গাঁজা কথন!

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ২৭/০৬/২০১১ - ১০:১৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সেদিন জ্যাকসন হাইটসে মুক্তধারার নিচে দাড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছিলাম। জায়গাটাকে নিউইয়র্কের বাংগালী হাব বলা হয়। হঠাৎ কানে বাংলা প্যারডি ভেসে এল। এক ছেলে গাড়ির হুডে বসে বন্ধুদের সুর করে বন্ধুদের প্যারডি শোনাচ্ছেঃ

শোন মমিন মুসলমানও
যত পার গাঞ্জা টানো
আখেরাতে সবই পাইবা
গাঞ্জা পাইবা না।।

খানিক সময়ের জন্যে মনে হল পাড়ার রকে দাড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছি। সামনে দাঁড়ানো বড়ভাই বললেন, স্বর্গে গাঁজা না থাকলে স্বর্গে গিয়ে করব কি? বড়ভাইকে বললাম, ভাই গাঁজাগাছই একমাত্র গাছ, যা পৃথিবী থেকে স্বর্গে গিয়েছিল। অতএব স্বর্গে গাঁজা পাওয়া যাওয়ার কথা। গাঁজার স্বর্গে যাওয়ার গল্পটাও শোনালাম। শিব স্বর্গে আছেন কিন্তু মনে সুখ নাই। কোন নেশাই তাকে তৃপ্ত করতে পারছে না। তখন লোকমান হেকিম শিবকে গাঁজার পরামর্শ দেন। শিব গাঁজা খেয়ে তৃপ্ত হন এবং গাঁজাগাছ নিয়ে স্বর্গে চলে যান!

শুধু দেবতা শিব নন, এক সময় সাধু সন্নাসী হতে শুরু করে রাজারাও গাঁজায় মত্ত ছিলেন।(রাজধানী বিদিশায় বসে শুদ্রক রাজা নিয়মিত স্নানাহারের পর ধুমিয়ে গাঁজা খেতেন)... নিরাকার ব্রহ্মকে সাকার ঈশ্বর রূপে দেখতে পাওয়া যাবে এই বিশ্বাস থেকে নাকি সাধু সন্তরা গাঁজার কল্কেতে দম দিতেন। প্রাচীন বেদে গঞ্জিকাকে "ঈশ্বরের আহার্য" বলা হয়েছে! এখনকার তরুণ-তরুণীরাও গাঁজা খান তবে তাদের উদ্দেশ্য ঈশ্বর দর্শন না; অনেকটাই হালের ফ্যাশন।

গাঁজার ইতিহাস অনেক পুরানো। ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায় শক জাতি প্রাচীনকাল থেকেই বিপুল পরিমানে এই উদ্ভিদজাত নেশা দ্রব্যটি সেবন করত এবং জিনিসটি তারাই মধ্য এশিয়া থেকে সংগ্রহ করে গ্রিসসহ প্রাচীন বিশ্বের সমঝদারদের কাছে পৌঁছে দিয়েছিল।( শকরা ছিল মধ্য এশিয়ার অশ্বারোহী যাযাবর গোত্র। এরা নিজেদের Skudat বলত যার মানে তীরন্দাজ। শকদের সভ্যতার সময়কাল ছিল ৮ম খ্রিস্টপূর্ব থেকে খ্রিষ্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দী। ) গাঁজা ছিল শক-সংস্কৃতির অন্যতম আচার। এখন আমরা গাঁজাকে যতই দুষিত মনে করি না কেন- শকরা কিন্তু পবিত্র হত গাঁজার ধোঁওয়ায় । বিশেষ করে শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে গাঁজা বীজের নানাবিধ ব্যবহার ছিল বাধ্যতামূলক! মানবসভ্যতার পরবর্তী প্রজন্ম শক জাতির রেখে যাওয়া স্বর্গীয় বস্তুটির অমোঘ আকর্ষন কাটিয়ে উঠতে পারে নি।

বাংলাদেশেও গাঁজা আদিকাল থেকেই ছিল তবে ইতিহাসের পাতা থেকে নওগাঁ গাঁজা সোসাইটি (সমবায় সমিতি) নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। আঠারোশ শতকে সংগঠিত হওয়া এই সংগঠন ১৯০৬ সাল থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে গাঁজা উৎপাদন শুরু করে। ব্রিটিশ ভারত সরকার তখন রাজশাহী জেলার জন্য একজন রেজিস্টার এবং শুধুমাত্র গাঁজা সোসাইটির জন্যই নওগাঁতে আলাদা একজন রেজিস্টার নিয়োগ দিয়েছিলেন। এ থেকে বোঝা যায় গাঁজা সোসাইটি কি পরিমান রাজস্ব প্রদান করত। নওগাঁ গাঁজা সোসাইটির মুনাফার অধিকংশই জনকল্যান মূলক কাজে ব্যবহৃত হত।

গাঁজার বেশ কিছু স্থানীয় নাম আছে যেমন গঞ্জিকা, গাঞ্জা ,সিদ্ধি, মারিজুয়ানা, হাশিস... শক জাতি ভালোবেসে গাঁজার নাম দিয়েছিল কুনুবু (মানে, যাহা ধোঁওয়া উৎপাদন করে।... বোটানিক্যাল নাম Cannabis sativa. (আমার চারুকলার কিছু বন্ধু-বান্ধব আছে যারা একে পাতা নামে ডাকে!) নানান নামে সারা দুনিয়া চষে বেরানো এই গাঁজার স্ত্রী এবং পুরুষ উভয় গাছ আছে। এর মধ্যে কেবল স্ত্রী গাছেরই মাদকতা আছে। ইনফেক্ট গাছের কোন অংশ নেই যেখান থেকে কোন প্রকার মাদক তৈরী হয় না! স্ত্রী গাছের শুকনো পাতাকে বলে সিদ্ধি বা ভাং। এখনো কালীপূজায় ভাং এর শরবতের রেওয়াজ আছে। ! স্ত্রী গাছের মঞ্জুরি শুকালে পাওয়া যায় গাঁজা আর গাছের কান্ড/পাতা/ফুল থেকে যে নির্যাস বের হয় সেখান থেকে তৈরি হয় চরস।

এবার গাজা সংক্রান্ত কিছু টার্ম জানা যাক। গাঁজা কাটার ছুরি নাম "রতন কাটারি" যে পিড়িতে গাঁজা কাটা হয় তার নাম "প্রেমতক্তি"। 'কলকির ভিতরে তিনকোনা পাথরকে বলে "টিকলী" আর ধোয়া ছাকবার ভিজে ন্যাকড়া "জামিয়ার" নামে পরিচিত। অঞ্চলভেদে এই নামের তারতম্য হয়। গাঁজার আসরে সাধারনত গোলাকার হয়ে বসার নিয়ম। বৃত্তাকারে বসা গাঁজার আসরে এক টান দিয়েই পাশের জনকে কল্কি বাড়িয়ে দেওয়া ভাতৃত্বের অনন্য নিদর্শণ যা নিমাই নামে পরিচিত। আর গাঁজান্ত্রের শেষ আচার হচ্ছে একটানে কল্কে ফাটানো!

গুপ্ত ঘাতকদের ইংরেজিতে বলা হয় assassin। শব্দটির জন্ম কিন্তু হাশিশ থেকেই। (হাশাসিনরা গুপ্তহত্যা করানোর জন্যে যে নতুন সদস্য যোগাড় করত তাদের ব্রেনওয়াশ করার জন্য হাশিশ প্রোয়গ করে হেরেমে নিয়ে বুঝাতো এটাই জান্নাত এবং এর জন্য কাজ করতে হবে। তবে এই ব্রেনওয়াশ করা হাশাসিনদের আবর্ভাব অনেক পড়ে হয়েছে)

তামাক গাঁজার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতিকর তার পরও গাঁজা নিষিদ্ধ আর তামাক সিদ্ধ! কারন হিসাবে ন্যোম চমস্কি অর্থ ব্যাবস্থা এবং উপনিবেশের বিষয়ে কিছু মজার এবং গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। তার মতে, টোবাকো ব্যাবসার সাথে উপনিবেশের ব্যাবসায়িদের যোগসূত্রের কারণেই এইটা সিগারেট লিগাল ড্রাগস। তবে সর্বত্র যে গাঁজা নিষিদ্ধ কথাটা সত্যি নয়। বেশ কিছু দেশে চিকিৎসার প্রয়োজনে গাঁজা বৈধ! দেশগুলির ভেতর আছে অষ্ট্রিয়া, ইজরায়েল, কানাডা, জার্মানি, নেদারল্যান্ড, স্পেন , ফিনল্যান্ড, পর্তুগাল এবং যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অংশ। এসব দেশে ডাক্তারের প্রেসকিপশন হলে গাঁজা কিনতে পাওয়া যায়! আমেরিকান কলেজ অফ ফিজিশিয়ানস এবং ব্রিটিশ মেডিক্যাল এসোসিয়েসন চিকিৎসায় গাঁজা ব্যাবহার সমর্থন করে! এসব দেশের ডাক্তারদের মতে গাঁজা মাদকাসক্তদের চিকিৎসা(!), বাত, এজমা, অটিজম, কোলন ক্যান্সার, বিষন্নতা, মৃগী, হেপাটাইটিস সি, উচ্চ রক্তচাপ, ব্লাড ক্যান্সার ইত্যাদি সহ প্রায় ২৫০ টি রোগর চিকিৎসায় ব্যাবহার করা যায়! কামউত্তেজাক হিসেবে সিদ্ধির ভাল নাম আছে। একসময় রাজা-বাদশাহরা হেরেমে যাবার আগে ঘিয়ে ভাজা সিদ্ধি সেবন করতেন।

শেষ কথাটুকু বলি, বিশ্বায়নের এই যুগে কেমিক্যাল এর দাপটে কুলীন গাঁজার সেই আগের কদর নেই আর নেই। তাই নেশার রাজ্যে গাঁজা এখন আর বনেদি না, আমজনতার।তবু গাঁজার মৌতাত পেতে চাইলে এখনি ছুটতে পারেন কোন ভন্ড মাজারে!

---তানভীর রাব্বানী


মন্তব্য

কৌস্তুভ এর ছবি

ব্যোম ব্যোম!

এত জানলেন ক্যাম্নে? ঘোরের মধ্যে দিব্যজ্ঞান লাভ হল নাকি? চোখ টিপি

অতিথি লেখক(শান্তিপ্রিয়) এর ছবি

বাহ! অনেক কিছু জানলাম। লেখা ভাল লেগেছে

আশালতা এর ছবি

অনেকদিন পর্যন্ত আমার জানা ছিল বিভিন্ন ঝোপে ঝাড়ে দেখতে পাওয়া গোলাপি ফুলের ঝিরি ঝিরি পাতার গাছগুলোই গাঁজার গাছ। জেনে চমৎকৃত হয়েছিলাম। পরে জানলাম সেটা ভুল। গাছের ছবি দিলে তাই একটু সন্দেহ ভঞ্জন করা যেত।

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

মহাস্থবির জাতক এর ছবি

১) বেদের কোথায় আছে গাঁজা ঈশ্বরের আহার্য? রেফারেন্স দিন।

২) মজার ব্যাপার, গাঁজা, ভাং ইত্যাদি কিন্তু উত্তেজনাবৃদ্ধির পাশাপাশি হ্রাস করতেও ব্যবহৃত হতো।

৩) মহাস্থানগড়ে গাঁজা উৎসব হয়, কেউ হয়তো ঠিক সময়ের সন্ধান দিতেও পারেন।

_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

শাহনাজ এর ছবি

আমার তো এজমার সমস্যা আছে। তাইলে কি গাঞ্জাই ভরসা!!!

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

তথ্যবহুল লেখা। গাঁজা জীবনে অনেক টেনেছি কিন্তু গাঁজাকে নিয়ে এভাবে কখোনও ভাবা হয়নি। বর্তমানে খুলনায় আমার পাড়ার ভাই এবং ভাড়াটিয়া বাবলু ছিলো সাবেক বাংলাদেশ গাঁজা সম্রাট, নীলক্ষেতের বাবুল। তার কাটাবনের খানকা শরীফে গিয়ে অনেক নামী-দামী বোজর্গানের দর্শন পেয়েছি, কল্কি ফাটানোর সাধনায় মগ্ন। প্রয়াত কবি রুদ্র এবং কবি রিফাত চৌধুরি (ইদানিংকালের অভিনেতা) কিভাবে 'বেয়াই' সম্পর্কে আবদ্ধ হলেন, তা'ও জেনেছিলাম। তবে অনেক বছর হয়ে গেলো আর গাঁজা টানিনা। আমস্টার্ডামে গিয়ে টানবো ভেবেছিলাম কিন্তু টানা হয়নি। সাথের সাথী ভাই নিদারুন মদ্যপায়ী হলেও এক্কেবারে ধুমপান বিরোধী। আমরা গাঁজাকে বলতাম শুকনো।

ইল বাবা মতিঝিল
৫০০ টাকার বাণ্ডিল।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

guest_writer এর ছবি

মাজার পর্যন্ত যাওয়া লাগবেনা। আমার পাশের ফ্লাটের মহিলা রোজ ফ্রাইডে নাইটে এই জিনিষ খায় হাসি । ধান্দায় আছি কিভাবে তার সাথে একটু খাতির লাগানো যায় দেঁতো হাসি

ধুসর গোধূলি এর ছবি

শুরুর কোবতেতে খানিকটা ভেজাল আছে। আসলটা হলো এইখানে,

শুনো মুমিন মুসলমানো,
যতো খুশি গাঞ্জা টানো,
মইরা গেলে তুমি তো আর গাঞ্জা পাইবা না।
আজ-রাইল যখন আইবো,
হাতে একখান বোতোল থাকবো,
দমে দমে ঢোঁক গিলিবো তোমায় দিবো না।

যাইহোক, ব্যোম ভোলানাথ...

chh এর ছবি

ভালো লাগল।। অনেক কিছু জানলাম।।

ধৈবত(অতিথি) এর ছবি

বাহ, তথ্যবহুল লেখা

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

পড়তে পড়তে ঝাপসা লেগে গেলো চোখ টিপি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ভিসি এর ছবি

গাজা নিয়ে আরেকটি সুন্দর গান আছে। ''গাজার নৌকায় পাহাড় বাইয়া যাই''
ইউটীউব এ গাজার নৌকা দিয়ে সার্চ দিলেই পাবেন

মাহবুব লীলেন এর ছবি

জয় গুরু

বিড়িতে যে হারে ট্যাকসো বসাচ্ছে আবার বিনা টেক্সের গাঞ্জা না ধরে উপায় নেই

সুমন চৌধুরী এর ছবি
বিপ্লব কুমার কর্নকার এর ছবি

শুনো মুমিন মুসলমানো,
যতো খুশি গাঞ্জা টানো,
মইরা গেলে তুমি তো আর গাঞ্জা পাইবা না।
আজ-রাইল যখন আইবো,
হাতে একখান বোতোল থাকবো,
দমে দমে ঢোঁক গিলিবো তোমায় দিবো না।

পরের লাইনগুলা মনে হয় এরকম.........

ওরে ও ভাই জগদীশ
আমারে একটু বেশী দিস

আমার আবার অল্পতে সহ্য হয় না ......

হিন্দুদের ত্রিনাথ ঠাকুরের গান বাজনায়ও গাঁজা অত্যাবশ্যক।
গানগুলোও গাঁজাময়.........
সাধন ভজন তত্ত্বে ও গাঁজার গুরুত্ব অপরিসীম। আলোচনায় অনুপস্থিত ।
বাঊলদের গাঁজা ছাড়া যে চলেই না।
আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবসের প্রাক্কালে এই পোস্ট বড়ই বেমানান।

কবি-মৃত্যুময় এর ছবি

মানবসভ্যতার পরবর্তী প্রজন্ম শক জাতির রেখে যাওয়া স্বর্গীয় বস্তুটির অমোঘ আকর্ষন কাটিয়ে উঠতে পারে নি।

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

গাঁজার গন্ধই মনে হয় পাচ্ছি চিন্তিত অবশ্য আজকাল চিপাচাপা/অন্ধকারের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মাঝে মাঝেই এই গন্ধ পাওয়া যায়। গাঁজাখোর কিছু বন্ধুর সুবাদে এই গন্ধ পরিচিত হয়ে গিয়েছিল, তবু এত তথ্য জানতাম না!!!

কোথাও 'সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ' যুক্ত করুন!!! চোখ টিপি

তারাপ কোয়াস এর ছবি

এইখানে গাঁজাকে বলা হয় উইড আর এটা ব্যাপক জনপ্রিয়। এতই জনপ্রিয় যে কিছুদিন আগে এক সংসদ সদস্য একে ডিক্রিমানালাইজ করার প্রস্তাব বিবেচনার কথা বলেছিলেন!


love the life you live. live the life you love.

তাসনীম এর ছবি

একটানেতে যেমন তেমন, দুইটানেতে রুগী, তিন টানেতে রাজা উজির চার টানেতে সুখী।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

সচল জাহিদ এর ছবি

শুভদা ছবির একটি গানের কথা মনে পড়ে গেলঃ

এক দমেতে সাধু
দুই দমে সন্যাসী
তিন দমেতে চাইয়া দেখ ভগবানের হাসি


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

তানিম এহসান এর ছবি

বাংলাদেশে এর নাম “তামাক”! কি পরিমান মানুষ “তামাক” খায় এবং তাদের সম্পর্কে বলতে গেলে পাতার পর পাতা ফুরোবে, কথা শেষ হবেন। এনথ্রোপলজি পড়ার সুবাদে তৃতীয় বর্ষে স্যারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বাউলদের উপর গবেষনা করেছিলাম। একটা কথা বলতে পারি, তারা তামাক কেউ নেশা হিসেবে খায়না, তারা খায় সাধন ভজনে। এবং এই সাধন ভজন আমাদের এই বঙ্গভূমির সুপ্রাচীন রীতি, সুপ্রাচীন রীতি এই ভারতীয় উপমহাদেশের এবং সেইসাথে ‘সুফিজম’ এর সাথে এর প্রাসঙ্গিকতা বহুৎই পুরোনা। বাংলাদেশের “ফকিন্নি নেশা’ হিসেবে যতই পরিচিত থাকুক, পৃথিবীব্যাপী এর যে প্রচার প্রসার তা ‘হার্ব’ হিসেবে। আমরা বোকাতো তাই সবকিছুতেই গন্ধ শুঁকি, গন্ধ শুকেই বলে দেয়া যায়, অথচ হুই‹ি, ভোদকা, ব্রান্ডি, রেড হোয়াইট কিংবা রোজ ওয়াইন, টাকিলা, মারগারিটার গন্ধ শুকে আমাদের নেশা হয়ে যায়, আমরা পার্টিতে পার্টিতে ‘ফরেইন’ খাই, ফরেইন যেকোনকিছুর ব্যাপক কদর এদেশে, দেশজ কোনকিছতে দারুন আপত্তি। বলে রাখি, এটাকে গাজাঁ হিসেবে নিষিদ্ধ করার ইতিহাস খুববেশী পুরনো নয়, যারা করেছিলো তারা মাদকের মধ্যে ‘ফেন্সিডিল’কে আইনত মাদক হিসেবে গ্রহন করেনি, ব্যবসা চলছে দেদার, চলছে হেরোইন, ইয়াবা। কেমিক্যাল নেশায় মাতাল এদেশের যুব, তরুন সমাজ, উচ্ছন্নে যাচ্ছে সবকিছু। যারা তামাক খায় তারা কিন্তু একটা কথা প্রায়ই বলে - তামাক খেয়ে কোনদিন কারো অনিষ্ট করা সম্ভব নয়। জানিনা, কিন্তু একটা কথা জানি, প্রাকৃতিক কোনকিছু কোনদিন মানুষের খুব বেশী ক্ষতি করেনি, যদি করেও থাকে তবে সে ক্ষতির প্রলেপ দিতেও সেই একই জিনিসের প্রয়োজন হয়। তানিম এহসান।।

পুনশ্চ: এই লিখা একপেশে মানুষের জন্য নয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

সাধন-ভজনের জন্য বাউলরা গাঁজা খায় না। গাঁজার একটা গুণ আছে মনকে কেন্দ্রীভূতকরার। বৈজ্ঞানীক গবেষণায় এটা পাওয়া নাও যেতে পারে, তবে ব্যাপারটা আছে। যেকোন ধরনের সাধনা বা ভজনায় মন কেন্দ্রীভূত করাটা জরুরী। সে কারণেই বাউলসহ বিভিন্ন লোকধর্মের সাধকগণ গাঁজা সেবন করেন। তবে মনে রাখতে হবে, এই গাঁজা সেবন কিন্তু সাধনার প্রাথমিক স্তরেই প্রযোজ্য। সাধনায় একটা লেবেল অতিক্রম করলে সাধকরা আর গাঁজা খায় না। এটা আমি নিজের চোখেই দেখেছি।
আর একটি বিষয়। মদ সম্পর্কে আমাদের অনেক ধরনের অজ্ঞতা আছে। যে অঞ্চলে যে ধরনের মদ তৈরি হয় সেই অঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবেই তার কাঁচামাল পাওয়া যায়। যেমন- প্রাচীন বাংলার গৌড় অঞ্চল। এই অঞ্চলে আখের গুড় হতো ব্যাপক মাত্রায়। কারণ আখ ভালো হতো এই অঞ্চলে। সেই আখের গুড় থেকে তৈরি করা হতো এক ধরনের রাম, যার নাম ছিলো গৌড়ী। এটা শোনা যায়, ভারতীয় কুলিদের হাত ধরে চলে যায় আফ্রিকা। সেখানেও গুড় থেকে তৈরি করা হয় রাম। টাকিলার কাঁচামাল যে অঞ্চলে জন্মে সেই অঞ্চলেই টাকিলা হয়। এবং প্রতিটি মদই সেই অঞ্চলের মানুষের জন্য উপকারী। মানুষ দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে গিয়েই সেগুলো তৈরি করেছে। মদ কিন্তু নতুন কোন জিনিস নয়। শত শত বা তারও বেশি সময় ধরে পৃথিবীতে চলছে। মানুষ তার অভিজ্ঞতায় যা ক্ষতিকর তা বাদ দিয়ে দিয়েছে, অন্তত খাবার তালিকা থেকে। কাজেই মদকে অপরাধী করার কোন মানে নেই। বরং মদের অপব্যবহার করাটা খারাপ।

guest_writer এর ছবি

হুমায়ুন আহমেদের একটা লিখা পড়ছিলা গাজা নিয়া। তবে আপনার লিখাটা আরও তথ্যবহুল। ভালো লাগল।

============
আমি জানি না

মোস্তফা ইমরান এর ছবি

তানিম এহসানকে সহমত। একই সাথে লেখককেও।
"জয়গুরু মহাদেব"

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

গাঁজার কথা উঠলেই এক নামকরা গেঁজেলের কথা মনে পড়ে যায়। আর মনে পড়ে "কুবলা খান"-এর কথা। এই গেঁজেলের নাম স্যামুয়েল টেইলর কোলরিজ। লিঙ্ক দেখুন,

http://en.wikipedia.org/wiki/Kubla_Khan

আর হ্যাঁ, লেখায় পাঁচ তারা।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

আশরাফ মাহমুদ এর ছবি
তানভীর রাব্বানী এর ছবি

@ কৌস্তুভ দাঃ না মানে ... ইয়ে আরকি হাসি
ধন্যবাদ শান্তিপ্রিয় পড়ার জন্যে।

তানভীর রাব্বানী এর ছবি

@আশালতাঃ সুমন চৌধুরী একটা youtube link দিয়েছেন দেখলাম। দেখতে পারেন সেটা। ধন্যবাদ সুমন দা!!

তানভীর রাব্বানী এর ছবি

@আশালতাঃ সুমন চৌধুরী একটা youtube link দিয়েছেন দেখলাম। দেখতে পারেন সেটা। ধন্যবাদ সুমন দা....

তানভীর রাব্বানী এর ছবি

@মহাস্থবির জাতকঃ এইতো দিলেন ভাই ভেজালের মধ্যে ফালাইয়া... হাতের কাছে আপাতত কোন Reference নেই। দেশে থাকতে যে বইতে পড়েছিলাম সেটা confirm করার চেষ্টা করছি, পেলে জানাব।
বিঃদ্রঃ কেন জানি ধর্মের সু-উপদেশগুলো মাথায় থাকে না... থাকে কেবল এইটাইপ ফাকফোকর

মহাস্থানগড়ে গাঁজা উৎসবের খবর জানতাম না। নতুন তথ্যের জন্যে ধন্যবাদ। নিউ ইয়র্কে সেন্ট্রাল পার্কে নাকি এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে উইড(গাঁজা) উৎসব হয়। এক ইন্ডিয়ান বন্ধু দাওয়াত দিয়েছিল। মিস করেছি মন খারাপ

তানভীর রাব্বানী এর ছবি

@রাতঃস্মরণীয়ঃ হ্যা শুকনো নামটা আমিও শুনেছি......
@ধুসর গোধূলিঃ আপনার কোবতেতো দেখি আরো জব্বর
@নজরুল ইসলামঃ দাদা ঘোর লাগেনাইতো আবার!!!
@মাহবুব লীলেনঃ কথা সত্য......
@কবি-মৃত্যুময়ঃ 'সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ' তো লিগ্যাল প্রডাক্টে লাগানোর নিয়ম। গাঁজাতো ইলিগ্যাল চোখ টিপি

তানভীর রাব্বানী এর ছবি

@রাতঃস্মরণীয়ঃ হ্যা শুকনো নামটা আমিও শুনেছি....
@ধুসর গোধূলিঃ আপনার কোবতেতো দেখি আরো জব্বর
@নজরুল ইসলামঃ দাদা ঘোর লাগেনাইতো আবার!
@মাহবুব লীলেনঃ কথা সত্য!!
@কবি-মৃত্যুময়ঃ 'সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ' তো লিগ্যাল প্রডাক্টে লাগানোর নিয়ম। গাঁজাতো ইলিগ্যাল চোখ টিপি

তানভীর রাব্বানী এর ছবি

@ তাসনীম /সচল জাহিদঃ "একটানেতে যেমন তেমন, দুইটানেতে রুগী, তিন টানেতে রাজা উজির চার টানেতে সুখী" --এই গান টা Youtube আছে কিন্তু শুভদা ছবির গানটা কোথাও খুজে পেলাম না ... কারো কাছে লিংক থাকলে দিয়েনতো

শ্রীকৃষ্ণ এর ছবি

আহা মধু মধু !!! গুরু গুরু গুরু গুরু শুধু একটা জিনিস এর রেফারেন্স দিবেন...... খুব উপকার হইত...বহুত উপকার হইত "সিগারেট গাজা এর চেয়ে ক্ষতিকর" .......... অনেক লোক এর মুখে ঝামা ঘষে দিতে পারতাম...... কি জে মরার দেশে আইলাম পড়াশুনা করতে এই মহা দামী জিনিস থেকে বঞ্চিত ।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

লন্‌, আপনারে একটা হেম্প সুন্দরীর ক্ষেতই উপহার দিলাম।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দিগন্ত বাহার () এর ছবি

'শোন মমিন মুসলমানও' গানের আরো কিছু লাইন মনে পরে গেল,

'দুই কান্ধ দুই ফেরেশতা
লইয়া যাবে গাঞ্জার বস্তা
তোমারে দেখাইয়া খাবে
তোমায় দিবে না।'

এইবার ব্যোম্‌ ভোলানাথা...

শুভদার গান পাইছি, আপনারা কে কে গাঞ্জানেন, গাইয়া যান প্রাণ খুলে - http://bit.ly/iEvhyC

দিগন্ত বাহার () এর ছবি

'শোন মমিন মুসলমানও' গানের আরো কিছু লাইন মনে পরে গেল,

'দুই কান্ধ দুই ফেরেশতা
লইয়া যাবে গাঞ্জার বস্তা
তোমারে দেখাইয়া খাবে
তোমায় দিবে না।'

শুভদার গান -
'এই নেশার জোরে চিন্তারামকে পাঠিয়ে দিলেম মর্গে,
তা না হলে আমরা অধম কী করে রই স্বর্গে?'

পুরা গানটা দেখেন [url=http://on.fb.me/j9wUfJ ]এখানে[/url]

শ্রীকৃষ্ণ এর ছবি

গানটার জন্য কোলাকুলি

ধূসর স্বপ্নগুলো এর ছবি

তানভীর রাব্বানী ভাই, ভাল লাগল গাঁজা প্রেমিকের পোস্ট দেখে ... হাসি
আমি নিজেও একজন "পার্ট টাইম" # প্রেমিক, এবং আমি সিগারেট ও কেমিকাল খাই না (অনেকেরই ভুল ধারণা থাকে)হাসি
যারা জানে না তাদের জন্যই বলছি, গাঁজার মুল আকর্ষণ হচ্ছে আসর (গোল হয়ে বসা) ।
এই আসরের মজার সাথে কোন কিছুরই তুলনা করা অসম্ভব ...
"প্রাণে প্রাণ মেলাবই বলে রাখি ..."
ধন্যবাদ, অনেক জিনিসের আদি নাম জানতে পারলাম হাসি

guesr_writer rajkonya এর ছবি

গাঁজা সেবন ভাল নয়। মন খারাপ(

নির্বাক পাঠক এর ছবি

নির্বাক পাঠক এর ছবি

কবীর এর ছবি

আগ্রহী পাঠকেরা সুস্বাস্থ্য-ডট-কম (www.susastho.com) এই লিঙ্কটি দেখতে পারেন।

কবীর এর ছবি

আগ্রহী পাঠকেরা এই লিঙ্কটি দেখতে পারেন।

নৈষাদ এর ছবি

তখন চিটাগাং থাকি, পড়াশোনা চলছে। ঢাকা থেকে কয়েক বন্ধু বেড়াতে গেছে, গানটান গায়। ঠিক হল কাপ্তাইয়ের দিকে একটা রিসোর্টে সারাদিন কাটাবো - গানটান, খানাপিনা হবে...। ঢাকার গায়ক বন্ধু ধরল গান গাইতে ‘সাল্টু লাগবে’। কই পাই ‘সাল্টু’!! স্পেশালিস্ট ধরা হল...সাল্টু কী বুঝানো হল... ওহ্‌! বুইল্যা, আরে মেডিক্যাল কলেজে যান...।

অতিথি লেখক এর ছবি

গাঁজা কাটার ছুরি নাম "রতন কাটারি" যে পিড়িতে গাঁজা কাটা হয় তার নাম "প্রেমতক্তি"। 'কলকির ভিতরে তিনকোনা পাথরকে বলে "টিকলী" আর ধোয়া ছাকবার ভিজে ন্যাকড়া "জামিয়ার" নামে পরিচিত।

ইয়ে, মানে... ব্যাপক , আপ্নে ত ভাই রীতিমত গাঁজা নিয়ে রিসার্চ করে ফেলেছেন দেঁতো হাসি
ইসরাত

সুদীপ এর ছবি

"গাঁজার নৌকা পাহাড় বাইয়া যায়" এই গানটার কথা মনে পরে গেলো। কেউ কি এর লিঙ্ক দিতে পারবেন?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।