Warning: Creating default object from empty value in theme_img_assist_inline() (line 1488 of /var/www/sachalayatan/s6/sites/all/modules/img_assist/img_assist.module).

।।অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাককে যখন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা বানিয়ে দেয়া হয়।।

হাসান মোরশেদ এর ছবি
লিখেছেন হাসান মোরশেদ (তারিখ: রবি, ০৫/০৭/২০০৯ - ৭:০৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


[প্রথম যখন আহমদ ছফা'র 'যদ্যপি আমার গুরু' পড়ি- ভাবনাগুলো তখনই শুরু হয়েছিল। গুরু অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাককে নিয়ে শিষ্য আহমদ ছফার এই ভক্তিমুলক বইটি আরো কয়বার পড়া হয়েছে, প্রতিবারই এই ভাবনাগুলো জেগেছে। শেষ পর্যন্ত সহ-সচল নুরুজ্জামান মানিকের মহাত্না আহমদ ছফার জন্মদিনে পড়ে মনে হলো, এই বার লেখা যাক। কৃতজ্ঞতা মানিক ভাই ]

auto
আহমদ ছফা পড়ে অনুধাবন করা যায় ছফা ও তার সময়ের সঙ্গীদের উপর আব্দুর রাজ্জাকের চিন্তার প্রভাব ছিলো অসামান্য। ফরহাদ মজহার ও সেই ঘরানার। আহমদ ছফার বয়ানেই জানা যায় অধ্যাপক রাজ্জাককে গ্রীক দার্শনিক ডায়োজেনিস এর সাথে তুলনা করা হতো।
অধ্যাপক রাজ্জাকের অসামান্য পান্ডিত্য নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার করার সাধ্য কিংবা সাধ আমার নেই। কিন্তু রাজনীতিতে তার আগ্রহ এবং সম্পৃক্ততা ছিলো বলেই তার রাজনৈতিক দর্শন ও ভূমিকা নিয়ে কথা বলার সুযোগ আমার রয়েছে বলে মনে করি কেননা যে কোন রাজনীতিই শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিকে আক্রান্ত করে।

ছফাই আমাদেরকে জানান অধ্যাপক রাজ্জাক ছিলেন ধর্মরাষ্ট্র পাকিস্তানের ঘোর সমর্থক। তিরিশ চল্লিশের দশকের বাস্তবতায় এর বিরোধীতা করা যাচ্ছেনা তবে বাস্তবতা যাই হোক অভিজাত হিন্দুদের সাম্প্রদায়িকতার জবাবে আরেকটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনের সমর্থকদের বড়জোর 'অন এভারেজ' মানুষ বলে চিহ্নিত করা যায়, কোন ভাবেই প্রাগসর চিন্তার ধারক বলে আমি মেনে নিতে পারিনা। পাকিস্তান নামের আফিমের ঘোর কাটতে অধিকাংশ বাঙ্গালী মুসলমানদের বেশী সময় লাগেনি, রাজ্জাকের কতো সময় লেগেছিলো সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়না তবে জানা যায় ব্যারিষ্টার জিন্নাহ'র তিনি ফলোয়ার ছিলেন।

পাকিস্তান সমর্থক ও ব্যরিষ্টার জিন্নাহর ফলোয়ার এই অধ্যাপক নিয়ে আমার অতোটা ভাবনার কিছু ছিলোনা কিন্তু ভাবতে বাধ্য হই যখন আহমদ ছফা তার গুরুবন্দনায় জানান - অধ্যাপক রাজ্জাক নাকি ছিলেন ছয়দফার মুল প্রণেতা! এই সেই ছয়দফা, যা বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ম্যগনাকার্টা। শেখ মুজিবুর রহমান এটি প্রস্তাব করলে ও এটি ছিলো মুলতঃ কয়েকজনের মিলিত উদ্যোগ যাদের মধ্যে রুহুল কুদ্দুস নামের একজন সিএসপি কথা এই মুহুর্তে মনে পড়ছে। কিন্তু ছয়দফা মুল প্রণেতা অধ্যাপক রাজ্জাক এই দাবীর সমর্থনে কোন ঐতিহাসিক প্রমান আছে? দিল্লী থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকার কলাম ছাড়া?
প্রসংগক্রমে মনে পড়লো, মওলানা ভাসানী সহ বামপন্থীদের একাংশ ছয়দফা প্রত্যাখান করেছিলেন, এটি সিআইএ'র দেয়া ফর্মুলা বলে।

রাজ্জাককে শুধু ছয়দফার মুল প্রণেতা বানিয়েই ক্ষমা করেননি ছফা, গুরুবন্দনার ১০৯ নং পৃষ্ঠায় ছফা দাবী করছেন বাংলাদেশকে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করে আলাদা রাস্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার ধারণাটিও রাজ্জাক সাহেবের মস্তক থেকে এসেছিল।"। এই বক্তব্যটি এতোই সিদ্ধান্তমুলক যে এর পক্ষে কোন তথ্য প্রমান দেয়ার ও ধার ধারেননি ছফা।

অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাককে নিয়ে সবচেয়ে আগ্রহপদ তথ্য পাই সর্দার ফজলুল করিমের দেয়া সাক্ষাৎকারএ। রাজ্জাক জাতীয় অধ্যাপক হয়েছিলেন মুজিব আমলেই। সর্দার রাজ্জাক সম্পর্কে জানান ' প্রফেসর রাজ্জাকের সাথে ডালিমের পরিবারের সম্পর্ক ছিল। শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর ডালিম তাঁকে জানিয়েছিল। শুনেছি, তিনি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখান নি। ডালিম তাঁর কাছে আশ্রয় নিতে গেল না কোনো রিপোর্ট দিতে গেল তা জানা যায় নি। রাজ্জাক সাহেব মারা যাবার পর আওয়ামি লীগের কোনো নেতা তাঁকে দেখতে যান নি।'

অধ্যাপক রাজ্জাক মুজিব হত্যার সমর্থক ছিলেন কিনা জানিনা তবে আমার একটা পুরনো ধারনা আরো কিছুটা ভিত্তি পায়। মুজিব হত্যা কেবল সামরিক ও রাজনৈতিক ইন্ধনে হয়নি এর পেছনে বুদ্ধিবৃত্তিক সমর্থন ও ছিলো আর এই হত্যার কারন শুধু ব্যক্তি মুজিব ও তার পরিবারকে ধ্বংস করাই ছিলোনা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চরিত্র বদল ও ছিলো জরুরী। আগ্রহী পাঠক মুজিব হত্যার সাথে কি কি সাংবিধানিক পরিবর্তন হয়েছিল, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তন করা হয়েছিল, কারা কারা বাংলাদেশকে সেই মুহুর্তে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি জানিয়েছিলো সেসব পুনঃ পাঠ করতে পারেন।

অধ্যাপক রাজ্জাকের আরেক কীর্তি, তিনি ভাষাশহীদ বরকতকে পুলিশের ইনফর্মার হিসেবে পরিচিত করেছিলেন। তাকে নাকি এই তথ্য দিয়েছিলেন এক পাকিস্তানী পুলিশ অফিসার!

অধ্যাপক রাজ্জাক সম্পর্কে শেষপর্যন্ত একটা উপসংহারে আসতে পারি আহমদ ছফারই হাত ধরে ' রাজ্জাক সাহেবকে বাঙ্গালী মুসলমান সমাজের ঐতিহাসিক অহংবোধের প্রতীক বললে অধিক বলা হবেনা'

ঠিক অতোটুকুই আসলে আব্দুর রাজ্জাকের রাজনৈতিক দর্শন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রের সকল মানুষ- বাংগালী, অবাঙ্গালী, মুসলমান, অমুসলমান, আস্তিক, নাস্তিক সকল মানুষের প্রতীক হয়ে উঠতে পারেননা তিনি।

এই অসম্পূর্ন, এভারেজ পন্ডিতকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা বানালেন কেনো আহমদ ছফা? কিসের ভিত্তিতে? ছফার সংগী সাথীরা তার জীবদ্দশায় এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছিলেন কিনা জানা হয়না আমার।
তবে আব্দুর রাজ্জাকের জীবিত শিষ্য - ফরহাদ মজহার,সলিমুল্লাহ খান যারা এদেশের জনগোষ্ঠীর কথা বলতে গিয়ে কেবল মুসলমান বাঙ্গালীর কথা বলেন, এই অঞ্চলের সংস্কৃতি বুঝাতে গিয়ে মুসলমান বাঙ্গালীর সংস্কৃতি বুঝান তাদেরকে দেখে অনুধাবন হয় আব্দুর রাজ্জাক হয়তো সত্যিই এরকম এক খণ্ডিত, একপেশে, পোকায় কাটা বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন। সত্যিই!


মন্তব্য

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

অধ্যাপক রাজ্জাক সম্পর্কে অনেকের লেখায় নানা গুণগানের আভাস পাই। কিন্তু তিনি নিজে কিছু লিখে (বই কিংবা প্রবন্ধ) গেছেন কিনা এই সম্পর্কে কেউ কী একটু বলতে পারবেন?

হাসান মোরশেদ এর ছবি

সম্ভবতঃ না। অধ্যাপক রাজ্জাক আসলেই ছিলেন সক্রেটিসের মতো। কিছু লিখে যাননি।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

পড়লাম।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

হাসি
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

এনকিদু এর ছবি

পড়লাম ।

প্রথমে ব্লগটা পড়লাম ।
তারপর চিন্তায় পড়লাম ।

আমার জ্ঞান সীমিত । তবে বুঝতে পারছি এই পোস্টে বেশ ভাল একটা আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা আছে ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

জিফরান খালেদ এর ছবি

oti druto 'khondito, oshumpurno' shiddhante puochanor torikaate obak hoilaam.... 'dhaka bishshobiddaloi : purbobongio shomaj' boita re tar shompokre mul dolil bola hoi... rajnoitik, ba onno je kono dorshon dekha jai oita tei shobcheye beshi..

jai hok, ullomfon-based ei tokma-lagano re reactionary-e mone hoilo... aro kisu manusher rajjak-voktir reaction, naaki oi manushgular motadorsher-reaction.. jani na..

(onno ekjoner pc, avro nei, khoma korben roman horofer jonne)

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

কেন কবি? অভ্র তো লাগার কথা নয়, সচলের কী-বোর্ড তো এমনিতেই লোড হয়, শুধু সিলেক্ট করে নিলেই হলো। সেখানে অভ্রও আছে।

জিফরান খালেদ এর ছবি

ওটা আরেকজনের ল্যাপটপ ছিলো। অল্প সময়ের জন্যে নিয়ে ঢুঁ মেরেছিলাম। প্রোগ্রামে গিয়ে দেখি অভ্র নেই; অন্য কোনো উপায়েও যে লিখা যায়, এইটাই জানতাম না। না হলে, আমি নিজে ঐভাবে লিখা পড়তেও পছন্দ করি না। আপনার পরামর্শ মনে থাকবে। থ্যাঙ্কস।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

'৪৭ পূর্ব সময়ে হিন্দু অভিজাতদের সাম্প্রদায়িকতার জবাব হিসেবে পাকিস্তানের মতো আরেকটা সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রগঠনের চিন্তাকে কি সম্পূর্ন, প্রাগসর ভাবনা বলে মেনে নিতে হবে? জিন্নাহর মতো একটা বাস্টার্ডকে যিনি নেতা মানেন তার রাজনৈতিক দর্শনকে কি খুব বিনয় সহকারে আলোচনা করতে হবে?
যে বইটার উল্লেখ তুমি করেছো সেটা আমি পড়িনি, কিন্তু ঐ বই কি রাজ্জাকের পাকিস্তান সমর্থক ও জিন্নাহপ্রীতিকে অস্বীকার করে? যদি করে তাহলে আমি আমার বক্তব্য তুলে নেবো।

নাহলে, একটু ব্যাখ্যা দিও কেনো তোমার কাছে এটা রিএকশনারী উল্লম্ফন মনে হলো?

ঘটনাক্রমে মনে পড়ে গেলো, কদিন আগে ফেসবুকে এক অগ্রজ কবি পূর্ব বাংলার কবিতাকে মুসলমান কবিতা আর পশ্চিম বাংলার কবিতাকে হিন্দু কবিতা বলে উল্লেখ করেছিলেন। তার এই উল্লেখকে আমি 'ননসেন্স' বলেছিলাম বলে তিনি ও একে রিএকশনারী উল্লম্ফন বলেছিলেন হাসি
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

জিফরান খালেদ এর ছবি

হাসান ভাই,

ঐ ফেসবুকীয় নোটখানি আপনি আমাকে লিঙ্কসহ পড়তে দিয়েছিলেন আপনার নোটখানিতে আলোচনা করতে সুবিধা হবে ব'লে। বারকয়েক চেষ্টার পরো আমি পড়তে পারিনি ওটা। সেটাও ওখানেই জানিয়েছিলাম। যার ফলে, আপনার নোটটিতে তেমন ভাবে কিছু বলতে পারিনি, আমার সাধারণ অবজারভেশান ছাড়া। সুতরাং, আপনার যে নোটে আরেকজন কী বলল, সেটা যদি আমার অজ্ঞাত থাকে, বা, এর কারণ, বা বিতণ্ডা, একই শব্দবন্ধ ব্যবহারের ফলে আমাকে ঐ নোট-বাহী স্রোতে ফেলাটা আরো সঘন প্রতিক্রিয়াশীলতাকেই কি তুলে ধরে না?

আমি আপনার লিখাটি পড়ছিলাম বেশ আগ্রহ নিয়ে। যখনই দেখলাম আলোচনার ক্ষেত্র আপনি তৈরি করে এনেছেন, তখনই আপনি আপনার প্রাক-সিদ্ধান্তগুলো টেনে দিয়ে শেষ করে দিলেন। বয়ান বা যুক্তির আদলে উদাহরণ দিলেন কিছু 'শোনা-কথা'কে আর ছফা'র বই হতে ছফা'র টানা ব্যক্তিক সিদ্ধান্তগুলোকে আপনার সিদ্ধান্ত-অনুগামী করে ব্যবহার করে।

আমি যেখানে অপেক্ষায় ছিলাম রাজ্জাকের রাজনৈতিক অবস্থানের ঐতিহাসিকতার চূর্ণ-বিচূর্ণ হওয়া দেখবার জন্যে, কেননা সেভাবেই বোধকরি তাকে বাংলার ভিশনারী হিসেবে রোধ করা যায়, সেটা না দেখে দেখলাম লিখা ওখানেই শেষ; শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আপনার লিখায় একটা তির্যক চাহনি দেখলাম, এবং সেইটাই পরে গিয়ে মূলকথা হয়ে উঠলো। অর্থাৎ, আপাদমস্তক একটা 'ঘেন্না'-ভাবই লিখা হয়ে উঠলো। আর, উপসংহারে
এভাবে পৌঁছানোর ধরণকেই আমি উল্লম্ফন বলেছি। আপনার হয়তো এ-যুক্তি-কাঠামোই পছন্দ।

সেটা হতেই পারে। আমার কোনো আপত্তি নাই। আপনি তো আর পলিটিক্যাল ইকোনোমির ব্যক্তিক খতিয়ান দিতে বসেননি; আপনারই ক্ষোভ তুলে ধরেছেন। সেটা মাথায় রেখেও বলছিলাম রাজ্জাকের মূল চিন্তা-ভাবনা ঐ বইটীতেই আছে। ছফা'র বইতেও এই বইটির বিশেষ উল্লেখ আছে এর সারবত্তার কারণেই। আমার হাতের কাছে বইটি নেই। থাকলে হয়তো কিছু শেয়ার করা যেতো। এইটা মূলতঃ সরদার-এর গোপনে নেয়া রাজ্জাকের চিন্তাভাবনা।

পাকিস্তানপন্থী বলে রাজ্জাকরে যেভাবে ঢালাও একটা তকমা দিয়ে দেওয়া হলো, আমি এইটার ঐতিহাসিকভাবে সত্যতা পর্যবেক্ষণের পক্ষে, আমার তরফ থেকে। কারো কাছে কোনো সাজেশ্চান থাকলে বইলেন। আমি জানতে আগ্রহী।

আপনার করা বাকি প্রশ্নগুলার উত্তর আপনি আমার কাছে চাননি। উত্তরসহ প্রশ্নগুলো করেছেন আপনার ক্ষোভ প্রদর্শনের জন্যে। সেগুলোর ব্যাপারে আমার তাই বলার কিছু নাই।

তবে আমি নিজে আমার নিজস্ব অবস্থান যদি থাকে, সেইটার পিছনের ঐতিহাসিক ঝামেলাগুলো সম্বন্ধে সতর্ক থাকতে চাই। 'নরম্যাটিভ টুল' এর কোনো রাজনৈতিক ঘটনায় (একশানে) উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি দিয়া আমার অবস্থানের ব্যাপারটাও দেখার আগ্রহ আমার থাকে।

যাক, বাইক্যা গেজাইলাম মনে হইতাসে।

তবে, ভাইধন, এই লিখাটা আরো বড় পরিসর দাবি করে, এইটা আবদার রাখলাম।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

তোমার 'উল্লম্ফন' শব্দ প্রয়োগের ব্যাখ্যা ঠিকাছে :)। তবে মাত্র কয়দিনের ব্যবধানে একজন অগ্রজ ও একজন অনুজের কাছ থেকে একই শব্দের লক্ষ্যে পরিনত হওয়ায় একটু রিএকটিভ হয়েছিলাম এই আর কি।

রিএকশনারী বিষয়টাকে আমি অবশ্য অতোটা নেগেটিভ হিসেবে দেখিনা। বরং দেখো- এই ২০০৯ এ পোষাকে আশাক,বাক্য ব্যবহারে একজন ' আধুনিক' মানুষ যদি বাংলা কবিতাকে হিন্দু কবিতা আর মুসলমান কবিতা বলে ট্যাগ করে কিংবা ছফার মতো প্রগতিশীল বলে পরিচিতজন বাষ্টার্ড জিন্নাহর ফলোয়ারকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা বলে সিদ্ধান্তে আসেন তাহলে এসবকেই বরং আমার কাছে উল্লম্ফন বলে মনে হয়।

আমি কেবল এই উল্লম্ফন এর বিরোধীতা করছি আমার সামর্থ্য অনুযায়ী। আরো বিস্তারিত, আরো বিশ্লেষনমুলক আলোচনা হয়তো অন্য কেউ করবেন। হতে পারো হয়তো তুমিই সেই বড় কাজটা করলে।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

মণিকা রশিদ এর ছবি

"তবে আব্দুর রাজ্জাকের জীবিত শিষ্য - ফরহাদ মজহার,সলিমুল্লাহ খান যারা এদেশের জনগোষ্ঠীর কথা বলতে গিয়ে কেবল মুসলমান বাঙ্গালীর কথা বলেন, এই অঞ্চলের সংস্কৃতি বুঝাতে গিয়ে মুসলমান বাঙ্গালীর সংস্কৃতি বুঝান তাদেরকে দেখে অনুধাবন হয় আব্দুর রাজ্জাক হয়তো সত্যিই এরকম এক খণ্ডিত, একপেশে, পোকায় কাটা বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন। সত্যিই! "
........................................
......সবটুকু বুঝতে কে চায়!

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

সবজান্তা এর ছবি

"যদ্যপি আমার গুরু" পড়ার পর আমার মধ্যে কিছুটা বিস্ময়কর প্রতিক্রিয়া হয়েছিলো কারণ অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাককে নিয়ে এর আগে তেমন কিছু পড়ি নি। সম্পূর্ণ বইটা পড়ে শেষ করার পর যে অনুভূতিটা আমার মধ্যে বেঁচে ছিলো তাকে যে পুরোপুরি শ্রদ্ধা বলা যায়, মনে হয় না।

যাই হোক, যেহেতু বিশেষ কিছু জানি না তাই মন্তব্য না করাই শ্রেয় বলে বোধ হচ্ছে। এর চেয়ে বরং আলোচনা দেখা যাক, কোন প্রশ্ন থাকলে তখন করা যাবে।


অলমিতি বিস্তারেণ

সুমন চৌধুরী এর ছবি

একটা মজার কথা কি.........আমার ক্যান জানি রাজ্জাক সাহেব সম্পর্কে খুব বেশী আগ্রহ হয় নাই। যতটুকু জানি তাতে বুঝি তিনি জ্ঞানী লোক ছিলেন। চিন্তায় অন্যায় রকম পাকিস্তানপ্রীতি ছিল। তিনি রাজাকার বা দালাল ছিলেন এরকম প্রমাণ নাই। তাই তাঁর পিণ্ডি চটকানোর দাবী করি না। তবে তারে নিয়া কেউ ফালাফালি করলে তার এই পাকিস্তানপ্রীতির ব্যাপারটা মনে করাইয়া চুপ থাকতে চাই।

পাকিস্থানপন্থা কেমনে কেমনে সঠিক ছিল এই বালের আলাপ করার টাইম নাই।



অজ্ঞাতবাস

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

চলুক
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

সজারু এর ছবি

রাজ্জাক সাহেবের সবচেয়ে বড় অবদান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে গড়ে তোলা
সব সময় উনি চেষ্টা করতেন সবচেয়ে ভালো শিক্ষক নিয়োগ দিতে তা সে যে দলেরই সমর্থক হোক না কেন, সরদার স্যারই তার বড় উদাহরণ। অসাধারণ জ্ঞানী লোক ছিলেন তিনি এবং অনেকের উপড়ই তাঁর প্রভাব ছিলো। তবে তিনি ছিলেন অখন্ড পাকিস্তানের সমর্থক, ৬ দফার প্রণেতা উনি ছিলেন না, ছিলেন না বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টাও।
শুধু ডালিম না ১৫ই আগস্ট দুপুরে ওনার বাসায় উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন মার্কিন এ্যাম্বাসেডরও, সরদার স্যারের জবানীতেই পাওয়া যায় তা, তবে মাস্টার মাইন্ড ছিলেন এমন কোথাও দেখি নাই।
মাঝার,সলিমুল্লাহরাও সম্ভবত কয়েদ-এ-আজমের অনুসারী ৭৫-এর পট পরিবর্তন হওয়ার পর ৮০ দশকে এদের আস্ফালন শুরু হয়, তারপরও আতেল হিসাবে কল্কি না পাওয়ায় তারা অতৃপ্ত তাই নানা বাহানায় ( পড়তে হবে ডান-বাম জ্ঞ্যানশূন্য হয়ে ) তারা না পাওয়া বাসনার কথা জানান দেন, এই লাইনে আবার গুরু ছাড়া চলেনা তাই সবে ধন নীলমনি রাজ্জাক সাহেব...খুইজা দ্যাখেন আড়ালে আবডালে তারা মুক্তিযোদ্ধা আল মামুদের বুদ্ধিজীবি হিসাবে কল্কি না পাওয়ার জন্যও আফসোস করেন( কবি হিসাবে নয়, কারণ আল মামুদের সবচেয়ে বড় শত্রুও তারে বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ কবিদের একজন মানেন )।
সলিমুল্লাহ সাহেব আবার দেখলাম কোথায় রবীন্দ্রনাথরে উল্লেখ করেছেন মিডিওকার হিসাবে...দ্যাখেন কোনদিন আবার লালনরে কিস্তি টুপি পড়ায়া ছাড়ে। এতগুলা বাজে কথা বল্লাম কারণ রাজ্জাক সাহেবের মতো মানুষকে নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে এইসব ফালতু লোকরে না টানলেও চলে।

_________________________

সর্বাঙ্গ কন্টকিত-বিধায় চলন বিচিত্র

_________________________

সর্বাঙ্গ কন্টকিত-বিধায় চলন বিচিত্র

শামীম এর ছবি

ইতিপূর্বে ভাষা আন্দোলনের একটা পোস্টে এই বিষয়ে আপনার সাথে খানিক আলাপ হয়েছিলো। বিস্তারিত পোস্ট দেখে ভালো লাগলো ... (জানার বাকি আছে অনেক ...)

ধন্যবাদ। চলুক
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

মজহার বা সলিমুল্লাহ খানরা আরো অনেক বেশী সমস্যার লোক। বিশেষ করে মজহার। আমারো মনে হয় রাজ্জাক সাহেবের সাথে মজহার/সলিমুল্লাহ খানদের এক লাইনে না ধরাই ভালো।



অজ্ঞাতবাস

রণদীপম বসু এর ছবি

বিভিন্নজনের মুখে অদ্ভুত অদ্ভুত কতো কথা শুনেই শেষপর্যন্ত গত বইমেলা থেকে গোটা ছফা রচনাবলী (৮খণ্ড) নিয়ে এসেছিলাম। যেহেতু কচলানো হয়নি এখনো, তাই এ ব্যাপারে বলার চাইতে পড়তে বা শুনতেই আগ্রহী এখনো।
তয় চমৎকার একটা পোস্ট হাসান ভাই ! অভিনন্দন।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

শামীম রুনা এর ছবি

"যদ্যপি আমার গুরু" পড়ে অধ্যাপক রাজ্জাক সম্পর্কে আমার মধ্যে বিস্ময় কাজ করেছিল। কারণ, অধ্যাপক রাজ্জাক সম্পর্কে আমি তেমন কিছু জানতাম না। পরে অন্য কারো ( নাম মনে নেই ) লেখা থেকে জানতে পারি অধ্যাপক রাজ্জাক ভালো রান্না করতেন এবং তিনি উপদেশ দিয়েছিলেন যে, সব সময় মাঝারী আগুনে রান্না করতে। সেই থেকে রান্না করতে গেলে আমি নিজের অজান্তে অধ্যাপক রাজ্জাকের সেই উপদেশ মেনে চলি।

_________________________________________________________
খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি,এক পৃথিবী লিখবো বলে-একটা পাতাও শেষ করিনি।

_________________________________________________________
খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি,এক পৃথিবী লিখবো বলে-একটা পাতাও শেষ করিনি। ( জয় গোস্মামী)

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

অনেক কিছু জানছি...
আলাপ আরো চলুক...
____________
অল্পকথা গল্পকথা

সিরাত এর ছবি

পূর্বপ্রসঙ্গ না বুঝেই পড়লাম। জানলাম। হাসি

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

সুমন চৌধুরীর মতো আমিও মনে করি এই আলোচনায় ফরহাদ মাজহারকে না আনায় শ্রেয় । আলোচন মাজহারকেন্দ্রিক হবার আশংকা থাকে যা এই পোস্টের উদ্দেশ্য নয় ।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আসলেই কি?
নেজারতের বাউন্ডুলেকে ইশ্বরপুত্র বলে প্রতিষ্ঠা করলেন যে পিতর, যোহান, লুক তাদের ছাড়া যীশুচর্চা কি সম্পূর্ন হয়?
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

বিস্তারিত আলোচনার অপেক্ষায় রইলাম।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

প্রাচ্যের গুরুভক্তিটা একটা আলাদা বিষয় , সেখানে যুক্তির চেয়ে ভক্তির নৈবেদ্য অনেক অনেক বেশি। সেই হিসেবে ছফা'র ‌'যদ্যপি আমার গুরু' বইটিকে আমার কাছে ঠিকই মনে হয়েছে। যখন তরুণ বয়েসে কেউ আকৃষ্ট হয় ,তার মাঝে এক ধরনের তীব্রতা থাকে , ছফা সেই ভক্তি ও মুগ্ধতার তীব্রতাকেই ধারণ করে তার বইয়ে উপস্থাপন করেছেন বলে মনে হয়। এই ধরনের বইয়ের উপাত্ত ইতিহাস আলোচনায় রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করলে সেখানে সবসময়ই ভুলের সম্ভাবনা থাকে।

নদী এর ছবি

এক সময় শুনতে পেতাম নতুন প্রজন্ম (৯০ দশকে) বিভ্রান্ত। এই বিভ্রান্তিতে অধ্যাপক রাজ্জাকের শিষ্যকূল ভুমিকা রেখেছে বলে এখন ধারণা হয়। যদিও অধ্যাপককে কম জানি, তার শিষ্যকূল দেখে এই প্রত্যয় জন্মেছে যে, তারা নিজেরাই ভুল পথের পথিক ছিল। তারা তাদের ইচ্ছাকৃত ভ্রান্তিগুলো ছড়িয়েছে নির্বিঘ্নে। যাচাই করার পন্থাও ছিল না।

গোষ্ঠীপ্রীতির নীচতা যখন টুপি-পৈতার অধিকারে থাকে তা সমাজের যতটা ক্ষতি করে, তার থেকে শতগুন করে যখন তা প্যান্ট-শার্টে গিয়ে ঢুকে। তাই এইসব মানুষদের বেশী গুরুত্ব দেয়া যেমন ক্ষতিকর তেমনি সময়ের অপচয়ও।

নদী

মাহফুজ [অতিথি] এর ছবি

মানুষ কুক্ষণে অনেক দৃঃস্বপ্নও দেখে ধাকেন। তাঁরা সে অর্থে দুঃস্বপ্নদ্রষ্টাও বটে!

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

ওই শিবিরে এই যে নামগুলা একসাথে উচ্চারিত হয় (আমার ক্ষুদ্রজ্ঞানে এই নামগুলোর মধ্যে শুধু সরদার ফজলুল করিম স্যারকেই মোটামুটি পছন্দ করার মতো মনে হয় আমার কাছে), এইটা যে অমূলক না, এইটাই এই তীর্যক চাহনির কারণ হিসেবে যথেষ্ট। সো, আমারও ব্যক্তিগতভাবে বেশ ভালো এবং সমীচীন লাগলো এই পোস্টের মূলসুর। হ্যাঁ, ব্যক্তিই ব্যক্তিভক্তি করে, ব্যক্তিই ব্যক্তিকে প্রত্যাখ্যান করে, ব্যক্তিই এই সবকিছুকে সাজায় বাজায়। তাই, এই ধরনের বিচারগুলিতে ব্যক্তির আবেগ জড়িত থাকলে সেটাও ঠিকই আছে। ছফা সাহেব অন্ধ আবেগে রাজ্জাক সাহেবকে যা-কিছুই বানায়া দ্যান, আমি রাজ্জাক সাহেবকে এবং ছফা সাহেবকেও আমার আবেগে না-পছন্দ করতেই পারি, বলতেই পারি।
আবেগে হইলেও সই, হাসান মোরশেদ ভাইয়ের অত্র পোস্টের মূল বক্তব্যে আমি একটা উত্তম জাঝা দিয়ে গেলাম।
আমি বেশি পড়ি না, জানি না, তবে ভুল-ও যদি বুঝি- কিচ্ছু যায় আসে না, যেইটা বুঝি সেইটা হইলো- ধর্ষক, খুনী, রাজাকার- সবারই নিজ নিজ সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকে, কিন্তু আই ডোন্ট গিভ আ িট টু হিম। আমি ঘেন্নাই করি তারে, হ, মনেপ্রাণে করি।
মুসলমানিত্ব-রেও আমি কোনো ভালো পরিচয়-ক্রাইটেরিয়ন ব'লেই মনে করি না।
এই ধরনের আলোচনা ভালো পাই, কারণ অনেকটাই-অলস-পাঠক এই আমি এইগুলা প'ড়ে এক ধাক্কায় একসাথে অনেকটা লিটারেট হই।
ধন্যবাদ, সবাইকেই, সবার নিজ মতামতের জন্য।
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

শামীম এর ছবি

মোরশেদ ভাই,

অধ্যাপক রাজ্জাক স্যারের বক্তৃতা/চিঠি/লেখা ইত্যাদি কোথাও কি আর্কাইভ আকারে রক্ষিত আছে? উনি যেহেতু কোনো বই রচনা করেন নাই ... তাই লিপিবদ্ধ ঐ বিষয়গুলোর রেফারেন্স পাইলে ওনার ব্যাপারে আরোএকটু আলোকিত হইতে পারতাম। এবং ঐ ধরনের তথ্যগুলো অবসর কাটানোর সময়ে (চিত্ত বিনোদনের জন্য) পড়া যেত এবং সে থেকে হয়তো ওনার গুণমুগ্ধ অনুসারীদের থেকে আলাদা চোখে ওনাকে বিচার করার একটা রাস্তা বের হত।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

যতদূর জানি, না। রাজ্জাক সাহেবের দর্শন বাঁচিয়ে রেখেছেন তার শিষ্যগন।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

মাসুদা ভাট্টি এর ছবি

হাসান একটা মজার ব্যাপার কি জানেন? আব্দুর রাজ্জাক প্রজন্মের (তার পরেরও ধরুন মজহার-সলিমুল্লাহ্‌ গং) অনেকেই এই "হিন্দু ফোবিয়া" আক্রান্ত, নিজেদের জ্ঞানের দৈন্যতা তারা ঢাকতে চেয়েছেন সাম্প্রদায়িকতার চাদরে। পাকিস্তান-আন্দোলনে এদের একনিষ্ঠ সমর্থন ও সক্রিয় অংশগ্রহণ সংখ্যাগরিষ্ঠ মননশীল শিক্ষিত শ্রেনীকে দেশছাড়া করার কুৎসিত ধর্মযুদ্ধে রূপ নিয়েছিল। তারা একে নাম দিয়েছিল হিন্দু আধিপত্য , যা পরবর্তীতে একঘেয়ে ভারত-বিদ্বেষে রূপ নিয়েছে। অথচ ভেবে দেখুন আজকে পশ্চিমবঙ্গ যারা শিল্প-সাহিত্যে, ইতিহাস-চর্চায় এমনকি প্রযুক্তিবিদ্যায়ও শাসন করছে তাদের গরিষ্ঠ অংশ এপার বাংলা থেকে ধর্মতাড়িত হয়ে "হিজরত" করা। বাঙালিকে মেধাশূন্য করার এই প্রচেষ্টার নগ্ন ও সর্বোচ্চ সহিংস রূপ একাত্তরে বুদ্ধিজীবী নিধন, যখন হিন্দু পণ্ডিতের সঙ্গে মুসলমানদেরও রেয়াত দেয়া হয়নি।
আব্দুর রাজ্জাক, সাজ্জাদ হোসাইন, আহমদ ছফাসহ অনেকেই এই ধর্মযুদ্ধ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি, হাতে তলোয়ার নিয়ে তারা হিন্দুদের কচুকাটা করেননি বটে, কিন্তু যখন যেভাবে পেরেছেন তাদের বিরুদ্ধে লেগেছেন। আর তার জের কোথা পর্যন্ত গিয়েছে তার প্রমাণ দিতে পারি আহমদ ছফা থেকে। মুক্তিযুদ্ধ সময়কাল নিয়ে তার উপন্যাস পড়লে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে, ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী ও সেই সময়টাকে কীভাবে তিনি "রিডিকুল" করেছেন, ভাবলে আমার সত্যিই দুঃখ হয়। ওয়াহিদুল হক আর সন্‌জিদা খাতুনের পারষ্পারিক সম্পর্কে দ্বন্দ্বকে তিনি স্থান করে দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের চেয়ে অনেক ওপরে এবং সেটা নিয়ে তিনি উপন্যাস লিখেছেন, বাঙালির মুক্তিযুদ্ধটা তার কাছে উপন্যাসের বিষয় হওয়ার যোগ্যতা লাভ করেনি।

মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীকালে আব্দুর রাজ্জাক ও তার শিষ্যতের মতো এরকম বেশ কয়েকজন "পণ্ডিত"(?) শেখ মুজিবকে রাষ্ট্র প্রধান হিসেবে মেনে নিতে পারেননি, কারণ তাদের মতে, জিন্নাহর তুলনায় শেখ মুজিবের জ্ঞানগম্মি হয়তো কম ছিল। শেখ মুজিব গোপাল গঞ্জে জন্ম নেয়া "চাষার ছেলে", বিদ্যাবুদ্ধির দৌঁড় কোলকাতার ইসলামিয়া কলেজ অবধি - এরকম গালগল্প তখনকার এলিট বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে খুব চালু ছিল (দ্রষ্টব্য এনায়েতুল্লাহ খানের পুতুল নাচের ইতিকথা, ১৫ আগস্টের পরে শাহদত চৌধুরীর বিচিত্রায় প্রকাশিত প্রথম নিবন্ধ)। আহমদ ছফার সঙ্গে সিরাজ শিকদারের ঘনিষ্ঠতা তো সবাই জানে, আর জাসদের জন্ম এবং সারা দেশে হাজার হাজার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী হত্যাসহ রাজনীতিকে ভয়ঙ্কর এক বাটে ফেলে দেশীয়, আন্তর্জাতিক নানা ষড়যন্ত্রের ভেতর দিয়ে শেষ পর্যন্ত শেখ মুজিবকেসপরিবারে হত্যার মাধ্যমে দেশে পাকিস্তানী কায়দার সামরিক শাসনের উদ্বোধনে এই বুদ্ধিজীবীদের যে কি বিশাল অবদান তা ভবিষ্যত গবেষকদের জন্য বিস্ময় সৃষ্টি করবে, সন্দেহ নেই।

কিন্তু এতোসবে ক্ষতিটা হয়েছে কার? বাঙালি না হয়েছে মুসলমান, না রয়েছে বাঙালি - মাঝখানে ত্রিভঙ্গমুরারি 'বামান' হয়ে ঝুলে আছে নির্বাণের আশায়। কে তাদের তরাবে? বোধ করি এই ক্ষমতা স্বয়ং নারায়ণেরও নেই!

হাসান মোরশেদ এর ছবি

কৃতজ্ঞতা এই ঋদ্ধ মন্তব্যের জন্য।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

ওয়াহিদুল হক আর সন্‌জিদা খাতুনের পারষ্পারিক সম্পর্কে দ্বন্দ্বকে তিনি স্থান করে দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের চেয়ে অনেক ওপরে এবং সেটা নিয়ে তিনি উপন্যাস লিখেছেন, বাঙালির মুক্তিযুদ্ধটা তার কাছে উপন্যাসের বিষয় হওয়ার যোগ্যতা লাভ করেনি।

ছফাবিদ্বেষকে দূরে রেখে উপন্যাসটা পড়তে পারতেন।

অলাতচক্র পড়ার পর মুক্তিযুদ্ধকে বাদ দিয়ে অন্য কিছুকে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দেয়া হয়েছে বলে মনে করতে পারছি না।

সবুজ বাঘ এর ছবি

মোরশেদ, যদ্দূর মনে পড়ছে মাওলানা ভাসানী হবে না, হবে মওলানা ভাসানী। একটু দেখবেন কি?

হাসান মোরশেদ এর ছবি

দেখছি হাসি
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় আমার 'স্বাধীনতা যুদ্ধের অপর নায়কেরা’ গ্রন্থের পৃষ্ঠা ৩০-৩১ থেকে কিছু অংশ তুলে দিচ্ছি-

’৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারী দলের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান দলের নির্বাহী কমিটির সদস্যদের এক সভায় আওয়ামী লীগকে
পুনরুজ্জীবিত করার প্রস্তাব করেন। ৬ মার্চ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল সদস্যদের এক সভায় ঐ প্রস্তাব অনুমোদিত হয় ।বেশ কয়েকজন পুরনো আওয়ামী লীগ নেতা ঐ কাউন্সিলে যোগ না দেবার সিদ্ধান্ত নেন এবং তারা নুরুল আমিনের নেতৃত্বে এনডিএফ এ কাজ করে যেতে মনস্থ করেন । এনডিএফ এর বেশির ভাগ নেতাই স্বেচ্ছায় ছ’বছরের জন্য রাজনীতি থেকে বিরত থাকার কথা ঘোষণা করে ছিলেন । এর মধ্যে উল্লেখ্য, আতাউর রহমান খান, হামিদুল হক চৌধুরী ,আবু হোসেন সরকার, সৈয়দ আজিজুল হক, দেলদার আহমেদ প্রমুখ । পুরাতন আওয়ামী লীগের বয়োজেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ যেমন আবুল মনসুর আহমদ , আবদুস সালাম খান প্রমুখ যুবকর্মী শেখ মুজিবের নেতৃত্বে রাজনীতি করাকে অপমানজনক মনে করেছিলেন , তাই তারা আওয়ামী লীগে আর ফিরে আসেননি ।

১৯৬৪ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন উৎসব । কিন্তু স্বৈরাচারী আইয়ুবের অনুচর হিসেবে খ্যাত চ্যান্সেলর মোনায়েম খানের হাত থেকে সনদপত্র নিতে ছাত্ররা অস্বীকার করে । ফলে কনভোকেশন অনুষ্ঠান বানচাল হয়ে যায় । গভর্নর মোনায়েম খানকে আর কোনদিনই ঐ সুযোগ দেয়া হয়নি ।

১৯৬৪ সালে আইয়ুব খানের সাবেক আইনমন্ত্রী জাস্টিস ইব্রাহিমকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে একটি গোপন ফোরাম । এর সঙ্গে জড়িত হন সিরাজুল আলম খান, মাজহারুল হক, এহতেশাম হায়দার চৌধুরী, কাজী আরেফ আহমেদ প্রমুখ । ক্ষুদ্রাকারে হলেও এই ফোরামই সর্বপ্রথম বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করে । আর সিরাজুল আলম খানের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একটা অংশ কাজ করতে থাকে যারা পরিচিত ছিলেন স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস হিসেবে ।

১৯৬৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর শুরু হয় পাক-ভারত যুদ্ধ । ১২ সেপ্টেম্বর
যুদ্ধের অবসান হয় । মাত্র ১৭ দিন স্থায়ী এই যুদ্ধ অসীম গুরুত্বপুর্ণ এই জন্য যে, এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বহু বদ্ধমূল ধারণা ধুলিস্যাত হয়ে যায় এবং বহু সুপ্ত সত্যের দ্বার উদঘাটিত হয়ে পড়ে । এক কথায় ১৯৬৫ সালের যুদ্ধ , যুদ্ধের ফলাফল ও তৎজনিত উপলব্ধি পাকিস্তানের ভাঙ্গনকে ত্বরান্নিত করে ।

এ সময়ে আবদুল আজিজ বাগমার নামে ঢাকা বিশবিদ্যালয়ের বাঙলা বিভাগের এক ছাত্র স্বাধীনতার স্বপন ও সাধ বাস্তবায়নের জন্য পন্থা আবিস্কারে ও উপায় উদ্ভাবনে সক্রিয়ভাবে গোপনে কাজ শুরু করলেন । ঢাবি’র কিছু শিক্ষককে করলেন উপদেষ্টা ।

পাক-ভারত যুদ্ধ বাঙালি এলিটদের চরম বিরক্তি ও ক্ষোভের উদ্রেক ঘটায় । বৈষম্য ,প্রবঞ্চনা, অবহেলা ও অসহায়ত্বের পটভূমিতে ক্ষুব্ধ বাঙালি এলিটরা তাদের যোগ্য স্থান আদায় করে নিতে বদ্ধপরিকর হন এবং এই ইচ্ছার রাজনৈতিক বাহন হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগকে বেছে নেন । রুহুল কুদ্দুস সিএসপি প্রমুখ একটি ৬ দফা দাবিনামা প্রণয়ন করেন এবং তা’ উপস্থাপনের জন্য শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে তুলে দেন । ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথম দিকে শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দীন আহমদ ও আবদুস সালাম খানের সমন্নয়ে একটি প্রতিনিধি দল লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী দলীয় কনভেনশনে যোগ দিতে যান।এই কনভেনশনে ( ৫ ফেব্রুয়ারী ’৬৬) শেখ মুজিব সর্বপ্রথম ৬ দফাকে 'টকিং পয়েন্ট' হিসেবে উপস্থাপন করেন । তখন থেকেই আওয়ামী লীগে দুটো ধারা দেখা দেয় । একটি ধারায় শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কেন্দ্রে দেশরক্ষা ও পররাস্ট্রনীতি নির্ধরণ ক্ষমতা ব্যতীত অন্য সকল ক্ষমতা পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের আঞ্চলিক সরকারের হাতে ন্যস্ত করার পক্ষপাতি ছিলেন । আর এক ধারায় সিরাজুল আলম খানের নেতৃত্বে একটি সেল গঠিত হয়েছিল যারা পুর্ববাংলার স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করার পক্ষপাতি ছিলেন । ১৯৬৬ সালের আওয়ামী লীগের আন্দোলনের পেছনে সিরাজুল আলম খানের অবদান ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ। এদিকে ৬দফার জনপ্রিয়তা দেখে শাসকগোষ্ঠী শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করে ৮/৫/৬৬ তারিখে । সরকারি দমননীতির প্রতিবাদে ৭ জুন আহুত হরতালে শহীদ হন শ্রমিক নেতা মনু মিয়া , আবুল হোসেন প্রমুখ ।

১৫ জুন তারিখে ইত্তেফাক সম্পাদক মানিক গ্রেফতার হন। বস্তুত ৭ জুনের পরপরই আওয়ামীলীগের শীর্ষস্থানীয় প্রায় সকল নেতাই গ্রেফতার হয়ে যান । এমতাবস্থায় আমেনা বেগমই (ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ) এগিয়ে আসেন তরীর হাল ধরতে । টিমটিম করে হলেও তিনিই জ্বালিয়ে রাখেন আন্দোলনের প্রদীপ ।

এর কিছু পরে তৎকালীন নৌবাহিনীর লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন বেঙ্গল রেজিমেÏট, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর কতিপয় দুঃসাহসী তরুন সদস্য এবং কয়েকজন প্রভাবশালী বাঙালি আমলার সহায়তায় পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা করেন । দূর্ভাগ্য হলো, তাদের এই পরিকল্পনা ফাস হয়ে যায় । এ ষড়যন্ত্রে শেখ মুজিবকে মোনায়েম খান জড়ালেন যদিও তিনি এর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না । সরকার শেখ মুজিবকে প্রধান আসামি করে যে মামলা করে তা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা হিসেবে পরিচিত ।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

মাসুদা ভাট্টি এর ছবি

নুরুজ্জামান মানিক
"এ ষড়যন্ত্রে শেখ মুজিবকে মোনায়েম খান জড়ালেন যদিও তিনি এর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না " - এ বাক্যটিসহ আপনি যা প্রমাণ করতে চাইছেন, সেটি আসলে "সকলই গরল ভেল"। আমি জানি না, শেখ মুজিবকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশকে "স্বাধীন" করার এই ঘুরানো-প্যাঁচানো প্রয়াসে লাভটা কোথায়?

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাটি তখন রাজনৈতিক কারণে "ষড়যন্ত্র" হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করা হলেও এই ষড়যন্ত্র যে হয়েছিল সেটা তো সত্যি। আর তাতে শেখ মুজিবের অংশগ্রহণও ছিল নেতৃত্বেই। অনেক প্রমাণাদির সঙ্গে সম্প্রতি প্রকাশিত ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা শশাঙ্ক ব্যানার্জির বইটি " A Long Journey Together - India, Pakistan and Bangladesh" পাঠের অনুরোধ জানাবো। এর আগে আমার নিজের লেখা "বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ : ব্রিটিশ দলিলপত্র" থেকেও বলতে পারি যে, শেখ মুজিব ছয় দফা ঘোষণার সময় একটি কথা প্রায়ই বলতেন এবং সেটা রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক এমনকি কূটনীতিকদের সামনেও, "ছয় দফা টফা কিছু নয়, আমার দফা তিনটি, কতো নেছো, কবে দেবা, কবে যাবা"। নেহরু সরকারের কাছে প্রথমে বাংলাদেশ স্বাধীন করার জন্য সহায়তা চেয়েও তিনি পাননি, পালিয়ে আগরতলায় গিয়ে বিএসএফ-এর হাতে গ্রেফতার হয়ে ফিরে এসে তিনি লন্ডন থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা দেয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন, যা শশাঙ্ক চৌধুরীর বইতে নানা প্রমাণাদি সহ আছে।

"১৯৬৬ সালের আওয়ামী লীগের আন্দোলনের পেছনে সিরাজুল আলম খানের অবদান ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ" - এই গুরুত্ব আসলে কীসে এবং কতোটুকু একটু জানতে ইচ্ছে করে। একটি জাতি কোনও প্রকার প্রস্তুতি ছাড়াই একটি সশস্ত্র যুদ্ধ করে রাতারাতি একটি দেশ পেয়ে গেলো এমনটাতো হয় না, এর পেছনে পূর্বাপর অনেক পরিকল্পনা থাকে, একটি উদাহরণ থেকে বিষয়টি আরও স্পষ্ট করি, আমাদের জাতীয় সঙ্গীত কি করে স্বাধীনতার আগেই ঠিক করা হয়েছিল, আশা করি সেই ইতিহাস আপনি জানেন। তাহলে কেন ইতিহাসকে এভাবে একপেশে করার মনোভাব? কেনই বা আব্দুর রাজ্জাক, আহমদ ছফার মতো ইসলামী জাতীয়তাবাদীদেরকে বাঙালি-স্বাধীনতার স্থপতি হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা?

হাসান মোরশেদ এর ছবি

২৫শে মার্চ মাঝরাত থেকে ১০ এপ্রিল- ১৫ দিনের মধ্যে সরকার গঠন, ওসমানীকে সর্বাধিনায়ক করে মুক্তিবাহিনী গঠন এসব কিছু ঘটে গেলো পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই? ম্যাজিক নাকি?
জামাতী চ্যালাচামুণ্ডাদের দেখেছি মুক্তিযুদ্ধকে একটা অপরিকল্পিত গনবিস্ফোরন বলে চালিয়ে দিতে, এই সব প্রচারনার সাথে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিহীনতার গল্প বেশ মিলে মিশে ফিউশন তৈরী করে।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

@ হাসান মোরশেদ

পূর্ব প্রস্তুতি অবশ্যই ছিল ।

৫ফেব্রুয়ারী ’৭০ তারিখে স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াসের সদস্যদের নিয়ে গড়ে উঠা জয় বাংলা বাহিনী অনেক কিছু করেছে একাত্তরের উত্তাল মার্চে । মনটু -খসরু-মমতাজ বেগমের নেতৃত্বে এই সশত্রগ্রুপ কাজ করতে থাকে । এই গ্রুপ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছাত্ররা বেতার প্রেরন যন্ত্র নির্মানের যে প্রকল্প নিয়েছিল তার জন্যও সাহায্য করেন । সম্ভবত ১৮ মার্চেই গ্রুপের কয়েকজন রাতে আবদুল গনি রোডে অবস্থিত (এখন ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে ) বিদ্যুৎ বোর্ডের একটি ওয়্যারলেস সেট অস্ত্রের মুখে নিয়ে গিয়েছিল । প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক -ছাত্ররা এটি দিয়ে একটি বেতার প্রচার যন্ত্র স্থাপনের চেস্টাও করেছিলেন ।

সেনাবাহিনীর মধ্যেও বাঙ্গালীদের নিয়ে প্রতিরোধ ও প্রস্তুতির কথা আজ জানা যাচ্ছে । একাত্তরের ফেব্রুয়ারী মাস থেকে জেনারেল ওসমানী , লে কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন, জেনারেল মজিদ মাঝে মাঝে ধানমন্ডির বাড়িতে বা অন্যত্র বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাত করতেন । এই তালিকাভুক্তির কাজে জড়িত তৎকালীন এক ছাত্রলীগনেতা বলেন -“ আমি সামান্য কিছুদিন তালিকাভুক্তির কাজটা করেছি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে । দুই বা তিনটি স্থানে তালিকাভুক্তি চলছিল সেনাবাহিনীর বাঙ্গালী অফিসার ও সৈনিকদের নাম । ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে যে তালিখাভুক্তি করা হতো সেখানেই আমার দায়িত্ব ছিল । ৩ রা মার্চ পর্যন্ত সেখানে প্রায় নয়শত জনের নাম তালিকাভুক্ত করা হয় । .................২০ মার্চ পর্যন্ত এ তালিকাভুক্তির কাজ চলে । .............কমান্ডার মোয়াজ্জেমের মাধ্যমেও তালিকাভুক্তির কাজ হছিল এটা জানি”। এই প্রক্রিয়ার একজন বাঙ্গালী সেনা অফিসারের নাম ভুমিকার কথা না বললে এই অধ্যায় অসম্পুর্ন থেকে যাবে নাম তার লে কর্নেল সালাউদ্দিন রেজা । লে কর্নেল সালাউদ্দিন রেজা পি এস সি (জন্ম ১৯২৫ , সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ ১৯৪৮) একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের আগে আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলেন । তার নিজের ভাষায় “I was in touch with Sheikh Mujib in connection with the preparations for an armed rising against what we considered to be an alien and hostile “...আমরা অল্প কয়েকজন ‘৭১ এর ভু বছর আগে থেকেই এ ধরনের চিন্তা করতাম । আমরা চেয়েছিলাম পাকিস্তানের শোষন থেকে মুক্ত হয়ে এদেশে some sort of socialist economy কায়েম করতে । এদেশ হতে communalism দুর করতে । (বিস্তারিত তথ্যের জন্য দেখুন অধমের "স্বাধীনতা যুদ্ধের অপর নায়কেরা" , শুদ্ধস্বর , ২০০৯ )

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

মন্তব্য দুই বার চলে আসায় মুছে দিলাম ।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

মাসুদা ভাট্টি শ্রদ্ধাভাজনেষু,

"আপনি যা প্রমাণ করতে চাইছেন, সেটি আসলে "সকলই গরল ভেল"।"

আপনার এই উক্তি বুঝেছি এবং এর অন্যথা আশাও করিনি । আপনার মতামত প্রকাশের এই সততার জন্য আমার অভিবাদন নিন । আপনার মন্তব্যটিতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও রেফারেন্স এসেছে সেজন্য আবারও অভিনন্দন কিন্তু আমার মন্তব্যের জবাবে "একটি জাতি কোনও প্রকার প্রস্তুতি ছাড়াই একটি সশস্ত্র যুদ্ধ করে রাতারাতি একটি দেশ পেয়ে গেলো এমনটাতো হয় না, এর পেছনে পূর্বাপর অনেক পরিকল্পনা থাকে, একটি উদাহরণ থেকে বিষয়টি আরও স্পষ্ট করি, আমাদের জাতীয় সঙ্গীত কি করে স্বাধীনতার আগেই ঠিক করা হয়েছিল, আশা করি সেই ইতিহাস আপনি জানেন। তাহলে কেন ইতিহাসকে এভাবে একপেশে করার মনোভাব? কেনই বা আব্দুর রাজ্জাক, আহমদ ছফার মতো ইসলামী জাতীয়তাবাদীদেরকে বাঙালি-স্বাধীনতার স্থপতি হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা?" এই কথাগুলি কেন বললেন বুঝলাম না । বিনীতভাবে জানাচ্ছি , মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চায় আব্দুর রাজ্জাক বা ছফার চশমা আমাকে পরতে হয়না ।

আপনি বলেছেন "আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাটি তখন রাজনৈতিক কারণে "ষড়যন্ত্র" হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করা হলেও এই ষড়যন্ত্র যে হয়েছিল সেটা তো সত্যি। আর তাতে শেখ মুজিবের অংশগ্রহণও ছিল নেতৃত্বেই।"

আগরতলা ষড়যন্ত্র যে হয়েছিল সেই সত্য স্বীকার করার জন্য ধন্যবাদ। জাস্টিস হাবিবুর রহমানের কাছে দেয়া মোয়াজ্জেম হোসেনের সাক্ষাতকার থেকেও এর সত্যতা পাওয়া যায় । অথচ মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারি আওয়ামী লীগ তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে জানাচ্ছে-"President Ayub Khan of Pakistan took resort to a nefarious plan of quelling the growing disturbances caused by the 6-point programme. At his instance, in January 1968, a false case was instituted. This has become infamous in the history as the Agartala Conspiracy Case." "বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ" দর্শনে বিশ্বাসীদের ২৬শে মার্চ ৭১ পূর্ববর্তী বাংলাদেশ কে স্বাধীন করার যে কোন উদ্যোগকে অস্বীকার করার কারণ বোধগম্য কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারি আওয়ামী লীগ প্রায় ৪১ বছর পরেও যখন সশস্ত্র উপায়ে বাংলাদেশ কে স্বাধীন করার উদ্যোগকে মিথ্যা হিসেবে বর্ণনা করে তখন আমাদের কি আর গতি থাকে ? আগরতলা মামলার আসামিদের অনেকেই আজ আমাদের মাঝে নেই । হাতে গোনা যারা রয়েছেন তারাও এক সময় চলে যাবেন কালের নিয়মে । সে সাথে হারিয়ে যাবে তাদের উদ্যোগের কথা । কথা গুলি বললাম কারন আজ পর্যন্ত তাদের উদ্যোগের কথা অফিসিয়াল্লি বলা হয়নি , পাননি তারা রাস্ত্রীয় সম্মামনা । আজও পত্র পত্রিকায় লেখা হয় "আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা " মিথ্যা ছিল । এই মামলার আসামি মেজর আবদুল মোতালেব বলেছিলেন " এটি ২০০% সত্য ছিল " । কালের অমোঘ নিয়মে মেজর আবদুল মোতালেব আজ আমাদের মাঝে নেই মানে ইতিহাসের এক দলিল হারিয়ে গেল। এভাবেই হারিয়ে যাবে সব কিছু।

বিলেতে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াকালীন মনোরা দ্বীপের হিমালয়া নৌঘাটিতে বসে বাংলা স্বাধীনতা আন্দোলনের পরিকল্পনা করেন লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম। তৈরি করেন রাজনৈতিক ও সামরিক রণকৌশলের নকশা। ১৯৫৮ সালে একটা সশস্ত্র বিদ্রোহের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন করার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম। প্রস্তুতি পর্বে শুধু বাঙালী সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যেই ছিলো এই পরিকল্পনা, এতে কোনো রাজনীতিবিদকে যুক্ত করেননি পরে বেসামারিক আমলা ও রাজনীতিকদের সাথেও আলাপ করেন । ১৯৬১ (মতান্তরে ১৯৬২) সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান করাচি গেলে লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম কৌশলে তার সাথে দেখা করেন । পরিকল্পনানুসারে ভারতীয় হাইকমিশনে যোগাযোগ করে বঙ্গবন্ধুর সীমান্তপাড়ির ছাড়পত্র যোগালেন তিনি। মোয়াজ্জেমের ভাতিজা রেজা আলী গাড়ি চালিয়ে মুজিবকে নিয়ে যান তেজগাও রেল স্টেশন। সেখান থেকে সাবেক মন্ত্রী জাকির খান চৌধুরীকে (আরেক মন্ত্রী ও মুক্তিযোদ্ধা জাকারিয়া চৌধুরীর ভাই) সঙ্গী করে রওয়ানা দিলেন সিলেট। সেখানে মওলানা ভাসানীর অনুগত সমর্থক সায়উদুল হাসানের চা-বাগানে আতিথ্য নিলেন। তার স্ত্রীর দেওয়া একটা বেঢপ কোট চাপিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিলেন মুজিব। এখানে একটা ভুল বুঝোবুঝি হয়েছিলো। বঙ্গবন্ধু কোথায় যাচ্ছেন ও কি উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন এটা সময় মতো উচু মহলে জানাতে পারেনি ভারতীয় দূতাবাস। তাই সীমান্তপারের থানায় যখন রাষ্ট্রনায়কের অভ্যর্থনা আশা করছিলেন তিনি, উল্টো দেখলেন অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাকে! পুরো ব্যাপারটা দিল্লী পর্যন্ত গড়ায় এবং ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটে। ১৯৬৫ সালে বঙ্গবন্ধুর সাথে আরেক দফা বৈঠক হয় । '৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু ৬ দফা দাবিনামা ঘোষণা করেন এবং আন্দোলনে নামেন । এ সময়
তাজউদ্দীনের বাসায় বঙ্গবন্ধুর সাথে আরেক দফা বৈঠক হয় । আচছা, লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেমের লাস্ট পরিকল্পনায় যে গ্রাউন্ড লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম গ্রেফতার হন তার সাথে কি জড়িত ছিলেন বঙ্গবন্ধু কিংবা তার সম্মতি কি ছিল ? যদি এ ব্যাপারে আপনি রেফারেন্স দিয়ে আমাকে সাহায্য করেন বাধিত থাকবো ।

"নেহরু সরকারের কাছে প্রথমে বাংলাদেশ স্বাধীন করার জন্য সহায়তা চেয়েও তিনি পাননি" এর উদ্যোক্তা কিন্তু লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন নন । বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ এই বন্ধু হলেন সিলেটের মোয়াজ্জেম আহমেদ চৌধুরী যিনি দেশভাগের পর থেকেই ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সাহায্য নিয়ে পূর্ব বাংলার স্বাধীনতার জন্য কাজ করছিলেন । নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর মডেলে দেশ স্বাধীনের পরিকল্পনায় বঙ্গবন্ধুকে উদ্বুদ্ধ করেন তিনি। দেশভাগের আগে কলকাতায় বিচারপতি মাসুদের বাসভবনে 'স্বাধীন পূর্ব বাংলা' রাষ্ট্রের সম্ভাবনা যাচাইয়ে গোপন বৈঠকে ছিলেন তিনি যেখানে সম্ভাব্য রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে সতীর্থদের পুরো সমর্থন ছিলো মুজিবের প্রতিই, সোহরাওর্দী নয়। কারণ "We thought that only Sheikh Mujib had the charisma to be the leader. He was stubborn and not always brilliant, but he had that quality which made people follow him."

১৯৬৬ সালের আওয়ামী লীগের আন্দোলনে পাটকল শ্রমিকদের উজ্জীবিত করেন ছাত্রনেতা সিরাজুল আলম খান , আব্দুর রাজ্জাক আর আওয়ামী লীগের মিজানুর রহমান চৌধুরী । পাকি শাসকচক্র মিজানুর রহমান চৌধুরীকেও গ্রেফতার করেন । বঙ্গবন্ধুসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের আগেই গ্রেফতার করা হয় । এমতাবস্থায় আমেনা বেগমই ধরেন আন্দোলনের হাল ।

ছাত্রলীগকে স্বাধীনতার পথে পরিচালনার লক্ষ্যে সিরাজুল আলম খানের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে গড়ে উঠে একটি গোপন সেল যা নিউক্লিয়াস হিসেবে পরিচিত ছিল । এই সেলের অপর দু'জন স্থপতি হলেন -আবদুর রাজ্জাক ও কাজীআরেফ আহমেদ । '৬৫ সালে এতে আরো দু'জনকে নেয়া হয় -যশোরের ছাত্রলীগ নেতা আবদুল কালাম আজাদ আর চট্রগ্রামের ছাত্রলীগ নেতা এম এ হান্নান । ৬৮,৬৯, ৭১ এ নিউক্লিয়াসের শাখা দেশের সকল জেলা মহকুমা পর্যন্ত বিস্তৃত হয় । নিউক্লিয়াসের পুরোধা ছিলেন সিরাজুল আলম খান এবং উপদেষ্টা হিসেবে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড আহমদ শরীফ এবং রাজনীতিক -রাস্ট্রদুত কামরুদ্দিন আহমেদ । নিউক্লিয়াসের সদস্য মুলত ছাত্রলীগ হতে সংগ্রহ করা হতো । সমর্থক শুভান্যুধায়ী সংগ্রহ করা হতো বাহির থেকে । কেন্দ্রীয় সংগঠকরা জেলায় জেলায় গোপন বৈঠকে মিলিত হতেন । সেখানে এ গ্রুপ গঠন প্রক্রিয়া চলতো । এভাবেই স্বাধীনতার লক্ষে নিউক্লিয়াস একটি আদর্শবাদী কর্মী বাহিনী গড়ে তোলার প্রক্রিয়া চালু করে ।

আগেই বলা হয়েছে নিউক্লিয়াসের সদস্যদের অন্যতম কাজ ছিল
ছাত্রলীগকে স্বাধীনতার পথে পরিচালনা করা । ছাত্রলীগে কাজ করার জন্য কেন্দ্রে ৬৮ সালে একটি ছায়া ফোরাম গঠন করা হয় । ছায়া ফোরামের সদস্য ছিলেন - কাজী আরেফ আহমেদ ,আ স ম আবদুর রব, শাজাহান সিরাজ, মনিরুল ইসলাম (মার্শাল মনি ), মোস্তাফিজুর রহমান, মফিজুর রহমান প্রমুখ । ১৯৬৯ সালে যুক্ত হন -শরীফ নুরুল আম্বিয়া , আ ফ ম মাহবুবুল হক, হাসানুল হক ইনু, মফিজুর রহমান খান , বদিউল আলম , চিশতী শাহ হেলালুর রহমান, কাওসার ,আতাউর , হিটলার ফারুক, বাতেন চৌধুরী , ওয়াদুদ ,সানি, সালাউদ্দিন ইউসুফ, আজাদ প্রমুখ । বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় যারা এ ফোরামের সাথে সম্পৃক্ত হন তন্মধ্যে নুরে আলম জিকু, মোস্তাফিজুর রহমান, হারুনুর রশীদ , আবদুস সালাম,অশোক রায় , মোকতার আহমদ , এ বি এম শাজাহান , রওশন জাহান সাথী , সালেহা বেগম প্রুমুখের নাম উল্লেখযোগ্য । স্বাধীনতাপন্থী সিরাজ (সিরাজুল আলম খান ) গ্রুপ তথা স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াসে আরো ছিলেন-স্বাপন চৌধুরী ,মমতাজ বেগম,আফতাব আহমদ, হান্নান, মনটু , খসরু , সেলিম, মধু, শিবনারায়ন দাশ,রায়হান, আনিসুজ্জামান, দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ। এরাই ছিলেন পরবর্তিতে গড়ে উঠা ফেব্রুয়ারী বাহিনীর মুল সংগঠক -কর্মকর্তা ।

স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস বাঙ্গালীর মুক্তির আন্দোলনের নানা পর্যায়ে গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা রেখেছে বিশেষত নানা জয় বাংলার মত যুগান্তকারী শ্লোগান তৈরী , শেখ মুজিবিকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দান, স্বাধীন বাংলার পতাকা উদ্ভাবন -উত্তোলন, জয় বাংলা বাহিনী গঠন, স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ ইত্যাদি এবং প্রতিটি পর্যায়ে সিরাজুল আলম খানের ভুমিকা ছিল অনস্বীকার্য । '৬৯ এর গন অভ্যুথানের মহানায়ক বলে খ্যাত তোফায়েল আহমদ বলেন -" ১৯৬৯ এ আমি ছিলাম তোতাপাখির মতো । সবকিছু করে দিয়েছেন আমার আমার রাজনৈতিক শিক্ষাগুরু সিরাজুল আলম খান যিনি আমাকে হাতে কলমে রাজনীতি শিখিয়েছেন "।

সিরাজুল আলম খান নেতৃত্বাধীন নিউক্লিয়াস বঙ্গবন্ধুকেই নেতা মানতেন এবং তার আদেশ নির্দেশ মেনে চলতেন । স্বাধীনতার পর এদেশে তার নানা বিতর্কিত ভূমিকা নিয়ে আমারও প্রশ্ন আছে কিন্তু সেজন্য সিরাজুল আলম খান এবং আর তার নিউক্লিয়াসের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভূমিকা অস্বীকার করতে আমি অপারগ । মাফ করবেন ।

আমি বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে জানি এবং মানি । তাই বলে আমি বঙ্গবন্ধুকে সমালোচনার উর্দ্ধে মনে করিনা ।
সময় পেলে আমার এই সচল ব্লগ পাঠের আমন্ত্রন রইল-

ত্রিবেনী আর পুজির নষ্ট সঙ্গমে কিংবা স্টেনগানের ব্রাশ ফায়ারে লুটিয়ে পড়লেন বঙ্গবন্ধু

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

হাসান মোরশেদ এর ছবি

মানিক ভাইকে এইজন ভালো পাই :)।
এই লোক তথ্য হাতে কথা বলে, ছফার মতো তথ্য ছাড়া না চোখ টিপি
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সবুজ বাঘ এর ছবি

সমস্যা হইল প্রেম অন্ধ হইলে যুক্তি আর ধোপে টিকে না। মূল মুশকিল ওই জায়গায়ই, যে কেউই মুজিবরে কাটাছেঁড়া করবার চায় না।

মাসুদা ভাট্টি এর ছবি

সবুজ বাঘ

একই কথা কি "যারে দেখতে নারি তার চরণ বাঁকা"-র মতোও সত্য নয়?

শেখ মুজিবকে কাটাছেঁড়া করতে অসুবিধে নেই কিন্তু শেখ মুজিবকে অনৈতিক ও বিদ্বেষের ছুরিতে ব্যবচ্ছেদ করায় আপত্তি আছে।

রুশো আহমেদ এর ছবি

এই পোষ্টের লেখক এবং মন্তব্যকারীদের সবারই প্রতি আমার অনেক শ্রদ্ধা।
তবে বংগ বন্ধু অনৈতিক কাজ করে থাকলে তার সমালোচনা হওয়া উচিত। নতুবা বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো বংগবন্ধুকে দেবতার মত ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে অনৈতিক কাজ করেই যাবে এবং যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে আমি বঙ্গবন্ধুর বাকশাল গঠনের প্রক্রিয়াকে একটি অনৈতিক কাজ বলেই মনে করি। বাকশাল মুজিব করেছিলেন কোন এক রাজনৈতিক বাস্তবতায়।বাকশাল বাংলাদেশের মানুষের জন্য ভাল হত নাকি খারাপ, সেটা বিচার করার সৌভাগ্য কিংবা দুর্ভাগ্য কোনটাই এদেশের মানুষের হয়নি।
কিন্তু, বাকশাল যে প্রক্রিয়ায় বঙ্গবন্ধু করার চেষ্টা করেছিলেন তা ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী এবং এদেশের মানুষের কাছে দেয়া প্রতিশ্রুতি'র সাথে এক বিশাল প্রতারণা। ৭২ এর আওয়ামীলীগের নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে এই বিষয়টি ছিল না।জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে যদি এটা হত বলার কিছু ছিলনা। কিন্তু গায়ের জোরে কোন কিছু চাপিয়ে যে দেয়ার চেষ্টা বঙ্গবন্ধু করেছিলেন, তার দল আজো সেই গায়ের জোরের এবং প্রতারণার রাজনীতিই পালন করে চলেছে।
আপনি কি জনগণকে কোন ধরনের তোয়াক্কআ না করে বাকশাল গঠনের এই প্রক্রিয়াটিকে মুজিবে করা একটি অনৈতিক কাজ বলবেন না। তার এককভাবে নেয়া এই সিদ্ধান্তের ফলশ্রুতিতে আজো বাংলাদেশ এক টালমাটাল নৌকা।
ধন্যবাদ সবাইকে। খুব ভাল লাগছে এই আলোচনা।

সবুজ বাঘ এর ছবি

আপনার কি মনে হয় জগতের সব লোক আপনার মতোই মুজিব প্রেমে গদগদ থাকবে? ভালো মন্দ কিছু বলার আগেই বলে দিলেন অনৈতিক আর বিদ্বেষের ছুরি ব্যবহার না করতে, এর মানে কী?

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আপনার আমার মতো ছোটমানুষেরা প্রেমে গদগদ কিংবা অন্ধ হলে কি আর ক্ষতিবৃদ্ধি হয়? কিন্তু ছফার মতো 'বড়ো' মানুষ গুরু প্রেমে গদগদ ও অন্ধ হয়ে গুরুকে রাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা বানিয়ে দিলেই তো যতো ভজঘট।

আর শেখ মুজিবের সৌভাগ্য কিংবা দুর্ভাগ্য-বাংলাদেশ রাষ্ট্র বিষয়ক আলোচনায় যে কোন সূত্রেই তার উপস্থিতি অবধারিত যেমন এই পোষ্টের সুত্রপাত ছিলো আহমদ ছফা কর্তৃক তার গুরুকে রাষ্ট্রদ্রষ্টা বলে পরিচিত করানো বিষয়ে- এখানে ও মুজিব এলেন হাসি
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

মামুন হক এর ছবি

স্বপ্নদ্রষ্টা যে হোন, ভোগান্তি আর আত্মত্যাগ বেশির ভাগই নাম না জানা সাধারণ জনতার। তারা কষ্ট করে, রক্ত দেয়, তারপরেও অভাবের আগুনে পুড়ে মরে, তত্ত্ব-তথ্য-উপাত্তের নিচে চাপা পড়ে দিশাহারা হয়ে কাটায় জীবন।
অফ টপিকঃ ভারতবর্ষ ভাগ করাটাই একটা বিরাট বেওকুফি ছিল।

মূলত পাঠক এর ছবি

আপনার এই লেখাটি অনেক দেরিতে পড়লাম। মূল ধারার লেখকেরা অনেক ক্ষেত্রেই আলোচনা করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন, আবার অনেক ওস্তাদীমার্কা আলোচক নিজের স্বকপোলকল্পিত সিদ্ধান্তটিকে চরম ফাইনালিটির সঙ্গে জানিয়ে দেন। পাঠকের উপর এই দুই ধরণের অত্যাচার না করেও যে সমৃদ্ধ আলোচনা করা যায়, এটি তার একটি চমৎকার উদাহরণ। অনেক ধন্যবাদ এমন একটি পাঠের অভিজ্ঞতা দেয়ার জন্য।

আরো লিখুন!

সৈয়দ আফসার এর ছবি

বলার কিছুই নেই; আলোচনাটি অসাধারণ।
ভালো থাকুন।
_________♣♣♣_________
না-দেখা দৃশ্যের ভেতর সবই সুন্দর!

__________♣♣♣_________
না-দেখা দৃশ্যের ভেতর সবই সুন্দর!

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

মূল ধারার লেখকেরা অনেক ক্ষেত্রেই আলোচনা করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন, আবার অনেক ওস্তাদীমার্কা আলোচক নিজের স্বকপোলকল্পিত সিদ্ধান্তটিকে চরম ফাইনালিটির সঙ্গে জানিয়ে দেন।

এই লেখায় রাজ্জাক সাহেব সম্পর্কে কিছু কথা ফাইনালিটির সাথেই জানানো হয়েছে। আহমদ ছফা্র প্রবন্ধ হিসেবে লেখা নয় এমন একটি বই থেকে উদ্ধৃতি ব্যবহার করে। চিন্তিত

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

ফাইনালিটির বিষয়টা লেখক এবং পাঠক - দুই দিক থেকেই সংজ্ঞায়িত করার স্কোপ থাকে। অনেকসময় লেখকের অথরিটি (কর্তৃত্ব) জাস্টিফায়েড হলেও, পাঠক তার নড়বড়ে/অনিচ্ছুক/বহিরাগত/বিপরীত অবস্থানের কারণে ঐ অথরিটিকে জাস্টিফাই করতে পারেন না/চান না। একদা লেখকের ব্যাকগ্রাউন্ড, কনটেক্সট ইত্যাদি খুব আলোচিত ছিল। তারপর টেকস্ট মুখ্য হয়ে ওঠে। কিন্তু তারও পরে, টেক্সটের মর্মোদ্ধারে পাঠকের ব্যাকগ্রাউন্ড, কনটেক্সট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। রিডার্স রেসপন্স ক্রিটিসম বলে একটা ধারাই গড়ে ওঠে। সুতরাং টেক্সটের ফাইনালিটির বিষয়টা আবারও গোলমেলেই থেকে যায়। ফাইনালিটি নিয়ে ফাইনাল কথা বলার আগে এই বিষয়টা লক্ষ্য রাখা জরুরি।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

একটা ফুটনোট দিলাম। হাসি

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

এক কথায় অসাধারণ। অনেকগুলো বিষয় একসাথে বোঝা গেল। ওনারা বাঙালি মুসলমানের প্রতীক হয়েই রয়ে গেলেন বটে।

সাইফ তাহসিন এর ছবি

অ্যাঁ , মাথা ঘুরতেছে পুরাটা পইড়া! অনেক কিছুই জানতে পারলাম। অন্য কেউ কি রাজ্জাক সাহেবের ৬দফার অবদান সম্পর্কে কোঠায় উল্লেখ করেছেন নাকি এটা ছফা সাহেবের উক্তি? নাকি আসলেই সত্য? তবে আপনার লেখা পড়ে মুজিব হত্যায় উনার সমর্থন ছিল বলে মনে হয়েছে। উনার জিন্নাহ প্রেমের ঘটনাটা কি?

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

অন্য কেউ কি রাজ্জাক সাহেবের ৬দফার অবদান সম্পর্কে কোঠায় উল্লেখ করেছেন নাকি এটা ছফা সাহেবের উক্তি? নাকি আসলেই সত্য?

এর পক্ষে অন্যদের রেফারেন্স আমার কাছে নেই। তবে কারো না কারো লেখায় আছে তো বটেই। আব্দুর রাজ্জাক সাহেবের গুণমুগ্ধ লেখকের সংখ্যা কম নয়।

তবে আপনার লেখা পড়ে মুজিব হত্যায় উনার সমর্থন ছিল বলে মনে হয়েছে।

আর্টসবিডিতে ছাপানো সরদার ফজলুল করিমের একটা সাক্ষাৎকারে মেজর ডালিমের সাথে তাঁর আত্মীয়তার কথা এসেছিল। সেখান থেকেই এই ফাইনালিটি। এদিকে সরদার ফজলুল করিম নিজেই প্রফেসর রাজ্জাকের ভক্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পূর্ববঙ্গীয় সমাজ (অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের আলাপচারিতা) শিরোনামে একটা বই আছে। অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক সেই সময়ে কি করছেন না করছেন এটা পড়লে বোঝা যায়। লেখক এখানে বইটার নাম পর্যন্ত উল্লেখ করেন নাই। একটা সাক্ষাৎকার থেকে উপসংহার টেনেছেন।

উনার জিন্নাহ প্রেমের ঘটনাটা কি?

বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে জিন্নাহ'র ফলোয়ার অনেকেই ছিলেন। শেখ মুজিব পর্যন্ত। রাজ্জাক সাহেবের দোষ ছিল- তিনি স্বাধীনতার পর এই কথা বেমালুম অস্বীকার করতেন না। কইতেন- হ, সাপোর্টার তো ছিলামই।

মুজিব আমলেই এই তথাকথিত জিন্নাহ-প্রেমিককে জাতীয় অধ্যাপক করা হয়েছিল এটা মোরশেদ ভাই নিজেই উল্লেখ করেছেন।

--


অধ্যাপক রাজ্জাকের অসামান্য পান্ডিত্য নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার করার সাধ্য কিংবা সাধ আমার নেই।

এই অসম্পূর্ন, এভারেজ পন্ডিতকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা বানালেন কেনো আহমদ ছফা?

একই প্রবন্ধে মোরশেদ ভাই শুরুর দিকে অসামান্য পান্ডিত্য নিয়ে কথা বলেছেন। আবার লেখা শেষ করতে গিয়ে লেখার টোনে বায়াসড্‌ হয়ে লিখেছেন অসম্পূর্ন, এভারেজ পন্ডিত। মন খারাপ

--

ছফাগিরির বেশ কয়েক পর্বে রাজ্জাক সাহেবের প্রসঙ্গ এসেছে। পারলে একবার পড়ে দেখতে পারেন।

--

আবদুর রাজ্জাকের ভক্তের সংখ্যা কম নয়। সেই সারিতে ছিলেন খোদ হুমায়ন আজাদ। তাঁর সাক্ষাৎকার বইটিতে প্রফেসর রাজ্জাকের সাক্ষাৎকার ছিল। ভূমিকাটুকু এখানে দিলাম।

IMG_4891

IMG_4892a

IMG_4892

IMG_4893a

সূত্র:
সাক্ষাৎকার
হুমায়ুন আজাদ
আগামী প্রকাশনী
ফেব্রুয়ারি ১৯৯৪

ফটুক কৃতজ্ঞতা:
অনিন্দ্য রহমান

সাইফ তাহসিন এর ছবি

খাইছে আমারে, কত কিছুই যে অজানা ছিল। অনেক অনেক ধন্যবাদ শুভাশীষদা! ছফাগিরি পড়ে ফেলব আজকেই, ভয়ে পড়ি নাই, নিজের অজ্ঞানতার ময়দান হাট হয়ে যাবে বলে মন খারাপ , কিন্তু পালানোর আসলেই পথ নাই হাসি । জিন্নাহ প্রেমের ব্যাপারে যেটা বুঝলাম, সময়ের সাথে অন্যরা বদলায়, উনার মুগ্ধতা কাটে নাই ৭১ এর পরেও ইয়ে, মানে...

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

মুগ্ধতা না কাটার কোনো কারণ নাই। জিন্নাহ সম্পর্কে উনাকে কিছু জিজ্ঞেস করলে সেই প্রাচীন মুগ্ধতার কথা জানাতে অস্বীকার করতেন না। এটাকে আপনি বা আপনারা যে যেভাবে বুঝে নিতে চান নেন। হাসি

--

উপরে হুমায়ুন আজাদ স্যারের নাম লিখতে গিয়ে উ-কার বাদ গেছে। এই অনিচ্ছাকৃত টাইপোর জন্য দুঃখিত।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাইয়া, এই বইটার সফট কপি কি আপনার কাছে পাওয়া যাবে?
ছোট ভাইটি বহুদিন ধরে এটা খুঁজছে।

---আশফাক আহমেদ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।