আমার নজরুল কাহন

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ২৫/০৫/২০১২ - ১১:০৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

লেখাটির শিরোনাম কি দিব তা নিয়ে প্রথমে একটু দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিলাম। প্রথমে ভেবেছিলাম নাম দিব 'নজরুল কথন'। কিন্তু তারপরে মনে হল এটা আসলে নজরুল কথন না, এটা 'হাসনাত কাহন'-আমার জীবনে কীভাবে নজরুল আছেন। 'হাসনাত কাহন' নাম দিলে শিরোনাম অন্য অর্থের দিকে ইঙ্গিত করবে বলে নাম হয়ে গেছে 'আমার নজরুল কাহন- অর্থাৎ আমার ও নজরুলের কাহিনী।

নজরুলের সাথে প্রথম কবে পরিচয় হয়েছিল তা একদম ঠিক করে বলতে পারব না। চিন্তা করলে প্রথম যে জিনিসটা মাথায় আসে তা একটা ছবি। মাথায় লম্বা একটা টুপি পড়ে ঈষান কোণে তাকিয়ে আছেন কেউ একজন বিষাদ নয়নে। প্রথম ছবিটা দেখে মনে হয়েছিল, এই ব্যাটা এইরকম কান্না কান্না মুখে তাকিয়ে আছে কেন। আমি যেহেতু বাসায় প্রায়ই মার খেতাম (নরমাল মার না, আমার পিতাজি আমাকে দরজা বন্ধ করে পিটাতেন), তাই আমার প্রথম ধারনাটি ছিল এরকম, নজরুলের পিতাজি মনে হয় তাকে ধরে প্যাঁদানী দিয়েছেন। কিন্তু একটু মনে খুঁত খুঁত লাগছিল। আমি পরিবারের সবার ছোট হওয়ায় প্রায়ই প্যাঁদানী খেতে হত। কিন্তু শুধু মাত্র বড় হওয়ার সুবিধা গ্রহণ করে আমার বড় বোন সকল রকম অন্যায়-অবিচার-অত্যাচার (এর কিছু পরিমাণ আমার উপরও প্রয়োগ হত) করেও কোনরূপ মার খাওয়ার সম্মুখীন হওয়া থেকে বেঁচে যেত। নজরুল বেচারার ছবি দেখে মনে হচ্ছে এ একজন বড় মানুষ। পরিবারের বড় ছেলে হলেও হতে পারে। তখন বেচারার জন্য মায়া লাগত। আহারে! বড় হওয়ার পরও মার খাওয়ার হাত থেকে বাঁচতে পারেনি।

এক ক্লাস থেকে অন্য ক্লাসে উঠার সাথে সাথে দুখু মিয়ার সাথে পরিচয় বাড়তে থাকল। প্রথম কোন কবিতা পড়েছিলাম মনে নেই। 'সকাল বেলার পাখি' কবিতাটা আমার খুব প্রিয়। আমাদের প্রাইমারি স্কুলে তখন ক্লাস শুরু হত সকাল ৯ টায়। আর আমি ঘুম থেকে উঠতাম সকাল সাড়ে ৮ টায়। একদিন ক্লাসে এক আপা (এখন মেডিকেল কলেজে পড়ি, আপাদের এখন বলি ম্যাম বা ম্যাডাম) আমার প্রিয় কবিতা কোনটি জিজ্ঞেস করলে বললাম, 'সকাল বেলার পাখি'। তিনি আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন। এখন মাঝে মাঝে একটু অবাক হয়ে ভাবি এই কবিতা এতো ছোট ক্লাসে দিয়েছে কেন। এই কবিতায় কি বুঝানো হয়েছে তা এই বাচ্চাদের বোঝা কোনভাবেই সম্ভব না।

ছোট বেলা থেকে খুব সখ ছিল আর্মিতে জয়েন করব। আর্মিতে জয়েন করার কারনটা ব্যাখ্যা করি। আমাদের বাসা সিলেটে। জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্টের ঠিক পাশেই। প্রায়ই সৈনিকরা এই মহড়া, সেই প্রশিক্ষণের জন্য এদিক সেদিক ট্রেঞ্চ কাটত, কাঁধে রাইফেল নিয়ে এদিক সেদিক ঘুরত। আমার বড় বোন তখনও 'আর্মি' বলতে পারেনা, বলে 'আম্রি'। সে আম্রিদের খুব ভয় পেত। আম্রি দেখলেই দৌড়। সে যেহেতু আমার উপর প্রায়ই অন্যায়-অবিচার-অত্যাচার করত, তাই আমি মনে মনে আর্মি হতে চাইতাম। একবার আর্মি হয়ে নেই, তারপর তোমাকে দেখাব কত গমে কত বার্লি। প্রথম যখন 'চল চল চল' কবিতা পড়লাম, তারপর জানলাম এটা আমাদের 'রণ সঙ্গীত' তখনই বুঝলাম এই ব্যাটা মনে হয় আমার মত আর্মিতে যেতে চাইত। এতো মনে হয় না শুধু বাড়িতে বাবার হাতে মার খায়, বরং চার-পাঁচটা বড় বোন আছে। খাইসে আমারে! এরপরে যখন জানলাম নজরুল আর্মিতে চাকরি করেছেন, সাথে সাথেই তিনি আমার প্রিয় কবির তালিকায় উঠে এলেন। বলা বাহুল্য, সেই ছোট বয়সে তিনি আমার প্রিয় কবি হওয়ার পিছনে আমার কোনরূপ কাব্যপ্রেম কাজ করেনি। কাজ করেছিল একমাত্র আমাদের 'নিগৃহীত' জীবনের আত্মকথা।

ক্লাস এইটে উঠার পর নজরুলের একটা কবিতা মুখস্ত করলাম। কবিতার নাম 'বিদ্রোহী'। 'অগ্নিবীণা'র ছোট ছোট ফন্টে ছাপানো আট পৃষ্ঠা। এই আট পৃষ্ঠার কবিতা মুখস্ত করার পিছনেও কোন কাব্যপ্রেম ছিল না। এখন যেরকম প্রচুর কবিতা পড়ি, তখন এর ছিটেফোঁটাও ছিল না। 'বিদ্রোহী' মুখস্ত করার পিছনে কাজ করেছিল এক সহপাঠিনীকে মুগ্ধ করার চেষ্টা। আমার সেই সহপাঠিনী খুব সুন্দর আবৃতি করত। আমি আবৃতির 'আ'ও পারিনা। কি করা যায়? আবৃতি পারিনাতো কি হয়েছে? মুখস্ততো করতে পারি। আট পৃষ্ঠার কবিতা মুখস্ত করেছি শুনলেই মেয়ের ফিদা হয়ে যাওয়ার কথা। (লিখতে লিখতে নস্টালজিক হয়ে যাচ্ছি। আহা! কি সোনার দিন কাটিয়ে এসেছি)। এখন অবশ্য বুঝি মেয়েদের মুগ্ধ করার জন্য 'বিদ্রোহী' মুখস্ত করা কোন কাজে আসে না। তারা নিজেরাই এমনিতেই অল টাইম দ্রোহী। তাদের জন্য মুখস্ত করতে হয় 'আবার যখনই দেখা হবে' টাইপ কবিতা। যাই হোক, সেই 'বিদ্রোহী' কবিতার সাথে প্রেমের অভিনয় করতে গিয়ে নজরুলের প্রেমে পড়ে গেলাম। 'বিদ্রোহী' মুখস্ত করার জন্য এক বন্ধুর কাছ থেকে 'অগ্নিবীণা' ধার এনেছিলাম। কয়েকদিন পর দেখা গেল 'অগ্নিবীণা'র বেশিরভাগ কবিতাই আমার মুখস্ত। এখন অবশ্য জিজ্ঞেস করলে মুখস্ত বলতে পারবনা। 'বিদ্রোহী'র প্রথম দুই প্যারা বাদে সবকিছু ভুলে গেছি। ও একটা কথা। উল্লেখ্য আমার সেই সহপাঠিনীর সাথে আমি কোনরূপ কেমিস্ট্রি দূরে থাক, বাংলা-ইংরেজি কিছুই করতে পারিনি।

'অগ্নিবীণা' পড়ে নজরুলের যতটুকু প্রেমে পড়েছিলাম, তার দ্বিগুন প্রেমে পড়েছিলাম 'সাম্যবাদী'র 'মানুষ' পড়ে। আরো সঠিকভাবে বলতে গেলে এর দুইটা লাইন পড়েঃ
কোথা চেঙ্গিস, গজনী-মামুদ, কোথায় কালাপাহাড়?
ভেঙ্গে ফেল ঐ ভজনালয়ের যত তালা-দেওয়া-দ্বার!
এই দুই লাইনে এমন কি আছে যে আমার প্রেম এমন ফ্লাকচুয়েট করল, এর কারণ ব্যাখ্যা করা একটু কঠিন। এই দুই লাইন দিয়ে একজনের কবিতার প্রতি ভালোবাসা কতটুকু তা আমি নির্ণয় করি। 'মানুষ' আবৃতি করার সময় এই দুই লাইনে যে পরিমাণ আবেগ ও শক্তি দিয়ে আবৃতি করতে হয় তা যে কাউকে নাড়া দিবে। যদি নাড়া না দেয়, তাহলে বুঝতে হবে সে কবিতার 'ক'ও বুঝে না। দ্রষ্টব্যঃ এটা আমার নিজস্ব মতামত। আক্ষরিক অর্থে না নিলেও চলবে।

নজরুলের সাথে আরেকটু দৃঢ়ভাবে পরিচিত হবার জন্য একজনের নাম আমাকে স্মরণ করতেই হবে। ইমরানুল বারী। আমি যখন মিলিটারি স্কুলে ক্লাস নাইনে পড়ি, তখন তিনি আমাদের বাংলার শিক্ষক হয়ে এলেন। তিনি মিলিটারি স্কুলের টিপিক্যাল শিক্ষক নন। মিলিটারি স্কুলের টিচাররা হন সাধারণত রাফ এন্ড টাফ। পান থেকে চুন খসা অনেক দূরের ব্যাপার, চুন আঠালো পদার্থ, তা পানের সাথে লেগে থাকে, বাতাসে সামান্য জর্দা খসলেই শুরু হয়ে যেত গজব। ইমরানুল বারী এদিক দিয়ে ব্যতিক্রম। আমরা ক্লাসে চিৎকার করছি, পাশের ক্লাসে টিচার ক্লাস নিতে পারছেন না আমাদের চিৎকারে, তখনও তিনি আমাদের পড়িয়ে যাচ্ছেন আর মাঝে মাঝে বলছেন, এই আস্তে কথা বল। উনার এরকম সফট আচরণে আমরা ইঁচড়ে পাঁকতে পাঁকতে হলুদ হয়ে যাওয়া পোলাপাইন উনাকে বেশিরভাগ সময় 'স্যার' হিসেবে না দেখে দেখতাম 'মাস্টার' হিসেবে। উনার ক্লাসের একটা বর্ণনা দেই। উনি ক্লাসে পড়াচ্ছেন 'দূরন্ত পথিক'। স্যার ক্লাসে পড়াচ্ছেন, কিন্তু আমরা কেউই পড়ছি না। আমি চেয়ার ঘুরিয়ে পিছনে বসে থাকা ছেলেদের সাথে গল্প করছি। কেউ কেউ অবশ্য তথাকথিত ক্লাস করছে। কি ক্লাস জানেন? 'দিগ্বলয়' শব্দ কি 'দিগ বাল য়' হবে না 'দিগ্বালয়' হবে- এই নিয়ে। মাঝে মাঝে স্যারের ক্ষীণ কন্ঠ শুনা যাচ্ছে। আমি পিছনে ঘুরে গল্প করেই যাচ্ছি। হটাৎ অনুভব করলাম আমি কারো কথা শুনতে পাচ্ছি না। শুধু নিজের কন্ঠই শুনছি। আস্তে করে কল্লা ঘুরিয়ে তাকালাম। বারী স্যার দাঁড়িয়ে আছেন লেকচার ডায়াসের পাশে। তার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন প্রিন্সিপাল স্যার লেফটেন্যান্ট কর্ণেল মোঃ কাশেম। আমি ঢোক গিলে আস্তে করে ঘুরে বসলাম। পরের ঘটনা আরেকদিন বলা যাবে। এই ছিলেন বারী স্যার। তার মাধ্যমে নজরুলের সাথে পরিচয় দৃঢ় হয় আমাদের বার্ষিক ম্যাগাজিনের মাধ্যমে। তিনি ম্যাগাজিনে লিখেছেলেন নজরুলের উপর একটা প্রবন্ধ। সেই থেকে শুরু। এরপরে তার সাথে অনেকবার কথা হয়েছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে উনি যখন হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেলেন তারপরে আমি জানতে পেরেছিলাম, বাংলাদেশ সরকার উনাকে 'নজরুল গবেষক' উপাধিতে ভূষিত করেছে। উনি কখনই আমাকে একথাটা বলেননি।

রবীন্দ্র সঙ্গীত আমার প্রতি দিনের সঙ্গী। প্রতিদিনের না বলে বলা ভালো প্রতি মুহুর্তের। কখনো কখনোমনে হয় রবীন্দ্রনাথের গান আছে বলেই সকালটা এতো সুন্দর লাগে, গরমের রাতে এতো আরামের মৃদুমন্দ বাতাস বয়। রবীন্দ্রনাথের প্রচুর গান আমি শুনেছি। কিন্তু একটা কথা আমাকে স্বীকার করতেই হবে, নজরুলের গানের যে শব্দ ঝংকার আছে, তা রবীন্দ্রনাথের গানে পাইনি। কবিগুরুর গান হৃদয়ে গিয়ে লাগে, আর দুখু মিয়ার গানের প্রতিটি শব্দ লাগে গিয়ে একদম মস্তিষ্কের ভিতরে। এই দুই লাইন দেখুনঃ
ভুলি কেমনে আজো যে মনে বেদনা-সনে রহিল আঁকা।
আজো সজনী দিন রজনী সে বিনে গণি তেমনি ফাঁকা।

ক্লাস নাইনে পড়ি তখন। সিলেট স্কাউট ভবনে গিয়েছি '১০ম সিনিয়র স্কাউট জাম্বুরি, থাইল্যান্ড' এ যাওয়ার জন্য ভাইবা পরীক্ষা দিতে। সামনে লাইন ধরে বুড়ো বুড়ো স্যাররা বসে আছেন। কারো মুখে স্থায়ী গাম্ভীর্যের ছাপ, কেউ কেউ ভাব ধরে বসে আছেন। শুরু হলো প্রশ্নবান। ইংরেজিতে অবশ্যই। স্কাউটিং-এর উপর কোন প্রশ্ন নেই। আমার পরিবার বৃত্তান্ত আর আমি বৃত্তান্ত। আমি কি খাই, এত চিকনা ক্যান, আমার পিতা কি করেন, ভবিষ্যতে কি করতে চাই, এতো ফর্সা হলাম কিভাবে, দিনে কয় প্লেট ভাত খাই এই সকল প্রশ্ন। সবার শেষের প্রশ্ন ছিল, recite a poem. আমি মনে মনে বললাম, খাইসে আমারে। স্যার একজন আমার প্রতি দয়া পরবশ হয়ে বললেন, একটা বাংলা কবিতাই বল। আমি শুরু করলাম, 'বাবুদের তাল-পুকুরে, হাবুদের ডাল-কুকুরে...'। যখনই মালীর ঘাড়ে ডাল ভেঙ্গে পড়ে গেলাম একজন স্যার বলে উঠলেন, 'বাবা হয়েছে, এইবার থাম'। স্যার মনে হয় নিজের কান ভাঙ্গার আশঙ্কা করছিলেন।

কাজী নজরুল ইসলাম। আপনার কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। ছোটবেলায় প্রায়ই আমাকে রচনা লিখতে হত 'আমার প্রিয় কবি'। আমি কখনই আপনার নাম লিখিনি। লিখেছি সুকান্ত ভট্টাচার্য। আমাদের স্কুলের টিচারদের এখনও নির্মলেন্দু গুন হজম করার মত পরিপাকতন্ত্র নেই, তা না হলে হয়তো তার নামও লিখতাম। ক্লাসের অন্যান্য ছেলেদের থেকে আলাদা করার জন্যই শুধু লিখতাম। যদিও আপনি সবসময় আমার সবচেয়ে প্রিয় কবিদের একজন। শুভ জন্মদিন। শুভ জন্মদিন দুখু মিয়া।

আমি ব্যক্তিগত জীবনে একজন ডাকটিকেট সংগ্রাহক। আদিম পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে আধুনিক বাংলাদেশি আমল পর্যন্ত অনেক স্ট্যাম্প আমার কাছে আছে। ২০১১ সালে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ 'আন্তর্জাতিক নজরুল সম্মেলন' উপলক্ষে একটা ডাকটিকেট প্রকাশ করে। তার একপাশে বিদ্রোহী কবিতাটির ১ম প্যারা বাংলায় লেখা, অন্যপাশে ইংরেজিতে। অনেক কবিতার ইংরেজি অনুবাদ আমি পড়েছি। কিন্তু কখনই কোন কবিতা পড়ে আমার মনে হয়নি অনুবাদটা বাংলা কবিতাটার কাছাকাছি গিয়েছে। কিন্তু এই অনুবাদটা পড়ে আমার মনে হয়েছে এটি বাংলা কবিতার প্রায় কাছাকাছি চলে গিয়েছে। লেখাটি শেষ করছি সেই ইংরেজি অনুবাদ দিয়ে।

The Rebel

Say, Valiant
Say: High is my head!
Looking at my head
Is cast down the great Himalayan peak!
Say, Valiant,
Say: Ripping apart the wide sky of the universe,
Leaving behind the moon, the sun, the planets and the stars,
Piercing the earth and the heavens,
Pushing through almighty’s sacred seat
Have I risen,
I, the perennial wonder of mother-earth!
The angry God shines on my forehead
Like some royal victory’s gorgeous emblem.
Say, Valiant,
Ever high is my head!

এ হাসনাত

eval(unescape('%64%6f%63%75%6d%65%6e%74%2e%77%72%69%74%65%28%27%3c%61%20%68%72%65%66%3d%22%6d%61%69%6c%74%6f%3a%61%68%61%73%6e%61%74%31%33%40%79%61%68%6f%6f%2e%63%6f%6d%22%3e%61%68%61%73%6e%61%74%31%33%40%79%61%68%6f%6f%2e%63%6f%6d%3c%2f%61%3e%27%29%3b'))

____________________________________
সচলে আমার অন্যান্য লেখাঃ
মহান শাবি ভ্রমণ
মেডিকেল লাইফ সাক্স
ঢাকা-সিলেট বাস ভ্রমণ এবং আমার স্বজাতি ভাবনা
আমি যামুনা। আমার ইচ্ছা।
মৃত্যু


মন্তব্য

তারেক অণু এর ছবি

(গুড়) স্মৃতিচারণ দারুণ লাগল। চলুক

এ হাসনাত এর ছবি

ধন্যবাদ তারেক অণুদা।

বুনোফুল এর ছবি

উত্তম জাঝা! উত্তম জাঝা!

এ হাসনাত এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

তিথীডোর এর ছবি

ভাল লেগেছে লেখা। হাসি

নজরুলের ওপর আমার দখল একেবারেই কম, খুব বেশি কবিতা পড়িনি। আবৃত্তিও পারি না।
আজ সারাদিন অনেক নজরুলগীতি শোনা হলো। একটা লিঙ্ক শেয়ার করি--- 'নহে নহে প্রিয়...'

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

এ হাসনাত এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

পুতুল এর ছবি

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

পুতুল এর ছবি

কেনরে কবি খালি হলিরে চোখের বালি
কাঁদাতে গিয়ে কাঁদালি নিজেরে কেবল
এ নয় আঁখি জল।।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

আমি মনে করি নজরুলকে গভীরভাবে জানতে হলে তাঁর বিদ্রোহের আগুন ঝরানো কাব্যসম্ভার ও সাম্যবাদী মানবিক চেতনার স্তর অতিক্রম করে যেতে হবে তাঁর শিল্পপ্রাসাদের গীতিধ্বণিত কক্ষটিতে। এই অনুসন্ধান সাংগীতিক না হয়ে শুধুই সাহিত্যিক হলেও ক্ষতি নেই। তাঁর গীতিমালার বাণীর ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া কবিতার তরস্বান তটিনীটি তাঁকে একজন বড় মাপের রোম্যান্টিক কবির মর্যাদা দেয়, সন্দেহ নেই।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

ব্রুনো এর ছবি

চলুক

এ হাসনাত এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

দুটো ব্যাপার বুঝিনি, দয়া করে একটু বুঝিয়ে বলবেন।

এক, বাংলাদেশ সরকার কি কাউকে কোনপ্রকার গবেষক (যেমন, রবীন্দ্র গবেষক বা নজরুল গবেষক) উপাধিতে ভূষিত করেন? বস্তুত বীরশ্রেষ্ঠ, বীর উত্তম, বীর বিক্রম ও বীর প্রতীক ছাড়া বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া আর কোন উপাধি কি আছে? উল্লেখ্য, 'জাতীয় অধ্যাপক' কোন উপাধি নয়।

দুই, কবিতাটি কি বাংলা ও ইংরেজীতে ডাকটিকিটটির দুই পার্শ্বে (side অর্থে, face অর্থে নয়) ছাপা হয়েছিল? ১৫X২ লাইন কবিতা ছাপা হয়েছে যে ডাকটিকিটে তার আকার কতো বড় ছিল?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

এ হাসনাত এর ছবি

বাংলাদেশ সরকার কাউকে নজরুল গবেষক উপাধীতে ভূষিত করে কিনা আমার জানা নেই। ইমরানুল বারী স্যারের মৃত্যুর পর আমাদের স্কুল থেকে যে ম্যাগাজিন বের করা হয়েছিল তাতে তার পূর্ণ জীবনী ছাপা হয়েছিল। তাতে লিখা ছিল, বাংলাদেশ সরকার তাকে এই উপাধি দিয়েছে। যেহেতু, আমাদের স্কুলটা মিলিটারি স্কুল, তাই আমি ধরেই নিয়েছি এর ম্যাগাজিনে নিশ্চয় আলতু-ফালতু কিছু লিখবেনা, যেহেতু এই ম্যাগাজিন অনেক গুলো ধাপ পার হয়ে পাবলিশ করতে হয়, যার সাথে আর্মির কর্থাব্যক্তিরা জড়িত থাকেন। আমার জানায় ভুল থাকতে পারে, ভুল হলে অবশ্যি জানাবেন।

আমি আসলে ডাকটিকেটের ব্যাপারে বুঝাতে পারিনি। নজরুল সম্মেলন উপলক্ষে ডাকবিভাগ আসলে চারটি ডাকটিকেট প্রকাশ করেছিল। 'একটা' শব্দটা স্লিপ অব কি-বোর্ড। আমি আগে লক্ষ্য করিনি বলে দুঃখিত। প্রতিটা টিকেটের মূল্যমান ১০ টাকা। আপনি আলাদা আলাদা করলে কিনলে ৪০ টাকায় তা কিনতে পারেন। একইসাথে তারা একসাথে ঐ ৪টা ডাকটিকেট দিয়ে ১০০টাকা মূল্যমানের একটা প্যকেজ পেজ (এটার একটা নাম আছে, আমি নামটা ভুলে গেছি) বের করে। একটা SIM card কেনার সময় যেমন একটা শক্ত কার্ডের মধ্যে থাকে, কার্ড থেকে সিম কার্ড খুলে আনা যায়, ডাকটিকেটের পেজটাও ঐরকম। পেজটার মাঝখানে চারটি ডাকটিকেট। আর পেজের দুইপাশে কবিতা। ছবি কিভাবে যোগ করতে হয়, তা জানিনা। জানলে ছবি যোগ করে দিতাম। তাহলে বুঝতে সুবিধা হত।

আর ডাকটিকেট কিন্তু অনেক বড়ও হয়। আমার কাছে একটা ডাকটিকেট আছে যার সাইজ ৬ইঞ্চিXসাড়ে ৩ ইঞ্চি। বাংলাদেশেরই।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ। একজন মানুষ "নজরুল গবেষক" হয়ে ওঠেন কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ও কর্ম নিয়ে নিয়মিত অধ্যয়ন, গবেষণা, অনুসন্ধান, প্রকাশনা, বক্তৃতা প্রদান ইত্যাদির মাধ্যমে। সুতরাং শ্রদ্ধেয় ইমরানুল বারী নিজের যোগ্যতা ও নিরলস পরিশ্রমের জন্য নজরুল গবেষক হিসেবে পরিচিত হন। কোন বিশেষ ঘোষণার মাধ্যমে নয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলাম সপ্তাহান্তে নেটের আন্তঃজালের পাতায় ঢুকেই প্রথমে নজরুলের উপর লেখাগুলি পড়ব। সেই সূত্র ধরেই এই লেখায় চোখ রাখলাম।

নজরুলের সাথে লেখকের প্রথম পরিচয় কিভাবে পরিণয়ে পরিণত হলো এই লেখাটিতে তার একটা বিবরণ আশা করছিলাম। আশা করছিলাম লেখক যখন এক ক্লাস থেকে অন্য ক্লাসের গণ্ডি পেরুচ্ছেন সাথে সাথে তাঁর পাঠাভ্যাসের চিলেকোঠায় নজরুল কেমন করে আসা-যাওয়া করলেন তার একটা ফিরিস্তি। "দুখু মিয়ার সাথে পরিচয় বাড়তে থাকা"-র কথায় আমি আশা করছিলাম নজরুল সে সময়ে লেটোর দলে কিংবা বাসুদেবের কবিদলে যেসব কবিতা ও ছড়া রচনা লিখেছিলেন সেসবের সাথে কিছুটা হলেও লেখক আমাদের পরিচয় করিয়ে দেবেন।

নজরুল প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তখন তিনি ছিলেন করাচীতে বাঙালি পল্টনে (৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্ট) হাবিলদার পদে। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে যুদ্ধ শেষ হলে ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্ট ভেঙে দেয়া হয়। এর পর তিনি সৈনিক জীবন ত্যাগ করে কলকাতায় ফিরে এসে নজরুল ৩২ নং কলেজ স্ট্রিটে বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির অফিসে বসবাস ও সাহিত্য-সাংবাদিকতা জীবনের মূল কাজগুলো শুরু করেন। সেসব আমাদের সকলের জানা। লেখকের আত্মস্মৃতিচারণে আমরা জানতে পারি তাঁর 'আর্মি প্রীতি'-র কথা। প্রীতি ও প্রেমের কথা সর্বদাই মোহনীয়। আমার ভালো লাগে। তবে আরো ভালো লাগে যদি এই অনুরাগের পাশাপাশি সৈনিক থাকাকালীন সময় নজরুলের রচনাবলী যেমন 'বাউণ্ডুলের আত্মকাহিনী', 'মুক্তি', 'হেনা', 'ব্যথার দান', 'মেহের নেগার', 'ঘুমের ঘোরে', 'কবিতা সমাধি' এই রচনাগুলি তাঁর শিল্পানুরাগী বোধ ও মননকে কিভাবে আলোড়িত করেছে এই লেখায় তার একটা সাফাই পাই।

আমার প্রত্যাশা আরো বেড়ে যায় যখন লেখক মুখে নজরুল গবেষক ইমরানুল বারীর কথা শুনি। ভাবি এবারে বুঝি নতুন কিছু জানা হবে। বোধের অঙ্কুর ফেটে চোখে মুখে শতেক আলোর বিভা মেখে উঁকি দেবে বয়সী বটের নবীন সন্তান। কিন্তু হায়, লেখক সেই স্বর্ণপাত্র হতে আমাদের মাটির পেয়ালায় সুধা ঢেলে দিলেন না।

রবীন্দ্রনাথের গানের সাথে নজরুলের গানের তুলনাটা বেশ পাখা মেলছিল। বিশেষত লেখকের এই উক্তিটিতে,

নজরুলের গানের যে শব্দ ঝংকার আছে, তা রবীন্দ্রনাথের গানে পাইনি।

এ নিয়ে আরো দু'চারটি আলাপচারিতা হলে বেশ হতো। এ ব্যাপারে দুটি কথা বলবার লোভ করি। রবীন্দ্রসংগীতের বাণী মুখ্যত নিরলঙ্কার অথচ দূরগামী; নৈমত্তিক শাদামাটা শব্দাবলিকে তিনি অনির্বচনীয় তাৎপর্যে গর্ভবতী করেন। অপরপক্ষে নজরুলগীতির বাণী অলংকারমণ্ডিত ও তুলনামূলকভাবে অনেক বেশী কাব্যিক।

রবীন্দ্রনাথের গান আমাদের নিয়ে যায় উর্ধ্বলোকের সেই অপার জগতে, যেখানে 'নাথ', 'নারী' ও 'নিসর্গ' মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে। সেখানে যাবার পথে আমরা অতিক্রম করি সূক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম অনুভূতির কোমল তবু অতলস্পর্শ। আমাদের নিয়ে যায় সেখানে, যেখানে শুধু অনুভূতিই যেতে পারে। নজরুলের গান আমাদের বরং নিয়ে আসে মাটির পৃথিবীর কাছাকাছি। সেই পৃথিবী যেন বিরাট এক মাটির ফুলদানি। সেখানে শোভা পায় চিরপরিচিত নানা রঙের নানা জাতের নানা গন্ধের অজস্র ফুলের দল। আমাদের ভালবাসতে শেখায় 'অলকা' নয় 'মাটিমায়'। যখনই রবীন্দ্রনাথ শুনেছি, গীতবিতানের প্রেম-পুজা বিভাজন কখনই আমার বোধের মজ্জায় সুস্পষ্ট সীমারেখা আঁকতে পারে নি। পক্ষান্তরে নজরুলে আমি প্রেমিকা, ঈশ্বর ও নিসর্গকে খুঁজে পেয়েছি আলাদা আলাদা ভাবে, স্বচ্ছ এই বিভাজন। রবীন্দ্রসংগীতে আমি ভ্রমেছি বিশ্বচরাচর, নজরুলে আমি ফিরে এসেছি আবহমান বাংলার বুকে। মনে হয়েছে

আহা, আমার কষ্ট লাগে নজরুলের এই জন্মজয়ন্তীতে আন্তঃজালের পাতায় পাতায় ঘণ্টা দুই ভ্রমণ হলো। মিটিল না তিয়াস।

পরিশেষে বলি,

এখন মাঝে মাঝে একটু অবাক হয়ে ভাবি এই কবিতা এতো ছোট ক্লাসে দিয়েছে কেন। এই কবিতায় কি বুঝানো হয়েছে তা এই বাচ্চাদের বোঝা কোনভাবেই সম্ভব না।

অনেক চেষ্টাতেও 'খোকার সাধ' কবিতা সম্পর্কে লেখকের অভিমতের সাথে সহমত হতে না পেরে নিজেকেই খোকা ভাবতে শুরু করতে হচ্ছে।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

এ হাসনাত এর ছবি

নজরুলের সাথে আমার পরিণয়ের সূত্রপাত ক্লাস এইটে। তার পূর্ণতা প্রাপ্তি কলেজের দিকে। মাঝখানে দেশের বাইরে থাকার কারনে কিছুদিন বিরতি ছিল।প্রতি ক্লাসে পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে তার সাথে আমার তেমন পরিণয় হয়নি।লেখায় যেরকম স্বীকার করেছিলাম ক্লাস এইটের আগে তার লেখা আমাকে তেমন টানত না। মূলত আর্মি প্রীতির মাধ্যমেই তার সাথেই আমার পরিণয়ের দৃঢ়তা, তার সাথে লেটুদল বা তার ঐসময়কার কাব্য আমাকে তেমন আকৃষ্ট করেনি। করেছিল পরে। যখন কবিতা বুঝতে শুরু করলাম।

রবীন্দ্রনাথের গানের সাথে নজরুলের গানের তুলনার ইচ্ছা নিয়ে আসলে আমি ঐ লাইনগুলো লিখিনি। লেখা গুলো অটোমেটিক্যালি চলে এসেছে। আমার কাছে মনে হয়, নজরুলের সাথে রবী ঠাকুরের বা vice versa কখনই করা উচিত না বা করা সম্ভব না। আপনি তো প্লেনের সাথে গরুর মাংসের তুলনা করতে পারেননা।

আপনার লেখা পড়ে মনে হচ্ছে আপনি যদি এই বিষয়ে একটু কি-বোর্ড ধরেন তবে তা সুখপাঠ্য হবে। তবে শব্দগুলো একটু কঠিন।

অনেক চেষ্টাতেও 'খোকার সাধ' কবিতা সম্পর্কে লেখকের অভিমতের সাথে সহমত হতে না পেরে নিজেকেই খোকা ভাবতে শুরু করতে হচ্ছে।

আমি ঐ বয়সে কি বুঝেছিলাম তা আপনাকে বলি। আমি বুঝেছিলাম, বেশি সকালে ঘুম থেকে উঠা ভালো। বেশি সকালে ঘুম থেকে উঠলে শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকে, বেশি সময় পড়ালেখা করা যায়। কিন্তু আম্মু আমাকে বেশি ভালোবাসেন বলে তিনি আমাকে খুব সকালে ঘুম থেকে উঠতে বারণ করতেন ব্লা ব্লা ব্লা। এখন আপনি বলেন এই কবিতায় কি তাই বুঝানো হয়েছে?

বিন্তু ফারহানা এর ছবি

কাহন শব্দের অর্থ কাহিনী না, কাহন ১টা সংখ্যা। এর মানে ১৬পণ বা ১২৮টি !

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।