ম্যাড ওয়ার্ল্ড

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ৩০/১২/২০১১ - ১০:৪৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ইদানিং কিছু ছেলেপেলে দেখা যায় বড় ভাইয়া বলে সম্বোধন করে। কেমন যেন বিব্রত বোধ করি।বিব্রত হবার মত যথেষ্ট কারনও আছে। এইট-নাইন পড়ু্য়া ছেলেগুলোর সাইজ হাতির মত,লাল লাল চোখ,মুখ ভর্তি খোঁচা খোঁচা দাড়ি-গোঁফ ,গড় গড় করে হিন্দী বলে,রাস্তায় দেখলে মোটা মোটা দুই হাত বাড়িয়ে গর্জন করতে করতে ছুটে আসে !! কি ভয়ংকর ! দেখতে দেখতে আমিও বড় ভাই হয়ে গেলুম..মন খারাপ ছোটবেলায় ভাবতাম কখন বড় হব্,কখন বড় হব.. আর এখন ?? আফসুস ,গাধার মত বড় হয়েই যাচ্ছি..রেগে টং

বড় হয়ে কোন লাভই হল না..সত্যি বলতে কি কোন দরকারই ছিলনা।অন্তত এখন পর্যন্ত কোন উপযুক্ত কারন পাইনি।(প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে বড় হতে হবে ভাবতেই মেজাজ গরম হয়ে যাচ্ছে) কি হবে আরো বড় হয়ে ?ঘোড়ার ডিম ছাড়া শেষে আর কি আছে ?

জন্মের পর থেকেই জ্যামে আটকা পড়ে আছি।পেছনে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই্‌,ঠেলেঠুলে যেভাবে পার সামনে যেতে হবে,গম্ভীর মুখে বড় হতে হবে ।বুদ্ধিশুদ্ধি হবার পর থেকে পড়াশুনা করে যাচ্ছি্‌,করে যাচ্ছি।থামাথামির কোন আশা দেখতেছি না। ১৪-১৫ টাবছর কাটিয়েই দিলাম ক্লাসে বসে বসে । মাদ্রাসার ধুসর জীবন থেকে যেবার প্রাইমারী স্কুলে ঢুকলাম মনে হয়ছিল ,আহা…জীবন কত রঙিন। আর কি লাগে?? কিন্তু নাহ্‌, পরে দেখলাম আরো কিছু লাগে। আমাকে এবং আমাদের কে বুঝানো হল প্রাইমারী বৃত্তি না পেলে আসলে কিছুই হবে না।ওটাও নিলাম। পরবর্তীতে ক্লাস সিক্স’এ ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে সরকারী স্কুলে ভর্তির পর মোটামুটি নিশ্চিতই ছিলাম যে আর কিছু লাগবে না।লাইনে চলে আসছি। জুনিয়র বৃত্তিতে টেলেন্টপুল পাওয়ার পর মনে হল বাহ !! সবই তো পাওয়া হল । ভুল বুঝছিলাম। ক্লাস নাইনে উঠার পর থেকেই সব টীচারদের একটাই কথা এসএসসি পরীক্ষাটাই আসলে সব কিছু।একটা এ-প্লাস ছাড়া জীবন পুরোপুরি ব্যর্থ হয়ে যাবে।এইটাতে ভাল না করলে এতদিনের পড়ার আসলে কোন মানে নাই। কি ভয়াবহ কথা !! কোন মানে নাই,আগের সব অর্থহীন?? এটা কোন ধরনের ফাইজলামি(বেইমানি) ?

মজার ব্যাপার হচ্ছে মানুষের জীবনে খারাপ ঘটনাগুলো কেন জানি দলবেধে আসে। আব্বুর দোকানে ডাকাতি হল। অর্থাভাব বলে যে বিষয়টা গল্প-উপন্যাসে পড়েছি সেটা নিজের চোখে দেখতে শুরু করেছি। বুকের ভেতর শুধু কষ্ট।হুমায়ুনীয় ভাষায় বলতে হয় এই কষ্টের জন্ম এই ভুবনে না্‌,অন্য কোন ভুবনে…লুল।

''গভীর রাতে ঘুম ভেঙ্গে যায় প্রায়ই। ছাড়া ছাড়া অর্থহীন স্বপ্ন দেখতে দেখতে হঠাৎ জেগে উঠি।পরিচিত বিছানায় শুয়ে আছি এই ধারনা মনে আসতেও সময় লাগে। তৃষ্ণা বোধ হয়। টেবিলে ঢাকা দেয়া পানির গ্লাস।হাত বাড়িয়ে টেনে নিলেই হয় অথচ ইচ্ছে হয় না।কোন কোন রাতে অপূর্ব জোছনা হয়।সারা ঘর নরম আলোয় ভাসতে থাকে।ভাবি, একা একা বেড়ালে বেশ হত। আবার চাদর দিয়ে নিজেকে গুটিয়ে ফেলি। যেন বাইরের উথাল পাতাল চাদের আলোর সঙ্গে আমার কোন যোগ নেই।

মাঝে মাঝে বৃষ্টি নামে। একঘেয়ে কান্নার সুরের মতো সে শব্দ।

আমি কান পেতে শুনি। বাতাসে জাম গাছের পাতার সর সর শব্দ হয়।সব মিলিয়ে হৃদয় হা হা করে উঠে।আদিগন্ত বিস্তৃত শূন্যতায় কি বিপুল বিষণ্নতাই না অনুভব করি। জানালার ওপাশের অন্ধকার থেকে আমার সঙ্গীরা আমায় ডাকে। একদিন যাদের সঙ্গ পেয়ে আজ নিঃসঙ্গতায় ডুবছি।'' (শঙ্কনীল কারগার)

হা হা হা। কিশোর বয়সের যন্ত্রনাগুলো খুব ক্লাসিক।বুকের ভেতর শুধু হাহাকার। যাই হোক্‌, গভীর অন্ধকারের ঘুম থেকে বাস্তবতার ছল ছল শব্দে জেগে উঠলাম আবার । এসএসসি যে একটা মারাত্মক পরীক্ষা তা বুঝেছি নাইনে উঠার পর থেকেই। দেখতাম টেনের ছাত্ররা কেমন যেন গুরুগম্ভীর হয়ে উঠছেন,কুতুবি স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তে যাচ্ছেন। পরীক্ষার ভাবগাম্ভীর্য ,সবার চিন্তিত হাবভাব দেখে মনে হল আমি হয়ত এতদিন এটার খুজেই ছিলাম।এই পরীক্ষাটাই ভাল করলেই হয়ত ট্র্যাকে চলে আসব।কলেজে উঠেই রঙিন জীবন শুরু হবে। গোল্ডেন জিপিএ। অতঃপর কলেজ। যথারীতি ভুল ছিলাম। অল্প কিছুদিন পরেই কলেজের কড়া শিডিউল্‌,শিক্ষকদের ক্রমাগত ভয়-ভীতি প্রদর্শন দেখে আক্ষরিক অর্থেই ঢোক গিললাম।নিজেই নিজেকে দোষ দিই। এমন গাধা তুই সত্যিকারের সীমানা চিনলি না।চোখ মেলে দেখ এইচএসসি দিয়ে ভর্তি পরীক্ষার গন্ডি পেরিয়ে ভার্সিটি গেলেই আরামের দিন শুরু হবে।

যথারীতি যে জীবন দোয়েলের,ফড়িংয়ের মানুষের সাথে তার কোনকালেই দেখা হচ্ছে না । যাই হোক,কোন একদিন নিশ্চয় হবে। আমি আশায় বুক বাধি।আরেকটা গোল্ডেন জিপিএ (আর কি লাগে?) হাতে নিয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য যুদ্ধ শুরু করে দিলাম। আমি এখন নিশ্চিতভাবেই জানি এটাই শেষ।এরপরেই শুরু হবে সুখে-শান্তিতে বসবাস।ভার্সিটি উঠেই ২-৩টা টিউশনী করব। বাসা থেকেই আর টাকা নেয়া লাগবে না।আরামে চার বছর শেষ হয়ে যাবে।এরপর নিজে কিছু একটা করব,আব্বুকে আর বুড়ো বয়সে কাজ করতে হবে না ।এইসব আকাশ-কুশুম ভাবতে ভাবতেই ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে দিলাম।

ক ইউনিটে ৪৪তম হয়ে এটা সেটা ভেবে জেনেটিক্সে ভর্তি হয়ে গেলাম।আহা..দুনিয়াজুড়ে কত শান্তি। ভার্সিটিতে পড়াশুনা তেমন করতে হয় না , সপ্তাহে ২-১দিন ক্লাস হয়, সারাদিন ঘুরব এমন একটা ধারনা ছিল আমার। ।নাহ্‌, শান্তি শান্তি ভাব খুব বেশিদিন ছিল না।মহাকর্ষকে অগ্রাহ্য করে আকাশে উড়তে থাকা আমি ভূপাতিত হলাম।এখানেও পড়াশুনা করা লাগে। এতটুকু স্বাধীনতা নেই। নিয়মিত ক্লাস করা লাগে..মুখস্থ করা লাগে..দেশে কোন চাকরি নাই..ক্লাসে গাধার মত লেকচার তুলা লাগে..কান দিয়ে শুন,চোখ দিয়ে দেখ,হাত দিয়ে লেখ..ছলাকলার শেষ নেই..উফফ..আর কত ?? ভর্তি কোচিং করার সময় এমন একটা অবস্থা ছিল যে যেন ভর্তি পরীক্ষা না ,স্বর্গের টিকেটের জন্য যুদ্ধ করতে যাচ্ছি। আর এখন,এত হৈচৈ ,তিক্ততা শেষে এই ? আরো অনেকদূর যেতে হবে??এমন নির্দয় জগতে একটা খুন করতে বেজায় শখ হয়..অনেককেই খুন করা যায়..সব রাগ গিয়ে পড়ে কিছু নিমকহারাম আত্মীয়ের উপর..ওরা বেইমানি না করলে এখন এত টেনশন করতে হত না..আমার যথেষ্ট কারন আছে খুন করার..খুব বেশি নয়,একশো বা এক হাজার নয়,মাত্র ১টি খুন..

''মাত্র ১টি খুন করা আমার জন্য জরুরি হয়ে পরেছিলো,মনে হয়েছিলো ওটা না করলে আমি বাচবো না..একটি খুনের জন্য আমি পাগল হয়ে উঠেছিলাম,আমার ভেতরে একটি বদ্ধ উন্মাদ নিঃশব্দে নিজের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেছিল,যদিও খুন করা আমি শিখি নি;আমি জানতাম না খুন করতে হলে কী করতে হয়,ছুরি কীভাবে কোথা থেকে জোগাড় করতে,ধরতে,চালাতে হয়,ছুরিটা কতোটা দীর্ঘ,কতোটা ধারালো হতে হয়,কতোটা ধারালো হলে সেটা বুক ফেড়ে হৃৎপিণ্ড কলজেকে দু-ভাগ করে ফেলে,খুন করার সময় হাত কাঁপে কি না,উল্লাসে বুক ঝলমল করে কি না ,বা পাথরের মতো শক্ত হয়ে ওঠে কি না,কোনখানে ঢুকোলে সেরা ফল পাওয়া যায়;পিস্তলই যদি ব্যবহার করি,-যদিও পিস্তল জেমস বণ্ড ধরনের বইয়ের প্রচ্ছদে ছাড়া আমি কখনো দেখি নি..'' (একটি খুনের স্বপ্ন)

বাসায় এমনকি আম্মু কে ফোন দিয়ে বলেছিলামও ,''আম্মু ,ওই চাচা'কেখুন করতে চাই..।''.. আম্মুকে আমি এমন অনেক কিছুই বলি।অনেক কিছু.. খুন আমি করেছিলামও। তবে নিজেকে।ওই বছর পুরোপুরি মৃত ছিলাম।ভার্সিটি যেতাম না ,ক্লাস করতাম না.. সবকিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলাম..এটা দরকার ছিল আমার জন্য..

আমরা আমাদের জীবনে কতবার ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছি কোন হিসেব নেই।জন্মের পর থেকে প্রতি বছর নভেম্বর-ডিসেম্বরে একটা করে ফাইনাল পরীক্ষা দিই।একটা চক্রের মত। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সব একই। এখন যেমন বুঝানো হয় cgpa কোন বিষয় না। জিআরই তে ভাল করতে হবে। স্কলারশিপ নিয়ে টানাটানি করতে হবে।অনেকেই ইতিমধ্যে পাগলের মত পড়া শুরু করে দিয়েছি.. আকাশে বাতাসে জপ শুরু হয়ে গেছে.. জুনে জিআরই দিতে হবে..জিআরই দিতে হবে , প্রেশার তৈরি করা হচ্ছে , পুরনো প্যাচাল....লোভ দেখানো রঙিন রঙিন গল্প.... ফালতু লাগে এইসব এখন....ফালতু লাগে।আমরা কি জানি কি ভয়ংকর একটা সিস্টেমের মাঝে আমরা বন্দী হয়ে আছি। আমি এমন চক্র চাইনি। অনেক কষ্ট-টষ্ট করে কিছু পাওয়ার পর যখন দেখবেন এটা বেস্ট ছিল না্‌ ,আরো বাকি আছে এর চাইতে হতাশার আর কিছু হতে পারে না।

''আরো আরো আরো, চাই চাই চাই- এই হচ্ছে সুর, যে সুরে বেজে চলে জীবন, যে সুরে দিন আর রাত্রি কালের হাওয়ায় উড়ে যায়,ঝরে পড়ে। আমরা ভুলে গিয়েছি বাচবার মানে কি..জীবনের সব চেতনা নিংড়ে বের করে নেয়া হয়েছে আমাদের ভেতর থেকে যাতে আমরা যোগ্য হতে পারি পয়সা কুড়াবার,পয়সা উড়াবার এরই নাম কৃতিত্ব।'' - বুদ্ধদেব বসু

আচ্ছা, চিন্তা করে দেখুন তো আপনি আপনার ভালবাসার কোন মানুষের মন জয় করার জন্য একের পর এক যুদ্ধ করে যাচ্ছেন এক পর্যায়ে খেয়াল করে দেখলেন যার জন্য এত কিছু করলেন উনিই আর এই দুনিয়াতে নাই।আপনার তখন কেমন লাগবে ? অনেক কষ্ট হবে ? হাউ মাউ করে কান্না করবেন ? মনে হয় না। আপনি তখন খুব সম্ভবত এই পাগলা দুনিয়ার দিকে তাকিয়ে একটা অট্টহাসি দিবেন। আমারও এমন কিছু একটাই হবে। হঠাৎ একদিন শুনব আব্বু মারা গেছে। হা হা হা….এক কথায় সবকিছু বললে কি হয় ? funny,isn’t it ?

সেকেন্ড ইয়ার মাত্র শেষ হল । বাসায় আসলে ভাত খাওয়ার টেবিলে আব্বু জিজ্ঞেস করে আর কতদিন বাকি আছে। আমি বলি,এইতো আব্বু আর ৩-৪ বছর।জটিলতার কথা আর বলি না জিআরই,স্কলারশিপ,বাইরে যাওয়া,পিএইচডি কত কাহিনীই বাকি আছে। এটাও তো এখন বুঝতে পারি পড়াশোনা শেষ করলেই শান্তির দিন শুরু হয় না।এরপর অন্য হিসেব শুরু হবে। (না জানি কত প্রিয় কিছু হারিয়ে ফেলব ততদিনে..) ফেসবুকে সিনিয়র ভাইদের স্ট্যাটাস খুব একটা সুবিধাজনক না। ''স্টুডেন্ট থাকতে কতই না ভাল ছিলাম..ভার্সিটিই ভালো ছিল রে.. আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম..!!''

আমাদের জীবনে চক্রের অভাব নাই ।বারবার পুনরাবৃত্তি।এমন সব অসার চক্র চাইনি বলেই ছোটবেলা থেকেই তাই আমি একটা সীমানা চেয়েছিলাম। যে সীমার পর শুধুই আনন্দ।(ছেলেমানুষী ভাবনা) নাহিকো কাজ — উৎসাহের ব্যথা নাই, উদ্যমের নাহিকো ভাবনা, ফুরায়ে যাবে মাথার অনেক উত্তেজনা।একটা সত্যিকারের ফাইনাল পরীক্ষা। যে পরীক্ষার জন্য সব বাজি রেখে যুদ্ধ করব।এরপর আর কোন কাজ থাকবে না।গল্প-মুভিতে যেমন দেখা যায়্‌,শেষে সব ঠিকঠাক।(ছেলেমানুষী ভাবনা)

‘’অলস মাছির শব্দে ভরে থাকে সকালের বিষন্ন সময়,

পৃথিবীরে মায়াবীর নদীর পারের দেশ বলে মনে হয়!

সকল পড়ন্ত রোদ চারি দিকে ছুটি পেয়ে জমিতেছে এইখানে এসে

গ্রীষ্মের সমুদ্র থেকে চোখের ঘুমের গান আসিতেছে ভেসে,

এখানে পালঙ্কে শুয়ে কাটিবে অনেক দিন –

জেগে থেকে ঘুমবার সাধ ভালোবেসে।‘’

কিন্তু পালঙ্কে শুয়ে ৬-৭ ঘন্টার বেশি কখনো কাটে না।জীবন এভাবে কাজ করে না। চক্র থাকবে। নতুন রুপে । জীবন যদি অর্থহীন কিছু চক্রের সমষ্টি হয়, তবে এত পরিশ্রম করে লাভ কি ?হুমম। জটিল প্রশ্ন। বেচে থেকে লাভ কি এর উত্তর আপনাকেই খুজে বের করতে হবে। চক্রগুলো নিজের মত সাইজ করতে হবে। আমার যেমন মনে হয়েছে বেঁচে থাকার আসল অর্থ শুধু বেঁচে থাকাতেই। নিজের অস্তিত্ব অনুভব করাতেই।

সত্যিকার অর্থে জীবন তো কিছু সরল-জটিল রাসায়নিক ক্রিয়া- বিক্রিয়া ছাড়া কিছুই না।।কিন্তু তবুও আমরা কীভাবে কীভাবে যেন এতে কিছু অর্থ যোগ করে ফেলেছি। নিজেরাই নিজেদের ঘিরে হাজারটা নিয়ম কানুন, প্রথা তৈরি করি ,নিজেরাই সময়ে সময়ে পরিবর্তন করি ,ভাঙ্গি, নিজেরাই তাকে ঘিরে একটা অর্থ দাঁড় করাই। নিজেদের ঘিরে এত প্রথা-নিয়ম কানুন তৈরি করা সবই হয়তো আমাদের টিকে থাকতে সহায়তা করেছে। নইলে সবাই হয়ত জীবনের অসারতার কথা ভেবে ভেবে অসাড় হয়ে যেত।তারপর একদিন আর না পেরে এই অসারতা থেকে মুক্তির যৌক্তিক উপায় অবলম্বন করত( পটাপট আত্নহত্যা করে ফেলত..খাইছে)

হুমম। জীবনের মায়া-টায়াকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে আমরা দিব্যি টিকে আছি বিবর্তনের পথে। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে জীবনের বেশিরভাগ সময়টা আমরা কি সুন্দর হেসে খেলে অর্থহীন কাজে কাটিয়ে দিই !! দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত আমরা দৌড়ের উপর থাকি ,বাচ্চাকাল থেকেই সমাজ আমাদের শেখায় কিভাবে নিখুতভাবে দৌড়ানো যায়,সাফল্য অর্জন করা যায়।লক্ষ্য ঠিক করতে বলে,আমার জীবনের লক্ষ্য, এইম ইন লাইফ..এই লক্ষ্যের কোন শেষ নাই,চাওয়ার (মরীচিকা) কোন শেষ নাই..আমরা অন্ধের মত দৌড়াই..মাঝে মাঝে তীব্র জোৎস্না রাতে দরজা-জানালা বন্ধ করে বদ্ধ রুমে বসে থেকে মুভি দেখেই উপলব্ধি করে ফেলি ''ইয়াপ..লাইফ ইজ ভেরি বিউটিফুল..ও ম্যান,জাস্ট অসাম''..অতঃপর আবার দৌড়াই..একের পর এক সফলতার(!) উত্তেজনায় থরথর করে কাপি..দৌড়াইতে দৌড়াইতে একটু ক্লান্ত হই , তারপর আবার দৌড়াই- রান ফরেস্ট ,রান !!

দৌড়াইতে দৌড়াইতে হঠাৎ একদিন বলি, হায় হায় সামনে আর কোন পথ নাই কেনে ? জীবন এত ছোট কেনে ..?

''লক্ষ্য,লোভ,মোহ,দৌড়ানি এক মুহূর্তে মরণ সব ঘুচাইয়া দিল। মরণ অদ্ভূদ।থাকিতে থাকিতে তাহার মনে সেই গানের কলিগুলো গুনগুন করিয়া জাগিয়া উঠিল

এই খেদ আমার মনে-

দৌড়াইয়া মিটল না সাধ্‌,কুলাল না এই জীবনে

হায়-জীবন এত ছোট কেনে?

এই ভুবনে?..''

সবাই এত ব্যস্ত। একটু থেমে চারপাশ তাকিয়ে দেখার মত এতটুকু সময় নেই কারো ।এই কি জীবনের অর্থ ? SSC/ HSC তে গোল্ডেন A+ পাওয়া , ভার্সিটি,মেডিকেল বা বুয়েটে চান্স পাওয়া,নামের আগে অন্তত ৫-৬টা ডিগ্রী থাকা , সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করা ,সুন্দরী স্ত্রী/সন্তানদের নিয়ে সুখে থাকা ??!!

সবাই বলে এইভাবে অর্থহীন জীবন পালন কর। আমি হতভাগা। পারি না। ক্লান্ত লাগে , ক্লান্ত লাগে । আফসুস।আমার কোন লক্ষ্য নেই-কোন তাড়া নেই,কখনো সেভাবে অনুভবও করি নি। কিছু অর্থ,কিছু ভাল লাগা তৈরি করে নিয়েছি।আর কিছু প্রিয় মানুষ..দেঁতো হাসি

সমাজে পাগলাটে বলে সুনাম আছে আমার।রাত ১২টায় কেউ ফোন দিয়ে যদি বলে ''ওয়েক আপ ম্যান, চল ঘুরতে যাই''..রাজি হয়ে যাই..ক্লাস মিস দিতে বললেও রাজি, উল্টো পথে হাটতে বললেও রাজি। সবকিছুতেই রাজি।কখনোই না বলি না।ঘটনা ঘটে,আমি ঘটতে দিই।..কিছুই মিস করতে চাই না।যা মনে আসে তাই করে ফেলি.. প্রতিমুহূর্তে চাই নিজের মত করে বেচে থাকতে।যা হবার হবে। বেচে থাকি ধুলোকণায়,শিশিরে, কুয়াশায়্‌,বন্ধুদের মাঝে,আড্ডায়। আশ্চর্য সুখ পাই তুচ্ছতম বস্তুতে । এটা-সেটা করে ব্যালান্স করি সবকিছু।আমি জানি চলার পথেই আনন্দ খুজে না নিতে পারলে দিনশেষে ফুসফুস কাপিয়ে কিছু ক্লাসিক দীর্ঘ-শ্বাস ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না,কিচ্ছু না। আজ এটা এটা করলে কাল সুখী হব এই থিওরি পুরোপুরি অবাস্তব।সুখ জমিয়ে রাখা যায় না।জীবনটাকে যখন যেভাবে যেদিক থেকে যতভাবে পারা যায় উপভোগ করাটাই সবচেয়ে উত্তম।

আমি মোটেই হতাশাবাদী টাইপ কেউ না। বড় ধরনের কোন সমস্যা না হলে মোটামুটি আমি সবসময় আনন্দেই থাকি।তবু মাঝে মাঝেই কিছু খারাপ সময় যায়।সবকিছু আউলা ঝাউলা লাগে।সামাল দেয়া যায় না কোনভাবে। অবশ্য মাঝে মাঝে দুঃখ টুঃখ করার যথেষ্ট কারন আছে।মাঝে মাঝে এই মন খারাপ ভাব কোন বিলাসিতা না। মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে ।অনিশ্চয়তার মাঝে থাকি। তবে সাম্প্রতিক কালে নতুন এমন কোন অঘটন হয়ে যায়নি যে মন এমন উথাল পাথাল করবে। আমার হাত-পা, চোখ-মুখ তারা আগের মতই আছে। তাহলে? তাহলে কিছুই না। কোন উত্তর নেই।হয়ত এমনিতেই সবকিছু শুন্য শুন্য লাগে।হয়ত কোন কারন আছে।এখন বলতে পারি না,বুঝতে পারি না।হয়ত এই শুন্যতার পেছনে প্রভাবক একটা গান...

(গানের নাম mad world (Tears for Fears) আমি-তুমি টাইপ প্যানপ্যানানি মার্কা কোন গান না।গানের বিষয়য়বস্তু একজন কিশোর জীবনটাকে কিভাবে দেখছে ,তার কিছু শুন্য অনুভুতি এইসব নিয়েই।গানটা বেশ জনপ্রিয়।১৯৮২ সালে রিলিজ হবার দুইদশক পর ২০০১ সালে গানটা ব্যবহার করা হয় donne darko মুভিতে।আরেকটো স্লো স্টাইলে, মন খারাপ করা সুরে।মুভিটাও donne darko নামের একজন কিশোরের বিভ্রান্তি নিয়ে..)

And I find it kind of funny, I find it kind of sad

The dreams in which I'm dying are the best I've ever had

I find it hard to tell you, I find it hard to take

When people run in circles its a very, very

Mad world, mad world

..worn out places..no expressionn..expression..kind of funny..no tomorrow..what's my lesson..look right through me..

সন্ধ্যা হয়ে গেছে..জানালা দিয়ে দেখি কুয়াশা নামছে শূন্য মাঠের ওপাশে..বাতাসে নিঃশব্দ গভীর গন্ধ..আমি স্তব্ধ হয়ে বসে থাকি..সব উৎসাহ-উত্তেজনা হঠাৎ করেই যেন হালকা হয়ে উঠে..হৃদয়ের তাপমাত্রা শূন্যের কাছাকাছি মিলিয়ে যায়..প্রিয় স্বপ্নগুলো ক্রমঃশ করুণ থেকে করুণতর হয়ে ওঠে..শান্ত-ধূসর আবহাওয়া চারপাশে..আমি যেন আস্তে আস্তে তার মাঝে মিলিয়ে যাচ্ছি.. একে ঠেকিয়ে রাখি এমন সাধ্য আমার নেই ..আপাতত ইচ্ছেও নেই..

মন্তব্য

# যতই দিন যাচ্ছে জীবনটাকে একটা ভয়ংকর কৌতুক ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না..দেঁতো হাসি

Mad World - YouTube

@ ইফতি ( ifti )

@ ইমেইল : eval(unescape('%64%6f%63%75%6d%65%6e%74%2e%77%72%69%74%65%28%27%3c%61%20%68%72%65%66%3d%22%6d%61%69%6c%74%6f%3a%6b%68%61%72%74%65%69%66%5f%67%65%40%79%61%68%6f%6f%2e%63%6f%6d%22%3e%6b%68%61%72%74%65%69%66%5f%67%65%40%79%61%68%6f%6f%2e%63%6f%6d%3c%2f%61%3e%27%29%3b'))


মন্তব্য

আশালতা এর ছবি

জীবনকে যে নামেই ডাকা হোকনা তার কিছুই যায় আসেনা। সে তার নিজের নিয়মেই চলে। আর জীবনের নিয়ম শিখতে আমাদের সারাজীবন লেগে যায়।
লেখা ভালো লাগলো। হাসি

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

জিজ্ঞাসু এর ছবি

সুখ জমিয়ে রাখা যায় না।

জীবনকে জানতে জানতেই তা কখনও ফুরায়ও না। জীবনের কোনো এক বাঁকে এসে মৃত্যু শুধু একটা দেয়াল তুলে দেয়।
লেখা অনেক দীর্ঘ হলেও ভাল লেগেছে।

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

ইফতি (ifti) এর ছবি

ভাল লেগেছে জেনে ভালই লাগল..হাসি

ইফতি (ifti) এর ছবি

প্রথম কমেন্ট আপনার। ধন্যবাদ..হাসি :)

তিথীডোর এর ছবি

লেখাটা গোছানো নয়।
বেশকিছু বানানপ্রমাদ চোখে পড়ল।

তবু জীবনবাবু, শঙ্খনীল কারাগার, তারাশঙ্করের কবি, একটি খুনের স্বপ্ন, বুদ্ধদেব বসু-- ঘুমুতে যাওয়ার আগে এক পোস্টেই এতগুলো প্রিয় শব্দবন্ধ খুঁজে পেয়ে তারা দাগিয়ে গেলাম। হাসি

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

ইফতি (ifti) এর ছবি

বাংলা বানান আমার খুব ভুল হয়..মন খারাপ

দেবজিত এর ছবি

চলুক

নাঈম এর ছবি

যা মনে আসে তাই করে ফেলি.. প্রতিমুহূর্তে চাই নিজের মত করে বেচে থাকতে।যা হবার হবে। বেচে থাকি ধুলোকণায়,শিশিরে, কুয়াশায়্‌,বন্ধুদের মাঝে,আড্ডায়। ....। চলার পথেই আনন্দ খুজে না নিতে পারলে দিনশেষে ফুসফুস কাপিয়ে কিছু ক্লাসিক দীর্ঘ-শ্বাস ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না,কিচ্ছু না।

মিলে গেল....আমি বরং উল্টো রাত ১২টায় ফোন দিয়ে বলি চল, হেটে আসি দেঁতো হাসি
পাগলাটে একটা লেখা, ভালো লাগলো চলুক

ইফতি (ifti) এর ছবি

ধন্যবাদ।
মাঝে মাঝে আমি নিজেও ফোন দিই..হাসি

হিল্লোল এর ছবি

এই লেখাটি ইতিপূর্বে ফেসবুকে প্রকাশিত , যা সচলের নিয়মের পরিপন্থী !

ইফতি (ifti) এর ছবি

অন্য কোন কমিউনিটি ব্লগ জানতাম ,ফেসবুক গোনায় ধরিনি। কারন ফেসবুকে আগেই দেয়া অনেক লেখাই আমি ইতিপূর্বে সচলে প্রকাশিত হতে দেখেছি । (+ সচলে লেখেন এমন লেখকরাই ফেসবুকে পড়ার পর সচলে পোস্ট করতে পরামর্শ দেন) যাই হোক ,মাথায় থাকল।

অন্যকেউ এর ছবি

ফেসবুক ব্যক্তিগত এলাকা, পাবলিক প্ল্যাটফর্ম না। কাজেই সচলের নিয়মের পরিপন্থী হচ্ছে না মোটেই।

_____________________________________________________________________

বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।

হিমু এর ছবি

পোস্ট লেখকের কাছে অনুরোধ রইলো সচলায়তনে পরবর্তী লেখা প্রকাশের আগে নীতিমালাটি ভালো করে পড়ে দেখার জন্যে। ধন্যবাদ।

ইফতি (ifti) এর ছবি

নীতিমালা পড়েছিলাম তবে ফেসবুক গোনায় ধরিনি। কারন ফেসবুকে আগেই দেয়া অনেক লেখাই আমি ইতিপূর্বে সচলে প্রকাশিত হতে দেখেছি । (+ সচলে লেখেন এমন লেখকরাই ফেসবুকে পড়ার পর সচলে পোস্ট করতে পরামর্শ দেন) যাই হোক ,মাথায় থাকল। ধন্যবাদ।

উচ্ছলা এর ছবি

আপনার চিন্তা-ভাবনাগুলোকে আর একটু কম্প্যাক্ট করে, গুছিয়ে লিখলে লেখাটি আরও উপভোগ্য হত। অবশ্য আমি নিজেই সিরিয়াস আউলা-ঝাউলা...আবার আপনাকে উপদেশ দিতে বসছি ইয়ে, মানে...

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

আপনার লেখার হাত আছে, একটু গুছিয়ে লিখুন হাসি

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

ইফতি (ifti) এর ছবি

তখন গুছিয়ে লেখার অবস্থা ছিল না..দেঁতো হাসি

অন্যকেউ এর ছবি

ভাবনাগুলো ভালো লাগলো। আর ম্যাড ওয়ার্ল্ড গানটা অনেক ভালো পাই। লেখনী সচল থাকুক। চলুক

_____________________________________________________________________

বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।

শ্যামল এর ছবি

ভালো লেগেছে। আরো লিখুন।

আয়নামতি এর ছবি

লেখাটা আরো গোছানো হতে পারতো। আপনি ভালো লেখিয়ে, লেখতে থাকুন।

shomudro pori এর ছবি

ভালো লাগলো লেখাটি হাসি

নিটোল এর ছবি

সচলে স্বাগতম। হাসি

_________________
[খোমাখাতা]

অতিথি এর ছবি

ভালো লেগেছে লেখাটা।
জিইবি কোন ব্যাচ ভাইয়া ?

ইফতি (ifti) এর ছবি

হাসি :)

ব্যাচ- ১o

শাব্দিক এর ছবি

চিন্তাগুলো অগুছালো হলেও এভাবেই ভাল লাগল।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।