি ফিল্মফর্ম বা ফিল্মসেন্স নিয়ে যতোটা না ভাবি তারচে বেশি ভাবি পরিচালকের সৎ প্রকাশভঙ্গিকে। পূর্ব এশিয়ার পরিচালকদের আমার কেন জানি বেশি সত্যনিষ্ঠ মনে হয়। আপনাকে অনুরোধ করব এঁদের সিনেমার দিকে আগ্রহী হতে। অনেক আগে একটা লেখা আপ করেছিলাম লিয়াং-র ওপরে। পড়তে পারেন।

জিজেক নিয়ে একটা পোস্ট দেন। পড়ি।

পুনশ্চঃ আপনার এই মন্তব্য এতদিন পর দেখলাম।

নাদির জুনাইদ এর ছবি

শুভাশীষ দা,

আপনার উত্তর পেয়ে ভাল লাগলো। এক জাপানের বিভিন্ন ছবি ছাড়া পূর্ব এশিয়ার চলচ্চিত্র আমার তেমন দেখা হয়নি বলে আমার নিজেরও একটা অতৃপ্তি আছে। আগামী দিনগুলিতে অবশ্যই পূর্ব এশিয়ার অনেক ছবি দেখে ফেলতে হবে। বলতে গেলে আপনাকে সেদিন লেখার পর থেকেই তাইওয়ানের পরিচালকদের সব কাজগুলো দেখে ফেলতে ইচ্ছে করছে। আজ বিকেলেও যখন অস্ট্রেলিয়ায় কেবলমাত্র ডিভিডি হিসেবে আসা জিম জারমুশ এর নতুন ছবিটা কিনতে দোকানে গেলাম তখন তাইওয়ানের পুরনো কিছু ছবি আছে কী না খোঁজ করেছি; আজ কিছু পাইনি তবে ছবি সংগ্রহ করতে সমস্যা হবে না।

লিয়াং এর ওপর আপনার লেখাটি সাথে সাথেই পড়ে ফেললাম। খুব ভাল লেখা। সৎ চলচ্চিত্র, পরিচালকের সৎ প্রকাশভঙ্গি নিয়ে আপনার ভাবনার বিষয়টিও ভাল লাগলো। ‘আ সিটি অফ স্যাডনেস’ নিয়ে আপনার লেখাটির অপেক্ষায় থাকলাম।

সচলায়তনে চলচ্চিত্র, এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে লিখতে পারলে আমার অবশ্যই খুব ভাল লাগবে। কিন্তু পিএইচডি’র ঠিক মাঝামাঝি পর্যায়ে চলে এসেছি, হাতে আর বেশি সময় নেই; নিজের থিসিস-এর বিভিন্ন দিক নিয়ে এখন এতো বেশি কাজ করতে হচ্ছে যে অন্য কোন লেখালেখি করার সুযোগ বের করাটা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। না পারছি এই মুহুর্তে অ্যাকাডেমিক জার্নালগুলিতে লেখা পাঠাতে, না সংবাদপত্রে, না অন্য কোথাও। তারপরও চেষ্টা করবো। দেখা যাক, কতোটা পারি। আগামী মে মাসের শুরুতেই ৩০,০০০ শব্দ জমা দিতে হবে। এই মাস আর পুরো এপ্রিল তাই অন্য কোন লেখা লিখতে পারি কীনা সেই চিন্তা করছি। জিজেক এর ওপরেও সময় করে একটা লেখা লিখতে নিশ্চয়ই চেষ্টা করবো। লিখতে আমারও ভাল লাগবে।

একটা কথা আপনাকে জানাতে ইচ্ছে করছে। বহু দেশের বহু বিখ্যাত লেখকের অসাধারণ অনেক লেখা তো পড়া হলো, এবং প্রতিনিয়ত পড়েই চলেছি, তবে ‘পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ’ পড়ার পর নিজের ভেতরে যে গভীর ভাললাগা অনুভব করেছি, সেরকম ভাবে খুব বেশি লেখা এখন পর্যন্ত মনকে স্পর্শ করেনি। বেশিদিন এর জন্য দেশের বাইরে গেলে সবসময় ‘পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ’ এর একটি কপি আমি সঙ্গে নেই। অনেক পছন্দের বই-ই রেখে যাই, কিন্তু এই বইটি সাথে নিয়ে নেই। বার বার পড়ি। লিয়াং এর ওপর লেখাটিতে এই বইয়ের বিষয়ে আপনার অনুভূতির কথা পড়ে বইটি আমার কাছেও কতোটা গুরুত্বপূর্ণ তা আপনাকে জানাতে ইচ্ছে করলো।

‘আগন্তক’ এর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোমোহন-এর প্রতিটি সংলাপ আমার অত্যন্ত প্রিয়। লিয়াং এর ওপর লেখাটিতে আপনার ‘আগন্তক’ এর সংলাপ টুকে রাখার ব্যাপারটি পড়ে ভাল লাগলো। অল্প ক’দিন আগেই আমার ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরীতে ‘আগন্তক’ এর পুরো স্ক্রিপ্ট পেয়ে সেটা বাসায় নিয়ে এসেছি। যদিও সেটা ইংরেজিতে, তাও পড়ছিলাম আর পড়তে কী ভালই না লাগছিলো। আজ আপনার লেখায় আমার পছন্দের এই প্রসঙ্গটি দেখে তাই আরো ভাল লাগলো।

শুভেচ্ছা রইলো।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

জুনাইদ ভাই,

আবার এতদিন পর দেখলাম এই মন্তব্য। আমার পছন্দের বিষয়গুলোতে আপনার আগ্রহ আছে দেখে ভাল লাগল।

কাজের চাপ কমলে লেখালেখি শুরু করে দিন।

জিফরান খালেদ এর ছবি

নাদির জুনাইদ,

আপনি অ্যাডোর্নো আর হোর্কেইমারকে কীভাবে প্রাসংঙ্গিক করছেন, জানতে পারলে খুব খুব ভাল লাগতো। আর, যদি খুব সমস্যা না হয়, তাহলে, অ্যাডর্নোকে নিয়ে আপনার কথাবার্তা যদি থাকে, তাও শেয়ার করতে পারেন। ভাবা, সাঈদ এদের সাথে ওপরের দু'জন কীভাবে একসূত্রে থাকবেন, আমি বুঝতে পারছি না। অবশ্য আপনার রিসার্চের পরিধি নিয়েও আমার ধারণা নেই, সেই কারণেই হয়তো।

ভাল থাকুন।

নাদির জুনাইদ এর ছবি

জিফরান খালেদ,

যোগাযোগ করার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। অ্যাডর্নো’র বিষয়ে আলোচনার প্রতি আপনার আগ্রহ দেখেও ভাল লাগছে। আমি কাজ করছি গত ৫০ বছরের বাংলা রাজনৈতিক চলচ্চিত্র নিয়ে; দুই বাংলার সমাজ-সচেতন ছবিই বিশ্লেষণ করছি। আমি বিভিন্ন দিক থেকে এবং বিভিন্ন তত্ত্বের আলোকে আমার গবেষণা-প্রশ্নগুলিকে যাচাই করবো। রাজনৈতিক চলচ্চিত্রের খুব গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা এখনো পাওয়া যায়নি, কারণ রাজনৈতিক চলচ্চিত্র বিভিন্ন রকমেরই হতে পারে। আমি আমার কাজে বিভিন্ন মহাদেশের প্রতিবাদী, সামাজিকভাবে-দায়িত্বশীল এবং কখনো বিপ্লবী চলচ্চিত্র পর্যালোচনা ও তুলনার ভিত্তিতে রাজনৈতিক চলচ্চিত্রের একটি সুস্পষ্ট ধারণা নির্মাণ করতে আগ্রহী। আমার কাজের মাধ্যমে আমি এই দিকটিতে যেমন স্পষ্টতা আনতে চাই, তেমনি বাংলা রাজনৈতিক চলচ্চিত্রের ভিন্ন দিকগুলিও প্রকাশ করতে চেষ্টা করবো। এই আলোচনার জন্য কোন্ ধরনের চলচ্চিত্র বিবেচিত হবে, আর কোনগুলি বিবেচিত হবে না সেই ব্যাপারেও আমাকে গ্রহণযোগ্য যুক্তির মাধ্যমে প্রাসঙ্গিক চলচ্চিত্রসমূহ বেছে নিতে হয়েছে।

সমাজের বিভিন্ন সমস্যা ও অন্যায় সরাসরি বা অ্যালেগরির মধ্য দিয়ে তুলে ধরে ও সমালোচনা করে যে চলচ্চিত্রসমূহ সচেতনভাবে এবং সৃষ্টিশীল নির্মাণপদ্ধতির সাহায্যে রাজনৈতিক বক্তব্য প্রদান করছে, সেই চলচ্চিত্রগুলিকে আমি রাজনৈতিক চলচ্চিত্র হিসেবে বিবেচনা করছি। এই ধরনের চলচ্চিত্রের সাথে কেবলমাত্র মুনাফা অর্জনের জন্য নির্মিত, সিস্টেমের সমালোচনা না করা বরং এস্টাবলিশমেন্টকে, স্টেটাসকুওকে সহায়তাকারী গতানুগতিক, সস্তা বিনোদনমূলক ছবিসমূহের কোন তুলনাই চলে না। এই ধরনের ছবির বিরুদ্ধে অবশ্য সচেতন ছবিকে অনেক সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয়। কারণ বেশির ভাগ সমাজে আর্থিক লাভ অর্জনকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যায় রাজনৈতিক চলচ্চিত্র প্রোপাগান্ডা’র রূপ নিচ্ছে। যদিও সচেতন ও দায়িত্বশীল পরিচালকদের কাজ বিভিন্ন বৈরী সময়েও নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করা যায় না। বিভিন্ন উদাহরণে সেরকমই দেখা গেছে।

আমার থিসিস-এর থিওরেটিকাল পারস্পেকটিভস্-এ আমি আমার আগের লেখায় যেসব তাত্ত্বিকদের নাম উল্লেখ করেছি তাদের বিভিন্ন ধারণা ব্যবহার করছি। উল্লিখিত সবার তত্ত্বেরই অনেক দিক আছে যা আমার কাজে ইতিহাস, সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি সংক্রান্ত বিশ্লেষণে প্রাসঙ্গিক হয়। অ্যাডর্নো এবং হোর্কহাইমারের ‘কালচার ইন্ডাস্ট্রি’ সংক্রান্ত ধারণাগুলি এক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ; গুরুত্বপূর্ণ ফ্র্যাঙ্কফার্ট স্কুলের তত্ত্বসমূহ, মারকিউসের ‘ওয়ান ডিমেনশনাল ম্যান’ সংক্রান্ত ধারণা। যেই তাত্বিকদের কথা উল্লেখ করেছি তাদের সবাই যে একই ভাবে, একই ধরনের বক্তব্যের মাধ্যমে আমার গবেষণায় প্রাসঙ্গিক হয়েছেন তা নয়, প্রত্যেকের কাজের যে অংশ আমার বিশ্লেষণে দরকার আমি সেই অংশটা ব্যবহার করছি, যেমন ভাবা’র ‘মিমিক্রি’, এবং সংস্কৃতি ও আইডেনটিটি সংক্রান্ত ধারণাগুলি আমার কাজের সাংস্কৃতিক বিশ্লেষণে সাহায্য করবে। সাইদ-এর সাম্রাজ্যবাদবিরোধী বিভিন্ন ধারণা আমার কাজে গুরুত্বপূর্ণ। আর এদের মধ্যে সরাসরি মিল না থাকলেও একটি দিকে এই মার্কসিস্ট, নিও-মার্কসিস্ট, পোস্টকলোনিয়াল, এবং উপনিবেশবাদ-বিরোধী তাত্ত্বিকদের মধ্যে মিল তো আছেই, আর সেই ক্ষেত্রটি হলো ‘রেজিস্ট্যান্স’। আমার কাজও যেহেতু বলতে গেলে ‘রেজিস্ট্যান্স’ এবং ‘প্রোটেস্ট’ সংক্রান্ত বিষয়েরই ওপর, তাই এই তাত্ত্বিকদের বিভিন্ন ধারণাগুলিও আমার কাজে ব্যবহারের সুযোগ থাকছে।

সময় করে অ্যাডর্নো’র ওপর যদি লিখতে পারি তো আমারও খুব ভাল লাগবে। কিন্তু এই মুহুর্তে খুব কাজের চাপের মধ্যে আছি, তাই অনেক ইচ্ছা থাকা সত্বেও নিজের থিসিস এর বাইরে অন্য কিছু লেখার সময় করে উঠতে পারছি না। তারপরও চেষ্টা করবো, কারণ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর লিখতে সবসময়ই ইচ্ছে করে, আর খুব ভালও লাগে। আপনার সাথে কথা বলে ভাল লাগলো। আশা করি আবার কথা হবে। ভাল থাকবেন।

জিফরান খালেদ এর ছবি

ধন্যবাদ। এতদিন পরে চোখে পড়লো, তাও শুভাষীশ দা'র প্রফাইল পেইজে প্রিয় পোস্টে চোখ পড়াতে।

ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুল তো মার্ক্সকে আবারো দর্শনে ও কালচারের গতি--প্রকৃতি নির্ণয়ে নিয়া আসতেসে। আমি মোটামুটি অ্যান্টি-মার্ক্সিস্ট না হইলে না-মার্ক্সিস্ট ধারণা অবলম্বন করি। তবে, অ্যাডর্নো যেভাবে কান্ট এর ক্রিটিক্যাল আইডিয়ালিজম আর হেগেলের অ্যাবসুলিউট আইডিয়ালিজমকে মোকাবিলা করসেন, যেইটা মার্ক্সিয়ান বস্তুবাদ এর জন্যে দার্শনিকভাবে দরকারী খুব, এত ভাল ভাবে মনে হয় না এর আগে কেউ করসে। হোর্কেইমার এর গুরুত্ব আমি এখনো পুরা বুঝে উঠতে পারি নাই। তবে, অ্যাডর্নো যেহেতু মিউজিকোলজিস্টও আসিলেন একজন, তাই, ওর কাজ অন্যরকম সংবেদন প্রকাশ করে বলে আমার ধারণা।

আপনি আপনার কাজ শেষ হইলে লিইখেন। আলাপ করা যাবে/ শেখা যাবে।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

আপনার কথা শুনমু না।

আমি রান্ধা শিখমু কি শিখমু না সেইটা আমার ব্যক্তিগত ব্যপার। কিন্তু খাবার খাইয়া ভাল্লাগলে কমু ভালইছে, না লাগলে কমু ওয়াক থু !!!

আপনে আমার 'ওয়াক থু' করা দেইখা 'দার্শনিক ভাষ্য' দিতে আইলে কমু 'সর বাল্ডা'...

হাসি
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

অন্যের পয়সায় দেখতে গেছিলাম। অর্ধেক দেখে ভাবলাম টাকাটা অন্যের নষ্ট হলেও সময়টা আমারই নষ্ট হবে। সেটা করাটা ঠিক হবে না, তাই চলে আসতে বাধ্য হয়েছি।

আমি বুঝি না এতো খারাপ একটা কাজ নিয়ে এতো গর্ব করার মতো বোকা কয়টা মানুষ হইতে পারে?

যদি স্রেফ পেটের দায়ে করতো, অথবা প্রডিউসারের হুমকিতে থাকতো, কম টাকায় কাজ নামাতে হবে সেসব ভ্যাজাল থাকতো, তাইলে নাহয় মানতাম। এখানে তো তার কোনো সীমাবদ্ধতাই নাই। সবরকম সুযোগ ছিলো একটা ভালো কিছু বানানোর। ভালো কিছু বানানোর জন্য ভালো বোধ থাকাটা জরুরী। মেধা বা টেকনিক্যাল জ্ঞান না, আমি বোধের কথা বলছি। যেটা ফারুকীর ঘাটতি আছে।

তবে এটা ঠিক, এটা অন্তত তার দ্বিতীয় ছবি মেইড ইন বাংলাদেশ থেকে ভালো হইছে। এই উত্তরণপ্রক্রিয়া চালু থাকলে অবশ্য হয়তো একসময় জাতি ভালো কিছু আশা করতে পারে, কিন্তু আমার আশা করার ইচ্ছা নাই।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- সিনেমাটা সম্পর্কে, একজন দেখার পর এসেমেস করে জানিয়েছিলেন, "কারো সাথে শত্রুতা থাকলে তার হাতে থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার সিনেমার টিকেট ধরায়ে দিয়েন"।

পরিস্থিতিটা কিন্তু ভেবে দেখার মতো। একটা সিনেমা কতোটা নেতিবাচক প্রভাব ফেললে একজন দর্শক এভাবে আরেকজন সম্ভাব্য দর্শকের সামনে সিনেমাটার পর্যালোচনা করতে পারেন!

হক-ফারুকী জুটি নিয়ে ওপরে হিমু যা বলেছেন, এর বাইরে হয়তো আরও অনেক কথাই যোগ করা যায়, কিন্তু মূল কথাগুলো সেগুলোই। কিছু বস্তাপঁচা কেলাশ জিনিষ জোর করে খাওয়াচ্ছেন আমাদের এই হক-ফারুকী জুটি।

হালে ফারুকী ভাই-বেরাদররাও ফারুকীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে যাচ্ছেন। এবং তুলনামূলক নিচু মানের কিছু সংলাপক্ষেপণকে মেগা সিরিয়াল আখ্যা দিয়ে সেগুলো পাবলিককে গিলতে বাধ্য করছেন।

এই তথাকথিত ঢাকাই কিয়োরোস্তামি এবং তাঁর ভাই-বেরাদরদের নাটক বানানো আমাশয়ের নিরাময় করতে হলে যাদের হাতে ঘটিবাটি আছে (এই সচলেই তো অনেকে আছেন, যারা মান সম্পন্ন জিনিষ সরবরাহ করতে সক্ষম), তাঁরা শীঘ্রই মাঠে নেমে যান। নয়তো পরে আর মাঠে পা রাখতে পারবেন না। নরম আর গরম পূরীষে পা উষ্ণ হয়ে উঠবে তখন!

গল্প, কাহিনী লাগলে আওয়াজ দিয়েন। হক-ফারুকী জুটি কিংবা তাঁদের ভাই-বেরাদরদের চেয়ে হাজার গুণ উন্নত কাহিনী লিখে দেয়া যাবে। চাইলে অভিনয়ও করে দিয়ে আসা হবে। তবে শর্ত একটাই, বিপরীতে ভালো, ট্যালেন্টেড নাইকা থাকতে হবে! হাসি

থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বারের ক্ষেত্রে কেবল একটাই ভালো কথা বলার আছে, এই সিনেমার গানগুলি দারুণ। বিশেষতঃ দ্বিধা!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

ছবিটি দেখিনি । এই বিশ্লেষণটি পড়ে খুব ভাল লাগল ।

সংস্কৃতি একটি বড় বিষয়, একটি জাতির মেধা ও মননের বিকাশের জন্য । চলচ্চিত্র খুবই শক্তিশালী মাধ্যম সেই দায়িত্ব পালনে । আমাদের “পপুলার” সংস্কৃতিতে যে মেধা ও মননের দৈন্যদশা চলছে তা চারিপাশের জীবনকে একটু পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যায় ।

ফারুকির মত মানুষেরাও তাই নারীর অসহায়ত্ব নিয়ে বাণিজ্যের অধিক কিছু করতে চান না ।

.......................................
তোমারই ইচ্ছা কর হে পূর্ণ ....

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

তাসনীম এর ছবি

দারুন রিভিউ। আমার দুই আনা যোগ করি।

ছবিটা দেখতে আমার মন্দ লাগেনি। প্রবাসে সিনেমা হলে দেখা প্রথম বাংলাদেশের ছবি। দ্বিতীয়টা কবে দেখব জানি না। পুরোটা সময় হলে বসে ছিলাম। এনজয় করেছি, পরদিন সকালে ভুলে গেছি ছবির কথা। আমি চলচ্চিত্র বোদ্ধা নই। আমার কাছে ভালো ছবির ডেফিনিশন হচ্ছে
যেটার কথা পরদিন সকাল পর্যন্ত মনে থাকে। সেই হিসাবে মনে রাখার মত কিছুই নেই, কিন্তু ছবিটা দেখতে খারাপ লাগে নাই।

ছবিটার অনেক দুর্বল দিক ছিল, অনেক অনেক। রুবার স্ট্রাগলটা অনেক ভালোভাবে দেখানো যেত, ছ্যাবলামি ছাড়াও। কিন্ত ফারুকী এই বৃত্ত থেকে বেরুবেন না বলে পণ করেছেন। তবে বাংলাদেশের বাস্তবতায় এই ছবি তৈরি করাও বেশ সাহসের কাজ।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

শাফক্বাত এর ছবি

যাব্বাবাহ্‌, দিলে আফসুস ছিল ক্যান ছবিটা দেখিনাই। আজকে শান্তি পাইলাম "ভাগ্যিস দেখিনাই!!"
================================================
পরদেশী বঁধু, ঘুম ভাঙায়ো চুমি আঁখি।
যদি গো নিশিথ জেগে ঘুমাইয়া থাকি,
ঘুম ভাঙায়ো চুমি আঁখি।।

সাইফ তাহসিন এর ছবি

কেউ কি আমারে একটু কষ্ট কইরা বুঝায় দিবেন যে একটা নাটকের দৈর্ঘ্য ৯০-১২০ মিনিট হইলে সেইটা সিনেমা হইয়া যায়? আমার মত বেক্কল আর ২টা পাওয়া যাইবো কিনা জানি না, তাই এরাম ব্যাক্কল প্রশ্ন কইরা ফালাই (মাথা চুল্কানির ইমো)। আর মেড ইন বাংলাদেশের কথা কি কমু? কানে ময়লা জইমা জ্যাম হইলা গেলে সিনেমাটা দেখবেন, সব খৈল বাইর হইয়া যাইব।

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

সামান্য ব্লগার হিসেবে সহব্লগারদের কাছে একটা নিবেদন রাখতে চাই। আসুন আমরা কাউকে শ্রদ্ধা/ভক্তি/ভালোবাসা/পছন্দ/অবজ্ঞা দেখাতে কারো মন্তব্যের জবাবে মন্তব্যকারীকে ব্যঙ্গ না করি। কোন একটা বিষয়কে একেকজন একেকভাবে দেখে। সেটার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমরা সবার মতামতকে যুক্তির ভাষা দিয়ে জবাব দেই, যুক্তি আঘাতে আহত করি কিন্তু ভাষা ব্যবহার করে নয়।

ওয়াইল্ড-স্কোপ এর ছবি

চলুক চলুক চলুক চলুক চলুক চলুক চলুক চলুক চলুক
যারা ছবিটি দেখেও নাই তাদের অনেকের লম্বা বক্তৃতা শুইনা নিচের ছবিটির কথা মনে পৈরা গেল -
auto
আর যারা দেখছেন, তাদের নিজেদের মতামতের জন্য ধন্যবাদ দেঁতো হাসি আমার মনে হয় এক ধাক্কায় বিশ্বের সেরা মুভি বাংলাদেশ বানিয়ে ফেলবে, তা আশা করা বাতুলতা মাত্র - রয়েসয়ে হাসি বিজ্ঞাপনের জন্য অনেক কথাই বলতে হয় - তাই বলে প্রডিউসারকে জঘন্য লোক ট্যাগ লাগিয়ে দেয়া কতটুকু যুক্তিযুক্ত ভেবে দেখবেন চিন্তিত

আরো কয়েকটা প্রাসঙ্গিক রিভিউ আই,এম,ডি,বি,তে পাবেন - কষ্ট করে পড়ে নিয়েন - টক, ঝাল, মিষ্টি সবই পাবেন - কোনো এক পক্ষের কথাই শেষ কথা না চোখ টিপি

সংযোজন: আই,এম,ডি,বি,তে "ঘৃনা করেছি" ক্যাটাগরিতে নাদির জুনাইদ আজ নিজের মন্তব্য যোগ করেছেন - বিভিন্ন গণ-মাধ্যমে ফারুকী চিবাইয়া উনি অনেক মজা পাইতাসেন বুঝা যায় হো হো হো
auto

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার 'কোন এক পক্ষের কথাই শেষ কথা না' কথাটির কারণেই আসলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই ছবিটির সমালোচনা করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। আমাদের দেশের গণমাধ্যমে যেভাবে এই ছবিটিকে মুক্তির আগে থেকেই অনেক প্রচার দেয়া হয়েছে, পরিচালক নিজে ছবিটির নানা প্রশংসা পাবার বিবরণ সংবাদপত্রে প্রকাশ করেছেন, আর খেয়াল করে দেখুন মুক্তি পাবার পরও বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছবিটি কেবল প্রশংসাসূচক প্রচারই অনেক বেশি পেয়েছে। অথচ যে ছবিতে এতো বেশি সিনেমাটিক আর বক্তব্যকেন্দ্রিক দুর্বলতা সেই ছবির খুঁতগুলিও আলোচিত হওয়ার প্রয়োজন ছিল যাতে সবাই কেবল 'এক পক্ষের কথাই' না শোনে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত লেখাগুলিতে এই ছবির দুর্বলতাগুলি বিশদভাবে আলোচনা করা হয়নি। আর ফারুকীর চলচ্চিত্রের সমালোচনা বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশ করা সহজ হয় না। ক'বছর আগে আমার একটি লেখা 'দৈনিক প্রথম আলো' ছাপেনি; সেখানে ফারুকীর কাজের সমালোচনা ছিল। ছয় মাস আগে ঢাকা'র 'জনান্তিক' প্রকাশনা সংস্থার প্রধান সাম্য আহমেদ এর একটি লেখায় যেখানে তিনি ফারুকীর বক্তব্যের সমালোচনা করেছিলেন সেটা খুব ছোট করে 'প্রথম আলো' তে ছাপা হয়, কিন্তু সেই লেখা থেকে বেশির ভাগ জোরালো বক্তব্য বাদ দিয়ে দেয়া হয়। আমার এই লেখাটিও 'দৈনিক সমকাল' পুরোটা ছাপেনি, লেখার ধারালো অংশগুলি কেটে দেয়া হয়েছে। একটি লেখা সংবাদপত্রে স্থান সংকুলানের জন্য ছোট করা এক জিনিস, আর বেছে বেছে লেখার ধারালো অংশগুলি বাদ দেয়া সম্পূর্ণ অন্য এক জিনিস। কাজেই আমাদের অনেক গণমাধ্যম ফারুকী-আনিসুল হক এর চলচ্চিত্র প্রসঙ্গে যুক্তির সাথে উপস্থাপন করা আমাদের বক্তব্যগুলি প্রকাশ করছে না, আর এই কারণে পাঠকরা কিন্তু কেবল এক পক্ষের কথাই বেশি শুনছেন। এই বিষয়টিকে মেনে নেয়া সম্ভব হয় না, মেনে নেয়ার কোন ইচ্ছা বা কারণও নেই। বিভিন্ন স্থানে এই প্রসঙ্গে আমাদের ভিন্নমতটিও তাই সচেতন ভাবেই জানাতে চাই যাতে পাঠকরা সব পক্ষের বক্তব্যই জানতে পারেন। ইংরেজি দৈনিক 'নিউ এজ' আমার এই চলচ্চিত্রের রিভিউটি যথেষ্ট ভালভাবেই ছেপেছিল, সেখানে আমার লেখাটির অনেক স্পষ্ট বক্তব্যই প্রকাশ করা হয়েছিল।

আর আইএমডিবি তে আমার লেখাটি গতকালই প্রথম দেয়া না, আমি অনেক আগেই আইএমডিবি, ভ্যারাইটি'র ওয়েবসাইটে এই বিষয়ে আমার রিভিউটি পাঠিয়েছি। গতকার আপনার দেয়া লিংক থেকে আবার আইএমডিবি'র ওয়েব পেজ এ যেয়ে দেখি আমার রিভিউটি কীভাবে যেন মুছে গেছে। তাই পুরনো রিভিউটি আবার আপলোড করে দিয়েছিলাম কারণ আপনার দেয়া লিংক অনুসরণ করে আরো যারা এখানে আসবেন তারা যেন আমার বক্তব্যটিও পড়তে পারেন। আর এই কাজটি যে নেতিবাচক কোন কাজ হয়নি তা আপনার লেখার 'কোন এক পক্ষের কথাই শেষ কথা না' বক্তব্যটির মধ্য দিয়েই স্পষ্ট হয়।

আপনাকে ধন্যবাদ।

নাদির জুনাইদ

ওয়াইল্ড-স্কোপ এর ছবি

না না - নেতিবাচক তো বলিনি, সব পক্ষের কথা জানাটাই জরুরি - আপনি ছবি দেখে উচ্ছ্বসিত না - ভালো কথা, তবে আপনার ভাষ্য অনুযায়ী ছবিটির পেছনে আপনার সংযমী ভাবে লেগে থাকা বেশ চোখে লাগার মতন, "বিশেষ করে" তা যখন কোনো আন্তর্জাতিক মাধ্যমে হয়। দেশী জিনিস যখন আন্তর্জাতিক মাধ্যমে আনা হয়, তখন কিন্তু একটু হলেও সতর্কতার দরকার আছে - সব চিন্তা-ভাবনার দায় একা ফারুকীকে দিলে তো চলবে না। কিছু ব্যাপার আমি বুঝতে পারছি না -
১. বিশ্ববরেণ্য ছায়াছবি নির্মাতাদের সাথে আপনার ফারুকির তুলনা করার কারণ কি? এভাবে বললে তো ক্যামেরনকেও ঘোলা পানিতে ডুবানো সম্ভব।
২. ফারুকী কি নবী রাসুল হয়ে গেল নাকি যে তার ছবিতে সামাজিক চিন্তা উদ্রেককারী চিন্তা না থাকাটা অন্যায়? শুধু নির্মল বিনোদন হতে সমস্যা কি?
auto

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

নাদির জুনাইদ ভাই,

আপনার বিশ্লেষণ ফারুকীর মত সাধারণ মানের নির্মাতার ক্ষেত্রে খাটে না। উনাকে পাত্তা দেয়ার কিছু নাই। কিয়ারোস্তামিকে উনি এমনি এমনি জপেন।

আপনি ভাল চলচ্চিত্র নিয়ে লেখালেখি জারি রাখুন।

ভাই ইউটিউব সংবাদদাতা,

বিনোদন বা ছিক বিনোদন দেয়ার ব্যাপক ক্ষমতা ফারুকীর আছে। নাইলে পাবলিক খায় ক্যান? সমস্যা অন্য জায়গায়। উনি কিয়ারোস্তামির নাম নেন। থেকে থেকে।

আর আপ্নে যে কিসে চ্যাতেন আর কিসে খুশি হন এইডা বড়ই ভাবনের বিষয়। দেঁতো হাসি পিলিজ আমার কথায় চ্যাইতেন না। আপ্নেরে আমি লাইক্করি।

ওয়াইল্ড-স্কোপ এর ছবি

ভাই আমি চেতলাম কখন অ্যাঁ, আমি তো স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন করলাম - আপনেও তো আমার লাইনেই মন্তব্য করলেন চিন্তিত

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

উদ্ধৃতি

আপনেও তো আমার লাইনেই মন্তব্য করলেন

4319076262_3c769efe17_o

হিমু এর ছবি

"আন্তর্জাতিক মাধ্যম"-এ তাহলে এমন দেশী জিনিসই আসা উচিত, যার সম্পর্কে নেতিবাচক কথা বলার সুযোগ কম থাকে। আর ইন্টারনেট এর কারণে এখন আর "দেশী" আর "আন্তর্জাতিক" মাধ্যমের সীমারেখা অত স্পষ্ট নেই, আপনি যদি ইংরেজি কোনো খবরের কাগজে কিছু ছাপান, এবং তার অনলাইন সংস্করণে সেটা প্রকাশিত হয়, তাহলে কার্যত সেটাই আন্তর্জাতিক মাধ্যম।

দেশীয় জিনিসকে উৎসাহ যোগানো খুবই ভালো কাজ, কিন্তু সেটা যোগ্য পাত্রে পড়লে দেশে অন্যান্য যারা আছেন, তারা একটা স্তরকে নিজেদের লক্ষ্য হিসেবে স্থির করতে পারেন। তরুণ নির্মাতাদের মধ্যে কয়েকজনের কাজ ও আচরণ দেখে মনে হয়েছে, তাঁদের কাছে ফারুকীই এখন একটি আরাধ্য রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। ত্রুটিগুলো নিয়ে আলাপ না হলে হয়তো দেশটা ফারুকী দিয়েই ভরে যাবে।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

ওয়াইল্ড-স্কোপ এর ছবি

ভাই আপনে যদি তর্কের খাতিরে তর্ক করতে চান - তাহলে অন্য কথা - নইলে আই,এম,ডি,বির আন্তর্জাতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে লাভ নাই।

ত্রুটি অবশ্যই আছে এবং সেই ত্রুটিগুলো আলাপ করতে দেশী সমালোচকরাই যথেষ্ট - আই,এম,ডি,বির মতন জায়গায় বা এ জাতীয় গুগুল হটস্পটে যে কোনো দেশী তৈরী জিনিসের নেতিবাচক আলোচনার পক্ষপাতি আমি না। 'মাই নেম ইজ খান' ধরনের ছবি যদি ব্যবসা করতে পারে, তাহলে আমাদের দেশের জিনিস আরো বেশি পারবে, কোনো সন্দেহ নাই - শুধু সময়ের ব্যাপার - প্রাথমিক ভাবের তাতে অযাচিত ভাবে রাশ টেনে না ধরি।

কেউ আরাধ্য রোল মডেলে পরিণত হলে নিজের যোগ্যতাতেই হয়েছেন - এতে আমার আপনার তাকে অযোগ্য বলার কোনো অধিকার নাই। বড়জোর বলতে পারেন তার কাজ আপনার ভালো লাগে নাই।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

এই লোক যদি তরুণ নির্মাতাদের রোল মডেল হয়ে থাকেন তাহলে তো আশংকার কথা। তোমাদের আলোচনার মধ্যে নাক গলালাম বলে দু:খিত।

হিমু এর ছবি

আপনি "নেতিবাচক" কোনো মন্তব্য রাখার পক্ষপাতী না হলে, রাখবেন না। কেউ আপনাকে জোর করবে না। কেউ যদি মনে করেন, তার চোখে সিনেমার ত্রুটি নিয়ে তিনি কিছু বলবেন, তাহলে তাকেও বলতে দিন। আমি আপনার দেয়া লিঙ্ক ধরে মন্তব্যগুলো পড়েছি। চারটি মন্তব্যে দেখেছি, বাংলাদেশের এ যাবৎ নির্মিত সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে আকণ্ঠ প্রশংসা করেছেন চারজন। আমি কিন্তু তাদের কাছে কৈফিয়ত চাইতে যাবো না, তারা কেন এমনটা বললেন। তাদের এরকম মনে হয়েছে, তারা আইএমডিবিতে বলার অধিকার রাখেন, তাদের মন্তব্যও আইএমডিবি কর্তৃপক্ষ প্রকাশের উপযোগী বলে মনে করেছে বলে প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি একটি নেতিবাচক মন্তব্যও একজন করেছেন, সেটিও প্রকাশযোগ্য বলেই প্রকাশিত হয়েছে।

"মাই নেম ইজ খান" আমি দেখিনি, আপনার কাছে এটিকে যদি ভালো মনে না হয়, আপনি আইএমডিবিতে বলে আসুন না। মাই নেম ইজ খান ব্যবসা করতে পেরেছে অতএব থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বারের ত্রুটি নিয়ে কথা বলা যাবে না, এরকম একটা ফতোয়া তো চাপিয়ে দেয়া যায় না।

আপনার শেষ কথার সাথেও দ্বিমত পোষণ করি। আমার চোখে কেউ রোল মডেল হওয়ার অযোগ্য মনে হলে, আমি বলার অধিকার রাখি। আপনিও রাখেন। রোল মডেল হওয়ার প্রক্রিয়াটিই আমার আপনার মতো ভোকাল মানুষের ওপর কিছুটা নির্ভরশীল। আর বাংলাদেশের সিনেমা প্রাথমিক পর্যায়ে নাই। আপনি সত্তর আর আশির দশকে আলমগীর কবিরের বানানো কয়েকটা সিনেমা দেখতে পারেন, দেখবেন সিনেমার প্রাথমিক পর্যায়কে তিনি সেই সময়েই অতিক্রম করে বহুদূর গেছেন।

আমি দুঃখিত, কিন্তু ফারুকীকে উৎসাহ যোগানোর জন্যে নির্বিচারে তার সব সিনেমার প্রশংসা করার বা ত্রুটি নির্দেশন থেকে বিরত থাকার যে প্রস্তাব আপনি করছেন, সেটা মেনে নিতে পারছি না। এটা তার জন্যে ক্ষতিকরই হবে। এবং উৎসাহী তরুণ নির্মাতাদের আরো ক্ষতিগ্রস্ত করবে।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

অতিথি লেখক এর ছবি

সবসময় কেবল ভাল মানের কাজেরই প্রশংসা করা সঙ্গত ও যুক্তিযুক্ত, তা আন্তর্জাতিক, দেশীয় যে পরিমন্ডলেই হোক না কেন। আমার নিজের দেশের একটি চলচ্চিত্র, যখন বুঝতে পারছি তার ভেতর অনেক দুর্বলতা আছে, তখন সেই দুর্বলতাগুলি ঢেকে রেখে সেই চলচ্চিত্রটির প্রশংসা করতে গেলে আমার বিশ্লেষণটিই যথাযথ হবে না, এবং বাইরের দর্শক-সমালোচকরা দেখবেন আমরা খুব সাধারণ মানের ছবিকেই কীভাবে প্রশংসা করে চলেছি। আমি কেন এই ছবিটির সমালোচনা বিভিন্ন জায়গায় করছি, তার কারণ আমার আগের পোস্টে আমি খোলাখুলিভাবে বর্ণনা করেছি। আর আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নিয়ে আমি খুব গুরুত্ব দিয়েই কাজ করে যাবো, এবং 'জীবন থেকে নেয়া', 'স্টপ জেনোসাইড', 'ধীরে বহে মেঘনা', 'রূপালী সৈকতে', 'মেঘের অনেক রঙ', 'সূর্য দীঘল বাড়ী', 'চাকা', 'ঘুড্ডি', 'মুক্তির গান', 'মাটির ময়না' এসব ছবির প্রশংসা যেমন আত্মবিশ্বাসের সাথে করতে পারবো, তেমনি বাংলাদেশে নির্মিত দুর্বল ছবিগুলিকে সমালোচনা করতেও দ্বিধা করবো না। আর এমন দৃষ্টিভঙ্গি কেবল বস্তুনিষ্ঠই নয়, তা আমাদের দেশে ভাল, মানসম্পন্ন চলচ্চিত্র তৈরি হওয়ার পরিবেশ সৃষ্টির জন্যও জরুরি।

আর যেসব চলচ্চিত্র কেবল ব্যবসায়িক স্বার্থ নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে তাদের আলোচনা সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি প্রসঙ্গ। সেই চলচ্চিত্রের সাথে সামাজিকভাবে সচেতন আর দায়িত্বশীল এবং শৈল্পিক নির্মাণশৈলীর চলচ্চিত্রের তুলনা হয় না। আপনার উল্লেখ করা ব্যাপারগুলির প্রসঙ্গে এবার বলছি, আমি কখনোই বরেণ্য পরিচালকদের সাথে ফারুকীকে তুলনা করিনি; সে প্রশ্নই ওঠে না। একজন (নারদ মুনি) ফারুকীর এই ছবিতে 'চলচ্চিত্র ভাষা'র প্রয়োগ নিয়ে বক্তব্য রেখেছিলেন, তাই বিভিন্ন বিখ্যাত কাজ থেকে উদাহরণ দিয়ে বোঝাতে চেয়েছিলাম যে 'চলচ্চিত্র ভাষা' বিষয়টি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং উঁচুমানের, খুব সহজে তার মান নিয়ে সন্তষ্ট হওয়া যায় না।

আর ফারুকীর কাজ শুধু নির্মল বিনোদন হতে কোন বাধা নেই, কিন্তু সেক্ষেত্রে তাঁর কাজের চরিত্র ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে দর্শকদের স্পষ্ট ধারণা দেয়া প্রয়োজন। এই ছবিটি মুক্তি পাবার আগে ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়েছে এই ছবিটি একটি সামাজিক সমস্যাকে তুলে ধরবে।যদি নিছক বিনোদন প্রদানই উদ্দেশ্য হয় তাহলে তো আর এই সামাজিক সমস্যার কথা, আভা-গার্দ নির্মাণপদ্ধতির কথা, আব্বাস কিয়ারোস্তামির এবং গুরুত্বপূর্ণ ফেস্টিভ্যালে প্রশংসার কথা জোর দিয়ে প্রচারের দরকার ছিল না। কিয়ারোস্তামিও শুধু নির্মল বিনোদন দিতে ছবি বানান না, আর ফেস্টিভ্যালেও কেবল বিনোদন-সর্বস্ব ছবি গুরুত্ব পায় না। ফারুকী একদিকে আর্ট ফিল্ম এর সাথে সম্পর্কিত এই দিকগুলিকে জোর দিয়ে ছবিটির প্রচারে ব্যবহার করেছেন, আবার বলেছেন তার ছবি কোন আর্ট ফিল্ম নয়। সব মিলিয়ে দর্শক বিভ্রান্ত হয়েছে, আর আমরা চলচ্চিত্র দেখে বুঝেছি আসলে কী নির্মাণ করা হয়েছে। ফারুকীর এই ছবিতে যখন দর্শককে হালকা বিনোদন দেয়ার মতো উপাদানই অনেক বেশি ব্যবহার করা হয়েছে, তখন ছবি মুক্তির পূর্বে এই কথাগুলি প্রকাশ করা হলো না কেন? এই কারণেই তার এই ছবিকে এবং এর প্রচারপদ্ধতির সমালোচনা করতে হচ্ছে।

যে কোন পরিচালকই কেবল বিনোদনমূলক ও ব্যাবসায়িক ছবি বানাতে পারেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে সেই নির্মাতাকে নিজ অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে যে তিনি আসলে কী তৈরি করছেন। একটি ধারার উপাদানসমূহের কথা প্রচারে ব্যবহার করে আরেকটি ধারার জিনিস তৈরি করার ব্যাপারটি কখনোই পছন্দ করা যায় না।

নাদির জুনাইদ

অতিথি লেখক এর ছবি

তবে এইমাত্র সময় নিয়ে খোঁজ করে দেখলাম আইএমডিবিতে আমার আগের লেখাটি অন্য একজন ব্যক্তির করা রিপোর্টের ভিত্তিতে তুলে নেয়া হয়েছে। বক্তব্য বা ভাষার কারণে নীতিমালা ভঙ্গ হলে লেখাটি প্রথমেই প্রকাশিত হতো না, কারণ আইএমডিবি যাচাই করেই রিভিউ প্রকাশ করে তার উল্লেখ করা আছে। বলা আছে, 'স্পাইটফুল' মন্তব্য করা যাবে না। আর আমার বক্তব্যে 'স্পাইট' থাকলে সেটা প্রথমেই বাদ হয়ে যেতো, আরেকজনের অভিযোগ আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো না। তবে আমার এই একই রিভিউ এর কিছু অংশ যেহেতু অন্যান্য জায়গায়ও প্রকাশিত হয়েছে, তাই আইএমডিবি কর্তৃপক্ষের আপত্তি করার একটা কারণ আছে, কারণ প্রতিটি রিভিউ তাদের লাইসেন্সড প্রপার্টি হয়ে যাবে তা লেখা আছে। এই কথাটি আমার আগে চোখে পড়েনি। আমি তাই এই লেখাটি এবার নিজেই তুলে নিচ্ছি, কারণ এই লেখার মূল অংশ অন্য জায়গায়ও আছে এবং আশা করি অনেক পাঠক তা পড়েছেন। আর আইএমডিবিতে আমার এই বিশ্লেষণগুলিই নতুন ভাবে লিখে আরেকটি রিভিউ আমি সময় করে পাঠাবো। আর সবসময়ই আশা করবো বিভিন্ন স্থানে সব পক্ষের যৌক্তিক বক্তব্যই প্রকাশের সুযোগ বিদ্যমান থাকবে।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

মন্তব্যের শেষের লাইনে যা লিখেছ তার জন্য একটু বিরক্ত বোধ করলাম। আর তুমি বলেই মন্দ লাগাটা জানিয়ে গেলাম। সব সময় নিজের অর্জনের কথা খেয়াল করবা, যেন সামান্য কারণে সেটা নষ্ট না হয়ে যায় হাসি

ওয়াইল্ড-স্কোপ এর ছবি

পৃথিবীর আদি কাল থেকে আমি কোথাও কিছু বললেই আপনে আমারে থামাইয়া দেন - আমি ব্যাপক দুঃখ নিয়া অফ গেলাম, এইটাই এই পোস্টে আমার শেষ মন্তব্য

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

পিপিদা আমাগো অভিভাবক। একটু শাসনের দরকার আছে না? দেঁতো হাসি

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

"দণ্ডিতের সাথে দণ্ডদাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে-- সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার।"

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

নাদির জুনাইদ সাহেবের এই লেখা পড়ার পর যদি কারো মনে হয় এটা কোনো সিনেমামূর্খ্যর লেখা, সিনেমা নিয়ে [বা বিশেষ করে থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার নাম্বার নিয়ে] কথা বলার আগে সিনেমা বিষয়ে আরো জানতে হবে, আরো পড়তে হবে। তখন তার সাথে যুক্তি দিয়ে কথা বলা আর বানরের গলায় মুক্তার মালা পরানো একই কাজ মনে হয়।

আর একটা মজার কথা বলি। ক্যামেরা Shake এর ব্যাপারে আপনি যেটা বলতে চেয়েছেন সেটা ইচ্ছাকৃতভাবে করা । 35mm ক্যামেরা Tripod এ mount করা থাকলে তা না কোনোভাবেই কাঁপবে না। এটা একটা জনপ্রিয় টেকনিক । এটা Handheld শট বা হাতে ক্যামের নিয়ে নেয়া শট।এটা করা হয় শটকে আরও বেশী প্রাকৃতিক করার জন্য। Camera Shake এই শটের একটা বৈশিষ্ট্য।

এট্টুক পড়ে বুঝছি উনি বিরাট জ্ঞানী... ডরে আমার হাত পা...

নারদ মুনিকে ব্যঙ্গ করা হয় নাই। দর্শক হিসেবে আমাদের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া প্রকাশে তিনি সেন্সরের জোয়াল পরাইতে চাইছেন। যেটাকে আমি অমানবিক এবং ঘৃণ্য কাজ বলে মনে করি। তার মতামত তিনি প্রকাশ করবেন, আমার মতামত আমি জানাবো। কিন্তু তিনিই শুধু কথা বলবেন আর আমরা ঘাস চিবাবো, এই অন্যায় আব্দারটা সম্ভবত আপনার চোখ এড়াইছে পিপিদা।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

পিপিদাকে বলব নারদ সাহেবের কমেন্ট পড়ার জন্য।কারো চেলা হয়ে এখানে বাকবাকুম কমেন্ট করলে সেটা যুক্তি হয় না।

আমি একটা জিনিস বুঝি না - ফারুকী বলে বলুক, নারদমুনি বলে -তাও বলুক - গ্রেট ফিল্মমেকারদের কাজ কারবারের কথা ফারুকীর সিনেমার সাথে রিলেট করার দরকারটা কি? আজিব।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

নজু ভাই,

কিন্তু তিনিই শুধু কথা বলবেন আর আমরা ঘাস চিবাবো, এই অন্যায় আব্দারটা সম্ভবত আপনার চোখ এড়াইছে পিপিদা।

-- না চোখ এড়ায়নি। বরং বেশ প্রকট ভাবেই চোখে পড়েছে। কি করা বলেন, একজন কাদায় নামলে তার সাথে সবাই যেন কাদায় না নামি সেই সতর্কতা ছিল চোখ টিপি

শুভাশীষ বস,
পিপিদাকে বলব নারদ সাহেবের কমেন্ট পড়ার জন্য।কারো চেলা হয়ে এখানে বাকবাকুম কমেন্ট করলে সেটা যুক্তি হয় না।

--পোস্টের সব কমেন্টই আমি মনোযোগ দিয়ে পড়েছি/পড়ছি। ইনফ্যাক্ট, ওনার (নারদ মুনি) প্রথম মন্তব্যটিতে হয়তো আমিই প্রথম জবাব দিতে পারতাম। পরে দিয়েছি। উনি সম্ভবত লেখকের লেখাটিও ঠিকমত পড়েননি, হিমুর মন্তব্যও দেখেননি। যেকারণেই ফিল্ম নিয়ে বক্তব্য/সমালোচনা কারার আগে পড়াশুনার কথা বলেছেন। সেটাই তাকে শুধরে দিয়ছি আমার উপরের একটি মন্তব্যে।

একজন অতিথি কার হয়ে কথা বলছে সেটা তো বস তার মন্তব্যের ধরন ও গতিপথ দেখেই বোঝা যায়। তবুও আমরা যারা সচল আছি তারা যেন সেই একই পথে পা না বাড়াই সেজন্য আমার মন্তব্যটা জরুরী ছিল বলে আমার মনে হয়।

আশা করি আমার অবস্থান ও মন্তব্যের প্রেক্ষিতটা এখন পরিস্কার হলো হাসি

দ্রোহী এর ছবি

চমৎকার রিভিউ...

সাফি এর ছবি

আশা করি সামনে এমন আরো ভাল রিভিউ পাবো। সিনেমার আমি তেমন কোন সমঝদার না, তবে আমার দেখা এবং ভাল লাগার অনেক সিনেমার রিভিউ পড়তে যেয়ে অনেক সময়ই আবিষ্কার করেছি সিনেমার প্রায় পুরোটাই আমার অদেখা। একারণেই রিভিউ পড়তে ভাল লাগে। এই সিনেমাটা হয়ত কখনওই দেখা হবেনা, তবে যদি দেখা হয় তবে এই রিভিউ এর কথা মাথায় থাকবে নিশ্চয়ই

সচলে স্বাগতম।

নাশতারান এর ছবি

কিছু কথা বলি।


"থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার" এতটা চুলচেরা বিশ্লেষণ দাবি করে না।


নারদ মুনি সম্ভবত বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের বর্তমান স্থিতির প্রেক্ষিতে ফারুকীকে একজন সম্ভাবনাময় নির্মাতা গণ্য করে সুযোগ দিতে চাচ্ছেন। তার দুয়েকটা মাঝারি গোছের কাজে তালি দিয়ে তাকে উৎসাহিত করতে চাইছেন। তাই খুঁটে খুঁটে এই সিনেমা থেকে ভালো কিছু বের করার চেষ্টা করছেন। তবে দেশের সিনেমাকে ঠেলে দিতে গিয়ে ঔদ্ধত্য প্রদর্শন না করলেও চলত। যোগ্যতার বেশি প্রশংসা কিন্তু উন্নতির পথকে রহিত করে দেয়।


আমি এই সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম বন্ধুদের মুখে তীব্র সমালোচনা শুনে। আদতে কতখানি খারাপ দেখতে। ফারুকী নিজের সিনেমা নিয়ে কার নামের বরাত দিয়েছেন, কী কী বলেছেন কিছুই জানতাম না। এমনকি কী নিয়ে সিনেমা তাও না। বন্ধুরা বলেছিলো খুব বাজে সিনেমা। গিয়ে দেখি ওদের আসলে বাজে লেগেছে রুবার প্রথাবিরোধী জীবনাচরণ। একজন বাঙ্গালি নারী দু' দুটো পুরুষের সাথে এক ছাদের নিচে বাস করে! কী সর্বনাশ!

অনেকেই বলছেন সিনেমাটি দেখেননি কিন্তু রিভিউ পড়ে চমৎকৃত হয়েছেন। রিভিউতে যেহেতু বিশেষ প্রশংসা করা হয়নি স্বভাবতই সিনেমা না দেখেই একটা নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়ে গেছে অনেকের। তাঁদের অনুরোধ করব সুযোগ পেলে একবার সিনেমাটি দেখতে। জীবনে অনেক খারাপ মুভিই আমরা দেখি। এটাও না হয় দেখলেন। পরের মুখে ঝাল খাওয়ার চেয়ে সেটা অন্তত ভালো।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

সাফি এর ছবি

তাঁদের অনুরোধ করব সুযোগ পেলে একবার সিনেমাটি দেখতে

সময় হঠাৎ করেই দুষ্প্রাপ্য হয়ে যাওয়ায় যেকোন মুভি দেখার আগেই রিভিউ পড়ে যাচাই করে নিতে ইচ্ছে হয়। যেকোন যন্ত্র কেনার আগেই আমাযন থেকে দেখে নেই কে কয়টা তারা দিলো, কি সুবিধা আছে কি নেই।
আমার মনে হয় এই সিনেমা দেখব কি দেখবনা / রিভিউয়ারকে বিশ্বাস করব কি করবনা, এই বিচারের ভার পাঠকের উপরেই ছেড়ে দেওয়া উচিত।

দুঘন্টা সময় ধরে কিছু দেখে মেজাজ খিঁচড়ে যাওয়ার চেয়ে, ভাল কিছু না দেখাও আমার কাছে এই মুহূর্তে শ্রেয়।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

রিভিউ ভালো লাগলো। সচলে স্বাগতম। হাসি

বালক এর ছবি

আমিও একমত আপনার সাথে।

পরিচালক তাঁর পূর্বের ছবিগুলো থেকে উঁচু মানের একটি ছবি এবার নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছেন সেকথাও জোর দিয়ে বলার সুযোগ থাকে না,

সরোয়ার সাহেব এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছেন এটাই নাকি তার সবচে' ভালো কাজ!! তিনি বলেছেন এ ছবিটি কেনো তার প্রথম চলচ্চিত্র হলো না।!

যদিও থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার শুরু হয়েছিল শক্তিশালী একটি দৃশ্যের মধ্য দিয়ে। একজন পুরুষ রাস্তায় একাকী দাড়িয়ে থাকা রুবাকে যৌনকর্মী ভেবে নেয়, এবং রুবাকে তার সঙ্গে যাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করতে থাকে। রুবা নিশ্চুপ থেকে লোকটিকে উপেক্ষা করলে হঠাৎ এক পর্যায়ে লোকটি রুবার মুখে থুথু নিক্ষেপ করে চলে যায়।

শুরুটা এখান থেকে হয় নি।

আর এই ছবিটা দেখার জন্য আমার অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। নষ্ট ছবি দেখতে হলে বুঝি সময় নষ্ট করতে হয়!
*************************************************************************
ভবিষ্যতে কি হবে তা ভেবে বর্তমানকে উপেক্ষা করবো কেনো?

____________________________________________________________________
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

ছবিটি আসলেই এখান থেকে শুরু হয়নি; কিন্তু শুরুর দিককার এই দৃশ্যটি দেখে তখনো পর্যন্ত মনে হচ্ছিলো একটি সুনির্মিত ছবি হয়তো এবার দেখতে পাবো। যদিও ছবির একবারে শুরুতে কিছু সমস্যা ছিল যেটা আমি ওপরে আমার একটি 'জবাব'-এ আলোচনা করেছি। তারপরও আশায় ছিলাম ভাল কিছু দেখার এবং এর পরই এই দৃশ্যটি প্রশংসা করার মতো একটি দৃশ্য ছিল। রিভিউতে তাই এই দৃশ্যটিকেই শুরুর দৃশ্য বলে উল্লেখ করেছিলাম, এই শুরুতে আশা জাগানোর বিষয়টির প্রেক্ষিতে।

আবারও অনেক ধন্যবাদ।

নাদির জুনাইদ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।