চড়ক উৎসবে

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ১৭/০৪/২০১২ - ৪:৪৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

[আগেই বলে নেই, ছবিগুলো সবার জন্য নয়। দূর্বল চিত্তের যে কারোর না দেখাই ভালো]

ডিএসএলআর কেনার পরে ইচ্ছে ছিলো সময় নিয়ে ছবি তুলতে বের হব। কিন্তু সেভাবে আর সময় হয়ে উঠছিলো না। ১০ এপ্রিল রাতে স্বাক্ষর হঠাৎ করে ফোন করলো ওদের বাড়িতে চড়ক পূজা হচ্ছে। ব্যাস আমিও রাজী হয়ে গেলাম যাওয়ার জন্য। প্রথমে ঠিক হয়েছিলো ১৩ এপ্রিল যাবো। কিন্তু ১১ তারিখে ফোনে আবার জানালো পুরো অনুষ্ঠান দেখতে চাইলে ১২ তারিখেই চলে আসতে হবে। কি আর করা, অফিস ফাঁকি হাসান ভাইকে সাথে নিয়ে ১২ তারিখ দুপুরেই ছুটলাম ভাওয়াল মির্জাপুর, গাজীপুরের উদ্দেশ্যে।

আগেই ধারনা করেছিলাম, ১৩-১৪ দুইদিন সরকারী ছুটি থাকার কারনে বিকেলের দিকে প্রচুর ভীর হবে। কিন্তু কিসের কি, দুপুর থেকেই রাস্তায় অসহনীয় জ্যামে পড়তে হয়েছে। আড়াই ঘন্টার রাস্তা পাড় হতে সময় লেগেছে প্রায় ছয় ঘন্টা। তারপরে রাস্তার যা অবস্থা। মাঝে মাঝেই বিশাল গর্ত। পানি জমে আছে।

বিকেলে স্বাক্ষরের বাড়িতে পৌঁছে হালকা রেস্ট নিয়েই বেড়িয়ে পরলাম ক্যামেরা নিয়ে। স্বাক্ষর অবশ্য আগেই সব ব্যবস্থা করে রেখেছিলো। তাই, ছবি তুলতে গিয়ে তেমন কোন অসুবিধার সম্মুখিন হতে হয় নি।

চড়ক পূজা সম্পর্কে সামান্য কিছু ধারণা দিয়ে রাখা ভালো।

'চৈত্র মাসের শেষ সপ্তাহ ধরে এই পূজার আয়োজন চলে প্রায় সারা বাংলা ব্যাপী। এই পূজার অপর নাম নীল পূজা। এইপূজার সাথে গম্ভীরাপূজা, শিবের গাজন, ভগবতীপূজা সহ বিভিন্ন পূজার আয়োজন করা হয়ে থাকে। স্থান ও পরিবেশ ভেদে এই পূজা ৫-১০ দিন ব্যাপী হয়ে থাকে। সাধারণত শিবের উপাসক হিসেবে ব্রত থাকে এই সময়, এবং তাদের অনেক নিয়ম কানুন মানতে হয় এবং তাদের কে সন্যাসী বেশধারন করতে হয়। এছাড়া কিছু নৃত্যগীতাদী বা পূরাণানুসারে গীতি শ্লোক গাওয়া হয় সাথে সাধারনত পুরুষেরা বিভিন্ন দেব-দেবীর সেজে গীতিনৃত্য করে থাকে। দেশে বিভিন্ন স্থানে এই পূজা হয়ে থাকে।'

ইচ্ছে ছিলো পুরো অনুষ্ঠানটা কভার করা। কিন্তু সেটা আর সম্ভব হয় নি। ওদের অনুষ্ঠানের একটা অংশ ছিলো , মাঝরাতে শ্মশান থেকে মানুষের মাথার খুলি সংগ্রহ করা। কথা ছিলো ওই সময়ও ওদের সাথে থাকবো। কিন্তু কেন জানি শেষ মূহূর্তে ওরা আর আমাকে সাথে নিতে সাহস পায় নি। পরে অবশ্য খুলিটা দেখতে পেয়েছিলাম।

দিন ও রাতের বিভিন্ন সময় জুড়েই এই অনুষ্ঠান চলে। যেমন ভর দুপুরেও বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা হয় তেমনি রাত সাড়ে তিনটা বা ভোর পাঁচটায়ও হয়।

ওদের এই উৎসবে দুটো জিনিস ভীষণ অবাক লাগলো,

১। সাধারণত কোন লম্বা গজারি গাছ থেকে এই চড়ক গাছ তৈরী করা হয়। বছরের পুরোটা সময়ই সেটা একটা পুকুরে ডুবিয়ে রাখা হয়। তবে মজার কথা হল, গাছ ডুবিয়ে রাখার পরে সারা বছরেও ওই গেছের কেউ খোঁজ পায় না। কিন্তু উৎসবের আগে যখন ঢাকের তালে তালে গাছটিকে নিমন্ত্রণ জানানো হয় তখন সে আপনা আপনিই পুকুরের পাড়ে ভেসে ওঠে।

২। চড়কে ঝোলানোর জন্য যে বড়শি ব্যবহার করা হয়, সেগুলো বেশ মোটা হয়। অনেকটা মাংসের দোকানে মাংস ঝোলানোই বড়শির মত। কিন্তু ওই বড়শি যখন পিঠে বিধানো হয় তখন, এক ফোঠাও রক্ত বের হয় না। এমন কি এর জন্য আলাদা কোন ওষুধ বা ক্যামিক্যালও ব্যবহার করা হয় না।

যাক, অনেক কথা হল। এবার তাহলে ছবি দেখা যাক,


শিব গৌরী


শুরু হচ্ছে পূজার আনুষ্ঠানিকতা


পূজা শুরুর আগ মূহুর্তে


জনৈক সাধক। যতক্ষণ তাকে দেখেছি, পুরোটা সময়ই কল্কি নিয়েই ছিলেন।


ত্রিশূল


চলছে পূজা


প্রার্থনারত মাথুমা


সকালবেলা কালীর নাচন


কালী


চড়ক ঘুরানোর স্থানে পূজা হচ্ছে।


নরমুন্ডু পূজা


চড়ক গাছ


শ্মশান কালী


চড়কে ঝোলানোর জন্য সাজানো হচ্ছে গোপাল কর্মকারকে


গোপাল কর্মকার


চড়কে ঝোলানোর জন্য ব্যবহৃত বড়শি

আরো কিছু ছবি।

সন্ধ্যার ঠিক আগ মুহূর্তে শেষ হয় সব আনুষ্ঠানিকতা। আর আমরাও পা বাড়াই ঢাকার উদ্দেশ্যে। আবার সেই যানজট ঠ্যাঙিয়ে ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাসায় ফিরি রাত এগারোটায়।

- অনুপম প্রতীপ

eval(unescape('%64%6f%63%75%6d%65%6e%74%2e%77%72%69%74%65%28%27%3c%61%20%68%72%65%66%3d%22%6d%61%69%6c%74%6f%3a%61%6e%75%70%61%6d%2e%70%72%61%74%69%70%40%67%6d%61%69%6c%2e%63%6f%6d%22%3e%61%6e%75%70%61%6d%2e%70%72%61%74%69%70%40%67%6d%61%69%6c%2e%63%6f%6d%3c%2f%61%3e%27%29%3b'))


মন্তব্য

সাত্যকি. এর ছবি

ভয়াবহ অবস্থা দেখছি।
চড়ক পূজা বাংলাদেশের ঐতিহ্য অবশ্যই, কিন্তু পূজার অন্যান্য আচারগুলি রেখে মাথার খুলি নিয়ে পূজার্চনা আর পিঠে বড়শি গেঁথে ঝুলানোর এই ব্রুটাল অংশটুকু ছেটে ফেলে দেয়ার সময় কি আসেনি এখনো?

মাহমুদ.জেনেভা এর ছবি

গাছ ডুবিয়ে রাখার পরে সারা বছরেও ওই গেছের কেউ খোঁজ পায় না। কিন্তু উৎসবের আগে যখন ঢাকের তালে তালে গাছটিকে নিমন্ত্রণ জানানো হয় তখন সে আপনা আপনিই পুকুরের পাড়ে ভেসে ওঠে।

এটার মানে কি?
অলৌকিক কিছু কেন যেন বিশ্বাস হতে চায়না। অনুগ্রহ করে ব্যাখ্যা করলে ভাল হয়
ছবি দেখতে ভাল লেগেছে কিন্ত পুরা ব্যাপারটা কেমন যেন লাগে। একই ভাবে পাকিস্তানে মুসলিম ধার্মিক ভাইরা যখন আশুরার দিনে খঞ্জর দিয়ে নিজেদের গায়ে আঘাত করে ওইটা দেখতেও খুব দৃষ্টি কটু লাগে

অনুপম প্রতীপ এর ছবি

এই প্রশ্নের উত্তর আমি নিজেও খুঁজছি। কিন্তু কোন যৌক্তিক ব্যখ্যা পাচ্ছি না। কারো জানা থাকলে প্লিজ জানান।

লালকমল এর ছবি

এটা একটা মিথ। আমাদের বাড়িতে এই পুজা টানা ৩০ বছর হয়েছে। এখন গ্রামের নতুন মন্দিরে হয়। প্রতি বছর আমাদের গ্রামে হয় বৈশাখ মাসের শেষ দিন এবং পাশের গ্রামে হয় চৈত্র মাসের শেষ দিন। ছোটবেলায় আমার ঠাকুমা ঠিক এই কথাই বলত। আসল কথা হল অন্ধ বিশ্বাস। এই চড়ক গাছটা এখন আমাদের বাড়ির পেছনে মজা পুকুরে ৩৬৩ দিন হাটু পানিতে ডুবানো থাকে। পূজার ১দিন আগে ঢাকঢোল বাজিয়ে পুকুরে পুজা দিয়ে আসে। শিক ঢুকালে রক্ত বের হয় না এটা সত্য। গাছি সারারাত সারাদিন না খেয়ে থাকে। ৩/৪ দিন শরীর ব্যথা থাকে। সিটামল খায় । সব ঠিক। অনেক গাছি আবার ভাড়ায় যায়। আমার এক ক্লাসমেট নামকরা গাছি। সিজনে টাকা পয়সা ভালই ইনকাম।

ধুসর জলছবি এর ছবি

ইয়ে, মানে... ভয়ানক ব্যাপার। আমি এই উৎসবের কথা আজি প্রথম শুনলাম, কত কিছুই যে আছে দুনিয়ায় চিন্তিত
কিন্তু রক্ত কেন বের হবে না বুঝলাম না। সাবকিউটেনিয়াসলি যদি বড়শী ঢোকান হয় সেক্ষেত্রে রক্ত না বের হতে পারে। কিন্তু তাতে এত উপর থেকে ঝুলে থাকে কি করে? অ্যাঁ

সাই দ এর ছবি

আমার একটি প্রশ্ন- এসব নৃশংসতা কি না করলেই নয়??

উচ্ছলা এর ছবি
অনুপম প্রতীপ এর ছবি

হাসি

উজানগাঁ এর ছবি

বড়শির ছবিটা সাদা-কালোতে অসাধারন লাগল।

আমি নিজেও ছবি তুললাম ঐদিন। সব ছবি প্রসেস করা হয়নি। একটা ছবি ঠিকটাক করে ফ্লিকারে দিয়েছিলাম। সেটা এখানে দেয়ার লোভ সংবরণ করতে পারলাম না। চোখ টিপি

The charak devotee

উচ্ছলা এর ছবি
ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

ক্যাম্নে তোলেন এমন ছবি। বস আপনার ক্যামেরা আর লেন্স স্পেসিফিকেশান জানা যাবে?

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

উজানগাঁ এর ছবি

ঘ্যাচাং

অনুপম প্রতীপ এর ছবি

ওয়াও, চরম হইচে। গুরু গুরু

উজানগাঁ এর ছবি

একই মন্তব্যে পুনরাবৃত্তি হওয়ায় মুছে দিলাম।

চিলতে রোদ  এর ছবি

অসাধারণ ছবি তুলেছেন। আমাদের এই ধরনের উৎসবগুলোর রঙকে আরো তুলে ধরা উচিত সবার সামনে। এগুলো আমাদের বৈচিত্রময় সংস্কৃতির সম্পদ। তবে আপনি যে দুটি ব্যাপারের কথা শেষে বললেন একজন বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে এর কোন আলৌকিকতার সাথে একমত হতে পারলাম না। নিশ্চই ব্যাখা আছে। কোন একসময় খুঁজে দেখার অভিপ্রায় রইল।
প্রিয় সচল বা সচল পাঠকদের এই ব্যাপারে কোন অভিজ্ঞতা/ধারনা থাকলে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
অসাধারণ পোস্ট। চালিয়ে যান। হাততালি

অনুপম প্রতীপ এর ছবি

যে দুইটা প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছি তার ব্যখ্যা আমিও বের করতে পারি নি। আমিও খোঁজার চেষ্টা করছি। আর আলৌকিক কোন কিছুতে বিশ্বাস আমারো কোন কালেই ছিলো না।

লালকমল এর ছবি

এটা একটা মিথ। আমাদের বাড়িতে এই পুজা টানা ৩০ বছর হয়েছে। এখন গ্রামের নতুন মন্দিরে হয়। প্রতি বছর আমাদের গ্রামে হয় বৈশাখ মাসের শেষ দিন এবং পাশের গ্রামে হয় চৈত্র মাসের শেষ দিন। ছোটবেলায় আমার ঠাকুমা ঠিক এই কথাই বলত। আসল কথা হল অন্ধ বিশ্বাস। এই চড়ক গাছটা এখন আমাদের বাড়ির পেছনে মজা পুকুরে ৩৬৩ দিন হাটু পানিতে ডুবানো থাকে। পূজার ১দিন আগে ঢাকঢোল বাজিয়ে পুকুরে পুজা দিয়ে আসে। শিক ঢুকালে রক্ত বের হয় না এটা সত্য। গাছি সারারাত সারাদিন না খেয়ে থাকে। ৩/৪ দিন শরীর ব্যথা থাকে। সিটামল খায় । সব ঠিক। অনেক গাছি আবার ভাড়ায় যায়। আমার এক ক্লাসমেট নামকরা গাছি। সিজনে টাকা পয়সা ভালই ইনকাম।

তারেক অণু এর ছবি

চলুক তলিয়ে দেখলেই সত্য জানা যাবে।

nakim ahmed  এর ছবি

পরে মজা পেয়েছি, ছবিগুলোও জোসস হইছে ।

তানিম এহসান এর ছবি

চড়ক নিয়ে সচলে আগেও একটা পোস্ট পড়েছিলাম, কার লেখা এই মুহূর্তে মনে পড়ছেনা।

ভালো লাগলো হাসি

মুস্তাফিজ এর ছবি

দুইটা পোস্ট ছিলো

একটা আমার http://www.sachalayatan.com/mustafiz/38644

অন্যটা বুনো'র http://www.sachalayatan.com/bunohaash/38526

...........................
Every Picture Tells a Story

কর্ণজয় এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

মুস্তাফিজ এর ছবি

চমৎকার ছবি লেখা।

...........................
Every Picture Tells a Story

ছাইপাঁশ এর ছবি

চড়ক উৎসব সম্পর্কে প্রথম জেনেছিলাম এই সচলেই। তখন ছবি দেখে সত্যিই খুব অবাক হয়েছিলাম।

আশালতা এর ছবি

মুস্তাফিজ ভাই আর বুনোর লেখায় চড়কের কথা পড়েছিলাম কিন্তু আপনার ছবি দেখে কথা বন্ধ হয়ে গেলো।

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

ভালো মানুষ এর ছবি

ভ‌‌‌‌য়ানক ব‌‌্যাপার ।
ওঁয়া ওঁয়া
চিন্তিত

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

চমৎকার ।।। ছবি তুলে ফাটিয়ে ফেলেন ।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

নজমুল আলবাব এর ছবি

আমার ডল্লাগে

সৌরভ কবীর  এর ছবি

ভালো লেগেছে।

তাপস শর্মা এর ছবি

ছবিগুলি ভালো তুলেছেন। সব ঠিক আছে, উৎসব, পার্বণ, সব......

কিন্তু আমার কাছে ভালগার লাগে এইগুলি।

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

গাছ ডুবে থাকা নিজে নিজে ভেসে ওঠা, গাছের জন্যে পূজা দিয়ে আসার আগে পূজারি বা আর কেউ কি পানিতে নামে? জানার আগ্রহ থাকলো।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

শাব্দিক এর ছবি

ডেঞ্জারাস ব্যাপার!
কিন্তু ছবিগুলো ভাল লাগল।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।