মরা কুকুরকে কেউ লাথি মারে না

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ১২/০৭/২০১১ - ১০:৩৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১৯২৯ সালে এমন একটা ব্যাপার ঘটে ফলে সমগ্র আমেরিকার শিক্ষাবিদ মহলে বেশ একটা আলোড়ন ঘটে যায়। সকল শিক্ষাবিদগণ ব্যাপারটা দেখার জন্য ছুটে যান শিকাগোতে। কয়েক বছর আগে রবার্ট হ্যারিচসন নামে এক তরুণ ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বেড়িয়েছিলেন। এই সময় তিনি ওয়েটার, কাঠুরে, কাপড়ের ফেরিওয়ালা হিসেবেই জীবিকা নির্বাহ করতেন। এরপর মাত্র আট বছর পরে, তাঁকে-ই আমেরিকার চতুর্থ অর্থশালী বিশ্ববিদ্যালয় শিকাগোর প্রেসিডেন্ট পদে বরণ করা হয়েছিল। তাঁর বয়স ? মাত্র ৩০! ব্যাপারটা অবিশ্বস্য। অন্যান্য শিক্ষাবিদরা মাথা ঝাকাতে চাইলেন। পাহাড় গড়ে পড়া পাথরের স্রোতের মতই সমালোচনার ঝড় বয়ে গেল। সকলে নানা ভাবে সমালচনা করে বলতে লাগলেন, "সে- এ নয়! তা-নয়!" --তাঁর বয়স কম, অভিজ্ঞতা নেই, শিক্ষার ব্যাপারে তাঁর মাথা বাঁকা পথে চলে, ইত্যাদি। এমন কি, খবরের কাগজগুলো পর্যন্ত সকলের সুরে সুর মেলালো।
তাঁকে যে দিন প্রেসিডেন্ট পদে বরণ করা হয় সেদিন-ই তাঁর বাবা 'রবার্ট মেসারদ হ্যাচিনসন-কে তাঁর এক বন্ধু বললেন, " আজ সকালে খবরের কাগজের সম্পাদকিয়তে তোমার ছেলের বিরুদ্ধে মন্তব্য দেখে খারাপ লেগেছে।" "হ্যাঁ", হ্যাচিনসনের বাবা জবাব দিলেন, " খুব-ই করা সমালোচনা, তবে মনে রেখ, কেউ মরা কুকুর-কে লাথি মারে না"
কথাটা সত্যি। কুকুর যতো নামী হয়, ততই আবার লোকে তাকে লাথি মেরে মানসিক আনন্দ পায়। প্রিন্স অব ওয়েলস, যিনি পরে অষ্টম এ্যাওয়ার্ডেড হন (এখন ডিউক অব উইন্ডরস) বেশ ভালো রকম লাথি হজম করার কথাটা বুঝতে পেরেছিলেন। তিনি তখন ডেভিনশায়ারে ডার্টমুখ কলেজে শিক্ষা নিচ্ছিলেন। এই কলেজ আনাপেলিনের নৌ-বাহিনীর সমতুল্য। প্রিন্সের বয়স তখন চৌদ্দ। একদিন এক নৌ-অফিসার তাঁকে কাঁদতে দেখে কান্নার কারন জিজ্ঞাসা করলেন। প্রথমে প্রিন্স কথাটি বলতে চাননি, পরে সত্য বলে ফেললেন। তাঁকে নৌ-শিক্ষার্থীরা লাথি মেরেছে। কলেজ কমডার সমস্ত ছেলেদের ডাকলেন। তারপর তাদের বললেন, প্রিন্স কোন অভিযোগ করেনি, তবুও তিনি জানতে চান, প্রিন্সকে এরকম কড়া আচরণের জন্য বেছে নেওয়া হল কেন? পরিস্থিতি বেশ ঘোলাটে হওয়ার পর তারা জানান, যে পরবর্তীতে তারা যখন রাজার নৌ-বাহিনীতে ক্যাপ্টেন ও কমান্ডার হবে তখন এই ভেবে আনন্দিত হবে যে একদিন তারা রাজা-কে লাথি মেরেছিল।
এই ঘটনাগুলোর মূল বক্তব্য হল, আপনাকে যখন কেউ লাথি মারবে বা আপনার সমালোচনা করা হয়, তখন লোকটির মনে দারুন শ্রেশ্তত্ত জাগে। এ থেকে বোঝা যায় যে, আপনার মাঝে এমন কিছু আছে বা আপনি এমন কোন ভালো কাজ করেছেন যা নজরে পড়ার মত।

খালিদ শাহরিয়ার রানা


মন্তব্য

তানিম এহসান এর ছবি

চলুক

কৌস্তুভ এর ছবি

মজার ঘটনার কথা ভালো লাগল। শেষের মরাল-টাও মিথ্যা নয়।

লেখার ফরম্যাটিং আরেকটু গোছানো হতে পারত। আরো দুয়েকটা গল্প হলেও আরো জমত।

তাওহীদ আহমদ এর ছবি

চলুক হাসি

প্রায় একই রকমের আরেকটা গল্প – অনেক আগে ভারতবর্ষের এক বনে এক সাধু বাস করতেন। বনের আশেপাশের লোকালয়ের জনগণ তাদের সন্তানদের তাঁর কাছে পাঠাতেন সত্যিকারের বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী মানুষ হিসাবে গড়ে উঠার জন্য। একদিন তাঁর এক সেরা ছাত্র অভিযোগ করলো, “গুরুদেব, ক্লাশে সবাই আমাকে শুধু শুধূ বকাবকি করে। আমি অনেক চেষ্টা করেছি তাদের সাথে মেশার কিন্তু তারা সবসময়ে আমাকে এড়িয়ে চলে, এমনিক কোন খেলাতেও নেয় না।”

সাধু হাসলেন। তিনি জানতেন এ হলো তাঁর ক্লাশের সেরা ছাত্র, সবার চেয়ে এগিয়ে। বললেন, “কাল সকালে এসো। আমরা সকাল সকাল একটু হাঁটতে বেরোব। তখন তোমাকে কিছু কথা বলবো।”

পরের দিন সকালে দুজনে হাঁটতে বের হলেন। কিছুদূর গিয়ে সাধু দেখেন একটি কুকুর রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে ঘেউঘেউ করছে। তিনি ছাত্রটিকে বললেন, “যাও কুকুরটাকে একটা লাথি মার।”

ছাত্রটি দারুণ উৎসাহে দৌড়ে গিয়ে দিল কষে এক লাথি। কুকুরটা কেঁউ কেঁউ করে পালিয়ে গেল। কিছুদূর গিয়ে সাধু দেখেন একটি মৃত কুকুর রাস্তার উপর। তিনি ছাত্রকে আবার বললেন, “যাও এটাকেও লাথি দিয়া আস।”

ছাত্রটি বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,“কেন? কেন আপনি মরা কুকুরকে লাথি দিতে বলছেন?”

“তুমি আগের কুকুরটিকে কেন লাথি মেরেছিলে?” জিজ্ঞেস করলেন সাধু।

“আমি ভেবেছিলাম তার চিৎকার থামানোর জন্য আপনি লাথি মারতে বলেছিলেন।”

“তুমি কিন্তু খুব উৎসাহের সাথে দৌড়ে গিয়েছিলে। আমি কী তোমাকে বলেছিলাম তার চিৎকার থামানোর জন্য, নাকি শুধু লাথি মারতে বলেছিলাম?” সাধু তাঁর ছাত্রকে জিজ্ঞেস করলেন। বিভ্রান্ত ছাত্রটি এরপর গুরুর কাছে এর ব্যাখ্যা জানতে চাইলো।

সাধু বললেন,“ শুন বাছা, কিছু মানুষ আছে যারা বেশি কম্মের না, প্রতিদিন সকালে উঠে অন্যের ছিদ্রান্বেষণে ব্যস্ত থাকে, তবে মরা কুকুরেরটা বাদে। কাজেই যখন মনে করছো সহপাঠিরা তোমার কোন মূল্যায়ন করছে না, আজে বাজে কথা বলে, তেতো সত্যটা হলো তুমি তোমার কাজ দিয়ে এতোই এগিয়ে আছ যে তারা তোমার সাথে মিশতে অস্বস্তি বোধ করে। সেটাকে কাটানোর জন্যই ওরকমটা করে। মানুষের স্বভাব হলো নিজের যোগ্যতার সমান কারো সাথে সে স্বস্তি বোধ করে। যখনই তার ধারণার বাইরে এরকম কাউকে পায়, তাকেই কুকুর বানিয়ে লাথি মারতে শুরু করে। কিন্তু বাছা, এর সমাধান কী? সমাধান হলো তাদের মতো না হতে চেয়ে বা তাদেরকে নিজের মতো বদলাতে না চেয়ে নিজ লক্ষ্যে অটুট থেকে সৎভাবে নিজের কাজটুকু করে যাওয়া।

মনে রাখবে, সবাই ঘেউ ঘেউ করা কুকুরকে যদিও লাথি মারতে চায়, শেষমেষ কিন্তু চিৎকাররত কুকুরই সবার মনোযোগ লাভ করে।”

ciao2tawhid@gmail.com

কৌস্তুভ এর ছবি

হাসি

guest_writer এর ছবি

আপনার লেখাটা বেশ ভালো লাগলো , উতসাহব্যঞ্জক। সাথে তাওহীদ আহমদের মন্তব্যটাও।

পড়াচোর।

ফাহিম হাসান এর ছবি

অল্প কথায় চমৎ্কার বলেছেন

orbaceen pathok_ এর ছবি

ছোটবেলায় ডেল কার্নেগী পড়েছিলাম। তার কথা মনে পড়ল।

আপনার কাছে মৌলিক লেখা প্রত্যাশা করছি। হাসি

সচল জাহিদ এর ছবি

নামটা বোধহয় রবার্ট হাচিন্স হবে (Robert Hutchins)। যে অংশটুকু নিয়ে আপনি পোষ্ট দিয়েছেন সেটি একটি লেখার প্রারম্ভিক অংশ হলে ভাল হতো অর্থাৎ শিবের গীত।

আর শুধু ভাল কিছু আছে বলেই সমালোচনা করছে এমনটা ভাবা সমীচিন হয়। হিটলার, মুসোলিনী, ইদি আমিন দের নিয়ে বিস্তর সমালোচনা হয়েছে, ভাল কি ছিল এদের মধ্যে সেটা বলাই বাহুল্য। বারাক ওবামাকে নোবেল শান্তি পুরষ্কার দেবার পর সমালোচনার ঝড় বয়েছে, ভেবে দেখুন আসলেই কি ঐ মূহুর্তে সে ঐ সম্মান পাবার যোগ্য ছিল কিনা? এরকম হাজারটা উদাহরণ দেয়া যাবে।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

ইস্কান্দর বরকন্দাজ এর ছবি

হাসি

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

জিনিসটা সবসময় সত্য না। আকাম করলেও পাবলিক লাথি মারে।
কেউ সমালোচনা করলে সমালোচনা কেন করলো, একটু ভেবে দেখা যেতে পারে। সমালোচনা জাস্টিফায়েড মনে হলে মেনে নেয়া ও আত্মশুদ্ধি করা ভালো, জাস্টিফায়েড না হলে নিজের অবস্থানের ওপর আত্মবিশ্বাস বাড়বে। নাহলে আমারে সমালোচনা করা মানেই আমি বস - এটা আত্মম্ভরিতার জন্ম দেয়। আত্মম্ভরিতা != আত্মবিশ্বাস।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

নিটোল(অতিথি)  এর ছবি

ভালো লাগল লেখাটা পড়ে। এখন নিজেকেও গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে। দেঁতো হাসি

নিটোল

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

জীবনে কয়েকটা ফ্লাইং কিক খাইছি।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

তানিম এহসান এর ছবি

ফ্লাইং কিকে বড় ব্যাথা, আমাবস্যা পূর্ণিমা তিথীতে টনটন করে দেঁতো হাসি

পাগল মন এর ছবি

রানা, আমার মনে হয় সচলে এটা তোর প্রথম লেখা (আমি ১০০% নিশ্চিত না) । সচলে স্বাগতম।
গল্পটা ভালো লেগেছে, আরেকটু বড় হলে আরো ভালো লাগত।

তবে দোস্ত বানানের দিকে একটু নজর দিস।
করা সমালোচনা: কড়া সমালোচনা
শ্রেশ্তত্ত: শ্রেষ্ঠত্ব

------------------------------------------
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।

Salehin এর ছবি

ভালো লাগলো, কিণ্তু পুরোটাই কি আপনার লেখা?
দেখুন তো চিনতে পারেন কি না? মেলে কি না ?

How To Stop Worrying And Start Living - By Dale Carnegie

Part Six - How To Keep From Worrying About Criticism
Chapter 20 - Remember That No One Ever Kicks A Dead Dog

Read the book here: http://www.freeinfosociety.com/media/pdf/3116.pdf

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।