পাইরেটস অফ চিটাগং - টু

সত্যপীর এর ছবি
লিখেছেন সত্যপীর (তারিখ: রবি, ০৪/০৩/২০১২ - ৩:১৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

চাটগাঁও জিলা কয়েকশো বছর ধরে বাংলার মুসলিম শাসক আর আরাকানের মঙ্গোল শাসকদের টানাটানির বস্তু ছিল। পঞ্চদশ শতাব্দীতে এক পলাতক আরাকানরাজ বাংলায় আশ্রয় পান, পরে ১৪৩০ সালে গৌড়ের মিলিটারির সাহায্যে তিনি গদি ফিরে পান। কৃতজ্ঞতাস্বরুপ তিনি হুকুম জারি করেন তার বংশের লোক বার্মিজ পালি নামের সাথে আলি খান, সিকান্দার শা বা সেলিম শা এইরকম মুসলিম টাইটেল যুক্ত করবেন। ঐ নামে কয়েনও ইস্যু করা হয়। কিন্তু পরের প্রজন্মের আরাকানেরা বাংলার সাথে ভাই বেরাদরি তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয় আর ১৪৫৯ সালে পুরো চাটগাঁও জিলা বাংলার সুলতান বুরবক শা এর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়।

সপ্তদশ শতাব্দীর শুরুর দিকে বাংলার প্রশাসক ইসলাম খাঁ মেঘনার পূর্বে ফেনী পর্যন্ত আরাকানদের হাত থেকে উদ্ধার করে মোগল ম্যাপে যুক্ত করতে সক্ষম হন। কিন্তু এর পূর্বে মোগল এলাকা আর ছড়াতে পারেনি, চরম আইলসা জাহাঙ্গীরের আমলে মোগল তৎপরতা মোটামুটি বন্ধই ছিল বলা চলে, তার উপর যুক্ত হয় তার উত্তরাধিকারী শাজাহানের বিদ্রোহ আর বিদেশি সহায়তায় উত্তরোত্তর আরাকান নৌবাহিনীর ক্রমাগত শক্তিবৃদ্ধি।

এই বিদেশিরা ছিল পর্তুগীজ আর আধা ফিরিঙ্গী ফটকাবাজের দল। ১৫১৭ সালে পর্তুগীজ জাহাজ প্রথম আরাকানে আস্তানা গাড়ে, লোকাল ছোটখাট রাজার হয়ে ভাড়া খেটে এরা কাজ শুরু করে। তবে এদের মূল কাজ হয়ে দাঁড়ায় বঙ্গোপসাগরের তীরে দস্যুবৃত্তি, বিশেষত লবণ ব্যবসায়ীদের জাহাজের দিকে এদের নজর ছিল। কেন্দ্রীয় শাসনের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এরা নিজেরা এলাকা দখল করে স্বাধীন জীবন শুরু করে দেয়। এদের মধ্যে সবচাইতে বড় শয়তান সেবাস্টিয়ান গনজালেস টিবাও সন্দ্বীপ আর বঙ্গোপসাগরের তীরে আরও দুইটি দ্বীপ হাতিয়ে নেয়। গঙ্গার উৎসমুখে নারকীয় তান্ডবে মেতে ওঠে সেবাস্টিয়ান। পরে ১৬১৭ সালে আরাকান আবার সন্দ্বীপ দখল করে নেয় আর সেবাস্টিয়ানের নাম ইতিহাস থেকে ফট করে হারিয়ে যায়।

নৌকাবাজি আর জাঙ্গল ফাইটে বার্মিজেরা তুলনাহীন। পর্তুগীজের সাথে মিলে এরা পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় দুর্দমনীয় হয়ে ওঠে। তুর্কী, আফগান বা রাজপুত এইসব মোগল অফিসারেরা এরা ছিল পদাতিক, ঘোড়সওয়ারীতেও এরা সুপটু। কিন্তু জাহাজের ডেকে এরা একেকটি আস্ত উল্লুক। নৌযুদ্ধের কিছুই তারা জানত না। জাহাজ একটু বাতাসে দুলে উঠলেই এরা ক্ষ্যান্ত দিয়ে বন্দরে ভিড়তে লাইন দিত। আর এদিকে সুশিক্ষিত আরাকানের দল একবারে ঢাকা বাখরগঞ্জ পর্যন্ত নৌকা চেপে লুটপাট করতো অবাধে। সন্দ্বীপ দখল করে আরাকানের রাজা একবার বাখরগঞ্জ জিলা দখল করেন আর ঢাকা লুটপাট করে যান। এক মোগল প্রশাসক খানাজাদ খাঁ পাইরেটদের ভয়ে রাজমহল পালিয়ে থাকতেন আর তার লোকেদের উপর ঢাকা ছেড়ে দিয়েছিলেন।

সমসাময়িক ঐতিহাসিক শিহাবুদ্দিন তালিস এদের বর্ণনা দিয়ে গেছেন। তার মতে আরাকান পাইরেট, মগ আর ফিরিঙ্গি, নদী ধরে যাতায়াত করতো আর পার্শ্ববর্তী গ্রামে লুট চালাত। হিন্দু মুসলিম যাই তারা পেত তাকেই ধরে আটক করা হত, তারপর হাতের তালুতে ছ্যাদা করে বাঁশের কঞ্চি ঢুকিয়ে দেয়া হত। এদের জায়গা ছিল নৌকার নিচে পাটাতনে, প্রতিদিন সকালে কয় মুঠি চাল এদের দিকে ছিটিয়ে দেয়া হত, ওইটেই লাঞ্চ আর ডিনার। এই অত্যাচার সহ্য করে যারা বেঁচে থাকত তাদের কাজে লাগান হত, অথবা বিক্রি করে দেয়া হত দাস হিসেবে ওলন্দাজ, ফরাসী বা ইংরেজের কাছে। কিনাবেচার সময় তীর থেকে একটু দূরে নোঙ্গর করে এরা খবর পাঠাত দাস লাগবে কিনা। স্থানীয় অফিসারেরা ব্যাপক ভয়ের মধ্যে থাকত, কখন না আবার তাদের রাজ্যেই লুটপাট শুরু করে দেয়। পয়সা দিয়ে দূত পাঠান হত, পাইরেটরা টাকার অংকে খুশি হলে দাস তাদের হাতে ছেড়ে ফিরে যেত। শুধুমাত্র ফিরিঙ্গি পাইরেটরাই দাস বিক্রি করতো, মগ দস্যুর দল তাদের নিজেদের ক্ষেতে কাজে লাগাত অথবা সুন্দরী মেয়েদের রক্ষিতা বানিয়ে লাগাত। কখনোই বিক্রি করত না।

এই পাইরেটের দল ছিল খাঁটি টেররিস্ট। এদের চারটে নৌকা দেখে বাংলা প্রদেশের একশো নৌকার লোকে পিশাব করে দিত, নগদে উল্টোদিকে নৌকা ঘুরিয়ে চম্পট। পালানো সম্ভব না হলে মাঝি সিপাই বন্দুকম্যান সকলে ধরা পড়ার বদলে পানিতে ঝাঁপ দিয়ে মরতো।

চাটগাঁও এর ফিরিঙ্গিরা তাদের লুটের অর্ধেক আরাকানরাজের হাতে তুলে দিত, বাকি অর্ধেক নিজের। এদের ডাকা হত হার্মাদ, তাদের ছিল একশো সশস্ত্র দ্রুতগামী জাইলা নৌকা। পরের দিকে আরাকানের রাজা মোগল সাম্রাজ্য লুটের জন্যে লোক পাঠাতেন না, ফিরিঙ্গি পাইরেটের দল যা করছে তা তো তার সম্মতিতেই। লুটের ভাগ তো এমনিতেই আসছে।

শায়েস্তা খাঁ যখন ফিরিঙ্গিদের জিজ্ঞেস করেন যে আরাকানরাজ তাদের কত বেতন দেয়, তারা মুচকি হেসে উত্তর দিয়েছিল আস্ত মোগল সাম্রাজ্যই তাদের বেতন। পুরো বাংলাই ছিল তাদের জায়গীর। আমলা আমিন এইসব হাবিজাবি লোকের তাদের দরকার ছিল না, সারা বছর খাজনা আদায় এমনিতেই চলতো।

সমসাময়িক ইয়োরোপীয় পরিব্রাজকের দল এদের যে ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট দিয়ে গেছেন তাতে তাদের কোন চাকুরীই হবার সম্ভাবনা নাই। তাদের মতে এইসব লোকগুলি নামেই খ্রিস্টান, এদের যাপিত জীবন পশুর চেয়েও অধম। কথায় কথায় গুমখুন, বিষ খাইয়ে মারা এদের জন্যে নস্যি। মাঝে মাঝে এরা নিজেদের পাদ্রীদেরও কল্লা নামিয়ে দিত, অবশ্য পাদ্রীরাও কল্লাকাটায় সিদ্ধহস্ত ছিল। মানুচ্চির মতে, এদের দিল পাথরের তৈরি। ছোট দুধের বাচ্চার বুকে তলোয়ার বিঁধিয়ে দিতে এদের বাধতো না। এরা নিজেদের শয়তানীর কম্পিটিশান চ্যাম্পিয়ান হিসেবে গণ্য করতো। এদের বদমাইসি নিয়ে পাতার পর পাতা লিখা সম্ভব।

জাহাঙ্গীরের আমলে মগ দস্যুর দল ঢাকা লুট করতে আসতো ব্রহ্মপুত্র ধরে। হেমন্ত আর শীতকাল ছিল এদের লুটের সিজন। পরের দিকে চর গজিয়ে ওঠায় তারা ঢাকা পর্যন্ত আসতে পারতো না নৌকা নিয়ে, কিন্তু আশপাশের গ্রামগঞ্জ ঠিকই লুট করা হত।

শিহাবুদ্দিন তালিসের মতে, তারা ডাইনে ভালুয়া আর বাঁয়ে সন্দ্বীপ রেখে সংগ্রামগড় বলে ঢাকার ৩৬ মাইল দক্ষিণে একটা গ্রামে দম নিত। ওইখান থেকে তারা গঙ্গা ধরে টান দিত যদি মতলব থাকত যশোর হুগলী লুট করা, আর বিক্রমপুর সোনারগাঁও ঢাকা লুটের উদ্দেশ্য থাকলে তারা ব্রহ্মপুত্র নদী ধরে এগোত।

আরাকান আর বাংলা দুই পক্ষের জন্যেই চাটগাঁও একটি স্ট্র্যাটেজিক লোকেশান। এটি পাইরেট হেডকোয়ার্টারও বটে। আরাকানরাজ তাই সবসময় শক্ত হাতে চাটগাঁও ধরে রাখতেন। প্রতি বছর চাটগাঁয়ে পাঠানো হত সিপাই বন্দুক সহকারে শয়ে শয়ে যুদ্ধজাহাজ, সাথে একটি সিনিয়র কমান্ডিং অফিসার। রাজার বিশ্বস্ত আত্মীয় বা ওইরকম কাউকে চাটগাঁয়ের গভর্নর মজুত রাখা হত।

মোগল অফিসার শায়েস্তা খাঁ নৌবাহিনী গড়ায় মন দিলেন। জিলায় জিলায় লোক পাঠিয়ে কাঠ যোগাড় হল, কাজে লাগানো হল নামজাদা জাহাজ নির্মাতাদের। ঢাকায় শুরু হল নৌকা তৈয়ার। ছোটখাট বন্দর যেমন হুগলী, যশোর, চিলমারি, কড়িবাড়ি বা বলেশ্বরের জাহাজ প্রস্তুত হতে থাকলো। শায়েস্তা খাঁ বেছে বেছে দক্ষ নাবিক খুঁজে বের করলেন, আর তার সরাসরি তত্ত্বাবধানে কিছুদিনের মধ্যে দাঁড়িয়ে গেল তিনশ জাহাজের এক শক্তিশালি মোগল নৌবাহিনী।

শোটাইম। ঢাকার ছয় মাইল দক্ষিণ পূর্বে ধাপাতে একশ নৌকা পাঠানো হল, আর দুইশ মজুত করা হল সংগ্রামগড়ে। ছোট দ্বীপ সন্দ্বীপ সংগ্রামগড় আর চাটগাঁও এর ঠিক মাঝামাঝি স্থানে, চাটগাঁও থেকে ছয় ঘন্টার পথ মাত্র। দ্বীপটি মোটামুটি ফাঁকাই, পর্তুগীজ আর আরাকানে মানুষ মেরে সাফা করে দিয়েছে। দ্বীপের তৎকালীন ইন চার্জ মোগল নৌবাহিনীর পলাতক ক্যাপ্টেন দিলাওয়ার, তুখোড় যোদ্ধা আর কড়া শাসক।

অ্যাডমিরাল আবুল হাসানের নেতৃত্বে দ্বীপে প্রথম হামলা হয় ৯ নভেম্বর ১৬৬৫ সালে। আশি বছরের থুত্থুরে বুড়ো দিলাওয়ার যৌবনের জোশে ফাইট দিতে যেয়ে শীঘ্রই বিপদে পড়েন আর বীরত্বের সাথে জঙ্গলে পালিয়ে যান। মোগলেরা ঘোড়া আনেনি, তাই তারা দূর্গ লুট করে ফিরত গেল। কিন্তু তারা আবার হাজির হয় নয় দিন পর, এইবার তারা দিলাওয়ারকে পাকড়ে শিকলবন্দী করে ঢাকা নিয়ে যায়। সাথে যায় তার ৯২ সদস্যের পরিবার। কয়েদী দিলাওয়ার কয়দিন পরেই অক্কা পান। সন্দ্বীপে এক হাজার মোগল সৈন্য সজ্জিত গ্যারিসন স্থাপিত হয়।

শায়েস্তা খাঁ ফিরিঙ্গিদের দলে ভিড়াবার চেষ্টা করেন। ঐ সময় কিছু ফিরিঙ্গি এক বিরাট আরাকান উজিরকে হত্যা করে ভয়ে ছিল, তাই শায়েস্তার আহবানে পোল্টি খেয়ে তারা ৪২ জাইলা নৌকা নিয়ে নোয়াখালির মোগল কমান্ডার ফারহাদ খাঁ এর কাছে চলে যায়। ফারহাদ ঢাকায় শায়েস্তার কাছে মুর নামে পাইরেট সর্দারকে পাঠায়, তাকে দুহাজার রূপী বখশীশ আর পাঁচশো মাসিক বেতনে বহাল করা হয়।

ক্যাপ্টেন মুর তখন শায়েস্তাকে বুদ্ধি দিল যে চাটগাঁও মোটামুটি ফিরিঙ্গিদের হাতেই চলে, তাই দেরি না করে এখনই হামলা করলে আরাকানরাজ রিইনফোর্সমেন্ট পাঠানোর সুযোগ পাবেনা আর চাটগাঁও এর পতন হবে। দেরি হল না। ২৪ ডিসেম্বর ১৬৬৫ সালে শায়েস্তা খাঁ সাহেবের পুত্র বুজুর্গ উমিদ খাঁ ৬৫০০ সিপাই নিয়ে ঢাকা ত্যাগ করলেন। ২১টি গানবোট, ১৫৭ দ্রুতগামী কষা নৌকা আর ৯৬ টি জাইলা সহ সর্বসাকুল্যে ২৮৮ রণতরী চাটগাঁও অভিমুখে চললো। ফিরিঙ্গির দল আরো ৪০ টি নৌকা নিয়ে পেছনেই ছিল।

নোয়াখালিতে আর্মি নেভি একত্র হল। প্ল্যান হল ইবনে হুসেনের নেতৃত্বে নৌবাহিনী এগিয়ে যাবে আর প্যারালালি যাবে পদাতিক। ফারহাদ খাঁ রইলেন পদাতিক বাহিনীর নেতৃত্বে, জঙ্গল কেটে পথ তৈরি করে এগিয়ে চললেন তিনি। নোয়াখালি ছাড়িয়ে ফারহাদ জগদিয়া পৌঁছালেন ১২ জানুয়ারি ১৬৬৬, দুদিন বাদে ফেনি নদী পেরিয়ে ঢুকলেন আরাকান সাম্রাজ্যে।

নৌবাহিনী এগিয়ে আসছিল ধীরে, তারা ফারহাদের বাহিনীর সাথে মিলিত হল ২১ তারিখে। বুজুর্গ উমিদ খাঁ তখনো বেশ কয় মাইল পিছনে। পরের রাস্তা ঘন জঙ্গল আর পাহাড়ি রাস্তা, ফারহাদের বাহিনী এগুলো অত্যন্ত ধীরলয়ে।

২৩ তারিখ নৌবাহিনী প্রথম যুদ্ধে লিপ্ত হয়। কোথা থেকে ১০টি গানবোট আর ৪৫ জাইলা নৌকাসহকারে শত্রু হানা দেয়। ফিরিঙ্গি পাইরেটের দল সহজেই তাদের হারিয়ে দেয়। কিন্তু এরা ছিল আরাকান নৌবাহিনীর একটি লাইট স্কোয়াড্রন মাত্র, তাদের পেছনেই ছিল আরো বড় কামানযুক্ত খালু আর ধুম জাহাজ। ইবনে হুসেন তাদের ধাওয়া করলেন, তাদের দেখা হল খোলা সমুদ্রে। কিন্তু ব্যাপক মারপিট হলনা, দুইপক্ষই ফুটফাট গোলা ফুটিয়ে দূরত্ব বজায় রাখল সারাটি বিকেল আর রাত্রি।

পরদিন কর্ণফুলি নদীতে শুরু হল ঢিসটিং ঢিসটিং। ড্রাম বাজিয়ে, কেতন উড়িয়ে, বিউগল বাজিয়ে মোগল যুদ্ধজাহাজ তেড়ে গেল আরাকান জাহাজের দিকে, প্রত্যুত্তরে পেল গোলার পর গোলা। নদীর তীরে ফিরিঙ্গি বন্দরের কাছে ছিল আরাকান বাঁশের কেল্লা, ঐখান থেকেও ছোঁড়া হল গোলা। কিন্তু ইবনে হুসেন নৌ এবং স্থলপথে সিপাই পাঠিয়েছিলেন, তাই আরাকান ধীরে ধীরে পিছু হটে। বাঁশের কেল্লা পুড়িয়ে দেয়া হয়। আরাকান নৌবাহিনীর লজ্জাজনক পরাজয় ঘটে।

পরদিন চাটগাঁও দূর্গের পতন ঘটে। আরাকানেরা হালকা ফাইট দিয়েছিল বটে, কিন্তু স্থলপথে ফারহাদ খাঁ এর বাহিনীর আগমনের খবরে তারা পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। ২৬ তারিখ ভোরে ইবনে হুসাইন দূর্গের দখল পান। সব বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়, পুরো শহরটাই জ্বলে ছারখার হয়। এমনকি দুইটি হাতিকেও পুড়িয়ে মারা হয়। কর্ণফুলি পেরিয়ে আরাকানেরা পালানোর চেষ্টা করে, কিন্তু তাদের বাঁধা দেয় তাদেরই দাসের দল। এরা আরাকানদের লুন্ঠিত বাংলার মুসলমানের দল, দাস বানিয়ে এদের ক্ষেতখামারে কাজে লাগিয়ে দেয়া হয়েছিল। এইবার তারা আরাকানদের বাগে পেয়ে ব্যাপক পুটু মেরে দেয়।

একশত পঁচিশ বছর ধরে আরাকানরাজের অধীনস্ত চাটগাঁও তাদের হাতছাড়া হয়ে যায়, আর কোনদিন তারা চাটগাঁও ফিরে পায়নি। চেষ্টা করার বদলে আরাম করলে, আত্মত্যাগের পরিবর্তে লুন্ঠনে মত্ত হলে, বিদেশিদের হাতে দেশের প্রতিরক্ষা তুলে দিলে একটি জাতির পতন তাই অবশ্যম্ভাবী।

…....................................................................................

যদুনাথ সরকার বিরচিত “History of Aurangzib: Northern India, 1658-1681” অবলম্বনে।

সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ লিখকের মতামতের জন্য অনুবাদক দায়ী নহেন।


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

স্যার যদুনাথ সরকারকে নিয়ে কিছু লিখবেন নাকি? লোকটা বেশ ইন্টারেস্টিং ক্যারেক্টার ছিলেন।

সত্যপীর এর ছবি

উনার সম্বন্ধে আমার পড়াশুনা কম, ভালো কিছু পেলে লিখব নিশ্চই হিমু ভাই। তবে উনার বইগুলা অতি মনকাড়া, ডিটেলে ভরপুর। উনার বিবিধ বই থেকে আরো লিখা দিব নিশ্চিত।

..................................................................
#Banshibir.

দুর্দান্ত এর ছবি

ঔপনিবেশিক অবস্থান থেকে উপমহাদেশের ইতিহাস দেখার দিক থেকে যদুনাথ আর মিল এর মিল(!) অনেক।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

চট্টগ্রামে মোগল আক্রমনের ওই সময়ের ইতিহাস খুব ইন্টারেষ্টিং। শায়েস্তা খাঁর কুটনৈতিক বুদ্ধির কাছেই হেরে গিয়েছিল আরাকানরাজ। শাহসুজা পালিয়ে চট্টগ্রামে আরাকান রাজের কাছে আশ্রয় নিয়ে সপরিবারে নিহত হবার পর মোগলরা প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে ওঠে। কিন্তু আরাকান আর পুর্তগীজের সম্মিলিত শক্তির সাথে পেরে উঠছিলেন না। দুত পাঠিয়ে গোয়ার পূর্তগীজ শাসকের মাধ্যমে ঘুষ দিয়ে হাত করা হয় ফিরিঙ্গীদের। সেই সময়ে একটা ঝামেলা যাচ্ছিল আরাকান আর পূর্তগীজদের। তার সুযোগ নিয়েই মোগলরা ফিরিঙ্গীদের হাত করেছিল। ইবনে হুসেনের নেতৃত্বে ব্যাপারটা ঘটলেও ফিরিঙ্গীরাই মূল অনুঘটকের কাজ করে( ইবনে হুসেন সম্পর্কে বিস্তারিত জানার কোন রেফারেন্স আছে? লোকটাকে আমার রহস্যময় মনে হয়েছে)। কাটা দিয়ে কাটা তোলার কাজে মোগলরা বরাবরই পারর্দশী ছিল। এই যুদ্ধে জয়লাভ করার মাধ্যমে চট্টগ্রাম চিরতরে মোগল অধীনে আসে। আরাকানীদের একেবারে শংখ নদী পার করে দেয়া হয় সেই সময়। এখনো চট্টগ্রামে ওই ঘটনাটা মগধাওনী হিসেবে পরিচিত।

আপনার সরস ইতিহাস বর্ননা পড়তে ভীষণ ভালো লাগছে। চলুক! চলুক

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

সত্যপীর এর ছবি

Journal & proceedings of the Asiatic Society of Bengal, Volume 3 বইতে ৪০৯ থেকে ৪১৬ পৃষ্ঠাজুড়ে ইবনে হুসেনের কমান্ডারগিরির বিস্তারিত বর্ণনা পেলাম। এমনকি ৪১০ পৃষ্ঠায় তার অধীনস্থ নৌকার সংখ্যা নামধাম সবই মুদ্রিত। তবে তার ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে লিখা চোখে পড়েনি। খুঁজলে আরো ইবনে হুসেন পাওয়া যাবে নিশ্চয়ই। লোকটা ইন্টারেস্টিং ছিলেন বলছেন? আচ্ছা নজর রাখবো, ভবিষ্যতে একে নিয়ে কিছু পেলেই ঠিক লিখা নামিয়ে দিব।

..................................................................
#Banshibir.

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

এদের মধ্যে সবচাইতে বড় শয়তান সেবাস্টিয়ান গনজালেস টিবাও সন্দ্বীপ আর বঙ্গোপসাগরের তীরে আরও দুইটি দ্বীপ হাতিয়ে নেয়।

দ্বিতীয় ও তৃতীয় দ্বীপ যথাক্রমে মনপুরা ও হাতিয়া। মনপুরার অধিকাংশ কুকুর ইউরোপীয় কুকুরের মত দেখতে; এর কারন, পর্তুগীজদের সাথে আসা কুকুর দল। হাসি

ছোট দ্বীপ সন্দ্বীপ সংগ্রামগড় আর চাটগাঁও এর ঠিক মাঝামাঝি স্থানে, চাটগাঁও থেকে ছয় ঘন্টার পথ মাত্র।

এখন চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড হতে ইন্জিন ছাড়া নৌকায় মাত্র দুই ঘন্টা লাগে।

দ্বীপের তৎকালীন ইন চার্জ মোগল নৌবাহিনীর পলাতক ক্যাপ্টেন দিলাওয়ার, তুখোড় যোদ্ধা আর কড়া শাসক।

সন্দ্বীপে এক দিলাল রাজা ছিল। কে জানে হয়ত এই দিলাল আর তোমার দিলু একই ব্যক্তি! শুনেছিলাম, দিলাল রাজা সন্দ্বীপের ভাল রাজা ছিলেন।

সন্দ্বীপে মগধরা নামে একটা জায়গা আছে। ওই জায়গাটা ছিল পরাজিত বার্মিজদের শেষ দেয়াল।

যদুনাথকে নিয়েও কিছু লিখ।

আর তোমার অনুবাদ নিয়ে কি বলব? সে তো লা জওয়াব। অনুবাদ চলতে থাকুক। হাসি

সত্যপীরের জয় হোক!

সত্যপীর এর ছবি

দিলাল রাজার ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং। দিলাওয়ার রাজার ব্যাপারটা ডিটেলে পাইনি খুঁজে, সবাই খালি নৌকাফাইটের বর্ণনায় ব্যস্ত। দেখি আরো দিলাল পাই কিনা হাসি

..................................................................
#Banshibir.

মন মাঝি এর ছবি

কৃতজ্ঞতাস্বরুপ তিনি হুকুম জারি করেন তার বংশের লোক বার্মিজ পালি নামের সাথে আলি খান, সিকান্দার শা বা সেলিম শা এইরকম মুসলিম টাইটেল যুক্ত করবেন।

এইটা সম্ভবত বাংলাদেশের চাকমারা। বৃটিশরা চাকমাদের করদ রাজ্যে পরিণত করার সময় চাকমা রাজার নাম ছিল মনে হয় 'শের দৌলত খান' !

আরাকান পাইরেট, মগ আর ফিরিঙ্গি, নদী ধরে যাতায়াত করতো আর পার্শ্ববর্তী গ্রামে লুট চালাত। হিন্দু মুসলিম যাই তারা পেত তাকেই ধরে আটক করা হত, তারপর হাতের তালুতে ছ্যাদা করে বাঁশের কঞ্চি ঢুকিয়ে দেয়া হত।

এই আরাকানি ডাকাত/জলদস্যু/মগরা মূলত বর্তমান বাংলাদেশের মারমা ও রাখাইনদের পূর্বসুরী। মারমা (তাদের ভাষায় সম্ভবত 'ম্রাইম্‌ড়্যা' - মিয়ানমারের অপভ্রংশ)-দের ক্ষেত্রে সেই একই শাসক-বংশের ধারাবাহিকতা শুরু থেকে এখনো পর্যন্ত অক্ষুন্নঃ মং শ প্রু (১৫৯৯-১৬৩১) থেকে বর্তমানের অং শোয়ে প্রু পর্যন্ত। আরাকান শাসনের সময় এরা মূল আরাকানি রাজা ছিলেন না, বরং এ অঞ্চলে তাদের নিযুক্ত ভিন্ন সম্প্রদায়/উপজাতির উপশাসক ছিলেন। মারমারা মূলত বার্মার পেগু রাজ্যের শাসক (বর্মী 'তেলইন' অঞ্চল/কম্যুনিটিভুক্ত ) ছিলেন - যা বর্তমানে রেঙ্গুনের কাছে 'বাগো' নামে পরিচিত, এবং অন্য বর্মী বা থাই রাজার আক্রমনে বিতাড়িত হলে আরাকানি/রাখাইন রাজার আশ্রয়প্রাপ্ত হন এবং পরে বান্দরবানে তার বোহমং চীফ হিসেবে প্রেরিত ও নিযুক্ত হন স্বসম্প্রদায়ের একটা বড় সংখ্যক রিফিউজিদের সহ এবং বাংলাদেশের মারমা উপজাতির পত্তন করেন। এদেরকেই মনে হয় বাঙালিরা মগ বলত।

****************************************

সত্যপীর এর ছবি

এই পেগুর ব্যাপারটা তুলে এনেছেন বলে আপনার ধন্যবাদ প্রাপ্য। আমি যখন লিখা খুঁজি আমার মাথায় থাকে বাংলা ও অবিভক্ত ভারতবর্ষের ম্যাপ, যা ই লিখবো তা এই সীমানার ভিতর হতে হয়। ফলে বার্মিজ কিছু নিয়ে লিখা দেইনা। কিন্তু চিটাগং নিয়ে লিখাতে অবধারিতভাবে পেগুর নাম আসে, মঙ্গোল বার্মিজ উত্তরাঞ্চলের ইতিহাসের সাথে চিটাগং ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত বলে মনে হয়। পেগু নিয়ে কিছু লিখতে হবে আসলে, অনেক পাইরেটের ঘাঁটি ছিল ওখানেও।

..................................................................
#Banshibir.

মন মাঝি এর ছবি

কক্সবাজারের কাছে কুতুবদিয়া দ্বীপে নাকি একটা পর্তুগিজ লাইটহাউজ ছিল বা আছে ? এটা সম্পর্কে জানেন কিছু? এক সময় খুব ইচ্ছা ছিল এই পাইরেট লাইটহাউজ দেখতে যাওয়ার। কাছাকাছি মহেশখালী দ্বীপ পর্যন্ত গিয়েছিলাম।

****************************************

সত্যপীর এর ছবি

বলতে পারলামনা ভাই, সচলের কারো জানা থাকলে আওয়াজ দিয়েন। উইকিমামু দেখলাম বলছে ব্রিটিশ আমলে তৈরী।

..................................................................
#Banshibir.

সুমিমা ইয়াসমিন এর ছবি

চেষ্টা করার বদলে আরাম করলে, আত্মত্যাগের পরিবর্তে লুন্ঠনে মত্ত হলে, বিদেশিদের হাতে দেশের প্রতিরক্ষা তুলে দিলে একটি জাতির পতন তাই অবশ্যম্ভাবী।

চলুক

পদ্মজা এর ছবি

ছেলে ঘুমালো পাড়া জুড়ালো
বর্গী এলো দেশে।
বুলবুলিতে ধান খেয়েছে,
খাজনা দেব কিসে?
আমার সবসময় অবাক লাগে এই ভেবে যে দস্যুদল কি করে ট্যাক্স নেয়ার দায়িত্ব পায়? চিন্তিত
হাততালি

সত্যপীর এর ছবি

পর্তুগীজেরা ছিল দস্যু হার্মাদ। বর্গী আরেক বদমাস, ওরা ছিল মারাঠা। বর্গী নিয়ে একটা ভাল লিখা দিবার ইচ্ছা আছে, খুঁজে দেখি।

..................................................................
#Banshibir.

শেহাব এর ছবি

চট্টগ্রামে আমাদের বাসার উল্টাপাশে মহসিন কলেজের ক্যাম্পাসের সবচেয়ে উঁচু আর পুরোনো বাড়িটার নাম পর্তুগীজ ভবন। ১৯৭১ এ সম্ভবত এখানে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নির্যাতন কেন্দ্র ছিল।

যাযাবর এর ছবি

চলুক চলুক

দিগন্ত এর ছবি

বরাবরের মতই সুন্দর ইতিহাস-অনুবাদ।
আমার ব্যক্তিগত একটা অনুরোধ আছে। আমার অনেকদিনের ইচ্ছা ছিল জেমস মিলের হিস্টরি অব ইন্ডিয়া বইটা পড়ে দেখব। জেমস মিল ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর মাইনে করা ইতিহাসবিদ, মাসে আটশো' ডলার মাইনে পেতেন, বিনিময়ে কি ইতিহাস লিখে গেছেন সেটা পড়ার ইচ্ছা ছিল। বইটা পাবলিক ডোমেইনে আছে জানি কিন্তু পুরোটা পড়ার সময় নেই। আপনি যদি বাংলার বিষয়ক কিছু লেখা অনুবাদ করেন তাহলে ভাল লাগবে।
বইটা সম্পর্কে পড়তে পারেন উইকিতে


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

সত্যপীর এর ছবি

কোনো কারনে গুগল বুকসে শুধু মিলের বুক সিক্স পেলাম, অন্য খন্ডগুলি নাই। অন্য কোথাও খুঁজতে হবে। ষষ্ঠ খন্ডে ১৭৮৪ থেকে ১৮০৫ এর ঘটনা বিবৃত। দেখি অন্য খন্ডগুলিতে কি আছে। রেফার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

..................................................................
#Banshibir.

দিগন্ত এর ছবি

বইটা পাবেন এইখানে


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

সত্যপীর এর ছবি

পেয়েছি, অসংখ্য ধন্যবাদ। দিচ্ছি কিছু ওখান থেকে। হিমু ভাই হান্টারের রুরাল বেঙ্গল রেফার করেছিলেন, মন মাঝি ভাই আরেকটি বই। ওগুলি থেকেও অনুবাদ দিচ্ছি। বেশ একটা কো-অপারেটিভ সিস্টেম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে কিন্তু, চমৎকার!

..................................................................
#Banshibir.

তারেক অণু এর ছবি
ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

জাহাঙ্গীরের আমলে মগ দস্যুর দল ঢাকা লুট করতে আসতো ব্রহ্মপুত্র ধরে। হেমন্ত আর শীতকাল ছিল এদের লুটের সিজন। পরের দিকে চর গজিয়ে ওঠায় তারা ঢাকা পর্যন্ত আসতে পারতো না নৌকা নিয়ে, কিন্তু আশপাশের গ্রামগঞ্জ ঠিকই লুট করা হত।

শিহাবুদ্দিন তালিসের মতে, তারা ডাইনে ভালুয়া আর বাঁয়ে সন্দ্বীপ রেখে সংগ্রামগড় বলে ঢাকার ৩৬ মাইল দক্ষিণে একটা গ্রামে দম নিত। ওইখান থেকে তারা গঙ্গা ধরে টান দিত যদি মতলব থাকত যশোর হুগলী লুট করা, আর বিক্রমপুর সোনারগাঁও ঢাকা লুটের উদ্দেশ্য থাকলে তারা ব্রহ্মপুত্র নদী ধরে এগোত।

এখনকার মরা ব্রহ্মপুত্র তো দূরে থাক, যখন ভূমিকম্পজনিত কারণে ব্রহ্মপুত্রের কোর্স পালটে যায়নি তখনো কি ব্রহ্মপুত্র বেয়ে ঢাকা আসা যেতো? উত্তর হচ্ছে 'না'। ঢাকার ৩৬ মাইল দূর থেকে এসে এখনো ঢাকা লুট করা সম্ভব না। আর "মগ দস্যুরা ব্রহ্মপুত্র বেয়ে ঢাকা লুট করতে আসছে" এমন বর্ণনা যিনি দিতে পারেন তাঁর বাকি বর্ণনাতে আমি ঈমান আনার কোন কারণই খুঁজে পেলাম না। স্যার যদুনাথ সরকার পূজনীয় ঐতিহাসিক, কিন্তু তিনি তালিশকে বিনা বিবেচনায় উদ্ধৃত করবেন এমনটা আশা করিনি।

অপহৃত ব্যক্তিদের আরাকানীরা হাতের তালু ফুটো করে বাঁশের কঞ্চি না ফ্লেক্সিবল বেত বা বেতের ছাল দিয়ে বেঁধে রাখতো যেন পালাতে না পারে।

শুধুমাত্র ফিরিঙ্গি পাইরেটরাই দাস বিক্রি করতো, মগ দস্যুর দল তাদের নিজেদের ক্ষেতে কাজে লাগাত অথবা সুন্দরী মেয়েদের রক্ষিতা বানিয়ে লাগাত। কখনোই বিক্রি করত না।

ভুল। দাস ব্যবসাতে ইউরোপীয়রা তো বটেই, মগ'রা এমনকি ভারতীয়রা পর্যন্ত খুব ভালোভাবে জড়িত ছিলো।

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হলেও এবং এর বিশাল উপকূলভূমি থাকলেও আজ পর্যন্ত এ'দেশে শক্তিশালী নৌবাহিনী গড়ে ওঠেনি। এমনকি এর নদী/সমূদ্র তীরবর্তী মানুষেরাও ঠিক নৌযোদ্ধা মনোভাব নিয়ে গড়ে ওঠেননি। এটা আমাদের ইতিহাসের একটা নির্মম পরিহাস। এর জন্য আমাদের কম করে হলেও দুই হাজার বছর ধরে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

স্যার যদুনাথ সরকার পূজনীয় ঐতিহাসিক, কিন্তু তিনি তালিশকে বিনা বিবেচনায় উদ্ধৃত করবেন এমনটা আশা করিনি।

ব্রহ্মপুত্র বেয়ে লুটতরাজ বিষয়ক বর্ননা যদুনাথ সরকারের বইতে পাইনি। শিহাবুদ্দিন তালিশকে উদ্বৃত করেছেন চোখে পড়েনি। লেখক হয়তো অন্য কোন সুত্রে পেয়েছেন। যদুনাথ সরকার বলেছেন মূলত বাকলা জেলায় পূর্বগীজ অত্যাচারের কথা(বাকেরগঞ্জ ও ঢাকার একাংশ)। পূর্তগীজদের অত্যাচার ছিল মূলত আজকের সুন্দরবন এলাকাতেই। যার ফলে ওই এলাকা যে জনশূণ্য হয়েছিল তা আজও পূর্বরূপে ফিরে আসেনি।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

সত্যপীর এর ছবি

ব্রহ্মপুত্র বেয়ে লুটতরাজ বিষয়ক বর্ননা যদুনাথ সরকারের বইতে পাইনি। শিহাবুদ্দিন তালিশকে উদ্বৃত করেছেন চোখে পড়েনি।

মূল ইংরেজী, Their lines of advance are thus clearly indicated by Shihabuddin Talish: "When the pirates came from Chatgaon to ravage Bengal, they skirted the imperial frontier post of Valua on their right & the island of Sondip on their left & reached the village of Sangramgarh, at the southern apex of delta of Dacca (Some 36 miles from Dacca) & then the point of junction of the Brahmaputra & the Ganges. From this place they sailed up the Ganges if they wished to plunder Jessor, Hugli and Bhushna, or up the Brahmaputra if Vikrampur, Sonargaon & Dacca were their objective."
উৎস, পৃষ্ঠা ২২৮।

লেখক হয়তো অন্য কোন সুত্রে পেয়েছেন।

লেখক বলতে আমাকে বোঝালেন? আমি কিন্তু গবেষনালব্ধ লিখা দেইনা, শুধুই অনুবাদ। আমার বক্তব্য পোস্টে খুব কম থাকে অথবা আদৌ থাকেনা কখনো কখনো।

..................................................................
#Banshibir.

নীড় সন্ধানী এর ছবি

মনে হচ্ছে আপনার ভার্সন আর আমার ভার্সনে পার্থক্য আছে। আমি পড়েছি সংক্ষেপিত সংস্করণ। ওখানে তালিশের বিবরণটা নেই। আসলে তালিশের সময়কার ভৌগলিক অবস্থান আর বর্তমান নদীর অবস্থানে পার্থক্য আছে, তাছাড়া নদীগুলোর পয়েন্ট অব জাংশান বাংলাদেশে খুব বেশী নড়াচড়া করে।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

সত্যপীর এর ছবি

হাতের তালু ফুটো করে কঞ্চি বেঁধে পালানো আটকানোর কি হল বুঝলামনা। শিকল টিকল দিয়ে আটকে রাখলেই তো হত।

এমনকি এর নদী/সমূদ্র তীরবর্তী মানুষেরাও ঠিক নৌযোদ্ধা মনোভাব নিয়ে গড়ে ওঠেননি।

এই কথাটা পুরো দেশের লোক সম্বন্ধেই খাটে বলে আমার মনে হয়। বাঙালি যোদ্ধা জাত নয়, তা সে নৌ সেনা অথবা বিমান বাহিনী যা ই বলেন।

..................................................................
#Banshibir.

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।